Ajker Patrika

ভাঙছে ব্রিটেনে ক্ষমতাসীন লেবার পার্টি, আসছে নতুন সমাজতান্ত্রিক দল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৪ জুলাই ২০২৫, ১১: ৩৪
(বাঁ থেকে) লেবার পার্টির সাবেক নেতা জেরেমি করবিন ও সদ্য পদত্যাগী লেবার এমপি জারা সুলতানা। ছবি: সংগৃহীত
(বাঁ থেকে) লেবার পার্টির সাবেক নেতা জেরেমি করবিন ও সদ্য পদত্যাগী লেবার এমপি জারা সুলতানা। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির সাবেক নেতা জেরেমি করবিন এবং সদ্য পদত্যাগী লেবার এমপি জারা সুলতানা নতুন বামপন্থী দল গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। জারা সুলতানা নিজেই এই খবর জানিয়েছেন। এই ঘোষণা ব্রিটিশ রাজনীতিতে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

ব্রিটেনের দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল বৃহস্পতিবার লেবার পার্টি থেকে পদত্যাগের পরপরই জারা সুলতানা ঘোষণা করেন, জেরেমি করবিনের সঙ্গে তিনি এই নতুন দলের সহনেতৃত্ব দেবেন। যদিও নতুন দলটির এখনো কোনো নাম ঘোষণা করা হয়নি। জারা সুলতানা জানিয়েছেন, এতে অন্যান্য স্বতন্ত্র এমপি, প্রচারকর্মী এবং অ্যাকটিভিস্টরা যুক্ত হবেন।

পাঁচ বছর আগে জেরেমি করবিনকে লেবার পার্টি থেকে বহিষ্কার তৎকালীন লেবার নেতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার।

এই পদক্ষেপ ব্রিটেনের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি বড় বিভক্তির আশঙ্কা তৈরি করেছে। ডানপন্থীদের মধ্যে রিফর্ম ইউকে এবং কনজারভেটিভদের মধ্যকার বিভাজন ব্রিটেনের রাজনীতিতে নানা উত্থান-পতনের কারণ হয়েছে। এবার বামপন্থীদের মধ্যকার বিভাজন ব্রিটেনকে বহুদলীয় জটিল রাজনীতিতে ঠেলে দেবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, একটি নতুন বামপন্থী দল গঠিত হলে তারা ১০ শতাংশ ভোট পেতে পারে। এটি হলে ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির জন্য হবে বড় ধাক্কা। সে ক্ষেত্রে লেবার পার্টি এবং কনজারভেটিভ উভয়ই ২০ শতাংশ ভোট নিয়ে সমানে সমান থাকতে পারে।

নতুন দলের ঘোষণা দিয়ে জারা সুলতানা বলেছেন, পরবর্তী নির্বাচন হবে ‘সমাজতন্ত্র বনাম বর্বরতার’ মধ্যে একটিকে বেছে নেওয়া। কভেন্ট্রি সাউথের এই এমপি বলেন, নতুন দল কিয়ার স্টারমার সরকারের কল্যাণমূলক ভাতা কমানোর চেষ্টার বিরুদ্ধে লড়াই করবে। গত সপ্তাহে হাউস অব কমন্সে এই বিল পাস করাতে ব্যর্থ হয়েছেন স্টারমার। এ ছাড়া, গাজায় যা ঘটছে তাকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে অভিহিত করে ফিলিস্তিনের পক্ষে আরও সোচ্চার হবেন বলেও জানিয়েছেন জারা।

রাজনীতি বিশ্লেষকেরা বলছেন, জারা সুলতানার এই ঘোষণা কিয়ার স্টারমারের ওপর আরও বামপন্থী নীতি গ্রহণের জন্য চাপ তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে তিনি কল্যাণমূলক ভাতাদি কমানোর পরিকল্পনা থেকে অপমানজনকভাবে সরে আসার মাত্র কয়েক দিন পরেই এ ঘটনা ঘটল। তাঁর নিজের দলের ৪৯ জন এমপি এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছেন। এই বিলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সুবিধা কমানোর প্রস্তাব রয়েছে।

জারা সুলতানা ও জেরেমি করবিন আশা করছেন, লেবার পার্টির বহু সমর্থক যারা কিয়ার স্টারমারের পরিকল্পনার বিরোধিতা করছেন, তাঁরা তাঁদের নতুন দলে যোগ দেবেন।

এক্স-এ দেওয়া এক বার্তায় জারা সুলতানা জানিয়েছেন, ১৪ বছর পর তিনি লেবার পার্টি থেকে পদত্যাগ করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘জেরেমি এবং আমি দেশজুড়ে অন্যান্য স্বতন্ত্র এমপি, প্রচারকর্মী এবং অ্যাকটিভিস্টদের সঙ্গে একটি নতুন দল গঠনে সহনেতৃত্ব দেব।’

তিনি আরও বলেন, ‘এক বছর আগে আমাকে লেবার পার্টি থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল, কারণ আমি দুই সন্তানের সুবিধা বাতিল করার পক্ষে ভোট দিয়েছিলাম এবং ৪ লাখ শিশুকে দারিদ্র্য থেকে তুলে আনতে চেয়েছিলাম। আমি আবারও তা করব। আমি পেনশনভোগীদের জন্য শীতকালীন জ্বালানি ভাতা বাতিল করার বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিলাম। আমি আবারও তা করব।’

জারা সুলতানা ওই পোস্টে ব্রেক্সিট আন্দোলনের অন্যতম নেতা নাইজেল ফারাজের নেতৃত্বাধীন রিফর্ম ইউকেরও সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘বিলিয়নিয়ারদের টাকায় চলা একজন ধোঁকাবাজকে বিভিন্ন জরিপে এগিয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে, কারণ লেবার পার্টি মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।’

গাজায় চলমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘ফারাজ থেকে স্টারমার পর্যন্ত রাজনৈতিক বলয়ের সবাই গাজায় গণহত্যা বন্ধ করার চেষ্টা করা বিবেকবান মানুষকে সন্ত্রাসী হিসেবে অপবাদ দিচ্ছে। কিন্তু সত্য স্পষ্ট—এই সরকার গণহত্যার সক্রিয় অংশীদার। ব্রিটিশ জনগণ এর বিরোধিতা করছে। আমরা আর এটা সহ্য করব না।’

অভিবাসন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের গত মাসের বক্তব্যেরও সমালোচনা করেন জারা সুলতানা। কিয়ার স্টারমার বলেন, ব্রিটেন ‘বিদেশিদের দ্বীপ’ হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। জারা সুলতানা বলেন, ‘আমরা বিদেশিদের দ্বীপ নই—আমরা এমন দ্বীপ, যেখানে ভোগান্তি রয়েছে। আমাদের এমন বাসস্থান এবং জীবন দরকার, যার ব্যয় আমরা বহন করতে পারি। এমন বিল নয়, যা আমরা প্রতি মাসে মুষ্টিমেয় কিছু এলিটকে দিই, যারা নগদ টাকায় ডুবে আছে। আমাদের অর্থ জনসেবায় ব্যয় করা দরকার, অনন্ত যুদ্ধে নয়।’

জারা সুলতানা আরও যোগ করেন, ‘২০২৯ সালে কোনটি বেছে নেবেন সেটি স্পষ্ট হবে—সমাজতন্ত্র বা বর্বরতা। বিলিয়নিয়ারদের জন্য ইতিমধ্যেই তিনটি দল লড়াই করছে। বাকিদের জন্য একটি দল থাকুক, সেই সময় এসেছে। আমাদের সঙ্গে যোগ দিন। এখনই সময়।’

এক্স-এর বার্তায় ‘টিম জারা’-তে যোগদানের জন্য একটি লিংকও দেওয়া হয়েছে।

জেরেমি করবিন ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত লেবার পার্টির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। বর্তমানে ইজলিংটন নর্থের স্বতন্ত্র এমপি। তিনি এখনো জারা সুলতানার ঘোষণার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

তবে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে একটি খবর ছড়িয়েছে, তিনি নতুন দলে যোগ দিতে রাজি হননি। যদিও এর আগে গত বুধবার রাতে আইটিভির রবার্ট পেস্টনকে তিনি বলেছিলেন, একটি নতুন বামপন্থী দল গঠনের জন্য কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘একটি বিকল্প দৃষ্টিভঙ্গি থাকবে এবং সেখানে একটি বিকল্প উত্থাপিত হবে, যা দারিদ্র্য, অসমতা এবং যুদ্ধের পরিবর্তে শান্তির ওপর ভিত্তি করে একটি পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে কাজ করবে।’

জেরেমি করবিনের ছায়া চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী জন ম্যাকডনেল অবশ্য নতুন দলে যোগ দেওয়ার বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি এক্স-এ পোস্ট করেছেন, ‘জারাকে লেবার পার্টি থেকে হারিয়ে আমি অত্যন্ত দুঃখিত। বর্তমানে লেবার পার্টি যারা চালাচ্ছেন তাঁদের নিজেদেরই জিজ্ঞাসা করা উচিত কেন একজন তরুণ, স্পষ্টভাষী, প্রতিভাবান, অত্যন্ত নিবেদিতপ্রাণ সমাজতান্ত্রিক অনুভব করেন যে তাঁর এখন লেবার পার্টিতে কোনো জায়গা নেই এবং তাঁকে দল ছাড়তে হবে।’

উল্লেখ্য, জেরেমি করবিনকে ২০২০ সালে লেবার পার্টি থেকে বহিষ্কার করা হয়। কারণ তাঁর নেতৃত্বে দলের মধ্যে ইহুদি-বিদ্বেষ বেড়ে যাওয়ার অভিযোগে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। তিনি সেই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।

গত মাসে জারা সুলতানা প্যালেস্টাইন অ্যাকশন নামে একটি গ্রুপকে সমর্থন করে এক্স-এ ‘আমরা সবাই প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’ লিখে সমালোচিত হন। এ ছাড়া, গত বুধবার রাতে হাউস অব কমন্সে সন্ত্রাসী আইনের অধীনে এই গ্রুপটিকে নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে ভোট দেন তিনি।

২০২০ সালে জারা একটি বিলের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন, যা কার্যকর হলে দলত্যাগী এমপিদের উপনির্বাচনের মুখোমুখি হতে হতো।

এদিকে গ্রিন পার্টির প্রধান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী জ্যাক পোলানস্কি নতুন দলের সঙ্গে কাজ করার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি। তিনি এক্স-এ পোস্ট করেছেন, ‘যারা টোরি, রিফর্ম এবং এই ব্যর্থ লেবার সরকারের মোকাবিলা করতে চায়, তারা আমার বন্ধু। বাস্তবে এটি কেমন দেখায় তা দেখার অপেক্ষায় আছি।’

লেবার পার্টির একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘মাত্র ১২ মাসে, এই লেবার সরকার মজুরি বাড়িয়েছে, অতিরিক্ত ৪০ লাখ এনএইচএস অ্যাপয়েন্টমেন্ট সরবরাহ করেছে, ৭৫০টি বিনা মূল্যে প্রাতরাশের ক্লাব খুলেছে, তিনটি বাণিজ্য চুক্তি এবং চারটি সুদের হার হ্রাস করে লাখ লাখ মানুষের বন্ধকের (মর্টগেজ) কিস্তি কমিয়েছে। কেবল লেবারই ব্রিটেনকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে পারে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিকাব বিতর্ক: বিহারের নীতীশের পক্ষে সাফাই গাইলেন উত্তর প্রদেশের মন্ত্রী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভারতের বিহার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের পক্ষে মন্তব্য করে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছেন উত্তর প্রদেশের মন্ত্রী সঞ্জয় নিষাদ। ছবি: সংগৃহীত
ভারতের বিহার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের পক্ষে মন্তব্য করে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছেন উত্তর প্রদেশের মন্ত্রী সঞ্জয় নিষাদ। ছবি: সংগৃহীত

সনদ নিতে আসা এক নারী চিকিৎসকের মুখ দেখতে নিকাব টান দিয়ে সরিয়ে বিতর্কের মুখোমুখি ভারতের বিহার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। এদিকে এই বিতর্কে নীতীশের পক্ষে মন্তব্য করে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছেন উত্তর প্রদেশের মন্ত্রী সঞ্জয় নিষাদ। তাঁর বক্তব্যকে ‘নারীবিদ্বেষী’ বলে অভিহিত করেছেন সমালোচকেরা। পরে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন সঞ্জয় নিষাদ।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ‘ভারত সংবাদ’-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিষাদ বলেন, সঠিক ব্যক্তির হাতে নিয়োগপত্র দেওয়া হচ্ছে কি না যাচাই করতে নীতীশ কুমার ওই নারীর নিকাব সরিয়েছিলেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, মুখ্যমন্ত্রী যদি শরীরের অন্য কোনো অংশে স্পর্শ করতেন, তাহলে ঘটনাটি কীভাবে দেখা হতো।

সাক্ষাৎকারে নিষাদকে বলতে শোনা যায়, ‘নিকাব টেনে নেওয়া হয়নি, সরানো হয়েছে। যাচাই করার জন্যই এটি করা হয়েছে, যাতে সঠিক ব্যক্তিকেই নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। এ নিয়ে মানুষের হৈচৈ করা উচিত নয়। তিনিও তো একজন মানুষ। তাঁর পেছনে লেগে থাকা ঠিক নয়। শুধু নিকাব ছুঁয়েছেন বলেই এত কিছু হয়ে গেল। অন্য কোথাও ছুঁলে তাহলে কী হতো?’

সাক্ষাৎকারে এসব মন্তব্য করার সময় মন্ত্রী সঞ্জয় নিষাদকে হাসতে দেখা যায়।

এ ঘটনায় সঞ্জয় নিষাদের মন্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান কংগ্রেসের মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রিণাতে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘উত্তর প্রদেশ সরকারের মন্ত্রী সঞ্জয় নিষাদ হাসতে হাসতে এই নির্লজ্জ কথাগুলো বলেছেন। যেভাবে এবং যে কুটিল হাসি দিয়ে তিনি কথা বলছেন, তা তাঁর ঘৃণ্য, অযৌক্তিক ও নারীবিদ্বেষী মানসিকতাই প্রকাশ করে।’

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, পাটনায় এক সরকারি অনুষ্ঠানে এক আয়ুষ (আয়ুর্বেদ, যোগ ও ন্যাচারোপ্যাথি, ইউনানি, সিদ্ধা ও হোমিওপ্যাথি) চিকিৎসকের হাতে সনদপত্র তুলে দিচ্ছেন ৭৪ বছর বয়সী জেডিইউর প্রধান নীতীশ কুমার।

সে সময় তিনি ওই নারী চিকিৎসককে ইশারায় নিকাব সরাতে বলেন। নারী চিকিৎসক নিকাব না সরালে নীতীশ নিজেই হাত বাড়িয়ে তাঁর নিকাব নিচের দিকে নামিয়ে দেন, যাতে তাঁর মুখ ও থুতনি দৃশ্যমান হয়।

ভিডিওতে পেছনে উপস্থিত কয়েকজনকে হাসতে দেখা যায়। একই সঙ্গে বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী সম্রাট চৌধুরীকেও নীতীশকে থামানোর চেষ্টা করতে দেখা যায়।

বিরোধীরা এই ঘটনাকে নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারা এক নারীর প্রকাশ্য হয়রানি ছাড়া আর কিছু নয় বলে নিন্দা জানিয়েছে।

নীতীশের ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নেত্রী সুপ্রিয়া। তিনি একে ‘ঘৃণ্য, অযৌক্তিক ও নারীবিদ্বেষী মানসিকতার’ বহিঃপ্রকাশ বলে মন্তব্য করেন।

কংগ্রেসও মুখ্যমন্ত্রীর এই আচরণকে ‘লজ্জাজনক’ ও ‘ঘৃণ্য’ বলে নিন্দা করেছে। দলের এক্স হ্যান্ডেলে লেখা হয়, ‘একজন নারী চিকিৎসক নিয়োগপত্র নিতে এসেছিলেন আর নীতীশ কুমার তাঁর নিকাব টেনে নামালেন। বিহারের সর্বোচ্চ পদে থাকা একজন ব্যক্তি প্রকাশ্যে এমন ঘৃণ্য আচরণ করছেন। ভাবুন তো, রাজ্যে নারীরা কতটা নিরাপদ? এই জঘন্য আচরণের জন্য নীতীশ কুমারের অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত।’

এদিকে বিতর্কের মুখে পড়ে পরে নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেন সঞ্জয় নিষাদ। তিনি বলেন, ‘যে বক্তব্যকে ঘিরে আজ বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে, সেটি আমি হাসতে হাসতে, খুব সাধারণভাবে এবং আমার স্থানীয় ভোজপুরি ভাষায় বলেছিলাম। কোনো সম্প্রদায়, কোনো নারী বা কোনো ধর্মের প্রতি আমার কোনো কু-উদ্দেশ্য ছিল না। কাউকে অপমান করারও কোনো ইচ্ছা ছিল না।’ পিটিআইকে দেওয়া বক্তব্যে এ কথা জানান নিষাদ।

যোগী আদিত্যনাথের দ্বিতীয় মেয়াদের সরকারের ক্যাবিনেট মন্ত্রী সঞ্জয় নিষাদ। তিনি ২০২১ সাল থেকে উত্তর প্রদেশ বিধান পরিষদের সদস্য। নিষাদ সম্প্রদায়ের সদস্য হিসেবে তিনি ২০১৬ সালে নিষাদ পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ফিলিস্তিনসহ আরও যে ৬ দেশের নাগরিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিল যুক্তরাষ্ট্র

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ৫৫
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ ও অভিবাসনে নিষিদ্ধ দেশের তালিকা বড় হয়েই চলেছে। গতকাল মঙ্গলবার ফিলিস্তিন ও আরও পাঁচটি দেশের ওপর পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।

বার্তা সংস্থা এপির এক প্রতিবেদনে জানা যায়, নতুন ঘোষণায় আরও পাঁচটি দেশকে যুক্তরাষ্ট্রে পূর্ণ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ইস্যু করা নথিতে ভ্রমণকারীদেরও এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে। পাশাপাশি আরও ১৫টি দেশের ক্ষেত্রে নতুন করে ভ্রমণ সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে।

প্রশাসনের ভাষ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের মানদণ্ড আরও কঠোর করার চলমান উদ্যোগের অংশ হিসেবেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত অন্যায্যভাবে বহু দেশের মানুষের ভ্রমণের সুযোগ সীমিত করছে বলে মনে করছেন সমালোচকেরা।

থ্যাংকসগিভিং ছুটির শেষ দিকে ন্যাশনাল গার্ডের দুই সেনাকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন এক আফগান নাগরিককে গ্রেপ্তারের পর প্রশাসন নিষেধাজ্ঞা আরও সম্প্রসারণের ইঙ্গিত দিয়েছিল।

ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে, যেসব ব্যক্তির আগে থেকেই বৈধ ভিসা আছে, যাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের বৈধ স্থায়ী বাসিন্দা কিংবা যাঁদের ভিসার ধরন কূটনীতিক বা ক্রীড়াবিদদের মতো বিশেষ শ্রেণিভুক্ত, তাঁরা এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবেন। এ ছাড়া যাঁদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ দেশটির স্বার্থে প্রয়োজনীয় বলে বিবেচিত হবে, তাঁরাও ছাড় পাবেন। এসব পরিবর্তন আগামী ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

গত জুনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন, ১২টি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হবে। পাশাপাশি আরও সাতটি দেশের নাগরিকদের ক্ষেত্রে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে। এই সিদ্ধান্ত তাঁর প্রথম মেয়াদের একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিকে পুনরুজ্জীবিত করে।

সে সময় নিষেধাজ্ঞা তালিকায় ছিল আফগানিস্তান, মিয়ানমার, চাদ, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি, ইরিত্রিয়া, হাইতি, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ইয়েমেন। একই সঙ্গে বুরুন্ডি, কিউবা, লাওস, সিয়েরা লিওন, টোগো, তুর্কমেনিস্তান ও ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের ওপর বাড়তি বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।

গতকাল মঙ্গলবার রিপাবলিকান প্রশাসন জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষিদ্ধ দেশের তালিকা আরও বাড়ানো হচ্ছে। নতুন করে এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে বুরকিনা ফাসো, মালি, নাইজার, দক্ষিণ সুদান ও সিরিয়া।

এ ছাড়া ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ইস্যু করা ভ্রমণ নথি বহনকারীদের ওপর সম্পূর্ণ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এটি ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ ভ্রমণ সীমাবদ্ধতা। উল্লেখ্য, দক্ষিণ সুদানের নাগরিকেরা আগেই উল্লেখযোগ্য ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার মুখে ছিলেন।

এ ছাড়া আংশিক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার তালিকায় আরও ১৫টি দেশ যুক্ত করা হচ্ছে। দেশগুলো হলো অ্যাঙ্গোলা, অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডা, বেনিন, আইভরি কোস্ট, ডোমিনিকা, গ্যাবন, গাম্বিয়া, মালাউই, মৌরিতানিয়া, নাইজেরিয়া, সেনেগাল, তানজানিয়া, টোঙ্গা, জাম্বিয়া ও জিম্বাবুয়ে।

ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে যাওয়া দর্শনার্থী ও সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে আগ্রহী, উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে।

ঘোষণায় ট্রাম্প প্রশাসন জানায়, যেসব দেশ থেকে ভ্রমণে বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে, সেসব দেশে ‘ব্যাপক দুর্নীতি, জাল বা অনির্ভরযোগ্য নাগরিক নথি এবং অপরাধসংক্রান্ত রেকর্ড’ রয়েছে। এসব কারণে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের জন্য নাগরিকদের যাচাই করা কঠিন হয়ে পড়ে।

এ ছাড়া কিছু দেশে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও অবস্থান করার হার বেশি বলে উল্লেখ করা হয়। আবার যুক্তরাষ্ট্র যাদের ফেরত পাঠাতে চায়, তাদের নিজ দেশে নিতে অস্বীকৃতি জানানোর ঘটনাও আছে। কোনো কোনো দেশে সামগ্রিক স্থিতিশীলতা ও সরকারি নিয়ন্ত্রণের ঘাটতিও রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। এসব কারণেই যাচাই প্রক্রিয়া জটিল হয়ে পড়ে বলে প্রশাসন জানিয়েছে। পাশাপাশি অভিবাসন আইন প্রয়োগ, পররাষ্ট্রনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তার উদ্বেগের কথাও এই সিদ্ধান্তের পেছনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এদিকে এই ঘোষণার পর আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের দুই দশকব্যাপী যুদ্ধে সহায়তা করা আফগান নাগরিকদের পক্ষে কাজ করা সংগঠনগুলোও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের দাবি, হালনাগাদ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় বিশেষ অভিবাসী ভিসা (এসআইভি) পাওয়ার যোগ্য আফগানদের জন্য থাকা আগের ছাড় আর নেই। এই বিশেষ ভিসা মূলত সেই আফগানদের জন্য, যারা নিজেদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধপ্রচেষ্টায় ঘনিষ্ঠভাবে সহায়তা করেছিলেন।

বিশেষ অভিবাসী ভিসা কর্মসূচির পক্ষে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা সংস্থা ‘নো ওয়ান লেফট বিহাইন্ড’ এই পরিবর্তন নিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে। সংস্থাটি জানায়, তারা জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়ে প্রেসিডেন্টের অঙ্গীকারকে সম্মান করে। তবে ব্যাপক যাচাই-বাছাইয়ের পর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে কাজ করা আফগানদের দেশটিতে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তাকেই আরও শক্তিশালী করে।

সংস্থাটি এক বিবৃতিতে বলেছে, যাচাই প্রক্রিয়ার অসংগতি পর্যালোচনার উদ্দেশ্যে এই নীতিগত পরিবর্তন আনা হলেও এর ফলে অনিচ্ছাকৃতভাবে এমন একটি গোষ্ঠী সীমাবদ্ধতার মুখে পড়ছে, যারা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে কঠোরভাবে যাচাই-বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে গেছে। এরা সেই যুদ্ধকালীন মিত্র, যাদেরই লক্ষ্য করে সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়—যে হুমকি মোকাবিলার কথা এই ঘোষণায় বলা হয়েছে।

নিষিদ্ধ বা সীমিত ভ্রমণ তালিকায় নতুন করে অন্তর্ভুক্ত হওয়া দেশগুলো মঙ্গলবার গভীর রাতে জানায়, তারা ঘোষণাটি পর্যালোচনা করছে। ক্যারিবীয় সাগরের দ্বীপরাষ্ট্র ডোমিনিকার সরকার এক বিবৃতিতে জানায়, বিষয়টিকে তারা ‘সর্বোচ্চ গুরুত্ব ও জরুরি বিবেচনায়’ দেখছে। একই সঙ্গে নিষেধাজ্ঞার অর্থ কী এবং সম্ভাব্য সমস্যাগুলো কীভাবে সমাধান করা যায়, তা স্পষ্ট করতে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডার রাষ্ট্রদূত রোনাল্ড সন্ডার্স বলেন, বিষয়টি ‘খুবই গুরুতর’। নতুন বিধিনিষেধ নিয়ে আরও তথ্য জানতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানান।

এদিকে ট্রাম্প প্রশাসন আগে আংশিক নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা কিছু দেশের ওপর বিধিনিষেধ আরও কঠোর করেছে। এর মধ্যে রয়েছে লাওস ও সিয়েরা লিওন। তবে এক ক্ষেত্রে তুর্কমেনিস্তানের পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে উল্লেখ করে সেখানকার নাগরিকদের ওপর কিছু বিধিনিষেধ শিথিল করার কথা জানানো হয়েছে।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গত জুনে ঘোষিত আগের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার অন্যান্য সব বিধান আগের মতোই বহাল থাকবে।

ফিলিস্তিনিদের ওপর নতুন এই নিষেধাজ্ঞা এমন এক সময় এলো, যখন কয়েক মাস আগেই ট্রাম্প প্রশাসন এমন বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল, যার ফলে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের পাসপোর্টধারীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা, কাজ, বিনোদন বা শিক্ষার উদ্দেশ্যে ভ্রমণের নথি পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। মঙ্গলবারের ঘোষণায় সেই সীমাবদ্ধতা আরও বাড়ানো হলো। এতে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের পাসপোর্টধারীদের যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে অভিবাসনের পথও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবারের সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে প্রশাসন জানায়, পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকায় যুক্তরাষ্ট্রের তালিকাভুক্ত কয়েকটি ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’ সক্রিয়ভাবে কার্যক্রম চালায়। এসব গোষ্ঠীর হাতে মার্কিন নাগরিক নিহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে বলে দাবি করা হয়।

এ ছাড়া ওই সব এলাকায় সাম্প্রতিক যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে যাচাই ও স্ক্রিনিং সক্ষমতা ‘ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকতে পারে’ বলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে উল্লেখ করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ট্রাম্পের ১০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ মামলা প্রতিহতের ঘোষণা দিল বিবিসি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: বিবিসি
ছবি: বিবিসি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দায়ের করা মানহানি ও ক্ষতিপূরণ মামলার বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে প্রভাবশালী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। ট্রাম্প বিবিসির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন, ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারিতে সংঘটিত ক্যাপিটল দাঙ্গার আগে দেওয়া তাঁর ভাষণ ‘ইচ্ছাকৃতভাবে বিকৃত’ করে প্যানোরামা ডকুমেন্টারিতে সম্প্রচার করা হয়েছে।

ফ্লোরিডার একটি আদালতে দায়ের করা ওই মামলায় ট্রাম্প বিবিসির বিরুদ্ধে মানহানি ও বাণিজ্যিক আচরণবিষয়ক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছেন। ক্ষতিপূরণ দাবির অঙ্ক নিয়ে বিভিন্ন প্রতিবেদনে ভিন্ন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এই অঙ্ক ৫ বিলিয়ন ডলার বলা হলেও, ট্রাম্পের আইনজীবীদের সাম্প্রতিক নথি ও ব্রিফিং অনুযায়ী ক্ষতিপূরণের দাবি ১০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

মঙ্গলবার রাতে (১৬ ডিসেম্বর) বিবিসি জানিয়েছে, কথিত প্যানোরামা ডকুমেন্টারিতে ট্রাম্পের ভাষণের দুটি ভিন্ন অংশ সম্পাদনার মাধ্যমে একত্রে দেখানো হয়। সেখানে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘আমরা ক্যাপিটলের দিকে হাঁটব... এবং আমি তোমাদের সঙ্গে থাকব। আমরা লড়াই করব, দারুণভাবে লড়াই করব।’ তবে বাস্তবে এই দুটি বক্তব্য ভাষণের মধ্যে প্রায় ৫০ মিনিটের ব্যবধানে দেওয়া হয়েছিল।

বিবিসি স্বীকার করেছে, এই সম্পাদনার ফলে ভুল ধারণা তৈরি হতে পারে যে, ট্রাম্প সরাসরি সহিংসতার আহ্বান জানিয়েছিলেন। এ জন্য তারা গত মাসে দুঃখ প্রকাশ করলেও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি প্রত্যাখ্যান করে জানায়, মানহানির অভিযোগের কোনো আইনি ভিত্তি নেই।

বিবিসির এক মুখপাত্র বলেন, ‘আগেও যেমন বলা হয়েছে, আমরা এই মামলার বিরুদ্ধে আত্মপক্ষ সমর্থন করব।’ চলমান আইনি প্রক্রিয়ার কারণে তারা বিস্তারিত মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।

মামলায় আরও দাবি করা হয়েছে, ডকুমেন্টারিটি যুক্তরাজ্যের বাইরে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্প্রচার না হলেও ভিপিএন বা ব্রিটবক্সের মতো স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের, বিশেষ করে ফ্লোরিডার দর্শকেরা এটি দেখতে পারেন। বিবিসি এসব অভিযোগের বিষয়ে এখনো নির্দিষ্ট করে প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

এই বিষয়ে ব্রিটিশ সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, এটি বিবিসির নিজস্ব আইনি বিষয়। একই সঙ্গে তারা একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ গণমাধ্যম হিসেবে বিবিসির ভূমিকার ওপর আস্থার কথাও পুনর্ব্যক্ত করেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে মানহানির মামলা জেতা কঠিন হলেও এই মামলা বিবিসির সম্পাদকীয় স্বাধীনতা ও বিশ্বাসযোগ্যতার প্রশ্নে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

টান দিয়ে নারীর মুখের নিকাব সরিয়ে তোপের মুখে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ৫৪
টান দিয়ে নারীর মুখের নিকাব সরিয়ে তোপের মুখে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার

সরকারি এক অনুষ্ঠানে সার্টিফিকেট নিতে আসা এক মুসলিম নারীর মুখ দেখতে তাঁর নিকাব টান দিয়ে সরিয়ে দিয়েছেন ভারতের বিহার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। গতকাল সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) পাটনায় তাঁর এ কাণ্ডে ভারতজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

ঘটনাটির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা যায়, ৭৪ বছর বয়সী জেডিইউর প্রধান নীতীশ কুমার এক সরকারি অনুষ্ঠানে এক আয়ুষ (আয়ুর্বেদ, যোগ ও ন্যাচারোপ্যাথি, ইউনানি, সিদ্ধা ও হোমিওপ্যাথি) চিকিৎসকের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দিচ্ছিলেন।

সে সময় তিনি ওই নারী চিকিৎসককে ইশারায় নিকাব সরাতে বলেন। নারী চিকিৎসক নিকাব না সরালে নীতীশ নিজেই হাত বাড়িয়ে তাঁর নিকাব নিচের দিকে নামিয়ে দেন, যাতে তাঁর মুখ ও থুতনি দৃশ্যমান হয়।

ভিডিওতে পেছনে উপস্থিত কয়েকজনকে হাসতে দেখা যায়। একই সঙ্গে বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী সম্রাট চৌধুরীকেও নীতীশকে থামানোর চেষ্টা করতে দেখা যায়।

সরকারি অনুষ্ঠানে নারী চিকিৎসকের মুখ থেকে নিকাব টেনে খোলার ঘটনায় বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করছে বিরোধী দলগুলো।

এ ঘটনাকে ‘জঘন্য’ হিসেবে অভিহিত করে কংগ্রেস তাঁর পদত্যাগের দাবি করেছে।

হিন্দুত্ববাদী বিজেপির সঙ্গে জোট গড়ে মুখ্যমন্ত্রী হওয়া নীতীশের কড়া সমালোচনা করে বিরোধী দল আরজেডি এক বিবৃতিতে বলেছে, পর্দা করা মুসলিম নারীর নিকাব খুলে ফেলে জেডিও এবং বিজেপি নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার নামে কী রাজনীতি করছে, সেটি প্রকাশ করে দিয়েছে।

আরজেডি তাদের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেলে হিন্দিতে লিখেছে, ‘নীতীশজির কী হয়েছে? তাঁর মানসিক অবস্থা এখন করুণ পর্যায়ে পৌঁছেছে।’

কংগ্রেসও মুখ্যমন্ত্রীর এই আচরণকে ‘লজ্জাজনক’ ও ‘ঘৃণ্য’ বলে নিন্দা করেছে। দলের এক্স হ্যান্ডেলে লেখা হয়, ‘একজন নারী চিকিৎসক নিয়োগপত্র নিতে এসেছিলেন আর নীতীশ কুমার তাঁর নিকাব টেনে নামালেন। বিহারের সর্বোচ্চ পদে থাকা একজন ব্যক্তি প্রকাশ্যে এমন ঘৃণ্য আচরণ করছেন। ভাবুন তো, রাজ্যে নারীরা কতটা নিরাপদ? এই জঘন্য আচরণের জন্য নীতীশ কুমারের অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত।’

এর আগেও বিতর্কে জড়িয়েছিলেন নীতীশ কুমার। গত নভেম্বরের বিহার বিধানসভা নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে এক জনসভায় এক নারীকে মালা পরানোর ভিডিও ভাইরাল হলে সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। সে সময় এক জেডিইউ সংসদ সদস্য থামানোর চেষ্টা করলে মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে ধমক দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত