Ajker Patrika

গণভোটের প্রশ্ন ও সময় পরিবর্তনের চিন্তা নেই

  • প্রশ্ন সংশোধন করে আপত্তির বিষয়গুলো সংযুক্ত করার দাবি বিএনপির।
  • আপত্তির বিষয়গুলো যে নেই, তা স্পষ্ট করতে বলেছে এনসিপি।
  • জামায়াতে ইসলামী ও সমমনা দলগুলোর চাওয়া গণভোট আগে হোক।
তানিম আহমেদ, ঢাকা 
আপডেট : ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ১৪: ২১
গণভোটের প্রশ্ন ও সময় পরিবর্তনের চিন্তা নেই

রাজনৈতিক দলগুলোর বিপরীতমুখী অবস্থানের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারই সিদ্ধান্ত নিয়ে জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ জারি করেছে। রাজনৈতিক দলগুলো এই আদেশের সরাসরি বিরোধিতা না করলেও নিজ নিজ অবস্থান থেকে গণভোটের সময় ও প্রশ্নসহ কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তনের দাবি তুলেছে। তবে সরকার বলেছে, গণভোটের প্রশ্ন পরিবর্তন করার সম্ভাবনা আপাতত নেই। ভোটের সময় পরিবর্তনেরও চিন্তা নেই সরকারের।

১৩ নভেম্বর জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) আদেশ জারি করে সরকার। এই আদেশের ভিত্তিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। একটি প্রশ্নে চারটি বিষয়ের ওপর জনগণ হ্যাঁ বা না ভোট দিতে পারবে।

গণভোটের প্রশ্নে সংশোধনী এনে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে নোট অব ডিসেন্ট (আপত্তি) যুক্ত করার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নোট অব ডিসেন্ট না রাখার বিষয়টি স্পষ্ট করতে বলেছে। আর জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা দলগুলোর দাবি, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট হোক। তবে ভোটের আগে গণভোট নিয়ে জামায়াত শেষ পর্যন্ত অনড় অবস্থানে থাকবে না বলে সূত্রে জানা গেছে।

গণভোটের প্রশ্ন ও দিনক্ষণ পরিবর্তনে সরকারের কোনো চিন্তাভাবনা নেই বলে জানান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, যে তারিখ (গণভোট) ঘোষিত হয়েছে এবং আয়োজনের সুবিধার্থে সরকার সে তারিখকেই বাস্তবসম্মত মনে করছে। প্রশ্ন পরিবর্তনের বিষয়েও সরকার কিছু চিন্তা করছে না।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিএনপি-এনসিপির দাবি অনুযায়ী গণভোটের প্রশ্ন পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখছি না। এ ক্ষেত্রে সরকার একটি বিষয়ে পরিবর্তন করলে, অনেক বিষয় পরিবর্তন করতে হবে। তখন জামায়াতের দাবি অনুযায়ী জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট করতে হবে। তাই আদেশের সিদ্ধান্ত থেকে সরকারের সরে আসার সম্ভাবনা দেখি না।’

গণভোটের ফলাফল ইতিবাচক হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন সরকারের দায়িত্বশীলেরা। একাধিক কর্মকর্তা বলেন, বিএনপি তো গণভোটে ‘না’ ভোটের প্রচার করতে পারবে না। যদি করে তখন তারা সংস্কারবিরোধী হিসেবে মানুষের কাছে পরিচিতি পাবে। অন্যদিকে ‘হ্যাঁ’ জয়যুক্ত হলে বাস্তবায়নে বিএনপির ওপর রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি হবে, সেটি নিয়ে তারা চিন্তিত।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, গণভোটের প্রশ্ন নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। তারা প্রশ্নের সরাসরি সমালোচনা করতে পারবে না। আবার সমর্থনও করতে পারছে না। বিরোধিতা করলে ভাবমূর্তি সংকটে পড়তে পারে। অন্যদিকে, গণভোটে ‘হ্যাঁ’ জয়যুক্ত হলে রাষ্ট্র পরিচালনায় জটিলতায় পড়ার আশঙ্কা করছে দলটি। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, গণভোট প্রশ্নের ‘ক’ ও ‘খ’ ধারা নিয়ে আপত্তি আছে। যেখানে ‘ক’ ধারায় বলা হয়েছে, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়া অনুযায়ী হবে, যেখানে প্রক্রিয়া বলতে আপত্তি (নোট অব ডিসেন্ট) রাখা হয়নি। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ন্যায়পাল, সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি), ন্যায়পাল, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নিয়োগে সাংবিধানিক কমিটি গঠনে বিএনপির আপত্তি রয়েছে।

অন্যদিকে ‘খ’ ধারায় দুই কক্ষবিশিষ্ট জাতীয় সংসদে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের (পিআর) উচ্চকক্ষ ও উচ্চকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদনে সংবিধান সংশোধনের বিধানেও বিএনপির আপত্তি আছে। যেখানে আদেশ মানলে বিএনপিকে ‘হ্যাঁ’ ভোটের পক্ষে ভোট দিতে হবে। ‘ক’ ও ‘খ’ ধারাটি পরিবর্তনের জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারের কাছে দাবি জানানো হবে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। তবে প্রশ্নের ‘গ’ ও ‘ঘ’ ধারা নিয়ে বিএনপির আপত্তি নেই।

বিষয়টি নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা স্বাক্ষরিত জুলাই সনদকেই রাষ্ট্র সংস্কারের ভিত্তি হিসেবে দেখছি। সেখানে গণভোটে যেসব বিষয় উত্থাপন করা হয়েছে, যেসব বিষয়ে গণভোট আয়োজনের কথা বলা হয়েছে। সেসব বিষয়ের সঙ্গে স্বাক্ষরিত জুলাই সনদের কোনো সাংঘর্ষিক অবস্থা থাকলে, তা পুনর্বিবেচনার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানানো হবে।’

গণভোটের মূল প্রশ্ন নিয়ে এনসিপির আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার। তবে প্রশ্নের অতিরিক্ত ধারাগুলো নিয়ে দলটির আপত্তি রয়েছে। বিশেষ করে ‘ক’ ধারাটি স্পষ্ট করার দাবি তাদের। সেখানে বলা আছে, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ার আলোকে গঠন করা হবে। এটাকে এমনভাবে বলা হয়েছে, যে সরকার আসবে, তারা দলীয় অবস্থান অনুযায়ী ব্যাখ্যা করতে পারবে। বিষয়টি স্পষ্ট করতে হবে।

সরোয়ার তুষার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গণভোটের মূল প্রশ্নটা ঠিক আছে। সেখানে কোনো অস্পষ্টতা নেই। কিন্তু ব্যাখ্যামূলক (ক, খ, গ ও ঘ) প্রশ্নে কিছুটা অস্পষ্টতা রয়েছে, সেগুলো দূর করা উচিত।

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক আরও বলেন, অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের কথা বলা হয়েছে। সেটার মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পড়বে কি? পড়বে না? এটা তো ফাঁকা রাখলে সমস্যা। আবার বলা হয়েছে, স্বাক্ষরিত জুলাই সনদের কথা বলা আছে। সে ক্ষেত্রে কোন কোন দল বলতে পারে, আমরা যেহেতু আপত্তিসহ (নোট অব ডিসেন্ট) স্বাক্ষর করেছি। তাই সেটি কার্যকর হবে। গণভোটে আপত্তিগুলো কার্যকর হবে না—সেটি পরিষ্কার হয়নি।

জামায়াতের পক্ষ থেকে গণভোটের বিষয়ে সরকারকে প্রচার চালানোর অনুরোধ করা হয়েছে। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, গণভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্রের কোন কোন সেক্টরে পরিবর্তন হবে, সেগুলো তুলে ধরার আহ্বান জানানো হচ্ছে। দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার গতকাল রোববার এক কর্মসূচিতে বলেন, নির্বাচন কমিশন তার ওয়েবসাইটে পাবলিক করতে পারে, সরকারি প্রচারপত্র বিলি করে, জাতীয় প্রচারমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার করে, জনগণ যেন এই সংস্কার প্রস্তাবের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ বলতে পারে। তার প্রয়োজনীয় উৎসাহ দেওয়া, প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে জিনিসটাকে সহজ করা দরকার। তিনি আরও বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা বক্তব্যে যেভাবে বলেছেন, সাধারণ স্বল্পশিক্ষিত মানুষ সংস্কারের ইন্টারনাল এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ খুব কমই বোঝে। এটাকে অতি সহজ করে, কিসে আমরা “হ্যাঁ” বলতে যাচ্ছি—সংস্কারে গৃহীত সব বিষয়কে অতি সহজ করে ভোটারদের কাছে, দেশবাসীর কাছে সরকারকে পেশ করতে হবে।’

গণভোটের বিষয়ে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রচার চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ভিডিও তথ্যচিত্র, পোস্টার বানানোসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কয়েক দিনের মধ্যে সেগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, টেলিভিশন, পত্রিকা, অনলাইন নিউজ পোর্টাল ছাড়াও দেয়ালে টানানো হতে পারে। সরকারের এক কর্মকর্তা বলেন, সেখানে গণভোটে কোন সংস্কারের বিষয়ে মানুষ ভোটে দেবে, সেগুলো আলাদা আলাদা এবং একসঙ্গে প্রচার করা হবে। নির্বাচন পর্যন্ত এ প্রচারণা চালানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে।

সূত্রে জানা গেছে, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন, সংবিধান ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ এবং পিআরে উচ্চকক্ষ গঠিত হলে রাষ্ট্র কাঠামোয় যে জবাবদিহি নিশ্চিত হবে, প্রচারে সেগুলো তুলে ধরা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রতিদিনই বিদেশি অস্ত্র উদ্ধার করা হচ্ছে, নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। ছবি: আজকের পত্রিকা
পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। ছবি: আজকের পত্রিকা

‎আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে এখন কোনো শঙ্কা নেই। প্রতিদিনই বিদেশি অস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে। কোনো রকমের ছাড় দেওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল(অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বিজিবিও সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের প্রায় ৩৫ হাজার সদস্য নির্বাচনের সময় নিয়োজিত থাকবে। এর মধ্যেও দুই-চারটা অস্ত্র যে দেশে ঢুকছে না তা না। তবে এগুলো ধরাও হচ্ছে। প্রতিদিনই বিদেশি অস্ত্র উদ্ধার করা হচ্ছে। কোনো রকমের কোথাও ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।

আজ ‎সোমবার বিজিবি দিবস-২০২৫ উপলক্ষে পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে এখন কোনো শঙ্কা নেই। এবারই নির্বাচনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

কেরানীগঞ্জ মাদ্রাসায় বিস্ফোরণের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, কেরানীগঞ্জে যেই ব্যক্তি অপকর্মটা ঘটিয়েছে সে পলাতক রয়েছে। কিন্তু তার সহযোগীকে ধরা হয়েছে। পলাতক ওই ব্যক্তিকেও ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে। ‎

এসব ঘটনা সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা হয়ে দাঁড়াবে কিনা —এমন এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ফ্যাসিস্ট যারা আছে তারা সব সময়ই এটা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করবে। কিন্তু সবার সহযোগিতা যদি থাকে তবে নির্বাচন সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণ এবং উৎসবমুখর হবে। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। এ রকম একটা নির্বাচনই এই সরকারের দেওয়ার ইচ্ছা এবং এটা বাস্তবায়ন করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কুয়াশায় গাড়ি চালানো নিরাপদ করতে বিআরটিএর নির্দেশনা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

শীতকালে ঘন কুয়াশার কারণে চালকের দৃষ্টিসীমা কমে যাওয়ায় সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে। এ পরিস্থিতিতে নিরাপদে গাড়ি চালাতে মোটরযান চালক ও মালিকদের জন্য কিছু নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।

আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) বিআরটিএ তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে এসব নির্দেশনা প্রকাশ করে।

বিআরটিএ নির্দেশনায় বলা হয়েছে—

১. কুয়াশায় দৃষ্টিসীমার মধ্যে থামানো যায় এমন নিয়ন্ত্রণ উপযোগী ধীর গতিতে সর্বদা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে রাস্তায় গাড়ি চালাতে হবে।

২. সর্বদা ‘লো-বিম বা ডিপার’ জ্বালিয়ে গাড়ি চালাতে হবে। ‘হাই-বিম বা আপার’ কুয়াশাকে আরও বেশি ঘন করে বিধায় ‘হাই-বিম বা আপার’ জ্বালিয়ে গাড়ি চালানো যাবে না।

৩. লেন পরিবর্তন/ওভারটেকিং করা যাবে না। যেসব স্থানে দৃষ্টি যায় না বা বাঁক নেওয়ার আগে দেখা যায় না, সেসব স্থানে দরকার হলে বিপদ এড়ানোর জন্য হর্ন বাজাতে হবে।

৪. ঘন কুয়াশার কারণে একেবারেই দেখা না গেলে বা দৃষ্টিসীমা শূন্যের কোঠায় পৌঁছে গেলে নিরাপদ জায়গায় গাড়ি থামিয়ে হেডলাইট বন্ধ করে হ্যাজার্ড লাইট জ্বালাতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‎সীমান্ত দিয়ে সন্ত্রাসীরা যেন পালাতে না পারে, সতর্ক থাকার নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

‎সীমান্ত দিয়ে কোনো অপরাধী বা সন্ত্রাসী যেন পালিয়ে যেতে না পারে, সে বিষয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ‎

আজ ‎সোমবার বিজিবি দিবস-২০২৫ উপলক্ষে পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, সীমান্ত সুরক্ষা ও দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় বিজিবিকে আরও পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। ‎

বক্তব্যের শুরুতে মুক্তিযুদ্ধে বিজিবির সাহস ও আত্মত্যাগের কথা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন ‎স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। একই সঙ্গে তিনি জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং ওই আন্দোলনে আহত ও পঙ্গুত্ববরণকারী ছাত্র-জনতার প্রতি সম্মান জানান।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘বিজিবি একটি গৌরবময় ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। বর্তমানে বিজিবি একটি “ত্রিমাত্রিক বাহিনী” হিসেবে সীমান্ত সুরক্ষা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তা এবং জনকল্যাণমূলক কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।’

বিজিবির সার্বিক উন্নয়নে সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

‎স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘সীমান্ত দিয়ে কোনো ধরনের মাদক দেশে প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না। স্পর্শকাতর এলাকাগুলোতে অতিরিক্ত সতর্কতা জোরদার করতে হবে।’

একই সঙ্গে অবৈধ পথে দেশীয় পণ্য বিদেশে পাচার রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।

‎‎চোরাকারবারি ও মাদক পাচারকারীদের সঙ্গে জড়িত কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী থাকলে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

পাশাপাশি অধীনস্ত সদস্যদের কল্যাণে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সর্বদা সজাগ ও সচেতন থাকার আহ্বান জানান তিনি।

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আরও বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সীমান্তসংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা অত্যন্ত কৌশল ও দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে, যাতে দেশের স্বার্থ শতভাগ সুরক্ষিত থাকে। সীমান্ত ব্যবহারকারী চোরাকারবারিদের আইনের আওতায় আনতে প্রয়োজনে জেলা প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে নিবিড় সমন্বয় বজায় রাখার নির্দেশ দেন তিনি। ‎

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বিজিবি সদস্যদের ‘চেইন অব কমান্ড’-এর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও আনুগত্য বজায় রাখার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে বিজিবি দেশের মানুষের আস্থার প্রতীক হয়ে তার গৌরবময় অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখবে এমন প্রত্যাশা তাঁর।

‎‎অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি এবং বিজিবির মহাপরিচালকসহ বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সাবসিডিয়ারি কোম্পানি গঠন করতে চায় বিআইডব্লিউটিসি

  • অনুমোদিত মূলধন ৪০ লাখ থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার কোটি টাকা করার প্রস্তাব
  • কোম্পানির শেয়ার বিআইডব্লিউটিসি রাখতে পারবে, প্রয়োজনে অন্যকেও দেবে
  • বিআইডব্লিউটিসির পরিচালনা পর্ষদে সদস্যসংখ্যা দুজন বাড়িয়ে ৭ করার প্রস্তাব
তৌফিকুল ইসলাম, ঢাকা 
সাবসিডিয়ারি কোম্পানি গঠন করতে চায় বিআইডব্লিউটিসি

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) এক বা একাধিক সাবসিডিয়ারি কোম্পানি গঠন করতে চায়। এসব কোম্পানির শেয়ার করপোরেশন নিজে ধারণ করতে পারবে এবং প্রয়োজনে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকেও ধারণের অনুমতি দিতে পারবে।

বিআইডব্লিউটিসি তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে এসব কোম্পানি করবে সরকারের পূর্বানুমোদন নিয়ে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়ায় এসব প্রস্তাব করা হয়েছে। খসড়ায় বিআইডব্লিউটিসির অনুমোদিত মূলধন ৪০ লাখ থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সম্প্রতি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এই অধ্যাদেশের খসড়ার বিষয়ে মতামতের জন্য উপস্থাপন করা হয়েছে।

খসড়া বিশ্লেষণে দেখা যায়, এতে বিআইডব্লিউটিসির কার্যক্রমে কিছু নতুন বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। এ জন্য বিআইডব্লিউটিসির দায়িত্ব ও কাজের পরিধি বাড়ানো হয়েছে। বিআইডব্লিউটিসি আন্তদেশীয় প্রটোকলের আওতায় নৌযান পরিচালনা করতে পারবে। পাশাপাশি অন্যান্য সরকারি সমজাতীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করে অভ্যন্তরীণ, উপকূলীয় ও আন্তদেশীয় প্রটোকল রুটে দুর্ঘটনাকবলিত, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত বা যেকোনো বিপর্যস্ত নৌযান উদ্ধারে সহায়তা করতে পারবে। এ ছাড়া বিআইডব্লিউটিসি পরিচালিত যেকোনো যাত্রী ও ফেরি নৌপথে নৌ যোগাযোগ ও পরিবহন সেবা যাতে নিরবচ্ছিন্নভাবে চালু থাকে, সে জন্য জরুরি প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট নৌপথে পলি অপসারণের কাজ করতে পারবে।

অধ্যাদেশের খসড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান মো. সলিমউল্লাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ক্যাবিনেটের নির্দেশনায় আগের অধ্যাদেশ পুনর্লিখন করা হচ্ছে। এর আওতায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের কার্যক্রম পরিচালিত হবে। আইনটিকে যুগোপযোগী করতে কিছু নতুন বিষয় যুক্ত করা হয়েছে, যাতে করপোরেশন আরও কার্যকর ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হতে পারে।

১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশে বিআইডব্লিউটিসি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পরে ১৯৭৬ এবং ১৯৭৯ সালে এই অধ্যাদেশে সংশোধন আনা হয়। পরবর্তী সময়ে এই অধ্যাদেশ সংশোধনের উদ্যোগ নিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি বলে জানান বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তারা।

নতুন অধ্যাদেশের খসড়ায় বিআইডব্লিউটিসির অনুমোদিত মূলধনের বিষয়ে পরিবর্তন এনে অনুমোদিত মূলধন ১ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী সরকার এই অর্থ দেবে। ভবিষ্যতে প্রয়োজনে সরকার গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই মূলধন আরও বাড়াতে পারবে। আগে করপোরেশনের অনুমোদিত মূলধন ছিল মাত্র ৪০ লাখ টাকা।

খসড়ায় বিআইডব্লিউটিসির পরিচালনা পর্ষদেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। আগে পরিচালনা পর্ষদে মোট পাঁচজন সদস্য ছিলেন। খসড়ায় আরও দুই সদস্য যুক্ত করে পরিচালনা পর্ষদের সদস্যসংখ্যা সাত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। নতুন যুক্ত দুই সদস্যের একজন হবেন নৌ মন্ত্রণালয় থেকে মনোনীত যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা, অন্যজন হবেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে মনোনীত একই পদমর্যাদার কর্মকর্তা। বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান ও চারজন পরিচালক পদাধিকার বলে পরিচালনা পর্ষদের সদস্য থাকবেন।

অধ্যাদেশের খসড়ায় বলা হয়েছে, বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান, পরিচালক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জনসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁদের সবার ক্ষেত্রে সরকারি কর্মচারীদের মতো আইন প্রযোজ্য হবে।

বিআইডব্লিউটিসি অধ্যাদেশের খসড়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নৌপরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক মো. ইমরান উদ্দিন বলেন, অধ্যাদেশের খসড়ার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলে তা দেশের নৌপরিবহন খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে আশা করা যায়। তবে শুধু কাগজ-কলমে আইন ও নীতি প্রণয়নেই সীমাবদ্ধ না থেকে প্রতিষ্ঠানটির সামগ্রিক সাংগঠনিক কাঠামোর সব কর্মপরিধি যাতে সুচারুভাবে সম্পন্ন হয় এবং দায়বদ্ধতার বিষয়গুলো যেন যথাযথভাবে নিশ্চিত করা হয়, সেদিকেও বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত