Ajker Patrika

শিলিগুড়ির শেষ দিন: পর্ব-৭

আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩: ৩৬
শিলিগুড়ির শেষ দিন: পর্ব-৭

সকালের নাশতা খাওয়ার সময়ও মুখে রুচি ফিরল না। বরাবরের মতো আমি জোর করে খাওয়ার চেষ্টা করলাম আর ভুবন পারল না। সারা দিন ধরে ওঁকে বলতে লাগলাম পিয়ালকে ফোন দিতে। সমবয়সী কেউ এসে দেখা করলে অন্তত মনটা একটু ভালো হয়। পিয়াল সাহা আমাদের ব্যাচমেট। বারো-চৌদ্দ বছরে ওর চেহারাটা ভুলে গিয়েছিলাম। নামটা পর্যন্ত মনে ছিল না। কিন্তু যেদিন গ্যাংটক থেকে লাচুং যাব, সেদিন হঠাৎ করেই ফোন দিয়েছিল ভুবনকে। ফেসবুকে ভুবনের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। ভুবন ফেসবুকে চেক-ইন দেওয়ায় পিয়াল নিজে থেকে ফোন করে জানিয়েছিল সে গ্যাংটকে আছে। পরে লাচুংয়ে রওনা দেওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে এসে দেখা করে গিয়েছিল। আমাদের কিছু ডলার ভাঙানোর দরকার ছিল। ছেলেটা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি রুপি দিয়ে ডলার নিয়ে চলে গেল। যাওয়ার আগে বলেছিল, ‘আরও টাকা লাগলে আমাকে বলিস। ছোটখাটো ব্যবসা আছে আমার শিলিগুড়িতে। মন্দ কামাই না।’ এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার পরপরই নাকি শিলিগুড়িতে এসে বসবাস শুরু করেছে পিয়াল। সেখানে নিজের ভালোই পরিচিতি আছে তার। এক বন্ধুকে গ্যাংটক পর্যন্ত বেড়াতে নিয়ে গিয়েছিল। ভুবনকে বলছিল, ‘আরে, তুই এখানে বেড়াবি, আমাকে আগে বলবি না? বন্ধু হয়ে এতটুকু উপকার কি করতে পারব না? তোদের সব ব্যবস্থা অল্প খরচে করে দিতাম।’ ভুবন লজ্জায় শুধু বলল, ‘সরি দোস্ত, একদম মাথায় ছিল না তুই যে এখানে।’ পিয়াল বারবার করে বলে দিয়েছিল যেকোনো সমস্যা হলে ওকে জানাতে। তাই ওকে ফোন দেওয়ার জন্য ভুবনকে খোঁচাচ্ছিলাম। অচেনা জায়গায় বড্ড অসহায় লাগছিল আমার। সেই সঙ্গে ভুবনের অবস্থার অবনতি আমাকে আরও বেশি কাবু করে দিচ্ছিল। আমি মনের জোরে সুস্থ থেকে ওর সেবা করার চেষ্টা করছিলাম। আমার জ্বর সেদিন চলে গিয়েছিল। ভুবনের অবস্থা খারাপ। শেষমেশ পিয়ালকে ফোন দিল ভুবন। পিয়াল জানাল কাজের অনেক চাপ, কিন্তু শেষ করে আসবে যত রাতই হোক। আমাকে আমার সহকর্মী দেবারতি দিদি ফোন দিলেন। ‘তোমরা এত অসুস্থ আগে জানাওনি কেন? আহারে, আমি মুম্বাই থেকে এত দূর আসতেও পারছি না।’ আফসোস করছিলেন তিনি। আমি তাঁকে অভয় দিয়ে বললাম প্রার্থনা করতে।

দুপুরে সৌরভ ভাইয়েরা চলে যাওয়ার আগে দেখা করতে এসেছিলেন। আমরা কিছুই খেতে পারছিলাম না বলে সৌরভ ভাই লেক্সাস বিস্কুটের বড় একটা প্যাকেট আর আলুর বিস্কুটের একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে গেলেন, রীতিমতো জোর করে। সঙ্গে সেই সুন্দর বোতলটায় পানি ভরে দোয়া পড়ে ফুঁ দিয়ে গেলেন। পানিটা দুজনে মিলেই খেয়েছিলাম। বোতলে অর্ধেক পানি রয়ে গিয়েছিল। সেটা আবার বাংলাদেশে বয়ে নিয়ে এসেছিলাম।

সকালের দিকে একবার মিলন ভাই দেখা করে খোঁজ নিয়ে গিয়েছিলেন। দুপুরের পর আবার এসেছিলেন অমরদাকে সঙ্গে নিয়ে। অমরদা খুব দুঃখ প্রকাশ করছিলেন সময়মতো খোঁজ নিতে পারছিলেন না বলে। আবার গেলে যেন তাঁকে ফোন করি, সে কথাও বললেন। কথায় কথায় জানালেন, তিনি আসলে আমাদের বাংলাদেশেরই নাগরিক। বিগত কয়েক বছর ধরে ভারতের বাসিন্দা। এখন নাকি ভারতেরও নাগরিকত্ব আছে। বাংলাদেশের প্রতি তাঁর যেমন মায়া আছে, আছে অভিমানও কিছুটা। কেন এই অভিমান? অমরদা বলছিলেন, ‘আমার স্ত্রী তখন অন্তঃসত্ত্বা। আমি চাকরি করতাম গ্রামীণ ফোনে। বেশ ভালোই সংসার চলছিল আমাদের। একদিন আমার স্ত্রীর পানি ভেঙে গেল। সঙ্গে প্রচুর রক্ত যাচ্ছিল। বিশ্বাস করেন, আমি এত রক্ত আগে দেখি নাই। দুই হাতে স্ত্রীকে কোলে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে ছুটলাম হাসপাতাল যাব বলে। সিঁড়ির গায়ে রক্ত গড়াচ্ছিল। আমি অসহায়ের মতো নামছিলাম। দেরি হয়ে যাচ্ছিল, কারণ তখন আমার স্ত্রীর শরীর অনেক ভারী হয়ে গিয়েছিল। ওঁকে নিয়ে ঠিকমতো চলতে পারছিলাম না। শেষ পর্যন্ত হাসপাতাল পৌঁছালে চিকিৎসকেরা জানালেন মা অথবা বাচ্চা যেকোনো একজনকে বাঁচাতে হবে। এসব তো সিনেমায় দেখতাম রে ভাই। আমি বললাম, আমার বাচ্চার দরকার নাই। আমার স্ত্রীকে বাঁচান। আমার স্ত্রী বেঁচে যায়। কিন্তু তাঁদের কিছু ভুল চিকিৎসার কারণে পরে আবারও আমার স্ত্রীকে অনেক অসুস্থ হয়ে যেতে হয়। তাই অভিমান করে দেশ, চাকরি ছেড়ে চলে আসি ভারতে। এখানে এসে স্ত্রীর চিকিৎসা করালাম। এবার সেটা সঠিক হলো। ডাক্তাররাও ভালো। আমি এদিকে এসে শুরু করলাম ট্যুরিস্ট গাইডের কাজ। কাজটা আমি আনন্দ নিয়ে করি। খারাপ লাগে না। প্রতিদিন নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়। একেক জন একেক রকম। কিন্তু কেউ খুব অপমান করলেও সহ্য করে থাকি। আমাদের সহ্য করে থাকতে হয়। এ কাজে রেগে গেলে হেরে যেতে হবে। বিনয়ী হতে হয়। এখন আমার একটা মেয়ে আছে। সুখেই আছি। জীবন মন্দ না।’ বলতে বলতে অমরদার চোখ ভিজে আসছিল। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল, তিনি বাংলাদেশকে খুব মনে করেন, ভালোবাসেন। কিন্তু ওই যে অভিমান। দেশে তাঁর আত্মীয়স্বজন আছে। সময় পেলে বেড়াতে যান।

অমরদার যাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছিল। ভুবন অনুরোধ করল, ‘দাদা আমাকে একটু আনারসের জুস এনে দেবেন, যদি কিছু মনে না করেন! আমরা তো বাইরে যেতে পারছি না।’ অমরদা খুশি হয়ে বললেন, ‘কেন দেব না? জ্বরের মুখে আনারস তো খুব ভালো। আমি এক্ষুনি এনে দিচ্ছি।’ বলে তিনি বের হয়ে গেলেন। দুই লিটারের পানির বোতলে আনারসের জুস নিয়ে দুলতে দুলতে ফিরে এলেন কিছুক্ষণ পর। এতগুলো! কে খেয়ে শেষ করবে? আর এই রাতটাই তো হাতে আছে আমাদের। পরদিন দেশে ফিরে যাব। কিন্তু অমরদা বারবার বলছিলেন, ‘ভাই, আপনারা সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত দয়া করে যাবেন না। আপনার শরীর তো বেশি খারাপ।’ কিন্তু ভুবন নাছোড়বান্দা। পারলে সেদিনই ফিরে আসে। ওর এক কথা, ‘দেশে গেলেই সুস্থ হয়ে যাব।’ সময় আর শরীরের চিন্তা করে আমরা বিমানযাত্রার খোঁজ খবর নিলাম। কিন্তু নাহ, বিমানে ভ্রমণের মতো বাজেট আমাদের ছিল না। কারণ আমাদের প্রস্তুতি ছিল বাসে ভ্রমণ করার। সেদিন ফিরে আসার মতো কোনো সুযোগ ছিল না। অমরদা খোঁজ করে দিয়েছিলেন।

অমরদা চলে যাওয়ার কিছু সময় পর দেবারতি দিদির বড় ভাই ফোন দিলেন। জানতে চাইলেন আমরা কোন হোটেলের কত নম্বর কক্ষে আছি। কিছুক্ষণের মধ্যে কিংশুকদা চলেও এলেন। তিনি অজানা দেশের অচেনা মানুষ হয়েও খুব বিনয়ের সঙ্গে আমাদের খোঁজ নিয়েছেন। দেখা করতে গিয়েছেন। এমনকি পরদিন বাসে তুলে বিদায়ও জানিয়েছেন। সবচেয়ে বড় উপকার করেছেন সেদিন ভুবনকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়ে। দাদা ওকে দেখেই বলছিলেন, ‘আপনার তো খুব বেশি খারাপ অবস্থা। ডাক্তার না দেখালেই নয়। এখানে নিচেই একটা ওষুধের দোকানে ডাক্তার বসেন। জরুরি অবস্থায় তাঁকে আগে দেখিয়ে নিন।’ ডাক্তার আসবেন সন্ধ্যার পর। ৭টার দিকে। ততক্ষণে কিংশুকদাকে চা খাওয়ালাম। বিস্কুট খেতে চাইলেন না। তবে সৌরভ ভাইয়ের দেওয়া লেক্সাস বিস্কুটের পুরো প্যাকেটটাই দাদাকে যাওয়ার সময় উপহার হিসেবে দিয়ে দিলাম। আসলে মাথায় ছিল না। উচিত ছিল তাঁর জন্য বাংলাদেশ থেকে কিছু উপহার কিনে নিয়ে যাওয়া। কিংশুকদা কথায় কথায় বলছিলেন, ‘আপনাদের দেশের বিস্কুট তো খুব ভালো।’ তাই বিস্কুটের প্যাকেটটা দাদাকে দিয়ে দিলাম। দাদা গল্প করলেন তাঁর স্ত্রী-কন্যাকে নিয়ে, স্থানীয় রাজনীতি নিয়ে আর বোনকে নিয়ে। একদম যেন আমার ভাইয়ের মতো। খুব শ্রদ্ধা হলো। দেবারতি দিদিও আগে বলেছিলেন তাঁর দাদা তাঁকে কতটা ভালোবাসেন। পরিবারের সবাই যখন দিদির সাংবাদিকতায় লেখাপড়ার ইচ্ছার বিরুদ্ধে, তখন এই বড় ভাই তাঁর পাশে ছিলেন। সবাইকে অনেক কষ্টে রাজি করিয়ে বোনকে ভর্তি করিয়েছিলেন সাংবাদিকতা বিষয়ে। বোন এখন অন্য দেশের স্বনামধন্য পত্রিকার সাংবাদিক। নিজ দেশের প্রতিনিধি। এই অর্জনে বড় ভাই যারপরনাই খুশি। কিংশুকদার কথা শুনতে শুনতে আমার নিজের বড় ভাইয়ের কথা মনে পড়ে গেল। ভাইয়াও তো সবাইকে রাজি করিয়ে আমার ইচ্ছামতো পড়াশোনা করিয়েছেন। নিজ সন্তানের মতো লালনপালন করেছেন। আমার চোখ ধরে আসছিল এসব কথা ভেবে।

৭টা বাজার আগেই কিংশুকদা নিচে নেমে গেলেন। বলে গেলেন, ‘ডাক্তার এলে আমি ফোন দিচ্ছি। আপনারা নিচে নেমে আসবেন তখন।’ কয়েক মিনিট পর দাদা ফোন দিয়ে জানালেন ডাক্তার চলে এসেছেন। ভুবন ঠিকমতো উঠে দাঁড়াতে পারছিল না। হাঁটবে কী করে? আমি সেদিন ওর চেয়ে সুস্থ ছিলাম। ও আমার কাঁধে ভর দিয়ে হেঁটেছিল। হোটেল থেকে বের হয়ে হাতের বাঁ দিকে কয়েক কদম হাঁটলেই ওই ওষুধের দোকান। কিংশুকদা পথ দেখিয়ে নিয়ে গেলেন। দোকানের ভেতরের দিকে ছোট্ট একটা খুপরি। সেখানে ছোট একটা টেবিল বিছিয়ে বসেছেন ডাক্তার। তাঁর উল্টো পাশে দুটো চেয়ার। কিংশুকদা বসতে চাইলেন না। দরজার দিকে আমাদের পেছনে দাঁড়িয়ে রইলেন। দুটো চেয়ারে আমরা দুজনে বসলাম। ডাক্তার মশাইকে ভুবনের রোগের ইতিহাস বললাম। কী কী ওষুধ খাওয়া হয়েছে সেটাও জিজ্ঞেস করলেন। জানার পর ভ্রু কুচকে বললেন, ‘ডায়াবেটিসের রোগীর এসব ওষুধে তো কাজ হবে না। আমি ওষুধ লিখে দিচ্ছি, সেটা আশা করি দ্রুত কাজ করবে।’ সত্যিই কাজ হয়েছিল। সেদিন রাতে আর পরদিন সকালে খাওয়ার পর ভুবন প্রায় সুস্থ হয়ে উঠছিল।

ওষুধ কেনা হয়ে গেলে কিংশুকদা সেখান থেকেই বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। আমরা হোটেলে চলে গেলাম। আমি আমার দুর্বল দেহ আর শক্ত মন নিয়ে আমাদের ব্যাগ গুছিয়ে ফেললাম ওই রাতে। খুব খুশি লাগছিল পরদিন বাড়ি ফিরব বলে। ভুবনের মতো আমারও মনে হচ্ছিল বাড়ি ফিরে গেলেই আমরা সুস্থ হয়ে যাব। এদিকে দেশে কাউকে জানাইনি আমাদের দুরবস্থার কথা। নইলে দুশ্চিন্তায় আধমরা হয়ে থাকবে সবাই!

বাড়ি যাওয়ার উত্তেজনায় রাতের বেশ খানিকটা সময় বিছানায় শুয়ে এপাশ-ওপাশ করছিলাম। পরিকল্পনার অনেক কিছু বাকি ছিল। জুতা কেনা হলো না, গ্যাংটক ঘোরা হলো না, শিলিগুড়ি ঘোরা হলো না, বাবার জন্য দার্জিলিংয়ের গ্রিন টি কেনা হলো না। এসব আফসোস নিয়ে ফিরতে হবে ভাবতে ভাবতে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়লাম।

চলবে...

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

উৎসবের এ মাসে লাল রঙের পোশাকের সঙ্গে যেমন হবে সাজ

ফারিয়া রহমান খান 
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ১৯
লাল রং উৎসব, সাহস ও ভালোবাসার প্রতীক। ছবি: পেক্সেলস
লাল রং উৎসব, সাহস ও ভালোবাসার প্রতীক। ছবি: পেক্সেলস

ডিসেম্বরের শুরু থেকে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান লেগেই থাকে। বিয়ে, বড়দিন, বছর শেষের আয়োজন, বারবিকিউ পার্টিসহ যেকোনো অনুষ্ঠানে পরে যাওয়ার জন্য লাল রঙের পোশাক অনেকের কাছেই সেরা পছন্দ। লাল রং উৎসব, সাহস ও ভালোবাসার প্রতীক। এই রঙের পোশাক পরলে এমনিতেই উজ্জ্বল দেখায়। তাই এই রঙের পোশাকের সঙ্গে মেকআপ এমন হওয়া জরুরি, যাতে পুরো লুকটা বিগড়ে না যায়।

লাল রঙের পোশাকের সঙ্গে যেভাবে মেকআপ করা যেতে পারে–

লাল পোশাকে ত্বকের খুঁত খুব সহজেই চোখে পড়ে, তাই নিখুঁত বেস তৈরি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার ত্বকের রং ফরসা হলে ফাউন্ডেশনের বদলে টিন্টেড ময়েশ্চারাইজারই যথেষ্ট। তা না হলে ভালো ব্র্যান্ডের কালার কারেক্টর ও মানসম্মত ফাউন্ডেশন ব্যবহার করে ত্বকের দাগ ও অন্যান্য খুঁত ঢেকে ফেলুন। শোভন সাহা, কসমেটোলজিস্ট, স্বত্বাধিকারী, শোভন মেকওভার

ন্যুড গ্লো লুক

লাল পোশাক যেহেতু নিজেই উজ্জ্বল ও আকর্ষণীয়, তাই এর সঙ্গে একটি ভারসাম্যপূর্ণ লুকের জন্য খুব হালকা মেকআপই ভালো মানায়। ভারী ফাউন্ডেশনের বদলে টিন্টেড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে ত্বকের সতেজ ও প্রাকৃতিক আভা বজায় থাকে। গালে হালকা ব্রোঞ্জিং পাউডার ও চোখে ন্যাচারাল আইশ্যাডো ও মাসকারা ব্যবহার করুন। লুকটি সম্পূর্ণ করতে ঠোঁটে দিন শিয়ার লিপজেল বা ন্যুড শেডের লিপস্টিক।

ক্ল্যাসিক রেড-অন-রেড

লাল পোশাকের সঙ্গে একই শেডের লাল লিপস্টিক একটি ক্ল্যাসিক কম্বিনেশন। দিনের সাজে হালকা মেকআপ, ব্রাউন পেনসিল লাইনার ও রোজি রেড ব্লাসন ব্যবহার করুন। রাতের সাজে ফাউন্ডেশন বেস, উইংড আইলাইনার ও ফলস ল্যাশ ব্যবহার করে লুকে আনুন আভিজাত্য।

ওল্ড-স্কুল-গ্ল্যামার লুক

এই লুকের জন্য কন্সিলার ও ফাউন্ডেশন দিয়ে বেস তৈরি করুন। চোখের মেকআপে ন্যাচারাল টোনের আইশ্যাডো দিন, উইং-টিপড লাইনার তৈরি করে মাসকারা ব্যবহার করুন। ঠোঁটে দিন বোল্ড লাল লিপস্টিক বা শিয়ার রেড লিপ গ্লস।

স্মোকি আই

রাতের মেকআপে চোখকে প্রাধান্য দিতে মুখ ও ঠোঁটের সাজে ব্যবহার করুন ন্যুড শেড। বিবি ক্রিম বা টিন্টেড ময়েশ্চারাইজার দিয়ে বেস তৈরি করুন। চোখের সাজে কন্সিলার, পেনসিল ও জেল লাইনারের পরে পাউডার শ্যাডো দিয়ে মেটালিক-স্মোকি একটা লুক তৈরি করুন।

ছবি: পেক্সেলস
ছবি: পেক্সেলস

ফান অ্যান্ড ফ্লার্টি লুক

ক্যাজুয়াল ও ফান লুক পেতে বেস হিসেবে টিন্টেড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। চোখে ন্যুড শ্যাডো ও পেনসিল লাইনার দিন। চোখের মেকআপ ন্যূনতম রেখে ভল্যুমিনাস আইল্যাশ ব্যবহার করুন। গালে হালকা ব্লাসন দিন, তবে হাইলাইট করবেন না। ঠোঁটের জন্য টিন্টেড লিপ গ্লস বা শিয়ার পিংক লিপস্টিকই যথেষ্ট।

ঠোঁট ও নখ

খুব গ্ল্যামারাস লুক না চাইলে বা লুকে ভারসাম্য রাখতে ঠোঁটে সব সময় ন্যুড শেডের লিপস্টিক বা টিন্টেড লিপ গ্লস ব্যবহার করাই ভালো। সাজের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখতে নখের সাজে লাল রঙের নেইল পলিশ এড়িয়ে ন্যুড শেড বা ফ্রেঞ্চ মেনিকিউর বেছে নিতে পারেন, যা একটি ক্ল্যাসিক ও মার্জিত লুক দেবে।

চুল

লাল পোশাকের সঙ্গে চুলের সাজ একেবারেই সাধারণ রাখুন। খুব বেশি জাঁকজমকপূর্ণ খোঁপা বা টাইট কার্ল না করে হালকা কার্ল করা চুল বা খোলা চুল বেছে নিতে পারেন, যা আপনার মুখকে সুন্দরভাবে ফ্রেম করবে। খেয়াল রাখবেন, চুলের সাজ যেন আপনার সাজের মূল আকর্ষণ না হয় বা আপনার মুখমণ্ডল থেকে মনোযোগ সরিয়ে না দেয়। সাধারণ চুলের স্টাইলই আপনার পুরো সাজকে মার্জিত করে মেকআপকে হাইলাইট করবে।

চোখ বা ঠোঁট; যেকোনো একটিকে ফোকাল পয়েন্টে রাখুন

আকর্ষণীয় দেখাতে খুব ভারী মেকআপ বা গাঢ় রং ব্যবহার করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকুন। সাধারণ নিয়ম হিসেবে মুখের সব ফোকাল পয়েন্ট না বেছে, শুধু একটি অংশ হাইলাইট করার কৌশল বেছে নিন। এই একটি ফোকাল পয়েন্ট হতে পারে আপনার চোখ অথবা ঠোঁট; কিন্তু কখনই দুটি একসঙ্গে নয়। এভাবে মেকআপ করলে সহজেই একটি ক্ল্যাসিক ও মার্জিত লুক পাবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রজনন স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পুরুষদের যে ৭টি অভ্যাস বদলানো উচিত

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ২৯
প্রজনন বিশেষজ্ঞদের মতে, ৭টি অভ্যাস পুরুষের উর্বরতা কমিয়ে দিতে পারে। জীবন থেকে এ অভ্যাসগুল বাদ দিতে পারলে প্রজনন স্বাস্থ্য উন্নত হবে। প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি।
প্রজনন বিশেষজ্ঞদের মতে, ৭টি অভ্যাস পুরুষের উর্বরতা কমিয়ে দিতে পারে। জীবন থেকে এ অভ্যাসগুল বাদ দিতে পারলে প্রজনন স্বাস্থ্য উন্নত হবে। প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি।

দাম্পত্য জীবনে সন্তানের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হলে বেশির ভাগ সময় নজর যায় নারীর দিকে। অথচ চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে পুরুষের ভূমিকা সমান গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা কমে আসছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দৈনন্দিন জীবনযাপন, দূষণ, মানসিক চাপ ও অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস এ সমস্যার বড় কারণ।

ভারতের ইয়েলো ফার্টিলিটির প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ঈশা নান্দাল জানিয়েছেন, পুরুষের খাবার, ঘুম, কাজের ধরন, শরীরচর্চা ও বিশ্রামের অভ্যাস সরাসরি প্রভাব ফেলে হরমোনের ভারসাম্য ও শুক্রাণু উৎপাদনে। তাঁর মতে, অনেক সময় ছোট ভুলগুলোই শুক্রাণুর গুণগত মান নষ্ট করে দেয়। সুখবর হচ্ছে, এ ভুলগুলোর বেশির ভাগই পরিবর্তনযোগ্য।

প্রজনন বিশেষজ্ঞদের মতে, ৭টি অভ্যাস পুরুষের উর্বরতা কমিয়ে দিতে পারে।

দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ

মানসিক চাপ বা স্ট্রেস শরীরে কর্টিসল হরমোনের পরিমাণ বাড়ায়। এই হরমোনটি টেস্টোস্টেরন কমিয়ে দেয় এবং শুক্রাণু উৎপাদন ব্যাহত করে। যেহেতু একটি শুক্রাণু তৈরি হতে ৭০-৯০ দিন সময় লাগে, তাই কয়েক মাসের কাজের চাপ বা মানসিক অস্থিরতাও এটি তৈরির প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এ থেকে রক্ষা পেতে বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত ধ্যান, গভীর শ্বাসপ্রশ্বাস, পর্যাপ্ত ঘুম এবং শান্ত পরিবেশে সময় কাটানোর পরামর্শ দেন।

অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার শরীরের কোষের সুরক্ষা দেয় এবং পুরুষের প্রজননক্ষমতা উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে বাদাম, আঙুর, শস্যদানা, সবুজ শাকসবজি, বিভিন্ন ধরনের বীজ ও ফল শুক্রাণুর গুণগত মান, ঘনত্ব ও গতিশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে। এসব খাবারে থাকা ভিটামিন সি, ই, জিংক, সেলেনিয়াম এবং পলিফেনল শরীরের ফ্রি র‍্যাডিক্যাল কমিয়ে শুক্রাণুকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। অন্যদিকে অতিরিক্ত কফি খাওয়া, নিয়মিত জাংকফুড, মিষ্টি নাশতা বা অত্যধিক চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া শরীরে প্রদাহ বাড়ায় এবং হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। এসব খাবার শুক্রাণুর গতিশীলতা কমিয়ে দেয়, শক্তি কেড়ে নেয় এবং কখনো কখনো শুক্রাণুর সংখ্যা কমিয়ে দিতে পারে।

অতিরিক্ত তাপ ও অতিরিক্ত ব্যায়াম

শুক্রাণু তাপ সংবেদনশীল। কোলে ল্যাপটপ রাখা, খুব আঁটসাঁট পোশাক, গাড়ির গরম সিট, স্টিম বাথ টেস্টিকলের তাপমাত্রা বাড়িয়ে শুক্রাণু উৎপাদনে বাধা দেয়। আবার হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম উপকারী হলেও অতিরিক্ত ব্যায়াম শরীরের স্বাভাবিক টেস্টোস্টেরন কমিয়ে দেয়, ফলে শুক্রাণু উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

ধূমপান, অ্যালকোহল ও নেশাজাতীয় দ্রব্য

ডা. নান্দাল জানান, তামাক, অ্যালকোহল ও মাদকদ্রব্য শুক্রাণুর আকার, সংখ্যা ও গতিশীলতা নষ্ট করে। এমনকি মাঝেমধ্যে ব্যবহারেরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব অভ্যাস কমানো বা সম্পূর্ণ বাদ দিলে কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাসের মধ্যেই শুক্রাণু তৈরির অবস্থা উন্নত হয়।

স্বাস্থ্য সমস্যা উপেক্ষা করা

ভ্যারিকোসিল, ডায়াবেটিস, স্থূলতা, দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ ও থাইরয়েড সমস্যা থাকলে অনেক সময় লক্ষণ দেখা দেওয়া ছাড়াই পুরুষের শুক্রাণু কমে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। অনেক পুরুষ প্রকৃতিগত কারণেই এসব শারীরিক সমস্যাকে ছোট মনে করে বা দেরিতে চিকিৎসা নেয়। কিন্তু এসব সমস্যার শুরুতে পরীক্ষা, দ্রুত নির্ণয় ও চিকিৎসা সন্তান গ্রহণের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।

পরিবেশগত দূষণ ও রাসায়নিকের প্রভাব

কীটনাশক, ভারী ধাতু, প্লাস্টিকের রাসায়নিক, বায়ুদূষণ ও শিল্পকারখানার রাসায়নিক শুক্রাণুর গুণগত মান নষ্ট করে। যদিও পুরোপুরি এড়ানো যায় না, তবে বিপিএ মুক্ত বোতল, জৈব খাবার বা কম রাসায়নিকযুক্ত বিকল্প ব্যবহার করলে এ ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।

আগে থেকেই বীর্য পরীক্ষা না করানো

আগে বীর্য পরীক্ষা সাধারণত শেষ ধাপ হিসেবে ধরা হতো। এখন চিকিৎসকেরা পরিবার গঠনের পরিকল্পনা থাকলে পুরুষদের আগেই পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন। সহজ ও ব্যথামুক্ত এই পরীক্ষায় পুরুষের প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় এবং সমস্যা থাকলে দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব হয়।

সুষম খাদ্য, পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক চাপ কমানো, ধূমপান ও অ্যালকোহল ত্যাগ, পরিবেশগত বিষাক্ততা কমানো এবং সময়মতো স্বাস্থ্য পরীক্ষা এসবই পুরুষদের উর্বরতা ভালো রাখতে বড় ভূমিকা রাখে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সন্তান নেওয়ার আগে পুরুষের স্বাস্থ্যকে সমান গুরুত্ব দিলে দীর্ঘমেয়াদি প্রজনন স্বাস্থ্য আরও শক্তিশালী হয়।

সূত্র: হেলথশট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের রাশিফল: বহু যত্নে লালিত স্বপ্ন সত্যি হবে, সাবধানে মুখ খুলুন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৪৯
আজকের রাশিফল: বহু যত্নে লালিত স্বপ্ন সত্যি হবে, সাবধানে মুখ খুলুন

মেষ

আজ আপনার শরীরে এত বেশি এনার্জি থাকবে যে ভুলবশত বাড়ির সব ইলেকট্রনিক জিনিসপত্র চার্জ করার চেষ্টা করতে পারেন। সকালে ঘুম থেকে উঠেই মনে হবে, আপনি একজন সুপারহিরো, যার হাতে এখনো কোনো মিশন নেই। এই এনার্জি দিয়ে হয়তো অফিসের বসের দেওয়া এক মাসের কাজ মাত্র দুই ঘণ্টায় শেষ করে ফেলবেন, কিন্তু তারপরে কী করবেন? বাকি ছয় ঘণ্টা সহকর্মীদের বিরক্ত করে কাটাবেন। মনে রাখবেন, অতিরিক্ত উৎসাহে আজ এমন কিছু করার চেষ্টা করবেন না, যাতে প্রতিবেশী আপনাকে দেখে দরজা বন্ধ করে দেয়। প্রেমের ক্ষেত্রে প্রিয়জনকে ইমপ্রেস করতে গিয়ে এমন কিছু বলে ফেলবেন, যা গুগলেও খুঁজে পাওয়া যায় না। অতিরিক্ত শক্তি কাজে লাগিয়ে আজ অন্তত একটা পুরোনো বাক্স গুছিয়ে ফেলুন। বাকিটা ওপরওয়ালার হাতে!

বৃষ

আপনার জীবনের ‘স্বযত্নলালিত স্বপ্ন’ আজ সত্যি হতে পারে! আর সেই স্বপ্নটি হলো, সারা দিন সোফায় শুয়ে থাকা এবং প্রিয় খাবার ডেলিভারি নেওয়া। আজ এমন এক গভীর আলস্যের জালে জড়িয়ে পড়বেন যে, রিমোট কন্ট্রোলটা হাত থেকে পড়ে গেলে সেটা তোলার জন্য কাউকে ফোন করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। কর্মক্ষেত্রে কাজের গতি হবে কচ্ছপের থেকেও ধীর। সহকর্মীরা ভাববে, আপনি হয়তো ধ্যানের নতুন কোনো উচ্চস্তরে পৌঁছে গেছেন। অর্থের দিক থেকে আজ এমন কিছু ডিসকাউন্ট খুঁজতে গিয়ে মূল্যবান সময় নষ্ট করবেন, যা আসলে অস্তিত্বহীন। আজ যদি কেউ আপনাকে তাড়াহুড়ো করতে বলে, মনে মনে বলুন: ‘আমি বৃষ, তাড়াহুড়ো আমার ডিকশনারিতে নেই। ওটা অন্য কোনো রাশির জন্য।’

মিথুন

আপনার ভেতরের দুটি মানুষ আজ সকাল থেকে প্রচণ্ড তর্কে লিপ্ত থাকবে। একজন বলবে, ‘আজ আমি পৃথিবীকে জয় করব!’ অন্যজন বলবে, ‘আরে বাবা, আগে ঠিক করো কোন রঙের মোজাটা পরবে!’ আপনি কোনো একটি বিষয়ে স্থির হতে পারবেন না। কফি না চা? লাল শার্ট না নীল? এই দ্বিধায় পুরো দিন কেটে যাবে। এমন কারও অভাব অনুভব করবেন, যে আপনার সব দ্বিমুখী সিদ্ধান্তকে একমুখী করে দিতে পারে। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপনি আজ চূড়ান্ত জনপ্রিয়। এত বেশি মেসেজ আসবে যে ফোন চার্জে দিয়েই আপনি হয়তো চার্জার খুঁজে পাবেন না। আজ একটি মাত্র কাজ করুন: স্থির থাকুন। যদি না পারেন, তাহলে একটি কয়েন টস করুন এবং টস হওয়ার আগেই সেই সিদ্ধান্তকে মেনে নিন।

কর্কট

আজ আপনার মন অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ। যেকোনো তুচ্ছ ঘটনাতেই চোখে পানি চলে আসতে পারে। হয়তো দেখবেন, ফ্রিজে শেষ রুটিটা দেখে অতীতের সব দুঃখ মনে পড়ে যাচ্ছে। মনে হবে, পৃথিবীর সবচেয়ে আরামদায়ক স্থান হলো ঘর। তাই আজ ঘর থেকে বের হতে চাইবেন না। যদি বের হতে হয়, তাহলে একটা বালিশ আর কম্বল সঙ্গে নিয়ে নিন—কে জানে কখন কোথায় একটু আবেগ নিয়ে বসা দরকার হয়! পরিবারকে নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করবেন। বিশেষত, বাড়ির পোষা প্রাণীটি ঠিকমতো খাচ্ছে কিনা, সেটা নিয়ে আজ গবেষণা করতে পারেন। আজ অতীতের স্মৃতি রোমন্থন করতে পারেন। তবে পুরোনো বিল বা ফাইনাল পরীক্ষার খাতা দেখলে চোখ মুছতে টিস্যু পেপার হাতের কাছে রাখুন।

সিংহ

আজ যা কিছু করবেন, তাতেই আপনার লাইমলাইট চাই। ধরুন, অফিসে এক গ্লাস পানি খেলেন, আপনার মনে হবে সেটা একটা প্রেস কনফারেন্সের যোগ্য ইভেন্ট। যদি কেউ আপনার দিকে না তাকায়, তাহলে নিজেই জোরে জোরে নিজের প্রশংসা শুরু করে দেবেন। আপনার মনে হবে, আপনার প্রতিটি পদক্ষেপই বুঝি ইতিহাস তৈরি করছে। প্রেমের ক্ষেত্রে, পার্টনার আপনার প্রশংসা না করলে আপনি হয়তো সাময়িক ধর্মঘট শুরু করে দিতে পারেন। সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে গেলে বিল দেওয়ার সময় এমন নাটকীয় ভঙ্গিতে মানিব্যাগ বের করবেন, যাতে মনে হয় আপনি পুরো গ্যালাক্সির দেনা মেটাচ্ছেন। সবার মনোযোগ পেতে আজ আপনি যা-ই করুন না কেন, শেষমেশ দেখবেন বাড়ির কুকুরটাই সবচেয়ে বেশি করতালি পাচ্ছে। সেটা মেনে নিন।

কন্যা

আজ আপনার মস্তিষ্ক একটি হাইপার-অ্যাকটিভ স্প্রেডশিটের মতো চলবে। আপনার প্রধান চিন্তা হবে, বালিশের কভারটি আর টেবিলের কোণটা একই সমান্তরালে আছে কি না। কাজের জায়গায় সহকর্মীর কফির মগে কতটুকু চিনি বেশি আছে, সেটা বের করে ফেলবেন। আর সেই খুঁত নিয়েই আপনি আজ একটি বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি করে ফেলবেন। যদি দেখেন কোনো কিছু নিখুঁত নয়, তাহলে মেজাজ সপ্তমে উঠবে। দুশ্চিন্তা করবেন না, আজকের দিনের সবচেয়ে বড় ভুলটি হয়তো আপনিই করবেন, সঠিকটা করতে গিয়ে ভুলটা করে ফেলবেন! আজ দয়া করে নিজের চুল গুনতে শুরু করবেন না। আজ অন্তত একবার একটা ভুল করুন। স্বাধীনতা উপভোগ করুন!

তুলা

ন্যায়, ভারসাম্য এবং সৌন্দর্যের পূজারি আপনি আজ একটি কঠিন পরীক্ষায় পড়বেন। আপনাকে হয়তো ঠিক করতে হবে, দুপুরে ভাত খাবেন নাকি রুটি! এই নিয়েই অন্তত এক ঘণ্টা ভাববেন এবং শেষমেশ দুটোই খেয়ে ফেলবেন। কর্মক্ষেত্রে দুটি সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী মতের সঙ্গে সহমত হবেন, আর এতে সহকর্মীরা আপনাকে ‘ডাবল এজেন্ট’ ভাবতে পারে। প্রেমের ক্ষেত্রে পার্টনারের সামান্যতম অভিযোগ শুনেই এত বেশি ভারসাম্য আনতে চাইবেন যে সম্পর্কটা দড়ির ওপর হাঁটা সার্কাসের মতো মনে হবে। কোনো জটিল সিদ্ধান্ত এলে আজ শুধু একটা জিনিস ভাবুন: যেটাতে আপনার সবচেয়ে কম কষ্ট হবে। ব্যস! ব্যালেন্স নিজের থেকেই চলে আসবে।

বৃশ্চিক

আজ মন গভীর ষড়যন্ত্রে ব্যস্ত থাকবে। হয়তো ভাববেন, পাশের ডেস্কের সহকর্মী কেন আজ আপনার দিকে একটু বেশি হেসেছেন? এর পেছনে নিশ্চয়ই কোনো গভীর রহস্য আছে! সারা দিন ধরে সেই রহস্য উন্মোচনের চেষ্টা করবেন, যা আসলে সামান্য দাঁত ব্রাশ করার পরের হাসি। তীব্র মনোযোগ আজ আপনাকে অনেক জটিল সমস্যার সমাধান দেবে, কিন্তু সেটা কাউকে বুঝতে দেবেন না। মনে রাখবেন, আপনার নীরবতা আজ একটি পারমাণবিক বোমার চেয়েও শক্তিশালী। লোকে ভাববে আপনি ধ্যান করছেন, কিন্তু আসলে ভাবছেন, কীভাবে প্রতিদ্বন্দ্বীর চায়ে লবণ মিশিয়ে দেবেন। কাউকে কিছু বলবেন না। নীরবতা আজ স্বর্ণময়। সেটা জমিয়ে রাখুন।

ধনু

আজ মন চঞ্চল, আজ বাড়ি ছেড়ে পালানোর পরিকল্পনা করতে পারেন। হয়তো অফিস থেকে সোজা হিমালয় বা চাঁদে চলে যাওয়ার টিকিট খুঁজতে থাকবেন। আপনার ফিলোসফিক্যাল রগ আজ এত বেশি চড়ে থাকবে যে, ট্রাফিক জ্যাম নিয়ে মহাজাগতিক সত্য আবিষ্কার করতে পারেন। আপনার অতি-সৎ কথাগুলো আজ কারও না কারও মন খারাপ করবে। হয়তো বলবেন, ‘তোমাকে এই শাড়িতে এত মোটা লাগছে না, যতটা গত সপ্তাহে লাগছিল।’ এই রাশিফল পড়ার সময়ও আপনি ভাবছেন, এটার কোথাও কোনো বানান ভুল আছে কি না। আজ মুখটা সাবধানে ব্যবহার করুন। বিশেষত যদি কোনো গুরুত্বপূর্ণ মিটিং থাকে, তাহলে কথা বলার আগে তিনবার কফি খান।

মকর

আজ আপনি বিশ্বের সবচেয়ে সফল এবং গম্ভীর মানুষ। মনে করবেন, পৃথিবীর সব দায়িত্ব আপনার কাঁধেই। আপনার প্রধান শখ হবে অন্যদের হাসতে দেখে বিরক্ত হওয়া। ভাববেন, ‘এরা এত হাসছে কেন? কাজের ডেডলাইন তো এখনো বাকি!’ আপনার মনে হবে, আপনি যদি এক ঘণ্টা ঘুমিয়ে নেন, তাহলে দেশের অর্থনীতিতে তার প্রভাব পড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে, পার্টনারকে ইমপ্রেস করতে কোনো রোমান্টিক ডিনার বা উপহার না দিয়ে, বরং একটি সুন্দর এক্সেল শিট তৈরি করে দেবেন, যেখানে আপনাদের সম্পর্কের আগামী ১০ বছরের লক্ষ্য লেখা থাকবে। আজকের দিনটি একটু আরাম করুন। না করলে মস্তিষ্ক আপনাকে মনে করিয়ে দেবে যে আপনার দাঁত ব্রাশ করা বাকি এবং এই ভুলটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

কুম্ভ

আজ এমন একটি অদ্ভুত আইডিয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন, যা পৃথিবীর বাকি ১১টা রাশি কখনোই বুঝবে না। হয়তো ঠিক করবেন, প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে কীভাবে বিশ্বশান্তি আনা যায়, অথবা কেন সব শার্টে তিনটি করে কলার থাকা উচিত। আপনার সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্টগুলো আজ খুবই বৈপ্লবিক হবে, কিন্তু বন্ধুরা হয়তো ভাববে আপনার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। কেউ আপনার কথা বুঝতে না পারলে আরও খুশি হবেন—কারণ জানেন আপনি কতটা এগিয়ে! প্রেম নিয়ে ভাবনা হবে, কেন এই ‘সামাজিক বন্ধন’-এর প্রয়োজন, যেখানে দুজন মানুষ শুধু নিজেদের মধ্যে একটি ইমোজি বিনিময় করেও দিব্যি থাকতে পারে। পরামর্শ: আপনার আইডিয়াগুলো খুব ভালো। কিন্তু আজ দয়া করে আপনার আইডিয়াগুলো দিয়ে পোষা প্রাণীটির ওপর কোনো পরীক্ষা করবেন না।

মীন

আজ বাস্তবের ধারেকাছেও থাকবেন না। দিনের বেশির ভাগ সময় এমন এক কল্পনার জগতে ভেসে বেড়াবেন, যেখানে আপনার সব বিল পরিশোধ হয়ে গেছে এবং পোষা মাছটা কথা বলতে পারে। কাজের জায়গায় ভুলবশত সহকর্মীকে ‘আমার স্বপ্নে দেখা রাজকুমার/রাজকুমারী’ বলে ডাকতে পারেন। মনে হবে, জীবন একটি হিন্দি সিনেমা, আর আপনি তার হিরো/হিরোইন। যদি কিছু ভুলে যান, যেমন চাবি বা মানিব্যাগ, তার জন্য গ্রহদের দোষ দেবেন। সন্ধ্যায়, হয়তো এত বেশি সহানুভূতিশীল হয়ে উঠবেন যে টিভির সিরিয়ালের ভিলেনের দুঃখেও চোখে পানি চলে আসবে। আজ চোখ খুলে হাঁটুন। আর যদি চারপাশের মানুষ আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করে, তাহলে চোখ বন্ধ করে শুধু ‘হুম’ বলে দিন। নিরাপদ থাকবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কাজুবাদাম দিয়ে গরুর মাংসের ঝাল রসা

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
কাজুবাদাম দিয়ে গরুর মাংসের ঝাল রসা।
কাজুবাদাম দিয়ে গরুর মাংসের ঝাল রসা।

ডিসেম্বরের ছুটির দিন খানিকটা আলাদা তো বটেই। এমন শীতের দুপুরে জমিয়ে খাওয়াদাওয়া না হলে চলে? শিশুদের স্কুল ছুটি বলে দিনগুলোও থাকে চাপমুক্ত। তাই ছুটির দিনে একটু বেশি সময় নিয়ে মজাদার খাবার তৈরিতে মেতে উঠতে মায়েদের কোনো বাধা নেই। পোলাওয়ের সঙ্গে গরুর মাংসের আলু ঝোল না করে একটু ভিন্নভাবে মাংসটা রেঁধে ফেলুন না! আপনাদের জন্য কাজুবাদাম দিয়ে গরুর মাংসের ঝাল রসার রেসিপি ও ছবি পাঠিয়েছেন রন্ধনশিল্পী আফরোজা খানম মুক্তা

উপকরণ

গরুর মাংস ১ কেজি, আদা ও রসুন বাটা ২ টেবিল চামচ, টক দই আধা কাপ, পেঁয়াজ বাটা ২ টেবিল চামচ, গরম মসলা গুঁড়া ১ চা-চামচ, মরিচ গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, তেজপাতা ২ পিস, কাজুবাদাম বাটা ১ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, কাঁচা মরিচ ফালি ৮ থেকে ১০টি, বেরেস্তা আধা কাপ, লবণ স্বাদমতো, সয়াবিন তেল আধা কাপ।

প্রণালি

গরুর মাংস টক দই এবং সব বাটা ও গুঁড়া মসলা দিয়ে মাখিয়ে ঢেকে রাখুন ২ থেকে ৩ ঘণ্টা। কড়াইয়ে সয়াবিন তেল গরম করে পেঁয়াজ কুচি হালকা বাদামি করে ভেজে তাতে মাখানো মাংস দিয়ে দিন। তারপর ভালোভাবে নেড়ে অল্প আঁচে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রান্না করে ঢাকনা দিয়ে দিন। এবার ঢাকনা খুলে মাংস ভালোভাবে কষান। যদি মাংস সেদ্ধ না হয়, তবে সামান্য পানি দিন। মাংসের ওপর তেল ভেসে উঠলে কাঁচা মরিচ ফালি ও পেঁয়াজ বেরেস্তা দিয়ে দমে রাখুন ১০ থেকে ১৫ মিনিট। ব্যস, রান্না হয়ে গেল কাজুবাদাম দিয়ে গরুর মাংসের ঝাল রসা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত