Ajker Patrika

ভাঙ্গা-বরিশাল মহাসড়ক

জমি অধিগ্রহণে আটকে চার লেনের কাজ

  • ১৫২ একর জমির মধ্যে অধিগ্রহণ হয়েছে ৩৮ একর
  • ফরিদপুরে লাগবে ৭০ একর, অধিগ্রহণ হয়নি এক একরও
  • ২০১৮-তে নেওয়া প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ল দ্বিতীয় দফায়
  • কুয়াকাটা পর্যন্ত ছয় লেনের কথা থাকলেও তা হচ্ছে না
তৌফিকুল ইসলাম, ঢাকা 
আপডেট : ০১ জুন ২০২৫, ১৫: ৪০
জমি অধিগ্রহণে আটকে চার লেনের কাজ

ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে বরিশাল পর্যন্ত চার লেনের মহাসড়ক নির্মাণ আটকে আছে জমি অধিগ্রহণ শেষ না হওয়ায়। ২০১৮ সালে জমি অধিগ্রহণ প্রকল্প নেওয়া হলেও গত সাত বছরেও শেষ হয়নি সেই কাজ। ফলে মহাসড়ক নির্মাণকাজ শুরুর সময় নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়।

ভাঙ্গা-রবিশাল চার লেন মহাসড়কের জন্য জমি অধিগ্রহণ ২০২৩ সালে শেষ করার কথা ছিল। পরে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হলেও কাজ শেষ হয়নি। এবার জমি অধিগ্রহণ কাজের মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত করার প্রস্তাব করা হয়। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় গত ৭ মে মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টি অনুমোদন হয়েছে বলে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) সূত্র জানিয়েছে।

জানতে চাইলে সওজের বরিশাল বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মো. রেজাউল করিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জমি অধিগ্রহণ কাজের মেয়াদ ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি জমি অধিগ্রহণের কাজ সময়ের মধ্যে দ্রুত শেষ করার। পাশাপাশি মহাসড়ক নির্মাণকাজের জন্য দাতা সংস্থাও খোঁজা হচ্ছে। যদি পাওয়া যায়, তাহলে নির্মাণকাজ এগিয়ে নেওয়া যাবে। তবে মহাসড়ক নির্মাণে ব্যয় কেমন হবে, সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না।’

ভাঙ্গা-বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক চার লেন করার দাবি বরিশালবাসীর দীর্ঘদিনের। এই দাবিতে দক্ষিণাঞ্চলে আন্দোলন হচ্ছে। এই মহাসড়কের কাজ দ্রুত শেষ করার দাবিতে সম্প্রতি বিভিন্ন পেশাজীবী, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের অংশগ্রহণে বরিশাল ও ঢাকায় মানববন্ধন হয়েছে।

প্রকল্প সূত্র বলেছে, প্রকল্প শুরুর পর করোনা মহামারির সময়ে কোনো কাজ হয়নি। বিদেশি পরামর্শক দিয়ে শুরুতে একটি অ্যালাইনমেন্ট করে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই অ্যালাইনমেন্ট ধরে মাঠপর্যায়ে জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু করতে গেলে তাতে গরমিল দেখা দেয়। পরে সওজ নিজে নতুন অ্যালাইনমেন্ট তৈরি করে। এসব কারণে প্রকল্পের কাজ পিছিয়ে গেছে।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সহায়তায় ২১১ কিলোমিটার ঢাকা-বরিশাল-কুয়াকাটা জাতীয় মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীত করার লক্ষ্যে একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা হয়। ২০১৮ সালে ভূমি অধিগ্রহণ প্রকল্পে ১ হাজার ৮৬৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভাঙ্গা-বরিশাল মহাসড়কটি যাবে ফরিদপুর, মাদারীপুর হয়ে বরিশালে। এই মহাসড়ক নির্মাণে তিন জেলায় ১৫২ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। এর মধ্যে বরিশাল অংশে ৫১ একর, মাদারীপুর অংশে ৩১ একর এবং ফরিদপুর অংশে ৭০ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। তবে এই সাত বছরে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ বরিশালে ২৬ একর এবং মাদারীপুরে ১২ একর জমি বুঝে পেয়েছে। বরিশালে ২৫ একর এবং মাদারীপুরে ১৯ একর জমির অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াধীন। ফরিদপুরে কোনো জমি বুঝে পাননি প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা।

প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণ (এলএ) কেস আছে মোট ১৫টি। পাঁচটি এলএ কেসের মাধ্যমে জমি বুঝে পাওয়া গেছে। বাকি ১০টির যৌথ সার্ভে রিপোর্ট জমার পর্যায়ে রয়েছে। জমি অধিগ্রহণ কাজের মোট অগ্রগতি হয়েছে ৪০ শতাংশ। সওজ ও জেলা প্রশাসক (ডিসি) কার্যালয়ে জনবল কম থাকায় জমি অধিগ্রহণের কাজ বাধাগ্রস্ত হয়। কাজের গতি কম।

পদ্মা সেতু চালুর পর ভাঙ্গা-বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীত করার কথা বলা হয়েছিল। তবে পদ্মা সেতু চালুর তিন বছর পেরিয়ে গেলেও জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ না হওয়ায় আটকে আছে প্রকল্পের কাজ। এদিকে মহাসড়কে কয়েক গুণ বৈধ, অবৈধ যানবাহন বাড়ায় যানজট ও দুর্ঘটনা বাড়ছে। তবে প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আপাতত এই মহাসড়ক চার লেন করার চিন্তা করা হচ্ছে এবং বরিশাল পর্যন্ত জমি অধিগ্রহণ করা হবে। অর্থাৎ পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়ক এর সঙ্গে হচ্ছে না।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের দেশে জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া একটি জটিল কাজ। বেশির ভাগ প্রকল্পই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে জমি অধিগ্রহণ জটিলতায়। এটিকে সহজ করতে জমি অধিগ্রহণের কাজ ডিসি অফিসের ঘাড়ে না দিয়ে প্রকল্প কর্তৃপক্ষকেই দিতে হবে, তাহলে কাজটি দ্রুত হবে। এ ছাড়া প্রকল্পের কাজের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমিয়ে আনতে হবে। পদ্মা সেতু হওয়ার পর দক্ষিণাঞ্চলে যানবাহন বাড়লেও মহাসড়কের প্রশস্ততা বাড়েনি।’

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদির ছবি আঁকা হেলমেট পরে স্কাই ডাইভিং করবেন আশিক চৌধুরী

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির ছবি আঁকা হেলমেট হাতে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজ
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির ছবি আঁকা হেলমেট হাতে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজ

মহান বিজয় দিবসের ৫৪তম বর্ষপূর্তি উদ্‌যাপন উপলক্ষে ৫৪টি জাতীয় পতাকা উড়িয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়তে যাচ্ছেন বাংলাদেশের ৫৪ জন প্যারাট্রুপার। এই দলে থাকবেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী। গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদির ছবি আঁকা হেলমেট পরে স্কাই ডাইভিং করবেন তিনি।

আজ রোববার প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এই তথ্য জানানো হয়।

পোস্টে বলা হয়, ‘১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে ৫৪ জন প্যারাট্রুপার বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে প্যারাট্রুপিং করে বিশ্ব রেকর্ড গড়তে যাচ্ছেন। এই ৫৪ জনের একজন আশিক চৌধুরী জাম্প করবেন ওসমান হাদির ছবি আঁকা হেলমেট পরে। বিজয়ের দিনে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ভ্যানগার্ড ওসমান হাদির দ্রুত সুস্থতা কামনায় সকলকে দোয়া ও প্রার্থনার আহ্বান জানাই।’

এদিন একই পেজে দেওয়া আরেক পোস্টে বলা হয়, ‘এই বিজয় দিবসে চলে আসুন দলে দলে, এক অবিস্মরণীয় এয়ার শো দেখতে। বিজয়ের ৫৪তম বছরে, ৫৪ জন প্যারাট্রুপার, ৫৪টি জাতীয় পতাকা হাতে বিমান থেকে অবতরণ করবেন, গড়বেন বিশ্ব রেকর্ড। এয়ার শো উপভোগ করতে ব্যবহার করবেন আইডিবির উল্টো পাশের তালতলা গেট। গেট খোলা হবে ১৬ ডিসেম্বর সকাল ৮টায়। ১০টার মধ্যেই সবাইকে নির্ধারিত স্থানে সমবেত হওয়ার অনুরোধ করা যাচ্ছে।’

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং গত সোমবার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর যৌথ উদ্যোগে স্বাধীনতার ৫৪ বছর উদ্‌যাপনে ৫৪ জন প্যারাট্রুপার পতাকা হাতে স্কাই ডাইভিং করবেন। এটি হবে বিশ্বের বুকে সর্বাধিক পতাকা হাতে প্যারাস্যুটিং, যা গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড গড়বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজনৈতিক দলের জন্য নিরাপত্তা প্রটোকল দেবে পুলিশ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাজনৈতিক দলের জন্য নিরাপত্তা প্রটোকল দেবে পুলিশ

আসন্ন এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে সব রাজনৈতিক দলের জন্য নিরাপত্তা প্রটোকল সরবরাহ করবে পুলিশ।

আজ রোববার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।

এতে বলা হয়, এই প্রটোকলে রাজনৈতিক নেতা ও আসন্ন নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাঁদের বাসস্থান, কার্যালয়, চলাচল, জনসভা ও সাইবার স্পেসে কীভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন—সে বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হবে।

এ ছাড়া জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সম্মুখসারির নেতৃত্ব ও গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতাদের বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতীয় হাইকমিশনারকে তলব করে হাদির ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের অনুরোধ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮: ২৫
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মার এই ছবি ২০২৪ সালের ৩ ডিসেম্বরের। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার পর তখন তাঁকে তলব করে প্রতিবাদ জানিয়েছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ফাইল ছবি
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মার এই ছবি ২০২৪ সালের ৩ ডিসেম্বরের। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার পর তখন তাঁকে তলব করে প্রতিবাদ জানিয়েছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ফাইল ছবি

ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অন্তত পাঁচবার তলব করা হলো প্রতিবেশী দেশের রাষ্ট্রদূতকে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আজ রোববার সকালে প্রণয় ভার্মাকে তলব করে দিল্লিতে আশ্রয় নেওয়া ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অব্যাহত উসকানিমূলক বক্তব্যে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্বেগের বিষয়টিও জানিয়ে দেওয়া হয়।

গত শুক্রবার ঢাকায় জুলাই অভ্যুত্থানের সমর্থক ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। তিনি এখনো সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। ওসমান হাদিকে গুলিবর্ষণকারী ভারতে পালিয়ে গেছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ওসমান হাদি হত্যাচেষ্টার সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজনদের ভারতে পালিয়ে যাওয়া প্রতিরোধে ভারতের সহযোগিতাও কামনা করা হয়েছে। তাঁরা যদি ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশ করতে সক্ষমও হন, তবে তাঁদের তাৎক্ষণিক গ্রেপ্তার ও বাংলাদেশের কাছে প্রত্যর্পণ নিশ্চিত করার অনুরোধ জানানো হয়।

জুলাই অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর থেকে বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে। গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে গত বছরের ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। জুলাই আন্দোলন দমনে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে গত ১৭ নভেম্বর বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পর তাঁকে ফেরত দিতে নয়াদিল্লিকে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানায় অন্তর্বর্তী সরকার। তবে তাতে দিল্লির কোনো সাড়া মেলেনি। তা ছাড়া আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বক্তব্য–বিবৃতি বন্ধ করার আহ্বানে সাড়া দেয়নি ভারত।

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরও শেখ হাসিনার বক্তব্য–বিবৃতি অব্যাহত রয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটে আবার ভারতের হাইকমিশনারকে তলব করা হলো। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তাঁকে ডেকে নিয়ে সরকারের পক্ষে উদ্বেগ তুলে ধরেন পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়াম।

ভারতের হাইকমিশনারকে বলা হয়, পলাতক শেখ হাসিনাকে উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে, যার মাধ্যমে তিনি তাঁর সমর্থকদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসন্ন নির্বাচন বানচালে প্ররোচিত করছেন। এ ঘটনায় বাংলাদেশ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের পলাতক নেতা–কর্মীরা ভারতে বসে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন বানচালে নানা ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও প্রণয় ভার্মাকে জানানো হয়। এসব সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর আহ্বানও জানানো হয়।

মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত শেখ হাসিনা,ও তাঁর সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে ফেরত পাঠানোর আহ্বানও আবার জানানো হয় ভারতের হাইকমিশনারকে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আশা প্রকাশ করেছে, প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সুরক্ষায় বাংলাদেশের জনগণের পাশে দাঁড়াবে ভারত সরকার। ভারতের হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে—এমন প্রত্যাশা ভারতের রয়েছে এবং এ বিষয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিতে তাঁর দেশ প্রস্তুত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতীয় হাইকমিশনারকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৫৩
ভারতীয় হাইকমিশনারকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়েছে। তাঁকে অনুরোধ করা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দণ্ডপ্রাপ্ত গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে যেন বাংলাদেশে প্রত্যর্পণ করা হয়।

একই সঙ্গে ভারতীয় হাইকমিশনারকে অনুরোধ করে বলা হয়, ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টাকারীরা বাংলাদেশ থেকে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা রোধে ভারত সরকার যেন বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা করে এবং তাঁরা ভারতে পালিয়ে যেতে সক্ষম হলে তাঁদের যেন ভারতীয় কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে পাকড়াও করার উদ্যোগ নেয় এবং বাংলাদেশে প্রত্যর্পণ করে।

আজ রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে হাইকমিশনারের মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশের কাছে এসব অনুরোধ জানানো হয় বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভারতীয় হাইকমিশনারকে জানানো হয়েছে, ভারতে অবস্থানকারী পলাতক অপরাধী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা বিঘ্ন করাসহ আসন্ন নির্বাচন বানচাল করার অসাধু উদ্দেশ্যে ক্রমাগতভাবে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন এবং তাঁর দলের সমর্থকদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালানোর জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন। ভারত সরকারকে অনুরোধ করা হয়েছে, তারা যেন অনতিবিলম্বে তাঁর এবং ভারতে পলাতক তাঁর সাঙ্গপাঙ্গদের এসব ফ্যাসিস্ট টেররিস্ট কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দেয়।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে সব রাজনৈতিক দলের জন্য নিরাপত্তা প্রটোকল পুলিশ সরবরাহ করবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

এতে বলা হয়, এই প্রটোকলে রাজনৈতিক নেতা ও আসন্ন নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাঁদের বাসস্থান, কার্যালয়, চলাচল, জনসভা ও সাইবার স্পেসে কীভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন—সে বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হবে। এ ছাড়া জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সম্মুখসারির নেতৃত্ব ও গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতাদের বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলাকারী ও তাঁর সহযোগীদের পুলিশ এরই মধ্যে শনাক্ত করেছে। তাঁদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিবিড় অভিযান অব্যাহত রয়েছে। হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি এরই মধ্যে জব্দ করা হয়েছে এবং সন্দেহভাজনদের হাতের ছাপ (ফিঙ্গারপ্রিন্ট) পরীক্ষা করা হচ্ছে। প্রধান সন্দেহভাজন ব্যক্তি যাতে কোনোভাবেই সীমান্ত অতিক্রম করতে না পারে, সে জন্য হামলার দিন রাতেই সবগুলো ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে সন্দেহভাজনদের ছবি ও অন্যান্য তথ্য সরবরাহ করা হয়। সীমান্ত এলাকায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং র‍্যাবের টহল জোরদার করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, দেশের অভ্যন্তরে একাধিকবার সন্দেহভাজনদের অবস্থান শনাক্ত করা হলেও বারবার স্থান পরিবর্তনের কারণে এখনো তাঁদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। পুলিশ এরই মধ্যে প্রধান সন্দেহভাজনের চলাচলের খতিয়ান বা ট্রাভেল হিস্ট্রি সংগ্রহ করেছে। এতে দেখা যায়, আইটি ব্যবসায়ী পরিচয়ে তিনি গত কয়েক বছরে একাধিক দেশ ভ্রমণ করেছেন। সর্বশেষ গত ২১ জুলাই সিঙ্গাপুর ভ্রমণের তথ্য পাওয়া গেছে।

এই হামলার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে—এমন আরও কয়েকজন সন্দেহভাজনকে এরই মধ্যে নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত