সৈয়দা সাদিয়া শাহরীন

সকালে ঘুম থেকে উঠে খানিকটা ভালো লাগছিল। পুরোপুরি না। অসুস্থ শরীর নিয়ে কোথাও গিয়ে নাশতা করতে ইচ্ছা করছিল না। এদিন থেকে আমার চেয়ে ভুবনের অবস্থা খারাপ হতে লাগল। আমরা নাশতা করিনি। ভাবলাম যাত্রাপথে খেয়ে নেব। গলা দিয়ে কিছু নামার অবস্থায় নেই। আমরা প্রস্তুত হয়ে নিচে নেমে গিয়েছিলাম। কিন্তু অপেক্ষা করতে হলো অনেকক্ষণ। তখনো গাড়ির ব্যবস্থা হয়নি। অমরদা বলেছিলেন সকাল ৭টার মধ্যে রওনা দিতে পারব। কিন্তু সেখানে ৮টার ওপরে বেজে গিয়েছিল। বড় দলটাও চলে যাবে শিলিগুড়ি। এদিকে দেরি দেখে আকাশ ভাইয়ারা ক্ষেপে যাচ্ছিলেন। কেননা, তাঁদের সময়মতো পৌঁছে বাস ধরতে হবে। অমরদা এদিক-সেদিক ফোন ঘুরিয়ে অবশেষে একটা গাড়ি নিশ্চিত করলেন।
আসলে হয়েছিল কী, যে চালক আসার কথা ছিল, তিনি শেষ মুহূর্তে আর আসেননি। আমাদের অবস্থা তখন কিছুটা উন্নতির দিকে। হোটেলের লবিতে বসে থাকার চেয়ে বাইরে মল রোডের বেঞ্চে বসে অপেক্ষা করাটা ভালো লাগছিল। অবশেষে একটা জিপ গাড়ি এসে উপস্থিত হলো আমাদের জন্য। হুড়োহুড়ি করে উঠে গেলাম গাড়িতে। জিপ চালু করার আগে অমরদা বিদায় নিতে এলেন। তিনি আরেকটা দলকে গাইড করার জন্য থেকে যাচ্ছিলেন। খুব করে বলে দিলেন গাড়ির চালককে পরিচয় করিয়ে, ‘ও কিন্তু আমার নিজের লোক। আমার বন্ধু। আপনারা নিশ্চিন্তে যান। কোনো অসুবিধা হবে না।’ কিন্তু চালককে দেখে খুব একটা সুবিধার মনে হচ্ছিল না। তিনি প্রথমেই বাদ সাধলেন আমাদের দুজনের সামনে বসা নিয়ে। তবু আমরা বসেছিলাম। কারণ পেছনে গাদাগাদি করে বসা সম্ভব নয়। তিনি যতই মুড দেখিয়ে রেগে যাচ্ছিলেন, ততই আমরা বিনয়ী হয়ে তাকে বোঝাচ্ছিলাম।
যাত্রাপথে র্যাংপোতে আবার থামতে হয়েছিল। আমাদের অবস্থা খারাপ হচ্ছিল। কিছু নাশতাপানি খাওয়া দরকার ছিল। ভুবন নেমে দোকান থেকে ব্রিটানিয়ার কেক, পানি আর সেখানকার কোনো একটা প্যারাসিটামল কিনে আনল। বাকিরা কোথা থেকে যেন নাশতা খেয়ে এলেন। আমি একবিন্দুও নামলাম না গাড়ি থেকে। ভীষণ খারাপ লাগছিল। যখন কেউ ছিল না, তখন চালকের সে কী হম্বিতম্বি! একে তো আমাদের দুজনের একসঙ্গে সামনে বসা নিয়ে তার সমস্যা, তার ওপর কেউ কেন জলদি ফিরে আসছে না, সেটা নিয়েও সমস্যা। অথচ সবার নাশতা সারতে যতক্ষণ সময় লাগার কথা, ততক্ষণেই সবাই ফিরে এসেছিলেন। আবার চালকের অনুপস্থিতেও সবাই যার যার রাগ ঝেড়ে নিয়েছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই চালকের সঙ্গে আমাদের মতের বনিবনা হচ্ছিল না বলে এই অবস্থা। আমি আর ভুবন একটু কেক খেয়ে ওষুধ খেয়ে নিলাম। ভুবন পেয়ারা ফ্লেভারের একটা পানির বোতল এনেছিল। বোতলটা সুন্দর। এখনো বাসায় রেখে দিয়েছি। পানিও খেতে ভালো। সবাই গাড়িতে উঠে পড়লে আবার যাত্রা শুরু হলো।
এবার মনে হয় আগের চেয়ে বেশি বিনয় দেখাচ্ছিলেন সবাই। শুধু চালককে ‘গরম’ থেকে ‘নরম’ করার জন্য। ভাবের চোটে তো চালক কথা তেমন বলছিলেন না, কিন্তু যখন শুরু করলেন, তখন মনে হলো লোকটা বেশ মিশুক। সেদিনের যাত্রাটা গানের বদলে রানাদার জীবনের গল্প শুনে কেটে গিয়েছিল। চালকের নাম রানা। বয়স চল্লিশের কাছাকাছি হবে। এর চেয়ে কমও হতে পারে। জানা হয়নি। জিপটা তাঁর নিজের। এ রকম আরও ৮-৯টা জিপের মালিক তিনি। বাকিগুলোর জন্য চালক রেখেছেন। ভগবানের কৃপায় নাকি এখন তার যথেষ্ট উপার্জন হয়। অন্যদিকে তাঁর স্ত্রী সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক। মাসে ৪০ হাজার রুপি বেতন। বেশ চলে যায় সংসার খরচ। মেয়ে আছে, পড়ে ক্লাস এইটে। এই বয়সেই ধনী বন্ধুদের দেখে নাকি অনেক দামি জিনিস বায়না ধরে। কিন্তু মেয়েকে সত্যিকারের মানুষ হওয়ার শিক্ষা দিতে চান রানা দম্পতি। মেয়ের সব আবদার পূরণ করেন না। বুঝেশুনে করেন। মেয়ে থাকে হোস্টেলে। ছুটিতে বাড়িতে আসে। মেয়ের কথা থেকে চলে গেলেন তাঁর প্রেমের গল্পে। খুব মজা নিয়ে শুনছিলাম আমরা।
ফোনে পরিচয় হয় নেপালি, মানে সিকিমের মেয়ের সঙ্গে। ভুল নম্বরে কথা বলে মেয়ের কণ্ঠটা খুব ভালো লেগেছিল রানাদার। বলছিলেন, ‘পাহাড়ি মেয়ে পটানো খুব সোজা। কণ্ঠটা ভালো লেগে গেল, তাই পটিয়ে ফেললাম।’ হো হো করে হেসে উঠলাম সবাই। এরপর বললেন লোভনীয় কথা, ‘নেপালিরা মেয়ে বিয়ে দিলে বরকে সম্পত্তি উপহার দেয়। সেই লোভেও তো এই মেয়েকে বিয়ে করা চাই!’ আরও একটু হেসে নিলাম আমরা। রানাদার প্রেমের কাহিনি শুনতে শুনতে অনেকটুকু পথ পাড়ি দিয়েছিলাম। মাঝপথে কারও কারও প্রকৃতির ডাক এসেছিল। রানাদা বললেন, ‘এই একটু সামনে ভালো জায়গা আছে। যেখানে-সেখানে তো নামা যাবে না। আমি যেখানে নিয়ে যাব, সেখানে নামতে পারবেন। মেয়েছেলেরাও নামে ওখানে।’ আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘তুমিও নামতে পারবে।’ আমার নামার কোনো দরকার পড়েনি। অযথা নেমে আর কী করব। যাই হোক, রানাদার ‘আরেকটু সামনে’ এল অনেকক্ষণ সময় পর। আধা ঘণ্টার ওপরে হবে সবাইকে অপেক্ষা করতে হয়েছে। অবশেষে যথাস্থানে গাড়ি থামালে ‘ভালো জায়গা’ পেলাম না। বরং উদ্যানের মতো খোলা জায়গা! সেখানে বানরের ছড়াছড়ি। মনের আনন্দে খেলছে, লাফাচ্ছে, খাচ্ছে, উকুন বেছে দিচ্ছে। সবাই নামলেন। আমি আর ভুবন বসেই রইলাম। রানাদা দেখিয়ে দিলেন, কাজ সারতে এক পাশে পাহাড়ের চিপায় জংলার মধ্যে যেতে। আমাকে বললে আমি মানা করে দিলাম। কারণ আমার দরকার নাই। কিন্তু তিনি অভয় দিচ্ছিলেন, ‘দেখো, কত মহিলা মানুষ যাচ্ছে।’ আমি বোঝালাম, ‘আমার তো প্রয়োজন নেই দাদা।’ আমি বসে বানরের কীর্তি দেখছিলাম। আমাদের খাওয়ার পর বাকি থাকা কেক সৌরভ ভাই বানরদের খেতে দিলেন। তখন আমার কিছুটা সুস্থ লাগছিল।
সবাই কাজ সেরে গাড়িতে উঠে এলে রানাদা এবার শুরু করলেন তার প্রেমিকার কাহিনি। না না, যাঁকে বিয়ে করেছেন তাঁর কথা বলছি না। বিয়ের পর পরকীয়া করছেন, সেই গল্প করলেন। ভয়ানক কাহিনি শুনে আমাদের মুখের চোয়াল নিচে ঝুলে গেল! এতক্ষণ কী আসলেই এই লোকটার কাহিনি শুনছিলাম? যিনি স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানের প্রতি এত দায়িত্বশীল আর শ্রদ্ধেয়? কান খাড়া করে রইলাম আবার জিজ্ঞেস করে। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না প্রথমে। আকাশ ভাই মশকরা করে জিজ্ঞেস করলেন, ‘বউদি জানে আপনার প্রেমিকার কথা?’ অবলীলায় রানাদা বলে গেলেন, ‘অবশ্যই। আমি আমার স্ত্রীকে না জানিয়ে কিছু করি না।’ আমাদের চোয়াল ঝুলতে ঝুলতে ব্যথা হয়ে যাওয়ার অবস্থা! রানাদা বলতে লাগলেন, ‘আমার স্ত্রী কিছুই মনে করে না। ও জানে আমি যখন শিলিগুড়ি যাই, এক রাত হোটেলে আমার গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে কাটাই। গল্পগুজব করে আমার মন ভালো হয়ে গেলে আমি গ্যাংটকে ফিরে যাই। এমনকি আমার গার্লফ্রেন্ডের বাসায়ও জানে। ওর বর জানে যে আমার সঙ্গে সময় কাটায়। কিচ্ছু বলে না।’ আমরা স্তব্ধ হয়ে গেলাম। কিছু বলার খুঁজে পাচ্ছিলাম না কেউ। আকাশ ভাই শুধু বললেন, ‘বেশ বেশ। খুব ভালো!’ মনে মনে একচোট হেসে নিলাম। কিছুক্ষণ পর রানাদাকে দেখলাম হাতের মধ্যে কিছু একটা নিয়ে পিষে পিষে মুখে ভরছে। এটা কী জানতে চাইলাম। বললেন, ‘গুল। আমার আবার বাজে কোনো নেশা নাই। চা-বিড়ি কিছুই না। একটু গুল খাই। এটা ভালো।’ মনে মনে ভাবলাম, ভাইরে, নেশা তো নেশাই! ভালো আর মন্দ কী!
কথায় কথায় সময়ের আগে পৌঁছাতে পারলাম শিলিগুড়িতে। রানাদা তার একটা কার্ড দিলেন, নম্বরসহ। বললেন, ‘ইন্ডিয়ায় আবার এলে আমাকে ফোন করবেন। বললেই হবে, রানাদা, আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। যেকোনো দরকারে ফোন করতে পারেন। আমার নেটওয়ার্ক ভালো। আমার নাম রানা। এখানে রানাদাকে সবাই চেনে।’ কার্ডটা সম্ভবত আকাশ ভাই রেখেছিলেন। আমরা নেমে বিদায় দিয়ে দিলাম রানাদাকে। তাঁকে ফিরতে হবে গ্যাংটকে। জরুরি কাজ আছে। ভুবনের ধারণা, রানাদার এসব গল্প পুরোটাই চাপা! হোক, তা-ও তো নতুন গল্প শুনলাম।
আকাশ ভাইয়ারা বেশিক্ষণ অপেক্ষা করেননি। বাস কাউন্টারে বিশ্রাম নেওয়ার সময় ছিল না। বাস চলে এসেছিল। এই বাস দিয়ে ফিরবেন চেংড়াবান্ধা সীমানায়। তারা বিদায় নিয়ে বাসে উঠে গেলেন। রইলাম বাকি আমি, ভুবন, সৌরভ ভাই আর ইমরান ভাই। বাবা বলেছিলেন, বাস কাউন্টারের পেছনে কম দামের হোটেল আছে, ভালো। আমাকে কাউন্টারে অপেক্ষা করতে বলে ভুবন ঘুরে এসে জানাল, ওই হোটেলগুলোর পরিবেশ পছন্দ হয়নি। কাউন্টারের ঠিক পাশের হোটেল সেন্ট্রাল প্লাজায় দরদাম করে একটা কক্ষে উঠে গেলাম। সৌরভ ভাইদের কাছাকাছি রুম পেলাম। তাঁদেরটা আগে থেকেই বুকিং দেওয়া ছিল শ্যামলী পরিবহনের মাধ্যমে। অমরদা ডিসকাউন্টে ঠিক করে দিয়েছিলেন। আমদের জন্যও অমরদা ডিসকাউন্টের কথা বলে দিলেন। আমাদের রুম গুছিয়ে দিতে সময় নিচ্ছিল। কিছুক্ষণ সৌরভ ভাইদের রুমে বিশ্রাম নিলাম। আমাদের রুমটা পেলে সবাই ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খেতে বের হলাম। কোথায় খাওয়া যায়? খুব গরুর মাংসের বিরিয়ানি খেতে ইচ্ছা করছিল। আমার একার না, সবার। তখন সুস্থ লাগছিল।
ভেবেছিলাম দুপুরের খাবারের পর মার্কেটে যাব। ব্যাটারির একটা রিকশা ভাড়া করে চালককে বললাম মুসলিম কোনো রেস্তোরাঁয় নিয়ে যেতে, যেখানে গরুর মাংস পাওয়া যায়। চালক আমাদের নামিয়ে দিলেন মুসলিম একটা রেস্তোরাঁয়। কিন্তু হায়, সেখানে গরুর মাংসের কিছুই নেই। আশপাশে খোঁজ নিয়ে জানলাম, ওইটাই একমাত্র মুসলিম হোটেল এদিকের। তেমন কিছু চিনি-জানি না বলে সেখানেই খেতে ঢুকলাম। নিলাম খাসির কাচ্চি বিরিয়ানি, বাসমতি চালের। সৌরভ ভাই মাংস খাবেন না। তাই নিলেন ডিম বিরিয়ানি। আমি এক লোকমা মুখে দিয়েই বিস্বাদ অনুভূতি পেলাম। লবণের ছড়াছড়ি। অন্যরা কষ্ট করে খেতে পারলেও আমি আর ভুবন পারছিলাম না একদম। ভুবন তা-ও আমার চেয়ে বেশি খেতে পেরেছিল। আমি অর্ধেকের বেশি নষ্ট করলাম আর মনে মনে নিজেকে গাল দিলাম! খাবার নষ্ট করা আমার একেবারেই পছন্দ না। অবাক করে দিয়ে চেটেপুটে খেলেন সৌরভ ভাই। তারও এক কথা, ‘খাবার নষ্ট করা ঠিক না।’ ওয়েটারকে বিল দিতে বলা হলো। বিল নিয়ে এলে আমি ঠাট্টার ছলে জিজ্ঞেস করলাম, ‘দাদা, আপনাদের এখানে কি লবণের দাম কম? না মানে আমি নিয়ে যেতে চাই তো, তাই জিজ্ঞেস করলাম আরকি।’
লোকটা খুব খুশি হয়ে জবাব দিলেন, ‘দিদি, শুধু লবণ কেন! আমাদের যেকোনো মুদি দোকানে যান। কম দামে আরও ভালো ভালো জিনিস পাবেন।’ আমি ধন্যবাদ দিয়ে মনে মনে বললাম, আহা বেচারা, আমার ঠাট্টাটাই বুঝল না! বিল চুকিয়ে আমরা বের হয়ে গেলাম সেখান থেকে। শরীর আবার অসুস্থ লাগা শুরু হয়ে গেল। রাস্তার ধারে জুসের দোকান দেখে ভাবলাম খেয়ে নিই, হয়তো জ্বরের মুখে ভালো লাগবে। সবাই মিলেই খেলাম। কেউ আনারস, কেউ মাল্টা, কেউ লেবু। তাজা ফল কেটে সামনেই বানিয়ে দেয়। ভালোই লাগল। কিন্তু বুঝতে পারছিলাম আর শরীর চলবে না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হোটেলে ফিরে গেলাম। ভাবলাম, একটু জিরিয়ে নিলে ঠিক হয়ে যাবে হয়তো। সন্ধ্যায় বিধান মার্কেটে যাব, এরপর বাইরে কোথাও খেয়ে ফিরব। তাই দুজনেই ওষুধ খেয়ে নিলাম। কিন্তু অবস্থার অবনতি ছাড়া উন্নতি হলো না। আমার এক সহকর্মী থাকেন মুম্বাইতে, দেবারতি নাম। বাঙালি। কলকাতার মেয়ে। তাঁকে জানিয়েই আমি ভারতে গিয়েছিলাম। তিনি তাঁর বড় ভাইয়ের ফোন নম্বর দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘যেকোনো সমস্যায় দাদাকে ফোন দিও।
দাদা শিলিগুড়িতেই থাকেন।’ জ্বরের ঘোরেও দাদাকে জানাতে ভুললাম না আমাদের অসুস্থতার কথা। এর আগেও ভারতে পৌঁছে দাদার সঙ্গে যোগাযোগ করে রেখেছিলাম। যাই হোক, দাদা শুনে খুব দুঃখ পেলেন। জানালেন, তিনি কাজের জন্য কলকাতা গিয়েছেন। পরদিন ফিরবেন। ফিরে দেখা করবেন। এদিকে আমাদের অবস্থা খুব খারাপ হচ্ছে। ভুবন তো একদম বাসি লিকলিকে বরবটির মতো নেতিয়ে পড়ছিল। আমার শরীরের তাপমাত্রা কমে গেলেও দুর্বলতা বাড়ছিল। আর ভুবনের জ্বর ১০৩ ডিগ্রিতে উঠে বসে ছিল। নামার কোনো খবরই নেই! হোটেল থেকেই থার্মোমিটার দিয়েছিল মাপতে। বিকেলে সৌরভ ভাইয়ারা মার্কেটে যাওয়ার আগে আমাদের জানিয়ে গেলেন।
আমরা পড়ে রইলাম হোটেল রুমেই, জ্বরে কাতর। টিভিতে খুব অল্প চ্যানেল দেখা যায়। তা-ও বেশির ভাগ চ্যানেলে অপরিচিত ভাষায় সব অনুষ্ঠান। ঘুরেফিরে দু-একটা হিন্দি চ্যানেল পেয়ে সেগুলোই দেখছিলাম এই ভেবে, যেন শরীর খারাপ লাগাটা ভুলে থাকতে পারি। কিন্তু ভুবনের অবস্থা দেখে দুশ্চিন্তা বাড়তে লাগল। সন্ধ্যার দিকে হোটেলের এক কর্মচারীকে ডেকে জানতে চাইলাম আশপাশে কোনো হাসপাতালে নেওয়া যাবে কি না। বললেন, ‘দিদি, এখন যদি কোনো ক্লিনিকে নিয়ে যান, তবে সঙ্গে সঙ্গে ভর্তি করিয়ে দেবে। খামোখা খরচা হবে। আর এমন সময় ডাক্তারও পাবেন না সেখানে। আমি ওষুধ এনে দিচ্ছি। সেটা খাইয়ে দিন। ঠিক হয়ে যাবে।’ ভরসা করে তাঁর দেওয়া ওষুধ খাওয়লাম ভুবনকে। কিন্তু নাহ, অবস্থার কোনো উন্নতি নেই। সৌরভ ভাইয়ারা ফিরে এসে দেখালেন তাঁদের কেনাকাটা। ভুবন শুধু আফসোস করছিল, ‘ইশ্ ভাই। রিজনেবল দামে এত জুতা এনেছেন। আমরা সুস্থ থাকলে যেতাম। শ্রীলেদার থেকে কয়েক জোড়া জুতা কেনার ইচ্ছা ছিল।’ সৌরভ ভাই তো পরিবারের সবার জন্য ৮-১০ জোড়া জুতা কিনে নিয়েছিলেন।
রাতে স্যুপ ফরমাশ করলাম। কোথাও যাওয়ার তো অবস্থা ছিল না। এত জঘন্য লাগছিল খাবার, পারছিলাম না খেতে। তবু জোর করে কিছুটা খেয়ে নিলাম। কারণ, শক্তি দরকার। ওষুধও খাওয়া দরকার। ভুবন যে নিজে উঠে খাবে, সেই অবস্থায় ছিল না। আমি জোর করে অল্প একটু খাইয়ে দিলাম ওকে। জোর করে খাইয়ে যা হয় আরকি, বমি করে ফেলে দিল সব! দুজনে ওষুধপত্র খেয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।
চলবে...

সকালে ঘুম থেকে উঠে খানিকটা ভালো লাগছিল। পুরোপুরি না। অসুস্থ শরীর নিয়ে কোথাও গিয়ে নাশতা করতে ইচ্ছা করছিল না। এদিন থেকে আমার চেয়ে ভুবনের অবস্থা খারাপ হতে লাগল। আমরা নাশতা করিনি। ভাবলাম যাত্রাপথে খেয়ে নেব। গলা দিয়ে কিছু নামার অবস্থায় নেই। আমরা প্রস্তুত হয়ে নিচে নেমে গিয়েছিলাম। কিন্তু অপেক্ষা করতে হলো অনেকক্ষণ। তখনো গাড়ির ব্যবস্থা হয়নি। অমরদা বলেছিলেন সকাল ৭টার মধ্যে রওনা দিতে পারব। কিন্তু সেখানে ৮টার ওপরে বেজে গিয়েছিল। বড় দলটাও চলে যাবে শিলিগুড়ি। এদিকে দেরি দেখে আকাশ ভাইয়ারা ক্ষেপে যাচ্ছিলেন। কেননা, তাঁদের সময়মতো পৌঁছে বাস ধরতে হবে। অমরদা এদিক-সেদিক ফোন ঘুরিয়ে অবশেষে একটা গাড়ি নিশ্চিত করলেন।
আসলে হয়েছিল কী, যে চালক আসার কথা ছিল, তিনি শেষ মুহূর্তে আর আসেননি। আমাদের অবস্থা তখন কিছুটা উন্নতির দিকে। হোটেলের লবিতে বসে থাকার চেয়ে বাইরে মল রোডের বেঞ্চে বসে অপেক্ষা করাটা ভালো লাগছিল। অবশেষে একটা জিপ গাড়ি এসে উপস্থিত হলো আমাদের জন্য। হুড়োহুড়ি করে উঠে গেলাম গাড়িতে। জিপ চালু করার আগে অমরদা বিদায় নিতে এলেন। তিনি আরেকটা দলকে গাইড করার জন্য থেকে যাচ্ছিলেন। খুব করে বলে দিলেন গাড়ির চালককে পরিচয় করিয়ে, ‘ও কিন্তু আমার নিজের লোক। আমার বন্ধু। আপনারা নিশ্চিন্তে যান। কোনো অসুবিধা হবে না।’ কিন্তু চালককে দেখে খুব একটা সুবিধার মনে হচ্ছিল না। তিনি প্রথমেই বাদ সাধলেন আমাদের দুজনের সামনে বসা নিয়ে। তবু আমরা বসেছিলাম। কারণ পেছনে গাদাগাদি করে বসা সম্ভব নয়। তিনি যতই মুড দেখিয়ে রেগে যাচ্ছিলেন, ততই আমরা বিনয়ী হয়ে তাকে বোঝাচ্ছিলাম।
যাত্রাপথে র্যাংপোতে আবার থামতে হয়েছিল। আমাদের অবস্থা খারাপ হচ্ছিল। কিছু নাশতাপানি খাওয়া দরকার ছিল। ভুবন নেমে দোকান থেকে ব্রিটানিয়ার কেক, পানি আর সেখানকার কোনো একটা প্যারাসিটামল কিনে আনল। বাকিরা কোথা থেকে যেন নাশতা খেয়ে এলেন। আমি একবিন্দুও নামলাম না গাড়ি থেকে। ভীষণ খারাপ লাগছিল। যখন কেউ ছিল না, তখন চালকের সে কী হম্বিতম্বি! একে তো আমাদের দুজনের একসঙ্গে সামনে বসা নিয়ে তার সমস্যা, তার ওপর কেউ কেন জলদি ফিরে আসছে না, সেটা নিয়েও সমস্যা। অথচ সবার নাশতা সারতে যতক্ষণ সময় লাগার কথা, ততক্ষণেই সবাই ফিরে এসেছিলেন। আবার চালকের অনুপস্থিতেও সবাই যার যার রাগ ঝেড়ে নিয়েছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই চালকের সঙ্গে আমাদের মতের বনিবনা হচ্ছিল না বলে এই অবস্থা। আমি আর ভুবন একটু কেক খেয়ে ওষুধ খেয়ে নিলাম। ভুবন পেয়ারা ফ্লেভারের একটা পানির বোতল এনেছিল। বোতলটা সুন্দর। এখনো বাসায় রেখে দিয়েছি। পানিও খেতে ভালো। সবাই গাড়িতে উঠে পড়লে আবার যাত্রা শুরু হলো।
এবার মনে হয় আগের চেয়ে বেশি বিনয় দেখাচ্ছিলেন সবাই। শুধু চালককে ‘গরম’ থেকে ‘নরম’ করার জন্য। ভাবের চোটে তো চালক কথা তেমন বলছিলেন না, কিন্তু যখন শুরু করলেন, তখন মনে হলো লোকটা বেশ মিশুক। সেদিনের যাত্রাটা গানের বদলে রানাদার জীবনের গল্প শুনে কেটে গিয়েছিল। চালকের নাম রানা। বয়স চল্লিশের কাছাকাছি হবে। এর চেয়ে কমও হতে পারে। জানা হয়নি। জিপটা তাঁর নিজের। এ রকম আরও ৮-৯টা জিপের মালিক তিনি। বাকিগুলোর জন্য চালক রেখেছেন। ভগবানের কৃপায় নাকি এখন তার যথেষ্ট উপার্জন হয়। অন্যদিকে তাঁর স্ত্রী সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক। মাসে ৪০ হাজার রুপি বেতন। বেশ চলে যায় সংসার খরচ। মেয়ে আছে, পড়ে ক্লাস এইটে। এই বয়সেই ধনী বন্ধুদের দেখে নাকি অনেক দামি জিনিস বায়না ধরে। কিন্তু মেয়েকে সত্যিকারের মানুষ হওয়ার শিক্ষা দিতে চান রানা দম্পতি। মেয়ের সব আবদার পূরণ করেন না। বুঝেশুনে করেন। মেয়ে থাকে হোস্টেলে। ছুটিতে বাড়িতে আসে। মেয়ের কথা থেকে চলে গেলেন তাঁর প্রেমের গল্পে। খুব মজা নিয়ে শুনছিলাম আমরা।
ফোনে পরিচয় হয় নেপালি, মানে সিকিমের মেয়ের সঙ্গে। ভুল নম্বরে কথা বলে মেয়ের কণ্ঠটা খুব ভালো লেগেছিল রানাদার। বলছিলেন, ‘পাহাড়ি মেয়ে পটানো খুব সোজা। কণ্ঠটা ভালো লেগে গেল, তাই পটিয়ে ফেললাম।’ হো হো করে হেসে উঠলাম সবাই। এরপর বললেন লোভনীয় কথা, ‘নেপালিরা মেয়ে বিয়ে দিলে বরকে সম্পত্তি উপহার দেয়। সেই লোভেও তো এই মেয়েকে বিয়ে করা চাই!’ আরও একটু হেসে নিলাম আমরা। রানাদার প্রেমের কাহিনি শুনতে শুনতে অনেকটুকু পথ পাড়ি দিয়েছিলাম। মাঝপথে কারও কারও প্রকৃতির ডাক এসেছিল। রানাদা বললেন, ‘এই একটু সামনে ভালো জায়গা আছে। যেখানে-সেখানে তো নামা যাবে না। আমি যেখানে নিয়ে যাব, সেখানে নামতে পারবেন। মেয়েছেলেরাও নামে ওখানে।’ আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘তুমিও নামতে পারবে।’ আমার নামার কোনো দরকার পড়েনি। অযথা নেমে আর কী করব। যাই হোক, রানাদার ‘আরেকটু সামনে’ এল অনেকক্ষণ সময় পর। আধা ঘণ্টার ওপরে হবে সবাইকে অপেক্ষা করতে হয়েছে। অবশেষে যথাস্থানে গাড়ি থামালে ‘ভালো জায়গা’ পেলাম না। বরং উদ্যানের মতো খোলা জায়গা! সেখানে বানরের ছড়াছড়ি। মনের আনন্দে খেলছে, লাফাচ্ছে, খাচ্ছে, উকুন বেছে দিচ্ছে। সবাই নামলেন। আমি আর ভুবন বসেই রইলাম। রানাদা দেখিয়ে দিলেন, কাজ সারতে এক পাশে পাহাড়ের চিপায় জংলার মধ্যে যেতে। আমাকে বললে আমি মানা করে দিলাম। কারণ আমার দরকার নাই। কিন্তু তিনি অভয় দিচ্ছিলেন, ‘দেখো, কত মহিলা মানুষ যাচ্ছে।’ আমি বোঝালাম, ‘আমার তো প্রয়োজন নেই দাদা।’ আমি বসে বানরের কীর্তি দেখছিলাম। আমাদের খাওয়ার পর বাকি থাকা কেক সৌরভ ভাই বানরদের খেতে দিলেন। তখন আমার কিছুটা সুস্থ লাগছিল।
সবাই কাজ সেরে গাড়িতে উঠে এলে রানাদা এবার শুরু করলেন তার প্রেমিকার কাহিনি। না না, যাঁকে বিয়ে করেছেন তাঁর কথা বলছি না। বিয়ের পর পরকীয়া করছেন, সেই গল্প করলেন। ভয়ানক কাহিনি শুনে আমাদের মুখের চোয়াল নিচে ঝুলে গেল! এতক্ষণ কী আসলেই এই লোকটার কাহিনি শুনছিলাম? যিনি স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানের প্রতি এত দায়িত্বশীল আর শ্রদ্ধেয়? কান খাড়া করে রইলাম আবার জিজ্ঞেস করে। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না প্রথমে। আকাশ ভাই মশকরা করে জিজ্ঞেস করলেন, ‘বউদি জানে আপনার প্রেমিকার কথা?’ অবলীলায় রানাদা বলে গেলেন, ‘অবশ্যই। আমি আমার স্ত্রীকে না জানিয়ে কিছু করি না।’ আমাদের চোয়াল ঝুলতে ঝুলতে ব্যথা হয়ে যাওয়ার অবস্থা! রানাদা বলতে লাগলেন, ‘আমার স্ত্রী কিছুই মনে করে না। ও জানে আমি যখন শিলিগুড়ি যাই, এক রাত হোটেলে আমার গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে কাটাই। গল্পগুজব করে আমার মন ভালো হয়ে গেলে আমি গ্যাংটকে ফিরে যাই। এমনকি আমার গার্লফ্রেন্ডের বাসায়ও জানে। ওর বর জানে যে আমার সঙ্গে সময় কাটায়। কিচ্ছু বলে না।’ আমরা স্তব্ধ হয়ে গেলাম। কিছু বলার খুঁজে পাচ্ছিলাম না কেউ। আকাশ ভাই শুধু বললেন, ‘বেশ বেশ। খুব ভালো!’ মনে মনে একচোট হেসে নিলাম। কিছুক্ষণ পর রানাদাকে দেখলাম হাতের মধ্যে কিছু একটা নিয়ে পিষে পিষে মুখে ভরছে। এটা কী জানতে চাইলাম। বললেন, ‘গুল। আমার আবার বাজে কোনো নেশা নাই। চা-বিড়ি কিছুই না। একটু গুল খাই। এটা ভালো।’ মনে মনে ভাবলাম, ভাইরে, নেশা তো নেশাই! ভালো আর মন্দ কী!
কথায় কথায় সময়ের আগে পৌঁছাতে পারলাম শিলিগুড়িতে। রানাদা তার একটা কার্ড দিলেন, নম্বরসহ। বললেন, ‘ইন্ডিয়ায় আবার এলে আমাকে ফোন করবেন। বললেই হবে, রানাদা, আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। যেকোনো দরকারে ফোন করতে পারেন। আমার নেটওয়ার্ক ভালো। আমার নাম রানা। এখানে রানাদাকে সবাই চেনে।’ কার্ডটা সম্ভবত আকাশ ভাই রেখেছিলেন। আমরা নেমে বিদায় দিয়ে দিলাম রানাদাকে। তাঁকে ফিরতে হবে গ্যাংটকে। জরুরি কাজ আছে। ভুবনের ধারণা, রানাদার এসব গল্প পুরোটাই চাপা! হোক, তা-ও তো নতুন গল্প শুনলাম।
আকাশ ভাইয়ারা বেশিক্ষণ অপেক্ষা করেননি। বাস কাউন্টারে বিশ্রাম নেওয়ার সময় ছিল না। বাস চলে এসেছিল। এই বাস দিয়ে ফিরবেন চেংড়াবান্ধা সীমানায়। তারা বিদায় নিয়ে বাসে উঠে গেলেন। রইলাম বাকি আমি, ভুবন, সৌরভ ভাই আর ইমরান ভাই। বাবা বলেছিলেন, বাস কাউন্টারের পেছনে কম দামের হোটেল আছে, ভালো। আমাকে কাউন্টারে অপেক্ষা করতে বলে ভুবন ঘুরে এসে জানাল, ওই হোটেলগুলোর পরিবেশ পছন্দ হয়নি। কাউন্টারের ঠিক পাশের হোটেল সেন্ট্রাল প্লাজায় দরদাম করে একটা কক্ষে উঠে গেলাম। সৌরভ ভাইদের কাছাকাছি রুম পেলাম। তাঁদেরটা আগে থেকেই বুকিং দেওয়া ছিল শ্যামলী পরিবহনের মাধ্যমে। অমরদা ডিসকাউন্টে ঠিক করে দিয়েছিলেন। আমদের জন্যও অমরদা ডিসকাউন্টের কথা বলে দিলেন। আমাদের রুম গুছিয়ে দিতে সময় নিচ্ছিল। কিছুক্ষণ সৌরভ ভাইদের রুমে বিশ্রাম নিলাম। আমাদের রুমটা পেলে সবাই ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খেতে বের হলাম। কোথায় খাওয়া যায়? খুব গরুর মাংসের বিরিয়ানি খেতে ইচ্ছা করছিল। আমার একার না, সবার। তখন সুস্থ লাগছিল।
ভেবেছিলাম দুপুরের খাবারের পর মার্কেটে যাব। ব্যাটারির একটা রিকশা ভাড়া করে চালককে বললাম মুসলিম কোনো রেস্তোরাঁয় নিয়ে যেতে, যেখানে গরুর মাংস পাওয়া যায়। চালক আমাদের নামিয়ে দিলেন মুসলিম একটা রেস্তোরাঁয়। কিন্তু হায়, সেখানে গরুর মাংসের কিছুই নেই। আশপাশে খোঁজ নিয়ে জানলাম, ওইটাই একমাত্র মুসলিম হোটেল এদিকের। তেমন কিছু চিনি-জানি না বলে সেখানেই খেতে ঢুকলাম। নিলাম খাসির কাচ্চি বিরিয়ানি, বাসমতি চালের। সৌরভ ভাই মাংস খাবেন না। তাই নিলেন ডিম বিরিয়ানি। আমি এক লোকমা মুখে দিয়েই বিস্বাদ অনুভূতি পেলাম। লবণের ছড়াছড়ি। অন্যরা কষ্ট করে খেতে পারলেও আমি আর ভুবন পারছিলাম না একদম। ভুবন তা-ও আমার চেয়ে বেশি খেতে পেরেছিল। আমি অর্ধেকের বেশি নষ্ট করলাম আর মনে মনে নিজেকে গাল দিলাম! খাবার নষ্ট করা আমার একেবারেই পছন্দ না। অবাক করে দিয়ে চেটেপুটে খেলেন সৌরভ ভাই। তারও এক কথা, ‘খাবার নষ্ট করা ঠিক না।’ ওয়েটারকে বিল দিতে বলা হলো। বিল নিয়ে এলে আমি ঠাট্টার ছলে জিজ্ঞেস করলাম, ‘দাদা, আপনাদের এখানে কি লবণের দাম কম? না মানে আমি নিয়ে যেতে চাই তো, তাই জিজ্ঞেস করলাম আরকি।’
লোকটা খুব খুশি হয়ে জবাব দিলেন, ‘দিদি, শুধু লবণ কেন! আমাদের যেকোনো মুদি দোকানে যান। কম দামে আরও ভালো ভালো জিনিস পাবেন।’ আমি ধন্যবাদ দিয়ে মনে মনে বললাম, আহা বেচারা, আমার ঠাট্টাটাই বুঝল না! বিল চুকিয়ে আমরা বের হয়ে গেলাম সেখান থেকে। শরীর আবার অসুস্থ লাগা শুরু হয়ে গেল। রাস্তার ধারে জুসের দোকান দেখে ভাবলাম খেয়ে নিই, হয়তো জ্বরের মুখে ভালো লাগবে। সবাই মিলেই খেলাম। কেউ আনারস, কেউ মাল্টা, কেউ লেবু। তাজা ফল কেটে সামনেই বানিয়ে দেয়। ভালোই লাগল। কিন্তু বুঝতে পারছিলাম আর শরীর চলবে না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হোটেলে ফিরে গেলাম। ভাবলাম, একটু জিরিয়ে নিলে ঠিক হয়ে যাবে হয়তো। সন্ধ্যায় বিধান মার্কেটে যাব, এরপর বাইরে কোথাও খেয়ে ফিরব। তাই দুজনেই ওষুধ খেয়ে নিলাম। কিন্তু অবস্থার অবনতি ছাড়া উন্নতি হলো না। আমার এক সহকর্মী থাকেন মুম্বাইতে, দেবারতি নাম। বাঙালি। কলকাতার মেয়ে। তাঁকে জানিয়েই আমি ভারতে গিয়েছিলাম। তিনি তাঁর বড় ভাইয়ের ফোন নম্বর দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘যেকোনো সমস্যায় দাদাকে ফোন দিও।
দাদা শিলিগুড়িতেই থাকেন।’ জ্বরের ঘোরেও দাদাকে জানাতে ভুললাম না আমাদের অসুস্থতার কথা। এর আগেও ভারতে পৌঁছে দাদার সঙ্গে যোগাযোগ করে রেখেছিলাম। যাই হোক, দাদা শুনে খুব দুঃখ পেলেন। জানালেন, তিনি কাজের জন্য কলকাতা গিয়েছেন। পরদিন ফিরবেন। ফিরে দেখা করবেন। এদিকে আমাদের অবস্থা খুব খারাপ হচ্ছে। ভুবন তো একদম বাসি লিকলিকে বরবটির মতো নেতিয়ে পড়ছিল। আমার শরীরের তাপমাত্রা কমে গেলেও দুর্বলতা বাড়ছিল। আর ভুবনের জ্বর ১০৩ ডিগ্রিতে উঠে বসে ছিল। নামার কোনো খবরই নেই! হোটেল থেকেই থার্মোমিটার দিয়েছিল মাপতে। বিকেলে সৌরভ ভাইয়ারা মার্কেটে যাওয়ার আগে আমাদের জানিয়ে গেলেন।
আমরা পড়ে রইলাম হোটেল রুমেই, জ্বরে কাতর। টিভিতে খুব অল্প চ্যানেল দেখা যায়। তা-ও বেশির ভাগ চ্যানেলে অপরিচিত ভাষায় সব অনুষ্ঠান। ঘুরেফিরে দু-একটা হিন্দি চ্যানেল পেয়ে সেগুলোই দেখছিলাম এই ভেবে, যেন শরীর খারাপ লাগাটা ভুলে থাকতে পারি। কিন্তু ভুবনের অবস্থা দেখে দুশ্চিন্তা বাড়তে লাগল। সন্ধ্যার দিকে হোটেলের এক কর্মচারীকে ডেকে জানতে চাইলাম আশপাশে কোনো হাসপাতালে নেওয়া যাবে কি না। বললেন, ‘দিদি, এখন যদি কোনো ক্লিনিকে নিয়ে যান, তবে সঙ্গে সঙ্গে ভর্তি করিয়ে দেবে। খামোখা খরচা হবে। আর এমন সময় ডাক্তারও পাবেন না সেখানে। আমি ওষুধ এনে দিচ্ছি। সেটা খাইয়ে দিন। ঠিক হয়ে যাবে।’ ভরসা করে তাঁর দেওয়া ওষুধ খাওয়লাম ভুবনকে। কিন্তু নাহ, অবস্থার কোনো উন্নতি নেই। সৌরভ ভাইয়ারা ফিরে এসে দেখালেন তাঁদের কেনাকাটা। ভুবন শুধু আফসোস করছিল, ‘ইশ্ ভাই। রিজনেবল দামে এত জুতা এনেছেন। আমরা সুস্থ থাকলে যেতাম। শ্রীলেদার থেকে কয়েক জোড়া জুতা কেনার ইচ্ছা ছিল।’ সৌরভ ভাই তো পরিবারের সবার জন্য ৮-১০ জোড়া জুতা কিনে নিয়েছিলেন।
রাতে স্যুপ ফরমাশ করলাম। কোথাও যাওয়ার তো অবস্থা ছিল না। এত জঘন্য লাগছিল খাবার, পারছিলাম না খেতে। তবু জোর করে কিছুটা খেয়ে নিলাম। কারণ, শক্তি দরকার। ওষুধও খাওয়া দরকার। ভুবন যে নিজে উঠে খাবে, সেই অবস্থায় ছিল না। আমি জোর করে অল্প একটু খাইয়ে দিলাম ওকে। জোর করে খাইয়ে যা হয় আরকি, বমি করে ফেলে দিল সব! দুজনে ওষুধপত্র খেয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।
চলবে...
সৈয়দা সাদিয়া শাহরীন

সকালে ঘুম থেকে উঠে খানিকটা ভালো লাগছিল। পুরোপুরি না। অসুস্থ শরীর নিয়ে কোথাও গিয়ে নাশতা করতে ইচ্ছা করছিল না। এদিন থেকে আমার চেয়ে ভুবনের অবস্থা খারাপ হতে লাগল। আমরা নাশতা করিনি। ভাবলাম যাত্রাপথে খেয়ে নেব। গলা দিয়ে কিছু নামার অবস্থায় নেই। আমরা প্রস্তুত হয়ে নিচে নেমে গিয়েছিলাম। কিন্তু অপেক্ষা করতে হলো অনেকক্ষণ। তখনো গাড়ির ব্যবস্থা হয়নি। অমরদা বলেছিলেন সকাল ৭টার মধ্যে রওনা দিতে পারব। কিন্তু সেখানে ৮টার ওপরে বেজে গিয়েছিল। বড় দলটাও চলে যাবে শিলিগুড়ি। এদিকে দেরি দেখে আকাশ ভাইয়ারা ক্ষেপে যাচ্ছিলেন। কেননা, তাঁদের সময়মতো পৌঁছে বাস ধরতে হবে। অমরদা এদিক-সেদিক ফোন ঘুরিয়ে অবশেষে একটা গাড়ি নিশ্চিত করলেন।
আসলে হয়েছিল কী, যে চালক আসার কথা ছিল, তিনি শেষ মুহূর্তে আর আসেননি। আমাদের অবস্থা তখন কিছুটা উন্নতির দিকে। হোটেলের লবিতে বসে থাকার চেয়ে বাইরে মল রোডের বেঞ্চে বসে অপেক্ষা করাটা ভালো লাগছিল। অবশেষে একটা জিপ গাড়ি এসে উপস্থিত হলো আমাদের জন্য। হুড়োহুড়ি করে উঠে গেলাম গাড়িতে। জিপ চালু করার আগে অমরদা বিদায় নিতে এলেন। তিনি আরেকটা দলকে গাইড করার জন্য থেকে যাচ্ছিলেন। খুব করে বলে দিলেন গাড়ির চালককে পরিচয় করিয়ে, ‘ও কিন্তু আমার নিজের লোক। আমার বন্ধু। আপনারা নিশ্চিন্তে যান। কোনো অসুবিধা হবে না।’ কিন্তু চালককে দেখে খুব একটা সুবিধার মনে হচ্ছিল না। তিনি প্রথমেই বাদ সাধলেন আমাদের দুজনের সামনে বসা নিয়ে। তবু আমরা বসেছিলাম। কারণ পেছনে গাদাগাদি করে বসা সম্ভব নয়। তিনি যতই মুড দেখিয়ে রেগে যাচ্ছিলেন, ততই আমরা বিনয়ী হয়ে তাকে বোঝাচ্ছিলাম।
যাত্রাপথে র্যাংপোতে আবার থামতে হয়েছিল। আমাদের অবস্থা খারাপ হচ্ছিল। কিছু নাশতাপানি খাওয়া দরকার ছিল। ভুবন নেমে দোকান থেকে ব্রিটানিয়ার কেক, পানি আর সেখানকার কোনো একটা প্যারাসিটামল কিনে আনল। বাকিরা কোথা থেকে যেন নাশতা খেয়ে এলেন। আমি একবিন্দুও নামলাম না গাড়ি থেকে। ভীষণ খারাপ লাগছিল। যখন কেউ ছিল না, তখন চালকের সে কী হম্বিতম্বি! একে তো আমাদের দুজনের একসঙ্গে সামনে বসা নিয়ে তার সমস্যা, তার ওপর কেউ কেন জলদি ফিরে আসছে না, সেটা নিয়েও সমস্যা। অথচ সবার নাশতা সারতে যতক্ষণ সময় লাগার কথা, ততক্ষণেই সবাই ফিরে এসেছিলেন। আবার চালকের অনুপস্থিতেও সবাই যার যার রাগ ঝেড়ে নিয়েছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই চালকের সঙ্গে আমাদের মতের বনিবনা হচ্ছিল না বলে এই অবস্থা। আমি আর ভুবন একটু কেক খেয়ে ওষুধ খেয়ে নিলাম। ভুবন পেয়ারা ফ্লেভারের একটা পানির বোতল এনেছিল। বোতলটা সুন্দর। এখনো বাসায় রেখে দিয়েছি। পানিও খেতে ভালো। সবাই গাড়িতে উঠে পড়লে আবার যাত্রা শুরু হলো।
এবার মনে হয় আগের চেয়ে বেশি বিনয় দেখাচ্ছিলেন সবাই। শুধু চালককে ‘গরম’ থেকে ‘নরম’ করার জন্য। ভাবের চোটে তো চালক কথা তেমন বলছিলেন না, কিন্তু যখন শুরু করলেন, তখন মনে হলো লোকটা বেশ মিশুক। সেদিনের যাত্রাটা গানের বদলে রানাদার জীবনের গল্প শুনে কেটে গিয়েছিল। চালকের নাম রানা। বয়স চল্লিশের কাছাকাছি হবে। এর চেয়ে কমও হতে পারে। জানা হয়নি। জিপটা তাঁর নিজের। এ রকম আরও ৮-৯টা জিপের মালিক তিনি। বাকিগুলোর জন্য চালক রেখেছেন। ভগবানের কৃপায় নাকি এখন তার যথেষ্ট উপার্জন হয়। অন্যদিকে তাঁর স্ত্রী সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক। মাসে ৪০ হাজার রুপি বেতন। বেশ চলে যায় সংসার খরচ। মেয়ে আছে, পড়ে ক্লাস এইটে। এই বয়সেই ধনী বন্ধুদের দেখে নাকি অনেক দামি জিনিস বায়না ধরে। কিন্তু মেয়েকে সত্যিকারের মানুষ হওয়ার শিক্ষা দিতে চান রানা দম্পতি। মেয়ের সব আবদার পূরণ করেন না। বুঝেশুনে করেন। মেয়ে থাকে হোস্টেলে। ছুটিতে বাড়িতে আসে। মেয়ের কথা থেকে চলে গেলেন তাঁর প্রেমের গল্পে। খুব মজা নিয়ে শুনছিলাম আমরা।
ফোনে পরিচয় হয় নেপালি, মানে সিকিমের মেয়ের সঙ্গে। ভুল নম্বরে কথা বলে মেয়ের কণ্ঠটা খুব ভালো লেগেছিল রানাদার। বলছিলেন, ‘পাহাড়ি মেয়ে পটানো খুব সোজা। কণ্ঠটা ভালো লেগে গেল, তাই পটিয়ে ফেললাম।’ হো হো করে হেসে উঠলাম সবাই। এরপর বললেন লোভনীয় কথা, ‘নেপালিরা মেয়ে বিয়ে দিলে বরকে সম্পত্তি উপহার দেয়। সেই লোভেও তো এই মেয়েকে বিয়ে করা চাই!’ আরও একটু হেসে নিলাম আমরা। রানাদার প্রেমের কাহিনি শুনতে শুনতে অনেকটুকু পথ পাড়ি দিয়েছিলাম। মাঝপথে কারও কারও প্রকৃতির ডাক এসেছিল। রানাদা বললেন, ‘এই একটু সামনে ভালো জায়গা আছে। যেখানে-সেখানে তো নামা যাবে না। আমি যেখানে নিয়ে যাব, সেখানে নামতে পারবেন। মেয়েছেলেরাও নামে ওখানে।’ আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘তুমিও নামতে পারবে।’ আমার নামার কোনো দরকার পড়েনি। অযথা নেমে আর কী করব। যাই হোক, রানাদার ‘আরেকটু সামনে’ এল অনেকক্ষণ সময় পর। আধা ঘণ্টার ওপরে হবে সবাইকে অপেক্ষা করতে হয়েছে। অবশেষে যথাস্থানে গাড়ি থামালে ‘ভালো জায়গা’ পেলাম না। বরং উদ্যানের মতো খোলা জায়গা! সেখানে বানরের ছড়াছড়ি। মনের আনন্দে খেলছে, লাফাচ্ছে, খাচ্ছে, উকুন বেছে দিচ্ছে। সবাই নামলেন। আমি আর ভুবন বসেই রইলাম। রানাদা দেখিয়ে দিলেন, কাজ সারতে এক পাশে পাহাড়ের চিপায় জংলার মধ্যে যেতে। আমাকে বললে আমি মানা করে দিলাম। কারণ আমার দরকার নাই। কিন্তু তিনি অভয় দিচ্ছিলেন, ‘দেখো, কত মহিলা মানুষ যাচ্ছে।’ আমি বোঝালাম, ‘আমার তো প্রয়োজন নেই দাদা।’ আমি বসে বানরের কীর্তি দেখছিলাম। আমাদের খাওয়ার পর বাকি থাকা কেক সৌরভ ভাই বানরদের খেতে দিলেন। তখন আমার কিছুটা সুস্থ লাগছিল।
সবাই কাজ সেরে গাড়িতে উঠে এলে রানাদা এবার শুরু করলেন তার প্রেমিকার কাহিনি। না না, যাঁকে বিয়ে করেছেন তাঁর কথা বলছি না। বিয়ের পর পরকীয়া করছেন, সেই গল্প করলেন। ভয়ানক কাহিনি শুনে আমাদের মুখের চোয়াল নিচে ঝুলে গেল! এতক্ষণ কী আসলেই এই লোকটার কাহিনি শুনছিলাম? যিনি স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানের প্রতি এত দায়িত্বশীল আর শ্রদ্ধেয়? কান খাড়া করে রইলাম আবার জিজ্ঞেস করে। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না প্রথমে। আকাশ ভাই মশকরা করে জিজ্ঞেস করলেন, ‘বউদি জানে আপনার প্রেমিকার কথা?’ অবলীলায় রানাদা বলে গেলেন, ‘অবশ্যই। আমি আমার স্ত্রীকে না জানিয়ে কিছু করি না।’ আমাদের চোয়াল ঝুলতে ঝুলতে ব্যথা হয়ে যাওয়ার অবস্থা! রানাদা বলতে লাগলেন, ‘আমার স্ত্রী কিছুই মনে করে না। ও জানে আমি যখন শিলিগুড়ি যাই, এক রাত হোটেলে আমার গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে কাটাই। গল্পগুজব করে আমার মন ভালো হয়ে গেলে আমি গ্যাংটকে ফিরে যাই। এমনকি আমার গার্লফ্রেন্ডের বাসায়ও জানে। ওর বর জানে যে আমার সঙ্গে সময় কাটায়। কিচ্ছু বলে না।’ আমরা স্তব্ধ হয়ে গেলাম। কিছু বলার খুঁজে পাচ্ছিলাম না কেউ। আকাশ ভাই শুধু বললেন, ‘বেশ বেশ। খুব ভালো!’ মনে মনে একচোট হেসে নিলাম। কিছুক্ষণ পর রানাদাকে দেখলাম হাতের মধ্যে কিছু একটা নিয়ে পিষে পিষে মুখে ভরছে। এটা কী জানতে চাইলাম। বললেন, ‘গুল। আমার আবার বাজে কোনো নেশা নাই। চা-বিড়ি কিছুই না। একটু গুল খাই। এটা ভালো।’ মনে মনে ভাবলাম, ভাইরে, নেশা তো নেশাই! ভালো আর মন্দ কী!
কথায় কথায় সময়ের আগে পৌঁছাতে পারলাম শিলিগুড়িতে। রানাদা তার একটা কার্ড দিলেন, নম্বরসহ। বললেন, ‘ইন্ডিয়ায় আবার এলে আমাকে ফোন করবেন। বললেই হবে, রানাদা, আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। যেকোনো দরকারে ফোন করতে পারেন। আমার নেটওয়ার্ক ভালো। আমার নাম রানা। এখানে রানাদাকে সবাই চেনে।’ কার্ডটা সম্ভবত আকাশ ভাই রেখেছিলেন। আমরা নেমে বিদায় দিয়ে দিলাম রানাদাকে। তাঁকে ফিরতে হবে গ্যাংটকে। জরুরি কাজ আছে। ভুবনের ধারণা, রানাদার এসব গল্প পুরোটাই চাপা! হোক, তা-ও তো নতুন গল্প শুনলাম।
আকাশ ভাইয়ারা বেশিক্ষণ অপেক্ষা করেননি। বাস কাউন্টারে বিশ্রাম নেওয়ার সময় ছিল না। বাস চলে এসেছিল। এই বাস দিয়ে ফিরবেন চেংড়াবান্ধা সীমানায়। তারা বিদায় নিয়ে বাসে উঠে গেলেন। রইলাম বাকি আমি, ভুবন, সৌরভ ভাই আর ইমরান ভাই। বাবা বলেছিলেন, বাস কাউন্টারের পেছনে কম দামের হোটেল আছে, ভালো। আমাকে কাউন্টারে অপেক্ষা করতে বলে ভুবন ঘুরে এসে জানাল, ওই হোটেলগুলোর পরিবেশ পছন্দ হয়নি। কাউন্টারের ঠিক পাশের হোটেল সেন্ট্রাল প্লাজায় দরদাম করে একটা কক্ষে উঠে গেলাম। সৌরভ ভাইদের কাছাকাছি রুম পেলাম। তাঁদেরটা আগে থেকেই বুকিং দেওয়া ছিল শ্যামলী পরিবহনের মাধ্যমে। অমরদা ডিসকাউন্টে ঠিক করে দিয়েছিলেন। আমদের জন্যও অমরদা ডিসকাউন্টের কথা বলে দিলেন। আমাদের রুম গুছিয়ে দিতে সময় নিচ্ছিল। কিছুক্ষণ সৌরভ ভাইদের রুমে বিশ্রাম নিলাম। আমাদের রুমটা পেলে সবাই ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খেতে বের হলাম। কোথায় খাওয়া যায়? খুব গরুর মাংসের বিরিয়ানি খেতে ইচ্ছা করছিল। আমার একার না, সবার। তখন সুস্থ লাগছিল।
ভেবেছিলাম দুপুরের খাবারের পর মার্কেটে যাব। ব্যাটারির একটা রিকশা ভাড়া করে চালককে বললাম মুসলিম কোনো রেস্তোরাঁয় নিয়ে যেতে, যেখানে গরুর মাংস পাওয়া যায়। চালক আমাদের নামিয়ে দিলেন মুসলিম একটা রেস্তোরাঁয়। কিন্তু হায়, সেখানে গরুর মাংসের কিছুই নেই। আশপাশে খোঁজ নিয়ে জানলাম, ওইটাই একমাত্র মুসলিম হোটেল এদিকের। তেমন কিছু চিনি-জানি না বলে সেখানেই খেতে ঢুকলাম। নিলাম খাসির কাচ্চি বিরিয়ানি, বাসমতি চালের। সৌরভ ভাই মাংস খাবেন না। তাই নিলেন ডিম বিরিয়ানি। আমি এক লোকমা মুখে দিয়েই বিস্বাদ অনুভূতি পেলাম। লবণের ছড়াছড়ি। অন্যরা কষ্ট করে খেতে পারলেও আমি আর ভুবন পারছিলাম না একদম। ভুবন তা-ও আমার চেয়ে বেশি খেতে পেরেছিল। আমি অর্ধেকের বেশি নষ্ট করলাম আর মনে মনে নিজেকে গাল দিলাম! খাবার নষ্ট করা আমার একেবারেই পছন্দ না। অবাক করে দিয়ে চেটেপুটে খেলেন সৌরভ ভাই। তারও এক কথা, ‘খাবার নষ্ট করা ঠিক না।’ ওয়েটারকে বিল দিতে বলা হলো। বিল নিয়ে এলে আমি ঠাট্টার ছলে জিজ্ঞেস করলাম, ‘দাদা, আপনাদের এখানে কি লবণের দাম কম? না মানে আমি নিয়ে যেতে চাই তো, তাই জিজ্ঞেস করলাম আরকি।’
লোকটা খুব খুশি হয়ে জবাব দিলেন, ‘দিদি, শুধু লবণ কেন! আমাদের যেকোনো মুদি দোকানে যান। কম দামে আরও ভালো ভালো জিনিস পাবেন।’ আমি ধন্যবাদ দিয়ে মনে মনে বললাম, আহা বেচারা, আমার ঠাট্টাটাই বুঝল না! বিল চুকিয়ে আমরা বের হয়ে গেলাম সেখান থেকে। শরীর আবার অসুস্থ লাগা শুরু হয়ে গেল। রাস্তার ধারে জুসের দোকান দেখে ভাবলাম খেয়ে নিই, হয়তো জ্বরের মুখে ভালো লাগবে। সবাই মিলেই খেলাম। কেউ আনারস, কেউ মাল্টা, কেউ লেবু। তাজা ফল কেটে সামনেই বানিয়ে দেয়। ভালোই লাগল। কিন্তু বুঝতে পারছিলাম আর শরীর চলবে না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হোটেলে ফিরে গেলাম। ভাবলাম, একটু জিরিয়ে নিলে ঠিক হয়ে যাবে হয়তো। সন্ধ্যায় বিধান মার্কেটে যাব, এরপর বাইরে কোথাও খেয়ে ফিরব। তাই দুজনেই ওষুধ খেয়ে নিলাম। কিন্তু অবস্থার অবনতি ছাড়া উন্নতি হলো না। আমার এক সহকর্মী থাকেন মুম্বাইতে, দেবারতি নাম। বাঙালি। কলকাতার মেয়ে। তাঁকে জানিয়েই আমি ভারতে গিয়েছিলাম। তিনি তাঁর বড় ভাইয়ের ফোন নম্বর দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘যেকোনো সমস্যায় দাদাকে ফোন দিও।
দাদা শিলিগুড়িতেই থাকেন।’ জ্বরের ঘোরেও দাদাকে জানাতে ভুললাম না আমাদের অসুস্থতার কথা। এর আগেও ভারতে পৌঁছে দাদার সঙ্গে যোগাযোগ করে রেখেছিলাম। যাই হোক, দাদা শুনে খুব দুঃখ পেলেন। জানালেন, তিনি কাজের জন্য কলকাতা গিয়েছেন। পরদিন ফিরবেন। ফিরে দেখা করবেন। এদিকে আমাদের অবস্থা খুব খারাপ হচ্ছে। ভুবন তো একদম বাসি লিকলিকে বরবটির মতো নেতিয়ে পড়ছিল। আমার শরীরের তাপমাত্রা কমে গেলেও দুর্বলতা বাড়ছিল। আর ভুবনের জ্বর ১০৩ ডিগ্রিতে উঠে বসে ছিল। নামার কোনো খবরই নেই! হোটেল থেকেই থার্মোমিটার দিয়েছিল মাপতে। বিকেলে সৌরভ ভাইয়ারা মার্কেটে যাওয়ার আগে আমাদের জানিয়ে গেলেন।
আমরা পড়ে রইলাম হোটেল রুমেই, জ্বরে কাতর। টিভিতে খুব অল্প চ্যানেল দেখা যায়। তা-ও বেশির ভাগ চ্যানেলে অপরিচিত ভাষায় সব অনুষ্ঠান। ঘুরেফিরে দু-একটা হিন্দি চ্যানেল পেয়ে সেগুলোই দেখছিলাম এই ভেবে, যেন শরীর খারাপ লাগাটা ভুলে থাকতে পারি। কিন্তু ভুবনের অবস্থা দেখে দুশ্চিন্তা বাড়তে লাগল। সন্ধ্যার দিকে হোটেলের এক কর্মচারীকে ডেকে জানতে চাইলাম আশপাশে কোনো হাসপাতালে নেওয়া যাবে কি না। বললেন, ‘দিদি, এখন যদি কোনো ক্লিনিকে নিয়ে যান, তবে সঙ্গে সঙ্গে ভর্তি করিয়ে দেবে। খামোখা খরচা হবে। আর এমন সময় ডাক্তারও পাবেন না সেখানে। আমি ওষুধ এনে দিচ্ছি। সেটা খাইয়ে দিন। ঠিক হয়ে যাবে।’ ভরসা করে তাঁর দেওয়া ওষুধ খাওয়লাম ভুবনকে। কিন্তু নাহ, অবস্থার কোনো উন্নতি নেই। সৌরভ ভাইয়ারা ফিরে এসে দেখালেন তাঁদের কেনাকাটা। ভুবন শুধু আফসোস করছিল, ‘ইশ্ ভাই। রিজনেবল দামে এত জুতা এনেছেন। আমরা সুস্থ থাকলে যেতাম। শ্রীলেদার থেকে কয়েক জোড়া জুতা কেনার ইচ্ছা ছিল।’ সৌরভ ভাই তো পরিবারের সবার জন্য ৮-১০ জোড়া জুতা কিনে নিয়েছিলেন।
রাতে স্যুপ ফরমাশ করলাম। কোথাও যাওয়ার তো অবস্থা ছিল না। এত জঘন্য লাগছিল খাবার, পারছিলাম না খেতে। তবু জোর করে কিছুটা খেয়ে নিলাম। কারণ, শক্তি দরকার। ওষুধও খাওয়া দরকার। ভুবন যে নিজে উঠে খাবে, সেই অবস্থায় ছিল না। আমি জোর করে অল্প একটু খাইয়ে দিলাম ওকে। জোর করে খাইয়ে যা হয় আরকি, বমি করে ফেলে দিল সব! দুজনে ওষুধপত্র খেয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।
চলবে...

সকালে ঘুম থেকে উঠে খানিকটা ভালো লাগছিল। পুরোপুরি না। অসুস্থ শরীর নিয়ে কোথাও গিয়ে নাশতা করতে ইচ্ছা করছিল না। এদিন থেকে আমার চেয়ে ভুবনের অবস্থা খারাপ হতে লাগল। আমরা নাশতা করিনি। ভাবলাম যাত্রাপথে খেয়ে নেব। গলা দিয়ে কিছু নামার অবস্থায় নেই। আমরা প্রস্তুত হয়ে নিচে নেমে গিয়েছিলাম। কিন্তু অপেক্ষা করতে হলো অনেকক্ষণ। তখনো গাড়ির ব্যবস্থা হয়নি। অমরদা বলেছিলেন সকাল ৭টার মধ্যে রওনা দিতে পারব। কিন্তু সেখানে ৮টার ওপরে বেজে গিয়েছিল। বড় দলটাও চলে যাবে শিলিগুড়ি। এদিকে দেরি দেখে আকাশ ভাইয়ারা ক্ষেপে যাচ্ছিলেন। কেননা, তাঁদের সময়মতো পৌঁছে বাস ধরতে হবে। অমরদা এদিক-সেদিক ফোন ঘুরিয়ে অবশেষে একটা গাড়ি নিশ্চিত করলেন।
আসলে হয়েছিল কী, যে চালক আসার কথা ছিল, তিনি শেষ মুহূর্তে আর আসেননি। আমাদের অবস্থা তখন কিছুটা উন্নতির দিকে। হোটেলের লবিতে বসে থাকার চেয়ে বাইরে মল রোডের বেঞ্চে বসে অপেক্ষা করাটা ভালো লাগছিল। অবশেষে একটা জিপ গাড়ি এসে উপস্থিত হলো আমাদের জন্য। হুড়োহুড়ি করে উঠে গেলাম গাড়িতে। জিপ চালু করার আগে অমরদা বিদায় নিতে এলেন। তিনি আরেকটা দলকে গাইড করার জন্য থেকে যাচ্ছিলেন। খুব করে বলে দিলেন গাড়ির চালককে পরিচয় করিয়ে, ‘ও কিন্তু আমার নিজের লোক। আমার বন্ধু। আপনারা নিশ্চিন্তে যান। কোনো অসুবিধা হবে না।’ কিন্তু চালককে দেখে খুব একটা সুবিধার মনে হচ্ছিল না। তিনি প্রথমেই বাদ সাধলেন আমাদের দুজনের সামনে বসা নিয়ে। তবু আমরা বসেছিলাম। কারণ পেছনে গাদাগাদি করে বসা সম্ভব নয়। তিনি যতই মুড দেখিয়ে রেগে যাচ্ছিলেন, ততই আমরা বিনয়ী হয়ে তাকে বোঝাচ্ছিলাম।
যাত্রাপথে র্যাংপোতে আবার থামতে হয়েছিল। আমাদের অবস্থা খারাপ হচ্ছিল। কিছু নাশতাপানি খাওয়া দরকার ছিল। ভুবন নেমে দোকান থেকে ব্রিটানিয়ার কেক, পানি আর সেখানকার কোনো একটা প্যারাসিটামল কিনে আনল। বাকিরা কোথা থেকে যেন নাশতা খেয়ে এলেন। আমি একবিন্দুও নামলাম না গাড়ি থেকে। ভীষণ খারাপ লাগছিল। যখন কেউ ছিল না, তখন চালকের সে কী হম্বিতম্বি! একে তো আমাদের দুজনের একসঙ্গে সামনে বসা নিয়ে তার সমস্যা, তার ওপর কেউ কেন জলদি ফিরে আসছে না, সেটা নিয়েও সমস্যা। অথচ সবার নাশতা সারতে যতক্ষণ সময় লাগার কথা, ততক্ষণেই সবাই ফিরে এসেছিলেন। আবার চালকের অনুপস্থিতেও সবাই যার যার রাগ ঝেড়ে নিয়েছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই চালকের সঙ্গে আমাদের মতের বনিবনা হচ্ছিল না বলে এই অবস্থা। আমি আর ভুবন একটু কেক খেয়ে ওষুধ খেয়ে নিলাম। ভুবন পেয়ারা ফ্লেভারের একটা পানির বোতল এনেছিল। বোতলটা সুন্দর। এখনো বাসায় রেখে দিয়েছি। পানিও খেতে ভালো। সবাই গাড়িতে উঠে পড়লে আবার যাত্রা শুরু হলো।
এবার মনে হয় আগের চেয়ে বেশি বিনয় দেখাচ্ছিলেন সবাই। শুধু চালককে ‘গরম’ থেকে ‘নরম’ করার জন্য। ভাবের চোটে তো চালক কথা তেমন বলছিলেন না, কিন্তু যখন শুরু করলেন, তখন মনে হলো লোকটা বেশ মিশুক। সেদিনের যাত্রাটা গানের বদলে রানাদার জীবনের গল্প শুনে কেটে গিয়েছিল। চালকের নাম রানা। বয়স চল্লিশের কাছাকাছি হবে। এর চেয়ে কমও হতে পারে। জানা হয়নি। জিপটা তাঁর নিজের। এ রকম আরও ৮-৯টা জিপের মালিক তিনি। বাকিগুলোর জন্য চালক রেখেছেন। ভগবানের কৃপায় নাকি এখন তার যথেষ্ট উপার্জন হয়। অন্যদিকে তাঁর স্ত্রী সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক। মাসে ৪০ হাজার রুপি বেতন। বেশ চলে যায় সংসার খরচ। মেয়ে আছে, পড়ে ক্লাস এইটে। এই বয়সেই ধনী বন্ধুদের দেখে নাকি অনেক দামি জিনিস বায়না ধরে। কিন্তু মেয়েকে সত্যিকারের মানুষ হওয়ার শিক্ষা দিতে চান রানা দম্পতি। মেয়ের সব আবদার পূরণ করেন না। বুঝেশুনে করেন। মেয়ে থাকে হোস্টেলে। ছুটিতে বাড়িতে আসে। মেয়ের কথা থেকে চলে গেলেন তাঁর প্রেমের গল্পে। খুব মজা নিয়ে শুনছিলাম আমরা।
ফোনে পরিচয় হয় নেপালি, মানে সিকিমের মেয়ের সঙ্গে। ভুল নম্বরে কথা বলে মেয়ের কণ্ঠটা খুব ভালো লেগেছিল রানাদার। বলছিলেন, ‘পাহাড়ি মেয়ে পটানো খুব সোজা। কণ্ঠটা ভালো লেগে গেল, তাই পটিয়ে ফেললাম।’ হো হো করে হেসে উঠলাম সবাই। এরপর বললেন লোভনীয় কথা, ‘নেপালিরা মেয়ে বিয়ে দিলে বরকে সম্পত্তি উপহার দেয়। সেই লোভেও তো এই মেয়েকে বিয়ে করা চাই!’ আরও একটু হেসে নিলাম আমরা। রানাদার প্রেমের কাহিনি শুনতে শুনতে অনেকটুকু পথ পাড়ি দিয়েছিলাম। মাঝপথে কারও কারও প্রকৃতির ডাক এসেছিল। রানাদা বললেন, ‘এই একটু সামনে ভালো জায়গা আছে। যেখানে-সেখানে তো নামা যাবে না। আমি যেখানে নিয়ে যাব, সেখানে নামতে পারবেন। মেয়েছেলেরাও নামে ওখানে।’ আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘তুমিও নামতে পারবে।’ আমার নামার কোনো দরকার পড়েনি। অযথা নেমে আর কী করব। যাই হোক, রানাদার ‘আরেকটু সামনে’ এল অনেকক্ষণ সময় পর। আধা ঘণ্টার ওপরে হবে সবাইকে অপেক্ষা করতে হয়েছে। অবশেষে যথাস্থানে গাড়ি থামালে ‘ভালো জায়গা’ পেলাম না। বরং উদ্যানের মতো খোলা জায়গা! সেখানে বানরের ছড়াছড়ি। মনের আনন্দে খেলছে, লাফাচ্ছে, খাচ্ছে, উকুন বেছে দিচ্ছে। সবাই নামলেন। আমি আর ভুবন বসেই রইলাম। রানাদা দেখিয়ে দিলেন, কাজ সারতে এক পাশে পাহাড়ের চিপায় জংলার মধ্যে যেতে। আমাকে বললে আমি মানা করে দিলাম। কারণ আমার দরকার নাই। কিন্তু তিনি অভয় দিচ্ছিলেন, ‘দেখো, কত মহিলা মানুষ যাচ্ছে।’ আমি বোঝালাম, ‘আমার তো প্রয়োজন নেই দাদা।’ আমি বসে বানরের কীর্তি দেখছিলাম। আমাদের খাওয়ার পর বাকি থাকা কেক সৌরভ ভাই বানরদের খেতে দিলেন। তখন আমার কিছুটা সুস্থ লাগছিল।
সবাই কাজ সেরে গাড়িতে উঠে এলে রানাদা এবার শুরু করলেন তার প্রেমিকার কাহিনি। না না, যাঁকে বিয়ে করেছেন তাঁর কথা বলছি না। বিয়ের পর পরকীয়া করছেন, সেই গল্প করলেন। ভয়ানক কাহিনি শুনে আমাদের মুখের চোয়াল নিচে ঝুলে গেল! এতক্ষণ কী আসলেই এই লোকটার কাহিনি শুনছিলাম? যিনি স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানের প্রতি এত দায়িত্বশীল আর শ্রদ্ধেয়? কান খাড়া করে রইলাম আবার জিজ্ঞেস করে। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না প্রথমে। আকাশ ভাই মশকরা করে জিজ্ঞেস করলেন, ‘বউদি জানে আপনার প্রেমিকার কথা?’ অবলীলায় রানাদা বলে গেলেন, ‘অবশ্যই। আমি আমার স্ত্রীকে না জানিয়ে কিছু করি না।’ আমাদের চোয়াল ঝুলতে ঝুলতে ব্যথা হয়ে যাওয়ার অবস্থা! রানাদা বলতে লাগলেন, ‘আমার স্ত্রী কিছুই মনে করে না। ও জানে আমি যখন শিলিগুড়ি যাই, এক রাত হোটেলে আমার গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে কাটাই। গল্পগুজব করে আমার মন ভালো হয়ে গেলে আমি গ্যাংটকে ফিরে যাই। এমনকি আমার গার্লফ্রেন্ডের বাসায়ও জানে। ওর বর জানে যে আমার সঙ্গে সময় কাটায়। কিচ্ছু বলে না।’ আমরা স্তব্ধ হয়ে গেলাম। কিছু বলার খুঁজে পাচ্ছিলাম না কেউ। আকাশ ভাই শুধু বললেন, ‘বেশ বেশ। খুব ভালো!’ মনে মনে একচোট হেসে নিলাম। কিছুক্ষণ পর রানাদাকে দেখলাম হাতের মধ্যে কিছু একটা নিয়ে পিষে পিষে মুখে ভরছে। এটা কী জানতে চাইলাম। বললেন, ‘গুল। আমার আবার বাজে কোনো নেশা নাই। চা-বিড়ি কিছুই না। একটু গুল খাই। এটা ভালো।’ মনে মনে ভাবলাম, ভাইরে, নেশা তো নেশাই! ভালো আর মন্দ কী!
কথায় কথায় সময়ের আগে পৌঁছাতে পারলাম শিলিগুড়িতে। রানাদা তার একটা কার্ড দিলেন, নম্বরসহ। বললেন, ‘ইন্ডিয়ায় আবার এলে আমাকে ফোন করবেন। বললেই হবে, রানাদা, আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। যেকোনো দরকারে ফোন করতে পারেন। আমার নেটওয়ার্ক ভালো। আমার নাম রানা। এখানে রানাদাকে সবাই চেনে।’ কার্ডটা সম্ভবত আকাশ ভাই রেখেছিলেন। আমরা নেমে বিদায় দিয়ে দিলাম রানাদাকে। তাঁকে ফিরতে হবে গ্যাংটকে। জরুরি কাজ আছে। ভুবনের ধারণা, রানাদার এসব গল্প পুরোটাই চাপা! হোক, তা-ও তো নতুন গল্প শুনলাম।
আকাশ ভাইয়ারা বেশিক্ষণ অপেক্ষা করেননি। বাস কাউন্টারে বিশ্রাম নেওয়ার সময় ছিল না। বাস চলে এসেছিল। এই বাস দিয়ে ফিরবেন চেংড়াবান্ধা সীমানায়। তারা বিদায় নিয়ে বাসে উঠে গেলেন। রইলাম বাকি আমি, ভুবন, সৌরভ ভাই আর ইমরান ভাই। বাবা বলেছিলেন, বাস কাউন্টারের পেছনে কম দামের হোটেল আছে, ভালো। আমাকে কাউন্টারে অপেক্ষা করতে বলে ভুবন ঘুরে এসে জানাল, ওই হোটেলগুলোর পরিবেশ পছন্দ হয়নি। কাউন্টারের ঠিক পাশের হোটেল সেন্ট্রাল প্লাজায় দরদাম করে একটা কক্ষে উঠে গেলাম। সৌরভ ভাইদের কাছাকাছি রুম পেলাম। তাঁদেরটা আগে থেকেই বুকিং দেওয়া ছিল শ্যামলী পরিবহনের মাধ্যমে। অমরদা ডিসকাউন্টে ঠিক করে দিয়েছিলেন। আমদের জন্যও অমরদা ডিসকাউন্টের কথা বলে দিলেন। আমাদের রুম গুছিয়ে দিতে সময় নিচ্ছিল। কিছুক্ষণ সৌরভ ভাইদের রুমে বিশ্রাম নিলাম। আমাদের রুমটা পেলে সবাই ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খেতে বের হলাম। কোথায় খাওয়া যায়? খুব গরুর মাংসের বিরিয়ানি খেতে ইচ্ছা করছিল। আমার একার না, সবার। তখন সুস্থ লাগছিল।
ভেবেছিলাম দুপুরের খাবারের পর মার্কেটে যাব। ব্যাটারির একটা রিকশা ভাড়া করে চালককে বললাম মুসলিম কোনো রেস্তোরাঁয় নিয়ে যেতে, যেখানে গরুর মাংস পাওয়া যায়। চালক আমাদের নামিয়ে দিলেন মুসলিম একটা রেস্তোরাঁয়। কিন্তু হায়, সেখানে গরুর মাংসের কিছুই নেই। আশপাশে খোঁজ নিয়ে জানলাম, ওইটাই একমাত্র মুসলিম হোটেল এদিকের। তেমন কিছু চিনি-জানি না বলে সেখানেই খেতে ঢুকলাম। নিলাম খাসির কাচ্চি বিরিয়ানি, বাসমতি চালের। সৌরভ ভাই মাংস খাবেন না। তাই নিলেন ডিম বিরিয়ানি। আমি এক লোকমা মুখে দিয়েই বিস্বাদ অনুভূতি পেলাম। লবণের ছড়াছড়ি। অন্যরা কষ্ট করে খেতে পারলেও আমি আর ভুবন পারছিলাম না একদম। ভুবন তা-ও আমার চেয়ে বেশি খেতে পেরেছিল। আমি অর্ধেকের বেশি নষ্ট করলাম আর মনে মনে নিজেকে গাল দিলাম! খাবার নষ্ট করা আমার একেবারেই পছন্দ না। অবাক করে দিয়ে চেটেপুটে খেলেন সৌরভ ভাই। তারও এক কথা, ‘খাবার নষ্ট করা ঠিক না।’ ওয়েটারকে বিল দিতে বলা হলো। বিল নিয়ে এলে আমি ঠাট্টার ছলে জিজ্ঞেস করলাম, ‘দাদা, আপনাদের এখানে কি লবণের দাম কম? না মানে আমি নিয়ে যেতে চাই তো, তাই জিজ্ঞেস করলাম আরকি।’
লোকটা খুব খুশি হয়ে জবাব দিলেন, ‘দিদি, শুধু লবণ কেন! আমাদের যেকোনো মুদি দোকানে যান। কম দামে আরও ভালো ভালো জিনিস পাবেন।’ আমি ধন্যবাদ দিয়ে মনে মনে বললাম, আহা বেচারা, আমার ঠাট্টাটাই বুঝল না! বিল চুকিয়ে আমরা বের হয়ে গেলাম সেখান থেকে। শরীর আবার অসুস্থ লাগা শুরু হয়ে গেল। রাস্তার ধারে জুসের দোকান দেখে ভাবলাম খেয়ে নিই, হয়তো জ্বরের মুখে ভালো লাগবে। সবাই মিলেই খেলাম। কেউ আনারস, কেউ মাল্টা, কেউ লেবু। তাজা ফল কেটে সামনেই বানিয়ে দেয়। ভালোই লাগল। কিন্তু বুঝতে পারছিলাম আর শরীর চলবে না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হোটেলে ফিরে গেলাম। ভাবলাম, একটু জিরিয়ে নিলে ঠিক হয়ে যাবে হয়তো। সন্ধ্যায় বিধান মার্কেটে যাব, এরপর বাইরে কোথাও খেয়ে ফিরব। তাই দুজনেই ওষুধ খেয়ে নিলাম। কিন্তু অবস্থার অবনতি ছাড়া উন্নতি হলো না। আমার এক সহকর্মী থাকেন মুম্বাইতে, দেবারতি নাম। বাঙালি। কলকাতার মেয়ে। তাঁকে জানিয়েই আমি ভারতে গিয়েছিলাম। তিনি তাঁর বড় ভাইয়ের ফোন নম্বর দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘যেকোনো সমস্যায় দাদাকে ফোন দিও।
দাদা শিলিগুড়িতেই থাকেন।’ জ্বরের ঘোরেও দাদাকে জানাতে ভুললাম না আমাদের অসুস্থতার কথা। এর আগেও ভারতে পৌঁছে দাদার সঙ্গে যোগাযোগ করে রেখেছিলাম। যাই হোক, দাদা শুনে খুব দুঃখ পেলেন। জানালেন, তিনি কাজের জন্য কলকাতা গিয়েছেন। পরদিন ফিরবেন। ফিরে দেখা করবেন। এদিকে আমাদের অবস্থা খুব খারাপ হচ্ছে। ভুবন তো একদম বাসি লিকলিকে বরবটির মতো নেতিয়ে পড়ছিল। আমার শরীরের তাপমাত্রা কমে গেলেও দুর্বলতা বাড়ছিল। আর ভুবনের জ্বর ১০৩ ডিগ্রিতে উঠে বসে ছিল। নামার কোনো খবরই নেই! হোটেল থেকেই থার্মোমিটার দিয়েছিল মাপতে। বিকেলে সৌরভ ভাইয়ারা মার্কেটে যাওয়ার আগে আমাদের জানিয়ে গেলেন।
আমরা পড়ে রইলাম হোটেল রুমেই, জ্বরে কাতর। টিভিতে খুব অল্প চ্যানেল দেখা যায়। তা-ও বেশির ভাগ চ্যানেলে অপরিচিত ভাষায় সব অনুষ্ঠান। ঘুরেফিরে দু-একটা হিন্দি চ্যানেল পেয়ে সেগুলোই দেখছিলাম এই ভেবে, যেন শরীর খারাপ লাগাটা ভুলে থাকতে পারি। কিন্তু ভুবনের অবস্থা দেখে দুশ্চিন্তা বাড়তে লাগল। সন্ধ্যার দিকে হোটেলের এক কর্মচারীকে ডেকে জানতে চাইলাম আশপাশে কোনো হাসপাতালে নেওয়া যাবে কি না। বললেন, ‘দিদি, এখন যদি কোনো ক্লিনিকে নিয়ে যান, তবে সঙ্গে সঙ্গে ভর্তি করিয়ে দেবে। খামোখা খরচা হবে। আর এমন সময় ডাক্তারও পাবেন না সেখানে। আমি ওষুধ এনে দিচ্ছি। সেটা খাইয়ে দিন। ঠিক হয়ে যাবে।’ ভরসা করে তাঁর দেওয়া ওষুধ খাওয়লাম ভুবনকে। কিন্তু নাহ, অবস্থার কোনো উন্নতি নেই। সৌরভ ভাইয়ারা ফিরে এসে দেখালেন তাঁদের কেনাকাটা। ভুবন শুধু আফসোস করছিল, ‘ইশ্ ভাই। রিজনেবল দামে এত জুতা এনেছেন। আমরা সুস্থ থাকলে যেতাম। শ্রীলেদার থেকে কয়েক জোড়া জুতা কেনার ইচ্ছা ছিল।’ সৌরভ ভাই তো পরিবারের সবার জন্য ৮-১০ জোড়া জুতা কিনে নিয়েছিলেন।
রাতে স্যুপ ফরমাশ করলাম। কোথাও যাওয়ার তো অবস্থা ছিল না। এত জঘন্য লাগছিল খাবার, পারছিলাম না খেতে। তবু জোর করে কিছুটা খেয়ে নিলাম। কারণ, শক্তি দরকার। ওষুধও খাওয়া দরকার। ভুবন যে নিজে উঠে খাবে, সেই অবস্থায় ছিল না। আমি জোর করে অল্প একটু খাইয়ে দিলাম ওকে। জোর করে খাইয়ে যা হয় আরকি, বমি করে ফেলে দিল সব! দুজনে ওষুধপত্র খেয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।
চলবে...

মেটালের গয়নায় অ্যালার্জি থাকায় পরলে কানে ও গলায়, কখনো কখনো হাতেও চুলকানি হয় এবং ফুসকুড়ি ওঠে। তা ছাড়া জরি বা চুমকিওয়ালা শাড়ি, ব্লাউজ পরলেও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় লাল লাল দানা ওঠে।
১ ঘণ্টা আগে
চিকেন ফ্রাই এখন আমাদের দেশে বেশ জনপ্রিয় খাবার। শহরগুলোতে গলির মোড়ে মোড়ে চিকেন ফ্রাইয়ের দোকান হয়ে গেছে। অর্থাৎ হাত বাড়ালেই এখন সুস্বাদু আর ক্রিস্পি মুরগি ভাজা পাওয়া যায়। তবে কিছু কৌশল জানা থাকলে বাড়িতেই রেস্তোরাঁর মতো চিকেন ফ্রাই করে নিতে পারেন। মনে রাখতে হবে, রেস্তোরাঁর মতো ক্রিস্পি চিকেন ফ্রাই...
১৩ ঘণ্টা আগে
শীতের দিনে ত্বকের সাধারণ সমস্যার একটি হলো ফাটা গোড়ালি। সাধারণত যাঁদের বয়স ত্রিশ বা তার বেশি, তাঁরা ত্বকের অতিরিক্ত মরা কোষ ও ফাটা গোড়ালির সমস্যায় বেশি ভোগেন। ফলে দেখা যায়, এক সপ্তাহ আগেই হয়তো পারলার থেকে পেডিকিউর করে এসেছেন, কিন্তু সপ্তাহ পার হতে না হতেই আবার পায়ের গোড়ালির ত্বক পুরু হয়ে শক্ত হয়ে...
২০ ঘণ্টা আগে
রোজ শ্যাম্পু করার পর বোতলজাত যে কন্ডিশনার আমরা ব্যবহার করি; সেগুলোর ব্যবহার করলেই যে চুল কোমল, সুন্দর ও মসৃণ থাকবে, এ কথা ভাবাটা বোকামি। চুলের সার্বিক সুস্থতার জন্য এই ঋতুতে কিছু ঘরোয়া ডিপ কন্ডিশনিং প্যাক তৈরি করেও চুলে ব্যবহার করতে হবে। এতে পুরো শীতে চুল থাকবে নরম, মসৃণ ও জেল্লাদার। দেখে নিন...
১ দিন আগেশোভন সাহা

প্রশ্ন: মেটালের গয়নায় অ্যালার্জি থাকায় পরলে কানে ও গলায়, কখনো কখনো হাতেও চুলকানি হয় এবং ফুসকুড়ি ওঠে। তা ছাড়া জরি বা চুমকিওয়ালা শাড়ি, ব্লাউজ পরলেও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় লাল লাল দানা ওঠে। তবে নিরাপদ কোনো ঘরোয়া সমাধান কি আছে এই অ্যালার্জি থেকে বাঁচার?
তুলতুল খান, ঢাকা
এ ধরনের অ্যালার্জি অনেকের থাকে। সে ক্ষেত্রে বিকল্প উপায় বেছে নিতে হবে। খাঁটি সোনা ও রুপার গয়না পরে দেখতে পারেন। এ ধরনের গয়নায় অ্যালার্জি হওয়ার আশঙ্কা কম। এর বাইরে অন্যান্য মেটালের গয়নার পরিবর্তে কাপড়, ক্লে, পার্ল বা মাটির গয়না ব্যবহার করতে পারেন। কাপড়ের বেলায়ও নরম ও পরতে আরাম এমন বিকল্প বেছে নিতে হবে।
প্রশ্ন: আমার চুলের ওপরের দিক ঘন আর নিচের দিকে একেবারে পাতলা ও সরু। সমান ঘনত্বের জন্য কি কোনো সমাধান আছে? বছরে দুবার আমি চুলের আগা ছাঁটাই করি।
রোকেয়া সারোয়ার, নোয়াখালী
চুল ভালো রাখার জন্য মাসে একবার ট্রিম করা জরুরি। দীর্ঘদিন ট্রিম না করালে চুলের আগা একেবারে লেজের মতো সরু হয়ে যায়। এ ছাড়া চুল পড়ার সমস্যা যদি থাকে, তাহলে মাসে একবার ভালো পারলার থেকে হেয়ার ট্রিটমেন্ট করিয়ে নিতে হবে।
প্রশ্ন: শরীরের বিভিন্ন জায়গায় স্ট্রেচ মার্ক আছে। এগুলো দূর করতে কী করব?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, ঢাকা
স্ট্রেচ মার্ক দূর করতে কোলাজেন ট্রিটমেন্ট নিতে পারেন। এ ছাড়া কোলাজেনসমৃদ্ধ ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে। এরপরও কাজ না হলে একজন লেজার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
পরামর্শ দিয়েছেন: শোভন সাহা, কসমেটোলজিস্ট, শোভন মেকওভার

প্রশ্ন: মেটালের গয়নায় অ্যালার্জি থাকায় পরলে কানে ও গলায়, কখনো কখনো হাতেও চুলকানি হয় এবং ফুসকুড়ি ওঠে। তা ছাড়া জরি বা চুমকিওয়ালা শাড়ি, ব্লাউজ পরলেও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় লাল লাল দানা ওঠে। তবে নিরাপদ কোনো ঘরোয়া সমাধান কি আছে এই অ্যালার্জি থেকে বাঁচার?
তুলতুল খান, ঢাকা
এ ধরনের অ্যালার্জি অনেকের থাকে। সে ক্ষেত্রে বিকল্প উপায় বেছে নিতে হবে। খাঁটি সোনা ও রুপার গয়না পরে দেখতে পারেন। এ ধরনের গয়নায় অ্যালার্জি হওয়ার আশঙ্কা কম। এর বাইরে অন্যান্য মেটালের গয়নার পরিবর্তে কাপড়, ক্লে, পার্ল বা মাটির গয়না ব্যবহার করতে পারেন। কাপড়ের বেলায়ও নরম ও পরতে আরাম এমন বিকল্প বেছে নিতে হবে।
প্রশ্ন: আমার চুলের ওপরের দিক ঘন আর নিচের দিকে একেবারে পাতলা ও সরু। সমান ঘনত্বের জন্য কি কোনো সমাধান আছে? বছরে দুবার আমি চুলের আগা ছাঁটাই করি।
রোকেয়া সারোয়ার, নোয়াখালী
চুল ভালো রাখার জন্য মাসে একবার ট্রিম করা জরুরি। দীর্ঘদিন ট্রিম না করালে চুলের আগা একেবারে লেজের মতো সরু হয়ে যায়। এ ছাড়া চুল পড়ার সমস্যা যদি থাকে, তাহলে মাসে একবার ভালো পারলার থেকে হেয়ার ট্রিটমেন্ট করিয়ে নিতে হবে।
প্রশ্ন: শরীরের বিভিন্ন জায়গায় স্ট্রেচ মার্ক আছে। এগুলো দূর করতে কী করব?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, ঢাকা
স্ট্রেচ মার্ক দূর করতে কোলাজেন ট্রিটমেন্ট নিতে পারেন। এ ছাড়া কোলাজেনসমৃদ্ধ ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে। এরপরও কাজ না হলে একজন লেজার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
পরামর্শ দিয়েছেন: শোভন সাহা, কসমেটোলজিস্ট, শোভন মেকওভার

সকালে ঘুম থেকে উঠে খানিকটা ভালো লাগছিল। পুরোপুরি না। অসুস্থ শরীর নিয়ে কোথাও গিয়ে নাশতা করতে ইচ্ছা করছিল না। এদিন থেকে আমার চেয়ে ভুবনের অবস্থা খারাপ হতে লাগল। আমরা নাশতা করিনি। ভাবলাম যাত্রাপথে খেয়ে নেব...
১৬ নভেম্বর ২০২২
চিকেন ফ্রাই এখন আমাদের দেশে বেশ জনপ্রিয় খাবার। শহরগুলোতে গলির মোড়ে মোড়ে চিকেন ফ্রাইয়ের দোকান হয়ে গেছে। অর্থাৎ হাত বাড়ালেই এখন সুস্বাদু আর ক্রিস্পি মুরগি ভাজা পাওয়া যায়। তবে কিছু কৌশল জানা থাকলে বাড়িতেই রেস্তোরাঁর মতো চিকেন ফ্রাই করে নিতে পারেন। মনে রাখতে হবে, রেস্তোরাঁর মতো ক্রিস্পি চিকেন ফ্রাই...
১৩ ঘণ্টা আগে
শীতের দিনে ত্বকের সাধারণ সমস্যার একটি হলো ফাটা গোড়ালি। সাধারণত যাঁদের বয়স ত্রিশ বা তার বেশি, তাঁরা ত্বকের অতিরিক্ত মরা কোষ ও ফাটা গোড়ালির সমস্যায় বেশি ভোগেন। ফলে দেখা যায়, এক সপ্তাহ আগেই হয়তো পারলার থেকে পেডিকিউর করে এসেছেন, কিন্তু সপ্তাহ পার হতে না হতেই আবার পায়ের গোড়ালির ত্বক পুরু হয়ে শক্ত হয়ে...
২০ ঘণ্টা আগে
রোজ শ্যাম্পু করার পর বোতলজাত যে কন্ডিশনার আমরা ব্যবহার করি; সেগুলোর ব্যবহার করলেই যে চুল কোমল, সুন্দর ও মসৃণ থাকবে, এ কথা ভাবাটা বোকামি। চুলের সার্বিক সুস্থতার জন্য এই ঋতুতে কিছু ঘরোয়া ডিপ কন্ডিশনিং প্যাক তৈরি করেও চুলে ব্যবহার করতে হবে। এতে পুরো শীতে চুল থাকবে নরম, মসৃণ ও জেল্লাদার। দেখে নিন...
১ দিন আগেফিচার ডেস্ক, ঢাকা

শীতকালে ভাজাপোড়া খেতে মন চায়। কেন এ ধরনের খাবারের প্রবণতা বাড়ে, তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও আছে। সেসব থাক। আমরা বরং দেখে নিই, এই শীতের সকালে কিংবা সন্ধ্যার নাশতায় রেস্তোরাঁয় না গিয়ে কীভাবে বাড়িতেই তাদের মতো ক্রিস্পি চিকেন ফ্রাই তৈরি করা যায়।
চিকেন ফ্রাই এখন আমাদের দেশে বেশ জনপ্রিয় খাবার। শহরগুলোতে গলির মোড়ে মোড়ে চিকেন ফ্রাইয়ের দোকান হয়ে গেছে। অর্থাৎ হাত বাড়ালেই এখন সুস্বাদু আর ক্রিস্পি মুরগি ভাজা পাওয়া যায়। তবে কিছু কৌশল জানা থাকলে বাড়িতেই রেস্তোরাঁর মতো চিকেন ফ্রাই করে নিতে পারেন।
মনে রাখতে হবে, রেস্তোরাঁর মতো ক্রিস্পি চিকেন ফ্রাই বানাতে হলে মাংস ম্যারিনেট করা, ময়দা, কর্নফ্লাওয়ার, বিস্কুটের গুঁড়া বা কর্নফ্লেক্সের মিশ্রণ সঠিক কোটিং এবং ডুবো তেলে ভাজার কৌশল জানা গুরুত্বপূর্ণ। এতে আদা-রসুনবাটা, সয়া সস, গোলমরিচ এবং ডিম ও ময়দার মিশ্রণ ব্যবহার করে ম্যারিনেট ও কোটিং করলে ভেতরে জুসি আর বাইরে মুচমুচে চিকেন ফ্রাই তৈরি হয়।
উপকরণ
মুরগি ছোট টুকরো করে কাটা ৫০০ গ্রাম, ম্যারিনেটের জন্য আদা ও রসুনবাটা, লবণ, গোলমরিচের গুঁড়া, সয়া সস, অল্প মরিচ গুঁড়া, সামান্য ভিনেগার বা লেবুর রস, দই, কোটিংয়ের জন্য ময়দা, কর্নফ্লাওয়ার, বিস্কুটের গুঁড়া বা ব্রেডক্রাম্বস, ডিম, সামান্য বেকিং পাউডার এবং ভাজার জন্য তেল।
উপকরণের এই বিষয়গুলো মোটামুটি আমরা সবাই জানি। এবার এগুলো ঠিকভাবে মেরিনেট করে নিন। এখানে কিছু বিষয় খেয়াল করার আছে। এগুলোর মধ্যে আছে মাংস রেস্টে রাখা। প্রতিটি ধাপে মাংস কিছুক্ষণ করে রেস্টে রাখলে ফল ভালো হবে।

ম্যারিনেশন প্রণালি
মুরগির টুকরোগুলো আদা-রসুনবাটা, লবণ, গোলমরিচ, সয়া সস, মরিচ গুঁড়া, ভিনেগার বা লেবুর রস ও দই দিয়ে ভালো করে মেখে কমপক্ষে ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা রেখে দিন। সম্ভব হলে ফ্রিজে রাখুন। এখানে একটি বিষয় বলে রাখা ভালো। অনেকে মনে করেন, মাংস ভালো করে মেখে এক রাত ফ্রিজে বা ঠান্ডা জায়গায় রাখলে ভাজার পর ফল ভালো পাওয়া যায়। সেটা মেনেও চেষ্টা করে দেখতে পারেন। সে ক্ষেত্রে সন্ধ্যায় মেরিনেট করে রাতভর রেখে দিন।
টিপস
ব্যাটার তৈরি
ভাজার আগে ব্যাটার তৈরি করে নিন। এ জন্য একটি বাটিতে ডিম ফেটিয়ে নিন। আরেকটি বাটিতে ময়দা, কর্নফ্লাওয়ার এবং সামান্য লবণ ও গোলমরিচ মিশিয়ে রাখুন। চাইলে এতে অল্প বিস্কুটের গুঁড়া বা কর্নফ্লেক্স গুঁড়াও যোগ করতে পারেন। আরও ক্রিস্পি চাইলে চালের গুঁড়া যোগ করতে পারেন।

কোটিং
ম্যারিনেট করা মুরগির টুকরোগুলো প্রথমে ময়দার মিশ্রণে গড়িয়ে নিয়ে অতিরিক্ত ময়দা ঝেড়ে ফেলুন। এরপর ফেটানো ডিমে ডুবিয়ে নিন। সবশেষে বিস্কুটের গুঁড়া বা ব্রেডক্রাম্বসের মিশ্রণে ভালো করে কোট করুন।
টিপস
ভেজা মিশ্রণ: আলাদা বাটিতে শুকনা মিশ্রণের অর্ধেক নিয়ে বরফ ঠান্ডা পানি দিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করুন।
ডবল ডিপিং পদ্ধতি: প্রথমে মুরগি শুকনা মিশ্রণে, তারপর ভেজা পেস্টে, আবার শুকনা মিশ্রণে কোট করুন।
ভাজা
যেকোনো ধরনের ভাজার মতো চিকেন ফ্রাই করতে তাপমাত্রার পরিমাপটা বোঝা জরুরি। একটি কড়াইতে ডুবো তেল মাঝারি আঁচে তেল গরম করুন। তেলের তাপমাত্রা ৩৫০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ১৭৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে ভালো হয়।
তেল গরম হলে কোটিং করে রাখা মুরগির মাংসের টুকরোগুলো সাবধানে তেলে ছাড়ুন এবং সোনালি-বাদামি ও মুচমুচে হওয়া পর্যন্ত ভাজুন। এখানে কয়েকটি টিপস জেনে নিন।
পরিবেশন

শীতকালে ভাজাপোড়া খেতে মন চায়। কেন এ ধরনের খাবারের প্রবণতা বাড়ে, তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও আছে। সেসব থাক। আমরা বরং দেখে নিই, এই শীতের সকালে কিংবা সন্ধ্যার নাশতায় রেস্তোরাঁয় না গিয়ে কীভাবে বাড়িতেই তাদের মতো ক্রিস্পি চিকেন ফ্রাই তৈরি করা যায়।
চিকেন ফ্রাই এখন আমাদের দেশে বেশ জনপ্রিয় খাবার। শহরগুলোতে গলির মোড়ে মোড়ে চিকেন ফ্রাইয়ের দোকান হয়ে গেছে। অর্থাৎ হাত বাড়ালেই এখন সুস্বাদু আর ক্রিস্পি মুরগি ভাজা পাওয়া যায়। তবে কিছু কৌশল জানা থাকলে বাড়িতেই রেস্তোরাঁর মতো চিকেন ফ্রাই করে নিতে পারেন।
মনে রাখতে হবে, রেস্তোরাঁর মতো ক্রিস্পি চিকেন ফ্রাই বানাতে হলে মাংস ম্যারিনেট করা, ময়দা, কর্নফ্লাওয়ার, বিস্কুটের গুঁড়া বা কর্নফ্লেক্সের মিশ্রণ সঠিক কোটিং এবং ডুবো তেলে ভাজার কৌশল জানা গুরুত্বপূর্ণ। এতে আদা-রসুনবাটা, সয়া সস, গোলমরিচ এবং ডিম ও ময়দার মিশ্রণ ব্যবহার করে ম্যারিনেট ও কোটিং করলে ভেতরে জুসি আর বাইরে মুচমুচে চিকেন ফ্রাই তৈরি হয়।
উপকরণ
মুরগি ছোট টুকরো করে কাটা ৫০০ গ্রাম, ম্যারিনেটের জন্য আদা ও রসুনবাটা, লবণ, গোলমরিচের গুঁড়া, সয়া সস, অল্প মরিচ গুঁড়া, সামান্য ভিনেগার বা লেবুর রস, দই, কোটিংয়ের জন্য ময়দা, কর্নফ্লাওয়ার, বিস্কুটের গুঁড়া বা ব্রেডক্রাম্বস, ডিম, সামান্য বেকিং পাউডার এবং ভাজার জন্য তেল।
উপকরণের এই বিষয়গুলো মোটামুটি আমরা সবাই জানি। এবার এগুলো ঠিকভাবে মেরিনেট করে নিন। এখানে কিছু বিষয় খেয়াল করার আছে। এগুলোর মধ্যে আছে মাংস রেস্টে রাখা। প্রতিটি ধাপে মাংস কিছুক্ষণ করে রেস্টে রাখলে ফল ভালো হবে।

ম্যারিনেশন প্রণালি
মুরগির টুকরোগুলো আদা-রসুনবাটা, লবণ, গোলমরিচ, সয়া সস, মরিচ গুঁড়া, ভিনেগার বা লেবুর রস ও দই দিয়ে ভালো করে মেখে কমপক্ষে ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা রেখে দিন। সম্ভব হলে ফ্রিজে রাখুন। এখানে একটি বিষয় বলে রাখা ভালো। অনেকে মনে করেন, মাংস ভালো করে মেখে এক রাত ফ্রিজে বা ঠান্ডা জায়গায় রাখলে ভাজার পর ফল ভালো পাওয়া যায়। সেটা মেনেও চেষ্টা করে দেখতে পারেন। সে ক্ষেত্রে সন্ধ্যায় মেরিনেট করে রাতভর রেখে দিন।
টিপস
ব্যাটার তৈরি
ভাজার আগে ব্যাটার তৈরি করে নিন। এ জন্য একটি বাটিতে ডিম ফেটিয়ে নিন। আরেকটি বাটিতে ময়দা, কর্নফ্লাওয়ার এবং সামান্য লবণ ও গোলমরিচ মিশিয়ে রাখুন। চাইলে এতে অল্প বিস্কুটের গুঁড়া বা কর্নফ্লেক্স গুঁড়াও যোগ করতে পারেন। আরও ক্রিস্পি চাইলে চালের গুঁড়া যোগ করতে পারেন।

কোটিং
ম্যারিনেট করা মুরগির টুকরোগুলো প্রথমে ময়দার মিশ্রণে গড়িয়ে নিয়ে অতিরিক্ত ময়দা ঝেড়ে ফেলুন। এরপর ফেটানো ডিমে ডুবিয়ে নিন। সবশেষে বিস্কুটের গুঁড়া বা ব্রেডক্রাম্বসের মিশ্রণে ভালো করে কোট করুন।
টিপস
ভেজা মিশ্রণ: আলাদা বাটিতে শুকনা মিশ্রণের অর্ধেক নিয়ে বরফ ঠান্ডা পানি দিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করুন।
ডবল ডিপিং পদ্ধতি: প্রথমে মুরগি শুকনা মিশ্রণে, তারপর ভেজা পেস্টে, আবার শুকনা মিশ্রণে কোট করুন।
ভাজা
যেকোনো ধরনের ভাজার মতো চিকেন ফ্রাই করতে তাপমাত্রার পরিমাপটা বোঝা জরুরি। একটি কড়াইতে ডুবো তেল মাঝারি আঁচে তেল গরম করুন। তেলের তাপমাত্রা ৩৫০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ১৭৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে ভালো হয়।
তেল গরম হলে কোটিং করে রাখা মুরগির মাংসের টুকরোগুলো সাবধানে তেলে ছাড়ুন এবং সোনালি-বাদামি ও মুচমুচে হওয়া পর্যন্ত ভাজুন। এখানে কয়েকটি টিপস জেনে নিন।
পরিবেশন

সকালে ঘুম থেকে উঠে খানিকটা ভালো লাগছিল। পুরোপুরি না। অসুস্থ শরীর নিয়ে কোথাও গিয়ে নাশতা করতে ইচ্ছা করছিল না। এদিন থেকে আমার চেয়ে ভুবনের অবস্থা খারাপ হতে লাগল। আমরা নাশতা করিনি। ভাবলাম যাত্রাপথে খেয়ে নেব...
১৬ নভেম্বর ২০২২
মেটালের গয়নায় অ্যালার্জি থাকায় পরলে কানে ও গলায়, কখনো কখনো হাতেও চুলকানি হয় এবং ফুসকুড়ি ওঠে। তা ছাড়া জরি বা চুমকিওয়ালা শাড়ি, ব্লাউজ পরলেও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় লাল লাল দানা ওঠে।
১ ঘণ্টা আগে
শীতের দিনে ত্বকের সাধারণ সমস্যার একটি হলো ফাটা গোড়ালি। সাধারণত যাঁদের বয়স ত্রিশ বা তার বেশি, তাঁরা ত্বকের অতিরিক্ত মরা কোষ ও ফাটা গোড়ালির সমস্যায় বেশি ভোগেন। ফলে দেখা যায়, এক সপ্তাহ আগেই হয়তো পারলার থেকে পেডিকিউর করে এসেছেন, কিন্তু সপ্তাহ পার হতে না হতেই আবার পায়ের গোড়ালির ত্বক পুরু হয়ে শক্ত হয়ে...
২০ ঘণ্টা আগে
রোজ শ্যাম্পু করার পর বোতলজাত যে কন্ডিশনার আমরা ব্যবহার করি; সেগুলোর ব্যবহার করলেই যে চুল কোমল, সুন্দর ও মসৃণ থাকবে, এ কথা ভাবাটা বোকামি। চুলের সার্বিক সুস্থতার জন্য এই ঋতুতে কিছু ঘরোয়া ডিপ কন্ডিশনিং প্যাক তৈরি করেও চুলে ব্যবহার করতে হবে। এতে পুরো শীতে চুল থাকবে নরম, মসৃণ ও জেল্লাদার। দেখে নিন...
১ দিন আগেফিচার ডেস্ক, ঢাকা

শীতের দিনে ত্বকের সাধারণ সমস্যার একটি হলো ফাটা গোড়ালি। সাধারণত যাঁদের বয়স ত্রিশ বা তার বেশি, তাঁরা ত্বকের অতিরিক্ত মরা কোষ ও ফাটা গোড়ালির সমস্যায় বেশি ভোগেন। ফলে দেখা যায়, এক সপ্তাহ আগেই হয়তো পারলার থেকে পেডিকিউর করে এসেছেন, কিন্তু সপ্তাহ পার হতে না হতেই আবার পায়ের গোড়ালির ত্বক পুরু হয়ে শক্ত হয়ে গেছে, খানিকটা ফেটেও যেতে পারে। তাই সাবধান হতে হবে আগে থেকে। এই শীতে ফাটা গোড়ালির সমস্যা এড়াতে হলে নিয়মিত যত্নের বাইরে কোনো দাওয়াই নেই। ফাটা গোড়ালি সারানোর জন্য বিশেষ লোশন বা ক্রিমের খোঁজ না করে ভরসা রাখতে পারেন কিছু ঘরোয়া টোটকায়। এসব উপাদান নিয়মিত ব্যবহারে সুফল মিলবে।
ময়শ্চারাইজেশন আসল চিকিৎসা

ত্বক ও গোড়ালি ফাটার মূল কারণ শুষ্কতা। শীতের হাওয়া লেগে আমাদের ত্বক আর্দ্রতা হারায় দ্রুত। তাই ত্বকের হাইড্রেশনে জোর দিলে ফাটা গোড়ালি থেকে মুক্তি মিলবে সহজে। এর জন্য গোড়ালি শুষ্ক হয়ে এলেই ময়শ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। সম্ভব হলে কয়েক লেয়ারে ময়শ্চারাইজার মেখে তারপর সুতির মোজা পরুন। এই যেমন প্রথমে গ্লিসারিন, তারপর অলিভ অয়েল এবং সবশেষে পেট্রোলিয়াম জেলি মেখে ১০ মিনিট অপেক্ষার পর সুতি মোজা পরুন। তাতে পায়ের ত্বক কোমল থাকবে আর গোড়ালি ফাটাও রোধ করা যাবে। এই কাজে স্যালিসাইলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ হিল বামে ভরসা রাখতে পারেন।
ফুট স্ক্রাব জরুরি
ফাটা গোড়ালির ত্বক অপেক্ষাকৃত বেশি শুষ্ক ও পুরু হয়। ফলে হাঁটার সময় বেশি চাপ পড়লে গোড়ালি আরও ফাটে। তাই নিয়মিত ফুট স্ক্রাব করতে হবে। তাহলে গোড়ালি ফাটার সমস্যা ধীরে ধীরে কমবে। ফুট স্ক্রাব করতে এক কাপ লবণ, এক কাপ চিনি, দুই টেবিল চামচ মধু, সামান্য নারকেল তেল একসঙ্গে মিশিয়ে পায়ে স্ক্রাব করুন। ম্যাসাজ শেষে ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করে সাধারণ তাপমাত্রার পানিতে পা ধুয়ে নিতে হবে। এ ছাড়া আধা কাপ লবণ, এক টেবিল চামচ অলিভ অয়েল এবং ৪ থেকে ৫ ফোঁটা পিপারমিন্ট অয়েল একটি কাচের পাত্রে একসঙ্গে মিশিয়ে স্ক্রাব তৈরি করে রেখে দিন। এই স্ক্রাব সপ্তাহে দুদিন পায়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ম্যাসাজ করে ১০ মিনিট রেখে দিতে হবে। এরপর কুসুম গরম পানিতে পা ধুয়ে ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।
২০ মিনিটের পুটবাথ
প্রতিদিন বাইরে থেকে ফিরে সরাসরি গোসলে না ঢুকে একটি বাটিতে হালকা গরম পানি নিয়ে তাতে হালকা কোনো বডি ওয়াশ ও অল্প পরিমাণ লবণ মিশিয়ে নিন। এই পানিতে কয়েক ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েলও যোগ করতে পারেন। এবার এতে ২০ মিনিট পা ডুবিয়ে রাখুন। এতে গোড়ালির ত্বক কিছুটা নরম হয়ে আসবে। তারপর ঝামা, লুফা বা ফুট স্ক্রাবার দিয়ে গোড়ালি ঘষে নিন। তারপর গোসল সেরে পায়ে ভারী ময়শ্চারাইজার লাগান। সবশেষে পায়ে মোজা পরতে ভুলবেন না যেন!

ক্ষতি সারাবে টি ট্রি অয়েল
অ্য়ান্টিমাইক্রোবিয়াল টি ট্রি অয়েল গোড়ালি ফাটা সারাতে খুব কার্যকর। তবে সরাসরি টি ট্রি অয়েল ত্বকে ব্যবহার করবেন না। এর সঙ্গে কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল মিশিয়ে তারপর ত্বকে ব্যবহার করুন। এ ক্ষেত্রে পরিমাণটা বোঝা জরুরি। একটি কাপের ৪ ভাগের ১ ভাগ অলিভ অয়েল নিন। তাতে ৬ থেকে ৭ ফোঁটা টি ট্রি অয়েল দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। এবার হালকা গরম পানিতে পা ভিজিয়ে রাখার পর এই মিশ্রণ দিয়ে ভালো করে ফুট ম্যাসাজ করে ফেলুন। এই ঘরোয়া টোটকাতে ফাটা গোড়ালি ধীরে ধীরে ভালো হয়ে উঠবে।
প্রাকৃতিক সমাধান হতে পারে মধু
অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল গুণসমৃদ্ধ মধু যেকোনো ত্বকের ক্ষত ও ফেটে যাওয়া অংশ সারিয়ে তুলতে সাহায্য় করে; পাশাপাশি ত্বক আর্দ্র ও মসৃণ রাখতেও সহায়ক। তাই ফাটা গোড়ালি সারাতে বাড়তি কিছু করতে না চাইলে মধুর ওপর ভরসা রাখতে পারেন। সিনেমা দেখতে বসার আগে পায়ের গোড়ালিতে মধু মেখে তারপর টিভির সামনে পা এলিয়ে বসুন। ২ থেকে ৩ ঘণ্টায় খুব ভালো কাজ করবে এই মধু। নিয়মিত করলে ফাটা গোড়ালি সেরে উঠবে খুব দ্রুত।
সূত্র: বি বিউটিফুল, নেটমেডস ও অন্যান্য

শীতের দিনে ত্বকের সাধারণ সমস্যার একটি হলো ফাটা গোড়ালি। সাধারণত যাঁদের বয়স ত্রিশ বা তার বেশি, তাঁরা ত্বকের অতিরিক্ত মরা কোষ ও ফাটা গোড়ালির সমস্যায় বেশি ভোগেন। ফলে দেখা যায়, এক সপ্তাহ আগেই হয়তো পারলার থেকে পেডিকিউর করে এসেছেন, কিন্তু সপ্তাহ পার হতে না হতেই আবার পায়ের গোড়ালির ত্বক পুরু হয়ে শক্ত হয়ে গেছে, খানিকটা ফেটেও যেতে পারে। তাই সাবধান হতে হবে আগে থেকে। এই শীতে ফাটা গোড়ালির সমস্যা এড়াতে হলে নিয়মিত যত্নের বাইরে কোনো দাওয়াই নেই। ফাটা গোড়ালি সারানোর জন্য বিশেষ লোশন বা ক্রিমের খোঁজ না করে ভরসা রাখতে পারেন কিছু ঘরোয়া টোটকায়। এসব উপাদান নিয়মিত ব্যবহারে সুফল মিলবে।
ময়শ্চারাইজেশন আসল চিকিৎসা

ত্বক ও গোড়ালি ফাটার মূল কারণ শুষ্কতা। শীতের হাওয়া লেগে আমাদের ত্বক আর্দ্রতা হারায় দ্রুত। তাই ত্বকের হাইড্রেশনে জোর দিলে ফাটা গোড়ালি থেকে মুক্তি মিলবে সহজে। এর জন্য গোড়ালি শুষ্ক হয়ে এলেই ময়শ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। সম্ভব হলে কয়েক লেয়ারে ময়শ্চারাইজার মেখে তারপর সুতির মোজা পরুন। এই যেমন প্রথমে গ্লিসারিন, তারপর অলিভ অয়েল এবং সবশেষে পেট্রোলিয়াম জেলি মেখে ১০ মিনিট অপেক্ষার পর সুতি মোজা পরুন। তাতে পায়ের ত্বক কোমল থাকবে আর গোড়ালি ফাটাও রোধ করা যাবে। এই কাজে স্যালিসাইলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ হিল বামে ভরসা রাখতে পারেন।
ফুট স্ক্রাব জরুরি
ফাটা গোড়ালির ত্বক অপেক্ষাকৃত বেশি শুষ্ক ও পুরু হয়। ফলে হাঁটার সময় বেশি চাপ পড়লে গোড়ালি আরও ফাটে। তাই নিয়মিত ফুট স্ক্রাব করতে হবে। তাহলে গোড়ালি ফাটার সমস্যা ধীরে ধীরে কমবে। ফুট স্ক্রাব করতে এক কাপ লবণ, এক কাপ চিনি, দুই টেবিল চামচ মধু, সামান্য নারকেল তেল একসঙ্গে মিশিয়ে পায়ে স্ক্রাব করুন। ম্যাসাজ শেষে ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করে সাধারণ তাপমাত্রার পানিতে পা ধুয়ে নিতে হবে। এ ছাড়া আধা কাপ লবণ, এক টেবিল চামচ অলিভ অয়েল এবং ৪ থেকে ৫ ফোঁটা পিপারমিন্ট অয়েল একটি কাচের পাত্রে একসঙ্গে মিশিয়ে স্ক্রাব তৈরি করে রেখে দিন। এই স্ক্রাব সপ্তাহে দুদিন পায়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ম্যাসাজ করে ১০ মিনিট রেখে দিতে হবে। এরপর কুসুম গরম পানিতে পা ধুয়ে ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।
২০ মিনিটের পুটবাথ
প্রতিদিন বাইরে থেকে ফিরে সরাসরি গোসলে না ঢুকে একটি বাটিতে হালকা গরম পানি নিয়ে তাতে হালকা কোনো বডি ওয়াশ ও অল্প পরিমাণ লবণ মিশিয়ে নিন। এই পানিতে কয়েক ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েলও যোগ করতে পারেন। এবার এতে ২০ মিনিট পা ডুবিয়ে রাখুন। এতে গোড়ালির ত্বক কিছুটা নরম হয়ে আসবে। তারপর ঝামা, লুফা বা ফুট স্ক্রাবার দিয়ে গোড়ালি ঘষে নিন। তারপর গোসল সেরে পায়ে ভারী ময়শ্চারাইজার লাগান। সবশেষে পায়ে মোজা পরতে ভুলবেন না যেন!

ক্ষতি সারাবে টি ট্রি অয়েল
অ্য়ান্টিমাইক্রোবিয়াল টি ট্রি অয়েল গোড়ালি ফাটা সারাতে খুব কার্যকর। তবে সরাসরি টি ট্রি অয়েল ত্বকে ব্যবহার করবেন না। এর সঙ্গে কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল মিশিয়ে তারপর ত্বকে ব্যবহার করুন। এ ক্ষেত্রে পরিমাণটা বোঝা জরুরি। একটি কাপের ৪ ভাগের ১ ভাগ অলিভ অয়েল নিন। তাতে ৬ থেকে ৭ ফোঁটা টি ট্রি অয়েল দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। এবার হালকা গরম পানিতে পা ভিজিয়ে রাখার পর এই মিশ্রণ দিয়ে ভালো করে ফুট ম্যাসাজ করে ফেলুন। এই ঘরোয়া টোটকাতে ফাটা গোড়ালি ধীরে ধীরে ভালো হয়ে উঠবে।
প্রাকৃতিক সমাধান হতে পারে মধু
অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল গুণসমৃদ্ধ মধু যেকোনো ত্বকের ক্ষত ও ফেটে যাওয়া অংশ সারিয়ে তুলতে সাহায্য় করে; পাশাপাশি ত্বক আর্দ্র ও মসৃণ রাখতেও সহায়ক। তাই ফাটা গোড়ালি সারাতে বাড়তি কিছু করতে না চাইলে মধুর ওপর ভরসা রাখতে পারেন। সিনেমা দেখতে বসার আগে পায়ের গোড়ালিতে মধু মেখে তারপর টিভির সামনে পা এলিয়ে বসুন। ২ থেকে ৩ ঘণ্টায় খুব ভালো কাজ করবে এই মধু। নিয়মিত করলে ফাটা গোড়ালি সেরে উঠবে খুব দ্রুত।
সূত্র: বি বিউটিফুল, নেটমেডস ও অন্যান্য

সকালে ঘুম থেকে উঠে খানিকটা ভালো লাগছিল। পুরোপুরি না। অসুস্থ শরীর নিয়ে কোথাও গিয়ে নাশতা করতে ইচ্ছা করছিল না। এদিন থেকে আমার চেয়ে ভুবনের অবস্থা খারাপ হতে লাগল। আমরা নাশতা করিনি। ভাবলাম যাত্রাপথে খেয়ে নেব...
১৬ নভেম্বর ২০২২
মেটালের গয়নায় অ্যালার্জি থাকায় পরলে কানে ও গলায়, কখনো কখনো হাতেও চুলকানি হয় এবং ফুসকুড়ি ওঠে। তা ছাড়া জরি বা চুমকিওয়ালা শাড়ি, ব্লাউজ পরলেও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় লাল লাল দানা ওঠে।
১ ঘণ্টা আগে
চিকেন ফ্রাই এখন আমাদের দেশে বেশ জনপ্রিয় খাবার। শহরগুলোতে গলির মোড়ে মোড়ে চিকেন ফ্রাইয়ের দোকান হয়ে গেছে। অর্থাৎ হাত বাড়ালেই এখন সুস্বাদু আর ক্রিস্পি মুরগি ভাজা পাওয়া যায়। তবে কিছু কৌশল জানা থাকলে বাড়িতেই রেস্তোরাঁর মতো চিকেন ফ্রাই করে নিতে পারেন। মনে রাখতে হবে, রেস্তোরাঁর মতো ক্রিস্পি চিকেন ফ্রাই...
১৩ ঘণ্টা আগে
রোজ শ্যাম্পু করার পর বোতলজাত যে কন্ডিশনার আমরা ব্যবহার করি; সেগুলোর ব্যবহার করলেই যে চুল কোমল, সুন্দর ও মসৃণ থাকবে, এ কথা ভাবাটা বোকামি। চুলের সার্বিক সুস্থতার জন্য এই ঋতুতে কিছু ঘরোয়া ডিপ কন্ডিশনিং প্যাক তৈরি করেও চুলে ব্যবহার করতে হবে। এতে পুরো শীতে চুল থাকবে নরম, মসৃণ ও জেল্লাদার। দেখে নিন...
১ দিন আগেফিচার ডেস্ক, ঢাকা

শীতকাল আমাদের জন্য উদ্যাপনের ঋতু হলেও চুলের জন্য আতঙ্কের। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চুলে নির্জীব ভাব আসার পাশাপাশি আগা ফাটার সমস্যাও বাড়তে থাকে। তাই এই ঋতুতে চুলের ডিপ কন্ডিশনিং রীতিনীতি মেনে চলা অপরিহার্য। তবে রোজ শ্যাম্পু করার পর বোতলজাত যে কন্ডিশনার আমরা ব্যবহার করি; সেগুলোর ব্যবহার করলেই যে চুল কোমল, সুন্দর ও মসৃণ থাকবে, এ কথা ভাবাটা বোকামি। চুলের সার্বিক সুস্থতার জন্য এই ঋতুতে কিছু ঘরোয়া ডিপ কন্ডিশনিং প্যাক তৈরি করেও চুলে ব্যবহার করতে হবে। এতে পুরো শীতে চুল থাকবে নরম, মসৃণ ও জেল্লাদার। দেখে নিন, কী কী ঘরোয়ার উপকরণ দিয়ে চুলের জন্য ডিপ কন্ডিশনিং প্যাক তৈরি করবেন।
পাকা কলার প্যাক
কলা খুব ভালো ময়শ্চারাইজিং উপাদান। এটি শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যাওয়া চুল নিরাময়ে সহায়ক। কলা ভিটামিন বি৬, পটাশিয়াম, প্রোটিন এবং অন্যান্য পুষ্টিতে পরিপূর্ণ। ফলে এটি মাথার ত্বক ও চুলে গভীরভাবে পুষ্টি জোগায়। কেবল একটি পাকা কলা বেটে তার সঙ্গে মধু, ডিম ও সামান্য দুধ মিশিয়ে নিন। এরপর এই পেস্ট মাথার ত্বক এবং পুরো চুলে ভালোভাবে লাগিয়ে ৩০ মিনিটের জন্য রেখে দিন। তারপর ভালো কোনো শ্যাম্পু দিয়ে চুল সুন্দর করে ধুয়ে ফেলতে পারেন। এই প্যাক ব্যবহারে চুল খুব দ্রুত ঝলমলে হয়।
দইয়ের জাদুকরি প্যাক

প্রচুর প্রোটিন ও ল্যাকটিক অ্যাসিডে ভরা দই আমাদের চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি মাথার ত্বক পরিষ্কার করে, চুল মসৃণ করে মাথার ত্বকে চুলকানি দূর করতেও সহায়ক। টক দই, কলা, মধু ও জলপাই তেল দিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করুন। এই প্যাক মাথার ত্বকে লাগিয়ে ৩০ মিনিটের জন্য রেখে দিন। সবশেষে ভালো মানের শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। চুলের স্বাস্থ্য ফেরাতে এটিকে বলা যেতে পারে জাদুকরি প্যাক। তবে যাঁদের ঠান্ডা লাগে, তাঁরা ৩০ মিনিটের পরিবর্তে ১০ মিনিট রেখে চুল ধুয়ে নিতে পারেন।
চুলের তরতাজা ভাব ফেরাবে অ্যালোভেরা
অ্যালোভেরা মাথার ত্বকের পিএইচ ভারসাম্য পুনরুদ্ধার এবং চুল বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করে। একটি পাত্রে ৪ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল লেবুর রসের সঙ্গে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ আপনার চুলে লাগিয়ে ৫ থেকে ১০ মিনিটের জন্য রেখে দিন। এরপর শ্যাম্পু করে চুলে রেগুলার কন্ডিশনার মাখুন। নিজেই টের পাবেন চুলের তরতাজা ভাব। সপ্তাহে দুবার এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করুন।

তৈলাক্ত চুলের সেরা কন্ডিশনার আপেল সিডার ভিনেগার
আপেল সিডার ভিনেগার অ্যাসিটিক অ্যাসিডের একটি ভালো উৎস। এটি তৈলাক্ত মাথার ত্বক, খুশকি এবং কুঁকড়ে যাওয়া চুলের জন্য চমৎকার সমাধান। এটি মাথার ত্বকের পিএইচ ভারসাম্য পুনরুদ্ধার এবং ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এর জন্য চুল ভালোভাবে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিন। এরপর ২ টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার এক মগ পানির সঙ্গে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ মাথার ত্বক ও চুলে ঢেলে দিন। ৫ মিনিট ধরে আপনার মাথার ত্বক ম্যাসাজ করুন। হালকা করে চুল আবার শ্যাম্পু করে এরপর কন্ডিশনার মাখুন। সবশেষে সুন্দর করে চুল ধুয়ে নিন।
সহজ সমাধান নারকেল তেল
আমরা সবাই নারকেল তেলের বিস্ময়কর গুণাবলির কথা শুনে বড় হয়েছি। এই তেল যে চুলের যত্নে জাদুকরি উপাদান—এ কথা একেবারে মিথ্য়া নয়। এটি চুলের গোড়া মজবুত করে চুল করে তোলে নরম ও মসৃণ। নারকেল তেল দিয়ে প্রাকৃতিক কন্ডিশনার তৈরি করতে, ১ টেবিল চামচ মধু এবং ১ টেবিল চামচ লেবুর রসের সঙ্গে প্রয়োজনীয় নারকেল তেল মিশিয়ে নিন। শ্যাম্পু করার সময় এটি লাগান। ২০ মিনিট রেখে দিন এবং তারপর হালকা গরম পানি ও শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

শীতকাল আমাদের জন্য উদ্যাপনের ঋতু হলেও চুলের জন্য আতঙ্কের। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চুলে নির্জীব ভাব আসার পাশাপাশি আগা ফাটার সমস্যাও বাড়তে থাকে। তাই এই ঋতুতে চুলের ডিপ কন্ডিশনিং রীতিনীতি মেনে চলা অপরিহার্য। তবে রোজ শ্যাম্পু করার পর বোতলজাত যে কন্ডিশনার আমরা ব্যবহার করি; সেগুলোর ব্যবহার করলেই যে চুল কোমল, সুন্দর ও মসৃণ থাকবে, এ কথা ভাবাটা বোকামি। চুলের সার্বিক সুস্থতার জন্য এই ঋতুতে কিছু ঘরোয়া ডিপ কন্ডিশনিং প্যাক তৈরি করেও চুলে ব্যবহার করতে হবে। এতে পুরো শীতে চুল থাকবে নরম, মসৃণ ও জেল্লাদার। দেখে নিন, কী কী ঘরোয়ার উপকরণ দিয়ে চুলের জন্য ডিপ কন্ডিশনিং প্যাক তৈরি করবেন।
পাকা কলার প্যাক
কলা খুব ভালো ময়শ্চারাইজিং উপাদান। এটি শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যাওয়া চুল নিরাময়ে সহায়ক। কলা ভিটামিন বি৬, পটাশিয়াম, প্রোটিন এবং অন্যান্য পুষ্টিতে পরিপূর্ণ। ফলে এটি মাথার ত্বক ও চুলে গভীরভাবে পুষ্টি জোগায়। কেবল একটি পাকা কলা বেটে তার সঙ্গে মধু, ডিম ও সামান্য দুধ মিশিয়ে নিন। এরপর এই পেস্ট মাথার ত্বক এবং পুরো চুলে ভালোভাবে লাগিয়ে ৩০ মিনিটের জন্য রেখে দিন। তারপর ভালো কোনো শ্যাম্পু দিয়ে চুল সুন্দর করে ধুয়ে ফেলতে পারেন। এই প্যাক ব্যবহারে চুল খুব দ্রুত ঝলমলে হয়।
দইয়ের জাদুকরি প্যাক

প্রচুর প্রোটিন ও ল্যাকটিক অ্যাসিডে ভরা দই আমাদের চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি মাথার ত্বক পরিষ্কার করে, চুল মসৃণ করে মাথার ত্বকে চুলকানি দূর করতেও সহায়ক। টক দই, কলা, মধু ও জলপাই তেল দিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করুন। এই প্যাক মাথার ত্বকে লাগিয়ে ৩০ মিনিটের জন্য রেখে দিন। সবশেষে ভালো মানের শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। চুলের স্বাস্থ্য ফেরাতে এটিকে বলা যেতে পারে জাদুকরি প্যাক। তবে যাঁদের ঠান্ডা লাগে, তাঁরা ৩০ মিনিটের পরিবর্তে ১০ মিনিট রেখে চুল ধুয়ে নিতে পারেন।
চুলের তরতাজা ভাব ফেরাবে অ্যালোভেরা
অ্যালোভেরা মাথার ত্বকের পিএইচ ভারসাম্য পুনরুদ্ধার এবং চুল বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করে। একটি পাত্রে ৪ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল লেবুর রসের সঙ্গে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ আপনার চুলে লাগিয়ে ৫ থেকে ১০ মিনিটের জন্য রেখে দিন। এরপর শ্যাম্পু করে চুলে রেগুলার কন্ডিশনার মাখুন। নিজেই টের পাবেন চুলের তরতাজা ভাব। সপ্তাহে দুবার এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করুন।

তৈলাক্ত চুলের সেরা কন্ডিশনার আপেল সিডার ভিনেগার
আপেল সিডার ভিনেগার অ্যাসিটিক অ্যাসিডের একটি ভালো উৎস। এটি তৈলাক্ত মাথার ত্বক, খুশকি এবং কুঁকড়ে যাওয়া চুলের জন্য চমৎকার সমাধান। এটি মাথার ত্বকের পিএইচ ভারসাম্য পুনরুদ্ধার এবং ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এর জন্য চুল ভালোভাবে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিন। এরপর ২ টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার এক মগ পানির সঙ্গে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ মাথার ত্বক ও চুলে ঢেলে দিন। ৫ মিনিট ধরে আপনার মাথার ত্বক ম্যাসাজ করুন। হালকা করে চুল আবার শ্যাম্পু করে এরপর কন্ডিশনার মাখুন। সবশেষে সুন্দর করে চুল ধুয়ে নিন।
সহজ সমাধান নারকেল তেল
আমরা সবাই নারকেল তেলের বিস্ময়কর গুণাবলির কথা শুনে বড় হয়েছি। এই তেল যে চুলের যত্নে জাদুকরি উপাদান—এ কথা একেবারে মিথ্য়া নয়। এটি চুলের গোড়া মজবুত করে চুল করে তোলে নরম ও মসৃণ। নারকেল তেল দিয়ে প্রাকৃতিক কন্ডিশনার তৈরি করতে, ১ টেবিল চামচ মধু এবং ১ টেবিল চামচ লেবুর রসের সঙ্গে প্রয়োজনীয় নারকেল তেল মিশিয়ে নিন। শ্যাম্পু করার সময় এটি লাগান। ২০ মিনিট রেখে দিন এবং তারপর হালকা গরম পানি ও শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

সকালে ঘুম থেকে উঠে খানিকটা ভালো লাগছিল। পুরোপুরি না। অসুস্থ শরীর নিয়ে কোথাও গিয়ে নাশতা করতে ইচ্ছা করছিল না। এদিন থেকে আমার চেয়ে ভুবনের অবস্থা খারাপ হতে লাগল। আমরা নাশতা করিনি। ভাবলাম যাত্রাপথে খেয়ে নেব...
১৬ নভেম্বর ২০২২
মেটালের গয়নায় অ্যালার্জি থাকায় পরলে কানে ও গলায়, কখনো কখনো হাতেও চুলকানি হয় এবং ফুসকুড়ি ওঠে। তা ছাড়া জরি বা চুমকিওয়ালা শাড়ি, ব্লাউজ পরলেও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় লাল লাল দানা ওঠে।
১ ঘণ্টা আগে
চিকেন ফ্রাই এখন আমাদের দেশে বেশ জনপ্রিয় খাবার। শহরগুলোতে গলির মোড়ে মোড়ে চিকেন ফ্রাইয়ের দোকান হয়ে গেছে। অর্থাৎ হাত বাড়ালেই এখন সুস্বাদু আর ক্রিস্পি মুরগি ভাজা পাওয়া যায়। তবে কিছু কৌশল জানা থাকলে বাড়িতেই রেস্তোরাঁর মতো চিকেন ফ্রাই করে নিতে পারেন। মনে রাখতে হবে, রেস্তোরাঁর মতো ক্রিস্পি চিকেন ফ্রাই...
১৩ ঘণ্টা আগে
শীতের দিনে ত্বকের সাধারণ সমস্যার একটি হলো ফাটা গোড়ালি। সাধারণত যাঁদের বয়স ত্রিশ বা তার বেশি, তাঁরা ত্বকের অতিরিক্ত মরা কোষ ও ফাটা গোড়ালির সমস্যায় বেশি ভোগেন। ফলে দেখা যায়, এক সপ্তাহ আগেই হয়তো পারলার থেকে পেডিকিউর করে এসেছেন, কিন্তু সপ্তাহ পার হতে না হতেই আবার পায়ের গোড়ালির ত্বক পুরু হয়ে শক্ত হয়ে...
২০ ঘণ্টা আগে