Ajker Patrika

অদক্ষতার দায় কতটুকু

অরুণ কর্মকার
আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২৩, ১৬: ৫০
অদক্ষতার দায় কতটুকু

পৃথিবীর কক্ষপথ যেমন বৃত্তবন্দী, মানুষের জীবন চলার পথও বোধ হয় তেমনি। ঘুরেফিরে একই বৃত্তে চলাচল। বারবার একই বিন্দুতে গিয়ে মেশা। বৃত্তের বাইরে যাওয়ার খুব একটা সুযোগ নেই। মানুষের ক্ষেত্রে সাধারণের তো একেবারেই না।

তবে সরকার যে জনসাধারণ নয়, সে তো সবার জানা কথা। সম্পর্ক যা আছে এই দুইয়ের মধ্যে তা হলো, শাসক ও শাসিতের। যদিও শাসকের হাতে শাসনের রাজদণ্ড তুলে দেয় জনসাধারণই। তার কাজ ওইটুকুই। তারপর সেই দণ্ডের আঘাত যখন-তখন তার ঘাড়ে-পিঠে পড়তেও কোনো বাধা নেই।

এই দুস্তর ব্যবধান রচিত হওয়ার পরও, কখনো কখনো সরকার ও জনসাধারণের ভাগ্য, দুর্ভাগ্য কিংবা সৌভাগ্য, অথবা বলা যেতে পারে ওই দুইয়ের অবস্থা কিংবা অবস্থান বোধ হয় একই বিন্দুতে মিলিত হতে পারে। নিশ্চয়ই পারে। না হলে আজকের অবস্থা দেখছি কী করে! অবস্থাটা হলো দায়ভারের।

ইংরেজিতে ‘ভিকটিম অব সাকসেস’ বলে একটা কথা আছে। এর সরলার্থ হলো, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের যথেষ্ট সুখ্যাতি এবং সাফল্য অর্জন সত্ত্বেও বিরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া। অনেকটা রবীন্দ্রনাথের ‘খ্যাতির বিড়ম্বনা’র মতো। অবস্থা ও অবস্থানের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার খাতিরে আমরা একে বলতে পারি সাফল্যের দায়ভার। কিংবা বলা যেতে পারে, উন্নয়নের দায়ভারও। ১২-১৪ বছরে দেশে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের নয়ছয় ছাড়া অন্য প্রায় সব ক্ষেত্রে উন্নয়ন ও অগ্রগতি যে হয়েছে, তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। এই উন্নয়ন আন্তর্জাতিক পর্যায়েও স্বীকৃত। আর এখন সেই আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিই আমাদের উন্নয়নকে এক ভারী বোঝা করে তুলেছে। এই বোঝা বহন করতে জনসাধারণের কষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে সরকারেরও উপায় নেই এই বোঝা জনসাধারণের ঘাড়ে না চাপিয়ে অন্য কোনো পন্থা অবলম্বন করার। এই সেই বিন্দু, যেখানে শাসক ও শাসিত, সরকার ও জনসাধারণ আজ একাকার হয়ে গেছে।

তবে প্রশ্ন হলো, এ জন্য কি শুধু আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিই দায়ী? সরকারের নীতি, অদক্ষতা এসবের কি কোনো দায় নেই? কেউ বলতে পারেন, নেই। কেউ বলতে পারেন, নিশ্চয়ই আছে। এ প্রসঙ্গে আমরা দু-একটি বিষয় আলোচনা করে দেখতে পারি।

প্রথমেই আলোচনায় আসবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। কারণ, এই খাতই হলো অর্থনীতি তথা উন্নয়নের মৌলিক ভিত্তি। তা ছাড়া, ১৪ বছর ধরে ক্রমবর্ধমান চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধিতে সরকারের সাফল্য প্রশ্নাতীত। একইভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য অপরিহার্য জ্বালানি সংস্থানে সরকারের ব্যর্থতা নিয়েও প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই।

এক যুগে নিজস্ব জ্বালানি সম্পদের অনুসন্ধান ও আহরণ যেমন বাড়েনি, তেমনি চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানি আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোও তৈরি করা যায়নি। যেটুকু হয়েছে তা চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট নয়। অথচ সরকার জ্বালানি আমদানির ওপরই ভরসা করেছে বেশি।

এখন অবস্থা হয়েছে এমন যে দেশের সম্পদ আহরণ বাড়িয়ে দুই-এক বছরের মধ্যে ঘাটতি পূরণ সম্ভব হবে না। আবার বিশ্ববাজারে দাম বাড়লে অর্থের অভাবে এবং দাম কমলে অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতায় চাহিদা অনুযায়ী আমদানি করা সম্ভব হবে না। ফলাফল হলো, জ্বালানির ঘাটতি অব্যাহত থাকবে। কত দিন, কত বছর—কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারবে না।

এর মধ্যে শীতকাল এলে বিদ্যুৎ-জ্বালানির চাহিদা কমবে। তাই বিদ্যুৎ কম উৎপাদন করলেও লোডশেডিং না করলেও চলতে পারে। কিন্তু গ্যাসের ঘাটতি চলবে। জ্বালানি ঘাটতির চক্র থেকে বের হতে সময় লাগবে।

গত ১৪ বছরে বিদ্যুতের পাইকারি (বিতরণ কোম্পানিগুলোর কাছে পিডিবির বিক্রি) দাম বেড়েছে ১১ বার। গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ানো হয়েছে ১৩ বার। এই দাম আরও অনেক বাড়বে। কারণ, পিডিবির (বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড) হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ প্রায় ১১ টাকা। তারা পাইকারি বিক্রি করে গড়ে ৬.৭০ টাকা। প্রতি ইউনিটে ঘাটতি ৪.৩০ টাকা। এই ঘাটতি পূরণে সরকার আর ভর্তুকি না দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে আইএমএফের কাছে। পর্যায়ক্রমে এই ভর্তুকি তুলে নেওয়া হবে; অর্থাৎ পর্যায়ক্রমে দামও সমন্বয় করা হবে, যার অধিকাংশই হবে দাম বাড়ানো।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও গণমাধ্যমকে বলেছেন, বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয়ের ঘাটতি পোষাতে দাম বাড়ানো (সমন্বয়) ছাড়া উপায় নেই। এখানে আরেকটি প্রশ্নের উদ্ভব হয়, উৎপাদন খরচ এত বেশি কি শুধু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধজনিত বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বাড়ার জন্য? নাকি বিদ্যুতের উৎপাদন প্রকল্প গ্রহণ, নেগোসিয়েশন এবং চুক্তি স্বাক্ষরে অদক্ষতাও কারণ?

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের মুখ থেকে আমরা একসময় শুনেছি, স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনার বিষয়ে পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় সমস্যা হয়েছে। তারপর শুনেছি, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের নেগোসিয়েশনের বিষয়ে পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। তাই ভারতের আদানি গ্রুপ পিডিবিকে মুরগি বানিয়েছে। সর্বশেষ খবর বেরিয়েছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অর্থায়ন চুক্তিতে ‘কমিটমেন্ট ফি (অঙ্গীকার ফি)’ নামক এক অযৌক্তিক জরিমানা আরোপের। এই যে সব চুক্তি আর কেনাকাটা, তাতে সব সমস্যাই যে হয়েছে সরকারি সংশ্লিষ্টদের অনিচ্ছাকৃত এবং অনভিজ্ঞতার কারণে, এ কথা জনসাধারণ চোখ বুজে বিশ্বাস করবে কেন? এসব চুক্তি এবং কেনাকাটায় সরকারের কিংবা সরকারের ঘনিষ্ঠ কোনো ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের কোনো লাভ হয়েছে কি না, তা-ও তো ভেবে দেখার বিষয় হতে পারে।

জ্বালানি প্রসঙ্গে আরও বলা যায়, বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার আগেও আমরা চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানি, বিশেষ করে গ্যাস সরবরাহ করতে পারিনি। দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস উত্তোলন কমে যাচ্ছিল। আবার চাহিদা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ গ্যাস আমদানি করার মতো অবকাঠামোও ছিল না। এখনো নেই। সুতরাং বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধিই দেশে গ্যাস সরবরাহ কমার একমাত্র কারণ নয়। নিজস্ব গ্যাস উত্তোলনের সক্ষমতা বেশি থাকলে বিশ্ববাজার আমাদের গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত করতে পারত না।

উদ্ভূত যেকোনো পরিস্থিতিতে, যেকোনো সময় জ্বালানির বিশ্ববাজারের অস্থিতিশীলতার আশঙ্কাও আমাদের কারও অজানা ছিল না। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ের সক্ষমতা যে সীমিত, তা-ও আমাদের জানা। তা সত্ত্বেও নিজেদের জ্বালানি সম্পদ আহরণের সক্ষমতা বাড়িয়ে অন্তত আপৎকালীন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার মতো কোনো পদক্ষেপও আমরা নিইনি। নিলে আমাদের গ্যাস সরবরাহে বিশেষ কোনো ঘাটতি হতো না। বিদ্যুৎ, সার, শিল্প উৎপাদন স্বাভাবিক রাখা যেত। সরকার কিংবা জনসাধারণ কাউকেই ‘ভিকটিম অব সাকসেস’ হতে হতো না।

এবার আসি অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রসঙ্গে। অবকাঠামো উন্নয়ন পরিকল্পনার মৌলিক নীতি কী? আমরা কি তা অনুসরণ করে প্রকল্প গ্রহণ করি? অবকাঠামোগত যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করার আগে ওই প্রকল্পের আর্থসামাজিক প্রভাব নিরূপণ ও মূল্যায়ন করা হয়। তাতে প্রকল্পটি কত ব্যয়ে এবং কত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা গেলে আর্থসামাজিক উন্নয়নের সহায়ক হবে, তা-ও নিরূপণ করা হয়। তাই যেকোনো দৃশ্যমান অবকাঠামোই যেমন উন্নয়ন প্রকল্প নয়, তেমনি কোনো অবকাঠামো যৌক্তিক ব্যয় ও নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়িত না হলে তা থেকে পরিকল্পিত আর্থিক ও সামাজিক রিটার্ন পাওয়া সম্ভব নয়। ফলে এ ধরনের প্রকল্প উন্নয়নের পরিবর্তে দেশের অর্থনীতির জন্য বাড়তি বোঝা সৃষ্টি করে।

আমাদের কোনো উন্নয়ন প্রকল্পই কি নির্ধারিত ব্যয়ে এবং নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হয়? আমাদের জাতীয় সম্পদ ও জাতীয় আয়ের সুষম বণ্টনের ব্যবস্থা কি আছে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর যদি না হয়, তাহলে তার ফল নিয়ে বিশেষভাবে ভেবে দেখার অবকাশ থাকে বৈকি। কেননা, এ ধরনের প্রকল্প দেশের আর্থসামাজিক ব্যবস্থায় যে বিরূপ প্রভাব ফেলে, তা সামাজিক বৈষম্য বৃদ্ধি এবং অস্থিরতার কারণ হয়ে ওঠে।

অরুণ কর্মকার,জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত