Ajker Patrika

আয়তনে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০ দেশ

আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৯: ২৭
আয়তনে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০ দেশ

জাতিসংঘের হিসাবে গোটা বিশ্বে দেশের সংখ্যা এখন ১৯৫। এর মধ্যে ১৯৩টি জাতিসংঘের সদস্য। আর এই দেশগুলোর মধ্যে কোনো কোনোটি আয়তনে একেবারেই ছোট। আবার এমনও দেশ আছে, যার পেটের মধ্যে অনায়াসে জায়গা হয়ে যাবে ছোট ৩০-৪০টি দেশের। বিশাল আয়তনের দেশগুলোর মধ্যে তাই নানা ধরনের ভূ-প্রকৃতির সমাবেশ ঘটেছে। আজ আমরা পরিচয় করিয়ে দেব আয়তনে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০টি দেশের সঙ্গে। 

বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেশ রাশিয়ার আয়তন শুনলে চোখ কপালে উঠবে আপনার, সেটা ১ কোটি ৭০ লাখ ৯৮ হাজার ২৪২ বর্গকিলোমিটার। উত্তর এশিয়ার বড় একটি অংশের পাশাপাশি পূর্ব ইউরোপেও বিস্তৃত বিশাল দেশটি। রাজধানী মস্কো ইউরোপের বড় শহরগুলোর একটি। দেশটির মুদ্রা রাশিয়ান রুবল। শিল্প-সাহিত্য ও স্থাপত্যে সমৃদ্ধ ঐতিহ্য আছে রাশিয়ার।

আয়তনে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ কানাডার প্রায় দ্বিগুণ এটি। বিশ্বের রাজনীতিতে বড় প্রভাব আছে দেশটির। গোটা বিশ্বের মোটা ভূমির ১১ শতাংশ পড়েছে রাশিয়ায়। তবে প্রচণ্ড শীতল জলবায়ুর কারণে দেশটির ৬০ শতাংশ এলাকা বসবাসের অনুপযোগী। পৃথিবীতে মানুষের বসবাস আছে এমন সবচেয়ে ঠান্ডা দুই জায়গা ওয়ামিয়াকোন এবং ভেরখোইয়ান্স্কের অবস্থান রাশিয়াতেই। 

৯৯ লাখ ৮৪ হাজার ৬৭৪ বর্গকিলোমিটারের কানাডা আয়তনে বিশ্বে দ্বিতীয় এবং উত্তর আমেরিকায় প্রথম। প্রচুর তেল, প্রাকৃতিক গ্যাসসহ নানা ধরনের খনিজের উপস্থিতির কারণে বেশ ধনী এক দেশ এটি। এখানে স্বাদু পানির উৎসেরও অভাব নেই। এত বিশাল দেশ হলেও কানাডার জনসংখ্যা অনেকই কম, ৪ কোটির নিচে।

নায়াগ্রা জলপ্রপাত, ভালুক, নেকড়ে এবং ক্যুগার বা পার্বত্য সিংহে ভরপুর বিশাল সব জঙ্গলের জন্য আলাদা নাম আছে কানাডার। বিশ্বের দীর্ঘতম উপকূলরেখা কানাডার। অবিশ্বাস্য হলেও ছোট-বড় মিলিয়ে ২০ লাখ হ্রদ আছে কানাডায়। 

৯৮ লাখ ৩৩ হাজার ৫১৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের তৃতীয় এবং উত্তর আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। যুক্তরাজ্য থেকে ১৭৭৬ সালে স্বাধীনতা লাভ করে বর্তমানে বিশ্বের এই অন্যতম পরাশক্তি। মরু এলাকা, নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল এবং প্রচণ্ড শীতল এলাকা—সবই পাবেন বৈচিত্র্যময় এই ভূভাগে। এই বৈচিত্র্য প্রতিফলিত হয় শিল্প, সংগীত, সাহিত্য এবং উৎসবেও। দেশটির মুদ্রা ইউএস ডলার

রকি পর্বতমালা, ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্ক, ডেথ ভ্যালি, গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের মতো বিখ্যাত প্রাকৃতিক বিস্ময়ের পাশাপাশি মানুষের তৈরি নানা স্থাপনার জন্যও বিখ্যাত যুক্তরাষ্ট্র। 

৯৫ লাখ ৯৬ হাজার ৯৬০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের চীনের অবস্থান বিশ্বে চতুর্থ। এদিকে বিশ্বের জনবহুল দেশের তালিকায় সম্প্রতি তাদের টপকে শীর্ষে উঠে গেছে ভারত। 

তিব্বতের মালভূমি, গোবি মরুভূমি, ইয়াংজি এবং ইয়েলো রিভারের উপত্যকার উর্বর সমভূমি এবং হিমালয়ের মতো পর্বতমালা মিলিয়ে চীন তার বৈচিত্র্যময় ভূপ্রকৃতির জন্য বিখ্যাত। বহু পুরোনো ঐতিহ্যের অধিকারী দেশটি গ্রেট ওয়াল বা চীনের প্রাচীর এবং জায়ান্ট পান্ডার জন্যও পরিচিত। অর্থনৈতিকভাবেও দেশটি শক্তিশালী। 

ব্রাজিল আয়তনের দিক থেকে বিশ্বে পঞ্চম এবং দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে বড় দেশ। ৮৫ লাখ ১৫ হাজার ৭৭০ বর্গকিলোমিটারের দেশটি পৃথিবীর বৃহত্তম উষ্ণমণ্ডলীয় অরণ্যের জন্য বিখ্যাত। নানা জাতি-গোষ্ঠীর মানুষের বসবাসের ছাপ ফুটে ওঠে এখানকার সংগীত, নাচ, উৎসব ও সাহিত্যে। 

বিশ্ব ঐতিহ্য ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার এখানকার বড় আকর্ষণ। ব্রাজিল ফুটবল দলের ভক্ত ছড়িয়ে আছে বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বে। 

৭৭ লাখ ৪১ হাজার ২২০ বর্গকিলোমিটারের দেশটি আয়তনে বিশ্বে ষষ্ঠ। এটিই একমাত্র দেশ, যার নামে আস্ত একটি মহাদেশই আছে।

অস্ট্রেলিয়া তার স্বতন্ত্র ও বৈচিত্র্যময় ভূ-প্রকৃতির জন্য পরিচিত। অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের সংস্কৃতি, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতা এবং ইউরোপ, এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে অভিবাসনের কারণে বহু সংস্কৃতির বিকাশ ঘটেছে এখানে; যা দেশটির শিল্পকলা, রন্ধনপ্রণালি, উৎসব ও খেলাধুলায় প্রভাব ফেলেছে। ক্যাঙারুর বাসস্থান হিসেবে আলাদা নাম আছে দেশটির। তেমনি অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দলও পরিচিত বিশ্বজুড়ে। 

বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ ভারত আয়তনে আছে সাতে। ৩২ লাখ ৮৭ হাজার ২৬৩ বর্গকিলোমিটারের দেশটির অবস্থান দক্ষিণ-এশিয়ায়। আকাশছোঁয়া হিমালয় পর্বতমালা, গঙ্গা নদীর ধারে উর্বর সমভূমি, পশ্চিম ঘাটের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বৃষ্টিবন এবং আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী উপকূলীয় অঞ্চল মিলিয়ে বৈচিত্র্যময় ভূ-প্রকৃতি দেশটির বড় আকর্ষণ। হাজারো বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের চিহ্ন বুকে ধারণ করা ভারত নানা জাতি-গোষ্ঠীর বসবাসের জন্য বিখ্যাত।

পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বাঘ ও এশীয় হাতির বাসস্থানও ভারতে। তেমনি গন্ডার, কৃষ্ণসার মৃগ, ঘড়িয়াল, লাল পান্ডাসহ নানা ধরনের পশু-পাখির দেখা মেলে দেশটির অরণ্যে। 

২৭ লাখ ৮০ হাজার ৪০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের আর্জেন্টিনা দক্ষিণ আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। গোটা বিশ্বে এর অবস্থান অষ্টম। ১৮১৬ সালে স্পেন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে দেশটি। মুদ্রা আর্জেন্টাইন পেসো।

সমৃদ্ধ শিল্প-সাহিত্য, স্থাপত্য, সংগীত ও রন্ধনপ্রণালির জন্য দেশটির আলাদা নাম আছে। রাজধানী বুয়েনস এইরেস ইউরোপীয় ঘরানার স্থাপত্য, থিয়েটার, জাদুঘর ও বর্ণিল নাইট লাইফের জন্য বিখ্যাত। আর্জেন্টিনাকে সারা বিশ্বে পরিচিত করতে বড় ভূমিকা রেখেছে ফুটবল এবং কিংবদন্তি দুই খেলোয়াড় দিয়াগো ম্যারাডোনা এবং লিওনেল মেসি

২৭ লাখ ২৪ হাজার ৯০০ বর্গকিলোমিটারের কাজাখস্তান আয়তনে মধ্য এশিয়ার বৃহত্তম দেশ। এত বিশাল দেশ, কিন্তু জনসংখ্যা ২ কোটিরও কম। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাগ হয়ে যাওয়ার পর ১৯৯১ সালে স্বাধীনতা পায় দেশটি।

চারপাশে ভূ-ভাগ দিয়ে ঘেরা দেশকে বলা হয় ল্যান্ডলকড দেশ। আর কাজাখস্তান বিশ্বের সবচেয়ে বড় ল্যান্ডলকড কান্ট্রি। বিস্তীর্ণ স্তেপস বা সমতল ঘাসসমৃদ্ধ এলাকা, মরুভূমি এবং পর্বতমালা মিলিয়ে গড়ে উঠেছে দেশটি। নানা জাতি-গোষ্ঠীর মানুষের বসবাস এখানে। এদের মধ্যে কাজাখরা ঐতিহ্যগতভাবে যাযাবর। 

প্রাকৃতিক সম্পদেও সমৃদ্ধ দেশটিতে তেল, গ্যাসসহ নানা খনিজ পদার্থের খনি রয়েছে। 

আয়তনে বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেশের তালিকায় ১০ নম্বর স্থানটি আফ্রিকার আলজেরিয়ার। ২৩ লাখ ৮১ হাজার ৭৪০ বর্গকিলোমিটারের দেশটি ১৯৬২ সালে স্বাধীনতা লাভ করে ফ্রান্স থেকে।

আলজেরিয়ার মোট আয়তনের বিশাল একটি অংশজুড়ে বিখ্যাত সাহারা মরুভূমি। সাংস্কৃতিকভাবে আলজেরিয়ার একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। বারবার আরব ও ফরাসি ঔপনিবেশিক উত্তরাধিকার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। আর এর প্রভাব পড়েছে এখানকার স্থাপত্য, সাহিত্য, সংগীত ও খাবার-দাবারে। 

সূত্র: বিবিসি সায়েন্স ফোকাস ম্যাগাজিন, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নির্বাচনে প্রথম ধাপে ভোট পড়েছে ৫২ শতাংশ, দাবি মিয়ানমারের জান্তা সরকারের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গত রোববার মিয়ানমারে প্রথম ধাপের ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে
গত রোববার মিয়ানমারে প্রথম ধাপের ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে

মিয়ানমারে সাধারণ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ৫২ দশমিক ১৩ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে দাবি করেছে দেশটির ক্ষমতাসীন জান্তা সরকার। ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর এই প্রথম দেশটিতে তিন ধাপে বিতর্কিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে আগের দুটি নির্বাচনের তুলনায় এবারের ভোটার উপস্থিতি কম।

জান্তা সরকারের মুখপাত্র জাও মিন তুন রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমকে জানান, ১০২টি টাউনশিপের প্রায় ৬০ লাখ মানুষ প্রথম ধাপে ভোট দিয়েছেন। তিনি এই উপস্থিতিকে ‘গর্বের বিষয়’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের প্রায় পাঁচ বছর পর তিন ধাপে নির্বাচনের আয়োজন করেছে জান্তা সরকার। গত রোববার (২৮ ডিসেম্বর) প্রথম ধাপের ভোট গ্রহণ শেষ হয়।

আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, ২০১৫ ও ২০২০ সালের নির্বাচনে মিয়ানমারে প্রায় ৭০ শতাংশ ভোট পড়েছিল। এবার তা ৫২ শতাংশে নেমে আসায় নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জাতিসংঘ, পশ্চিমের দেশগুলো এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এই নির্বাচনকে ‘প্রহসন’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।

বিরোধী দলগুলোকে অংশ নিতে না দেওয়া এবং নির্বাচনের সমালোচনা করাকে বেআইনি ঘোষণা করায় আন্তর্জাতিক মহলে এই ভোট কোনো গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।

তবে জান্তা মুখপাত্র জাও মিন তুন বলেন, ‘অনেক উন্নত গণতান্ত্রিক দেশেও ভোটার উপস্থিতি ৫০ শতাংশের বেশি হয় না। সেই তুলনায় আমাদের এই হার অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক।’

নির্বাচনের গতিবিধি বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, অবসরপ্রাপ্ত জেনারেলদের নেতৃত্বাধীন ‘ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির’ (ইউএসডিপি) হাতেই এবার ক্ষমতা যাবে। কারণ, জনপ্রিয় বিরোধী দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসিকে (এনএলডি) বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

পরবর্তী রাউন্ডের ভোট গ্রহণ হবে আগামী ১১ জানুয়ারি এবং ২৫ জানুয়ারি। মোট ৩৩০টি শহরের মধ্যে ২৬৫টিতে ভোট হবে। যদিও এর অনেক অঞ্চলেই জান্তা সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেই।

এদিকে ২০২০ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়ী এনএলডি নেত্রী অং সান সু চি এখনো বন্দী অবস্থায় আছেন। তখন থেকেই মিয়ানমারের জান্তা সরকারের অধীনে ব্যাপক গৃহযুদ্ধ চলছে। বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকা দখল করে নিয়েছে।

এই অস্থিতিশীলতার মধ্যেই নির্বাচন আয়োজন করে আন্তর্জাতিক বৈধতা পাওয়ার চেষ্টা করছে সামরিক সরকার। তবে এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস জানিয়েছে, জান্তা সরকারের নির্বাচনী আইনে ভোটার উপস্থিতির কোনো ন্যূনতম সীমা নেই। এটি তাদের ভোটার উপস্থিতির যেকোনো হারকেই বৈধতা দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতে চলন্ত গাড়িতে ২ ঘণ্টা দলবদ্ধ ধর্ষণের পর ছুড়ে ফেলা হলো রাস্তায়

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮: ০২
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের ফরিদাবাদ শহরে চলন্ত গাড়িতে ২৮ বছর বয়সী এক নারীকে তুলে নিয়ে দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে।

গত সোমবার রাতে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিবাহিত ওই নারী রাতে বাড়ি যাওয়ার জন্য যানবাহনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। সে সময় একটি গাড়ি থামে এবং দুজন যুবক তাঁকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে গাড়িতে তোলেন। কিন্তু গাড়িটি তাঁর গন্তব্যের বদলে গুড়গাঁও সড়কের দিকে যেতে শুরু করে।

অভিযোগ অনুযায়ী, ওই নারী দুই ঘণ্টা গাড়িটির ভেতরে আটকে ছিলেন এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ক্রমাগত তাঁকে ধর্ষণ করেন। বাধা দেওয়া সত্ত্বেও অভিযুক্ত ব্যক্তিরা থামেননি, উল্টো তাঁকে হুমকি দেন। এরপর এস জি এম নগরের রাজা চকের কাছে ওই নারীকে চলন্ত গাড়ি থেকে ফেলে দেওয়া হয়। এতে তাঁর মুখে গুরুতর আঘাত লাগে এবং প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়।

এ সময় ভুক্তভোগী নারী বারবার তাঁর বোনকে ফোন করছিলেন। পরে তাঁর বোন যখন ফিরতি ফোন করেন, তখন তিনি পুরো বিষয়টি জানতে পারেন। খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করেন। তাঁর মুখে ১০ থেকে ১২টি সেলাই দিতে হয়েছে।

বর্তমানে ওই নারীর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল থাকলেও ট্রমায় ভুগছেন। এ জন্য এখন পর্যন্ত তাঁর জবানবন্দি নেওয়া সম্ভব হয়নি।

ভুক্তভোগীর বোন অভিযোগে জানিয়েছেন, ঘটনার দিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাঁর বোন তাঁকে ফোন করে বলেছিলেন, মায়ের সঙ্গে ঝগড়া হওয়ায় তিনি বন্ধুর বাড়ি যাচ্ছেন। তিন ঘণ্টার মধ্যে বাড়ি ফিরে আসবেন বলেও বোনকে জানিয়েছিলেন তিনি।

এনডিটিভির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ওই নারী বিবাহিত এবং তিন সন্তানের জননী। পারিবারিক কলহের কারণে তিনি স্বামী থেকে আলাদা থাকেন।

পুলিশ এরই মধ্যে অভিযুক্ত দুজনকে গ্রেপ্তার ও অপরাধে ব্যবহৃত গাড়িটি জব্দ করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জার্মানিতে হলিউড স্টাইলে ডাকাতি, ব্যাংকের ভল্ট কেটে ৩ কোটি ইউরো লুট

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ড্রিল দিয়ে ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে ৩ কোটি ইউরো মূল্যের অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে গেছে ডাকাতেরা। ছবি: গেলসেনকির্শেন পুলিশ
ড্রিল দিয়ে ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে ৩ কোটি ইউরো মূল্যের অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে গেছে ডাকাতেরা। ছবি: গেলসেনকির্শেন পুলিশ

হলিউডের বিখ্যাত সিনেমা-সিরিজে হরহামেশাই ব্যাংক ডাকাতির কাহিনি দেখা যায়। কিন্তু বাস্তবে তেমন হওয়াটা অসম্ভব মনে হলেও এমন সিনেমাটিক স্টাইলে ব্যাংক ডাকাতি হয়ে গেছে জার্মানির এক ব্যস্ত বাণিজ্যিক এলাকায়। ড্রিল দিয়ে ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে ৩ কোটি ইউরো মূল্যের অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে গেছে ডাকাতেরা।

পশ্চিম জার্মানির গেলসেনকির্শেন শহরের স্পারকাসে সেভিংস ব্যাংকে এ ঘটনা ঘটেছে। বিবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বড় ড্রিল ব্যবহার করে আনুমানিক ৩ কোটি ইউরো (৪৩১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা) নগদ অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী লুট করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এই ঘটনাকে ডাকাতির কাহিনিনির্ভর হলিউডের সিনেমা ‘ওশানস ইলেভেন’-এর সঙ্গে তুলনা করে এএফপি বার্তা সংস্থাকে এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, এটি অত্যন্ত পেশাদারভাবে করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, এই ডাকাতির সময় অর্থ, স্বর্ণ ও গহনা রাখা ৩ হাজারেরও বেশি সেফ ডিপোজিট বক্স ভেঙে ফেলা হয়েছে।

গেলসেনকির্শেন পুলিশ জানায়, গত সোমবার ভোররাতে ফায়ার অ্যালার্ম সক্রিয় হলে তারা ঘটনার বিষয়ে জানতে পারে। তখন ক্রিসমাসের ছুটি চলছিল। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বুয়ের জেলায় নিয়েনহোফস্ট্রাসে অবস্থিত ওই ভবনে ডাকাতি চালায়।

প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, তারা পাশের একটি পার্কিং গ্যারেজ ব্যবহার করে ব্যাংকে ঢোকে এবং সেখান দিয়েই পালিয়ে যায়।

তবে এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে বিবিসি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত শনিবার রাত থেকে গত রোববার ভোর পর্যন্ত ওই ভবনটির গ্যারেজের সিঁড়িঘরে কয়েকজন পুরুষকে বড় বড় ব্যাগ বহন করতে দেখা গেছে।

পুলিশ জানায়, ভিডিও ফুটেজে সোমবার ভোরে ডে-লা-শেভালারি-স্ট্রাসে অবস্থিত গ্যারেজ থেকে একটি কালো অডি আরএস ৬ গাড়িকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। সোমবার ভোররাতে একটি ফায়ার-অ্যালার্ম বাজলে ভূগর্ভস্থ ভল্ট রুমে ঢোকার জন্য করা গর্তটি ধরা পড়ে। এরপর পুলিশ ও দমকল বাহিনী ভবনটিতে তল্লাশি চালায়।

চুরির ঘটনায় ব্যাংকের শাখাটি বন্ধ রাখা হয়েছে। গ্রাহকদের প্রায় ৯৫ শতাংশ সেফ ডিপোজিট বক্স খুলে ফেলা হয়েছে বলে জানিয়েছে ব্যাংকটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গাজা-পশ্চিম তীরের ৩৭ ত্রাণ সংস্থার লাইসেন্স ১ জানুয়ারি থেকে স্থগিত করেছে ইসরায়েল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ৪৩
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছে এমন ৩৭টি সংস্থার লাইসেন্স বাতিল করতে যাচ্ছে ইসরায়েল। দেশটির দাবি, এসব সংস্থা নতুন নিবন্ধন বিধিমালার আওতায় নির্ধারিত শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি এসব সংস্থা তাদের কর্মীদের ‘সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত তথ্য জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল।

বিবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অ্যাকশনএইড, ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি এবং নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের মতো পরিচিত আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা (আইএনজিও) গুলোর লাইসেন্স ১ জানুয়ারি থেকে স্থগিত করা হবে এবং ৬০ দিনের মধ্যে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে।

ইসরায়েলের এই পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেছেন যুক্তরাজ্যসহ ১০টি দেশ। তারা বলছে, নতুন নিয়মগুলো ‘অতিরিক্তভাবে কঠোর’ এবং ‘অগ্রহণযোগ্য’।

এক যৌথ বিবৃতিতে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড, জাপান, নরওয়ে, সুইডেন ও সুইজারল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বলেন, আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থাগুলোর (আইএনজিও) কার্যক্রম জোরপূর্বক বন্ধ করে দিলে স্বাস্থ্যসেবাসহ জরুরি সেবায় প্রবেশাধিকার মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।

গাজায় মানবিক পরিস্থিতি এখনো ‘বিপর্যয়কর’ উল্লেখ করে তাঁরা ইসরায়েল সরকারকে আহ্বান জানান, যাতে এনজিওগুলো টেকসই এবং আগের মতো কাজ করতে পারে।

এদিকে ইসরায়েলের ডায়াসপোরা বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নতুন এই পদক্ষেপগুলোর ফলে গাজায় মানবিক সহায়তার প্রবাহে কোনো প্রভাব পড়বে না। মন্ত্রণালয়টি জানায়, জাতিসংঘের সংস্থা, দ্বিপক্ষীয় অংশীদার এবং মানবিক সংগঠনসহ ‘অনুমোদিত ও যাচাইকৃত চ্যানেল’ দিয়ে সহায়তা সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে।

তাদের দাবি, সহায়তা সংস্থাগুলোর লাইসেন্স বাতিলের প্রধান কারণ হলো, তাদের কর্মীদের বিষয়ে সম্পূর্ণ ও যাচাইযোগ্য তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানানো যা মানবিক কাঠামোয় ‘সন্ত্রাসী অপারেটিভদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে ইসরায়েল।

এ মাসের শুরুতে জাতিসংঘ-সমর্থিত বিশেষজ্ঞরা বলেন, অক্টোবর মাসে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর গাজায় পুষ্টি ও খাদ্য সরবরাহে কিছু উন্নতি হয়েছে। তবে পরের মাসেও প্রায় ১ লাখ মানুষ ‘চরম বিপর্যয়কর পরিস্থিতির’ মুখোমুখি ছিল।

তবে গাজার সীমান্ত ক্রসিংগুলো নিয়ন্ত্রণকারী ইসরায়েলি সামরিক সংস্থা কোগাত দাবি করেছে, যেসব সংস্থার কার্যক্রম স্থগিত করা হবে, তারা বর্তমান যুদ্ধবিরতির সময় গাজায় কোনো সহায়তা আনেনি। সংস্থাটি আরও জানায়, অতীতেও তাদের সম্মিলিত অবদান মোট সহায়তার মাত্র প্রায় ১ শতাংশ ছিল।

ডায়াসপোরা বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানায়, গাজায় মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে ১৫ শতাংশেরও কম নতুন নিয়ন্ত্রক কাঠামো লঙ্ঘন করেছে।

ওই নিয়ন্ত্রক কাঠামোতে লাইসেন্স বাতিলের একাধিক ভিত্তি রাখা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—

১. ইসরায়েলকে একটি ইহুদি ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকার না করা

২. হলোকাস্ট বা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে ইসরায়েলে চালানো হামলা অস্বীকার করা

৩. শত্রু রাষ্ট্র বা সন্ত্রাসী সংগঠনের মাধ্যমে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামকে সমর্থন করা

৪. ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘অবৈধতা আরোপের প্রচারণা’ চালানো

৫. ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বয়কটের আহ্বান জানানো বা তাতে অংশ নেওয়ার অঙ্গীকার করা

৬. বিদেশি বা আন্তর্জাতিক আদালতে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনাকে সমর্থন করা

অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে জাতিসংঘের সংস্থা এবং ২০০টিরও বেশি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত হিউম্যানিটারিয়ান কান্ট্রি টিম আগেই সতর্ক করে বলেছিল, নতুন নিবন্ধন নীতিমালা গাজা ও পশ্চিম তীরে আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থাগুলোর (আইএনজিও) কার্যক্রমকে মৌলিকভাবে ঝুঁকির মুখে ফেলছে।

তাদের ভাষায়, ‘এই ব্যবস্থা অস্পষ্ট, খামখেয়ালি ও অত্যন্ত রাজনৈতিক মানদণ্ডের ওপর নির্ভরশীল এবং এমন সব শর্ত আরোপ করছে, যা মানবিক সংস্থাগুলোর পক্ষে আন্তর্জাতিক আইনগত বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন না করে বা মানবিক নীতির মূল ভিত্তি ক্ষুণ্ন না করে পূরণ করা সম্ভব নয়।’

হিউম্যানিটারিয়ান কান্ট্রি টিমের মতে, বর্তমানে গাজায় অধিকাংশ ফিল্ড হাসপাতাল ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিচালনা বা সহায়তা, জরুরি আশ্রয় কার্যক্রম, পানি ও স্যানিটেশন সেবা, তীব্র অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুদের জন্য পুষ্টি স্থিতিশীলকরণ কেন্দ্র এবং গুরুত্বপূর্ণ মাইন অপসারণ কার্যক্রম আইএনজিওগুলোর মাধ্যমেই পরিচালিত বা সমর্থিত হচ্ছে।

এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের ডায়াসপোরা বিষয়ক ও ইহুদিবিদ্বেষ মোকাবিলা বিষয়ক মন্ত্রী আমিখাই চিকলি বলেন, ‘বার্তাটি স্পষ্ট: মানবিক সহায়তা স্বাগত কিন্তু সন্ত্রাসবাদের জন্য মানবিক কাঠামোর অপব্যবহার গ্রহণযোগ্য নয়।’

কার্যক্রম স্থগিত হতে যাচ্ছে এমন সংস্থাগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে কেয়ার, মেডিকো ইন্টারন্যাশনাল এবং মেডিক্যাল এইড ফর প্যালেস্টিনিয়ানস।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত