Ajker Patrika

কোরআনে বৃষ্টি, নদী ও সাগরের কথা

কাজী ফারজানা আফরীন
আপডেট : ০৩ জুন ২০২২, ১৫: ৩৬
কোরআনে বৃষ্টি, নদী ও সাগরের কথা

পৃথিবী সৌরজগতের একমাত্র গ্রহ, যেখানে জীবজন্তু ও উদ্ভিদের জীবনধারণের জন্য উপযোগী ও প্রয়োজনীয় সব উপাদান রয়েছে। যেমন—বায়ুমণ্ডল, জলবায়ু, পানি, আলো, সূর্য, ওজোনস্তর, পৃথিবীর চুম্বকীয় ক্ষেত্র প্রভৃতি। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো পানি। কারণ, পানি হলো জীবন ও প্রাণের আদি উৎস। আমরা সাধারণত পৃথিবী স্থিত প্রাকৃতিক উৎস যেমন বৃষ্টি, নদী, সমুদ্র, ঝরনা, হ্রদ, ভূগর্ভ ইত্যাদি থেকে পানি পেয়ে থাকি। আবার মেরু অঞ্চল ও সুউচ্চ পর্বতমালায়ও বরফ আকারে প্রচুর পরিমাণ মিঠাপানি সঞ্চিত আছে। আর পৃথিবীর প্রায় ৯৭ ভাগ পানি সমুদ্র ও মহাসমুদ্রে সঞ্চিত আছে, যা লবণাক্ত। পৃথিবীতে বাষ্পীভূত হওয়া পানির ৮৬ শতাংশই সমুদ্রের পানি, যা পৃথিবীর তাপমাত্রা শীতল রাখতে অবদান রাখে। ভূপৃষ্ঠের তিন-চতুর্থাংশ পানি বিভিন্ন রূপে থাকা সত্ত্বেও পৃথিবীতে পানির সামঞ্জস্য কখনো ব্যাহত হয় না। কারণ, প্রাকৃতিক রূপান্তরের মাধ্যমে পানি চক্রাকারে ক্রমাগত সঞ্চরণশীল।

মহাকৌশলী আল্লাহর সৃষ্টির পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে অপার বিস্ময়। পানি আল্লাহর বিস্ময়কর এক নেয়ামত, রবের পক্ষ থেকে ভালোবাসা ও রহমতের নিদর্শন। এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ দুনিয়ায় কল্যাণ ও রিজিকের ব্যবস্থা করেন। পবিত্র কোরআনের বহু আয়াতে পানির উৎস তথা বৃষ্টি, নদ-নদী ও সমুদ্রের অপরিহার্যতা সম্পর্কে বলা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি কি দেখো না, আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন; এরপর পৃথিবী সবুজ-শ্যামল হয়ে ওঠে।’ (সুরা হজ, আয়াত: ৬৩)

বৃষ্টির পানির পবিত্রতা ঘোষণা করে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি আকাশ থেকে বর্ষণ করি পবিত্র পানি। তা দিয়ে মৃত ভূমিকে সঞ্জীবিত করা এবং আমার সৃষ্ট বহু জীবজন্তু ও মানুষকে তা পান করানোর জন্য।’ (সুরা ফুরকান, আয়াত: ৪৮-৪৯)

মেঘ ও বৃষ্টিপাত সম্পর্কে কোরআনে রয়েছে, ‘আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণের মাধ্যমে মৃতপ্রায় ধরিত্রীকে পুনরুজ্জীবিত করেন; তাতে যাবতীয় জীবজন্তুর বিস্তার ঘটান; তাতে, বায়ুর দিক পরিবর্তনে এবং আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে নিয়ন্ত্রিত মেঘমালায় জ্ঞানবান জাতির জন্য নিদর্শন রয়েছে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৬৪)

অন্যত্র এসেছে, ‘আর তিনি আকাশ থেকে বারি বর্ষণ করেন, তা দ্বারা তোমাদের জীবিকাস্বরূপ ফলমূল উৎপাদন করেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২২)

পৃথিবী বাসযোগ্য করে আল্লাহ বলেন, ‘বলো তো, কে পৃথিবীকে বাস-উপযোগী করেছেন এবং তার মাঝে নদ-নদী প্রবাহিত করেছেন এবং তার স্থিতির জন্য পর্বত স্থাপন করেছেন এবং দুই সমুদ্রের মাঝখানে অন্তরায় রেখেছেন?’ (সুরা নামল, আয়াত: ৬১)

বৃষ্টির পানি নদী-সমুদ্র ও ভূগর্ভে সংরক্ষণের বিষয়ে আল্লাহ বলেন, ‘আমি আকাশ থেকে পরিমিতভাবে বারি বর্ষণ করি, তারপর তা ভূমিতে সংরক্ষণ করি। নিশ্চিত জেনো, আমি তা অপসারণ করতেও সক্ষম।’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত: ১৮)

কাজী ফারজানা আফরীননদী, সমুদ্র, মিঠাপানি ও নোনাপানি সম্বন্ধে কোরআনে এসেছে, ‘তিনি প্রবাহিত করেন দুই সমুদ্রকে, যারা পরস্পর মিলিত হয়; উভয়ের মধ্যে রয়েছে এক আড়াল যা তারা অতিক্রম করতে পারে না। সুতরাং তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন অনুগ্রহ অস্বীকার করবে? এ উভয়ের মধ্য থেকে উৎপন্ন হয় মুক্তা ও প্রবাল।’ (সুরা আর-রহমান, আয়াত: ১৯-২২)

অন্যত্র এসেছে, ‘তিনিই দুই সমুদ্রকে মিলিতভাবে প্রবাহিত করেছেন; একটি মিষ্টি, সুপেয় এবং অপরটি লবণাক্ত, ক্ষার; উভয়ের মধ্যে রেখে দিয়েছেন এক অন্তরায়, এক অনতিক্রম্য ব্যবধান।’ (সুরা ফুরকান, আয়াত: ৫৩)

সমুদ্রের নৌযান সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন, ‘তুমি কি দেখ না যে, ধরণিপৃষ্ঠে যা আছে এবং সমুদ্রে চলমান নৌযানগুলো আল্লাহ নিজ আদেশে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন এবং তিনি আকাশের মেঘমালাকে স্থির রাখেন, যাতে তাঁর আদেশ ব্যতীত ভূপৃষ্ঠে পতিত না হয়।’ (সুরা হজ, আয়াত: ৬৫)

সমুদ্রের নিয়ামত রাশি সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন, ‘তিনিই সে সত্তা, যিনি সমুদ্রকে নিয়োজিত করেছেন, যাতে তোমরা তা থেকে তাজা মাছ খেতে পার এবং তা থেকে বের করতে পার অলংকারাদি, যা তোমরা পরিধান কর। আর তুমি তাতে নৌযান দেখবে, যা পানি চিরে চলছে এবং যাতে তোমরা তাঁর অনুগ্রহ অন্বেষণ করতে পার এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।’ (সুরা নাহল, আয়াত: ১৪)

অন্যত্র এসেছে, ‘সমুদ্রের (মাছ) শিকার ও তা ভক্ষণ করা তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে; তোমাদের ও মুসাফিরদের ভোগের জন্য।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত: ৯৬)

তবে বৃষ্টি যেমন রহমতের, আবার কখনো আজাবেরও হতে পারে। এ কারণে রাসুল (সা.) বৃষ্টি দেখলেই মহান আল্লাহর দরবারে উপকারী বৃষ্টির জন্য দোয়া করতেন। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, যখন বৃষ্টি হতো, তখন রাসুল (সা.) বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা সয়্যিবান নাফিআহ’, অর্থাৎ, ‘হে আল্লাহ, এ বৃষ্টিকে প্রবহমান এবং উপকারী করে দিন।’ (নাসায়ি, হাদিস: ১৫২৩)

পবিত্র কোরআনে দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে বলা হয়েছে, পাপাচারে লিপ্ত এবং সীমালঙ্ঘনকারী জাতিগোষ্ঠীকে আল্লাহপাক অতিবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টির মাধ্যমে শাস্তি দিয়ে থাকেন। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন, ‘আমি তাদের ওপর পাথরের বৃষ্টি বর্ষণ করলাম। অতএব চেয়ে দেখো, অপরাধীদের কী পরিণাম হয়ে থাকে।’ (সুরা আরাফ, আয়াত: ৮৪)

অন্যত্র এরশাদ করেন, ‘আর আমি তাদের ওপর শাস্তির বৃষ্টি বর্ষণ করলাম। আর যাদের সতর্ক করা হয় তাদের ওপর বর্ষিত বৃষ্টি অতি ক্ষতিকর হয়ে থাকে।’ (সুরা শুআরা, আয়াত: ১৭৩)

সময়মতো পরিমিত বৃষ্টিপাত হলে ফসল ও শস্য উৎপাদনে সহায়ক হয়, মৎস্য প্রজনন সহজ হয়। অসময়ে বৃষ্টিপাত, অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টি তথা বন্যা ও খরা মানুষের নিজেদের কর্মদোষে হয়ে থাকে। কারণ, প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করার দায়িত্ব মানুষের। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মানুষের কৃতকর্মের কারণে সমুদ্রে ও স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে।’ (সুরা রুম, আয়াত: ৪১)

আল্লাহর নেয়ামতের শোকরিয়া আদায় করে তাঁর অবাধ্য কাজ থেকে বিরত থাকলে আল্লাহ তাআলা বান্দার প্রতি নেয়ামত আরও বাড়িয়ে দেন।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...