Ajker Patrika

যেভাবে জলদস্যুদের কাছ থেকে জাহাজ উদ্ধার করেছিল ভারতীয় নৌবাহিনী

যেভাবে জলদস্যুদের কাছ থেকে জাহাজ উদ্ধার করেছিল ভারতীয় নৌবাহিনী

সোমালিয়ার উপকূলে গত সপ্তাহে জলদস্যুদের হাত থেকে একটি বাণিজ্যিক জাহাজ উদ্ধার করেছে ভারতীয় নৌবাহিনী। বিশ্লেষকদের মতে, দিল্লির সামরিক বাহিনী যে বিশ্বের সেরা কয়েকটি বিশেষ বাহিনীর সমান সক্ষমতা অর্জন করেছে তারই প্রমাণ এই ঘটনা। সংবাদমাধ্যম সিএনএন এক প্রতিবেদনে খবরটি দিয়েছে।

ভারতীয় নৌবাহিনী এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে যে, প্রায় দুই দিন ধরে চলা জলদস্যু বিরোধী অভিযানের সময় বাণিজ্যিক জাহাজ এমভি রুয়েনের ১৭ জন নাবিককে উদ্ধার করেছে নৌবাহিনী। এ ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। কয়েক ডজন জলদস্যুকে ভারতীয় বিশেষ বাহিনীর হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

জলদস্যু বিরোধী এই অভিযানে অংশ নিয়েছিল নৌবাহিনীর একটি ডেস্ট্রয়ার, একটি টহল জাহাজ, ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি সি-১৭ ট্রান্সপোর্টার, একটি নৌ ড্রোন, একটি উদ্ধারকারী ড্রোন এবং একটি পি-৮ নজরদারি যুদ্ধবিমান।

কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স ফেলো জন ব্র্যাডফোর্ড এই অভিযান সম্পর্কে বলেন, অভিযানটির সাফল্য প্রশিক্ষণ, কমান্ড, নিয়ন্ত্রণ এবং অন্যান্য ক্ষমতার দিক থেকে ভারতীয় নৌবাহিনীকে একটি শীর্ষ শ্রেণির বাহিনী হিসেবে তুলে ধরেছে। যুদ্ধজাহাজ, ড্রোন, বিভিন্ন ধরনের এয়ারক্র্যাফট এবং নৌবাহিনীর কমান্ডোদের সমন্বিত শক্তি ব্যবহার করে যেভাবে ঝুঁকি হ্রাস করা হয়েছিল সেটাই এই অভিযানের সবচেয়ে চমকপ্রদ দিক।

ইয়েমেন-ভিত্তিক হুতি বিদ্রোহীদের বাণিজ্যিক জাহাজে আক্রমণের কারণে লোহিত সাগরে অস্থিতিশীল নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে আন্তর্জাতিক বাহিনীর একজোট হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। আর এতে নিকটবর্তী হর্ন অব আফ্রিকাতে সোমালিয়ার জলদস্যুরা অনেকটাই অরক্ষিত হয়ে পড়তে পারে। এতে বিশ্ব বাণিজ্যের কয়েকশ কোটি ডলারের ব্যবসা হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন বিশ্লেষকেরা।

এই অঞ্চলের সবচেয়ে দরিদ্র দেশের মধ্যে আছে ইয়েমেন এবং সোমালিয়া। বছরের পর বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধের কারণে দুটি দেশই বিধ্বস্ত। গত বছরের ডিসেম্বরে সোমালিয়ার জলদস্যুরা মাল্টার পতাকাবাহী এবং বুলগেরীয়দের দ্বারা পরিচালিত এমভি রুয়েন নামের বাণিজ্যিক জাহাজটি আটক করেছিল। ২০১৭ সালের পর থেকে সোমালিয়ার উপকূলে এটিই প্রথম সফল ছিনতাইয়ের ঘটনা।

স্প্যানিশ, জাপানি এবং ভারতীয় যুদ্ধজাহাজগুলো অনুসরণ করছিল এমভি রুয়েনকে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনীর ডিসেম্বরের প্রতিবেদন অনুসারে, মাল্টার পতাকাযুক্ত জাহাজটিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সোমালিয়ার আঞ্চলিক জলসীমায়। কিন্তু গত সপ্তাহে গভীর সমুদ্রে জলদস্যুতার উদ্দেশ্যে জাহাজটি নিয়ে সোমালিয়ার জলসীমা ছেড়ে যায় এমভি রুয়েন। তখন ভারতীয় নৌবাহিনী এটিকে আটকানোর জন্য পদক্ষেপ নেয়।

ভারত সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ওই এলাকায় কাজ করছিল ডেস্ট্রয়ার আইএনএস কলকাতা। এমভি রুয়েনের পরিচালনায় সশস্ত্র জলদস্যুরা আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে আইএনএস কলকাতা ড্রোন ব্যবহার করেছিল। সেই ড্রোনকে গুলি করে ভূপাতিত করেছিল এমভি রুয়েনের জলদস্যুরা। তারপর ভারতীয় যুদ্ধজাহাজও আক্রমণের শিকার হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় রুয়েনের ওপর আক্রমণ করে আইএনএস কলকাতা। এতে রুয়েনের স্টিয়ারিং এবং নেভিগেশন নষ্ট হয়ে যায়।

জলদস্যুদের আত্মসমর্পণ করতে বলেছিল আইএনএস কলকাতা। ভারতের বিমানবাহিনী সামাজিক প্ল্যাটফর্মে বলেছে, জলদস্যুদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করতে ভারত থেকে ১০ ঘণ্টার ফ্লাইট করে আসেন কমান্ডোরা। এরপর তারা প্যারাস্যুটের সাহায্য নেন। এমভি রুয়েনে প্রবেশ করতে কয়েকটি ভেলাও নামানো হয়েছিল সাগরে। ভারতের এই শক্তি প্রদর্শনের সামনে আর টিকতে পারেনি সোমালিয়ার জলদস্যুরা।

ভারতীয় নৌবাহিনী এরপর এক বিবৃতিতে ঘোষণা দেয় যে, গত ৪০ ঘণ্টা ধরে ভারতীয় নৌবাহিনীর অব্যাহত চাপ এবং পদক্ষেপের কারণে এমভি রুয়েনে থাকা সোমালিয়ার ৩৫ জন জলদস্যুই আত্মসমর্পণ করেছে।

প্রেসিডেন্ট রুমেন রাদেভসহ বুলগেরিয়ার নেতারা এই অভিযানের জন্য ভারত ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে রাদেভ বলেন, ‘অপহরণের শিকার বুলগেরিয়ার জাহাজ রুয়েন এবং এর নাবিকসহ ৭ জন বুলগেরীয় নাগরিককে উদ্ধারের সাহসী পদক্ষেপের জন্য (মোদির) প্রতি আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।’

মার্কিন নৌবাহিনীর প্রাক্তন ক্যাপ্টেন এবং বিশ্লেষক কার্ল শুস্টার বলেছেন যে, ঘটনাটি ভারতীয় নৌবাহিনীর পেশাদারিত্বকে তুলে ধরেছে। মারকোস নামে পরিচিত দিল্লির মেরিন কমান্ডো বাহিনী যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের নৌবাহিনীর কাছ থেকে অনেক কৌশল শিখেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

শুস্টার বলেন, ভারতীয় নৌবাহিনী একটি উচ্চ প্রশিক্ষিত এবং সুশৃঙ্খল পেশাদার বাহিনী। ৮ মাসের প্রশিক্ষণের পর যুক্তরাজ্যের এসএসের অনুকরণে মারকোস গঠন করা হয়েছে। প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়াদের মধ্যে মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশই এই বাহিনীতে ঢুকতে পেরেছিল।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতীয় নৌবাহিনী জলদস্যু বিরোধী অভিযানে অভিজ্ঞ। তাদের আছে ২০ বছরেরও বেশি সময়ের অভিজ্ঞতা। তা ছাড়া, বিশ্বের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক সমুদ্রপথের নিরাপত্তা পরিস্থিতি এখন অনেকটাই অস্থিতিশীল। সে ক্ষেত্রে, আবারও ডাকা হতে পারে ভারতীয় নৌবাহিনীকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদন

হাদির খুনিদের দুই সাহায্যকারীকে আটকের দাবি নাকচ করল মেঘালয় পুলিশ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। ছবি: এএনআই
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। ছবি: এএনআই

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) জানিয়েছে, শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যাকাণ্ডে মূল দুই আসামি ফয়সাল করিম ওরফে মাসুদ ওরফে রাহুল, মোটরসাইকেলচালক আলমগীর শেখ দুজনেই ভারতে পালিয়ে গেছেন। ব্যক্তিগত সম্পর্কের সূত্র ধরে মেঘালয় পুলিশ পুর্তি ও সামী নামে ভারতের দুই নাগরিককে আটক করেছে।

তবে মেঘালয় পুলিশের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পুলিশের এই দাবি সঠিক নয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের কিছু সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ‘ভিত্তিহীন ও বানোয়াট’ খবরের প্রতিবাদ জানিয়েছে ভারতের মেঘালয় পুলিশ ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। ওসমান হাদি হত্যা মামলার দুই প্রধান আসামি অবৈধভাবে সীমান্ত পার হয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে—এমন দাবি ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’। ভারতের জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যাচাই-বাছাই ছাড়া এ ধরনের সংবেদনশীল তথ্য প্রচার সীমান্তের শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে বিঘ্নিত করার পাশাপাশি প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যকার নিরাপত্তামূলক আস্থায় ফাটল ধরাতে পারে।

বাংলাদেশ পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ওসমান হাদি হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদ ও আলমগীর শেখ ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে মেঘালয়ে প্রবেশ করেছে এবং বর্তমানে তাঁরা ভারতের অভ্যন্তরে অবস্থান করছেন। ‘পুর্তি’ নামক এক স্থানীয় সহায়তাকারী এবং ‘সামী’ নামে এক ট্যাক্সি চালক তাঁদের মেঘালয়ের তুরা শহরে পৌঁছে দিয়েছেন।

হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ রোববার এই দাবির বিষয়ে মেঘালয় পুলিশ সদর দপ্তরের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক কোনো তথ্যই আমাদের জানানো হয়নি। আমাদের গোয়েন্দা তৎপরতা ও মাঠ পর্যায়ের ভেরিফিকেশনে ওই অভিযুক্তদের গারো হিলস বা মেঘালয়ের কোথাও কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।’ তিনি আরও বলেন, প্রতিবেদনে উল্লিখিত ‘পুর্তি’ বা ‘সামী’ নামক কোনো ব্যক্তিরও হদিস পাওয়া যায়নি এবং কাউকে গ্রেপ্তার করার খবরটিও বানোয়াট।

মেঘালয় পুলিশের পাশাপাশি বিএসএফ-ও এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছে হিন্দুস্তান টাইমস। বিএসএফের মেঘালয় ফ্রন্টিয়ারের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজি) ও. পি. উপাধ্যায়ের বিবৃতির বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, হালুয়াঘাট সেক্টর দিয়ে কোনো অপরাধী বা সন্দেহভাজন ব্যক্তির ভারতে প্রবেশের কোনো প্রমাণ বা ইন্টেলিজেন্স ইনপুট তাঁদের কাছে নেই। বিএসএফ অত্যন্ত কঠোর প্রটোকল মেনে সীমান্ত পাহারা দেয় এবং এমন কোনো অনুপ্রবেশ আমাদের নজরে আসেনি। তিনি এই ধরনের দাবিকে ‘বিভ্রান্তিকর’ বলে অভিহিত করেছেন।

ভারতীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তারা মনে করেন, মেঘালয় একটি সংবেদনশীল সীমান্ত রাজ্য হওয়ার কারণে এখানে নিয়মিত আন্তসীমান্ত অপরাধ ও ছোটখাটো সংঘর্ষের মোকাবিলা করতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে সংবাদমাধ্যমে যাচাই না করা তথ্য ছড়ালে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে বিভ্রান্তি ও উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে।

অনুপ্রবেশের খবরটি নাকচ করা হলেও, বাড়তি সতর্কতা হিসেবে মেঘালয় পুলিশ ও বিএসএফ সীমান্তে নজরদারি আরও জোরদার করেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, সীমান্তে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা একটি স্বাভাবিক প্রশাসনিক পদক্ষেপ এবং এটি কোনোভাবেই বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ওই ভুল খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সহিংসতা ও প্রত্যাখ্যানের মধ্যে মিয়ানমারে চলছে ‘প্রহসনের’ নির্বাচন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত মিয়ানমারে শুরু হয়েছে এক বিতর্কিত নির্বাচন, যা দেশ-বিদেশে ‘প্রহসন’ হিসেবে প্রত্যাখ্যাত। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অনুপস্থিতি, শীর্ষ নেতাদের কারাবাস এবং চলমান সংঘাতের কারণে প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠীর ভোটাধিকারবঞ্চিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে এই নির্বাচন হচ্ছে।

সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের প্রায় পাঁচ বছর পর তিন ধাপে নির্বাচনের আয়োজন করেছে সামরিক জান্তা সরকার। ওই অভ্যুত্থান দেশজুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদের জন্ম দিয়েছিল, যা পরে গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়।

পর্যবেক্ষকদের মতে, চীনের সমর্থনে জান্তা সরকার তাদের ক্ষমতাকে বৈধতা দিতে চাইছে, তা সুসংহত করতে চাইছে, যাতে তারা চলমান অস্থিতিশীলতা থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে পায়।

বিবিসি জানিয়েছে, মিয়ানমারে আজ রোববার শুরু হওয়া ভোট গ্রহণের মধ্যে দেশটির একাধিক অঞ্চলে বিস্ফোরণ ও বিমান হামলার খবর পাওয়া গেছে।

মান্দালয় অঞ্চলের মুখ্যমন্ত্রী বিবিসিকে নিশ্চিত করেন, আজ ভোরে ওই অঞ্চলের একটি জনশূন্য বাড়িতে রকেট হামলার পর তিনজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

এর আগে গতকাল রাতে থাইল্যান্ড সীমান্তের কাছে মায়াওয়াদ্দি শহরে ধারাবাহিক বিস্ফোরণে ১০টির বেশি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্থানীয় এক বাসিন্দা বিবিসিকে জানান, ওই হামলায় এক শিশু নিহত হয়েছে এবং তিনজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও হতাহতের খবর পাওয়া গেছে।

তবে কিছু ভোটার বিবিসির কাছে দাবি করেছেন, এবারের নির্বাচন আগের চেয়ে অনেক বেশি ‘সুশৃঙ্খল’।

মান্দালয় অঞ্চলের বাসিন্দা মা সু জারচি বলেন, ‘ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতা এবার অনেক বদলে গেছে। ভোট দেওয়ার আগে আমি ভয়ে ছিলাম। এখন ভোট দিয়ে স্বস্তি পাচ্ছি। দেশের জন্য নিজের সেরাটা দিতে চেষ্টা করেছি—এমন একজন নাগরিক হিসেবে আমি আমার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছি।’

২২ বছর বয়সে প্রথমবার ভোট দিয়ে পেয়ি ফিয়ো মাউং বিবিসিকে জানান, তিনি ভোট দিয়েছেন। কারণ, তিনি বিশ্বাস করেন ভোট দেওয়া ‘প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব’।

মাউং বলেন, ‘আমার প্রত্যাশা নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য। নিত্যপণ্যের দাম আকাশচুম্বী। আমি এমন কাউকে সমর্থন করতে চাই, যিনি লড়াই করা এসব মানুষের জন্য নিত্যপণ্যের দাম কমিয়ে আনতে পারবেন। আমি এমন একজন প্রেসিডেন্ট চাই, যিনি সব মানুষের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করবেন।’

এদিকে মিয়ানমারের জান্তা সরকার এই নির্বাচন ঘিরে সব সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করে দাবি করেছে, তাদের লক্ষ্য দেশকে ‘বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরিয়ে আনা’।

রাজধানী নেপিডোর এক কঠোর নিরাপত্তাবেষ্টিত ভোটকেন্দ্রে আজ ভোট দিয়ে জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং বিবিসিকে বলেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে।

জান্তাপ্রধান জোর দিয়ে বলেন, ‘আমি সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান। একজন সরকারি চাকরিজীবী। আমি চাইলেই বলতে পারি না, আমি প্রেসিডেন্ট হতে চাই।’

এর আগে চলতি সপ্তাহের শুরুতে তিনি বলেছিলেন, যারা ভোট প্রত্যাখ্যান করছে, তারা আসলে ‘গণতন্ত্রের পথে অগ্রগতিকে’ প্রত্যাখ্যান করছে।

মিয়ানমারে নতুন এক আইনের অধীনে নির্বাচনে বাধা দেওয়া বা বিরোধিতা করার অভিযোগে দুই শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এই আইনে মৃত্যুদণ্ডসহ কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ধর্ষণের শিকার নারীকে বিজেপি নেত্রীর স্বামী বললেন, ‘আমার কিছুই হবে না’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম অশোক সিং। ছবি: এনডিটিভি
অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম অশোক সিং। ছবি: এনডিটিভি

এক নারীকে ছুরির মুখে ধর্ষণ, সেই ঘটনার ভিডিও ধারণ ও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে পরে বারবার যৌন সম্পর্কে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে ভারতের মধ্যপ্রদেশের সাতনা জেলার এক বিজেপি কাউন্সিলরের স্বামীর বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী ওই নারী যখন ক্যামেরার সামনে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন এবং তাঁদের কথোপকথনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশের কথা বলেন তখন ওই ব্যক্তি হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আমার কিছুই হবে না।’

অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম অশোক সিং। তিনি রামপুর বাঘেলান নগর পরিষদের এক বিজেপি কাউন্সিলরের স্বামী। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে অশোক সিংকে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে গালিগালাজ করতে এবং ভুক্তভোগী নারীকে হুমকি দিতে দেখা যায়। এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

ভাইরাল হওয়া ওই ক্লিপটিতে অভিযুক্তকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার কী হবে? কিছুই হবে না। যেখানে খুশি অভিযোগ করো, আমার কিছুই হবে না।’ ভিডিওর নেপথ্যে ভুক্তভোগী নারীকে কাঁদতে কাঁদতে অভিযোগ দায়েরের কথা বলতে শোনা যায়।

গত সোমবার সাতনার পুলিশ সুপার (এসপি) হংসরাজ সিংয়ের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ওই নারী। অভিযোগে তিনি বলেন, প্রায় ছয় মাস আগে ওই ঘটনা ঘটেছে। নিজের ও পরিবারের প্রাণনাশের হুমকির কারণে এতদিন তিনি মুখ খোলেননি। অভিযোগ পাওয়ার পরপরই এসপি তদন্তের দায়িত্ব ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট অব পুলিশ (ডিএসপি) মনোজ ত্রিবেদীর কাছে হস্তান্তর করেন।

ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ অনুযায়ী, কারহি এলাকার বাসিন্দা অশোক সিং তাঁর বাড়িতে ঢুকে ছুরির মুখে তাঁকে ধর্ষণ করে। মোবাইল ফোনে সেই ঘটনার ভিডিও ধারণ করে এবং এই বিষয়ে মুখ খুললে নারী ও তাঁর পরিবারকে মেরে ফেলার হুমকি দেন।

ওই নারী অভিযোগে আরও বলেন, গত ২০ ডিসেম্বর অশোক সিং আবার তাঁর কাছে আসেন, তাঁর শ্লীলতাহানি করেন এবং আবারও ভিডিওটি প্রকাশ করে দেওয়ার হুমকি দেন। বলেন, তাঁর কথামতো না চললে ওই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হবে।

ভুক্তভোগীর দাবি, অশোক সিংয়ের বিরুদ্ধে আগেও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ছিল এবং একসময় তাঁকে জেলা থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছিল। এই কারণেই সে নিজেকে আইনের ঊর্ধ্বে মনে করে প্রকাশ্যে তাঁকে হুমকি দিতে সাহস পেয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

ভুক্তভোগী নারী জানান, অশোক সিং নিয়মিত তাঁর দোকানে এসে তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং বারবার হুমকি দেন। এতে তিনি ও তাঁর পরিবার ভীতি ও হয়রানির মধ্যে রয়েছেন বলে অভিযোগ করেন।

ওই নারী আরও অভিযোগ করেছেন, পাঁচ দিন আগে পুলিশের কাছে যাওয়ার পরও এখনো পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত তিনি। তিনি বলেন, তাঁর বা তাঁর পরিবারের কোনো ক্ষতি হলে এর জন্য পুলিশই দায়ী থাকবে।

এদিকে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করা হচ্ছে এবং সব প্রমাণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এখনো পর্যন্ত কোনো গ্রেপ্তারের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জাপানে তুষারপাতে পিচ্ছিল রাস্তায় ৫০টি গাড়ির সংঘর্ষ, নিহত ২

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ৫১
পরপর অনেকগুলো গাড়ির সংঘর্ষের অন্তত ১০টি গাড়িতে আগুন ধরে যায়। ছবি: সংগৃহীত
পরপর অনেকগুলো গাড়ির সংঘর্ষের অন্তত ১০টি গাড়িতে আগুন ধরে যায়। ছবি: সংগৃহীত

তীব্র তুষারপাত ও পিচ্ছিল রাস্তার কারণে জাপানের মধ্যাঞ্চলে এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ২ জন নিহত এবং ২৬ জন আহত হয়েছেন। দেশটির কান-এৎসু এক্সপ্রেসওয়েতে অন্তত ৫০টি গাড়ির স্তূপ তৈরি হয়েছে। সংঘর্ষের ফলে বেশ কয়েকটি যানবাহনে আগুন ধরে যায়।

স্থানীয় পুলিশের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, ২৬ ডিসেম্বর স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে টোকিও থেকে প্রায় ১৬০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে গুনমা প্রিফেকচারের মিনাকামিতে এই দুর্ঘটনা ঘটে। প্রাথমিকভাবে দুটি ট্রাকের মধ্যে সংঘর্ষ হলে পেছনে থাকা গাড়িগুলো একের পর এক ধাক্কা খেতে থাকে। এই চেইন রিঅ্যাকশনের ফলে অন্তত ১০টি গাড়িতে দাউ দাউ করে আগুন ধরে যায়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সাড়ে সাত ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

পুলিশ জানিয়েছে, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে টোকিওর একজন ৭৭ বছর বয়সী নারী রয়েছেন। এ ছাড়া একটি পুড়ে যাওয়া ট্রাকের চালকের আসন থেকে আরও একটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আহত ২৬ জনের মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বাকি ২১ জন সামান্য আঘাত পেয়েছেন।

দুর্ঘটনার সময় ওই এলাকায় ভারী তুষারপাতের সতর্কতা জারি ছিল। পুলিশের ধারণা, রাস্তার ওপর বরফ জমে পিচ্ছিল হয়ে যাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকগুলো পিছলে যায়। যার ফলে এই ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

ষাটোর্ধ্ব এক প্রত্যক্ষদর্শী জাপানি সংবাদমাধ্যম এনএইচকে-কে জানান, সংঘর্ষের সময় তিনি বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনেন এবং দেখেন সামনের গাড়িগুলোতে আগুন ধরে গেছে। দ্রুত সেই আগুন অন্যান্য গাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি আরও জানান, তাঁকেসহ প্রায় ৫০ জনকে নিকটবর্তী একটি টোল প্লাজায় সরিয়ে নেওয়া হয় এবং সেখানে তাঁরা সারা রাত অবস্থান করেন।

দুর্ঘটনার পর এক্সপ্রেসওয়ের একটি অংশ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পুড়ে যাওয়া এবং ক্ষতিগ্রস্ত গাড়িগুলো সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে। রাস্তা পরিচালনাকারী সংস্থা নেক্সকো জানিয়েছে, আগুনের তাপে রাস্তার কোনো ক্ষতি হয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করা হচ্ছে। সংস্থাটি আপাতত ওই রুট ব্যবহার না করার জন্য ভ্রমণকারীদের সতর্ক করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত