Ajker Patrika

আফ্রিকায় রমজান: বাড়িতে ইফতার হয় না, খাওয়া হয় না মাছ

আপডেট : ১৮ মার্চ ২০২৫, ১৬: ৪৬
আফ্রিকায় রমজান: বাড়িতে ইফতার হয় না, খাওয়া হয় না মাছ

পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলজুড়ে রয়েছে নানা প্রথা ও ঐতিহ্য। রমজান ঘিরে প্রতিটি দেশের নিজস্ব এসব রীতিনীতি তাঁদের সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠেছে। আফ্রিকার দেশগুলোর এমন রীতি নিয়ে এ আয়োজন—

মিসর
রমজান মাসে আচার-অনুষ্ঠানের বৈচিত্র্যের দিক থেকে শীর্ষে মিসর। রমজানকে রীতিমতো উদ্‌যাপন করা হয় দেশটিতে। রোজা রাখা, নামাজ এবং দান-খয়রাতের পাশাপাশি ইফতার এবং সাহরিতে ব্যাপক খাবারের আয়োজন করেন মিসরীয়রা। এ ছাড়া দেশটির ঐতিহ্যবাহী গান, ফানুস ওড়ানো, সাহরিতে ডেকে ওঠানো ও ইফতারের সময় জানাতে কামানের ব্যবহার সবাইকে মুগ্ধ করে। টেলিভিশন অনুষ্ঠান এবং ফুটবল টুর্নামেন্টসহ সামাজিক আচারও রমজানে অন্তর্ভুক্ত। মিসেরে এই উদ্‌যাপন সব সময় একটি ভিন্ন আমেজ তৈরি করে। 

আইভরি কোস্ট
আইভরি কোস্টে রমজান মাসকে ‘সুনে কালৌ’ বলা হয়, যার অর্থ উপবাসের মাস। আফ্রিকার অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে আইভরি কোস্টের ইফতার আয়োজন আলাদা। দেশটির কেউ নিজ বাড়িতে ইফতার করেন না। খাবার রান্না করে অন্য দরিদ্র পরিবারে নিয়ে যান, যাতে সবাই একসঙ্গে ইফতার করতে পারে। রমজানে দেশটির সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবারগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘মাদিদ’ ও ‘থারিদ’। আর সবচেয়ে বিখ্যাত খাবারটি ‘মুমি’ নামে পরিচিত, এটি এক ধরনের রুটি। সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয় হলো হিবিস্কাস, জিনজার, কিংস ব্রেইন ও দাজিহ। 

সেনেগাল
সেনেগালে রমজান মাসে দাতব্য সংস্থাগুলো রাজধানী ডাকারজুড়ে ইফতারের আয়োজন করে। বিশেষ করে অসহায় ও গাড়ির চালক যারা ইফতার করতে সময়মতো বাড়িতে পৌঁছাতে পারেন না, তাঁদের জন্য। সেনেগালি প্রথাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সুপরিচিত একটি হলো ‘সুগার কোর’। ভালোবাসা প্রকাশের জন্য প্রিয়জনকে দেওয়া উপহার ‘সুগার কোর’ হিসেবে পরিচিত। দেশটিতে নারীরা স্বামীদের জন্য উপহার কেনায় প্রচুর অর্থ ব্যয় করেন। 

মরক্কো
মরক্কোতে রমজান মাস পরিবারগুলোর সঙ্গে দেখা করার এবং সামাজিকতা রক্ষার সুযোগ করে দেয়। একই পরিবারের বিবাহিত সদস্যরা রমজানের শুক্রবারগুলোতে পারিবারিক বাসভবনে এক হয়। এই বাসভবনকে ‘বড় বাড়ি’ বলা হয়। রমজানে আরেকটি সুন্দর ঐতিহ্য রয়েছে দেশটিতে— বাবা-মা প্রথম রোজা সন্তানদের জন্য পালন করেন। এ দিন দুধ, খেজুর এবং শুকনো ফল ছাড়াও মরক্কোর সুস্বাদু খাবারের সমন্বয়ে একটি বিশেষ ইফতার তৈরি করা হয়। মরক্কোর আরেকটি রীতি হলো রমজানের ২৬তম রাতে লা্লইতুল কদর পালন। এ উপলক্ষে তাঁরা ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরেন এবং ঘোড়ার প্যারেড আয়োজন করা হয়। 

মরক্কোর খাবার বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। রোজায় খেজুর খেয়ে এবং দুধ পান করে মরোক্কোবাসীরা ইফতার শুরু করেন। মাগরিবের নামাজের পর তাঁরা ‘হারিরা’ নামের ঐতিহ্যবাহী স্যুপ খান। তারাবিহ নামাজের পরে প্রধান খাবার পরিবেশন করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে ‘তাজিন’ এবং ‘কুসকুস’। 

তিউনিসিয়া
খেজুর ও দুধ দিয়ে রোজা ভাঙার পর মাগরিবের নামাজ আদায় করেন তিউনিসিয়ার মানুষ। এরপর ইফতার টেবিলে বসার প্রথা তাঁদের। তিউনিসিয়ায় ইফতারের টেবিলের সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার হলো ‘তাজিন’। আর জনপ্রিয় মিষ্টান্ন ‘রাফিস’ ও ‘মাদমউগা’— এটি খেজুর, কিশমিশ, ভাত ও ময়দা দিয়ে তৈরি করা হয়। তিউনিসিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ময়দা, ঘি ও মধু দিয়ে তৈরি পোরিজ বেশ জনপ্রিয়। 

আলজেরিয়া
আলজেরিয়ার বাড়িতে বাড়িতে শিশুদের প্রথম রোজা বিশেষভাবে উদ্‌যাপন করা হয়। মেয়েরা নতুন পোশাক পরে রানির মতো সাজে। তারা ইফতারের সময় একটি উঁচু জায়গায় বসে থাকে, সবাই তাদের অভিনন্দন জানায়। ২৭ রমজানের রাতে ছেলেদের খতনা করার প্রথা রয়েছে।

ইফতারের টেবিলেও নানা পদের খাবার রাখা হয় আলজেরিয়ায়। এর মধ্যে ‘হারিরা’ স্যুপ ও ‘সুইট মিট’ বেশি জনপ্রিয়। এ ছাড়া ‘বারবৌচে’ ও ‘কুসকুস’ ইফতারিতে বেশ জনপ্রিয়। সাহরিতে আলজেরিয়ানরা বেশির ভাগই ‘কুসকুস’ এবং ‘মৌসুফ’ খেয়ে থাকে।

ইরিত্রিয়া 
ইরিত্রিয়ার মানুষ রমজানে সাহরির শেষে এক ধরনের পানীয় পান করেন। চা, কফি, আদা এবং ভাজা এলাচ দিয়ে বানানো ওই পানীয় ‘গাবনা’ নামে মাটির বিশেষ পাত্রে রাখা হয়। এবং কয়েক ধাপে পান করা হয়। এর পাশাপাশি ময়দা, চিনি এবং মার্জারিন দিয়ে তৈরি ‘হিম্বাশা’ নামের এক ধরনের রুটি পরিবেশন করা হয়। রমজানের শেষ ১০ দিন দেশটিতে উৎসব হয়। 

তানজানিয়া
তানজানিয়ার মানুষেরা ১২ বছর বয়স থেকে রোজা রাখা শুরু করে। রমজানে তানজানিয়ায় মুসলমান মালিকানাধীন রেস্তোরাঁগুলো দিনের বেলা বন্ধ থাকে। মাগরিবের নামাজের আজানের আগে মসজিদে ড্রাম পিটিয়ে ইফতারের সময় ঘোষণা করা হয়। তানজানিয়ায় রমজানের খাবারের মধ্যে রয়েছে শরবত, খেজুর এবং নারকেল দেওয়া ভাতের সঙ্গে শাকসবজি ও মাছ। পানীয় হিসেবে ফলের রস ও চা পান করেন তাঁরা।

জিবুতি
হর্ন অব আফ্রিকায় অবস্থিত জিবুতির অধিকাংশ বাসিন্দা আফ্রিকান ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবং ওমান ও ইয়েমেন থেকে আসা অভিবাসী। রমজানে দেশটিতে এক অদ্ভুত রীতি রয়েছে। মাসজুড়ে মাছ খাওয়া বন্ধ করে দেন জিবুতির মানুষেরা। কারণ এটি রোজার সময় তৃষ্ণা বাড়ায়। ইফতারে ‘সাম্বুসা’, ‘হেতিস’, ‘থারিদ’ ও ভেড়ার মাংস খাওয়া হয়। এ ছাড়া দারুচিনি দিয়ে চা পান বেশ জনপ্রিয়। 

কেনিয়া
কেনিয়ায় রমজান মাসে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ শহরগুলোকে রঙিন কাপড় দিয়ে সাজানো হয়। রোজার শুরুতে রাস্তায় ঢাকঢোল বাজিয়ে মুসলমানেরা শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এ ছাড়া সাহরির আগে মুসলমানদের ঘুম থেকে জাগাতে ঢোল পিটিয়ে এবং ইসলামি গান গেয়ে রোজা রাখার আহ্বান জানানো হয়। 

কেনিয়ায় রমজানের ঐতিহ্যবাহী খাবারের মধ্যে অন্যতম মাছ বা মুরগির সঙ্গে নারকেল দিয়ে রান্না করা ভাত। আরেকটি খাবার বেশ জনপ্রিয়— এটি টমেটো ও পেঁয়াজ দিয়ে রান্না করা বাঁধাকপি, যা ‘সোকোমা’ নামে পরিচিত। সাধারণত, এই খাবারগুলো কেনিয়ায় চায়ের সঙ্গে পরিবেশন করা হয়। ফজরের আগে প্রত্যেকে পরের দিন রোজা রাখার প্রস্তুতি হিসেবে বিভিন্ন ধরনের মৌসুমি ফল ও পানির বোতল নিয়ে মসজিদে জড়ো হন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ইসরায়েল কেন প্রথম দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসরায়েলের স্বীকৃতির ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে সোমালিল্যান্ড। ছবি: এএফপি
ইসরায়েলের স্বীকৃতির ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে সোমালিল্যান্ড। ছবি: এএফপি

ইসরায়েল কেন সোমালিয়া থেকে স্বাধীন হতে চাওয়া সোমালিল্যান্ডকে প্রথম দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিল—এই প্রশ্ন ঘিরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়েছে। আফ্রিকার হর্ন অঞ্চলের স্বঘোষিত স্বাধীন রাষ্ট্র সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে ইসরায়েল শুধু একটি কূটনৈতিক সিদ্ধান্তই নেয়নি, বরং মধ্যপ্রাচ্য ও লোহিত সাগর ঘিরে চলমান ভূরাজনৈতিক উত্তেজনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই স্বীকৃতির পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক—এই তিনটি প্রধান কারণ। সোমালিল্যান্ডের অবস্থান অত্যন্ত কৌশলগত। এটি এডেন উপসাগরের তীরে অবস্থিত এবং ইয়েমেনের খুব কাছেই, যেখানে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা সক্রিয়। চলতি বছরে হুতি ও ইসরায়েলের মধ্যে একাধিকবার হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে। গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের প্রতিবাদে হুতিরা লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা চালায়। জবাবে ইয়েমেনের সানা ও হোদেইদায় হুতি নিয়ন্ত্রিত এলাকায় হামলা চালায় ইসরায়েল।

এই প্রেক্ষাপটে ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউটের গবেষক ডেভিড মাকোভস্কি প্রশ্ন তুলেছেন—সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে কি ইসরায়েল সেখানে সামরিক সুবিধা বা গোয়েন্দা উপস্থিতির পথ খুলেছে? বিশেষ করে হুতি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র মোকাবিলায় এটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

ইসরায়েলের গণমাধ্যম ‘চ্যানেল ১২’ জানিয়েছে, সোমালিল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আব্দিরাহমান মোহাম্মদ আবদুল্লাহি গোপনে একাধিকবার ইসরায়েল সফর করেছেন। গত অক্টোবরে তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ ও মোসাদের প্রধান ডেভিড বারনিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পরে নেতানিয়াহু এই স্বীকৃতির ক্ষেত্রে মোসাদের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন।

তবে এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছে সোমালিয়া ও আফ্রিকান ইউনিয়ন। মিসর ও ফিলিস্তিনসহ কয়েকটি আরব দেশও এর সমালোচনা করেছে। অতীতে গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের জোর করে সোমালিল্যান্ডে স্থানান্তরের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল, যদিও সোমালিল্যান্ডের কর্মকর্তারা এই ধরনের কোনো যোগাযোগের কথা অস্বীকার করেছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি ইসরায়েলের জন্য অর্থনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। সোমালিল্যান্ডের বন্দরনগরী বেরবেরা ইসরায়েলকে লোহিত সাগরে প্রবেশের সুযোগ দিতে পারে। এমন হলে বৈশ্বিক বাণিজ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাব আল-মানদেব প্রণালির ওপর নজরদারি চালাতে পারবে ইসরায়েল। তবে সব মিলিয়ে, সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিয়ে ইসরায়েল ইতিহাস তৈরি করলেও এর পূর্ণ প্রভাব ও ফলাফল এখনো স্পষ্ট নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

২০২৫ সালের সেরা সিইও কে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: দ্য ইকোনমিস্ট
ছবি: দ্য ইকোনমিস্ট

২০২৫ সাল ছিল বিশ্ব করপোরেট নেতৃত্বের জন্য এক কঠিন পরীক্ষার বছর। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার ফলে শুরু হয় নতুন বাণিজ্যযুদ্ধ ও অনিশ্চিত নীতিনির্ধারণ। একই সঙ্গে চীন ও পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে প্রযুক্তিগত আধিপত্যের লড়াই আরও তীব্র হয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নিয়ে বিপুল প্রত্যাশা থাকলেও, সেটিকে লাভজনক ব্যবসায় রূপ দেওয়ার কাজ অনেক সিইওর জন্য হতাশাজনকই থেকে যায়।

তবে এই অস্থিরতার মধ্যেও কিছু প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ব্যতিক্রমী সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছেন। টানা তৃতীয়বারের মতো ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ এবারও (২০২৫ সাল) সেরা সিইও নির্বাচন করেছে। এ ক্ষেত্রে এসঅ্যান্ডপি ১২০০ সূচকের অন্তর্ভুক্ত কোম্পানিগুলোকে তাদের খাতভিত্তিক গড়ের তুলনায় অতিরিক্ত শেয়ারহোল্ডার রিটার্নের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হয়েছে। আর তিন বছরের কম সময় দায়িত্বে থাকা সিইওদের বাদ দিয়ে শীর্ষ ১০ জনকে প্রাথমিক তালিকায় রাখা হয়।

এই তালিকায় ছিলেন—জার্মান অস্ত্র নির্মাতা রাইনমেটালের আরমিন পাপারগার, স্বর্ণখনি জায়ান্ট নিউমন্টের টম পামার, ফুজিকুরার ওকাদা নাওকি, ওয়ার্নার ব্রাদার্স ডিসকভারির ডেভিড জাসলাভ, হানহা অ্যারোস্পেসের সন জে-ইল, মাইক্রনের সঞ্জয় মেহরোত্রা, কিনরস গোল্ডের জে পল রোলিনসন, রবিনহুডের ভ্লাদিমির টেনেভ, এসকে হাইনিক্সের কাক নো-জং এবং সিগেট টেকনোলজির ডেভ মসলে।

তবে অতীতের দুর্বল পারফরম্যান্স, করপোরেট গভর্ন্যান্স সমস্যা কিংবা নিছক সৌভাগ্যের কারণে অনেকেই চূড়ান্ত বিবেচনা থেকে বাদ পড়েছেন। স্বর্ণের দাম প্রায় ৬৫ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় খনি কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর বাড়লেও, সেটিকে সিইওদের কৃতিত্ব হিসেবে ধরা হয়নি। মেমোরি চিপ খাতে এআই বুমের সুফল পেলেও, সেখানে এসকে হাইনিক্সের গবেষণা ও উন্নয়নে ধারাবাহিক বিনিয়োগ আলাদা করে প্রশংসা কুড়িয়েছে।

সবশেষে ২০২৫ সালের সেরা সিইও হিসেবে রাইনমেটালের আরমিন পাপারগারকেই বেছে নিয়েছে ‘দ্য ইকোনমিস্ট’। তাঁর নেতৃত্বে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশসহ ১৫৮ শতাংশ রিটার্ন দিয়েছে। ইউরোপের প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধির সুযোগ কাজে লাগিয়ে রাইনমেটাল বড় বড় চুক্তি জয় করেছে এবং নৌযান নির্মাণ খাতেও সম্প্রসারণে নেমেছে। ২০১৩ সাল থেকে দায়িত্বে থাকা পাপারগার ইউক্রেন যুদ্ধের আগেই ইউরোপের প্রতিরক্ষা শিল্পের সম্ভাবনা অনুধাবন করেছিলেন। দূরদর্শিতা, সাহস ও দৃঢ় নেতৃত্বের ফলেই ২০২৫ সালের সেরা সিইওর স্বীকৃতি তাঁর হাতেই উঠেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

এবার ট্রাম্প ও জেলেনস্কির বৈঠক—কী আছে সর্বশেষ ২০ দফা শান্তি প্রস্তাবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সিএনএন
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সিএনএন

ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানে একটি ২০ দফা শান্তি প্রস্তাবকে সামনে রেখে রোববার (২৮ ডিসেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি। জেলেনস্কির কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এই খসড়া প্রস্তাবকে তিনি ভবিষ্যতে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শেষ করার একটি সম্ভাব্য ভিত্তি হিসেবে দেখছেন।

এর আগে ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২৮ দফার একটি খসড়া প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চললেও সেটিকে রাশিয়ার দাবির প্রতি অতিরিক্ত সহানুভূতিশীল মনে করা হয়েছিল। কয়েক সপ্তাহের আলোচনার পর প্রস্তাবটি সংশোধন করে ২০ দফায় নামিয়ে আনা হয়। জেলেনস্কি জানিয়েছেন, অধিকাংশ বিষয়ে পক্ষগুলোর অবস্থান অনেকটাই কাছাকাছি এসেছে। তবে এখনো দুটি ইস্যুতে ঐকমত্য হয়নি—ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ এবং জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকানা ও পরিচালনা।

প্রস্তাবনার শুরুতেই ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব পুনর্ব্যক্ত করার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ ও নিঃশর্ত আগ্রাসনবিরোধী চুক্তির প্রস্তাব রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি শান্তি বজায় রাখতে সীমান্তবর্তী সংঘর্ষরেখা নজরদারির জন্য মহাকাশভিত্তিক মানববিহীন প্রযুক্তি ব্যবহারের কথাও এতে অন্তর্ভুক্ত আছে।

এই কাঠামো অনুযায়ী, ইউক্রেন তার সশস্ত্র বাহিনীর বর্তমান শক্তি—প্রায় ৮ লাখ সেনা—অক্ষুণ্ন রাখবে। যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো ও ইউরোপীয় দেশগুলো ন্যাটোর অনুচ্ছেদ ৫-এর আদলে ইউক্রেনকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেবে। অপরদিকে ইউক্রেন ও ইউরোপের বিরুদ্ধে আগ্রাসন না করার নীতি নিজ দেশের আইনে এবং পার্লামেন্টের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন দিতে হবে রাশিয়াকে।

অর্থনৈতিক দিক থেকে ইউক্রেনের জন্য রয়েছে বড় পরিসরের পুনর্গঠন ও উন্নয়ন পরিকল্পনা। ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল পুনর্গঠন, মানবিক সহায়তা এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য একাধিক তহবিল গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যার লক্ষ্য প্রায় ৮০০ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ। ইউক্রেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ পাবে এবং অস্থায়ীভাবে ইউরোপীয় বাজারে বিশেষ সুবিধা ভোগ করবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি দ্রুত সম্পন্ন করার কথাও বলা হয়েছে।

সবচেয়ে জটিল ইস্যু হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে ভূখণ্ড প্রশ্ন। রাশিয়া দোনেৎস্ক অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় সেনা প্রত্যাহার চায়, অন্যদিকে ইউক্রেন বর্তমান যুদ্ধরেখায় সংঘর্ষ বন্ধের পক্ষে। যুক্তরাষ্ট্র এখানে একটি নিরস্ত্রীকৃত অঞ্চল ও মুক্ত অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রস্তাব দিয়েছে।

যুদ্ধবন্দীর মতো মানবিক বিষয়ে ‘সবার বিনিময়ে সবার মুক্তি’, আটক বেসামরিক নাগরিক ও শিশুদের ফেরত এবং যুদ্ধাহতদের সহায়তার কথা রয়েছে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর দ্রুত নির্বাচন আয়োজন করবে ইউক্রেন।

এই শান্তিচুক্তি আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক হবে এবং এর বাস্তবায়ন তদারক করবে একটি ‘পিস কাউন্সিল’, যার সভাপতিত্ব করবেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সব পক্ষ একমত হলে সঙ্গে সঙ্গে পূর্ণ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে—এমনটাই বলা হয়েছে এই ২০ দফা প্রস্তাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

৪০ শতাংশ জার্মান মনে করেন মার্জের সরকার টিকবে না

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
জার্মানির বর্তমান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্জ। ছবি: এএফপি
জার্মানির বর্তমান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্জ। ছবি: এএফপি

জার্মানির বর্তমান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্জের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ২০২৯ সাল পর্যন্ত তাদের পূর্ণ মেয়াদ শেষ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে দেশটির নাগরিকদের একটি বড় অংশের মধ্যে গভীর সংশয় দেখা দিয়েছে। গতকাল শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) প্রকাশিত একটি জনমত জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ৪০ শতাংশ জার্মান নাগরিক মনে করেন, এই সরকার নির্ধারিত সময়ের আগেই ভেঙে যেতে পারে।

২০২৫ সালের মে মাসে জার্মানির চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন ফ্রিডরিখ মার্জ। তবে বছর শেষ হতে না হতেই তাঁর সরকারের জনপ্রিয়তা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বলে জানিয়েছে জনপ্রিয় জার্মান সংবাদমাধ্যম ওয়েল্ট অ্যাম সোনটাগ (Welt am Sonntag)।

জনমত জরিপ পরিচালনাকারী সংস্থা ‘ইউগভ’ জার্মান সরকারকে নিয়ে জরিপটি করে। ১৭ থেকে ১৯ ডিসেম্বরের মধ্যে ১ হাজার ১০ জন অংশগ্রহণকারীর ওপর এই জরিপ চালানো হয়।

ইউগভের তথ্যমতে, ৩৭ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন—রক্ষণশীল খ্রিষ্টান সোশ্যাল ইউনিয়ন (সিএসইউ) ও তার সহযোগী দল খ্রিষ্টান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ) এবং মধ্য-বাম সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এসডিপি) সমন্বয়ে গঠিত এই জোট সরকারের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন (২০২৯) পর্যন্ত ক্ষমতায় টিকে থাকার সম্ভাবনা ‘খুবই কম’।

অন্য দিকে ৫৩ শতাংশ নাগরিক বিশ্বাস করেন, মার্জ সরকার তাদের পূর্ণ মেয়াদ শেষ করতে পারবে। অন্য ৯ শতাংশ কোনো নিশ্চিত মতামত দেয়নি।

জরিপে আরও দেখা গেছে, সাবেক পূর্ব জার্মানির রাজ্যগুলোতে সরকারের প্রতি অনাস্থা সবচেয়ে বেশি (৪২ শতাংশ), যেখানে পশ্চিম জার্মানিতে এই হার ৩৬ শতাংশ।

জরিপ সংস্থা ‘ইনসা’র অন্য একটি জরিপে দেখা গেছে, চ্যান্সেলর হিসেবে ফ্রিডরিখ মার্জের কাজে সন্তুষ্ট মাত্র ২২ শতাংশ জার্মান। এই ফলাফল মূলত জোটের স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপের মুখে নেতৃত্বের অভাব নিয়ে জনগণের ক্রমবর্ধমান উদ্বেগেরই প্রতিফলন।

উল্লেখ্য, ২০২৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি জার্মানিতে আগাম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ফ্রিডরিখ মার্জের সিডিইউ/সিএসইউ জোট ২৮ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হয়। অন্য দিকে উগ্র ডানপন্থী দল অলটারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি) রেকর্ড ২০ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে চলে আসে। আর ওলাফ শোলৎজের দল এসডিপি মাত্র ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট পায়, যা তাদের ইতিহাসে সর্বনিম্ন।

তবে এসপিডি বড় ধরনের হারের মুখ দেখলেও সিডিইউ/সিএসইউ জোটের সঙ্গে মিলে সরকার গঠন করে, যার ফলে সাবেক চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজের দল পুনরায় মন্ত্রিসভায় ফেরার সুযোগ পায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত