Ajker Patrika

ফুরাল সিকিমের নানা রঙের দিন: পর্ব-৮

আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩: ৩৯
ফুরাল সিকিমের নানা রঙের দিন: পর্ব-৮

সেদিন ভারতে আমাদের শেষ দিন। শিলিগুড়ি থেকে চেংড়াবান্ধা সীমান্ত পেরিয়ে পৌঁছে যাব নিজ দেশে। এ কথা ভাবতেই খুব আনন্দ লাগছিল। সকাল থেকে ভুবনকে বেশ ফুরফুরে লাগছিল। ডাক্তারের কথা তাহলে ঠিক ছিল। ওষুধ কাজ করেছে। হোটেলের দু-একজন কর্মচারী যাঁরা জেনেছিলেন, আমরা অসুস্থ হওয়ায় তাঁরা এসে শেষবারের মতো খোঁজ নিয়ে গেলেন। বাস দুপুর আড়াইটায়। এর আগে খাওয়াদাওয়া সেরে আমরা প্রস্তুত। খেতে তো আর ওইভাবে পারছিলাম না তখনো। তবু যতটুকু পারলাম খেলাম। ২টার আগেই কিংশুকদা চলে এসেছিলেন আমাদের বিদায় জানাতে।

তিনি হোটেল থেকে চেকআউটের সব ব্যবস্থা করে দিলেন। অসুস্থ ভুবনকে দৌড়াদৌড়ি করতে দিলেন না। আমাদের তল্পিতল্পা বাসে ওঠাতেও সাহায্য করলেন কিংশুকদা। বাসে উঠলে পরে জানালার বাইরে তাকিয়ে দেখলাম তিনি হাত নেড়ে বিদায় জানাচ্ছেন। এই মানুষটার উপকার আমরা সারা জীবনেও ভুলব না। কী অদ্ভুত! আমি আমার যে সহকর্মীকে কোনো দিন সামনাসামনি দেখিনি, শুধু ই-মেইলে কথা হয়, সেই নারীর ভাইকে তো চেনার প্রশ্নই ছিল না। অথচ দুই দিনে এই মধ্যবয়স্ক মানুষটা কেমন যেন মায়া লাগিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর কাছে আমরা ভিনদেশের অচেনা-অজানা নাগরিক ছিলাম। এতখানি ভালোবাসা কি আমরা প্রাপ্য ছিলাম? থেকে থেকে আমার শুধু ভাইয়ার কথা মনে পড়ছিল।

বাস ছেড়ে দেওয়ার আগমুহূর্তে আমাদের আসন বদলে দেওয়া হলো। এবার জানালার কাচে কালো স্টিকার লাগানো। মনটা খারাপ হয়ে গেল বাইরের কিছু দেখতে পারব না বলে। জানালাগুলো খোলাও যায় না, একেবারে বন্ধ। যাকে বলে ‘ফিক্সড’। বিপরীত পাশের জানালা দিয়ে দেখা যায়। কোনো স্টিকার নেই। আমি সারা পথ উঁকিঝুঁকি মেরে বিপরীত দিকের জানালাগুলো দিয়ে তাকানোর চেষ্টা করছিলাম। বাইরের দৃশ্য দেখা আমার অভ্যাস। ভ্রমণে এটাই তো সবচেয়ে ভালো লাগার ব্যাপার। বিপরীত দিকের জানালা দিয়ে দেখতে কষ্ট হচ্ছিল। তবু কিছুক্ষণ পরপরই তাকাচ্ছিলাম। সেই মন্দির, প্রতিমা, হোটেল, বাড়ি, চা-বাগান, ট্রাক—এসব দেখতে দেখতে ঘণ্টা তিনের মধ্যে পৌঁছে গেলাম চেংড়াবান্ধা সীমান্তে। এবার আমাদের ছেড়ে দিতে খুব বেশি সময় নিল না ভারত।

বেঁচে যাওয়া রুপিগুলো টাকায় ভাঙিয়ে নিলাম। বাংলাদেশ সীমান্তে ঢুকে পাসপোর্ট ফেরত নিতে গিয়ে আটকে গেলাম। ৪০০ করে টাকা না দিলে দুইটা পাসপোর্ট ছাড়ছিল না। আমার তো মেজাজ তখন তুঙ্গে চড়ে যাচ্ছিল। কিছু একটা বলা শুরু করব, তার আগেই ভুবন আমার চেহারা-নকশা দেখে থামিয়ে দিল। গলা নামিয়ে বলল, ‘প্লিজ কিছু বোলো না। শান্ত থাকো। আমি দিয়ে দিচ্ছি। নইলে ঝামেলা করবে। পরে আর পাসপোর্ট পাবে না।’ যে লোকটা টাকা চাইলেন, তিনি নিজেও আমাকে আশ্বাস দিচ্ছিলেন যে এটা নিয়ম মাফিক নেওয়া হচ্ছে, কোনো উপরি নয়। কিন্তু আমার মনে আজ পর্যন্ত সন্দেহ রয়েই গেল। যাই হোক, টাকার বিনিময়ে পাসপোর্ট পেয়ে গেলাম। প্রবেশ করলাম আমার দেশে। 

চেংড়াবান্ধা সীমান্ত পেরিয়ে সন্ধ্যার আগে ঢুকলাম রংপুরের পাটগ্রামে। এবার আর ইমিগ্রেশন সেন্টারে অপেক্ষা করার প্রয়োজন ছিল না। চলে গেলাম শ্যামলীর বাস কাউন্টারে। আমার ভীষণ ক্ষুধা লেগেছিল। ভুবন খেতে চাইছিল না। ওর ধারণা ছিল, খেলেই বমি হয়ে যাবে। তবু আগের হোটেলটায় খেতে বসলাম। আমি গোগ্রাসে খেলাম ভাত আর মুরগি। বেশ তৃপ্তি নিয়ে। মনে হচ্ছিল হাজার বছর ধরে পেটে কিছু ঢোকেনি। কিন্তু ভুবন এবারও তেমন খেতে পারল না। মাগরিবের সময়টা পার হয়ে গেলে ঢাকার উদ্দেশে বাস ছাড়ে। আবার সেই পিচ্ছিল আসনে বসতে হলো। আমরা ঘুমানোর চেষ্টা করেছিলাম। লাভ হয়নি তেমন। রাত ১২টার বিরতি। আগের মতো আবার একই জায়গায়। পঁচিশ মিনিটের বিরতির পর আবার বাসের চলা শুরু। ঢাকায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে দিনের আলো ফুটে গেল। ভুবন চাঙা হয়ে উঠছিল।

কিন্তু আমি নেতিয়ে পড়ছিলাম আবার। সাড়ে ৭টা কি ৮টার দিকে বাসায় পৌঁছে গেলাম। নাশতা সেরে দিলাম ঘুম। উঠলাম একেবারে বিকেলে। খেয়েদেয়ে ঘুম। রাতে উঠে আবার খাওয়া, আবার ঘুম। কেমন করে যে একটা দিন ঘুমে ঘুমে কেটে গেল, বলতেই পারব না দুজনের একজনও। হয়তো খুব বেশি ক্লান্ত ছিলাম। ভুবন সেদিন প্রায় পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেছিল। ঠিকই বলেছিল, বাসায় গেলে সুস্থ হয়ে যাবে। কিন্তু আমি কেন জানি আবার অসুস্থ হয়ে যাচ্ছিলাম। পরদিন সকালে আমার শাশুড়ি এলেন। তিনি হঠাৎ করে আমার হাত ধরে বললেন, ‘তোমার হাত লাল কেন? সারা শরীরে কী এমন হয়েছে?’

আমি খেয়াল করে দেখলাম আসলেই লালচে ছোপ পড়েছে সারা গায়ে। মা ভুবনকে বললেন, ‘আজকেই ডাক্তার দ্যাখায় আনো ওকে। একটুও দেরি করবা না।’ মা চলে গেলেন বিকালে। টলতে টলতে সন্ধ্যায় পাড়ার এক ডাক্তার দেখিয়ে এলাম ভুবনের সঙ্গে। জানলাম, র‍্যাশ হয়েছে। তাঁর দেওয়া ওষুধ দুই-তিন দিন খেয়ে কাজ হচ্ছিল না। চুলকানি বাড়তে লাগল। সঙ্গে র‍্যাশও। মা ফোনে বললেন চর্মরোগের ডাক্তার দেখাতে। আমার বাবার চেনা এক ডাক্তারকে পরদিন দেখাতে গেলাম। তিনি দেখে বললেন, ‘প্যারাসিটামলের রিঅ্যাকশন।’ তার মানে, ইচ্ছামতো আবোল-তাবোল প্যারাসিটামল যে খেয়েছিলাম ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া, সেটার ফলাফল। মাসুম ভাই হয়তো ভালো মনে করেই ওষুধ দিয়েছিলেন। হয়তো হোটেল সেন্ট্রাল প্লাজার ওই কর্মচারীটাও আমার ক্ষতি চায়নি। ভুবনও তো সুস্থ হওয়ার জন্য কিনে এনেছিল ভারতীয় কোনো একটা প্যারাসিটামল। শিক্ষা হলো, আর কোনো দিন চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ গিলব না।

দশ দিনের ওষুধ আর রক্ত পরীক্ষা লিখে দিলেন ডাক্তার। বুঝিয়ে দিলেন রিপোর্ট ভালো হলে আর দেখানোর দরকার নেই। ওষুধেই ঠিক হয়ে যাবে। সেদিন রক্ত দিলাম। পরদিন ভুবন রিপোর্ট নিয়ে এসেছিল। ডাক্তার যেই শঙ্কার কথা বলেছিলেন, তেমন কিছু নেই। শুধু র‍্যাশটাই যা ক্ষতি করছিল। ওষুধ খেতে লাগলাম। চুলকানির জন্য একটা মলম লাগাতে দিয়েছিলেন ডাক্তার। সেটাও ব্যবহার করতে লাগলাম। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছিলাম। র‍্যাশগুলো মলিন হওয়া শুরু করল। সেই সঙ্গে সিকিম আর শিলিগুড়ির স্মৃতিও।

[সমাপ্ত]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নোচে বুয়েনা: মেক্সিকোর এই বিশেষ বিয়ার শুধু বড়দিনেই মেলে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
হাইনেকেন মেক্সিকো
হাইনেকেন মেক্সিকো

মেক্সিকো বিশ্বের বৃহত্তম বিয়ার রপ্তানিকারক দেশ হলেও, তাদের অন্যতম জনপ্রিয় একটি পানীয় দেশের বাইরে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। ‘নোচে বুয়েনা’ (Noche Buena) নামের এই বিশেষ বিয়ারটি কেবল মেক্সিকোর ভেতরেই পাওয়া যায় এবং তাও বছরে মাত্র কয়েক সপ্তাহের জন্য। বড়দিনের আমেজ নিয়ে আসা এই পানীয়টি মেক্সিকানদের কাছে উৎসবের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।

স্প্যানিশ ভাষায় ‘নোচে বুয়েনা’ শব্দের অর্থ ‘পবিত্র রাত’ বা ‘বড়দিনের আগের রাত’। মেক্সিকোতে যখনই সুপারমার্কেটের তাকে গাঢ় লাল রঙের নোচে বুয়েনার বাক্সগুলো দেখা যায়, তখনই সাধারণ মানুষ বুঝে নেয় যে ছুটির মৌসুম বা বড়দিনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়ে গেছে।

মেক্সিকোর সাধারণ হালকা বিয়ারগুলোর তুলনায় নোচে বুয়েনা বেশ আলাদা। এটি মূলত জার্মান ‘বক-স্টাইল’ (Bock-style) বিয়ার। এতে রয়েছে পোড়া কফি, ক্যারামেল এবং চকোলেটের স্বাদ। ৫ দশমিক ৯ শতাংশ অ্যালকোহল সমৃদ্ধ এই বিয়ারটির অম্ল-মিষ্টি স্বাদ মেক্সিকোর ঐতিহ্যবাহী ক্রিসমাস ডিশ যেমন—টার্কি, রোমেরিতোস (মোল সসে ভেজানো ভেষজ) বা নোনতা কড মাছের (Bacalao) সঙ্গে দারুণ মানিয়ে যায়।

১৯২৪ সালে জার্মান মাস্টার ব্রুয়ার অটো নিউমায়ার প্রথম ভেরাক্রুজে নিজের বন্ধুদের জন্য বড়দিনের উপহার হিসেবে এটি তৈরি করেন। ১৯৩৮ সালে এটি প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে বাজারে আনা হয় এবং তখন থেকেই এটি মৌসুমি পানীয় হিসেবে জনপ্রিয়।

মেক্সিকোর বিয়ার শিল্পের ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, ১৯শ শতাব্দীর শেষভাগে এবং ২০শ শতাব্দীর শুরুতে জার্মানি ও ইউরোপের অন্যান্য দেশ থেকে বাস্তুচ্যুত বিয়ার নির্মাতারা মেক্সিকোতে এসে ছোট ছোট ব্রুয়ারি গড়ে তোলেন। ১৮৭৫ সালে সুইজারল্যান্ডের সান্তিয়াগো গ্রাফ প্রথম মেক্সিকোতে ‘ল্যাগার’ বিয়ারের প্রচলন করেন। পরবর্তীতে ‘সারভেসেরিয়া মোক্তেজুমা’ (Cervecería Moctezuma) নামক কারখানায় নোচে বুয়েনার যাত্রা শুরু হয়।

কেন এটি মেক্সিকোর বাইরে পাওয়া যায় না

মেক্সিকো বছরে প্রায় ৬ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের বিয়ার রপ্তানি করে, যা বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি রপ্তানিকারক দেশের সম্মিলিত আয়ের চেয়েও বেশি। তাসত্ত্বেও নোচে বুয়েনা কেন বিদেশে পাওয়া যায় না, তা নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই।

২০১১ সালে হাইনেকেন (Heineken) এই বিয়ারটি যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি শুরু করলেও চাহিদার অভাবে ২০১৮ সালে তা বন্ধ করে দেয়। মেক্সিকান প্রবাসীরা বড়দিনের সময় এই বিয়ারটির অভাব তীব্রভাবে অনুভব করেন। অনেক সময় তারা যুক্তরাষ্ট্রে এর বিকল্প হিসেবে ‘নোচে এস্পেশাল’ খুঁজে নেন, কিন্তু আসল নোচে বুয়েনার স্বাদ মেক্সিকোর বাইরে মেলা ভার।

বর্তমানে অক্টোবর মাসের শেষ থেকে জানুয়ারির শুরু পর্যন্ত এই বিয়ারটি মেক্সিকোর বিভিন্ন বার, ক্যান্টিনা এবং সুপারমার্কেটে পাওয়া যায়। মেক্সিকানদের কাছে এটি কেবল একটি পানীয় নয়, বরং বড়দিনের আনন্দ আর বন্ধুত্বের এক বিশেষ প্রতীক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পোষা প্রাণী নিয়ে বিমানযাত্রার আগে জেনে নিন

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
প্রিয় পোষা প্রাণী নিয়ে বিমানে ভ্রমণ যথেষ্ট দায়িত্বের কাজ বটে। প্রতীকী ছবি: ফ্রিপিক
প্রিয় পোষা প্রাণী নিয়ে বিমানে ভ্রমণ যথেষ্ট দায়িত্বের কাজ বটে। প্রতীকী ছবি: ফ্রিপিক

কোথাও ঘুরতে যাওয়া কিংবা দেশে ফেরা সব সময় আনন্দের। অনেকে ভ্রমণের সময় নিজের পোষা প্রাণী নিয়ে যাত্রা করেন। আপনার প্রিয় পোষা প্রাণীকে নিয়ে বিমানে ভ্রমণের পরিকল্পনা করা যেমন আনন্দের, তেমনি এটি যথেষ্ট দায়িত্বের কাজও বটে। একটি সফল ও নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে যাত্রার আগে ও চলাকালীন কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সচেতন থাকা জরুরি। সঠিক প্রস্তুতি এবং নিয়মকানুন মেনে চললে আপনার এবং আপনার প্রিয় সঙ্গীটির বিমানযাত্রা হবে আনন্দদায়ক ও নিরাপদ।

গাড়িতে ভ্রমণ করা পোষা প্রাণীর জন্য সাধারণত নিরাপদ। কিন্তু বিমানে ভ্রমণ পোষা প্রাণীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে; বিশেষ করে ব্র্যাকিউসেফালিক বা চাপা নাকের প্রাণী, যেমন বুলডগ, পাগ বা পার্সিয়ান বিড়াল, বিমানে শ্বাসকষ্ট বা হিট স্ট্রোকের শিকার হতে পারে। তাই ভ্রমণের আগে কিছু বিষয় বিবেচনা করতে হবে। যদি সম্ভব হয়, পোষা প্রাণীকে কোনো নির্ভরযোগ্য পেট সিটার বা বোর্ডিংয়ে রেখে যাওয়া তাদের জন্য বেশি আরামদায়ক হতে পারে। যাত্রার ঝুঁকি এবং প্রয়োজনীয়তার ভারসাম্য বজায় রেখে সিদ্ধান্ত নিন।

পশুচিকিৎসকের পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় নথিপত্র

ভ্রমণের অন্তত ১০ দিন আগে আপনার পশুচিকিৎসকের কাছে যান এবং একটি স্বাস্থ্য সনদ সংগ্রহ করুন। নিশ্চিত করুন যে সব টিকা, বিশেষ করে র‍্যাবিস দেওয়া আছে। পোষা প্রাণীর লাইসেন্স, মাইক্রোচিপ নম্বর, টিকা দানের প্রমাণপত্র এবং নিয়মিত ওষুধের একটি তালিকা সঙ্গে রাখুন। যদি প্রাণীটি কোনোভাবে হারিয়ে যায়, তবে তাকে খুঁজে পেতে তার একটি সাম্প্রতিক ছবিও সঙ্গে রাখুন।

এয়ারলাইনস নির্বাচন ও বুকিংয়ের সময় করণীয়

সব এয়ারলাইনসের নিয়ম এক নয়। তাই টিকিট কাটার আগে নিচের বিষয়গুলো নিশ্চিত করুন। ছোট কুকুর বা বিড়াল হলে অতিরিক্ত ফিতে তারা আপনার সঙ্গে কেবিনেই যেতে পারে কি না, জেনে নিন। মনে রাখবেন, কেবিনে প্রাণীর সংখ্যা সীমিত থাকে। তাই আগেভাগে কল করে বুকিং দিন। যদি আপনার প্রিয় প্রাণীকে কার্গোতে দিতেই হয়, তবে এয়ারলাইনসের আগের রেকর্ড যাচাই করে নিন। সংযোগকারী ফ্লাইট এড়িয়ে সরাসরি ফ্লাইট বেছে নিন। এতে বিমানে ওঠানো-নামানোর সময় ভুল হওয়ার ঝুঁকি কমে। গরমে ভ্রমণের জন্য খুব সকালে বা রাতে এবং শীতে দুপুরের ফ্লাইট বেছে নেওয়া ভালো।

সঠিক ক্যারিয়ার নির্বাচন ও প্রস্তুতি

আপনার পোষা প্রাণীর জন্য সঠিক ক্যারিয়ার বা কেনেল নির্বাচন করা বাধ্যতামূলক। ভ্রমণের অন্তত এক মাস আগে থেকে পোষা প্রাণীকে ক্যারিয়ারের সঙ্গে অভ্যস্ত করুন। সেখানে তাদের প্রিয় কম্বল বা খেলনা রাখুন এবং মাঝে মাঝে খাবার দিন। ক্যারিয়ারে আপনার নাম, স্থায়ী ঠিকানা এবং গন্তব্যস্থলের ফোন নম্বরসহ একটি ট্রাভেল লেবেল লাগিয়ে দিন। প্রাণীর নখ কেটে দিন, যাতে তা ক্যারিয়ারের খাঁজে আটকে না যায়। যাত্রার আগে ভারী খাবার দেবেন না। পানির পাত্রে বরফের টুকরা রাখতে পারেন, যাতে পানি উপচে না পড়ে। পশুচিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ট্রাঙ্কুলাইজার বা ঘুমের ওষুধ দেবেন না।

বিমানবন্দর ও নিরাপত্তা তল্লাশি

বিমানবন্দরে সিকিউরিটি স্ক্রিনিংয়ের সময় পোষা প্রাণীর ক্যারিয়ার এক্স-রে মেশিনের মধ্য দিয়ে যাবে। তখন আপনার কাছে দুটি উপায় থাকে,

  • পোষা প্রাণীর হারনেস শক্ত করে ধরে তাকে বাইরে রাখা এবং ক্যারিয়ারটি আলাদাভাবে চেক করা।
  • বিশেষ সেকেন্ডারি স্ক্রিনিংয়ের অনুরোধ করা, যাতে প্রাণীকে ক্যারিয়ার থেকে বের করতে না হয়।

কার্গোতে ভ্রমণের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা

যদি পোষা প্রাণী কার্গোতে ভ্রমণ করে, তবে কিছু বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করুন। বিমানে ওঠার পর ক্যাপ্টেন এবং অন্তত একজন ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টকে জানান, কার্গোতে আপনার পোষা প্রাণী আছে। পোষা প্রাণীর গলায় এমন কলার পরান, যা ক্যারিয়ারের দরজায় আটকে যাবে না। এতে স্থায়ী ও অস্থায়ী দুটি আইডি ট্যাগ যুক্ত করুন। মনে রাখবেন, কোনো অবস্থায় চাপা নাকের প্রাণীদের কার্গোতে পাঠাবেন না।

গন্তব্যে পৌঁছানোর পর

গন্তব্যে পৌঁছানোর পর দ্রুত কোনো নিরাপদ স্থানে গিয়ে ক্যারিয়ার খুলুন এবং আপনার পোষা প্রাণীকে পরীক্ষা করুন। যদি কোনো অস্বাভাবিকতা লক্ষ করেন, তাহলে দেরি না করে স্থানীয় পশুচিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান এবং পরীক্ষার ফলাফল লিখিত আকারে সংগ্রহ করুন।

সূত্র: হিউম্যান ওয়ার্ল্ড ফর অ্যানিমেলস, ট্রাভেল আপ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্বল্প খরচে নেপাল ভ্রমণের ১১ পরামর্শ

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
স্বল্প বাজেটের ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য নেপাল দারুণ গন্তব্য। প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি।
স্বল্প বাজেটের ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য নেপাল দারুণ গন্তব্য। প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি।

স্বল্প বাজেটের ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য নেপাল দারুণ গন্তব্য। ১৯৭০ সালের পর ‘হিপি ট্রেইল’ যুগ থেকে কাঠমান্ডুতে বাজেট ভ্রমণের সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। পরে এই সংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্ন শহর ও ট্রেকিং রুটে। যদিও আজকের নেপাল আগের মতো অতটা সস্তা নয়; তবে এখনো দেশটিতে স্বল্প খরচে ভ্রমণের অসাধারণ সুযোগ রয়েছে।

ভ্রমণের পরিকল্পনা করুন সময় বুঝে

পর্যটনের ক্ষেত্রে নেপালে ব্যস্ত সময় হলো অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে নভেম্বরের শেষ এবং মার্চের শেষ থেকে এপ্রিল। এই সময় দেশটিতে হোটেল ও লজের ভাড়া বেড়ে যায়। এর বাইরে ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ এবং সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাস হলো শোল্ডার সিজন। এই সময় দেশটিতে পর্যটক কম থাকে এবং হোটেল ভাড়ায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় পাওয়া যায়। পাহাড়ি এলাকায় অনেক সময় চার্জিং বা ওয়াই-ফাই বিনা খরচে দেওয়া হয়। তবে শোল্ডার সিজনে মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হতে পারে।

কাঠমান্ডু বিমানবন্দর থেকে একটু হাঁটুন

বিমানবন্দর এলাকায় ট্যাক্সিচালকেরা অনেক সময় অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করেন। তবে সেখান থেকে প্রায় ৮০ মিটার হাঁটলেই রিং রোডে সাধারণ ভাড়ায় ট্যাক্সি পাওয়া যায়। ট্যাক্সিতে থামেল এলাকায় যেতে সাধারণত ৬০০ রুপি লাগে। চাইলে লোকাল বাসও ব্যবহার করা যায়। আগাম জানালে অনেক হোটেল নির্দিষ্ট বা বিনা মূল্যের পিকআপ সুবিধাও দেয়।

থামেলের বাইরে থাকা-খাওয়া সাশ্রয়ী। ছবি: ফ্রিপিক
থামেলের বাইরে থাকা-খাওয়া সাশ্রয়ী। ছবি: ফ্রিপিক

পাঠাও ও ইনড্রাইভ ব্যবহার করুন

রাস্তার ট্যাক্সির চেয়ে কাঠমান্ডুতে পাঠাও এবং কাঠমান্ডুর বাইরে ইনড্রাইভ অ্যাপ ব্যবহার করলে কম ভাড়ায় নিরাপদ যাতায়াত করা যায়।

থাকা-খাওয়ার জন্য থামেলের বাইরে যান

থামেল পর্যটকদের জন্য সুবিধাজনক হলেও সেখানে হোটেল ও খাবারের দাম তুলনামূলক বেশি। থামেলের আশপাশের এলাকায় একই মানের হোটেল ২০ শতাংশ কম দামে পাওয়া যায়। খাবারের ক্ষেত্রেও শহরের অন্যান্য এলাকায় তুলনামূলক সস্তা ও ভালো মানের খাবার পাওয়া যায়।

বিকল্প হিসেবে বৌদ্ধনাথ এলাকা

বৌদ্ধনাথ স্তূপসংলগ্ন এলাকা থামেলের ভালো বিকল্প। সেখানে সাশ্রয়ী হোটেল ও খাবার পাওয়া যায় এবং পরিবেশ অনেক শান্ত। সেখানে দেখা মিলবে তীর্থযাত্রীদের এবং শোনা যাবে বৌদ্ধদের প্রার্থনার ধ্বনি। বিমানবন্দরের কাছাকাছি হওয়ায় ভ্রমণের শেষ দিকে থাকার জন্য এটি আদর্শ জায়গা।

বৌদ্ধনাথ, পাতান দরবার স্কয়ার, কাঠমান্ডু দরবার স্কয়ার এবং ভক্তপুরের মতো ঐতিহাসিক স্থানগুলোর টিকিট এক সপ্তাহ বা ভিসার মেয়াদ পর্যন্ত বাড়ানো যায়। ছবি: ফ্রিপিক
বৌদ্ধনাথ, পাতান দরবার স্কয়ার, কাঠমান্ডু দরবার স্কয়ার এবং ভক্তপুরের মতো ঐতিহাসিক স্থানগুলোর টিকিট এক সপ্তাহ বা ভিসার মেয়াদ পর্যন্ত বাড়ানো যায়। ছবি: ফ্রিপিক

দর্শনীয় স্থানের টিকিট বাড়িয়ে নিন

বৌদ্ধনাথ, পাতান দরবার স্কয়ার, কাঠমান্ডু দরবার স্কয়ার এবং ভক্তপুর নেপালের জনপ্রিয় ঐতিহাসিক স্থান। অনেকে হয়তো জানেন না, এই স্থানগুলোর টিকিট এক সপ্তাহ বা ভিসার মেয়াদ পর্যন্ত বাড়ানো যায়। এর জন্য পাসপোর্ট প্রয়োজন। কাঠমান্ডু দরবার স্কয়ারে পাসপোর্ট সাইজ ছবি লাগতে পারে।

স্থানীয় খাবার খান, বিশেষ করে ট্রেকিংয়ের সময়

আন্তর্জাতিক খাবারের তুলনায় নেপালি খাবার অনেক সস্তা। পাহাড়ি ট্রেকে ডাল-ভাত সবচেয়ে সাশ্রয়ী ও পুষ্টিকর খাবার।

লোকাল বাসের বদলে ট্যুরিস্ট বাস নিন

পোখারা, চিতওয়ান বা লুম্বিনিতে যেতে ট্যুরিস্ট বাস কিছুটা দামি হলেও বেশি আরামদায়ক এবং দ্রুত যাওয়া যায়। অল্প কিছু টাকা বেশি দিলেই ভ্রমণ অনেক স্বস্তিদায়ক হয়।

নিজের সক্ষমতা অনুযায়ী ট্রেক বেছে নিন

নেপালের জনপ্রিয় ট্রেকিং রুটগুলো সাধারণত ব্যস্ত। অভিজ্ঞ ট্রেকাররা দলবদ্ধভাবে গাইড ছাড়াও যেতে পারেন। তবে একা যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। নিজের শারীরিক সক্ষমতা বুঝে ট্রেক নির্বাচন করা অত্যন্ত জরুরি।

গাইড নিতে চাইলে নেপালে গিয়ে নিন

অনেকে নিরাপত্তার জন্য গাইড নিতে চান। সে ক্ষেত্রে আগে বুক না করে নেপালে গিয়ে সরাসরি গাইড বা এজেন্সির সঙ্গে কথা বললে খরচ কম পড়ে।

স্বল্প ট্রেকের জন্য গিয়ার ভাড়া নিন

স্বল্প সময়ের ট্রেকের জন্য ভারী গিয়ার সঙ্গে নেওয়ার দরকার নেই। কাঠমান্ডু ও পোখারায় সহজে জ্যাকেট, স্লিপিং ব্যাগ ইত্যাদি ভাড়া পাওয়া যায়। প্রতিদিন গড়ে ১০০ রুপি ব্যয় হতে পারে এ বাবদ।

নেপালে দৈনিক আনুমানিক খরচ

হোটেল বেড: ৪০০ রুপি

সাধারণ ডাবল রুম: ১ হাজার ৫০০ রুপি

লোকাল বাস (কাঠমান্ডু থেকে পোখারা): ৮০০ রুপি

ট্যুরিস্ট বাস: ১ হাজার ৩০০ রুপি

কফি: ২০০ রুপি থেকে শুরু

মোমো: ১৩০ রুপি থেকে শুরু

ভালো রেস্টুরেন্টে দুজনের ডিনার: ৩ হাজার ৩০০ থেকে ৬ হাজার ৫০০ রুপি

পাহাড়ে ডাল-ভাত: ৪০০ থেকে ৮৫০ রুপি

দৈনিক গড় খরচ: ২ হাজার থেকে ৬ হাজার ৭০০ রুপি

২ সপ্তাহে খরচ: ২৮ হাজার থেকে ৯৪ হাজার রুপি

সূত্র: লোনলি প্ল্যানেট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেষকৃত্যের পরিকল্পনা নিজেরাই করছেন মার্কিন প্রবীণেরা

ফিচার ডেস্ক
প্রতীকী ছবি: ফ্রিপিক
প্রতীকী ছবি: ফ্রিপিক

নিজের শেষকৃত্য, উইল, চিকিৎসা ব্যয় এমনকি ভবিষ্যৎ পরিচর্যার ব্যবস্থাও আগেভাগে গুছিয়ে রাখছেন যুক্তরাষ্ট্রের বহু প্রবীণ নাগরিক। উদ্দেশ্য একটাই—বার্ধক্যে বা মৃত্যুর পর যেন সন্তানদের আর্থিক ও মানসিক চাপে না ফেলতে হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাবা-মায়ের দেখভালের অভিজ্ঞতা থেকে আজকের বেবি বুমার ও জেন এক্স প্রজন্ম এই সিদ্ধান্তে আসছে।

‘আমি মেয়ের বোঝা হতে চাই না’

ক্যালিফোর্নিয়ার প্লেজেন্টনের বাসিন্দা ৭৬ বছর বয়সী জসলিন কম্বস ইতিমধ্যে নিজের সব গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র গুছিয়ে ফেলেছেন। উইল, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, অনলাইন পাসওয়ার্ড—সবকিছুর একটি তালিকা তৈরি করে রেখেছেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, নিজের জমিতেই একটি ছোট আলাদা ঘর তৈরি করেছেন। ভবিষ্যতে সেখানে কেয়ারগিভার থাকবেন, অথবা প্রয়োজনে সেটি ভাড়া দিয়ে অতিরিক্ত আয় করবেন। এই পরিকল্পনার পেছনে রয়েছে তাঁর নিজের অভিজ্ঞতা। কম্বসের বাবা-মা দুজনে ৯০ বছরের বেশি বয়স পর্যন্ত বেঁচেছিলেন। দীর্ঘদিন তাঁদের দেখভাল করতে গিয়ে তিনি মানসিক ও আর্থিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন।

ওয়াশিংটন পোস্টকে তিনি বলেন, ‘এই অভিজ্ঞতা আমাকে একেবারে নিঃশেষ করে দিয়েছিল। তাই আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি, যেন আমার মেয়েকে কখনো এমন পরিস্থিতির মুখে পড়তে না হয়।’

প্রবীণদের নতুন বাস্তবতা

আর্থিক পরামর্শক ও আইনজীবীদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে বেবি বুমার (১৯৪৬-১৯৬৪ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া প্রজন্ম) এবং জেন এক্স (১৯৬৫ থেকে ১৯৮০ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া প্রজন্ম) প্রজন্মের মধ্যে ভবিষ্যৎ নিয়ে এমন আগাম প্রস্তুতির প্রবণতা দ্রুত বাড়ছে। তাঁরা শুধু আর্থিক পরিকল্পনা নয়, ঘরবাড়ি গুছিয়ে রাখা, অপ্রয়োজনীয় জিনিস সরিয়ে ফেলা এবং চিকিৎসাসংক্রান্ত সিদ্ধান্তও আগেভাগে নিয়ে রাখছেন। ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স ফর ফ্যামিলি কেয়ার এবং এএআরপির চলতি বছরের এক জরিপে দেখা গেছে, বর্তমানে প্রায় ৪৭ শতাংশ পারিবারিক কেয়ারগিভার এই ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এক দশক আগে এই হার ছিল ৫ শতাংশ কম। জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় অর্ধেক মানুষ জানিয়েছেন, বাবা-মায়ের দেখভাল করতে গিয়ে তাঁরা আয় হারিয়েছেন, সঞ্চয় শেষ হয়ে গেছে কিংবা বড় ধরনের আর্থিক সংকটে পড়েছেন।

ফ্যালকন ওয়েলথ প্ল্যানিংয়ের সিইও গ্যাব্রিয়েল শাহিন বলেন, ‘আগে বড় কোনো দুর্ঘটনা বা অসুস্থতার পরই মানুষ এসব নিয়ে ভাবত। এখন অনেকে আগে থেকে উদ্যোগ নিচ্ছেন।’

বাড়ছে বয়স, বাড়ছে চাপ

যুক্তরাষ্ট্রে গড় আয়ু বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তাব্যবস্থার ওপর চাপও বাড়ছে। পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০৫০ সালের মধ্যে দেশটিতে ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা ৩০ শতাংশের বেশি বাড়বে। তখন মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশই হবে প্রবীণ। অন্যদিকে, পেশাদার নার্স ও কেয়ারগিভারের সংকট দিন দিন তীব্র হচ্ছে। ব্যয়ও ভয়াবহ রকমের বেশি। বিমা কোম্পানি জেনওয়ার্থের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে একটি নার্সিং হোমে ব্যক্তিগত কক্ষের গড় খরচ ছিল মাসে ১০ হাজার ৬৫০ ডলার। তুলনামূলক সাধারণ সিনিয়র কেয়ার সেন্টারেও মাসে গড়ে প্রায় ৫ হাজার ৯০০ ডলার খরচ হয়।

শুধু টাকা নয়, মানসিক চাপও

অর্থনৈতিক চাপের পাশাপাশি মানসিক চাপও এই প্রজন্মকে নাড়া দিচ্ছে। বাস্তবে দেখা যায়, পরিবারের প্রবীণ সদস্যের দেখভালের দায়িত্ব প্রায়ই একজনের ওপর পড়ে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কন্যা সন্তান বা যিনি কাছাকাছি থাকেন। এতে পারিবারিক দ্বন্দ্ব, অভিমান ও দূরত্ব তৈরি হয়। বোস্টনের বাসিন্দা জোয়ান স্যাভিট ছয় মাসের বেশি সময় ধরে বোস্টন ও ক্লিভল্যান্ডের মধ্যে যাতায়াত করেছেন তাঁর ১০১ বছর বয়সী মায়ের বাড়ি গোছাতে। ৫৫ বছরের জমানো জিনিসপত্রে ভরা সেই বাড়ি পরিষ্কার করা, ব্যাংক ও ক্রেডিট কার্ড বাতিল, চিকিৎসকের কাছে নেওয়া—সবকিছু সামলাতে গিয়ে নিজের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে তাঁর। উচ্চ রক্তচাপ, চোখের ক্ষতি, এমনকি ভাই-বোনদের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি—সবই এ কারণে হয়েছে। এই অভিজ্ঞতা থেকে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, স্বামী মারা গেলে নিজের বাড়ি নিলামে তুলে ছোট বাসায় চলে যাবেন। তাঁর ভাষায়, ‘আমি কাউকে বিব্রত করতে চাই না। শহীদের মতো আত্মত্যাগও করতে চাই না।’

পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সতর্কবার্তা

আমেরিকান একাডেমি অব এজিং লর সভাপতি এরিক আইনহার্ট এই প্রবণতাকে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি ‘ওয়েক-আপ কল’ বলে উল্লেখ করেছেন। ভার্জিনিয়ার বাসিন্দা কলিন গ্লিসন বাবা-মা মারা যাওয়ার পরপরই একজন আইনজীবীর সঙ্গে বসে নিজের লিভিং উইল তৈরি করেন। ছেলেকে জানিয়ে দেন, তিনি দাহ চান। সম্পত্তি ও নথিপত্রও এমনভাবে গুছিয়ে রাখেন, যেন ছেলেকে আইনি জটিলতায় পড়তে না হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রবণতা শুধু একটি দেশের গল্প নয়; এটি আধুনিক সমাজে বার্ধক্য, পরিবার ও দায়িত্ববোধের নতুন বাস্তবতার প্রতিফলন। প্রবীণেরা এখন আর শুধু নিজের ভবিষ্যৎ নয়, সন্তানদের ভবিষ্যৎ স্বস্তির কথাও ভাবছেন। জীবনের শেষ অধ্যায়কে গুছিয়ে নেওয়ার এই প্রচেষ্টা হয়তো আগামী দিনে আরও বিস্তৃত হবে শুধু আমেরিকায় নয়, বিশ্বজুড়েই।

সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত