Ajker Patrika

মানবতাবিরোধী অপরাধ: শেখ হাসিনা, কামাল ও মামুনের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১০ জুলাই ২০২৫, ১৮: ২১
মানবতাবিরোধী অপরাধ: শেখ হাসিনা, কামাল ও মামুনের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়েছে আজ বৃহস্পতিবার।

গত ১ জুন এই তিনজনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। ওই দিন অভিযোগ আমলে নিয়ে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

তাঁদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব না হলে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এর পরও হাজির না হলে তাঁদের পলাতক দেখিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে তাঁদের জন্য আওয়ামীপন্থী আইনজীবী আমির হোসেনকে নিয়োগ দেন ট্রাইব্যুনাল।

আজ আইনজীবী আমির হোসেনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মুহাম্মদ তাজুল ইসলামসহ প্রসিকিউশন টিমের সদস্যরা।

আদালতে সাবেক আইজিপি মামুন বলেন, ‘আমি স্বেচ্ছায় মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত আমার জ্ঞানের মধ্যে থাকা সমস্ত পরিস্থিতির সত্য এবং বিস্তারিত প্রকাশ করতে ইচ্ছুক।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি নিজেকে দোষী সাব্যস্ত করছি। জুলাই-আগস্টের আন্দোলন চলাকালে যেসব অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তার বিস্তারিত বিবরণ আমি আদালতে তুলে ধরতে চাই। রহস্য উন্মোচনে আদালতকে সহায়তা করতে চাই।’

আইনজীবীরা বলেন, কোনো আসামি এ ধরনের স্বীকারোক্তি দিলে তাঁকে রাজসাক্ষী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সেই হিসেবে সাবেক আইজিপিকে এ মামলায় রাজসাক্ষী হিসেবে ধরা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগের বিচার আজ শুরু হয়েছে, তা নিচে উল্লেখ করা হলো।

অভিযোগ-১: ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে আসামি আসাদুজ্জামান খান কামাল, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ তৎকালীন সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায় তাঁদের অধীনস্থ ও নিয়ন্ত্রণাধীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসী কর্তৃক ব্যাপক মাত্রায়, পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ, নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণ। হত্যা, হত্যার চেষ্টা, নির্যাতন এবং অন্যান্য অমানবিক আচরণের অপরাধসমূহ সংঘটনের প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা, অপরাধ সংঘটন প্রতিরোধে ব্যর্থতা, অপরাধ সংঘটনের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি প্রদান না করা এবং ষড়যন্ত্র করার অপরাধ; যা আসামিদের জ্ঞাতসারে সংঘটিত।

অভিযোগ-২: শেখ হাসিনা কর্তৃক ছাত্র-জনতার ওপর হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের হত্যা করে নির্মূলের নির্দেশ এবং তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন কর্তৃক শেখ হাসিনার উক্ত নির্দেশ বাস্তবায়নে তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এবং অধীনস্থ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশনা দিয়ে কার্যকর করার মাধ্যমে অপরাধ সংঘটনের নির্দেশ প্রদান, সহায়তা, সম্পৃক্ততা এবং ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করেছে; যা তাঁদের জ্ঞাতসারে কার্যকর করা হয়েছে।

অভিযোগ-৩: শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য এবং মারণাস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে হত্যার নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায় ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে স্বল্প দূরত্ব থেকে সরাসরি নিরীহ-নিরস্ত্র আন্দোলনকারী ছাত্র আবু সাঈদের বুক লক্ষ্য করে বিনা উসকানিতে একাধিক গুলি চালিয়ে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা। আসামিদের জ্ঞাতসারে এবং তাদের কর্তৃক অপরাধ সংঘটনের নির্দেশ, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা এবং ষড়যন্ত্রসহ অন্যান্য অমানবিক আচরণ করার মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন।

অভিযোগ-৪: শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য এবং মারণাস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে হত্যার নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে আসাদুজ্জামান খান কামাল, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায় ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ঢাকা মহানগরীর চাঁনখারপুল এলাকায় আন্দোলনরত নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর তৎকালীন সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কর্তৃক নিরীহ-নিরস্ত্র ছয়জনকে গুলি করে হত্যা। উল্লেখিত আসামিদের জ্ঞাতসারে এবং তাদের কর্তৃক হত্যার নির্দেশ, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা এবং ষড়যন্ত্র করার মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন।

অভিযোগ-৫: শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য এবং মারণাস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে হত্যার নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে আসাদুজ্জামান খান কামাল, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায় ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানার সামনে এবং আশপাশ এলাকায় আন্দোলনরত নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর তৎকালীন সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কর্তৃক নিরীহ-নিরস্ত্র ছয়জনকে গুলি করে তাদের মধ্যে পাঁচজনের মৃতদেহ এবং একজনকে জীবিত ও গুরুতর আহত অবস্থায় আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার অপরাধ; যা আসামিদের জ্ঞাতসারে সংঘটিত হয়েছে। উক্তরূপ হত্যার নির্দেশ, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা এবং ষড়যন্ত্রসহ অন্যান্য অমানবিক আচরণের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন।

চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম গত ১ জুন তাঁর সূচনা বক্তব্যে বলেন, ‘২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের নারকীয় বীভৎসতা বাংলাদেশ ও বিশ্ববিবেককে স্তব্ধ করে দিয়েছিল। ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার উগ্র বাসনা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার চূড়ান্ত অপব্যবহার করে ব্যাপকভিত্তিক ও পদ্ধতিগতভাবে আক্রমণের মাধ্যমে সংঘটিত নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ ও সহিংসতা বাংলাদেশকে পরিণত করেছিল ৫৬ হাজার বর্গমাইল বিস্তৃত একটি বধ্যভূমিতে।

‘আমরা এই বিচার শুরু করেছি জাতির ইতিহাসের সেই বেদনাদায়ক অধ্যায়ে সংঘটিত অপরাধের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে, যেখানে নিরস্ত্র, নিরীহ সাধারণ নাগরিক, বিশেষ করে তরুণ ছাত্র-যুবক, নারী ও শিশু, যারা একটি ন্যায়ভিত্তিক ভবিষ্যতের জন্য বৈষম্য ও কোটা পদ্ধতি নামক কুপ্রথার অবসানের দাবিতে অহিংস ও ন্যায়সংগত আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল।’

তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রের প্রশাসনযন্ত্র পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা, অন্যান্য বাহিনী, সরকারি দলের রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং তাদের অধীনস্থ সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী এই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনে অংশগ্রহণ করে। তাই এই বিচার শুধু বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ই নয়, বরং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ “আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন”, “রোম স্ট্যাটিউট অব দি আইসিসি” এবং বাংলাদেশের ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল আইন অনুসারেও বিচারযোগ্য। এই বিচার অতীতের প্রতিশোধ নয়; এটি ভবিষ্যতের জন্য প্রতিজ্ঞা। আমরা প্রমাণ করতে চাই, একটি সভ্য সমাজ, যেখানে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন থাকবে, সেখানে গণহত্যা কিংবা মানবতাবিরোধী অপরাধ সহ্য করা হবে না। যে দেশে বিচার থাকবে, সেখানে কেউ আইনের ঊর্ধ্বে থাকতে পারে না, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে থাকবে না।’

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘বিচারের জন্য যেসব সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করা হচ্ছে তা হলো–প্রত্যক্ষদর্শী ও জীবিত ভিকটিমদের সাক্ষ্য, অপরাধ সংঘটনের সময় ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজ, ড্রোন এবং সিসিটিভি ফুটেজ, আসামিদের মধ্যে টেলিফোন সংলাপের অডিও ক্লিপস, ডিজিটাল অ্যাভিডেন্সের ফরেনসিক রিপোর্ট, আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত তথ্য-ছবি ও ভিডিও, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের প্রস্তুতকৃত প্রতিবেদন, বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সংস্থা থেকে প্রাপ্ত অফিশিয়াল ডকুমেন্টস ইত্যাদি।’

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আশ্বাসে আন্দোলন প্রত্যাহার করলেন প্রাথমিক শিক্ষকেরা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আজ সোমবার সন্ধ্যায় সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কনফারেন্স রুমে অর্থ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে কথা বলেন শিক্ষকদের নেতা খায়রুন নাহার লিপি। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সোমবার সন্ধ্যায় সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কনফারেন্স রুমে অর্থ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে কথা বলেন শিক্ষকদের নেতা খায়রুন নাহার লিপি। ছবি: আজকের পত্রিকা

একাদশ গ্রেডে বেতনের আশ্বাসে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। আজ সোমবার (১০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কনফারেন্স রুমে অর্থ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা শেষে এ ঘোষণা দেন তাঁরা।

সভা শেষে আন্দোলনরত শিক্ষক সংগঠনগুলোর মোর্চা ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের’ আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির (শাহিন-লিপি) সাধারণ সম্পাদক খায়রুন নাহার লিপি প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয় আমাদের একাদশ গ্রেডে বেতন দেওয়া হবে বলে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় আমাদের আশ্বাস দিয়েছে, এমনটা কখনো দেয়নি। তাই আমরা আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে সব কর্মসূচি প্রত্যাহার করব। শহীদ মিনারে গিয়ে নেতারা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন। আগামীকাল থেকে আমরা ক্লাসে ফিরে যাব।’

গত শনিবার থেকে দশম গ্রেডের দাবিতে শিক্ষকেরা লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলেন। আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদে তাঁরা গতকাল রোববার থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন। দশম গ্রেডে বেতন, চাকরির ১০ ও ১৬ বছরে উচ্চতর গ্রেড পাওয়া নিয়ে জটিলতা নিরসন এবং শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির নিশ্চয়তা দেওয়ার দাবি জানাচ্ছিলেন তাঁরা।

তৃতীয় দিনের অবস্থান ও দ্বিতীয় দিনের কর্মবিরতি শেষে অর্থ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা শেষে তাঁরা আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেন।

শিক্ষকদের ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির বিষয়ে জটিলতা প্রসঙ্গে অর্থসচিব বলেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে অর্থ বিভাগে একটি প্রস্তাব করলে অর্থ বিভাগ বিষয়টি পর্যালোচনা করবে। শিক্ষকদের শতভাগ পদোন্নতির বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিদ্যমান বিধিমালার আলোকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় পদক্ষেপ নেবে।

এর আগে গতকাল রোববার সারা দেশে কর্মবিরতি ও শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচির পর সন্ধ্যায় আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেই বৈঠকে আশানুরূপ সমাধান না এলেও প্রথমে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেন শিক্ষকেরা। তবে গভীর রাতে ফের কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষক নেতারা।

এ ঘোষণার পর আজ দেশের প্রায় সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ ছিল। বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির কোটালীপাড়া উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ওলিউল্লাহ হাওলাদার বলেন, ‘আমরা উপজেলার সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন সফল করার জন্য শ্রেণিকক্ষে পাঠদান বিরতিতে রয়েছি।’ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন ভক্ত বলেন, ঢাকার আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে কোটালীপাড়ায় সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মবিরতি করছেন শিক্ষকেরা। তবে তাঁরা বিদ্যালয়েই আছেন।

গাইবান্ধা সদর উপজেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. ময়নুর রহমান মিলন জানান, প্রাথমিকের কেন্দ্রীয় শিক্ষক সংগঠনগুলোর ঘোষিত কর্মসূচি সফল করার জন্য গাইবান্ধায় সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি চলছে। তিন দফা দাবি বাস্তবায়ন হলেই তাঁরা পুনরায় ক্লাসে ফিরবেন।

এই তিন দফা দাবিতে গত শনিবার সকাল থেকে শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষকেরা। ওই দিন বেলা সাড়ে ৩টার দিকে তাঁরা ‘কলমবিরতি কর্মসূচি’ পালনে মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে এগিয়ে যাওয়া শুরু করেন। বিকেল ৪টার দিকে শাহবাগ থানার সামনে তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ। এ সময় পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান, লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাসে কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যায় শিক্ষকদের। এ সময় দেড় শতাধিক শিক্ষক আহত হওয়ার পাশাপাশি পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করেন শিক্ষক নেতারা। এরপর ওই দিন রাতেই শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচির পাশাপাশি দেশজুড়ে কর্মবিরতির হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রাথমিকে সংগীত শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের বিধান কেন অবৈধ নয়—জানতে চেয়ে হাইকোর্টের রুল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ বাদ দেওয়া-সংক্রান্ত বিধান কেন আইনগত কর্তৃত্ব-বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। এ-সংক্রান্ত করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আজ সোমবার বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মো. আসিফ হাসানের বেঞ্চ এই রুল জারি করেন।শিক্ষাসচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষাসচিব এবং সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

গত ২৮ আগস্ট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা, ২০২৫-এর প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছিল। এর দুই মাসের মধ্যে ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালায়’ সংশোধন আনা হয়। সংশোধিত বিধিমালায় সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ বাদ দেওয়া হয়। সংশোধিত বিধিমালা গেজেটে ২ নভেম্বর প্রকাশ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

পরে সংশোধিত ওই বিধিমালার গেজেটের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সারওয়াত সিরাজ শুক্লা। রিটের পক্ষে শুক্লা নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ শফিকুর রহমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাজারে থাকা সব হ্যান্ডসেটের বৈধতা দিতে এনবিআরকে বিটিআরসির চিঠি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বাজারে থাকা অননুমোদিত সব মোবাইল হ্যান্ডসেটের বৈধতা দিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। চিঠিতে মোবাইল ফোন সেট ও ফোন সেট উৎপাদনের যন্ত্রাংশের আমদানি শুল্ক এবং দেশে উৎপাদিত হ্যান্ডসেটের ভ্যাট কমানোর কথাও বলা হয়েছে।

৪ নভেম্বর বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আমিনুল হক স্বাক্ষরিত চিঠিটি এনবিআর চেয়ারম্যানকে পাঠানো হয়। একই চিঠি অর্থসচিবের কাছেও পাঠানো হয়েছে।

আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে দেশে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এরই মধ্যে বিটিআরসির এমন পদক্ষেপের তথ্য সামনে এল। এনইআইআর কার্যকর হলে ১৬ ডিসেম্বর থেকে চালু হওয়া প্রতিটি হ্যান্ডসেট নিবন্ধিত হতে হবে। না হলে সেগুলো নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। চাইলেই একজনের সিম কার্ড আরেকজনের হ্যান্ডসেটে ব্যবহার করা যাবে না। তবে ১৬ ডিসেম্বরের আগপর্যন্ত নেটওয়ার্কে ব্যবহার হতে থাকা ফোনগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধন হবে। বিটিআরসি চাইছে, ব্যবহার হতে থাকা ফোনগুলোর পাশাপাশি যেগুলো ইতিমধ্যে দেশের বাজারে প্রবেশ করেছে, সেগুলোকেও বৈধ করা হোক।

বিটিআরসির চিঠিতে বলা হয়েছে, দেশের বাজারে দীর্ঘ সময় ধরে একটি উল্লেখযোগ্যসংখ্যক স্মার্টফোন হ্যান্ডসেট অবৈধ পথে অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এই খাতের সংশ্লিষ্টদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশের বাজারে যে সংখ্যক অননুমোদিত হ্যান্ডসেট রয়েছে, তার একটি বিশাল অংশ আগামী ১৬ ডিসেম্বর এনইআইআর সিস্টেম চালু হলে অবিক্রীত থেকে যাবে। পরবর্তী সময়ে এই হ্যান্ডসেটগুলো নেটওয়ার্কে ব্যবহারের সুযোগ থাকবে না। বিশাল আর্থিক লোকসান থেকে রক্ষা পেতে এই খাতের ব্যবসায়ীরা বিটিআরসিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছে। কারিগরি দিক বিবেচনায় অননুমোদিত হ্যান্ডসেটগুলোর আইএমইআই (ইউনিক কোড, যা প্রতিটি মোবাইল ফোনকে শনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়) বিটিআরসির ডেটাবেইসে সংযুক্ত করার সুযোগ রয়েছে। অননুমোদিত হ্যান্ডসেটগুলোর তথ্য বিটিআরসির ডেটাবেইসে সংযুক্ত হলে সে ক্ষেত্রে প্রযোজ্য শুল্কায়নের বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মতামতসহ সিদ্ধান্ত প্রয়োজন।

চিঠিতে মোবাইল ফোন ও ফোন উৎপাদনের যন্ত্রাংশের আমদানি শুল্ক এবং দেশে উৎপাদিত হ্যান্ডসেটের ভ্যাট কমানোর বিষয়ে বলা হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদন এবং আমদানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য আমদানি শুল্ক এবং উৎপাদিত পণ্যের ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) বেশি। তাই মোবাইল হ্যান্ডসেটের দাম অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি। তাই এ ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কার্যকরী ভূমিকার মাধ্যমে শুল্কহার যৌক্তিকভাবে পুনর্বিবেচনা করার সুযোগ রয়েছে।

চিঠিতে জানানো হয়, বর্তমানে বিদেশ থেকে আমদানি করা মোবাইল ফোন হ্যান্ডসেটের আমদানি শুল্ক প্রায় ৫৮ দশমিক ৬ শতাংশ। এনইআইআর সিস্টেম চালু হলে দেশে অবৈধ পথে হ্যান্ডসেট আনা বন্ধ হবে। ফলে দেশে মোবাইলের উৎপাদন বাড়বে। একই সঙ্গে যেসব ব্র্যান্ডের বা মডেলের মোবাইল হ্যান্ডসেট দেশে উৎপাদন হয় না, সেগুলোর বৈধভাবে আমদানির পরিমাণ বাড়বে। তাই মোবাইল হ্যান্ডসেট আমদানির ক্ষেত্রে বর্তমানে প্রযোজ্য উচ্চ আমদানি শুল্ক কমিয়ে আনা প্রয়োজন বলে মনে করে কমিশন।

চিঠিতে বিটিআরসি বলেছে, ‘বাংলাদেশে মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদন এবং আমদানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য আমদানি শুল্ক এবং উৎপাদিত পণ্যের মূল্য সংযোজন কর কমানোর জন্য যদি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়, তবে তা এমনভাবে সমন্বয় করতে হবে যাতে দেশের অভ্যন্তরে স্থাপিত মোবাইল হ্যান্ডসেট শিল্প এবং এ খাতে কর্মরত সকলের স্বার্থ রক্ষা হয়।’

সার্বিক দিক বিবেচনায় তিনটি বিষয়ে এনবিআরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানিয়েছে বিটিআরসি। এগুলো হলো ইতিমধ্যে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করা অননুমোদিত হ্যান্ডসেটগুলো বিটিআরসির ডেটাবেইসে সংযুক্ত করা হলে সে ক্ষেত্রে প্রযোজ্য শুল্কায়নের বিষয়ে সিদ্ধান্ত, দেশের অভ্যন্তরে কারখানায় মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদন এবং বিদেশ থেকে হ্যান্ডসেট আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক ও ভ্যাট কমানোর ব্যবস্থা এবং বিদেশ থেকে আমদানি করা ও দেশের অভ্যন্তরে তৈরি মোবাইল সেটের শুল্কের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।

বিটিআরসির উপপরিচালক (জনসংযোগ) মো. জাকির হোসেন খান এনবিআরের চেয়ারম্যানকে চিঠি পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে তিনি এ বিষয়ে এর বেশি কিছু জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সিইসির সঙ্গে বিজিবি মহাপরিচালকের বৈঠক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
এএমএম নাসির উদ্দিন ও বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী । ছবি: সংগৃহীত
এএমএম নাসির উদ্দিন ও বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী । ছবি: সংগৃহীত

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী।

আজ সোমবার সকালে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সিইসির কার্যালয়ে ঘণ্টাখানেক বৈঠক করেন তিনি। এ সময় নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

তবে কী বিষয় নিয়ে বিজিবি মহাপরিচালক সিইসির সঙ্গে বৈঠক করেন, সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত