Ajker Patrika

‘ভারতে জাতের কারণে আইপিএস অফিসারও অপমানিত হন, তাহলে সাধারণ মানুষের কী অবস্থা’

কলকাতা প্রতিনিধি  
গত মঙ্গলবার চণ্ডীগড়ের সেক্টর ১১-এ নিজ বাড়িতে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায় আইপিএস অফিসার ওয়াই পুরণ কুমারের মরদেহ। ছবি: পিটিআই
গত মঙ্গলবার চণ্ডীগড়ের সেক্টর ১১-এ নিজ বাড়িতে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায় আইপিএস অফিসার ওয়াই পুরণ কুমারের মরদেহ। ছবি: পিটিআই

হরিয়ানার উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা ওয়াই পুরণ কুমারের রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে সারা দেশে আলোড়ন চলছে। গত মঙ্গলবার চণ্ডীগড়ের সেক্টর ১১-এ নিজ বাড়িতে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায় এই আইপিএস অফিসারের মরদেহ। প্রাথমিকভাবে পুলিশ একে আত্মহত্যা বললেও তাঁর স্ত্রী আইএএস (ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস) কর্মকর্তা অমনীত পি কুমার স্পষ্ট অভিযোগ করেছেন—এটি আত্মহত্যা নয়, বরং পরিকল্পিতভাবে ঘটানো ‘বাধ্যতামূলক আত্মহত্যা’।

তাঁর কথায়, ‘আমার স্বামীকে জাতের কারণে অপমান করা হয়েছে, মানসিকভাবে ভেঙে ফেলা হয়েছে। অফিসে তাঁকে একঘরে করে দেওয়া হয়েছিল। মিথ্যা প্রমাণ তৈরি করে তাঁকে ফাঁসানোর ষড়যন্ত্র চলছিল।’ অমনীত কুমার সরাসরি নাম নিয়েছেন রাজ্যের ডিজিপি শতরুজিত সিং কাপুর ও রোহতকের এসপি নরেন্দ্র বিজারনিয়ার। চণ্ডীগড় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে যে সুইসাইড নোট উদ্ধার করেছে, তাতেও ১৫ জনের নাম রয়েছে।

সেই নোটে ২০০১ ব্যাচের আইপিএস পুরণ কুমার লিখেছেন—‘আমি ক্লান্ত। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে। আমাকে মানসিকভাবে এমন জায়গায় ঠেলে দেওয়া হয়েছে, যেখানে মৃত্যু ছাড়া মুক্তি নেই।’ সে চিঠির শেষ লাইনটি এখন ভাইরাল—‘আমি লড়েছি, কিন্তু দেয়ালটা খুব শক্ত।’ এই কয়েকটি শব্দ যেন শুধু এক ব্যক্তির নয়, এক ব্যবস্থার আর্তনাদ।

ঘটনাটি সামনে আসতেই কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এক্সে লিখেছেন, ‘বিজেপি ও আরএসএসের ঘৃণা এবং মনুবাদী মানসিকতা সমাজে বিষ ছড়িয়ে দিয়েছে। প্রান্তিক মানুষদের ওপর অন্যায় আজ চরমে পৌঁছেছে।’ তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, যখন একজন আইপিএস অফিসারকেও তাঁর জাতের কারণে অপমান সহ্য করতে হয়, তখন সাধারণ এক দলিত নাগরিকের অবস্থা কল্পনা করুন।

রাহুলের মতে, এই মৃত্যু কেবল এক অফিসারের ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি নয়, বরং সমাজে ছড়িয়ে পড়া সেই গভীর ‘মনুবাদী মানসিকতার’ প্রতিফলন, যা জাতপাতের নামে মানবতাকে চূর্ণ করছে। তিনি আরও দুটি সাম্প্রতিক ঘটনার উল্লেখ করেন—রায়বেরেলিতে দলিত যুবক হরিওম বাল্মিকীর নির্মম হত্যা ও সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাই (যিনি নিজেও দলিত সম্প্রদায়ের) প্রতি জুতা ছোড়ার চেষ্টা।

রাহুল বলেন, যে দেশে সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতিও এমন অবমাননার শিকার হন, সেখানে একজন দলিত অফিসারের প্রতি এমন আচরণ অবাক করার নয়, কিন্তু অত্যন্ত লজ্জাজনক। রাহুলের এ বক্তব্যে বিজেপি শিবিরে স্পষ্ট অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। দলটির মুখপাত্ররা এটিকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে উড়িয়ে দিলেও কংগ্রেস বলছে, রাহুল শুধু একটি ঘটনার কথা বলেননি। তিনি সমাজের কাঠামোগত অন্যায়ের দিকে আঙুল তুলেছেন।

পুরণ কুমারের মৃত্যুর পর চণ্ডীগড় পুলিশ ইতিমধ্যে একটি এফআইআর করেছে, যাতে আত্মহত্যায় প্ররোচনার পাশাপাশি তফসিলি জাতি ও তফসিলি উপজাতি (অত্যাচার প্রতিরোধ) আইন, ১৯৮৯-এর একাধিক ধারা যুক্ত করা হয়েছে।

এখন তদন্ত চলছে রাজ্যের ডিজিপি কাপুর, রোহতক এসপি বিজারনিয়া ও অন্য কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে। প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে কয়েকজনের নাম কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থায়ও পাঠানো হয়েছে।

তবে এ ঘটনার পর রাজ্যে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া তীব্র। কংগ্রেসের ভূপিন্দর সিং হুডা বলেছেন, এমন একজন সিনিয়র অফিসারের মৃত্যু শুধু প্রশাসনের ব্যর্থতা নয়, মানবিক অবক্ষয়েরও প্রতীক। রণদীপ সিং সুরজেওয়ালার ভাষায়, এটি বাধ্যতামূলক আত্মহত্যা। পুরণ কুমারকে এমনভাবে কোণঠাসা করা হয়েছিল যে, তাঁর সামনে মৃত্যু ছাড়া অন্য কোনো পথ খোলা ছিল না।

এদিকে হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী নায়াব সিং সাইনি বা বিজেপির কোনো শীর্ষ নেতা এ ঘটনা নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলেননি। বিরোধী দলগুলো একযোগে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি তুলেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এ মৃত্যু ভারতের প্রশাসনিক কাঠামোয় বিদ্যমান জাতিগত পক্ষপাতের ওপর নতুন আলো ফেলেছে। ইতিমধ্যে দিল্লি, পাটনা, চণ্ডীগড় ও হরিয়ানার বিভিন্ন শহরে নাগরিক সমাজের ব্যানারে মোমবাতি মিছিল হয়েছে।

সহকর্মীরা জানিয়েছেন, পুরণ কুমার ছিলেন পরিশ্রমী ও সৎ। তিনি ক্ষমতাবানদের চাপেও মাথা নত করতেন না। গত কয়েক মাস ধরে তাঁকে প্রশাসনিকভাবে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল। সভায় ডাকা হতো না, গুরুত্বপূর্ণ ফাইল তাঁর হাতছাড়া করা হচ্ছিল। তাঁর স্ত্রী অমনীত কুমার বলেছেন, ‘আমার স্বামী বারবার বলতেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়লে একদিন তাঁরা আমাকে শেষ করে দেবে।’ সম্ভবত সেই আশঙ্কাই সত্যি হলো।

সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, এ ঘটনা কেবল একটি প্রশাসনিক আত্মহত্যা নয়, বরং জাতভিত্তিক বৈষম্যের গভীর সংকেত। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও সমাজে জাত ও গোত্রের অদৃশ্য শৃঙ্খল এখনো ভাঙেনি। সরকারি চাকরির উচ্চপর্যায়েও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কর্মকর্তারা বঞ্চনার শিকার হন—কখনো প্রকাশ্যে, কখনো নীরবে। এ নীরব অত্যাচারই ধীরে ধীরে মানুষকে ভেতর থেকে ভেঙে দেয়। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ মৃত্যু রাষ্ট্রব্যবস্থার আত্মসমালোচনার মুহূর্ত তৈরি করেছে। সংবিধান যতই সমতা ও ন্যায়ের কথা বলুক, সমাজের মানসিক কাঠামো কি সত্যিই বদলেছে? যখন আইনরক্ষকই নিরাপদ নন, তখন সাধারণ মানুষ কোথায় আশ্রয় পাবেন? যখন একজন আইপিএস অফিসারও তাঁর জাতের কারণে অপমানিত হন, তখন সংবিধানের ‘সমতা’ শব্দটি কি শুধুই বইয়ের পাতায় থেকে যাচ্ছে? পুরণ কুমারের মৃত্যু তাই এক পরিবারের শোক নয়, এটি রাষ্ট্রের কাছে এক অমোঘ প্রশ্ন—মনুবাদের বিষ থেকে মুক্তি কবে?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মেক্সিকোতে জেন-জি বিক্ষোভ, পুলিশের বলপ্রয়োগ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ১২: ২১
মেক্সিকো সিটিতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় আন্দোলনকারীদের। ছবি: এএফপি
মেক্সিকো সিটিতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় আন্দোলনকারীদের। ছবি: এএফপি

মেক্সিকোজুড়ে হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছে। দেশটিতে ক্রমবর্ধমান অপরাধ, দুর্নীতি আর আইনের শাসনের অভাবের বিরুদ্ধে এই বিক্ষোভের আয়োজন করেন জেনারেশন জেডের তরুণেরা। এই বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে বল প্রয়োগ করেছে পুলিশ। খবর আল জাজিরার

স্থানীয় সময় গতকাল শনিবারের মিছিলে বিভিন্ন বয়সের মানুষ অংশ নেন। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রবীণ কর্মী ছাড়াও অংশ নেন মিচোয়াকান রাজ্যের নিহত মেয়র কার্লোস মানসোর সমর্থকেরা। চলতি মাসের শুরুর দিকে ডে অব দ্য ডেড উৎসবের এক জনসমাগমে তাঁকে গুলিতে হত্যা করা হয়।

মেক্সিকো সিটিতে মুখোশধারী কয়েকজন বিক্ষোভকারী জাতীয় প্রাসাদের চারপাশের ব্যারিকেড ভেঙে ফেললে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শেইনবাউম ওই প্রাসাদেই থাকেন। স্থানীয় গণমাধ্যম জানায়, পুলিশ বিক্ষোভকারীদের দিকে টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে।

মেক্সিকো সিটির জননিরাপত্তা সচিব পাবলো ভাসকেস সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ঘটনাটিতে ১০০ পুলিশ আহত হয়েছে। এর মধ্যে ৪০ জনকে হাসপাতালে নিতে হয়েছে। আরও ২০ জন সাধারণ মানুষও আহত হয়েছে বলে ভাসকেস স্থানীয় গণমাধ্যম মিলেনিওকে জানান। তিনি বলেন, ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং আরও ২০ জনকে প্রশাসনিক অপরাধের কারণে আটক দেখানো হয়েছে।

মেক্সিকোর দৈনিক এল ইউনিভার্সালের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিক্ষোভকারীরা জাতীয় প্রাসাদের সীমানায় ঢুকে পড়লে নিরাপত্তা বাহিনী টিয়ার গ্যাস ছোড়ে এবং পাথর নিক্ষেপ করে। পত্রিকাটি আরও জানিয়েছে, পুলিশ কয়েক মিনিট ধরে জোকালো প্রাঙ্গণে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার পর এলাকা খালি করে দেয় এবং শেষ দলটিকেও ছত্রভঙ্গ করে।

বিক্ষোভের আয়োজন করে ‘জেনারেশন জেড মেক্সিকো’ নামে একটি গোষ্ঠী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো তাদের ‘ঘোষণাপত্রে’ বলা হয়, তারা দলনিরপেক্ষ এবং সহিংসতা, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারে অতিষ্ঠ মেক্সিকোর তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব করছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ভিসেন্তে ফক্স এবং ধনকুবের রিকার্দো সালিনাস প্লিয়েগো বিক্ষোভের পক্ষে প্রকাশ্যে বার্তা দেন।

মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট শেইনবাউমের অভিযোগ, ডানপন্থী দলগুলো জেন-জি আন্দোলনে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বট ব্যবহার করে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বাড়িয়ে দেখাচ্ছে।

এই বছর এশিয়া ও আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশেও জেন জেড প্রজন্ম বৈষম্য, গণতান্ত্রিক পশ্চাৎপসারণ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে বড় আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। সেপ্টেম্বরে নেপালে জেন-জি আন্দোলনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি পদত্যাগ করেন। মাদাগাস্কারেও একই মাসে বড় বিক্ষোভ হয়। পানির সংকট ও বিদ্যুতের স্থায়ী ঘাটতিতে ক্ষোভ থেকে শুরু হওয়া ওই আন্দোলন সরকারের বৃহত্তর ব্যর্থতা ও দুর্নীতি উন্মোচন করে দেয়। সপ্তাহজুড়ে অস্থিরতার পর সরকার ভেঙে যায়, প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা দেশ ছেড়ে পালান এবং নেতৃত্বে পরিবর্তন আসে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পাকিস্তানে আতশবাজির কারখানায় বিস্ফোরণ, নিহত অন্তত ৭

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
পাকিস্তানের হায়দরাবাদ এলাকায় একটি আতশবাজির কারখানায় বিস্ফোরণে অন্তত ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানের হায়দরাবাদ এলাকায় একটি আতশবাজির কারখানায় বিস্ফোরণে অন্তত ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের হায়দরাবাদের লতিফাবাদ এলাকার এক আতশবাজির কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় অন্তত ৭ জন নিহত হয়েছে। এই দুর্ঘটনায় আহত ছয়জন এখনো চিকিৎসাধীন। গতকাল শনিবার গভীর রাতে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। খবর পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজের।

বিস্ফোরণের পরপরই লতিফাবাদ সহকারী কমিশনার সাউদ লুন্দ গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ‘এখন পর্যন্ত দুজন মারা গেছেন। চার-পাঁচ জনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’ পরে উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে আরও চারটি মরদেহ বের করেন। এতে মৃতের সংখ্যা প্রথমে ছয়ে পৌঁছায়। সর্বশেষ আরও একজনের মরদেহ উদ্ধার করায় তা বেড়ে সাত হয়েছে।

হায়দরাবাদের মেয়র কাশিফ আলী শোরো ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিহতের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘অবৈধ কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে।’

এর আগে সাউদ লুন্দ জানান, ওই বাড়িতে লাইসেন্স ছাড়া অবৈধভাবে আতশবাজি তৈরি করা হচ্ছিল। তিনি বলেন, ‘যে কক্ষে আতশবাজি বানানো হচ্ছিল, বিস্ফোরণে সেই ঘরটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। পুরো ঘরটি এবং সীমানা প্রাচীর ধসে পড়েছে। আমাদের কাছে খবর আছে, কয়েকজন শিশুসহ বেশ কয়েকজন ভেতরে কাজ করছিল। আমাদের দল তাদের উদ্ধার করার চেষ্টা করছে।’

বিস্ফোরণের পরই আগুন ধরে যায় এবং ভবনের একটি অংশ ভেঙে পড়ে। পুলিশ জানিয়েছে, বিস্ফোরণের পরপরই সেই ঘরসহ পাশের অন্যান্য অংশেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার পরপরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও উদ্ধারকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। ফায়ার সার্ভিসের দল এখনো আগুন নেভানোর কাজ করছে।

এদিকে, সিন্ধুর মুখ্যমন্ত্রী মুরাদ আলী শাহ কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় বিস্তারিত প্রতিবেদন চেয়েছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর মুখপাত্র। মুখ্যমন্ত্রী কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কেও অডিট করার নির্দেশ দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী মুরাদ বলেছেন, বিস্ফোরণের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবহেলা বরদাশত করা হবে না।

এ ধরনের আরেকটি বিস্ফোরণ এর আগে চলতি বছরের আগস্টে করাচির সাদ্দারে একটি আতশবাজির গুদামে হয়েছিল। ওই ঘটনায় ছয়জন নিহত হন, আরও কয়েকজন আহত হন। দোতলা ভবনটিতে আতশবাজির গুদামের পাশাপাশি চিকিৎসাসামগ্রীর দোকানও ছিল।

এফআইআরে বলা হয়েছে, অভিযুক্তরা বিপুল পরিমাণ আতশবাজি এলোমেলোভাবে ও কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থা ছাড়াই মজুত করেছিলেন। তাদের অবহেলা ও বেপরোয়া আচরণের কারণেই মূল্যবান জীবনহানি, আহত হওয়ার ঘটনা এবং বড় ধরনের সম্পদহানি ঘটে। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, অভিযুক্তদের একজন বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন। আরেকজন, যিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন, বিস্ফোরণের পর গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিহার ভোটে বিশ্বব্যাংকের ঋণসহ ৪০ হাজার কোটি রুপি ছড়িয়েছে বিজেপি, অভিযোগ পিকের দলের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
পিকের (পেছনে) দল জন সুরাজ পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি উদয় সিংহ (মাঝে) বিজেপি জোটের বিরুদ্ধে বিহারে নির্বাচনের আগে বিপুল পরিমাণ অর্থ ঢালার অভিযোগ তুলেছেন। ছবি: সংগৃহীত
পিকের (পেছনে) দল জন সুরাজ পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি উদয় সিংহ (মাঝে) বিজেপি জোটের বিরুদ্ধে বিহারে নির্বাচনের আগে বিপুল পরিমাণ অর্থ ঢালার অভিযোগ তুলেছেন। ছবি: সংগৃহীত

ভারতে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ার খ্যাত প্রশান্ত কিশোরের দল জন সুরাজ পার্টি অভিযোগ করেছে, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমার সরকারের আমলে বিশ্বব্যাংকের ১৪ হাজার কোটি রুপির ঋণ ২০২৫ সালের বিধানসভা নির্বাচন ‘ভিন্ন খাতে ঘুরিয়ে দেওয়ার’ জন্য ব্যবহার করেছে। কেবল তাই নয়, নির্বাচনের দিন ঘোষণার আগ পর্যন্ত বিজেপি ও নিতীশ কুমারের জোট জনগণের ভোট কিনতে ৪০ হাজার কোটি রুপি ব্যয় করেছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, দলের প্রথম নির্বাচনে একটিও আসন না পেয়ে পরদিন গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন জন সুরাজ পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি উদয় সিং। তিনি দাবি করেন, ওই অর্থ ‘ভোট কেনার উদ্দেশ্যে নানা অনুদান ও মুফতে ঢেলে দেওয়া হয়েছে।’

উদয় সিং বলেন, ‘জুন থেকে নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার আগ পর্যন্ত ৪০ হাজার কোটি রুপি উড়িয়ে দিয়েছে নিতীশ সরকার। টাকার জোরে জনগণের ভোট কেনার এই খরচ ছিল নজিরহীন।’ তাঁর অভিযোগ, ‘বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ হিসেবে নেওয়া ১৪ হাজার কোটি রুপি পর্যন্ত ভোট কেনার খাতে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

তিনি ‘মুখ্যমন্ত্রী মহিলা রোজগার যোজনা’র উদাহরণ তুলে ধরেন, যার আওতায় দুই ধাপের ভোট শুরুর আগে প্রতিটি নারীর ব্যাংক হিসাবে ১০ হাজার রুপি করে পাঠানো হয়। উদয় সিং-এর ভাষায়,

‘জীবনে এই প্রথম দেখলাম ভোটের এক দিন আগ পর্যন্ত টাকা ঢুকেছে, অথচ তখন আদর্শ আচরণবিধি চলছিল। দিন এনে দিন খাওয়া অসংখ্য নারীর ওপর এর প্রভাব পড়াটাই স্বাভাবিক।’

তাঁর দাবি, জনসাধারণের টাকা এমনভাবে না উড়ালে বিজেপি–নেতৃত্বাধীন এনডিএ এবার বিহারে টিকতেই পারত না। উদয় সিং আরও বলেন, ‘জন সুরাজ পার্টি দুই হাজার রুপি বার্ধক্য ভাতা ঘোষণা করার পরই সরকার তার ভাতাটা ৭০০ থেকে বাড়িয়ে ১১০০ করল। এর আগেও তো করেনি।’

তাঁর বক্তব্য, দলের অনেক সম্ভাব্য সমর্থক শেষ পর্যন্ত এনডিএকে ভোট দিয়েছেন আরজেডি ক্ষমতায় এলে ‘জঙ্গলরাজ’ ফিরে আসতে পারে—এই ভয়ে। তিনি বলেন,‘আমি বলছি না যে জঙ্গলরাজ ছিল। কিন্তু ভয়টা ছিল। অনেকেই আমাদের সুযোগ দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু শেষ মুহূর্তে ভয়ের কারণেই এনডিএকে ভোট দিলেন।’

দলের আরেক নেতা পবন ভার্মাও একই অভিযোগ তোলেন। তাঁর দাবি, টাকা এসেছে বিশ্বব্যাংকের ২১ হাজার কোটি রুপির একটি প্রকল্প থেকে। ভার্মা সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেন, ‘বিহারের সরকারি এখন ৪ লাখ ৬ হাজার কোটি রুপি। দৈনিক সুদের পরিমাণ ৬৩ কোটি। কোষাগার খালি। আমাদের কাছে যে তথ্য আছে, ভুলও হতে পারে, নারীদের যে ১০ হাজার রুপি দেওয়া হয়েছে, তা ওই ২১ হাজার কোটি থেকে এসেছে, যা অন্য প্রকল্পের জন্য দেওয়া হয়েছিল। নির্বাচনের আদর্শ আচরণবিধি জারি হওয়ার এক ঘণ্টা আগে ১৪ হাজার কোটি রুপি তুলে ১ কোটি ২৫ লাখ নারীর মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন,‘তথ্য ভুল হলে আমি ক্ষমা চাই। কিন্তু যদি সত্যি হয়, প্রশ্ন দাঁড়ায়—এটা কতটা নৈতিক? আইনের দিক দিয়ে হয়তো কিছু করা যাবে না। সরকার চাইলে টাকা ঘুরিয়ে নিয়ে পরে ব্যাখ্যা দিতে পারে। ব্যাখ্যা আসবেই, তবে সেটা নির্বাচনের পরে।’

এনডিএ কিংবা বিহার সরকার এখনো এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আরএসএফ–এর কাছ থেকে দারফুরের দুই অঞ্চল কেড়ে নিল সুদানি সেনাবাহিনী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতিবেশী দেশ চাদের ঔরে কাসিনি শরণার্থী শিবিরে এক সুদানি শিশু। ছবি: এএফপি
প্রতিবেশী দেশ চাদের ঔরে কাসিনি শরণার্থী শিবিরে এক সুদানি শিশু। ছবি: এএফপি

সরকার সমর্থিত সুদানি সশস্ত্র বাহিনী (এসএএফ) উত্তর করদোফান রাজ্যের দুটি এলাকা বিদ্রোহী র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) কাছ থেকে পুনর্দখল করেছে। এর মধ্যেই দারফুরের এল–ফাশারে গণহত্যার প্রমাণ গোপন করতে আরএসএফ সদস্যদের লাশ পুড়িয়ে ফেলা ও মাটিতে পুঁতে রাখার কাজ অব্যাহত রয়েছে।

সপ্তাহজুড়ে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, সেনাসদস্যরা অ্যাসল্ট রাইফেল ও রকেটচালিত গ্রেনেড হাতে কাজকিল ও উম দাম হাজ আহমেদ এলাকায় নিয়ন্ত্রণ পুনর্দখলের পর উদযাপন করছে। উত্তর করদোফান রাজ্যের এসব এলাকাতেই সামনের সপ্তাহগুলোতে তীব্র লড়াই চলার আশঙ্কা রয়েছে।

গত অক্টোবরের শেষ দিকে আরএসএফ–এর দখলে যাওয়া কাজকিল এলাকা এল–ওবেইদের দক্ষিণে অবস্থিত। রাজ্যের এই কৌশলগত রাজধানী দখলের চেষ্টা করছে আরএসএফ।

এই লড়াই ছড়িয়ে পড়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত সুদানের উত্তরাঞ্চলজুড়ে। তৃতীয় বছরে গড়ানো এই নির্মম গৃহযুদ্ধে আঞ্চলিক শক্তিগুলোর অস্ত্রসহায়তাও আগুনে ঘি ঢালছে।

জাতিসংঘ বলছে, এটি এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাস্তুচ্যুতি সংকট। ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে অন্তত ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ। নিহত–আহতের সংখ্যা কয়েক দশ হাজার ছুঁয়েছে। দেশটির বেশ কিছু এলাকায় দুর্ভিক্ষ নিশ্চিত হয়েছে বলেও জানিয়েছে জাতিসংঘ।

আরএসএফ গত সপ্তাহে জানায়, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য মধ্যস্থতাকারীদের দেওয়া যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব তারা গ্রহণ করেছে। এর আগে এল–ফাশারে আরএসএফ–এর নৃশংসতা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল থেকে তীব্র নিন্দা আসে। এল–ফাশার পশ্চিম সুদানের উত্তর দারফুর রাজ্যের রাজধানী।

তবে বর্তমান যুদ্ধরেখার মধ্যে সেনাবাহিনী এই যুদ্ধবিরতি মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। দুই পক্ষই দেশের মধ্যাঞ্চলে নতুন করে সেনা ও অস্ত্র জড়ো করছে, যাতে আরও বড় সংঘর্ষে নামা যায়।

আরএসএফ গত মাসের শেষ দিকে এল–ফাশার দখলের পাশাপাশি কর্ডোফান অঞ্চলেও হামলা চালায়। তখনই তারা নর্থ কর্ডোফানের বারাহ শহর দখল করে, যা দারফুর ও মধ্য সুদানের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থল। মাত্র দুই মাস আগেই সেনাবাহিনী ওই শহর পুনর্দখল করেছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত