Ajker Patrika

মার্কিন সহায়তা বন্ধে হুমকির মুখে বাংলাদেশসহ বিশ্বের লাখো মানুষ

রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে ইউএসএআইডির সহায়তা। ছবি: ইউএসএআইডি
রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে ইউএসএআইডির সহায়তা। ছবি: ইউএসএআইডি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে নতুন প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। এর সর্বশেষ লক্ষ্যবস্তু ছিলো, জীবন রক্ষাকারী আন্তর্জাতিক সাহায্য। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর নির্দেশনা অনুসারে এই সহায়তা সাময়িকভাবে বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর ফলে, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে লাখ লাখ মানুষের জীবন হুমকির মুখে পড়েছে।

মানবিক সাহায্যবিষয়ক সংবাদমাধ্যম ডেভেক্সে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ জানুয়ারি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের অফিস অব ফরেন অ্যাসিস্ট্যান্সের নতুন প্রধান পিটার ম্যারোকো এক নির্দেশনা জারি করে সব নতুন ব্যয়ের ওপর স্থগিতাদেশ দেন। একই সঙ্গে, যতক্ষণ না বিদ্যমান সহায়তা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে প্রমাণিত না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত বিদ্যমান অনুদান কার্যক্রমও বন্ধ রাখতে বলা হয়।

এই নির্দেশনা ট্রাম্পের প্রথম দিন সই করা ৯০ দিনের সহায়তা তহবিলের স্থগিতাদেশকেও ছাড়িয়ে গেছে। ট্রাম্প প্রশাসনের নির্দেশনার ফলে অনেক সংস্থা তাদের কর্মীদের ছাঁটাই বা সাময়িক ছুটিতে পাঠিয়েছে এবং কার্যক্রম বন্ধ করছে। তবে জরুরি খাদ্য সাহায্য (যা প্রায়ই আমেরিকান কৃষকদের সহায়তা করে) এবং ইসরায়েল ও মিসরের সামরিক সহায়তার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম রাখা হয়েছে। অন্য সাহায্য সংস্থাগুলো ছাড়পত্রের জন্য বা অন্তত কোনো নির্দেশনার জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছে।

অনেকেই বিদেশি সাহায্যের বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করলেও মার্কিন নাগরিকেরা প্রায়ই এ খাতে সরকারি ব্যয়ের পরিমাণ অতিরঞ্জিত করে ভাবেন। বাস্তবে এটি ফেডারেল বাজেটের ১ শতাংশেরও কম (যা মার্কিন সামরিক ব্যয়ের তুলনায় নগণ্য)।

আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহায়তা পুরোপুরি মানবিক নয়। ইতিহাস দেখিয়েছে, ধনী ও শক্তিশালী দেশগুলোও দারিদ্র্য ও রোগের প্রভাব থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে না। বিদেশে উন্নয়নে বিনিয়োগ নিরাপত্তাহীনতা ও সংঘাত কমাতে সাহায্য করে, যা সীমান্ত পেরিয়ে প্রভাব বিস্তার করতে পারে।

সাহায্য সংস্থাগুলো বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে এবং এই পর্যালোচনা কীভাবে পরিচালিত হবে বা বন্ধের নির্দেশনা কীভাবে মার্কিন প্রতিশ্রুতিগুলোকে প্রভাবিত করবে, তা জানার চেষ্টা করছে। এরই মধ্যে সুপেয় পানি ও কলেরার মতো রোগ প্রতিরোধের প্রকল্প বন্ধ হওয়ার খবর এসেছে।

সেন্টার ফর গ্লোবাল ডেভেলপমেন্টের গ্লোবাল হেলথ প্রোগ্রামের পরিচালক জাভিয়ের গুজমান বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বৃহত্তম সাহায্যদাতা, যার সহায়তার ওপর লাখ লাখ মানুষে জীবন নির্ভরশীল। এই ধরনের ব্যাঘাতের প্রভাব বিশাল হতে পারে।’ তিনি প্রেসিডেন্টস ইমার্জেন্সি প্ল্যান ফর এইডস রিলিফের (পিইপিএফএআর) মতো প্রকল্পের প্রভাব তুলে ধরেন। এই প্রকল্প ২৫ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের জীবন রক্ষা করেছে। গুজমান বলেন, ‘পিইপিএফএআর স্বল্প খরচে জীবন রক্ষাকারী সাহায্যের একটি উদাহরণ, যা মার্কিন তহবিলকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।’

অক্সফাম আমেরিকার প্রধান অ্যাবি ম্যাক্সম্যান মন্তব্য করেন, ‘বৈদেশিক উন্নয়ন সহায়তা স্থগিত করে ট্রাম্প প্রশাসন সংকটাপন্ন মানুষদের জীবন ও ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে ফেলেছে। এই তহবিল স্থগিতাদেশের ফলে বিশ্বের সবচেয়ে জরুরি মানবিক সংকট মোকাবিলায় নির্ভরশীল মানুষদের ওপর তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়বে। এটি বহু মানুষের জন্য জীবন-মৃত্যুর বিষয় হয়ে দাঁড়াতে পারে।’

ম্যাক্সম্যান আরও বলেন, ‘এই সিদ্ধান্তের প্রভাব সারা বিশ্বের সংকটাপন্ন মানুষ এবং বৈশ্বিক সাহায্য ব্যবস্থায় ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া ফেলবে। সাহায্য সংস্থাগুলো অনিশ্চয়তার কারণে কার্যক্রম চালাতে বা পরিকল্পনা করতে পারছে না। সুদান, ইয়েমেন, সিরিয়া এবং বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থীসহ অনেক সংকট প্রবণ এলাকায় ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হবে।’ ম্যাক্সম্যান এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আহ্বান জানান এবং তহবিল ও কর্মসূচি অব্যাহত রাখার গুরুত্ব তুলে ধরেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নববর্ষের ভাষণে তাইওয়ানকে ফের চীনের সঙ্গে একীভূত করার অঙ্গীকার করলেন সি চিন পিং

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। ছবি: এপির সৌজন্যে
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। ছবি: এপির সৌজন্যে

ইংরেজি নববর্ষের (২০২৬) প্রাক্কালে দেশবাসীর উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তাইওয়ানকে চীনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে পুনরায় একীভূত করার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় বেইজিং থেকে প্রচারিত ভাষণে সি বলেছেন, মাতৃভূমির পুনর্মিলন সময়ের দাবি এবং এটি একটি অপ্রতিরোধ্য ধারা, যা কেউ থামাতে পারবে না।

তাইওয়ানকে ঘিরে চীনের বিশাল সামরিক মহড়া ‘জাস্টিস মিশন ২০২৫’ শেষ হওয়ার মাত্র এক দিন পর সি চিন পিংয়ের এই কড়া বার্তা এল। উল্লেখ্য, চীন তাইওয়ানকে নিজের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে দাবি করে এবং প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগ করে তা দখলের হুমকি দিয়ে আসছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সি চিন পিংয়ের ভাষণের আগে গত সোমবার ও গতকাল মঙ্গলবার তাইওয়ান ঘিরে নজিরবিহীন সামরিক মহড়া চালায় চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)। তাইওয়ানের প্রধান বন্দরগুলো অবরোধের অনুকরণে এই মহড়া চালায় পিএলএ। এতে চীনা নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী ও কোস্ট গার্ড অংশ নেয়।

এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৮৯টি যুদ্ধবিমান এই মহড়ায় অংশ নেয়। সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, তাইওয়ানের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক রেকর্ড ১১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির প্রতিবাদেই বেইজিং এই কঠোর অবস্থান নিয়েছে।

আজ বুধবার সন্ধ্যায় বেইজিংয়ে দেওয়া ভাষণে সি বলেন, চীন ‘খোলা বাহুতে বিশ্বকে আলিঙ্গন করছে’। তিনি এ বছর বেইজিংয়ে আয়োজিত কয়েকটি বহুপক্ষীয় সম্মেলনের কথাও তুলে ধরেন। এর মধ্যে আগস্টে অনুষ্ঠিত সাংহাই কো-অপারেশন সামিটের কথা উল্লেখ করেন, যেখানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানসহ বিশ্বনেতারা অংশ নেন। সম্মেলনটি বেইজিংয়ের কাছের বন্দরনগরী তিয়েনচিনে অনুষ্ঠিত হয়।

সির ভাষণের সময় চীনের রাষ্ট্রীয় টিভিতে গত সেপ্টেম্বরের বিশাল সামরিক প্যারেডের দৃশ্য দেখানো হয়, যেখানে সি চিন পিংয়ের পাশে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও উত্তর কোরিয়ার কিম জং উনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। পশ্চিমা বিশ্লেষকেরা এই জোটকে ‘অ্যাক্সিস অব আপহিভ্যাল’ বা অস্থিরতার অক্ষ হিসেবে অভিহিত করছেন।

ভাষণে সি চিন পিং ‘তাইওয়ান রেট্রোসেশন ডে’ বা তাইওয়ান প্রত্যাবর্তন (২৫ অক্টোবর) দিবসের গুরুত্ব তুলে ধরেন। ১৯৪৫ সালের এই দিনেই তাইওয়ানে জাপানি ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান হয়। তবে চীন এখন এ দিনকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেছেন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিংতে।

সির ভাষণে চীনের উচ্চপ্রযুক্তি খাতে অগ্রগতির কথাও তুলে ধরা হয়। তিনি কিকবক্সিং রোবট এবং মে মাসে উৎক্ষেপণ করা ধূমকেতু অনুসন্ধান মিশন ‘তিয়ানওয়েন-২’-এর কথা উল্লেখ করেন। পাশাপাশি ভিডিও গেম ব্ল্যাক মিথ: উকং এবং অ্যানিমেটেড সিনেমা ‘নে ঝা ২’-এর সাফল্যের কথা উল্লেখ করে চীনা সংস্কৃতির জয়গান করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ট্রাম্পের বাঁ হাতে নতুন কালশিটে দাগ, ফের আলোচনায় প্রেসিডেন্টের স্বাস্থ্য

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গত ২৪ ডিসেম্বর ফ্লোরিডার পাম বিচে অবস্থিত মার-এ-লাগোতে ‘সান্তা ট্র্যাকার ফোন কল’ অনুষ্ঠানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
গত ২৪ ডিসেম্বর ফ্লোরিডার পাম বিচে অবস্থিত মার-এ-লাগোতে ‘সান্তা ট্র্যাকার ফোন কল’ অনুষ্ঠানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাম হাতে কালশিটে বা কালচে দাগ দেখা দেওয়ায় তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়ে নতুন করে জল্পনা শুরু হয়েছে। শপথ নেওয়ার এক বছরের মাথায় ও ৮০ বছরে পা দেওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে প্রেসিডেন্টের এই শারীরিক পরিবর্তনগুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

কয়েক মাস ধরে ট্রাম্পের ডান হাতে কালশিটে দাগ দেখা গেলেও সম্প্রতি বেশ কিছু অনুষ্ঠানে তাঁর বাম হাতের পেছনেও একই ধরনের দাগ লক্ষ করা গেছে। হোয়াইট হাউস এর আগে ডান হাতের দাগের কারণ হিসেবে ‘অতিরিক্ত করমর্দন’ ও নিয়মিত ‘অ্যাসপিরিন’ সেবনের কথা বলেছিল। তবে এই নতুন দাগ হোয়াইট হাউসের আগের ব্যাখ্যাকে আরও জটিল করে তুলেছে।

চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন, নতুন এই দাগ নিয়ে তাৎক্ষণিক উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। তাঁদের মতে, এটি বয়সজনিত সাধারণ একটি অবস্থা হতে পারে। তবে তাঁরা সতর্ক করে বলেছেন, ট্রাম্প তাঁর স্বাস্থ্য নিয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে অনিচ্ছুক থাকায় বিষয়টি নিয়ে যে নজরদারি চলছে, তা আরও বাড়তে পারে।

নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ফাইনবার্গ স্কুল অব মেডিসিনের জেনারেল ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক জেফ্রি লিন্ডার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে বলেন, তাঁরা কৌতূহলের এই চক্রটাকেই আরও উসকে দিচ্ছেন। তিনি সব সময় মানুষের সামনে যান, তাঁর একটা ভাবমূর্তি আছে। এমন ছোট বিষয়ও সেই ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফেরার পর থেকে তাঁর স্বাস্থ্য নিয়ে নানা জল্পনা চলছে। বিষয়টি তাঁর জন্য সংবেদনশীল। কারণ, তিনি প্রায়ই নিজের কর্মশক্তি ও উদ্যমের কথা বলেন।

গত বছরের নির্বাচনের আগে তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বয়স ও মানসিক-শারীরিক সক্ষমতা নিয়ে ভোটারদের উদ্বেগ উসকে দিয়েছিলেন। ৮৩ বছর বয়সী বাইডেনকে তিনি এখনো তুলনার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রায়ই বলেন, ‘আপনি কি মনে করেন, বাইডেন এটা করতে পারতেন?’

তবে তুলনামূলকভাবে ব্যস্ত সূচি বজায় রাখলেও ট্রাম্প নিজেও স্বাস্থ্যসংক্রান্ত প্রশ্ন এড়াতে পারেননি। গ্রীষ্মকালে তাঁর পা ফুলে যাওয়ার ছবি প্রকাশের পর হোয়াইট হাউস জানায়, ট্রাম্প ‘ক্রনিক ভেনাস ইনসাফিসিয়েন্সি’ নামে একধরনের শিরার রোগে আক্রান্ত। এটি সাধারণত বয়স্কদের মধ্যে দেখা যায়।

চলতি সপ্তাহে ট্রাম্পের বাঁ হাতের দাগ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে হোয়াইট হাউস নতুন কোনো ব্যাখ্যা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জনগণের মানুষ। তিনি প্রতিদিন ইতিহাসের যেকোনো প্রেসিডেন্টের চেয়ে বেশি মানুষের সঙ্গে দেখা করেন ও হাত মেলান।

কিন্তু একাধিক চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ সিএনএনকে বলেছেন, ট্রাম্প যেহেতু ডানহাতি, তাই বাঁ হাতের দাগ কেবল হাত মেলানোর কারণেই হয়েছে—এমন সম্ভাবনা কম। তবে হ্যাঁ, বয়স ও অ্যাসপিরিন সেবনের কারণে এমন দাগ দেখা দিতে পারে।

জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির স্কুল অব মেডিসিনের অধ্যাপক ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনির দীর্ঘদিনের চিকিৎসক জোনাথন রাইনার বলেন, কখনো কখনো সামান্য আঘাত বা কোথাও ধাক্কা লাগলেও এমন দাগ হতে পারে।

রাইনার জানান, তিনি ব্যক্তিগতভাবে ট্রাম্পকে কখনো পরীক্ষা করেননি। তবে তিনি বলেন, অ্যাসপিরিনের চেয়ে শক্তিশালী ওষুধ সেবনকারীদের মধ্যেও এমন দাগ দেখা যায়। এতে প্রশ্ন উঠেছে—ট্রাম্প কি তাঁর সব ওষুধের তথ্য প্রকাশ করেছেন?

রাইনার অবশ্য বলেছেন, এমন ওষুধ সেবন করা খুবই সাধারণ এবং এটি বড় কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকির ইঙ্গিত নয়। উদাহরণ হিসেবে তিনি অফিসে থাকাকালে বাইডেনের ‘ইলিকুইস’ নামে রক্ত পাতলা করার ওষুধ ব্যবহারের তথ্য প্রকাশের কথা উল্লেখ করেন।

রাইনার বলেন, এখন প্রশ্নটা চিকিৎসার চেয়ে স্বচ্ছতা নিয়ে বেশি। হোয়াইট হাউস ট্রাম্পের ওষুধসংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব না দিয়ে স্বাস্থ্য নিয়ে অতিরিক্ত নজরদারির সমালোচনাই বেশি করে।

এদিকে হোয়াইট হাউসে ফেরার আগে থেকে ট্রাম্পের ডান হাতে কালশিটে দাগ ছিল। তিনি সেটি ভারী মেকআপ বা ব্যান্ডেজ দিয়ে ঢাকতে শুরু করলে এবং ক্যামেরা থেকে আড়াল করতে অন্য হাত ব্যবহার করলে বিষয়টি আরও আলোচনায় আসে।

ক্রনিক ভেনাস ইনসাফিসিয়েন্সি রোগের তথ্য জানানোর সময়ই হোয়াইট হাউস ডান হাতের দাগের প্রসঙ্গ তোলে। সে সময় তাঁর চিকিৎসকের চিঠিতে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। তিনি সব দিক থেকে সুস্থ আছেন।

গত এপ্রিলে করা শারীরিক পরীক্ষার পর অক্টোবরে হঠাৎ আবার ওয়াল্টার রিড হাসপাতালে যান ট্রাম্প। হোয়াইট হাউস তখন এটিকে ‘রুটিন’ পরীক্ষা বললেও পরে ট্রাম্প নিজেই জানান, তাঁর এমআরআই করা হয়েছিল। শুরুতে তিনি বলেন, ফলাফল ‘ভালো’, তবে কোন অংশের স্ক্যান হয়েছে—তা তিনি জানেন না বলে জানান। এই অস্পষ্টতায় নতুন করে প্রশ্ন ওঠে।

কয়েক সপ্তাহ পর ট্রাম্পের চিকিৎসক শন বারবাবেলা জানান, তাঁর হৃদ্‌যন্ত্র ও পেটের অংশের ইমেজিং করা হয়েছে এবং ফলাফল ‘সম্পূর্ণ স্বাভাবিক’। তিনি বলেন, এই বয়সী পুরুষদের ক্ষেত্রে এমন পরীক্ষা উপকারী।

তবে জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির স্কুল অব মেডিসিনের অধ্যাপক রাইনার তখন বলেন, এ ধরনের পরীক্ষা সাধারণ নিয়ম নয় এবং এটি সম্ভবত কোনো চিকিৎসাজনিত উদ্বেগ থেকেই করা হয়েছে। কিন্তু হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশের দাবিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করেন।

গত মাসে ওভাল অফিসের এক অনুষ্ঠানে ট্রাম্পকে কিছু সময়ের জন্য ঘুমিয়ে পড়তে দেখা যায়। কিন্তু এমন দাবি নাকচ করে হোয়াইট হাউস একে ‘ভিত্তিহীন গল্প’ বলে উড়িয়ে দেয়। পরে এটি নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসে প্রতিবেদন ছাপা হলে ট্রাম্প ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তবে চলতি মাসে মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে তাঁকে আবারও তন্দ্রাচ্ছন্ন দেখা যায়।

এখন বাঁ হাতের দাগের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় ট্রাম্পের স্বাস্থ্য নিয়ে আবার আলোচনা শুরু হয়েছে।

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেনশিয়াল ইতিহাসবিদ টিমোথি নাফতালি বলেন, প্রেসিডেন্ট তরুণ নন। যখন শক্তির ভাবমূর্তি অতিরিক্তভাবে তুলে ধরা হয়, তখন সামান্য দুর্বলতাও বড় হয়ে ধরা দেয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দক্ষিণ আফ্রিকায় ঐতিহ্যবাহী গণখতনা, সংক্রমণ ও পানিশূন্যতায় মৃত্যু ৪১

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
দক্ষিণ আফ্রিকায় সাবালক হওয়ার ঐতিহ্যবাহী আচার-অনুষ্ঠানগুলো অত্যন্ত গোপনীয়। ছবি: এএফপি
দক্ষিণ আফ্রিকায় সাবালক হওয়ার ঐতিহ্যবাহী আচার-অনুষ্ঠানগুলো অত্যন্ত গোপনীয়। ছবি: এএফপি

দক্ষিণ আফ্রিকায় সাবালক হওয়ার ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় উৎসব (খতনা) পালন করতে গিয়ে গত দুই মাসে অন্তত ৪১ জন তরুণের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) দেশটির সংস্কৃতিবিষয়কমন্ত্রী ভেলেনকোসিনি হ্লাবিসা এ তথ্য জানিয়েছেন। মৃত তরুণদের অধিকাংশই খতনাপরবর্তী সংক্রমণ ও ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতার কারণে প্রাণ হারিয়েছে বলে জানা গেছে।

বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিবছর নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে দক্ষিণ আফ্রিকার খোসা, এনদেবেলে, সোথো ও ভেন্ডা সম্প্রদায়ের কিশোর ও তরুণেরা ঐতিহ্যবাহী এই উৎসবে অংশ নেয়। দক্ষিণ আফ্রিকার শিশু আইন (২০০৫) অনুযায়ী, সাধারণত ১৬ বছরের বেশি বয়সীদের খতনা করানো হয়। এর নিচে খতনা করানো দেশটিতে আইনত নিষিদ্ধ।

মন্ত্রী ভেলেনকোসিনি হ্লাবিসা স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে জানান, ৪১ তরুণের মৃত্যুর পেছনে স্কুলগুলোর চরম অবহেলা ও অভিভাবকদের অসচেতনতাই দায়ী। তিনি জানান, যেসব স্কুলে খতনার অনুষ্ঠান হয়, তারা অনেক সময় তরুণদের পানি পান করতে বাধা দেয়। তাদের ধারণা, পানি না খেলে ক্ষত দ্রুত শুকাবে। কিন্তু অতিরিক্ত গরমে পানিশূন্যতার কারণে এটি মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার আইন অনুযায়ী, যেসব স্কুলে খতনা করানো হয়, তাদের নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু দেশটিতে প্রচুর অবৈধ স্কুল গড়ে উঠেছে, যেখানে ১৬ বছরের নিচেও খতনা করানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে। আর অধিকাংশ মৃত্যু এসব অনিবন্ধিত স্কুলেই ঘটেছে। এ ছাড়া অনেক অভিভাবক তাঁদের সন্তানদের স্কুলে পাঠানোর পর আর কোনো খোঁজ নেন না বা স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কি না, তা-ও তদারকি করেন না।

দক্ষিণ আফ্রিকার ইস্টার্ন কেপ প্রদেশকে এই মৃত্যুর ‘হটস্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানে ২১ জন তরুণ মারা গেছে। এ ছাড়া ফ্রি স্টেট প্রদেশে ১৩ জন এবং অন্যান্য এলাকায় আরও সাতজনের মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে।

মন্ত্রী ভেলেনকোসিনি হ্লাবিসা আরও জানান, অবৈধ স্কুলগুলোতে অভিযান চালিয়ে এখন পর্যন্ত ৪১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির পুলিশ। সংক্রমণের শিকার হয়ে আরও প্রায় ২০০ জন তরুণ বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

আফ্রিকান সংস্কৃতিতে ছেলেদের ঘর থেকে দূরে নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে সামাজিক মূল্যবোধ, দায়িত্ব ও যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এর একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো অস্ত্রোপচার ছাড়াই ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিতে খতনা। উৎসব শেষে তরুণেরা যখন বাড়ি ফেরে, তখন বড় ধরনের উদ্‌যাপন করা হয়। তবে প্রতিবছরই এই ‘ম্যানহুড’ বা পুরুষত্ব প্রমাণের পরীক্ষায় শত শত তরুণ পঙ্গুত্ববরণ করে কিংবা প্রাণ হারায়।

তবে দেশটির সরকার এবার ঘোষণা করেছে, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সব অংশীদারকে নিয়ে একটি জাতীয় সম্মেলন ডাকা হবে, যাতে এই উৎসবের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ভবিষ্যতে মৃত্যুর হার শূন্যে নামিয়ে আনা যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ব্রিটেনের রানি ক্যামিলাও যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ব্রিটেনের রানি ক্যামিলা। ফাইল ছবি
ব্রিটেনের রানি ক্যামিলা। ফাইল ছবি

ব্রিটেনের রানি ক্যামিলা কিশোর বয়সে ট্রেনে এক ব্যক্তির হামলার শিকার হওয়ার অভিজ্ঞতার কথা প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে বলেছেন। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ওই হামলার ঘটনা তাঁকে তীব্র ক্ষোভে ভরিয়ে দিয়েছিল।

আজ বুধবার নারী নির্যাতন বিষয়ে প্রচারিত এক আলোচনায় ক্যামিলা বলেন, ‘আমি যখন কিশোরী ছিলাম, তখন ট্রেনে আমার ওপর হামলা হয়েছিল। সেই সময় আমি ভীষণ রেগে গিয়েছিলাম। এটা এখনো মনে আছে। আমি তখন বই পড়ছিলাম। হঠাৎ এই ছেলেটি বা বলা ভালো লোকটি আমার ওপর হামলা করে। আমি তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করেছিলাম।’

রাজা তৃতীয় চার্লসের স্ত্রী জানান, যিনি তাঁর ওপর হামলা করেছিলেন, তাঁকে তিনি চিনতেন না।

৭৮ বছর বয়সী ক্যামিলা দীর্ঘদিন ধরে যৌন ও পারিবারিক সহিংসতা বন্ধে কাজ করা বিভিন্ন দাতব্য সংস্থা ও উদ্যোগের পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছেন এবং ভুক্তভোগীদের সহায়তায় সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন।

এই হামলার ঘটনা প্রথম প্রকাশ পায় গত সেপ্টেম্বরে, যখন রাজপরিবার নিয়ে লেখা একটি বই দ্য টাইমস পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে ছাপা হয়। তবে এর আগে বাকিংহাম প্যালেস থেকে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়নি।

বিবিসিকে ক্যামিলা বলেন, ‘আমি ট্রেন থেকে নামার পর আমার মা আমার দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন, “তোমার চুল এমন এলোমেলো কেন? আর তোমার কোটের বোতাম কোথায়?’”

ক্যামিলা বলেন, ‘ঘটনাটি আমাকে ভীষণ ক্ষুব্ধ করেছিল। সেই অনুভূতি বহু বছর ধরে মনের ভেতর কোথাও রয়ে গেছে।’

ওই বইয়ে বলা হয়, ঘটনাটি ঘটে লন্ডনের প্যাডিংটন স্টেশনের দিকে যাওয়া একটি ট্রেনে। তখন ক্যামিলার বয়স ছিল প্রায় ১৬ বা ১৭ বছর। জুতা খুলে হামলাকারীর যৌনাঙ্গে আঘাত করেছিলেন তিনি।

বইটিতে বলা হয়, প্যাডিংটন স্টেশনে পৌঁছানোর পর তিনি এক কর্মকর্তাকে হামলাকারীকে দেখিয়ে দেন এবং পরে ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে সাক্ষাৎকারে ক্যামিলা এসব বিস্তারিত তথ্য নিশ্চিত করেননি।

তথ্যসূত্র: রয়টার্স

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত