Ajker Patrika

ইউক্রেন বারবার উঠে দাঁড়িয়েছে

ইউভাল নোয়াহ হারারি
আপডেট : ০২ মার্চ ২০২২, ১৪: ৪৬
ইউক্রেন বারবার উঠে দাঁড়িয়েছে

ইউক্রেন সংকটের ঠিক মাঝখানে ইতিহাসের প্রকৃতি ও মানবধর্ম সম্পর্কে একটি মৌলিক প্রশ্ন রয়েছে। প্রশ্নটি হচ্ছে—পরিবর্তন কি সম্ভব? মানুষ কি তার আচরণ পরিবর্তন করতে পারে, নাকি ঐতিহাসিকভাবে পুনরাবৃত্তি করে যায়? মানুষ তার সাজসজ্জার পরিবর্তন করা ছাড়া আর কীই-বা করতে পারে? সে কি অতীতের ট্র্যাজেডির পুনরাবৃত্তিতে শুধু নিন্দাই জানিয়ে যায়?

পরিবর্তনের সম্ভাবনাকে খুব দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে চিন্তাবিদদের একটি দল। তারা মনে করেন, পৃথিবী একটি জঙ্গল। এখানে দুর্বলের ওপর সবলেরা নিপীড়ন চালায়। এখানে একমাত্র সামরিক শক্তিই এক দেশের আক্রমণ থেকে আরেক দেশকে রক্ষা করে। পৃথিবী সব সময় এভাবেই চলেছে। আগামী দিনগুলোতেও এভাবেই চলবে। যারা এই জঙ্গলের আইনে বিশ্বাস করে না, তারা আসলে নিজেদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। নিজেদের অস্তিত্বকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। তারা খুব বেশি দিন টিকে থাকতে পারবে না এই পৃথিবীতে।

অন্য আরেক দল চিন্তাবিদ মনে করেন, তথাকথিত ‘জঙ্গল আইন’টি মোটেও প্রকৃতিসম্মত নয়। এই আইন মানুষই তৈরি করেছে এবং মানুষই এর পরিবর্তন করতে পারে।
জনপ্রিয় এসব ভ্রান্ত ধারণার বিপরীতেও কথা আছে। পৃথিবীর প্রথম সংঘটিত যুদ্ধের সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে আজ থেকে ১৩ হাজার বছর আগের প্রত্নতাত্ত্বিক নথিতে। এমনকি সেই তারিখের পরেও পৃথিবীতে অনেক অনেক সময় বয়ে গেছে, যে সময়গুলোতে যুদ্ধ হয়েছে, কিন্তু তার কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ নেই। যুদ্ধ প্রকৃতির কোনো মৌলিক শক্তি নয়। যুদ্ধের তীব্রতা ও অস্তিত্ব নির্ভর করে প্রযুক্তি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির ওপর। এই কারণগুলো যেমন পরিবর্তিত হয়, তেমনি পরিবর্তিত হয় যুদ্ধও।

এ রকম পরিবর্তনের প্রমাণ আমাদের চারপাশে আরও আছে। কয়েক প্রজন্ম ধরে বিশ্বের পরাশক্তিগুলো পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা বাড়িয়েছে। এই অস্ত্র বৃদ্ধি তাদের যুদ্ধংদেহী মানসিকতাকে হৃষ্টপুষ্ট করেছে। ফলে অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, পরাশক্তিগুলো সম্মিলিতভাবে আত্মহত্যা করার মতো পাগলামি করতে যাচ্ছে। তবে যুদ্ধ এড়ানোর জন্য কম হিংসাত্মক উপায়ও খুঁজতে বাধ্য হচ্ছে পরাশক্তিগুলো। সে কারণেই গত সাত দশকে পরাশক্তিগুলোর মধ্যে সরাসরি কোনো যুদ্ধ হয়নি।আর এই সময়ের মধ্যে পৃথিবীর অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বস্তুবাদী থেকে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতিতে রূপান্তরিত হয়েছে। একসময় পৃথিবীর সম্পদের প্রধান উৎস ছিল সোনার খনি, গমের খেত, তেলের খনি—এ রকম বৈষয়িক সম্পদ। এখন সম্পদের মূল উৎস হচ্ছে জ্ঞান। আপনি এই যুগে বলপ্রয়োগ করে তেলের খনি দখল করতে পারেন, কিন্তু এই পন্থায় জ্ঞান অর্জন সম্ভব নয়। ফলে বলপ্রয়োগ থেকে মুনাফার অর্জনের সম্ভাবনা কমে গেছে।

শান্তির পরিমাপক

যুদ্ধ করার মানসিকতার পরিবর্তন যে ঘটেছে, তা অসংখ্য পরিসংখ্যানে প্রমাণিত। ১৯৪৫ সাল থেকে যুদ্ধের মাধ্যমে দেশ দখল করা তুলনামূলকভাবে বিরল হয়ে উঠেছে। বাইরের কোনো দেশ একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত রাষ্ট্রকে দখল করে নিয়েছে এবং মানচিত্র থেকে মুছে ফেলেছে—এমন ঘটনা ঘটেনি। তবে গৃহযুদ্ধ ও বিদ্রোহের মতো নানা ঘটনা অবশ্য ঘটেছে। এসব সংঘাতকে বিবেচনায় নিয়েও বলা যায়, একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দুই দশকে আত্মহত্যা, গাড়ি দুর্ঘটনা বা স্থূলতাজনিত রোগের তুলনায় মানবসৃষ্ট সহিংসতায় কম মানুষ মারা গেছে। চিনির চেয়ে বারুদ কম প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে।

সাম্প্রতিক দশকগুলোতে শান্তির মানে দাঁড়িয়েছে ‘যুদ্ধের অবাস্তবতা’। অনেক পরাশক্তি দেশের জন্যই প্রতিবেশী দেশ আক্রমণ করা এবং জয় করা প্রায় অকল্পনীয় হয়ে উঠেছে। আমি মধ্যপ্রাচ্যে বাস করি, সুতরাং আমি এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল যে এই প্রবণতাগুলোরও ব্যতিক্রম রয়েছে। তবে যুদ্ধের একটি অবাস্তব ধারণা হয়ে ওঠাকে স্বীকার করে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, এর ব্যতিক্রম চিহ্নিত করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।

এই ‘নতুন শান্তি’র বিষয়টি শুধু পরিসংখ্যানগত সাফল্য বা হিপিদের কল্পকাহিনির মতো ব্যাপার নয়। এটি স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে ঠান্ডা মাথায় হিসাব করা বার্ষিক বাজেটে। সাম্প্রতিক দশকে বিশ্বজুড়ে সরকারগুলো তাদের সশস্ত্র বাহিনীর জন্য বাজেটে গড়ে মাত্র ৬ দশমিক ৫ শতাংশ ব্যয় করেছে। এর চেয়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য কল্যাণমূলক খাতে ব্যয় করা হয়েছে ঢের বেশি।

এটি মানব ইতিহাসের এক আশ্চর্যজনক ও অভিনব পরিবর্তন। যদিও মানুষ একে সাধারণত ‘প্রাপ্য’ হিসেবে বিবেচনা করতে পছন্দ করে। হাজার হাজার বছর ধরে আমরা দেখে এসেছি, প্রত্যেক যুবরাজ, খান, সুলতান ও সম্রাট তাঁদের বাজেটের সবচেয়ে বেশি ব্যয় করতেন সামরিক খাতে। তাঁরা জনসাধারণের জন্য শিক্ষা বা চিকিৎসা সহায়তার জন্য খুব কম অর্থই খরচ করতেন।

যুদ্ধ কমে আসার এ বিষয়টি স্বর্গীয় কোনো আশীর্বাদ নয় বা প্রকৃতির আইনের কোনো নাটকীয় পরিবর্তনেও এটি ঘটেনি। মানুষ অপেক্ষাকৃত ভালো বিকল্প বেছে নেওয়াতেই এমনটা ঘটেছে। মানুষই যুদ্ধের বদলে অন্য পন্থা বেছে নিয়েছে। আধুনিক সভ্যতায় রাজনৈতিক ও নৈতিকভাবে সবচেয়ে বড় অর্জন এটি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এটি মানুষের ইচ্ছাতেই ঘটেছে বলে এর উল্টোটাও সম্ভব।

পৃথিবীতে প্রযুক্তি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির পরিবর্তন এখনো ঘটছে। সাইবার অস্ত্রের উত্থান, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত অর্থনীতি এবং নবধারার সামরিক সংস্কৃতির কারণে আমরা হয়তো অচিরেই যুদ্ধের একটি নতুন যুগ দেখব। এ কারণেই রুশ বাহিনীর ইউক্রেন আক্রমণের হুমকি পৃথিবীর মানুষকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। পৃথিবীর শক্তিশালী দেশগুলো যদি তাদের প্রতিবেশী দুর্বল দেশগুলোর ওপর নেকড়ের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে, তবে তা সারা বিশ্বের মানুষের অনুভূতি ও আচরণকে অবশ্যই প্রভাবিত করবে। জঙ্গলের আইন ফিরে আসার প্রথম ও সবচেয়ে সুস্পষ্ট সাফল্য হবে অন্য সবকিছুর চেয়ে সামরিক ব্যয়ে অর্থের জোগান বাড়ানো এবং এর অর্থ হচ্ছে শিক্ষক, নার্স ও সমাজকর্মীদের কাছে অর্থ না দিয়ে, তা ট্যাংক, ক্ষেপণাস্ত্র ও সাইবার অস্ত্রের কাছে নিয়ে যাওয়া।

পৃথিবী যদি জঙ্গলের আইনে ফিরে যায়, তাহলে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিপর্যয় রোধ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অপব্যবহার নিয়ন্ত্রণের মতো ইস্যুতে বৈশ্বিক সহযোগিতা ক্ষুণ্ন হবে। যে দেশ আপনাকে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে ফেলার প্রস্তুতি নিচ্ছে, তার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করা সহজ নয় এবং জলবায়ু পরিবর্তন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাজাত অস্ত্রের ইঁদুর দৌড় যদি গতি পায়, তবে তা এমন এক দুষ্টচক্রের সৃষ্টি করবে, যা মানুষকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে পারে।   

ইতিহাসের দিকনির্দেশনা

আপনি যদি বিশ্বাস করেন যে ঐতিহাসিক প্রথা কখনোই পরিবর্তন হবে না, মানবতা জঙ্গল ত্যাগ করেনি এবং কখনোই করবে না—তাহলে আপনাকে হয় শিকারি অথবা শিকারের ভবিতব্য মেনে নিতে হবে। কিন্তু জঙ্গলের আইন বেছে নেওয়ার বিষয়টি কি বিকল্প উপায়, নাকি অনিবার্য বিষয়? যদি অনিবার্যই হয়, তাহলে প্রতিবেশী দেশকে দখল করে নেওয়া নেতাটি মানুষের স্মৃতিতে একটি বিশেষ স্থানে আসীন হবেন। কিন্তু আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, এটি হবে নিঃসন্দেহে একটি খারাপ দৃষ্টান্ত। তিনি ইতিহাসে সেই ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত হবেন, যিনি আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জনকে ধ্বংস করেছিলেন। আমরা যখন ভাবছিলাম, জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এসেছি, ঠিক তখনই তিনি আবার আমাদের টেনে জঙ্গলে ঢুকিয়ে দিলেন।

ইউক্রেনে কী হবে, জানি না। তবে একজন ইতিহাসবিদ হিসেবে আমি পরিবর্তনের সম্ভাবনায় বিশ্বাস করি। আমি মনে করি না যে এটি নির্বোধের ভাবনা; বরং এটিই বাস্তববাদী। মানব ইতিহাসে ধ্রুব সত্য হলো পরিবর্তন। এটি এমন এক ব্যাপার, যা আমরা সম্ভবত ইউক্রেনীয়দের কাছ থেকে শিখতে পারি। বহু প্রজন্ম ধরে ইউক্রেনের অধিবাসীরা অত্যাচার ও সহিংসতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। তারা জারদের দুই শতাব্দীর স্বৈরশাসন সহ্য করেছে। তাদের স্বাধীন হওয়ার ক্ষণস্থায়ী চেষ্টা রাশিয়ার রেড আর্মি ধূলিসাৎ করে রুশ শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছিল। ইউক্রেনীয়রা তখন হলডোমোর, স্তালিনবাদী সন্ত্রাস, নাৎসি দখলদারত্ব এবং কয়েক দশকের কমিউনিস্ট একনায়কত্বের ভয়ানক মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষের মধ্যে বেঁচে ছিল।

তবে এত কিছুর পরও ইউক্রেনের মানুষেরা ভিন্নভাবে ভেবেছিল। ভেতরটা নিংড়ে নেওয়া দারিদ্র্য এবং পাহাড়সম প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও ইউক্রেনীয়রা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিল। বেলারুশ বা রাশিয়ার মতো ছিল না ইউক্রেন। সেখানে ক্ষমতাসীনের কুর্সি নিয়মিত বিরতিতে পরিবর্তন হতে থাকে, বিরোধীরা চলে আসতে পারে গদিতে। এরপর ২০০৪ সালে একবার এবং ২০১৩ সালে আরও একবার স্বৈরাচারী শাসনের হুমকির মুখোমুখি হয়েছিল ইউক্রেন। সেই সময়েও দেশটির নাগরিকেরা নিজেদের স্বাধীনতার জন্য দুর্বার বিপ্লব করেছিল। সুতরাং তাদের গণতন্ত্র একটি নতুন বস্তু। ‘নতুন শান্তি’ও তাই। দুটোই ভঙ্গুর ও নড়বড়ে, হয়তো বেশি দিন না-ও টিকতে পারে। তারপরও বলা যায়, শান্তি ও গণতন্ত্র—দুই-ই সম্ভব। কারণ, প্রতিটি পুরোনো জিনিস একসময় নতুনই ছিল। সবকিছুই শেষ পর্যন্ত স্রেফ মানুষের বেছে নেওয়ার ওপর নির্ভর করে। 

দ্য ইকোনমিস্ট অবলম্বনে
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: মারুফ ইসলাম

রাশিয়া ইউক্রেন সংকট সম্পর্কিত খবর আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত