সৈয়দা সাদিয়া শাহরীন

ভোরের দিকে ঘরটা এতই গরম হয়ে গিয়েছিল যে গোসল না করার মুড থেকে ধাপ করে গোসল করার মুডে চলে আসলাম। সাড়ে ছয়টার দিকে গরমে ঘুম ভেঙে গেল। দুজনেরই। খুব অস্থির লাগছিল বলে গোসল সেরে নিলাম। অতি অবশ্যই গরম পানি দিয়ে। ভুবন বলেছিল গোসল করবে না। আমি নিশ্চিন্ত মনে গিজারের গরম পানি গায়ে ঢেলে গোসল করে বের হয়েছি। ওদিকে উনি গিয়ে কোনো রকম অপেক্ষা ছাড়া ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল সেরে আসলেন। ভাবা যায়! মাইনাসের তাপমাত্রায় একটা মানুষ কনকনে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করেছেন! যাই হোক, গোসল সেরে খুব ফুরফুরে লাগছিল দুজনেরই। আমার তো ক্ষুধায় জান যায় যায় অবস্থা। সাতটার দিকে রুম থেকে বের হয়ে খাবার ঘরের দিকে যাব, এমন সময় হঠাৎ হোটেলের পেছন দিকে চোখ চলে গেল।
রীতিমতো চিৎকার করে ডাকলাম, ‘ভুবন, জলদি এদিকে আসো।’ ভুবনও যথারীতি চলে এল এবং আমার মতো হা করে তাকিয়ে রইল। সত্যি, একেবারে মুখটা খুলে গোল করে হা করে ছিলাম আমরা! হোটেলের পেছন থেকে সুবিশাল পাহাড় দেখা যাচ্ছে। পাহাড়ের চূড়ায় চূড়ায় ধবধবে সাদা বরফ। এ দৃশ্য তো সামনাসামনি কখনো দেখা হয়নি। ছবির চেয়ে কত সুন্দর এই সৃষ্টি। বলে বা লিখে বোঝানো যাবে না। না, একটা স্থিরচিত্র দেখেও বুঝবেন না। চলচ্চিত্রে দেখেও না। এর আসল রূপ শুধু এবং শুধুমাত্র সামনাসামনি দেখতে হয়। কিছুক্ষণ হা করে দাঁড়িয়ে থেকে সংবিৎ ফিরে এলে ভুবন ফটাফট কয়েকটা ছবি তুলে নিল। এরপর চলে গেলাম খেতে। আমরা দুজন ছাড়া কেউ তখনো রুম থেকে বের হননি। গিয়ে দেখি ম্যানেজার সাহেব দুপুরের খাবারের আয়োজন করছেন।
সকালের নাশতা তৈরি। জ্যাম আর বাটার স্যান্ডউইচ। সঙ্গে এলাচি চা। জ্যাম জিনিসটা আমার ভালো লাগে না। অতিমাত্রায় মিষ্টি মনে হয়। বাটার স্যান্ডউইচ খেলাম তাই। চা তো খেলামই। এরপর সবার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। সবাই যখন একে একে আসতে শুরু করল নাশতার জন্য, আমি ওদিকে ম্যানেজারের সঙ্গে গল্প জুড়ে দিলাম। তিনি হিন্দি, বাংলা দুটোই পারেন। কথায় কথায় তখনই জানলাম তিনিই এখানকার সবকিছু একা দেখাশোনা করেন। রান্নাঘর আর খাবার ঘর থেকে হোটেলের সামনের রাস্তা দেখা যায়। দেখা যায় অদূরের বিশাল পাহাড়গুলো। আর চূড়ায় চূড়ায় মনে হয় কেউ সাদা দুধ ঢেলে দিয়েছে।
পাহাড়ের রাস্তা ধরে মাঝে মাঝে গরু-ছাগল হেঁটে যেতে দেখলাম। এদিকের পশু বা প্রাণীগুলোর লোম অনেক বড় বড় হয়। গ্যাংটক থেকে লাচুং আসা পর্যন্ত অনেক কুকুর দেখেছি, খুব সুন্দর। এদের লোমও বড় বড়। ভুবন বলছিল, শীতপ্রধান এলাকায় পশুদের লোম এমন বড় বড় হয়। এতে করে শীতের প্রকোপটা ওরা সয়ে নিতে পারে। ম্যানেজার সাহেবকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘গরুগুলো কি পাহাড়ি বা বুনো?’ উত্তরে তিনি না বললেন। এদিকে মোটামুটি সবাই গরু পালে। ছাগলও পালে। ‘তাহলে এরা এমন একা বাঁধন ছাড়া ঘুরছে কেন?’ ম্যানেজার সাহেব বললেন, এরা জানে বেলাশেষে কোন ঘরে ফিরতে হবে। আমি বললাম, ‘আজব তো! কেউ চুরি করে নিয়ে গেলে?’ নাহ, চুরি করে না কেউ। সারা দিন ঘর খোলা রাখলেও কেউ চুরি করতে ঢুকবে না। আহা, এমন যদি সবখানে হতো! মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেলি। ম্যানেজার সাহেবের কাছ থেকে আরও জানলাম এখানে সবাই চাষবাস করেই চলে। পাহাড়ি এলাকায় যেমন সবজি হয়, সেগুলো চাষ করে নিজেদের মধ্যেই বিকিকিনি হয়। বাইরে থেকে আনা-নেওয়াটা খুব কম হয়। তাই সবকিছু এখানে পাওয়াও যায় না। ম্যানেজারের কথায় প্রমাণ পেলাম। রান্নাঘরে তাকে সারি করে সাজিয়ে রাখা সব টিনজাত খাবার। একটা টিন খুলে মটর বের করে সবজির কড়াইতে ঢেলে দিলেন। তেলে-আগুনে ছ্যাঁৎ করে উঠল। আমি বাইরে তাকিয়ে একপলকে প্রকৃতি দেখছিলাম। আর শুনছিলাম রান্নার ছ্যাঁৎ ছ্যাঁৎ শব্দ। মাথাটা কেমন যেন ভার ভার হয়ে আসছিল।
সবার নাশতা খাওয়া শেষ হলে পান্ডেজির সঙ্গে বেরিয়ে পড়লাম ইয়ামথাং ভ্যালির উদ্দেশে। সেই আমরা ৯জন। জিপ নিয়ে আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ বেয়ে আরও ওপরের দিকে উঠছিলাম। সীমানা অঞ্চল। তাই এদিকে সেনাবাহিনীর ঘাঁটি আছে। একটু পরপর সেনাবাহিনীর কয়েকটা চেকপোস্ট। জিপ আটকে দেখে নেয় সবকিছু ঠিকঠাক আছে কি না। পান্ডেজি আগেই বলে দিলেন, ‘ডরনা নেহি। নেইতো সক করেগা।’ ভয় পেলেই সন্দেহ করবে বলে আমরা সব দাঁত বের করে ভেটকি দিয়ে রইলাম প্রতিবার। বাকিটা পান্ডেজি সামলে নিলেন। যেতে যেতে খেয়াল করলাম রাস্তার দুই ধারে বরফ জমে আছে। সন্দেহ রইল না যে রাতে তুষারপাত হয়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে হয়েছিল বলে তেমন টের পাইনি। পান্ডেজি আরেকটা ব্যাপারে সাবধান করে দিলেন, ‘ফটো নেহি লেনা।’ হুম, সাইনবোর্ডে লেখা ছিল, পড়েছি। যাত্রাপথে ক্যামেরা বের করা যাবে না। ছবি তোলা তো দূরের কথা। সেনারা দেখলে রেখেই দেবে। ওদিকটায় ছবি তোলা নিষেধ। আর যখন থেকে সিকিমে প্রবেশ করেছি আমরা, কোথাও কোনো ময়লা দেখিনি রাস্তায়। যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলা তো নিষেধই। আবার উত্তরে প্রবেশ করলে প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করা নিষেধ। প্লাস্টিকের পানির বোতলও পাবেন না। তবে চিপস পাওয়া যাবে প্লাস্টিকের চেনা প্যাকেটে। সেটা আবার যথাস্থানে ফেলতে হবে। মন চাইলেই হাওয়ায় ভাসানো যাবে না। নইলে জরিমানা গুনে ফকির হতে হবে। খুব ভালো লাগল দেখতে, সেখানকার মানুষ এই নিয়মগুলো সঠিকভাবে মেনে চলে। বাইরের দর্শনার্থীরা এসে যদি নিয়ম ভঙ্গ করে তবে সাধারণ মানুষেরাই অনেক রেগে যায়।
খুব বেশি হলে আধা ঘণ্টা। এর মধ্যে ইয়ামথাং ভ্যালির ফটকের সামনে চলে আসলাম। কিছুদূর আগে দেখেছিলাম রোডোডেন্ড্রন স্যাংকচুয়ারির ফটক। সেটা তখন বন্ধ ছিল। ফেব্রুয়ারি মাসে রোডোডেন্ড্রন ফুল ফোটে না। তাই আর তার সৌন্দর্য দেখা গেল না। যাই হোক, জিপ থেকে নেমে চারদিকে মাথা ঘুরিয়ে নিলাম। অদ্ভুত সুন্দর! ভুবন বলল, ‘অমায়িক সৌন্দর্য!’ ফটক দিয়ে প্রবেশের আগে দেখলাম ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পসরা সাজিয়ে বসেছেন। কেউ বিক্রি করছেন বিয়ার, কেউ ম্যাগি নুডুলস, সঙ্গে পানি, কেউ ভাড়া দিচ্ছেন রবার বুট ও দস্তানা। এই বুটগুলো পরে যেতে একরকম জোরাজুরিই করছিলেন ব্যবসায়ীরা।
আমাদের পরা বুটগুলো নাকি বরফে নষ্ট হয়ে যাবে। অগত্যা নিজেদের বুট খুলে ভাড়া নিলাম তাঁদেরগুলো। বরফ হাতে নিয়ে ছুড়ে মারার খেলার জন্য দস্তানাও নিতে হলো। ওইগুলো হাতে-পায়ে পরতেই মনে হলো বরফ পরে আছি। এত ঠান্ডা! যে নারী ভাড়া দিলেন, তিনি বোঝালেন যে একটু পরেই ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু নাহ, সারাক্ষণ এই ঠান্ডা নিয়েই চলতে হয়েছিল। ফটক দিয়ে হেঁটে প্রবেশ করলাম সবাই। যে যার মতো করে বরফ নিয়ে খেলা শুরু করেছিল।
এদিকে মাথার ভারটাকে পাত্তা দিচ্ছিলাম না আমি। মনে জোর নিয়ে আশপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করলাম। ছবি তুললাম। বরফ হাতে নিয়ে ছুড়ে মারার খেলাটাও খেললাম ভুবনের সঙ্গে। একটা সময় আর পারছিলাম না। হাত-পা ঠান্ডায় জমে গিয়েছিল। নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিল মাথা ঘুরে পড়ে যাব। না পেরে ভুবনকে বললাম আমার খারাপ লাগছে। সঙ্গের ভাইয়েরা শুনে একেক জন একেক ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেওয়া শুরু করলেন। কারণ ওই পাঁচজন কোনো না কোনো ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন। কেউ একজন দৌড়ে গিয়ে দশ রুপি দিয়ে এক গ্লাস পানি এনে দিলেন। আমার চোখ ঘোলা হয়ে আসছিল। কান স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছিল। কিছু বুঝে উঠতে পারছিলাম না। কেউ পানি দিলেন, তো কেউ ওষুধ দিলেন। খেয়ে একটা গাছের নিচে বসলাম।
অপেক্ষা করছিলাম। আমার জন্য কারও যেন মজা করা মাটি না হয়ে যায়। কেউ একজন এসে খবর দিলেন একটা জায়গায় আগুন পোহানো যাচ্ছে। গেলাম সেখানে। একটা ভাঙা গাছ বেঞ্চির মতো শোয়ানো। তার পাশে আগুন জ্বলছে। গাছের এক পাশে বসে আগুন পোহাতে লাগলাম। সবাইকে আনন্দ করতে দেখছিলাম। যদিও আমার চোখ ঝাপসা হয়ে এসেছিল। আমাদের দলটা যে যার মতো ভাগ হয়ে আনন্দ করছিল। ভুবন বেশ কিছুক্ষণ তাঁদের সঙ্গে ছিল। ফিরে এসে বলতে লাগল, ‘আমারও খারাপ লাগছে। চলো আমরা ধীরে ধীরে গাড়ির দিকে আগাই। ওনারা আসুক।’ মাসুম ভাইকে বলে আমরা সামনের দিকে এগোতে থাকলাম। ভ্যালির ফটক থেকে বের হয়ে রাবার বুট আর দস্তানা ফেরত দিয়ে আমাদের বুটগুলো নিয়ে নিলাম। একটা বেঞ্চিতে বসে জুতা খোলা ও পরা যায়। পান্ডেজিকে না পেয়ে সেই বেঞ্চিতে বসে ছিলাম। এদিকে আমার শ্বাসকষ্ট বেড়েই চলছিল। একজন ভদ্রমহিলা এসে আমাকে সরতে বললেন। তিনি বসে জুতা বদলাবেন। সঙ্গে তাঁর পরিবারের আরও সদস্য অপেক্ষা করছেন দাঁড়িয়ে। তাঁরাও বদলাবেন। আমি একপাশ হয়ে গিয়ে অনুরোধ করলাম আমাকে একটু বসে থাকতে দিতে। তিনি বুঝতে পারলেন আমার শরীর বেজায় খারাপ করেছে। হিন্দিতে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ক্যায়া হুয়া বেটা?’ বললাম শ্বাস নিতে পারছি না। তাঁর মেয়ে অথবা ছেলের বউ হবেন, তিনি এগিয়ে এসে আমাকে একটা ছোট পুঁটলি দিলেন। সুতি রুমালে কর্পূর ছিল সেটাতে। বললেন এটা নাকে ধরে শুঁকতে। কিছুক্ষণ ইনহেলারের মতো ব্যবহার করার পর দেখলাম ভালোই লাগছে। জিনিসটা তাঁদের ফেরত দিতে চাইলাম। তাঁরা কিছুতেই নিতে চাইলেন না। বললেন, ‘হামারে পাস অউর ভি হ্যায়। ইয়ে তুম রাখলো।’ পরামর্শ দিলেন এত উঁচু জায়গায় আসলে এই কর্পূরের ছোট পুঁটলি সঙ্গে রাখতে। কম-বেশি সবারই নাকি উঁচুতে উঠলে শ্বাসকষ্ট হয়। তাঁরা জানেন বলেই সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। আমাকে তাঁরা জিজ্ঞেস করেছিলেন আমি কোথা থেকে এসেছি। খুব গর্ব লাগছিল বলতে, ‘বাংলাদেশ থেকে।’ তাঁরা এসেছিলেন গুজরাট থেকে। আমাকে গুজরাটে যাওয়ার দাওয়াত দিয়ে দিলেন। আমিও তাঁদের বাংলাদেশে আসার নিমন্ত্রণ দিলাম। তাঁরা বিদায় নিতে গেলে দুই ভদ্রমহিলাকে জড়িয়ে ধরে ধন্যবাদ জানালাম। তাঁরাও আমার ব্যবহারে মুগ্ধ। খুব হাসিখুশি মুখে বিদায় নিলেন। একটু পরপর কর্পূরের পুঁটলিটা নাকে ধরে নিঃশ্বাস স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে মাসুম ভাই এসে পান্ডেজিকে খুঁজে আমাদের গাড়িতে গিয়ে বসতে বললেন। জানালেন, ‘আকাশ ভাইদের খুঁজে পাচ্ছি না। ওনারা এলেই আমরা ফিরতে পারি।’ আকাশ ভাই আর সঙ্গে কে কে যেন কোন একটা বরফের পাহাড়ে চড়তে গিয়েছিলেন। শরীর ভালো থাকলে হয়তো আমরাও যেতাম। খুব আফসোস লাগছিল। ইয়ামথাং কি তাহলে অভিশাপ দিয়েছিল আমাদেরকে?
গাড়িতে বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম আমি আর ভুবন। মাসুম ভাই দুটো ওষুধ ধরিয়ে দিয়ে গেছেন। প্যারাসিটামল। আমাদের জ্বর এসেছে। অবস্থা গুরুতর। এটা না বললে কেউ ফিরবে না। তাই মাসুম ভাই খিটমিট করতে করতে আবার খুঁজতে চলে গেলেন বাকিদেরকে। এদিকে ওই দলটা জিরো পয়েন্ট থেকে ঘুরে ইয়ামথাং ভ্যালিতে চলে এসেছে। তারাও আনন্দ-ফুর্তিতে ব্যস্ত। অবশ্য আমাদের দলের সদস্যদের আরও আগেই তাদের ঘোরাঘুরি শেষ হয়ে গিয়েছিল। তারা এসেই বলছিল, ‘কেন যে জিরো পয়েন্টে গেলাম। এখানেই তো ভালো ছিল!’ আমরা মাসুম ভাইয়ের দেওয়া ওষুধ খেয়ে চুপচাপ বসে ছিলাম। ভুবনের কপাল ধরে দেখি বেশ ভালো জ্বর। আমারও তাই। আমার চেয়ে ওর শ্বাসকষ্ট কম হচ্ছিল। কর্পূরের পুঁটলিটা একবার আমার নাকে, আরেকবার ওর নাকে ধরছিলাম। নিজের ঘর আর বিছানাটাকে তখন কী পরিমাণ যে মনে করছিলাম তা বলে বোঝাতে পারব না। সেই সঙ্গে আম্মুকে। সবারই নিশ্চয়ই অসুখ হলে মায়ের কথা বেশি মনে পড়ে? ভুবন হয়তো আমার শাশুড়িকে মনে করছিল। কী জানি? বলেনি। ইংরেজিতে ভুবনকে বললাম, ‘আই মিস হোম।' বলেই কান্না শুরু করলাম। শুধু বাড়ি ফিরতে ইচ্ছা করছিল বলে। ভুবন বলল, ‘ঠিক আছে। আর কখনো তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাব না।’ এটা কেমন কথা? বললাম, ‘কেন যাব না? অবশ্যই যাব। আরও বেশি বেশি প্রস্তুতি নিয়ে যাব। আর বেশি বেশি সাবধান থাকব।’
প্রায় দেড় ঘণ্টার মতো অপেক্ষা করার পর সবাই ফিরে এলেন। ফিরেই বাগ্বিতণ্ডায় লেগে গেলেন আকাশ ভাই আর মাসুম ভাই। মাসুম ভাইয়ের কথা হচ্ছে, ‘দেখলেন যে ওনারা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাহলে দেরি করলেন কেন? ওনাদের তো হোটেলে ফিরে একটু বিশ্রাম দরকার। আপনারা না ফিরলে তো যেতেও পারছেন না।’ এদিকে আকাশ ভাইয়ের কথা, ‘আরে ভাই আমি তো জানিই না ওনারা এত অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। জানলে কি আর দেরি করতাম?’ মাসুম ভাই বলেন, ‘কেন জানবেন না? না জানার কী আছে?’ আকাশ ভাই যতই বোঝাচ্ছিলেন যে তিনি জানতেন না, মাসুম ভাই ততই রেগে যাচ্ছিলেন। আর আমরা দুজন বাকিদের মতো হা করে তাকিয়ে দেখছিলাম। শেষমেশ ভুবন এগিয়ে বলল, ‘ভাই, আমাদের কোনো সমস্যা হয়নি। আমরা চাইনি আমাদের জন্য আপনাদের আনন্দটা মাটি হয়ে যাক। এখন চলেন ফিরে যাই। একটু বিশ্রাম নিলেই ঠিক হয়ে যাব।’ তারপরেও দু-এক বাক্য তাঁরা একে অপরকে ছুড়ে দিয়ে গাড়িতে উঠলেন। সেই ঝগড়া অবশ্য বেশিক্ষণ টেকেনি।
ফিরতি পথে সেনারা আটকায়নি। এবার আরও অল্প সময়ে হোটেলে ফিরে এলাম। বারোটার মতো বাজে তখন। হাতে অনেক সময় আছে। দুপুরের খাবার খেয়েই গ্যাংটকের দিকে রওনা দেব। রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম দুজনেই। ঘুম দরকার ছিল। কিছুক্ষণের মধ্যে দরজায় খটখট করল কে যেন। ভুবন দরজা খুলে দিল। মাসুম ভাই এসে দেখলেন আমাদের জ্বর কেমন। পরে দুজনকে দুইটা প্যারাসিটামল আর গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। এঁরা মনে হয় পুরো ওষুধ কোম্পানিটাই সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন! আমরাও বাধ্য ছেলেমেয়ের মতো খেয়ে শুয়ে পড়লাম আবার। জ্বরের যে অবস্থা ছিল, ওষুধ না খেয়ে উপায় ছিল না। তখন এটাই মনে হয়েছিল। ঘণ্টা দুই ঘুম দিয়ে খেতে চলে গেলাম। ইতিমধ্যে সব দলের সবাই জেনে গেছেন আমরা জ্বরে পড়েছি।
একেকজন খুব দুশ্চিন্তা দেখাচ্ছিলেন। আহা-উহু করছিলেন। নানা পরামর্শ দিচ্ছিলেন। তবে এ কথা বলতেই হয় যে আমাদের দলের বাকি সাত সদস্য, অমরদা আর মিলন ভাই যথেষ্ট যত্নশীল ছিলেন দুজনের প্রতি। অমরদা জানালেন সমতল থেকে আমরা প্রায় ১৪ হাজার ফুট ওপরে উঠেছিলাম। সেখানে প্রতিকূল আবহাওয়ায় শ্বাসকষ্ট হওয়াটাই স্বাভাবিক। আর তিনি সতর্ক করেছিলেন সেদিককার বৃষ্টির পানি যেন মাথায় না লাগে। নির্ঘাত জ্বর আসবে। কখন যে দুই-এক ফোঁটা মাথায় পড়েছিল টের পাইনি। তার ওপর ভোর সকালে করেছিলাম গোসল। তাও মাইনাসের তাপমাত্রায়। ভুবন ঢেলেছিল ঠান্ডা পানি। জ্বর আমাদের হবে না তো কার হবে?
খেতে বসেছি এমন সময় বড় দলের নেতা কিসিমের লোকটা এসে বললেন, ‘কী? কে নাকি অসুস্থ? জ্বর হইসে কার?’ বললাম আমাদের। তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে লোকটা বললেন, ‘এএহহহ! আবার ঘুরতে আইছে!’ টিটকারি করে বলুক কিংবা মজা করেই বলুক, লোকটার কথা আমার পছন্দ হলো না। উত্তর দিইনি। বুদ্ধিমত্তা যাঁদের মাইনাসের কোঠায় থাকে, তাঁদের কথার জবাব দিতে হয় না! এমনিতেই তাঁদের লোক দেখানো স্বভাব দেখে বিরক্ত লাগছিল। তার ওপর প্রথম দিন থেকে দেখছি মদ খেয়ে টাল হয়ে ছিলেন। হিম দেশে রাস্তায় রাস্তায় ঝুড়িতে করে মদ, বিয়ার বেচবেই। তা বলে দেদার কিনে গলা অবধি গিলতে হবে? হুম, তা ঠিক যে নিজের টাকা নিজে খরচ করছেন, তাতে কার কী! সমস্যা হচ্ছে, টাকা খরচ করে মাতাল হয়ে যে কারও সঙ্গে যা তা আচরণ করা। এই যেমন আগের রাতে অমরদাকে পারলে পিটিয়ে মেরে ফেলতেন। কেন সবখানে নিয়ে যেতে পারছিলেন না এই কারণে!
খাওয়াদাওয়া সেরে ব্যাগ গুছিয়ে উঠানে বসে অপেক্ষা করছিলাম। দুই দল একসঙ্গে রওনা দেবে। বড় দলের সবাই তখনও প্রস্তুত না। কিছুটা কমে এসেছিল জ্বর। একটু ভালো লাগছিল বলে পান্ডেজির সঙ্গে গল্প করা শুরু করে দিলাম। জিজ্ঞেস করলাম সালমান খানের ‘দাবাং’ সিনেমাটা দেখা হয়েছে কি না। তিনি দেখেছেন। পরে তাঁকে জানালাম কেন আমি তাঁকে পান্ডেজি বলে ডাকি। তিনি মুচকি হেসে বললেন, ‘কাহা ম্যায় অউর কাহা সালমান খান!’ আমিও হেসে বললাম, ‘হামারে লিয়ে তো আপহি সালমান খান হ্যায়, পান্ডেজি।’ আমার বিশ্বাস, পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের নিজ নিজ গল্প আছে। আর সেই গল্পের নায়ক তাঁরা নিজেই। পান্ডেজিকে শুধু এই জিনিসটা উপলব্ধি করাতে চাচ্ছিলাম।
তিনটার দিকে সবাই গাড়িতে চড়ে বসলাম। ভটভট করতে করতে জিপ চালু হয়ে গেল। ফিরছিলাম গ্যাংটক।
চলবে...

ভোরের দিকে ঘরটা এতই গরম হয়ে গিয়েছিল যে গোসল না করার মুড থেকে ধাপ করে গোসল করার মুডে চলে আসলাম। সাড়ে ছয়টার দিকে গরমে ঘুম ভেঙে গেল। দুজনেরই। খুব অস্থির লাগছিল বলে গোসল সেরে নিলাম। অতি অবশ্যই গরম পানি দিয়ে। ভুবন বলেছিল গোসল করবে না। আমি নিশ্চিন্ত মনে গিজারের গরম পানি গায়ে ঢেলে গোসল করে বের হয়েছি। ওদিকে উনি গিয়ে কোনো রকম অপেক্ষা ছাড়া ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল সেরে আসলেন। ভাবা যায়! মাইনাসের তাপমাত্রায় একটা মানুষ কনকনে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করেছেন! যাই হোক, গোসল সেরে খুব ফুরফুরে লাগছিল দুজনেরই। আমার তো ক্ষুধায় জান যায় যায় অবস্থা। সাতটার দিকে রুম থেকে বের হয়ে খাবার ঘরের দিকে যাব, এমন সময় হঠাৎ হোটেলের পেছন দিকে চোখ চলে গেল।
রীতিমতো চিৎকার করে ডাকলাম, ‘ভুবন, জলদি এদিকে আসো।’ ভুবনও যথারীতি চলে এল এবং আমার মতো হা করে তাকিয়ে রইল। সত্যি, একেবারে মুখটা খুলে গোল করে হা করে ছিলাম আমরা! হোটেলের পেছন থেকে সুবিশাল পাহাড় দেখা যাচ্ছে। পাহাড়ের চূড়ায় চূড়ায় ধবধবে সাদা বরফ। এ দৃশ্য তো সামনাসামনি কখনো দেখা হয়নি। ছবির চেয়ে কত সুন্দর এই সৃষ্টি। বলে বা লিখে বোঝানো যাবে না। না, একটা স্থিরচিত্র দেখেও বুঝবেন না। চলচ্চিত্রে দেখেও না। এর আসল রূপ শুধু এবং শুধুমাত্র সামনাসামনি দেখতে হয়। কিছুক্ষণ হা করে দাঁড়িয়ে থেকে সংবিৎ ফিরে এলে ভুবন ফটাফট কয়েকটা ছবি তুলে নিল। এরপর চলে গেলাম খেতে। আমরা দুজন ছাড়া কেউ তখনো রুম থেকে বের হননি। গিয়ে দেখি ম্যানেজার সাহেব দুপুরের খাবারের আয়োজন করছেন।
সকালের নাশতা তৈরি। জ্যাম আর বাটার স্যান্ডউইচ। সঙ্গে এলাচি চা। জ্যাম জিনিসটা আমার ভালো লাগে না। অতিমাত্রায় মিষ্টি মনে হয়। বাটার স্যান্ডউইচ খেলাম তাই। চা তো খেলামই। এরপর সবার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। সবাই যখন একে একে আসতে শুরু করল নাশতার জন্য, আমি ওদিকে ম্যানেজারের সঙ্গে গল্প জুড়ে দিলাম। তিনি হিন্দি, বাংলা দুটোই পারেন। কথায় কথায় তখনই জানলাম তিনিই এখানকার সবকিছু একা দেখাশোনা করেন। রান্নাঘর আর খাবার ঘর থেকে হোটেলের সামনের রাস্তা দেখা যায়। দেখা যায় অদূরের বিশাল পাহাড়গুলো। আর চূড়ায় চূড়ায় মনে হয় কেউ সাদা দুধ ঢেলে দিয়েছে।
পাহাড়ের রাস্তা ধরে মাঝে মাঝে গরু-ছাগল হেঁটে যেতে দেখলাম। এদিকের পশু বা প্রাণীগুলোর লোম অনেক বড় বড় হয়। গ্যাংটক থেকে লাচুং আসা পর্যন্ত অনেক কুকুর দেখেছি, খুব সুন্দর। এদের লোমও বড় বড়। ভুবন বলছিল, শীতপ্রধান এলাকায় পশুদের লোম এমন বড় বড় হয়। এতে করে শীতের প্রকোপটা ওরা সয়ে নিতে পারে। ম্যানেজার সাহেবকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘গরুগুলো কি পাহাড়ি বা বুনো?’ উত্তরে তিনি না বললেন। এদিকে মোটামুটি সবাই গরু পালে। ছাগলও পালে। ‘তাহলে এরা এমন একা বাঁধন ছাড়া ঘুরছে কেন?’ ম্যানেজার সাহেব বললেন, এরা জানে বেলাশেষে কোন ঘরে ফিরতে হবে। আমি বললাম, ‘আজব তো! কেউ চুরি করে নিয়ে গেলে?’ নাহ, চুরি করে না কেউ। সারা দিন ঘর খোলা রাখলেও কেউ চুরি করতে ঢুকবে না। আহা, এমন যদি সবখানে হতো! মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেলি। ম্যানেজার সাহেবের কাছ থেকে আরও জানলাম এখানে সবাই চাষবাস করেই চলে। পাহাড়ি এলাকায় যেমন সবজি হয়, সেগুলো চাষ করে নিজেদের মধ্যেই বিকিকিনি হয়। বাইরে থেকে আনা-নেওয়াটা খুব কম হয়। তাই সবকিছু এখানে পাওয়াও যায় না। ম্যানেজারের কথায় প্রমাণ পেলাম। রান্নাঘরে তাকে সারি করে সাজিয়ে রাখা সব টিনজাত খাবার। একটা টিন খুলে মটর বের করে সবজির কড়াইতে ঢেলে দিলেন। তেলে-আগুনে ছ্যাঁৎ করে উঠল। আমি বাইরে তাকিয়ে একপলকে প্রকৃতি দেখছিলাম। আর শুনছিলাম রান্নার ছ্যাঁৎ ছ্যাঁৎ শব্দ। মাথাটা কেমন যেন ভার ভার হয়ে আসছিল।
সবার নাশতা খাওয়া শেষ হলে পান্ডেজির সঙ্গে বেরিয়ে পড়লাম ইয়ামথাং ভ্যালির উদ্দেশে। সেই আমরা ৯জন। জিপ নিয়ে আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ বেয়ে আরও ওপরের দিকে উঠছিলাম। সীমানা অঞ্চল। তাই এদিকে সেনাবাহিনীর ঘাঁটি আছে। একটু পরপর সেনাবাহিনীর কয়েকটা চেকপোস্ট। জিপ আটকে দেখে নেয় সবকিছু ঠিকঠাক আছে কি না। পান্ডেজি আগেই বলে দিলেন, ‘ডরনা নেহি। নেইতো সক করেগা।’ ভয় পেলেই সন্দেহ করবে বলে আমরা সব দাঁত বের করে ভেটকি দিয়ে রইলাম প্রতিবার। বাকিটা পান্ডেজি সামলে নিলেন। যেতে যেতে খেয়াল করলাম রাস্তার দুই ধারে বরফ জমে আছে। সন্দেহ রইল না যে রাতে তুষারপাত হয়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে হয়েছিল বলে তেমন টের পাইনি। পান্ডেজি আরেকটা ব্যাপারে সাবধান করে দিলেন, ‘ফটো নেহি লেনা।’ হুম, সাইনবোর্ডে লেখা ছিল, পড়েছি। যাত্রাপথে ক্যামেরা বের করা যাবে না। ছবি তোলা তো দূরের কথা। সেনারা দেখলে রেখেই দেবে। ওদিকটায় ছবি তোলা নিষেধ। আর যখন থেকে সিকিমে প্রবেশ করেছি আমরা, কোথাও কোনো ময়লা দেখিনি রাস্তায়। যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলা তো নিষেধই। আবার উত্তরে প্রবেশ করলে প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করা নিষেধ। প্লাস্টিকের পানির বোতলও পাবেন না। তবে চিপস পাওয়া যাবে প্লাস্টিকের চেনা প্যাকেটে। সেটা আবার যথাস্থানে ফেলতে হবে। মন চাইলেই হাওয়ায় ভাসানো যাবে না। নইলে জরিমানা গুনে ফকির হতে হবে। খুব ভালো লাগল দেখতে, সেখানকার মানুষ এই নিয়মগুলো সঠিকভাবে মেনে চলে। বাইরের দর্শনার্থীরা এসে যদি নিয়ম ভঙ্গ করে তবে সাধারণ মানুষেরাই অনেক রেগে যায়।
খুব বেশি হলে আধা ঘণ্টা। এর মধ্যে ইয়ামথাং ভ্যালির ফটকের সামনে চলে আসলাম। কিছুদূর আগে দেখেছিলাম রোডোডেন্ড্রন স্যাংকচুয়ারির ফটক। সেটা তখন বন্ধ ছিল। ফেব্রুয়ারি মাসে রোডোডেন্ড্রন ফুল ফোটে না। তাই আর তার সৌন্দর্য দেখা গেল না। যাই হোক, জিপ থেকে নেমে চারদিকে মাথা ঘুরিয়ে নিলাম। অদ্ভুত সুন্দর! ভুবন বলল, ‘অমায়িক সৌন্দর্য!’ ফটক দিয়ে প্রবেশের আগে দেখলাম ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পসরা সাজিয়ে বসেছেন। কেউ বিক্রি করছেন বিয়ার, কেউ ম্যাগি নুডুলস, সঙ্গে পানি, কেউ ভাড়া দিচ্ছেন রবার বুট ও দস্তানা। এই বুটগুলো পরে যেতে একরকম জোরাজুরিই করছিলেন ব্যবসায়ীরা।
আমাদের পরা বুটগুলো নাকি বরফে নষ্ট হয়ে যাবে। অগত্যা নিজেদের বুট খুলে ভাড়া নিলাম তাঁদেরগুলো। বরফ হাতে নিয়ে ছুড়ে মারার খেলার জন্য দস্তানাও নিতে হলো। ওইগুলো হাতে-পায়ে পরতেই মনে হলো বরফ পরে আছি। এত ঠান্ডা! যে নারী ভাড়া দিলেন, তিনি বোঝালেন যে একটু পরেই ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু নাহ, সারাক্ষণ এই ঠান্ডা নিয়েই চলতে হয়েছিল। ফটক দিয়ে হেঁটে প্রবেশ করলাম সবাই। যে যার মতো করে বরফ নিয়ে খেলা শুরু করেছিল।
এদিকে মাথার ভারটাকে পাত্তা দিচ্ছিলাম না আমি। মনে জোর নিয়ে আশপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করলাম। ছবি তুললাম। বরফ হাতে নিয়ে ছুড়ে মারার খেলাটাও খেললাম ভুবনের সঙ্গে। একটা সময় আর পারছিলাম না। হাত-পা ঠান্ডায় জমে গিয়েছিল। নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিল মাথা ঘুরে পড়ে যাব। না পেরে ভুবনকে বললাম আমার খারাপ লাগছে। সঙ্গের ভাইয়েরা শুনে একেক জন একেক ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেওয়া শুরু করলেন। কারণ ওই পাঁচজন কোনো না কোনো ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন। কেউ একজন দৌড়ে গিয়ে দশ রুপি দিয়ে এক গ্লাস পানি এনে দিলেন। আমার চোখ ঘোলা হয়ে আসছিল। কান স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছিল। কিছু বুঝে উঠতে পারছিলাম না। কেউ পানি দিলেন, তো কেউ ওষুধ দিলেন। খেয়ে একটা গাছের নিচে বসলাম।
অপেক্ষা করছিলাম। আমার জন্য কারও যেন মজা করা মাটি না হয়ে যায়। কেউ একজন এসে খবর দিলেন একটা জায়গায় আগুন পোহানো যাচ্ছে। গেলাম সেখানে। একটা ভাঙা গাছ বেঞ্চির মতো শোয়ানো। তার পাশে আগুন জ্বলছে। গাছের এক পাশে বসে আগুন পোহাতে লাগলাম। সবাইকে আনন্দ করতে দেখছিলাম। যদিও আমার চোখ ঝাপসা হয়ে এসেছিল। আমাদের দলটা যে যার মতো ভাগ হয়ে আনন্দ করছিল। ভুবন বেশ কিছুক্ষণ তাঁদের সঙ্গে ছিল। ফিরে এসে বলতে লাগল, ‘আমারও খারাপ লাগছে। চলো আমরা ধীরে ধীরে গাড়ির দিকে আগাই। ওনারা আসুক।’ মাসুম ভাইকে বলে আমরা সামনের দিকে এগোতে থাকলাম। ভ্যালির ফটক থেকে বের হয়ে রাবার বুট আর দস্তানা ফেরত দিয়ে আমাদের বুটগুলো নিয়ে নিলাম। একটা বেঞ্চিতে বসে জুতা খোলা ও পরা যায়। পান্ডেজিকে না পেয়ে সেই বেঞ্চিতে বসে ছিলাম। এদিকে আমার শ্বাসকষ্ট বেড়েই চলছিল। একজন ভদ্রমহিলা এসে আমাকে সরতে বললেন। তিনি বসে জুতা বদলাবেন। সঙ্গে তাঁর পরিবারের আরও সদস্য অপেক্ষা করছেন দাঁড়িয়ে। তাঁরাও বদলাবেন। আমি একপাশ হয়ে গিয়ে অনুরোধ করলাম আমাকে একটু বসে থাকতে দিতে। তিনি বুঝতে পারলেন আমার শরীর বেজায় খারাপ করেছে। হিন্দিতে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ক্যায়া হুয়া বেটা?’ বললাম শ্বাস নিতে পারছি না। তাঁর মেয়ে অথবা ছেলের বউ হবেন, তিনি এগিয়ে এসে আমাকে একটা ছোট পুঁটলি দিলেন। সুতি রুমালে কর্পূর ছিল সেটাতে। বললেন এটা নাকে ধরে শুঁকতে। কিছুক্ষণ ইনহেলারের মতো ব্যবহার করার পর দেখলাম ভালোই লাগছে। জিনিসটা তাঁদের ফেরত দিতে চাইলাম। তাঁরা কিছুতেই নিতে চাইলেন না। বললেন, ‘হামারে পাস অউর ভি হ্যায়। ইয়ে তুম রাখলো।’ পরামর্শ দিলেন এত উঁচু জায়গায় আসলে এই কর্পূরের ছোট পুঁটলি সঙ্গে রাখতে। কম-বেশি সবারই নাকি উঁচুতে উঠলে শ্বাসকষ্ট হয়। তাঁরা জানেন বলেই সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। আমাকে তাঁরা জিজ্ঞেস করেছিলেন আমি কোথা থেকে এসেছি। খুব গর্ব লাগছিল বলতে, ‘বাংলাদেশ থেকে।’ তাঁরা এসেছিলেন গুজরাট থেকে। আমাকে গুজরাটে যাওয়ার দাওয়াত দিয়ে দিলেন। আমিও তাঁদের বাংলাদেশে আসার নিমন্ত্রণ দিলাম। তাঁরা বিদায় নিতে গেলে দুই ভদ্রমহিলাকে জড়িয়ে ধরে ধন্যবাদ জানালাম। তাঁরাও আমার ব্যবহারে মুগ্ধ। খুব হাসিখুশি মুখে বিদায় নিলেন। একটু পরপর কর্পূরের পুঁটলিটা নাকে ধরে নিঃশ্বাস স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে মাসুম ভাই এসে পান্ডেজিকে খুঁজে আমাদের গাড়িতে গিয়ে বসতে বললেন। জানালেন, ‘আকাশ ভাইদের খুঁজে পাচ্ছি না। ওনারা এলেই আমরা ফিরতে পারি।’ আকাশ ভাই আর সঙ্গে কে কে যেন কোন একটা বরফের পাহাড়ে চড়তে গিয়েছিলেন। শরীর ভালো থাকলে হয়তো আমরাও যেতাম। খুব আফসোস লাগছিল। ইয়ামথাং কি তাহলে অভিশাপ দিয়েছিল আমাদেরকে?
গাড়িতে বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম আমি আর ভুবন। মাসুম ভাই দুটো ওষুধ ধরিয়ে দিয়ে গেছেন। প্যারাসিটামল। আমাদের জ্বর এসেছে। অবস্থা গুরুতর। এটা না বললে কেউ ফিরবে না। তাই মাসুম ভাই খিটমিট করতে করতে আবার খুঁজতে চলে গেলেন বাকিদেরকে। এদিকে ওই দলটা জিরো পয়েন্ট থেকে ঘুরে ইয়ামথাং ভ্যালিতে চলে এসেছে। তারাও আনন্দ-ফুর্তিতে ব্যস্ত। অবশ্য আমাদের দলের সদস্যদের আরও আগেই তাদের ঘোরাঘুরি শেষ হয়ে গিয়েছিল। তারা এসেই বলছিল, ‘কেন যে জিরো পয়েন্টে গেলাম। এখানেই তো ভালো ছিল!’ আমরা মাসুম ভাইয়ের দেওয়া ওষুধ খেয়ে চুপচাপ বসে ছিলাম। ভুবনের কপাল ধরে দেখি বেশ ভালো জ্বর। আমারও তাই। আমার চেয়ে ওর শ্বাসকষ্ট কম হচ্ছিল। কর্পূরের পুঁটলিটা একবার আমার নাকে, আরেকবার ওর নাকে ধরছিলাম। নিজের ঘর আর বিছানাটাকে তখন কী পরিমাণ যে মনে করছিলাম তা বলে বোঝাতে পারব না। সেই সঙ্গে আম্মুকে। সবারই নিশ্চয়ই অসুখ হলে মায়ের কথা বেশি মনে পড়ে? ভুবন হয়তো আমার শাশুড়িকে মনে করছিল। কী জানি? বলেনি। ইংরেজিতে ভুবনকে বললাম, ‘আই মিস হোম।' বলেই কান্না শুরু করলাম। শুধু বাড়ি ফিরতে ইচ্ছা করছিল বলে। ভুবন বলল, ‘ঠিক আছে। আর কখনো তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাব না।’ এটা কেমন কথা? বললাম, ‘কেন যাব না? অবশ্যই যাব। আরও বেশি বেশি প্রস্তুতি নিয়ে যাব। আর বেশি বেশি সাবধান থাকব।’
প্রায় দেড় ঘণ্টার মতো অপেক্ষা করার পর সবাই ফিরে এলেন। ফিরেই বাগ্বিতণ্ডায় লেগে গেলেন আকাশ ভাই আর মাসুম ভাই। মাসুম ভাইয়ের কথা হচ্ছে, ‘দেখলেন যে ওনারা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাহলে দেরি করলেন কেন? ওনাদের তো হোটেলে ফিরে একটু বিশ্রাম দরকার। আপনারা না ফিরলে তো যেতেও পারছেন না।’ এদিকে আকাশ ভাইয়ের কথা, ‘আরে ভাই আমি তো জানিই না ওনারা এত অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। জানলে কি আর দেরি করতাম?’ মাসুম ভাই বলেন, ‘কেন জানবেন না? না জানার কী আছে?’ আকাশ ভাই যতই বোঝাচ্ছিলেন যে তিনি জানতেন না, মাসুম ভাই ততই রেগে যাচ্ছিলেন। আর আমরা দুজন বাকিদের মতো হা করে তাকিয়ে দেখছিলাম। শেষমেশ ভুবন এগিয়ে বলল, ‘ভাই, আমাদের কোনো সমস্যা হয়নি। আমরা চাইনি আমাদের জন্য আপনাদের আনন্দটা মাটি হয়ে যাক। এখন চলেন ফিরে যাই। একটু বিশ্রাম নিলেই ঠিক হয়ে যাব।’ তারপরেও দু-এক বাক্য তাঁরা একে অপরকে ছুড়ে দিয়ে গাড়িতে উঠলেন। সেই ঝগড়া অবশ্য বেশিক্ষণ টেকেনি।
ফিরতি পথে সেনারা আটকায়নি। এবার আরও অল্প সময়ে হোটেলে ফিরে এলাম। বারোটার মতো বাজে তখন। হাতে অনেক সময় আছে। দুপুরের খাবার খেয়েই গ্যাংটকের দিকে রওনা দেব। রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম দুজনেই। ঘুম দরকার ছিল। কিছুক্ষণের মধ্যে দরজায় খটখট করল কে যেন। ভুবন দরজা খুলে দিল। মাসুম ভাই এসে দেখলেন আমাদের জ্বর কেমন। পরে দুজনকে দুইটা প্যারাসিটামল আর গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। এঁরা মনে হয় পুরো ওষুধ কোম্পানিটাই সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন! আমরাও বাধ্য ছেলেমেয়ের মতো খেয়ে শুয়ে পড়লাম আবার। জ্বরের যে অবস্থা ছিল, ওষুধ না খেয়ে উপায় ছিল না। তখন এটাই মনে হয়েছিল। ঘণ্টা দুই ঘুম দিয়ে খেতে চলে গেলাম। ইতিমধ্যে সব দলের সবাই জেনে গেছেন আমরা জ্বরে পড়েছি।
একেকজন খুব দুশ্চিন্তা দেখাচ্ছিলেন। আহা-উহু করছিলেন। নানা পরামর্শ দিচ্ছিলেন। তবে এ কথা বলতেই হয় যে আমাদের দলের বাকি সাত সদস্য, অমরদা আর মিলন ভাই যথেষ্ট যত্নশীল ছিলেন দুজনের প্রতি। অমরদা জানালেন সমতল থেকে আমরা প্রায় ১৪ হাজার ফুট ওপরে উঠেছিলাম। সেখানে প্রতিকূল আবহাওয়ায় শ্বাসকষ্ট হওয়াটাই স্বাভাবিক। আর তিনি সতর্ক করেছিলেন সেদিককার বৃষ্টির পানি যেন মাথায় না লাগে। নির্ঘাত জ্বর আসবে। কখন যে দুই-এক ফোঁটা মাথায় পড়েছিল টের পাইনি। তার ওপর ভোর সকালে করেছিলাম গোসল। তাও মাইনাসের তাপমাত্রায়। ভুবন ঢেলেছিল ঠান্ডা পানি। জ্বর আমাদের হবে না তো কার হবে?
খেতে বসেছি এমন সময় বড় দলের নেতা কিসিমের লোকটা এসে বললেন, ‘কী? কে নাকি অসুস্থ? জ্বর হইসে কার?’ বললাম আমাদের। তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে লোকটা বললেন, ‘এএহহহ! আবার ঘুরতে আইছে!’ টিটকারি করে বলুক কিংবা মজা করেই বলুক, লোকটার কথা আমার পছন্দ হলো না। উত্তর দিইনি। বুদ্ধিমত্তা যাঁদের মাইনাসের কোঠায় থাকে, তাঁদের কথার জবাব দিতে হয় না! এমনিতেই তাঁদের লোক দেখানো স্বভাব দেখে বিরক্ত লাগছিল। তার ওপর প্রথম দিন থেকে দেখছি মদ খেয়ে টাল হয়ে ছিলেন। হিম দেশে রাস্তায় রাস্তায় ঝুড়িতে করে মদ, বিয়ার বেচবেই। তা বলে দেদার কিনে গলা অবধি গিলতে হবে? হুম, তা ঠিক যে নিজের টাকা নিজে খরচ করছেন, তাতে কার কী! সমস্যা হচ্ছে, টাকা খরচ করে মাতাল হয়ে যে কারও সঙ্গে যা তা আচরণ করা। এই যেমন আগের রাতে অমরদাকে পারলে পিটিয়ে মেরে ফেলতেন। কেন সবখানে নিয়ে যেতে পারছিলেন না এই কারণে!
খাওয়াদাওয়া সেরে ব্যাগ গুছিয়ে উঠানে বসে অপেক্ষা করছিলাম। দুই দল একসঙ্গে রওনা দেবে। বড় দলের সবাই তখনও প্রস্তুত না। কিছুটা কমে এসেছিল জ্বর। একটু ভালো লাগছিল বলে পান্ডেজির সঙ্গে গল্প করা শুরু করে দিলাম। জিজ্ঞেস করলাম সালমান খানের ‘দাবাং’ সিনেমাটা দেখা হয়েছে কি না। তিনি দেখেছেন। পরে তাঁকে জানালাম কেন আমি তাঁকে পান্ডেজি বলে ডাকি। তিনি মুচকি হেসে বললেন, ‘কাহা ম্যায় অউর কাহা সালমান খান!’ আমিও হেসে বললাম, ‘হামারে লিয়ে তো আপহি সালমান খান হ্যায়, পান্ডেজি।’ আমার বিশ্বাস, পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের নিজ নিজ গল্প আছে। আর সেই গল্পের নায়ক তাঁরা নিজেই। পান্ডেজিকে শুধু এই জিনিসটা উপলব্ধি করাতে চাচ্ছিলাম।
তিনটার দিকে সবাই গাড়িতে চড়ে বসলাম। ভটভট করতে করতে জিপ চালু হয়ে গেল। ফিরছিলাম গ্যাংটক।
চলবে...
সৈয়দা সাদিয়া শাহরীন

ভোরের দিকে ঘরটা এতই গরম হয়ে গিয়েছিল যে গোসল না করার মুড থেকে ধাপ করে গোসল করার মুডে চলে আসলাম। সাড়ে ছয়টার দিকে গরমে ঘুম ভেঙে গেল। দুজনেরই। খুব অস্থির লাগছিল বলে গোসল সেরে নিলাম। অতি অবশ্যই গরম পানি দিয়ে। ভুবন বলেছিল গোসল করবে না। আমি নিশ্চিন্ত মনে গিজারের গরম পানি গায়ে ঢেলে গোসল করে বের হয়েছি। ওদিকে উনি গিয়ে কোনো রকম অপেক্ষা ছাড়া ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল সেরে আসলেন। ভাবা যায়! মাইনাসের তাপমাত্রায় একটা মানুষ কনকনে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করেছেন! যাই হোক, গোসল সেরে খুব ফুরফুরে লাগছিল দুজনেরই। আমার তো ক্ষুধায় জান যায় যায় অবস্থা। সাতটার দিকে রুম থেকে বের হয়ে খাবার ঘরের দিকে যাব, এমন সময় হঠাৎ হোটেলের পেছন দিকে চোখ চলে গেল।
রীতিমতো চিৎকার করে ডাকলাম, ‘ভুবন, জলদি এদিকে আসো।’ ভুবনও যথারীতি চলে এল এবং আমার মতো হা করে তাকিয়ে রইল। সত্যি, একেবারে মুখটা খুলে গোল করে হা করে ছিলাম আমরা! হোটেলের পেছন থেকে সুবিশাল পাহাড় দেখা যাচ্ছে। পাহাড়ের চূড়ায় চূড়ায় ধবধবে সাদা বরফ। এ দৃশ্য তো সামনাসামনি কখনো দেখা হয়নি। ছবির চেয়ে কত সুন্দর এই সৃষ্টি। বলে বা লিখে বোঝানো যাবে না। না, একটা স্থিরচিত্র দেখেও বুঝবেন না। চলচ্চিত্রে দেখেও না। এর আসল রূপ শুধু এবং শুধুমাত্র সামনাসামনি দেখতে হয়। কিছুক্ষণ হা করে দাঁড়িয়ে থেকে সংবিৎ ফিরে এলে ভুবন ফটাফট কয়েকটা ছবি তুলে নিল। এরপর চলে গেলাম খেতে। আমরা দুজন ছাড়া কেউ তখনো রুম থেকে বের হননি। গিয়ে দেখি ম্যানেজার সাহেব দুপুরের খাবারের আয়োজন করছেন।
সকালের নাশতা তৈরি। জ্যাম আর বাটার স্যান্ডউইচ। সঙ্গে এলাচি চা। জ্যাম জিনিসটা আমার ভালো লাগে না। অতিমাত্রায় মিষ্টি মনে হয়। বাটার স্যান্ডউইচ খেলাম তাই। চা তো খেলামই। এরপর সবার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। সবাই যখন একে একে আসতে শুরু করল নাশতার জন্য, আমি ওদিকে ম্যানেজারের সঙ্গে গল্প জুড়ে দিলাম। তিনি হিন্দি, বাংলা দুটোই পারেন। কথায় কথায় তখনই জানলাম তিনিই এখানকার সবকিছু একা দেখাশোনা করেন। রান্নাঘর আর খাবার ঘর থেকে হোটেলের সামনের রাস্তা দেখা যায়। দেখা যায় অদূরের বিশাল পাহাড়গুলো। আর চূড়ায় চূড়ায় মনে হয় কেউ সাদা দুধ ঢেলে দিয়েছে।
পাহাড়ের রাস্তা ধরে মাঝে মাঝে গরু-ছাগল হেঁটে যেতে দেখলাম। এদিকের পশু বা প্রাণীগুলোর লোম অনেক বড় বড় হয়। গ্যাংটক থেকে লাচুং আসা পর্যন্ত অনেক কুকুর দেখেছি, খুব সুন্দর। এদের লোমও বড় বড়। ভুবন বলছিল, শীতপ্রধান এলাকায় পশুদের লোম এমন বড় বড় হয়। এতে করে শীতের প্রকোপটা ওরা সয়ে নিতে পারে। ম্যানেজার সাহেবকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘গরুগুলো কি পাহাড়ি বা বুনো?’ উত্তরে তিনি না বললেন। এদিকে মোটামুটি সবাই গরু পালে। ছাগলও পালে। ‘তাহলে এরা এমন একা বাঁধন ছাড়া ঘুরছে কেন?’ ম্যানেজার সাহেব বললেন, এরা জানে বেলাশেষে কোন ঘরে ফিরতে হবে। আমি বললাম, ‘আজব তো! কেউ চুরি করে নিয়ে গেলে?’ নাহ, চুরি করে না কেউ। সারা দিন ঘর খোলা রাখলেও কেউ চুরি করতে ঢুকবে না। আহা, এমন যদি সবখানে হতো! মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেলি। ম্যানেজার সাহেবের কাছ থেকে আরও জানলাম এখানে সবাই চাষবাস করেই চলে। পাহাড়ি এলাকায় যেমন সবজি হয়, সেগুলো চাষ করে নিজেদের মধ্যেই বিকিকিনি হয়। বাইরে থেকে আনা-নেওয়াটা খুব কম হয়। তাই সবকিছু এখানে পাওয়াও যায় না। ম্যানেজারের কথায় প্রমাণ পেলাম। রান্নাঘরে তাকে সারি করে সাজিয়ে রাখা সব টিনজাত খাবার। একটা টিন খুলে মটর বের করে সবজির কড়াইতে ঢেলে দিলেন। তেলে-আগুনে ছ্যাঁৎ করে উঠল। আমি বাইরে তাকিয়ে একপলকে প্রকৃতি দেখছিলাম। আর শুনছিলাম রান্নার ছ্যাঁৎ ছ্যাঁৎ শব্দ। মাথাটা কেমন যেন ভার ভার হয়ে আসছিল।
সবার নাশতা খাওয়া শেষ হলে পান্ডেজির সঙ্গে বেরিয়ে পড়লাম ইয়ামথাং ভ্যালির উদ্দেশে। সেই আমরা ৯জন। জিপ নিয়ে আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ বেয়ে আরও ওপরের দিকে উঠছিলাম। সীমানা অঞ্চল। তাই এদিকে সেনাবাহিনীর ঘাঁটি আছে। একটু পরপর সেনাবাহিনীর কয়েকটা চেকপোস্ট। জিপ আটকে দেখে নেয় সবকিছু ঠিকঠাক আছে কি না। পান্ডেজি আগেই বলে দিলেন, ‘ডরনা নেহি। নেইতো সক করেগা।’ ভয় পেলেই সন্দেহ করবে বলে আমরা সব দাঁত বের করে ভেটকি দিয়ে রইলাম প্রতিবার। বাকিটা পান্ডেজি সামলে নিলেন। যেতে যেতে খেয়াল করলাম রাস্তার দুই ধারে বরফ জমে আছে। সন্দেহ রইল না যে রাতে তুষারপাত হয়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে হয়েছিল বলে তেমন টের পাইনি। পান্ডেজি আরেকটা ব্যাপারে সাবধান করে দিলেন, ‘ফটো নেহি লেনা।’ হুম, সাইনবোর্ডে লেখা ছিল, পড়েছি। যাত্রাপথে ক্যামেরা বের করা যাবে না। ছবি তোলা তো দূরের কথা। সেনারা দেখলে রেখেই দেবে। ওদিকটায় ছবি তোলা নিষেধ। আর যখন থেকে সিকিমে প্রবেশ করেছি আমরা, কোথাও কোনো ময়লা দেখিনি রাস্তায়। যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলা তো নিষেধই। আবার উত্তরে প্রবেশ করলে প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করা নিষেধ। প্লাস্টিকের পানির বোতলও পাবেন না। তবে চিপস পাওয়া যাবে প্লাস্টিকের চেনা প্যাকেটে। সেটা আবার যথাস্থানে ফেলতে হবে। মন চাইলেই হাওয়ায় ভাসানো যাবে না। নইলে জরিমানা গুনে ফকির হতে হবে। খুব ভালো লাগল দেখতে, সেখানকার মানুষ এই নিয়মগুলো সঠিকভাবে মেনে চলে। বাইরের দর্শনার্থীরা এসে যদি নিয়ম ভঙ্গ করে তবে সাধারণ মানুষেরাই অনেক রেগে যায়।
খুব বেশি হলে আধা ঘণ্টা। এর মধ্যে ইয়ামথাং ভ্যালির ফটকের সামনে চলে আসলাম। কিছুদূর আগে দেখেছিলাম রোডোডেন্ড্রন স্যাংকচুয়ারির ফটক। সেটা তখন বন্ধ ছিল। ফেব্রুয়ারি মাসে রোডোডেন্ড্রন ফুল ফোটে না। তাই আর তার সৌন্দর্য দেখা গেল না। যাই হোক, জিপ থেকে নেমে চারদিকে মাথা ঘুরিয়ে নিলাম। অদ্ভুত সুন্দর! ভুবন বলল, ‘অমায়িক সৌন্দর্য!’ ফটক দিয়ে প্রবেশের আগে দেখলাম ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পসরা সাজিয়ে বসেছেন। কেউ বিক্রি করছেন বিয়ার, কেউ ম্যাগি নুডুলস, সঙ্গে পানি, কেউ ভাড়া দিচ্ছেন রবার বুট ও দস্তানা। এই বুটগুলো পরে যেতে একরকম জোরাজুরিই করছিলেন ব্যবসায়ীরা।
আমাদের পরা বুটগুলো নাকি বরফে নষ্ট হয়ে যাবে। অগত্যা নিজেদের বুট খুলে ভাড়া নিলাম তাঁদেরগুলো। বরফ হাতে নিয়ে ছুড়ে মারার খেলার জন্য দস্তানাও নিতে হলো। ওইগুলো হাতে-পায়ে পরতেই মনে হলো বরফ পরে আছি। এত ঠান্ডা! যে নারী ভাড়া দিলেন, তিনি বোঝালেন যে একটু পরেই ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু নাহ, সারাক্ষণ এই ঠান্ডা নিয়েই চলতে হয়েছিল। ফটক দিয়ে হেঁটে প্রবেশ করলাম সবাই। যে যার মতো করে বরফ নিয়ে খেলা শুরু করেছিল।
এদিকে মাথার ভারটাকে পাত্তা দিচ্ছিলাম না আমি। মনে জোর নিয়ে আশপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করলাম। ছবি তুললাম। বরফ হাতে নিয়ে ছুড়ে মারার খেলাটাও খেললাম ভুবনের সঙ্গে। একটা সময় আর পারছিলাম না। হাত-পা ঠান্ডায় জমে গিয়েছিল। নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিল মাথা ঘুরে পড়ে যাব। না পেরে ভুবনকে বললাম আমার খারাপ লাগছে। সঙ্গের ভাইয়েরা শুনে একেক জন একেক ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেওয়া শুরু করলেন। কারণ ওই পাঁচজন কোনো না কোনো ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন। কেউ একজন দৌড়ে গিয়ে দশ রুপি দিয়ে এক গ্লাস পানি এনে দিলেন। আমার চোখ ঘোলা হয়ে আসছিল। কান স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছিল। কিছু বুঝে উঠতে পারছিলাম না। কেউ পানি দিলেন, তো কেউ ওষুধ দিলেন। খেয়ে একটা গাছের নিচে বসলাম।
অপেক্ষা করছিলাম। আমার জন্য কারও যেন মজা করা মাটি না হয়ে যায়। কেউ একজন এসে খবর দিলেন একটা জায়গায় আগুন পোহানো যাচ্ছে। গেলাম সেখানে। একটা ভাঙা গাছ বেঞ্চির মতো শোয়ানো। তার পাশে আগুন জ্বলছে। গাছের এক পাশে বসে আগুন পোহাতে লাগলাম। সবাইকে আনন্দ করতে দেখছিলাম। যদিও আমার চোখ ঝাপসা হয়ে এসেছিল। আমাদের দলটা যে যার মতো ভাগ হয়ে আনন্দ করছিল। ভুবন বেশ কিছুক্ষণ তাঁদের সঙ্গে ছিল। ফিরে এসে বলতে লাগল, ‘আমারও খারাপ লাগছে। চলো আমরা ধীরে ধীরে গাড়ির দিকে আগাই। ওনারা আসুক।’ মাসুম ভাইকে বলে আমরা সামনের দিকে এগোতে থাকলাম। ভ্যালির ফটক থেকে বের হয়ে রাবার বুট আর দস্তানা ফেরত দিয়ে আমাদের বুটগুলো নিয়ে নিলাম। একটা বেঞ্চিতে বসে জুতা খোলা ও পরা যায়। পান্ডেজিকে না পেয়ে সেই বেঞ্চিতে বসে ছিলাম। এদিকে আমার শ্বাসকষ্ট বেড়েই চলছিল। একজন ভদ্রমহিলা এসে আমাকে সরতে বললেন। তিনি বসে জুতা বদলাবেন। সঙ্গে তাঁর পরিবারের আরও সদস্য অপেক্ষা করছেন দাঁড়িয়ে। তাঁরাও বদলাবেন। আমি একপাশ হয়ে গিয়ে অনুরোধ করলাম আমাকে একটু বসে থাকতে দিতে। তিনি বুঝতে পারলেন আমার শরীর বেজায় খারাপ করেছে। হিন্দিতে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ক্যায়া হুয়া বেটা?’ বললাম শ্বাস নিতে পারছি না। তাঁর মেয়ে অথবা ছেলের বউ হবেন, তিনি এগিয়ে এসে আমাকে একটা ছোট পুঁটলি দিলেন। সুতি রুমালে কর্পূর ছিল সেটাতে। বললেন এটা নাকে ধরে শুঁকতে। কিছুক্ষণ ইনহেলারের মতো ব্যবহার করার পর দেখলাম ভালোই লাগছে। জিনিসটা তাঁদের ফেরত দিতে চাইলাম। তাঁরা কিছুতেই নিতে চাইলেন না। বললেন, ‘হামারে পাস অউর ভি হ্যায়। ইয়ে তুম রাখলো।’ পরামর্শ দিলেন এত উঁচু জায়গায় আসলে এই কর্পূরের ছোট পুঁটলি সঙ্গে রাখতে। কম-বেশি সবারই নাকি উঁচুতে উঠলে শ্বাসকষ্ট হয়। তাঁরা জানেন বলেই সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। আমাকে তাঁরা জিজ্ঞেস করেছিলেন আমি কোথা থেকে এসেছি। খুব গর্ব লাগছিল বলতে, ‘বাংলাদেশ থেকে।’ তাঁরা এসেছিলেন গুজরাট থেকে। আমাকে গুজরাটে যাওয়ার দাওয়াত দিয়ে দিলেন। আমিও তাঁদের বাংলাদেশে আসার নিমন্ত্রণ দিলাম। তাঁরা বিদায় নিতে গেলে দুই ভদ্রমহিলাকে জড়িয়ে ধরে ধন্যবাদ জানালাম। তাঁরাও আমার ব্যবহারে মুগ্ধ। খুব হাসিখুশি মুখে বিদায় নিলেন। একটু পরপর কর্পূরের পুঁটলিটা নাকে ধরে নিঃশ্বাস স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে মাসুম ভাই এসে পান্ডেজিকে খুঁজে আমাদের গাড়িতে গিয়ে বসতে বললেন। জানালেন, ‘আকাশ ভাইদের খুঁজে পাচ্ছি না। ওনারা এলেই আমরা ফিরতে পারি।’ আকাশ ভাই আর সঙ্গে কে কে যেন কোন একটা বরফের পাহাড়ে চড়তে গিয়েছিলেন। শরীর ভালো থাকলে হয়তো আমরাও যেতাম। খুব আফসোস লাগছিল। ইয়ামথাং কি তাহলে অভিশাপ দিয়েছিল আমাদেরকে?
গাড়িতে বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম আমি আর ভুবন। মাসুম ভাই দুটো ওষুধ ধরিয়ে দিয়ে গেছেন। প্যারাসিটামল। আমাদের জ্বর এসেছে। অবস্থা গুরুতর। এটা না বললে কেউ ফিরবে না। তাই মাসুম ভাই খিটমিট করতে করতে আবার খুঁজতে চলে গেলেন বাকিদেরকে। এদিকে ওই দলটা জিরো পয়েন্ট থেকে ঘুরে ইয়ামথাং ভ্যালিতে চলে এসেছে। তারাও আনন্দ-ফুর্তিতে ব্যস্ত। অবশ্য আমাদের দলের সদস্যদের আরও আগেই তাদের ঘোরাঘুরি শেষ হয়ে গিয়েছিল। তারা এসেই বলছিল, ‘কেন যে জিরো পয়েন্টে গেলাম। এখানেই তো ভালো ছিল!’ আমরা মাসুম ভাইয়ের দেওয়া ওষুধ খেয়ে চুপচাপ বসে ছিলাম। ভুবনের কপাল ধরে দেখি বেশ ভালো জ্বর। আমারও তাই। আমার চেয়ে ওর শ্বাসকষ্ট কম হচ্ছিল। কর্পূরের পুঁটলিটা একবার আমার নাকে, আরেকবার ওর নাকে ধরছিলাম। নিজের ঘর আর বিছানাটাকে তখন কী পরিমাণ যে মনে করছিলাম তা বলে বোঝাতে পারব না। সেই সঙ্গে আম্মুকে। সবারই নিশ্চয়ই অসুখ হলে মায়ের কথা বেশি মনে পড়ে? ভুবন হয়তো আমার শাশুড়িকে মনে করছিল। কী জানি? বলেনি। ইংরেজিতে ভুবনকে বললাম, ‘আই মিস হোম।' বলেই কান্না শুরু করলাম। শুধু বাড়ি ফিরতে ইচ্ছা করছিল বলে। ভুবন বলল, ‘ঠিক আছে। আর কখনো তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাব না।’ এটা কেমন কথা? বললাম, ‘কেন যাব না? অবশ্যই যাব। আরও বেশি বেশি প্রস্তুতি নিয়ে যাব। আর বেশি বেশি সাবধান থাকব।’
প্রায় দেড় ঘণ্টার মতো অপেক্ষা করার পর সবাই ফিরে এলেন। ফিরেই বাগ্বিতণ্ডায় লেগে গেলেন আকাশ ভাই আর মাসুম ভাই। মাসুম ভাইয়ের কথা হচ্ছে, ‘দেখলেন যে ওনারা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাহলে দেরি করলেন কেন? ওনাদের তো হোটেলে ফিরে একটু বিশ্রাম দরকার। আপনারা না ফিরলে তো যেতেও পারছেন না।’ এদিকে আকাশ ভাইয়ের কথা, ‘আরে ভাই আমি তো জানিই না ওনারা এত অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। জানলে কি আর দেরি করতাম?’ মাসুম ভাই বলেন, ‘কেন জানবেন না? না জানার কী আছে?’ আকাশ ভাই যতই বোঝাচ্ছিলেন যে তিনি জানতেন না, মাসুম ভাই ততই রেগে যাচ্ছিলেন। আর আমরা দুজন বাকিদের মতো হা করে তাকিয়ে দেখছিলাম। শেষমেশ ভুবন এগিয়ে বলল, ‘ভাই, আমাদের কোনো সমস্যা হয়নি। আমরা চাইনি আমাদের জন্য আপনাদের আনন্দটা মাটি হয়ে যাক। এখন চলেন ফিরে যাই। একটু বিশ্রাম নিলেই ঠিক হয়ে যাব।’ তারপরেও দু-এক বাক্য তাঁরা একে অপরকে ছুড়ে দিয়ে গাড়িতে উঠলেন। সেই ঝগড়া অবশ্য বেশিক্ষণ টেকেনি।
ফিরতি পথে সেনারা আটকায়নি। এবার আরও অল্প সময়ে হোটেলে ফিরে এলাম। বারোটার মতো বাজে তখন। হাতে অনেক সময় আছে। দুপুরের খাবার খেয়েই গ্যাংটকের দিকে রওনা দেব। রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম দুজনেই। ঘুম দরকার ছিল। কিছুক্ষণের মধ্যে দরজায় খটখট করল কে যেন। ভুবন দরজা খুলে দিল। মাসুম ভাই এসে দেখলেন আমাদের জ্বর কেমন। পরে দুজনকে দুইটা প্যারাসিটামল আর গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। এঁরা মনে হয় পুরো ওষুধ কোম্পানিটাই সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন! আমরাও বাধ্য ছেলেমেয়ের মতো খেয়ে শুয়ে পড়লাম আবার। জ্বরের যে অবস্থা ছিল, ওষুধ না খেয়ে উপায় ছিল না। তখন এটাই মনে হয়েছিল। ঘণ্টা দুই ঘুম দিয়ে খেতে চলে গেলাম। ইতিমধ্যে সব দলের সবাই জেনে গেছেন আমরা জ্বরে পড়েছি।
একেকজন খুব দুশ্চিন্তা দেখাচ্ছিলেন। আহা-উহু করছিলেন। নানা পরামর্শ দিচ্ছিলেন। তবে এ কথা বলতেই হয় যে আমাদের দলের বাকি সাত সদস্য, অমরদা আর মিলন ভাই যথেষ্ট যত্নশীল ছিলেন দুজনের প্রতি। অমরদা জানালেন সমতল থেকে আমরা প্রায় ১৪ হাজার ফুট ওপরে উঠেছিলাম। সেখানে প্রতিকূল আবহাওয়ায় শ্বাসকষ্ট হওয়াটাই স্বাভাবিক। আর তিনি সতর্ক করেছিলেন সেদিককার বৃষ্টির পানি যেন মাথায় না লাগে। নির্ঘাত জ্বর আসবে। কখন যে দুই-এক ফোঁটা মাথায় পড়েছিল টের পাইনি। তার ওপর ভোর সকালে করেছিলাম গোসল। তাও মাইনাসের তাপমাত্রায়। ভুবন ঢেলেছিল ঠান্ডা পানি। জ্বর আমাদের হবে না তো কার হবে?
খেতে বসেছি এমন সময় বড় দলের নেতা কিসিমের লোকটা এসে বললেন, ‘কী? কে নাকি অসুস্থ? জ্বর হইসে কার?’ বললাম আমাদের। তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে লোকটা বললেন, ‘এএহহহ! আবার ঘুরতে আইছে!’ টিটকারি করে বলুক কিংবা মজা করেই বলুক, লোকটার কথা আমার পছন্দ হলো না। উত্তর দিইনি। বুদ্ধিমত্তা যাঁদের মাইনাসের কোঠায় থাকে, তাঁদের কথার জবাব দিতে হয় না! এমনিতেই তাঁদের লোক দেখানো স্বভাব দেখে বিরক্ত লাগছিল। তার ওপর প্রথম দিন থেকে দেখছি মদ খেয়ে টাল হয়ে ছিলেন। হিম দেশে রাস্তায় রাস্তায় ঝুড়িতে করে মদ, বিয়ার বেচবেই। তা বলে দেদার কিনে গলা অবধি গিলতে হবে? হুম, তা ঠিক যে নিজের টাকা নিজে খরচ করছেন, তাতে কার কী! সমস্যা হচ্ছে, টাকা খরচ করে মাতাল হয়ে যে কারও সঙ্গে যা তা আচরণ করা। এই যেমন আগের রাতে অমরদাকে পারলে পিটিয়ে মেরে ফেলতেন। কেন সবখানে নিয়ে যেতে পারছিলেন না এই কারণে!
খাওয়াদাওয়া সেরে ব্যাগ গুছিয়ে উঠানে বসে অপেক্ষা করছিলাম। দুই দল একসঙ্গে রওনা দেবে। বড় দলের সবাই তখনও প্রস্তুত না। কিছুটা কমে এসেছিল জ্বর। একটু ভালো লাগছিল বলে পান্ডেজির সঙ্গে গল্প করা শুরু করে দিলাম। জিজ্ঞেস করলাম সালমান খানের ‘দাবাং’ সিনেমাটা দেখা হয়েছে কি না। তিনি দেখেছেন। পরে তাঁকে জানালাম কেন আমি তাঁকে পান্ডেজি বলে ডাকি। তিনি মুচকি হেসে বললেন, ‘কাহা ম্যায় অউর কাহা সালমান খান!’ আমিও হেসে বললাম, ‘হামারে লিয়ে তো আপহি সালমান খান হ্যায়, পান্ডেজি।’ আমার বিশ্বাস, পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের নিজ নিজ গল্প আছে। আর সেই গল্পের নায়ক তাঁরা নিজেই। পান্ডেজিকে শুধু এই জিনিসটা উপলব্ধি করাতে চাচ্ছিলাম।
তিনটার দিকে সবাই গাড়িতে চড়ে বসলাম। ভটভট করতে করতে জিপ চালু হয়ে গেল। ফিরছিলাম গ্যাংটক।
চলবে...

ভোরের দিকে ঘরটা এতই গরম হয়ে গিয়েছিল যে গোসল না করার মুড থেকে ধাপ করে গোসল করার মুডে চলে আসলাম। সাড়ে ছয়টার দিকে গরমে ঘুম ভেঙে গেল। দুজনেরই। খুব অস্থির লাগছিল বলে গোসল সেরে নিলাম। অতি অবশ্যই গরম পানি দিয়ে। ভুবন বলেছিল গোসল করবে না। আমি নিশ্চিন্ত মনে গিজারের গরম পানি গায়ে ঢেলে গোসল করে বের হয়েছি। ওদিকে উনি গিয়ে কোনো রকম অপেক্ষা ছাড়া ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল সেরে আসলেন। ভাবা যায়! মাইনাসের তাপমাত্রায় একটা মানুষ কনকনে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করেছেন! যাই হোক, গোসল সেরে খুব ফুরফুরে লাগছিল দুজনেরই। আমার তো ক্ষুধায় জান যায় যায় অবস্থা। সাতটার দিকে রুম থেকে বের হয়ে খাবার ঘরের দিকে যাব, এমন সময় হঠাৎ হোটেলের পেছন দিকে চোখ চলে গেল।
রীতিমতো চিৎকার করে ডাকলাম, ‘ভুবন, জলদি এদিকে আসো।’ ভুবনও যথারীতি চলে এল এবং আমার মতো হা করে তাকিয়ে রইল। সত্যি, একেবারে মুখটা খুলে গোল করে হা করে ছিলাম আমরা! হোটেলের পেছন থেকে সুবিশাল পাহাড় দেখা যাচ্ছে। পাহাড়ের চূড়ায় চূড়ায় ধবধবে সাদা বরফ। এ দৃশ্য তো সামনাসামনি কখনো দেখা হয়নি। ছবির চেয়ে কত সুন্দর এই সৃষ্টি। বলে বা লিখে বোঝানো যাবে না। না, একটা স্থিরচিত্র দেখেও বুঝবেন না। চলচ্চিত্রে দেখেও না। এর আসল রূপ শুধু এবং শুধুমাত্র সামনাসামনি দেখতে হয়। কিছুক্ষণ হা করে দাঁড়িয়ে থেকে সংবিৎ ফিরে এলে ভুবন ফটাফট কয়েকটা ছবি তুলে নিল। এরপর চলে গেলাম খেতে। আমরা দুজন ছাড়া কেউ তখনো রুম থেকে বের হননি। গিয়ে দেখি ম্যানেজার সাহেব দুপুরের খাবারের আয়োজন করছেন।
সকালের নাশতা তৈরি। জ্যাম আর বাটার স্যান্ডউইচ। সঙ্গে এলাচি চা। জ্যাম জিনিসটা আমার ভালো লাগে না। অতিমাত্রায় মিষ্টি মনে হয়। বাটার স্যান্ডউইচ খেলাম তাই। চা তো খেলামই। এরপর সবার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। সবাই যখন একে একে আসতে শুরু করল নাশতার জন্য, আমি ওদিকে ম্যানেজারের সঙ্গে গল্প জুড়ে দিলাম। তিনি হিন্দি, বাংলা দুটোই পারেন। কথায় কথায় তখনই জানলাম তিনিই এখানকার সবকিছু একা দেখাশোনা করেন। রান্নাঘর আর খাবার ঘর থেকে হোটেলের সামনের রাস্তা দেখা যায়। দেখা যায় অদূরের বিশাল পাহাড়গুলো। আর চূড়ায় চূড়ায় মনে হয় কেউ সাদা দুধ ঢেলে দিয়েছে।
পাহাড়ের রাস্তা ধরে মাঝে মাঝে গরু-ছাগল হেঁটে যেতে দেখলাম। এদিকের পশু বা প্রাণীগুলোর লোম অনেক বড় বড় হয়। গ্যাংটক থেকে লাচুং আসা পর্যন্ত অনেক কুকুর দেখেছি, খুব সুন্দর। এদের লোমও বড় বড়। ভুবন বলছিল, শীতপ্রধান এলাকায় পশুদের লোম এমন বড় বড় হয়। এতে করে শীতের প্রকোপটা ওরা সয়ে নিতে পারে। ম্যানেজার সাহেবকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘গরুগুলো কি পাহাড়ি বা বুনো?’ উত্তরে তিনি না বললেন। এদিকে মোটামুটি সবাই গরু পালে। ছাগলও পালে। ‘তাহলে এরা এমন একা বাঁধন ছাড়া ঘুরছে কেন?’ ম্যানেজার সাহেব বললেন, এরা জানে বেলাশেষে কোন ঘরে ফিরতে হবে। আমি বললাম, ‘আজব তো! কেউ চুরি করে নিয়ে গেলে?’ নাহ, চুরি করে না কেউ। সারা দিন ঘর খোলা রাখলেও কেউ চুরি করতে ঢুকবে না। আহা, এমন যদি সবখানে হতো! মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেলি। ম্যানেজার সাহেবের কাছ থেকে আরও জানলাম এখানে সবাই চাষবাস করেই চলে। পাহাড়ি এলাকায় যেমন সবজি হয়, সেগুলো চাষ করে নিজেদের মধ্যেই বিকিকিনি হয়। বাইরে থেকে আনা-নেওয়াটা খুব কম হয়। তাই সবকিছু এখানে পাওয়াও যায় না। ম্যানেজারের কথায় প্রমাণ পেলাম। রান্নাঘরে তাকে সারি করে সাজিয়ে রাখা সব টিনজাত খাবার। একটা টিন খুলে মটর বের করে সবজির কড়াইতে ঢেলে দিলেন। তেলে-আগুনে ছ্যাঁৎ করে উঠল। আমি বাইরে তাকিয়ে একপলকে প্রকৃতি দেখছিলাম। আর শুনছিলাম রান্নার ছ্যাঁৎ ছ্যাঁৎ শব্দ। মাথাটা কেমন যেন ভার ভার হয়ে আসছিল।
সবার নাশতা খাওয়া শেষ হলে পান্ডেজির সঙ্গে বেরিয়ে পড়লাম ইয়ামথাং ভ্যালির উদ্দেশে। সেই আমরা ৯জন। জিপ নিয়ে আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ বেয়ে আরও ওপরের দিকে উঠছিলাম। সীমানা অঞ্চল। তাই এদিকে সেনাবাহিনীর ঘাঁটি আছে। একটু পরপর সেনাবাহিনীর কয়েকটা চেকপোস্ট। জিপ আটকে দেখে নেয় সবকিছু ঠিকঠাক আছে কি না। পান্ডেজি আগেই বলে দিলেন, ‘ডরনা নেহি। নেইতো সক করেগা।’ ভয় পেলেই সন্দেহ করবে বলে আমরা সব দাঁত বের করে ভেটকি দিয়ে রইলাম প্রতিবার। বাকিটা পান্ডেজি সামলে নিলেন। যেতে যেতে খেয়াল করলাম রাস্তার দুই ধারে বরফ জমে আছে। সন্দেহ রইল না যে রাতে তুষারপাত হয়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে হয়েছিল বলে তেমন টের পাইনি। পান্ডেজি আরেকটা ব্যাপারে সাবধান করে দিলেন, ‘ফটো নেহি লেনা।’ হুম, সাইনবোর্ডে লেখা ছিল, পড়েছি। যাত্রাপথে ক্যামেরা বের করা যাবে না। ছবি তোলা তো দূরের কথা। সেনারা দেখলে রেখেই দেবে। ওদিকটায় ছবি তোলা নিষেধ। আর যখন থেকে সিকিমে প্রবেশ করেছি আমরা, কোথাও কোনো ময়লা দেখিনি রাস্তায়। যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলা তো নিষেধই। আবার উত্তরে প্রবেশ করলে প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করা নিষেধ। প্লাস্টিকের পানির বোতলও পাবেন না। তবে চিপস পাওয়া যাবে প্লাস্টিকের চেনা প্যাকেটে। সেটা আবার যথাস্থানে ফেলতে হবে। মন চাইলেই হাওয়ায় ভাসানো যাবে না। নইলে জরিমানা গুনে ফকির হতে হবে। খুব ভালো লাগল দেখতে, সেখানকার মানুষ এই নিয়মগুলো সঠিকভাবে মেনে চলে। বাইরের দর্শনার্থীরা এসে যদি নিয়ম ভঙ্গ করে তবে সাধারণ মানুষেরাই অনেক রেগে যায়।
খুব বেশি হলে আধা ঘণ্টা। এর মধ্যে ইয়ামথাং ভ্যালির ফটকের সামনে চলে আসলাম। কিছুদূর আগে দেখেছিলাম রোডোডেন্ড্রন স্যাংকচুয়ারির ফটক। সেটা তখন বন্ধ ছিল। ফেব্রুয়ারি মাসে রোডোডেন্ড্রন ফুল ফোটে না। তাই আর তার সৌন্দর্য দেখা গেল না। যাই হোক, জিপ থেকে নেমে চারদিকে মাথা ঘুরিয়ে নিলাম। অদ্ভুত সুন্দর! ভুবন বলল, ‘অমায়িক সৌন্দর্য!’ ফটক দিয়ে প্রবেশের আগে দেখলাম ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পসরা সাজিয়ে বসেছেন। কেউ বিক্রি করছেন বিয়ার, কেউ ম্যাগি নুডুলস, সঙ্গে পানি, কেউ ভাড়া দিচ্ছেন রবার বুট ও দস্তানা। এই বুটগুলো পরে যেতে একরকম জোরাজুরিই করছিলেন ব্যবসায়ীরা।
আমাদের পরা বুটগুলো নাকি বরফে নষ্ট হয়ে যাবে। অগত্যা নিজেদের বুট খুলে ভাড়া নিলাম তাঁদেরগুলো। বরফ হাতে নিয়ে ছুড়ে মারার খেলার জন্য দস্তানাও নিতে হলো। ওইগুলো হাতে-পায়ে পরতেই মনে হলো বরফ পরে আছি। এত ঠান্ডা! যে নারী ভাড়া দিলেন, তিনি বোঝালেন যে একটু পরেই ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু নাহ, সারাক্ষণ এই ঠান্ডা নিয়েই চলতে হয়েছিল। ফটক দিয়ে হেঁটে প্রবেশ করলাম সবাই। যে যার মতো করে বরফ নিয়ে খেলা শুরু করেছিল।
এদিকে মাথার ভারটাকে পাত্তা দিচ্ছিলাম না আমি। মনে জোর নিয়ে আশপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করলাম। ছবি তুললাম। বরফ হাতে নিয়ে ছুড়ে মারার খেলাটাও খেললাম ভুবনের সঙ্গে। একটা সময় আর পারছিলাম না। হাত-পা ঠান্ডায় জমে গিয়েছিল। নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিল মাথা ঘুরে পড়ে যাব। না পেরে ভুবনকে বললাম আমার খারাপ লাগছে। সঙ্গের ভাইয়েরা শুনে একেক জন একেক ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেওয়া শুরু করলেন। কারণ ওই পাঁচজন কোনো না কোনো ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন। কেউ একজন দৌড়ে গিয়ে দশ রুপি দিয়ে এক গ্লাস পানি এনে দিলেন। আমার চোখ ঘোলা হয়ে আসছিল। কান স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছিল। কিছু বুঝে উঠতে পারছিলাম না। কেউ পানি দিলেন, তো কেউ ওষুধ দিলেন। খেয়ে একটা গাছের নিচে বসলাম।
অপেক্ষা করছিলাম। আমার জন্য কারও যেন মজা করা মাটি না হয়ে যায়। কেউ একজন এসে খবর দিলেন একটা জায়গায় আগুন পোহানো যাচ্ছে। গেলাম সেখানে। একটা ভাঙা গাছ বেঞ্চির মতো শোয়ানো। তার পাশে আগুন জ্বলছে। গাছের এক পাশে বসে আগুন পোহাতে লাগলাম। সবাইকে আনন্দ করতে দেখছিলাম। যদিও আমার চোখ ঝাপসা হয়ে এসেছিল। আমাদের দলটা যে যার মতো ভাগ হয়ে আনন্দ করছিল। ভুবন বেশ কিছুক্ষণ তাঁদের সঙ্গে ছিল। ফিরে এসে বলতে লাগল, ‘আমারও খারাপ লাগছে। চলো আমরা ধীরে ধীরে গাড়ির দিকে আগাই। ওনারা আসুক।’ মাসুম ভাইকে বলে আমরা সামনের দিকে এগোতে থাকলাম। ভ্যালির ফটক থেকে বের হয়ে রাবার বুট আর দস্তানা ফেরত দিয়ে আমাদের বুটগুলো নিয়ে নিলাম। একটা বেঞ্চিতে বসে জুতা খোলা ও পরা যায়। পান্ডেজিকে না পেয়ে সেই বেঞ্চিতে বসে ছিলাম। এদিকে আমার শ্বাসকষ্ট বেড়েই চলছিল। একজন ভদ্রমহিলা এসে আমাকে সরতে বললেন। তিনি বসে জুতা বদলাবেন। সঙ্গে তাঁর পরিবারের আরও সদস্য অপেক্ষা করছেন দাঁড়িয়ে। তাঁরাও বদলাবেন। আমি একপাশ হয়ে গিয়ে অনুরোধ করলাম আমাকে একটু বসে থাকতে দিতে। তিনি বুঝতে পারলেন আমার শরীর বেজায় খারাপ করেছে। হিন্দিতে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ক্যায়া হুয়া বেটা?’ বললাম শ্বাস নিতে পারছি না। তাঁর মেয়ে অথবা ছেলের বউ হবেন, তিনি এগিয়ে এসে আমাকে একটা ছোট পুঁটলি দিলেন। সুতি রুমালে কর্পূর ছিল সেটাতে। বললেন এটা নাকে ধরে শুঁকতে। কিছুক্ষণ ইনহেলারের মতো ব্যবহার করার পর দেখলাম ভালোই লাগছে। জিনিসটা তাঁদের ফেরত দিতে চাইলাম। তাঁরা কিছুতেই নিতে চাইলেন না। বললেন, ‘হামারে পাস অউর ভি হ্যায়। ইয়ে তুম রাখলো।’ পরামর্শ দিলেন এত উঁচু জায়গায় আসলে এই কর্পূরের ছোট পুঁটলি সঙ্গে রাখতে। কম-বেশি সবারই নাকি উঁচুতে উঠলে শ্বাসকষ্ট হয়। তাঁরা জানেন বলেই সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। আমাকে তাঁরা জিজ্ঞেস করেছিলেন আমি কোথা থেকে এসেছি। খুব গর্ব লাগছিল বলতে, ‘বাংলাদেশ থেকে।’ তাঁরা এসেছিলেন গুজরাট থেকে। আমাকে গুজরাটে যাওয়ার দাওয়াত দিয়ে দিলেন। আমিও তাঁদের বাংলাদেশে আসার নিমন্ত্রণ দিলাম। তাঁরা বিদায় নিতে গেলে দুই ভদ্রমহিলাকে জড়িয়ে ধরে ধন্যবাদ জানালাম। তাঁরাও আমার ব্যবহারে মুগ্ধ। খুব হাসিখুশি মুখে বিদায় নিলেন। একটু পরপর কর্পূরের পুঁটলিটা নাকে ধরে নিঃশ্বাস স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে মাসুম ভাই এসে পান্ডেজিকে খুঁজে আমাদের গাড়িতে গিয়ে বসতে বললেন। জানালেন, ‘আকাশ ভাইদের খুঁজে পাচ্ছি না। ওনারা এলেই আমরা ফিরতে পারি।’ আকাশ ভাই আর সঙ্গে কে কে যেন কোন একটা বরফের পাহাড়ে চড়তে গিয়েছিলেন। শরীর ভালো থাকলে হয়তো আমরাও যেতাম। খুব আফসোস লাগছিল। ইয়ামথাং কি তাহলে অভিশাপ দিয়েছিল আমাদেরকে?
গাড়িতে বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম আমি আর ভুবন। মাসুম ভাই দুটো ওষুধ ধরিয়ে দিয়ে গেছেন। প্যারাসিটামল। আমাদের জ্বর এসেছে। অবস্থা গুরুতর। এটা না বললে কেউ ফিরবে না। তাই মাসুম ভাই খিটমিট করতে করতে আবার খুঁজতে চলে গেলেন বাকিদেরকে। এদিকে ওই দলটা জিরো পয়েন্ট থেকে ঘুরে ইয়ামথাং ভ্যালিতে চলে এসেছে। তারাও আনন্দ-ফুর্তিতে ব্যস্ত। অবশ্য আমাদের দলের সদস্যদের আরও আগেই তাদের ঘোরাঘুরি শেষ হয়ে গিয়েছিল। তারা এসেই বলছিল, ‘কেন যে জিরো পয়েন্টে গেলাম। এখানেই তো ভালো ছিল!’ আমরা মাসুম ভাইয়ের দেওয়া ওষুধ খেয়ে চুপচাপ বসে ছিলাম। ভুবনের কপাল ধরে দেখি বেশ ভালো জ্বর। আমারও তাই। আমার চেয়ে ওর শ্বাসকষ্ট কম হচ্ছিল। কর্পূরের পুঁটলিটা একবার আমার নাকে, আরেকবার ওর নাকে ধরছিলাম। নিজের ঘর আর বিছানাটাকে তখন কী পরিমাণ যে মনে করছিলাম তা বলে বোঝাতে পারব না। সেই সঙ্গে আম্মুকে। সবারই নিশ্চয়ই অসুখ হলে মায়ের কথা বেশি মনে পড়ে? ভুবন হয়তো আমার শাশুড়িকে মনে করছিল। কী জানি? বলেনি। ইংরেজিতে ভুবনকে বললাম, ‘আই মিস হোম।' বলেই কান্না শুরু করলাম। শুধু বাড়ি ফিরতে ইচ্ছা করছিল বলে। ভুবন বলল, ‘ঠিক আছে। আর কখনো তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাব না।’ এটা কেমন কথা? বললাম, ‘কেন যাব না? অবশ্যই যাব। আরও বেশি বেশি প্রস্তুতি নিয়ে যাব। আর বেশি বেশি সাবধান থাকব।’
প্রায় দেড় ঘণ্টার মতো অপেক্ষা করার পর সবাই ফিরে এলেন। ফিরেই বাগ্বিতণ্ডায় লেগে গেলেন আকাশ ভাই আর মাসুম ভাই। মাসুম ভাইয়ের কথা হচ্ছে, ‘দেখলেন যে ওনারা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাহলে দেরি করলেন কেন? ওনাদের তো হোটেলে ফিরে একটু বিশ্রাম দরকার। আপনারা না ফিরলে তো যেতেও পারছেন না।’ এদিকে আকাশ ভাইয়ের কথা, ‘আরে ভাই আমি তো জানিই না ওনারা এত অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। জানলে কি আর দেরি করতাম?’ মাসুম ভাই বলেন, ‘কেন জানবেন না? না জানার কী আছে?’ আকাশ ভাই যতই বোঝাচ্ছিলেন যে তিনি জানতেন না, মাসুম ভাই ততই রেগে যাচ্ছিলেন। আর আমরা দুজন বাকিদের মতো হা করে তাকিয়ে দেখছিলাম। শেষমেশ ভুবন এগিয়ে বলল, ‘ভাই, আমাদের কোনো সমস্যা হয়নি। আমরা চাইনি আমাদের জন্য আপনাদের আনন্দটা মাটি হয়ে যাক। এখন চলেন ফিরে যাই। একটু বিশ্রাম নিলেই ঠিক হয়ে যাব।’ তারপরেও দু-এক বাক্য তাঁরা একে অপরকে ছুড়ে দিয়ে গাড়িতে উঠলেন। সেই ঝগড়া অবশ্য বেশিক্ষণ টেকেনি।
ফিরতি পথে সেনারা আটকায়নি। এবার আরও অল্প সময়ে হোটেলে ফিরে এলাম। বারোটার মতো বাজে তখন। হাতে অনেক সময় আছে। দুপুরের খাবার খেয়েই গ্যাংটকের দিকে রওনা দেব। রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম দুজনেই। ঘুম দরকার ছিল। কিছুক্ষণের মধ্যে দরজায় খটখট করল কে যেন। ভুবন দরজা খুলে দিল। মাসুম ভাই এসে দেখলেন আমাদের জ্বর কেমন। পরে দুজনকে দুইটা প্যারাসিটামল আর গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। এঁরা মনে হয় পুরো ওষুধ কোম্পানিটাই সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন! আমরাও বাধ্য ছেলেমেয়ের মতো খেয়ে শুয়ে পড়লাম আবার। জ্বরের যে অবস্থা ছিল, ওষুধ না খেয়ে উপায় ছিল না। তখন এটাই মনে হয়েছিল। ঘণ্টা দুই ঘুম দিয়ে খেতে চলে গেলাম। ইতিমধ্যে সব দলের সবাই জেনে গেছেন আমরা জ্বরে পড়েছি।
একেকজন খুব দুশ্চিন্তা দেখাচ্ছিলেন। আহা-উহু করছিলেন। নানা পরামর্শ দিচ্ছিলেন। তবে এ কথা বলতেই হয় যে আমাদের দলের বাকি সাত সদস্য, অমরদা আর মিলন ভাই যথেষ্ট যত্নশীল ছিলেন দুজনের প্রতি। অমরদা জানালেন সমতল থেকে আমরা প্রায় ১৪ হাজার ফুট ওপরে উঠেছিলাম। সেখানে প্রতিকূল আবহাওয়ায় শ্বাসকষ্ট হওয়াটাই স্বাভাবিক। আর তিনি সতর্ক করেছিলেন সেদিককার বৃষ্টির পানি যেন মাথায় না লাগে। নির্ঘাত জ্বর আসবে। কখন যে দুই-এক ফোঁটা মাথায় পড়েছিল টের পাইনি। তার ওপর ভোর সকালে করেছিলাম গোসল। তাও মাইনাসের তাপমাত্রায়। ভুবন ঢেলেছিল ঠান্ডা পানি। জ্বর আমাদের হবে না তো কার হবে?
খেতে বসেছি এমন সময় বড় দলের নেতা কিসিমের লোকটা এসে বললেন, ‘কী? কে নাকি অসুস্থ? জ্বর হইসে কার?’ বললাম আমাদের। তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে লোকটা বললেন, ‘এএহহহ! আবার ঘুরতে আইছে!’ টিটকারি করে বলুক কিংবা মজা করেই বলুক, লোকটার কথা আমার পছন্দ হলো না। উত্তর দিইনি। বুদ্ধিমত্তা যাঁদের মাইনাসের কোঠায় থাকে, তাঁদের কথার জবাব দিতে হয় না! এমনিতেই তাঁদের লোক দেখানো স্বভাব দেখে বিরক্ত লাগছিল। তার ওপর প্রথম দিন থেকে দেখছি মদ খেয়ে টাল হয়ে ছিলেন। হিম দেশে রাস্তায় রাস্তায় ঝুড়িতে করে মদ, বিয়ার বেচবেই। তা বলে দেদার কিনে গলা অবধি গিলতে হবে? হুম, তা ঠিক যে নিজের টাকা নিজে খরচ করছেন, তাতে কার কী! সমস্যা হচ্ছে, টাকা খরচ করে মাতাল হয়ে যে কারও সঙ্গে যা তা আচরণ করা। এই যেমন আগের রাতে অমরদাকে পারলে পিটিয়ে মেরে ফেলতেন। কেন সবখানে নিয়ে যেতে পারছিলেন না এই কারণে!
খাওয়াদাওয়া সেরে ব্যাগ গুছিয়ে উঠানে বসে অপেক্ষা করছিলাম। দুই দল একসঙ্গে রওনা দেবে। বড় দলের সবাই তখনও প্রস্তুত না। কিছুটা কমে এসেছিল জ্বর। একটু ভালো লাগছিল বলে পান্ডেজির সঙ্গে গল্প করা শুরু করে দিলাম। জিজ্ঞেস করলাম সালমান খানের ‘দাবাং’ সিনেমাটা দেখা হয়েছে কি না। তিনি দেখেছেন। পরে তাঁকে জানালাম কেন আমি তাঁকে পান্ডেজি বলে ডাকি। তিনি মুচকি হেসে বললেন, ‘কাহা ম্যায় অউর কাহা সালমান খান!’ আমিও হেসে বললাম, ‘হামারে লিয়ে তো আপহি সালমান খান হ্যায়, পান্ডেজি।’ আমার বিশ্বাস, পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের নিজ নিজ গল্প আছে। আর সেই গল্পের নায়ক তাঁরা নিজেই। পান্ডেজিকে শুধু এই জিনিসটা উপলব্ধি করাতে চাচ্ছিলাম।
তিনটার দিকে সবাই গাড়িতে চড়ে বসলাম। ভটভট করতে করতে জিপ চালু হয়ে গেল। ফিরছিলাম গ্যাংটক।
চলবে...

আপনি কি মিষ্টি খেতে বেশ ভালোবাসেন? মিষ্টি দেখলেই নিজেকে সামলে রাখতে পারেন না? এমন অনেকেই আছেন, যাঁদের মিষ্টি নিয়ে অবসেশন কাজ করে। তাঁরা টিভি দেখতে দেখতে এক টব আইসক্রিম সাবাড় করে ফেলতে পারেন। কেউ আবার বন্ধুর জন্মদিনে বড় এক টুকরা কেক খেয়ে ফেলেন কোনো কিছু না ভেবেই। এমন ঘটনা আমাদের সবার জীবনেই কম-বেশি
৫ ঘণ্টা আগে
হিমালয়কন্যা নেপালের জেলা আরঘাখাঁচি। সেই জেলার পাণিনি গ্রাম পঞ্চায়েতের সিমলে এলাকা এখন এক অপূর্ব দৃশ্যে সেজেছে। পাহাড়ের ঢালে ঢালে সারিবদ্ধ গাছগুলো পাকা কমলার ভারে নুয়ে পড়েছে। আর এতেই পুরো জনপদ যেন সেজেছে সোনালি-হলুদ রঙে। কিন্তু এ দৃশ্য কেবল চোখের প্রশান্তি নয়; বরং এটি একটি অর্থনৈতিক বিপ্লবের গল্প...
৭ ঘণ্টা আগে
বেসন ত্বক গভীর থেকে পরিষ্কার করে। যাঁরা ভাবছেন, বেসন ব্যবহারে ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে যেতে পারে, তাঁরা জেনে রাখুন বিশেষ কয়েকটি উপাদান মেশালে বেসনের তৈরি প্যাকও ত্বক আর্দ্র রেখে উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দিতে পারে। এসব ব্যবহারে ত্বকের অবাঞ্ছিত ব্রণও দূর হবে।...
৯ ঘণ্টা আগে
পৌষের রোদমাখা দিন চলে এল। টানা দুই মাস শীতের হিম শীতল দিন কাটানোর পালা। শীতকাল মানে যেন একটু আরাম আরাম ভাব, একটু অলসতা আর ব্যাপক খাওয়া-দাওয়া। এ সবই হয় মূলত বছরের এই বিশেষ সময়টিতে সবকিছু গুছিয়ে নতুন একটা বছরের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য। সবকিছু মিলিয়ে ঘরোয়া উষ্ণতা ও আনন্দ নিয়ে শীতকালটাকে একটু...
১১ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক

আপনি কি মিষ্টি খেতে বেশ ভালোবাসেন? মিষ্টি দেখলেই নিজেকে সামলে রাখতে পারেন না? এমন অনেকেই আছেন, যাঁদের মিষ্টি নিয়ে অবসেশন কাজ করে। তাঁরা টিভি দেখতে দেখতে এক টব আইসক্রিম সাবাড় করে ফেলতে পারেন। কেউ আবার বন্ধুর জন্মদিনে বড় এক টুকরা কেক খেয়ে ফেলেন কোনো কিছু না ভেবেই। এমন ঘটনা আমাদের সবার জীবনেই কম-বেশি ঘটে। অনিচ্ছাকৃতভাবে বেশি চিনি বা ক্যালরি খেয়ে ফেলার পরদিন সকালে আমাদের মনে দানা বাঁধে অপরাধ বোধ, আর শুরু হয় নিজেকে ‘শাস্তি’ দেওয়ার পালা। আমরা ভাবি, আজ খাবার না খেয়ে বা খুব কম খেয়ে আগের রাতের ঘাটতি পুষিয়ে নেব। কিন্তু পুষ্টিবিদদের মতে, এই অভ্যাসটিই আমাদের স্বাস্থ্যের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে।
অতিরিক্ত খাবার বা চিনি খেয়ে ফেলাটা জীবনের এক অতি স্বাভাবিক অংশ। এর জন্য নিজেকে শাস্তি দেওয়া বা ক্লিনসিং করার প্রয়োজন নেই। বরং প্রচুর পানি পান, হালকা ব্যায়াম, ভারসাম্যপূর্ণ খাবার এবং নিজের প্রতি মমতা নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসাই সুস্থ থাকার আসল চাবিকাঠি। মনে রাখবেন, আপনার সুস্বাস্থ্য গড়ে ওঠে আপনার বড় ক্যানভাসের জীবনধারা দিয়ে, একটি মাত্র রাত দিয়ে নয়। ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক ডায়েটিশিয়ান ভিক্টোরিয়া হুইটিংটন এবং সাম্প্রতিক পুষ্টি গবেষণার আলোকে জেনে নিন, একদিনের অনিয়ম সামলে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার বিজ্ঞানসম্মত উপায়।

১. নিজেকে বঞ্চিত করবেন না
বেশি খেয়ে ফেলার পরদিন না খেয়ে থাকা বা খুব অল্প খাওয়ার যে প্রবণতা, তা আসলে উল্টো ফল আনে। গবেষণায় দেখা গেছে, খাবার নিয়ে অতিরিক্ত কড়াকড়ি করলে খাবারের প্রতি আকর্ষণ আরও বেড়ে যায়, যা পরবর্তী সময়ে আবার অনিয়ন্ত্রিত খাওয়ার দিকে ঠেলে দেয়। তাই অতিরিক্ত চিনি খেয়ে ফেলার পরদিন খাবার কমিয়ে দেওয়ার বদলে প্রোটিন, ফাইবার এবং ভালো ফ্যাটের সমন্বয়ে একটি ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্যাভ্যাসে ফিরে আসাই বুদ্ধিমানের কাজ।
২. সকালের নাশতা হোক প্রোটিন ও ফাইবারসমৃদ্ধ
অনিয়মের পরদিন সকালের শুরুটা হওয়া চাই জুতসই। গবেষণা বলছে, উচ্চ প্রোটিনযুক্ত সকালের নাশতা রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখে এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এর সঙ্গে পর্যাপ্ত ফাইবার যোগ করলে তা রক্তে গ্লুকোজের আকস্মিক বৃদ্ধি রোধ করে এবং সারা দিন আপনাকে তৃপ্ত রাখে। খাবার বাদ দিলে শরীরে ‘ঘ্রেলিন’ বা ক্ষুধা উদ্দীপক হরমোন বেড়ে যায়, যা দিনশেষে আপনাকে আবারও বেশি খেতে প্ররোচিত করতে পারে।
৩. শরীরকে সচল রাখুন এবং পানি পান করুন
অতিরিক্ত খাওয়ার পর শরীরে যে অলসতা বা ভারী ভাব কাজ করে, তার পেছনে ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতার বড় ভূমিকা থাকে। পর্যাপ্ত পানি পান করলে হজমপ্রক্রিয়া সহজ হয়। পাশাপাশি হালকা শারীরিক পরিশ্রম বা অল্প হাঁটাহাঁটি করা জরুরি। এতে আমাদের পেশিগুলো রক্তে জমে থাকা শর্করাকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারে এবং ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায়।

৪. ‘পারফেকশন’ নয়, গুরুত্ব দিন সামগ্রিক অভ্যাসে
পুষ্টিবিদ হুইটিংটন জোর দিয়ে বলেছেন, দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য মূলত আপনার নিয়মিত অভ্যাসের ওপর নির্ভর করে, কোনো একদিনের অনিয়মের ওপর নয়। নার্সেস হেলথ স্টাডির মতো বড় বড় গবেষণাও বলছে, কোনো একটি নির্দিষ্ট দিনের খাদ্যাভ্যাস নয়; বরং আপনার দীর্ঘদিনের খাদ্যাভ্যাসের ধরনই নির্ধারণ করে আপনার দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি। তাই একদিন বেশি খেয়ে ফেললে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। স্বাস্থ্য মানে নিখুঁত হওয়া নয়; বরং একটি সুস্থ ধারায় থাকা।
৫. নিজের প্রতি সদয় হোন
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো, নিজেকে ক্ষমা করা। গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা নিজেদের প্রতি সদয় থাকেন, তাঁরা আবেগতাড়িত হয়ে বেশি খাওয়ার অভ্যাসটি দ্রুত কাটিয়ে উঠতে পারেন। নিজেকে দোষারোপ না করে বরং বোঝার চেষ্টা করুন, সে মুহূর্তে আপনার কিসের প্রয়োজন ছিল। সমালোচনা নয়, কৌতূহলী মন নিয়ে নিজের আচরণ বিশ্লেষণ করলে আপনি ভবিষ্যতে আরও ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
সূত্র: ডেইলি মেইল

আপনি কি মিষ্টি খেতে বেশ ভালোবাসেন? মিষ্টি দেখলেই নিজেকে সামলে রাখতে পারেন না? এমন অনেকেই আছেন, যাঁদের মিষ্টি নিয়ে অবসেশন কাজ করে। তাঁরা টিভি দেখতে দেখতে এক টব আইসক্রিম সাবাড় করে ফেলতে পারেন। কেউ আবার বন্ধুর জন্মদিনে বড় এক টুকরা কেক খেয়ে ফেলেন কোনো কিছু না ভেবেই। এমন ঘটনা আমাদের সবার জীবনেই কম-বেশি ঘটে। অনিচ্ছাকৃতভাবে বেশি চিনি বা ক্যালরি খেয়ে ফেলার পরদিন সকালে আমাদের মনে দানা বাঁধে অপরাধ বোধ, আর শুরু হয় নিজেকে ‘শাস্তি’ দেওয়ার পালা। আমরা ভাবি, আজ খাবার না খেয়ে বা খুব কম খেয়ে আগের রাতের ঘাটতি পুষিয়ে নেব। কিন্তু পুষ্টিবিদদের মতে, এই অভ্যাসটিই আমাদের স্বাস্থ্যের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে।
অতিরিক্ত খাবার বা চিনি খেয়ে ফেলাটা জীবনের এক অতি স্বাভাবিক অংশ। এর জন্য নিজেকে শাস্তি দেওয়া বা ক্লিনসিং করার প্রয়োজন নেই। বরং প্রচুর পানি পান, হালকা ব্যায়াম, ভারসাম্যপূর্ণ খাবার এবং নিজের প্রতি মমতা নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসাই সুস্থ থাকার আসল চাবিকাঠি। মনে রাখবেন, আপনার সুস্বাস্থ্য গড়ে ওঠে আপনার বড় ক্যানভাসের জীবনধারা দিয়ে, একটি মাত্র রাত দিয়ে নয়। ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক ডায়েটিশিয়ান ভিক্টোরিয়া হুইটিংটন এবং সাম্প্রতিক পুষ্টি গবেষণার আলোকে জেনে নিন, একদিনের অনিয়ম সামলে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার বিজ্ঞানসম্মত উপায়।

১. নিজেকে বঞ্চিত করবেন না
বেশি খেয়ে ফেলার পরদিন না খেয়ে থাকা বা খুব অল্প খাওয়ার যে প্রবণতা, তা আসলে উল্টো ফল আনে। গবেষণায় দেখা গেছে, খাবার নিয়ে অতিরিক্ত কড়াকড়ি করলে খাবারের প্রতি আকর্ষণ আরও বেড়ে যায়, যা পরবর্তী সময়ে আবার অনিয়ন্ত্রিত খাওয়ার দিকে ঠেলে দেয়। তাই অতিরিক্ত চিনি খেয়ে ফেলার পরদিন খাবার কমিয়ে দেওয়ার বদলে প্রোটিন, ফাইবার এবং ভালো ফ্যাটের সমন্বয়ে একটি ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্যাভ্যাসে ফিরে আসাই বুদ্ধিমানের কাজ।
২. সকালের নাশতা হোক প্রোটিন ও ফাইবারসমৃদ্ধ
অনিয়মের পরদিন সকালের শুরুটা হওয়া চাই জুতসই। গবেষণা বলছে, উচ্চ প্রোটিনযুক্ত সকালের নাশতা রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখে এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এর সঙ্গে পর্যাপ্ত ফাইবার যোগ করলে তা রক্তে গ্লুকোজের আকস্মিক বৃদ্ধি রোধ করে এবং সারা দিন আপনাকে তৃপ্ত রাখে। খাবার বাদ দিলে শরীরে ‘ঘ্রেলিন’ বা ক্ষুধা উদ্দীপক হরমোন বেড়ে যায়, যা দিনশেষে আপনাকে আবারও বেশি খেতে প্ররোচিত করতে পারে।
৩. শরীরকে সচল রাখুন এবং পানি পান করুন
অতিরিক্ত খাওয়ার পর শরীরে যে অলসতা বা ভারী ভাব কাজ করে, তার পেছনে ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতার বড় ভূমিকা থাকে। পর্যাপ্ত পানি পান করলে হজমপ্রক্রিয়া সহজ হয়। পাশাপাশি হালকা শারীরিক পরিশ্রম বা অল্প হাঁটাহাঁটি করা জরুরি। এতে আমাদের পেশিগুলো রক্তে জমে থাকা শর্করাকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারে এবং ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায়।

৪. ‘পারফেকশন’ নয়, গুরুত্ব দিন সামগ্রিক অভ্যাসে
পুষ্টিবিদ হুইটিংটন জোর দিয়ে বলেছেন, দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য মূলত আপনার নিয়মিত অভ্যাসের ওপর নির্ভর করে, কোনো একদিনের অনিয়মের ওপর নয়। নার্সেস হেলথ স্টাডির মতো বড় বড় গবেষণাও বলছে, কোনো একটি নির্দিষ্ট দিনের খাদ্যাভ্যাস নয়; বরং আপনার দীর্ঘদিনের খাদ্যাভ্যাসের ধরনই নির্ধারণ করে আপনার দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি। তাই একদিন বেশি খেয়ে ফেললে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। স্বাস্থ্য মানে নিখুঁত হওয়া নয়; বরং একটি সুস্থ ধারায় থাকা।
৫. নিজের প্রতি সদয় হোন
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো, নিজেকে ক্ষমা করা। গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা নিজেদের প্রতি সদয় থাকেন, তাঁরা আবেগতাড়িত হয়ে বেশি খাওয়ার অভ্যাসটি দ্রুত কাটিয়ে উঠতে পারেন। নিজেকে দোষারোপ না করে বরং বোঝার চেষ্টা করুন, সে মুহূর্তে আপনার কিসের প্রয়োজন ছিল। সমালোচনা নয়, কৌতূহলী মন নিয়ে নিজের আচরণ বিশ্লেষণ করলে আপনি ভবিষ্যতে আরও ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
সূত্র: ডেইলি মেইল

ভোরের দিকে ঘরটা এতই গরম হয়ে গিয়েছিল যে গোসল না করার মুড থেকে ধাপ করে গোসল করার মুডে চলে আসলাম। সাড়ে ছয়টার দিকে গরমে ঘুম ভেঙে গেল। দুজনেরই। খুব অস্থির লাগছিল বলে গোসল সেরে নিলাম। অতি অবশ্যই গরম
০২ নভেম্বর ২০২২
হিমালয়কন্যা নেপালের জেলা আরঘাখাঁচি। সেই জেলার পাণিনি গ্রাম পঞ্চায়েতের সিমলে এলাকা এখন এক অপূর্ব দৃশ্যে সেজেছে। পাহাড়ের ঢালে ঢালে সারিবদ্ধ গাছগুলো পাকা কমলার ভারে নুয়ে পড়েছে। আর এতেই পুরো জনপদ যেন সেজেছে সোনালি-হলুদ রঙে। কিন্তু এ দৃশ্য কেবল চোখের প্রশান্তি নয়; বরং এটি একটি অর্থনৈতিক বিপ্লবের গল্প...
৭ ঘণ্টা আগে
বেসন ত্বক গভীর থেকে পরিষ্কার করে। যাঁরা ভাবছেন, বেসন ব্যবহারে ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে যেতে পারে, তাঁরা জেনে রাখুন বিশেষ কয়েকটি উপাদান মেশালে বেসনের তৈরি প্যাকও ত্বক আর্দ্র রেখে উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দিতে পারে। এসব ব্যবহারে ত্বকের অবাঞ্ছিত ব্রণও দূর হবে।...
৯ ঘণ্টা আগে
পৌষের রোদমাখা দিন চলে এল। টানা দুই মাস শীতের হিম শীতল দিন কাটানোর পালা। শীতকাল মানে যেন একটু আরাম আরাম ভাব, একটু অলসতা আর ব্যাপক খাওয়া-দাওয়া। এ সবই হয় মূলত বছরের এই বিশেষ সময়টিতে সবকিছু গুছিয়ে নতুন একটা বছরের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য। সবকিছু মিলিয়ে ঘরোয়া উষ্ণতা ও আনন্দ নিয়ে শীতকালটাকে একটু...
১১ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক, ঢাকা

‘চাকরি ছেড়ে কৃষিতে লাখপতি’ কিংবা ‘যুবকের ভাগ্য ফিরল কৃষিতে’। এমন সংবাদ আমরা প্রায়ই দেখি সংবাদমাধ্যমে। এই যুবকেরা কখনো কখনো নীরবে বদলে দেয় পুরো জনপদের শত শত কৃষকের জীবন। এসব ঘটনা যে শুধু বাংলাদেশেই ঘটে, তা নয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঘটে থাকে। নেপালেও এমনি একটি ঘটনা ঘটেছে। তা প্রকাশিত হয়েছে দেশটির জনপ্রিয় সংবাদপত্র ‘কাঠমান্ডু পোস্ট’-এ।
হিমালয়কন্যা নেপালের জেলা আরঘাখাঁচি। সেই জেলার পাণিনি গ্রাম পঞ্চায়েতের সিমলে এলাকা এখন এক অপূর্ব দৃশ্যে সেজেছে। পাহাড়ের ঢালে ঢালে সারিবদ্ধ গাছগুলো পাকা কমলার ভারে নুয়ে পড়েছে। আর এতেই পুরো জনপদ যেন সেজেছে সোনালি-হলুদ রঙে। কিন্তু এ দৃশ্য কেবল চোখের প্রশান্তি নয়; বরং এটি একটি অর্থনৈতিক বিপ্লবের গল্প। সেখানে এই সোনালি-হলুদ ফলটি বদলে দিয়েছে শত শত কৃষকের ভাগ্য এবং পুরো গ্রামের জীবনযাত্রা।
ঘরের আঙিনায় চকচকে সাফল্য
এই পরিবর্তনের উজ্জ্বল প্রতীক তরুণ কৃষক রেবতি ভট্টরাই। উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে ভাগ্যের অন্বেষণে তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন বিদেশে। সেখানে প্রায় এক দশক হাড়ভাঙা খাটুনির পর কিছু অর্থ নিয়ে দেশে ফিরে এক সাহসী সিদ্ধান্ত নেন তিনি। পৈতৃক জমিতে প্রচলিত দানাদার শস্যের চাষ বাদ দিয়ে তৈরি করেন কমলার বাগান। আজ তাঁর ৫৩৫টি কমলাগাছ ফলে ভরপুর। গত বছর ১৭০ কুইন্টাল কমলা বিক্রি করে তিনি ৯ লাখ রুপি আয় করেছেন। এবার ফলন আরও ভালো হওয়ায় ২০০ কুইন্টাল উৎপাদনের আশা করছেন তিনি। রেবতি বলেন, ‘বিদেশের চাকরির চেয়ে কমলার চাষ আমার জীবনকে বেশি বদলে দিয়েছে। এখন আর আমাকে বাজারের পেছনে ছুটতে হয় না। ফল পাকার আগেই ব্যবসায়ীরা এসে বাগান বুক করে নেন।’ কমলার আয়েই তিনি সিমলেতে আড়াই তলা একটি পাকা বাড়ি তুলেছেন।
পেনশনের চেয়েও বেশি আয়
শুধু তরুণেরাই নন, এ বিপ্লবে শামিল হয়েছেন অভিজ্ঞ ব্যক্তিরাও। তাঁদের মধ্যে একজন অবসরপ্রাপ্ত কৃষি টেকনিশিয়ান দধি রাম গৌতম। পাঁচ বছর ধরে তিনি বাণিজ্যিক কমলা চাষ করছেন। তাঁর ২৫০টি গাছের কমলা থেকে বছরে যে আয় হয়, তা তাঁর সরকারি পেনশনের চেয়ে তিন গুণ বেশি। বুটওয়াল, পাল্পা ও পোখারা থেকে ব্যবসায়ীরা গাড়ি নিয়ে তাঁর বাড়িতে এসে নগদ টাকায় কমলা কিনে নিয়ে যান।
কমলা চাষে এমনকি জনপ্রতিনিধিরাও পিছিয়ে নেই। ওয়ার্ড চেয়ারম্যান চন্দ্রকান্ত পাউডেল তাঁর জনসেবামূলক কাজের পাশাপাশি ৬০০টি কমলাগাছের বিশাল বাগান সামলাচ্ছেন। এ বছর শিলাবৃষ্টি বা পোকামাকড়ের আক্রমণ না থাকায় ফলন হয়েছে বাম্পার, যা আরও বেশি লাভের আশা জোগাচ্ছে।
কমলার এক নতুন হাব
পাণিনি-১-এর সলেরি টোল গ্রামে এখন প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই কমলার বাগান রয়েছে। গ্রামের কৃষকেরা নিজেদের সংগঠিত করতে গঠন করেছেন পাখাপানি কৃষক দল। ৪৫টি পরিবারের মধ্যে ৩০টিই এখন এই দলের সদস্য। গ্রামের বড় চাষি টুক বাহাদুর দারলামি গত বছর ৩ দশমিক ৫ লাখ রুপি আয় করেছেন কমলা চাষ করে। তিনি জানিয়েছেন, পুরো সলেরি গ্রাম এখন কমলার হাবে পরিণত হয়েছে। ফলে তাঁদের জমিগুলো আর অনাবাদি থাকছে না এবং গ্রাম থেকে মানুষের শহরে চলে যাওয়ার প্রবণতাও কমেছে।
অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক প্রভাব
কৃষকদের এ সাফল্যে হাত বাড়িয়েছে অ্যাগ্রিকালচার নলেজ সেন্টার। সেচের সুবিধার জন্য তারা বড় বড় পানির ট্যাংক তৈরি করে দিয়েছে গ্রামটিতে। কৃষি টেকনিশিয়ান শারদা আচার্যের মতে, সিমলে গ্রামের এই ব্যাপক সাফল্য দেখে প্রতিবেশী গ্রামগুলোও এখন বাণিজ্যিকভাবে কমলা চাষে ঝুঁকছে। শুধু সিমলে গ্রাম থেকেই বছরে ৩ কোটি রুপিরও বেশি কমলা বিক্রি হয়। গত বছর পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি কমলার দাম ছিল ৬০ রুপি। এ বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০ রুপিতে। কমলার আয়ে কৃষকেরা সন্তানদের ভালো শিক্ষা দিচ্ছেন, ঘরবাড়ি সংস্কার করছেন এবং গবাদিপশুর আধুনিক খামার গড়ে তুলছেন।
আরঘাখাঁচির এই জনপদে কমলা এখন আর কেবল একটি ফল নয়—স্বনির্ভরতার প্রতীক। যখন পুরো গ্রাম কমলার হলুদ রঙে ঝলমল করে ওঠে, তখন তা কেবল ঋতু পরিবর্তনের জানান দেয় না; বরং এক সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের গল্প শোনায়।
সূত্র: কাঠমান্ডু পোস্ট

‘চাকরি ছেড়ে কৃষিতে লাখপতি’ কিংবা ‘যুবকের ভাগ্য ফিরল কৃষিতে’। এমন সংবাদ আমরা প্রায়ই দেখি সংবাদমাধ্যমে। এই যুবকেরা কখনো কখনো নীরবে বদলে দেয় পুরো জনপদের শত শত কৃষকের জীবন। এসব ঘটনা যে শুধু বাংলাদেশেই ঘটে, তা নয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঘটে থাকে। নেপালেও এমনি একটি ঘটনা ঘটেছে। তা প্রকাশিত হয়েছে দেশটির জনপ্রিয় সংবাদপত্র ‘কাঠমান্ডু পোস্ট’-এ।
হিমালয়কন্যা নেপালের জেলা আরঘাখাঁচি। সেই জেলার পাণিনি গ্রাম পঞ্চায়েতের সিমলে এলাকা এখন এক অপূর্ব দৃশ্যে সেজেছে। পাহাড়ের ঢালে ঢালে সারিবদ্ধ গাছগুলো পাকা কমলার ভারে নুয়ে পড়েছে। আর এতেই পুরো জনপদ যেন সেজেছে সোনালি-হলুদ রঙে। কিন্তু এ দৃশ্য কেবল চোখের প্রশান্তি নয়; বরং এটি একটি অর্থনৈতিক বিপ্লবের গল্প। সেখানে এই সোনালি-হলুদ ফলটি বদলে দিয়েছে শত শত কৃষকের ভাগ্য এবং পুরো গ্রামের জীবনযাত্রা।
ঘরের আঙিনায় চকচকে সাফল্য
এই পরিবর্তনের উজ্জ্বল প্রতীক তরুণ কৃষক রেবতি ভট্টরাই। উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে ভাগ্যের অন্বেষণে তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন বিদেশে। সেখানে প্রায় এক দশক হাড়ভাঙা খাটুনির পর কিছু অর্থ নিয়ে দেশে ফিরে এক সাহসী সিদ্ধান্ত নেন তিনি। পৈতৃক জমিতে প্রচলিত দানাদার শস্যের চাষ বাদ দিয়ে তৈরি করেন কমলার বাগান। আজ তাঁর ৫৩৫টি কমলাগাছ ফলে ভরপুর। গত বছর ১৭০ কুইন্টাল কমলা বিক্রি করে তিনি ৯ লাখ রুপি আয় করেছেন। এবার ফলন আরও ভালো হওয়ায় ২০০ কুইন্টাল উৎপাদনের আশা করছেন তিনি। রেবতি বলেন, ‘বিদেশের চাকরির চেয়ে কমলার চাষ আমার জীবনকে বেশি বদলে দিয়েছে। এখন আর আমাকে বাজারের পেছনে ছুটতে হয় না। ফল পাকার আগেই ব্যবসায়ীরা এসে বাগান বুক করে নেন।’ কমলার আয়েই তিনি সিমলেতে আড়াই তলা একটি পাকা বাড়ি তুলেছেন।
পেনশনের চেয়েও বেশি আয়
শুধু তরুণেরাই নন, এ বিপ্লবে শামিল হয়েছেন অভিজ্ঞ ব্যক্তিরাও। তাঁদের মধ্যে একজন অবসরপ্রাপ্ত কৃষি টেকনিশিয়ান দধি রাম গৌতম। পাঁচ বছর ধরে তিনি বাণিজ্যিক কমলা চাষ করছেন। তাঁর ২৫০টি গাছের কমলা থেকে বছরে যে আয় হয়, তা তাঁর সরকারি পেনশনের চেয়ে তিন গুণ বেশি। বুটওয়াল, পাল্পা ও পোখারা থেকে ব্যবসায়ীরা গাড়ি নিয়ে তাঁর বাড়িতে এসে নগদ টাকায় কমলা কিনে নিয়ে যান।
কমলা চাষে এমনকি জনপ্রতিনিধিরাও পিছিয়ে নেই। ওয়ার্ড চেয়ারম্যান চন্দ্রকান্ত পাউডেল তাঁর জনসেবামূলক কাজের পাশাপাশি ৬০০টি কমলাগাছের বিশাল বাগান সামলাচ্ছেন। এ বছর শিলাবৃষ্টি বা পোকামাকড়ের আক্রমণ না থাকায় ফলন হয়েছে বাম্পার, যা আরও বেশি লাভের আশা জোগাচ্ছে।
কমলার এক নতুন হাব
পাণিনি-১-এর সলেরি টোল গ্রামে এখন প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই কমলার বাগান রয়েছে। গ্রামের কৃষকেরা নিজেদের সংগঠিত করতে গঠন করেছেন পাখাপানি কৃষক দল। ৪৫টি পরিবারের মধ্যে ৩০টিই এখন এই দলের সদস্য। গ্রামের বড় চাষি টুক বাহাদুর দারলামি গত বছর ৩ দশমিক ৫ লাখ রুপি আয় করেছেন কমলা চাষ করে। তিনি জানিয়েছেন, পুরো সলেরি গ্রাম এখন কমলার হাবে পরিণত হয়েছে। ফলে তাঁদের জমিগুলো আর অনাবাদি থাকছে না এবং গ্রাম থেকে মানুষের শহরে চলে যাওয়ার প্রবণতাও কমেছে।
অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক প্রভাব
কৃষকদের এ সাফল্যে হাত বাড়িয়েছে অ্যাগ্রিকালচার নলেজ সেন্টার। সেচের সুবিধার জন্য তারা বড় বড় পানির ট্যাংক তৈরি করে দিয়েছে গ্রামটিতে। কৃষি টেকনিশিয়ান শারদা আচার্যের মতে, সিমলে গ্রামের এই ব্যাপক সাফল্য দেখে প্রতিবেশী গ্রামগুলোও এখন বাণিজ্যিকভাবে কমলা চাষে ঝুঁকছে। শুধু সিমলে গ্রাম থেকেই বছরে ৩ কোটি রুপিরও বেশি কমলা বিক্রি হয়। গত বছর পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি কমলার দাম ছিল ৬০ রুপি। এ বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০ রুপিতে। কমলার আয়ে কৃষকেরা সন্তানদের ভালো শিক্ষা দিচ্ছেন, ঘরবাড়ি সংস্কার করছেন এবং গবাদিপশুর আধুনিক খামার গড়ে তুলছেন।
আরঘাখাঁচির এই জনপদে কমলা এখন আর কেবল একটি ফল নয়—স্বনির্ভরতার প্রতীক। যখন পুরো গ্রাম কমলার হলুদ রঙে ঝলমল করে ওঠে, তখন তা কেবল ঋতু পরিবর্তনের জানান দেয় না; বরং এক সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের গল্প শোনায়।
সূত্র: কাঠমান্ডু পোস্ট

ভোরের দিকে ঘরটা এতই গরম হয়ে গিয়েছিল যে গোসল না করার মুড থেকে ধাপ করে গোসল করার মুডে চলে আসলাম। সাড়ে ছয়টার দিকে গরমে ঘুম ভেঙে গেল। দুজনেরই। খুব অস্থির লাগছিল বলে গোসল সেরে নিলাম। অতি অবশ্যই গরম
০২ নভেম্বর ২০২২
আপনি কি মিষ্টি খেতে বেশ ভালোবাসেন? মিষ্টি দেখলেই নিজেকে সামলে রাখতে পারেন না? এমন অনেকেই আছেন, যাঁদের মিষ্টি নিয়ে অবসেশন কাজ করে। তাঁরা টিভি দেখতে দেখতে এক টব আইসক্রিম সাবাড় করে ফেলতে পারেন। কেউ আবার বন্ধুর জন্মদিনে বড় এক টুকরা কেক খেয়ে ফেলেন কোনো কিছু না ভেবেই। এমন ঘটনা আমাদের সবার জীবনেই কম-বেশি
৫ ঘণ্টা আগে
বেসন ত্বক গভীর থেকে পরিষ্কার করে। যাঁরা ভাবছেন, বেসন ব্যবহারে ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে যেতে পারে, তাঁরা জেনে রাখুন বিশেষ কয়েকটি উপাদান মেশালে বেসনের তৈরি প্যাকও ত্বক আর্দ্র রেখে উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দিতে পারে। এসব ব্যবহারে ত্বকের অবাঞ্ছিত ব্রণও দূর হবে।...
৯ ঘণ্টা আগে
পৌষের রোদমাখা দিন চলে এল। টানা দুই মাস শীতের হিম শীতল দিন কাটানোর পালা। শীতকাল মানে যেন একটু আরাম আরাম ভাব, একটু অলসতা আর ব্যাপক খাওয়া-দাওয়া। এ সবই হয় মূলত বছরের এই বিশেষ সময়টিতে সবকিছু গুছিয়ে নতুন একটা বছরের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য। সবকিছু মিলিয়ে ঘরোয়া উষ্ণতা ও আনন্দ নিয়ে শীতকালটাকে একটু...
১১ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক, ঢাকা

রূপচর্চায় বেসন খুব পরিচিত একটি উপকরণ। একসময় ত্বক পরিষ্কার করতে সাবানের পরিবর্তে বেসন ব্যবহার করা হতো। শীতে ত্বকের নির্জীব ভাব নিয়ে যাঁরা চিন্তায় রয়েছেন, তাঁরা সহজলভ্য এই উপকরণটি রোজকার ত্বকের যত্নে ব্যবহার করে নানা উপকার পেতে পারেন।
এ কথা তো সবাই জানেন, শীতকালের শুষ্ক আবহাওয়ায় ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখা খুব জরুরি। পাশাপাশি ত্বক দূষণমুক্ত রাখাও গুরুত্বপূর্ণ। বেসন ত্বক গভীর থেকে পরিষ্কার করে। যাঁরা ভাবছেন, বেসন ব্যবহারে ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে যেতে পারে, তাঁরা জেনে রাখুন বিশেষ কয়েকটি উপাদান মেশালে বেসনের তৈরি প্যাকও ত্বক আর্দ্র রেখে উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দিতে পারে। এসব ব্যবহারে ত্বকের অবাঞ্ছিত ব্রণও দূর হবে।
বেসন ও এক্সট্রা ভার্জিন নারকেল তেলের প্যাক

পুরো শরীরের ত্বকে মাখার জন্য বেসন নিন। এতে কয়েক চামচ এক্সট্রা ভার্জিন নারকেল তেল নিন। এরপর ২ টেবিল চামচ দুধ মেশাতে পারেন। প্যাক তৈরিতে যতটুকু পানি প্রয়োজন, তা যোগ করুন। এই প্যাক ত্বকে লাগিয়ে রাখুন আধা শুকনো হওয়া পর্যন্ত। এরপর আলতো করে কুসুম গরম পানিতে পুরো শরীর ধুয়ে নিন। নারকেল তেল ও দুধ রুক্ষ ত্বকে গভীর থেকে পুষ্টি জোগায় ও ময়শ্চারাইজ করে। পাশাপাশি এ প্যাক ত্বকের ডিপ ক্লিনজিংয়েও সহায়তা করে। যাঁদের ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক, তাদের জন্য এ প্যাক খুবই ভালো কাজ করে।
বেসন, টক দই ও হলুদের প্যাক
এ সব উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে একটি ঘন মিশ্রণ তৈরি করুন। পুরো শরীরে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর হালকা গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে তা দিয়ে শরীর আলতো ঘষে প্যাক দিয়ে আলতো করে ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। টক দই ত্বকের আর্দ্রতা ও নমনীয়তা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি প্রাকৃতিক ব্লিচ হিসেবেও দুর্দান্ত কাজ করে। অন্যদিকে হলুদ ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়, দাগছোপ কমায় ও ব্রণের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
বেসন ও গাঁদা ফুল বাটার প্যাক
বেসনের সঙ্গে সমপরিমাণ গাঁদা ফুল বাটা মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করে নিন। এই প্যাক মুখ, গলা ও ঘাড়ে লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিট। তারপর ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের শুষ্কতা কমাতে ও নরম করতে এ প্যাক ভালো কাজ করে। যাঁদের ত্বকে ব্রণ ও দাগ রয়েছে তাঁরা প্রতি সপ্তাহে একবার করে এই প্যাক মুখে ব্যবহার করতে পারেন।
ডিপ ক্লিনজিং প্যাক
যাঁরা সকালে মুখ ধোয়ার ক্ষেত্রে ফেসওয়াশ ব্যবহার এড়াতে চান তাঁরা ১ টেবিল চামচ বেসনের সঙ্গে ২ টেবিল চামচ দুধ, সামান্য হলুদ এবং ৩ ফোঁটা নারকেল তেল মিশিয়ে নিয়ে ফেসওয়াশ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন প্রতিদিন সকালে। এতে ত্বক গভীরভাবে পরিষ্কার হবে ও ধীরে ধীরে জেল্লাদার হয়ে উঠবে।
বেসন, মধু ও গোলাপজল
বেসন, মধু, গোলাপজল ও অল্প পানি মিশিয়ে মিহি পেস্ট তৈরি করুন। মিশ্রণটি মুখ, গলা ও ঘাড়ে লাগিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রাখুন। শুকাতে শুরু করলে হালকা করে ম্যাসাজ করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার ব্যবহার করতে পারেন। মধু প্রাকৃতিক ময়শ্চারাইজার। এটি ত্বক নরম রাখে। গোলাপজল ত্বক সতেজ করতে সাহায্য করে। মুখ ধোয়ার পর অবশ্যই একটি ভালো ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
মেছতার দাগ হালকা করতে
বেসনের সঙ্গে অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে মেছতার ওপর লাগান। ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এক দিন অন্তর এ প্যাক ব্যবহার করুন। দাগ কমে এলে ধীরে ধীরে প্যাক ব্যবহারও কমিয়ে আনুন। যেমন সপ্তাহে একবার, তারপর ১৫ দিনে একবার, তারপর মাসে একবার। এভাবে এই প্যাক ব্যবহার করলে ধীরে ধীরে দাগ একেবারে হালকা হয়ে আসবে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া ও অন্যান্য

রূপচর্চায় বেসন খুব পরিচিত একটি উপকরণ। একসময় ত্বক পরিষ্কার করতে সাবানের পরিবর্তে বেসন ব্যবহার করা হতো। শীতে ত্বকের নির্জীব ভাব নিয়ে যাঁরা চিন্তায় রয়েছেন, তাঁরা সহজলভ্য এই উপকরণটি রোজকার ত্বকের যত্নে ব্যবহার করে নানা উপকার পেতে পারেন।
এ কথা তো সবাই জানেন, শীতকালের শুষ্ক আবহাওয়ায় ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখা খুব জরুরি। পাশাপাশি ত্বক দূষণমুক্ত রাখাও গুরুত্বপূর্ণ। বেসন ত্বক গভীর থেকে পরিষ্কার করে। যাঁরা ভাবছেন, বেসন ব্যবহারে ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে যেতে পারে, তাঁরা জেনে রাখুন বিশেষ কয়েকটি উপাদান মেশালে বেসনের তৈরি প্যাকও ত্বক আর্দ্র রেখে উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দিতে পারে। এসব ব্যবহারে ত্বকের অবাঞ্ছিত ব্রণও দূর হবে।
বেসন ও এক্সট্রা ভার্জিন নারকেল তেলের প্যাক

পুরো শরীরের ত্বকে মাখার জন্য বেসন নিন। এতে কয়েক চামচ এক্সট্রা ভার্জিন নারকেল তেল নিন। এরপর ২ টেবিল চামচ দুধ মেশাতে পারেন। প্যাক তৈরিতে যতটুকু পানি প্রয়োজন, তা যোগ করুন। এই প্যাক ত্বকে লাগিয়ে রাখুন আধা শুকনো হওয়া পর্যন্ত। এরপর আলতো করে কুসুম গরম পানিতে পুরো শরীর ধুয়ে নিন। নারকেল তেল ও দুধ রুক্ষ ত্বকে গভীর থেকে পুষ্টি জোগায় ও ময়শ্চারাইজ করে। পাশাপাশি এ প্যাক ত্বকের ডিপ ক্লিনজিংয়েও সহায়তা করে। যাঁদের ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক, তাদের জন্য এ প্যাক খুবই ভালো কাজ করে।
বেসন, টক দই ও হলুদের প্যাক
এ সব উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে একটি ঘন মিশ্রণ তৈরি করুন। পুরো শরীরে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর হালকা গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে তা দিয়ে শরীর আলতো ঘষে প্যাক দিয়ে আলতো করে ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। টক দই ত্বকের আর্দ্রতা ও নমনীয়তা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি প্রাকৃতিক ব্লিচ হিসেবেও দুর্দান্ত কাজ করে। অন্যদিকে হলুদ ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়, দাগছোপ কমায় ও ব্রণের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
বেসন ও গাঁদা ফুল বাটার প্যাক
বেসনের সঙ্গে সমপরিমাণ গাঁদা ফুল বাটা মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করে নিন। এই প্যাক মুখ, গলা ও ঘাড়ে লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিট। তারপর ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের শুষ্কতা কমাতে ও নরম করতে এ প্যাক ভালো কাজ করে। যাঁদের ত্বকে ব্রণ ও দাগ রয়েছে তাঁরা প্রতি সপ্তাহে একবার করে এই প্যাক মুখে ব্যবহার করতে পারেন।
ডিপ ক্লিনজিং প্যাক
যাঁরা সকালে মুখ ধোয়ার ক্ষেত্রে ফেসওয়াশ ব্যবহার এড়াতে চান তাঁরা ১ টেবিল চামচ বেসনের সঙ্গে ২ টেবিল চামচ দুধ, সামান্য হলুদ এবং ৩ ফোঁটা নারকেল তেল মিশিয়ে নিয়ে ফেসওয়াশ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন প্রতিদিন সকালে। এতে ত্বক গভীরভাবে পরিষ্কার হবে ও ধীরে ধীরে জেল্লাদার হয়ে উঠবে।
বেসন, মধু ও গোলাপজল
বেসন, মধু, গোলাপজল ও অল্প পানি মিশিয়ে মিহি পেস্ট তৈরি করুন। মিশ্রণটি মুখ, গলা ও ঘাড়ে লাগিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রাখুন। শুকাতে শুরু করলে হালকা করে ম্যাসাজ করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার ব্যবহার করতে পারেন। মধু প্রাকৃতিক ময়শ্চারাইজার। এটি ত্বক নরম রাখে। গোলাপজল ত্বক সতেজ করতে সাহায্য করে। মুখ ধোয়ার পর অবশ্যই একটি ভালো ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
মেছতার দাগ হালকা করতে
বেসনের সঙ্গে অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে মেছতার ওপর লাগান। ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এক দিন অন্তর এ প্যাক ব্যবহার করুন। দাগ কমে এলে ধীরে ধীরে প্যাক ব্যবহারও কমিয়ে আনুন। যেমন সপ্তাহে একবার, তারপর ১৫ দিনে একবার, তারপর মাসে একবার। এভাবে এই প্যাক ব্যবহার করলে ধীরে ধীরে দাগ একেবারে হালকা হয়ে আসবে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া ও অন্যান্য

ভোরের দিকে ঘরটা এতই গরম হয়ে গিয়েছিল যে গোসল না করার মুড থেকে ধাপ করে গোসল করার মুডে চলে আসলাম। সাড়ে ছয়টার দিকে গরমে ঘুম ভেঙে গেল। দুজনেরই। খুব অস্থির লাগছিল বলে গোসল সেরে নিলাম। অতি অবশ্যই গরম
০২ নভেম্বর ২০২২
আপনি কি মিষ্টি খেতে বেশ ভালোবাসেন? মিষ্টি দেখলেই নিজেকে সামলে রাখতে পারেন না? এমন অনেকেই আছেন, যাঁদের মিষ্টি নিয়ে অবসেশন কাজ করে। তাঁরা টিভি দেখতে দেখতে এক টব আইসক্রিম সাবাড় করে ফেলতে পারেন। কেউ আবার বন্ধুর জন্মদিনে বড় এক টুকরা কেক খেয়ে ফেলেন কোনো কিছু না ভেবেই। এমন ঘটনা আমাদের সবার জীবনেই কম-বেশি
৫ ঘণ্টা আগে
হিমালয়কন্যা নেপালের জেলা আরঘাখাঁচি। সেই জেলার পাণিনি গ্রাম পঞ্চায়েতের সিমলে এলাকা এখন এক অপূর্ব দৃশ্যে সেজেছে। পাহাড়ের ঢালে ঢালে সারিবদ্ধ গাছগুলো পাকা কমলার ভারে নুয়ে পড়েছে। আর এতেই পুরো জনপদ যেন সেজেছে সোনালি-হলুদ রঙে। কিন্তু এ দৃশ্য কেবল চোখের প্রশান্তি নয়; বরং এটি একটি অর্থনৈতিক বিপ্লবের গল্প...
৭ ঘণ্টা আগে
পৌষের রোদমাখা দিন চলে এল। টানা দুই মাস শীতের হিম শীতল দিন কাটানোর পালা। শীতকাল মানে যেন একটু আরাম আরাম ভাব, একটু অলসতা আর ব্যাপক খাওয়া-দাওয়া। এ সবই হয় মূলত বছরের এই বিশেষ সময়টিতে সবকিছু গুছিয়ে নতুন একটা বছরের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য। সবকিছু মিলিয়ে ঘরোয়া উষ্ণতা ও আনন্দ নিয়ে শীতকালটাকে একটু...
১১ ঘণ্টা আগেফারিয়া রহমান খান

পৌষের রোদমাখা দিন চলে এল। টানা দুই মাস শীতের হিম শীতল দিন কাটানোর পালা। শীতকাল মানে যেন একটু আরাম আরাম ভাব, একটু অলসতা আর ব্যাপক খাওয়া-দাওয়া। এ সবই হয় মূলত বছরের এই বিশেষ সময়টিতে সবকিছু গুছিয়ে নতুন একটা বছরের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য। সবকিছু মিলিয়ে ঘরোয়া উষ্ণতা ও আনন্দ নিয়ে শীতকালটাকে একটু সুন্দর করে সেলিব্রেট করতে পারেন।
আলো ও উষ্ণতার আমেজ
শীতকাল মানেই ঠান্ডা আর কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশ। সন্ধ্যার দিকে ঘরে কিছু ওয়ার্ম লাইট ও মোমবাতি জ্বালিয়ে দিন। রাতে ছাদে বা উঠানে আগুন জ্বালিয়ে পরিবার ও বন্ধুবান্ধব মিলে এর চারপাশে বসুন। আগুনের উষ্ণতা একটা শান্ত ও আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করে। এটি শুধু যে অন্ধকার দূর করে, তা-ই নয়; বরং শীতে একটা সুন্দর, স্নিগ্ধ ও উষ্ণ ভাব এনে দেয়। আগুনের তাপের সঙ্গে এই আয়োজনে থাকে সম্পর্কের উত্তাপও।

পুরোনো জিনিস সরিয়ে ঘর পরিষ্কার করুন
শীতকালে ঘর পরিষ্কার করে একটা ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করুন। নেতিবাচকতা দূর করতে ঘর পরিষ্কার করে ধূপ বা সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারেন। আবার শীতের আমেজ আনতে ঘরে দারুচিনি, এলাচি বা লবঙ্গ জাতীয় মসলার সুগন্ধ ব্যবহার করুন। চুলায় পানি গরম করে তাতে এসব দিয়ে ফুটতে দিন, ধীরে ধীরে পুরো বাসায় সুবাস ছড়িয়ে পড়বে। ঘর পরিষ্কার থাকলে মনও শান্ত থাকে আর নতুন দিনগুলোকে সুন্দরভাবে গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া যায়।
একটা সালতামামি হয়ে যাক
এ সময়টিতে নিজেকে নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করুন। এ বছর কী কী ভালো-খারাপ হলো বা কী কী শিখলেন, তা নিয়ে একটু ভাবুন। একটি ডায়েরিতে আপনার চিন্তাগুলো লিখে রাখতে পারেন। যেসব অভ্যাস এখন আর আপনার কাজে আসছে না, সেগুলো বাদ দিয়ে নিজের ভালো হয়—এমন কিছু ইতিবাচক অভ্যাস গড়ে তুলুন। নতুন বছরে কী কী করতে চান, সে লক্ষ্য ঠিক করে লিখে রাখুন।

কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন
জীবনে ছোট-বড় যা কিছু ভালো আছে, সবকিছুর জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। একটি তালিকা তৈরি করুন, যেখানে আপনার অর্জন, প্রিয় মানুষ, ব্যক্তিগত ভালো লাগা ও সুন্দর মুহূর্তগুলোর কথা লিখে রাখবেন। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে মনে শান্তি পাবেন এবং অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও সামনে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি পাবেন।
নিজের যত্ন নিন
শীতকাল হলো নিজের শরীর ও মনের যত্ন নেওয়ার সময়। প্রতিদিন হালকা ইয়োগা, হাঁটাহাঁটি বা স্ট্রেচিং করে শরীর সচল রাখুন। নিজের পছন্দের কাজগুলো করুন এবং নিজেকে কিছু উপহার দিন। নিজের জন্য সময় বের করে নিজের অস্তিত্ব সেলিব্রেট করার জন্য শীতকাল হলো উপযুক্ত সময়।

প্রকৃতির সান্নিধ্যে থাকুন
শীতের সকাল বা বিকেলে প্রকৃতির কাছে থাকার চেষ্টা করুন। শিশিরভেজা ঘাসে খালি পায়ে কিছুক্ষণ হাঁটুন এবং শীতের নরম রোদ গায়ে মাখুন, যা আপনার মন ভালো করার পাশাপাশি শরীরে শক্তি জোগাবে। শীতকালীন ফুলগাছ বারান্দায় রাখুন ও মাটির তৈরি জিনিস দিয়ে ঘর সাজান। দেখবেন এই ছোট কাজগুলো ঘরে একটা স্নিগ্ধ ও সতেজ ভাব আনবে।
প্রিয়জনদের সঙ্গে সময় কাটান
শীতকাল মানেই পিঠাপুলির উৎসব। বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পিঠার আয়োজন করুন। একসঙ্গে গল্প, হাসি আর খাবার সম্পর্কগুলোকে আরও মজবুত করবে এবং সময় আরও বেশি উপভোগ্য করে তুলবে।
এবার ‘না’ বলতে শিখুন
শীতকাল মানেই বিভিন্ন রকম দাওয়াত। সেগুলোকে পাশে রেখে সামাজিক বা অন্যান্য কাজের চাপ এড়িয়ে চলুন। কোনো অনুষ্ঠানে যেতে বা কোনো কাজ করতে যদি একেবারেই ইচ্ছা না করে তবে, অযথা চাপ অনুভব না করে বিনীতভাবে এড়িয়ে চলুন। এ সময় নিজের বিশ্রাম ও মানসিক শান্তিকে অগ্রাধিকার দেওয়াটাই বেশি জরুরি।
সূত্র: রিদমস অব প্লে ও অন্যান্য

পৌষের রোদমাখা দিন চলে এল। টানা দুই মাস শীতের হিম শীতল দিন কাটানোর পালা। শীতকাল মানে যেন একটু আরাম আরাম ভাব, একটু অলসতা আর ব্যাপক খাওয়া-দাওয়া। এ সবই হয় মূলত বছরের এই বিশেষ সময়টিতে সবকিছু গুছিয়ে নতুন একটা বছরের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য। সবকিছু মিলিয়ে ঘরোয়া উষ্ণতা ও আনন্দ নিয়ে শীতকালটাকে একটু সুন্দর করে সেলিব্রেট করতে পারেন।
আলো ও উষ্ণতার আমেজ
শীতকাল মানেই ঠান্ডা আর কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশ। সন্ধ্যার দিকে ঘরে কিছু ওয়ার্ম লাইট ও মোমবাতি জ্বালিয়ে দিন। রাতে ছাদে বা উঠানে আগুন জ্বালিয়ে পরিবার ও বন্ধুবান্ধব মিলে এর চারপাশে বসুন। আগুনের উষ্ণতা একটা শান্ত ও আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করে। এটি শুধু যে অন্ধকার দূর করে, তা-ই নয়; বরং শীতে একটা সুন্দর, স্নিগ্ধ ও উষ্ণ ভাব এনে দেয়। আগুনের তাপের সঙ্গে এই আয়োজনে থাকে সম্পর্কের উত্তাপও।

পুরোনো জিনিস সরিয়ে ঘর পরিষ্কার করুন
শীতকালে ঘর পরিষ্কার করে একটা ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করুন। নেতিবাচকতা দূর করতে ঘর পরিষ্কার করে ধূপ বা সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারেন। আবার শীতের আমেজ আনতে ঘরে দারুচিনি, এলাচি বা লবঙ্গ জাতীয় মসলার সুগন্ধ ব্যবহার করুন। চুলায় পানি গরম করে তাতে এসব দিয়ে ফুটতে দিন, ধীরে ধীরে পুরো বাসায় সুবাস ছড়িয়ে পড়বে। ঘর পরিষ্কার থাকলে মনও শান্ত থাকে আর নতুন দিনগুলোকে সুন্দরভাবে গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া যায়।
একটা সালতামামি হয়ে যাক
এ সময়টিতে নিজেকে নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করুন। এ বছর কী কী ভালো-খারাপ হলো বা কী কী শিখলেন, তা নিয়ে একটু ভাবুন। একটি ডায়েরিতে আপনার চিন্তাগুলো লিখে রাখতে পারেন। যেসব অভ্যাস এখন আর আপনার কাজে আসছে না, সেগুলো বাদ দিয়ে নিজের ভালো হয়—এমন কিছু ইতিবাচক অভ্যাস গড়ে তুলুন। নতুন বছরে কী কী করতে চান, সে লক্ষ্য ঠিক করে লিখে রাখুন।

কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন
জীবনে ছোট-বড় যা কিছু ভালো আছে, সবকিছুর জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। একটি তালিকা তৈরি করুন, যেখানে আপনার অর্জন, প্রিয় মানুষ, ব্যক্তিগত ভালো লাগা ও সুন্দর মুহূর্তগুলোর কথা লিখে রাখবেন। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে মনে শান্তি পাবেন এবং অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও সামনে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি পাবেন।
নিজের যত্ন নিন
শীতকাল হলো নিজের শরীর ও মনের যত্ন নেওয়ার সময়। প্রতিদিন হালকা ইয়োগা, হাঁটাহাঁটি বা স্ট্রেচিং করে শরীর সচল রাখুন। নিজের পছন্দের কাজগুলো করুন এবং নিজেকে কিছু উপহার দিন। নিজের জন্য সময় বের করে নিজের অস্তিত্ব সেলিব্রেট করার জন্য শীতকাল হলো উপযুক্ত সময়।

প্রকৃতির সান্নিধ্যে থাকুন
শীতের সকাল বা বিকেলে প্রকৃতির কাছে থাকার চেষ্টা করুন। শিশিরভেজা ঘাসে খালি পায়ে কিছুক্ষণ হাঁটুন এবং শীতের নরম রোদ গায়ে মাখুন, যা আপনার মন ভালো করার পাশাপাশি শরীরে শক্তি জোগাবে। শীতকালীন ফুলগাছ বারান্দায় রাখুন ও মাটির তৈরি জিনিস দিয়ে ঘর সাজান। দেখবেন এই ছোট কাজগুলো ঘরে একটা স্নিগ্ধ ও সতেজ ভাব আনবে।
প্রিয়জনদের সঙ্গে সময় কাটান
শীতকাল মানেই পিঠাপুলির উৎসব। বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পিঠার আয়োজন করুন। একসঙ্গে গল্প, হাসি আর খাবার সম্পর্কগুলোকে আরও মজবুত করবে এবং সময় আরও বেশি উপভোগ্য করে তুলবে।
এবার ‘না’ বলতে শিখুন
শীতকাল মানেই বিভিন্ন রকম দাওয়াত। সেগুলোকে পাশে রেখে সামাজিক বা অন্যান্য কাজের চাপ এড়িয়ে চলুন। কোনো অনুষ্ঠানে যেতে বা কোনো কাজ করতে যদি একেবারেই ইচ্ছা না করে তবে, অযথা চাপ অনুভব না করে বিনীতভাবে এড়িয়ে চলুন। এ সময় নিজের বিশ্রাম ও মানসিক শান্তিকে অগ্রাধিকার দেওয়াটাই বেশি জরুরি।
সূত্র: রিদমস অব প্লে ও অন্যান্য

ভোরের দিকে ঘরটা এতই গরম হয়ে গিয়েছিল যে গোসল না করার মুড থেকে ধাপ করে গোসল করার মুডে চলে আসলাম। সাড়ে ছয়টার দিকে গরমে ঘুম ভেঙে গেল। দুজনেরই। খুব অস্থির লাগছিল বলে গোসল সেরে নিলাম। অতি অবশ্যই গরম
০২ নভেম্বর ২০২২
আপনি কি মিষ্টি খেতে বেশ ভালোবাসেন? মিষ্টি দেখলেই নিজেকে সামলে রাখতে পারেন না? এমন অনেকেই আছেন, যাঁদের মিষ্টি নিয়ে অবসেশন কাজ করে। তাঁরা টিভি দেখতে দেখতে এক টব আইসক্রিম সাবাড় করে ফেলতে পারেন। কেউ আবার বন্ধুর জন্মদিনে বড় এক টুকরা কেক খেয়ে ফেলেন কোনো কিছু না ভেবেই। এমন ঘটনা আমাদের সবার জীবনেই কম-বেশি
৫ ঘণ্টা আগে
হিমালয়কন্যা নেপালের জেলা আরঘাখাঁচি। সেই জেলার পাণিনি গ্রাম পঞ্চায়েতের সিমলে এলাকা এখন এক অপূর্ব দৃশ্যে সেজেছে। পাহাড়ের ঢালে ঢালে সারিবদ্ধ গাছগুলো পাকা কমলার ভারে নুয়ে পড়েছে। আর এতেই পুরো জনপদ যেন সেজেছে সোনালি-হলুদ রঙে। কিন্তু এ দৃশ্য কেবল চোখের প্রশান্তি নয়; বরং এটি একটি অর্থনৈতিক বিপ্লবের গল্প...
৭ ঘণ্টা আগে
বেসন ত্বক গভীর থেকে পরিষ্কার করে। যাঁরা ভাবছেন, বেসন ব্যবহারে ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে যেতে পারে, তাঁরা জেনে রাখুন বিশেষ কয়েকটি উপাদান মেশালে বেসনের তৈরি প্যাকও ত্বক আর্দ্র রেখে উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দিতে পারে। এসব ব্যবহারে ত্বকের অবাঞ্ছিত ব্রণও দূর হবে।...
৯ ঘণ্টা আগে