Ajker Patrika

ইসরায়েলকে সরতে বলল কাতার-মিসর-তুরস্ক ও সৌদি, আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েনের আহ্বান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ৪১
মধ্যপ্রাচ্যের চারটি দেশ ইসরায়েলকে অতিদ্রুত গাজা থেকে সরে যেতে বলেছে। ছবি: সংগৃহীত
মধ্যপ্রাচ্যের চারটি দেশ ইসরায়েলকে অতিদ্রুত গাজা থেকে সরে যেতে বলেছে। ছবি: সংগৃহীত

গাজার যুদ্ধবিরতির গ্যারান্টার বা জামিনদার কাতার, মিসর ও তুরস্ক ইসরায়েলকে গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার ও আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (আইএসএফ) মোতায়েনের আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলেছে, এই ভঙ্গুর চুক্তি পুরোপুরি কার্যকর করতে এই পদক্ষেপগুলো ‘অপরিহার্য’। একই ধরনের আহ্বান জানিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ সৌদি আরবও।

গতকাল শনিবার কাতারের রাজধানীতে দোহা ফোরাম সম্মেলনে এক প্যানেল আলোচনায় কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আব্দুলরহমান আল-থানি জানান, মধ্যস্থতাকারীরা এখন যুদ্ধবিরতির পরবর্তী ধাপ এগিয়ে নিতে কাজ করছেন। সেখানে এই ব্যবস্থাগুলোর রূপরেখা রয়েছে। ইসরায়েল এবং হামাস এখনো যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রাথমিক ধাপের পর কীভাবে এগোবে, সে বিষয়ে কোনো সমঝোতায় পৌঁছায়নি।

প্রথম ধাপে ইসরায়েলি বাহিনী গাজার ভেতরের নির্দিষ্ট ‘হলুদ লাইন’-এর পেছনে সরে গিয়েছিল, আর হামাস তাদের হেফাজতে থাকা জীবিত সব জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছিল এবং একজন ছাড়া মৃত সকল বন্দীর মরদেহ ফিরিয়ে দিয়েছে। আল-থানি বলেন, ‘আমরা এখন সংকটাপন্ন মুহূর্তে রয়েছি। এখনো কাজটি সম্পূর্ণ হয়নি। আমরা যা করেছি, তা কেবলই একটি বিরতি।’ তিনি আরও বলেন, ‘ইসরায়েলি বাহিনী পুরোপুরি প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি সম্পূর্ণ হবে না এবং গাজায় স্থিতিশীলতাও ফিরবে না।’

এদিকে শনিবার এক জ্যেষ্ঠ সৌদি কর্মকর্তা গাজায় যুদ্ধবিরতির ‘সংজ্ঞা পুনর্বিবেচনা বন্ধ করতে’ এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ অনুমোদিত শর্তাবলি নিয়ে পুনরায় আলোচনা এড়াতে আহ্বান জানিয়েছেন। সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মানাল রাদওয়ান দোহা ফোরামে বলেন, ‘আমরা যা নিয়ে ইতিমধ্যে একমত হয়েছি এবং যা নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব হিসেবে জারি হয়েছে এবং সব পক্ষ স্বাগত জানিয়েছে, তা পুনরায় সংজ্ঞায়িত করা এবং পুনরায় আলোচনার জন্য আমরা উন্মুক্ত হতে পারি না।’

তিনি যোগ করেন, ‘সুতরাং আমরা যুদ্ধবিরতি বলতে কী বুঝি, এমনকি নিরস্ত্রীকরণ বলতে কী বুঝি, গাজা শাসনের জন্য ফিলিস্তিনি নেতৃত্বাধীন প্রক্রিয়া বলতে কী বুঝি—তাতে ফিরে গিয়ে নতুন করে সংজ্ঞা দিতে পারি না।’ রাদওয়ান বলেন, যে মূলনীতি পরিবর্তন করলে অঞ্চলটি ‘অন্য পথে’ চলে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়, যেখানে সংঘাতের মূল লক্ষ্য থেকে সরে এসে কৌশলগত বিবরণের ওপর মনোযোগ দেওয়া হয়।

রাদওয়ান আরও বলেন, ‘আমরা এই বিষয়গুলোর বারবার সংজ্ঞা পরিবর্তন করে এবং কী, কে, কখন—এই ধরনের বহু বিশদে প্রবেশ করে নিজেদের এমন এক পার্শ্ব পথে নিয়ে যেতে পারি না, যেখানে আমরা সামগ্রিক ও সংঘাতের মূল লক্ষ্য থেকে চোখ সরিয়ে ফেলি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রায় সবাই একমত যে দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানই হলো একমাত্র সমাধান। যদি তা-ই হয়, তবে জনগণকে জিজ্ঞাসা করতে হবে, এই বাস্তবায়ন সম্ভব করতে তারা কী করতে চলেছেন।’

অপর দিকে গাজায় যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপের জন্য ইসরায়েলকে গাজায় তাদের অবস্থানগুলো থেকে সরে আসতে, একটি অন্তর্বর্তী শাসনকাঠামো প্রতিষ্ঠা করতে এবং আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা মিশন মোতায়েনের আহ্বান জানিয়েছে মিসর। দোহা ফোরামে মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদেলাত্তি বলেন, ‘আমাদের যত দ্রুত সম্ভব এই বাহিনীকে মাটিতে মোতায়েন করতে হবে। কারণ, ইসরায়েল একপক্ষীয়ভাবে প্রতিদিন যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে।’

এদিকে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান এই সমাবেশে বলেছেন, স্থিতিশীলতা বাহিনী নিয়ে আলোচনা এখনো চলছে এবং কে এর নেতৃত্ব দেবে এবং কোন কোন দেশ এতে অংশগ্রহণ করবে, সে সংক্রান্ত প্রধান অমীমাংসিত বিষয়গুলো রয়ে গেছে। ফিদানের দেশ তুরস্কও এই যুদ্ধবিরতির আরেক জামিনদার। তিনি বলেন, এই বাহিনীর প্রাথমিক মিশন ‘ফিলিস্তিনিদের ইসরায়েলিদের থেকে আলাদা করা।’ তিনি বলেন, ‘এটি আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। এরপর আমরা অন্য সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারি।’

আবদেলাত্তি এতে সম্মত হন এবং যুদ্ধবিরতি ‘যাচাই ও পর্যবেক্ষণ করার জন্য হলুদ রেখা’ বরাবর এই বাহিনী মোতায়েন করার আহ্বান জানিয়েছেন। তুরস্ক এই স্থিতিশীলতা বাহিনীতে যোগদানের আগ্রহ প্রকাশ করেছে, কিন্তু ইসরায়েলি সরকার তাদের অংশগ্রহণের বিরোধিতা করেছে। ফিদান পরে বলেন, হামাসের নিরস্ত্রীকরণ গাজায় শীর্ষ অগ্রাধিকার হওয়া উচিত নয়। তিনি বলেন, ‘প্রক্রিয়াটিতে নিরস্ত্রীকরণ প্রথম কাজ হতে পারে না। আমাদের বিষয়গুলোকে সঠিক ক্রমে সাজাতে হবে, আমাদের বাস্তববাদী হতে হবে।’

উল্লেখ্য, গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকলেও ইসরায়েল অবরুদ্ধ এলাকায় এখনো বোমাবর্ষণ ও হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। দেশটি প্রায় ৬০০ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে, যাতে ৩৬০ জনের বেশি নিহত ও ৯০০ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। গত ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়, যা দুই বছরের ইসরায়েলি যুদ্ধের অবসান ঘটায়। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এই যুদ্ধে ৭০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু এবং প্রায় ১ লাখ ৭১ হাজার লোক আহত হয়েছে।

তথ্যসূত্র: মিডল ইস্ট আই ও মিডল ইস্ট মনিটর

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিদেশে নেওয়ার অবস্থায় নেই খালেদা জিয়া

এনসিপি-এবি পার্টি-রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন জোট চূড়ান্ত, ঘোষণা বিকেলে

পাকিস্তানি স্ত্রীকে করাচিতে ফেলে ভারতে দ্বিতীয় বিয়ের প্রস্তুতি, স্বামীর বিচার চেয়ে মোদির কাছে আবেদন

আজকের রাশিফল: সন্ধ্যায় অচেনা নম্বর থেকে ‘দারুণ অফার’ আসবে, ইগনোর করুন

নয়া নিরাপত্তা কৌশল: চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাদ, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে জোর যুক্তরাষ্ট্রের

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসরায়েলি দখলদারত্ব শেষ হলেই অস্ত্র পরিত্যাগ করবে হামাস

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ১৯
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় হামাসের দুই যোদ্ধা। ছবি: এএফপি
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় হামাসের দুই যোদ্ধা। ছবি: এএফপি

ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের গাজা অঞ্চলের প্রধান খলিল আল-হাইয়া গতকাল শনিবার বলেছেন, ইসরায়েলি দখলদারত্ব শেষ হলে তাঁর গোষ্ঠী অস্ত্র ত্যাগ করবে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই অবস্থান তুলে ধরেন।

খলিল আল-হাইয়া বলেন, ‘আমাদের অস্ত্র দখলদারত্ব ও আগ্রাসনের উপস্থিতির সঙ্গে জড়িত। দখলদারত্ব মিটে গেলেই এই অস্ত্র তুলে দেওয়া হবে রাষ্ট্রের হাতে।’ তিনি আরও বলেন, ‘অস্ত্রের বিষয়টি এখনো বিভিন্ন উপগোষ্ঠী ও মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে আলোচনায় রয়েছে এবং চুক্তিটি এখনো একেবারে প্রাথমিক স্তরে আছে।’

সাক্ষাৎকারকালে আল-হাইয়া এটাও উল্লেখ করেন, ‘ইসরায়েলি দখলদারদের কিছু বন্দীর লাশের খোঁজে রোববার নতুন এলাকায় প্রবেশ করা হবে।’ অক্টোবরের ১০ তারিখ থেকে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির সময় গাজার মানবিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে আল-হাইয়া অভিযোগ করে বলেন, ইসরায়েল ‘গাজায় প্রয়োজনীয় সামগ্রীর প্রবেশে বাধা দিচ্ছে, যেন আমরা এখনো যুদ্ধের মধ্যে আছি।’

হামাসের এই নেতা বলেন, ‘গাজা ভূখণ্ডে যে পরিমাণ সাহায্য ঢুকছে, তাতে আমরা সন্তুষ্ট নই, আমরা মধ্যস্থতাকারীদের কাছে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানাচ্ছি।’ স্মরণ রাখা দরকার, হামাস এর আগে অস্ত্র ছাড়তে অস্বীকার করে একে একটি ‘রেডলাইন বা চূড়ান্ত সীমা’ বলে উল্লেখ করেছিল। অন্যদিকে ইসরায়েল গাজায় হামাস ও অন্যান্য ফিলিস্তিনি উপগোষ্ঠীর নিরস্ত্রীকরণকেই গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির দ্বিতীয় ধাপের একটি প্রধান শর্ত বলে জোর দিচ্ছে।

এদিকে কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল-থানি সতর্ক করে বলেছেন, গাজার যুদ্ধবিরতি এক ‘নাজুক মুহূর্তে’ এসে পৌঁছেছে এবং স্থায়ী শান্তির দিকে দ্রুত অগ্রগতি না হলে এটি ভেঙে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। দোহা ফোরামে বক্তৃতাকালে কাতারের প্রধানমন্ত্রী জানান, স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য ইসরায়েলি বাহিনীর গাজা থেকে সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং ফিলিস্তিনিদের জন্য স্থিতিশীলতা ও চলাফেরার স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন।

এই সতর্কবার্তা মিসর, কাতার, তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া চুক্তির ভঙ্গুরতাও তুলে ধরে। যদিও এই যুদ্ধবিরতি প্রথমে লড়াই থামিয়েছিল, কিন্তু হামাসের নিরস্ত্রীকরণের মতো গুরুত্বপূর্ণ মতপার্থক্যের কারণে এর দ্বিতীয় ধাপের বাস্তবায়ন থমকে গেছে।

নভেম্বরে জাতিসংঘ-সমর্থিত একটি পরিকল্পনা অনুযায়ী, ইসরায়েল তার অবস্থান থেকে সরে আসবে এবং গাজা পরিচালিত হবে ‘বোর্ড অব পিস’ নামে একটি অন্তর্বর্তী শাসনকাঠামোর মাধ্যমে। এই পরিকল্পনায় একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েনের কথাও বলা হয়েছে।

তবে সেই কাঠামোর রূপরেখা এখনো অনিশ্চিত। তাত্ত্বিকভাবে মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই বোর্ডের প্রধান হিসেবে থাকার কথা থাকলেও অন্য সদস্যদের পরিচয় এখনো ঘোষণা করা হয়নি। উপরন্তু খবর আছে যে আরব এবং মুসলিম দেশগুলো স্থিতিশীলতা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়ে দ্বিধা প্রকাশ করেছে। কারণ, তাদের ভয়, এটি ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের সঙ্গে লড়াইয়ে জড়িয়ে যেতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিদেশে নেওয়ার অবস্থায় নেই খালেদা জিয়া

এনসিপি-এবি পার্টি-রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন জোট চূড়ান্ত, ঘোষণা বিকেলে

পাকিস্তানি স্ত্রীকে করাচিতে ফেলে ভারতে দ্বিতীয় বিয়ের প্রস্তুতি, স্বামীর বিচার চেয়ে মোদির কাছে আবেদন

আজকের রাশিফল: সন্ধ্যায় অচেনা নম্বর থেকে ‘দারুণ অফার’ আসবে, ইগনোর করুন

নয়া নিরাপত্তা কৌশল: চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাদ, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে জোর যুক্তরাষ্ট্রের

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসরায়েলের অস্ত্র মেলায় ইউরোপ-এশিয়ার ক্রেতাদের ভিড়, বিজ্ঞাপনে গাজা যুদ্ধ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসরায়েলের অস্ত্র মেলায় এমন সব দেশের প্রতিনিধিরা গেছেন যারা প্রকাশ্যে দেশটির সমালোচনা করেন। ছবি: এএফপি
ইসরায়েলের অস্ত্র মেলায় এমন সব দেশের প্রতিনিধিরা গেছেন যারা প্রকাশ্যে দেশটির সমালোচনা করেন। ছবি: এএফপি

গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর অব্যাহত সামরিক হামলার কৌশলকে তুলে ধরে অস্ত্র বিক্রির নজিরবিহীন উদ্যোগ নিয়েছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা কোম্পানিগুলো। গত সোম ও মঙ্গলবার তেল আবিবে অনুষ্ঠিত ‘ইসরায়েল ডিফেন্স টেক উইক’ শীর্ষক প্রদর্শনীতে ইউরোপ ও এশিয়ার কয়েক ডজন দেশের সামরিক প্রতিনিধিদের কাছে অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম প্রদর্শন করা হয়।

তেল আবিব ইউনিভার্সিটি এবং ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় আয়োজিত এই ইভেন্টটিতে অংশগ্রহণকারী ছিল ২ হাজারের বেশি। এর মধ্যে বিভিন্ন দেশের সামরিক ও সরকারি প্রতিনিধিরাও ছিলেন। দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রদর্শনীতে অন্তত একটি ভিডিও দেখানো হয়, যেখানে গাজার একটি ভবনে দুটি ইসরায়েলি ড্রোন আঘাত হানার পর ধ্বংসের চিত্র দেখা যায়। অর্থাৎ, গাজা যুদ্ধে এই অস্ত্রগুলোর কার্যকারিতাকেই মূল বিজ্ঞাপন হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।

চলমান গাজা সংঘাতের পটভূমিতে এই অস্ত্র প্রদর্শনী আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরায়েল গাজায় যে সামরিক অভিযান শুরু করে, তাতে এখন পর্যন্ত ৭০ হাজার ১০০-এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। অসংখ্য মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ, বিশ্বনেতা ও জাতিসংঘ এই যুদ্ধকে ‘গণহত্যা’ বলে আখ্যায়িত করেছে। ইসরায়েলি যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে এখনো প্রতিদিন মানুষ মারছে।

তবে এসব আন্তর্জাতিক নিন্দা সত্ত্বেও প্রদর্শনীতে উজবেকিস্তান, সিঙ্গাপুর ও ভারতের মতো এশীয় দেশগুলোর পাশাপাশি ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। যদিও এসব দেশের অনেকগুলোই প্রকাশ্যে ইসরায়েলের নিন্দা করে। তাদের এই অংশগ্রহণ আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে থাকা ইউরোপীয় দেশগুলোর দ্বিচারিতাকেও উন্মোচিত করেছে।

যুক্তরাজ্য সরকার গাজায় চলমান হামলার কারণে লন্ডনে অনুষ্ঠেয় দেশের শীর্ষস্থানীয় অস্ত্র প্রদর্শনীতে ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের যোগদানে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। অথচ গত সপ্তাহে ব্রিটিশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা তেল আবিবের এই প্রদর্শনী পরিদর্শন করেন এবং গাজা ও লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় ব্যবহৃত সামরিক প্রযুক্তি খতিয়ে দেখেন। ব্রিটিশ দূতাবাস তাদের কর্মকর্তাদের উপস্থিতির বিষয়টি ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে নিশ্চিত করেছে।

আরেকটি উদাহরণ হলো নরওয়ে। গত আগস্টে নরওয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ইসরায়েলি ব্যাংক ও আমেরিকান নির্মাণ সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক ক্যাটারপিলার ইনকরপোরেশন থেকে বিনিয়োগ তুলে নেয়। নরওয়ে সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন বিশ্বের বৃহত্তম সার্বভৌম সম্পদ তহবিলের (১.৯ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার) কার্যনির্বাহী বোর্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ক্যাটারপিলারের মতো সংস্থাগুলো ‘যুদ্ধ ও সংঘাত পরিস্থিতিতে মানুষের অধিকারের গুরুতর লঙ্ঘনে অবদান রাখছে’। তবুও নরওয়ের সরকারি কর্মকর্তারা এই অস্ত্র প্রদর্শনীতে উপস্থিত ছিলেন।

গাজা যুদ্ধের কারণে ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক জনপ্রিয়তা তলানিতে ঠেকেছে। জুন মাসে প্রকাশিত মার্কিন জরিপ সংস্থা পিউ রিসার্চের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ইতালি থেকে জাপান পর্যন্ত বিশ্বের বেশির ভাগ মানুষের এখন ইসরায়েল সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। আমেরিকাতেও, বিশেষ করে তরুণ রিপাবলিকান ভোটারদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি বিরূপ মনোভাব বাড়ছে।

তবে সরকার পর্যায়ে এই জনপ্রিয়তার পতন অস্ত্র বিক্রিতে কোনো প্রভাব ফেলেনি। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে দেশটির অস্ত্র রপ্তানি সর্বকালের সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছেছে, যার মূল্যমান ১৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। মন্ত্রণালয় জুনে এক বিবৃতিতে জানায়, গাজা যুদ্ধের ‘অর্জন’ এই চাহিদা বাড়াতে সহায়তা করেছে।

গত বছর মোট রপ্তানির ৫৪ শতাংশই কিনেছে ইউরোপীয় দেশগুলো। এ ছাড়া, আব্রাহাম অ্যাকর্ডস স্বাক্ষরকারী আরব দেশগুলোতেও বিক্রি বেড়েছে, যা ২০২৩ সালের ৩ শতাংশ থেকে বেড়ে গত বছর ১২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

সাম্প্রতিক মেগা-ডিলগুলোর মধ্যে রয়েছে জার্মানির সঙ্গে অ্যারো ৩ দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ৪ বিলিয়ন ইউরোর (৪.৬ বিলিয়ন ডলার) চুক্তি। ইসরায়েলের ইতিহাসে বৃহত্তম প্রতিরক্ষা রপ্তানি চুক্তি এটি। এ ছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো ইসরায়েল থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র কিনছে। জুলাই মাসে রোমানিয়া ইসরায়েলের রাফায়েল থেকে ২ বিলিয়ন ডলারের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার ঘোষণা দেয়। এমনকি গ্রিসও তুরস্কের সঙ্গে উত্তেজনার অজুহাতে ফিলিস্তিনিদের প্রতি ঐতিহাসিক নৈকট্য থাকা সত্ত্বেও ইসরায়েলের সামরিক সরঞ্জাম কিনছে। গ্রিক পার্লামেন্ট সম্প্রতি ইসরায়েলের কাছ থেকে ৭৫০ মিলিয়ন ডলারের ৩৬টি পিইউএলএস রকেট আর্টিলারি সিস্টেম কেনার অনুমোদন দিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিদেশে নেওয়ার অবস্থায় নেই খালেদা জিয়া

এনসিপি-এবি পার্টি-রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন জোট চূড়ান্ত, ঘোষণা বিকেলে

পাকিস্তানি স্ত্রীকে করাচিতে ফেলে ভারতে দ্বিতীয় বিয়ের প্রস্তুতি, স্বামীর বিচার চেয়ে মোদির কাছে আবেদন

আজকের রাশিফল: সন্ধ্যায় অচেনা নম্বর থেকে ‘দারুণ অফার’ আসবে, ইগনোর করুন

নয়া নিরাপত্তা কৌশল: চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাদ, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে জোর যুক্তরাষ্ট্রের

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নয়া নিরাপত্তা কৌশল: চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাদ, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে জোর যুক্তরাষ্ট্রের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ৪৭
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

পররাষ্ট্রনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল নিয়ে নথি প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে পশ্চিম গোলার্ধ তথা পুরো আমেরিকা মহাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের ‘প্রাধান্য’ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। একই সঙ্গে চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করে তাইওয়ানকে রক্ষা এবং ভারত-প্রশান্ত মহাসাগর এলাকার সুরক্ষায় ভারতকে প্রধান্য দেওয়ার বিষয়টিও এতে উল্লেখ করা হয়েছে।

গত শুক্রবার প্রকাশিত এই ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্ট্র্যাটেজি বা জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল নথিতে চীনের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রাখার এবং তাইওয়ান দখল করা থেকে চীনকে বিরত রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে ২০২২ সালে প্রকাশিত এর পূর্ববর্তী নথির মতো নতুন নথিতে চীনের ওপর নজর দেওয়া হয়নি কিংবা বেইজিংয়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতাকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়নি।

তার বদলে মার্কিন প্রশাসন হস্তক্ষেপবিরোধী নীতির ওপর জোর দিয়েছে। এটি বহুপাক্ষিকতা ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতি ট্রাম্পের অনীহার প্রতিফলন ঘটিয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, ‘পৃথিবীর মৌলিক রাজনৈতিক একক হলো জাতি-রাষ্ট্র এবং এটি ভবিষ্যতেও জাতি-রাষ্ট্রই থাকবে।’

এর আগের দুটি জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে, যার মধ্যে ট্রাম্পের প্রথম আমলে প্রকাশিত একটিও ছিল, চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতাকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান অগ্রাধিকার হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছিল। কিন্তু এই নতুন কৌশলে বেইজিংয়ের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে সামনে ও কেন্দ্রে রাখা হয়নি।

তবু এই নথিতে এশিয়াতে অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায় জেতা এবং চীনের সঙ্গে বাণিজ্যের ভারসাম্য বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এই লক্ষ্যে এটি বেইজিংয়ের মোকাবিলায় ভারসাম্য তৈরির জন্য এশীয় মিত্রদের সঙ্গে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে, যেখানে ভারতকে আলাদা করে তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘ইন্দো-প্যাসিফিক মহাসাগরীয় সুরক্ষায় নয়াদিল্লিকে অবদান রাখতে উৎসাহিত করতে হলে আমাদের অবশ্যই ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক (ও অন্যান্য) সম্পর্ক উন্নত করতে হবে।’

নথিতে তাইওয়ানকে চীনের বলপূর্বক দখল করে নেওয়ার ঝুঁকিগুলো স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। উল্লেখ করা হয়েছে যে এই স্বশাসিত দ্বীপটি, যা বেইজিং নিজের বলে দাবি করে, কম্পিউটার চিপের অন্যতম প্রধান উৎপাদক। এতে আরও জোর দিয়ে বলা হয়েছে, তাইওয়ান দখল করলে চীন এশিয়া প্যাসিফিকের দ্বিতীয় দ্বীপপুঞ্জে প্রবেশাধিকার পাবে এবং দক্ষিণ চীন সাগরে এর অবস্থান জোরদার করবে, যা বৈশ্বিক বাণিজ্যের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ জলপথ।

নথিতে বলা হয়েছে, ‘অতএব তাইওয়ান নিয়ে একটি সংঘাত ঠেকানো, আদর্শগতভাবে সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখার মাধ্যমে, একটি অগ্রাধিকার।’ এই কৌশল সংঘাত এড়াতে এই অঞ্চলের মার্কিন অংশীদারদের তাদের সামরিক ব্যয় বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘আমরা এমন একটি সামরিক বাহিনী তৈরি করব, যা প্রথম দ্বীপপুঞ্জের যেকোনো জায়গায় আগ্রাসন ব্যর্থ করে দিতে সক্ষম, কিন্তু আমেরিকান সামরিক বাহিনী একা এটি করতে পারে না, আর করা উচিতও নয়। আমাদের মিত্রদের সম্মিলিত সুরক্ষার জন্য আরও বেশি অর্থ ব্যয় করতে হবে এবং আরও গুরুত্বপূর্ণভাবে, আরও অনেক বেশি কাজ করতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিদেশে নেওয়ার অবস্থায় নেই খালেদা জিয়া

এনসিপি-এবি পার্টি-রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন জোট চূড়ান্ত, ঘোষণা বিকেলে

পাকিস্তানি স্ত্রীকে করাচিতে ফেলে ভারতে দ্বিতীয় বিয়ের প্রস্তুতি, স্বামীর বিচার চেয়ে মোদির কাছে আবেদন

আজকের রাশিফল: সন্ধ্যায় অচেনা নম্বর থেকে ‘দারুণ অফার’ আসবে, ইগনোর করুন

নয়া নিরাপত্তা কৌশল: চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাদ, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে জোর যুক্তরাষ্ট্রের

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গাজায় ইসরায়েলি চর শাবাবকে যেভাবে হত্যা করা হয়, ফিলিস্তিনে উল্লাস

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ০৭
ইসরায়েল-সমর্থিত মিলিশিয়া নেতা ইয়াসির আবু শাবাব। ছবি: সংগৃহীত
ইসরায়েল-সমর্থিত মিলিশিয়া নেতা ইয়াসির আবু শাবাব। ছবি: সংগৃহীত

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল-সমর্থিত মিলিশিয়া নেতা ইয়াসির আবু শাবাবের নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বৃহস্পতিবার গাজা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক উল্লাস ছড়িয়ে পড়ে। ত্রাণের বহরে লুটপাট এবং উপত্যকার মানুষের ওপর হামলার অভিযোগে ফিলিস্তিনিদের কাছে তিনি ছিলেন ব্যাপক সমালোচিত।

আবু শাবাবের মৃত্যুর খবর ঘোষণার পরপরই গাজা এবং লেবাননের বাসিন্দাদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ, স্লোগান ও আনন্দসূচক গুলির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক বিশ্লেষক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত অনেকেই তাঁর মৃত্যুকে ‘বিশ্বাসঘাতকের পতন’ এবং ‘সহযোগিতার মডেলের ফাটল’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

ইয়াসির আবু শাবাবের মৃত্যুর পরিস্থিতি নিয়ে দুটি ভিন্ন রিপোর্ট পাওয়া গেছে। ইসরায়েলের চ্যানেল ১২ জানায়, গাজার বিভিন্ন গোত্রের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত হওয়ার পর আবু শাবাব দক্ষিণ ইসরায়েলের সোরোকা মেডিকেল সেন্টারে মারা যান। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পরে এই রিপোর্ট অস্বীকার করেছে।

অন্যদিকে তাঁর মিলিশিয়া গোষ্ঠী ‘পপুলার ফোর্সেস’ ফেসবুক পোস্টে জানায়, আবু শাবাব যখন আবু সুনেইমা পরিবারের সদস্যদের মধ্যে একটি বিবাদ মেটানোর চেষ্টা করছিলেন, তখনই গুলি করা হয়েছে।

ইয়াসির আবু শাবাব ছিলেন গাজায় ইসরায়েলি দখলদারদের অন্যতম প্রধান সহযোগী। জানা যায়, গত দুই বছরের গণহত্যা যুদ্ধের সময় তিনি ইসরায়েলের সঙ্গে সহযোগিতা করেন এবং ত্রাণসামগ্রী লুটপাট, ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক ও হামাস যোদ্ধাদের হত্যা বা অপহরণের জন্য দায়ী ছিলেন। এর আগে মাদক-সংক্রান্ত অভিযোগে হামাস তাঁকে কারারুদ্ধ করেছিল।

যে কৌশলে শাবাবকে হত্যা

সূত্রের বরাত দিয়ে মিডলইস্ট আই জানিয়েছে, আবু শাবাবকে হত্যার পরিকল্পনায় সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন এক তরুণ। তিনি আবু শাবাবের সশস্ত্র বাহিনীতে যোগ দেওয়ার আগ্রহ দেখিয়ে পপুলার ফোর্সেসের ভেতর ঢুকে পড়েন। এরপর নিখুঁত পরিকল্পনা করে আবু শাবাবকে তাঁর কয়েকজন ঘনিষ্ঠ সহযোগীসহ হত্যা করেন।

বৃহস্পতিবারের হামলাটি ছিল অতর্কিত। রাফায় আবু শাবাব ও তাঁর বাহিনীর ধারণা ছিল, তাঁদের ওপর কাসাম ব্রিগেডের যেকোনো হামলা বাইরে থেকে হবে। এ কারণে তারা হামলার সময় ইসরায়েলি ট্যাংকের কাছে আশ্রয় নিয়েছিল।

কিন্তু হামলা যে নিজেদের ভেতর থেকে হতে পারে, সেটি তারা সম্ভবত ধারণাও করতে পারেনি। এ কারণে হামাসের পাঠানো হামলাকারী সফল হতে পেরেছেন।

সম্প্রতি আবু শাবাব একটি ভিডিও প্রকাশ করে রাফায় ‘নির্মূল’ অভিযান চালানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।

গাজার দক্ষিণের শহর রাফার যে অঞ্চলগুলো ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, সেখানে আবু শাবাব ও তাঁর বাহিনী সক্রিয় ছিল। বাহিনীটি মূলত রাফার পূর্বাঞ্চলে সক্রিয় ছিল। ‘নিরাপদ অঞ্চল’ গঠনের নামে তারা ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে নানা দমনমূলক কার্যক্রম চালাত, যেমন ফিলিস্তিনিদের বাড়ি তল্লাশি করত, ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের বসানো বিস্ফোরক সরঞ্জাম অপসারণ করত, যোদ্ধাদের হত্যা করত এবং অস্ত্র লুট করত।

আবু শাবাব নিহত হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। অনেকে এটিকে ‘ঐতিহাসিক বিচার’ বলে অভিহিত করেন এবং তাঁর মৃত্যুকে ফিলিস্তিনিদের জন্য সংহতির বার্তা হিসেবে দেখেন।

একজন ব্যবহারকারী লেখেন, ‘ইয়াসির আবু শাবাবের মতো অনেক বিশ্বাসঘাতক আছে, কিন্তু তাদেরও একই পরিণতি হবে।’ অন্য একজন বলেন, ‘এটাই সব বিশ্বাসঘাতকের প্রাপ্য পরিণতি। সে নিজেকে শয়তানের কাছে বিক্রি করেছিল। আবু শাবাবের স্থান জাহান্নামে।’

ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক বিশ্লেষক মুহাম্মদ শেহাদা তাঁর মৃত্যুকে ইসরায়েলের ‘দালাল-নির্ভর গ্যাং মডেলের পতনের সূচনা’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, সশস্ত্র সুরক্ষা দিয়েও ফিলিস্তিনি সমাজের ওপর কোনো ‘সহযোগী নেতা’ চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।

প্রখ্যাত লেখক ঘাসান কানাফানির একটি বিখ্যাত উক্তি স্মরণ করে লেখক ওমর হামাদ লেখেন, ‘যখন আপনি আপনার জন্মভূমির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবেন, তখন মৃত্যুর দিনে কোনো মাটিই আপনাকে দয়া দেখাবে না; মৃত্যুর মধ্যেও আপনি নির্লিপ্ত থাকবেন।’

মিসরের সাংবাদিক খালেদ মাহমুদ মন্তব্য করেন, ‘সে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে বেঁচে ছিল এবং বিধর্মী হিসেবে মারা গেল...এভাবেই শেষ হলো তথাকথিত ইয়াসির আবু শাবাবের অলীক কিংবদন্তি, যাকে ইসরায়েল ফিলিস্তিনি প্রতিরোধকে আঘাত করার জন্য তৈরি করেছিল।’

বহু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী এই হত্যাকাণ্ডকে সাংবাদিক ও অ্যাকটিভিস্ট সালেহ আল-জাফারাউয়ির মৃত্যুর দীর্ঘ প্রতীক্ষিত বিচার হিসেবে বর্ণনা করেন। সালেহ আল-জাফারাউয়ি গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার ঘটনা নথিভুক্ত করার জন্য পরিচিত ছিলেন এবং তাঁকে অক্টোবরের শুরুতে ইসরায়েলের সহযোগী বন্দুকধারীরা হত্যা করেছিল।

একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘আজ আমরা সালেহ আল-জাফারাউয়ির জন্য ন্যায়বিচার পেলাম।’ আরেকজন বলেন, ‘সালেহ, তোমার প্রতিশোধ নেওয়া হলো, এবং তাদেরও যারা তার এবং তার গ্যাংয়ের হাতে অনাহারে, হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছিল।’

এদিকে হামাস-অধিভুক্ত নিরাপত্তা বাহিনী ‘রাদা’ তাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে আবু শাবাবের একটি ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখে: ‘যেমনটি আমরা বলেছিলাম, ইসরায়েল তোমাকে সুরক্ষা দেবে না।’ হামাসের পক্ষ থেকে এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলা হয়: ‘বিশ্বাসঘাতক এজেন্ট ইয়াসির আবু শাবাবের যে পরিণতি হয়েছে, তার জনগণ ও জন্মভূমির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে দখলদারদের হাতিয়ার হওয়া প্রত্যেকেরই একই পরিণতি অপেক্ষা করছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিদেশে নেওয়ার অবস্থায় নেই খালেদা জিয়া

এনসিপি-এবি পার্টি-রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন জোট চূড়ান্ত, ঘোষণা বিকেলে

পাকিস্তানি স্ত্রীকে করাচিতে ফেলে ভারতে দ্বিতীয় বিয়ের প্রস্তুতি, স্বামীর বিচার চেয়ে মোদির কাছে আবেদন

আজকের রাশিফল: সন্ধ্যায় অচেনা নম্বর থেকে ‘দারুণ অফার’ আসবে, ইগনোর করুন

নয়া নিরাপত্তা কৌশল: চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাদ, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে জোর যুক্তরাষ্ট্রের

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত