Ajker Patrika

এডমন্ড হিলারি: নেপালের মানুষদের ভালোবাসতেন তিনি

ইশতিয়াক হাসান
এডমন্ড হিলারি: নেপালের মানুষদের ভালোবাসতেন তিনি

১৯৫৩ সালের ২৯ মে প্রথম মানুষ হিসেবে পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়া মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেন স্যার এডমন্ড হিলারি ও শেরপা তেনজিং নোরগে। তবে নেপালের মানুষ তাঁকে সব সময় মনে রাখবে এভারেস্টজয়ী হিসেবে নয়, বরং এমন একজন হিসেবে যিনি তাঁদের ভালোবাসতেন। নেপালিদের উন্নয়নে হাসপাতাল, স্কুল স্থাপনসহ অনেক কাজই করেছেন তিনি। স্ত্রী ও মেয়ে উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় মারা যান নেপালের প্রত্যন্ত এক গ্রামে অবস্থান করা হিলারির সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে। 

২০০৮ সালের এই দিনে অর্থাৎ ১১ জানুয়ারি পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন স্যার এডমন্ড হিলারি। 

ছিলেন মৌচাষি
১৯১৯ সালে নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে জন্ম এডমন্ড হিলারির। সেখানেই বেড়ে ওঠেন। নিউজিল্যান্ডেই পর্বতারোহণে আগ্রহের শুরু তাঁর। পেশা মৌচাষ হলেও নিউজিল্যান্ডের পর্বতগুলোয় চড়তে শুরু করেন। পরে আল্পস এবং একপর্যায়ে হিমালয়ের একের পর এক চূড়া জয় করতে থাকেন। সেখানে ২০ হাজার ফুট উঁচু ১১টি চূড়ায় ওঠেন তিনি। তত দিনে এভারেস্টের চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হিলারি। তবে কাজটা মোটেই সহজ ছিল না।

১৯২০ থেকে ১৯৫২ সালের মধ্যে তিব্বত ও নেপালে অবস্থিত পর্বতটিকে জয় করার ৭টি বড় অভিযান ব্যর্থ হয়। ১৯৫২ সালে সুইস পর্বতারোহীদের একটি দল চূড়া থেকে মাত্র ১ হাজার ফুট দূরে থাকা অবস্থায় ফিরে আসতে বাধ্য হয়। ১৯৫১ ও ১৯৫২ সালে এভারেস্ট অভিযানের প্রস্তুতিমূলক দুটি অভিযানে অংশ নেন হিলারি। এটাই ব্রিটিশ অভিযাত্রী স্যার জন হান্টের নজরে আনে তাঁকে। গ্রেট ব্রিটেনের আলপাইন ক্লাবের জয়েন্ট হিমালয়ান কমিটি ও রয়েল জিওগ্রাফিক সোসাইটির ১৯৫৩ সালের এভারেস্ট অভিযানের দলনেতা নির্বাচিত হয়েছিলেন হান্ট। 

সূর্যাস্তের সময় মাউন্ট এভারেস্ট ও খুমবু হিমবাহ।সর্বোচ্চ চূড়ায়
১৯৫৩ সালের ২৯ মে। এটাই সেই দিন। গত কয়েকটি বছর এর জন্যই প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। তাঁবু থেকে বের হয়ে আসা দুজন মানুষ আধবোজা চোখে তাকালেন। সকালের সোনারোদে বরফে আবৃত চূড়াটি জ্বল জ্বল করছে। পৃথিবীর উচ্চতম পর্বত মাউন্ট এভারেস্টের পাঁচ মাইলেরও বেশি উচ্চতায় দাঁড়িয়ে আছেন তাঁরা। একটু আগেই ষাট মাইলের বেশি গতিতে আঘাত হানছিল কনকনে হাওয়া। এখন প্রকৃতি অনেকটাই শান্ত। তবে প্রচণ্ড ঠান্ডা শরীরের হাড়-মাংসে কাঁপন ধরিয়ে দিচ্ছে। এডমন্ড হিলারি এবং তেনজিং নোরগে প্রথম মানুষ হিসেবে এভারেস্টের পা রাখার আশা করছেন।

তবে এভারেস্টের এই উচ্চতায় পৌঁছার পথটা সহজ ছিল না। বেশ কয়েকবারই ভয়ানক বিপজ্জনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে দুজনকে। একবার তো হিলারি মরতেই বসেছিলেন।

এক মাস আগের কথা সেটা। রশি ধরে এগোনোর সময় একটি বরফধস আবিষ্কার করেন তাঁরা। সামনে থাকা হিলারি একটি বরফের ফাটলের ওপর দাঁড়িয়ে পড়তে বাধ্য হলেন।

ফাটলটা এত বড় যে হেঁটে অতিক্রম করা অসম্ভব। হিলারি বরফের একটা বড়সড় চাঙর ফাটলের ওপর বসিয়ে দিলেন। কিন্তু বরফের চাঁইটায় পা দিতেই ভেঙে পড়ল। টুকরোটাসহ ফাটলের ভেতর গড়িয়ে পড়লেন হিলারি। নিচে পড়ার সময় শরীরটাকে বাঁকিয়ে ফেলেন তিনি। এটা বরফের ফাটলের মাঝখানে আটকে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচিয়ে দিল এডমন্ড হিলারিকে।

সঙ্গীকে পড়ে যেতে দেখেও মাথা ঠান্ডা রাখলেন তেনজিং। কুঠারটাকে বরফের ভেতর গেঁথে, দড়িটা পেঁচিয়ে ফেললেন এতে। এক মুহূর্ত পরেই রশিটায় টান পড়ল। কোমরে প্যাঁচানো দড়িতে টান পড়ায় থামল হিলারির পতন। বরফের দুই দেয়ালের মাঝে শূন্যে ঘুরপাক খেতে লাগলেন। বরফের চাঙরটা ফাটলের নিচে পড়ে প্রচণ্ড শব্দে বিধ্বস্ত হলো। তেনজিং তৎপর না হলে হিলারির অবস্থাও হতো ওই বরফের টুকরোটার মতোই!

স্যার এডমন্ড হিলারি।

সামনে বিপদ
দুজনে ভিন্ন দুই পৃথিবীর বাসিন্দা। এডমন্ড হিলারি মৌচাষ করতেন। তেনজিং একজন শেরপা। নেপালের হিমালয় অঞ্চলে বাস করে শেরপা জাতির লোকেরা। পর্বতের গাইড হিসেবে এঁদের জুড়ি মেলা ভার। একটি বিষয়ে দুজনের বড় মিল, পর্বতারোহণের নেশা। আর আছে, চূড়ায় পৌঁছার জন্য প্রয়োজন দক্ষতা ও প্রবল ইচ্ছাশক্তি। একজনের ক্ষমতার প্রতি অপরজনের আস্থাও অবিচল।

তিন দিন আগেই চূড়ায় উঠতে ব্যর্থ তিন পর্বতারোহী ফিরে এসেছেন। বিপর্যস্ত তিন অভিযাত্রী হিলারি-তেনজিংকে সতর্ক করে দিয়েছেন সামনের বিপজ্জনক পথ সম্পর্কে। তবে এত সব বিপদের চোখ রাঙানি অগ্রাহ্য করে যাত্রা অব্যাহত রাখলেন দুজনে।

২৯ মে। সকাল ৬টা ৩০ মিনিট। হিলারি তেনজিং নোরগেকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘সব ঠিক আছে তো?’ সঙ্গে সঙ্গে উত্তর পেলেন, ‘হ্যাঁ, ঠিক আছে।’ আর মাত্র ১ হাজার ১০০ ফুট, তারপরই ইতিহাসের অংশ হয়ে যাবেন তাঁরা।

২০০৩ সালের মে সংখ্যার ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিনে এভারেস্ট জয়ের ৫০ বছর উদ্‌যাপন। ভয়ংকর পথ
হিমালয়ের সবচেয়ে উঁচু এই পর্বত জয়ের অভিযানের শুরু মার্চের ১০ তারিখ। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল স্যার জন হান্ট ১৪ অভিযাত্রী, ৩৬ শেরপা এবং মালামাল বহন করা ৩৬০ জন কুলির দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন।

হিলারি, তেনজিংসহ দলের বাকি সদস্যরা নেপালের কাঠমাণ্ডু থেকে যাত্রা শুরু করেন। প্রথমে তাঁরা গাছপালায় ঠাসা বর্ণিল পাহাড়ি এলাকা ধরে এগোলেন। দুপাশে ছোট ছোট খামার-বাড়ি মুগ্ধ করছে অভিযাত্রীদের। ওপরে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ভূ-প্রকৃতি বদলাতে লাগল। তারপরই খাড়া, দুরারোহ পর্বত সারি হঠাৎই প্রমত্ত একটা নদীকে জায়গা ছেড়ে দিয়েছে।

নদী পেরোতে পাথর ও বাঁশ দিয়ে দুর্বল, নড়বড়ে একটা সেতু তৈরি করে নিতে হলো। প্রবল বৃষ্টি এবং গোদের ওপর বিষফোড়া হয়ে হাজির হওয়া ভিমরুলের ঝাঁক চলার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াল।

পুব দিকে বেশ কিছুটা পথ এগোল দলটা। এ সময়ই দেখা দিল এভারেস্ট। পর্বতারোহীদের মনে হলো, আকাশের গায়ে ঝুলে আছে ওটা। ১২ হাজার ফুটের বেশি উচ্চতায় বেজ ক্যাম্প স্থাপন করলেন তাঁরা। এখান থেকে পর্বতের ওপরের দিকে উঠবেন তাঁরা।

বরফ কেটে ওপরের দিকে যেতে হবে। তাই বেজ ক্যাম্পে কয়েক সপ্তাহ যাত্রাবিরতি করতে হলো দলটিকে। এরই মধ্যে একদিন হিলারির নেতৃত্বে ছোট্ট একটি দল খুমবু হিমবাহে অভিযান চালাল।

‘মানুষের দেখা সবচেয়ে বীভৎস ও নিষিদ্ধ দৃশ্যগুলোর একটি’—খুমবু হিমবাহকে এভাবেই পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন বিখ্যাত পর্বতারোহী জর্জ ম্যালরি। পরে এই এলাকাতেই মৃত্যুবরণ করেন তিনি। সে যাক, একপর্যায়ে সঙ্গীসহ হিলারি বরফের বড় একটা মাঠের সামনে চলে এলেন। এখানে প্রচণ্ড বিক্ষিপ্ত ও ওলটপালটভাবে হিমবাহ বা বরফের চাঙরের ধস নেমে আসছে। আশপাশের বরফঢাকা জমিতে একটু পরপরই ফাটল তৈরি হচ্ছে। যেকোনো সময় পায়ের নিচের বরফ ফাঁক হয়ে অতল গহ্বরে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা। এই ভয়ানক বিপৎসংকুল এলাকার মধ্য দিয়ে পথ করে এগোলেন হিলারি। তাঁকে অনুসরণ করল অন্যরা।

এই বিক্ষুব্ধ বরফ রাজ্যে একটা পথ খুঁজে বের করলেন হিলারি। ১৯ হাজার ৪০০ ফুট উচ্চতায় ঘাঁটি গাড়লেন সবাই। এই পথ ধরে চলার সময় প্রচণ্ড বিস্ফোরণের মতো শব্দে অনবরত বরফের চাই স্থান বদলাচ্ছে, এমন একটি জায়গার নাম হলো, ‘অ্যাটম বম্ব’। এই সেই জায়গা যেখানে বরফের ফাটলের মধ্যে পড়ে হিলারির অভিযান এবং জীবন দুটোই সাঙ্গ হতে বসেছিল।

হিলারি ও তেনজিং নোরগে।চূড়ান্ত যাত্রা
নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে এভারেস্ট জয়ের চূড়ান্ত চেষ্টায় অংশ নিতে পারেন কেবল দলটির স্যার এডমন্ড হিলারি এবং নেপালি শেরপা তেনজিং নোরগে। হিলারি এবং তেনজিং চূড়ায় পৌঁছাতে যাত্রা শুরু করলেন। আগের মতোই কোমরে বাঁধা দড়ি তাঁদের পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত করেছে। তেনজিং এবার সামনে, হিলারি পেছনে। খুব সরু, কেবল কয়েক ফুট চওড়া একটি শৈলশিরা ধরে ওপরে উঠছেন দুই পর্বতারোহী। নরম তুষার এই চলাকে আরও কঠিন করে তুলেছে। একপর্যায়ে সামনে এগোনো প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়াল।

এক সময় নরম তুষারের রাজ্য শেষ হলো। এর জায়গা নিল তুলনামূলক শক্ত বরফ। বরফে পা ফেলে একটু নিশ্চিন্তে এগোতে পারছেন দুজনে। তবে সতর্কতায় ঢিল দেননি। তাঁদের ডানে বরফের মোচড়ানো কার্নিশ, পাশ থেকেই পর্বতের কিনারা খাড়া নেমে গেছে ৮ হাজার ফুট। বামে সংকীর্ণ পাথুরে তাক। 

মৃত্যু এলাকা
দুজনেই গায়ে চাপিয়েছেন আট প্রস্থ পোশাক, হাতে দস্তানা। পিঠে ৪০ পাউন্ডের অক্সিজেন ট্যাংক। উচ্চতার কারণে বাতাস এখানে অনেক হালকা। মানে এখানে অক্সিজেনের ঘাটতি আছে। কিন্তু পর্বতারোহীদের বেঁচে থাকার জন্য বাড়তি অক্সিজেন দরকার, অন্তত ২৫ হাজার ফুট উচ্চতায়। অনেকে এই উচ্চতাকে এভারেস্টের ডেথ জোনের শুরু বলে উল্লেখ করেন।

বরফ ভেঙে এগোনোর সময় হিলারির নিশ্বাস নিতে রীতিমতো কষ্ট হচ্ছে। অক্সিজেনের নলের ভেতর বরফ জমতে শুরু করেছে যে। একটু পরপরই নল পরিষ্কার করছেন দুজনেই।

অনেকটা যন্ত্রের মতো এগিয়ে চলেছেন। শুধু জানেন, যেভাবে হোক চূড়ায় পৌঁছাতে হবে। পরে হিলারি অকপটে বলেছিলেন, ‘আমরা কল্পনাও করতে পারছিলাম না, কোনো মানুষের পক্ষে এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছানো সম্ভব।’ 

এভারেস্ট জয়ের পর হিলারি ও তেনজিং নোরগে।বড় বাধা
দুই অভিযাত্রী এক সময় চল্লিশ ফুট উঁচু একটা পাথরের দেয়ালের সামনে চলে এলেন। হিলারি জুতার স্পাইক ব্যবহার করে পাথরের দেয়াল এবং একটা তাকের মাঝখান দিয়ে উঠতে শুরু করলেন। দেয়ালের ওপর পৌঁছে তেনজিংকে দড়ি ধরে টেনে ওপরে তুললেন। আবার শুরু হলো বরফ ভেঙে পাহাড়ের ওপর ওঠা। 

একেবারে ওপরে
কয়েক ঘণ্টা পার হয়ে গেল। চলার গতি ধীর হয়ে এসেছে। ধৈর্যের শেষ সীমায় যেন পৌঁছে গেছেন তাঁরা। তবে ঢাল বেয়ে শেষ অংশটা পেরিয়ে হঠাৎই পৌঁছে গেলেন একেবারে ওপরে, শিখরে। তাঁরা এখন এভারেস্টের চূড়ায় (২৯,০৩৫ ফুট)।

দুজন মানুষ পরস্পরকে আলিঙ্গন করলেন, একে অপরের হাত ধরে ঝাঁকাতে লাগলেন পাগলের মতো। প্রাথমিক উত্তেজনা কেটে গেলে হিলারি কিছু ছবি তুললেন। তেনজিং শেরপাদের বিশ্বাস অনুযায়ী এখানে বাস করা দেবতাদের জন্য বরফ খুঁড়ে কিছু চকলেট এবং বিস্কুট রাখলেন। এগুলো তাঁদের জন্য উপহার।

পনেরো মিনিট পর এভারেস্টের চূড়ার মনোমুগ্ধকর, রাজকীয় দৃশ্যকে বিদায় জানিয়ে নিচে নামতে শুরু করলেন দুজনে। তখনো বিশ্বাস হচ্ছে না এমন এক জায়গায় গিয়েছেন, যেখানে তাঁদের আগে কেউ পৌঁছাতে পারেনি। এমন দৃশ্য দেখেছেন, যা আগে কেউ দেখেনি। 

হিলারি, তাঁর স্ত্রী লুইজি ও ছেলে পিটার।এভারেস্ট জয়ের পর
কাকতালীয়ভাবে ব্রিটিশ সিংহাসনে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের আরোহণ অনুষ্ঠানের কাছাকাছি সময়ে ব্রিটিশদের কাছে এভারেস্ট জয়ের ঘোষণা এল। ব্রিটিশদের নেতৃত্বে ও আয়োজনে একটি অভিযানে এভারেস্টজয়, সেই সঙ্গে তরুণী রানির অভিষেক, সব মিলিয়ে দীর্ঘদিন যুদ্ধ এবং পরবর্তী মন্দায় জর্জরিত জাতি যেন হঠাৎ আত্মবিশ্বাস ফিরে পেল। অন্য পর্বতারোহীদের সঙ্গে ব্রিটেনে পৌঁছতেই রানি নাইট উপাধিতে ভূষিত করলেন এডমন্ড হিলারিকে।

এভারেস্টজয় রাতারাতি বিশ্বজুড়ে খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে দিল হিলারিকে। ১৯৫৮ সালে দক্ষিণ মেরু অভিযানে গেলেন হিলারি। জয় করলেন উত্তর মেরুও। আরও বিভিন্ন পর্বত অভিযানে নেতৃত্ব দিলেও যত দিন গড়াতে লাগল নেপালের সাধারণ মানুষের কল্যাণে বেশি করে মনোযোগী হয়ে উঠলেন তিনি। 

নেপালের মানুষদের জন্য
ষাটের দশকে নেপালে বেশ কিছু ক্লিনিক, হাসপাতালের পাশাপাশি ১৭টি বিদ্যালয় স্থাপনে বড় ভূমিকা রাখলেন হিলারি। তাঁর প্রতিষ্ঠিত অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিমালয়ান ট্রাস্টের মাধ্যমে কাজটি করেন তিনি। 

এ সময় এ উন্নয়নকাজগুলো সহজে করার জন্য দুটি এয়ারস্ট্রিপ স্থাপন করা হয়। এর ফলাফল হিসেবে নেপালের প্রত্যন্ত এলাকায় পর্যটক ও পর্বতারোহণে আগ্রহীদের চাপ গেল অপ্রত্যাশিতরকম বেড়ে। পর্বতারোহীদের জ্বালানির জোগান দিতে গিয়ে নির্বিচারে জঙ্গলের গাছ কাটতে শুরু করল নেপালিরা। বিষয়টি নজর এড়ালো না স্যার এডমন্ড হিলারির। তিনি নেপাল সরকারকে চাপ দিলেন জঙ্গল রক্ষায় আইন পাশ ও এভারেস্টের আশপাশের এলাকাকে ন্যাশনাল পার্ক বা জাতীয় উদ্যান ঘোষণার জন্য। নেপালিদের এই প্রক্রিয়ার পুরো খরচ জোগান দেওয়া যেমন সম্ভব ছিল না তেমনি উদ্যান ব্যবস্থাপনায় কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না তাঁদের। আবারও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন হিলারি, নিজের জনপ্রিয়তা ও প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে নিউজিল্যান্ড সরকারকে রাজি করালেন এ বিষয়ে সব ধরনের সাহায্য করতে। 

নিউজিল্যান্ডের সর্বোচ্চ পর্বত মাউন্ট কুকের দিকে মুখ করে থাকা হিলারির ভাস্কর্য।হিলারির বই
এদিকে সফল এভারেস্ট অভিযানের পর হিলারি ও স্যার জন হান্ট অভিযান নিয়ে তাঁদের অভিজ্ঞতাকে বন্দী করলেন দুই মলাটের মধ্যে, দ্য অ্যাসসেন্ট অব এভারেস্ট নামে। বইটি ইংল্যান্ডে এ নামে প্রকাশিত হলেও যুক্তরাষ্ট্রে প্রকাশ পেল দ্য কনকোয়েস্ট অব এভারেস্ট নামে। স্যার এডমন্ড হিলারির আত্মজীবনী নাথিং ভেনচার, নাথিং উইন বের হয় ১৯৭৫ সালে।

১৯৭৭ সালে হিমালয়ে গঙ্গা নদীর উৎস পর্যন্ত এক অভিযান চালান হিলারি। এই অভিযান নিয়ে তাঁর বই ফ্রম দ্য ওশান টু দ্য স্কাই প্রকাশ পায় ১৯৭৯ সালে। 

চিরবিদায়
তবে এর মধ্যে ব্যক্তিগত জীবনে বড় বিপর্যয় নেমে আসে হিলারির। ১৯৭৫ সালে তাঁর স্ত্রী লুইজি এবং মেয়ে বেলিন্দা নেপালে প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত হন। ফাফলু গ্রামে হিলারির সঙ্গে দেখা করতে আসছিলেন তাঁরা। সেখানে হাসপাতাল তৈরি কাজ করছিলেন হিলারি। জীবনের বাকিটা সময় নেপালি জনসাধারণের উপকারে বিভিন্ন কাজ ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করে যান হিলারি। টাইম ম্যাগাজিন বিশ শতকের সবচেয়ে প্রভাব বিস্তারকারী ১০০ মানুষের মধ্যে একজন হিসেবে তাঁকে নির্বাচিত করে। দেশের, নেপালের ও সারা পৃথিবীতে তাঁর ভক্তদের শোকে স্তব্ধ করে দিয়ে নিউজিল্যান্ডে নিজ বাড়িতে ২০০৮ সালের এই দিনে মানে জানুয়ারির ১১ তারিখ মৃত্যুবরণ করেন স্যার এডমন্ড হিলারি।

তথ্যসূত্র:
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ওয়ার্ল্ড ম্যাগাজিন, এচিভমেন্ট ডট অর্গ, উইকিপিডিয়া

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জাপানের ‘অলিখিত নিয়ম’—যেগুলো না জানলে বিব্রত হতে পারেন পর্যটকেরা

ফিচার ডেস্ক
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৪২
জাপানের ‘অলিখিত নিয়ম’—যেগুলো না জানলে বিব্রত হতে পারেন পর্যটকেরা

নীরবতা পালন, সময়ের আগে পৌঁছানো এবং নিজের আবর্জনা নিজে বহন করা—এগুলো জাপানের এমন কিছু সামাজিক শিষ্টাচার, যা অনেক বিদেশি পর্যটক অজান্তেই ভঙ্গ করে বসেন।

জাপানি সমাজে ‘হারিয়ো’ নামে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা রয়েছে। এই সংস্কৃতিতে মানুষ সব সময় আশপাশের পরিবেশ ও অন্যের অনুভূতির প্রতি সচেতন; যাতে সামাজিক সৌহার্দ্য বজায় থাকে। তবে এই অলিখিত নিয়মগুলো বিদেশিদের জন্য অনেক সময় বোঝা কঠিন হয়ে পড়ে।

২০২৫ সালে মার্কিন ভ্রমণবিষয়ক ম্যাগাজিন কঁদে নাস্ত ট্রাভেলারের পাঠক জরিপে জাপান ‘বিশ্বের সেরা দেশ’ নির্বাচিত হওয়ার পর টোকিওতে বসবাসরত খাদ্য ও ভ্রমণ বিশেষজ্ঞ টোকিও হালফি পর্যটকদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ আচরণগত পরামর্শ তুলে ধরেন।

নির্ধারিত সময়ের আগে পৌঁছানো

জাপানে সময়নিষ্ঠা শুধু ভদ্রতা নয়, এটি দায়িত্ববোধ। এখানে ‘ঠিক সময়ে পৌঁছানো’ বলতে বোঝায় ৫-১০ মিনিট আগে উপস্থিত হওয়া; বিশেষ করে রেস্তোরাঁয় বুকিং থাকলে। দেরি করাকে এখানে খুবই অসম্মানজনক হিসেবে দেখা হয়। তাই যাতায়াতের সময় সব ধরনের বিলম্বের কথা মাথায় রেখে পরিকল্পনা করা জরুরি।

নীরব থাকা শিষ্টাচার

জাপানিরা শান্ত পরিবেশকে খুব গুরুত্ব দেন। ট্রেন, বাস, রেস্তোরাঁ বা যেকোনো পাবলিক স্থানে উচ্চ স্বরে কথা বলা উচিত নয়। ধীর ও শান্ত কণ্ঠে কথা বলাকে অন্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের অংশ হিসেবে ধরা হয়।

‘মোত্তাইনাই’ সংস্কৃতি বুঝুন

‘মোত্তাইনাই’ মানে অপচয় না করা। খাবার, সময় বা পরিশ্রম—কোনো কিছুই যেন নষ্ট না হয়। সেটাই এই দর্শনের মূল কথা। খাবারের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অর্ডার না করা, প্রতিটি খাবারের পেছনের শ্রম ও উপাদানের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা। এসবই এই সংস্কৃতির অংশ।

খাবারের টেবিলে শালীনতা

জাপানে খাওয়া শুধু দৈনন্দিন কাজ নয়, এটি সাংস্কৃতিক আচারের অংশ। তাই কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি—

  • খাবারের ছবি তোলার আগে শেফের অনুমতি নিন
  • মোবাইল বা ক্যামেরা সরাসরি টেবিল বা কাউন্টারে রাখবেন না
  • হাতব্যাগ টেবিলের ওপর রাখা অশোভন, অধিকাংশ রেস্তোরাঁয় ব্যাগ রাখার আলাদা ব্যবস্থা থাকে
  • ছবি তুললে দ্রুত তুলুন, খাবার ঠান্ডা হলে শেফ অসম্মানিত বোধ করতে পারেন
  • পানীয়তে ‘চিয়ার্স’ করার সময় গ্লাসে গ্লাস ঠোকাবেন না
  • তীব্র সুগন্ধিযুক্ত পারফিউম বা হ্যান্ডক্রিম ব্যবহার এড়িয়ে চলুন

গণপরিবহনে শিষ্টাচার

জাপানের গণপরিবহনে চলাচল করার সময় নীরবতা বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। ফোন সাইলেন্ট রাখতে হয়, উচ্চ স্বরে কথা বলা অনুচিত। সাধারণ ট্রেন বা বাসে খাবার খাওয়া নিষেধ। লাইনে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে জাপানিরা খুব শৃঙ্খলাবদ্ধ। আগে নামা যাত্রীদের নামতে দেওয়া হয়। এসকেলেটরেও নিয়ম আছে, টোকিওতে বাঁ পাশে দাঁড়ানো হয়, ওসাকায় ডান পাশে। স্থানীয়দের দেখে অনুসরণ করাই সবচেয়ে ভালো।

আবর্জনা নিজের দায়িত্ব

জাপানের রাস্তাঘাট পরিষ্কার হলেও সেখানে ডাস্টবিন খুব কম দেখা যায়। মানুষ সাধারণত নিজের আবর্জনা ব্যাগে রেখে দেয় এবং নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে আলাদা ভাগে (প্লাস্টিক, কাগজ, ধাতু ইত্যাদি) ফেলে।

ব্যক্তিগত পরিসরের প্রতি সম্মান

জাপানিরা ব্যক্তিগত পরিসরকে খুব গুরুত্ব দেন। অপরিচিত কাউকে জড়িয়ে ধরা বা স্পর্শ করা অস্বস্তিকর হতে পারে। করমর্দনের বদলে হালকা নত হয়ে অভিবাদন জানানোই প্রচলিত। প্রকাশ্যে ঘনিষ্ঠ আচরণও সাধারণত গ্রহণযোগ্য নয়।

ট্রাফিক আইন মানা

খালি রাস্তা হলেও জাপানিরা সবুজসংকেত না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। নিয়ম মেনে চলাই এখানে সামাজিক দায়িত্বের অংশ। পর্যটকদেরও সেটি অনুসরণ করা উচিত।

কথার আড়ালের অর্থ বোঝা জরুরি

জাপানিরা সাধারণত সরাসরি ‘না’ বলেন না। ‘কঠিন হবে’ বা ‘পরে দেখা যাবে’—এ ধরনের কথার আড়ালে ভদ্রভাবে প্রত্যাখ্যান লুকিয়ে থাকতে পারে। এখানে ‘হোননে’ (মনের কথা) ও ‘তাতেমায়ে’ (সামাজিক মুখোশ) এই দুই ধারণা খুব গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে সংঘাত এড়িয়ে সামাজিক সামঞ্জস্য বজায় রাখাই মুখ্য।

সূত্র: সিএন ট্রাভেলার

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নতুন বছরে চুলের ছাঁটে বদল আনতে চাচ্ছেন? এই হেয়ারকাটগুলো বিবেচনায় রাখতে পারেন

ফারিয়া রহমান খান 
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৩০
চুলের ক্ষেত্রে ২০২৬ সাল হয়তো হবে ‘এফোর্টলেস পলিশ ইয়ার’; যেখানে কৃত্রিমতার চেয়ে চুলের স্বাভাবিক সৌন্দর্য এবং ব্যক্তিগত রুচি বেশি প্রাধান্য পাবে। ছবি: পেক্সেলস
চুলের ক্ষেত্রে ২০২৬ সাল হয়তো হবে ‘এফোর্টলেস পলিশ ইয়ার’; যেখানে কৃত্রিমতার চেয়ে চুলের স্বাভাবিক সৌন্দর্য এবং ব্যক্তিগত রুচি বেশি প্রাধান্য পাবে। ছবি: পেক্সেলস

২০২৬ সালের ফ্যাশন ট্রেন্ড কী হতে চলেছে, তা নিয়ে শুরু হয়ে গেছে নানা জল্পনাকল্পনা; বিশেষ করে চুলের জন্য কী হতে চলেছে ট্রেন্ডি, তা নিয়ে ফ্যাশন-সচেতনদের আগ্রহের যেন শেষ নেই। কানাঘুষা চলছে, চুলের ক্ষেত্রে ২০২৬ সাল হয়তো হবে ‘এফোর্টলেস পলিশ ইয়ার’; যেখানে কৃত্রিমতার চেয়ে চুলের স্বাভাবিক সৌন্দর্য এবং ব্যক্তিগত রুচি বেশি প্রাধান্য পাবে। তবে বছরের শুরুতে যাঁরা নতুন হেয়ারকাট নিয়ে সবার সামনে হাজির হতে চাইছেন, তাঁরা অপেক্ষা না করে এই হেয়ারকাটগুলোর যেকোনোটি বেছে নিতে পারেন।

গ্র্যাজুয়েট বব

গতানুগতিক বব কাটের চিরচেনা রূপ ছাপিয়ে ২০২৬ সালে জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকতে পারে ‘গ্র্যাজুয়েট বব’। এতে পেছনের দিকের চুলগুলো কিছুটা ছোট ও সূক্ষ্ম টেক্সচারযুক্ত থাকে এবং সামনের দিকের চুলগুলো ক্রমান্বয়ে কিছুটা লম্বা হয়ে আসে। মানে, দুই কানের পাশের চুলগুলো মাথার পেছনের অংশের চুলের তুলনায় পয়েন্ট আকারে লম্বা হয়ে নামে। এই কাট চুলে চমৎকার ভলিউম যোগ করে। যাঁরা ঘরে কিংবা কর্মক্ষেত্রে—উভয় ক্ষেত্রে নিজেকে আত্মবিশ্বাসী, স্মার্ট এবং একই সঙ্গে বেশ পরিপাটি হিসেবে উপস্থাপন করতে চান, তাঁদের জন্য এই কাট হবে সেরা পছন্দ।

ডিসকানেক্টেড ফ্রিঞ্জ

যাঁরা একটু বোল্ড ও ব্যতিক্রম লুকে নিজেকে দেখতে চান, তাঁদের জন্য এই ডিসকানেক্টেড ফ্রিঞ্জ লুক। এই হেয়ারস্টাইলের মূল বিশেষত্ব হলো কপালের সামনের ছোট করে ছাঁটা চুলগুলো; যা বাকি চুলের সঙ্গে মিশে না গিয়ে কিছুটা আলাদা বা ‘ডিসকানেক্টেড’ অবস্থায় থাকে। এটি আপনার চেহারায় একটি আত্মবিশ্বাসী ও বোল্ড লুক নিয়ে আসবে।

সাইড ফ্রিঞ্জ

কোমল আর মায়াবী একটি লুকের জন্য সাইড ফ্রিঞ্জের আবেদন চিরন্তন। চুলের দৈর্ঘ্য যেমনই হোক, এক পাশে আলতো করে ঝুলে থাকা এই চুলগুলো চেহারায় একটি চমৎকার ‘ফেস-ফ্রেমিং’ ইফেক্ট তৈরি করে, যা মুখের গড়নকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। যাঁরা চুলে খুব বেশি কাটছাঁট না করে পরিবর্তন আনতে চান, এই স্টাইল তাঁদের জন্য।

প্রতিবছর বিভিন্ন হেয়ারকাট ট্রেন্ডে আসে। তবে ট্রেন্ডে থাকলে কিংবা ভালো লাগলেই যেকোনো হেয়ারকাট দেওয়াটা উচিত নয়। মুখের গড়ন ও চুলের ধরন বুঝে হেয়ারকাট বেছে নিতে হবে। না হলে পুরো লুকটাই নষ্ট হয়ে যেতে পারে।শোভন সাহা, কসমেটোলজিস্ট ও শোভন মেকওভারের স্বত্বাধিকারী

স্ক্যাল্পটেড কার্লস

যাঁদের চুল প্রাকৃতিকভাবেই কোঁকড়া, তাঁদের জন্য সুসংবাদ। আগামী বছরের ফ্যাশনে কৃত্রিমভাবে চুল সোজা করার চেয়ে চুলের স্বাভাবিক টেক্সচার বা গঠনই বেশি গুরুত্ব পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সুনির্দিষ্ট শেপ বা আকৃতিতে সাজানো এই ‘স্ক্যাল্পচারাল কার্লস’ আপনার পুরো লুকে যোগ করবে অনন্য এক মাত্রা। এটি চুলের স্বাভাবিক ভলিউম বজায় রেখে চুলে আনে প্রাণবন্ত ভাব। যাঁরা নিজের স্বাভাবিক সৌন্দর্যকে একটু ভালোভাবে তুলে ধরতে চান, তাঁদের জন্য এই স্টাইল হবে আগামী বছরের সেরা পছন্দ।

যাঁরা ঘরে কিংবা কর্মক্ষেত্রে—উভয় ক্ষেত্রে নিজেকে আত্মবিশ্বাসী, স্মার্ট এবং একই সঙ্গে বেশ পরিপাটি হিসেবে উপস্থাপন করতে চান, তাঁদের জন্য গ্র‍্যাজুয়েট বব কাট হবে সেরা পছন্দ। ছবি: পেক্সেলস
যাঁরা ঘরে কিংবা কর্মক্ষেত্রে—উভয় ক্ষেত্রে নিজেকে আত্মবিশ্বাসী, স্মার্ট এবং একই সঙ্গে বেশ পরিপাটি হিসেবে উপস্থাপন করতে চান, তাঁদের জন্য গ্র‍্যাজুয়েট বব কাট হবে সেরা পছন্দ। ছবি: পেক্সেলস

সফট কার্ভ বব

হলিউডের পুরোনো সিনেমা দেখতে যাঁরা ভালোবাসেন, তাঁরা বেছে নিতে পারেন এই হেয়ারকাট। ঘাড় পর্যন্ত কাটা চুলের আগার অংশ সামান্য কার্ভ করা থাকে এই হেয়ারস্টাইলে। শুধু এক পাশে সিঁথি কেটে পরিপাটি করে আঁচড়ে নিলেই চুল নিয়ে আর কোনো ভাবনা নেই।

যাঁরা নিজের স্বাভাবিক সৌন্দর্যকে একটু ভালোভাবে তুলে ধরতে চান, তাঁদের জন্য স্ক্যাল্পটেড কার্লস স্টাইল হবে আগামী বছরের সেরা পছন্দ।
যাঁরা নিজের স্বাভাবিক সৌন্দর্যকে একটু ভালোভাবে তুলে ধরতে চান, তাঁদের জন্য স্ক্যাল্পটেড কার্লস স্টাইল হবে আগামী বছরের সেরা পছন্দ।

চুলে প্রাধান্য পাবে চকচকে রঙ

চুলের রঙের ক্ষেত্রে আগামী বছর রাজত্ব করতে চলেছে গাঢ় বাদামি বা ল্যাভিস ব্রুনেট শেডের নানা বৈচিত্র্য। ধারণা করা হচ্ছে, বিশেষ করে কফি মোকা বা এসপ্রেসোর মতো উজ্জ্বল ও চকচকে রংগুলো ফ্যাশন-সচেতনদের পছন্দের শীর্ষে থাকবে। এই শেডগুলোর বিশেষত্ব হলো এদের অসাধারণ উজ্জ্বলতা ও গ্লসি ফিনিশ, যা চুলে একটি প্রাকৃতিক কিন্তু অত্যন্ত ‘লাক্সারিয়াস’ বা বিলাসবহুল ভাব ফুটিয়ে তোলে। সেই সঙ্গে এই রংগুলো বাংলাদেশি স্কিন টোনগুলোর সঙ্গে খুব ভালো মানায় এবং চুলে একটা স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ভাব আনে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের রাশিফল: অন্যের নামে সঙ্গীকে ডেকে হুলুস্থুল বাধাবেন, হঠাৎ অর্থপ্রাপ্তির সম্ভাবনা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ১০
আজকের রাশিফল: অন্যের নামে সঙ্গীকে ডেকে হুলুস্থুল বাধাবেন, হঠাৎ অর্থপ্রাপ্তির সম্ভাবনা

মেষ

আজ আপনার আত্মবিশ্বাস বুর্জ খলিফার সমান উঁচুতে থাকবে। অফিসে বসের সামনে এমন ভাব করবেন যেন পুরো কোম্পানি আপনার বুদ্ধিতেই চলছে, অথচ আপনি হয়তো ই-মেইল পাসওয়ার্ডটাই মনে করতে পারছেন না। বসের মুড আজ খিটখিটে হতে পারে, তাই অতিরিক্ত ক্রেডিট নিতে গিয়ে আবার অতিরিক্ত কাজ ঘাড়ে চাপিয়ে নেবেন না। কাজের ভান করাটাও একটা শিল্প, আজ সেটা রপ্ত করুন। রাস্তায় হাঁটার সময় ফোনের দিকে নয়, রাস্তার গর্তের দিকে তাকান।

বৃষ

আজ আপনার ‘রাজযোগ’ হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা, তবে শর্ত হলো—বিছানা ছাড়তে হবে। আলস্য আজ আপনার প্রধান শত্রু। পুরোনো কোনো বন্ধুর হঠাৎ উদয় হতে পারে এবং ৯৯ পারসেন্ট সম্ভাবনা সে আপনার কাছে টাকা ধার চাইবে। টাকা দেওয়ার আগে আয়না দেখে ‘না’ বলার প্র্যাকটিস করে নিন। খাবার দেখে ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে মনে রাখবেন পকেট আপনারই। কাচ্চি বিরিয়ানির বদলে মৌসুমি সবজি খেয়ে পেটকে একটু শান্তি দিন।

মিথুন

আজ আপনার মুখে খই ফুটবে। যুক্তি দিয়ে বাড়ির লোকেদের এমনকি দেয়ালে টাঙানো ক্যালেন্ডারকেও হার মানিয়ে দেবেন। কর্মক্ষেত্রে আপনার কথা শোনার চেয়ে সবাই আপনার টাইপিং মিসটেক ধরায় বেশি উৎসাহ দেখাবে। প্রেমজীবনে সামান্য ঝগড়ার যোগ আছে। কারণ, আপনি হয়তো সঙ্গীর নাম ভুল করে অন্য কারোর নামে ডেকে ফেলতে পারেন! কথা কম বলে কান খোলা রাখুন। ফোনের রিচার্জ শেষ হওয়ার আগেই প্রয়োজনীয় সব ঝগড়া মিটিয়ে নিন।

কর্কট

হঠাৎ অর্থপ্রাপ্তির যোগ আছে—হতে পারে আলমারির পুরোনো কোটের পকেটে বা ধোয়া প্যান্টের ভেতর থেকে একটা কড়কড়ে নোট পেয়ে যাবেন! ব্যবসায়ীদের জন্য দিনটি ভালো, তবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় মাথা খাটান, মন নয়। বাড়িতে হুটহাট অতিথির আগমনে পকেটে টান পড়তে পারে এবং প্রিয় খাবারটি তাদের পাতে চলে যেতে পারে। হাসিমুখে অতিথি বিদায় করাটাই আজকের প্রধান কাজ। মিষ্টি খাওয়ার আগে আপনার সুগার এবং প্যান্টের কোমরের মাপের কথা ভাবুন।

সিংহ

আজ নিজেকে বনের রাজা ভাবলেও বাড়িতে এসে দেখবেন আপনি বড়জোর ‘বিড়াল’। বাড়ির লোকের কাছে অকারণ ঝাড়ি খাওয়ার যোগ আছে। কর্মক্ষেত্রে গাধার মতো পরিশ্রম করলেও ক্রেডিট নেওয়ার সময় দেখবেন অন্য কেউ ফিতা কাটছে। তবে বিকেলের দিকে প্রেমের ক্ষেত্রে কোনো চমক অপেক্ষা করছে—হয়তো কোনো ব্লক হওয়া আইডি থেকে আনব্লক হতে পারেন! গর্জন না করে বিড়ালের মতো মিউ মিউ করলে আজ শান্তি পাবেন। আয়নায় নিজের দিকে তাকিয়ে বেশিক্ষণ হাসবেন না, লোকে পাগল ভাবতে পারে।

কন্যা

আজ আপনার সবকিছুতেই ‘পারফেকশন’ চাই। চায়ের কাপে এক ফোঁটা দাগ বা কার্পেটের এক কোণে সামান্য ধুলা দেখলে আপনার বিপি বেড়ে যেতে পারে। ভবিষ্যতের চিন্তায় মগ্ন থেকে ডাল পুড়িয়ে ফেলার রেকর্ড আজ আপনি গড়তে পারেন। সমালোচনা করার স্বভাবটা আজ একটু কমানোর চেষ্টা করুন। ভুল ধরা বন্ধ করে নিজের ভুলগুলো একবার গুনুন। লজিক দিয়ে কথা বলুন, ম্যাজিক বা অতিপ্রাকৃত কিছু আশা করবেন না।

তুলা

আজ আপনার ভেতরকার ‘শপার’ বা ক্রেতা সত্তাটি জেগে উঠবে। পকেটে টাকা থাকুক বা না থাকুক, অনলাইন শপিং অ্যাপে উইশলিস্ট ভরিয়ে দেবেন। দামি জিনিস কিনতে গিয়ে সস্তা নকল জিনিস কিনে ঠকার সম্ভাবনা ১০০ শতাংশ। স্বামী বা স্ত্রীর সঙ্গে মান-অভিমান চললে আজ একটা ডার্ক চকলেট দিয়েই সব মিটিয়ে নিতে পারেন। পকেটের ওজন বুঝেই পা ফেলুন, ক্রেডিট কার্ড আজ আপনার শত্রু। শপিং মলে ঢোকার আগে ফোনটা সাইলেন্ট করে দিন।

বৃশ্চিক

আজ আপনার মধ্যে ফেলুদা বা শার্লক হোমস জেগে উঠবে। কে কার সঙ্গে চ্যাট করছে আর কার স্ট্যাটাস হাইড করা—সব খবর আজ রাখতে চাইবেন। গোপন শত্রুরা পেছনে কাঠি করার চেষ্টা করবে, কিন্তু আপনিও তো কম যান না! আজ পাল্টা হুল ফোটানোর জন্য আপনি মানসিকভাবে প্রস্তুত। গোয়েন্দাগিরি ব্যক্তিগত জীবনে না করে কাজে লাগান। অন্যের ফোনে উঁকি মারা স্বাস্থ্যের জন্য (বিশেষ করে ঘাড়ের জন্য) ক্ষতিকর।

ধনু

বাবার সঙ্গে দীর্ঘদিনের আর্থিক বা সম্পত্তি-সংক্রান্ত ঝামেলা আজ এক কাপ চায়ের আড্ডায় মিটে যেতে পারে। বিকেলের দিকে আকাশকুসুম কল্পনা করবেন—গাড়ি কেনা বা বিদেশে সেটল হওয়া নিয়ে (ব্যাংকে ৫০০ টাকা ব্যালেন্স থাকলেও)। তবে জীবনসঙ্গীর আবদার মেটাতে গিয়ে আজ হাঁসফাঁস অবস্থা হতে পারে। স্বপ্ন দেখুন, কিন্তু বাস্তবের মাটিটা শক্ত করে ধরুন। বন্ধুদের পার্টি দেওয়ার চক্করে মাসের বাজেট শেষ করবেন না।

মকর

অফিসে কাজের চাপে আজ আপনার অবস্থা হতে পারে ‘ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন’ দেখার মতো। বসের ই-মেইল দেখলে মনে হতে পারে হিমালয়ে চলে যাই, কিন্তু পরক্ষণেই স্যালারির মেসেজটার কথা ভেবে কাজে মন দেবেন। আজ সহকর্মীদের সঙ্গে রাজনীতির বদলে কাজের আলোচনা করাই শ্রেয়। ধৈর্যই আজ আপনার সবচেয়ে বড় অস্ত্র। অফিসের ফ্রি চা-কফি বেশি খাবেন না, অ্যাসিডিটি হতে পারে।

কুম্ভ

আজ ভীষণ সমাজসেবী ও দায়িত্বশীল হয়ে উঠবেন। বাড়ির ঝুল ঝাড়া থেকে শুরু করে পাড়ার মোড়ে আড্ডা দেওয়া—সবতেই আপনার সক্রিয় উপস্থিতি। পুরোনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়ে নস্টালজিয়ায় ভুগবেন। শেয়ার বাজারে টাকা থাকলে আজ একটু নজর রাখুন, গ্রাফ আপনার দিকে ঘুরতেও পারে। দায়িত্ব পালন করুন কিন্তু সেটা যেন লোকদেখানো না হয়। আলস্য ত্যাগ করুন, তবে কাজ করতে গিয়ে হাঁপিয়ে যাবেন না।

মীন

যাঁরা সিঙ্গেল আছেন, আজ তাঁদের জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসার শুভ যোগ আছে। আর যাঁরা বিবাহিত, তাঁরা সঙ্গীর সঙ্গে কোনো পুরোনো রেস্টুরেন্টে গিয়ে ঝগড়া মিটিয়ে নিন। ব্যবসায় অংশীদারের সঙ্গে আজ সামান্য কারণে কথা-কাটাকাটি হতে পারে, তাই মুখে কুলুপ আঁটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। কল্পনা আর বাস্তবের মাঝে একটা সীমারেখা টানুন। মাছের মতো শুধু পানি না খেয়ে মাঝে মাঝে লেবু-জলও খান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

২০২৫ সালের বিয়ের সাজে যা কিছু এল এবং গেল

ফারিয়া রহমান খান 
মডেল: সাবরিন ইসলাম। ছবি: অরুণ কুমার সিংহ
মডেল: সাবরিন ইসলাম। ছবি: অরুণ কুমার সিংহ

ডিসেম্বর মানেই বিয়ের মৌসুম। আর বিয়ে মানেই সাজগোজ। জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করার এই মুহূর্ত স্মরণীয় করে রাখতে বর-কনে বিয়ের সাজ নিয়ে কতই-না পরিকল্পনা করেন! বিয়ের সাজের সবকিছু অর্থাৎ কনের লেহেঙ্গা কিংবা শাড়ি বা বরের শেরওয়ানি—সবকিছুই হতে হবে নিখুঁত। খেয়াল করলে দেখবেন, প্রতিবছর বিয়ের পোশাক ও সাজে নতুন কিছু যোগ হয়েছে, আবার বাদ পড়েছে সাজের কিছু পুরোনো চল। ২০২৫ সালেও বিয়ের ট্রেন্ডে এসেছে বেশ কিছু পরিবর্তন। কসমেটোলজিস্ট ও শোভন মেকওভারের স্বত্বাধিকারী শোভন সাহার সঙ্গে কথা বলে চলতি বছর বিয়ের সাজে কী কী বিষয় যোগ ও বিয়োগ হয়েছে, তা নিয়ে লিখেছেন ফারিয়া রহমান খান

এবার বিয়ের ট্রেন্ডে যা কিছু যোগ হয়েছে

তাজা ফুলের আভিজাত্য

বিগত কয়েক বছরে চুল সাজাতে এবং হলুদের গয়না হিসেবে নারীরা আর্টিফিশিয়াল ফুল ব্যবহার করেছেন। শাড়ি বা লেহেঙ্গার রঙের সঙ্গে মিলিয়ে এসব গয়না ব্যবহারে ব্যাপক উৎসাহ দেখা গেছে নারীদের মধ্য়ে। কিন্তু এখন চুল ও গয়নায় তো বটেই, হলুদ বা মেহেদির অনুষ্ঠানে ফ্লোরাল ওড়নায়ও আর্টিফিশিয়াল ফুলের চেয়ে তাজা ফুল ব্যবহারে আগ্রহ দেখা গেছে। শোভন সাহা বলেন, ‘এ বছর বিয়ের ডেকোরেশনেও বড় জায়গা করে নিয়েছে বড় বড় ফুলের ঝাড়বাতি এবং ফুলের পাপড়ি বিছানো হাঁটার পথ সবার নজর কেড়েছে, যা আগামী বছরেও ট্রেন্ডে থাকবে বলে আশা করা যাচ্ছে।’

আভিজাত্যের ছোঁয়া

বিয়েতে রাজকীয় সাজের প্রতি বাঙালির টান চিরন্তন। ২০২৫ সালের মতো আগামী বছরেও ট্রেন্ডে থাকবে মীনাকারি কাজ, ঐতিহ্যবাহী বেনারসি, জামদানি, কাঞ্জিভরম ও মসলিন শাড়ি। সেই সঙ্গে বরের সাজে রাজকীয় ভাব আনতে ভারী কাজের শেরওয়ানি বা জারদৌসি কাজের পাঞ্জাবি বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।

পরিবেশবান্ধব বিয়ে

বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে পরিবেশ নিয়ে সচেতনতা প্রবলভাবে দেখা যাচ্ছে। ফলে প্লাস্টিকমুক্ত সাজসজ্জা, স্থানীয় খাবারের মেনু এবং মাটিতে রোপণ করা এমন ‘প্লান্টেবল’ নিমন্ত্রণপত্র এখন ট্রেন্ডে ইন হয়েছে। বরের জন্য সুতির পাঞ্জাবি-পায়জামা ও কনের জন্য পরিবেশবান্ধব কাপড়ে তৈরি পোশাক, যা অন্যান্য সময়েও পরার উপযোগী—এমন সাজপোশাকেও আগ্রহ বাড়ছে বর্তমান সময়ের তরুণদের।

কাস্টমাইজেশন ইজ বেস্ট

একঘেয়ে গতানুগতিক বিয়ের বদলে এখন মানুষ নিজের পছন্দ ও আরামকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। বিয়েতে নিজস্ব ‘হ্যাশট্যাগ’ এবং নিজেদের পরিচয় কিংবা ভালোবাসার গল্প দিয়ে বানানো ছোট ভিডিও বা স্লাইড শো এখন বিয়ের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। অনেকে বিয়ের সময়টাকে ছোট করায় আগ্রহী। ঘরোয়া চায়ের আড্ডাতেই সেরে নিচ্ছেন বিয়ের অনুষ্ঠান। এরপর বর-কনে মিলে বিকেলে বেরিয়ে পড়ছেন হানিমুন ট্রিপে। এতে খরচও কমছে, আনন্দও বাড়ছে।

রং ও উজ্জ্বলতা

এক রঙের পোশাকের দিন এখন শেষ। এবার বিয়েতে রঙের বৈচিত্র্য থাকবে তুঙ্গে। ফুশিয়া পিঙ্কের সঙ্গে পান্না সবুজ কিংবা হলুদ ও রাজকীয় বেগুনির সংমিশ্রণ পোশাকে যোগ করবে নতুন মাত্রা। এ ছাড়া কনের লেহেঙ্গা বা শাড়িতে সোনালি, রুপালি কিংবা ব্রোঞ্জ রঙের মেটালিক ছোঁয়া বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে। তা ছাড়া বার্বি পিঙ্ক বা গোলাপি রঙের বিভিন্ন শেড এখন আবার ট্রেন্ড হিসেবে ফিরে আসছে।

মডেল: সাবরিন ইসলাম। ছবি: অরুণ কুমার সিংহ
মডেল: সাবরিন ইসলাম। ছবি: অরুণ কুমার সিংহ

সাজে মিলমিশ

বিয়ের সাজে এখন বিভিন্ন স্থানের সাজের মিলমিশ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যেমন কনে হয়তো সাদা গাউন পরছেন, সঙ্গে হাতে পরছেন টকটকে লাল কাচের চুড়ি। আবার বাঙালি সাজের সঙ্গে মারাঠি সাজ ব্লেন্ড করেও বিয়ের পিঁড়িতে বসতে দ্বিধা করছেন না কনেরা। এমনটাই জানান শোভন সাহা।

বাদ পড়েছে যেগুলো

অতিরিক্ত কারুকাজ ও ঝলকানি

একসময় বিয়েতে মাথা থেকে পা পর্যন্ত পাথরের কিংবা চুমকি-পুঁতির ভারী কাজের পোশাকের চল ছিল। কিন্তু বর্তমানে এসব ‘ওভার দ্য টপ’ সাজ একদমই ‘আউট’। তবে এখন সূক্ষ্ম সুতার কাজ অথবা মেশিন এমব্রয়ডারির চাহিদা অনেক বেশি। ডেকোরেশনের ক্ষেত্রেও সবকিছু একই রঙে করার দিন শেষ। ভিন্ন ভিন্ন রং ও টেক্সচারের ব্যবহারই এখন আধুনিকতা।

কনের ভারী ওড়না

২০২৫ বলছে, ভারী বিয়ের ওড়না এখন বাতিলের খাতায়। এর বদলে নেট, অরগাঞ্জা কিংবা হালকা লেসের কাজ করা লম্বা ওড়না একটা এলিগ্যান্ট লুক এনে দেয়।

বরের গতানুগতিক সাজ

বরের সেই ক্রিম রঙের শেরওয়ানি এখন একেবারেই সেকেলে। এখন বরদের পোশাকে গাঢ় রং ও প্রিন্টের কাপড় বেশি জনপ্রিয়। পাঞ্জাবির ওপর রঙিন বা ফ্লোরাল প্রিন্টের কটি বরের সাজে আভিজাত্য ও আধুনিকতা নিয়ে আসে।

ভারী গয়না

শোভন সাহা জানান, সেকেলে ভারী গয়নার বদলে এখন চিকন বা লেয়ারিং করা গয়নার ট্রেন্ড চলছে। কানে হালকা দুল, গলায় পাতলা হারের কয়েকটা লেয়ার আপনার সাজকে অনেক বেশি মার্জিত ও ফ্যাশনেবল করতে পারে। গয়নার ক্ষেত্রে এখন মূল ট্রেন্ডই হলো ‘লেস ইজ মোর।’

পরিশেষে বলা যায়, বিয়ে মানে শুধুই অন্যের চোখে সেরা হওয়া নয়, বরং নিজের ব্যক্তিত্ব ও রুচির প্রকাশ ঘটানো। ট্রেন্ড যা-ই হোক না কেন, স্বকীয়তা সব সময় বজায় রাখা দরকার। বিয়ে যেহেতু ‘ওয়ানস ইন আ লাইফটাইম’ একটা বিষয়, সেহেতু আনন্দ ও স্টাইলটাও হওয়া চাই একেবারেই অনন্য। তাই এই নতুন ধারাগুলো মাথায় রেখে আজই শুরু করে দিতে পারেন বিয়ের পরিকল্পনা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত