Ajker Patrika

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিকাঠামো শক্ত করা নিয়ে আমি কেন মাথা ঘামাব: ট্রাম্প

আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৫: ৪১
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, মার্কিন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা ইউএসএআইডির বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিকাঠামো (পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ) শক্তিশালী করতে দেওয়া ২৯ মিলিয়ন ডলারের তহবিলের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেছেন, তিনি কেন বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশের পরিস্থিতি নিয়ে মাথা ঘামাবেন!

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার মার্কিন অঙ্গরাজ্যগুলোর গভর্নরদের কর্ম অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার সময় ট্রাম্প অভিযোগ করেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিকাঠামো শক্তিশালী করতে ২৯ মিলিয়ন ডলার একটি প্রতিষ্ঠানে দেওয়া হয়েছে।

ট্রাম্প আরও বলেন, ‘২৯ মিলিয়ন ডলার বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিকাঠামো শক্তিশালী করতে দেওয়া হয়েছে এমন একটি প্রতিষ্ঠানকে, যার নাম কেউ শোনেইনি। ২৯ মিলিয়ন ডলার! তারা চেক পেয়েছে। কল্পনা করতে পারেন! আপনার একটা ছোট্ট প্রতিষ্ঠান আছে, এখানে–ওখানে ১০ হাজার ডলার করে পান, আর তারপর হঠাৎ যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছ থেকে ২৯ মিলিয়ন ডলার পেয়ে যান! ওই প্রতিষ্ঠানে মাত্র দুজন লোক কাজ করে। দুজন! আমি মনে করি, তারা খুব খুশি, খুব ধনী হয়ে গেছে। শিগগিরই তারা একটা নামকরা বিজনেস ম্যাগাজিনের কভারে চলে আসবে, কারণ তারা বেশ ‘সফল’!’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ’২৯ মিলিয়ন বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিকাঠামো শক্তিশালী করতে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু “রাজনৈতিক পরিকাঠামো শক্তিশালী করা” বলতে তারা কী বোঝায়? ২০ মিলিয়ন ডলার “রাজস্ব ফেডারেলিজম”-এর জন্য, ১৯ মিলিয়ন ডলার নেপালের “জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ”-এর জন্য, ৪৭ মিলিয়ন ডলার “এশিয়ায় শিক্ষার মান উন্নয়নের” জন্য! এসব নিয়ে আমি মাথা ঘামাব কেন?’

সম্প্রতি মার্কিন ব্যবসায়ী ও টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্কের নেতৃত্বাধীন ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি (ডিওজিই) ঘোষণা দিয়েছে, তারা মার্কিন সরকারের বিভিন্ন সংস্থার ব্যয় পর্যালোচনা করছে। ডিওজিইর দাবি, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ‘কনসোর্টিয়াম ফর ইলেকশনস অ্যান্ড পলিটিক্যাল প্রসেস স্ট্রেনদেনিং’-এর জন্য ৪৮৬ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হয়েছে। যার মধ্যে ২১ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ ছিল ভারতে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য। ডিওজিইর এ তথ্য প্রকাশের পরই ভারতের পুরোনো বিতর্কটি নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে।

এদিকে এ বিষয়টি নিয়ে ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিরোধী দল কংগ্রেস এবং ক্ষমতাসীন বিজেপি দুই দলই এটিকে ‘ভারতের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বিদেশি হস্তক্ষেপ’ হিসেবে বর্ণনা করছে। তবে বিজেপি দাবি করছে, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন তৎকালীন ইউপিএ সরকার বিদেশি শক্তিকে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রবেশাধিকার সহজ করে দিয়েছিল।

বিজেপি নেতা অমিত মালব্য কংগ্রেসের সমালোচনা করে বলেছেন, ‘এটি নিশ্চিতভাবেই ভারতের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বিদেশি হস্তক্ষেপ। কিন্তু এতে লাভবান হয়েছে কে? অন্তত ক্ষমতাসীন দল (বিজেপি) তো নয়! এই উদ্যোগ ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিদেশি সংগঠনের সিস্টেম্যাটিক অনুপ্রবেশের সঙ্গে যুক্ত।’

অন্যদিকে কংগ্রেসের মুখপাত্র পবন খেরা পাল্টা জবাবে বলেন, ২০১২ সালে এই অনুদান দেওয়া হয়েছিল, তখন কংগ্রেস সরকারে ছিল। তাহলে কি সরকার নিজের নির্বাচনী সম্ভাবনা নষ্ট করতে এ তথাকথিত ‘বহিরাগত হস্তক্ষেপ’ চেয়েছিল?

এদিকে, বিজেপির আরেক নেতা নলিন কোহলি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘কোনো মার্কিন সংস্থা কেন ভারতের নির্বাচন-সংক্রান্ত কাজে ২১ মিলিয়ন ডলার দিতে চাইবে? এটি কি ভারতের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ নয়?’

২০১০-১২ সাল পর্যন্ত ভারতের প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এসওয়াই কুরাইশী বিজেপির দাবিকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘২০১২ সালে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছিল আন্তর্জাতিক নির্বাচন ব্যবস্থাপনা ফাউন্ডেশনের (আইএফইএস) সঙ্গে, যা আগেও ছিল এবং এখনো আছে। এগুলো মূলত নির্বাচন-পূর্ব প্রশিক্ষণের জন্য করা হয়। এর সঙ্গে কোনো অনুদানের সংযোগ নেই। এ অর্থায়নের দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বিদ্বেষপ্রসূত।’

ইলন মাস্কের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত মার্কিন ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট ইফিসিয়েন্সি বা সরকারি কর্মদক্ষতা বিভাগ এসব তথ্য প্রকাশ করার পর সরকারি ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি প্রশ্ন করেছেন, ‘আমরা কেন ভারতে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য ২১ মিলিয়ন ডলার খরচ করব? তারা কী অন্য কাউকে নির্বাচিত করার চেষ্টা করেছিল?’

ট্রাম্প আরও বলেন, ‘ডিওজিই মাত্র এক মাসে ৫৫ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করেছে। আমরা সরকারকে ছোট করে অর্থনীতিকে দ্রুত এগিয়ে নিতে চাই।’ এদিকে ডিওজিই আরও জানিয়েছে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক কাঠামো শক্তিশালী করতে ২৯ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করা হয়েছিল।

প্রসঙ্গত, গত বছর বাংলাদেশে বড় ধরনের রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটে। ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন। এরপর নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রথমবারের মতো বিচ্ছিন্ন কান পায়ে প্রতিস্থাপন, ফের যথাস্থানে স্থাপন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চীনা শল্যচিকিৎসকেরা এক অভাবনীয় কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। এক নারীর বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া কান প্রথমে তাঁর পায়ে প্রতিস্থাপন করে, পরবর্তীকালে তা পুনরায় যথাস্থানে ফিরিয়ে এনেছেন। তাঁরা বিশ্বের প্রথম এই ধরনের অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করেছেন। হংকং থেকে প্রকাশিত ইংরেজি দৈনিক সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

মেডিকেল নিউজ প্ল্যাটফর্ম মেড-জে সোমবার জানিয়েছে, গত এপ্রিলে কর্মক্ষেত্রে এক দুর্ঘটনায় ওই নারীর কান শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় তাঁর মাথার খুলির চামড়ার বড় একটি অংশও উপড়ে গিয়েছিল। জিনানের শানদং প্রাদেশিক হাসপাতালের মাইক্রোসার্জারি ইউনিটের উপপরিচালক কিউ শেনকিয়াং জানান, ভারী যন্ত্রপাতির মাধ্যমে ওই নারী আঘাত পেয়েছিলেন, যা ছিল প্রাণঘাতী। তাঁর মাথার চামড়া, ঘাড় এবং মুখের ত্বক ছিঁড়ে একাধিক খণ্ডে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল এবং কানটি মাথার চামড়াসহ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল।

হাসপাতালে পৌঁছানোর পর মাইক্রোসার্জারিতে বিশেষজ্ঞ একদল চিকিৎসক তাৎক্ষণিকভাবে প্রচলিত পদ্ধতিতে মাথার চামড়া মেরামতের চেষ্টা করেন। কিন্তু দুর্ঘটনার ফলে মাথার টিস্যু এবং রক্তনালির জালিকা এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল যে সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।

এর ফলে মাথার টিস্যু সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত কানটি পুনরায় স্থাপন করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় কানটিকে বাঁচিয়ে রাখার বিকল্প পথ খুঁজতে বাধ্য হন চিকিৎসকেরা। অবশেষে কিউয়ে দল সিদ্ধান্ত নেয়, কানটিকে ওই নারীর পায়ের উপরিভাগে প্রতিস্থাপন করার। এরপর শুরু হয় মাসব্যাপী পুনরুদ্ধার ও পুনর্গঠন প্রক্রিয়া।

চিকিৎসকদের এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ—পায়ের ধমনি ও শিরাগুলোর গঠন কান প্রতিস্থাপনের জন্য উপযুক্ত ও সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ ছাড়া পায়ের ত্বক ও নরম টিস্যু মাথার ত্বকের মতোই পাতলা, যা স্থানান্তরের পর সামান্য কাটাছেঁড়াতেই মানিয়ে যায়।

অত্যন্ত জটিল এই প্রক্রিয়ার কোনো পূর্ববর্তী নজির বা নথিবদ্ধ সফল ঘটনা ছিল না। প্রতিবেদন অনুযায়ী, কানটি পায়ে প্রতিস্থাপনের প্রাথমিক ধাপটি সম্পন্ন করতে সময় লেগেছিল দশ ঘণ্টা। কিউ জানান, কানের রক্তনালীগুলো অত্যন্ত সূক্ষ্ম—ব্যাস মাত্র ০.২ থেকে ০.৩ মিলিমিটার। এগুলোকে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত করা ছিল এক বিশাল চ্যালেঞ্জ, যার জন্য প্রয়োজন ছিল উচ্চতর দক্ষতা ও মাইক্রোসার্জারির দীর্ঘ অভিজ্ঞতা।

অস্ত্রোপচারের পাঁচ দিন পর দলটি আরও একটি সংকটময় পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়। শিরার রক্ত সঞ্চালনে সমস্যার কারণে কানের রক্ত সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয় এবং কানটি কালচে-বেগুনি রং ধারণ করে। কানটিকে বাঁচাতে চিকিৎসকেরা রক্তক্ষরণ করানোর এক শ্রমসাধ্য কৌশল অবলম্বন করেন, যা পাঁচ দিনে প্রায় ৫০০ বার প্রয়োগ করতে হয়েছিল।

এরই মধ্যে চিকিৎসকেরা রোগীর পেট থেকে চামড়া নিয়ে মাথায় প্রতিস্থাপন করে মাথার খুলির ক্ষত সারিয়ে তোলেন। পাঁচ মাসেরও বেশি সময় পর যখন প্রতিস্থাপিত মাথার চামড়া ও ঘাড়ের ত্বক সুস্থ হয়ে ওঠে, ফোলা কমে যায় এবং পা ও কানের ক্ষত সম্পূর্ণ শুকিয়ে যায়, তখন চিকিৎসকেরা কানটিকে পুনরায় যথাস্থানে স্থাপনের উদ্যোগ নেন। গত অক্টোবরে কিউয়ে নেতৃত্বে সফলভাবে ৬ ঘণ্টার এই অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়, যা বিশ্বজুড়ে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

সান ছদ্মনামের ওই রোগী এখন হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন। তাঁর মুখমণ্ডল ও টিস্যুর কার্যক্ষমতা এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। তবে তাঁর এখনো কিছু ছোটখাটো অস্ত্রোপচার বাকি রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ভ্রু পুনর্গঠন এবং পায়ের ক্ষতচিহ্ন কমানো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ওডিশায় পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম তরুণকে ‘বাংলাদেশি’ বলে পিটিয়ে হত্যা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
জুয়েল রানা। ছবি: সংগৃহীত
জুয়েল রানা। ছবি: সংগৃহীত

পশ্চিমবঙ্গের সুতি থানার বিশ বছরের তরুণ জুয়েল রানা। মা-বাবার একমাত্র সন্তান। মাত্র ৫ দিন আগে রাজমিস্ত্রির কাজ নিয়ে ওডিশার সম্বলপুরে পা রেখেছিলেন। নিজ রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে বাইরে কাজ করতে যাওয়া সেই প্রথম। কিন্তু এই যাওয়াই তাঁর শেষ যাওয়া। গত মঙ্গলবার রাতে একদল উন্মত্ত জনতার হাতে প্রাণ হারাতে হয়েছে তাঁকে। অভিযোগ—জুয়েল রানা ‘বাংলাদেশি।’

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, জুয়েল রানার সঙ্গে থাকা পশ্চিমবঙ্গের আরও দুই পরিযায়ী শ্রমিক গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। এই ঘটনায় ওডিশা পুলিশ এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

সুতি থানায় দেওয়া এক লিখিত অভিযোগে জুয়েল রানার মা নাজমা বিবি জানিয়েছেন, ২০ ডিসেম্বর তাঁর ছেলে সম্বলপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। তিনি বলেন, ‘২৪ ডিসেম্বর রাত সাড়ে আটটা নাগাদ একটা ফোন পাই। জানতে পারি ওডিশায় যেখানে ওরা থাকত, তার কাছেই সাত-আটজন স্থানীয় লোক আমার ছেলে আর ওর সহকর্মীদের ওপর চড়াও হয়েছে। ওরা আমার ছেলেকে ‘বাংলা বলা বাংলাদেশি’ বলে গালি দিচ্ছিল আর মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছিল।’

নাজমা বিবি আরও বলেন, ‘এ কথা বলতে বলতেই ওরা লাঠি, লোহার রড আর ধারালো অস্ত্র নিয়ে আমার ছেলে আর ওর বন্ধুদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। আমার ছেলে ওখানেই মারা যায়, বাকিরা এখন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।’ জুয়েলের বাবা জিয়াউল হক নিজেও একজন রাজমিস্ত্রি, তিনি বর্তমানে কেরালায় কর্মরত।

ওডিশা পুলিশের দাবি, দানিপালি এলাকায় একটি নির্মীয়মাণ ভবনে এই ঝামেলার সূত্রপাত। স্থানীয় কিছু যুবক ওই শ্রমিকদের কাছে বিড়ি চেয়েছিল। এরপর তর্কের মাঝেই যুবকেরা শ্রমিকদের আধার কার্ড দেখতে চায় এবং মুহূর্তেই সেই বিবাদ সহিংস রূপ নেয়। সম্বলপুরের এসপি মুকেশ ভামু বলেন, ‘একজন মারা গেছেন এবং দুজন আহত। পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এর সঙ্গে আর কেউ জড়িত থাকলে তাদেরও ছাড়া হবে না।’

নওশাদ আলি নামে মুর্শিদাবাদের এক যুবক এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। তিনি জানান, শ্রমিকেরা আগুনের পাশে বসে শরীর গরম করছিল। তখন কিছু স্থানীয় যুবক এসে বিড়ি চায়। বিড়ি নেওয়ার পরপরই তারা লোকগুলোকে বাংলাদেশি বলে গালি দিতে শুরু করে এবং মারধর শুরু করে।

বৃহস্পতিবার সুতি ব্লকের প্রশাসনিক কর্মকর্তা, পুলিশ এবং তৃণমূল বিধায়ক ইমানি বিশ্বাস নিহত জুয়েলের বাড়িতে গিয়ে তাঁর মায়ের সঙ্গে দেখা করেন। বিধায়ক অভিযোগ করেছেন, হামলাকারীরা শ্রমিকদের ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিতে বাধ্য করেছিল। তিনি বলেন, ‘আমরা দ্রুত মরদেহ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি।’

এই ঘটনায় সম্বলপুরে থাকা বাঙালি শ্রমিকদের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। মাজহার খান নামে অন্য এক রাজমিস্ত্রি আক্ষেপ করে বললেন, ‘আমাদের প্রায়ই বাংলাদেশি মনে করে হেনস্তা করা হয়। মানুষ সন্দেহ করে, গালি দেয়, আক্রমণ করে। আমরা সরকারের কাছে নিরাপত্তা চাইছি।’

পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলাম বলেন, ‘আবারও বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাঙালি শ্রমিকদের ওপর হামলা হলো। বিজেপি গুন্ডারা তাদের ওপর আক্রমণ করে অনুপ্রবেশকারী তকমা দিচ্ছে। আর কত প্রাণ চায় ওরা? বাঙালিদের প্রতি বিজেপির মনোভাব ঠিক কেমন, এটা তারই প্রমাণ।’

রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে বাঙালি শ্রমিকেরা ক্রমাগত নিগৃহীত হচ্ছে, খুন হচ্ছে। বিজেপির নেতারা কেন চুপ? কেন বারবার এমন জঘন্য অপরাধ ঘটছে?’ তবে ওডিশার আইজিপি হিমাংশু লাল দাবি করেছেন, ঝামেলার মূলে ছিল টাকার লেনদেন নিয়ে কোনো বিবাদ, যা হুট করেই চরমে পৌঁছায়। তিনি আরও জানান, এই ঘটনার পেছনে সাম্প্রদায়িক বা ভাষাগত কোনো কারণ নেই এবং সায়েন্টিফিক তদন্ত চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘বাংলাদেশি’ তকমায় এক বছরে ২২০০ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে ভারত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

চলতি বছরে ভারতের বিজেপি সরকার তথাকথিত ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ ইস্যুতে বেশ সরব ছিল। নানা রাজনৈতিক বক্তব্যে এবং আলোচনায় তথাকথিত ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ ইস্যুটিকে তুলে আনা হয়েছে। এমনকি নির্বাচনী প্রচারণার মোদ্দা হিসেবেও ব্যবহার করা হয়েছে এই তকমা। তবে ভারত সরকার সেখানেই থেকে থাকেনি। কোনো ধরনের প্রমাণাদি ছাড়াই তারা ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে অন্তত ২ হাজার ২০০ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়েছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, তথাকথিত ‘অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযানে ২০২৫ সালে রেকর্ড সংখ্যক ২ হাজার ২০০ জন বাংলাদেশি নাগরিককে নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়েছে দিল্লি পুলিশ।’ সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ সংখ্যা। বৈধ অনুমতি ছাড়া দেশে বসবাসকারী বিদেশি নাগরিকদের শনাক্ত ও প্রত্যাবাসনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কঠোর নির্দেশের পরই এই তৎপরতা বৃদ্ধি পায়।

বিগত বছরগুলোর পরিসংখ্যানের তুলনায় এবারের অভিযানের ব্যাপকতা নজিরবিহীন। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ২০২৪ সালে ১৪ জনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছিল, ২০২৩ সালে ৫ জন এবং ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ৫০ জন। ২০২৫ সালে এই নাটকীয় বৃদ্ধি এটাই প্রমাণ করে যে, জাতীয় রাজধানীর সীমান্ত ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিতের নামে দিল্লি পুলিশ লক্ষ্যবস্তু করে তথাকথিত অভিযান চালানো হচ্ছে।

দিল্লি পুলিশের মতে, যাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে তারা জাল নথিপত্র ব্যবহার করে দিল্লির বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করছিল। তদন্তে প্রকাশ পেয়েছে, এই ব্যক্তিরা স্থানীয় জনসমষ্টির সঙ্গে মিশে যেতে এবং সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেতে ভুয়া আধার কার্ড, জাল ভোটার আইডি কার্ড এবং অন্যান্য জাল সরকারি পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেছিল।

তবে কোনো তথ্যপ্রমাণ হাজির করেনি দিল্লি পুলিশ। এমনকি দিল্লি পুলিশ বা ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো কখনোই যাদের ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়েছে তাদের পরিচয়ের ব্যাপারে কোনো তথ্য–প্রমাণ দেয়নি। বরং, এমনও একাধিক ঘটনা আছে, যেখানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম বাঙালিদের বাংলাদেশের ভেতরে ঠেলে পাঠানো হয়েছিল। এমনকি আসামেও একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে প্রমাণ আছে। পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের সোনালী খাতুন এবং আসামের সকিনা বিবি ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে জোর করে ভারতীয় বাংলাভাষী মুসলিমদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর জাজ্বল্যমান প্রমাণ।

খোদ ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্যই বলছে, অন্তঃসত্ত্বা ভারতীয় নাগরিক সোনালী খাতুন এবং তাঁর পরিবারের পাঁচ সদস্যকে ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ তকমা দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয় চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে। প্রায় চার মাস ধরে চরম দুর্ভোগ পোহানোর পর অবশেষে বিচারিক আদেশে তাঁদের ভারতে প্রত্যাবর্তনের পথ প্রশস্ত হয়। চলতি মাসের শুরুর দিকে তিনি ভারতেও ফিরে যান। আদালতের আদেশ থেকে স্পষ্ট যে, দিল্লিতে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করা পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের এই দরিদ্র বাসিন্দাদের ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে আধার কার্ড থাকা সত্ত্বেও দিল্লি পুলিশ তাঁদের সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছিল।

একইভাবে সকিনা বিবিকেও বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়। বাংলাভাষী ভারতীয় মুসলিম এই নারী ২০১৬ সাল থেকে সকিনা কোকরাঝাঁড় ডিটেনশন সেন্টারে আটক ছিলেন। ২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের আদেশে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর তাঁকে নিয়মিতভাবে নলবাড়ি থানায় হাজিরা দিতে হতো। তিনি সর্বশেষ এই বছরের ২৫ মে থানায় হাজিরা দেন—এরপর থেকে তাঁর পরিবার তাঁকে খুঁজে পায়নি।

আসামের নলবাড়ি জেলার বারকুরা গ্রামের বাসিন্দা সকিনা বেগমকে গত মে মাসে তাঁর বাড়ি থেকে হেফাজতে নেয় আসাম পুলিশ। এরপর তিনি দীর্ঘদিন নিখোঁজ ছিলেন এবং তাঁর পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি। জুনের প্রথম সপ্তাহে সকিনাকে ঢাকার মিরপুর ভাষানটেক এলাকায় রাস্তার পাশে একজন পথচারী খুঁজে পান। এরপর তিনি কাশিমপুর কারাগারে কিছুদিন বন্দী ছিলেন। পরে আদালতের হস্তক্ষেপে তাঁর মুক্তির পথ প্রশস্ত হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অরুণাচলকে চীনের ‘মূল স্বার্থ’ বলছে পেন্টাগন, ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান বেইজিংয়ের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৫৭
অরুণাচলকে চীনের মূল স্বার্থ বলে উল্লেখ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ছবি: এএফপি
অরুণাচলকে চীনের মূল স্বার্থ বলে উল্লেখ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ছবি: এএফপি

মার্কিন কংগ্রেসে পেশ করা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ পেন্টাগনের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে অরুণাচল প্রদেশের ওপর চীনের দাবিকে তাদের ‘কোর ইন্টারেস্ট’ বা মূল স্বার্থ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই স্বার্থগুলোর বিষয়ে চীন কোনো ধরনের আলোচনা বা আপস করতে রাজি নয়। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, চীনের নেতৃত্ব তাদের ‘মূল স্বার্থে’র পরিধি আরও বাড়িয়ে এখন তাইওয়ান, দক্ষিণ চীন সাগরের সার্বভৌমত্ব ও সামুদ্রিক বিরোধ, সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জ এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য অরুণাচল প্রদেশকেও অন্তর্ভুক্ত করেছে।

মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, ২০৪৯ সালের মধ্যে ‘চীনা জাতির মহান পুনর্জাগরণের’ জন্য চীন ও এই বিতর্কিত অঞ্চলগুলোর একীকরণ একটি ‘স্বাভাবিক আবশ্যকতা।’ এই ‘পুনর্জাগরণ’ সম্পন্ন হলে চীন বিশ্বমঞ্চে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে এবং এমন এক ‘বিশ্বমানের’ সামরিক বাহিনী গড়ে তুলবে, যা যেকোনো যুদ্ধে ‘লড়তে ও জিততে’ সক্ষম হবে। একই সঙ্গে এই বাহিনী বেইজিংয়ের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের স্বার্থ অত্যন্ত ‘দৃঢ়ভাবে রক্ষা’ করবে।

নথিতে চীনের পুনর্জাগরণের জন্য তিনটি মূল স্বার্থের কথা বলা হয়েছে, যেখানে কোনো সমঝোতার সুযোগ নেই। এর মধ্যে রয়েছে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা, অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রসার এবং চীনের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক দাবির প্রতিরক্ষা ও সম্প্রসারণ।

মূল্যায়নে আরও দেখা গেছে, সিপিসি তাদের শাসনের প্রতি যেকোনো অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক হুমকি বা সমালোচনার বিষয়ে অত্যন্ত সংবেদনশীল। বিশেষ করে চীনা স্বার্থ রক্ষায় তারা ব্যর্থ হচ্ছে, এমন কোনো সমালোচনা তারা সহ্য করে না।

ভারত-চীন সম্পর্কের বিষয়ে প্রতিবেদনে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার (এলএসি) পরিস্থিতির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের অক্টোবরে ব্রিকস সম্মেলনের ফাঁকে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের দুই দিন আগে ভারত সরকার চীনের সঙ্গে এলএসির অমীমাংসিত স্থানগুলো থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার চুক্তির কথা ঘোষণা করে।

এই বৈঠকের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের মাসিক আলোচনার পথ উন্মুক্ত হয়। যেখানে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা এবং পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে সরাসরি বিমান চলাচল, ভিসা সুবিধা সহজীকরণ এবং শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিকদের বিনিময়ের মতো বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়।

যদিও চীন এলএসিতে উত্তেজনা কমিয়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্থিতিশীল করতে চায়, যার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ভারত-মার্কিন সম্পর্ক যেন আরও গভীর হতে না পারে। তবে প্রতিবেদনটিতে এ-ও বলা হয়েছে, ভারত সম্ভবত চীনের কাজ ও উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দিহান থাকবে। পারস্পরিক অবিশ্বাস ও অন্যান্য অস্বস্তিকর বিষয়গুলো দুই দেশের সম্পর্কের উন্নতিকে সীমিত করে রাখবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে পেন্টাগনের এই প্রতিবেদনকে প্রত্যাখ্যান করেছে চীন। তাদের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্র বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা বয়ান ছড়িয়ে বিভেদ সৃষ্টি করতে চাইছে। তারা দাবি করেছে, ভারতের সঙ্গে সীমান্ত উত্তেজনা হ্রাসের বিষয়টি ব্যবহার করে বেইজিং ভারত-মার্কিন সম্পর্ক নষ্ট করতে চাইছে—পেন্টাগনের এমন দাবি ভিত্তিহীন।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘পেন্টাগনের এই প্রতিবেদন চীনের প্রতিরক্ষা নীতিকে বিকৃত করেছে এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে চীনের বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করছে। মূলত নিজেদের সামরিক আধিপত্য বজায় রাখতেই যুক্তরাষ্ট্র এমন অজুহাত খুঁজছে।’ চীন এই প্রতিবেদনের তীব্র বিরোধিতা করছে বলে তিনি জানান।

পৃথকভাবে চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাং শিয়াওগাংও এই প্রতিবেদনের নিন্দা জানিয়েছেন। প্রতিবেদনে পাকিস্তান ও চীনের প্রতিরক্ষা ও মহাকাশ গবেষণার সহযোগিতা এবং সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের পরিকল্পনার যে উল্লেখ রয়েছে, ঝাং সেটিকে চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বছরের পর বছর ধরে এসব মনগড়া প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। তারা চীনের প্রতিরক্ষা নীতিকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করছে এবং আমাদের সামরিক বাহিনীর স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডকে কলঙ্কিত করছে।’

ঝাং আরও বলেন, প্রতিবেদনটি ভূরাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিভ্রান্ত করতে ‘চীনা সামরিক হুমকি’র বিষয়টি বাড়িয়ে বলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রকে এই ধরনের মিথ্যা বয়ান এবং উসকানি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে লিন জিয়ান জানান, বেইজিং দিল্লির সঙ্গে সম্পর্ককে কৌশলগত ও দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে। তিনি বলেন, ‘আমরা ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ শক্তিশালী করতে, পারস্পরিক আস্থা বাড়াতে এবং মতপার্থক্য সঠিকভাবে পরিচালনা করে একটি স্থিতিশীল সম্পর্ক এগিয়ে নিতে প্রস্তুত।’

এলএসি প্রসঙ্গে লিন স্পষ্ট করে বলেন, ‘সীমান্ত সমস্যা চীন ও ভারতের নিজস্ব বিষয়। বর্তমানে সীমান্ত পরিস্থিতি মোটের ওপর স্থিতিশীল এবং দুই দেশের যোগাযোগের পথও খোলা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো দেশের ভিত্তিহীন মন্তব্য চীন মেনে নেবে না।’

২০২৫ সালের জন্য প্রকাশিত এই বার্ষিক প্রতিবেদনে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ আরও বলেছে, চীন সম্ভবত পাকিস্তানের মতো দেশগুলোতে অতিরিক্ত সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের পরিকল্পনা করছে। পাকিস্তানের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, সেখানে বেইজিং সামরিক সুবিধা বাড়ানোর বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত