Ajker Patrika

ভুটান কি একমাত্র কার্বন নেগেটিভ দেশ, সেখানে কি দূষণ নেই

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭: ২৯
ভুটান কি একমাত্র কার্বন নেগেটিভ দেশ, সেখানে কি দূষণ নেই

ভুটান পৃথিবীর একমাত্র দেশ। এই দেশ কখনো পানি ও খাদ্য সংকট বা পানি ও বাতাস দূষণের সমস্যায় পড়েনি। এটি একমাত্র কার্বন নেগেটিভ দেশ, যা কার্বন উৎপাদনের চেয়ে শোষণ করে বেশি— এমন দাবিতে একটি ফটোকার্ড ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ‘সাইকোলজি এবং বিজ্ঞানের অজানা তথ্য’ নামের ৭ লাখ ২২ হাজার সদস্যের একটি ফেসবুক গ্রুপে গত ৫ ফেব্রুয়ারি আবিদুল ইসলাম রাফি নামের এক অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া সবচেয়ে ভাইরাল ফটোকার্ডটি পাওয়া যায়। ফটোকার্ডটিতে আজ বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৪৯ হাজারের বেশি রিয়েকশন পড়েছে, শেয়ার হয়েছে ৫০০ বারের বেশি। দাবিটি যাচাই করে দেখেছে আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেক বিভাগ। 

ভুটান বিশ্বের একমাত্র কার্বন নেগেটিভ দেশ? 
কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানে অস্ট্রেলিয়ার ক্লাইমেট কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে ২০১৭ সালের ২ এপ্রিল প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ওই সময় ভুটান পৃথিবীর প্রথম কার্বন নেগেটিভ দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে স্বীকৃতি পায়। 

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের ওয়েবসাইটে ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, কেবল ভুটান নয়, কার্বন নেগেটিভ ক্লাব নামে কয়েকটি দেশের সমন্বয়ে একটি ক্লাব গড়ে উঠছে, যাতে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ সুরিনাম যুক্ত হয়েছে। ওই বছরের শেষে উত্তর আমেরিকার দেশ পানামারও এই ক্লাবে যুক্ত হওয়ার কথা।

যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পানামা, ভুটান ও সুরিনাম এই তিন দেশ মিলে কার্বন নেগেটিভ জোট গঠন করে বিশ্বের মাত্র তিনটি কার্বন নেগেটিভ দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। পানামা সরকারের সরকারি ওয়েবসাইটে একই বছরের ২ নভেম্বর কপ ২৬ সম্মেলন চলার সময় পানামা, ভুটান ও সুরিনাম মিলে কার্বন নেগেটিভ জোট গঠনের সিদ্ধান্তের কথা জানা যায়। অর্থাৎ ওই সময় ভুটান ছাড়াও কার্বন নেগেটিভ দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে সুরিনাম ও পানামা। 

বিশ্ব জনসংখ্যা এবং জনমিতি পর্যালোচনাকারী সংস্থা ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউয়ের ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের কার্বন নেগেটিভ দেশের একটি তালিকা খুঁজে পাওয়া যায়। এই তালিকায় ভুটান ছাড়াও পানামা ও সুরিনামের নাম আছে। অর্থাৎ ভুটান পৃথিবীর প্রথম কার্বন নেগেটিভ দেশ হিসেবে নাম লেখালেও এর সঙ্গে আরও দুটি যুক্ত হয়েছে, যারা কার্বন নেগেটিভ। 

প্রসঙ্গত, কার্বন নেগেটিভ দেশ মানে হলো, এই দেশগুলো বায়ুমণ্ডলে যে পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ করে, তার চেয়ে বেশি শোষণ করে।

বর্তমানে পৃথিবীতে কার্বন নেগেটিভ দেশের সংখ্যা ভুটানসহ তিনটিভুটানের পানি, বাতাস কেমন? 
ভুটানের বায়ু দূষণ নিয়ে অনুসন্ধানে গবেষণা জার্নাল স্প্রিঞ্জার লিংকে ২০২১ সালে প্রকাশিত একটি নিবন্ধ পাওয়া যায়। ২০১৮ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ভুটানের রাজধানী থিম্পুর বাতাসে পিএম ২ দশমিক ৫ বা ধূলিকণা ও ২ দশমিক ৫ মাইক্রোমিটারের ছোট পদার্থের উপস্থিতি নিয়ে গবেষণার ভিত্তিতে প্রবন্ধটি লেখা হয়। এতে দেখা যায়, সেই শহরে এই তিন বছরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক নির্ধারিত মানের চেয়েও পিএম ২ দশমিক ৫ অনেক বেশি পরিমাণে ছিল। 

ভুটানের জাতীয় টিভি ও রেডিও সম্প্রচার সংস্থা ভুটান ব্রডকাস্টিং করপোরেশনের ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের ২২ জানুয়ারি দেশটির বায়ু দূষণ নিয়ে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এতে ভুটানের ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্ট কমিশনের বরাত দিয়ে বলা হয়, ভুটানের বায়ু দূষণ গুরুতর সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে, যা একইসঙ্গে দেশটির মানুষদের স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে। ভুটানের বায়ু দূষণের দায়ী দুটি ধূলিকণা হলো পিএম ১০ এবং পিএম ২ দশমিক ৫। এই কণাগুলো হৃৎপিণ্ড এবং ফুসফুসকে প্রভাবিত করতে পারে এবং গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। বিশেষ করে শীতের সময় থিম্পুর বাতাস সবচেয়ে খারাপ থাকে। 

অপরদিকে পানি দূষণ নিয়ে অনুসন্ধানে গবেষণা জার্নাল এমডিপিআইয়ে ২০২১ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়, ভুটানে পানি দূষণ ক্রমবর্ধমান সমস্যা হয়ে উঠছে। দেশটিতে বর্জ্য পানির অবকাঠামোগত সংকটের কারণে সেগুলো বসতি এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানের পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার সাথে সঠিকভাবে সংযুক্ত নয়। দেশটিতে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন ছোট ব্যক্তিগত সেপটিক ট্যাঙ্কগুলো বর্জ্য সংগ্রহের প্রধান বিকল্প। এই স্বতন্ত্র সেপটিক ট্যাঙ্কগুলোর ঝুঁকি বেশি এবং এগুলো নদীর অববাহিকাকে দূষিত করতে পারে। এ ছাড়া ভুটানের সংস্কৃতি ও ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে সেখানকার নদীগুলো মরদেহের সমাধিস্থল হিসেবেও ব্যবহার হয়। দেশটিতে মৃত শিশুকে কাঠের পাত্রের মধ্যে রেখে দাহ করার পরিবর্তে নদীতে ডুবিয়ে দেওয়া হয় এবং মৃতদের ছাইও নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। এসব কারণে দেশটির পানি দূষণ ক্রমশ বেড়ে চলছে। 

আরেকটি গবেষণা জার্নাল সায়েন্স ডিরেক্টে প্রকাশিত ২০২৩ সালের দেশটির পানি গুণমান নিয়ে প্রকাশিত আরেক গবেষণা থেকেও জানা যায়,  ভুটানে শহুরে অবকাঠামো উন্নত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শহর এবং গ্রামের প্রাকৃতিক জলাধারের পানির গুণমান উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।

অর্থাৎ ভুটানের পানি, বাতাস কখনো দূষণ সমস্যার সম্মুখীন না হওয়ার তথ্যটি সঠিক নয়।

 ভুটানে পানি দূষণের চিত্রভুটানের খাদ্য পরিস্থিতি
ভুটানের খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে অনুসন্ধানে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির ওয়েবসাইট সূত্রে দেখা যায়, দেশটির খাদ্যসামগ্রীর প্রায় ৫০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। 

এ ছাড়া বার্তা সংস্থা রয়টার্সে ২০২২ সালের ২৬ মে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ক্রমবর্ধমান জ্বালানি আমদানি ব্যয় এবং বিশ্বব্যাপী শস্যের ঘাটতির কারণে দেশটিতে খাদ্যের অভ্যন্তরীণ দাম বেড়েছে, যা ভুটানের বিশেষ করে দেশটির গ্রামীণ এলাকায় মানুষের জন্য খাদ্য সংকটের ঝুঁকি তৈরি করেছে। এই প্রতিবেদন থেকেও জানা যায়, ভুটান খাদ্য চাহিদা পূরণে মূলত আমদানির ওপর নির্ভর করে। ২০২১ সালে দেশটি ভারত থেকে গম ও চাল আমদানি করে। ওই বছর দেশটি ৩০ দশমিক ৩৫ মিলিয়ন ডলারের খাদ্যশস্য আমদানি করেছে। অর্থাৎ ভুটান পুরোপুরি খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের পত্রিকার নামে ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডটি ভুয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ২১
আজকের পত্রিকার নামে ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডটি ভুয়া

সম্প্রতি আজকের পত্রিকার নাম ও ফটোকার্ড ব্যবহার করে ‘হরেকৃষ্ণ হরিবোল, দাঁড়িপাল্লা টেনে তোলঃ পরওয়ার’ শিরোনামে একটি ভুয়া ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এটি একটি সম্পূর্ণ ভুয়া ফটোকার্ড।

আজকের পত্রিকা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করছে, এই ধরনের কোনো খবর আজকের পত্রিকাতে কখনোই প্রকাশিত হয়নি। ফটোকার্ডটিতে আজকের পত্রিকার লোগো ব্যবহার করা হলেও এর ভেতরের খবর ও শিরোনাম সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।

আজকের পত্রিকা সর্বদা সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

বর্তমান সময়ে এ ধরনের ভুয়া ফটোকার্ড ও খবর নিয়ে পাঠকদের সচেতনতা জরুরি। যেকোনো সন্দেহজনক খবর যাচাই করার জন্য অনুরোধ রইল।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মধ্যরাতে মাঝরাস্তায় বাঘকে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে মাতাল—ভাইরাল ভিডিওটি ফেক

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১৬: ৫৪
মধ্যরাতে মাঝরাস্তায় বাঘকে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে মাতাল—ভাইরাল ভিডিওটি ফেক

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্প্রতি ভাইরাল একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, রাতে রাস্তার মাঝখানে এক মধ্যবয়সী ব্যক্তি এক হাতে একটি স্বচ্ছ বোতল, অপর হাতে বাঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। এমনকি বাঘটির মুখে বোতল গুঁজে দিতেও দেখা যায় তাঁকে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে এই ভিডিও শেয়ার করে দাবি করছেন, একটি সিসিটিভি ফুটেজ। ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ঘটনাটি ভারতের মধ্যপ্রদেশের পেঞ্চ এলাকার। ওই ব্যক্তি দেশীয় মদ পান করে মাতাল হয়ে রাস্তায় বেরিয়েছিলেন। তিনি এতটা মাতাল ছিলেন যে বাঘকেও মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। বাঘ অবশ্য তাঁর হাতে মদ্যপানে রাজি হয়নি! পরে ওই বাঘটিকে উদ্ধার করে বন বিভাগ। বাঘটি ওই ব্যক্তির কোনো ক্ষতি করেনি।

বাঘকে বোতল থেকে মদ খাওয়ার দাবি করা ভিডিওর ক্যাপশন, যেখান থেকেই গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ছবি: সংগৃহীত
বাঘকে বোতল থেকে মদ খাওয়ার দাবি করা ভিডিওর ক্যাপশন, যেখান থেকেই গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ছবি: সংগৃহীত

ভিডিওটি দেখে অনেকেই বিস্মিত ও উদ্বিগ্ন—কেউ বিশ্বাস করেছেন, এটি বাস্তব কোনো ঘটনা; কেউ আবার মনে করছেন, এটি নিছকই কৃত্রিম ভিডিও। কিন্তু সত্যিটা কী? দ্য কুইন্টের সাংবাদিক অভিষেক আনন্দ ও ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা বুম বিষয়টি অনুসন্ধান করে প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ করেছে।

বুম ভিডিওটি নিয়ে বিভিন্ন কিওয়ার্ড দিয়ে এ-সম্পর্কিত প্রতিবেদন অনুসন্ধান করেছে, কিন্তু কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এমন ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। এরপর তারা সরাসরি মধ্যপ্রদেশের সেওনি জেলার পুলিশ কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করে। দ্য কুইন্ট ও বুমকে সেওনি জেলার পুলিশ সুপারের দপ্তর থেকে স্পষ্ট জানানো হয়—তাদের জানামতে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।

পেঞ্চ টাইগার রিজার্ভের উপপরিচালক রাজনীশ সিংহের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি যাচাই করা হয়। তিনি বলেন, ভিডিওটির সঙ্গে পেঞ্চ এলাকার কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি আরও ব্যাখ্যা দেন, বনের বাঘের সঙ্গে এমন ঘনিষ্ঠভাবে মানুষের যোগাযোগ সম্ভব নয়, যদি না বাঘটিকে বন্দী করে দীর্ঘদিন ধরে পোষ মানানো হয়। তাঁর ভাষায়, ‘বনের বাঘ কখনো এমন আচরণ করে না, এটা বাস্তবে সম্ভব নয়।’

ভিডিওর সন্দেহজনক দিক বা ভিজ্যুয়াল অসংগতি

বুম ভিডিওটির একটি উচ্চমানের সংস্করণ সংগ্রহ করে তাতে কিছু অস্বাভাবিক দিক লক্ষ করে। দেখা যায়, ভিডিওটির পটভূমির দৃশ্যে কিছু অস্পষ্ট বস্তু নড়াচড়া করছে, যা বাস্তব ভিডিওর মতো স্বাভাবিক নয়।

বাঘের মাথায় হাত রাখা ব্যক্তির আঙুলগুলো বিকৃতভাবে বাঁকানো, যেন সফটওয়্যারে তৈরি কৃত্রিম ছায়া। এমনকি হাতে থাকা বোতলের মুখ কখনো দেখা যায়, আবার মিলিয়ে যায়—এই ভিজ্যুয়াল অসংগতিগুলো ইঙ্গিত দেয়, এটি ধারণকৃত কোনো ফুটেজ নয়। সব মিলিয়ে ভিডিওটির একাধিক ফ্রেমে গ্রাফিক বিকৃতি স্পষ্ট।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর বিশ্লেষণ

এরপর ভিডিওটি পরীক্ষা করা হয় ডিপফেক-ও-মিটার নামের একটি উন্নত টুলে। এটি তৈরি করেছে ইউনিভার্সিটি অব বাফেলোর মিডিয়া ফরেনসিকস ল্যাব। এই টুল ভিডিওটির বিভিন্ন অংশ বিশ্লেষণ করে দেখায়, এতে ‘উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক নির্মাণের চিহ্ন’ রয়েছে।

এআই টুল দিয়ে ভিডিওটির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি হওয়ার প্রমাণ পরীক্ষার ফলাফল। ছবি: সংগৃহীত
এআই টুল দিয়ে ভিডিওটির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি হওয়ার প্রমাণ পরীক্ষার ফলাফল। ছবি: সংগৃহীত

এরপর বুম তাদের অংশীদার ডিপফেক অ্যানালাইসিস ইউনিটের সাহায্য নেয়। তারা ভিডিওটি পরীক্ষা করে ‘Is It AI’ এবং ‘AI Or Not’—নামক দুটি আলাদা টুলে। উভয় টুলের বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভিডিওটি এআই দিয়ে নির্মিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৬৯ শতাংশ।

এই ফলাফল অনুযায়ী বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভিডিওর মানুষের সঙ্গে প্রাণীর মিথস্ক্রিয়া এবং আলো-ছায়ার ত্রুটি স্পষ্ট করে দিচ্ছে এটি আসল নয়, বরং জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বানানো একটি দৃশ্য।

ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর বহু ব্যবহারকারী এটিকে সত্যি বলে বিশ্বাস করেছেন। কিছু পোস্টে দাবি করা হয়েছে, ভিডিওর ওই ব্যক্তির নাম রাজু পাতিল। ৫২ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি একজন দিনমজুর। তিনি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় রাস্তায় বাঘটিকে আদর করছিলেন এবং আশ্চর্যজনকভাবে অক্ষত অবস্থায় রয়ে গেছেন।

একাধিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শনাক্তকরণ টুলের ফলাফল এবং প্রশাসনিক যাচাই মিলিয়ে নিশ্চিতভাবে বলা যায়—ভিডিওটি বাস্তব নয়, বরং এআই প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি একটি কৃত্রিম দৃশ্য। পেঞ্চ টাইগার রিজার্ভের উপপরিচালক রাজনীশ সিংহও সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এই ভিডিওর কোনো অংশই পেঞ্চের নয়। এটি সম্পূর্ণ ভুয়া।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পাকিস্তানি জেনারেলকে ‘ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলযুক্ত বাংলাদেশের পতাকা উপহারে’র দাবি নিয়ে যা বলল সিএ ফ্যাক্ট চেক

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭: ০৩
ছবি : সিএ ফ্যাক্ট চেকিং
ছবি : সিএ ফ্যাক্ট চেকিং

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পাকিস্তানের যৌথবাহিনীর চেয়ারম্যানকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল যুক্ত বাংলাদেশের মানচিত্রসংবলিত পতাকা উপহার দিয়েছেন বলে ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের দাবি সম্পূর্ণ অসত্য ও কল্পনাপ্রসূত বলে জানিয়েছে সিএ (প্রধান উপদেষ্টা) ফ্যাক্ট চেক।

ভারতের সংবাদমাধ্যমটি গতকাল এক প্রতিবেদনে দাবি করে, পাকিস্তানের যৌথবাহিনীর চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জাকে এমন একটি পতাকা উপহার দিয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস, যেখানে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল বাংলাদেশের মানচিত্রের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।

সিএ ফ্যাক্ট চেক জানায়, প্রকৃতপক্ষে অধ্যাপক ইউনূস উপহার দিয়েছেন ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ নামে একটি চিত্রসংকলন—যেখানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের আঁকা রঙিন গ্রাফিতি ও দেয়ালচিত্র সংকলিত হয়েছে।

‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন প্রকাশিত একটি সচিত্র দলিল, যেখানে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগে অর্জিত বিপ্লবের ইতিহাস ফুটে উঠেছে।

গ্রাফিতি সংকলনের প্রচ্ছদে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ আবু সাইদের পিছনে রক্তরাঙ্গা বাংলাদেশের মানচিত্র প্রদর্শিত হয়েছে।

প্রচ্ছদে দৃশ্যমান মানচিত্রটি গ্রাফিতি হিসেবে অঙ্কিত হওয়ায় বাংলাদেশের মূল মানচিত্রের পরিমাপের কিছুটা হেরফের হয়েছে বলে কারো কাছে মনে হতে পারে। কিন্তু ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের কোনো অংশ গ্রাফিতি মানচিত্রটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলে দাবি করাটা সম্পূর্ণ অসত্য এবং কল্পনাপ্রসূত। বাংলাদেশের মানচিত্রের সাথে উল্লেখিত গ্রাফিতিতে দৃশ্যমান মানচিত্রের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, অঙ্কিত মানচিত্রটিতে বাংলাদেশের প্রকৃত মানচিত্র প্রায় হুবহুভাবেই প্রতিফলিত হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা এর আগেও একই গ্রাফিতি সংকলন ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ জাতিসংঘের মহাসচিব, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোসহ বিশ্ব নেতাদের উপহার দিয়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অরকার আক্রমণে তরুণী প্রশিক্ষকের মৃত্যু, ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে যা জানা গেল

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১৬: ৫৮
ভাইরাল ভিডিওটির দৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট
ভাইরাল ভিডিওটির দৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট

একটি মেরিন পার্কে এক নারী প্রশিক্ষককে চুবিয়ে হত্যা করেছে অরকা বা কিলার তিমি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। মর্মান্তিক ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দাবি করা হয়, প্যাসিফিক ব্লু মেরিন পার্কে ‘জেসিকা র‍্যাডক্লিফ’ নামে একজন প্রশিক্ষককে একটি অরকা আক্রমণ করে হত্যা করেছে।

ভিডিওটি টিকটক, ফেসবুক এবং এক্সে ভাইরাল হয়েছে। তবে, একাধিক ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা নিশ্চিত করেছে যে, এই ভিডিওটি সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং এর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই।

ভিডিওতে যা দেখানো হয়েছে

ভাইরাল হওয়া ক্লিপটিতে দেখা যায়, একজন তরুণী একটি অরকার পিঠে দাঁড়িয়ে নাচছেন। দর্শকেরা তখন উল্লাস করছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর হঠাৎ অরকাটি ওই তরুণীকে আক্রমণ করে পানির নিচে টেনে নিয়ে যায়। ভিডিওটি শেয়ার করা অনেক ব্যবহারকারী দাবি করেছেন, পানির নিচে নিয়ে যাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওই তরুণীর মৃত্যু হয়।

ঘটনা বা প্রশিক্ষকের কোনো প্রমাণ নেই

ভিডিওটি ব্যাপকভাবে শেয়ার হওয়া সত্ত্বেও, জেসিকা র‍্যাডক্লিফ নামে একজন প্রশিক্ষক অরকার আক্রমণে মারা গেছেন—এই দাবির পক্ষে কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কর্তৃপক্ষ, মেরিন পার্ক এবং প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমগুলো জেসিকা র‍্যাডক্লিফের অস্তিত্ব বা এমন কোনো ঘটনার রেকর্ড খুঁজে পায়নি। দ্য স্টার পত্রিকার মতে, ভিডিওটি কাল্পনিক; এমনকি ভিডিওতে থাকা কণ্ঠস্বরগুলোও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি বলে মনে করা হচ্ছে।

অন্যান্য প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এমন দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সাধারণত যে ধরনের আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়, এই ঘটনায় তার কোনোটিই পাওয়া যায়নি। ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুসারে, ভিডিওর মধ্যে পানির অস্বাভাবিক গতিবিধি এবং অদ্ভুত বিরতিও নিশ্চিত করে যে এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। এমনকি ভিডিওতে যে পার্কের নাম বলা হয়েছে, সেটিও ভুয়া।

এক্স-এ ছড়িয়ে পড়া ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট
এক্স-এ ছড়িয়ে পড়া ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট

সম্পূর্ণভাবে এআই-নির্মিত

ফোর্বস ম্যাগাজিন ক্লিপটিকে ‘একটি প্রতারণা’ বলে চিহ্নিত করেছে। তারা উল্লেখ করেছে, এমন একটি মর্মান্তিক ঘটনা যদি সত্যিই ঘটতো, তাহলে তা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হতো। ভিডিওর দৃশ্য এবং শব্দ সম্ভবত চাঞ্চল্যকর প্রভাব তৈরির জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। দ্য ইকোনমিক টাইমস উল্লেখ করেছে, এই গল্পের চরিত্র এবং নাম কোনো যাচাইযোগ্য রেকর্ডের সঙ্গে মেলে না। ফলে বলা যেতে পারে যে, পুরো গল্পটি বানোয়াট।

সত্যিকারের দুর্ঘটনার সঙ্গে মিল

এই ধরনের প্রতারণামূলক ভিডিওগুলোতে কিছুটা সত্যের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা করা হয়। ভিডিওটি ২০১০ সালে সি ওয়ার্ল্ডে ডন ব্রাঞ্চেউ এবং ২০০৯ সালে অ্যালেক্সিস মার্টিনেজ-এর বাস্তব জীবনের মৃত্যুর ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়। উভয় প্রশিক্ষকই অরকার আক্রমণে মারা যান। কিন্তু এই ঘটনাগুলো জেসিকা র‍্যাডক্লিফের গল্পের মতো নয়, কারণ সেগুলো নথিভুক্ত এবং কর্তৃপক্ষের তরফে নিশ্চিত করা হয়েছে।

কেন এই ধরনের প্রতারণা ভাইরাল হয়

বিশেষজ্ঞরা বলেন, একটি ভিডিওর আবেগপূর্ণ তীব্রতা এবং বাস্তবসম্মত উৎপাদন কৌশল এটি ভাইরাল হতে সাহায্য করে। এই ধরনের ক্লিপগুলো বুদ্ধিমান সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বন্দী করে রাখার নৈতিকতা নিয়ে মানুষের গভীর উদ্বেগগুলোকে কাজে লাগায়। একই সঙ্গে, এগুলো চাঞ্চল্যকর বিষয়বস্তু ব্যবহার করে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ফ্যাক্টচেকিং হলেও ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়।

কথিত জেসিকা র‍্যাডক্লিফকে নিয়ে অরকার আক্রমণের ভিডিওটি একটি সম্পূর্ণ বানোয়াট। এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। এই নামে কোনো প্রশিক্ষকের অস্তিত্বেরও কোনো প্রমাণ নেই।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত