Ajker Patrika

উত্তরের পথে আমাদের অভিযান: পর্ব-৩

আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩: ২৯
উত্তরের পথে আমাদের অভিযান: পর্ব-৩

উত্তরের পথে আমাদের অভিযান
‘জলদি ওঠো। দেরি করা যাবে না। কেউ যেন বলতে না পারে আমাদের জন্য দেরি হয়েছে।’ অ্যালার্ম বাজতেই ভুবন ওর চিরচেনা সংলাপ দিচ্ছিল! ‘চিরচেনা’ বললাম এ কারণে, সে কারও সঙ্গে কোথাও যাওয়ার আগে ঠিক এই কথাগুলোই বলে। ওর কথা হচ্ছে, প্রয়োজন হলে সময়ের আগে প্রস্তুত থাকতে হবে বা পৌঁছাতে হবে। কিন্তু দেরি হওয়া যাবে না। মাঝে মাঝে তাই ওকে ‘আর্মি পারসন’ বলি! যাই হোক, সেখানকার সময় ৬টায় উঠে গেলাম। আধা ঘণ্টার মধ্যে দুজনে তৈরি হয়ে রুম থেকে বেরিয়েছি। হঠাৎ বারান্দার একপাশ দিয়ে বাইরে চোখ যেতেই দেখি কী সুন্দর দৃশ্য! রাতে পাহাড়ের গায়ে যে তারা দেখেছিলাম জ্বলজ্বল করছে, সেগুলো দিনের আলোয় স্পষ্ট ঘরবাড়ি। ছবিতে দেখলে হয়তো মনে হবে বস্তি। সামনে থেকে না দেখলে এর সৌন্দর্য অনুভব করা যাবে না। ঝটপট সেই দৃশ্যের ছবি তুলে নিল ভুবন।

হোটেল থেকে বের হলাম নাশতা খাব বলে। রাতে তো নিয়নের আলোয় খুব একটা বুঝিনি, সকালে বের হয়ে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। মল রোডটা যে কত পরিষ্কার, স্বচ্ছ! রাস্তার ওপরেই যেন নির্দ্বিধায় গড়াগড়ি করা যাবে। রাস্তার একপাশ ‘ওয়ান ওয়ে’, অন্য পাশ দিয়ে কোনো যানবাহন প্রবেশ করানো যায় না। এপাশ দিয়ে সবাই আরাম করে হাঁটাহাঁটি করে। আর একধারে কিছু দূর পর পর বেঞ্চি আছে। হাঁটতে হাঁটতে একটু জিরিয়ে নেওয়া যায়। ওই পথ ধরে হেঁটে একটা রেস্তোরাঁয় ঢুকলাম। খেলাম সবজি আর লুচি। সবজি বলতে গাঢ় ঝোলের মধ্যে আলু! আলুর দম বলা চলে। কিন্তু তারা এটাকে সবজিই নাম দিয়েছে। ভুবন অবশ্য লুচি না খেয়ে রুটি খেয়েছিল। মিষ্টির চেহারাগুলো দেখে এত লোভ লাগছিল! কিন্তু যেই খেতে গিয়েছি, আর ভালো লাগল না।  নাশতা পর্ব শেষ করে আবার ছুটলাম হোটেলের দিকে। হাঁটার মাঝে থেমে থেমে কিছু ছবিও তুলে নিলাম। মোড়ে একটা বিশাল লাল পান্ডার ভাস্কর্য আছে। সেটার সঙ্গে ছবি তুলতে ভুললাম না। সময় পেলে সত্যিকারের লাল পান্ডা দেখতে যেতাম গ্যাংটকের চিড়িয়াখানায়, কিন্তু সময় হয়নি।

আমরা ঠিক ৭টার সময় হোটেলের নিচে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম। সবাই প্রস্তুত। কিন্তু গাড়ি আসেনি। ৮টার পর গাড়ি পেয়ে রওনা হলাম বজরা ট্যাক্সিস্ট্যান্ডের উদ্দেশে। মোটামুটি পনেরো-বিশ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে গেলাম আঁকাবাঁকা পথ দিয়ে। সেখানে হলো মহাবিলম্ব! কতক্ষণ যে দাঁড়িয়ে, পায়চারি করে সময় পার করেছি, আল্লাহ জানেন। কথা ছিল আগের দিন রাতেই অমরদা সব গাড়ি ঠিক করে রাখবেন, কিন্তু পারেননি।

প্রায় দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর আমরা গাড়ি পেলাম। একটা বড় জিপ পেয়ে আমরা নয়জন চড়ে বসলাম সেটাতে। আমাদের দুজনকে সবাই জিজ্ঞেস করছিল কোথায় বসতে চাই। আমি বললাম, ‘আপনাদের সুবিধামতো আমাদের একটু জায়গা দিলেই হবে।’ আকাশ ভাই দুষ্টুমি করে বললেন, ‘তাহলে ছাদে বসে যান। আমরা আরাম করে যাই।’ আমি বললাম, ‘কোনো সমস্যা নাই। সেটা তো ভীষণ মজার ব্যাপার হবে!’ সবাই হো হো করে হেসে দিয়ে দুজনকে চালকের সঙ্গে সামনের সিটে বসতে দিলেন। সামনে দুইটা সিটই বলা চলে। চালকেরটা ছাড়া। আরামসে আমি আর ভুবন এঁটে যাই। সবাই গাড়িতে উঠে অপেক্ষা করছি। বাকিদের বসা হলে একসঙ্গে রওনা দেব। বড় দলটা আরও দুইটা জিপে ভাগ হয়ে উঠল। তবে ঝামেলা লেগেছিল ওই দলের দুজন ‘জেঠুমশাই’কে নিয়ে। তাঁরা দুজনে একই জায়গায় বসতে চান। অর্থাৎ, একই সিটে। এ নিয়ে তুমুল লঙ্কাকাণ্ড! গাল ফুলিয়ে, চোখ রাঙিয়ে যাঁর যাঁর পরিচয় দিচ্ছিলেন। মাঝখান দিয়ে বেচারা অমরদা হলেন তুলাধুনা। আমরা জিপের ভেতরে বসে থেকে দর্শকের মতো ওই নাটক-সিনেমা দেখছিলাম। পেছন থেকে কে যেন বলে উঠল, ‘আরে ওনারা এত বড় মানুষ হয়ে বাচ্চাদের মতো করছেন, অথচ আমাদের মিস্টার অ্যান্ড মিসেস এজাজের গাড়ির ছাদে বা পেছনে ঝুলে যেতেও আপত্তি নাই।’ সত্যিই যদি এমন পরিস্থিতি হতো, তাহলেও আমাদের কোনো আপত্তি ছিল না। গাড়ির ছাদে বা পেছনে ঝুলে ঝুলেই যেতাম। যাই হোক, সিনেমাটা আধা ঘণ্টার মতো চলল। অবশেষে অমরদা গালি হজম করে হাসিমুখে সবাইকে নিয়ে রওনা দিলেন। প্রায় ১২টা বেজে গিয়েছিল তখন।

আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ। ধীরে ধীরে ওপরের দিকে উঠছি, বুঝতে পারছিলাম। আর সে কী যে পাগল করা অপরূপ সৌন্দর্য! এই পথে যেতে যেতে ‘মাশাআল্লাহ’, ‘সুবহানআল্লাহ’, ‘ওয়াও’, ‘অ্যামেজিং’ শব্দগুলো আপনা-আপনি মুখ দিয়ে বের হয়ে যায়। সবাই মিলে এক এক করে গান ধরলাম। আকাশ ভাইয়ের গলা ভালো। তিনি অনেক গান গাইলেন। পুরোটা পথ এই গানের আসর সঙ্গী ছিল। ভুবনের গান শুনে তো সবাই মুগ্ধ। আকাশ ভাই আমাকে বলছিলেন, ‘বাহ, আপনার স্বামীর গানের গলা তো বেশ!’ মুচকি হেসে বললাম, ‘এমনি এমনি কি আর প্রেমে পড়েছি!’ এ কথা শুনে সবাই হেসে দিলেন। এরপর এল আমাদের প্রেমকাহিনির গল্পের অনুরোধ। গানের ফাঁকে ফাঁকে সেটাও হয়ে গেল। আমার গানের গলা ভালো না। ছেড়ে গাইতে পারি না। অনেকটা নাকি সুরে গাই। তবু সবার জোর অনুরোধে গাইতে হলো। একটার বেশি গাইলাম না। কারণ আমি ওই একটা গানই একটু ছেড়ে দিয়ে গাইতে পারি, ‘তোমার ঘরে বাস করে কারা...’।

আমাদের সামনে বসার খুব ভালো একটা সুফল পাওয়া গেছে। যতটা স্পষ্ট আমরা দুজন দেখতে পাচ্ছিলাম বাইরের দৃশ্য, পেছনের লোকজন হয়তো সেটার অর্ধেক দেখেছে। তবু যা দেখেছে, তাতে চোখ ছানাবড়া না হয়ে পারেই না। পথে থেমে থেমে পাহাড়ি ঝরনা দেখাচ্ছিলেন আমাদের চালক। তাঁর নাম রবিন। নামটা শুনে তাঁকে রবিন হুড ডাকতে ইচ্ছা হলো। রবিন হুড থেকে মনে পড়ল সালমান খানের ‘চুলবুল পান্ডে ওরফে রবিন হুড পান্ডে’ চরিত্রের কথা। আমি তাই তাঁকে ‘পান্ডেজি’ বলে ডাকা শুরু করলাম। পান্ডেজি নরম মানুষ। আস্তে-ধীরে কথা বলেন। নেপালি। মানে, সিকিমের বাসিন্দা আরকি। তিনি সবগুলো ঝরনার নাম ও বর্ণনা দিলেন। সব ঝরনার নামের সাইনবোর্ড নেই আবার। সেখানে নাম লেখা থাকে সাধারণত। আবার কোনো কোনো ঝরনার নাম নেই। সেগুলো ছোটখাটো। অনেক ঝরনার নাম পান্ডেজি নিজেও জানেন না। কারণ সেগুলো নতুন। সেভেন সিস্টার্স, নাগা, ভিম নালাসহ আরও ছোট-বড় কিছু ঝরনা দেখলাম। ভিম নালা ঝরনাটার আরেকটা নাম আছে। ‘অমিতাভ বচ্চন ফলস’। এমন নাম কেন, জিজ্ঞেস করতেই পান্ডেজি বললেন, ‘উ বহুত লম্বা হ্যায়। উ অ্যাক্টর হ্যায় না, অমিতাভ বচ্চন, উসকি তারাহ।’ লম্বায় এটা ২৭৫ ফুট। এর আরেক নাম ভিমা ফলস। স্থানীয় ভাষায় ভিমা বা ভিম নালা মানে ‘রেড স্নেক’ বা লাল সাপ। তাই এর আরেক নাম ‘রেড স্নেক’। বিগত কয়েক বছর ধরে পর্যটকেরা এই ঝরনাকে আবার ‘লাচুং নর্থ সিকিম ফলস’ নামেও ডাকছে। ঝরনার পাশাপাশি মেঘের কথা না বললেই নয়। পাহাড়ের চূড়ায় তুলার মতো লেগে থাকা মেঘ দেখা যায় দূর থেকে। আর পাহাড়ের নিচে স্বচ্ছ সবুজ তিস্তার পানি বয়ে চলে। ওপরের দিকে উঠতে উঠতে মেঘের ভেতর দিয়ে গিয়েছি আমরা। গাড়ি থেকে নেমেও ছুঁয়ে দেখার চেষ্টা করেছি। আসলে মেঘ নিজেই তো আমাদের জাপটে ধরে।

দুপুর থেকে পেটে উৎপাত শুরু হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু পথে টং দোকানের চা-বিস্কুট ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। শেষে বিকালের দিকে এক মুসলিম হোটেল পেলাম। পাহাড়ি রাস্তার একপাশে বেড়ার হোটেল। নিচের দিকে নেমে গেলে গ্রাম। সেখানে বেশির ভাগ মুসলমানরাই বাস করে। অনেকটা লুকিয়ে তারা গোমাংস রান্না করে খাওয়ায়। অমরদা আগে থেকে বলে রেখেছিলেন। তাই আমরা গরুর মাংস দিয়ে গরম ভাত-ডাল খেতে পারলাম। মনে হচ্ছিল অমৃত। রান্নাটাও বেশ। জম্পেশ খাওয়া দিয়ে আবার রওনা দিলাম। লাচুংয়ে পৌঁছাতে হবে। ততক্ষণে শুরু হয়ে গিয়েছিল গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। আলবৎ মাথায় বৃষ্টির ফোঁটা পড়েছিল। এরপর বাকিটা ইতিহাস। তবে পরদিন থেকে।

সন্ধ্যা নেমে এলে গাড়ির হেডলাইটের আলো ছাড়া গতি ছিল না। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, যাচ্ছি আবার মেঘের ভেতর দিয়ে। পথ একেবারে পিচ্ছিল। ভয় পাচ্ছিলাম না একটুও। কেননা, পান্ডেজি যেভাবে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তাতে ভরসা না করে পারা যায় না। তিনি মুখে তো অভয় দিচ্ছিলেনই, কাজ দিয়েও প্রমাণ করেছেন। সিকিমের এই পাহাড়ি পথ এমনভাবে তৈরি করা যে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা খুব কম। জায়গায় জায়গায় সতর্কবার্তা লেখা আছে। আর চালকদের এতটাই মুখস্থ রাস্তা যে তারা চোখ বুজে পাড়ি দিতে পারেন।

লাচুংয়ে ঢোকার আগেও অনুমতি লাগল। সেখানে এক বিজ্ঞপ্তিতে লেখা দেখলাম উত্তরের কোথায় কোথায় যাওয়া যাবে আর কোথায় কোথায় যাওয়া যাবে না। অবশ্যই লাচুংয়ে টিক চিহ্ন দেওয়া ছিল। সেটা দেখে মনে মনে খুশি হয়ে গেলাম। যাক বাবা, আটকে দিল না তাহলে। অনুমতি নিয়ে চলতে শুরু করলাম আবার। সাড়ে ৭টার পরপর পৌঁছে গেলাম গন্তব্যে। আর্মি চেকপোস্টের কাছাকাছি ‘লাচুং রিজেন্সি’তে গিয়ে উঠলাম। এখানে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা আগে থেকে করে রেখেছিলেন অমরদা। এই হোটেলে লোক মাত্র দুজন। যিনি ম্যানেজারের দায়িত্বে আছেন, তিনি নিজেই রান্না করেন। তাঁর সঙ্গে একজন আছেন, যিনি অতিথিদের ফরমাশ খাটেন। তাঁকে সাহায্যও করেন। আমরা যার যার রুম বেছে নিয়ে হাতমুখ ধুয়ে কাপড় বদলে নিলাম। ভাগ্যিস এখানে খাওয়া না পাওয়া যাওয়ার ভয় ছিল না।

ধীরে-সুস্থেই খাবারঘরে গেলাম। বুফে সিস্টেম করে রেখেছিলেন আমাদের রাঁধুনি। ভাত, ডাল, সবজি, রুটি, মটর পনির, সালাদ। এখানে আমিষজাতীয় কোনো রান্না হয় না। বেশ ভালোই লাগল খেতে। ভাত ছাড়া সব খেলাম অল্প করে। বড় দলটাকে আমার ভালো লাগছিল না। তারা সবকিছুতে একটা লোকদেখানো ভাব করছিল। সে যাক গে, খেয়েদেয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে অনেকে গল্প করছিলাম। এর মধ্যে হেঁশেল থেকে খবর এল, কেউ গরুর দুধ খেতে চায় কি না। তবে কিনে খেতে হবে। ভুবন খুব আগ্রহ নিয়ে দুধ আনতে গেল রান্নাঘরে। ফিরে এল একটা দুঃখ ভাব নিয়ে। ব্যাপার কী? এক গ্লাস দুধের দাম ৫০ রুপি! যদিও সে কিনে এনেছে এবং খুব কষ্ট করে গিলেছে। মনে হচ্ছিল টাকা গিলছে! সবার এক কথা, আমাদের দেশে ৭০ টাকায় লিটার আর এখানে মাত্র এক গ্লাস ৫০ রুপি! একটু বেশি হয়ে যায় না? এক গ্লাসের দাম পড়ছে তাহলে পঁয়ষট্টি টাকার মতো। গল্প-গুজব শেষ করে রুমে গেলাম ঘুমাতে। এমন সময় বাইরে হন্তদন্ত শুনলাম। পরদিন কে কোথায় যাবে সেটা নিয়ে বিস্তর ক্যাচাল লেগে গেল অমরদার সঙ্গে। কে আর লাগাবে। সেই বড় দলের পণ্ডিতেরা। অমরদার ভাষ্যমতে, জিরো পয়েন্টে গিয়ে কোনো লাভ নেই।

সময় নষ্ট না করে শুধু ইয়ামথাং ভ্যালি ঘুরে এলেই হবে। জিরো পয়েন্টে যেতে আর্মিরা ঝামেলা করতে পারে। তখন আবহাওয়াও সুবিধার ছিল না। আমাদের কোনো সমস্যা ছিল না। আমরা সব জেনে-বুঝে, অন্তর্জাল ঘেঁটে অমরদার কথায় রাজি ছিলাম। কিন্তু নাছোড়বান্দা বড় দলের লোকজন। কেউ যেতে চান, কেউ চান না। যাঁরা যেতে চান, তাঁদের কথা হলো, ‘টাকা দিচ্ছি আপনাকে, নেবেন না কেন? যাবই!’ অথচ অমরদা আগেই বলে রেখেছিলেন যে যদি অনুমতি না পাই, আবহাওয়া দখলে না থাকে কিংবা পরিস্থিতি ভিন্ন হয়, তবে আমাদের পরিকল্পনার পরিবর্তন হতে পারে। সে কথাটা আমাদের দলকে না বললেও আমরা জানতাম। সিকিম ঘুরতে গেলে এই কথাগুলো মাথায় রাখতে হয়। শেষমেশ সিদ্ধান্ত হলো যাঁরা জিরো পয়েন্টে যেতে চান, তাঁরা আলাদা যাবেন সকাল ৭টায়। আর বাকিরা নাশতা সেরে ৮টায় রওনা হবেন ইয়ামথাং ভ্যালির জন্য। জিরো পয়েন্ট ঘুরে বাকিরা সরাসরি ইয়ামথাং ভ্যালিতে চলে যাবেন। জিরো পয়েন্টে না যাওয়ার কারণ ছিল, সেখানে যা আছে তার চেয়ে কয়েক গুণ সুন্দর দৃশ্য ইয়ামথাং ভ্যালিতে আছে। শরীরের ওপর দিয়ে ধকল যাবে কি না, সে কথাও মাথা থেকে ফেলে দিলাম না। ওহ্, আরেকটা ব্যাপার, অমরদার কিন্তু জিরো পয়েন্টে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল না। কথা ছিল সাঙ্গুতে নিয়ে যাবেন। কিন্তু অনুমতি পাননি। সেখানে আমরা সবাই যেতে চেয়েছিলাম। অনুমতি পাননি বিধায় কয়েকজন জেঁকে ধরেছিলেন জিরো পয়েন্টে নিয়ে যেতে। আমাদের সাঙ্গুতে নিতে না পারায় কিন্তু তিনি পরে তাঁর সম্মানীটাও কম রেখেছিলেন।

বিতর্কের সিদ্ধান্ত জানার পর ঘুমাতে গেলাম। কিন্তু কী মুশকিল! ঘুম যে আসে না! এক ফোঁটাও না। না আমার, না ভুবনের। রাত যত বাড়ে, ঠান্ডা তার চেয়ে দ্বিগুণ হারে বাড়ে। ঘুম কী করে আসে এমন অবস্থায়! রুমে হিটার আনালাম। সেখানে আবার রুম হিটারের জন্য আলাদা খরচ করতে হয়। কিন্তু সারা রাতেও হিটার ঘরটাকে গরম করতে পারল না। এদিকে বাইরে হচ্ছে তুষারপাত। তাপমাত্রা সম্ভবত মাইনাস ৯ ছিল। একাত-ওকাত করে করে রাত পার করলাম। সব মিলিয়ে বড়জোর ঘণ্টা দেড়েক ঘুমিয়েছি; ভোরের দিকে যখন ঘরটা গরম হলো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কে এই আতাউর রহমান বিক্রমপুরী

আতাউর রহমান বিক্রমপুরী কারাগারে

জুলাই হত্যাকাণ্ডকে ব্যক্তিগত অপরাধ গণ্য করে আ.লীগের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার

বিএনপিতে রেদোয়ান আহমেদ-ববি হাজ্জাজ, ছেড়ে দিচ্ছে আরও ৮ আসন

আজকের রাশিফল: ফেসবুকে জ্ঞান ঝাড়বেন না— বন্ধুরা জানে আপনি কপি মাস্টার, স্ত্রীর কথা শুনুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

স্বল্প খরচে নেপাল ভ্রমণের ১১ পরামর্শ

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
স্বল্প বাজেটের ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য নেপাল দারুণ গন্তব্য। প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি।
স্বল্প বাজেটের ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য নেপাল দারুণ গন্তব্য। প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি।

স্বল্প বাজেটের ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য নেপাল দারুণ গন্তব্য। ১৯৭০ সালের পর ‘হিপি ট্রেইল’ যুগ থেকে কাঠমান্ডুতে বাজেট ভ্রমণের সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। পরে এই সংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্ন শহর ও ট্রেকিং রুটে। যদিও আজকের নেপাল আগের মতো অতটা সস্তা নয়; তবে এখনো দেশটিতে স্বল্প খরচে ভ্রমণের অসাধারণ সুযোগ রয়েছে।

ভ্রমণের পরিকল্পনা করুন সময় বুঝে

পর্যটনের ক্ষেত্রে নেপালে ব্যস্ত সময় হলো অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে নভেম্বরের শেষ এবং মার্চের শেষ থেকে এপ্রিল। এই সময় দেশটিতে হোটেল ও লজের ভাড়া বেড়ে যায়। এর বাইরে ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ এবং সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাস হলো শোল্ডার সিজন। এই সময় দেশটিতে পর্যটক কম থাকে এবং হোটেল ভাড়ায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় পাওয়া যায়। পাহাড়ি এলাকায় অনেক সময় চার্জিং বা ওয়াই-ফাই বিনা খরচে দেওয়া হয়। তবে শোল্ডার সিজনে মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হতে পারে।

কাঠমান্ডু বিমানবন্দর থেকে একটু হাঁটুন

বিমানবন্দর এলাকায় ট্যাক্সিচালকেরা অনেক সময় অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করেন। তবে সেখান থেকে প্রায় ৮০ মিটার হাঁটলেই রিং রোডে সাধারণ ভাড়ায় ট্যাক্সি পাওয়া যায়। ট্যাক্সিতে থামেল এলাকায় যেতে সাধারণত ৬০০ রুপি লাগে। চাইলে লোকাল বাসও ব্যবহার করা যায়। আগাম জানালে অনেক হোটেল নির্দিষ্ট বা বিনা মূল্যের পিকআপ সুবিধাও দেয়।

থামেলের বাইরে থাকা-খাওয়া সাশ্রয়ী। ছবি: ফ্রিপিক
থামেলের বাইরে থাকা-খাওয়া সাশ্রয়ী। ছবি: ফ্রিপিক

পাঠাও ও ইনড্রাইভ ব্যবহার করুন

রাস্তার ট্যাক্সির চেয়ে কাঠমান্ডুতে পাঠাও এবং কাঠমান্ডুর বাইরে ইনড্রাইভ অ্যাপ ব্যবহার করলে কম ভাড়ায় নিরাপদ যাতায়াত করা যায়।

থাকা-খাওয়ার জন্য থামেলের বাইরে যান

থামেল পর্যটকদের জন্য সুবিধাজনক হলেও সেখানে হোটেল ও খাবারের দাম তুলনামূলক বেশি। থামেলের আশপাশের এলাকায় একই মানের হোটেল ২০ শতাংশ কম দামে পাওয়া যায়। খাবারের ক্ষেত্রেও শহরের অন্যান্য এলাকায় তুলনামূলক সস্তা ও ভালো মানের খাবার পাওয়া যায়।

বিকল্প হিসেবে বৌদ্ধনাথ এলাকা

বৌদ্ধনাথ স্তূপসংলগ্ন এলাকা থামেলের ভালো বিকল্প। সেখানে সাশ্রয়ী হোটেল ও খাবার পাওয়া যায় এবং পরিবেশ অনেক শান্ত। সেখানে দেখা মিলবে তীর্থযাত্রীদের এবং শোনা যাবে বৌদ্ধদের প্রার্থনার ধ্বনি। বিমানবন্দরের কাছাকাছি হওয়ায় ভ্রমণের শেষ দিকে থাকার জন্য এটি আদর্শ জায়গা।

বৌদ্ধনাথ, পাতান দরবার স্কয়ার, কাঠমান্ডু দরবার স্কয়ার এবং ভক্তপুরের মতো ঐতিহাসিক স্থানগুলোর টিকিট এক সপ্তাহ বা ভিসার মেয়াদ পর্যন্ত বাড়ানো যায়। ছবি: ফ্রিপিক
বৌদ্ধনাথ, পাতান দরবার স্কয়ার, কাঠমান্ডু দরবার স্কয়ার এবং ভক্তপুরের মতো ঐতিহাসিক স্থানগুলোর টিকিট এক সপ্তাহ বা ভিসার মেয়াদ পর্যন্ত বাড়ানো যায়। ছবি: ফ্রিপিক

দর্শনীয় স্থানের টিকিট বাড়িয়ে নিন

বৌদ্ধনাথ, পাতান দরবার স্কয়ার, কাঠমান্ডু দরবার স্কয়ার এবং ভক্তপুর নেপালের জনপ্রিয় ঐতিহাসিক স্থান। অনেকে হয়তো জানেন না, এই স্থানগুলোর টিকিট এক সপ্তাহ বা ভিসার মেয়াদ পর্যন্ত বাড়ানো যায়। এর জন্য পাসপোর্ট প্রয়োজন। কাঠমান্ডু দরবার স্কয়ারে পাসপোর্ট সাইজ ছবি লাগতে পারে।

স্থানীয় খাবার খান, বিশেষ করে ট্রেকিংয়ের সময়

আন্তর্জাতিক খাবারের তুলনায় নেপালি খাবার অনেক সস্তা। পাহাড়ি ট্রেকে ডাল-ভাত সবচেয়ে সাশ্রয়ী ও পুষ্টিকর খাবার।

লোকাল বাসের বদলে ট্যুরিস্ট বাস নিন

পোখারা, চিতওয়ান বা লুম্বিনিতে যেতে ট্যুরিস্ট বাস কিছুটা দামি হলেও বেশি আরামদায়ক এবং দ্রুত যাওয়া যায়। অল্প কিছু টাকা বেশি দিলেই ভ্রমণ অনেক স্বস্তিদায়ক হয়।

নিজের সক্ষমতা অনুযায়ী ট্রেক বেছে নিন

নেপালের জনপ্রিয় ট্রেকিং রুটগুলো সাধারণত ব্যস্ত। অভিজ্ঞ ট্রেকাররা দলবদ্ধভাবে গাইড ছাড়াও যেতে পারেন। তবে একা যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। নিজের শারীরিক সক্ষমতা বুঝে ট্রেক নির্বাচন করা অত্যন্ত জরুরি।

গাইড নিতে চাইলে নেপালে গিয়ে নিন

অনেকে নিরাপত্তার জন্য গাইড নিতে চান। সে ক্ষেত্রে আগে বুক না করে নেপালে গিয়ে সরাসরি গাইড বা এজেন্সির সঙ্গে কথা বললে খরচ কম পড়ে।

স্বল্প ট্রেকের জন্য গিয়ার ভাড়া নিন

স্বল্প সময়ের ট্রেকের জন্য ভারী গিয়ার সঙ্গে নেওয়ার দরকার নেই। কাঠমান্ডু ও পোখারায় সহজে জ্যাকেট, স্লিপিং ব্যাগ ইত্যাদি ভাড়া পাওয়া যায়। প্রতিদিন গড়ে ১০০ রুপি ব্যয় হতে পারে এ বাবদ।

নেপালে দৈনিক আনুমানিক খরচ

হোটেল বেড: ৪০০ রুপি

সাধারণ ডাবল রুম: ১ হাজার ৫০০ রুপি

লোকাল বাস (কাঠমান্ডু থেকে পোখারা): ৮০০ রুপি

ট্যুরিস্ট বাস: ১ হাজার ৩০০ রুপি

কফি: ২০০ রুপি থেকে শুরু

মোমো: ১৩০ রুপি থেকে শুরু

ভালো রেস্টুরেন্টে দুজনের ডিনার: ৩ হাজার ৩০০ থেকে ৬ হাজার ৫০০ রুপি

পাহাড়ে ডাল-ভাত: ৪০০ থেকে ৮৫০ রুপি

দৈনিক গড় খরচ: ২ হাজার থেকে ৬ হাজার ৭০০ রুপি

২ সপ্তাহে খরচ: ২৮ হাজার থেকে ৯৪ হাজার রুপি

সূত্র: লোনলি প্ল্যানেট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কে এই আতাউর রহমান বিক্রমপুরী

আতাউর রহমান বিক্রমপুরী কারাগারে

জুলাই হত্যাকাণ্ডকে ব্যক্তিগত অপরাধ গণ্য করে আ.লীগের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার

বিএনপিতে রেদোয়ান আহমেদ-ববি হাজ্জাজ, ছেড়ে দিচ্ছে আরও ৮ আসন

আজকের রাশিফল: ফেসবুকে জ্ঞান ঝাড়বেন না— বন্ধুরা জানে আপনি কপি মাস্টার, স্ত্রীর কথা শুনুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেষকৃত্যের পরিকল্পনা নিজেরাই করছেন মার্কিন প্রবীণেরা

ফিচার ডেস্ক
প্রতীকী ছবি: ফ্রিপিক
প্রতীকী ছবি: ফ্রিপিক

নিজের শেষকৃত্য, উইল, চিকিৎসা ব্যয় এমনকি ভবিষ্যৎ পরিচর্যার ব্যবস্থাও আগেভাগে গুছিয়ে রাখছেন যুক্তরাষ্ট্রের বহু প্রবীণ নাগরিক। উদ্দেশ্য একটাই—বার্ধক্যে বা মৃত্যুর পর যেন সন্তানদের আর্থিক ও মানসিক চাপে না ফেলতে হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাবা-মায়ের দেখভালের অভিজ্ঞতা থেকে আজকের বেবি বুমার ও জেন এক্স প্রজন্ম এই সিদ্ধান্তে আসছে।

‘আমি মেয়ের বোঝা হতে চাই না’

ক্যালিফোর্নিয়ার প্লেজেন্টনের বাসিন্দা ৭৬ বছর বয়সী জসলিন কম্বস ইতিমধ্যে নিজের সব গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র গুছিয়ে ফেলেছেন। উইল, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, অনলাইন পাসওয়ার্ড—সবকিছুর একটি তালিকা তৈরি করে রেখেছেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, নিজের জমিতেই একটি ছোট আলাদা ঘর তৈরি করেছেন। ভবিষ্যতে সেখানে কেয়ারগিভার থাকবেন, অথবা প্রয়োজনে সেটি ভাড়া দিয়ে অতিরিক্ত আয় করবেন। এই পরিকল্পনার পেছনে রয়েছে তাঁর নিজের অভিজ্ঞতা। কম্বসের বাবা-মা দুজনে ৯০ বছরের বেশি বয়স পর্যন্ত বেঁচেছিলেন। দীর্ঘদিন তাঁদের দেখভাল করতে গিয়ে তিনি মানসিক ও আর্থিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন।

ওয়াশিংটন পোস্টকে তিনি বলেন, ‘এই অভিজ্ঞতা আমাকে একেবারে নিঃশেষ করে দিয়েছিল। তাই আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি, যেন আমার মেয়েকে কখনো এমন পরিস্থিতির মুখে পড়তে না হয়।’

প্রবীণদের নতুন বাস্তবতা

আর্থিক পরামর্শক ও আইনজীবীদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে বেবি বুমার (১৯৪৬-১৯৬৪ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া প্রজন্ম) এবং জেন এক্স (১৯৬৫ থেকে ১৯৮০ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া প্রজন্ম) প্রজন্মের মধ্যে ভবিষ্যৎ নিয়ে এমন আগাম প্রস্তুতির প্রবণতা দ্রুত বাড়ছে। তাঁরা শুধু আর্থিক পরিকল্পনা নয়, ঘরবাড়ি গুছিয়ে রাখা, অপ্রয়োজনীয় জিনিস সরিয়ে ফেলা এবং চিকিৎসাসংক্রান্ত সিদ্ধান্তও আগেভাগে নিয়ে রাখছেন। ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স ফর ফ্যামিলি কেয়ার এবং এএআরপির চলতি বছরের এক জরিপে দেখা গেছে, বর্তমানে প্রায় ৪৭ শতাংশ পারিবারিক কেয়ারগিভার এই ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এক দশক আগে এই হার ছিল ৫ শতাংশ কম। জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় অর্ধেক মানুষ জানিয়েছেন, বাবা-মায়ের দেখভাল করতে গিয়ে তাঁরা আয় হারিয়েছেন, সঞ্চয় শেষ হয়ে গেছে কিংবা বড় ধরনের আর্থিক সংকটে পড়েছেন।

ফ্যালকন ওয়েলথ প্ল্যানিংয়ের সিইও গ্যাব্রিয়েল শাহিন বলেন, ‘আগে বড় কোনো দুর্ঘটনা বা অসুস্থতার পরই মানুষ এসব নিয়ে ভাবত। এখন অনেকে আগে থেকে উদ্যোগ নিচ্ছেন।’

বাড়ছে বয়স, বাড়ছে চাপ

যুক্তরাষ্ট্রে গড় আয়ু বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তাব্যবস্থার ওপর চাপও বাড়ছে। পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০৫০ সালের মধ্যে দেশটিতে ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা ৩০ শতাংশের বেশি বাড়বে। তখন মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশই হবে প্রবীণ। অন্যদিকে, পেশাদার নার্স ও কেয়ারগিভারের সংকট দিন দিন তীব্র হচ্ছে। ব্যয়ও ভয়াবহ রকমের বেশি। বিমা কোম্পানি জেনওয়ার্থের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে একটি নার্সিং হোমে ব্যক্তিগত কক্ষের গড় খরচ ছিল মাসে ১০ হাজার ৬৫০ ডলার। তুলনামূলক সাধারণ সিনিয়র কেয়ার সেন্টারেও মাসে গড়ে প্রায় ৫ হাজার ৯০০ ডলার খরচ হয়।

শুধু টাকা নয়, মানসিক চাপও

অর্থনৈতিক চাপের পাশাপাশি মানসিক চাপও এই প্রজন্মকে নাড়া দিচ্ছে। বাস্তবে দেখা যায়, পরিবারের প্রবীণ সদস্যের দেখভালের দায়িত্ব প্রায়ই একজনের ওপর পড়ে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কন্যা সন্তান বা যিনি কাছাকাছি থাকেন। এতে পারিবারিক দ্বন্দ্ব, অভিমান ও দূরত্ব তৈরি হয়। বোস্টনের বাসিন্দা জোয়ান স্যাভিট ছয় মাসের বেশি সময় ধরে বোস্টন ও ক্লিভল্যান্ডের মধ্যে যাতায়াত করেছেন তাঁর ১০১ বছর বয়সী মায়ের বাড়ি গোছাতে। ৫৫ বছরের জমানো জিনিসপত্রে ভরা সেই বাড়ি পরিষ্কার করা, ব্যাংক ও ক্রেডিট কার্ড বাতিল, চিকিৎসকের কাছে নেওয়া—সবকিছু সামলাতে গিয়ে নিজের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে তাঁর। উচ্চ রক্তচাপ, চোখের ক্ষতি, এমনকি ভাই-বোনদের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি—সবই এ কারণে হয়েছে। এই অভিজ্ঞতা থেকে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, স্বামী মারা গেলে নিজের বাড়ি নিলামে তুলে ছোট বাসায় চলে যাবেন। তাঁর ভাষায়, ‘আমি কাউকে বিব্রত করতে চাই না। শহীদের মতো আত্মত্যাগও করতে চাই না।’

পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সতর্কবার্তা

আমেরিকান একাডেমি অব এজিং লর সভাপতি এরিক আইনহার্ট এই প্রবণতাকে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি ‘ওয়েক-আপ কল’ বলে উল্লেখ করেছেন। ভার্জিনিয়ার বাসিন্দা কলিন গ্লিসন বাবা-মা মারা যাওয়ার পরপরই একজন আইনজীবীর সঙ্গে বসে নিজের লিভিং উইল তৈরি করেন। ছেলেকে জানিয়ে দেন, তিনি দাহ চান। সম্পত্তি ও নথিপত্রও এমনভাবে গুছিয়ে রাখেন, যেন ছেলেকে আইনি জটিলতায় পড়তে না হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রবণতা শুধু একটি দেশের গল্প নয়; এটি আধুনিক সমাজে বার্ধক্য, পরিবার ও দায়িত্ববোধের নতুন বাস্তবতার প্রতিফলন। প্রবীণেরা এখন আর শুধু নিজের ভবিষ্যৎ নয়, সন্তানদের ভবিষ্যৎ স্বস্তির কথাও ভাবছেন। জীবনের শেষ অধ্যায়কে গুছিয়ে নেওয়ার এই প্রচেষ্টা হয়তো আগামী দিনে আরও বিস্তৃত হবে শুধু আমেরিকায় নয়, বিশ্বজুড়েই।

সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কে এই আতাউর রহমান বিক্রমপুরী

আতাউর রহমান বিক্রমপুরী কারাগারে

জুলাই হত্যাকাণ্ডকে ব্যক্তিগত অপরাধ গণ্য করে আ.লীগের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার

বিএনপিতে রেদোয়ান আহমেদ-ববি হাজ্জাজ, ছেড়ে দিচ্ছে আরও ৮ আসন

আজকের রাশিফল: ফেসবুকে জ্ঞান ঝাড়বেন না— বন্ধুরা জানে আপনি কপি মাস্টার, স্ত্রীর কথা শুনুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

স্টেইনলেস স্টিলের হাঁড়িপাতিল ঠিক রাখতে জেনে নিন এই পদ্ধতিগুলো

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
ভুলভাবে ব্যবহারের কারণে স্টেইনলেস স্টিলের হাঁড়িপাতিলে হলদেটে হয়ে যেতে পারে, দাগ পড়ে এবং এগুলোর আয়ু কমে যায়। প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি।
ভুলভাবে ব্যবহারের কারণে স্টেইনলেস স্টিলের হাঁড়িপাতিলে হলদেটে হয়ে যেতে পারে, দাগ পড়ে এবং এগুলোর আয়ু কমে যায়। প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি।

স্টেইনলেস স্টিলের হাঁড়িপাতিল দ্রুত তাপ সরবরাহ করে এবং দীর্ঘদিন ব্যবহারযোগ্য হওয়ায় রান্নাঘরে খুবই জনপ্রিয়। তবে ভুলভাবে ব্যবহার করলে এগুলো হলদেটে হয়ে যেতে পারে, দাগ পড়ে এবং এগুলোর আয়ু কমে যায়। তাই স্টেইনলেস স্টিলের পাত্র ব্যবহারে কিছু ভুল এড়ানো জরুরি। এতে এসব তৈজসপত্র আরও টেকসই হয়।

অতিরিক্ত তাপে গরম করা

স্টেইনলেস স্টিল খুব দ্রুত এবং সমানভাবে গরম হয়। তাই শুরুতে বেশি আঁচে পাত্র বসালে তলার অংশ পুড়ে যেতে পারে বা কালচে দাগ পড়তে পারে। দীর্ঘদিন এভাবে ব্যবহার করলে ধাতুর গঠন দুর্বল হয়ে পাত্র বাঁকা হয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা থাকে। এতে চুলার ওপর পাত্র ঠিকভাবে বসে না এবং রান্নার সময় তাপ সমানভাবে ছড়ায় না।

সমাধান: রান্না শুরু করুন কম বা মাঝারি আঁচে। পাত্র হালকা গরম হওয়ার পর প্রয়োজন অনুযায়ী ধীরে ধীরে আঁচ বাড়ান। খালি পাত্র বেশি সময় চুলায় রাখবেন না।

গরম পাত্রে ঠান্ডা পানি ঢালা

রান্না শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গরম হাঁড়িতে ঠান্ডা পানি ঢাললে পাত্রে হঠাৎ তাপমাত্রার পরিবর্তন ঘটে। এতে স্টেইনলেস স্টিলের ধাতব গঠনে চাপ পড়ে এবং পাত্র বেঁকে যেতে পারে বা তলার অংশ বিকৃত হয়ে যায়। এর ফলে পরে পাত্রে তাপ সমানভাবে ছড়ায় না এবং রান্নার মানও ব্যাহত হয়।

সমাধান: রান্না শেষ হলে পাত্র কিছুক্ষণ স্বাভাবিকভাবে ঠান্ডা হতে দিন। সম্পূর্ণ ঠান্ডা হওয়ার পরেই ধোয়া শুরু করলে পাত্রের গঠন ও কার্যকারিতা দীর্ঘদিন ভালো থাকবে।

ডিশওয়াশারে নিয়মিত ধোয়া

স্টেইনলেস স্টিলের পাত্র পরিষ্কারে সাধারণত ডিশওয়াশার নিরাপদ হলেও নিয়মিত এটি দিয়ে পাত্রগুলো ধোয়া ক্ষতিকর হতে পারে। ডিশওয়াশারে ব্যবহৃত শক্ত রাসায়নিক ডিটারজেন্ট এবং উচ্চ তাপমাত্রার পানির প্রভাবে পাত্রের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা ধীরে ধীরে কমে যায়। এর ফলে পাত্রে দাগ পড়তে শুরু করে, যা দেখতে অস্বস্তিকর এবং পরিষ্কার করাও কঠিন হয়ে ওঠে।

সমাধান: মাঝে মাঝে এ ধরনের পাত্র শুধু পানি দিয়ে অথবা সাধারণ সাবান দিয়ে পরিষ্কার করুন।

ঠান্ডা পানিতে লবণ দেওয়া

অনেকে রান্নার শুরুতে ঠান্ডা পানিতে লবণ দিয়ে দেন। এটি স্টেইনলেস স্টিলের পাত্রের জন্য ক্ষতিকর। ঠান্ডা পানিতে দেওয়া লবণের ক্লোরাইড, স্টিলের ক্রোমিয়াম এবং পানির অক্সিজেন একসঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটায়। এর ফলে পাত্রের গায়ে ছোট ছোট গর্তের মতো স্থায়ী দাগ তৈরি হয়, যাকে সহজে পরিষ্কার বা ঠিক করা যায় না এবং পাত্রের সৌন্দর্য ও স্থায়িত্ব—দুটোই কমে যায়।

সমাধান: সব সময় পানি ফুটে ওঠার পরেই তাতে লবণ যোগ করুন।

ধোয়ার পর পাত্র না শুকানো

ধোয়ার পর স্টেইনলেস স্টিলের পাত্রে পানি জমে থাকলে খুব দ্রুত চুনের দাগ বা সাদা আস্তরণ পড়ে। পানির সঙ্গে থাকা খনিজ উপাদান শুকানোর সময় পাত্রের গায়ে লেগে যায় এবং ধীরে ধীরে দাগ স্থায়ী হয়ে ওঠে, যা পরে পরিষ্কার করা কঠিন হয়ে পড়ে।

সমাধান: পাত্র ধোয়ার পর পরিষ্কার ও শুকনো কাপড় দিয়ে ভেতর ও বাইরে জমে থাকা পানি মুছে ফেলুন। এতে দাগ পড়া অনেক দেরি হবে এবং পাত্র দীর্ঘদিন ঝকঝকে থাকবে।

রোদে শুকাতে দেওয়া

অনেকে পাত্র ধুয়ে রোদে রেখে দেন, এটি ক্ষতিকর অভ্যাস। রোদে শুকানোর সময় পানির খনিজ উপাদান দ্রুত জমে গিয়ে স্টেইনলেস স্টিলের গায়ে দাগ তৈরি করতে পারে। এসব দাগ সহজে ওঠে না এবং পাত্রের উজ্জ্বলতা নষ্ট করে।

সমাধান: পাত্র ধোয়ার পর পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ভালোভাবে মুছে শুকিয়ে নিন এবং ঠান্ডা ও ছায়াযুক্ত স্থানে রাখুন।

দাগ পড়লে করণীয়

বেকিং সোডা ও ভেজা স্পঞ্জ দিয়ে হালকা করে ঘষে পরিষ্কার করুন। এতে দাগ উঠে যাবে এবং পাত্র আবার ঝকঝকে হবে।

সঠিক নিয়মে ব্যবহার ও নিয়মিত যত্ন নিলে স্টেইনলেস স্টিলের হাঁড়িপাতিল দীর্ঘদিন ঝকঝকে থাকে। এতে পাত্রের সৌন্দর্য যেমন বজায় থাকে, তেমনি তাপ পরিবহনের ক্ষমতাও নষ্ট হয় না। ফলে রান্না হয় সমান ও স্বাস্থ্যসম্মত এবং বারবার নতুন পাত্র কেনার প্রয়োজনও পড়ে না। একটু সচেতন ব্যবহারেই এই পাত্রগুলো বহু বছর ব্যবহার করা সম্ভব।

সূত্র: ভিএন এক্সপ্রেস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কে এই আতাউর রহমান বিক্রমপুরী

আতাউর রহমান বিক্রমপুরী কারাগারে

জুলাই হত্যাকাণ্ডকে ব্যক্তিগত অপরাধ গণ্য করে আ.লীগের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার

বিএনপিতে রেদোয়ান আহমেদ-ববি হাজ্জাজ, ছেড়ে দিচ্ছে আরও ৮ আসন

আজকের রাশিফল: ফেসবুকে জ্ঞান ঝাড়বেন না— বন্ধুরা জানে আপনি কপি মাস্টার, স্ত্রীর কথা শুনুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কেনাকাটার জন্য যে দেশে নাগরিকদের দেওয়া হচ্ছে নগদ অর্থ

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় সামাল দিতে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র মার্শাল আইল্যান্ডসের নাগরিকেরা এখন নিয়মিত নগদ অর্থ সহায়তা পাচ্ছেন। ছবি: মার্শাল আইল্যান্ডস জার্নাল
জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় সামাল দিতে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র মার্শাল আইল্যান্ডসের নাগরিকেরা এখন নিয়মিত নগদ অর্থ সহায়তা পাচ্ছেন। ছবি: মার্শাল আইল্যান্ডস জার্নাল

একবার ভাবুন, কেনাকাটার জন্য রাষ্ট্র আপনার অ্যাকাউন্টে নিয়ম করে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা পাঠাচ্ছে! কেমন হবে বিষয়টি? না, এটি কোনো কল্পনা নয়। জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় সামাল দিতে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র মার্শাল আইল্যান্ডসের নাগরিকেরা এখন নিয়মিত নগদ অর্থ সহায়তা পাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক ক্ষতিপূরণ তহবিল থেকে দেশটির প্রত্যেক নাগরিককে তিন মাস পরপর প্রায় ২০০ মার্কিন ডলার দেওয়া হচ্ছে ই-ওয়ালেটের মাধ্যমে।

গত নভেম্বরের শেষ দিক থেকে দেশটির রাজধানী মাজুরোর চিত্র একেবারেই বদলে গেছে। রাস্তাঘাটে বেড়েছে মানুষের ভিড়, দোকানপাটে জমেছে কেনাকাটার ধুম। খাদ্যসামগ্রী ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনার পাশাপাশি মানুষ উদ্‌যাপন করছে গসপেল ডে। এই আনন্দের মূল কারণ হলো, দেশজুড়ে চালু হওয়া প্রথম ইউনিভার্সাল বেসিক ইনকাম (ইউবিআই) কর্মসূচির অর্থ বিতরণ।

নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, মার্শাল আইল্যান্ডসে বসবাসরত প্রত্যেক নাগরিক তিন মাস পর প্রায় ২০০ ডলার পাবেন। আর বছরে পাবেন প্রায় ৮০০ ডলার। প্রায় ৪২ হাজার জনসংখ্যার এই দেশে মুদ্রাস্ফীতি ও অভিবাসনের চাপ বাড়ছে। এ প্রেক্ষাপটে দেশটির অর্থমন্ত্রী ডেভিড পল এই ভাতাকে ‘মানসিক শক্তি জোগানোর উপায়’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তাঁর ভাষায়, ‘এই উদ্যোগের লক্ষ্য হলো, কেউ যেন পিছিয়ে না পড়ে।’

ডিজিটাল ওয়ালেটে টাকা পাওয়ার সুযোগ

গত নভেম্বরের শেষ দিক থেকে দেশটির রাজধানী মাজুরোর চিত্র একেবারেই বদলে গেছে। ছবি: উইকিপিডিয়া
গত নভেম্বরের শেষ দিক থেকে দেশটির রাজধানী মাজুরোর চিত্র একেবারেই বদলে গেছে। ছবি: উইকিপিডিয়া

এই কর্মসূচির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো, নাগরিকেরা শুধু প্রচলিত ব্যাংক ট্রান্সফার বা চেকের ওপর নির্ভরশীল নন; চাইলে তাঁরা ডিজিটাল ওয়ালেটের মাধ্যমেও সরাসরি অর্থ গ্রহণ করতে পারছেন। এই পদ্ধতিতে ব্লক চেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, যা নিরাপদ ও স্বচ্ছ লেনদেন নিশ্চিত করে। এটি মার্শাল আইল্যান্ডসকে বিশ্বে একটি ব্যতিক্রমী উদাহরণে পরিণত করেছে। প্রশান্ত মহাসাগরের বিস্তৃত এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য দ্বীপে নগদ অর্থ পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে এটি একটি কার্যকর ও আধুনিক সমাধান হিসেবে দেখা হচ্ছে।

প্রকল্পের অর্থ ব্যবস্থাপক আনেলি সারানা জানান, প্রথম কিস্তির অর্থ বিতরণের পর রাজধানী এবং আশপাশের এলাকায় একধরনের উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। তাঁর ভাষায়, ‘রাস্তাঘাটে এমন ভিড় আগে দেখা যায়নি। মনে হচ্ছিল, যেন বড় কোনো উৎসব চলছে।’ তিনি আরও জানান, কর্মসূচির আওতায় সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করতে তাঁর দলকে অনেক দুর্গম দ্বীপে নৌকায় করে যেতে হয়েছে। সেখানে গিয়ে নাগরিকদের নিবন্ধন, পরিচয় যাচাই এবং অর্থ গ্রহণের পদ্ধতি বোঝানোর কাজ করতে হয়েছে, যা পুরো উদ্যোগকে আরও মানবিক ও অংশগ্রহণমূলক করে তুলেছে।

প্রযুক্তি ব্যবহারে চ্যালেঞ্জ

অস্ট্রেলিয়ার আরএমআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক ড. ফাম হুই মনে করেন, জাতীয় পর্যায়ে ব্লক চেইন ব্যবহার করে ইউবিআই বিতরণ করা একটি অভিনব পদক্ষেপ। তাঁর মতে, মার্কিন ডলারের সঙ্গে সংযুক্ত স্টেবল কয়েন ব্যবহারের ফলে প্রশান্ত মহাসাগরে ছড়িয়ে থাকা শত শত ছোট দ্বীপে নগদ অর্থ পরিবহনের ব্যয় ও ঝুঁকি অনেকটাই কমে। তবে প্রযুক্তিকে দৈনন্দিন জীবনের অংশ করে তোলা সহজ নয়। পরিসংখ্যান বলছে, এখনো প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ নিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। বাকিরা চেক পছন্দ করছেন। পরীক্ষামূলক পর্যায়ে মাত্র ১২ জন নাগরিক ই-ওয়ালেট ব্যবহারে নিবন্ধন করেছিলেন।

ড. হুইর মতে, এ পদ্ধতির বড় বাধা হলো অবকাঠামো—স্থিতিশীল ইন্টারনেট সংযোগ এবং স্মার্টফোন। এই দুটি সুবিধা এখনো মার্শাল আইল্যান্ডসের অনেক অঞ্চলে বিলাসিতার পর্যায়ে রয়েছে। এসব সমস্যা সমাধান না হলে ডিজিটাল অর্থ প্রদান পুরোপুরি কার্যকর হবে না।

আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগ

যদিও দেশের ভেতরে এই উদ্যোগ ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক মহলে এটি নিয়ে প্রশ্নও উঠেছে। ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ড (আইএমএফ) কর্মসূচিটির আর্থিক ঝুঁকি এবং তদারকি ব্যবস্থার স্বচ্ছতা নিয়ে সতর্কতা প্রকাশ করেছে। বর্তমানে এই ইউবিআই কর্মসূচির অর্থ আসছে ১৩০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যের একটি ট্রাস্ট ফান্ড থেকে। এই অর্থ যুক্তরাষ্ট্র অতীতে মার্শাল আইল্যান্ডসে পরিচালিত পারমাণবিক পরীক্ষার ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিয়েছিল।

ব্যয়বহুল জীবনযাত্রার চাপ কমাতে মার্শাল আইল্যান্ডসের এই উদ্যোগ বিশ্বজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। প্রযুক্তি ও সামাজিক নিরাপত্তার এমন সমন্বয় ভবিষ্যতে অন্য দেশগুলোর জন্যও উদাহরণ হয়ে উঠতে পারে।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কে এই আতাউর রহমান বিক্রমপুরী

আতাউর রহমান বিক্রমপুরী কারাগারে

জুলাই হত্যাকাণ্ডকে ব্যক্তিগত অপরাধ গণ্য করে আ.লীগের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার

বিএনপিতে রেদোয়ান আহমেদ-ববি হাজ্জাজ, ছেড়ে দিচ্ছে আরও ৮ আসন

আজকের রাশিফল: ফেসবুকে জ্ঞান ঝাড়বেন না— বন্ধুরা জানে আপনি কপি মাস্টার, স্ত্রীর কথা শুনুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত