Ajker Patrika

ফাস্ট ফুড খান, গল্পটা জানেন তো?

কাশফিয়া আলম ঝিলিক, ঢাকা 
পৃথিবীতে ফাস্ট ফুডের অস্তিত্বকে যেমন অস্বীকার করা যায় না, তেমনি এর নেতিবাচকতাকেও। ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি
পৃথিবীতে ফাস্ট ফুডের অস্তিত্বকে যেমন অস্বীকার করা যায় না, তেমনি এর নেতিবাচকতাকেও। ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি

বার্গার, পিৎজা, চিকেন ফ্রাই; অর্থাৎ ফাস্ট ফুড নামে পরিচিত খাবারগুলো ছাড়া পৃথিবীর কথা চিন্তা করলে সবকিছু পানসে লাগতে থাকবে। তাই তো? অথচ এগুলোর বিরুদ্ধে সারাক্ষণ নানান কথা শুনতে হয় আমাদের। হ্যাঁ, পৃথিবীতে ফাস্ট ফুডের অস্তিত্বকে যেমন অস্বীকার করা যায় না, তেমনি এর নেতিবাচকতাকেও। এটাই বাস্তব আসলে। এটা সেই ‘জেনেশুনে বিষ পান’ করার মতো অবস্থা।

কিন্তু স্বীকার করতে হবে, ফাস্ট ফুড নামে পরিচিত খাবারগুলো তাদের ইতি ও নেতি—উভয় বাচকতা দিয়ে পৃথিবী জয় করেছে। হয়ে উঠেছে আধুনিক জীবনের সঙ্গী। তাই এর পেছনের গল্পগুলো এখনো আমাদের টানে। সেই গল্পই আজ।

জানেন কি, মিল্কশেক প্রথমে ছিল হুইস্কি আর ডিম দিয়ে তৈরি এক ‘স্বাস্থ্যকর পানীয়’! এরপর এক আমেরিকান তাতে ওয়ালগ্রিনস আইসক্রিম মেশানো শুরু করলেন। তারপর তৈরি হলো আজকের দারুণ সব শেক। আর আমরা তাতে মজে রইলাম। এদিকে অনিয়ন রিং মানে পেঁয়াজের আংটিও নতুন কোনো খাবার নয়। এর ধারণা পাওয়া যায় সেই ১৮ শতকে। বর্তমানের জনপ্রিয় আরেক খাবার টাকোজ কীভাবে এসেছে জানেন? এর ধারণা এসেছে মেক্সিকান খনিশ্রমিকদের খাবারের অভ্যাস থেকে। তাঁরা রুটির সঙ্গে মাংসের সহজ খাবার হিসেবে যা খেতেন, সেখানে থেকে টাকোজের আইডিয়া এসেছে; যা আজ হয়ে গেছে গ্লোবাল ট্রেন্ড।

বার্গারের জন্মগাথা

বনরুটির ভেতর এ এক আলাদা সাম্রাজ্য! সেই সাম্রাজ্যে থাকে মুরগি, গরু বা সবজির পেটি। থাকে হরেক রকম সস, ঝাল, পেঁয়াজ, লেটুসপাতা—আরও কত কী! কিন্তু আজকের দিনে দাঁড়িয়ে আমরা যে ধরনের বার্গার খাই, সেটা কি শুরু থেকে এমন ছিল? উত্তর হলো—না।

আজকের বার্গার  এসেছে অনেক যুগের পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে। ছবি: পেক্সেলস
আজকের বার্গার এসেছে অনেক যুগের পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে। ছবি: পেক্সেলস

আজকের বার্গার আসলে অনেক যুগের পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে এসেছে। কেউ বলে, মঙ্গল যোদ্ধারা ঘোড়ার নিচে রেখে মাংস নরম করত, সেটিই হয়েছে বার্গারের পেটি। কেউ আবার রোমানদের প্যাটির কথা বলেন। তবে ‘হ্যামবার্গ স্টেক’ নামে জার্মানরা যে মাংসের প্যাটি তৈরি করত, সেটিই আমেরিকায় এসে হয়ে ওঠে ‘হ্যাম বার্গার’। ১৯০০ সালে কানেটিকাটের এক ছোট্ট রেস্টুরেন্টের পাটক লুইস লাসেন নাকি প্রথমবার গ্রাউন্ড বিফের প্যাটিকে দুই টুকরো পাউরুটির মাঝে পুরে দিয়েছিলেন। সেই থেকে শুরু এর যাত্রা। বাকিটা তো ইতিহাসই!

ল্যাব থেকে প্লেটে চিকেন নাগেটস

চিকেন নাগেটস কিন্তু মোটেও প্রাচীন খাবার নয়। ১৯৬৩ সালে রবার্ট সি. বেকার নামে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক নিজের ল্যাবে তৈরি করেন মুরগির সোনালি টুকরাগুলো। এরপর আশির দশকে ম্যাকডোনাল্ডস একে বাজারে আনে। তখন থেকে চিকেন নাগেটস আমাদের হৃদয়ে রাজত্ব করে আসছে। সেই ল্যাবে তৈরি খাবারটি এখন পৃথিবীর যেকোনো দেশের গলিতেই পাওয়া যায়।

ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে কনি আইল্যান্ড পর্যন্ত

হট ডগ নিয়ে জার্মান ও অস্ট্রিয়ার মধ্যে ‘কালচারাল’ বিতর্ক আছে। কেউ বলে ফ্রাঙ্কফুর্ট, কেউ বলে ভিয়েনা। মানে, এর জন্মভূমি। তবে আমেরিকায় এর যাত্রা শুরু হয় নিউইয়র্কে জার্মান অভিবাসীদের হাত ধরে। কনি আইল্যান্ডে চার্লস ফেল্টম্যান নামের এক ভদ্রলোক নাকি প্রথম হট ডগ বানের ভেতরে পুরে দেন! পরে সেই স্টলেই জন্ম নেয় বিখ্যাত নাথান’স হট ডগ!

ফ্রেঞ্চ ফ্রাই ফরাসি, নাকি বেলজিয়ান

নাম ফ্রেঞ্চ হলেও ইতিহাস বলছে, বেলজিয়ামের দিকে জন্ম ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের। বেলজিয়ামের নামুর শহরে ঠান্ডায় নদী জমে গেলে মানুষ মাছের বদলে আলু ভেজে খাওয়া শুরু করে। সেখান থেকে জন্ম নেয় ফ্রেঞ্চ ফ্রাই। তবে আমেরিকায় এই ফ্রাইয়ের খ্যাতি বাড়ে থমাস জেফারসনের হাত ধরে। তিনি ফ্রান্স থেকে ‘ফ্রেঞ্চ ফ্রাই’য়ের রেসিপি আমদানি করেন। ম্যাকডোনাল্ডস যখন ১৯৪৯ সালে তাদের মেনুতে এই খাবার অন্তর্ভুক্ত করে, তখন থেকে এটি ফাস্ট ফুডের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠে।

আধুনিক পিৎজার জন্ম আঠারো শতকে, ইতালির নেপলস শহরে। ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি।
আধুনিক পিৎজার জন্ম আঠারো শতকে, ইতালির নেপলস শহরে। ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি।

নেপলস থেকে নিউইয়র্কে পিৎজা

প্রাচীন রোমানরা পাউরুটির ওপর টপিং দিত। সেটাকেই কেউ কেউ পিৎজার প্রাথমিক উৎস বলে মনে করেন। তবে আধুনিক পিৎজার জন্ম আঠারো শতকে, ইতালির নেপলস শহরে। সেই দেশের রানি মার্গারিটার জন্য তৈরি হয় টমেটো, মোজারেলা আর তুলসীর এক বিশেষ পিৎজা। যেটি পরে ‘মার্গারিটা পিৎজা’ নামে বিখ্যাত হয়। ইতালিয়ান অভিবাসীরা পিৎজা নিয়ে যায় আমেরিকায়। নিউইয়র্কের লম্বার্ডি’স নামের রেস্টুরেন্ট প্রথম কমার্শিয়াল পিৎজা বিক্রি শুরু করে ১৯০৫ সালে।

মাঝখানে গর্ত, চারদিকে ভালোবাসা

ডোনাটের ইতিহাস শুরু নেদারল্যান্ডস থেকে, অয়েলি কেক নামে। পরে আমেরিকায় গিয়ে হ্যানসন গ্রেগরি নামের এক নাবিক তাঁর মায়ের তৈরি মিষ্টির মাঝখানে গর্ত করে দেয়। বলে, এভাবে ভালো ভাজা যাবে! ১৯২০ সালে নিউইয়র্কে অ্যাডলফ লেভিট প্রথম ডোনাট মেশিন তৈরি করলেন। ক্রিসপি ক্রিম আর ডাঙ্কিন ডোনাটসের যুগে তো আমরা সবাই জানি, ডোনাট মানে শুধু একটা মিষ্টি নয়, এটা অনুভূতি; যার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে এক নাবিক ও তাঁর মায়ের গল্প।

সূত্র: লাভ ফুড

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৩০০ ফুট সড়কে প্রবেশ করেছে তারেক রহমানের গাড়িবহর, কানায় কানায় পূর্ণ চারপাশ

পিরোজপুর-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন সাবেক ভিপি মাহমুদ হোসেন

‎টঙ্গীতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে জুলাই যোদ্ধা তাহরিমা গ্রেপ্তার

বিমানবন্দরে পরিবারের সঙ্গে আবেগাপ্লুত তারেক রহমান

বৃশ্চিক রাশির জাতক তারেক রহমান: আগামী ৭ দিন কেমন যাবে, জ্যোতিষশাস্ত্র কী বলছে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গরম কড়াইয়ে কেন ঠান্ডা পানি ঢালবেন না

ফিচার ডেস্ক
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

কড়াইসহ যেকোনো ধাতব হাঁড়িপাতিল কেন বাঁকা হয়ে যায়, জানেন? এর উত্তর লুকিয়ে আছে ধাতব পাত্রে ঠান্ডা পানি ঢালার অভ্যাসের মধ্যে।

চুলা থেকে নামানো গরম কড়াইয়ে হঠাৎ ঠান্ডা পানি ঢাললে যে শব্দ হয়, অনেকের কাছে তা সাধারণ মনে হতে পারে। কিন্তু বাস্তবে এটি একটি সতর্কবার্তা। আপনার কড়াইটি তখন থার্মাল শকের শিকার হচ্ছে, যা ধীরে ধীরে রান্নার পাত্রের আয়ু কমিয়ে দেয়। অনেক গৃহিণী ও রান্নাপ্রেমী মনে করেন, গরম কাড়াই সরাসরি সিঙ্কে নিয়ে ঠান্ডা পানি ঢাললে পোড়া খাবারের অংশ সহজে উঠে যায়। কিন্তু অল-ক্ল্যাড ও ক্যালফালনের মতো নামকরা কুকওয়্যার ব্রান্ড সতর্ক করে বলছে, এটি কড়াই নষ্ট হওয়ার বড় কারণগুলোর একটি।

থার্মাল শক কীভাবে ক্ষতি করে

ধাতু গরম হলে প্রসারিত হয় এবং ঠান্ডা হলে সংকুচিত হয়। এটি পদার্থবিজ্ঞানের সাধারণ নিয়ম। যখন প্রায় ২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার একটি কড়াই হঠাৎ ঠান্ডা পানির সংস্পর্শে আসে, তখন ধাতব অণুগুলো দ্রুত সংকুচিত হয়। এই হঠাৎ পরিবর্তনই সৃষ্টি করে থার্মাল শক, যা কড়াইয়ের গঠনকে স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

কড়াই বাঁকা হয়ে যাওয়া

থার্মাল শকের সবচেয়ে সাধারণ ফল হলো কড়াই বাঁকা হয়ে যাওয়া। হঠাৎ ঠান্ডায় কড়াইয়ের নিচের অংশ সংকুচিত হয়ে ভাঁজ হয়ে যায়। ফলে কড়াই চুলার ওপর ঠিকভাবে বসে না এবং তাপ সমানভাবে ছড়ায় না। এর ফল হিসেবে রান্নার সময় এক পাশে খাবার পুড়ে যায়, অন্য পাশে ঠিকমতো রান্না হয় না।

নন-স্টিক কড়াই বাড়তি ঝুঁকি

নন-স্টিক কড়াইয়ের ক্ষেত্রে থার্মাল শক আরও বেশি ক্ষতিকর। কারণ, প্যানের ধাতু ও নন-স্টিক কোটিংয়ের প্রসারণ ও সংকোচনের হার এক নয়। হঠাৎ ঠান্ডা হলে কোটিং ফেটে যেতে বা উঠে যেতে পারে। এতে প্যানের নন-স্টিক ক্ষমতা নষ্ট হয় এবং কোটিংয়ের ক্ষুদ্র কণা খাবারের সঙ্গে মিশে যেতে পারে। আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো, ক্ষতিগ্রস্ত নন-স্টিক কোটিং থেকে পিএফএএস জাতীয় ক্ষতিকর রাসায়নিক নির্গত হতে পারে। যেগুলো দীর্ঘ মেয়াদে স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এবং ক্যানসারের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।

ফাটল ধরার ঝুঁকি

কাস্ট আয়রন, স্টোনওয়্যার বা সিরামিক প্যানের ক্ষেত্রে থার্মাল শক কখনো কখনো তাৎক্ষণিক ফাটল ধরাতে পারে। এসব উপাদান স্টেইনলেস স্টিল বা অ্যালুমিনিয়ামের তুলনায় বেশি ভঙ্গুর হওয়ায় হঠাৎ তাপমাত্রা পরিবর্তন সহ্য করতে পারে না।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

কড়াই রক্ষা করার নিয়ম

বিশেষজ্ঞদের মতে, কড়াই ভালো রাখার সহজ নিয়ম হলো ধৈর্য। এ ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে—

রান্না শেষ হলে কড়াইটি চুলার ওপর বা পাশে রেখে স্বাভাবিকভাবে ঠান্ডা হতে দিন।

পুরোপুরি ঠান্ডা হলে তারপর ধুয়ে ফেলুন।

তাড়াহুড়া থাকলে ঠান্ডা পানির বদলে গরম বা কুসুম গরম পানি ব্যবহার করুন, যাতে তাপমাত্রার পার্থক্য কম থাকে।

আরও কিছু সাধারণ ভুল

বিশেষজ্ঞরা আরও কয়েকটি ভুলের কথা উল্লেখ করেন। সেগুলো হলো—

ঠান্ডা পানিতে লবণ দিলে লবণের কণা তলায় জমে স্টেইনলেস স্টিলের পাত্রে ক্ষুদ্র গর্ত তৈরি করতে পারে। তাই পানি ফুটে ওঠার পর লবণ যোগ করা ভালো।

নন-স্টিক প্যান একটির ওপর আরেকটি রাখলে ওপরের প্যানের তলা নিচের প্যানের কোটিংয়ে আঁচড় ফেলতে পারে।

নন-স্টিক প্যানে ধাতব স্ক্রাবার বা শক্ত ঘষামাজা একেবারেই এড়িয়ে চলা উচিত।

কাস্ট আয়রন প্যান পরিষ্কারে সাবান কম ব্যবহার করে গরম পানি দিয়ে ধুয়ে দ্রুত শুকিয়ে হালকা তেল মেখে রাখা ভালো, এতে মরিচা ধরবে না।

রান্নার পাত্রের যত্ন নেওয়া মানে শুধু খরচ বাঁচানো নয়; এটি খাবারের মান, স্বাদ এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখে। একটি ভালো পাত্র দীর্ঘদিন ভালো থাকলে সমানভাবে রান্না হয়। খাবার পুড়ে যাওয়ার ঝুঁকি কমে এবং ক্ষতিকর পদার্থ খাবারের সঙ্গে মিশে যাওয়ার আশঙ্কাও কমে যায়। গরম প্যানে ঠান্ডা পানি ঢালার অভ্যাসটি ত্যাগ করলে কড়াইয়ের গঠন ও কোটিং অক্ষত এবং সেটি দীর্ঘদিন ব্যবহারের উপযোগী থাকবে।

সূত্র: হাফ পোস্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৩০০ ফুট সড়কে প্রবেশ করেছে তারেক রহমানের গাড়িবহর, কানায় কানায় পূর্ণ চারপাশ

পিরোজপুর-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন সাবেক ভিপি মাহমুদ হোসেন

‎টঙ্গীতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে জুলাই যোদ্ধা তাহরিমা গ্রেপ্তার

বিমানবন্দরে পরিবারের সঙ্গে আবেগাপ্লুত তারেক রহমান

বৃশ্চিক রাশির জাতক তারেক রহমান: আগামী ৭ দিন কেমন যাবে, জ্যোতিষশাস্ত্র কী বলছে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ারে অদ্ভুত ট্রেন্ডের জয়জয়কার

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
বিভিন্ন বিখ্যাত অভিধান বেছে নিয়েছে এ বছরের সেরা শব্দগুলো। প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি।
বিভিন্ন বিখ্যাত অভিধান বেছে নিয়েছে এ বছরের সেরা শব্দগুলো। প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি।

২০২৫ সাল প্রায় শেষের পথে। প্রতিবছরের মতো এবারও বিশ্বের খ্যাতনামা অভিধানগুলো তাদের ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ বা বছরের সেরা শব্দ ঘোষণা করেছে। তবে এবারের নির্বাচনগুলোতে একটি বিশেষ সুর ফুটে উঠেছে। তা হলো ডিজিটাল জগতের প্রতি ক্রমবর্ধমান অবিশ্বাস ও অনিশ্চয়তা। যেমন একুশ শতকের প্রথম দশকে অর্থাৎ ২০০০ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ইন্টারনেটের প্রতি প্রবল উৎসাহের কারণে ব্লগ বা টুইটের মতো শব্দগুলো নির্বাচিত হয়েছিল। কিন্তু ২০২৫-এর শব্দগুলো বলছে অন্য কথা। এবারের শব্দগুলোতে কৃত্রিমতা, আবেগীয় কারসাজি এবং অদ্ভুত সব ট্রেন্ডের জয়জয়কার।

২০২৫ সালের নির্বাচিত শব্দগুলোর মাধ্যমে মানুষের ডিজিটাল জীবনের একটি বিবর্তনমূলক চিত্র ফুটে উঠেছে। এ বছর এই শব্দগুলো একসঙ্গে বিশ্লেষণ করলে একটি বিশেষ মানসিক অবস্থার খোঁজ পাওয়া যায়। যাকে বলা হচ্ছে ডিজিটাল নিহিলিজম। ভুল তথ্য, এআই-জেনারেটেড ছবি এবং ষড়যন্ত্রতত্ত্বের এই ভিড়ে মানুষ এখন কাকে বিশ্বাস করবে, তা নিয়ে সন্দিহান। এই অনিশ্চয়তাকে একটি ইমোজি দিয়ে সবচেয়ে ভালো প্রকাশ করা যায়। আর তা হলো ‘কাঁধ ঝাঁকানো’ ইমোজি। অর্থাৎ, ডিজিটাল জীবনের এই অরাজকতায় মানুষ এখন কিছুটা উদাসীন এবং নিরুপায়।

অস্ট্রেলীয় ইংরেজি ভাষার প্রধান নির্দেশিকা ম্যাককুয়ারি ডিকশনারি। ছবি: উইকিপিডিয়া
অস্ট্রেলীয় ইংরেজি ভাষার প্রধান নির্দেশিকা ম্যাককুয়ারি ডিকশনারি। ছবি: উইকিপিডিয়া

ইন্টারনেটের নতুন জঞ্জাল এআই স্লপ

অস্ট্রেলীয় ইংরেজি ভাষার প্রধান নির্দেশিকা ম্যাককুয়ারি ডিকশনারি বছরের সেরা শব্দ হিসেবে বেছে নিয়েছে ‘এআই স্লপ’ শব্দটিকে। এটি মূলত জেনারেটিভ এআই দিয়ে তৈরি নিম্নমানের কনটেন্ট, যা ইন্টারনেটে না চাইতেই আমাদের সামনে চলে আসে। ত্রুটিপূর্ণ এআই ইমেজ থেকে শুরু করে লিঙ্কডইনে দেওয়া অদ্ভুত সব ক্যারিয়ার পরামর্শ সবই এই স্লপের অন্তর্ভুক্ত। এটি শুধু একটি শব্দ নয়, বরং ইন্টারনেটের অর্থহীন তথ্যের ভিড়ে প্রকৃত তথ্য খুঁজে পাওয়ার লড়াইকে ফুটিয়ে তোলে।

প্যারাসোশ্যাল (Parasocial): কৃত্রিম সম্পর্কের মায়া

‘কেমব্রিজ ডিকশনারি’ নির্বাচন করেছে ‘প্যারাসোশ্যাল’ শব্দটি। এটি এমন এক ধরনের মানসিক সম্পর্ক, যেখানে একজন ব্যক্তি কোনো সেলিব্রিটি, কাল্পনিক চরিত্র, এমনকি এআই চ্যাটবটের প্রতি একতরফা টান অনুভব করেন। ১৯৫৬ সালে সমাজবিজ্ঞানীরা শব্দটি তৈরি করলেও ২০২৫ সালে এটি নতুন মাত্রা পেয়েছে। গায়িকা টেলর সুইফট ও ট্র্যাভিস কেলসের বাগদান নিয়ে ভক্তদের অতি উৎসাহ কিংবা নিঃসঙ্গ মানুষের চ্যাটবটের প্রেমে পড়া—এই ঘটনাগুলো প্যারাস্যোশাল শব্দটির ব্যবহার বাড়ার পেছনে বড় কারণ হিসেবে কাজ করেছে। মানুষ এখন রক্তমাংসের মানুষের চেয়ে স্ক্রিনের ওপারের চরিত্রের সঙ্গে বেশি মানসিক সংযোগ খুঁজছে।

রাগের কারসাজি রেজ বাইট (Rage Bait)

‘অক্সফোর্ড ডিকশনারি’ এ বছর বেছে নিয়েছে ‘রেজ বাইট’ শব্দটি। এটি এমন এক ধরনের কনটেন্টকে বোঝায়, যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মানুষকে রাগান্বিত বা উত্তেজিত করার জন্য তৈরি করা হয়। মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটে ট্রাফিক বা এনগেজমেন্ট বাড়ানো। ‘অ্যাটেনশন ইকোনমি’ বা মানুষের মনোযোগ কেড়ে নেওয়ার এই নোংরা কৌশল রাজনৈতিক মেরুকরণকেও ত্বরান্বিত করছে। ২০২৫ সালে এই শব্দের ব্যবহার আগের বছরের তুলনায় তিন গুণ বেড়েছে। এ ঘটনা প্রমাণ করে, আমাদের আবেগ নিয়ে খেলা করার বিষয়টির প্রতি আমরা এখন অনেক বেশি সচেতন।

৬-৭ (6-7): অর্থহীনতার জয়জয়কার

এবার সবচেয়ে অদ্ভুত এবং বিতর্কিত নির্বাচনটি করেছে ‘ডিকশনারি ডট কম’। তারা কোনো শব্দ নয়, বরং সংখ্যাকে বছরের সেরা বলে ঘোষণা করেছে। তারা বেছে নিয়েছে ‘৬-৭’। জেনারেশন আলফার এই স্লাং মূলত অর্থহীন এবং অদ্ভুতুড়ে। র‍্যাপার স্ক্রিলার এর একটি গান থেকে এটি জনপ্রিয় হয়। এটি ব্যবহারের সময় দুই হাত দিয়ে দাঁড়িপাল্লার মতো একটি ভঙ্গি করা হয়। শুধু র‍্যাপার নন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারকেও একটি স্কুল এই সাইন পরিদর্শন করতে দেখা গেছে। মজার ব্যাপার হলো, এই শব্দের কোনো নির্দিষ্ট অর্থ নেই। মূলত কিশোর-কিশোরীরা বড়দের বিভ্রান্ত করতেই এটি বেশি ব্যবহার করে।

ভাইব কোডিং (Vibe Coding): প্রযুক্তির সহজ পাঠ

‘কোলিন্স ডিকশনারি’ বেছে নিয়েছে ‘ভাইব কোডিং’ শব্দটি। এটি মূলত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে সাধারণ ভাষায় কমান্ড দিয়ে কম্পিউটার কোড লেখানোর পদ্ধতি। ওপেন এআইয়ের সহপ্রতিষ্ঠাতা আন্দ্রেজ কারপাথি শব্দটি জনপ্রিয় করেন। এর ফলে এখন কোডিংয়ের গভীর জ্ঞান না থাকলেও কেবল ‘ভাইব’ বা অনুভূতির মাধ্যমে সফটওয়্যার তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে।

সূত্র: টাইমস ম্যাগাজিন, ইভিএন এক্সপ্রেস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৩০০ ফুট সড়কে প্রবেশ করেছে তারেক রহমানের গাড়িবহর, কানায় কানায় পূর্ণ চারপাশ

পিরোজপুর-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন সাবেক ভিপি মাহমুদ হোসেন

‎টঙ্গীতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে জুলাই যোদ্ধা তাহরিমা গ্রেপ্তার

বিমানবন্দরে পরিবারের সঙ্গে আবেগাপ্লুত তারেক রহমান

বৃশ্চিক রাশির জাতক তারেক রহমান: আগামী ৭ দিন কেমন যাবে, জ্যোতিষশাস্ত্র কী বলছে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বৃশ্চিক রাশির জাতক তারেক রহমান: আগামী ৭ দিন কেমন যাবে, জ্যোতিষশাস্ত্র কী বলছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ০৮
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি: সংগৃহীত
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘ ১৭ বছর নির্বাসনের পর দেশে ফিরেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বৃশ্চিক রাশির জাতক। এই রাশির জাতক-জাতিকাদের জন্য আজসহ আগামী সাত দিন কেবল একটি সপ্তাহ নয়, বরং এটি একটি পুরোদস্তুর ধামাকা বলিউড মসলা মুভি! জ্যোতিষশাস্ত্র বলছে, একদিকে বড়দিনের আমেজ, অন্যদিকে নতুন বছরের হাতছানি—সব মিলিয়ে গ্রহরা এখন পার্টি মুডে আছে।

মেজাজ ও মানসিক অবস্থা

সপ্তাহের শুরুতেই এই রাশির জাতক-জাতিকার ভেতর ‘শার্লক হোমস’ জেগে উঠবে। আশপাশের লোকজন কেন এত খুশি, কেন এত হাসছে, সবাই কেন এত খাতির করছে—এসব কিছুর পেছনে গভীর গোয়েন্দা নজর রাখবেন। তবে এত সতর্কতার কিছু নেই, অতিরিক্ত গোয়েন্দাগিরি করতে গিয়ে আবার ফোনের পাসওয়ার্ড ভুলে যেতে পারেন!

সপ্তাহের মাঝামাঝি সময়ে বৃশ্চিক রাশির জাতক-জাতিকারা বেশ দার্শনিক হয়ে উঠবেন। মনে হবে, ‘জীবনটা আসলে কী?’ তবে সেই উত্তর পাওয়ার আগেই বিরিয়ানির গন্ধ আপনাকে বাস্তবে ফিরিয়ে আনবে।

মাস্টারমাইন্ড গেম

এই রাশির জাতক-জাতিকারা যাঁরা রাজনীতির ময়দানের খেলোয়াড়, তাঁরা রীতিমতো ফাটিয়ে দেবেন! সপ্তাহটি তাঁদের জন্য দাবা খেলার মতো। জাতক-জাতিকার প্রতিটি চাল প্রতিপক্ষকে ঘাম ছুটিয়ে দেবে।

জনসভায় আপনার ভাষণ আজ জনতাকে মন্ত্রমুগ্ধ করবে। তবে মাইক চেক করে নেবেন, নতুবা আপনার গোপন কোনো মন্তব্য জনসমক্ষে চলে আসতে পারে। বিরোধী পক্ষ আপনার ছোট কোনো ভুলকে বড় করার জন্য ওত পেতে থাকবে।

এলাকার মানুষের সঙ্গে জনসংযোগ বাড়বে। তবে ছবি তোলার চেয়ে মানুষের কথা শোনায় বেশি মনোযোগ দিন। ভোটাররা আপনার কাছে এই মাহেন্দ্রক্ষণের গিফট হিসেবে এলাকার উন্নয়ন চাইবে।

তবে দলের ভেতরেই ‘মীরজাফর’ চেনার চেষ্টা করুন। কারও হাসিমুখের পেছনে বিষাক্ত কোনো পরিকল্পনা থাকতে পারে।

ক্যারিয়ার ও ব্যবসা

কর্মক্ষেত্রে আপনি আজ বিদ্যুতের গতিতে কাজ করবেন। ডেস্কে কাজের ফাইল পাহাড়ের মতো জমলেও আপনি ইউটিউবে ‘কীভাবে কোটিপতি হওয়া যায়’ তা দেখে সময় কাটাবেন।

আপনার উন্নতি দেখে সহকর্মীদের চোখ টাটাবে। কেউ যদি আপনার কলম বা ফোন চার্জার নিয়ে যায়, বুঝবেন সেটা কেবল চুরি নয়, আপনার ধৈর্যের পরীক্ষা!

ব্যবসায়ীদের জন্য সময়টা দারুণ। তবে বড় কোনো চুক্তিতে সই করার আগে চশমাটা ভালো করে মুছে নেবেন, যাতে ‘শর্তাবলি’ পরিষ্কার দেখা যায়।

আর্থিক অবস্থা

টাকা আসবে ঠিকই, কিন্তু সেই টাকা দিয়ে গিফট কিনতে গিয়ে আপনি দেউলিয়া হওয়ার পথে হাঁটবেন। লটারির টিকিট কাটলে হয়তো ২০ টাকা জিতবেন, কিন্তু সেই খুশিতে বন্ধুদের ১০০ টাকার মিষ্টি খাইয়ে লস করে ফেলবেন।

রাস্তায় পড়ে থাকা টাকা কুড়াতে যাবেন না, ওটা হয়তো কারোর ‘মানত’ করা পয়সা হতে পারে!

প্রেম ও ভালোবাসা

প্রেমের বাজারে বৃশ্চিক রাশির গ্রাফ এখন ঊর্ধ্বমুখী। স্ত্রী বা স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া হবে ঠিকই, কিন্তু সেটা হবে ‘কে রিমোট ধরবে’ বা ‘কে লাইট বন্ধ করবে’ তা নিয়ে। শেষে আপস হবে অনলাইন শপিংয়ের মাধ্যমে।

আর সিঙ্গেলদের ক্ষেত্রে, আপনার পুরোনো কোনো ক্রাশ হঠাৎ করে ইনবক্সে ‘হাই’ পাঠাতে পারে। সাবধান! ওটা হয়তো বিয়ের কার্ড পাঠানোর আগের প্রস্তুতি। আবেগ নিয়ন্ত্রণ করুন।

স্বাস্থ্য

স্বাস্থ্য নিয়ে আপনার গ্রহরা একটু কানামাছি খেলছে। একদিকে আপনার মন বলবে ‘আরেক পিস কেক খাই’, অন্যদিকে লিভার বলবে ‘দোহাই তোমার, থামো!’

জিম যাওয়ার কথা ভেবে সকালে অ্যালার্ম দেবেন ঠিকই, কিন্তু সেই অ্যালার্ম বন্ধ করে আরও দুই ঘণ্টা ঘুমানোটাই হবে আপনার আসল ব্যায়াম।

ঠান্ডায় আইসক্রিম খেয়ে গলার বারোটা বাজাবেন না।

দিনের বিশেষ পূর্বাভাস (সংক্ষেপে):

২৫ ডিসেম্বর (বড়দিন): উপহার না জুটলেও বাড়িতে ভালো খাবারের যোগ আছে।

২৮ ডিসেম্বর: অফিসের বস বা রাজনৈতিক হাইকমান্ডের সঙ্গে ঝামেলা এড়িয়ে চলুন, না হলে নতুন বছরের ছুটিটা ঘরে বসেই কাটাতে হবে।

৩১ ডিসেম্বর: পার্টিতে নাচতে গিয়ে বা মঞ্চে ভাষণ দিতে গিয়ে যেন পা মচকে না যায়, খেয়াল রাখবেন।

লাইফ হ্যাক

কারোর ব্যক্তিগত চ্যাটে বা লবিংয়ের গোপন নথিতে উঁকি দেবেন না, স্ক্রিনশট ধরা পড়ে গেলে মান-সম্মান পাড়ায় বিলিয়ে দিতে হবে। নেতিবাচকতা কাটাতে পকেটে একটি কালো রুমাল রাখুন এবং প্রতিদিন সকালে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের উদ্দেশে বলুন—‘আমিই জনগণের প্রিয় নেতা!’

আপনার শুভ সংখ্যা: ০৯, ২১, ৭৭। শুভ রং: গাঢ় লাল বা খয়েরি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৩০০ ফুট সড়কে প্রবেশ করেছে তারেক রহমানের গাড়িবহর, কানায় কানায় পূর্ণ চারপাশ

পিরোজপুর-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন সাবেক ভিপি মাহমুদ হোসেন

‎টঙ্গীতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে জুলাই যোদ্ধা তাহরিমা গ্রেপ্তার

বিমানবন্দরে পরিবারের সঙ্গে আবেগাপ্লুত তারেক রহমান

বৃশ্চিক রাশির জাতক তারেক রহমান: আগামী ৭ দিন কেমন যাবে, জ্যোতিষশাস্ত্র কী বলছে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কেমন দেখতে চাই দেশের পর্যটনশিল্প

ফিচার ডেস্ক
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ২০
কেমন দেখতে চাই দেশের পর্যটনশিল্প

জাতিসংঘের পর্যটন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের প্রায় ৫০টি দেশ টিকে আছে পর্যটনকেন্দ্রিক অর্থনীতির ওপর। সেই তালিকায় রয়েছে নেপাল, থাইল্যান্ড, লাওস, কম্বোডিয়া। গত কয়েক বছরে তালিকায় যুক্ত হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত।

বিশ্ব পর্যটন দিন দিন আরও প্রসার হচ্ছে। পর্যটনশিল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা। সৌদি আরবের মতো দেশ এখন পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে শীর্ষে পৌঁছাতে অভিনব সব উদ্যোগ নিচ্ছে। বাংলাদেশে বসে যখন এসব খবর চোখে পড়বে, তখন স্বাভাবিকভাবে জানতে ইচ্ছা করবে, আমাদের দেশের পর্যটনের অবস্থা কী?

আমরা এ বিষয়ে কথা বলেছিলাম দেশের চারজন পর্যটকের সঙ্গে। তাঁরা নিজেদের সুচিন্তিত মতামত জানিয়েছেন দেশীয় পর্যটন বিষয়ে।

mohua-3

ভিশন নির্ধারণের প্রথম দায়িত্ব রাষ্ট্রের

মহুয়া রউফ, পর্যটক ও লেখক

পর্যটনের ক্ষেত্রে প্রথম যে সংকট বা চ্যালেঞ্জ, সেটি হলো রাষ্ট্র নিজে আসলে কত দূর দেখতে চায়। রাষ্ট্র কি তার পর্যটনকে আকাশের মতো দূর পর্যন্ত কল্পনা করতে পারে, নাকি একটি সেতুর দূরত্বের মতো সীমিত করে দেখে? অর্থাৎ প্রশ্নটি মূলত ভিশনের। রাষ্ট্র নিজেকে কতটা ভিশনারি হিসেবে দেখতে চায়?

এই ভিশন নির্ধারণের প্রথম দায়িত্ব রাষ্ট্রের। রাষ্ট্রকেই ঠিক করতে হবে, পর্যটন খাত কত দূর ওপরে উঠবে।

রাষ্ট্র একবার এটি ঠিক করলে স্বাভাবিকভাবেই আইনি জটিলতা, অবকাঠামো এবং নীতিমালার জায়গাগুলো স্পষ্ট হয়। কারণ, পর্যটন নিয়ে রাষ্ট্রের নির্দিষ্ট আইন, বিধি ও নীতিমালা রয়েছে।

দ্বিতীয়ত, পর্যটন কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি রাষ্ট্রের সামগ্রিক বাস্তবতার প্রতিফলন। আপনার দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকলেও আপনি হয়তো কঠোর নির্দেশনা দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু রাখতে পারবেন, পরীক্ষা নিতে পারবেন। তবে পর্যটন সে রকম নয়। কারণ, পর্যটনের মাধ্যমে আপনি পুরো পৃথিবীর সামনে নিজেকে উপস্থাপন করেন। আপনি বিশ্ববাসীকে আহ্বান জানান, এসে দেখুন আমার ঐতিহ্য, আমার জীবনচর্চা, আমার জীবনবোধ এবং ইতিহাস।

এ কারণে পর্যটনের সঙ্গে একটি দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। আমাদের অঞ্চলকে যদি দেখি মুক্তিযুদ্ধের আগে বা পরে, আমরা ঐতিহাসিকভাবেই একটি রাজনৈতিকভাবে অস্থির সময়ের মধ্য দিয়ে গেছি। বিষয়টি নিজেরা হয়তো সব সময় গভীরভাবে অনুধাবন করি না, কিন্তু বিশ্ব তা ঠিকই অনুধাবন করে।

babar-ali

ব্যাকপ্যাক ট্যুরিজমের সুযোগ বাড়ানো দরকার

বাবর আলী, পর্বতারোহী

প্রথমত, আমাদের দেশের জনসংখ্যার চেয়ে পর্যটনকেন্দ্রের সংখ্যা কম। অনেক সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণে একটি জায়গা জনপ্রিয় হয়ে গেলে সেখানে পর্যটকদের অতিরিক্ত ভিড় দেখা যায়। যেমন সাজেক কিংবা টাঙ্গুয়ার হাওরের অবস্থা। এর সঙ্গে সেখানে একটা সিন্ডিকেট তৈরি হয়। ফলে পর্যটকেরাও স্বচ্ছন্দে ভ্রমণ করতে পারে না। এটি পর্যটনের জন্য ভালো কিছু নয়। বিষয়টি আমাদের দায়িত্বরতদের খেয়াল রাখা জরুরি।

আরেকটা বিষয় চাই, আমাদের ব্যাকপ্যাক ট্যুরিজমের সুযোগটা বাড়ানো দরকার। একজন মানুষ যেন বাজেটের মধ্যে ভ্রমণ করতে পারেন।

পর্যটন খাতের উন্নতির জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট বোর্ড থেকে উদ্যোগ নেওয়াটা জরুরি। একই সঙ্গে স্থানীয় জেলা প্রশাসক কিংবা অন্য যাঁরা আছেন, তাঁরাও এখানে বেশ ভূমিকা রাখতে পারেন। এ ছাড়া আমাদের যা আছে, সেগুলো সংরক্ষণ করা জরুরি। আমার মনে হয়, জাতি হিসেবে আমরা সংরক্ষণে আগ্রহী নই। কারণ, আমাদের দক্ষিণ কিংবা পূর্বাঞ্চলে ভ্রমণের প্রসারটা যেমন দেখি, তেমনটা উত্তরবঙ্গে নয়। কিন্তু সেখানে তো আমাদের অসংখ্য হেরিটেজ আছে। সেগুলো নিয়ে কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। সেখানে নতুন কিছু করা এবং বিনিয়োগ করার সুযোগ আছে। পর্যটন শুধু নতুন জায়গা দেখা

নয়, এর সঙ্গে মানুষ দেখা, স্থানীয় সংস্কৃতি উপভোগ করা বড় অংশ। সেই জায়গায় থেকে উত্তরবঙ্গে অনেক কিছু দেখার আছে। আমি এমন পর্যটন চাই, যেখানে স্থানীয়রা উপকৃত হবে।

eliza2

হেরিটেজ ট্যুরিজম বিকাশে উত্তরবঙ্গের বিকল্প নেই

এলিজা বিনতে এলাহী, ঐতিহ্য পর্যটক ও শিক্ষক

বাংলাদেশের হেরিটেজ ট্যুরিজম বিকাশ নিয়ে আমি কাজ করছি; যার স্লোগান ‘ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ থ্রু হেরিটেজ ট্রাভেল’। এই খাতে বিস্তৃতভাবে কাজ শুরু হয়নি। তবে ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিছু মানুষ সেটা করার চেষ্টা করছেন।

আমার প্রত্যাশা হলো, বাংলাদেশে বিদেশি পর্যটকের আগমন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাক এবং বাংলাদেশ একটি গ্লোবাল পর্যটন গন্তব্য হিসেবে পরিচিতি লাভ করুক।

বাংলাদেশে অসংখ্য ঐতিহাসিক ও প্রাচীন স্থাপনা রয়েছে, যা আমাদের জন্য এক বিশাল সম্পদ। কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, এই ঐতিহ্যগুলো সংরক্ষণের পর্যাপ্ত উদ্যোগ নেই, নেই পরিকল্পিত প্রচারের ব্যবস্থা। এই শূন্যস্থান পূরণ করতে হলে ডিজিটালাইজেশনের সর্বোচ্চ ব্যবহার ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। ডিজিটাল মাধ্যমের সাহায্যে খুব সহজে এসব ঐতিহাসিক স্থান দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে তুলে ধরা সম্ভব। এ জন্য প্রয়োজন নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ, সঠিক সংরক্ষণ এবং কার্যকর প্রচার-প্রচারণা। এই তিন বিষয় ছাড়া হেরিটেজ ট্যুরিজম টেকসইভাবে বিকশিত হতে পারে না।

ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, হেরিটেজ ট্যুরিজম বিকাশে উত্তরবঙ্গের বিকল্প নেই। উত্তরবঙ্গের ১৬টি জেলাকে সমন্বিতভাবে হেরিটেজ জোন ঘোষণা করা যেতে পারে।

আমরা প্রায়ই স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাসফরে দেশের ঐতিহাসিক অঞ্চলগুলো ঘুরে দেখার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে পারিনি। রাজশাহী বিভাগ বা উত্তরবঙ্গের ঐতিহাসিক স্থানগুলো ঘুরে দেখা, কিংবা সাত গম্বুজ মসজিদের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে শিক্ষাসফর আয়োজন, এ ধরনের উদ্যোগ সরকারি ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে খুবই কম দেখা যায়। এসব কার্যক্রম নিয়মিত ও পরিকল্পিতভাবে বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।

সাইফুল ইসলাম শান্ত,

লোকাল গাইডদের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন

সাইফুল ইসলাম শান্ত, হাইকার ও পর্যটক

পৃথিবীতে প্রায় সব দেশই ট্যুরিজম এগিয়ে যাচ্ছে, আর আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে নিরাপত্তা এবং স্থানীয় মানুষদের সহযোগিতার অভাব। যদিও বলতে খারাপ লাগে, কিন্তু এখনো বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ট্যুরিস্ট-ফ্রেন্ডলি না, যা আমি দেশের ৬৪ জেলা হেঁটে ভ্রমণের সময় উপলব্ধি করেছি।

কক্সবাজারকে নিরাপত্তার আওতায় আনা গেলে থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া থেকে বেশি পর্যটক বাংলাদেশে আসবে বলেই আশা করা যায়।

পর্যটন উদ্যোগ নিয়ে ঘাটতির কথা বললে তা বলে শেষ করা যাবে না। প্রথমেই বলব, রাজনৈতিক অস্থিরতা। সব দেশেই রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকে। কিন্তু আমাদের দেশের মতো এমন অরাজকতা আর কোথাও হয় না। বিভিন্ন দেশের মানুষের ধারণা, বাংলাদেশে যুদ্ধ হচ্ছে, নিরাপদ নয়। তাই তারা ভ্রমণ গন্তব্য হিসেবে বাংলাদেশ এড়িয়ে চলে।

পৃথিবীর অন্যান্য দেশে খুব কম খরচে হোমস্টে বা হোস্টেলে থাকা যায়, যা বাংলাদেশে এখনো হয়নি। পর্যটনশিল্পে এগিয়ে যেতে হলে নিরাপদ হোমস্টে কালচার বাড়াতে হবে। এর জন্য স্থানীয় মানুষদের এগিয়ে আসতে হবে।

এ ছাড়া স্থানীয় গাইডদের কোনো প্রশিক্ষণ নেই।

এই শ্রেণির প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করে দেখেছি, একটি দেশ তখনই সত্যিকারের পর্যটনবান্ধব হয়, যখন একজন পর্যটক সেখানে নিরাপদ, সম্মানিত ও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। বাংলাদেশেও আমি সেই মানের পর্যটন দেখতে চাই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৩০০ ফুট সড়কে প্রবেশ করেছে তারেক রহমানের গাড়িবহর, কানায় কানায় পূর্ণ চারপাশ

পিরোজপুর-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন সাবেক ভিপি মাহমুদ হোসেন

‎টঙ্গীতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে জুলাই যোদ্ধা তাহরিমা গ্রেপ্তার

বিমানবন্দরে পরিবারের সঙ্গে আবেগাপ্লুত তারেক রহমান

বৃশ্চিক রাশির জাতক তারেক রহমান: আগামী ৭ দিন কেমন যাবে, জ্যোতিষশাস্ত্র কী বলছে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত