Ajker Patrika

প্রথম দেশ হিসেবে তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিল রাশিয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৪ জুলাই ২০২৫, ১০: ২২
রাশিয়ায় নিযুক্ত আফগানিস্তানের নতুন রাষ্ট্রদূত গুল হাসান হাসান রুশ উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রে রুদেনকোর কাছে তাঁর পরিচয়পত্র পেশ করেছেন। ছবি: রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
রাশিয়ায় নিযুক্ত আফগানিস্তানের নতুন রাষ্ট্রদূত গুল হাসান হাসান রুশ উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রে রুদেনকোর কাছে তাঁর পরিচয়পত্র পেশ করেছেন। ছবি: রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

রাশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে। আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি এটিকে ‘সাহসী সিদ্ধান্ত’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার কাবুলে রুশ রাষ্ট্রদূত দিমিত্রি ঝিরনোভের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি এ মন্তব্য করেন। ঝিরনোভ আনুষ্ঠানিকভাবে রুশ সরকারের পক্ষ থেকে ইসলামিক এমিরেট অব আফগানিস্তানকে (তালেবান সরকার) স্বীকৃতির বিষয়টি মুত্তাকিকে জানান।

মুত্তাকি বলেন, এটি ইতিবাচক সম্পর্ক, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং গঠনমূলক সম্পর্কের এক নতুন পর্যায়, এই পরিবর্তন অন্যান্য দেশের জন্য ‘দৃষ্টান্ত’ হবে।

২০২১ সালের আগস্টে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই তালেবান সরকার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এবং বিনিয়োগের জন্য চেষ্টা চালিয়ে আসছে।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা বিশ্বাস করি যে ইসলামিক এমিরেট অব আফগানিস্তানের সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার এই পদক্ষেপ আমাদের দুই দেশের মধ্যে ফলপ্রসূ দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার বিকাশে গতি দেবে।’

আফগানিস্তানের জ্বালানি, পরিবহন, কৃষি এবং অবকাঠামো খাতে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার সম্ভাবনা দেখছে রাশিয়া। এ ছাড়া, কাবুলকে সন্ত্রাসবাদ ও মাদক পাচারের হুমকি মোকাবিলায় সহায়তা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে মস্কো।

২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতা গ্রহণের পর আফগানিস্তানে যে কয়েকটি দেশ দূতাবাস বন্ধ করেনি, রাশিয়া সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। টেলিগ্রামে দূতাবাস জানিয়েছে, কাবুলের সঙ্গে সংলাপ সম্প্রসারণ আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

২০২২ সালে রাশিয়া প্রথম দেশ হিসেবে তালেবানের সঙ্গে একটি আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। সেই চুক্তিতে তারা আফগানিস্তানকে তেল, গ্যাস এবং গম সরবরাহ করতে সম্মত হয়।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কাবুলের সঙ্গে একটি পূর্ণাঙ্গ অংশীদারত্ব প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করার লক্ষ্যে চলতি বছরের এপ্রিলে তালেবানকে রাশিয়ার সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। গত বছরের জুলাইয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও তালেবানকে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় ‘মিত্র’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। এমনকি, ২০১৮ সাল থেকে তালেবানের প্রতিনিধিরা মস্কো সফর করে আসছেন।

যদিও দুই দেশের একটি জটিল ইতিহাস রয়েছে। ১৯৭৯ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালায়। ৯ বছরব্যাপী যুদ্ধে ১৫ হাজার সোভিয়েত সেনার প্রাণহানি ঘটে। কাবুলে নিজেদের পক্ষের সরকার বসানোর প্রচেষ্টা সোভিয়েত ইউনিয়নকে আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে করে ফেলে। সরাসরি মার্কিন সহায়তায় সেখানে গড়ে তোলা হয় সোভিয়েত বিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠী। এই গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে অন্যতম তালেবান। অবশেষে ১৯৮৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তান থেকে সরে আসে।

এদিকে পশ্চিমা সরকার এবং মানবিক সংস্থাগুলো এখনো তালেবান সরকারের বিরুদ্ধে নিন্দা অব্যাহত রেখেছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা নিবর্তনমূলক শরিয়া আইন বাস্তবায়ন করছে। নারীদের শিক্ষা ও স্বাধীনতা কঠোরভাবে খর্ব করছে। পশ্চিমের অভিযোগ, তালেবান আইনগুলো ক্রমশ বিধিনিষেধমূলক হয়ে উঠেছে।

২০২১ সালে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ আফগানিস্তানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। যার মধ্যে প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ জব্দ করা উল্লেখযোগ্য। এই অর্থ এখনো ফেরত পায়নি তালেবান সরকার।

চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, উজবেকিস্তান এবং পাকিস্তান কাবুলে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করলেও, প্রায় চার বছর পেরিয়ে গেলেও তারা এখনো তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়নি। এমনকি কূটনৈতিক পর্যায়ে বৈঠক ও আলাপ আলোচনায় চালালেও ভারত তালেবান সরকারের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্কের কথা স্বীকার করে না। একমাত্র দেশ হিসেবে রাশিয়া তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যে কৌশলে রুশ ধনকুবেরদের কণ্ঠরোধ করেছেন পুতিন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সংগৃহীত
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সংগৃহীত

ইউক্রেন যুদ্ধের ডামাডোলের মধ্যে রাশিয়ায় বিলিয়নিয়ার বা ধনকুবেরদের সংখ্যা সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। তবে ভ্লাদিমির পুতিনের গত ২৫ বছরের শাসনামলে রাশিয়ার এই প্রভাবশালী বিত্তবান গোষ্ঠী, যারা অলিগার্ক নামে পরিচিত, তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতা বা প্রভাব প্রায় পুরোটাই হারিয়েছে তারা।

বিষয়টি রুশ প্রেসিডেন্টের জন্য বেশ স্বস্তির। কারণ, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এই অতি ধনী গোষ্ঠীটিকে পুতিনের প্রতিপক্ষ বানাতে ব্যর্থ হয়েছে। বরং পুতিনের ‘পুরস্কার ও শাস্তির’ নীতি তাদের একপ্রকার নীরব সমর্থকে পরিণত করেছে।

শাস্তির এই কড়াকড়ি ঠিক কীভাবে কাজ করে, তা সাবেক ব্যাংকিং বিলিয়নিয়ার ওলেগ তিনকভ খুব ভালো করেই জানেন।

ইনস্টাগ্রামে এক পোস্টে ইউক্রেন যুদ্ধকে ‘পাগলামি’ বলে সমালোচনা করার ঠিক পরদিনই ক্রেমলিন থেকে তাঁর ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

তিনকভকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়, যদি ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তাঁর সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করা না হয়, তাহলে তৎকালীন রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহৎ ব্যাংক তিনকভ ব্যাংককে জাতীয়করণ করা হবে।

নিউইয়র্ক টাইমসকে তিনকভ বলেন, ‘আমি দাম নিয়ে আলোচনার সুযোগ পাইনি। অনেকটা জিম্মি হয়ে থাকার মতো অবস্থা, যা অফার করা হবে, তা-ই নিতে হবে। দর-কষাকষির কোনো উপায় ছিল না।’

এর এক সপ্তাহের মধ্যে ভ্লাদিমির পোতানিনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি প্রতিষ্ঠান ব্যাংকটি কিনে নেয়।

উল্লেখ্য, পোতানিন বর্তমানে রাশিয়ার পঞ্চম শীর্ষ ধনী ব্যক্তি। রুশ যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিনের জন্য নিকেল সরবরাহ করেন তিনি।

তিনকভের দাবি অনুযায়ী, ব্যাংকটিকে তার প্রকৃত মূল্যের মাত্র ৩ শতাংশ দামে বিক্রি করতে বাধ্য করা হয়েছিল। শেষপর্যন্ত তিনকভ তাঁর প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ হারান এবং রাশিয়া ছাড়তে বাধ্য হন।

পুতিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে পরিস্থিতি এমনটা ছিল না। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর রাশিয়ার উদীয়মান পুঁজিবাদের সুযোগ নিয়ে এবং বড় বড় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের মালিকানা কুক্ষিগত করে একদল মানুষ অবিশ্বাস্য সম্পদের মালিক হয়ে ওঠেন।

রাজনৈতিক অস্থিরতার সেই সময়ে এই সম্পদ তাঁদের হাতে বিপুল ক্ষমতা ও প্রভাব এনে দেয়, যার ফলে তাঁরা অলিগার্ক হিসেবে পরিচিতি পান।

রাশিয়ার সেই সময়ের সবচেয়ে প্রভাবশালী অলিগার্ক বোরিস বেরেজোভস্কি দাবি করেছিলেন, ২০০০ সালে পুতিনকে ক্ষমতায় বসানোর নেপথ্যে মূল কারিগর ছিলেন তিনি।

তবে এর কয়েক বছর পরেই তিনি এর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। ২০১২ সালে তিনি লিখেছিলেন, ‘আমি তাঁর (পুতিন) মধ্যে সেই লোভী স্বৈরশাসক ও জবরদখলকারীকে দেখতে পাইনি, যিনি কিনা স্বাধীনতাকে পদদলিত করবেন এবং রাশিয়ার উন্নয়ন থামিয়ে দেবেন।’

বেরেজোভস্কি হয়তো নিজের ভূমিকার কথা একটু বাড়িয়েই বলেছিলেন। তবে রাশিয়ার অলিগার্করা যে একসময় ক্ষমতার শীর্ষপর্যায়ে প্রভাব খাটানোর ক্ষমতা রাখতেন, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

এই ক্ষমাপ্রার্থনার ঠিক এক বছর পরেই যুক্তরাজ্যে নির্বাসনে থাকা অবস্থায় রহস্যজনকভাবে বেরেজোভস্কির মরদেহ পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে রাশিয়ার অলিগার্ক বা ধনকুবেরদের রাজনৈতিক দাপটেরও চূড়ান্ত অবসান ঘটে।

তথ্যসূত্র: বিবিসি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদন

হাদির খুনিদের দুই সাহায্যকারীকে আটকের দাবি নাকচ করল মেঘালয় পুলিশ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। ছবি: এএনআই
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। ছবি: এএনআই

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) জানিয়েছে, শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যাকাণ্ডে মূল দুই আসামি ফয়সাল করিম ওরফে মাসুদ ওরফে রাহুল, মোটরসাইকেলচালক আলমগীর শেখ দুজনেই ভারতে পালিয়ে গেছেন। ব্যক্তিগত সম্পর্কের সূত্র ধরে মেঘালয় পুলিশ পুর্তি ও সামী নামে ভারতের দুই নাগরিককে আটক করেছে।

তবে মেঘালয় পুলিশের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পুলিশের এই দাবি সঠিক নয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের কিছু সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ‘ভিত্তিহীন ও বানোয়াট’ খবরের প্রতিবাদ জানিয়েছে ভারতের মেঘালয় পুলিশ ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। ওসমান হাদি হত্যা মামলার দুই প্রধান আসামি অবৈধভাবে সীমান্ত পার হয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে—এমন দাবি ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’। ভারতের জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যাচাই-বাছাই ছাড়া এ ধরনের সংবেদনশীল তথ্য প্রচার সীমান্তের শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে বিঘ্নিত করার পাশাপাশি প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যকার নিরাপত্তামূলক আস্থায় ফাটল ধরাতে পারে।

বাংলাদেশ পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ওসমান হাদি হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদ ও আলমগীর শেখ ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে মেঘালয়ে প্রবেশ করেছে এবং বর্তমানে তাঁরা ভারতের অভ্যন্তরে অবস্থান করছেন। ‘পুর্তি’ নামক এক স্থানীয় সহায়তাকারী এবং ‘সামী’ নামে এক ট্যাক্সি চালক তাঁদের মেঘালয়ের তুরা শহরে পৌঁছে দিয়েছেন।

হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ রোববার এই দাবির বিষয়ে মেঘালয় পুলিশ সদর দপ্তরের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক কোনো তথ্যই আমাদের জানানো হয়নি। আমাদের গোয়েন্দা তৎপরতা ও মাঠ পর্যায়ের ভেরিফিকেশনে ওই অভিযুক্তদের গারো হিলস বা মেঘালয়ের কোথাও কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।’ তিনি আরও বলেন, প্রতিবেদনে উল্লিখিত ‘পুর্তি’ বা ‘সামী’ নামক কোনো ব্যক্তিরও হদিস পাওয়া যায়নি এবং কাউকে গ্রেপ্তার করার খবরটিও বানোয়াট।

মেঘালয় পুলিশের পাশাপাশি বিএসএফ-ও এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছে হিন্দুস্তান টাইমস। বিএসএফের মেঘালয় ফ্রন্টিয়ারের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজি) ও. পি. উপাধ্যায়ের বিবৃতির বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, হালুয়াঘাট সেক্টর দিয়ে কোনো অপরাধী বা সন্দেহভাজন ব্যক্তির ভারতে প্রবেশের কোনো প্রমাণ বা ইন্টেলিজেন্স ইনপুট তাঁদের কাছে নেই। বিএসএফ অত্যন্ত কঠোর প্রটোকল মেনে সীমান্ত পাহারা দেয় এবং এমন কোনো অনুপ্রবেশ আমাদের নজরে আসেনি। তিনি এই ধরনের দাবিকে ‘বিভ্রান্তিকর’ বলে অভিহিত করেছেন।

ভারতীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তারা মনে করেন, মেঘালয় একটি সংবেদনশীল সীমান্ত রাজ্য হওয়ার কারণে এখানে নিয়মিত আন্তসীমান্ত অপরাধ ও ছোটখাটো সংঘর্ষের মোকাবিলা করতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে সংবাদমাধ্যমে যাচাই না করা তথ্য ছড়ালে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে বিভ্রান্তি ও উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে।

অনুপ্রবেশের খবরটি নাকচ করা হলেও, বাড়তি সতর্কতা হিসেবে মেঘালয় পুলিশ ও বিএসএফ সীমান্তে নজরদারি আরও জোরদার করেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, সীমান্তে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা একটি স্বাভাবিক প্রশাসনিক পদক্ষেপ এবং এটি কোনোভাবেই বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ওই ভুল খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সহিংসতা ও প্রত্যাখ্যানের মধ্যে মিয়ানমারে চলছে ‘প্রহসনের’ নির্বাচন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত মিয়ানমারে শুরু হয়েছে এক বিতর্কিত নির্বাচন, যা দেশ-বিদেশে ‘প্রহসন’ হিসেবে প্রত্যাখ্যাত। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অনুপস্থিতি, শীর্ষ নেতাদের কারাবাস এবং চলমান সংঘাতের কারণে প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠীর ভোটাধিকারবঞ্চিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে এই নির্বাচন হচ্ছে।

সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের প্রায় পাঁচ বছর পর তিন ধাপে নির্বাচনের আয়োজন করেছে সামরিক জান্তা সরকার। ওই অভ্যুত্থান দেশজুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদের জন্ম দিয়েছিল, যা পরে গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়।

পর্যবেক্ষকদের মতে, চীনের সমর্থনে জান্তা সরকার তাদের ক্ষমতাকে বৈধতা দিতে চাইছে, তা সুসংহত করতে চাইছে, যাতে তারা চলমান অস্থিতিশীলতা থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে পায়।

বিবিসি জানিয়েছে, মিয়ানমারে আজ রোববার শুরু হওয়া ভোট গ্রহণের মধ্যে দেশটির একাধিক অঞ্চলে বিস্ফোরণ ও বিমান হামলার খবর পাওয়া গেছে।

মান্দালয় অঞ্চলের মুখ্যমন্ত্রী বিবিসিকে নিশ্চিত করেন, আজ ভোরে ওই অঞ্চলের একটি জনশূন্য বাড়িতে রকেট হামলার পর তিনজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

এর আগে গতকাল রাতে থাইল্যান্ড সীমান্তের কাছে মায়াওয়াদ্দি শহরে ধারাবাহিক বিস্ফোরণে ১০টির বেশি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্থানীয় এক বাসিন্দা বিবিসিকে জানান, ওই হামলায় এক শিশু নিহত হয়েছে এবং তিনজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও হতাহতের খবর পাওয়া গেছে।

তবে কিছু ভোটার বিবিসির কাছে দাবি করেছেন, এবারের নির্বাচন আগের চেয়ে অনেক বেশি ‘সুশৃঙ্খল’।

মান্দালয় অঞ্চলের বাসিন্দা মা সু জারচি বলেন, ‘ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতা এবার অনেক বদলে গেছে। ভোট দেওয়ার আগে আমি ভয়ে ছিলাম। এখন ভোট দিয়ে স্বস্তি পাচ্ছি। দেশের জন্য নিজের সেরাটা দিতে চেষ্টা করেছি—এমন একজন নাগরিক হিসেবে আমি আমার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছি।’

২২ বছর বয়সে প্রথমবার ভোট দিয়ে পেয়ি ফিয়ো মাউং বিবিসিকে জানান, তিনি ভোট দিয়েছেন। কারণ, তিনি বিশ্বাস করেন ভোট দেওয়া ‘প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব’।

মাউং বলেন, ‘আমার প্রত্যাশা নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য। নিত্যপণ্যের দাম আকাশচুম্বী। আমি এমন কাউকে সমর্থন করতে চাই, যিনি লড়াই করা এসব মানুষের জন্য নিত্যপণ্যের দাম কমিয়ে আনতে পারবেন। আমি এমন একজন প্রেসিডেন্ট চাই, যিনি সব মানুষের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করবেন।’

এদিকে মিয়ানমারের জান্তা সরকার এই নির্বাচন ঘিরে সব সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করে দাবি করেছে, তাদের লক্ষ্য দেশকে ‘বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরিয়ে আনা’।

রাজধানী নেপিডোর এক কঠোর নিরাপত্তাবেষ্টিত ভোটকেন্দ্রে আজ ভোট দিয়ে জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং বিবিসিকে বলেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে।

জান্তাপ্রধান জোর দিয়ে বলেন, ‘আমি সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান। একজন সরকারি চাকরিজীবী। আমি চাইলেই বলতে পারি না, আমি প্রেসিডেন্ট হতে চাই।’

এর আগে চলতি সপ্তাহের শুরুতে তিনি বলেছিলেন, যারা ভোট প্রত্যাখ্যান করছে, তারা আসলে ‘গণতন্ত্রের পথে অগ্রগতিকে’ প্রত্যাখ্যান করছে।

মিয়ানমারে নতুন এক আইনের অধীনে নির্বাচনে বাধা দেওয়া বা বিরোধিতা করার অভিযোগে দুই শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এই আইনে মৃত্যুদণ্ডসহ কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ধর্ষণের শিকার নারীকে বিজেপি নেত্রীর স্বামী বললেন, ‘আমার কিছুই হবে না’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম অশোক সিং। ছবি: এনডিটিভি
অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম অশোক সিং। ছবি: এনডিটিভি

এক নারীকে ছুরির মুখে ধর্ষণ, সেই ঘটনার ভিডিও ধারণ ও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে পরে বারবার যৌন সম্পর্কে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে ভারতের মধ্যপ্রদেশের সাতনা জেলার এক বিজেপি কাউন্সিলরের স্বামীর বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী ওই নারী যখন ক্যামেরার সামনে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন এবং তাঁদের কথোপকথনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশের কথা বলেন তখন ওই ব্যক্তি হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আমার কিছুই হবে না।’

অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম অশোক সিং। তিনি রামপুর বাঘেলান নগর পরিষদের এক বিজেপি কাউন্সিলরের স্বামী। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে অশোক সিংকে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে গালিগালাজ করতে এবং ভুক্তভোগী নারীকে হুমকি দিতে দেখা যায়। এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

ভাইরাল হওয়া ওই ক্লিপটিতে অভিযুক্তকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার কী হবে? কিছুই হবে না। যেখানে খুশি অভিযোগ করো, আমার কিছুই হবে না।’ ভিডিওর নেপথ্যে ভুক্তভোগী নারীকে কাঁদতে কাঁদতে অভিযোগ দায়েরের কথা বলতে শোনা যায়।

গত সোমবার সাতনার পুলিশ সুপার (এসপি) হংসরাজ সিংয়ের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ওই নারী। অভিযোগে তিনি বলেন, প্রায় ছয় মাস আগে ওই ঘটনা ঘটেছে। নিজের ও পরিবারের প্রাণনাশের হুমকির কারণে এতদিন তিনি মুখ খোলেননি। অভিযোগ পাওয়ার পরপরই এসপি তদন্তের দায়িত্ব ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট অব পুলিশ (ডিএসপি) মনোজ ত্রিবেদীর কাছে হস্তান্তর করেন।

ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ অনুযায়ী, কারহি এলাকার বাসিন্দা অশোক সিং তাঁর বাড়িতে ঢুকে ছুরির মুখে তাঁকে ধর্ষণ করে। মোবাইল ফোনে সেই ঘটনার ভিডিও ধারণ করে এবং এই বিষয়ে মুখ খুললে নারী ও তাঁর পরিবারকে মেরে ফেলার হুমকি দেন।

ওই নারী অভিযোগে আরও বলেন, গত ২০ ডিসেম্বর অশোক সিং আবার তাঁর কাছে আসেন, তাঁর শ্লীলতাহানি করেন এবং আবারও ভিডিওটি প্রকাশ করে দেওয়ার হুমকি দেন। বলেন, তাঁর কথামতো না চললে ওই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হবে।

ভুক্তভোগীর দাবি, অশোক সিংয়ের বিরুদ্ধে আগেও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ছিল এবং একসময় তাঁকে জেলা থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছিল। এই কারণেই সে নিজেকে আইনের ঊর্ধ্বে মনে করে প্রকাশ্যে তাঁকে হুমকি দিতে সাহস পেয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

ভুক্তভোগী নারী জানান, অশোক সিং নিয়মিত তাঁর দোকানে এসে তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং বারবার হুমকি দেন। এতে তিনি ও তাঁর পরিবার ভীতি ও হয়রানির মধ্যে রয়েছেন বলে অভিযোগ করেন।

ওই নারী আরও অভিযোগ করেছেন, পাঁচ দিন আগে পুলিশের কাছে যাওয়ার পরও এখনো পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত তিনি। তিনি বলেন, তাঁর বা তাঁর পরিবারের কোনো ক্ষতি হলে এর জন্য পুলিশই দায়ী থাকবে।

এদিকে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করা হচ্ছে এবং সব প্রমাণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এখনো পর্যন্ত কোনো গ্রেপ্তারের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত