মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ, ঢাকা

সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও অসংক্রামক রোগের (হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি) দৌরাত্ম্য বেড়েছে। মৃত্যুর দুই-তৃতীয়াংশের বেশি ঘটছে বিভিন্ন অসংক্রামক ও দীর্ঘমেয়াদি রোগে। তবে কয়েকটি সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাবও জনস্বাস্থ্যসংশ্লিষ্টদের উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। বিশেষ করে মশা ও মাছিবাহিত এমন ছয়টি রোগ দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার ওপর চাপ বাড়াচ্ছে। জনস্বাস্থ্য এবং সেই সূত্রে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে উঠছে এসব রোগ।
জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, মশাবাহিত রোগগুলো নিয়ে কয়েক দশকের সরকারি কার্যক্রমের সুবাদে কয়েকটি রোগ নির্মূল বা নিয়ন্ত্রণ করা গেছে। আবার কয়েকটি মহামারি আকার ধারণ করেছে। বর্তমানে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়া, জাপানিজ এনকেফালাইটিস ও জিকা রোগের প্রকোপ দেখা যাচ্ছে দেশে। এর মধ্যে গত ছয় বছরে ডেঙ্গুর সংক্রমণ হয়েছে সবচেয়ে বেশি। মাত্রায় এর পর রয়েছে ম্যালেরিয়া ও চিকুনগুনিয়া। মশা নির্মূলে বিজ্ঞানসম্মত পন্থা অবলম্বন না করা, রোগের জিনভিত্তিক গবেষণার অনুপস্থিতি, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং রোগ ও রোগী ব্যবস্থাপনার ঘাটতি মশাবাহিত রোগের বিস্তার ঘটাচ্ছে।
মশা নিয়ন্ত্রণে বিশ্বে নেতৃস্থানীয় অলাভজনক সংস্থা অ্যামেরিকান মসকিউটো কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের (এএমসিএ) তথ্যমতে, অন্য যেকোনো জীবের তুলনায় মশা মানুষের জন্য বেশি দুর্ভোগ সৃষ্টি করে। বিশ্বে বছরে ১০ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয় মশাবাহিত রোগের কারণে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের জনস্বাস্থ্য বিভাগ ও অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটির ওয়ার্ল্ড মসকিউটো প্রোগ্রামের ভাষ্য, বিশ্বে সাড়ে ৩ হাজারের বেশি প্রজাতির মশা রয়েছে। এই দুই কর্তৃপক্ষের তথ্য বলছে, এর মধ্যে ১০০ প্রজাতির মশা মানবদেহে অন্তত ২০টি প্রাণঘাতী রোগ ছড়াতে সক্ষম। বাংলাদেশে ঠিক কত প্রজাতির মশা রয়েছে তার নিশ্চিত তথ্য বিশেষজ্ঞদের কাছে নেই।
মশাবাহিত রোগগুলো
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোটা দাগে ছয়-সাতটি মশা ও মাছিবাহিত রোগ দেখা যায়। এগুলো হচ্ছে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়া, জিকা, ফাইলেরিয়া, জাপানিজ এনকেফালাইটিস ও কালাজ্বর। বাংলাদেশে বিরল হলেও ওয়েস্ট নাইল জ্বরের সংক্রমণও শনাক্ত হয়েছে। এ দেশে এডিস মশা চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু, লিম্ফ্যাটিক ফাইলেরিয়াসিস, জিকা; অ্যানোফিলিস প্রজাতির মশা লিম্ফ্যাটিক ফাইলেরিয়াসিস, ম্যালেরিয়া; কিউলেক্স মশা জাপানিজ এনকেফালাইটিস, লিম্ফ্যাটিক ফাইলেরিয়াসিস, ওয়েস্ট নাইল ফিভার ও ফাইলেরিয়া এবং স্যান্ডফ্লাই নামের এক প্রকার মাছি কালাজ্বরের বাহক হিসেবে কাজ করে।
ডেঙ্গু
দেশে মশাবাহিত রোগগুলোর মধ্যে এখন ডেঙ্গুর সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি হচ্ছে। শুরুর দিকে রাজধানী ঢাকায় সীমিত থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের সব অঞ্চলে বড় পরিসরে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ছড়িয়েছে। ২০০০ সালে প্রথম এ রোগের নিয়মিত পরিসংখ্যান রাখতে শুরু করে সরকারের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। ২০১৯ সালে শহর ও গ্রাম উভয় স্থানে ছড়িয়ে পড়ে ডেঙ্গু। সে বছর লাখের বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। তাদের মধ্যে দেড় শর বেশি রোগীর মৃত্যু হয়। ২০০০ থেকে ২০২২ সাল—এ ২৩ বছরে ডেঙ্গু রোগীর মোট সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৪৪ হাজার ২৪৬। এর মধ্যে মারা গেছে ৮৫০ রোগী। সর্বোচ্চ আক্রান্তের বছর ছিল ২০২৩। সে বছর হাসপাতালে ভর্তি হয় ৩ লাখ ২১ হাজারের বেশি রোগী। মারা যায় ১ হাজার ৭০৫ জন। গত বছর ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন রোগীর বিপরীতে মারা গেছে ৫৭৫ জন। আর চলতি বছরের শুরু থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত ১১ হাজারের বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৪৪ জনের।
ডেঙ্গুতে বাংলাদেশেই মৃত্যু সবচেয়ে বেশি, এমনটি জানা যায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (ইসিডিসি) ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য বিশ্লেষণে। এদের তথ্য বলছে, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিলে। দেশটিতে গত বছর প্রায় ১ কোটি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার। গত বছর রোগীর অনুপাতে ব্রাজিলে মৃত্যুহার ছিল শূন্য দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ আর বাংলাদেশে ছিল শূন্য দশমিক ৫৬ শতাংশ।
চিকুনগুনিয়া
ডেঙ্গুর মতোই চিকুনগুনিয়াও ছড়ায় এডিস মশার মাধ্যমে। রোগ দুটির উপসর্গে কিছু মিলও আছে। বাংলাদেশে প্রথম চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয় ২০০৮ সালে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে। ২০১১ সালে ঢাকার দোহারে কিছু রোগী পাওয়া যায়। এর পরের বছরগুলোতে কমবেশি সংক্রমণ দেখা গেছে। তবে ২০১৭ সালে দেশজুড়ে এ ভাইরাল রোগটি ছড়িয়ে পড়ে। গত বছরের ডিসেম্বরে আইইডিসিআর জানায়, দেশে জিকা ভাইরাসে ১১ জন এবং চিকুনগুনিয়ায় ৬৭ জন আক্রান্ত হয়েছে। চলতি বছরেও চিকুনগুনিয়া রোগী পাওয়া যাচ্ছে। গত জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত পাঁচ মাসে ৩৩৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৫৩ জনের দেহে চিকুনগুনিয়ার ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে আইইডিসিআর।
ম্যালেরিয়া
ম্যালেরিয়াই সম্ভবত সবচেয়ে পরিচিত মশাবাহিত রোগ। স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশা ম্যালেরিয়া রোগের জীবাণু ছড়ায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০০৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সারা দেশে ৬ লাখ ১ হাজার মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছে ৬৬৩ জন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ২ হাজার রোগী পাওয়া গেছে। আর মারা গেছে ১ জন। দুই দশক ধরে দেশে ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ নিম্নমুখী থাকলেও গত তিন বছরে সংক্রমণ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা জানিয়েছে, সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় রোগটি নির্মূল করা যায়নি। চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগের ১৩ জেলায় ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। জেলাগুলো হলো কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, শেরপুর, কুড়িগ্রাম, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সিলেট ও মৌলভীবাজার। তবে মোট ম্যালেরিয়া রোগীর দুই-তৃতীয়াংশই পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলার। গভীর জঙ্গলে অ্যানোফিলিস মশার প্রকোপ বেশি হওয়ায় পার্বত্য অঞ্চলে রোগী বেশি বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অবশ্য বলছে, আগের চেয়ে ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ ৭৯ শতাংশ কমেছে। মৃত্যুও কমেছে ৯১ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও আইইডিসিআর জানিয়েছে, কিউলেক্স মশার দুটি প্রজাতি ও ম্যানসোনিয়া মশা ফাইলেরিয়া বা গোদ রোগ ছড়াচ্ছে। গোদ রোগে জ্বর ও ঠান্ডা লাগে এবং জটিল হলে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ব্যাপকভাবে ফুলে যায়। দেশের অন্তত ৩৪টি জেলায় এ রোগ দেখা যাচ্ছে। কালাজ্বরের বাহক হিসেবে কাজ করে স্যান্ডফ্লাই নামের মাছি। দেশে ১৯৯৩ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত দেড় লাখ কালাজ্বরের রোগী পাওয়া গেছে। তবে বাংলাদেশ গোদ ও কালাজ্বর মোটের ওপর নিয়ন্ত্রণ করেছে বলে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মিলেছে।
বাংলাদেশে প্রথম জাপানিজ এনকেফালাইটিস রোগী শনাক্ত হয় ১৯৭৭ সালে টাঙ্গাইলের মধুপুর বন এলাকায়। পরবর্তী সময়ে রাজশাহী, রংপুর, চট্টগ্রাম ও খুলনা অঞ্চলেও রোগটি পাওয়া যায়। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশের মৃত্যু হয় বলে বৈশ্বিক বিভিন্ন জনস্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্থা উল্লেখ করেছে। এই রোগের জন্য বাংলাদেশকে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় রেখেছে যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি)। দেশে ওয়েস্ট নাইল ভাইরাসবাহিত জ্বর ও জিকার সংক্রমণও শনাক্ত হয়েছে। তবে এই দুটি রোগ তেমন ছড়িয়ে পড়ার তথ্য পাওয়া যায়নি।
কীটতত্ত্ব ও রোগতত্ত্ববিদেরা যা বলেন
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন, দ্রুত ও অপরিকল্পিত নগরায়ণ, মানুষের চলাফেরা বৃদ্ধি, অনুপযুক্ত পানি নিষ্কাশনব্যবস্থা, শিক্ষা ও সচেতনতার অভাব ইত্যাদি মশাবাহিত রোগ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।
জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. গোলাম ছারোয়ার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ ধরনের রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য দেশে সে রকম কোনো গাইডলাইন নেই। মশা বা মাছিবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য মেডিকেল এন্টোমলজিস্টের প্রয়োজন। কিন্তু দেশে মেডিকেল এন্টোমলজিতে একাডেমিক ডিগ্রি প্রদানের প্রতিষ্ঠানই নেই। মেডিকেল এন্টোমলজির ওপর স্নাতকোত্তর চালুর জন্য আমরা চেষ্টা করছি। এসব সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণার জন্য উচ্চ প্রযুক্তির পরীক্ষাগারও প্রয়োজন।’
মশা বা মাছিবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য মশা নির্মূলে বৈজ্ঞানিক উপায় অবলম্বন করা, গবেষণা এবং জনসম্পৃক্ততার তাগিদ দিলেন ড. ছারোয়ার।
দেশে ফাইলেরিয়া ও কালাজ্বর নিয়ন্ত্রণ করা গেছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, ‘কোনো রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকা মানে সেই রোগ নিয়ে কম সতর্ক থাকার সুযোগ নেই। ম্যালেরিয়া নিয়ে ব্যাপক কাজ হয়েছে বলেই রোগটি দেশে ১৩ জেলায় সীমাবদ্ধ।’
ডেঙ্গু ভবিষ্যতে দেশে আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে উল্লেখ করে এ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘কোনো দেশে এই রোগ একবার প্রবেশ করলে তা বের হয় না। গত ২৫ বছরে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের ধারেকাছেও যাওয়া যায়নি। বরং এখন সারা দেশে ছড়িয়ে গেছে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সঠিকভাবে কার্যক্রম চালানো হয়নি। এডিস মশা নির্মূল করা গেলে চিকুনগুনিয়াও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। আর জাপানিজ এনকেফালাইটিস মারাত্মক রোগ। মস্তিষ্কে সংক্রমণ ছড়ায় বলে মৃত্যুহার অনেক বেশি।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. মো. হালিমুর রশিদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মশা বা মাছি নির্মূলের কাজ স্থানীয় সরকারের। আমরা স্থানীয় সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছি। এসব রোগের প্রকোপ বাড়লে স্বাস্থ্য বিভাগের ওপর চাপ বাড়বে। বাহক বাহিত রোগের বাহক নির্মূলের জন্য শুধু কর্তৃপক্ষ নয়, জনগণেরও দায়িত্ব আছে। জনসম্পৃক্ততা ছাড়া এসব রোগের বাহক ও রোগ নিয়ন্ত্রণ সহজ নয়।’

সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও অসংক্রামক রোগের (হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি) দৌরাত্ম্য বেড়েছে। মৃত্যুর দুই-তৃতীয়াংশের বেশি ঘটছে বিভিন্ন অসংক্রামক ও দীর্ঘমেয়াদি রোগে। তবে কয়েকটি সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাবও জনস্বাস্থ্যসংশ্লিষ্টদের উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। বিশেষ করে মশা ও মাছিবাহিত এমন ছয়টি রোগ দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার ওপর চাপ বাড়াচ্ছে। জনস্বাস্থ্য এবং সেই সূত্রে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে উঠছে এসব রোগ।
জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, মশাবাহিত রোগগুলো নিয়ে কয়েক দশকের সরকারি কার্যক্রমের সুবাদে কয়েকটি রোগ নির্মূল বা নিয়ন্ত্রণ করা গেছে। আবার কয়েকটি মহামারি আকার ধারণ করেছে। বর্তমানে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়া, জাপানিজ এনকেফালাইটিস ও জিকা রোগের প্রকোপ দেখা যাচ্ছে দেশে। এর মধ্যে গত ছয় বছরে ডেঙ্গুর সংক্রমণ হয়েছে সবচেয়ে বেশি। মাত্রায় এর পর রয়েছে ম্যালেরিয়া ও চিকুনগুনিয়া। মশা নির্মূলে বিজ্ঞানসম্মত পন্থা অবলম্বন না করা, রোগের জিনভিত্তিক গবেষণার অনুপস্থিতি, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং রোগ ও রোগী ব্যবস্থাপনার ঘাটতি মশাবাহিত রোগের বিস্তার ঘটাচ্ছে।
মশা নিয়ন্ত্রণে বিশ্বে নেতৃস্থানীয় অলাভজনক সংস্থা অ্যামেরিকান মসকিউটো কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের (এএমসিএ) তথ্যমতে, অন্য যেকোনো জীবের তুলনায় মশা মানুষের জন্য বেশি দুর্ভোগ সৃষ্টি করে। বিশ্বে বছরে ১০ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয় মশাবাহিত রোগের কারণে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের জনস্বাস্থ্য বিভাগ ও অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটির ওয়ার্ল্ড মসকিউটো প্রোগ্রামের ভাষ্য, বিশ্বে সাড়ে ৩ হাজারের বেশি প্রজাতির মশা রয়েছে। এই দুই কর্তৃপক্ষের তথ্য বলছে, এর মধ্যে ১০০ প্রজাতির মশা মানবদেহে অন্তত ২০টি প্রাণঘাতী রোগ ছড়াতে সক্ষম। বাংলাদেশে ঠিক কত প্রজাতির মশা রয়েছে তার নিশ্চিত তথ্য বিশেষজ্ঞদের কাছে নেই।
মশাবাহিত রোগগুলো
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোটা দাগে ছয়-সাতটি মশা ও মাছিবাহিত রোগ দেখা যায়। এগুলো হচ্ছে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়া, জিকা, ফাইলেরিয়া, জাপানিজ এনকেফালাইটিস ও কালাজ্বর। বাংলাদেশে বিরল হলেও ওয়েস্ট নাইল জ্বরের সংক্রমণও শনাক্ত হয়েছে। এ দেশে এডিস মশা চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু, লিম্ফ্যাটিক ফাইলেরিয়াসিস, জিকা; অ্যানোফিলিস প্রজাতির মশা লিম্ফ্যাটিক ফাইলেরিয়াসিস, ম্যালেরিয়া; কিউলেক্স মশা জাপানিজ এনকেফালাইটিস, লিম্ফ্যাটিক ফাইলেরিয়াসিস, ওয়েস্ট নাইল ফিভার ও ফাইলেরিয়া এবং স্যান্ডফ্লাই নামের এক প্রকার মাছি কালাজ্বরের বাহক হিসেবে কাজ করে।
ডেঙ্গু
দেশে মশাবাহিত রোগগুলোর মধ্যে এখন ডেঙ্গুর সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি হচ্ছে। শুরুর দিকে রাজধানী ঢাকায় সীমিত থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের সব অঞ্চলে বড় পরিসরে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ছড়িয়েছে। ২০০০ সালে প্রথম এ রোগের নিয়মিত পরিসংখ্যান রাখতে শুরু করে সরকারের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। ২০১৯ সালে শহর ও গ্রাম উভয় স্থানে ছড়িয়ে পড়ে ডেঙ্গু। সে বছর লাখের বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। তাদের মধ্যে দেড় শর বেশি রোগীর মৃত্যু হয়। ২০০০ থেকে ২০২২ সাল—এ ২৩ বছরে ডেঙ্গু রোগীর মোট সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৪৪ হাজার ২৪৬। এর মধ্যে মারা গেছে ৮৫০ রোগী। সর্বোচ্চ আক্রান্তের বছর ছিল ২০২৩। সে বছর হাসপাতালে ভর্তি হয় ৩ লাখ ২১ হাজারের বেশি রোগী। মারা যায় ১ হাজার ৭০৫ জন। গত বছর ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন রোগীর বিপরীতে মারা গেছে ৫৭৫ জন। আর চলতি বছরের শুরু থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত ১১ হাজারের বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৪৪ জনের।
ডেঙ্গুতে বাংলাদেশেই মৃত্যু সবচেয়ে বেশি, এমনটি জানা যায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (ইসিডিসি) ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য বিশ্লেষণে। এদের তথ্য বলছে, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিলে। দেশটিতে গত বছর প্রায় ১ কোটি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার। গত বছর রোগীর অনুপাতে ব্রাজিলে মৃত্যুহার ছিল শূন্য দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ আর বাংলাদেশে ছিল শূন্য দশমিক ৫৬ শতাংশ।
চিকুনগুনিয়া
ডেঙ্গুর মতোই চিকুনগুনিয়াও ছড়ায় এডিস মশার মাধ্যমে। রোগ দুটির উপসর্গে কিছু মিলও আছে। বাংলাদেশে প্রথম চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয় ২০০৮ সালে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে। ২০১১ সালে ঢাকার দোহারে কিছু রোগী পাওয়া যায়। এর পরের বছরগুলোতে কমবেশি সংক্রমণ দেখা গেছে। তবে ২০১৭ সালে দেশজুড়ে এ ভাইরাল রোগটি ছড়িয়ে পড়ে। গত বছরের ডিসেম্বরে আইইডিসিআর জানায়, দেশে জিকা ভাইরাসে ১১ জন এবং চিকুনগুনিয়ায় ৬৭ জন আক্রান্ত হয়েছে। চলতি বছরেও চিকুনগুনিয়া রোগী পাওয়া যাচ্ছে। গত জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত পাঁচ মাসে ৩৩৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৫৩ জনের দেহে চিকুনগুনিয়ার ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে আইইডিসিআর।
ম্যালেরিয়া
ম্যালেরিয়াই সম্ভবত সবচেয়ে পরিচিত মশাবাহিত রোগ। স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশা ম্যালেরিয়া রোগের জীবাণু ছড়ায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০০৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সারা দেশে ৬ লাখ ১ হাজার মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছে ৬৬৩ জন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ২ হাজার রোগী পাওয়া গেছে। আর মারা গেছে ১ জন। দুই দশক ধরে দেশে ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ নিম্নমুখী থাকলেও গত তিন বছরে সংক্রমণ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা জানিয়েছে, সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় রোগটি নির্মূল করা যায়নি। চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগের ১৩ জেলায় ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। জেলাগুলো হলো কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, শেরপুর, কুড়িগ্রাম, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সিলেট ও মৌলভীবাজার। তবে মোট ম্যালেরিয়া রোগীর দুই-তৃতীয়াংশই পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলার। গভীর জঙ্গলে অ্যানোফিলিস মশার প্রকোপ বেশি হওয়ায় পার্বত্য অঞ্চলে রোগী বেশি বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অবশ্য বলছে, আগের চেয়ে ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ ৭৯ শতাংশ কমেছে। মৃত্যুও কমেছে ৯১ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও আইইডিসিআর জানিয়েছে, কিউলেক্স মশার দুটি প্রজাতি ও ম্যানসোনিয়া মশা ফাইলেরিয়া বা গোদ রোগ ছড়াচ্ছে। গোদ রোগে জ্বর ও ঠান্ডা লাগে এবং জটিল হলে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ব্যাপকভাবে ফুলে যায়। দেশের অন্তত ৩৪টি জেলায় এ রোগ দেখা যাচ্ছে। কালাজ্বরের বাহক হিসেবে কাজ করে স্যান্ডফ্লাই নামের মাছি। দেশে ১৯৯৩ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত দেড় লাখ কালাজ্বরের রোগী পাওয়া গেছে। তবে বাংলাদেশ গোদ ও কালাজ্বর মোটের ওপর নিয়ন্ত্রণ করেছে বলে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মিলেছে।
বাংলাদেশে প্রথম জাপানিজ এনকেফালাইটিস রোগী শনাক্ত হয় ১৯৭৭ সালে টাঙ্গাইলের মধুপুর বন এলাকায়। পরবর্তী সময়ে রাজশাহী, রংপুর, চট্টগ্রাম ও খুলনা অঞ্চলেও রোগটি পাওয়া যায়। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশের মৃত্যু হয় বলে বৈশ্বিক বিভিন্ন জনস্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্থা উল্লেখ করেছে। এই রোগের জন্য বাংলাদেশকে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় রেখেছে যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি)। দেশে ওয়েস্ট নাইল ভাইরাসবাহিত জ্বর ও জিকার সংক্রমণও শনাক্ত হয়েছে। তবে এই দুটি রোগ তেমন ছড়িয়ে পড়ার তথ্য পাওয়া যায়নি।
কীটতত্ত্ব ও রোগতত্ত্ববিদেরা যা বলেন
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন, দ্রুত ও অপরিকল্পিত নগরায়ণ, মানুষের চলাফেরা বৃদ্ধি, অনুপযুক্ত পানি নিষ্কাশনব্যবস্থা, শিক্ষা ও সচেতনতার অভাব ইত্যাদি মশাবাহিত রোগ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।
জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. গোলাম ছারোয়ার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ ধরনের রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য দেশে সে রকম কোনো গাইডলাইন নেই। মশা বা মাছিবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য মেডিকেল এন্টোমলজিস্টের প্রয়োজন। কিন্তু দেশে মেডিকেল এন্টোমলজিতে একাডেমিক ডিগ্রি প্রদানের প্রতিষ্ঠানই নেই। মেডিকেল এন্টোমলজির ওপর স্নাতকোত্তর চালুর জন্য আমরা চেষ্টা করছি। এসব সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণার জন্য উচ্চ প্রযুক্তির পরীক্ষাগারও প্রয়োজন।’
মশা বা মাছিবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য মশা নির্মূলে বৈজ্ঞানিক উপায় অবলম্বন করা, গবেষণা এবং জনসম্পৃক্ততার তাগিদ দিলেন ড. ছারোয়ার।
দেশে ফাইলেরিয়া ও কালাজ্বর নিয়ন্ত্রণ করা গেছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, ‘কোনো রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকা মানে সেই রোগ নিয়ে কম সতর্ক থাকার সুযোগ নেই। ম্যালেরিয়া নিয়ে ব্যাপক কাজ হয়েছে বলেই রোগটি দেশে ১৩ জেলায় সীমাবদ্ধ।’
ডেঙ্গু ভবিষ্যতে দেশে আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে উল্লেখ করে এ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘কোনো দেশে এই রোগ একবার প্রবেশ করলে তা বের হয় না। গত ২৫ বছরে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের ধারেকাছেও যাওয়া যায়নি। বরং এখন সারা দেশে ছড়িয়ে গেছে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সঠিকভাবে কার্যক্রম চালানো হয়নি। এডিস মশা নির্মূল করা গেলে চিকুনগুনিয়াও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। আর জাপানিজ এনকেফালাইটিস মারাত্মক রোগ। মস্তিষ্কে সংক্রমণ ছড়ায় বলে মৃত্যুহার অনেক বেশি।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. মো. হালিমুর রশিদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মশা বা মাছি নির্মূলের কাজ স্থানীয় সরকারের। আমরা স্থানীয় সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছি। এসব রোগের প্রকোপ বাড়লে স্বাস্থ্য বিভাগের ওপর চাপ বাড়বে। বাহক বাহিত রোগের বাহক নির্মূলের জন্য শুধু কর্তৃপক্ষ নয়, জনগণেরও দায়িত্ব আছে। জনসম্পৃক্ততা ছাড়া এসব রোগের বাহক ও রোগ নিয়ন্ত্রণ সহজ নয়।’
মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ, ঢাকা

সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও অসংক্রামক রোগের (হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি) দৌরাত্ম্য বেড়েছে। মৃত্যুর দুই-তৃতীয়াংশের বেশি ঘটছে বিভিন্ন অসংক্রামক ও দীর্ঘমেয়াদি রোগে। তবে কয়েকটি সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাবও জনস্বাস্থ্যসংশ্লিষ্টদের উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। বিশেষ করে মশা ও মাছিবাহিত এমন ছয়টি রোগ দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার ওপর চাপ বাড়াচ্ছে। জনস্বাস্থ্য এবং সেই সূত্রে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে উঠছে এসব রোগ।
জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, মশাবাহিত রোগগুলো নিয়ে কয়েক দশকের সরকারি কার্যক্রমের সুবাদে কয়েকটি রোগ নির্মূল বা নিয়ন্ত্রণ করা গেছে। আবার কয়েকটি মহামারি আকার ধারণ করেছে। বর্তমানে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়া, জাপানিজ এনকেফালাইটিস ও জিকা রোগের প্রকোপ দেখা যাচ্ছে দেশে। এর মধ্যে গত ছয় বছরে ডেঙ্গুর সংক্রমণ হয়েছে সবচেয়ে বেশি। মাত্রায় এর পর রয়েছে ম্যালেরিয়া ও চিকুনগুনিয়া। মশা নির্মূলে বিজ্ঞানসম্মত পন্থা অবলম্বন না করা, রোগের জিনভিত্তিক গবেষণার অনুপস্থিতি, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং রোগ ও রোগী ব্যবস্থাপনার ঘাটতি মশাবাহিত রোগের বিস্তার ঘটাচ্ছে।
মশা নিয়ন্ত্রণে বিশ্বে নেতৃস্থানীয় অলাভজনক সংস্থা অ্যামেরিকান মসকিউটো কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের (এএমসিএ) তথ্যমতে, অন্য যেকোনো জীবের তুলনায় মশা মানুষের জন্য বেশি দুর্ভোগ সৃষ্টি করে। বিশ্বে বছরে ১০ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয় মশাবাহিত রোগের কারণে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের জনস্বাস্থ্য বিভাগ ও অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটির ওয়ার্ল্ড মসকিউটো প্রোগ্রামের ভাষ্য, বিশ্বে সাড়ে ৩ হাজারের বেশি প্রজাতির মশা রয়েছে। এই দুই কর্তৃপক্ষের তথ্য বলছে, এর মধ্যে ১০০ প্রজাতির মশা মানবদেহে অন্তত ২০টি প্রাণঘাতী রোগ ছড়াতে সক্ষম। বাংলাদেশে ঠিক কত প্রজাতির মশা রয়েছে তার নিশ্চিত তথ্য বিশেষজ্ঞদের কাছে নেই।
মশাবাহিত রোগগুলো
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোটা দাগে ছয়-সাতটি মশা ও মাছিবাহিত রোগ দেখা যায়। এগুলো হচ্ছে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়া, জিকা, ফাইলেরিয়া, জাপানিজ এনকেফালাইটিস ও কালাজ্বর। বাংলাদেশে বিরল হলেও ওয়েস্ট নাইল জ্বরের সংক্রমণও শনাক্ত হয়েছে। এ দেশে এডিস মশা চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু, লিম্ফ্যাটিক ফাইলেরিয়াসিস, জিকা; অ্যানোফিলিস প্রজাতির মশা লিম্ফ্যাটিক ফাইলেরিয়াসিস, ম্যালেরিয়া; কিউলেক্স মশা জাপানিজ এনকেফালাইটিস, লিম্ফ্যাটিক ফাইলেরিয়াসিস, ওয়েস্ট নাইল ফিভার ও ফাইলেরিয়া এবং স্যান্ডফ্লাই নামের এক প্রকার মাছি কালাজ্বরের বাহক হিসেবে কাজ করে।
ডেঙ্গু
দেশে মশাবাহিত রোগগুলোর মধ্যে এখন ডেঙ্গুর সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি হচ্ছে। শুরুর দিকে রাজধানী ঢাকায় সীমিত থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের সব অঞ্চলে বড় পরিসরে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ছড়িয়েছে। ২০০০ সালে প্রথম এ রোগের নিয়মিত পরিসংখ্যান রাখতে শুরু করে সরকারের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। ২০১৯ সালে শহর ও গ্রাম উভয় স্থানে ছড়িয়ে পড়ে ডেঙ্গু। সে বছর লাখের বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। তাদের মধ্যে দেড় শর বেশি রোগীর মৃত্যু হয়। ২০০০ থেকে ২০২২ সাল—এ ২৩ বছরে ডেঙ্গু রোগীর মোট সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৪৪ হাজার ২৪৬। এর মধ্যে মারা গেছে ৮৫০ রোগী। সর্বোচ্চ আক্রান্তের বছর ছিল ২০২৩। সে বছর হাসপাতালে ভর্তি হয় ৩ লাখ ২১ হাজারের বেশি রোগী। মারা যায় ১ হাজার ৭০৫ জন। গত বছর ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন রোগীর বিপরীতে মারা গেছে ৫৭৫ জন। আর চলতি বছরের শুরু থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত ১১ হাজারের বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৪৪ জনের।
ডেঙ্গুতে বাংলাদেশেই মৃত্যু সবচেয়ে বেশি, এমনটি জানা যায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (ইসিডিসি) ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য বিশ্লেষণে। এদের তথ্য বলছে, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিলে। দেশটিতে গত বছর প্রায় ১ কোটি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার। গত বছর রোগীর অনুপাতে ব্রাজিলে মৃত্যুহার ছিল শূন্য দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ আর বাংলাদেশে ছিল শূন্য দশমিক ৫৬ শতাংশ।
চিকুনগুনিয়া
ডেঙ্গুর মতোই চিকুনগুনিয়াও ছড়ায় এডিস মশার মাধ্যমে। রোগ দুটির উপসর্গে কিছু মিলও আছে। বাংলাদেশে প্রথম চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয় ২০০৮ সালে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে। ২০১১ সালে ঢাকার দোহারে কিছু রোগী পাওয়া যায়। এর পরের বছরগুলোতে কমবেশি সংক্রমণ দেখা গেছে। তবে ২০১৭ সালে দেশজুড়ে এ ভাইরাল রোগটি ছড়িয়ে পড়ে। গত বছরের ডিসেম্বরে আইইডিসিআর জানায়, দেশে জিকা ভাইরাসে ১১ জন এবং চিকুনগুনিয়ায় ৬৭ জন আক্রান্ত হয়েছে। চলতি বছরেও চিকুনগুনিয়া রোগী পাওয়া যাচ্ছে। গত জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত পাঁচ মাসে ৩৩৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৫৩ জনের দেহে চিকুনগুনিয়ার ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে আইইডিসিআর।
ম্যালেরিয়া
ম্যালেরিয়াই সম্ভবত সবচেয়ে পরিচিত মশাবাহিত রোগ। স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশা ম্যালেরিয়া রোগের জীবাণু ছড়ায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০০৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সারা দেশে ৬ লাখ ১ হাজার মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছে ৬৬৩ জন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ২ হাজার রোগী পাওয়া গেছে। আর মারা গেছে ১ জন। দুই দশক ধরে দেশে ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ নিম্নমুখী থাকলেও গত তিন বছরে সংক্রমণ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা জানিয়েছে, সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় রোগটি নির্মূল করা যায়নি। চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগের ১৩ জেলায় ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। জেলাগুলো হলো কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, শেরপুর, কুড়িগ্রাম, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সিলেট ও মৌলভীবাজার। তবে মোট ম্যালেরিয়া রোগীর দুই-তৃতীয়াংশই পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলার। গভীর জঙ্গলে অ্যানোফিলিস মশার প্রকোপ বেশি হওয়ায় পার্বত্য অঞ্চলে রোগী বেশি বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অবশ্য বলছে, আগের চেয়ে ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ ৭৯ শতাংশ কমেছে। মৃত্যুও কমেছে ৯১ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও আইইডিসিআর জানিয়েছে, কিউলেক্স মশার দুটি প্রজাতি ও ম্যানসোনিয়া মশা ফাইলেরিয়া বা গোদ রোগ ছড়াচ্ছে। গোদ রোগে জ্বর ও ঠান্ডা লাগে এবং জটিল হলে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ব্যাপকভাবে ফুলে যায়। দেশের অন্তত ৩৪টি জেলায় এ রোগ দেখা যাচ্ছে। কালাজ্বরের বাহক হিসেবে কাজ করে স্যান্ডফ্লাই নামের মাছি। দেশে ১৯৯৩ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত দেড় লাখ কালাজ্বরের রোগী পাওয়া গেছে। তবে বাংলাদেশ গোদ ও কালাজ্বর মোটের ওপর নিয়ন্ত্রণ করেছে বলে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মিলেছে।
বাংলাদেশে প্রথম জাপানিজ এনকেফালাইটিস রোগী শনাক্ত হয় ১৯৭৭ সালে টাঙ্গাইলের মধুপুর বন এলাকায়। পরবর্তী সময়ে রাজশাহী, রংপুর, চট্টগ্রাম ও খুলনা অঞ্চলেও রোগটি পাওয়া যায়। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশের মৃত্যু হয় বলে বৈশ্বিক বিভিন্ন জনস্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্থা উল্লেখ করেছে। এই রোগের জন্য বাংলাদেশকে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় রেখেছে যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি)। দেশে ওয়েস্ট নাইল ভাইরাসবাহিত জ্বর ও জিকার সংক্রমণও শনাক্ত হয়েছে। তবে এই দুটি রোগ তেমন ছড়িয়ে পড়ার তথ্য পাওয়া যায়নি।
কীটতত্ত্ব ও রোগতত্ত্ববিদেরা যা বলেন
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন, দ্রুত ও অপরিকল্পিত নগরায়ণ, মানুষের চলাফেরা বৃদ্ধি, অনুপযুক্ত পানি নিষ্কাশনব্যবস্থা, শিক্ষা ও সচেতনতার অভাব ইত্যাদি মশাবাহিত রোগ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।
জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. গোলাম ছারোয়ার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ ধরনের রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য দেশে সে রকম কোনো গাইডলাইন নেই। মশা বা মাছিবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য মেডিকেল এন্টোমলজিস্টের প্রয়োজন। কিন্তু দেশে মেডিকেল এন্টোমলজিতে একাডেমিক ডিগ্রি প্রদানের প্রতিষ্ঠানই নেই। মেডিকেল এন্টোমলজির ওপর স্নাতকোত্তর চালুর জন্য আমরা চেষ্টা করছি। এসব সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণার জন্য উচ্চ প্রযুক্তির পরীক্ষাগারও প্রয়োজন।’
মশা বা মাছিবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য মশা নির্মূলে বৈজ্ঞানিক উপায় অবলম্বন করা, গবেষণা এবং জনসম্পৃক্ততার তাগিদ দিলেন ড. ছারোয়ার।
দেশে ফাইলেরিয়া ও কালাজ্বর নিয়ন্ত্রণ করা গেছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, ‘কোনো রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকা মানে সেই রোগ নিয়ে কম সতর্ক থাকার সুযোগ নেই। ম্যালেরিয়া নিয়ে ব্যাপক কাজ হয়েছে বলেই রোগটি দেশে ১৩ জেলায় সীমাবদ্ধ।’
ডেঙ্গু ভবিষ্যতে দেশে আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে উল্লেখ করে এ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘কোনো দেশে এই রোগ একবার প্রবেশ করলে তা বের হয় না। গত ২৫ বছরে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের ধারেকাছেও যাওয়া যায়নি। বরং এখন সারা দেশে ছড়িয়ে গেছে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সঠিকভাবে কার্যক্রম চালানো হয়নি। এডিস মশা নির্মূল করা গেলে চিকুনগুনিয়াও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। আর জাপানিজ এনকেফালাইটিস মারাত্মক রোগ। মস্তিষ্কে সংক্রমণ ছড়ায় বলে মৃত্যুহার অনেক বেশি।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. মো. হালিমুর রশিদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মশা বা মাছি নির্মূলের কাজ স্থানীয় সরকারের। আমরা স্থানীয় সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছি। এসব রোগের প্রকোপ বাড়লে স্বাস্থ্য বিভাগের ওপর চাপ বাড়বে। বাহক বাহিত রোগের বাহক নির্মূলের জন্য শুধু কর্তৃপক্ষ নয়, জনগণেরও দায়িত্ব আছে। জনসম্পৃক্ততা ছাড়া এসব রোগের বাহক ও রোগ নিয়ন্ত্রণ সহজ নয়।’

সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও অসংক্রামক রোগের (হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি) দৌরাত্ম্য বেড়েছে। মৃত্যুর দুই-তৃতীয়াংশের বেশি ঘটছে বিভিন্ন অসংক্রামক ও দীর্ঘমেয়াদি রোগে। তবে কয়েকটি সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাবও জনস্বাস্থ্যসংশ্লিষ্টদের উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। বিশেষ করে মশা ও মাছিবাহিত এমন ছয়টি রোগ দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার ওপর চাপ বাড়াচ্ছে। জনস্বাস্থ্য এবং সেই সূত্রে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে উঠছে এসব রোগ।
জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, মশাবাহিত রোগগুলো নিয়ে কয়েক দশকের সরকারি কার্যক্রমের সুবাদে কয়েকটি রোগ নির্মূল বা নিয়ন্ত্রণ করা গেছে। আবার কয়েকটি মহামারি আকার ধারণ করেছে। বর্তমানে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়া, জাপানিজ এনকেফালাইটিস ও জিকা রোগের প্রকোপ দেখা যাচ্ছে দেশে। এর মধ্যে গত ছয় বছরে ডেঙ্গুর সংক্রমণ হয়েছে সবচেয়ে বেশি। মাত্রায় এর পর রয়েছে ম্যালেরিয়া ও চিকুনগুনিয়া। মশা নির্মূলে বিজ্ঞানসম্মত পন্থা অবলম্বন না করা, রোগের জিনভিত্তিক গবেষণার অনুপস্থিতি, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং রোগ ও রোগী ব্যবস্থাপনার ঘাটতি মশাবাহিত রোগের বিস্তার ঘটাচ্ছে।
মশা নিয়ন্ত্রণে বিশ্বে নেতৃস্থানীয় অলাভজনক সংস্থা অ্যামেরিকান মসকিউটো কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের (এএমসিএ) তথ্যমতে, অন্য যেকোনো জীবের তুলনায় মশা মানুষের জন্য বেশি দুর্ভোগ সৃষ্টি করে। বিশ্বে বছরে ১০ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয় মশাবাহিত রোগের কারণে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের জনস্বাস্থ্য বিভাগ ও অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটির ওয়ার্ল্ড মসকিউটো প্রোগ্রামের ভাষ্য, বিশ্বে সাড়ে ৩ হাজারের বেশি প্রজাতির মশা রয়েছে। এই দুই কর্তৃপক্ষের তথ্য বলছে, এর মধ্যে ১০০ প্রজাতির মশা মানবদেহে অন্তত ২০টি প্রাণঘাতী রোগ ছড়াতে সক্ষম। বাংলাদেশে ঠিক কত প্রজাতির মশা রয়েছে তার নিশ্চিত তথ্য বিশেষজ্ঞদের কাছে নেই।
মশাবাহিত রোগগুলো
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোটা দাগে ছয়-সাতটি মশা ও মাছিবাহিত রোগ দেখা যায়। এগুলো হচ্ছে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়া, জিকা, ফাইলেরিয়া, জাপানিজ এনকেফালাইটিস ও কালাজ্বর। বাংলাদেশে বিরল হলেও ওয়েস্ট নাইল জ্বরের সংক্রমণও শনাক্ত হয়েছে। এ দেশে এডিস মশা চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু, লিম্ফ্যাটিক ফাইলেরিয়াসিস, জিকা; অ্যানোফিলিস প্রজাতির মশা লিম্ফ্যাটিক ফাইলেরিয়াসিস, ম্যালেরিয়া; কিউলেক্স মশা জাপানিজ এনকেফালাইটিস, লিম্ফ্যাটিক ফাইলেরিয়াসিস, ওয়েস্ট নাইল ফিভার ও ফাইলেরিয়া এবং স্যান্ডফ্লাই নামের এক প্রকার মাছি কালাজ্বরের বাহক হিসেবে কাজ করে।
ডেঙ্গু
দেশে মশাবাহিত রোগগুলোর মধ্যে এখন ডেঙ্গুর সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি হচ্ছে। শুরুর দিকে রাজধানী ঢাকায় সীমিত থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের সব অঞ্চলে বড় পরিসরে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ছড়িয়েছে। ২০০০ সালে প্রথম এ রোগের নিয়মিত পরিসংখ্যান রাখতে শুরু করে সরকারের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। ২০১৯ সালে শহর ও গ্রাম উভয় স্থানে ছড়িয়ে পড়ে ডেঙ্গু। সে বছর লাখের বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। তাদের মধ্যে দেড় শর বেশি রোগীর মৃত্যু হয়। ২০০০ থেকে ২০২২ সাল—এ ২৩ বছরে ডেঙ্গু রোগীর মোট সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৪৪ হাজার ২৪৬। এর মধ্যে মারা গেছে ৮৫০ রোগী। সর্বোচ্চ আক্রান্তের বছর ছিল ২০২৩। সে বছর হাসপাতালে ভর্তি হয় ৩ লাখ ২১ হাজারের বেশি রোগী। মারা যায় ১ হাজার ৭০৫ জন। গত বছর ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন রোগীর বিপরীতে মারা গেছে ৫৭৫ জন। আর চলতি বছরের শুরু থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত ১১ হাজারের বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৪৪ জনের।
ডেঙ্গুতে বাংলাদেশেই মৃত্যু সবচেয়ে বেশি, এমনটি জানা যায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (ইসিডিসি) ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য বিশ্লেষণে। এদের তথ্য বলছে, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিলে। দেশটিতে গত বছর প্রায় ১ কোটি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার। গত বছর রোগীর অনুপাতে ব্রাজিলে মৃত্যুহার ছিল শূন্য দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ আর বাংলাদেশে ছিল শূন্য দশমিক ৫৬ শতাংশ।
চিকুনগুনিয়া
ডেঙ্গুর মতোই চিকুনগুনিয়াও ছড়ায় এডিস মশার মাধ্যমে। রোগ দুটির উপসর্গে কিছু মিলও আছে। বাংলাদেশে প্রথম চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয় ২০০৮ সালে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে। ২০১১ সালে ঢাকার দোহারে কিছু রোগী পাওয়া যায়। এর পরের বছরগুলোতে কমবেশি সংক্রমণ দেখা গেছে। তবে ২০১৭ সালে দেশজুড়ে এ ভাইরাল রোগটি ছড়িয়ে পড়ে। গত বছরের ডিসেম্বরে আইইডিসিআর জানায়, দেশে জিকা ভাইরাসে ১১ জন এবং চিকুনগুনিয়ায় ৬৭ জন আক্রান্ত হয়েছে। চলতি বছরেও চিকুনগুনিয়া রোগী পাওয়া যাচ্ছে। গত জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত পাঁচ মাসে ৩৩৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৫৩ জনের দেহে চিকুনগুনিয়ার ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে আইইডিসিআর।
ম্যালেরিয়া
ম্যালেরিয়াই সম্ভবত সবচেয়ে পরিচিত মশাবাহিত রোগ। স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশা ম্যালেরিয়া রোগের জীবাণু ছড়ায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০০৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সারা দেশে ৬ লাখ ১ হাজার মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছে ৬৬৩ জন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ২ হাজার রোগী পাওয়া গেছে। আর মারা গেছে ১ জন। দুই দশক ধরে দেশে ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ নিম্নমুখী থাকলেও গত তিন বছরে সংক্রমণ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা জানিয়েছে, সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় রোগটি নির্মূল করা যায়নি। চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগের ১৩ জেলায় ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। জেলাগুলো হলো কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, শেরপুর, কুড়িগ্রাম, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সিলেট ও মৌলভীবাজার। তবে মোট ম্যালেরিয়া রোগীর দুই-তৃতীয়াংশই পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলার। গভীর জঙ্গলে অ্যানোফিলিস মশার প্রকোপ বেশি হওয়ায় পার্বত্য অঞ্চলে রোগী বেশি বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অবশ্য বলছে, আগের চেয়ে ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ ৭৯ শতাংশ কমেছে। মৃত্যুও কমেছে ৯১ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও আইইডিসিআর জানিয়েছে, কিউলেক্স মশার দুটি প্রজাতি ও ম্যানসোনিয়া মশা ফাইলেরিয়া বা গোদ রোগ ছড়াচ্ছে। গোদ রোগে জ্বর ও ঠান্ডা লাগে এবং জটিল হলে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ব্যাপকভাবে ফুলে যায়। দেশের অন্তত ৩৪টি জেলায় এ রোগ দেখা যাচ্ছে। কালাজ্বরের বাহক হিসেবে কাজ করে স্যান্ডফ্লাই নামের মাছি। দেশে ১৯৯৩ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত দেড় লাখ কালাজ্বরের রোগী পাওয়া গেছে। তবে বাংলাদেশ গোদ ও কালাজ্বর মোটের ওপর নিয়ন্ত্রণ করেছে বলে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মিলেছে।
বাংলাদেশে প্রথম জাপানিজ এনকেফালাইটিস রোগী শনাক্ত হয় ১৯৭৭ সালে টাঙ্গাইলের মধুপুর বন এলাকায়। পরবর্তী সময়ে রাজশাহী, রংপুর, চট্টগ্রাম ও খুলনা অঞ্চলেও রোগটি পাওয়া যায়। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশের মৃত্যু হয় বলে বৈশ্বিক বিভিন্ন জনস্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্থা উল্লেখ করেছে। এই রোগের জন্য বাংলাদেশকে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় রেখেছে যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি)। দেশে ওয়েস্ট নাইল ভাইরাসবাহিত জ্বর ও জিকার সংক্রমণও শনাক্ত হয়েছে। তবে এই দুটি রোগ তেমন ছড়িয়ে পড়ার তথ্য পাওয়া যায়নি।
কীটতত্ত্ব ও রোগতত্ত্ববিদেরা যা বলেন
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন, দ্রুত ও অপরিকল্পিত নগরায়ণ, মানুষের চলাফেরা বৃদ্ধি, অনুপযুক্ত পানি নিষ্কাশনব্যবস্থা, শিক্ষা ও সচেতনতার অভাব ইত্যাদি মশাবাহিত রোগ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।
জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. গোলাম ছারোয়ার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ ধরনের রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য দেশে সে রকম কোনো গাইডলাইন নেই। মশা বা মাছিবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য মেডিকেল এন্টোমলজিস্টের প্রয়োজন। কিন্তু দেশে মেডিকেল এন্টোমলজিতে একাডেমিক ডিগ্রি প্রদানের প্রতিষ্ঠানই নেই। মেডিকেল এন্টোমলজির ওপর স্নাতকোত্তর চালুর জন্য আমরা চেষ্টা করছি। এসব সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণার জন্য উচ্চ প্রযুক্তির পরীক্ষাগারও প্রয়োজন।’
মশা বা মাছিবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য মশা নির্মূলে বৈজ্ঞানিক উপায় অবলম্বন করা, গবেষণা এবং জনসম্পৃক্ততার তাগিদ দিলেন ড. ছারোয়ার।
দেশে ফাইলেরিয়া ও কালাজ্বর নিয়ন্ত্রণ করা গেছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, ‘কোনো রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকা মানে সেই রোগ নিয়ে কম সতর্ক থাকার সুযোগ নেই। ম্যালেরিয়া নিয়ে ব্যাপক কাজ হয়েছে বলেই রোগটি দেশে ১৩ জেলায় সীমাবদ্ধ।’
ডেঙ্গু ভবিষ্যতে দেশে আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে উল্লেখ করে এ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘কোনো দেশে এই রোগ একবার প্রবেশ করলে তা বের হয় না। গত ২৫ বছরে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের ধারেকাছেও যাওয়া যায়নি। বরং এখন সারা দেশে ছড়িয়ে গেছে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সঠিকভাবে কার্যক্রম চালানো হয়নি। এডিস মশা নির্মূল করা গেলে চিকুনগুনিয়াও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। আর জাপানিজ এনকেফালাইটিস মারাত্মক রোগ। মস্তিষ্কে সংক্রমণ ছড়ায় বলে মৃত্যুহার অনেক বেশি।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. মো. হালিমুর রশিদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মশা বা মাছি নির্মূলের কাজ স্থানীয় সরকারের। আমরা স্থানীয় সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছি। এসব রোগের প্রকোপ বাড়লে স্বাস্থ্য বিভাগের ওপর চাপ বাড়বে। বাহক বাহিত রোগের বাহক নির্মূলের জন্য শুধু কর্তৃপক্ষ নয়, জনগণেরও দায়িত্ব আছে। জনসম্পৃক্ততা ছাড়া এসব রোগের বাহক ও রোগ নিয়ন্ত্রণ সহজ নয়।’

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যালটের নিরাপত্তাকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপাররা (এসপি)। তবে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মনে করেন, ঝুঁকি বিবেচনায় রেখে সব প্রার্থীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে নির্বাচন আয়োজন করা গেলে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব।
১০ ঘণ্টা আগে
সংশোধিত পুলিশ কমিশন আইন ও এনজিও-সংক্রান্ত আইন পাস করা নিয়ে গত ২৮ নভেম্বর উদ্বেগ জানায় বিএনপি। নির্বাচনের আগে এমন পদক্ষেপ নেওয়া থেকে অন্তর্বর্তী সরকারকে বিরত থাকারও আহ্বান জানায় দলটি।
১৪ ঘণ্টা আগে
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দেওয়া ভিভিআইপি মর্যাদা জিয়া পরিবারের অন্য সদস্যরা পাবেন কি না—এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে উপদেষ্টা বলেন, ভিভিআইপি হিসেবে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় এসএসএফ সুবিধা দেওয়া নিয়ে একটি গেজেট জারি হয়েছে। সে অনুযায়ী খালেদা জিয়া এই সুযোগ-সুবিধা পাবেন।
১৪ ঘণ্টা আগে
প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আজ বৃহস্পতিবার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যাদেশের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
১৬ ঘণ্টা আগেশাহরিয়ার হাসান, ঢাকা

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যালটের নিরাপত্তাকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপাররা (এসপি)। তবে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মনে করেন, ঝুঁকি বিবেচনায় রেখে সব প্রার্থীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে নির্বাচন আয়োজন করা গেলে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব।
রাজধানীর রাজারবাগে আজ বৃহস্পতিবার সদ্য পদায়ন পাওয়া ৬৪ জেলার এসপি, কমিশনার ও রেঞ্জ ডিআইজিদের সঙ্গে এক বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। এর আগে সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের সব নতুন এসপির সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচনকালীন দায়িত্ব ও মাঠপর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে দিকনির্দেশনা দেন।
আইজিপির সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, বক্তব্য দেওয়া এসপিদের সবার আলোচনাতেই কমবেশি ভোটকেন্দ্রে ব্যালটের নিরাপত্তার বিষয়টি উঠে আসে। আইজিপি বাহারুল আলম বৈঠকে তাঁর বক্তব্যে বলেন, আসন্ন নির্বাচনে পুলিশ শতভাগ নিরপেক্ষ থাকবে। জেলায় জেলায় এসপিরা সংসদীয় আসনের প্রার্থীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখবে এবং সবাইকে সুষ্ঠু নির্বাচনে অংশ নিতে উৎসাহিত করবে। আইজি এসপিদের বলেছেন, যার যার জেলা ও আসন ধরে ধরে নির্বাচনের সকল প্রার্থীর সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে হবে। এতে কাজটা সহজ হয়ে যাবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জেলার এসপি জানান, নির্বাচন সামনে রেখে পুলিশের প্রশিক্ষণ ঠিকভাবে সম্পন্ন করার ওপর জোর দিয়েছেন আইজিপি। তিনি বলেন, প্রত্যেক সদস্যকে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রার্থীদের মধ্যে সম্ভাব্য সংঘাত বা উত্তেজনার তথ্য আগে থেকেই সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলো বিবেচনায় নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা রেঞ্জের এক এসপি জানান, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান জোরদার করার নির্দেশও দেওয়া হয়। তাঁর মতে, এসব অস্ত্র উদ্ধার করা গেলে সহিংসতার ঝুঁকিও কমে আসবে বলে মনে করে পুলিশ সদর দপ্তর।
বৈঠকের আলোচনা নিয়ে জানতে চাইলে হবিগঞ্জের এসপি ইয়াসমিন খাতুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের কিছু সমস্যার কথা বলা হয়েছে। ভোটার, ভোট, ভোটের কেন্দ্র নিয়ে আইজি স্যার আমাদের বেশ কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।’
এর আগে সকালে এসপিদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নতুন বাংলাদেশের সূচনা করবে।’ তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের জন্ম হবে। এই জন্ম দিতে আপনারা (এসপি) ধাত্রীর ভূমিকা পালন করবেন। সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করাই আপনাদের দায়িত্ব।’
অতীতের বিতর্কিত নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এবার সেই ইতিহাস বদলানোর সুযোগ এসেছে। যেন দেশে-বিদেশে সবাই বলতে পারে, বাংলাদেশে এক নজিরবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, এ নির্বাচন কেবল রুটিন নির্বাচন নয়; এটি গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তী নির্বাচন। যে স্বপ্ন নিয়ে মানুষ আত্মত্যাগ করেছে, সেই স্বপ্নের স্থায়ী ভিত্তি তৈরির সুযোগ এই নির্বাচন।
গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ শাহরিয়ার খান আনাসের চিঠির প্রসঙ্গ টেনে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সেই চিঠি দায়িত্ববোধের বার্তা দিয়ে গেছে। এসপিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা কর্মস্থলে যাওয়ার আগে আনাসের চিঠিটা কাছে রাখবেন। সেটাই আপনাদের দায়িত্ব মনে করিয়ে দেবে।’
পুলিশ সুপারদের পদায়নে লটারির কথা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এর লক্ষ্য ছিল পক্ষপাতহীনতা নিশ্চিত করা। এতে ব্যক্তিগত অসুবিধা হলেও দায়িত্ব পালনে মনোযোগ বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যালটের নিরাপত্তাকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপাররা (এসপি)। তবে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মনে করেন, ঝুঁকি বিবেচনায় রেখে সব প্রার্থীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে নির্বাচন আয়োজন করা গেলে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব।
রাজধানীর রাজারবাগে আজ বৃহস্পতিবার সদ্য পদায়ন পাওয়া ৬৪ জেলার এসপি, কমিশনার ও রেঞ্জ ডিআইজিদের সঙ্গে এক বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। এর আগে সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের সব নতুন এসপির সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচনকালীন দায়িত্ব ও মাঠপর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে দিকনির্দেশনা দেন।
আইজিপির সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, বক্তব্য দেওয়া এসপিদের সবার আলোচনাতেই কমবেশি ভোটকেন্দ্রে ব্যালটের নিরাপত্তার বিষয়টি উঠে আসে। আইজিপি বাহারুল আলম বৈঠকে তাঁর বক্তব্যে বলেন, আসন্ন নির্বাচনে পুলিশ শতভাগ নিরপেক্ষ থাকবে। জেলায় জেলায় এসপিরা সংসদীয় আসনের প্রার্থীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখবে এবং সবাইকে সুষ্ঠু নির্বাচনে অংশ নিতে উৎসাহিত করবে। আইজি এসপিদের বলেছেন, যার যার জেলা ও আসন ধরে ধরে নির্বাচনের সকল প্রার্থীর সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে হবে। এতে কাজটা সহজ হয়ে যাবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জেলার এসপি জানান, নির্বাচন সামনে রেখে পুলিশের প্রশিক্ষণ ঠিকভাবে সম্পন্ন করার ওপর জোর দিয়েছেন আইজিপি। তিনি বলেন, প্রত্যেক সদস্যকে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রার্থীদের মধ্যে সম্ভাব্য সংঘাত বা উত্তেজনার তথ্য আগে থেকেই সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলো বিবেচনায় নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা রেঞ্জের এক এসপি জানান, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান জোরদার করার নির্দেশও দেওয়া হয়। তাঁর মতে, এসব অস্ত্র উদ্ধার করা গেলে সহিংসতার ঝুঁকিও কমে আসবে বলে মনে করে পুলিশ সদর দপ্তর।
বৈঠকের আলোচনা নিয়ে জানতে চাইলে হবিগঞ্জের এসপি ইয়াসমিন খাতুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের কিছু সমস্যার কথা বলা হয়েছে। ভোটার, ভোট, ভোটের কেন্দ্র নিয়ে আইজি স্যার আমাদের বেশ কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।’
এর আগে সকালে এসপিদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নতুন বাংলাদেশের সূচনা করবে।’ তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের জন্ম হবে। এই জন্ম দিতে আপনারা (এসপি) ধাত্রীর ভূমিকা পালন করবেন। সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করাই আপনাদের দায়িত্ব।’
অতীতের বিতর্কিত নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এবার সেই ইতিহাস বদলানোর সুযোগ এসেছে। যেন দেশে-বিদেশে সবাই বলতে পারে, বাংলাদেশে এক নজিরবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, এ নির্বাচন কেবল রুটিন নির্বাচন নয়; এটি গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তী নির্বাচন। যে স্বপ্ন নিয়ে মানুষ আত্মত্যাগ করেছে, সেই স্বপ্নের স্থায়ী ভিত্তি তৈরির সুযোগ এই নির্বাচন।
গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ শাহরিয়ার খান আনাসের চিঠির প্রসঙ্গ টেনে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সেই চিঠি দায়িত্ববোধের বার্তা দিয়ে গেছে। এসপিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা কর্মস্থলে যাওয়ার আগে আনাসের চিঠিটা কাছে রাখবেন। সেটাই আপনাদের দায়িত্ব মনে করিয়ে দেবে।’
পুলিশ সুপারদের পদায়নে লটারির কথা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এর লক্ষ্য ছিল পক্ষপাতহীনতা নিশ্চিত করা। এতে ব্যক্তিগত অসুবিধা হলেও দায়িত্ব পালনে মনোযোগ বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও অসংক্রামক রোগের (হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি) দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। মৃত্যুর দুই-তৃতীয়াংশের বেশি ঘটছে বিভিন্ন অসংক্রামক ও দীর্ঘমেয়াদি রোগে। তবে কয়েকটি সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাবও জনস্বাস্থ্যসংশ্লিষ্টদের উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
০৪ জুলাই ২০২৫
সংশোধিত পুলিশ কমিশন আইন ও এনজিও-সংক্রান্ত আইন পাস করা নিয়ে গত ২৮ নভেম্বর উদ্বেগ জানায় বিএনপি। নির্বাচনের আগে এমন পদক্ষেপ নেওয়া থেকে অন্তর্বর্তী সরকারকে বিরত থাকারও আহ্বান জানায় দলটি।
১৪ ঘণ্টা আগে
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দেওয়া ভিভিআইপি মর্যাদা জিয়া পরিবারের অন্য সদস্যরা পাবেন কি না—এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে উপদেষ্টা বলেন, ভিভিআইপি হিসেবে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় এসএসএফ সুবিধা দেওয়া নিয়ে একটি গেজেট জারি হয়েছে। সে অনুযায়ী খালেদা জিয়া এই সুযোগ-সুবিধা পাবেন।
১৪ ঘণ্টা আগে
প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আজ বৃহস্পতিবার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যাদেশের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
১৬ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

বিএনপির পক্ষ থেকে আপত্তি তোলা সত্ত্বেও পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ ও এনজিও-সংক্রান্ত অধ্যাদেশের অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আজ বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সংশোধিত পুলিশ কমিশন আইন ও এনজিও-সংক্রান্ত আইন পাস করা নিয়ে গত ২৮ নভেম্বর উদ্বেগ জানায় বিএনপি। নির্বাচনের আগে এমন পদক্ষেপ নেওয়া থেকে অন্তর্বর্তী সরকারকে বিরত থাকারও আহ্বান জানায় দলটি।
সেদিন সংবাদমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বিশ্বস্ত সূত্রে আমরা জানতে পেরেছি, তাড়াহুড়ো করে দুটি আইন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার পাস করাতে চাইছে। একটি সংশোধিত পুলিশ কমিশন আইন, অন্যটি এনজিও-সংক্রান্ত আইন। আমরা মনে করি, নির্বাচনের আগে এই আইনগুলো পাস করার পেছনে সরকারের ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য কাজ করছে; যা গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথকে বাধাগ্রস্ত করবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়াই তড়িঘড়ি করে এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আইন পাস করা সমীচীন হবে না। আমরা মনে করি, উপরোক্ত বিষয়ে আইনগুলো পরবর্তী জাতীয় সংসদে যুক্তিতর্কের মধ্য দিয়ে প্রণয়ন করা সঠিক হবে। সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি, এই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে বিরত থাকার জন্য।’
বিএনপির আপত্তি আমলে না নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারককে প্রধান করে আজ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে পাঁচ সদস্যের পুলিশ কমিশন গঠনের অনুমোদন দেওয়া হয়। গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশের (আরপিও) দুটি ক্ষেত্রেও সংশোধনী আনা হয়।
বৈঠক শেষে এ বিষয়ে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
উপদেষ্টা জানান, পুলিশ কমিশনে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ছাড়াও একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ, অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক পদমর্যাদার নিচে নন—এমন কোনো অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, যিনি কর্মরত হতে পারেন বা অবসরপ্রাপ্তও হতে পারেন এবং মানবাধিকার ও সুশাসন বিষয়ে অন্তত ১৫ বছর অভিজ্ঞতা রয়েছে, এমন একজন ব্যক্তি থাকবেন।
পুলিশকে জনবান্ধব করতে করণীয় সম্পর্কে সরকারকে সুপারিশ করবে কমিশন। এ ছাড়া পুলিশ যাতে সংবেদনশীল হয়, সে জন্য তাদের আধুনিকায়ন কোথায় কোথায় দরকার, কী ধরনের প্রশিক্ষণ দরকার—সেগুলোও চিহ্নিত করবে কমিশন।
কমিশনের কার্যক্রমের মধ্যে থাকবে—পুলিশের বিষয়ে নাগরিকদের যেসব অভিযোগ থাকবে, সেগুলো তদন্ত ও নিষ্পত্তি করা এবং পেশাগত বিষয়ে পুলিশ সদস্যদের যদি কোনো অভিযোগ থাকে, সেগুলোর নিষ্পত্তি করা। পুলিশি কার্যক্রমে দক্ষতা ও উৎকর্ষ আনা, শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রদান ইত্যাদি কাজও হবে এ কমিশনের।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রিজওয়ানা হাসান বলেন, সুপারিশ-পরামর্শ কেউ কখনো মানতে বাধ্য না। পুলিশের সঙ্গে জনগণের একটি ব্রিজ (সেতু) করে দেওয়ার জন্যই এ কমিশন। আর পুলিশের সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে, আধুনিকায়নের ক্ষেত্রে, মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে সরকারের একটা যোগসূত্র স্থাপন করে দেওয়ার কাজ হচ্ছে এ কমিশনের।
আরপিও সংশোধন করে কোন কোন ভোট বিবেচনায় নেওয়া হবে না এবং পোস্টাল ব্যালটের ভোটগুলো গণনা পদ্ধতি সংযুক্ত করা হয়েছে।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘ব্যালটে যেখানে একটা সিল পড়ার কথা, সেখানে একাধিক সিল পড়লে গণনা করা হবে না। যদি সিল না দেয়, তাহলে গণনা করা হবে না। যখন পোস্টাল ভোট দেওয়া হয়, তখন একটা ডিক্লারেশন স্বাক্ষর করা হবে। ওই ডিক্লারেশনে যদি স্বাক্ষর না থাকে, তাহলে গণনা করা হবে না। আর আমাদের ভোটের দিন পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করে দেবে নির্বাচন কমিশন। সেই সময়ে যে ব্যালটগুলো এসে পৌঁছাবে রিটার্নিং অফিসারের কাছে—সেগুলো একইভাবে গণনা করা হবে।’

বিএনপির পক্ষ থেকে আপত্তি তোলা সত্ত্বেও পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ ও এনজিও-সংক্রান্ত অধ্যাদেশের অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আজ বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সংশোধিত পুলিশ কমিশন আইন ও এনজিও-সংক্রান্ত আইন পাস করা নিয়ে গত ২৮ নভেম্বর উদ্বেগ জানায় বিএনপি। নির্বাচনের আগে এমন পদক্ষেপ নেওয়া থেকে অন্তর্বর্তী সরকারকে বিরত থাকারও আহ্বান জানায় দলটি।
সেদিন সংবাদমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বিশ্বস্ত সূত্রে আমরা জানতে পেরেছি, তাড়াহুড়ো করে দুটি আইন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার পাস করাতে চাইছে। একটি সংশোধিত পুলিশ কমিশন আইন, অন্যটি এনজিও-সংক্রান্ত আইন। আমরা মনে করি, নির্বাচনের আগে এই আইনগুলো পাস করার পেছনে সরকারের ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য কাজ করছে; যা গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথকে বাধাগ্রস্ত করবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়াই তড়িঘড়ি করে এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আইন পাস করা সমীচীন হবে না। আমরা মনে করি, উপরোক্ত বিষয়ে আইনগুলো পরবর্তী জাতীয় সংসদে যুক্তিতর্কের মধ্য দিয়ে প্রণয়ন করা সঠিক হবে। সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি, এই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে বিরত থাকার জন্য।’
বিএনপির আপত্তি আমলে না নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারককে প্রধান করে আজ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে পাঁচ সদস্যের পুলিশ কমিশন গঠনের অনুমোদন দেওয়া হয়। গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশের (আরপিও) দুটি ক্ষেত্রেও সংশোধনী আনা হয়।
বৈঠক শেষে এ বিষয়ে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
উপদেষ্টা জানান, পুলিশ কমিশনে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ছাড়াও একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ, অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক পদমর্যাদার নিচে নন—এমন কোনো অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, যিনি কর্মরত হতে পারেন বা অবসরপ্রাপ্তও হতে পারেন এবং মানবাধিকার ও সুশাসন বিষয়ে অন্তত ১৫ বছর অভিজ্ঞতা রয়েছে, এমন একজন ব্যক্তি থাকবেন।
পুলিশকে জনবান্ধব করতে করণীয় সম্পর্কে সরকারকে সুপারিশ করবে কমিশন। এ ছাড়া পুলিশ যাতে সংবেদনশীল হয়, সে জন্য তাদের আধুনিকায়ন কোথায় কোথায় দরকার, কী ধরনের প্রশিক্ষণ দরকার—সেগুলোও চিহ্নিত করবে কমিশন।
কমিশনের কার্যক্রমের মধ্যে থাকবে—পুলিশের বিষয়ে নাগরিকদের যেসব অভিযোগ থাকবে, সেগুলো তদন্ত ও নিষ্পত্তি করা এবং পেশাগত বিষয়ে পুলিশ সদস্যদের যদি কোনো অভিযোগ থাকে, সেগুলোর নিষ্পত্তি করা। পুলিশি কার্যক্রমে দক্ষতা ও উৎকর্ষ আনা, শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রদান ইত্যাদি কাজও হবে এ কমিশনের।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রিজওয়ানা হাসান বলেন, সুপারিশ-পরামর্শ কেউ কখনো মানতে বাধ্য না। পুলিশের সঙ্গে জনগণের একটি ব্রিজ (সেতু) করে দেওয়ার জন্যই এ কমিশন। আর পুলিশের সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে, আধুনিকায়নের ক্ষেত্রে, মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে সরকারের একটা যোগসূত্র স্থাপন করে দেওয়ার কাজ হচ্ছে এ কমিশনের।
আরপিও সংশোধন করে কোন কোন ভোট বিবেচনায় নেওয়া হবে না এবং পোস্টাল ব্যালটের ভোটগুলো গণনা পদ্ধতি সংযুক্ত করা হয়েছে।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘ব্যালটে যেখানে একটা সিল পড়ার কথা, সেখানে একাধিক সিল পড়লে গণনা করা হবে না। যদি সিল না দেয়, তাহলে গণনা করা হবে না। যখন পোস্টাল ভোট দেওয়া হয়, তখন একটা ডিক্লারেশন স্বাক্ষর করা হবে। ওই ডিক্লারেশনে যদি স্বাক্ষর না থাকে, তাহলে গণনা করা হবে না। আর আমাদের ভোটের দিন পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করে দেবে নির্বাচন কমিশন। সেই সময়ে যে ব্যালটগুলো এসে পৌঁছাবে রিটার্নিং অফিসারের কাছে—সেগুলো একইভাবে গণনা করা হবে।’

সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও অসংক্রামক রোগের (হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি) দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। মৃত্যুর দুই-তৃতীয়াংশের বেশি ঘটছে বিভিন্ন অসংক্রামক ও দীর্ঘমেয়াদি রোগে। তবে কয়েকটি সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাবও জনস্বাস্থ্যসংশ্লিষ্টদের উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
০৪ জুলাই ২০২৫
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যালটের নিরাপত্তাকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপাররা (এসপি)। তবে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মনে করেন, ঝুঁকি বিবেচনায় রেখে সব প্রার্থীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে নির্বাচন আয়োজন করা গেলে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব।
১০ ঘণ্টা আগে
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দেওয়া ভিভিআইপি মর্যাদা জিয়া পরিবারের অন্য সদস্যরা পাবেন কি না—এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে উপদেষ্টা বলেন, ভিভিআইপি হিসেবে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় এসএসএফ সুবিধা দেওয়া নিয়ে একটি গেজেট জারি হয়েছে। সে অনুযায়ী খালেদা জিয়া এই সুযোগ-সুবিধা পাবেন।
১৪ ঘণ্টা আগে
প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আজ বৃহস্পতিবার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যাদেশের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
১৬ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ভিভিআইপি (অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি) হিসেবে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় এসএসএফ (স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স) সুবিধা দেওয়া নিয়ে একটি গেজেট জারি হয়েছে। সে অনুযায়ী খালেদা জিয়া এই সুযোগ-সুবিধা পাবেন। তবে জিয়া পরিবারের অন্য সদস্যরা এই সুবিধা পাবেন না।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আজ বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দেওয়া ভিভিআইপি মর্যাদা জিয়া পরিবারের অন্য সদস্যরা পাবেন কি না—এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে উপদেষ্টা বলেন, ‘ভিভিআইপি হিসেবে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় এসএসএফ সুবিধা দেওয়া নিয়ে একটি গেজেট জারি হয়েছে। খালেদা জিয়া এই সুযোগ-সুবিধা পাবেন। জিয়া পরিবারের অন্য সদস্যরা এই সুবিধা পাবেন না।’
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গত মঙ্গলবার রাষ্ট্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (ভিভিআইপি) ঘোষণা করে অন্তর্বর্তী সরকার। রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে গত ২৩ নভেম্বর থেকে চিকিৎসা নেওয়ার মধ্যেই তাঁকে এই বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়।
বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী (স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স) (সংশোধন) অধ্যাদেশ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা যেখানেই অবস্থান করুন না কেন, তাঁদের দৈহিক নিরাপত্তা দেওয়া এ বাহিনীর প্রধান দায়িত্ব হবে। এ ছাড়া বাহিনী বাংলাদেশে অবস্থানরত অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকেও নিরাপত্তা দেবে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ভিভিআইপি (অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি) হিসেবে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় এসএসএফ (স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স) সুবিধা দেওয়া নিয়ে একটি গেজেট জারি হয়েছে। সে অনুযায়ী খালেদা জিয়া এই সুযোগ-সুবিধা পাবেন। তবে জিয়া পরিবারের অন্য সদস্যরা এই সুবিধা পাবেন না।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আজ বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দেওয়া ভিভিআইপি মর্যাদা জিয়া পরিবারের অন্য সদস্যরা পাবেন কি না—এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে উপদেষ্টা বলেন, ‘ভিভিআইপি হিসেবে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় এসএসএফ সুবিধা দেওয়া নিয়ে একটি গেজেট জারি হয়েছে। খালেদা জিয়া এই সুযোগ-সুবিধা পাবেন। জিয়া পরিবারের অন্য সদস্যরা এই সুবিধা পাবেন না।’
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গত মঙ্গলবার রাষ্ট্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (ভিভিআইপি) ঘোষণা করে অন্তর্বর্তী সরকার। রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে গত ২৩ নভেম্বর থেকে চিকিৎসা নেওয়ার মধ্যেই তাঁকে এই বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়।
বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী (স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স) (সংশোধন) অধ্যাদেশ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা যেখানেই অবস্থান করুন না কেন, তাঁদের দৈহিক নিরাপত্তা দেওয়া এ বাহিনীর প্রধান দায়িত্ব হবে। এ ছাড়া বাহিনী বাংলাদেশে অবস্থানরত অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকেও নিরাপত্তা দেবে।

সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও অসংক্রামক রোগের (হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি) দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। মৃত্যুর দুই-তৃতীয়াংশের বেশি ঘটছে বিভিন্ন অসংক্রামক ও দীর্ঘমেয়াদি রোগে। তবে কয়েকটি সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাবও জনস্বাস্থ্যসংশ্লিষ্টদের উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
০৪ জুলাই ২০২৫
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যালটের নিরাপত্তাকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপাররা (এসপি)। তবে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মনে করেন, ঝুঁকি বিবেচনায় রেখে সব প্রার্থীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে নির্বাচন আয়োজন করা গেলে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব।
১০ ঘণ্টা আগে
সংশোধিত পুলিশ কমিশন আইন ও এনজিও-সংক্রান্ত আইন পাস করা নিয়ে গত ২৮ নভেম্বর উদ্বেগ জানায় বিএনপি। নির্বাচনের আগে এমন পদক্ষেপ নেওয়া থেকে অন্তর্বর্তী সরকারকে বিরত থাকারও আহ্বান জানায় দলটি।
১৪ ঘণ্টা আগে
প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আজ বৃহস্পতিবার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যাদেশের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
১৬ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আজ বৃহস্পতিবার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যাদেশের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।
উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশে (আরপিও) দুটি ক্ষেত্রে সংশোধনী আনা হয়েছে। প্রথম—এখন থেকে পোস্টাল ভোট সাধারণ ভোটের সঙ্গে একই সঙ্গে গণনা করা হবে। দ্বিতীয়—ব্যালট পেপারে একাধিক সিল থাকলে সেই ভোট বাতিল বলে গণ্য হবে।
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশও পাস হয়েছে। পুলিশকে জনবান্ধব করার জন্য এই কমিশন সরকারকে সুপারিশ করবে। পাশাপাশি, পেশাগত ক্ষেত্রে পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোও এই কমিশন দেখবে।
এক প্রশ্নের জবাবে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান নিশ্চিত করেন, ভিভিআইপি হিসেবে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় এসএসএফ সুবিধা দেওয়া নিয়ে একটি গেজেট জারি হয়েছে। সে অনুযায়ী খালেদা জিয়া এই সুযোগ-সুবিধা পাবেন। তবে তিনি আরও জানান, জিয়া পরিবারের অন্য সদস্যরা এই সুবিধা পাবেন না।
উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার অন্য এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁর পরিবার বিদেশে নিতে চাইলে তার সব প্রস্তুতি সরকারের রয়েছে। তিনি জানান, সরকার এ ব্যাপারে সহযোগিতা করছে এবং বিএনপি চাইলে আরও সহায়তা দেওয়া হবে।

প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আজ বৃহস্পতিবার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যাদেশের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।
উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশে (আরপিও) দুটি ক্ষেত্রে সংশোধনী আনা হয়েছে। প্রথম—এখন থেকে পোস্টাল ভোট সাধারণ ভোটের সঙ্গে একই সঙ্গে গণনা করা হবে। দ্বিতীয়—ব্যালট পেপারে একাধিক সিল থাকলে সেই ভোট বাতিল বলে গণ্য হবে।
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশও পাস হয়েছে। পুলিশকে জনবান্ধব করার জন্য এই কমিশন সরকারকে সুপারিশ করবে। পাশাপাশি, পেশাগত ক্ষেত্রে পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোও এই কমিশন দেখবে।
এক প্রশ্নের জবাবে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান নিশ্চিত করেন, ভিভিআইপি হিসেবে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় এসএসএফ সুবিধা দেওয়া নিয়ে একটি গেজেট জারি হয়েছে। সে অনুযায়ী খালেদা জিয়া এই সুযোগ-সুবিধা পাবেন। তবে তিনি আরও জানান, জিয়া পরিবারের অন্য সদস্যরা এই সুবিধা পাবেন না।
উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার অন্য এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁর পরিবার বিদেশে নিতে চাইলে তার সব প্রস্তুতি সরকারের রয়েছে। তিনি জানান, সরকার এ ব্যাপারে সহযোগিতা করছে এবং বিএনপি চাইলে আরও সহায়তা দেওয়া হবে।

সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও অসংক্রামক রোগের (হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি) দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। মৃত্যুর দুই-তৃতীয়াংশের বেশি ঘটছে বিভিন্ন অসংক্রামক ও দীর্ঘমেয়াদি রোগে। তবে কয়েকটি সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাবও জনস্বাস্থ্যসংশ্লিষ্টদের উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
০৪ জুলাই ২০২৫
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যালটের নিরাপত্তাকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপাররা (এসপি)। তবে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মনে করেন, ঝুঁকি বিবেচনায় রেখে সব প্রার্থীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে নির্বাচন আয়োজন করা গেলে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব।
১০ ঘণ্টা আগে
সংশোধিত পুলিশ কমিশন আইন ও এনজিও-সংক্রান্ত আইন পাস করা নিয়ে গত ২৮ নভেম্বর উদ্বেগ জানায় বিএনপি। নির্বাচনের আগে এমন পদক্ষেপ নেওয়া থেকে অন্তর্বর্তী সরকারকে বিরত থাকারও আহ্বান জানায় দলটি।
১৪ ঘণ্টা আগে
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দেওয়া ভিভিআইপি মর্যাদা জিয়া পরিবারের অন্য সদস্যরা পাবেন কি না—এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে উপদেষ্টা বলেন, ভিভিআইপি হিসেবে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় এসএসএফ সুবিধা দেওয়া নিয়ে একটি গেজেট জারি হয়েছে। সে অনুযায়ী খালেদা জিয়া এই সুযোগ-সুবিধা পাবেন।
১৪ ঘণ্টা আগে