জাহাঙ্গীর আলম, জামালপুর

জামালপুর শহরে সুরপাড়া দেউরপাড় চন্দ্রায় আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক এমপি মির্জা আজমের বিলাসবহুল রিসোর্ট ‘আলেয়া গার্ডেন’। সেই রিসোর্টের ভেতরে আছে দৃষ্টিনন্দন দুটি ভবনসহ পুকুর, গরুর খামার ও বিশাল বাগান। প্রায় ১০ একর জমির ওপর স্ত্রী দেওয়ান আলেয়ার নামে গড়া এই রিসোর্টের জন্য অন্যের জমি জবরদখল করেছেন তিনি।
আলেয়া গার্ডেন মির্জা আজমের বিপুল সম্পদের একটি নমুনামাত্র। পুরো জামালপুরে তাঁদের সম্পদ ও ক্ষমতা এতটাই বেশি যে গাড়ি-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় জেলার শীর্ষে আজম পরিবার। তাঁর স্ত্রী, সন্তান, পাঁচ ভাইসহ পরিবারের প্রত্যেকের নামে-বেনামে রয়েছে অঢেল সম্পদ। শুধু জামালপুর শহরেই মির্জা আজম, তাঁর স্ত্রী ও মেয়ের নামে রয়েছে প্রায় ১ হাজার ১২৮ শতাংশ জমি। শহরের প্রাণকেন্দ্র বকুলতলা এলাকায় কেউ ঘুরতে গেলে মির্জা আজমের দৃষ্টিনন্দন বাড়িটি দেখে চোখ এড়ানোর সুযোগ নেই।
জামালপুরের বাইরে রাজধানীর ধানমন্ডি ১৫ নম্বর সড়কের (পুরাতন ২৮ নম্বর) ১২ নম্বর প্লটটি প্রভাব খাটিয়ে দখল এবং পরে তা বহুতল ভবনে রূপান্তরের অভিযোগ রয়েছে মির্জা আজমের বিরুদ্ধে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এই তথ্যের উল্লেখ আছে। দুদকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ১৯৯৬ সালে এমপি থাকাকালীন নিকুঞ্জ-২ আবাসিক এলাকায় ৫ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দ নেন তিনি। পরে প্রভাব খাটিয়ে শ্রেণি পরিবর্তন করে বারিধারায় ১০ নম্বর সড়কে নতুন প্লটও বরাদ্দ নেন। আলোচিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশনে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ আছে মির্জা আজমের। কক্সবাজারের পাঁচ তারকা হোটেল সিগালেও তাঁর বিপুল বিনিয়োগ ও অংশীদারত্ব রয়েছে।
মির্জা আজমের বিপুল সম্পদের বিষয়ে দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, দুদক এই বিষয়ে গোয়েন্দা অনুসন্ধানে তাঁর নামে-বেনামে সম্পদ থাকার প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে। তাঁর, এবং তাঁর পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজন জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। কমিশন এই বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে।

মির্জা আজম ও তাঁর পরিবারের এত সম্পদের পেছনে মূল শক্তি তাঁর রাজনৈতিক প্রভাব। পুরো জামালপুরের রাজনীতিতে মির্জা আজমের অবস্থান ছিল অনেকটা রাজার মতো। এখানে তাঁর কথাই ছিল আইন। অন্যান্য এমপি, দলীয় নেতা-কর্মী ও প্রশাসনের সর্বস্তরের কর্মকর্তারা তাঁর কথায় ওঠবস করতেন। রাজনীতি, সরকারি দপ্তরের ঠিকাদারি, জমি দখল—সবই নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি।
খাদ্য বিভাগের পরিবহন ঠিকাদার থেকে রাজনীতিতে আসা মির্জা আজম সবচেয়ে বেশি অর্থ-সম্পদ গড়েছেন গত ১৬ বছরে। তাঁর ভয়ে দেড় দশকে ‘বোবা’ হয়ে থাকা মানুষগুলো এখন মুখ খুলতে শুরু করেছেন। একের পর বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে আজম পরিবারের নানা অন্যায়, অত্যাচার ও অবিচারের তথ্য।
এলাকাবাসীর অনেকের অভিযোগ, মির্জা আজম ক্ষমতায় থাকাকালে তাঁর স্ত্রী আলেয়ার নামে যে বিশাল বাগানবাড়ি গড়ে তুলেছেন, সেটির জমি ছিল জবরদখল করা। তাঁর বন্ধু ও আওয়ামী লীগ নেতা সোহরাব হোসেন বাবুলের মাধ্যমে এসব জমি দখল করেছেন। জমি হারানো অনেকে জমির মূল্য পেতে মির্জা আজম এবং স্ত্রী আলেয়ার সঙ্গে দেখা করতে চাইতেন। তখন দেখা তো দূরের কথা, উল্টো তাঁদের ওপর চলত নির্যাতন।
দেউরপাড় চন্দ্রা এলাকায় আওয়ামী লীগের সাবেক ওয়ার্ড সভাপতি মনিরুল হক ফজলু বলেছেন, ‘দীর্ঘদিন আমি এই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলাম। এরা আমার পদ খেয়েছে। এই আলেয়া গার্ডেনের জন্য আমার জমি নিয়েছে। মোট ২৬ শতাংশ জমির মধ্যে ১৩ শতাংশের দাম দিয়ে বাকি ১৩ শতাংশ দখল করে দেয়াল নির্মাণ করেছে।’
মির্জা আজমের দাপটে জমি হারিয়েছেন দেউড়পাড় চন্দ্রা এলাকার বিধবা নারী রেজিয়া বেগমও। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী নাই। ঘর নাই, বাড়ি নাই। মির্জা আজম আমার শেষ সম্বলটুকু কেড়ে নিয়েছে। কত ঘুরেছি। মির্জা আজমের বন্ধু সোহরাব হোসেন বাবুলের কাছে গেছি। কেউ জমির টাকা দেয়নি। মির্জা আজম ও তাঁর বউ আলেয়া জামালপুরে এলে খবর পেয়ে গেছি। ওর বউ গালিগালাজ করে তাড়িয়ে দিত। আমার জমিটা ফেরত চাই।’
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পরপরই এলাকার শত শত বিক্ষুব্ধ মানুষ আলেয়া গার্ডেন ভাঙচুর করে এবং আগুন ধরিয়ে দেয়। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে জামালপুর-৩ আসনের সাবেক এই এমপিকে ফোন করা হলেও তাঁর ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
জামালপুরের ‘রানিমা’ আলেয়া
মির্জা আজমের রাজনৈতিক প্রভাব সবচেয়ে বেশি কাজে লাগিয়েছেন তাঁর স্ত্রী দেওয়ান আলেয়া। অসীম ক্ষমতার কারণে তাঁকে বলা হতো ‘রানিমা’। তাঁর আশীর্বাদ থাকলেই জামালপুরে রাজনীতির পদপদবি মিলত সহজে। রানিমার আশীর্বাদেই ছাত্রনেতা থেকে জামালপুর পৌরসভার মেয়র, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন ছানোয়ার হোসেন ছানু। জানা গেছে, আলেয়ার রোষানলে পড়ে ২০২২ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ হারিয়েছেন ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী। এ ছাড়া বিভিন্ন দপ্তরের কাজ ও কর্মকর্তাদের বদলির তদবিরও করতেন আলেয়া।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক নারায়ণ পাল রানা রানিমার খুবই বিশ্বস্ত ছিলেন। তাঁর মাধ্যমেই রানিমা জমি দখল, থানার ওসিসহ বিভিন্ন কর্মকর্তার বদলি, বিভিন্ন দপ্তরের ঠিকাদারি কাজের কমিশন-বাণিজ্য করতেন।
এসব তদবির ও কমিশন-বাণিজ্য করে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। জামালপুর সাবরেজিস্ট্রি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, জামালপুর শহরের চারটি মৌজায় ১ হাজার ২৬ শতাংশ জমির খোঁজ পাওয়া গেছে আলেয়ার নামে। এগুলোর মধ্যে দেউরপাড় চন্দ্রা ও পলাশগড় মৌজায় রয়েছে ৮৮৩ শতাংশ জমি।
পিছিয়ে নেই অন্য আত্মীয়রাও
২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩ জেলায় জেএমবির সিরিজ বোমা হামলার প্রধান অভিযুক্ত শায়খ আবদুর রহমান ছিলেন মির্জা আজমের ভগ্নিপতি। জামালপুর শহরে মির্জা আজমের ছোট ভাই মির্জা রিপনের একক দাপট ছিল গণপূর্ত অধিদপ্তর, শিক্ষা প্রকৌশল এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগে। জেলার বড় বড় উন্নয়নকাজ হয়েছে তাঁর হাত দিয়ে। ছোট ভাই মির্জা জিল্লুর রহমান শিপন নিয়ন্ত্রণ করেছেন ক্রীড়া সংস্থা। মির্জা আজমের আরেক ছোট ভাই মির্জা গোলাম কিবরিয়া কবীর দুইবারের মাদারগঞ্জ পৌরসভার মেয়র। আরেক ছোট ভাই মির্জা সোহেল ছিলেন মাদারগঞ্জ প্রশাসনের ত্রাস। উপজেলার কাবিখা, টাবিখা, গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প, বেড়িবাঁধ থেকে শুরু করে সব উন্নয়নকাজ ছিল তাঁর কবজায়।
ঘরবাড়ি ভেঙে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়
২০১৩ সালের জামালপুর শহরের নয়াপাড়া পাঁচরাস্তা মোড় এলাকার একটি ভবনে বেসরকারি শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। মির্জা আজম ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য শতাধিক দরিদ্র মানুষের ঘরবাড়ি ভেঙে দিয়েছিলেন মির্জা আজম এবং তাঁর অনুসারীরা। ওই ক্যাম্পাসের জন্য বালু দিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদ ভরাট করেন তাঁরা। মানচিত্র থেকে বিলুপ্ত করে দেন নাওভাঙ্গা গ্রাম। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরপরই জমির মালিকেরা জমি ফেরতের দাবিতে জমিতে মালিকানা সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছেন।
পৌরসভার টাকায় ভিআইপি বিনোদন ক্লাব
জামালপুর শহরের পলাশগড় এলাকায় সাড়ে ৪ একর জমির ওপর ছিল পৌরসভার একমাত্র ভাগাড় বা ডাম্পিং স্টেশন। সেই ভাগাড়ে জামালপুর রিক্রিয়েশন ক্লাব নামের একটি ভিআইপি বিনোদন ক্লাব গড়ে তোলেন মির্জা আজম। ২০২১ সালে পুরো ডাম্পিং স্টেশন বন্ধ করে দিয়ে ওই জমি নামমাত্র মূল্যে ২০ বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয় রিক্রিয়েশন ক্লাবকে। মির্জা আজমকে খুশি করতে ওই ক্লাবের উন্নয়নকাজের জন্য জামালপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন ছানু কোটি কোটি টাকার প্রকল্প দেন। প্রকল্প দিয়েছে জেলা পরিষদও। রিক্রিয়েশন ক্লাবের সদস্য হওয়ার জন্য গুনতে হতো ৫ লাখ টাকা। মির্জা আজমকে খুশি করতেও দলের প্রভাবশালী অনেক নেতা-কর্মী ৫ লাখ টাকা দিয়ে সেখানে সদস্যপদ নেন। বর্তমানে ওই ক্লাবের সদস্য ৪৬৯ জন।
অভিযোগ রয়েছে, ক্লাবটিতে চলত অনৈতিক কাজ। আর ক্লাব নির্মাণের ফলে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ৬টি গ্রামের ২০ হাজার মানুষের চলাচলের রাস্তা। এ ছাড়া দখল করা হয়েছে কয়েকজনের জমি। এর প্রতিবাদ করতে গেলে হামলার শিকার হয়েছেন অনেকে।
পলাশগড় গ্রামের হারুন বলেন, ‘সে সময় রাস্তা বন্ধের প্রতিবাদ করায় পৌরসভার মেয়র ছানোয়ার হোসেন ছানু আমাকে পৌরসভায় নিয়ে মারধর করে। যদি রাস্তা নিয়ে বাড়াবাড়ি করি, তাহলে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করার হুমকি দিয়েছিল।’
একই এলাকার আপেল বলেন, ‘এই রাস্তা দিয়ে পলাশগড় গ্রামসহ ৮টি গ্রামের মানুষ চলাচল করত। রিক্রিয়েশন ক্লাব করার সময় সেই রাস্তা বন্ধ করা হয়েছে প্রাচীর দিয়ে। সরকারের কাছে দাবি করছি, আমাদের চলাচলের রাস্তাটি যেন খুলে দেওয়া হয়।’
রাজনীতিতে মির্জা আজমের উত্থান
ছাত্রজীবনে পড়াশোনার পাশাপাশি খাদ্য পরিবহনের কাজ করতেন মির্জা আজম। আশির দশকে নিজেই ট্রাক চালিয়ে খাদ্য পরিবহন করতেন। ১৯৮৬ সালে এরশাদ সরকারের উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন। নব্বইয়ের আন্দোলনে এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামালপুর-৩ (মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ) আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে প্রথম এমপি নির্বাচিত হন তিনি। এরপর মির্জা আজমকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। টানা সাতবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। এই আসন থেকে তাঁর বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়ার সাহস করেননি আওয়ামী লীগের কোনো নেতা। আর যাঁরা প্রার্থী হওয়ার সামান্য চিন্তাও করেছেন, তাঁদেরকে রাজনৈতিক বলি দেওয়া হয়েছে। যার দৃষ্টান্ত তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু হাজি দিদার পাশা। শেষমেশ তাঁকে বিএনপির রাজনীতি করতে হয়েছিল। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে মির্জা আজমকে দেওয়া হয় সরকারের বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব।
স্থানীয় নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, মির্জা আজম ১৯৯১ সালে এমপি হওয়ার পর জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতি কবজা করার পরিকল্পনা আঁটেন। সে সময় জেলা আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা ও জেলা কমিটিতে থাকা আইনজীবী মতিউর রহমান তালুকদারকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে নিজের হাতে রাখার চিন্তায় মরিয়া হয়ে ওঠেন। শুরু করেন নিজ দলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। দফায় দফায় মতিউর রহমান তালুকদারের ওপর দফায় দফায় হামলা হয়। শেষমেশ রাজনীতির পদ ছাড়তে হয় মতিউর রহমান তালুকদারকে। সে সময় মির্জা আজমের কারণে অনেক প্রবীণ রাজনীতিবিদকে আওয়ামী লীগ ছাড়তে হয়েছিল।
মির্জা আজমের হাতে সম্পদের চাবিকাঠি তুলে দেন মূলত আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘমেয়াদি আমলা জামালপুরের আরেক সন্তান আবুল কালাম আজাদ। তিনি ছিলেন সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব, বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব। তাঁর হাত দিয়েই গত ১৫ বছরে জামালপুর ও মেলান্দহ, মাদারগঞ্জে ৫০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়নকাজ হয়েছে। সেই কাজ করতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, গণপূর্ত, সড়ক ও জনপথ, এলজিইডি, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরসহ সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নকাজ নিয়ন্ত্রণ করতেন মির্জা আজম, তাঁর স্বজন ও অনুসারীরা।

জামালপুর শহরে সুরপাড়া দেউরপাড় চন্দ্রায় আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক এমপি মির্জা আজমের বিলাসবহুল রিসোর্ট ‘আলেয়া গার্ডেন’। সেই রিসোর্টের ভেতরে আছে দৃষ্টিনন্দন দুটি ভবনসহ পুকুর, গরুর খামার ও বিশাল বাগান। প্রায় ১০ একর জমির ওপর স্ত্রী দেওয়ান আলেয়ার নামে গড়া এই রিসোর্টের জন্য অন্যের জমি জবরদখল করেছেন তিনি।
আলেয়া গার্ডেন মির্জা আজমের বিপুল সম্পদের একটি নমুনামাত্র। পুরো জামালপুরে তাঁদের সম্পদ ও ক্ষমতা এতটাই বেশি যে গাড়ি-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় জেলার শীর্ষে আজম পরিবার। তাঁর স্ত্রী, সন্তান, পাঁচ ভাইসহ পরিবারের প্রত্যেকের নামে-বেনামে রয়েছে অঢেল সম্পদ। শুধু জামালপুর শহরেই মির্জা আজম, তাঁর স্ত্রী ও মেয়ের নামে রয়েছে প্রায় ১ হাজার ১২৮ শতাংশ জমি। শহরের প্রাণকেন্দ্র বকুলতলা এলাকায় কেউ ঘুরতে গেলে মির্জা আজমের দৃষ্টিনন্দন বাড়িটি দেখে চোখ এড়ানোর সুযোগ নেই।
জামালপুরের বাইরে রাজধানীর ধানমন্ডি ১৫ নম্বর সড়কের (পুরাতন ২৮ নম্বর) ১২ নম্বর প্লটটি প্রভাব খাটিয়ে দখল এবং পরে তা বহুতল ভবনে রূপান্তরের অভিযোগ রয়েছে মির্জা আজমের বিরুদ্ধে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এই তথ্যের উল্লেখ আছে। দুদকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ১৯৯৬ সালে এমপি থাকাকালীন নিকুঞ্জ-২ আবাসিক এলাকায় ৫ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দ নেন তিনি। পরে প্রভাব খাটিয়ে শ্রেণি পরিবর্তন করে বারিধারায় ১০ নম্বর সড়কে নতুন প্লটও বরাদ্দ নেন। আলোচিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশনে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ আছে মির্জা আজমের। কক্সবাজারের পাঁচ তারকা হোটেল সিগালেও তাঁর বিপুল বিনিয়োগ ও অংশীদারত্ব রয়েছে।
মির্জা আজমের বিপুল সম্পদের বিষয়ে দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, দুদক এই বিষয়ে গোয়েন্দা অনুসন্ধানে তাঁর নামে-বেনামে সম্পদ থাকার প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে। তাঁর, এবং তাঁর পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজন জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। কমিশন এই বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে।

মির্জা আজম ও তাঁর পরিবারের এত সম্পদের পেছনে মূল শক্তি তাঁর রাজনৈতিক প্রভাব। পুরো জামালপুরের রাজনীতিতে মির্জা আজমের অবস্থান ছিল অনেকটা রাজার মতো। এখানে তাঁর কথাই ছিল আইন। অন্যান্য এমপি, দলীয় নেতা-কর্মী ও প্রশাসনের সর্বস্তরের কর্মকর্তারা তাঁর কথায় ওঠবস করতেন। রাজনীতি, সরকারি দপ্তরের ঠিকাদারি, জমি দখল—সবই নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি।
খাদ্য বিভাগের পরিবহন ঠিকাদার থেকে রাজনীতিতে আসা মির্জা আজম সবচেয়ে বেশি অর্থ-সম্পদ গড়েছেন গত ১৬ বছরে। তাঁর ভয়ে দেড় দশকে ‘বোবা’ হয়ে থাকা মানুষগুলো এখন মুখ খুলতে শুরু করেছেন। একের পর বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে আজম পরিবারের নানা অন্যায়, অত্যাচার ও অবিচারের তথ্য।
এলাকাবাসীর অনেকের অভিযোগ, মির্জা আজম ক্ষমতায় থাকাকালে তাঁর স্ত্রী আলেয়ার নামে যে বিশাল বাগানবাড়ি গড়ে তুলেছেন, সেটির জমি ছিল জবরদখল করা। তাঁর বন্ধু ও আওয়ামী লীগ নেতা সোহরাব হোসেন বাবুলের মাধ্যমে এসব জমি দখল করেছেন। জমি হারানো অনেকে জমির মূল্য পেতে মির্জা আজম এবং স্ত্রী আলেয়ার সঙ্গে দেখা করতে চাইতেন। তখন দেখা তো দূরের কথা, উল্টো তাঁদের ওপর চলত নির্যাতন।
দেউরপাড় চন্দ্রা এলাকায় আওয়ামী লীগের সাবেক ওয়ার্ড সভাপতি মনিরুল হক ফজলু বলেছেন, ‘দীর্ঘদিন আমি এই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলাম। এরা আমার পদ খেয়েছে। এই আলেয়া গার্ডেনের জন্য আমার জমি নিয়েছে। মোট ২৬ শতাংশ জমির মধ্যে ১৩ শতাংশের দাম দিয়ে বাকি ১৩ শতাংশ দখল করে দেয়াল নির্মাণ করেছে।’
মির্জা আজমের দাপটে জমি হারিয়েছেন দেউড়পাড় চন্দ্রা এলাকার বিধবা নারী রেজিয়া বেগমও। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী নাই। ঘর নাই, বাড়ি নাই। মির্জা আজম আমার শেষ সম্বলটুকু কেড়ে নিয়েছে। কত ঘুরেছি। মির্জা আজমের বন্ধু সোহরাব হোসেন বাবুলের কাছে গেছি। কেউ জমির টাকা দেয়নি। মির্জা আজম ও তাঁর বউ আলেয়া জামালপুরে এলে খবর পেয়ে গেছি। ওর বউ গালিগালাজ করে তাড়িয়ে দিত। আমার জমিটা ফেরত চাই।’
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পরপরই এলাকার শত শত বিক্ষুব্ধ মানুষ আলেয়া গার্ডেন ভাঙচুর করে এবং আগুন ধরিয়ে দেয়। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে জামালপুর-৩ আসনের সাবেক এই এমপিকে ফোন করা হলেও তাঁর ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
জামালপুরের ‘রানিমা’ আলেয়া
মির্জা আজমের রাজনৈতিক প্রভাব সবচেয়ে বেশি কাজে লাগিয়েছেন তাঁর স্ত্রী দেওয়ান আলেয়া। অসীম ক্ষমতার কারণে তাঁকে বলা হতো ‘রানিমা’। তাঁর আশীর্বাদ থাকলেই জামালপুরে রাজনীতির পদপদবি মিলত সহজে। রানিমার আশীর্বাদেই ছাত্রনেতা থেকে জামালপুর পৌরসভার মেয়র, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন ছানোয়ার হোসেন ছানু। জানা গেছে, আলেয়ার রোষানলে পড়ে ২০২২ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ হারিয়েছেন ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী। এ ছাড়া বিভিন্ন দপ্তরের কাজ ও কর্মকর্তাদের বদলির তদবিরও করতেন আলেয়া।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক নারায়ণ পাল রানা রানিমার খুবই বিশ্বস্ত ছিলেন। তাঁর মাধ্যমেই রানিমা জমি দখল, থানার ওসিসহ বিভিন্ন কর্মকর্তার বদলি, বিভিন্ন দপ্তরের ঠিকাদারি কাজের কমিশন-বাণিজ্য করতেন।
এসব তদবির ও কমিশন-বাণিজ্য করে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। জামালপুর সাবরেজিস্ট্রি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, জামালপুর শহরের চারটি মৌজায় ১ হাজার ২৬ শতাংশ জমির খোঁজ পাওয়া গেছে আলেয়ার নামে। এগুলোর মধ্যে দেউরপাড় চন্দ্রা ও পলাশগড় মৌজায় রয়েছে ৮৮৩ শতাংশ জমি।
পিছিয়ে নেই অন্য আত্মীয়রাও
২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩ জেলায় জেএমবির সিরিজ বোমা হামলার প্রধান অভিযুক্ত শায়খ আবদুর রহমান ছিলেন মির্জা আজমের ভগ্নিপতি। জামালপুর শহরে মির্জা আজমের ছোট ভাই মির্জা রিপনের একক দাপট ছিল গণপূর্ত অধিদপ্তর, শিক্ষা প্রকৌশল এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগে। জেলার বড় বড় উন্নয়নকাজ হয়েছে তাঁর হাত দিয়ে। ছোট ভাই মির্জা জিল্লুর রহমান শিপন নিয়ন্ত্রণ করেছেন ক্রীড়া সংস্থা। মির্জা আজমের আরেক ছোট ভাই মির্জা গোলাম কিবরিয়া কবীর দুইবারের মাদারগঞ্জ পৌরসভার মেয়র। আরেক ছোট ভাই মির্জা সোহেল ছিলেন মাদারগঞ্জ প্রশাসনের ত্রাস। উপজেলার কাবিখা, টাবিখা, গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প, বেড়িবাঁধ থেকে শুরু করে সব উন্নয়নকাজ ছিল তাঁর কবজায়।
ঘরবাড়ি ভেঙে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়
২০১৩ সালের জামালপুর শহরের নয়াপাড়া পাঁচরাস্তা মোড় এলাকার একটি ভবনে বেসরকারি শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। মির্জা আজম ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য শতাধিক দরিদ্র মানুষের ঘরবাড়ি ভেঙে দিয়েছিলেন মির্জা আজম এবং তাঁর অনুসারীরা। ওই ক্যাম্পাসের জন্য বালু দিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদ ভরাট করেন তাঁরা। মানচিত্র থেকে বিলুপ্ত করে দেন নাওভাঙ্গা গ্রাম। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরপরই জমির মালিকেরা জমি ফেরতের দাবিতে জমিতে মালিকানা সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছেন।
পৌরসভার টাকায় ভিআইপি বিনোদন ক্লাব
জামালপুর শহরের পলাশগড় এলাকায় সাড়ে ৪ একর জমির ওপর ছিল পৌরসভার একমাত্র ভাগাড় বা ডাম্পিং স্টেশন। সেই ভাগাড়ে জামালপুর রিক্রিয়েশন ক্লাব নামের একটি ভিআইপি বিনোদন ক্লাব গড়ে তোলেন মির্জা আজম। ২০২১ সালে পুরো ডাম্পিং স্টেশন বন্ধ করে দিয়ে ওই জমি নামমাত্র মূল্যে ২০ বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয় রিক্রিয়েশন ক্লাবকে। মির্জা আজমকে খুশি করতে ওই ক্লাবের উন্নয়নকাজের জন্য জামালপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন ছানু কোটি কোটি টাকার প্রকল্প দেন। প্রকল্প দিয়েছে জেলা পরিষদও। রিক্রিয়েশন ক্লাবের সদস্য হওয়ার জন্য গুনতে হতো ৫ লাখ টাকা। মির্জা আজমকে খুশি করতেও দলের প্রভাবশালী অনেক নেতা-কর্মী ৫ লাখ টাকা দিয়ে সেখানে সদস্যপদ নেন। বর্তমানে ওই ক্লাবের সদস্য ৪৬৯ জন।
অভিযোগ রয়েছে, ক্লাবটিতে চলত অনৈতিক কাজ। আর ক্লাব নির্মাণের ফলে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ৬টি গ্রামের ২০ হাজার মানুষের চলাচলের রাস্তা। এ ছাড়া দখল করা হয়েছে কয়েকজনের জমি। এর প্রতিবাদ করতে গেলে হামলার শিকার হয়েছেন অনেকে।
পলাশগড় গ্রামের হারুন বলেন, ‘সে সময় রাস্তা বন্ধের প্রতিবাদ করায় পৌরসভার মেয়র ছানোয়ার হোসেন ছানু আমাকে পৌরসভায় নিয়ে মারধর করে। যদি রাস্তা নিয়ে বাড়াবাড়ি করি, তাহলে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করার হুমকি দিয়েছিল।’
একই এলাকার আপেল বলেন, ‘এই রাস্তা দিয়ে পলাশগড় গ্রামসহ ৮টি গ্রামের মানুষ চলাচল করত। রিক্রিয়েশন ক্লাব করার সময় সেই রাস্তা বন্ধ করা হয়েছে প্রাচীর দিয়ে। সরকারের কাছে দাবি করছি, আমাদের চলাচলের রাস্তাটি যেন খুলে দেওয়া হয়।’
রাজনীতিতে মির্জা আজমের উত্থান
ছাত্রজীবনে পড়াশোনার পাশাপাশি খাদ্য পরিবহনের কাজ করতেন মির্জা আজম। আশির দশকে নিজেই ট্রাক চালিয়ে খাদ্য পরিবহন করতেন। ১৯৮৬ সালে এরশাদ সরকারের উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন। নব্বইয়ের আন্দোলনে এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামালপুর-৩ (মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ) আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে প্রথম এমপি নির্বাচিত হন তিনি। এরপর মির্জা আজমকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। টানা সাতবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। এই আসন থেকে তাঁর বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়ার সাহস করেননি আওয়ামী লীগের কোনো নেতা। আর যাঁরা প্রার্থী হওয়ার সামান্য চিন্তাও করেছেন, তাঁদেরকে রাজনৈতিক বলি দেওয়া হয়েছে। যার দৃষ্টান্ত তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু হাজি দিদার পাশা। শেষমেশ তাঁকে বিএনপির রাজনীতি করতে হয়েছিল। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে মির্জা আজমকে দেওয়া হয় সরকারের বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব।
স্থানীয় নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, মির্জা আজম ১৯৯১ সালে এমপি হওয়ার পর জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতি কবজা করার পরিকল্পনা আঁটেন। সে সময় জেলা আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা ও জেলা কমিটিতে থাকা আইনজীবী মতিউর রহমান তালুকদারকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে নিজের হাতে রাখার চিন্তায় মরিয়া হয়ে ওঠেন। শুরু করেন নিজ দলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। দফায় দফায় মতিউর রহমান তালুকদারের ওপর দফায় দফায় হামলা হয়। শেষমেশ রাজনীতির পদ ছাড়তে হয় মতিউর রহমান তালুকদারকে। সে সময় মির্জা আজমের কারণে অনেক প্রবীণ রাজনীতিবিদকে আওয়ামী লীগ ছাড়তে হয়েছিল।
মির্জা আজমের হাতে সম্পদের চাবিকাঠি তুলে দেন মূলত আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘমেয়াদি আমলা জামালপুরের আরেক সন্তান আবুল কালাম আজাদ। তিনি ছিলেন সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব, বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব। তাঁর হাত দিয়েই গত ১৫ বছরে জামালপুর ও মেলান্দহ, মাদারগঞ্জে ৫০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়নকাজ হয়েছে। সেই কাজ করতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, গণপূর্ত, সড়ক ও জনপথ, এলজিইডি, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরসহ সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নকাজ নিয়ন্ত্রণ করতেন মির্জা আজম, তাঁর স্বজন ও অনুসারীরা।
জাহাঙ্গীর আলম, জামালপুর

জামালপুর শহরে সুরপাড়া দেউরপাড় চন্দ্রায় আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক এমপি মির্জা আজমের বিলাসবহুল রিসোর্ট ‘আলেয়া গার্ডেন’। সেই রিসোর্টের ভেতরে আছে দৃষ্টিনন্দন দুটি ভবনসহ পুকুর, গরুর খামার ও বিশাল বাগান। প্রায় ১০ একর জমির ওপর স্ত্রী দেওয়ান আলেয়ার নামে গড়া এই রিসোর্টের জন্য অন্যের জমি জবরদখল করেছেন তিনি।
আলেয়া গার্ডেন মির্জা আজমের বিপুল সম্পদের একটি নমুনামাত্র। পুরো জামালপুরে তাঁদের সম্পদ ও ক্ষমতা এতটাই বেশি যে গাড়ি-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় জেলার শীর্ষে আজম পরিবার। তাঁর স্ত্রী, সন্তান, পাঁচ ভাইসহ পরিবারের প্রত্যেকের নামে-বেনামে রয়েছে অঢেল সম্পদ। শুধু জামালপুর শহরেই মির্জা আজম, তাঁর স্ত্রী ও মেয়ের নামে রয়েছে প্রায় ১ হাজার ১২৮ শতাংশ জমি। শহরের প্রাণকেন্দ্র বকুলতলা এলাকায় কেউ ঘুরতে গেলে মির্জা আজমের দৃষ্টিনন্দন বাড়িটি দেখে চোখ এড়ানোর সুযোগ নেই।
জামালপুরের বাইরে রাজধানীর ধানমন্ডি ১৫ নম্বর সড়কের (পুরাতন ২৮ নম্বর) ১২ নম্বর প্লটটি প্রভাব খাটিয়ে দখল এবং পরে তা বহুতল ভবনে রূপান্তরের অভিযোগ রয়েছে মির্জা আজমের বিরুদ্ধে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এই তথ্যের উল্লেখ আছে। দুদকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ১৯৯৬ সালে এমপি থাকাকালীন নিকুঞ্জ-২ আবাসিক এলাকায় ৫ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দ নেন তিনি। পরে প্রভাব খাটিয়ে শ্রেণি পরিবর্তন করে বারিধারায় ১০ নম্বর সড়কে নতুন প্লটও বরাদ্দ নেন। আলোচিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশনে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ আছে মির্জা আজমের। কক্সবাজারের পাঁচ তারকা হোটেল সিগালেও তাঁর বিপুল বিনিয়োগ ও অংশীদারত্ব রয়েছে।
মির্জা আজমের বিপুল সম্পদের বিষয়ে দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, দুদক এই বিষয়ে গোয়েন্দা অনুসন্ধানে তাঁর নামে-বেনামে সম্পদ থাকার প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে। তাঁর, এবং তাঁর পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজন জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। কমিশন এই বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে।

মির্জা আজম ও তাঁর পরিবারের এত সম্পদের পেছনে মূল শক্তি তাঁর রাজনৈতিক প্রভাব। পুরো জামালপুরের রাজনীতিতে মির্জা আজমের অবস্থান ছিল অনেকটা রাজার মতো। এখানে তাঁর কথাই ছিল আইন। অন্যান্য এমপি, দলীয় নেতা-কর্মী ও প্রশাসনের সর্বস্তরের কর্মকর্তারা তাঁর কথায় ওঠবস করতেন। রাজনীতি, সরকারি দপ্তরের ঠিকাদারি, জমি দখল—সবই নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি।
খাদ্য বিভাগের পরিবহন ঠিকাদার থেকে রাজনীতিতে আসা মির্জা আজম সবচেয়ে বেশি অর্থ-সম্পদ গড়েছেন গত ১৬ বছরে। তাঁর ভয়ে দেড় দশকে ‘বোবা’ হয়ে থাকা মানুষগুলো এখন মুখ খুলতে শুরু করেছেন। একের পর বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে আজম পরিবারের নানা অন্যায়, অত্যাচার ও অবিচারের তথ্য।
এলাকাবাসীর অনেকের অভিযোগ, মির্জা আজম ক্ষমতায় থাকাকালে তাঁর স্ত্রী আলেয়ার নামে যে বিশাল বাগানবাড়ি গড়ে তুলেছেন, সেটির জমি ছিল জবরদখল করা। তাঁর বন্ধু ও আওয়ামী লীগ নেতা সোহরাব হোসেন বাবুলের মাধ্যমে এসব জমি দখল করেছেন। জমি হারানো অনেকে জমির মূল্য পেতে মির্জা আজম এবং স্ত্রী আলেয়ার সঙ্গে দেখা করতে চাইতেন। তখন দেখা তো দূরের কথা, উল্টো তাঁদের ওপর চলত নির্যাতন।
দেউরপাড় চন্দ্রা এলাকায় আওয়ামী লীগের সাবেক ওয়ার্ড সভাপতি মনিরুল হক ফজলু বলেছেন, ‘দীর্ঘদিন আমি এই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলাম। এরা আমার পদ খেয়েছে। এই আলেয়া গার্ডেনের জন্য আমার জমি নিয়েছে। মোট ২৬ শতাংশ জমির মধ্যে ১৩ শতাংশের দাম দিয়ে বাকি ১৩ শতাংশ দখল করে দেয়াল নির্মাণ করেছে।’
মির্জা আজমের দাপটে জমি হারিয়েছেন দেউড়পাড় চন্দ্রা এলাকার বিধবা নারী রেজিয়া বেগমও। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী নাই। ঘর নাই, বাড়ি নাই। মির্জা আজম আমার শেষ সম্বলটুকু কেড়ে নিয়েছে। কত ঘুরেছি। মির্জা আজমের বন্ধু সোহরাব হোসেন বাবুলের কাছে গেছি। কেউ জমির টাকা দেয়নি। মির্জা আজম ও তাঁর বউ আলেয়া জামালপুরে এলে খবর পেয়ে গেছি। ওর বউ গালিগালাজ করে তাড়িয়ে দিত। আমার জমিটা ফেরত চাই।’
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পরপরই এলাকার শত শত বিক্ষুব্ধ মানুষ আলেয়া গার্ডেন ভাঙচুর করে এবং আগুন ধরিয়ে দেয়। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে জামালপুর-৩ আসনের সাবেক এই এমপিকে ফোন করা হলেও তাঁর ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
জামালপুরের ‘রানিমা’ আলেয়া
মির্জা আজমের রাজনৈতিক প্রভাব সবচেয়ে বেশি কাজে লাগিয়েছেন তাঁর স্ত্রী দেওয়ান আলেয়া। অসীম ক্ষমতার কারণে তাঁকে বলা হতো ‘রানিমা’। তাঁর আশীর্বাদ থাকলেই জামালপুরে রাজনীতির পদপদবি মিলত সহজে। রানিমার আশীর্বাদেই ছাত্রনেতা থেকে জামালপুর পৌরসভার মেয়র, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন ছানোয়ার হোসেন ছানু। জানা গেছে, আলেয়ার রোষানলে পড়ে ২০২২ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ হারিয়েছেন ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী। এ ছাড়া বিভিন্ন দপ্তরের কাজ ও কর্মকর্তাদের বদলির তদবিরও করতেন আলেয়া।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক নারায়ণ পাল রানা রানিমার খুবই বিশ্বস্ত ছিলেন। তাঁর মাধ্যমেই রানিমা জমি দখল, থানার ওসিসহ বিভিন্ন কর্মকর্তার বদলি, বিভিন্ন দপ্তরের ঠিকাদারি কাজের কমিশন-বাণিজ্য করতেন।
এসব তদবির ও কমিশন-বাণিজ্য করে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। জামালপুর সাবরেজিস্ট্রি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, জামালপুর শহরের চারটি মৌজায় ১ হাজার ২৬ শতাংশ জমির খোঁজ পাওয়া গেছে আলেয়ার নামে। এগুলোর মধ্যে দেউরপাড় চন্দ্রা ও পলাশগড় মৌজায় রয়েছে ৮৮৩ শতাংশ জমি।
পিছিয়ে নেই অন্য আত্মীয়রাও
২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩ জেলায় জেএমবির সিরিজ বোমা হামলার প্রধান অভিযুক্ত শায়খ আবদুর রহমান ছিলেন মির্জা আজমের ভগ্নিপতি। জামালপুর শহরে মির্জা আজমের ছোট ভাই মির্জা রিপনের একক দাপট ছিল গণপূর্ত অধিদপ্তর, শিক্ষা প্রকৌশল এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগে। জেলার বড় বড় উন্নয়নকাজ হয়েছে তাঁর হাত দিয়ে। ছোট ভাই মির্জা জিল্লুর রহমান শিপন নিয়ন্ত্রণ করেছেন ক্রীড়া সংস্থা। মির্জা আজমের আরেক ছোট ভাই মির্জা গোলাম কিবরিয়া কবীর দুইবারের মাদারগঞ্জ পৌরসভার মেয়র। আরেক ছোট ভাই মির্জা সোহেল ছিলেন মাদারগঞ্জ প্রশাসনের ত্রাস। উপজেলার কাবিখা, টাবিখা, গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প, বেড়িবাঁধ থেকে শুরু করে সব উন্নয়নকাজ ছিল তাঁর কবজায়।
ঘরবাড়ি ভেঙে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়
২০১৩ সালের জামালপুর শহরের নয়াপাড়া পাঁচরাস্তা মোড় এলাকার একটি ভবনে বেসরকারি শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। মির্জা আজম ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য শতাধিক দরিদ্র মানুষের ঘরবাড়ি ভেঙে দিয়েছিলেন মির্জা আজম এবং তাঁর অনুসারীরা। ওই ক্যাম্পাসের জন্য বালু দিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদ ভরাট করেন তাঁরা। মানচিত্র থেকে বিলুপ্ত করে দেন নাওভাঙ্গা গ্রাম। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরপরই জমির মালিকেরা জমি ফেরতের দাবিতে জমিতে মালিকানা সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছেন।
পৌরসভার টাকায় ভিআইপি বিনোদন ক্লাব
জামালপুর শহরের পলাশগড় এলাকায় সাড়ে ৪ একর জমির ওপর ছিল পৌরসভার একমাত্র ভাগাড় বা ডাম্পিং স্টেশন। সেই ভাগাড়ে জামালপুর রিক্রিয়েশন ক্লাব নামের একটি ভিআইপি বিনোদন ক্লাব গড়ে তোলেন মির্জা আজম। ২০২১ সালে পুরো ডাম্পিং স্টেশন বন্ধ করে দিয়ে ওই জমি নামমাত্র মূল্যে ২০ বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয় রিক্রিয়েশন ক্লাবকে। মির্জা আজমকে খুশি করতে ওই ক্লাবের উন্নয়নকাজের জন্য জামালপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন ছানু কোটি কোটি টাকার প্রকল্প দেন। প্রকল্প দিয়েছে জেলা পরিষদও। রিক্রিয়েশন ক্লাবের সদস্য হওয়ার জন্য গুনতে হতো ৫ লাখ টাকা। মির্জা আজমকে খুশি করতেও দলের প্রভাবশালী অনেক নেতা-কর্মী ৫ লাখ টাকা দিয়ে সেখানে সদস্যপদ নেন। বর্তমানে ওই ক্লাবের সদস্য ৪৬৯ জন।
অভিযোগ রয়েছে, ক্লাবটিতে চলত অনৈতিক কাজ। আর ক্লাব নির্মাণের ফলে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ৬টি গ্রামের ২০ হাজার মানুষের চলাচলের রাস্তা। এ ছাড়া দখল করা হয়েছে কয়েকজনের জমি। এর প্রতিবাদ করতে গেলে হামলার শিকার হয়েছেন অনেকে।
পলাশগড় গ্রামের হারুন বলেন, ‘সে সময় রাস্তা বন্ধের প্রতিবাদ করায় পৌরসভার মেয়র ছানোয়ার হোসেন ছানু আমাকে পৌরসভায় নিয়ে মারধর করে। যদি রাস্তা নিয়ে বাড়াবাড়ি করি, তাহলে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করার হুমকি দিয়েছিল।’
একই এলাকার আপেল বলেন, ‘এই রাস্তা দিয়ে পলাশগড় গ্রামসহ ৮টি গ্রামের মানুষ চলাচল করত। রিক্রিয়েশন ক্লাব করার সময় সেই রাস্তা বন্ধ করা হয়েছে প্রাচীর দিয়ে। সরকারের কাছে দাবি করছি, আমাদের চলাচলের রাস্তাটি যেন খুলে দেওয়া হয়।’
রাজনীতিতে মির্জা আজমের উত্থান
ছাত্রজীবনে পড়াশোনার পাশাপাশি খাদ্য পরিবহনের কাজ করতেন মির্জা আজম। আশির দশকে নিজেই ট্রাক চালিয়ে খাদ্য পরিবহন করতেন। ১৯৮৬ সালে এরশাদ সরকারের উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন। নব্বইয়ের আন্দোলনে এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামালপুর-৩ (মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ) আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে প্রথম এমপি নির্বাচিত হন তিনি। এরপর মির্জা আজমকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। টানা সাতবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। এই আসন থেকে তাঁর বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়ার সাহস করেননি আওয়ামী লীগের কোনো নেতা। আর যাঁরা প্রার্থী হওয়ার সামান্য চিন্তাও করেছেন, তাঁদেরকে রাজনৈতিক বলি দেওয়া হয়েছে। যার দৃষ্টান্ত তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু হাজি দিদার পাশা। শেষমেশ তাঁকে বিএনপির রাজনীতি করতে হয়েছিল। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে মির্জা আজমকে দেওয়া হয় সরকারের বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব।
স্থানীয় নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, মির্জা আজম ১৯৯১ সালে এমপি হওয়ার পর জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতি কবজা করার পরিকল্পনা আঁটেন। সে সময় জেলা আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা ও জেলা কমিটিতে থাকা আইনজীবী মতিউর রহমান তালুকদারকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে নিজের হাতে রাখার চিন্তায় মরিয়া হয়ে ওঠেন। শুরু করেন নিজ দলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। দফায় দফায় মতিউর রহমান তালুকদারের ওপর দফায় দফায় হামলা হয়। শেষমেশ রাজনীতির পদ ছাড়তে হয় মতিউর রহমান তালুকদারকে। সে সময় মির্জা আজমের কারণে অনেক প্রবীণ রাজনীতিবিদকে আওয়ামী লীগ ছাড়তে হয়েছিল।
মির্জা আজমের হাতে সম্পদের চাবিকাঠি তুলে দেন মূলত আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘমেয়াদি আমলা জামালপুরের আরেক সন্তান আবুল কালাম আজাদ। তিনি ছিলেন সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব, বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব। তাঁর হাত দিয়েই গত ১৫ বছরে জামালপুর ও মেলান্দহ, মাদারগঞ্জে ৫০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়নকাজ হয়েছে। সেই কাজ করতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, গণপূর্ত, সড়ক ও জনপথ, এলজিইডি, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরসহ সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নকাজ নিয়ন্ত্রণ করতেন মির্জা আজম, তাঁর স্বজন ও অনুসারীরা।

জামালপুর শহরে সুরপাড়া দেউরপাড় চন্দ্রায় আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক এমপি মির্জা আজমের বিলাসবহুল রিসোর্ট ‘আলেয়া গার্ডেন’। সেই রিসোর্টের ভেতরে আছে দৃষ্টিনন্দন দুটি ভবনসহ পুকুর, গরুর খামার ও বিশাল বাগান। প্রায় ১০ একর জমির ওপর স্ত্রী দেওয়ান আলেয়ার নামে গড়া এই রিসোর্টের জন্য অন্যের জমি জবরদখল করেছেন তিনি।
আলেয়া গার্ডেন মির্জা আজমের বিপুল সম্পদের একটি নমুনামাত্র। পুরো জামালপুরে তাঁদের সম্পদ ও ক্ষমতা এতটাই বেশি যে গাড়ি-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় জেলার শীর্ষে আজম পরিবার। তাঁর স্ত্রী, সন্তান, পাঁচ ভাইসহ পরিবারের প্রত্যেকের নামে-বেনামে রয়েছে অঢেল সম্পদ। শুধু জামালপুর শহরেই মির্জা আজম, তাঁর স্ত্রী ও মেয়ের নামে রয়েছে প্রায় ১ হাজার ১২৮ শতাংশ জমি। শহরের প্রাণকেন্দ্র বকুলতলা এলাকায় কেউ ঘুরতে গেলে মির্জা আজমের দৃষ্টিনন্দন বাড়িটি দেখে চোখ এড়ানোর সুযোগ নেই।
জামালপুরের বাইরে রাজধানীর ধানমন্ডি ১৫ নম্বর সড়কের (পুরাতন ২৮ নম্বর) ১২ নম্বর প্লটটি প্রভাব খাটিয়ে দখল এবং পরে তা বহুতল ভবনে রূপান্তরের অভিযোগ রয়েছে মির্জা আজমের বিরুদ্ধে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এই তথ্যের উল্লেখ আছে। দুদকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ১৯৯৬ সালে এমপি থাকাকালীন নিকুঞ্জ-২ আবাসিক এলাকায় ৫ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দ নেন তিনি। পরে প্রভাব খাটিয়ে শ্রেণি পরিবর্তন করে বারিধারায় ১০ নম্বর সড়কে নতুন প্লটও বরাদ্দ নেন। আলোচিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশনে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ আছে মির্জা আজমের। কক্সবাজারের পাঁচ তারকা হোটেল সিগালেও তাঁর বিপুল বিনিয়োগ ও অংশীদারত্ব রয়েছে।
মির্জা আজমের বিপুল সম্পদের বিষয়ে দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, দুদক এই বিষয়ে গোয়েন্দা অনুসন্ধানে তাঁর নামে-বেনামে সম্পদ থাকার প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে। তাঁর, এবং তাঁর পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজন জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। কমিশন এই বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে।

মির্জা আজম ও তাঁর পরিবারের এত সম্পদের পেছনে মূল শক্তি তাঁর রাজনৈতিক প্রভাব। পুরো জামালপুরের রাজনীতিতে মির্জা আজমের অবস্থান ছিল অনেকটা রাজার মতো। এখানে তাঁর কথাই ছিল আইন। অন্যান্য এমপি, দলীয় নেতা-কর্মী ও প্রশাসনের সর্বস্তরের কর্মকর্তারা তাঁর কথায় ওঠবস করতেন। রাজনীতি, সরকারি দপ্তরের ঠিকাদারি, জমি দখল—সবই নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি।
খাদ্য বিভাগের পরিবহন ঠিকাদার থেকে রাজনীতিতে আসা মির্জা আজম সবচেয়ে বেশি অর্থ-সম্পদ গড়েছেন গত ১৬ বছরে। তাঁর ভয়ে দেড় দশকে ‘বোবা’ হয়ে থাকা মানুষগুলো এখন মুখ খুলতে শুরু করেছেন। একের পর বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে আজম পরিবারের নানা অন্যায়, অত্যাচার ও অবিচারের তথ্য।
এলাকাবাসীর অনেকের অভিযোগ, মির্জা আজম ক্ষমতায় থাকাকালে তাঁর স্ত্রী আলেয়ার নামে যে বিশাল বাগানবাড়ি গড়ে তুলেছেন, সেটির জমি ছিল জবরদখল করা। তাঁর বন্ধু ও আওয়ামী লীগ নেতা সোহরাব হোসেন বাবুলের মাধ্যমে এসব জমি দখল করেছেন। জমি হারানো অনেকে জমির মূল্য পেতে মির্জা আজম এবং স্ত্রী আলেয়ার সঙ্গে দেখা করতে চাইতেন। তখন দেখা তো দূরের কথা, উল্টো তাঁদের ওপর চলত নির্যাতন।
দেউরপাড় চন্দ্রা এলাকায় আওয়ামী লীগের সাবেক ওয়ার্ড সভাপতি মনিরুল হক ফজলু বলেছেন, ‘দীর্ঘদিন আমি এই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলাম। এরা আমার পদ খেয়েছে। এই আলেয়া গার্ডেনের জন্য আমার জমি নিয়েছে। মোট ২৬ শতাংশ জমির মধ্যে ১৩ শতাংশের দাম দিয়ে বাকি ১৩ শতাংশ দখল করে দেয়াল নির্মাণ করেছে।’
মির্জা আজমের দাপটে জমি হারিয়েছেন দেউড়পাড় চন্দ্রা এলাকার বিধবা নারী রেজিয়া বেগমও। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী নাই। ঘর নাই, বাড়ি নাই। মির্জা আজম আমার শেষ সম্বলটুকু কেড়ে নিয়েছে। কত ঘুরেছি। মির্জা আজমের বন্ধু সোহরাব হোসেন বাবুলের কাছে গেছি। কেউ জমির টাকা দেয়নি। মির্জা আজম ও তাঁর বউ আলেয়া জামালপুরে এলে খবর পেয়ে গেছি। ওর বউ গালিগালাজ করে তাড়িয়ে দিত। আমার জমিটা ফেরত চাই।’
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পরপরই এলাকার শত শত বিক্ষুব্ধ মানুষ আলেয়া গার্ডেন ভাঙচুর করে এবং আগুন ধরিয়ে দেয়। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে জামালপুর-৩ আসনের সাবেক এই এমপিকে ফোন করা হলেও তাঁর ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
জামালপুরের ‘রানিমা’ আলেয়া
মির্জা আজমের রাজনৈতিক প্রভাব সবচেয়ে বেশি কাজে লাগিয়েছেন তাঁর স্ত্রী দেওয়ান আলেয়া। অসীম ক্ষমতার কারণে তাঁকে বলা হতো ‘রানিমা’। তাঁর আশীর্বাদ থাকলেই জামালপুরে রাজনীতির পদপদবি মিলত সহজে। রানিমার আশীর্বাদেই ছাত্রনেতা থেকে জামালপুর পৌরসভার মেয়র, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন ছানোয়ার হোসেন ছানু। জানা গেছে, আলেয়ার রোষানলে পড়ে ২০২২ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ হারিয়েছেন ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী। এ ছাড়া বিভিন্ন দপ্তরের কাজ ও কর্মকর্তাদের বদলির তদবিরও করতেন আলেয়া।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক নারায়ণ পাল রানা রানিমার খুবই বিশ্বস্ত ছিলেন। তাঁর মাধ্যমেই রানিমা জমি দখল, থানার ওসিসহ বিভিন্ন কর্মকর্তার বদলি, বিভিন্ন দপ্তরের ঠিকাদারি কাজের কমিশন-বাণিজ্য করতেন।
এসব তদবির ও কমিশন-বাণিজ্য করে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। জামালপুর সাবরেজিস্ট্রি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, জামালপুর শহরের চারটি মৌজায় ১ হাজার ২৬ শতাংশ জমির খোঁজ পাওয়া গেছে আলেয়ার নামে। এগুলোর মধ্যে দেউরপাড় চন্দ্রা ও পলাশগড় মৌজায় রয়েছে ৮৮৩ শতাংশ জমি।
পিছিয়ে নেই অন্য আত্মীয়রাও
২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩ জেলায় জেএমবির সিরিজ বোমা হামলার প্রধান অভিযুক্ত শায়খ আবদুর রহমান ছিলেন মির্জা আজমের ভগ্নিপতি। জামালপুর শহরে মির্জা আজমের ছোট ভাই মির্জা রিপনের একক দাপট ছিল গণপূর্ত অধিদপ্তর, শিক্ষা প্রকৌশল এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগে। জেলার বড় বড় উন্নয়নকাজ হয়েছে তাঁর হাত দিয়ে। ছোট ভাই মির্জা জিল্লুর রহমান শিপন নিয়ন্ত্রণ করেছেন ক্রীড়া সংস্থা। মির্জা আজমের আরেক ছোট ভাই মির্জা গোলাম কিবরিয়া কবীর দুইবারের মাদারগঞ্জ পৌরসভার মেয়র। আরেক ছোট ভাই মির্জা সোহেল ছিলেন মাদারগঞ্জ প্রশাসনের ত্রাস। উপজেলার কাবিখা, টাবিখা, গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প, বেড়িবাঁধ থেকে শুরু করে সব উন্নয়নকাজ ছিল তাঁর কবজায়।
ঘরবাড়ি ভেঙে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়
২০১৩ সালের জামালপুর শহরের নয়াপাড়া পাঁচরাস্তা মোড় এলাকার একটি ভবনে বেসরকারি শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। মির্জা আজম ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য শতাধিক দরিদ্র মানুষের ঘরবাড়ি ভেঙে দিয়েছিলেন মির্জা আজম এবং তাঁর অনুসারীরা। ওই ক্যাম্পাসের জন্য বালু দিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদ ভরাট করেন তাঁরা। মানচিত্র থেকে বিলুপ্ত করে দেন নাওভাঙ্গা গ্রাম। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরপরই জমির মালিকেরা জমি ফেরতের দাবিতে জমিতে মালিকানা সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছেন।
পৌরসভার টাকায় ভিআইপি বিনোদন ক্লাব
জামালপুর শহরের পলাশগড় এলাকায় সাড়ে ৪ একর জমির ওপর ছিল পৌরসভার একমাত্র ভাগাড় বা ডাম্পিং স্টেশন। সেই ভাগাড়ে জামালপুর রিক্রিয়েশন ক্লাব নামের একটি ভিআইপি বিনোদন ক্লাব গড়ে তোলেন মির্জা আজম। ২০২১ সালে পুরো ডাম্পিং স্টেশন বন্ধ করে দিয়ে ওই জমি নামমাত্র মূল্যে ২০ বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয় রিক্রিয়েশন ক্লাবকে। মির্জা আজমকে খুশি করতে ওই ক্লাবের উন্নয়নকাজের জন্য জামালপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন ছানু কোটি কোটি টাকার প্রকল্প দেন। প্রকল্প দিয়েছে জেলা পরিষদও। রিক্রিয়েশন ক্লাবের সদস্য হওয়ার জন্য গুনতে হতো ৫ লাখ টাকা। মির্জা আজমকে খুশি করতেও দলের প্রভাবশালী অনেক নেতা-কর্মী ৫ লাখ টাকা দিয়ে সেখানে সদস্যপদ নেন। বর্তমানে ওই ক্লাবের সদস্য ৪৬৯ জন।
অভিযোগ রয়েছে, ক্লাবটিতে চলত অনৈতিক কাজ। আর ক্লাব নির্মাণের ফলে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ৬টি গ্রামের ২০ হাজার মানুষের চলাচলের রাস্তা। এ ছাড়া দখল করা হয়েছে কয়েকজনের জমি। এর প্রতিবাদ করতে গেলে হামলার শিকার হয়েছেন অনেকে।
পলাশগড় গ্রামের হারুন বলেন, ‘সে সময় রাস্তা বন্ধের প্রতিবাদ করায় পৌরসভার মেয়র ছানোয়ার হোসেন ছানু আমাকে পৌরসভায় নিয়ে মারধর করে। যদি রাস্তা নিয়ে বাড়াবাড়ি করি, তাহলে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করার হুমকি দিয়েছিল।’
একই এলাকার আপেল বলেন, ‘এই রাস্তা দিয়ে পলাশগড় গ্রামসহ ৮টি গ্রামের মানুষ চলাচল করত। রিক্রিয়েশন ক্লাব করার সময় সেই রাস্তা বন্ধ করা হয়েছে প্রাচীর দিয়ে। সরকারের কাছে দাবি করছি, আমাদের চলাচলের রাস্তাটি যেন খুলে দেওয়া হয়।’
রাজনীতিতে মির্জা আজমের উত্থান
ছাত্রজীবনে পড়াশোনার পাশাপাশি খাদ্য পরিবহনের কাজ করতেন মির্জা আজম। আশির দশকে নিজেই ট্রাক চালিয়ে খাদ্য পরিবহন করতেন। ১৯৮৬ সালে এরশাদ সরকারের উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন। নব্বইয়ের আন্দোলনে এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামালপুর-৩ (মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ) আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে প্রথম এমপি নির্বাচিত হন তিনি। এরপর মির্জা আজমকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। টানা সাতবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। এই আসন থেকে তাঁর বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়ার সাহস করেননি আওয়ামী লীগের কোনো নেতা। আর যাঁরা প্রার্থী হওয়ার সামান্য চিন্তাও করেছেন, তাঁদেরকে রাজনৈতিক বলি দেওয়া হয়েছে। যার দৃষ্টান্ত তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু হাজি দিদার পাশা। শেষমেশ তাঁকে বিএনপির রাজনীতি করতে হয়েছিল। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে মির্জা আজমকে দেওয়া হয় সরকারের বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব।
স্থানীয় নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, মির্জা আজম ১৯৯১ সালে এমপি হওয়ার পর জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতি কবজা করার পরিকল্পনা আঁটেন। সে সময় জেলা আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা ও জেলা কমিটিতে থাকা আইনজীবী মতিউর রহমান তালুকদারকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে নিজের হাতে রাখার চিন্তায় মরিয়া হয়ে ওঠেন। শুরু করেন নিজ দলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। দফায় দফায় মতিউর রহমান তালুকদারের ওপর দফায় দফায় হামলা হয়। শেষমেশ রাজনীতির পদ ছাড়তে হয় মতিউর রহমান তালুকদারকে। সে সময় মির্জা আজমের কারণে অনেক প্রবীণ রাজনীতিবিদকে আওয়ামী লীগ ছাড়তে হয়েছিল।
মির্জা আজমের হাতে সম্পদের চাবিকাঠি তুলে দেন মূলত আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘমেয়াদি আমলা জামালপুরের আরেক সন্তান আবুল কালাম আজাদ। তিনি ছিলেন সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব, বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব। তাঁর হাত দিয়েই গত ১৫ বছরে জামালপুর ও মেলান্দহ, মাদারগঞ্জে ৫০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়নকাজ হয়েছে। সেই কাজ করতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, গণপূর্ত, সড়ক ও জনপথ, এলজিইডি, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরসহ সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নকাজ নিয়ন্ত্রণ করতেন মির্জা আজম, তাঁর স্বজন ও অনুসারীরা।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

জামালপুর শহরে সুরপাড়া দেউরপাড় চন্দ্রায় আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক এমপি মির্জা আজমের বিলাসবহুল রিসোর্ট ‘আলেয়া গার্ডেন’। সেই রিসোর্টের ভেতরে আছে দৃষ্টিনন্দন দুটি ভবনসহ পুকুর, গরুর খামার ও বিশাল বাগান। প্রায় ১০ একর জমির ওপর স্ত্রী দেওয়ান আলেয়ার নামে গড়া এই রিসোর্টের জন্য অন্যের জমি জবরদখল করেছেন তিনি।
২৬ অক্টোবর ২০২৪
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

জামালপুর শহরে সুরপাড়া দেউরপাড় চন্দ্রায় আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক এমপি মির্জা আজমের বিলাসবহুল রিসোর্ট ‘আলেয়া গার্ডেন’। সেই রিসোর্টের ভেতরে আছে দৃষ্টিনন্দন দুটি ভবনসহ পুকুর, গরুর খামার ও বিশাল বাগান। প্রায় ১০ একর জমির ওপর স্ত্রী দেওয়ান আলেয়ার নামে গড়া এই রিসোর্টের জন্য অন্যের জমি জবরদখল করেছেন তিনি।
২৬ অক্টোবর ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

জামালপুর শহরে সুরপাড়া দেউরপাড় চন্দ্রায় আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক এমপি মির্জা আজমের বিলাসবহুল রিসোর্ট ‘আলেয়া গার্ডেন’। সেই রিসোর্টের ভেতরে আছে দৃষ্টিনন্দন দুটি ভবনসহ পুকুর, গরুর খামার ও বিশাল বাগান। প্রায় ১০ একর জমির ওপর স্ত্রী দেওয়ান আলেয়ার নামে গড়া এই রিসোর্টের জন্য অন্যের জমি জবরদখল করেছেন তিনি।
২৬ অক্টোবর ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

জামালপুর শহরে সুরপাড়া দেউরপাড় চন্দ্রায় আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক এমপি মির্জা আজমের বিলাসবহুল রিসোর্ট ‘আলেয়া গার্ডেন’। সেই রিসোর্টের ভেতরে আছে দৃষ্টিনন্দন দুটি ভবনসহ পুকুর, গরুর খামার ও বিশাল বাগান। প্রায় ১০ একর জমির ওপর স্ত্রী দেওয়ান আলেয়ার নামে গড়া এই রিসোর্টের জন্য অন্যের জমি জবরদখল করেছেন তিনি।
২৬ অক্টোবর ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫