Ajker Patrika

ভুয়া বিয়েতে মেতেছে ভারতের তরুণ প্রজন্ম

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১২ অক্টোবর ২০২৫, ২১: ৫৫
আয়োজক প্রতিষ্ঠান ‘জুম্মা কি রাত’-এর আয়োজনে একটি ভুয়া বিয়ের অনুষ্ঠান। ছবি: দি ইনডিপেনডেন্ট
আয়োজক প্রতিষ্ঠান ‘জুম্মা কি রাত’-এর আয়োজনে একটি ভুয়া বিয়ের অনুষ্ঠান। ছবি: দি ইনডিপেনডেন্ট

বর নেই, কনেও নেই, কন্যাদান বা সাতপাকের অনুষ্ঠানেরও কোনো নজির নেই—তবু হচ্ছে বিয়ের উৎসব। আলোকসজ্জা, গান, গাঁদা ফুলের মালা, ঝলমলে পোশাক আর অন্তহীন নাচ-গানই এই উৎসবের প্রধান আকর্ষণ। দিল্লির বিভিন্ন বাড়ির ছাদ থেকে শুরু করে হায়দরাবাদের ক্লাব—সর্বত্র এ ধরনের ভুয়া বিয়ের উৎসবে মেতেছে ভারতের তরুণ প্রজন্ম। এর উদ্দেশ্য একটাই—বাস্তব বিয়েতে অংশ নেওয়ার বিপুল ব্যয়ের ঝামেলা এড়িয়ে বিয়ের আনন্দ উপভোগ করা।

ভারতের শহুরে তরুণ সমাজের এই অদ্ভুত প্রবণতা নিয়ে আজ রোববার (১২ অক্টোবর) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দি ইনডিপেনডেন্ট। এতে বলা হয়েছে, ভারতের বিবাহশিল্পের আয় বর্তমানে প্রায় ১২ লাখ কোটি টাকার বেশি। বিশেষ করে, দেশটির ধনী পরিবারগুলো একেকটি বিয়েতে কোটি কোটি রুপি ব্যয় করে। তবে এর বিপরীতে নতুন ‘ভুয়া বিয়ের’ সংস্কৃতিতে খরচ অনেক কম। এ ধরনের একটি পার্টিতে অংশ নেওয়ার জন্য ক্ষেত্রবিশেষে একেকজনের ৫০০ থেকে ৭ হাজার টাকার মতো খরচ হতে পারে।

বর্তমানে ভারতে এ ধরনের বিয়ের উৎসবের আয়োজন করছে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে দিল্লির ‘জুম্মা কি রাত’ নামের আয়োজক প্রতিষ্ঠানটি গত ফেব্রুয়ারিতে প্রথমবারের মতো ভুয়া বিয়ের আয়োজন করেছিল। এর উদ্যোক্তা সাহিব গুজরাল বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম মজার ছলে একটা সাজানো মঞ্চ করব। কিন্তু মানুষ এমনভাবে সাড়া দেবে ভাবিনি। এখানে কেউ বিয়ে করছে না, শুধু নাচছে আর উপভোগ করছে।’

ওই অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া অতিথিরা একে অপরকে মজা করে জিজ্ঞেস করছিলেন—আপনি কনেপক্ষ নাকি বরপক্ষ? যদিও বাস্তবে কোনো পক্ষই ছিল না সেখানে। এ ধরনের উৎসবে অচেনা মানুষ একে অপরের সঙ্গে পরিবারের মতো করে ছবি তোলেন আবার কেউ কেউ বলিউডের গানে দল বেঁধে নাচেন। মধ্যরাত নাগাদ পুরো জায়গা যেন আনন্দে ডুবে যায়।

২১ বছর বয়সী এক তরুণ বলেন, নাইটক্লাবে গেলে সবাই নিজের গ্রুপে থাকে, কিন্তু এখানে সবাই মিশে যায়।

এই ভুয়া বিয়ে এখন শুধু তরুণদের নয়, অংশ নিচ্ছেন মাঝবয়সীরাও। কেউ কেউ এই আসরকে ব্যবহার করছেন সাজগোজের সুযোগ হিসেবে। পূজা নামের দিল্লির এক অংশগ্রহণকারী জানান, তাঁর কাজিনের বিয়ের একটি দামি লেহেঙ্গা বাড়িতে পড়ে ছিল। তাই তিনি সেটা পরে ভুয়া বিয়ের উৎসবে এসেছেন।

সম্প্রতি দক্ষিণ ভারতের বেঙ্গালুরু ও হায়দরাবাদে আয়োজিত ‘শাদি মুবারক’ ছিল কুইয়ার সম্প্রদায়কেন্দ্রিক একটি ভুয়া বিয়ে। আয়োজক বৈভব মোদি ও আশিস চোপড়া বলেন, ‘এটা এমন এক বিবাহ, যা আমরা আইনি স্বীকৃতি না পেলেও হৃদয়ে অনুভব করি।’

এ ধরনের বিয়েতে এখনো তেমন কোনো সামাজিক প্রতিরোধ দেখা যায়নি। তবে কিছু বিতর্ক উঠেছে। মহারাষ্ট্রে একবার অপ্রাপ্তবয়স্কদের উপস্থিতির জন্য একটি ভুয়া বিয়ের পার্টি ভেঙে দিয়েছিল পুলিশ।

সমালোচকেরা বলছেন, এটি শুধু সোশ্যাল মিডিয়ার একটি ক্ষণস্থায়ী ট্রেন্ড। কিন্তু অনেক সংগঠক বিশ্বাস করেন, ছোট শহরগুলোতে এই আয়োজন দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। তাঁদের মতে, এই ভুয়া বিয়েগুলো আসলে আড়ম্বরপূর্ণ বিয়ের চাপ, ব্যয় আর প্রত্যাশার বিরুদ্ধে একধরনের সামাজিক প্রতিক্রিয়া।

‘জুম্মা কি রাত’-এর উদ্যোক্তা গুজরাল বলেন, ‘ভারতের বিয়েশিল্প বহুদিন ধরে মানুষকে শিখিয়েছে—বিয়েতে কত টাকা খরচ হয়েছে, সেটাই বড় ব্যাপার। সেই ধারণাকে উল্টে আমরা বিয়েকে পণ্য বানিয়ে বিক্রি করছি।’

ভারতের নতুন প্রজন্মের কণ্ঠে এখন প্রায়ই শোনা যাচ্ছে—বিয়ের মতো সাজো, কিন্তু বিয়ে নয়; শুধু আনন্দে নাচো গাঁদা ফুলের আলোয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সংবিধান সংশোধনে ক্ষুব্ধ হয়ে পদত্যাগ করলেন পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ২২: ৫৮
বিচারপতি মনসুর আলী শাহ ও আতহার মিনাল্লাহ। ছবি: সংগৃহীত
বিচারপতি মনসুর আলী শাহ ও আতহার মিনাল্লাহ। ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানের পার্লামেন্ট দেশটির সংবিধানের ২৭তম সংশোধনী পাস করেছে। এরপরই ‘সংবিধান আর রইল না’ এমন আক্ষেপ করে দেশটির সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি পদত্যাগ করেছেন।

পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম দ্য ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি আসিফ আলী জারদারির স্বাক্ষরের মাধ্যমে বিতর্কিত ২৭তম সাংবিধানিক সংশোধনী আইনে পরিণত হয়। এর কয়েক ঘণ্টার পরই পদত্যাগপত্র জমা দেন বিচারপতি মনসুর আলী শাহ ও আতহার মিনাল্লাহ।

এর আগে দুজন বিচারপতিই পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি ইয়াহিয়া আফ্রিদিকে চিঠি দিয়ে ফুল কোর্ট বৈঠক ও বিচারবিষয়ক সম্মেলন ডাকার অনুরোধ করেছিলেন, যাতে ২৭তম সংশোধনী নিয়ে আদালতের মধ্যে খোলামেলা আলোচনা হয়।

রাষ্ট্রপতিকে লেখা পদত্যাগপত্রে বিচারপতি মনসুর আলী শাহ এই সংশোধনীকে আখ্যা দিয়েছেন ‘পাকিস্তানের সংবিধানের ওপর এক গুরুতর আঘাত’ হিসেবে। তিনি লিখেছেন, ‘এটি সুপ্রিম কোর্টকে ভেঙে দিয়েছে, বিচার বিভাগকে নির্বাহী নিয়ন্ত্রণে এনেছে এবং আমাদের সাংবিধানিক গণতন্ত্রের মূল ভিত্তিতেই আঘাত হেনেছে।’

মনসুর আলী আরও লিখেছেন, জাতির সর্বোচ্চ আদালতের ঐক্যকে ভেঙে এই সংশোধনী বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও সততাকে পঙ্গু করেছে, দেশকে বহু দশক পিছিয়ে দিয়েছে।

মনসুর আলী শাহ বলেন, তাঁর সামনে দুটি পথ ছিল—এক, আদালতের বিচারপতি হিসেবে থাকা, যা হবে সেই প্রতিষ্ঠানটির ভিত্তি দুর্বল করার সমান; দুই, পদত্যাগ করা। তিনি বলেন, এই আদালতে থেকে যাওয়া মানে হবে সংবিধানবিরোধী কর্মকাণ্ডে নীরব সম্মতি জানানো এবং এমন এক আদালতে বসা, যার কণ্ঠস্বর ইতিমধ্যে রুদ্ধ করা হয়েছে।

মনসুর আলী অভিযোগ করেন, ‘২৬তম সংশোধনীর সময়ও সুপ্রিম কোর্ট সাংবিধানিক প্রশ্নে রায় দিতে পারতেন, কিন্তু ২৭তম সংশোধনী সেই ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছে। এমন একটি ক্ষীণ ও অক্ষম আদালতে থেকে আমি সংবিধান রক্ষা করতে পারি না।’

অন্যদিকে বিচারপতি আতহার মিনাল্লাহ তাঁর পদত্যাগপত্রে লিখেছেন, ‘আমি ১১ বছর আগে যে সংবিধানের শপথ নিয়েছিলাম, তা আর নেই।’

আতহার জানান, সংশোধনী পাসের আগে তিনি প্রধান বিচারপতিকে একটি চিঠি লিখে এর সম্ভাব্য পরিণতি সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেন, আজ সেই আশঙ্কাগুলোই সত্য প্রমাণিত হলো।

আতহার লিখেছেন, ‘আমি যে সংবিধান রক্ষা করার শপথ নিয়েছিলাম, তা এখন আর নেই। নতুন যে ভিত্তি স্থাপন করা হচ্ছে, তা ওই সংবিধানের কবরের ওপর দাঁড়িয়ে।’

আতহার আরও বলেন, ‘যে পোশাক আমরা পরি, তা কেবল সাজসজ্জা নয়; এটি জনগণের প্রতি আমাদের দায়িত্বের প্রতীক। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী, নীরবতা ও আপসের মাধ্যমে এই পোশাক অনেক সময় বিশ্বাসঘাতকতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

বিচারপতি আতহার মিনাল্লাহ নাসরুম মিনাল্লাহর পুত্র এবং বিচারপতি সফদার শাহের জামাতা—যিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া বেঞ্চের সদস্য ছিলেন। কিন্তু রায়টির বিরোধিতা করে ভিন্নমত পোষণ করায় পরে জেনারেল জিয়া-উল-হকের রোষানলে পড়েন।

আতহার মিনাল্লাহ কর্মজীবনের শুরুতে পাকিস্তান কাস্টমস বিভাগে যোগ দেন, পরে পদত্যাগ করে আইন পেশায় আসেন। প্রধান বিচারপতি ইফতেখার চৌধুরীর বরখাস্তের পর তিনি বিচার বিভাগের পুনর্বহাল আন্দোলনে যোগ দেন। তবে পুনর্বহালের পর সুপ্রিম কোর্টের অতিরিক্ত সুয়ো মটো মামলার (স্বতঃপ্রণোদিত মামলা) কারণে তিনি বিচারব্যবস্থার সমালোচক হয়ে ওঠেন।

২০২২ সালের নভেম্বরে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়াল তাঁকে এবং বিচারপতি মনসুর আলী শাহ, শাহিদ ওয়াহিদ ও হাসান আজহার রিজভিকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে শপথবাক্য পাঠ করান।

রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের আগে আজ বিকেলে সিনেট দ্বিতীয়বারের মতো ভোটাভুটির মাধ্যমে সংশোধনীটি পাস করে। বিরোধী দল প্রতিবাদ জানালেও ৬৪ ভোট পক্ষে ও ৪ ভোট বিপক্ষে পড়ে। সিনেট চেয়ারম্যান ইউসুফ রেজা গিলানি ফলাফল ঘোষণা করে বলেন, দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় বিলটি পাস হয়েছে।

এই সংশোধনীর মূল লক্ষ্য বলা হয়েছে, শাসনব্যবস্থা সহজতর করা। এর আওতায় নতুন সাংবিধানিক আদালত বা ‘ফেডারেল কনস্টিটিউশনাল কোর্ট’ (এফসিসি), নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ব্যবস্থা এবং সেনা নেতৃত্বের কাঠামোয় পরিবর্তন আনা হয়েছে।

এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ফেডারেল সাংবিধানিক আদালতের গঠন, যা প্রতিটি প্রদেশের বিচারপতিদের নিয়ে গঠিত হবে এবং কেবল সংবিধানসংক্রান্ত মামলা শুনবে। অন্য মামলাগুলো চলবে প্রচলিত আদালতগুলোতে।

এই সংশোধনীর ধারা ২৩ অনুযায়ী, বর্তমান প্রধান বিচারপতি ইয়াহিয়া আফ্রিদি তাঁর মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্বে থাকবেন। ধারা ৫৬ অনুযায়ী, তাঁর মেয়াদ শেষে ভবিষ্যতে সর্বোচ্চ আদালত ও ফেডারেল সাংবিধানিক আদালতের মধ্যে জ্যেষ্ঠতম প্রধান বিচারপতিই নতুন প্রধান বিচারপতি হবেন।

ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি জারদারি আগামীকাল শুক্রবার প্রেসিডেন্সিতে নবগঠিত ফেডারেল সাংবিধানিক আদালতের প্রধান বিচারপতিকে শপথবাক্য পাঠ করাবেন। এর মাধ্যমে কার্যত ২৭তম সংশোধনীর পূর্ণ বাস্তবায়ন হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দিল্লি হামলায় তুরস্ককে জড়ানোর পেছনে ভারতের দুরভিসন্ধি দেখছে আঙ্কারা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ২২: ২৮
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

দিল্লিতে সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে তুরস্কের সম্পৃক্ততার দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে দেশটি। গতকাল বুধবার তুরস্কের ডিসইনফরমেশন প্রতিরোধ কেন্দ্র (ডিএমএম) এ দাবিকে দুরভিসন্ধি ও বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা বলে আখ্যা দিয়েছে।

এর আগে ভারতের কিছু সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, আঙ্কারার ভারতে সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে।

ডিএমএম দেশটির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম NSosyal-এ দেওয়া এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ভারতের কিছু সংবাদমাধ্যমে ইচ্ছাকৃতভাবে প্রচার করা হয়েছে, ‘তুরস্ক ভারতে সংঘটিত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে লজিস্টিক, কূটনৈতিক ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করে।’ এই অভিযোগগুলো দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত একটি দুরভিসন্ধিমূলক ও বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা।

তুরস্ক সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের (যেখানেই, যে ঘটাক না কেন) ঘোরবিরোধী বলে পুনর্ব্যক্ত করে ডিএমএম জানায়, তুরস্ক আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমের নেতৃত্ব দিচ্ছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আঙ্কারা জাতিসংঘের গ্লোবাল কাউন্টার-টেররিজম স্ট্র্যাটেজি বা বৈশ্বিক সন্ত্রাসবিরোধী কৌশলকে ‘সক্রিয়ভাবে সমর্থন করে’ এবং ন্যাটোর সন্ত্রাসবিরোধী নীতি প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ডিএমএম আরও জানায়, তুরস্ক ভারত বা অন্য কোনো দেশে ‘চরমপন্থা ছড়ানোর কার্যক্রম’ পরিচালনা করে—এমন দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বিভ্রান্তিমূলক এবং বাস্তবতাবিবর্জিত।

সংস্থাটি আরও উল্লেখ করে, এ ধরনের মিথ্যা ও প্ররোচনামূলক প্রতিবেদন তুরস্কের বৈশ্বিক নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টাকে ব্যাহত করার লক্ষ্যেই প্রচার করা হচ্ছে।

সবশেষে, তুরস্কের সাধারণ জনগণকে এসব অভিযোগে বিশ্বাস না করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দিল্লি হামলার ‘ছক আঁকা হয়’ তুরস্কে, কোডনেম ছিল উকাসা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
দিল্লির লালকেল্লায় সন্ত্রাসী হামলার পেছনে উঠে আসছে তুরস্কের ‘উকাসা’ নামের এক ব্যক্তির নাম। ছবি: সংগৃহীত
দিল্লির লালকেল্লায় সন্ত্রাসী হামলার পেছনে উঠে আসছে তুরস্কের ‘উকাসা’ নামের এক ব্যক্তির নাম। ছবি: সংগৃহীত

দিল্লির লালকেল্লায় সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে এবার জড়িয়ে যাচ্ছে তুরস্কের নাম। তুরস্ক থেকে ‘উকাসা’ ছদ্মনামের এক ব্যক্তি এই হামলার নীলনকশা আঁকেন। তিনি ফরিদাবাদের আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক উমর উন নবির নেতৃত্বাধীন টিমকে দিতেন দিকনির্দেশনাও। এমনটিই বলছেন ভারতীয় তদন্ত কর্মকর্তারা।

নিরাপত্তা সূত্রে জানা গেছে, উকাসা ছিলেন দিল্লিভিত্তিক উমর নবির সন্ত্রাসী গ্রুপ নিষিদ্ধ সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদ ও আনসার গাজওয়াতুল হিন্দের পাকিস্তানভিত্তিক পরিচালকদের মধ্যকার মূল সংযোগকারী।

কর্মকর্তারা জানান, এই ষড়যন্ত্রের বীজ রোপিত হয় ২০২২ সালে তুরস্কে। ওই সময় উমরসহ আরও তিনজন (যাঁরা দুটি পাকিস্তান-সমর্থিত সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত) তুরস্কে গিয়েছিলেনে।

উমর ২০২২ সালের মার্চ মাসে তুরস্কে যান এবং আঙ্কারায় দুই সপ্তাহ অবস্থান করেন। এক কর্মকর্তা বলেন, তাঁদের কথাবার্তা প্রথমে টেলিগ্রামে শুরু হয়েছিল, পরে সিগন্যাল ও সেশনের মতো এনক্রিপটেড অ্যাপে পরিকল্পনা আঁটতে থাকেন।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, উকাসাই তাঁদের গোপন সেল তৈরি ও ডিজিটাল ফাঁকি দেওয়ার কৌশল শেখান।

তদন্তকারীরা বিশ্বাস করেন, উকাসাই এই সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা করে দেন। পরিকল্পনায় একাধিক যানবাহনে বিস্ফোরক ভর্তি করে ধারাবাহিক হামলা চালানোর ছক আঁকা হয়।

অভিযানের জন্য তিনটি গাড়ি কেনা হয়েছিল। একটি হুন্ডাই আই-২০, একটি লাল রঙের ফোর্ড ইকোস্পোর্ট এবং একটি মারুতি ব্রেজা।

গত সোমবার (১০ নভেম্বর) লালকেল্লার কাছে উমরের হুন্ডাই আই-২০ গাড়িটি বিস্ফোরিত হয়, এতে ঘটনাস্থলেই উমর নিহত হন। নিরাপত্তা সংস্থাগুলো এরই মধ্যে ফরিদাবাদ থেকে ইকোস্পোর্টটি উদ্ধার করা হয়েছে এবং ব্রেজা গাড়িটির খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। কর্মকর্তাদের সন্দেহ, অবশিষ্ট গাড়িগুলোতেও বিস্ফোরক লুকানো থাকতে পারে।

সূত্রগুলো জানায়, উমরের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ডা. মুজাম্মিল এ বছরের জানুয়ারিতে একাধিকবার লালকেল্লা পরিদর্শন করেছেন। তিনিও আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত।

এক তদন্তকারী বলেন, তাঁরা স্মৃতিস্তম্ভটির নিরাপত্তাব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে চেয়েছিলেন, যাতে ২০২৬ সালের ভারতীয় প্রজাতন্ত্র দিবসের সময় বড় হামলা চালানো যায়।

২০২২ সাল থেকে দলটি ৩৫০ কেজির বেশি বিস্ফোরক পদার্থ সংগ্রহ করেছিল, যার মধ্যে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ও অল্প পরিমাণ আরডিএক্স ছিল। এই বিস্ফোরকগুলো এ বছরের শুরুর দিকে ফরিদাবাদ থেকে উদ্ধার হয়, এর সূত্র ধরেই মুজাম্মিলকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপরই উমর পালিয়ে যান এবং দিল্লি-এনসিআরজুড়ে ১৬ ঘণ্টা ড্রাইভ করার পর বিস্ফোরকভর্তি আই-২০ গাড়িটির বিস্ফোরণ ঘটান।

তদন্তে আরও জানা গেছে, দিল্লির পাশাপাশি অযোধ্যাও তাঁদের লক্ষ্যবস্তু ছিল। এক সূত্র জানায়, তাঁরা ২৫ নভেম্বরের দিকে হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন, যখন রামমন্দিরে গেরুয়া পতাকা উত্তোলনের কথা ছিল।

উকাসার ডিজিটাল কর্মকাণ্ডের খুঁটিনাটি বের করতে ভারতীয় তদন্তকারীরা এখন বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সহযোগিতা চাচ্ছেন। একই সঙ্গে পাকিস্তানি সন্ত্রাসী পরিচালকদের সঙ্গে তার যোগসূত্রতা বের করার চেষ্টা করছেন।

এক কর্মকর্তা বলেন, প্রতিটি এনক্রিপ্টেড চ্যাট ও বিদেশি অর্থ লেনদেন পরীক্ষা করা হচ্ছে। তুরস্ক সংযোগই এই মামলার মূল কেন্দ্রবিন্দু।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফরিদাবাদ ইউনিভার্সিটির রুমে বসে দিল্লি বিস্ফোরণের পরিকল্পনা, ভারতীয় গণমাধ্যমের তথ্য

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গত সোমবার লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনের কাছে গাড়ি বিস্ফোরণ হয়েছিল। ছবি: পিটিআই
গত সোমবার লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনের কাছে গাড়ি বিস্ফোরণ হয়েছিল। ছবি: পিটিআই

রাজধানী দিল্লি থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ফরিদাবাদের আল ফালাহ ইউনিভার্সিটি। সম্প্রতি লালকেল্লায় ঘটে যাওয়া গাড়ি বিস্ফোরণের পরিকল্পনার ‘কেন্দ্র’ হিসেবে দেখা হচ্ছে স্থানটিকে। এ ছাড়া বিস্ফোরণের ঘটনার তদন্ত এখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই চার চিকিৎসককে কেন্দ্র করে এগোচ্ছে, যাঁদের পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ-ই-মোহাম্মদের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, তাঁদের সঙ্গে এই চিকিৎসকদের কোনো সংযোগ নেই।

গত সোমবার লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনের কাছে ধীরগতিতে চলতে থাকা একটি হুন্ডাই আই-২০ গাড়ি বিস্ফোরণে কমপক্ষে ১৩ জন নিহত হন। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে গাড়িটির চালক হিসেবে ডা. উমর মুহাম্মদকে শনাক্ত করা হয়েছে।

এর আগে ওই দিনই জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ হরিয়ানা আর উত্তর প্রদেশ থেকে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছিল। তাঁদের মধ্যে তিন চিকিৎসক ছিলেন।

তদন্তকারী ও পুলিশের সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, মুজাম্মিল শাকিল, আদিল ও শহীদ সাঈদ নামের ওই তিন চিকিৎসক ডা. উমরের সঙ্গে আল ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ে বসেই হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন আর তাঁদের পরিকল্পনার কেন্দ্র ছিল ৭০ একরজুড়ে বিস্তৃত আল ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ নম্বর বিল্ডিংয়ের ১৩ নম্বর কক্ষটি ছিল ডা. মুজাম্মিলের, সেখানেই সবাই মিলিত হতেন। পুলিশ সন্দেহ করছে, এই কক্ষেই দিল্লি ও উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন অংশে বিস্ফোরণের পরিকল্পনা করা হয়েছিল।

জানা গেছে, এই চার চিকিৎসক দিল্লিজুড়ে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর জন্য ২০ লাখ টাকার একটি তহবিল সংগ্রহ করেছিলেন। এনডিটিভির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৯২ সালে অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিন অর্থাৎ আগামী ৬ ডিসেম্বর ন্যাশনাল ক্যাপিটাল রিজিয়ন (এনসিআর) বা রাজধানী দিল্লির বিভিন্ন স্থানে ধারাবাহিক বিস্ফোরণের পরিকল্পনা করা হচ্ছিল।

তহবিল থেকে পুরো অর্থ ডা. উমরকে সুরক্ষার জন্য দেওয়া হয়েছিল। পরে গুরুগ্রাম, নুহ ও অন্যান্য নিকটবর্তী বাজার থেকে ৩ লাখ টাকায় কেনা হয় প্রায় ২৬ কুইন্টাল (২৬০০ কেজি) এনপিকে (নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম) সার। এই সার আইইডি (বোমা) তৈরির জন্য ব্যবহার করার কথা ছিল।

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, হামলাকারীরা প্রথমে বোমা তৈরির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি থেকে রাসায়নিক পাচারের পরিকল্পনা করে। ল্যাবটি মুজাম্মিলের কক্ষ থেকে মাত্র কয়েক মিটার দূরে। ডা. উমর ও শাহীন উভয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি সদস্য ছিলেন, তাঁরা রাসায়নিকের ব্যবস্থা করেন। এরপর তা ফরিদাবাদের ধৌজ ও তাগা গ্রামের ভাড়া করা স্থানে মজুত করা হয়।

ডা. মুজাম্মিলের কক্ষটি এখন সিলগালা করা হয়েছে। সেখান থেকে একাধিক ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও পেন ড্রাইভ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া কোড শব্দ ও এনক্রিপ্টেড বার্তাভর্তি দুটি ডায়েরি পাওয়া গেছে।

ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা তাঁদের ব্যবহৃত কক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাব উভয় স্থান থেকেই রাসায়নিকের অবশেষ খুঁজে পেয়েছেন। পুলিশের সন্দেহ, ল্যাব থেকে পাচার করা রাসায়নিকগুলো অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের সঙ্গে অক্সিডাইজার মিশিয়ে বিস্ফোরক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছিল।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, দিল্লি বিস্ফোরণে এএনএফও (অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ও জ্বালানি তেল মিশ্রিত একটি বিস্ফোরক যৌগ) ব্যবহৃত হয়েছিল। এর আগে ফরিদাবাদের অভিযানেও পুলিশ ৩৫০ কেজি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটসহ ২ হাজার কেজির বেশি বিস্ফোরক উদ্ধার করেছিল।

পুলিশ এখনো ডা. উমরকে আটক করতে পারেনি। তবে ডা. মুজাম্মিল শাকিল, আদিল ও শহীদ সাঈদ বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত