সৈয়দা সাদিয়া শাহরীন

উত্তরের পথে আমাদের অভিযান
‘জলদি ওঠো। দেরি করা যাবে না। কেউ যেন বলতে না পারে আমাদের জন্য দেরি হয়েছে।’ অ্যালার্ম বাজতেই ভুবন ওর চিরচেনা সংলাপ দিচ্ছিল! ‘চিরচেনা’ বললাম এ কারণে, সে কারও সঙ্গে কোথাও যাওয়ার আগে ঠিক এই কথাগুলোই বলে। ওর কথা হচ্ছে, প্রয়োজন হলে সময়ের আগে প্রস্তুত থাকতে হবে বা পৌঁছাতে হবে। কিন্তু দেরি হওয়া যাবে না। মাঝে মাঝে তাই ওকে ‘আর্মি পারসন’ বলি! যাই হোক, সেখানকার সময় ৬টায় উঠে গেলাম। আধা ঘণ্টার মধ্যে দুজনে তৈরি হয়ে রুম থেকে বেরিয়েছি। হঠাৎ বারান্দার একপাশ দিয়ে বাইরে চোখ যেতেই দেখি কী সুন্দর দৃশ্য! রাতে পাহাড়ের গায়ে যে তারা দেখেছিলাম জ্বলজ্বল করছে, সেগুলো দিনের আলোয় স্পষ্ট ঘরবাড়ি। ছবিতে দেখলে হয়তো মনে হবে বস্তি। সামনে থেকে না দেখলে এর সৌন্দর্য অনুভব করা যাবে না। ঝটপট সেই দৃশ্যের ছবি তুলে নিল ভুবন।
হোটেল থেকে বের হলাম নাশতা খাব বলে। রাতে তো নিয়নের আলোয় খুব একটা বুঝিনি, সকালে বের হয়ে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। মল রোডটা যে কত পরিষ্কার, স্বচ্ছ! রাস্তার ওপরেই যেন নির্দ্বিধায় গড়াগড়ি করা যাবে। রাস্তার একপাশ ‘ওয়ান ওয়ে’, অন্য পাশ দিয়ে কোনো যানবাহন প্রবেশ করানো যায় না। এপাশ দিয়ে সবাই আরাম করে হাঁটাহাঁটি করে। আর একধারে কিছু দূর পর পর বেঞ্চি আছে। হাঁটতে হাঁটতে একটু জিরিয়ে নেওয়া যায়। ওই পথ ধরে হেঁটে একটা রেস্তোরাঁয় ঢুকলাম। খেলাম সবজি আর লুচি। সবজি বলতে গাঢ় ঝোলের মধ্যে আলু! আলুর দম বলা চলে। কিন্তু তারা এটাকে সবজিই নাম দিয়েছে। ভুবন অবশ্য লুচি না খেয়ে রুটি খেয়েছিল। মিষ্টির চেহারাগুলো দেখে এত লোভ লাগছিল! কিন্তু যেই খেতে গিয়েছি, আর ভালো লাগল না। নাশতা পর্ব শেষ করে আবার ছুটলাম হোটেলের দিকে। হাঁটার মাঝে থেমে থেমে কিছু ছবিও তুলে নিলাম। মোড়ে একটা বিশাল লাল পান্ডার ভাস্কর্য আছে। সেটার সঙ্গে ছবি তুলতে ভুললাম না। সময় পেলে সত্যিকারের লাল পান্ডা দেখতে যেতাম গ্যাংটকের চিড়িয়াখানায়, কিন্তু সময় হয়নি।
আমরা ঠিক ৭টার সময় হোটেলের নিচে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম। সবাই প্রস্তুত। কিন্তু গাড়ি আসেনি। ৮টার পর গাড়ি পেয়ে রওনা হলাম বজরা ট্যাক্সিস্ট্যান্ডের উদ্দেশে। মোটামুটি পনেরো-বিশ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে গেলাম আঁকাবাঁকা পথ দিয়ে। সেখানে হলো মহাবিলম্ব! কতক্ষণ যে দাঁড়িয়ে, পায়চারি করে সময় পার করেছি, আল্লাহ জানেন। কথা ছিল আগের দিন রাতেই অমরদা সব গাড়ি ঠিক করে রাখবেন, কিন্তু পারেননি।
প্রায় দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর আমরা গাড়ি পেলাম। একটা বড় জিপ পেয়ে আমরা নয়জন চড়ে বসলাম সেটাতে। আমাদের দুজনকে সবাই জিজ্ঞেস করছিল কোথায় বসতে চাই। আমি বললাম, ‘আপনাদের সুবিধামতো আমাদের একটু জায়গা দিলেই হবে।’ আকাশ ভাই দুষ্টুমি করে বললেন, ‘তাহলে ছাদে বসে যান। আমরা আরাম করে যাই।’ আমি বললাম, ‘কোনো সমস্যা নাই। সেটা তো ভীষণ মজার ব্যাপার হবে!’ সবাই হো হো করে হেসে দিয়ে দুজনকে চালকের সঙ্গে সামনের সিটে বসতে দিলেন। সামনে দুইটা সিটই বলা চলে। চালকেরটা ছাড়া। আরামসে আমি আর ভুবন এঁটে যাই। সবাই গাড়িতে উঠে অপেক্ষা করছি। বাকিদের বসা হলে একসঙ্গে রওনা দেব। বড় দলটা আরও দুইটা জিপে ভাগ হয়ে উঠল। তবে ঝামেলা লেগেছিল ওই দলের দুজন ‘জেঠুমশাই’কে নিয়ে। তাঁরা দুজনে একই জায়গায় বসতে চান। অর্থাৎ, একই সিটে। এ নিয়ে তুমুল লঙ্কাকাণ্ড! গাল ফুলিয়ে, চোখ রাঙিয়ে যাঁর যাঁর পরিচয় দিচ্ছিলেন। মাঝখান দিয়ে বেচারা অমরদা হলেন তুলাধুনা। আমরা জিপের ভেতরে বসে থেকে দর্শকের মতো ওই নাটক-সিনেমা দেখছিলাম। পেছন থেকে কে যেন বলে উঠল, ‘আরে ওনারা এত বড় মানুষ হয়ে বাচ্চাদের মতো করছেন, অথচ আমাদের মিস্টার অ্যান্ড মিসেস এজাজের গাড়ির ছাদে বা পেছনে ঝুলে যেতেও আপত্তি নাই।’ সত্যিই যদি এমন পরিস্থিতি হতো, তাহলেও আমাদের কোনো আপত্তি ছিল না। গাড়ির ছাদে বা পেছনে ঝুলে ঝুলেই যেতাম। যাই হোক, সিনেমাটা আধা ঘণ্টার মতো চলল। অবশেষে অমরদা গালি হজম করে হাসিমুখে সবাইকে নিয়ে রওনা দিলেন। প্রায় ১২টা বেজে গিয়েছিল তখন।
আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ। ধীরে ধীরে ওপরের দিকে উঠছি, বুঝতে পারছিলাম। আর সে কী যে পাগল করা অপরূপ সৌন্দর্য! এই পথে যেতে যেতে ‘মাশাআল্লাহ’, ‘সুবহানআল্লাহ’, ‘ওয়াও’, ‘অ্যামেজিং’ শব্দগুলো আপনা-আপনি মুখ দিয়ে বের হয়ে যায়। সবাই মিলে এক এক করে গান ধরলাম। আকাশ ভাইয়ের গলা ভালো। তিনি অনেক গান গাইলেন। পুরোটা পথ এই গানের আসর সঙ্গী ছিল। ভুবনের গান শুনে তো সবাই মুগ্ধ। আকাশ ভাই আমাকে বলছিলেন, ‘বাহ, আপনার স্বামীর গানের গলা তো বেশ!’ মুচকি হেসে বললাম, ‘এমনি এমনি কি আর প্রেমে পড়েছি!’ এ কথা শুনে সবাই হেসে দিলেন। এরপর এল আমাদের প্রেমকাহিনির গল্পের অনুরোধ। গানের ফাঁকে ফাঁকে সেটাও হয়ে গেল। আমার গানের গলা ভালো না। ছেড়ে গাইতে পারি না। অনেকটা নাকি সুরে গাই। তবু সবার জোর অনুরোধে গাইতে হলো। একটার বেশি গাইলাম না। কারণ আমি ওই একটা গানই একটু ছেড়ে দিয়ে গাইতে পারি, ‘তোমার ঘরে বাস করে কারা...’।
আমাদের সামনে বসার খুব ভালো একটা সুফল পাওয়া গেছে। যতটা স্পষ্ট আমরা দুজন দেখতে পাচ্ছিলাম বাইরের দৃশ্য, পেছনের লোকজন হয়তো সেটার অর্ধেক দেখেছে। তবু যা দেখেছে, তাতে চোখ ছানাবড়া না হয়ে পারেই না। পথে থেমে থেমে পাহাড়ি ঝরনা দেখাচ্ছিলেন আমাদের চালক। তাঁর নাম রবিন। নামটা শুনে তাঁকে রবিন হুড ডাকতে ইচ্ছা হলো। রবিন হুড থেকে মনে পড়ল সালমান খানের ‘চুলবুল পান্ডে ওরফে রবিন হুড পান্ডে’ চরিত্রের কথা। আমি তাই তাঁকে ‘পান্ডেজি’ বলে ডাকা শুরু করলাম। পান্ডেজি নরম মানুষ। আস্তে-ধীরে কথা বলেন। নেপালি। মানে, সিকিমের বাসিন্দা আরকি। তিনি সবগুলো ঝরনার নাম ও বর্ণনা দিলেন। সব ঝরনার নামের সাইনবোর্ড নেই আবার। সেখানে নাম লেখা থাকে সাধারণত। আবার কোনো কোনো ঝরনার নাম নেই। সেগুলো ছোটখাটো। অনেক ঝরনার নাম পান্ডেজি নিজেও জানেন না। কারণ সেগুলো নতুন। সেভেন সিস্টার্স, নাগা, ভিম নালাসহ আরও ছোট-বড় কিছু ঝরনা দেখলাম। ভিম নালা ঝরনাটার আরেকটা নাম আছে। ‘অমিতাভ বচ্চন ফলস’। এমন নাম কেন, জিজ্ঞেস করতেই পান্ডেজি বললেন, ‘উ বহুত লম্বা হ্যায়। উ অ্যাক্টর হ্যায় না, অমিতাভ বচ্চন, উসকি তারাহ।’ লম্বায় এটা ২৭৫ ফুট। এর আরেক নাম ভিমা ফলস। স্থানীয় ভাষায় ভিমা বা ভিম নালা মানে ‘রেড স্নেক’ বা লাল সাপ। তাই এর আরেক নাম ‘রেড স্নেক’। বিগত কয়েক বছর ধরে পর্যটকেরা এই ঝরনাকে আবার ‘লাচুং নর্থ সিকিম ফলস’ নামেও ডাকছে। ঝরনার পাশাপাশি মেঘের কথা না বললেই নয়। পাহাড়ের চূড়ায় তুলার মতো লেগে থাকা মেঘ দেখা যায় দূর থেকে। আর পাহাড়ের নিচে স্বচ্ছ সবুজ তিস্তার পানি বয়ে চলে। ওপরের দিকে উঠতে উঠতে মেঘের ভেতর দিয়ে গিয়েছি আমরা। গাড়ি থেকে নেমেও ছুঁয়ে দেখার চেষ্টা করেছি। আসলে মেঘ নিজেই তো আমাদের জাপটে ধরে।
দুপুর থেকে পেটে উৎপাত শুরু হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু পথে টং দোকানের চা-বিস্কুট ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। শেষে বিকালের দিকে এক মুসলিম হোটেল পেলাম। পাহাড়ি রাস্তার একপাশে বেড়ার হোটেল। নিচের দিকে নেমে গেলে গ্রাম। সেখানে বেশির ভাগ মুসলমানরাই বাস করে। অনেকটা লুকিয়ে তারা গোমাংস রান্না করে খাওয়ায়। অমরদা আগে থেকে বলে রেখেছিলেন। তাই আমরা গরুর মাংস দিয়ে গরম ভাত-ডাল খেতে পারলাম। মনে হচ্ছিল অমৃত। রান্নাটাও বেশ। জম্পেশ খাওয়া দিয়ে আবার রওনা দিলাম। লাচুংয়ে পৌঁছাতে হবে। ততক্ষণে শুরু হয়ে গিয়েছিল গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। আলবৎ মাথায় বৃষ্টির ফোঁটা পড়েছিল। এরপর বাকিটা ইতিহাস। তবে পরদিন থেকে।
সন্ধ্যা নেমে এলে গাড়ির হেডলাইটের আলো ছাড়া গতি ছিল না। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, যাচ্ছি আবার মেঘের ভেতর দিয়ে। পথ একেবারে পিচ্ছিল। ভয় পাচ্ছিলাম না একটুও। কেননা, পান্ডেজি যেভাবে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তাতে ভরসা না করে পারা যায় না। তিনি মুখে তো অভয় দিচ্ছিলেনই, কাজ দিয়েও প্রমাণ করেছেন। সিকিমের এই পাহাড়ি পথ এমনভাবে তৈরি করা যে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা খুব কম। জায়গায় জায়গায় সতর্কবার্তা লেখা আছে। আর চালকদের এতটাই মুখস্থ রাস্তা যে তারা চোখ বুজে পাড়ি দিতে পারেন।
লাচুংয়ে ঢোকার আগেও অনুমতি লাগল। সেখানে এক বিজ্ঞপ্তিতে লেখা দেখলাম উত্তরের কোথায় কোথায় যাওয়া যাবে আর কোথায় কোথায় যাওয়া যাবে না। অবশ্যই লাচুংয়ে টিক চিহ্ন দেওয়া ছিল। সেটা দেখে মনে মনে খুশি হয়ে গেলাম। যাক বাবা, আটকে দিল না তাহলে। অনুমতি নিয়ে চলতে শুরু করলাম আবার। সাড়ে ৭টার পরপর পৌঁছে গেলাম গন্তব্যে। আর্মি চেকপোস্টের কাছাকাছি ‘লাচুং রিজেন্সি’তে গিয়ে উঠলাম। এখানে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা আগে থেকে করে রেখেছিলেন অমরদা। এই হোটেলে লোক মাত্র দুজন। যিনি ম্যানেজারের দায়িত্বে আছেন, তিনি নিজেই রান্না করেন। তাঁর সঙ্গে একজন আছেন, যিনি অতিথিদের ফরমাশ খাটেন। তাঁকে সাহায্যও করেন। আমরা যার যার রুম বেছে নিয়ে হাতমুখ ধুয়ে কাপড় বদলে নিলাম। ভাগ্যিস এখানে খাওয়া না পাওয়া যাওয়ার ভয় ছিল না।
ধীরে-সুস্থেই খাবারঘরে গেলাম। বুফে সিস্টেম করে রেখেছিলেন আমাদের রাঁধুনি। ভাত, ডাল, সবজি, রুটি, মটর পনির, সালাদ। এখানে আমিষজাতীয় কোনো রান্না হয় না। বেশ ভালোই লাগল খেতে। ভাত ছাড়া সব খেলাম অল্প করে। বড় দলটাকে আমার ভালো লাগছিল না। তারা সবকিছুতে একটা লোকদেখানো ভাব করছিল। সে যাক গে, খেয়েদেয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে অনেকে গল্প করছিলাম। এর মধ্যে হেঁশেল থেকে খবর এল, কেউ গরুর দুধ খেতে চায় কি না। তবে কিনে খেতে হবে। ভুবন খুব আগ্রহ নিয়ে দুধ আনতে গেল রান্নাঘরে। ফিরে এল একটা দুঃখ ভাব নিয়ে। ব্যাপার কী? এক গ্লাস দুধের দাম ৫০ রুপি! যদিও সে কিনে এনেছে এবং খুব কষ্ট করে গিলেছে। মনে হচ্ছিল টাকা গিলছে! সবার এক কথা, আমাদের দেশে ৭০ টাকায় লিটার আর এখানে মাত্র এক গ্লাস ৫০ রুপি! একটু বেশি হয়ে যায় না? এক গ্লাসের দাম পড়ছে তাহলে পঁয়ষট্টি টাকার মতো। গল্প-গুজব শেষ করে রুমে গেলাম ঘুমাতে। এমন সময় বাইরে হন্তদন্ত শুনলাম। পরদিন কে কোথায় যাবে সেটা নিয়ে বিস্তর ক্যাচাল লেগে গেল অমরদার সঙ্গে। কে আর লাগাবে। সেই বড় দলের পণ্ডিতেরা। অমরদার ভাষ্যমতে, জিরো পয়েন্টে গিয়ে কোনো লাভ নেই।
সময় নষ্ট না করে শুধু ইয়ামথাং ভ্যালি ঘুরে এলেই হবে। জিরো পয়েন্টে যেতে আর্মিরা ঝামেলা করতে পারে। তখন আবহাওয়াও সুবিধার ছিল না। আমাদের কোনো সমস্যা ছিল না। আমরা সব জেনে-বুঝে, অন্তর্জাল ঘেঁটে অমরদার কথায় রাজি ছিলাম। কিন্তু নাছোড়বান্দা বড় দলের লোকজন। কেউ যেতে চান, কেউ চান না। যাঁরা যেতে চান, তাঁদের কথা হলো, ‘টাকা দিচ্ছি আপনাকে, নেবেন না কেন? যাবই!’ অথচ অমরদা আগেই বলে রেখেছিলেন যে যদি অনুমতি না পাই, আবহাওয়া দখলে না থাকে কিংবা পরিস্থিতি ভিন্ন হয়, তবে আমাদের পরিকল্পনার পরিবর্তন হতে পারে। সে কথাটা আমাদের দলকে না বললেও আমরা জানতাম। সিকিম ঘুরতে গেলে এই কথাগুলো মাথায় রাখতে হয়। শেষমেশ সিদ্ধান্ত হলো যাঁরা জিরো পয়েন্টে যেতে চান, তাঁরা আলাদা যাবেন সকাল ৭টায়। আর বাকিরা নাশতা সেরে ৮টায় রওনা হবেন ইয়ামথাং ভ্যালির জন্য। জিরো পয়েন্ট ঘুরে বাকিরা সরাসরি ইয়ামথাং ভ্যালিতে চলে যাবেন। জিরো পয়েন্টে না যাওয়ার কারণ ছিল, সেখানে যা আছে তার চেয়ে কয়েক গুণ সুন্দর দৃশ্য ইয়ামথাং ভ্যালিতে আছে। শরীরের ওপর দিয়ে ধকল যাবে কি না, সে কথাও মাথা থেকে ফেলে দিলাম না। ওহ্, আরেকটা ব্যাপার, অমরদার কিন্তু জিরো পয়েন্টে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল না। কথা ছিল সাঙ্গুতে নিয়ে যাবেন। কিন্তু অনুমতি পাননি। সেখানে আমরা সবাই যেতে চেয়েছিলাম। অনুমতি পাননি বিধায় কয়েকজন জেঁকে ধরেছিলেন জিরো পয়েন্টে নিয়ে যেতে। আমাদের সাঙ্গুতে নিতে না পারায় কিন্তু তিনি পরে তাঁর সম্মানীটাও কম রেখেছিলেন।
বিতর্কের সিদ্ধান্ত জানার পর ঘুমাতে গেলাম। কিন্তু কী মুশকিল! ঘুম যে আসে না! এক ফোঁটাও না। না আমার, না ভুবনের। রাত যত বাড়ে, ঠান্ডা তার চেয়ে দ্বিগুণ হারে বাড়ে। ঘুম কী করে আসে এমন অবস্থায়! রুমে হিটার আনালাম। সেখানে আবার রুম হিটারের জন্য আলাদা খরচ করতে হয়। কিন্তু সারা রাতেও হিটার ঘরটাকে গরম করতে পারল না। এদিকে বাইরে হচ্ছে তুষারপাত। তাপমাত্রা সম্ভবত মাইনাস ৯ ছিল। একাত-ওকাত করে করে রাত পার করলাম। সব মিলিয়ে বড়জোর ঘণ্টা দেড়েক ঘুমিয়েছি; ভোরের দিকে যখন ঘরটা গরম হলো।

উত্তরের পথে আমাদের অভিযান
‘জলদি ওঠো। দেরি করা যাবে না। কেউ যেন বলতে না পারে আমাদের জন্য দেরি হয়েছে।’ অ্যালার্ম বাজতেই ভুবন ওর চিরচেনা সংলাপ দিচ্ছিল! ‘চিরচেনা’ বললাম এ কারণে, সে কারও সঙ্গে কোথাও যাওয়ার আগে ঠিক এই কথাগুলোই বলে। ওর কথা হচ্ছে, প্রয়োজন হলে সময়ের আগে প্রস্তুত থাকতে হবে বা পৌঁছাতে হবে। কিন্তু দেরি হওয়া যাবে না। মাঝে মাঝে তাই ওকে ‘আর্মি পারসন’ বলি! যাই হোক, সেখানকার সময় ৬টায় উঠে গেলাম। আধা ঘণ্টার মধ্যে দুজনে তৈরি হয়ে রুম থেকে বেরিয়েছি। হঠাৎ বারান্দার একপাশ দিয়ে বাইরে চোখ যেতেই দেখি কী সুন্দর দৃশ্য! রাতে পাহাড়ের গায়ে যে তারা দেখেছিলাম জ্বলজ্বল করছে, সেগুলো দিনের আলোয় স্পষ্ট ঘরবাড়ি। ছবিতে দেখলে হয়তো মনে হবে বস্তি। সামনে থেকে না দেখলে এর সৌন্দর্য অনুভব করা যাবে না। ঝটপট সেই দৃশ্যের ছবি তুলে নিল ভুবন।
হোটেল থেকে বের হলাম নাশতা খাব বলে। রাতে তো নিয়নের আলোয় খুব একটা বুঝিনি, সকালে বের হয়ে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। মল রোডটা যে কত পরিষ্কার, স্বচ্ছ! রাস্তার ওপরেই যেন নির্দ্বিধায় গড়াগড়ি করা যাবে। রাস্তার একপাশ ‘ওয়ান ওয়ে’, অন্য পাশ দিয়ে কোনো যানবাহন প্রবেশ করানো যায় না। এপাশ দিয়ে সবাই আরাম করে হাঁটাহাঁটি করে। আর একধারে কিছু দূর পর পর বেঞ্চি আছে। হাঁটতে হাঁটতে একটু জিরিয়ে নেওয়া যায়। ওই পথ ধরে হেঁটে একটা রেস্তোরাঁয় ঢুকলাম। খেলাম সবজি আর লুচি। সবজি বলতে গাঢ় ঝোলের মধ্যে আলু! আলুর দম বলা চলে। কিন্তু তারা এটাকে সবজিই নাম দিয়েছে। ভুবন অবশ্য লুচি না খেয়ে রুটি খেয়েছিল। মিষ্টির চেহারাগুলো দেখে এত লোভ লাগছিল! কিন্তু যেই খেতে গিয়েছি, আর ভালো লাগল না। নাশতা পর্ব শেষ করে আবার ছুটলাম হোটেলের দিকে। হাঁটার মাঝে থেমে থেমে কিছু ছবিও তুলে নিলাম। মোড়ে একটা বিশাল লাল পান্ডার ভাস্কর্য আছে। সেটার সঙ্গে ছবি তুলতে ভুললাম না। সময় পেলে সত্যিকারের লাল পান্ডা দেখতে যেতাম গ্যাংটকের চিড়িয়াখানায়, কিন্তু সময় হয়নি।
আমরা ঠিক ৭টার সময় হোটেলের নিচে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম। সবাই প্রস্তুত। কিন্তু গাড়ি আসেনি। ৮টার পর গাড়ি পেয়ে রওনা হলাম বজরা ট্যাক্সিস্ট্যান্ডের উদ্দেশে। মোটামুটি পনেরো-বিশ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে গেলাম আঁকাবাঁকা পথ দিয়ে। সেখানে হলো মহাবিলম্ব! কতক্ষণ যে দাঁড়িয়ে, পায়চারি করে সময় পার করেছি, আল্লাহ জানেন। কথা ছিল আগের দিন রাতেই অমরদা সব গাড়ি ঠিক করে রাখবেন, কিন্তু পারেননি।
প্রায় দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর আমরা গাড়ি পেলাম। একটা বড় জিপ পেয়ে আমরা নয়জন চড়ে বসলাম সেটাতে। আমাদের দুজনকে সবাই জিজ্ঞেস করছিল কোথায় বসতে চাই। আমি বললাম, ‘আপনাদের সুবিধামতো আমাদের একটু জায়গা দিলেই হবে।’ আকাশ ভাই দুষ্টুমি করে বললেন, ‘তাহলে ছাদে বসে যান। আমরা আরাম করে যাই।’ আমি বললাম, ‘কোনো সমস্যা নাই। সেটা তো ভীষণ মজার ব্যাপার হবে!’ সবাই হো হো করে হেসে দিয়ে দুজনকে চালকের সঙ্গে সামনের সিটে বসতে দিলেন। সামনে দুইটা সিটই বলা চলে। চালকেরটা ছাড়া। আরামসে আমি আর ভুবন এঁটে যাই। সবাই গাড়িতে উঠে অপেক্ষা করছি। বাকিদের বসা হলে একসঙ্গে রওনা দেব। বড় দলটা আরও দুইটা জিপে ভাগ হয়ে উঠল। তবে ঝামেলা লেগেছিল ওই দলের দুজন ‘জেঠুমশাই’কে নিয়ে। তাঁরা দুজনে একই জায়গায় বসতে চান। অর্থাৎ, একই সিটে। এ নিয়ে তুমুল লঙ্কাকাণ্ড! গাল ফুলিয়ে, চোখ রাঙিয়ে যাঁর যাঁর পরিচয় দিচ্ছিলেন। মাঝখান দিয়ে বেচারা অমরদা হলেন তুলাধুনা। আমরা জিপের ভেতরে বসে থেকে দর্শকের মতো ওই নাটক-সিনেমা দেখছিলাম। পেছন থেকে কে যেন বলে উঠল, ‘আরে ওনারা এত বড় মানুষ হয়ে বাচ্চাদের মতো করছেন, অথচ আমাদের মিস্টার অ্যান্ড মিসেস এজাজের গাড়ির ছাদে বা পেছনে ঝুলে যেতেও আপত্তি নাই।’ সত্যিই যদি এমন পরিস্থিতি হতো, তাহলেও আমাদের কোনো আপত্তি ছিল না। গাড়ির ছাদে বা পেছনে ঝুলে ঝুলেই যেতাম। যাই হোক, সিনেমাটা আধা ঘণ্টার মতো চলল। অবশেষে অমরদা গালি হজম করে হাসিমুখে সবাইকে নিয়ে রওনা দিলেন। প্রায় ১২টা বেজে গিয়েছিল তখন।
আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ। ধীরে ধীরে ওপরের দিকে উঠছি, বুঝতে পারছিলাম। আর সে কী যে পাগল করা অপরূপ সৌন্দর্য! এই পথে যেতে যেতে ‘মাশাআল্লাহ’, ‘সুবহানআল্লাহ’, ‘ওয়াও’, ‘অ্যামেজিং’ শব্দগুলো আপনা-আপনি মুখ দিয়ে বের হয়ে যায়। সবাই মিলে এক এক করে গান ধরলাম। আকাশ ভাইয়ের গলা ভালো। তিনি অনেক গান গাইলেন। পুরোটা পথ এই গানের আসর সঙ্গী ছিল। ভুবনের গান শুনে তো সবাই মুগ্ধ। আকাশ ভাই আমাকে বলছিলেন, ‘বাহ, আপনার স্বামীর গানের গলা তো বেশ!’ মুচকি হেসে বললাম, ‘এমনি এমনি কি আর প্রেমে পড়েছি!’ এ কথা শুনে সবাই হেসে দিলেন। এরপর এল আমাদের প্রেমকাহিনির গল্পের অনুরোধ। গানের ফাঁকে ফাঁকে সেটাও হয়ে গেল। আমার গানের গলা ভালো না। ছেড়ে গাইতে পারি না। অনেকটা নাকি সুরে গাই। তবু সবার জোর অনুরোধে গাইতে হলো। একটার বেশি গাইলাম না। কারণ আমি ওই একটা গানই একটু ছেড়ে দিয়ে গাইতে পারি, ‘তোমার ঘরে বাস করে কারা...’।
আমাদের সামনে বসার খুব ভালো একটা সুফল পাওয়া গেছে। যতটা স্পষ্ট আমরা দুজন দেখতে পাচ্ছিলাম বাইরের দৃশ্য, পেছনের লোকজন হয়তো সেটার অর্ধেক দেখেছে। তবু যা দেখেছে, তাতে চোখ ছানাবড়া না হয়ে পারেই না। পথে থেমে থেমে পাহাড়ি ঝরনা দেখাচ্ছিলেন আমাদের চালক। তাঁর নাম রবিন। নামটা শুনে তাঁকে রবিন হুড ডাকতে ইচ্ছা হলো। রবিন হুড থেকে মনে পড়ল সালমান খানের ‘চুলবুল পান্ডে ওরফে রবিন হুড পান্ডে’ চরিত্রের কথা। আমি তাই তাঁকে ‘পান্ডেজি’ বলে ডাকা শুরু করলাম। পান্ডেজি নরম মানুষ। আস্তে-ধীরে কথা বলেন। নেপালি। মানে, সিকিমের বাসিন্দা আরকি। তিনি সবগুলো ঝরনার নাম ও বর্ণনা দিলেন। সব ঝরনার নামের সাইনবোর্ড নেই আবার। সেখানে নাম লেখা থাকে সাধারণত। আবার কোনো কোনো ঝরনার নাম নেই। সেগুলো ছোটখাটো। অনেক ঝরনার নাম পান্ডেজি নিজেও জানেন না। কারণ সেগুলো নতুন। সেভেন সিস্টার্স, নাগা, ভিম নালাসহ আরও ছোট-বড় কিছু ঝরনা দেখলাম। ভিম নালা ঝরনাটার আরেকটা নাম আছে। ‘অমিতাভ বচ্চন ফলস’। এমন নাম কেন, জিজ্ঞেস করতেই পান্ডেজি বললেন, ‘উ বহুত লম্বা হ্যায়। উ অ্যাক্টর হ্যায় না, অমিতাভ বচ্চন, উসকি তারাহ।’ লম্বায় এটা ২৭৫ ফুট। এর আরেক নাম ভিমা ফলস। স্থানীয় ভাষায় ভিমা বা ভিম নালা মানে ‘রেড স্নেক’ বা লাল সাপ। তাই এর আরেক নাম ‘রেড স্নেক’। বিগত কয়েক বছর ধরে পর্যটকেরা এই ঝরনাকে আবার ‘লাচুং নর্থ সিকিম ফলস’ নামেও ডাকছে। ঝরনার পাশাপাশি মেঘের কথা না বললেই নয়। পাহাড়ের চূড়ায় তুলার মতো লেগে থাকা মেঘ দেখা যায় দূর থেকে। আর পাহাড়ের নিচে স্বচ্ছ সবুজ তিস্তার পানি বয়ে চলে। ওপরের দিকে উঠতে উঠতে মেঘের ভেতর দিয়ে গিয়েছি আমরা। গাড়ি থেকে নেমেও ছুঁয়ে দেখার চেষ্টা করেছি। আসলে মেঘ নিজেই তো আমাদের জাপটে ধরে।
দুপুর থেকে পেটে উৎপাত শুরু হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু পথে টং দোকানের চা-বিস্কুট ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। শেষে বিকালের দিকে এক মুসলিম হোটেল পেলাম। পাহাড়ি রাস্তার একপাশে বেড়ার হোটেল। নিচের দিকে নেমে গেলে গ্রাম। সেখানে বেশির ভাগ মুসলমানরাই বাস করে। অনেকটা লুকিয়ে তারা গোমাংস রান্না করে খাওয়ায়। অমরদা আগে থেকে বলে রেখেছিলেন। তাই আমরা গরুর মাংস দিয়ে গরম ভাত-ডাল খেতে পারলাম। মনে হচ্ছিল অমৃত। রান্নাটাও বেশ। জম্পেশ খাওয়া দিয়ে আবার রওনা দিলাম। লাচুংয়ে পৌঁছাতে হবে। ততক্ষণে শুরু হয়ে গিয়েছিল গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। আলবৎ মাথায় বৃষ্টির ফোঁটা পড়েছিল। এরপর বাকিটা ইতিহাস। তবে পরদিন থেকে।
সন্ধ্যা নেমে এলে গাড়ির হেডলাইটের আলো ছাড়া গতি ছিল না। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, যাচ্ছি আবার মেঘের ভেতর দিয়ে। পথ একেবারে পিচ্ছিল। ভয় পাচ্ছিলাম না একটুও। কেননা, পান্ডেজি যেভাবে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তাতে ভরসা না করে পারা যায় না। তিনি মুখে তো অভয় দিচ্ছিলেনই, কাজ দিয়েও প্রমাণ করেছেন। সিকিমের এই পাহাড়ি পথ এমনভাবে তৈরি করা যে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা খুব কম। জায়গায় জায়গায় সতর্কবার্তা লেখা আছে। আর চালকদের এতটাই মুখস্থ রাস্তা যে তারা চোখ বুজে পাড়ি দিতে পারেন।
লাচুংয়ে ঢোকার আগেও অনুমতি লাগল। সেখানে এক বিজ্ঞপ্তিতে লেখা দেখলাম উত্তরের কোথায় কোথায় যাওয়া যাবে আর কোথায় কোথায় যাওয়া যাবে না। অবশ্যই লাচুংয়ে টিক চিহ্ন দেওয়া ছিল। সেটা দেখে মনে মনে খুশি হয়ে গেলাম। যাক বাবা, আটকে দিল না তাহলে। অনুমতি নিয়ে চলতে শুরু করলাম আবার। সাড়ে ৭টার পরপর পৌঁছে গেলাম গন্তব্যে। আর্মি চেকপোস্টের কাছাকাছি ‘লাচুং রিজেন্সি’তে গিয়ে উঠলাম। এখানে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা আগে থেকে করে রেখেছিলেন অমরদা। এই হোটেলে লোক মাত্র দুজন। যিনি ম্যানেজারের দায়িত্বে আছেন, তিনি নিজেই রান্না করেন। তাঁর সঙ্গে একজন আছেন, যিনি অতিথিদের ফরমাশ খাটেন। তাঁকে সাহায্যও করেন। আমরা যার যার রুম বেছে নিয়ে হাতমুখ ধুয়ে কাপড় বদলে নিলাম। ভাগ্যিস এখানে খাওয়া না পাওয়া যাওয়ার ভয় ছিল না।
ধীরে-সুস্থেই খাবারঘরে গেলাম। বুফে সিস্টেম করে রেখেছিলেন আমাদের রাঁধুনি। ভাত, ডাল, সবজি, রুটি, মটর পনির, সালাদ। এখানে আমিষজাতীয় কোনো রান্না হয় না। বেশ ভালোই লাগল খেতে। ভাত ছাড়া সব খেলাম অল্প করে। বড় দলটাকে আমার ভালো লাগছিল না। তারা সবকিছুতে একটা লোকদেখানো ভাব করছিল। সে যাক গে, খেয়েদেয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে অনেকে গল্প করছিলাম। এর মধ্যে হেঁশেল থেকে খবর এল, কেউ গরুর দুধ খেতে চায় কি না। তবে কিনে খেতে হবে। ভুবন খুব আগ্রহ নিয়ে দুধ আনতে গেল রান্নাঘরে। ফিরে এল একটা দুঃখ ভাব নিয়ে। ব্যাপার কী? এক গ্লাস দুধের দাম ৫০ রুপি! যদিও সে কিনে এনেছে এবং খুব কষ্ট করে গিলেছে। মনে হচ্ছিল টাকা গিলছে! সবার এক কথা, আমাদের দেশে ৭০ টাকায় লিটার আর এখানে মাত্র এক গ্লাস ৫০ রুপি! একটু বেশি হয়ে যায় না? এক গ্লাসের দাম পড়ছে তাহলে পঁয়ষট্টি টাকার মতো। গল্প-গুজব শেষ করে রুমে গেলাম ঘুমাতে। এমন সময় বাইরে হন্তদন্ত শুনলাম। পরদিন কে কোথায় যাবে সেটা নিয়ে বিস্তর ক্যাচাল লেগে গেল অমরদার সঙ্গে। কে আর লাগাবে। সেই বড় দলের পণ্ডিতেরা। অমরদার ভাষ্যমতে, জিরো পয়েন্টে গিয়ে কোনো লাভ নেই।
সময় নষ্ট না করে শুধু ইয়ামথাং ভ্যালি ঘুরে এলেই হবে। জিরো পয়েন্টে যেতে আর্মিরা ঝামেলা করতে পারে। তখন আবহাওয়াও সুবিধার ছিল না। আমাদের কোনো সমস্যা ছিল না। আমরা সব জেনে-বুঝে, অন্তর্জাল ঘেঁটে অমরদার কথায় রাজি ছিলাম। কিন্তু নাছোড়বান্দা বড় দলের লোকজন। কেউ যেতে চান, কেউ চান না। যাঁরা যেতে চান, তাঁদের কথা হলো, ‘টাকা দিচ্ছি আপনাকে, নেবেন না কেন? যাবই!’ অথচ অমরদা আগেই বলে রেখেছিলেন যে যদি অনুমতি না পাই, আবহাওয়া দখলে না থাকে কিংবা পরিস্থিতি ভিন্ন হয়, তবে আমাদের পরিকল্পনার পরিবর্তন হতে পারে। সে কথাটা আমাদের দলকে না বললেও আমরা জানতাম। সিকিম ঘুরতে গেলে এই কথাগুলো মাথায় রাখতে হয়। শেষমেশ সিদ্ধান্ত হলো যাঁরা জিরো পয়েন্টে যেতে চান, তাঁরা আলাদা যাবেন সকাল ৭টায়। আর বাকিরা নাশতা সেরে ৮টায় রওনা হবেন ইয়ামথাং ভ্যালির জন্য। জিরো পয়েন্ট ঘুরে বাকিরা সরাসরি ইয়ামথাং ভ্যালিতে চলে যাবেন। জিরো পয়েন্টে না যাওয়ার কারণ ছিল, সেখানে যা আছে তার চেয়ে কয়েক গুণ সুন্দর দৃশ্য ইয়ামথাং ভ্যালিতে আছে। শরীরের ওপর দিয়ে ধকল যাবে কি না, সে কথাও মাথা থেকে ফেলে দিলাম না। ওহ্, আরেকটা ব্যাপার, অমরদার কিন্তু জিরো পয়েন্টে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল না। কথা ছিল সাঙ্গুতে নিয়ে যাবেন। কিন্তু অনুমতি পাননি। সেখানে আমরা সবাই যেতে চেয়েছিলাম। অনুমতি পাননি বিধায় কয়েকজন জেঁকে ধরেছিলেন জিরো পয়েন্টে নিয়ে যেতে। আমাদের সাঙ্গুতে নিতে না পারায় কিন্তু তিনি পরে তাঁর সম্মানীটাও কম রেখেছিলেন।
বিতর্কের সিদ্ধান্ত জানার পর ঘুমাতে গেলাম। কিন্তু কী মুশকিল! ঘুম যে আসে না! এক ফোঁটাও না। না আমার, না ভুবনের। রাত যত বাড়ে, ঠান্ডা তার চেয়ে দ্বিগুণ হারে বাড়ে। ঘুম কী করে আসে এমন অবস্থায়! রুমে হিটার আনালাম। সেখানে আবার রুম হিটারের জন্য আলাদা খরচ করতে হয়। কিন্তু সারা রাতেও হিটার ঘরটাকে গরম করতে পারল না। এদিকে বাইরে হচ্ছে তুষারপাত। তাপমাত্রা সম্ভবত মাইনাস ৯ ছিল। একাত-ওকাত করে করে রাত পার করলাম। সব মিলিয়ে বড়জোর ঘণ্টা দেড়েক ঘুমিয়েছি; ভোরের দিকে যখন ঘরটা গরম হলো।
সৈয়দা সাদিয়া শাহরীন

উত্তরের পথে আমাদের অভিযান
‘জলদি ওঠো। দেরি করা যাবে না। কেউ যেন বলতে না পারে আমাদের জন্য দেরি হয়েছে।’ অ্যালার্ম বাজতেই ভুবন ওর চিরচেনা সংলাপ দিচ্ছিল! ‘চিরচেনা’ বললাম এ কারণে, সে কারও সঙ্গে কোথাও যাওয়ার আগে ঠিক এই কথাগুলোই বলে। ওর কথা হচ্ছে, প্রয়োজন হলে সময়ের আগে প্রস্তুত থাকতে হবে বা পৌঁছাতে হবে। কিন্তু দেরি হওয়া যাবে না। মাঝে মাঝে তাই ওকে ‘আর্মি পারসন’ বলি! যাই হোক, সেখানকার সময় ৬টায় উঠে গেলাম। আধা ঘণ্টার মধ্যে দুজনে তৈরি হয়ে রুম থেকে বেরিয়েছি। হঠাৎ বারান্দার একপাশ দিয়ে বাইরে চোখ যেতেই দেখি কী সুন্দর দৃশ্য! রাতে পাহাড়ের গায়ে যে তারা দেখেছিলাম জ্বলজ্বল করছে, সেগুলো দিনের আলোয় স্পষ্ট ঘরবাড়ি। ছবিতে দেখলে হয়তো মনে হবে বস্তি। সামনে থেকে না দেখলে এর সৌন্দর্য অনুভব করা যাবে না। ঝটপট সেই দৃশ্যের ছবি তুলে নিল ভুবন।
হোটেল থেকে বের হলাম নাশতা খাব বলে। রাতে তো নিয়নের আলোয় খুব একটা বুঝিনি, সকালে বের হয়ে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। মল রোডটা যে কত পরিষ্কার, স্বচ্ছ! রাস্তার ওপরেই যেন নির্দ্বিধায় গড়াগড়ি করা যাবে। রাস্তার একপাশ ‘ওয়ান ওয়ে’, অন্য পাশ দিয়ে কোনো যানবাহন প্রবেশ করানো যায় না। এপাশ দিয়ে সবাই আরাম করে হাঁটাহাঁটি করে। আর একধারে কিছু দূর পর পর বেঞ্চি আছে। হাঁটতে হাঁটতে একটু জিরিয়ে নেওয়া যায়। ওই পথ ধরে হেঁটে একটা রেস্তোরাঁয় ঢুকলাম। খেলাম সবজি আর লুচি। সবজি বলতে গাঢ় ঝোলের মধ্যে আলু! আলুর দম বলা চলে। কিন্তু তারা এটাকে সবজিই নাম দিয়েছে। ভুবন অবশ্য লুচি না খেয়ে রুটি খেয়েছিল। মিষ্টির চেহারাগুলো দেখে এত লোভ লাগছিল! কিন্তু যেই খেতে গিয়েছি, আর ভালো লাগল না। নাশতা পর্ব শেষ করে আবার ছুটলাম হোটেলের দিকে। হাঁটার মাঝে থেমে থেমে কিছু ছবিও তুলে নিলাম। মোড়ে একটা বিশাল লাল পান্ডার ভাস্কর্য আছে। সেটার সঙ্গে ছবি তুলতে ভুললাম না। সময় পেলে সত্যিকারের লাল পান্ডা দেখতে যেতাম গ্যাংটকের চিড়িয়াখানায়, কিন্তু সময় হয়নি।
আমরা ঠিক ৭টার সময় হোটেলের নিচে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম। সবাই প্রস্তুত। কিন্তু গাড়ি আসেনি। ৮টার পর গাড়ি পেয়ে রওনা হলাম বজরা ট্যাক্সিস্ট্যান্ডের উদ্দেশে। মোটামুটি পনেরো-বিশ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে গেলাম আঁকাবাঁকা পথ দিয়ে। সেখানে হলো মহাবিলম্ব! কতক্ষণ যে দাঁড়িয়ে, পায়চারি করে সময় পার করেছি, আল্লাহ জানেন। কথা ছিল আগের দিন রাতেই অমরদা সব গাড়ি ঠিক করে রাখবেন, কিন্তু পারেননি।
প্রায় দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর আমরা গাড়ি পেলাম। একটা বড় জিপ পেয়ে আমরা নয়জন চড়ে বসলাম সেটাতে। আমাদের দুজনকে সবাই জিজ্ঞেস করছিল কোথায় বসতে চাই। আমি বললাম, ‘আপনাদের সুবিধামতো আমাদের একটু জায়গা দিলেই হবে।’ আকাশ ভাই দুষ্টুমি করে বললেন, ‘তাহলে ছাদে বসে যান। আমরা আরাম করে যাই।’ আমি বললাম, ‘কোনো সমস্যা নাই। সেটা তো ভীষণ মজার ব্যাপার হবে!’ সবাই হো হো করে হেসে দিয়ে দুজনকে চালকের সঙ্গে সামনের সিটে বসতে দিলেন। সামনে দুইটা সিটই বলা চলে। চালকেরটা ছাড়া। আরামসে আমি আর ভুবন এঁটে যাই। সবাই গাড়িতে উঠে অপেক্ষা করছি। বাকিদের বসা হলে একসঙ্গে রওনা দেব। বড় দলটা আরও দুইটা জিপে ভাগ হয়ে উঠল। তবে ঝামেলা লেগেছিল ওই দলের দুজন ‘জেঠুমশাই’কে নিয়ে। তাঁরা দুজনে একই জায়গায় বসতে চান। অর্থাৎ, একই সিটে। এ নিয়ে তুমুল লঙ্কাকাণ্ড! গাল ফুলিয়ে, চোখ রাঙিয়ে যাঁর যাঁর পরিচয় দিচ্ছিলেন। মাঝখান দিয়ে বেচারা অমরদা হলেন তুলাধুনা। আমরা জিপের ভেতরে বসে থেকে দর্শকের মতো ওই নাটক-সিনেমা দেখছিলাম। পেছন থেকে কে যেন বলে উঠল, ‘আরে ওনারা এত বড় মানুষ হয়ে বাচ্চাদের মতো করছেন, অথচ আমাদের মিস্টার অ্যান্ড মিসেস এজাজের গাড়ির ছাদে বা পেছনে ঝুলে যেতেও আপত্তি নাই।’ সত্যিই যদি এমন পরিস্থিতি হতো, তাহলেও আমাদের কোনো আপত্তি ছিল না। গাড়ির ছাদে বা পেছনে ঝুলে ঝুলেই যেতাম। যাই হোক, সিনেমাটা আধা ঘণ্টার মতো চলল। অবশেষে অমরদা গালি হজম করে হাসিমুখে সবাইকে নিয়ে রওনা দিলেন। প্রায় ১২টা বেজে গিয়েছিল তখন।
আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ। ধীরে ধীরে ওপরের দিকে উঠছি, বুঝতে পারছিলাম। আর সে কী যে পাগল করা অপরূপ সৌন্দর্য! এই পথে যেতে যেতে ‘মাশাআল্লাহ’, ‘সুবহানআল্লাহ’, ‘ওয়াও’, ‘অ্যামেজিং’ শব্দগুলো আপনা-আপনি মুখ দিয়ে বের হয়ে যায়। সবাই মিলে এক এক করে গান ধরলাম। আকাশ ভাইয়ের গলা ভালো। তিনি অনেক গান গাইলেন। পুরোটা পথ এই গানের আসর সঙ্গী ছিল। ভুবনের গান শুনে তো সবাই মুগ্ধ। আকাশ ভাই আমাকে বলছিলেন, ‘বাহ, আপনার স্বামীর গানের গলা তো বেশ!’ মুচকি হেসে বললাম, ‘এমনি এমনি কি আর প্রেমে পড়েছি!’ এ কথা শুনে সবাই হেসে দিলেন। এরপর এল আমাদের প্রেমকাহিনির গল্পের অনুরোধ। গানের ফাঁকে ফাঁকে সেটাও হয়ে গেল। আমার গানের গলা ভালো না। ছেড়ে গাইতে পারি না। অনেকটা নাকি সুরে গাই। তবু সবার জোর অনুরোধে গাইতে হলো। একটার বেশি গাইলাম না। কারণ আমি ওই একটা গানই একটু ছেড়ে দিয়ে গাইতে পারি, ‘তোমার ঘরে বাস করে কারা...’।
আমাদের সামনে বসার খুব ভালো একটা সুফল পাওয়া গেছে। যতটা স্পষ্ট আমরা দুজন দেখতে পাচ্ছিলাম বাইরের দৃশ্য, পেছনের লোকজন হয়তো সেটার অর্ধেক দেখেছে। তবু যা দেখেছে, তাতে চোখ ছানাবড়া না হয়ে পারেই না। পথে থেমে থেমে পাহাড়ি ঝরনা দেখাচ্ছিলেন আমাদের চালক। তাঁর নাম রবিন। নামটা শুনে তাঁকে রবিন হুড ডাকতে ইচ্ছা হলো। রবিন হুড থেকে মনে পড়ল সালমান খানের ‘চুলবুল পান্ডে ওরফে রবিন হুড পান্ডে’ চরিত্রের কথা। আমি তাই তাঁকে ‘পান্ডেজি’ বলে ডাকা শুরু করলাম। পান্ডেজি নরম মানুষ। আস্তে-ধীরে কথা বলেন। নেপালি। মানে, সিকিমের বাসিন্দা আরকি। তিনি সবগুলো ঝরনার নাম ও বর্ণনা দিলেন। সব ঝরনার নামের সাইনবোর্ড নেই আবার। সেখানে নাম লেখা থাকে সাধারণত। আবার কোনো কোনো ঝরনার নাম নেই। সেগুলো ছোটখাটো। অনেক ঝরনার নাম পান্ডেজি নিজেও জানেন না। কারণ সেগুলো নতুন। সেভেন সিস্টার্স, নাগা, ভিম নালাসহ আরও ছোট-বড় কিছু ঝরনা দেখলাম। ভিম নালা ঝরনাটার আরেকটা নাম আছে। ‘অমিতাভ বচ্চন ফলস’। এমন নাম কেন, জিজ্ঞেস করতেই পান্ডেজি বললেন, ‘উ বহুত লম্বা হ্যায়। উ অ্যাক্টর হ্যায় না, অমিতাভ বচ্চন, উসকি তারাহ।’ লম্বায় এটা ২৭৫ ফুট। এর আরেক নাম ভিমা ফলস। স্থানীয় ভাষায় ভিমা বা ভিম নালা মানে ‘রেড স্নেক’ বা লাল সাপ। তাই এর আরেক নাম ‘রেড স্নেক’। বিগত কয়েক বছর ধরে পর্যটকেরা এই ঝরনাকে আবার ‘লাচুং নর্থ সিকিম ফলস’ নামেও ডাকছে। ঝরনার পাশাপাশি মেঘের কথা না বললেই নয়। পাহাড়ের চূড়ায় তুলার মতো লেগে থাকা মেঘ দেখা যায় দূর থেকে। আর পাহাড়ের নিচে স্বচ্ছ সবুজ তিস্তার পানি বয়ে চলে। ওপরের দিকে উঠতে উঠতে মেঘের ভেতর দিয়ে গিয়েছি আমরা। গাড়ি থেকে নেমেও ছুঁয়ে দেখার চেষ্টা করেছি। আসলে মেঘ নিজেই তো আমাদের জাপটে ধরে।
দুপুর থেকে পেটে উৎপাত শুরু হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু পথে টং দোকানের চা-বিস্কুট ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। শেষে বিকালের দিকে এক মুসলিম হোটেল পেলাম। পাহাড়ি রাস্তার একপাশে বেড়ার হোটেল। নিচের দিকে নেমে গেলে গ্রাম। সেখানে বেশির ভাগ মুসলমানরাই বাস করে। অনেকটা লুকিয়ে তারা গোমাংস রান্না করে খাওয়ায়। অমরদা আগে থেকে বলে রেখেছিলেন। তাই আমরা গরুর মাংস দিয়ে গরম ভাত-ডাল খেতে পারলাম। মনে হচ্ছিল অমৃত। রান্নাটাও বেশ। জম্পেশ খাওয়া দিয়ে আবার রওনা দিলাম। লাচুংয়ে পৌঁছাতে হবে। ততক্ষণে শুরু হয়ে গিয়েছিল গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। আলবৎ মাথায় বৃষ্টির ফোঁটা পড়েছিল। এরপর বাকিটা ইতিহাস। তবে পরদিন থেকে।
সন্ধ্যা নেমে এলে গাড়ির হেডলাইটের আলো ছাড়া গতি ছিল না। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, যাচ্ছি আবার মেঘের ভেতর দিয়ে। পথ একেবারে পিচ্ছিল। ভয় পাচ্ছিলাম না একটুও। কেননা, পান্ডেজি যেভাবে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তাতে ভরসা না করে পারা যায় না। তিনি মুখে তো অভয় দিচ্ছিলেনই, কাজ দিয়েও প্রমাণ করেছেন। সিকিমের এই পাহাড়ি পথ এমনভাবে তৈরি করা যে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা খুব কম। জায়গায় জায়গায় সতর্কবার্তা লেখা আছে। আর চালকদের এতটাই মুখস্থ রাস্তা যে তারা চোখ বুজে পাড়ি দিতে পারেন।
লাচুংয়ে ঢোকার আগেও অনুমতি লাগল। সেখানে এক বিজ্ঞপ্তিতে লেখা দেখলাম উত্তরের কোথায় কোথায় যাওয়া যাবে আর কোথায় কোথায় যাওয়া যাবে না। অবশ্যই লাচুংয়ে টিক চিহ্ন দেওয়া ছিল। সেটা দেখে মনে মনে খুশি হয়ে গেলাম। যাক বাবা, আটকে দিল না তাহলে। অনুমতি নিয়ে চলতে শুরু করলাম আবার। সাড়ে ৭টার পরপর পৌঁছে গেলাম গন্তব্যে। আর্মি চেকপোস্টের কাছাকাছি ‘লাচুং রিজেন্সি’তে গিয়ে উঠলাম। এখানে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা আগে থেকে করে রেখেছিলেন অমরদা। এই হোটেলে লোক মাত্র দুজন। যিনি ম্যানেজারের দায়িত্বে আছেন, তিনি নিজেই রান্না করেন। তাঁর সঙ্গে একজন আছেন, যিনি অতিথিদের ফরমাশ খাটেন। তাঁকে সাহায্যও করেন। আমরা যার যার রুম বেছে নিয়ে হাতমুখ ধুয়ে কাপড় বদলে নিলাম। ভাগ্যিস এখানে খাওয়া না পাওয়া যাওয়ার ভয় ছিল না।
ধীরে-সুস্থেই খাবারঘরে গেলাম। বুফে সিস্টেম করে রেখেছিলেন আমাদের রাঁধুনি। ভাত, ডাল, সবজি, রুটি, মটর পনির, সালাদ। এখানে আমিষজাতীয় কোনো রান্না হয় না। বেশ ভালোই লাগল খেতে। ভাত ছাড়া সব খেলাম অল্প করে। বড় দলটাকে আমার ভালো লাগছিল না। তারা সবকিছুতে একটা লোকদেখানো ভাব করছিল। সে যাক গে, খেয়েদেয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে অনেকে গল্প করছিলাম। এর মধ্যে হেঁশেল থেকে খবর এল, কেউ গরুর দুধ খেতে চায় কি না। তবে কিনে খেতে হবে। ভুবন খুব আগ্রহ নিয়ে দুধ আনতে গেল রান্নাঘরে। ফিরে এল একটা দুঃখ ভাব নিয়ে। ব্যাপার কী? এক গ্লাস দুধের দাম ৫০ রুপি! যদিও সে কিনে এনেছে এবং খুব কষ্ট করে গিলেছে। মনে হচ্ছিল টাকা গিলছে! সবার এক কথা, আমাদের দেশে ৭০ টাকায় লিটার আর এখানে মাত্র এক গ্লাস ৫০ রুপি! একটু বেশি হয়ে যায় না? এক গ্লাসের দাম পড়ছে তাহলে পঁয়ষট্টি টাকার মতো। গল্প-গুজব শেষ করে রুমে গেলাম ঘুমাতে। এমন সময় বাইরে হন্তদন্ত শুনলাম। পরদিন কে কোথায় যাবে সেটা নিয়ে বিস্তর ক্যাচাল লেগে গেল অমরদার সঙ্গে। কে আর লাগাবে। সেই বড় দলের পণ্ডিতেরা। অমরদার ভাষ্যমতে, জিরো পয়েন্টে গিয়ে কোনো লাভ নেই।
সময় নষ্ট না করে শুধু ইয়ামথাং ভ্যালি ঘুরে এলেই হবে। জিরো পয়েন্টে যেতে আর্মিরা ঝামেলা করতে পারে। তখন আবহাওয়াও সুবিধার ছিল না। আমাদের কোনো সমস্যা ছিল না। আমরা সব জেনে-বুঝে, অন্তর্জাল ঘেঁটে অমরদার কথায় রাজি ছিলাম। কিন্তু নাছোড়বান্দা বড় দলের লোকজন। কেউ যেতে চান, কেউ চান না। যাঁরা যেতে চান, তাঁদের কথা হলো, ‘টাকা দিচ্ছি আপনাকে, নেবেন না কেন? যাবই!’ অথচ অমরদা আগেই বলে রেখেছিলেন যে যদি অনুমতি না পাই, আবহাওয়া দখলে না থাকে কিংবা পরিস্থিতি ভিন্ন হয়, তবে আমাদের পরিকল্পনার পরিবর্তন হতে পারে। সে কথাটা আমাদের দলকে না বললেও আমরা জানতাম। সিকিম ঘুরতে গেলে এই কথাগুলো মাথায় রাখতে হয়। শেষমেশ সিদ্ধান্ত হলো যাঁরা জিরো পয়েন্টে যেতে চান, তাঁরা আলাদা যাবেন সকাল ৭টায়। আর বাকিরা নাশতা সেরে ৮টায় রওনা হবেন ইয়ামথাং ভ্যালির জন্য। জিরো পয়েন্ট ঘুরে বাকিরা সরাসরি ইয়ামথাং ভ্যালিতে চলে যাবেন। জিরো পয়েন্টে না যাওয়ার কারণ ছিল, সেখানে যা আছে তার চেয়ে কয়েক গুণ সুন্দর দৃশ্য ইয়ামথাং ভ্যালিতে আছে। শরীরের ওপর দিয়ে ধকল যাবে কি না, সে কথাও মাথা থেকে ফেলে দিলাম না। ওহ্, আরেকটা ব্যাপার, অমরদার কিন্তু জিরো পয়েন্টে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল না। কথা ছিল সাঙ্গুতে নিয়ে যাবেন। কিন্তু অনুমতি পাননি। সেখানে আমরা সবাই যেতে চেয়েছিলাম। অনুমতি পাননি বিধায় কয়েকজন জেঁকে ধরেছিলেন জিরো পয়েন্টে নিয়ে যেতে। আমাদের সাঙ্গুতে নিতে না পারায় কিন্তু তিনি পরে তাঁর সম্মানীটাও কম রেখেছিলেন।
বিতর্কের সিদ্ধান্ত জানার পর ঘুমাতে গেলাম। কিন্তু কী মুশকিল! ঘুম যে আসে না! এক ফোঁটাও না। না আমার, না ভুবনের। রাত যত বাড়ে, ঠান্ডা তার চেয়ে দ্বিগুণ হারে বাড়ে। ঘুম কী করে আসে এমন অবস্থায়! রুমে হিটার আনালাম। সেখানে আবার রুম হিটারের জন্য আলাদা খরচ করতে হয়। কিন্তু সারা রাতেও হিটার ঘরটাকে গরম করতে পারল না। এদিকে বাইরে হচ্ছে তুষারপাত। তাপমাত্রা সম্ভবত মাইনাস ৯ ছিল। একাত-ওকাত করে করে রাত পার করলাম। সব মিলিয়ে বড়জোর ঘণ্টা দেড়েক ঘুমিয়েছি; ভোরের দিকে যখন ঘরটা গরম হলো।

উত্তরের পথে আমাদের অভিযান
‘জলদি ওঠো। দেরি করা যাবে না। কেউ যেন বলতে না পারে আমাদের জন্য দেরি হয়েছে।’ অ্যালার্ম বাজতেই ভুবন ওর চিরচেনা সংলাপ দিচ্ছিল! ‘চিরচেনা’ বললাম এ কারণে, সে কারও সঙ্গে কোথাও যাওয়ার আগে ঠিক এই কথাগুলোই বলে। ওর কথা হচ্ছে, প্রয়োজন হলে সময়ের আগে প্রস্তুত থাকতে হবে বা পৌঁছাতে হবে। কিন্তু দেরি হওয়া যাবে না। মাঝে মাঝে তাই ওকে ‘আর্মি পারসন’ বলি! যাই হোক, সেখানকার সময় ৬টায় উঠে গেলাম। আধা ঘণ্টার মধ্যে দুজনে তৈরি হয়ে রুম থেকে বেরিয়েছি। হঠাৎ বারান্দার একপাশ দিয়ে বাইরে চোখ যেতেই দেখি কী সুন্দর দৃশ্য! রাতে পাহাড়ের গায়ে যে তারা দেখেছিলাম জ্বলজ্বল করছে, সেগুলো দিনের আলোয় স্পষ্ট ঘরবাড়ি। ছবিতে দেখলে হয়তো মনে হবে বস্তি। সামনে থেকে না দেখলে এর সৌন্দর্য অনুভব করা যাবে না। ঝটপট সেই দৃশ্যের ছবি তুলে নিল ভুবন।
হোটেল থেকে বের হলাম নাশতা খাব বলে। রাতে তো নিয়নের আলোয় খুব একটা বুঝিনি, সকালে বের হয়ে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। মল রোডটা যে কত পরিষ্কার, স্বচ্ছ! রাস্তার ওপরেই যেন নির্দ্বিধায় গড়াগড়ি করা যাবে। রাস্তার একপাশ ‘ওয়ান ওয়ে’, অন্য পাশ দিয়ে কোনো যানবাহন প্রবেশ করানো যায় না। এপাশ দিয়ে সবাই আরাম করে হাঁটাহাঁটি করে। আর একধারে কিছু দূর পর পর বেঞ্চি আছে। হাঁটতে হাঁটতে একটু জিরিয়ে নেওয়া যায়। ওই পথ ধরে হেঁটে একটা রেস্তোরাঁয় ঢুকলাম। খেলাম সবজি আর লুচি। সবজি বলতে গাঢ় ঝোলের মধ্যে আলু! আলুর দম বলা চলে। কিন্তু তারা এটাকে সবজিই নাম দিয়েছে। ভুবন অবশ্য লুচি না খেয়ে রুটি খেয়েছিল। মিষ্টির চেহারাগুলো দেখে এত লোভ লাগছিল! কিন্তু যেই খেতে গিয়েছি, আর ভালো লাগল না। নাশতা পর্ব শেষ করে আবার ছুটলাম হোটেলের দিকে। হাঁটার মাঝে থেমে থেমে কিছু ছবিও তুলে নিলাম। মোড়ে একটা বিশাল লাল পান্ডার ভাস্কর্য আছে। সেটার সঙ্গে ছবি তুলতে ভুললাম না। সময় পেলে সত্যিকারের লাল পান্ডা দেখতে যেতাম গ্যাংটকের চিড়িয়াখানায়, কিন্তু সময় হয়নি।
আমরা ঠিক ৭টার সময় হোটেলের নিচে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম। সবাই প্রস্তুত। কিন্তু গাড়ি আসেনি। ৮টার পর গাড়ি পেয়ে রওনা হলাম বজরা ট্যাক্সিস্ট্যান্ডের উদ্দেশে। মোটামুটি পনেরো-বিশ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে গেলাম আঁকাবাঁকা পথ দিয়ে। সেখানে হলো মহাবিলম্ব! কতক্ষণ যে দাঁড়িয়ে, পায়চারি করে সময় পার করেছি, আল্লাহ জানেন। কথা ছিল আগের দিন রাতেই অমরদা সব গাড়ি ঠিক করে রাখবেন, কিন্তু পারেননি।
প্রায় দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর আমরা গাড়ি পেলাম। একটা বড় জিপ পেয়ে আমরা নয়জন চড়ে বসলাম সেটাতে। আমাদের দুজনকে সবাই জিজ্ঞেস করছিল কোথায় বসতে চাই। আমি বললাম, ‘আপনাদের সুবিধামতো আমাদের একটু জায়গা দিলেই হবে।’ আকাশ ভাই দুষ্টুমি করে বললেন, ‘তাহলে ছাদে বসে যান। আমরা আরাম করে যাই।’ আমি বললাম, ‘কোনো সমস্যা নাই। সেটা তো ভীষণ মজার ব্যাপার হবে!’ সবাই হো হো করে হেসে দিয়ে দুজনকে চালকের সঙ্গে সামনের সিটে বসতে দিলেন। সামনে দুইটা সিটই বলা চলে। চালকেরটা ছাড়া। আরামসে আমি আর ভুবন এঁটে যাই। সবাই গাড়িতে উঠে অপেক্ষা করছি। বাকিদের বসা হলে একসঙ্গে রওনা দেব। বড় দলটা আরও দুইটা জিপে ভাগ হয়ে উঠল। তবে ঝামেলা লেগেছিল ওই দলের দুজন ‘জেঠুমশাই’কে নিয়ে। তাঁরা দুজনে একই জায়গায় বসতে চান। অর্থাৎ, একই সিটে। এ নিয়ে তুমুল লঙ্কাকাণ্ড! গাল ফুলিয়ে, চোখ রাঙিয়ে যাঁর যাঁর পরিচয় দিচ্ছিলেন। মাঝখান দিয়ে বেচারা অমরদা হলেন তুলাধুনা। আমরা জিপের ভেতরে বসে থেকে দর্শকের মতো ওই নাটক-সিনেমা দেখছিলাম। পেছন থেকে কে যেন বলে উঠল, ‘আরে ওনারা এত বড় মানুষ হয়ে বাচ্চাদের মতো করছেন, অথচ আমাদের মিস্টার অ্যান্ড মিসেস এজাজের গাড়ির ছাদে বা পেছনে ঝুলে যেতেও আপত্তি নাই।’ সত্যিই যদি এমন পরিস্থিতি হতো, তাহলেও আমাদের কোনো আপত্তি ছিল না। গাড়ির ছাদে বা পেছনে ঝুলে ঝুলেই যেতাম। যাই হোক, সিনেমাটা আধা ঘণ্টার মতো চলল। অবশেষে অমরদা গালি হজম করে হাসিমুখে সবাইকে নিয়ে রওনা দিলেন। প্রায় ১২টা বেজে গিয়েছিল তখন।
আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ। ধীরে ধীরে ওপরের দিকে উঠছি, বুঝতে পারছিলাম। আর সে কী যে পাগল করা অপরূপ সৌন্দর্য! এই পথে যেতে যেতে ‘মাশাআল্লাহ’, ‘সুবহানআল্লাহ’, ‘ওয়াও’, ‘অ্যামেজিং’ শব্দগুলো আপনা-আপনি মুখ দিয়ে বের হয়ে যায়। সবাই মিলে এক এক করে গান ধরলাম। আকাশ ভাইয়ের গলা ভালো। তিনি অনেক গান গাইলেন। পুরোটা পথ এই গানের আসর সঙ্গী ছিল। ভুবনের গান শুনে তো সবাই মুগ্ধ। আকাশ ভাই আমাকে বলছিলেন, ‘বাহ, আপনার স্বামীর গানের গলা তো বেশ!’ মুচকি হেসে বললাম, ‘এমনি এমনি কি আর প্রেমে পড়েছি!’ এ কথা শুনে সবাই হেসে দিলেন। এরপর এল আমাদের প্রেমকাহিনির গল্পের অনুরোধ। গানের ফাঁকে ফাঁকে সেটাও হয়ে গেল। আমার গানের গলা ভালো না। ছেড়ে গাইতে পারি না। অনেকটা নাকি সুরে গাই। তবু সবার জোর অনুরোধে গাইতে হলো। একটার বেশি গাইলাম না। কারণ আমি ওই একটা গানই একটু ছেড়ে দিয়ে গাইতে পারি, ‘তোমার ঘরে বাস করে কারা...’।
আমাদের সামনে বসার খুব ভালো একটা সুফল পাওয়া গেছে। যতটা স্পষ্ট আমরা দুজন দেখতে পাচ্ছিলাম বাইরের দৃশ্য, পেছনের লোকজন হয়তো সেটার অর্ধেক দেখেছে। তবু যা দেখেছে, তাতে চোখ ছানাবড়া না হয়ে পারেই না। পথে থেমে থেমে পাহাড়ি ঝরনা দেখাচ্ছিলেন আমাদের চালক। তাঁর নাম রবিন। নামটা শুনে তাঁকে রবিন হুড ডাকতে ইচ্ছা হলো। রবিন হুড থেকে মনে পড়ল সালমান খানের ‘চুলবুল পান্ডে ওরফে রবিন হুড পান্ডে’ চরিত্রের কথা। আমি তাই তাঁকে ‘পান্ডেজি’ বলে ডাকা শুরু করলাম। পান্ডেজি নরম মানুষ। আস্তে-ধীরে কথা বলেন। নেপালি। মানে, সিকিমের বাসিন্দা আরকি। তিনি সবগুলো ঝরনার নাম ও বর্ণনা দিলেন। সব ঝরনার নামের সাইনবোর্ড নেই আবার। সেখানে নাম লেখা থাকে সাধারণত। আবার কোনো কোনো ঝরনার নাম নেই। সেগুলো ছোটখাটো। অনেক ঝরনার নাম পান্ডেজি নিজেও জানেন না। কারণ সেগুলো নতুন। সেভেন সিস্টার্স, নাগা, ভিম নালাসহ আরও ছোট-বড় কিছু ঝরনা দেখলাম। ভিম নালা ঝরনাটার আরেকটা নাম আছে। ‘অমিতাভ বচ্চন ফলস’। এমন নাম কেন, জিজ্ঞেস করতেই পান্ডেজি বললেন, ‘উ বহুত লম্বা হ্যায়। উ অ্যাক্টর হ্যায় না, অমিতাভ বচ্চন, উসকি তারাহ।’ লম্বায় এটা ২৭৫ ফুট। এর আরেক নাম ভিমা ফলস। স্থানীয় ভাষায় ভিমা বা ভিম নালা মানে ‘রেড স্নেক’ বা লাল সাপ। তাই এর আরেক নাম ‘রেড স্নেক’। বিগত কয়েক বছর ধরে পর্যটকেরা এই ঝরনাকে আবার ‘লাচুং নর্থ সিকিম ফলস’ নামেও ডাকছে। ঝরনার পাশাপাশি মেঘের কথা না বললেই নয়। পাহাড়ের চূড়ায় তুলার মতো লেগে থাকা মেঘ দেখা যায় দূর থেকে। আর পাহাড়ের নিচে স্বচ্ছ সবুজ তিস্তার পানি বয়ে চলে। ওপরের দিকে উঠতে উঠতে মেঘের ভেতর দিয়ে গিয়েছি আমরা। গাড়ি থেকে নেমেও ছুঁয়ে দেখার চেষ্টা করেছি। আসলে মেঘ নিজেই তো আমাদের জাপটে ধরে।
দুপুর থেকে পেটে উৎপাত শুরু হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু পথে টং দোকানের চা-বিস্কুট ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। শেষে বিকালের দিকে এক মুসলিম হোটেল পেলাম। পাহাড়ি রাস্তার একপাশে বেড়ার হোটেল। নিচের দিকে নেমে গেলে গ্রাম। সেখানে বেশির ভাগ মুসলমানরাই বাস করে। অনেকটা লুকিয়ে তারা গোমাংস রান্না করে খাওয়ায়। অমরদা আগে থেকে বলে রেখেছিলেন। তাই আমরা গরুর মাংস দিয়ে গরম ভাত-ডাল খেতে পারলাম। মনে হচ্ছিল অমৃত। রান্নাটাও বেশ। জম্পেশ খাওয়া দিয়ে আবার রওনা দিলাম। লাচুংয়ে পৌঁছাতে হবে। ততক্ষণে শুরু হয়ে গিয়েছিল গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। আলবৎ মাথায় বৃষ্টির ফোঁটা পড়েছিল। এরপর বাকিটা ইতিহাস। তবে পরদিন থেকে।
সন্ধ্যা নেমে এলে গাড়ির হেডলাইটের আলো ছাড়া গতি ছিল না। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, যাচ্ছি আবার মেঘের ভেতর দিয়ে। পথ একেবারে পিচ্ছিল। ভয় পাচ্ছিলাম না একটুও। কেননা, পান্ডেজি যেভাবে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তাতে ভরসা না করে পারা যায় না। তিনি মুখে তো অভয় দিচ্ছিলেনই, কাজ দিয়েও প্রমাণ করেছেন। সিকিমের এই পাহাড়ি পথ এমনভাবে তৈরি করা যে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা খুব কম। জায়গায় জায়গায় সতর্কবার্তা লেখা আছে। আর চালকদের এতটাই মুখস্থ রাস্তা যে তারা চোখ বুজে পাড়ি দিতে পারেন।
লাচুংয়ে ঢোকার আগেও অনুমতি লাগল। সেখানে এক বিজ্ঞপ্তিতে লেখা দেখলাম উত্তরের কোথায় কোথায় যাওয়া যাবে আর কোথায় কোথায় যাওয়া যাবে না। অবশ্যই লাচুংয়ে টিক চিহ্ন দেওয়া ছিল। সেটা দেখে মনে মনে খুশি হয়ে গেলাম। যাক বাবা, আটকে দিল না তাহলে। অনুমতি নিয়ে চলতে শুরু করলাম আবার। সাড়ে ৭টার পরপর পৌঁছে গেলাম গন্তব্যে। আর্মি চেকপোস্টের কাছাকাছি ‘লাচুং রিজেন্সি’তে গিয়ে উঠলাম। এখানে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা আগে থেকে করে রেখেছিলেন অমরদা। এই হোটেলে লোক মাত্র দুজন। যিনি ম্যানেজারের দায়িত্বে আছেন, তিনি নিজেই রান্না করেন। তাঁর সঙ্গে একজন আছেন, যিনি অতিথিদের ফরমাশ খাটেন। তাঁকে সাহায্যও করেন। আমরা যার যার রুম বেছে নিয়ে হাতমুখ ধুয়ে কাপড় বদলে নিলাম। ভাগ্যিস এখানে খাওয়া না পাওয়া যাওয়ার ভয় ছিল না।
ধীরে-সুস্থেই খাবারঘরে গেলাম। বুফে সিস্টেম করে রেখেছিলেন আমাদের রাঁধুনি। ভাত, ডাল, সবজি, রুটি, মটর পনির, সালাদ। এখানে আমিষজাতীয় কোনো রান্না হয় না। বেশ ভালোই লাগল খেতে। ভাত ছাড়া সব খেলাম অল্প করে। বড় দলটাকে আমার ভালো লাগছিল না। তারা সবকিছুতে একটা লোকদেখানো ভাব করছিল। সে যাক গে, খেয়েদেয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে অনেকে গল্প করছিলাম। এর মধ্যে হেঁশেল থেকে খবর এল, কেউ গরুর দুধ খেতে চায় কি না। তবে কিনে খেতে হবে। ভুবন খুব আগ্রহ নিয়ে দুধ আনতে গেল রান্নাঘরে। ফিরে এল একটা দুঃখ ভাব নিয়ে। ব্যাপার কী? এক গ্লাস দুধের দাম ৫০ রুপি! যদিও সে কিনে এনেছে এবং খুব কষ্ট করে গিলেছে। মনে হচ্ছিল টাকা গিলছে! সবার এক কথা, আমাদের দেশে ৭০ টাকায় লিটার আর এখানে মাত্র এক গ্লাস ৫০ রুপি! একটু বেশি হয়ে যায় না? এক গ্লাসের দাম পড়ছে তাহলে পঁয়ষট্টি টাকার মতো। গল্প-গুজব শেষ করে রুমে গেলাম ঘুমাতে। এমন সময় বাইরে হন্তদন্ত শুনলাম। পরদিন কে কোথায় যাবে সেটা নিয়ে বিস্তর ক্যাচাল লেগে গেল অমরদার সঙ্গে। কে আর লাগাবে। সেই বড় দলের পণ্ডিতেরা। অমরদার ভাষ্যমতে, জিরো পয়েন্টে গিয়ে কোনো লাভ নেই।
সময় নষ্ট না করে শুধু ইয়ামথাং ভ্যালি ঘুরে এলেই হবে। জিরো পয়েন্টে যেতে আর্মিরা ঝামেলা করতে পারে। তখন আবহাওয়াও সুবিধার ছিল না। আমাদের কোনো সমস্যা ছিল না। আমরা সব জেনে-বুঝে, অন্তর্জাল ঘেঁটে অমরদার কথায় রাজি ছিলাম। কিন্তু নাছোড়বান্দা বড় দলের লোকজন। কেউ যেতে চান, কেউ চান না। যাঁরা যেতে চান, তাঁদের কথা হলো, ‘টাকা দিচ্ছি আপনাকে, নেবেন না কেন? যাবই!’ অথচ অমরদা আগেই বলে রেখেছিলেন যে যদি অনুমতি না পাই, আবহাওয়া দখলে না থাকে কিংবা পরিস্থিতি ভিন্ন হয়, তবে আমাদের পরিকল্পনার পরিবর্তন হতে পারে। সে কথাটা আমাদের দলকে না বললেও আমরা জানতাম। সিকিম ঘুরতে গেলে এই কথাগুলো মাথায় রাখতে হয়। শেষমেশ সিদ্ধান্ত হলো যাঁরা জিরো পয়েন্টে যেতে চান, তাঁরা আলাদা যাবেন সকাল ৭টায়। আর বাকিরা নাশতা সেরে ৮টায় রওনা হবেন ইয়ামথাং ভ্যালির জন্য। জিরো পয়েন্ট ঘুরে বাকিরা সরাসরি ইয়ামথাং ভ্যালিতে চলে যাবেন। জিরো পয়েন্টে না যাওয়ার কারণ ছিল, সেখানে যা আছে তার চেয়ে কয়েক গুণ সুন্দর দৃশ্য ইয়ামথাং ভ্যালিতে আছে। শরীরের ওপর দিয়ে ধকল যাবে কি না, সে কথাও মাথা থেকে ফেলে দিলাম না। ওহ্, আরেকটা ব্যাপার, অমরদার কিন্তু জিরো পয়েন্টে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল না। কথা ছিল সাঙ্গুতে নিয়ে যাবেন। কিন্তু অনুমতি পাননি। সেখানে আমরা সবাই যেতে চেয়েছিলাম। অনুমতি পাননি বিধায় কয়েকজন জেঁকে ধরেছিলেন জিরো পয়েন্টে নিয়ে যেতে। আমাদের সাঙ্গুতে নিতে না পারায় কিন্তু তিনি পরে তাঁর সম্মানীটাও কম রেখেছিলেন।
বিতর্কের সিদ্ধান্ত জানার পর ঘুমাতে গেলাম। কিন্তু কী মুশকিল! ঘুম যে আসে না! এক ফোঁটাও না। না আমার, না ভুবনের। রাত যত বাড়ে, ঠান্ডা তার চেয়ে দ্বিগুণ হারে বাড়ে। ঘুম কী করে আসে এমন অবস্থায়! রুমে হিটার আনালাম। সেখানে আবার রুম হিটারের জন্য আলাদা খরচ করতে হয়। কিন্তু সারা রাতেও হিটার ঘরটাকে গরম করতে পারল না। এদিকে বাইরে হচ্ছে তুষারপাত। তাপমাত্রা সম্ভবত মাইনাস ৯ ছিল। একাত-ওকাত করে করে রাত পার করলাম। সব মিলিয়ে বড়জোর ঘণ্টা দেড়েক ঘুমিয়েছি; ভোরের দিকে যখন ঘরটা গরম হলো।

আপনি কি মিষ্টি খেতে বেশ ভালোবাসেন? মিষ্টি দেখলেই নিজেকে সামলে রাখতে পারেন না? এমন অনেকেই আছেন, যাঁদের মিষ্টি নিয়ে অবসেশন কাজ করে। তাঁরা টিভি দেখতে দেখতে এক টব আইসক্রিম সাবাড় করে ফেলতে পারেন। কেউ আবার বন্ধুর জন্মদিনে বড় এক টুকরা কেক খেয়ে ফেলেন কোনো কিছু না ভেবেই। এমন ঘটনা আমাদের সবার জীবনেই কম-বেশি
৫ ঘণ্টা আগে
হিমালয়কন্যা নেপালের জেলা আরঘাখাঁচি। সেই জেলার পাণিনি গ্রাম পঞ্চায়েতের সিমলে এলাকা এখন এক অপূর্ব দৃশ্যে সেজেছে। পাহাড়ের ঢালে ঢালে সারিবদ্ধ গাছগুলো পাকা কমলার ভারে নুয়ে পড়েছে। আর এতেই পুরো জনপদ যেন সেজেছে সোনালি-হলুদ রঙে। কিন্তু এ দৃশ্য কেবল চোখের প্রশান্তি নয়; বরং এটি একটি অর্থনৈতিক বিপ্লবের গল্প...
৭ ঘণ্টা আগে
বেসন ত্বক গভীর থেকে পরিষ্কার করে। যাঁরা ভাবছেন, বেসন ব্যবহারে ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে যেতে পারে, তাঁরা জেনে রাখুন বিশেষ কয়েকটি উপাদান মেশালে বেসনের তৈরি প্যাকও ত্বক আর্দ্র রেখে উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দিতে পারে। এসব ব্যবহারে ত্বকের অবাঞ্ছিত ব্রণও দূর হবে।...
৯ ঘণ্টা আগে
পৌষের রোদমাখা দিন চলে এল। টানা দুই মাস শীতের হিম শীতল দিন কাটানোর পালা। শীতকাল মানে যেন একটু আরাম আরাম ভাব, একটু অলসতা আর ব্যাপক খাওয়া-দাওয়া। এ সবই হয় মূলত বছরের এই বিশেষ সময়টিতে সবকিছু গুছিয়ে নতুন একটা বছরের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য। সবকিছু মিলিয়ে ঘরোয়া উষ্ণতা ও আনন্দ নিয়ে শীতকালটাকে একটু...
১১ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক

আপনি কি মিষ্টি খেতে বেশ ভালোবাসেন? মিষ্টি দেখলেই নিজেকে সামলে রাখতে পারেন না? এমন অনেকেই আছেন, যাঁদের মিষ্টি নিয়ে অবসেশন কাজ করে। তাঁরা টিভি দেখতে দেখতে এক টব আইসক্রিম সাবাড় করে ফেলতে পারেন। কেউ আবার বন্ধুর জন্মদিনে বড় এক টুকরা কেক খেয়ে ফেলেন কোনো কিছু না ভেবেই। এমন ঘটনা আমাদের সবার জীবনেই কম-বেশি ঘটে। অনিচ্ছাকৃতভাবে বেশি চিনি বা ক্যালরি খেয়ে ফেলার পরদিন সকালে আমাদের মনে দানা বাঁধে অপরাধ বোধ, আর শুরু হয় নিজেকে ‘শাস্তি’ দেওয়ার পালা। আমরা ভাবি, আজ খাবার না খেয়ে বা খুব কম খেয়ে আগের রাতের ঘাটতি পুষিয়ে নেব। কিন্তু পুষ্টিবিদদের মতে, এই অভ্যাসটিই আমাদের স্বাস্থ্যের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে।
অতিরিক্ত খাবার বা চিনি খেয়ে ফেলাটা জীবনের এক অতি স্বাভাবিক অংশ। এর জন্য নিজেকে শাস্তি দেওয়া বা ক্লিনসিং করার প্রয়োজন নেই। বরং প্রচুর পানি পান, হালকা ব্যায়াম, ভারসাম্যপূর্ণ খাবার এবং নিজের প্রতি মমতা নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসাই সুস্থ থাকার আসল চাবিকাঠি। মনে রাখবেন, আপনার সুস্বাস্থ্য গড়ে ওঠে আপনার বড় ক্যানভাসের জীবনধারা দিয়ে, একটি মাত্র রাত দিয়ে নয়। ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক ডায়েটিশিয়ান ভিক্টোরিয়া হুইটিংটন এবং সাম্প্রতিক পুষ্টি গবেষণার আলোকে জেনে নিন, একদিনের অনিয়ম সামলে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার বিজ্ঞানসম্মত উপায়।

১. নিজেকে বঞ্চিত করবেন না
বেশি খেয়ে ফেলার পরদিন না খেয়ে থাকা বা খুব অল্প খাওয়ার যে প্রবণতা, তা আসলে উল্টো ফল আনে। গবেষণায় দেখা গেছে, খাবার নিয়ে অতিরিক্ত কড়াকড়ি করলে খাবারের প্রতি আকর্ষণ আরও বেড়ে যায়, যা পরবর্তী সময়ে আবার অনিয়ন্ত্রিত খাওয়ার দিকে ঠেলে দেয়। তাই অতিরিক্ত চিনি খেয়ে ফেলার পরদিন খাবার কমিয়ে দেওয়ার বদলে প্রোটিন, ফাইবার এবং ভালো ফ্যাটের সমন্বয়ে একটি ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্যাভ্যাসে ফিরে আসাই বুদ্ধিমানের কাজ।
২. সকালের নাশতা হোক প্রোটিন ও ফাইবারসমৃদ্ধ
অনিয়মের পরদিন সকালের শুরুটা হওয়া চাই জুতসই। গবেষণা বলছে, উচ্চ প্রোটিনযুক্ত সকালের নাশতা রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখে এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এর সঙ্গে পর্যাপ্ত ফাইবার যোগ করলে তা রক্তে গ্লুকোজের আকস্মিক বৃদ্ধি রোধ করে এবং সারা দিন আপনাকে তৃপ্ত রাখে। খাবার বাদ দিলে শরীরে ‘ঘ্রেলিন’ বা ক্ষুধা উদ্দীপক হরমোন বেড়ে যায়, যা দিনশেষে আপনাকে আবারও বেশি খেতে প্ররোচিত করতে পারে।
৩. শরীরকে সচল রাখুন এবং পানি পান করুন
অতিরিক্ত খাওয়ার পর শরীরে যে অলসতা বা ভারী ভাব কাজ করে, তার পেছনে ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতার বড় ভূমিকা থাকে। পর্যাপ্ত পানি পান করলে হজমপ্রক্রিয়া সহজ হয়। পাশাপাশি হালকা শারীরিক পরিশ্রম বা অল্প হাঁটাহাঁটি করা জরুরি। এতে আমাদের পেশিগুলো রক্তে জমে থাকা শর্করাকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারে এবং ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায়।

৪. ‘পারফেকশন’ নয়, গুরুত্ব দিন সামগ্রিক অভ্যাসে
পুষ্টিবিদ হুইটিংটন জোর দিয়ে বলেছেন, দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য মূলত আপনার নিয়মিত অভ্যাসের ওপর নির্ভর করে, কোনো একদিনের অনিয়মের ওপর নয়। নার্সেস হেলথ স্টাডির মতো বড় বড় গবেষণাও বলছে, কোনো একটি নির্দিষ্ট দিনের খাদ্যাভ্যাস নয়; বরং আপনার দীর্ঘদিনের খাদ্যাভ্যাসের ধরনই নির্ধারণ করে আপনার দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি। তাই একদিন বেশি খেয়ে ফেললে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। স্বাস্থ্য মানে নিখুঁত হওয়া নয়; বরং একটি সুস্থ ধারায় থাকা।
৫. নিজের প্রতি সদয় হোন
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো, নিজেকে ক্ষমা করা। গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা নিজেদের প্রতি সদয় থাকেন, তাঁরা আবেগতাড়িত হয়ে বেশি খাওয়ার অভ্যাসটি দ্রুত কাটিয়ে উঠতে পারেন। নিজেকে দোষারোপ না করে বরং বোঝার চেষ্টা করুন, সে মুহূর্তে আপনার কিসের প্রয়োজন ছিল। সমালোচনা নয়, কৌতূহলী মন নিয়ে নিজের আচরণ বিশ্লেষণ করলে আপনি ভবিষ্যতে আরও ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
সূত্র: ডেইলি মেইল

আপনি কি মিষ্টি খেতে বেশ ভালোবাসেন? মিষ্টি দেখলেই নিজেকে সামলে রাখতে পারেন না? এমন অনেকেই আছেন, যাঁদের মিষ্টি নিয়ে অবসেশন কাজ করে। তাঁরা টিভি দেখতে দেখতে এক টব আইসক্রিম সাবাড় করে ফেলতে পারেন। কেউ আবার বন্ধুর জন্মদিনে বড় এক টুকরা কেক খেয়ে ফেলেন কোনো কিছু না ভেবেই। এমন ঘটনা আমাদের সবার জীবনেই কম-বেশি ঘটে। অনিচ্ছাকৃতভাবে বেশি চিনি বা ক্যালরি খেয়ে ফেলার পরদিন সকালে আমাদের মনে দানা বাঁধে অপরাধ বোধ, আর শুরু হয় নিজেকে ‘শাস্তি’ দেওয়ার পালা। আমরা ভাবি, আজ খাবার না খেয়ে বা খুব কম খেয়ে আগের রাতের ঘাটতি পুষিয়ে নেব। কিন্তু পুষ্টিবিদদের মতে, এই অভ্যাসটিই আমাদের স্বাস্থ্যের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে।
অতিরিক্ত খাবার বা চিনি খেয়ে ফেলাটা জীবনের এক অতি স্বাভাবিক অংশ। এর জন্য নিজেকে শাস্তি দেওয়া বা ক্লিনসিং করার প্রয়োজন নেই। বরং প্রচুর পানি পান, হালকা ব্যায়াম, ভারসাম্যপূর্ণ খাবার এবং নিজের প্রতি মমতা নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসাই সুস্থ থাকার আসল চাবিকাঠি। মনে রাখবেন, আপনার সুস্বাস্থ্য গড়ে ওঠে আপনার বড় ক্যানভাসের জীবনধারা দিয়ে, একটি মাত্র রাত দিয়ে নয়। ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক ডায়েটিশিয়ান ভিক্টোরিয়া হুইটিংটন এবং সাম্প্রতিক পুষ্টি গবেষণার আলোকে জেনে নিন, একদিনের অনিয়ম সামলে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার বিজ্ঞানসম্মত উপায়।

১. নিজেকে বঞ্চিত করবেন না
বেশি খেয়ে ফেলার পরদিন না খেয়ে থাকা বা খুব অল্প খাওয়ার যে প্রবণতা, তা আসলে উল্টো ফল আনে। গবেষণায় দেখা গেছে, খাবার নিয়ে অতিরিক্ত কড়াকড়ি করলে খাবারের প্রতি আকর্ষণ আরও বেড়ে যায়, যা পরবর্তী সময়ে আবার অনিয়ন্ত্রিত খাওয়ার দিকে ঠেলে দেয়। তাই অতিরিক্ত চিনি খেয়ে ফেলার পরদিন খাবার কমিয়ে দেওয়ার বদলে প্রোটিন, ফাইবার এবং ভালো ফ্যাটের সমন্বয়ে একটি ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্যাভ্যাসে ফিরে আসাই বুদ্ধিমানের কাজ।
২. সকালের নাশতা হোক প্রোটিন ও ফাইবারসমৃদ্ধ
অনিয়মের পরদিন সকালের শুরুটা হওয়া চাই জুতসই। গবেষণা বলছে, উচ্চ প্রোটিনযুক্ত সকালের নাশতা রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখে এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এর সঙ্গে পর্যাপ্ত ফাইবার যোগ করলে তা রক্তে গ্লুকোজের আকস্মিক বৃদ্ধি রোধ করে এবং সারা দিন আপনাকে তৃপ্ত রাখে। খাবার বাদ দিলে শরীরে ‘ঘ্রেলিন’ বা ক্ষুধা উদ্দীপক হরমোন বেড়ে যায়, যা দিনশেষে আপনাকে আবারও বেশি খেতে প্ররোচিত করতে পারে।
৩. শরীরকে সচল রাখুন এবং পানি পান করুন
অতিরিক্ত খাওয়ার পর শরীরে যে অলসতা বা ভারী ভাব কাজ করে, তার পেছনে ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতার বড় ভূমিকা থাকে। পর্যাপ্ত পানি পান করলে হজমপ্রক্রিয়া সহজ হয়। পাশাপাশি হালকা শারীরিক পরিশ্রম বা অল্প হাঁটাহাঁটি করা জরুরি। এতে আমাদের পেশিগুলো রক্তে জমে থাকা শর্করাকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারে এবং ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায়।

৪. ‘পারফেকশন’ নয়, গুরুত্ব দিন সামগ্রিক অভ্যাসে
পুষ্টিবিদ হুইটিংটন জোর দিয়ে বলেছেন, দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য মূলত আপনার নিয়মিত অভ্যাসের ওপর নির্ভর করে, কোনো একদিনের অনিয়মের ওপর নয়। নার্সেস হেলথ স্টাডির মতো বড় বড় গবেষণাও বলছে, কোনো একটি নির্দিষ্ট দিনের খাদ্যাভ্যাস নয়; বরং আপনার দীর্ঘদিনের খাদ্যাভ্যাসের ধরনই নির্ধারণ করে আপনার দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি। তাই একদিন বেশি খেয়ে ফেললে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। স্বাস্থ্য মানে নিখুঁত হওয়া নয়; বরং একটি সুস্থ ধারায় থাকা।
৫. নিজের প্রতি সদয় হোন
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো, নিজেকে ক্ষমা করা। গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা নিজেদের প্রতি সদয় থাকেন, তাঁরা আবেগতাড়িত হয়ে বেশি খাওয়ার অভ্যাসটি দ্রুত কাটিয়ে উঠতে পারেন। নিজেকে দোষারোপ না করে বরং বোঝার চেষ্টা করুন, সে মুহূর্তে আপনার কিসের প্রয়োজন ছিল। সমালোচনা নয়, কৌতূহলী মন নিয়ে নিজের আচরণ বিশ্লেষণ করলে আপনি ভবিষ্যতে আরও ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
সূত্র: ডেইলি মেইল

‘জলদি ওঠো। দেরি করা যাবে না। কেউ যেন বলতে না পারে আমাদের জন্য দেরি হয়েছে।’ অ্যালার্ম বাজতেই ভুবন ওর চিরচেনা সংলাপ দিচ্ছিল! ‘চিরচেনা’ বললাম এ কারণে, সে কারও সঙ্গে কোথাও যাওয়ার আগে ঠিক এই কথাগুলোই বলে। ওর কথা হচ্ছে...
২৫ অক্টোবর ২০২২
হিমালয়কন্যা নেপালের জেলা আরঘাখাঁচি। সেই জেলার পাণিনি গ্রাম পঞ্চায়েতের সিমলে এলাকা এখন এক অপূর্ব দৃশ্যে সেজেছে। পাহাড়ের ঢালে ঢালে সারিবদ্ধ গাছগুলো পাকা কমলার ভারে নুয়ে পড়েছে। আর এতেই পুরো জনপদ যেন সেজেছে সোনালি-হলুদ রঙে। কিন্তু এ দৃশ্য কেবল চোখের প্রশান্তি নয়; বরং এটি একটি অর্থনৈতিক বিপ্লবের গল্প...
৭ ঘণ্টা আগে
বেসন ত্বক গভীর থেকে পরিষ্কার করে। যাঁরা ভাবছেন, বেসন ব্যবহারে ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে যেতে পারে, তাঁরা জেনে রাখুন বিশেষ কয়েকটি উপাদান মেশালে বেসনের তৈরি প্যাকও ত্বক আর্দ্র রেখে উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দিতে পারে। এসব ব্যবহারে ত্বকের অবাঞ্ছিত ব্রণও দূর হবে।...
৯ ঘণ্টা আগে
পৌষের রোদমাখা দিন চলে এল। টানা দুই মাস শীতের হিম শীতল দিন কাটানোর পালা। শীতকাল মানে যেন একটু আরাম আরাম ভাব, একটু অলসতা আর ব্যাপক খাওয়া-দাওয়া। এ সবই হয় মূলত বছরের এই বিশেষ সময়টিতে সবকিছু গুছিয়ে নতুন একটা বছরের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য। সবকিছু মিলিয়ে ঘরোয়া উষ্ণতা ও আনন্দ নিয়ে শীতকালটাকে একটু...
১১ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক, ঢাকা

‘চাকরি ছেড়ে কৃষিতে লাখপতি’ কিংবা ‘যুবকের ভাগ্য ফিরল কৃষিতে’। এমন সংবাদ আমরা প্রায়ই দেখি সংবাদমাধ্যমে। এই যুবকেরা কখনো কখনো নীরবে বদলে দেয় পুরো জনপদের শত শত কৃষকের জীবন। এসব ঘটনা যে শুধু বাংলাদেশেই ঘটে, তা নয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঘটে থাকে। নেপালেও এমনি একটি ঘটনা ঘটেছে। তা প্রকাশিত হয়েছে দেশটির জনপ্রিয় সংবাদপত্র ‘কাঠমান্ডু পোস্ট’-এ।
হিমালয়কন্যা নেপালের জেলা আরঘাখাঁচি। সেই জেলার পাণিনি গ্রাম পঞ্চায়েতের সিমলে এলাকা এখন এক অপূর্ব দৃশ্যে সেজেছে। পাহাড়ের ঢালে ঢালে সারিবদ্ধ গাছগুলো পাকা কমলার ভারে নুয়ে পড়েছে। আর এতেই পুরো জনপদ যেন সেজেছে সোনালি-হলুদ রঙে। কিন্তু এ দৃশ্য কেবল চোখের প্রশান্তি নয়; বরং এটি একটি অর্থনৈতিক বিপ্লবের গল্প। সেখানে এই সোনালি-হলুদ ফলটি বদলে দিয়েছে শত শত কৃষকের ভাগ্য এবং পুরো গ্রামের জীবনযাত্রা।
ঘরের আঙিনায় চকচকে সাফল্য
এই পরিবর্তনের উজ্জ্বল প্রতীক তরুণ কৃষক রেবতি ভট্টরাই। উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে ভাগ্যের অন্বেষণে তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন বিদেশে। সেখানে প্রায় এক দশক হাড়ভাঙা খাটুনির পর কিছু অর্থ নিয়ে দেশে ফিরে এক সাহসী সিদ্ধান্ত নেন তিনি। পৈতৃক জমিতে প্রচলিত দানাদার শস্যের চাষ বাদ দিয়ে তৈরি করেন কমলার বাগান। আজ তাঁর ৫৩৫টি কমলাগাছ ফলে ভরপুর। গত বছর ১৭০ কুইন্টাল কমলা বিক্রি করে তিনি ৯ লাখ রুপি আয় করেছেন। এবার ফলন আরও ভালো হওয়ায় ২০০ কুইন্টাল উৎপাদনের আশা করছেন তিনি। রেবতি বলেন, ‘বিদেশের চাকরির চেয়ে কমলার চাষ আমার জীবনকে বেশি বদলে দিয়েছে। এখন আর আমাকে বাজারের পেছনে ছুটতে হয় না। ফল পাকার আগেই ব্যবসায়ীরা এসে বাগান বুক করে নেন।’ কমলার আয়েই তিনি সিমলেতে আড়াই তলা একটি পাকা বাড়ি তুলেছেন।
পেনশনের চেয়েও বেশি আয়
শুধু তরুণেরাই নন, এ বিপ্লবে শামিল হয়েছেন অভিজ্ঞ ব্যক্তিরাও। তাঁদের মধ্যে একজন অবসরপ্রাপ্ত কৃষি টেকনিশিয়ান দধি রাম গৌতম। পাঁচ বছর ধরে তিনি বাণিজ্যিক কমলা চাষ করছেন। তাঁর ২৫০টি গাছের কমলা থেকে বছরে যে আয় হয়, তা তাঁর সরকারি পেনশনের চেয়ে তিন গুণ বেশি। বুটওয়াল, পাল্পা ও পোখারা থেকে ব্যবসায়ীরা গাড়ি নিয়ে তাঁর বাড়িতে এসে নগদ টাকায় কমলা কিনে নিয়ে যান।
কমলা চাষে এমনকি জনপ্রতিনিধিরাও পিছিয়ে নেই। ওয়ার্ড চেয়ারম্যান চন্দ্রকান্ত পাউডেল তাঁর জনসেবামূলক কাজের পাশাপাশি ৬০০টি কমলাগাছের বিশাল বাগান সামলাচ্ছেন। এ বছর শিলাবৃষ্টি বা পোকামাকড়ের আক্রমণ না থাকায় ফলন হয়েছে বাম্পার, যা আরও বেশি লাভের আশা জোগাচ্ছে।
কমলার এক নতুন হাব
পাণিনি-১-এর সলেরি টোল গ্রামে এখন প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই কমলার বাগান রয়েছে। গ্রামের কৃষকেরা নিজেদের সংগঠিত করতে গঠন করেছেন পাখাপানি কৃষক দল। ৪৫টি পরিবারের মধ্যে ৩০টিই এখন এই দলের সদস্য। গ্রামের বড় চাষি টুক বাহাদুর দারলামি গত বছর ৩ দশমিক ৫ লাখ রুপি আয় করেছেন কমলা চাষ করে। তিনি জানিয়েছেন, পুরো সলেরি গ্রাম এখন কমলার হাবে পরিণত হয়েছে। ফলে তাঁদের জমিগুলো আর অনাবাদি থাকছে না এবং গ্রাম থেকে মানুষের শহরে চলে যাওয়ার প্রবণতাও কমেছে।
অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক প্রভাব
কৃষকদের এ সাফল্যে হাত বাড়িয়েছে অ্যাগ্রিকালচার নলেজ সেন্টার। সেচের সুবিধার জন্য তারা বড় বড় পানির ট্যাংক তৈরি করে দিয়েছে গ্রামটিতে। কৃষি টেকনিশিয়ান শারদা আচার্যের মতে, সিমলে গ্রামের এই ব্যাপক সাফল্য দেখে প্রতিবেশী গ্রামগুলোও এখন বাণিজ্যিকভাবে কমলা চাষে ঝুঁকছে। শুধু সিমলে গ্রাম থেকেই বছরে ৩ কোটি রুপিরও বেশি কমলা বিক্রি হয়। গত বছর পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি কমলার দাম ছিল ৬০ রুপি। এ বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০ রুপিতে। কমলার আয়ে কৃষকেরা সন্তানদের ভালো শিক্ষা দিচ্ছেন, ঘরবাড়ি সংস্কার করছেন এবং গবাদিপশুর আধুনিক খামার গড়ে তুলছেন।
আরঘাখাঁচির এই জনপদে কমলা এখন আর কেবল একটি ফল নয়—স্বনির্ভরতার প্রতীক। যখন পুরো গ্রাম কমলার হলুদ রঙে ঝলমল করে ওঠে, তখন তা কেবল ঋতু পরিবর্তনের জানান দেয় না; বরং এক সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের গল্প শোনায়।
সূত্র: কাঠমান্ডু পোস্ট

‘চাকরি ছেড়ে কৃষিতে লাখপতি’ কিংবা ‘যুবকের ভাগ্য ফিরল কৃষিতে’। এমন সংবাদ আমরা প্রায়ই দেখি সংবাদমাধ্যমে। এই যুবকেরা কখনো কখনো নীরবে বদলে দেয় পুরো জনপদের শত শত কৃষকের জীবন। এসব ঘটনা যে শুধু বাংলাদেশেই ঘটে, তা নয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঘটে থাকে। নেপালেও এমনি একটি ঘটনা ঘটেছে। তা প্রকাশিত হয়েছে দেশটির জনপ্রিয় সংবাদপত্র ‘কাঠমান্ডু পোস্ট’-এ।
হিমালয়কন্যা নেপালের জেলা আরঘাখাঁচি। সেই জেলার পাণিনি গ্রাম পঞ্চায়েতের সিমলে এলাকা এখন এক অপূর্ব দৃশ্যে সেজেছে। পাহাড়ের ঢালে ঢালে সারিবদ্ধ গাছগুলো পাকা কমলার ভারে নুয়ে পড়েছে। আর এতেই পুরো জনপদ যেন সেজেছে সোনালি-হলুদ রঙে। কিন্তু এ দৃশ্য কেবল চোখের প্রশান্তি নয়; বরং এটি একটি অর্থনৈতিক বিপ্লবের গল্প। সেখানে এই সোনালি-হলুদ ফলটি বদলে দিয়েছে শত শত কৃষকের ভাগ্য এবং পুরো গ্রামের জীবনযাত্রা।
ঘরের আঙিনায় চকচকে সাফল্য
এই পরিবর্তনের উজ্জ্বল প্রতীক তরুণ কৃষক রেবতি ভট্টরাই। উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে ভাগ্যের অন্বেষণে তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন বিদেশে। সেখানে প্রায় এক দশক হাড়ভাঙা খাটুনির পর কিছু অর্থ নিয়ে দেশে ফিরে এক সাহসী সিদ্ধান্ত নেন তিনি। পৈতৃক জমিতে প্রচলিত দানাদার শস্যের চাষ বাদ দিয়ে তৈরি করেন কমলার বাগান। আজ তাঁর ৫৩৫টি কমলাগাছ ফলে ভরপুর। গত বছর ১৭০ কুইন্টাল কমলা বিক্রি করে তিনি ৯ লাখ রুপি আয় করেছেন। এবার ফলন আরও ভালো হওয়ায় ২০০ কুইন্টাল উৎপাদনের আশা করছেন তিনি। রেবতি বলেন, ‘বিদেশের চাকরির চেয়ে কমলার চাষ আমার জীবনকে বেশি বদলে দিয়েছে। এখন আর আমাকে বাজারের পেছনে ছুটতে হয় না। ফল পাকার আগেই ব্যবসায়ীরা এসে বাগান বুক করে নেন।’ কমলার আয়েই তিনি সিমলেতে আড়াই তলা একটি পাকা বাড়ি তুলেছেন।
পেনশনের চেয়েও বেশি আয়
শুধু তরুণেরাই নন, এ বিপ্লবে শামিল হয়েছেন অভিজ্ঞ ব্যক্তিরাও। তাঁদের মধ্যে একজন অবসরপ্রাপ্ত কৃষি টেকনিশিয়ান দধি রাম গৌতম। পাঁচ বছর ধরে তিনি বাণিজ্যিক কমলা চাষ করছেন। তাঁর ২৫০টি গাছের কমলা থেকে বছরে যে আয় হয়, তা তাঁর সরকারি পেনশনের চেয়ে তিন গুণ বেশি। বুটওয়াল, পাল্পা ও পোখারা থেকে ব্যবসায়ীরা গাড়ি নিয়ে তাঁর বাড়িতে এসে নগদ টাকায় কমলা কিনে নিয়ে যান।
কমলা চাষে এমনকি জনপ্রতিনিধিরাও পিছিয়ে নেই। ওয়ার্ড চেয়ারম্যান চন্দ্রকান্ত পাউডেল তাঁর জনসেবামূলক কাজের পাশাপাশি ৬০০টি কমলাগাছের বিশাল বাগান সামলাচ্ছেন। এ বছর শিলাবৃষ্টি বা পোকামাকড়ের আক্রমণ না থাকায় ফলন হয়েছে বাম্পার, যা আরও বেশি লাভের আশা জোগাচ্ছে।
কমলার এক নতুন হাব
পাণিনি-১-এর সলেরি টোল গ্রামে এখন প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই কমলার বাগান রয়েছে। গ্রামের কৃষকেরা নিজেদের সংগঠিত করতে গঠন করেছেন পাখাপানি কৃষক দল। ৪৫টি পরিবারের মধ্যে ৩০টিই এখন এই দলের সদস্য। গ্রামের বড় চাষি টুক বাহাদুর দারলামি গত বছর ৩ দশমিক ৫ লাখ রুপি আয় করেছেন কমলা চাষ করে। তিনি জানিয়েছেন, পুরো সলেরি গ্রাম এখন কমলার হাবে পরিণত হয়েছে। ফলে তাঁদের জমিগুলো আর অনাবাদি থাকছে না এবং গ্রাম থেকে মানুষের শহরে চলে যাওয়ার প্রবণতাও কমেছে।
অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক প্রভাব
কৃষকদের এ সাফল্যে হাত বাড়িয়েছে অ্যাগ্রিকালচার নলেজ সেন্টার। সেচের সুবিধার জন্য তারা বড় বড় পানির ট্যাংক তৈরি করে দিয়েছে গ্রামটিতে। কৃষি টেকনিশিয়ান শারদা আচার্যের মতে, সিমলে গ্রামের এই ব্যাপক সাফল্য দেখে প্রতিবেশী গ্রামগুলোও এখন বাণিজ্যিকভাবে কমলা চাষে ঝুঁকছে। শুধু সিমলে গ্রাম থেকেই বছরে ৩ কোটি রুপিরও বেশি কমলা বিক্রি হয়। গত বছর পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি কমলার দাম ছিল ৬০ রুপি। এ বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০ রুপিতে। কমলার আয়ে কৃষকেরা সন্তানদের ভালো শিক্ষা দিচ্ছেন, ঘরবাড়ি সংস্কার করছেন এবং গবাদিপশুর আধুনিক খামার গড়ে তুলছেন।
আরঘাখাঁচির এই জনপদে কমলা এখন আর কেবল একটি ফল নয়—স্বনির্ভরতার প্রতীক। যখন পুরো গ্রাম কমলার হলুদ রঙে ঝলমল করে ওঠে, তখন তা কেবল ঋতু পরিবর্তনের জানান দেয় না; বরং এক সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের গল্প শোনায়।
সূত্র: কাঠমান্ডু পোস্ট

‘জলদি ওঠো। দেরি করা যাবে না। কেউ যেন বলতে না পারে আমাদের জন্য দেরি হয়েছে।’ অ্যালার্ম বাজতেই ভুবন ওর চিরচেনা সংলাপ দিচ্ছিল! ‘চিরচেনা’ বললাম এ কারণে, সে কারও সঙ্গে কোথাও যাওয়ার আগে ঠিক এই কথাগুলোই বলে। ওর কথা হচ্ছে...
২৫ অক্টোবর ২০২২
আপনি কি মিষ্টি খেতে বেশ ভালোবাসেন? মিষ্টি দেখলেই নিজেকে সামলে রাখতে পারেন না? এমন অনেকেই আছেন, যাঁদের মিষ্টি নিয়ে অবসেশন কাজ করে। তাঁরা টিভি দেখতে দেখতে এক টব আইসক্রিম সাবাড় করে ফেলতে পারেন। কেউ আবার বন্ধুর জন্মদিনে বড় এক টুকরা কেক খেয়ে ফেলেন কোনো কিছু না ভেবেই। এমন ঘটনা আমাদের সবার জীবনেই কম-বেশি
৫ ঘণ্টা আগে
বেসন ত্বক গভীর থেকে পরিষ্কার করে। যাঁরা ভাবছেন, বেসন ব্যবহারে ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে যেতে পারে, তাঁরা জেনে রাখুন বিশেষ কয়েকটি উপাদান মেশালে বেসনের তৈরি প্যাকও ত্বক আর্দ্র রেখে উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দিতে পারে। এসব ব্যবহারে ত্বকের অবাঞ্ছিত ব্রণও দূর হবে।...
৯ ঘণ্টা আগে
পৌষের রোদমাখা দিন চলে এল। টানা দুই মাস শীতের হিম শীতল দিন কাটানোর পালা। শীতকাল মানে যেন একটু আরাম আরাম ভাব, একটু অলসতা আর ব্যাপক খাওয়া-দাওয়া। এ সবই হয় মূলত বছরের এই বিশেষ সময়টিতে সবকিছু গুছিয়ে নতুন একটা বছরের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য। সবকিছু মিলিয়ে ঘরোয়া উষ্ণতা ও আনন্দ নিয়ে শীতকালটাকে একটু...
১১ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক, ঢাকা

রূপচর্চায় বেসন খুব পরিচিত একটি উপকরণ। একসময় ত্বক পরিষ্কার করতে সাবানের পরিবর্তে বেসন ব্যবহার করা হতো। শীতে ত্বকের নির্জীব ভাব নিয়ে যাঁরা চিন্তায় রয়েছেন, তাঁরা সহজলভ্য এই উপকরণটি রোজকার ত্বকের যত্নে ব্যবহার করে নানা উপকার পেতে পারেন।
এ কথা তো সবাই জানেন, শীতকালের শুষ্ক আবহাওয়ায় ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখা খুব জরুরি। পাশাপাশি ত্বক দূষণমুক্ত রাখাও গুরুত্বপূর্ণ। বেসন ত্বক গভীর থেকে পরিষ্কার করে। যাঁরা ভাবছেন, বেসন ব্যবহারে ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে যেতে পারে, তাঁরা জেনে রাখুন বিশেষ কয়েকটি উপাদান মেশালে বেসনের তৈরি প্যাকও ত্বক আর্দ্র রেখে উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দিতে পারে। এসব ব্যবহারে ত্বকের অবাঞ্ছিত ব্রণও দূর হবে।
বেসন ও এক্সট্রা ভার্জিন নারকেল তেলের প্যাক

পুরো শরীরের ত্বকে মাখার জন্য বেসন নিন। এতে কয়েক চামচ এক্সট্রা ভার্জিন নারকেল তেল নিন। এরপর ২ টেবিল চামচ দুধ মেশাতে পারেন। প্যাক তৈরিতে যতটুকু পানি প্রয়োজন, তা যোগ করুন। এই প্যাক ত্বকে লাগিয়ে রাখুন আধা শুকনো হওয়া পর্যন্ত। এরপর আলতো করে কুসুম গরম পানিতে পুরো শরীর ধুয়ে নিন। নারকেল তেল ও দুধ রুক্ষ ত্বকে গভীর থেকে পুষ্টি জোগায় ও ময়শ্চারাইজ করে। পাশাপাশি এ প্যাক ত্বকের ডিপ ক্লিনজিংয়েও সহায়তা করে। যাঁদের ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক, তাদের জন্য এ প্যাক খুবই ভালো কাজ করে।
বেসন, টক দই ও হলুদের প্যাক
এ সব উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে একটি ঘন মিশ্রণ তৈরি করুন। পুরো শরীরে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর হালকা গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে তা দিয়ে শরীর আলতো ঘষে প্যাক দিয়ে আলতো করে ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। টক দই ত্বকের আর্দ্রতা ও নমনীয়তা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি প্রাকৃতিক ব্লিচ হিসেবেও দুর্দান্ত কাজ করে। অন্যদিকে হলুদ ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়, দাগছোপ কমায় ও ব্রণের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
বেসন ও গাঁদা ফুল বাটার প্যাক
বেসনের সঙ্গে সমপরিমাণ গাঁদা ফুল বাটা মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করে নিন। এই প্যাক মুখ, গলা ও ঘাড়ে লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিট। তারপর ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের শুষ্কতা কমাতে ও নরম করতে এ প্যাক ভালো কাজ করে। যাঁদের ত্বকে ব্রণ ও দাগ রয়েছে তাঁরা প্রতি সপ্তাহে একবার করে এই প্যাক মুখে ব্যবহার করতে পারেন।
ডিপ ক্লিনজিং প্যাক
যাঁরা সকালে মুখ ধোয়ার ক্ষেত্রে ফেসওয়াশ ব্যবহার এড়াতে চান তাঁরা ১ টেবিল চামচ বেসনের সঙ্গে ২ টেবিল চামচ দুধ, সামান্য হলুদ এবং ৩ ফোঁটা নারকেল তেল মিশিয়ে নিয়ে ফেসওয়াশ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন প্রতিদিন সকালে। এতে ত্বক গভীরভাবে পরিষ্কার হবে ও ধীরে ধীরে জেল্লাদার হয়ে উঠবে।
বেসন, মধু ও গোলাপজল
বেসন, মধু, গোলাপজল ও অল্প পানি মিশিয়ে মিহি পেস্ট তৈরি করুন। মিশ্রণটি মুখ, গলা ও ঘাড়ে লাগিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রাখুন। শুকাতে শুরু করলে হালকা করে ম্যাসাজ করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার ব্যবহার করতে পারেন। মধু প্রাকৃতিক ময়শ্চারাইজার। এটি ত্বক নরম রাখে। গোলাপজল ত্বক সতেজ করতে সাহায্য করে। মুখ ধোয়ার পর অবশ্যই একটি ভালো ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
মেছতার দাগ হালকা করতে
বেসনের সঙ্গে অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে মেছতার ওপর লাগান। ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এক দিন অন্তর এ প্যাক ব্যবহার করুন। দাগ কমে এলে ধীরে ধীরে প্যাক ব্যবহারও কমিয়ে আনুন। যেমন সপ্তাহে একবার, তারপর ১৫ দিনে একবার, তারপর মাসে একবার। এভাবে এই প্যাক ব্যবহার করলে ধীরে ধীরে দাগ একেবারে হালকা হয়ে আসবে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া ও অন্যান্য

রূপচর্চায় বেসন খুব পরিচিত একটি উপকরণ। একসময় ত্বক পরিষ্কার করতে সাবানের পরিবর্তে বেসন ব্যবহার করা হতো। শীতে ত্বকের নির্জীব ভাব নিয়ে যাঁরা চিন্তায় রয়েছেন, তাঁরা সহজলভ্য এই উপকরণটি রোজকার ত্বকের যত্নে ব্যবহার করে নানা উপকার পেতে পারেন।
এ কথা তো সবাই জানেন, শীতকালের শুষ্ক আবহাওয়ায় ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখা খুব জরুরি। পাশাপাশি ত্বক দূষণমুক্ত রাখাও গুরুত্বপূর্ণ। বেসন ত্বক গভীর থেকে পরিষ্কার করে। যাঁরা ভাবছেন, বেসন ব্যবহারে ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে যেতে পারে, তাঁরা জেনে রাখুন বিশেষ কয়েকটি উপাদান মেশালে বেসনের তৈরি প্যাকও ত্বক আর্দ্র রেখে উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দিতে পারে। এসব ব্যবহারে ত্বকের অবাঞ্ছিত ব্রণও দূর হবে।
বেসন ও এক্সট্রা ভার্জিন নারকেল তেলের প্যাক

পুরো শরীরের ত্বকে মাখার জন্য বেসন নিন। এতে কয়েক চামচ এক্সট্রা ভার্জিন নারকেল তেল নিন। এরপর ২ টেবিল চামচ দুধ মেশাতে পারেন। প্যাক তৈরিতে যতটুকু পানি প্রয়োজন, তা যোগ করুন। এই প্যাক ত্বকে লাগিয়ে রাখুন আধা শুকনো হওয়া পর্যন্ত। এরপর আলতো করে কুসুম গরম পানিতে পুরো শরীর ধুয়ে নিন। নারকেল তেল ও দুধ রুক্ষ ত্বকে গভীর থেকে পুষ্টি জোগায় ও ময়শ্চারাইজ করে। পাশাপাশি এ প্যাক ত্বকের ডিপ ক্লিনজিংয়েও সহায়তা করে। যাঁদের ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক, তাদের জন্য এ প্যাক খুবই ভালো কাজ করে।
বেসন, টক দই ও হলুদের প্যাক
এ সব উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে একটি ঘন মিশ্রণ তৈরি করুন। পুরো শরীরে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর হালকা গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে তা দিয়ে শরীর আলতো ঘষে প্যাক দিয়ে আলতো করে ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। টক দই ত্বকের আর্দ্রতা ও নমনীয়তা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি প্রাকৃতিক ব্লিচ হিসেবেও দুর্দান্ত কাজ করে। অন্যদিকে হলুদ ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়, দাগছোপ কমায় ও ব্রণের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
বেসন ও গাঁদা ফুল বাটার প্যাক
বেসনের সঙ্গে সমপরিমাণ গাঁদা ফুল বাটা মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করে নিন। এই প্যাক মুখ, গলা ও ঘাড়ে লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিট। তারপর ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের শুষ্কতা কমাতে ও নরম করতে এ প্যাক ভালো কাজ করে। যাঁদের ত্বকে ব্রণ ও দাগ রয়েছে তাঁরা প্রতি সপ্তাহে একবার করে এই প্যাক মুখে ব্যবহার করতে পারেন।
ডিপ ক্লিনজিং প্যাক
যাঁরা সকালে মুখ ধোয়ার ক্ষেত্রে ফেসওয়াশ ব্যবহার এড়াতে চান তাঁরা ১ টেবিল চামচ বেসনের সঙ্গে ২ টেবিল চামচ দুধ, সামান্য হলুদ এবং ৩ ফোঁটা নারকেল তেল মিশিয়ে নিয়ে ফেসওয়াশ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন প্রতিদিন সকালে। এতে ত্বক গভীরভাবে পরিষ্কার হবে ও ধীরে ধীরে জেল্লাদার হয়ে উঠবে।
বেসন, মধু ও গোলাপজল
বেসন, মধু, গোলাপজল ও অল্প পানি মিশিয়ে মিহি পেস্ট তৈরি করুন। মিশ্রণটি মুখ, গলা ও ঘাড়ে লাগিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রাখুন। শুকাতে শুরু করলে হালকা করে ম্যাসাজ করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার ব্যবহার করতে পারেন। মধু প্রাকৃতিক ময়শ্চারাইজার। এটি ত্বক নরম রাখে। গোলাপজল ত্বক সতেজ করতে সাহায্য করে। মুখ ধোয়ার পর অবশ্যই একটি ভালো ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
মেছতার দাগ হালকা করতে
বেসনের সঙ্গে অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে মেছতার ওপর লাগান। ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এক দিন অন্তর এ প্যাক ব্যবহার করুন। দাগ কমে এলে ধীরে ধীরে প্যাক ব্যবহারও কমিয়ে আনুন। যেমন সপ্তাহে একবার, তারপর ১৫ দিনে একবার, তারপর মাসে একবার। এভাবে এই প্যাক ব্যবহার করলে ধীরে ধীরে দাগ একেবারে হালকা হয়ে আসবে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া ও অন্যান্য

‘জলদি ওঠো। দেরি করা যাবে না। কেউ যেন বলতে না পারে আমাদের জন্য দেরি হয়েছে।’ অ্যালার্ম বাজতেই ভুবন ওর চিরচেনা সংলাপ দিচ্ছিল! ‘চিরচেনা’ বললাম এ কারণে, সে কারও সঙ্গে কোথাও যাওয়ার আগে ঠিক এই কথাগুলোই বলে। ওর কথা হচ্ছে...
২৫ অক্টোবর ২০২২
আপনি কি মিষ্টি খেতে বেশ ভালোবাসেন? মিষ্টি দেখলেই নিজেকে সামলে রাখতে পারেন না? এমন অনেকেই আছেন, যাঁদের মিষ্টি নিয়ে অবসেশন কাজ করে। তাঁরা টিভি দেখতে দেখতে এক টব আইসক্রিম সাবাড় করে ফেলতে পারেন। কেউ আবার বন্ধুর জন্মদিনে বড় এক টুকরা কেক খেয়ে ফেলেন কোনো কিছু না ভেবেই। এমন ঘটনা আমাদের সবার জীবনেই কম-বেশি
৫ ঘণ্টা আগে
হিমালয়কন্যা নেপালের জেলা আরঘাখাঁচি। সেই জেলার পাণিনি গ্রাম পঞ্চায়েতের সিমলে এলাকা এখন এক অপূর্ব দৃশ্যে সেজেছে। পাহাড়ের ঢালে ঢালে সারিবদ্ধ গাছগুলো পাকা কমলার ভারে নুয়ে পড়েছে। আর এতেই পুরো জনপদ যেন সেজেছে সোনালি-হলুদ রঙে। কিন্তু এ দৃশ্য কেবল চোখের প্রশান্তি নয়; বরং এটি একটি অর্থনৈতিক বিপ্লবের গল্প...
৭ ঘণ্টা আগে
পৌষের রোদমাখা দিন চলে এল। টানা দুই মাস শীতের হিম শীতল দিন কাটানোর পালা। শীতকাল মানে যেন একটু আরাম আরাম ভাব, একটু অলসতা আর ব্যাপক খাওয়া-দাওয়া। এ সবই হয় মূলত বছরের এই বিশেষ সময়টিতে সবকিছু গুছিয়ে নতুন একটা বছরের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য। সবকিছু মিলিয়ে ঘরোয়া উষ্ণতা ও আনন্দ নিয়ে শীতকালটাকে একটু...
১১ ঘণ্টা আগেফারিয়া রহমান খান

পৌষের রোদমাখা দিন চলে এল। টানা দুই মাস শীতের হিম শীতল দিন কাটানোর পালা। শীতকাল মানে যেন একটু আরাম আরাম ভাব, একটু অলসতা আর ব্যাপক খাওয়া-দাওয়া। এ সবই হয় মূলত বছরের এই বিশেষ সময়টিতে সবকিছু গুছিয়ে নতুন একটা বছরের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য। সবকিছু মিলিয়ে ঘরোয়া উষ্ণতা ও আনন্দ নিয়ে শীতকালটাকে একটু সুন্দর করে সেলিব্রেট করতে পারেন।
আলো ও উষ্ণতার আমেজ
শীতকাল মানেই ঠান্ডা আর কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশ। সন্ধ্যার দিকে ঘরে কিছু ওয়ার্ম লাইট ও মোমবাতি জ্বালিয়ে দিন। রাতে ছাদে বা উঠানে আগুন জ্বালিয়ে পরিবার ও বন্ধুবান্ধব মিলে এর চারপাশে বসুন। আগুনের উষ্ণতা একটা শান্ত ও আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করে। এটি শুধু যে অন্ধকার দূর করে, তা-ই নয়; বরং শীতে একটা সুন্দর, স্নিগ্ধ ও উষ্ণ ভাব এনে দেয়। আগুনের তাপের সঙ্গে এই আয়োজনে থাকে সম্পর্কের উত্তাপও।

পুরোনো জিনিস সরিয়ে ঘর পরিষ্কার করুন
শীতকালে ঘর পরিষ্কার করে একটা ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করুন। নেতিবাচকতা দূর করতে ঘর পরিষ্কার করে ধূপ বা সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারেন। আবার শীতের আমেজ আনতে ঘরে দারুচিনি, এলাচি বা লবঙ্গ জাতীয় মসলার সুগন্ধ ব্যবহার করুন। চুলায় পানি গরম করে তাতে এসব দিয়ে ফুটতে দিন, ধীরে ধীরে পুরো বাসায় সুবাস ছড়িয়ে পড়বে। ঘর পরিষ্কার থাকলে মনও শান্ত থাকে আর নতুন দিনগুলোকে সুন্দরভাবে গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া যায়।
একটা সালতামামি হয়ে যাক
এ সময়টিতে নিজেকে নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করুন। এ বছর কী কী ভালো-খারাপ হলো বা কী কী শিখলেন, তা নিয়ে একটু ভাবুন। একটি ডায়েরিতে আপনার চিন্তাগুলো লিখে রাখতে পারেন। যেসব অভ্যাস এখন আর আপনার কাজে আসছে না, সেগুলো বাদ দিয়ে নিজের ভালো হয়—এমন কিছু ইতিবাচক অভ্যাস গড়ে তুলুন। নতুন বছরে কী কী করতে চান, সে লক্ষ্য ঠিক করে লিখে রাখুন।

কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন
জীবনে ছোট-বড় যা কিছু ভালো আছে, সবকিছুর জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। একটি তালিকা তৈরি করুন, যেখানে আপনার অর্জন, প্রিয় মানুষ, ব্যক্তিগত ভালো লাগা ও সুন্দর মুহূর্তগুলোর কথা লিখে রাখবেন। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে মনে শান্তি পাবেন এবং অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও সামনে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি পাবেন।
নিজের যত্ন নিন
শীতকাল হলো নিজের শরীর ও মনের যত্ন নেওয়ার সময়। প্রতিদিন হালকা ইয়োগা, হাঁটাহাঁটি বা স্ট্রেচিং করে শরীর সচল রাখুন। নিজের পছন্দের কাজগুলো করুন এবং নিজেকে কিছু উপহার দিন। নিজের জন্য সময় বের করে নিজের অস্তিত্ব সেলিব্রেট করার জন্য শীতকাল হলো উপযুক্ত সময়।

প্রকৃতির সান্নিধ্যে থাকুন
শীতের সকাল বা বিকেলে প্রকৃতির কাছে থাকার চেষ্টা করুন। শিশিরভেজা ঘাসে খালি পায়ে কিছুক্ষণ হাঁটুন এবং শীতের নরম রোদ গায়ে মাখুন, যা আপনার মন ভালো করার পাশাপাশি শরীরে শক্তি জোগাবে। শীতকালীন ফুলগাছ বারান্দায় রাখুন ও মাটির তৈরি জিনিস দিয়ে ঘর সাজান। দেখবেন এই ছোট কাজগুলো ঘরে একটা স্নিগ্ধ ও সতেজ ভাব আনবে।
প্রিয়জনদের সঙ্গে সময় কাটান
শীতকাল মানেই পিঠাপুলির উৎসব। বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পিঠার আয়োজন করুন। একসঙ্গে গল্প, হাসি আর খাবার সম্পর্কগুলোকে আরও মজবুত করবে এবং সময় আরও বেশি উপভোগ্য করে তুলবে।
এবার ‘না’ বলতে শিখুন
শীতকাল মানেই বিভিন্ন রকম দাওয়াত। সেগুলোকে পাশে রেখে সামাজিক বা অন্যান্য কাজের চাপ এড়িয়ে চলুন। কোনো অনুষ্ঠানে যেতে বা কোনো কাজ করতে যদি একেবারেই ইচ্ছা না করে তবে, অযথা চাপ অনুভব না করে বিনীতভাবে এড়িয়ে চলুন। এ সময় নিজের বিশ্রাম ও মানসিক শান্তিকে অগ্রাধিকার দেওয়াটাই বেশি জরুরি।
সূত্র: রিদমস অব প্লে ও অন্যান্য

পৌষের রোদমাখা দিন চলে এল। টানা দুই মাস শীতের হিম শীতল দিন কাটানোর পালা। শীতকাল মানে যেন একটু আরাম আরাম ভাব, একটু অলসতা আর ব্যাপক খাওয়া-দাওয়া। এ সবই হয় মূলত বছরের এই বিশেষ সময়টিতে সবকিছু গুছিয়ে নতুন একটা বছরের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য। সবকিছু মিলিয়ে ঘরোয়া উষ্ণতা ও আনন্দ নিয়ে শীতকালটাকে একটু সুন্দর করে সেলিব্রেট করতে পারেন।
আলো ও উষ্ণতার আমেজ
শীতকাল মানেই ঠান্ডা আর কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশ। সন্ধ্যার দিকে ঘরে কিছু ওয়ার্ম লাইট ও মোমবাতি জ্বালিয়ে দিন। রাতে ছাদে বা উঠানে আগুন জ্বালিয়ে পরিবার ও বন্ধুবান্ধব মিলে এর চারপাশে বসুন। আগুনের উষ্ণতা একটা শান্ত ও আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করে। এটি শুধু যে অন্ধকার দূর করে, তা-ই নয়; বরং শীতে একটা সুন্দর, স্নিগ্ধ ও উষ্ণ ভাব এনে দেয়। আগুনের তাপের সঙ্গে এই আয়োজনে থাকে সম্পর্কের উত্তাপও।

পুরোনো জিনিস সরিয়ে ঘর পরিষ্কার করুন
শীতকালে ঘর পরিষ্কার করে একটা ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করুন। নেতিবাচকতা দূর করতে ঘর পরিষ্কার করে ধূপ বা সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারেন। আবার শীতের আমেজ আনতে ঘরে দারুচিনি, এলাচি বা লবঙ্গ জাতীয় মসলার সুগন্ধ ব্যবহার করুন। চুলায় পানি গরম করে তাতে এসব দিয়ে ফুটতে দিন, ধীরে ধীরে পুরো বাসায় সুবাস ছড়িয়ে পড়বে। ঘর পরিষ্কার থাকলে মনও শান্ত থাকে আর নতুন দিনগুলোকে সুন্দরভাবে গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া যায়।
একটা সালতামামি হয়ে যাক
এ সময়টিতে নিজেকে নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করুন। এ বছর কী কী ভালো-খারাপ হলো বা কী কী শিখলেন, তা নিয়ে একটু ভাবুন। একটি ডায়েরিতে আপনার চিন্তাগুলো লিখে রাখতে পারেন। যেসব অভ্যাস এখন আর আপনার কাজে আসছে না, সেগুলো বাদ দিয়ে নিজের ভালো হয়—এমন কিছু ইতিবাচক অভ্যাস গড়ে তুলুন। নতুন বছরে কী কী করতে চান, সে লক্ষ্য ঠিক করে লিখে রাখুন।

কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন
জীবনে ছোট-বড় যা কিছু ভালো আছে, সবকিছুর জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। একটি তালিকা তৈরি করুন, যেখানে আপনার অর্জন, প্রিয় মানুষ, ব্যক্তিগত ভালো লাগা ও সুন্দর মুহূর্তগুলোর কথা লিখে রাখবেন। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে মনে শান্তি পাবেন এবং অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও সামনে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি পাবেন।
নিজের যত্ন নিন
শীতকাল হলো নিজের শরীর ও মনের যত্ন নেওয়ার সময়। প্রতিদিন হালকা ইয়োগা, হাঁটাহাঁটি বা স্ট্রেচিং করে শরীর সচল রাখুন। নিজের পছন্দের কাজগুলো করুন এবং নিজেকে কিছু উপহার দিন। নিজের জন্য সময় বের করে নিজের অস্তিত্ব সেলিব্রেট করার জন্য শীতকাল হলো উপযুক্ত সময়।

প্রকৃতির সান্নিধ্যে থাকুন
শীতের সকাল বা বিকেলে প্রকৃতির কাছে থাকার চেষ্টা করুন। শিশিরভেজা ঘাসে খালি পায়ে কিছুক্ষণ হাঁটুন এবং শীতের নরম রোদ গায়ে মাখুন, যা আপনার মন ভালো করার পাশাপাশি শরীরে শক্তি জোগাবে। শীতকালীন ফুলগাছ বারান্দায় রাখুন ও মাটির তৈরি জিনিস দিয়ে ঘর সাজান। দেখবেন এই ছোট কাজগুলো ঘরে একটা স্নিগ্ধ ও সতেজ ভাব আনবে।
প্রিয়জনদের সঙ্গে সময় কাটান
শীতকাল মানেই পিঠাপুলির উৎসব। বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পিঠার আয়োজন করুন। একসঙ্গে গল্প, হাসি আর খাবার সম্পর্কগুলোকে আরও মজবুত করবে এবং সময় আরও বেশি উপভোগ্য করে তুলবে।
এবার ‘না’ বলতে শিখুন
শীতকাল মানেই বিভিন্ন রকম দাওয়াত। সেগুলোকে পাশে রেখে সামাজিক বা অন্যান্য কাজের চাপ এড়িয়ে চলুন। কোনো অনুষ্ঠানে যেতে বা কোনো কাজ করতে যদি একেবারেই ইচ্ছা না করে তবে, অযথা চাপ অনুভব না করে বিনীতভাবে এড়িয়ে চলুন। এ সময় নিজের বিশ্রাম ও মানসিক শান্তিকে অগ্রাধিকার দেওয়াটাই বেশি জরুরি।
সূত্র: রিদমস অব প্লে ও অন্যান্য

‘জলদি ওঠো। দেরি করা যাবে না। কেউ যেন বলতে না পারে আমাদের জন্য দেরি হয়েছে।’ অ্যালার্ম বাজতেই ভুবন ওর চিরচেনা সংলাপ দিচ্ছিল! ‘চিরচেনা’ বললাম এ কারণে, সে কারও সঙ্গে কোথাও যাওয়ার আগে ঠিক এই কথাগুলোই বলে। ওর কথা হচ্ছে...
২৫ অক্টোবর ২০২২
আপনি কি মিষ্টি খেতে বেশ ভালোবাসেন? মিষ্টি দেখলেই নিজেকে সামলে রাখতে পারেন না? এমন অনেকেই আছেন, যাঁদের মিষ্টি নিয়ে অবসেশন কাজ করে। তাঁরা টিভি দেখতে দেখতে এক টব আইসক্রিম সাবাড় করে ফেলতে পারেন। কেউ আবার বন্ধুর জন্মদিনে বড় এক টুকরা কেক খেয়ে ফেলেন কোনো কিছু না ভেবেই। এমন ঘটনা আমাদের সবার জীবনেই কম-বেশি
৫ ঘণ্টা আগে
হিমালয়কন্যা নেপালের জেলা আরঘাখাঁচি। সেই জেলার পাণিনি গ্রাম পঞ্চায়েতের সিমলে এলাকা এখন এক অপূর্ব দৃশ্যে সেজেছে। পাহাড়ের ঢালে ঢালে সারিবদ্ধ গাছগুলো পাকা কমলার ভারে নুয়ে পড়েছে। আর এতেই পুরো জনপদ যেন সেজেছে সোনালি-হলুদ রঙে। কিন্তু এ দৃশ্য কেবল চোখের প্রশান্তি নয়; বরং এটি একটি অর্থনৈতিক বিপ্লবের গল্প...
৭ ঘণ্টা আগে
বেসন ত্বক গভীর থেকে পরিষ্কার করে। যাঁরা ভাবছেন, বেসন ব্যবহারে ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে যেতে পারে, তাঁরা জেনে রাখুন বিশেষ কয়েকটি উপাদান মেশালে বেসনের তৈরি প্যাকও ত্বক আর্দ্র রেখে উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দিতে পারে। এসব ব্যবহারে ত্বকের অবাঞ্ছিত ব্রণও দূর হবে।...
৯ ঘণ্টা আগে