Ajker Patrika

১০০ বছর পর জানা গেল, ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৮: ৩৩
ডিম্বাশয়ের কার্যক্রম এবং নারীর প্রজনন ক্ষমতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে রেটি ওভারিই। ছবি: সংগৃহীত
ডিম্বাশয়ের কার্যক্রম এবং নারীর প্রজনন ক্ষমতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে রেটি ওভারিই। ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘদিন ধরে নারীদেহের এক প্রত্যঙ্গকে ‘অপ্রয়োজনীয়’ বলে মনে করা হতো। তবে নতুন এক গবেষণায় জানা যায়, এই প্রত্যঙ্গই নারীর ডিম্বাশয়ের বিকাশ ও প্রজনন ক্ষমতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এই প্রত্যঙ্গের নাম ‘রেটি ওভারিই’ (rete ovarii)। এটি মানুষের দেহে আবিষ্কৃত হয়েছিল ১৮৭০ সালে। তবে তখন থেকেই একে ভেস্টিজিয়াল কাঠামো হিসেবে বিবেচনা করা হতো, যা প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের জন্য ‘অপ্রয়োজনীয়’। আগে মনে করা হতো—ভেস্টিজিয়াল অ্যানাটমিক্যাল গঠন বা ‘ভেস্টিজেস’ হলো শরীরের এমন কিছু প্রত্যঙ্গ, যা একসময় দেহের গুরুত্বপূর্ণ কাজ করলেও মানব বিবর্তনের ধারায় ধীরে ধীরে এখন প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে। তবে এই ধারণা ভুল প্রমাণিত করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের গবেষকদের সাম্প্রতিক গবেষণা।

গত ১৯ মার্চ ইলাইফ জার্নালে প্রকাশিত নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে, রেটি ওভারিই আসলে ডিম্বাশয়ের কার্যক্রম এবং নারীর প্রজনন ক্ষমতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, এই গঠনটির রয়েছে তিনটি স্বতন্ত্র অংশ এবং এটি হরমোনের সংকেতে সাড়া দিতে পারে।

গবেষণাপত্রে বলা হয়, ‘নারী প্রজননতন্ত্র বলতে সাধারণত আমরা যোনি মুখ, যোনি, জরায়ুমুখ, জরায়ু, ডিম্বনালি এবং ডিম্বাশয়কে বুঝি। তবে এই গবেষণার মাধ্যমে করছি, রেটি ওভারিইকেও এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হোক এবং নারীর প্রজননতন্ত্রের একটি অতিরিক্ত উপাদান হিসেবে এর ওপর আরও গবেষণা পরিচালনা প্রয়োজন।’

গবেষণাটি ইঁদুরের ওপর ভিত্তি করে পরিচালনা করা হলেও এটি মানুষের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ গরু, বিড়াল, ছাগল, শূকর, কুকুর ও বানরের মতো আরও অনেক স্তন্যপায়ী প্রাণীর দেহেও একই ধরনের গঠন রয়েছে। এ ছাড়া, যৌনাঙ্গের প্রাথমিক বিকাশের ক্ষেত্রে মানুষ ও ইঁদুরের ‍অনেকটাই মিল রয়েছে। ফলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই গঠন এবং এর বিকাশজনিত সংকেতগুলো মানুষের ক্ষেত্রেও একই রকম হতে পারে।

রেটি ওভারিই হলো একটি অশ্বাকৃতি (ঘোড়ার খুরের মতো) নালির জাল, যা ডিম্বাশয়ের নিচে অবস্থান করে—ঠিক সেই জায়গায়, যেখান দিয়ে রক্তনালি ও স্নায়ু ডিম্বাশয়ে প্রবেশ করে। এই গঠনটি বিভিন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে পাওয়া গেলেও মানুষের দেহে প্রথম আবিষ্কৃত হওয়ার সময় একে অকার্যকর প্রত্যঙ্গ বলে ধরে নিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা।

ল্যাঙ্কাস্টার ইউনিভার্সিটির অ্যানাটমি বিভাগের অধ্যাপক অ্যাডাম টেলর বলেন, ‘১৮০০ শতকের শেষ দিকে যখন এই গঠনটি প্রথম আবিষ্কৃত হয়, তখন মনে করা হয়েছিল এর কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। কারণ, বিজ্ঞানীরা তখন শরীরের ভেতরে এর কার্যকারিতা দেখতে পাননি।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘সেই সময় বিজ্ঞানীদের কাছে আজকের মতো উন্নত ইমেজিং, মাইক্রোস্কোপিক এবং মলিকুলার প্রযুক্তি ছিল না। এখন আমরা রক্তপ্রবাহের পরিবর্তন, দেহের অভ্যন্তরীণ গঠনের আকারে পরিবর্তন বা রেটি ওভারিই থেকে উৎপন্ন প্রোটিন শনাক্ত করতে পারি। সেই সঙ্গে শরীরের অন্যান্য অংশের পরিচিত প্রোটিনের সঙ্গেও তুলনা করার সক্ষমতা রয়েছে।’

নতুন গবেষণাপত্রে আধুনিক বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে রেটি ওভারিই (আরও) সম্পর্কে নতুন অন্তর্দৃষ্টি পেয়েছেন গবেষকেরা। কিছু পরীক্ষায় জীবিত ইঁদুর ব্যবহার করা হয়, যাতে গর্ভকালীন অবস্থায় রেটি ওভারিই কীভাবে বিকশিত হয়, তা সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা যায়। অন্যদিকে, পরীক্ষার জন্য মৃত ইঁদুরের দেহ থেকে কিছু টিস্যু সংগ্রহ করা হয়।

গবেষণায় দেখা যায়, রেটি ওভারিই মূলত তিনটি স্বতন্ত্র অঞ্চলে বিভক্ত, যেগুলো ভ্রূণের বিকাশকালেই পরিপক্ব হয় এবং পরবর্তীতে প্রাপ্তবয়স্ক দেহেও সংরক্ষিত থাকে। এই তিনটি অঞ্চল হলো—

ইন্ট্রাওভারিয়ান রেটি (আইওআর)–যা ডিম্বাশয়ের ভেতরে অবস্থিত

এক্সট্রাওভারিয়ান রেটি (ইওআর)–সর্পিল নালির গঠনবিশিষ্ট, যার এক প্রান্তে বলয় তৈরি হয়

কানেকটিং রেটি (সিআর)–আইওআর ও ইওআরের মধ্যবর্তী একটি সংযোগকারী অঞ্চল

ম্যাস স্পেকট্রোমেট্রি (অণু শনাক্ত ও পরিমাণ নির্ধারণের পদ্ধতি) ব্যবহার করে গবেষকেরা দেখেন যে ইঁদুরের জন্মের সময় ইওআর অংশের নালির মধ্যে হাজার হাজার প্রোটিন থাকে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—এই প্রোটিনগুলো বাইরে থেকে আসে না। ইওআর-এর নিজস্ব কোষগুলোই এগুলো উৎপাদন করে। এই প্রোটিনগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো—ইনসুলিন-লাইক গ্রোথ ফ্যাক্টর বাইন্ডিং প্রোটিন ২ (আইজিএফবিপি২)।

গবেষকদের ধারণা, প্রোটিনটি (আইজিএফবিপি২) ডিম্বাশয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এটি ইনসুলিন-সদৃশ গ্রোথ ফ্যাক্টর (আইজিএফ) নামক উপাদানের কার্যকারিতা ও উপস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। আইজিএফ এর গঠন অনেকটা ইনসুলিনের মতো। এটি ডিম্বাশয়ে অপরিণত ডিম্বাণু এবং হরমোন বহনকারী ফলিকলগুলো বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

গবেষণায় ফ্লোরোসেন্ট ডাই (অন্ধকারেও জ্বলজ্বল করে এমন রং) ব্যবহার করে দেখা গেছে, ইওআর-এর মধ্যে দিয়ে যে তরল প্রবাহিত হয় তা ডিম্বাশয়ের দিকে চলে যায়। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, এই প্রত্যঙ্গটি ডিম্বাশয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ভূমিকা রাখতে পারে।

এ ছাড়া ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরনের মতো হরমোনের রিসেপ্টর তৈরির জিন সক্রিয় করে রেটি ওভারিইর, যা নারীর প্রজনন ও ঋতুচক্র নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, রেটি ওভারিই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে পারে—ডিম্বাশয়ের আশপাশের পরিবেশ ঠিক রাখা, তরলের চলাচল বুঝতে পারা এবং হরমোন ও স্নায়ুর সংকেত গ্রহণ করে তা ডিম্বাশয়ে পৌঁছে দেওয়া। গবেষকদের ভাষায়, এটি এমন একটি গঠন, যা শরীরের সংকেত ধরার অ্যানটেনার মতো কাজ করে।

এই গবেষণা ভবিষ্যতে নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত রোগ বুঝতে ও চিকিৎসায় নতুন দিক উন্মোচন করতে পারে।

তথ্যসূত্র: লাইভ সায়েন্স

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ওজন কমাতে অনুপ্রেরণা ধরে রাখবেন যেভাবে

ফিচার ডেস্ক
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ২৫
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ওজন কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া যেমন কঠিন, সেই সিদ্ধান্তে দীর্ঘদিন অটল থাকা অনেকের ক্ষেত্রে আরও কঠিন। সঠিক অনুপ্রেরণা না থাকলে ওজন কমানো শুরু করাই কঠিন হয়ে পড়ে। আর শুরু করলেও মাঝপথে থেমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। তবে কিছু বাস্তবসম্মত কৌশল অনুসরণ করলে ওজন কমানোর লক্ষ্য অর্জন সহজ হতে পারে।

নিজেকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি না ভাঙা

ওজন কমানোর ক্ষেত্রে নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া বেশ ভূমিকা রাখতে পারে। কেউ কেউ লিখিত পরিকল্পনা বা অ্যাপের মাধ্যমে প্রতিদিনের লক্ষ্য ঠিক করেন। আবার কেউ জিমের সদস্যপদ বা ব্যায়াম ক্লাসে ভর্তি হয়ে নিজেকে দায়বদ্ধ করে তোলেন। এতে মাঝপথে হাল ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতা কমে।

জীবনযাপনের সঙ্গে মানানসই পরিকল্পনা বেছে নেওয়া

যে ডায়েট বা ব্যায়াম পরিকল্পনা দীর্ঘদিন মেনে চলা সম্ভব নয়, তা এড়িয়ে চলা ভালো। অতিরিক্ত কঠোর নিয়ম অথবা সবকিছু একেবারে বাদ দেওয়ার মানসিকতা অনেক সময় উল্টো ফল বয়ে আনে। বরং ক্যালরি নিয়ন্ত্রণ, খাবারের পরিমাণ কমানো, অতি প্রক্রিয়াজাত খাবার কম খাওয়া এবং বেশি করে ফল ও সবজি অন্তর্ভুক্ত করার মতো অভ্যাসগুলো দীর্ঘ মেয়াদে উপকারী।

পছন্দের ব্যায়াম খোঁজা

ওজন কমাতে শারীরিক কার্যকলাপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে যে ব্যায়াম আপনার ভালো লাগে না, তা বেশি দিন চালিয়ে যাওয়া কঠিন। হাঁটা, সাঁতার, নাচ, সাইক্লিং কিংবা জিম—যে ধরনের ব্যায়াম উপভোগ করেন, সেটিই বেছে নেওয়া ভালো।

যে বিষয়গুলো অনুপ্রেরণা জোগায়

ওজন কমানোর পুরো যাত্রায় শুধু শেষ লক্ষ্যের দিকে তাকিয়ে থাকলে হতাশা আসতে পারে। তাই ছোট ছোট প্রক্রিয়াগত লক্ষ্য ঠিক করা জরুরি। যেমন সপ্তাহে নির্দিষ্ট কয়েক দিন ব্যায়াম করা বা প্রতিটি খাবারে সবজি রাখা। এসব লক্ষ্য পূরণ হলে আত্মবিশ্বাস বাড়ে। নিজের অগ্রগতি লিখে রাখাও গুরুত্বপূর্ণ। খাবার ও দৈনন্দিন অভ্যাসের হিসাব রাখলে কোথায় ভুল হচ্ছে কিংবা কোন অভ্যাস ওজন বাড়াচ্ছে, তা সহজে ধরা পড়ে।

সামাজিক সহায়তা এবং ইতিবাচক মনোভাব

পরিবার ও বন্ধুদের নিজের লক্ষ্য জানালে তারা মানসিক সমর্থন দিতে পারে। কেউ কেউ ওজন কমানোর সঙ্গী পেলে আরও অনুপ্রাণিত বোধ করে। পাশাপাশি নিজের সঙ্গে ইতিবাচকভাবে কথা বলা এবং পরিবর্তনের প্রতি দৃঢ় মনোভাব রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

বাধা এলে যা করতে হবে

জীবনে নানা ধরনের চাপ এবং সামাজিক অনুষ্ঠানের কারণে পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতির জন্য আগেই মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকলে আবার সঠিক পথে ফেরা সহজ হয়। নিখুঁত হওয়ার চেষ্টা না করে নিজের ভুল মেনে নেওয়া এবং নিজেকে ক্ষমা করাও অনুপ্রেরণা ধরে রাখতে সহায়ক।

ওজন কমানোর ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণাই সবচেয়ে বড় শক্তি। সবার অনুপ্রেরণার উৎস এক নয়। তাই নিজের জন্য কার্যকর পদ্ধতি খুঁজে নেওয়াই হলো মূল চাবিকাঠি।

তবে ধৈর্য ধরুন, ছোট ছোট সাফল্য উদ্‌যাপন করুন

এবং প্রয়োজনে সাহায্য চাইতে সংকোচ করবেন না। সঠিক পরিকল্পনা ও সমর্থন থাকলে ওজন কমানোর লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব।

সূত্র: হেলথ লাইন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শীতে থাইরয়েড রোগীরা যা করবেন

ডা. মো. মাজহারুল হক তানিম 
শীতে থাইরয়েড রোগীরা যা করবেন

থাইরয়েড হরমোন আমাদের গলার সামনে থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত একধরনের হরমোন কিংবা প্রাণরস। এটি গলার সামনে থেকে নিঃসৃত হলেও সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং পুরো শরীরে কাজ করে।

হাইপোথাইরয়েডিজমের লক্ষণ

  • ওজন বেড়ে যাওয়া
  • ঘুম কম হওয়া
  • শীত শীত ভাব
  • সন্তান ধারণে সমস্যা
  • বিষণ্নতা

শীতকালীন সবজি খাওয়ায় সতর্কতা

কাবেজ জাতীয় সবজি; যেমন ফুলকপি, বাঁধাকপি, লেটুসপাতায় থাকে গয়ট্রোজেন নামে একধরনের উপাদান। এটি থাইরয়েড হরমোন তৈরিতে বাধা দিয়ে থাকে। তাই যাঁদের হাইপোথাইরয়েড আছে, তাঁদের এসব সবজি কাঁচা অবস্থায় খাওয়া যাবে না। কিন্তু রান্না করে অল্প খাওয়া যাবে।

শীতকালে থাইরয়েড রোগীদের হরমোনের চাহিদা বেড়ে যায়। তাই অতিরিক্ত দুর্বল লাগে, ঠান্ডা ভাব এবং কাজের গতি ধীর হতে পারে।

শীতকালে থাইরয়েড রোগীদের করণীয়

গরম থাকার চেষ্টা করুন: জ্যাকেট কিংবা কম্বল ইত্যাদির মতো গরম কাপড় ব্যবহার করতে হবে। গরম খাবার বেশি খেতে হবে; যেমন স্যুপ কিংবা চা।

ভিটামিন ‘ডি’ বাড়ান: সকাল ৯ থেকে ১০টার দিকে রোদে থাকার চেষ্টা করুন। ভিটামিন ‘ডি’ লেভেল বেশি কম থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে ভিটামিন ‘ডি’ সাপ্লিমেন্ট নিতে পারেন।

খাদ্যাভ্যাস: পর্যাপ্ত পানি পান করুন। ভিটামিন ‘সি ও বি’ সমৃদ্ধ এবং প্রোটিনযুক্ত খাবার বেশি খেতে হবে। প্রক্রিয়াজাত খাবার কম খান।

মন নিয়ন্ত্রণ করুন: মুড সুইং খুবই সাধারণ বিষয় থাইরয়েড রোগীদের জন্য। তাই নিজের মন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এ ছাড়া প্রফুল্ল থাকার চেষ্টা করুন, কর্মঠ থাকুন, দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলুন। প্রয়োজনে লাইট থেরাপি নিতে পারেন।

শীতে থাইরয়েড রোগীদের ত্বকের যত্ন

থাইরয়েড রোগীদের ত্বক স্বভাবতই শুষ্ক থাকে। শীতকালে তা আরও শুষ্ক হয়ে ওঠে। তাই শীতকালে গোসলের পর ময়শ্চারাইজার, লোশন কিংবা ক্রিম নিয়মিত ব্যবহার করুন। ত্বকে চুলকানি অথবা র‍্যাশ থাকলে চর্ম ও যৌন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেবেন।

নিয়মিত ফলোআপ

৩ থেকে ৬ মাস পরপর আপনার হরমোন ও থাইরয়েড, বিশেষত এন্ডোক্রাইনোলজিস্টের পরামর্শ নিন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধের মাত্রা কম কিংবা বেশি করা যাবে না।

এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট, ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতাল, কাকরাইল, ঢাকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সবজির পুষ্টিগুণ পাওয়ার সঠিক উপায়

মো. ইকবাল হোসেন
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ১৩
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সুষম খাবারের ৬টি উপাদানের অন্যতম ভিটামিন ও খনিজ লবণ। এগুলো আমাদের শরীরের চালিকাশক্তির অন্যতম উপাদান হিসেবে বিবেচিত। শরীরের একেকটি অঙ্গের সুরক্ষায় একেক ধরনের ভিটামিন প্রয়োজন হয়। যেমন চুল ও চোখের সুরক্ষায় ভিটামিন ‘এ’, ত্বকের সুরক্ষায় ভিটামিন ‘বি’ ও ‘সি’, হাড় ও দাঁতের সুরক্ষায় ভিটামিন ‘ডি’ প্রয়োজন হয়। আবার ত্বক, চুল ও প্রজননতন্ত্রের সুরক্ষায় ভিটামিন ‘ই’-এর ভূমিকা অনেক বেশি। এ ছাড়া শরীরের বিভিন্ন রকমের পেশি এবং স্নায়ুতন্ত্রের সুরক্ষায় খনিজ লবণের ভূমিকা অনেক বেশি।

এই ভিটামিন ও খনিজ লবণগুলো আমরা প্রধানত শাকসবজি ও ফলমূল থেকে পেয়ে থাকি। কিন্তু কিছু অসাবধানতার ফলে শাকসবজি ও ফলমূলের পুষ্টির একটা বড় অংশ হারিয়ে যায়।

শাকসবজি কাটার পরে ধোয়া

আমরা ঐতিহ্যগতভাবে শাকসবজি কাটার পর পানি দিয়ে কয়েকবার ধুয়ে থাকি। এতে পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন ‘বি ও সি’ পানির সঙ্গে মিশে শাকসবজির বাইরে চলে যায়। ফলে আমরা ওই শাকসবজি থেকে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ লবণ পাই না। তাই সেগুলো কাটা বা খোসা ছাড়ানোর আগে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। এতে ময়লা পরিষ্কারের পাশাপাশি সব পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্ন থাকবে। শাকসবজি কাটার আগে বঁটি, ছুরি বা গ্রেটারও খুব ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।

অনেক সময় ধরে রান্না করা

শাকসবজি রান্নার নামে দীর্ঘ সময় আগুনের তাপে রাখা যাবে না। অল্প তাপেই শাকসবজিতে থাকা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু মারা যায়। এগুলো যত কম সময় সেদ্ধ করা হবে, তত বেশি পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্ণ থাকবে। যেমন দীর্ঘ সময় ধরে রান্না করলে শাকসবজির প্রায় ৫০ শতাংশ পটাশিয়াম নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু এটি শরীরের জন্য অতিপ্রয়োজনীয় খনিজ। ফলে অল্প আঁচে ভাপানো শাকসবজি খাওয়া ভালো।

শাকসবজির রং বজায় রাখুন

প্রতিটি শাকসবজির নিজস্ব রং বজায় রেখে রান্না করলে তার পুষ্টিগুণ বেশি বজায় থাকবে। যেমন গাজর রান্নার পর লাল রং, শিম রান্নার পর সবুজ রং কিংবা ফুলকপির সাদা রং বজায় থাকতে হবে। রান্না করতে গিয়ে শাকসবজির রং যত নষ্ট হবে, তার পুষ্টিগুণ তত বেশি নষ্ট হবে।

কাটার পর দ্রুত রান্না করুন

অনেক সময় রাতে শাকসবজি কেটে রেখে দেওয়া হয় সকালে রান্না করার জন্য। অথবা সকালে কেটে রাখি দুপুরে রান্না করার জন্য। এভাবে দীর্ঘ সময় কেটে রেখে দিলে শাকসবজির কাটা অংশ বাতাসের সংস্পর্শে এসে জারণ-বিজারণ বিক্রিয়ার মাধ্যমে পুষ্টিগুণ নষ্ট করে। এভাবে কেটে রাখা শাকসবজিতে বিষক্রিয়াও হতে পারে। তাই এর সঠিক পুষ্টিগুণ বজায় রাখতে রাতে কেটে না রেখে রান্নার আগে কেটে দ্রুত রান্না করুন।

ধারালো বঁটি বা ছুরি ব্যবহার করুন

শাকসবজি কাটার কাজে ধারালো বঁটি অথবা ছুরি ব্যবহার করতে হবে। ভোঁতা বঁটি বা ছুরি দিয়ে এগুলো কাটার পর অনেক প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান নষ্ট হতে পারে। এ ছাড়া ভোঁতা বঁটি বা ছুরি দিয়ে কেটে রাখা শাকসবজিতে দ্রুত ব্যাকটেরিয়া কিংবা ছত্রাকের আক্রমণ হতে পারে।

বড় টুকরা করে কাটুন

সবজি ছোট টুকরা করে না কেটে যথাসম্ভব বড় টুকরা করে কাটবেন। ছোট টুকরা করে কাটলে তাপে বেশি পরিমাণে পুষ্টিগুণ নষ্ট হতে পারে। কিন্তু টুকরা বড় রাখলে বেশি তাপে রান্নায়ও ভেতরের পুষ্টিগুণ সহজে নষ্ট হয় না।

খোসাসহ রান্না করতে হবে

গাজর, পটোল, লাউ, শসা, মিষ্টিকুমড়ার মতো সবজিগুলো খোসাসহ রান্না করতে হবে। এসব সবজির খোসায়ও অনেক ভিটামিন ও মিনারেল থাকে।

ভাজা ভাজা করবেন না

শাকসবজি ভাজা ভাজা না করে রান্না করে খেলে বেশি পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়। প্রথমত ভাজা করতে হলে খুব ছোট টুকরা করে কাটতে হয়। দ্বিতীয়ত ভাজি করতে হলে দীর্ঘ সময় তাপে রাখতে হয়। এই দুটি বিষয় শাকসবজির পুষ্টিগুণ অনেক কমিয়ে দেয়। তাই এগুলো ঝোল করে রান্না করে খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।

জ্যেষ্ঠ পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকির কারণে শিশুর মস্তিষ্কে আঘাত

ডা. মো. আরমান হোসেন রনি 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ঝাঁকির কারণে শিশুর মস্তিষ্কে আঘাত বা শেকেন বেবি সিনড্রোম হলো শিশু নির্যাতনের একটি মারাত্মক ও জীবনঘাতী রূপ। এটি প্রধানত ২ বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে দেখা যায়। এই অবস্থায় শিশুকে জোরে জোরে ঝাঁকানোর ফলে মস্তিষ্ক, চোখ ও ঘাড়ে গুরুতর আঘাত সৃষ্টি হয়, যদিও বাহ্যিকভাবে অনেক সময় কোনো আঘাতের চিহ্ন না-ও থাকতে পারে।

কারণ

শিশুর অতিরিক্ত কান্না, বিরক্তি কিংবা অস্থিরতার কারণে অভিভাবক বা পরিচর্যাকারীর রাগ এ ঘটনার জন্য বিশেষভাবে দায়ী। এই অবস্থায় শিশুকে ঝাঁকালে তাদের ঘাড়ের পেশি দুর্বল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।

এ ছাড়া মাথা শরীরের তুলনায় বড় হওয়ায় ঝাঁকানোর সময় তা সামনে-পেছনে দ্রুত নড়াচড়া করে। ফলে মস্তিষ্ক খুলির ভেতরে আঘাতপ্রাপ্ত হয় এবং রক্তনালিগুলো ছিঁড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

কী ঘটে

শিশুকে জোরে ঝাঁকানোর ফলে তিনটি প্রধান ক্ষতি হয়—

মস্তিষ্কে আঘাত: মস্তিষ্ক ও খুলির মাঝখানে থাকা রক্তনালি ছিঁড়ে গিয়ে রক্তক্ষরণ হয়।

চোখে আঘাত: ভিট্রিওরেটিনাল ট্র্যাকশনের কারণে মাল্টিলেয়ার্ড রেটিনায় রক্তক্ষরণ হয়, যা শেকেন বেবি সিনড্রোমের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।

ঘাড় ও স্পাইনাল ইনজুরি: সার্ভাইক্যাল স্পাইনের ক্ষতি ও মস্তিষ্কে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।

লক্ষণ

শেকেন বেবি সিনড্রোমে আক্রান্ত শিশুর লক্ষণগুলো হালকা থেকে গুরুতর হতে পারে। সাধারণ লক্ষণগুলো হলো:

অতিরিক্ত কান্না বা অস্বাভাবিক নিস্তেজ হয়ে যাওয়া

  • বমি
  • খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া
  • খিঁচুনি
  • শ্বাসকষ্ট বা শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া
  • অচেতনতা বা কোমা

চোখের পরীক্ষায় দেখা যায়—

  • এক বা উভয় চোখে মাল্টিলেয়ার্ড রেটিনাল রক্তক্ষরণ
  • ⁠প্রি-রেটিনাল, ইনট্রা-রেটিনাল ও সাব-রেটিনাল রক্তক্ষরণ
  • কখনো কখনো অপটিক ডিস্ক এডিমা

রোগনির্ণয়

শেকেন বেবি সিনড্রোম মূলত ক্লিনিক্যাল ডায়াগনোসিস। তবে নিশ্চিত করার জন্য—

  • চোখের রেটিনা পরীক্ষা
  • সিটি স্ক্যান বা এমআরআই
  • নিউরোলজিক্যাল মূল্যায়ন
  • শিশুর ইতিহাস ও সামাজিক প্রেক্ষাপট মূল্যায়ন

চিকিৎসা

এর চিকিৎসা একটি মাল্টিডিসিপ্লিনারি অ্যাপ্রোচের মাধ্যমে করা হয়—

  • শিশুর জীবন রক্ষা ও সাপোর্টিভ কেয়ার
  • খিঁচুনি নিয়ন্ত্রণ
  • মস্তিষ্কের ভেতরের চাপ কমানো
  • নিউরোসার্জন ও পেডিয়াট্রিশিয়ানের তত্ত্বাবধান
  • চোখের জটিলতার জন্য চক্ষুবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া।

চিকিৎসকের আইনগত ও নৈতিক দায়িত্ব

শেকেন বেবি সিনড্রোম একটি শিশু নির্যাতনজনিত অপরাধ। তাই চিকিৎসকের দায়িত্ব শুধু চিকিৎসা করা নয়, বরং—

  • যথাযথ মেডিকো-লিগ্যাল ডকুমেন্টেশন
  • সংশ্লিষ্ট চাইল্ড প্রোটেকশন সার্ভিস বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে জানানো
  • ভবিষ্যতে শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

চক্ষুবিশেষজ্ঞ ও সার্জন, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত