আব্দুর রহমান

বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন স্থানে একাধিক সংকট চলছে বর্তমানে। মধ্যপ্রাচ্যের—ইসরায়েল-ফিলিস্তিন, ইয়েমেন, আফ্রিকার—লিবিয়া, বুরকিনা ফাসো, নাইজার, নাইজেরিয়া, কেনিয়া, সোমালিয়াসহ আরও একাধিক দেশ। হালে এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে বিশ্বের দুই পরাশক্তির ব্যাটলগ্রাউন্ড ইউক্রেন। এ ছাড়া আরও একাধিক দেশের কথা আনা যায়, কিন্তু তালিকা দীর্ঘ করার চেয়ে এটা জানা জরুরি যে এসব সংকট সৃষ্টির পেছনে দায়ী কে—রাষ্ট্র, নাকি ব্যক্তি।
বিশ্বে কোনো রাষ্ট্রের ভূমিকা কী ও কেমন হবে, তা অনেকটাই নির্ধারণ করে দেয় রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক অবস্থা। কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো, এসব বিষয় নির্ধারণ করে কে বা কী? উত্তর দেওয়াটা খুব একটা সহজ নয়। তবে এটা সত্য যে, জনগণই রাষ্ট্রের যাবতীয় কার্যক্রমের কেন্দ্র। এই কার্যক্রম পরিচালিত হয় জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি কিংবা অনির্বাচিত কারও দ্বারা এবং দিন শেষে রাষ্ট্রের চরিত্র নির্ধারণ করেন এঁরাই।
এ প্রসঙ্গে ফরাসি তাত্ত্বিক লুই আলথ্যুসার তাঁর ‘রাষ্ট্র ও ভাবাদর্শ’ বইতে উল্লেখ করেছেন, রাষ্ট্রের দুই ধরনের অ্যাপারেটাস বা যন্ত্রাংশ আছে। এর একটি হলো ‘আইডিওলজিক্যাল অ্যাপারেটাস’, যাকে সহজ বাংলায় ভাবাদর্শ বলা যায়। আলথ্যুসারের মতে, কোনো একটি সমাজ বা রাষ্ট্রে এই ভাবাদর্শের অধীনে বিভিন্ন শ্রেণি থাকে। এসব শ্রেণির কেউ চালকের আসনে, কেউ সহযোগী এবং কেউ শোষিত। ফলে এ থেকে আমরা একটি বিষয় সহজভাবে উপলব্ধি করতে পারি, তা হলো—সমাজ বা রাষ্ট্রে বিদ্যমান ভাবাদর্শ নিয়ন্ত্রিত হয় ক্ষমতার কেন্দ্রে যারা থাকেন, তাঁদের দ্বারাই।
শাসকদের ভূমিকার জন্যই যে জনগণকে ভুগতে হয়, তা নিয়ে কোনো বিতর্ক থাকার কথা নয়। উদাহরণ হিসেবে আমরা বলতে পারি ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের কথা। বিশ্বজুড়ে যখন করোনাভাইরাসের দাপট, তখন দেশটির প্রেসিডেন্ট জেইর বোলসোনারো করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনকে স্বাগত জানিয়ে বলেছিলেন, ‘একে স্বাগত জানাচ্ছি।’ কেবল তাই নয়, বোলসোনারোর আরও বিতর্কিত মন্তব্য রয়েছে। ক্ষমতায় টিকে থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, ‘একমাত্র ঈশ্বরই পারে আমাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে।’ ফলে তিনি যে তাঁর জনগণের মতামতকে পাত্তা না দিয়েই তাঁদের মর্জিমাফিক শাসন চালিয়ে গেছেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। সর্বশেষ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে নিয়ে ঠাট্টাও করেছেন তিনি। বলেছেন, ‘ইউক্রেনীয়রা এক কমেডিয়ানের হাতে তাদের ভাগ্য তুলে দিয়েছে।’ এই নিজ দেশের জনমত, এমনকি অন্য দেশের নেতাকে নিয়েও তুচ্ছতাচ্ছিল্য, তা থেকেই নির্ধারিত হয় ব্রাজিল আসলে কোন পথে যাবে; অবশ্যই সেই পথে, যে পথে বোলসোনারো নিয়ে যাবেন।
ব্রাজিলের অবস্থা ততটা খারাপ নয়, যতটা খারাপ সিরিয়ার। দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ বিগত ২২ বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছেন বিরোধীদের প্রবলভাবে দমন করে। এ ক্ষেত্রে তাঁকে সহায়তা দিয়েছে তাঁরই মতো আরও কয়েক শাসক। বাশার সম্প্রতি রুশ প্রেসিডেন্ট ইউক্রেন আক্রমণ করায় তাঁর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। বিবিসির এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বাশার আল আসাদ পুতিনকে এক টেলিফোন কলে এ হামলার জন্য প্রশংসা করেছেন। বিগত ২২ বছরে বাশারের গোঁয়ার্তুমির কারণে দেশটির অন্তত ৩ লাখ ৮৮ হাজার মানুষ মারা গেছে। দেশছাড়া হয়েছে অন্তত ৬০ লাখ মানুষ। ২০২১ সালের ২৮ মে বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের ইতিহাস তো প্রায় কমবেশি সবারই জানা। ইরাকের স্বৈরশাসক সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাতে দেশটিতে গণবিধ্বংসী অস্ত্রের মজুত রয়েছে—এমন অভিযোগ তুলে হামলা চালানো হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইরাকে কোনো ধরনের গণবিধ্বংসী অস্ত্রই পাওয়া যায়নি। ২০১৬ সালের জুলাইয়ে ব্রিটিশ সরকারের কর্মকর্তা জন চিলকট ইরাক যুদ্ধ নিয়ে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলেন, তাতে বলা হয়, ইরাকে হামলার কোনো যৌক্তিকতাই ছিল না।
চিলকট কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, অসত্য তথ্যের ভিত্তিতে এবং বিস্তারিত পরিস্থিতি অনুধাবন ছাড়াই ইরাকে হামলা চালানোর ঘটনা, ব্রিটিশ সৈন্য ও যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রীয় কোষাগারের বড় ধরনের ক্ষতি সাধন করেছে। সেই সঙ্গে ইরাকসহ ওই অঞ্চলের দেশগুলোতে দীর্ঘমেয়াদি সংকট তৈরি করেছে। অথচ, ২০০৩ সালে করা হামলার ৭ বছর পর ২০১০ সালে যখন বুশ হোয়াইট হাউস থেকে বের হয়ে যান, তখনো তিনি দাবি করেন, ‘ইরাকে হামলা ঠিক ছিল’।
২০১০ সালের ৯ নভেম্বর বিবিসির এক প্রতিবেদনে বুশের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, মার্কিন টেলিভিশন নেটওয়ার্ক এনবিসিতে দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে বুশ এ কথাও স্বীকার করেছেন যে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার ওপর আক্রমণ চালানোর জন্য পরিকল্পনা প্রস্তুতের জন্য তিনি প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। বুশ তাঁর আত্মজীবনী ‘ডিসিশন পয়েন্টস’-এর প্রচারের অংশ হিসেবে এই সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘ইরাকে বিপুল বিধ্বংসী অস্ত্র না পাওয়া যাওয়ায় তিনি ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। তবে দেশটিতে আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল।’
তবে বুশ ইরাক আক্রমণ করেই ক্ষান্ত ছিলেন না, ইতিহাসখ্যাত ৯/১১-এর পর ‘ওয়ার অন টেরর’ নামে তিনি আফগানিস্তান আক্রমণ করেছিলেন। টানা ২০ বছর যুদ্ধ চালিয়ে বলা যায় কোনো ধরনের অর্জন ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্রকে আফগানিস্তান ত্যাগ করতে হয়েছে। সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হলো, যুদ্ধের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র যে তালেবানকে টার্গেট করেছিল, যুদ্ধ শেষের দিনে সেই তালেবানই আবার আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসে। ২০২০ সালের ২৬ আগস্ট ফ্রেঞ্চ ২৪-এর এক নিবন্ধে ২০ বছর ধরে চলা ‘ওয়ার অন টেরর’কে ‘টোটাল ফেইলিওর’ বলে আখ্যা দেওয়া হয়। অথচ এই ওয়ার অন টেররের কারণেই ইরাক ও আফগানিস্তানের দুই যুদ্ধে সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ মানুষ মারা গেছে।
শুধু বুশই নন, তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন তাঁর পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্টরাও। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাঁর দুই মেয়াদে ইরাক ও আফগানিস্তানে চলা যুদ্ধ বন্ধের কোনো উদ্যোগই নেননি। তবে ব্যতিক্রম ছিলেন আরেক সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি অন্তত আফগানিস্তান যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর এই সিদ্ধান্ত ছাড়াও তিনি একাধিকার বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁর শাসনামলের প্রথম দিকেই তিনি প্রতিবেশী দেশ মেক্সিকোর সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের ঘোষণা দেন। যদিও মার্কিন কংগ্রেস সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর হতে দেয়নি। এ ছাড়া, মার্কিন সংবাদমাধ্যম পলিটিকো হোয়াইট হাউসের এক গোপন মেমোর বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ট্রাম্প সর্বশেষ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ব্যালট বাক্স জব্দ করার নির্দেশ দেওয়ার এক খসড়া নোট লিখেছিলেন তাঁর প্রতিরক্ষামন্ত্রীর কাছে। যদিও তাঁর সেই খসড়া নির্দেশ বাস্তবায়িত হয়নি। কেবল তাই নয়, অভিবাসী রুখতে ট্রাম্প যেসব খ্যাপাটে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, তা কার না জানা।
এখানে বলা যেতে পারে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের কথা। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হওয়া এই কয়েক বছর আগের বাণিজ্যযুদ্ধ, দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে অনিঃশেষ উত্তেজনা, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে তো বটেই, তাইওয়ান, ম্যাকাও, হংকংয়ের সঙ্গে তার যে আচরণ, তার পুরোটাই ওই সি চিন পিং ও তাঁর ক্ষমতাকেন্দ্র থেকে উৎসারিত। মনে রাখা দরকার, এমনকি আলিবাবার মতো প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মাও তাঁর পদ ছেড়েছেন রাষ্ট্রীয় চাপেই। নিজ দেশে যে নেতার এমন কঠোর মনোভাব তিনি তো সীমান্ত ইস্যুতে প্রতিবেশীদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে যাবেনই। এরই ফল হিসেবে লাদাখসহ বিভিন্ন বিরোধপূর্ণ অঞ্চল নিয়ে ভারতের সঙ্গে চীনের দ্বন্দ্ব গত কয়েক বছরে বারবার ফিরে আসতে দেখা গেছে। দেখা গেছে শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপালের মতো দেশে নিজেদের প্রভাব সম্প্রসারণের চেষ্টা।
একই অবস্থা ভারতের প্রসঙ্গেও বলা যায়। এনআরসি, কৃষি আইন ইত্যাদি নিয়ে দেশটির বর্তমান নরেন্দ্র মোদি সরকার যে জলঘোলা করল, তার মূলটি তো রয়েছে ব্যক্তি নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর পাত্র-মিত্র-অমাত্যদের মধ্যে। বহুত্ববাদী ও গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে ভারতের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়ে আজ যে তা মোটাদাগে কট্টর জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রের দিকে যাত্রা করেছে, তা কিন্তু তার রাষ্ট্রীয় উপাদানগুলোর কারণে নয়। এটা করেছে রাষ্ট্র নামক যন্ত্রের নিয়ন্ত্রকেরা। এরই ফল হিসেবে কাশ্মীরসহ বিভিন্ন অঞ্চলে উত্তেজনা ফিরে ফিরে আসছে। এর বৈশ্বিক প্রভাব হিসেবে চীনের সঙ্গে দেশটির দ্বন্দ্বের কথা তো আগেই বলা হয়েছে। শুধু চীন কেন, বড় দুই রাষ্ট্রের ফেরে পড়ে এই গোটা অঞ্চলের ছোট ছোট দেশগুলো ভুগছে।
তবে খ্যাপামিতে বোধ হয় ট্রাম্পকেও ছাড়িয়ে গিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। রাশিয়ার হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারে কেজিবির সাবেক এই কর্মকর্তা মার্কিন বিরোধী শিবির গড়া থেকে শুরু করে কী করেননি? তাঁর সর্বশেষ পদক্ষেপ, পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সম্প্রসারণ রোধে ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখার জের ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান। এই অভিযানের পর আবার আলোচনাও শুরু হয়েছে। কিন্তু তার আগেই পুতিন তাঁর সেনাবাহিনীকে ‘পারমাণবিক অস্ত্র’ প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেন। তারপরই ইউক্রেন ও তাঁর পশ্চিমা মিত্র দেশগুলো পুতিনের এমন হুমকিতে খানিকটা হলেও ভীত হয়। যুক্তরাষ্ট্র এই সিদ্ধান্তকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ আখ্যা দেয়।
কিন্তু ঘটনা সেখানে নয়। যে বিষয়টি মুখ্য তা হলো, এই হামলার জের ধরে রাশিয়ায় বিশ্বের উন্নত দেশগুলো একাধিক অবরোধ আরোপ করেছে। বৈশ্বিক ব্যাংকিং লেনদেন ব্যবস্থা সুইফট থেকে রাশিয়ার ব্যাংকগুলোকে বাদ দেওয়া হয়েছে। ফলে কার্যত থেমে গেছে দেশটির বৈশ্বিক আর্থিক লেনদেন। অবরোধ আরোপ করা হয়েছে দেশটির ব্যাংকিং খাত, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ওপর। নরওয়েভিত্তিক জ্বালানি প্রতিষ্ঠান ইকুইনর রাশিয়া থেকে তাদের ব্যবসা গুটাচ্ছে। আকাশসীমা ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে আরও কয়েকটি দেশ। সব মিলিয়ে রাশিয়ার সাধারণ জনগণ বেশ বড় ধরনের বিপদেই পড়তে যাচ্ছে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের। কিন্তু সে বিষয় আমলেই আনেননি পুতিন। নিজ মর্জিমাফিক দেশে ‘হারানো সম্মান পুনরুদ্ধারে’ নিয়েছেন যুদ্ধের মতো সিদ্ধান্তও।
একই অবস্থা বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও। ১৯৬২ সালে কিউবান মিসাইল সংকটের সময় রাশিয়া যেমন যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়ে কিউবা থেকে সরে এসেছিল, তেমনটা হয়নি ইউক্রেন সংকটের বেলায়। রাশিয়ার তরফ থেকে ইউরোপ ও রাশিয়ার নিরাপত্তার বিষয়ে আশঙ্কা জানিয়ে ন্যাটোর পূর্ব ইউরোপমুখী সম্প্রসারণ বন্ধের কথা বলা হলেও যুক্তরাষ্ট্র তাতে কর্ণপাত করেনি। বরং, বিষয়টি ক্রমশ কঠিন করে তুলেছে ওয়াশিংটন। দেশটি বারবার রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপের হুমকি দিয়েছে। হুমকি-পাল্টা হুমকিতে আলোচনা হারিয়েছে অতল গহ্বরে। যার ফলাফল আমরা দেখছি। যুদ্ধ আরম্ভ হয়ে গেছে। কত মানুষের প্রাণহানি হবে কিংবা কবে থামবে, তা আসলে নির্ণয় করা কঠিন।
শেষের আগে, রাষ্ট্রকে অনেক সমাজবিজ্ঞানী জৈবিক সত্তা বললেও রাষ্ট্র আসলে কাজ করে একাধিক প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে। এবং এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে মানুষই। ফলে রাষ্ট্রের যে আদর্শ বা চরিত্র, তা নির্ধারণ করে দেয় রাষ্ট্রের ক্ষমতায় থাকা মানুষই। যেমনটা নির্ধারণ করেছে ১৯৪৫ সালের আগের জার্মানি, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং অন্য অনেক দেশের ক্ষেত্রে। আজ চিহ্নিত করছে রাশিয়া, ইউক্রেনের মতো দেশগুলোকেও। ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর আদর্শেই চিহ্নিত হয় রাষ্ট্রের আদর্শ। সুতরাং, এ কথা বলা যেতেই পারে—আবহমানকাল ধরে সৃষ্ট বৈশ্বিক সংকটের জন্য রাষ্ট্র নয়, রাষ্ট্রের পরিচালনায় থাকা ব্যক্তিরাই দায়ী। রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী হলে এই ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে একটা সীমা পর্যন্ত জবাবদিহির আওতায় রাখা যেতে পারে শুধু।

বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন স্থানে একাধিক সংকট চলছে বর্তমানে। মধ্যপ্রাচ্যের—ইসরায়েল-ফিলিস্তিন, ইয়েমেন, আফ্রিকার—লিবিয়া, বুরকিনা ফাসো, নাইজার, নাইজেরিয়া, কেনিয়া, সোমালিয়াসহ আরও একাধিক দেশ। হালে এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে বিশ্বের দুই পরাশক্তির ব্যাটলগ্রাউন্ড ইউক্রেন। এ ছাড়া আরও একাধিক দেশের কথা আনা যায়, কিন্তু তালিকা দীর্ঘ করার চেয়ে এটা জানা জরুরি যে এসব সংকট সৃষ্টির পেছনে দায়ী কে—রাষ্ট্র, নাকি ব্যক্তি।
বিশ্বে কোনো রাষ্ট্রের ভূমিকা কী ও কেমন হবে, তা অনেকটাই নির্ধারণ করে দেয় রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক অবস্থা। কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো, এসব বিষয় নির্ধারণ করে কে বা কী? উত্তর দেওয়াটা খুব একটা সহজ নয়। তবে এটা সত্য যে, জনগণই রাষ্ট্রের যাবতীয় কার্যক্রমের কেন্দ্র। এই কার্যক্রম পরিচালিত হয় জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি কিংবা অনির্বাচিত কারও দ্বারা এবং দিন শেষে রাষ্ট্রের চরিত্র নির্ধারণ করেন এঁরাই।
এ প্রসঙ্গে ফরাসি তাত্ত্বিক লুই আলথ্যুসার তাঁর ‘রাষ্ট্র ও ভাবাদর্শ’ বইতে উল্লেখ করেছেন, রাষ্ট্রের দুই ধরনের অ্যাপারেটাস বা যন্ত্রাংশ আছে। এর একটি হলো ‘আইডিওলজিক্যাল অ্যাপারেটাস’, যাকে সহজ বাংলায় ভাবাদর্শ বলা যায়। আলথ্যুসারের মতে, কোনো একটি সমাজ বা রাষ্ট্রে এই ভাবাদর্শের অধীনে বিভিন্ন শ্রেণি থাকে। এসব শ্রেণির কেউ চালকের আসনে, কেউ সহযোগী এবং কেউ শোষিত। ফলে এ থেকে আমরা একটি বিষয় সহজভাবে উপলব্ধি করতে পারি, তা হলো—সমাজ বা রাষ্ট্রে বিদ্যমান ভাবাদর্শ নিয়ন্ত্রিত হয় ক্ষমতার কেন্দ্রে যারা থাকেন, তাঁদের দ্বারাই।
শাসকদের ভূমিকার জন্যই যে জনগণকে ভুগতে হয়, তা নিয়ে কোনো বিতর্ক থাকার কথা নয়। উদাহরণ হিসেবে আমরা বলতে পারি ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের কথা। বিশ্বজুড়ে যখন করোনাভাইরাসের দাপট, তখন দেশটির প্রেসিডেন্ট জেইর বোলসোনারো করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনকে স্বাগত জানিয়ে বলেছিলেন, ‘একে স্বাগত জানাচ্ছি।’ কেবল তাই নয়, বোলসোনারোর আরও বিতর্কিত মন্তব্য রয়েছে। ক্ষমতায় টিকে থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, ‘একমাত্র ঈশ্বরই পারে আমাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে।’ ফলে তিনি যে তাঁর জনগণের মতামতকে পাত্তা না দিয়েই তাঁদের মর্জিমাফিক শাসন চালিয়ে গেছেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। সর্বশেষ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে নিয়ে ঠাট্টাও করেছেন তিনি। বলেছেন, ‘ইউক্রেনীয়রা এক কমেডিয়ানের হাতে তাদের ভাগ্য তুলে দিয়েছে।’ এই নিজ দেশের জনমত, এমনকি অন্য দেশের নেতাকে নিয়েও তুচ্ছতাচ্ছিল্য, তা থেকেই নির্ধারিত হয় ব্রাজিল আসলে কোন পথে যাবে; অবশ্যই সেই পথে, যে পথে বোলসোনারো নিয়ে যাবেন।
ব্রাজিলের অবস্থা ততটা খারাপ নয়, যতটা খারাপ সিরিয়ার। দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ বিগত ২২ বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছেন বিরোধীদের প্রবলভাবে দমন করে। এ ক্ষেত্রে তাঁকে সহায়তা দিয়েছে তাঁরই মতো আরও কয়েক শাসক। বাশার সম্প্রতি রুশ প্রেসিডেন্ট ইউক্রেন আক্রমণ করায় তাঁর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। বিবিসির এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বাশার আল আসাদ পুতিনকে এক টেলিফোন কলে এ হামলার জন্য প্রশংসা করেছেন। বিগত ২২ বছরে বাশারের গোঁয়ার্তুমির কারণে দেশটির অন্তত ৩ লাখ ৮৮ হাজার মানুষ মারা গেছে। দেশছাড়া হয়েছে অন্তত ৬০ লাখ মানুষ। ২০২১ সালের ২৮ মে বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের ইতিহাস তো প্রায় কমবেশি সবারই জানা। ইরাকের স্বৈরশাসক সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাতে দেশটিতে গণবিধ্বংসী অস্ত্রের মজুত রয়েছে—এমন অভিযোগ তুলে হামলা চালানো হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইরাকে কোনো ধরনের গণবিধ্বংসী অস্ত্রই পাওয়া যায়নি। ২০১৬ সালের জুলাইয়ে ব্রিটিশ সরকারের কর্মকর্তা জন চিলকট ইরাক যুদ্ধ নিয়ে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলেন, তাতে বলা হয়, ইরাকে হামলার কোনো যৌক্তিকতাই ছিল না।
চিলকট কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, অসত্য তথ্যের ভিত্তিতে এবং বিস্তারিত পরিস্থিতি অনুধাবন ছাড়াই ইরাকে হামলা চালানোর ঘটনা, ব্রিটিশ সৈন্য ও যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রীয় কোষাগারের বড় ধরনের ক্ষতি সাধন করেছে। সেই সঙ্গে ইরাকসহ ওই অঞ্চলের দেশগুলোতে দীর্ঘমেয়াদি সংকট তৈরি করেছে। অথচ, ২০০৩ সালে করা হামলার ৭ বছর পর ২০১০ সালে যখন বুশ হোয়াইট হাউস থেকে বের হয়ে যান, তখনো তিনি দাবি করেন, ‘ইরাকে হামলা ঠিক ছিল’।
২০১০ সালের ৯ নভেম্বর বিবিসির এক প্রতিবেদনে বুশের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, মার্কিন টেলিভিশন নেটওয়ার্ক এনবিসিতে দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে বুশ এ কথাও স্বীকার করেছেন যে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার ওপর আক্রমণ চালানোর জন্য পরিকল্পনা প্রস্তুতের জন্য তিনি প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। বুশ তাঁর আত্মজীবনী ‘ডিসিশন পয়েন্টস’-এর প্রচারের অংশ হিসেবে এই সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘ইরাকে বিপুল বিধ্বংসী অস্ত্র না পাওয়া যাওয়ায় তিনি ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। তবে দেশটিতে আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল।’
তবে বুশ ইরাক আক্রমণ করেই ক্ষান্ত ছিলেন না, ইতিহাসখ্যাত ৯/১১-এর পর ‘ওয়ার অন টেরর’ নামে তিনি আফগানিস্তান আক্রমণ করেছিলেন। টানা ২০ বছর যুদ্ধ চালিয়ে বলা যায় কোনো ধরনের অর্জন ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্রকে আফগানিস্তান ত্যাগ করতে হয়েছে। সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হলো, যুদ্ধের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র যে তালেবানকে টার্গেট করেছিল, যুদ্ধ শেষের দিনে সেই তালেবানই আবার আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসে। ২০২০ সালের ২৬ আগস্ট ফ্রেঞ্চ ২৪-এর এক নিবন্ধে ২০ বছর ধরে চলা ‘ওয়ার অন টেরর’কে ‘টোটাল ফেইলিওর’ বলে আখ্যা দেওয়া হয়। অথচ এই ওয়ার অন টেররের কারণেই ইরাক ও আফগানিস্তানের দুই যুদ্ধে সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ মানুষ মারা গেছে।
শুধু বুশই নন, তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন তাঁর পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্টরাও। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাঁর দুই মেয়াদে ইরাক ও আফগানিস্তানে চলা যুদ্ধ বন্ধের কোনো উদ্যোগই নেননি। তবে ব্যতিক্রম ছিলেন আরেক সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি অন্তত আফগানিস্তান যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর এই সিদ্ধান্ত ছাড়াও তিনি একাধিকার বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁর শাসনামলের প্রথম দিকেই তিনি প্রতিবেশী দেশ মেক্সিকোর সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের ঘোষণা দেন। যদিও মার্কিন কংগ্রেস সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর হতে দেয়নি। এ ছাড়া, মার্কিন সংবাদমাধ্যম পলিটিকো হোয়াইট হাউসের এক গোপন মেমোর বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ট্রাম্প সর্বশেষ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ব্যালট বাক্স জব্দ করার নির্দেশ দেওয়ার এক খসড়া নোট লিখেছিলেন তাঁর প্রতিরক্ষামন্ত্রীর কাছে। যদিও তাঁর সেই খসড়া নির্দেশ বাস্তবায়িত হয়নি। কেবল তাই নয়, অভিবাসী রুখতে ট্রাম্প যেসব খ্যাপাটে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, তা কার না জানা।
এখানে বলা যেতে পারে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের কথা। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হওয়া এই কয়েক বছর আগের বাণিজ্যযুদ্ধ, দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে অনিঃশেষ উত্তেজনা, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে তো বটেই, তাইওয়ান, ম্যাকাও, হংকংয়ের সঙ্গে তার যে আচরণ, তার পুরোটাই ওই সি চিন পিং ও তাঁর ক্ষমতাকেন্দ্র থেকে উৎসারিত। মনে রাখা দরকার, এমনকি আলিবাবার মতো প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মাও তাঁর পদ ছেড়েছেন রাষ্ট্রীয় চাপেই। নিজ দেশে যে নেতার এমন কঠোর মনোভাব তিনি তো সীমান্ত ইস্যুতে প্রতিবেশীদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে যাবেনই। এরই ফল হিসেবে লাদাখসহ বিভিন্ন বিরোধপূর্ণ অঞ্চল নিয়ে ভারতের সঙ্গে চীনের দ্বন্দ্ব গত কয়েক বছরে বারবার ফিরে আসতে দেখা গেছে। দেখা গেছে শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপালের মতো দেশে নিজেদের প্রভাব সম্প্রসারণের চেষ্টা।
একই অবস্থা ভারতের প্রসঙ্গেও বলা যায়। এনআরসি, কৃষি আইন ইত্যাদি নিয়ে দেশটির বর্তমান নরেন্দ্র মোদি সরকার যে জলঘোলা করল, তার মূলটি তো রয়েছে ব্যক্তি নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর পাত্র-মিত্র-অমাত্যদের মধ্যে। বহুত্ববাদী ও গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে ভারতের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়ে আজ যে তা মোটাদাগে কট্টর জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রের দিকে যাত্রা করেছে, তা কিন্তু তার রাষ্ট্রীয় উপাদানগুলোর কারণে নয়। এটা করেছে রাষ্ট্র নামক যন্ত্রের নিয়ন্ত্রকেরা। এরই ফল হিসেবে কাশ্মীরসহ বিভিন্ন অঞ্চলে উত্তেজনা ফিরে ফিরে আসছে। এর বৈশ্বিক প্রভাব হিসেবে চীনের সঙ্গে দেশটির দ্বন্দ্বের কথা তো আগেই বলা হয়েছে। শুধু চীন কেন, বড় দুই রাষ্ট্রের ফেরে পড়ে এই গোটা অঞ্চলের ছোট ছোট দেশগুলো ভুগছে।
তবে খ্যাপামিতে বোধ হয় ট্রাম্পকেও ছাড়িয়ে গিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। রাশিয়ার হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারে কেজিবির সাবেক এই কর্মকর্তা মার্কিন বিরোধী শিবির গড়া থেকে শুরু করে কী করেননি? তাঁর সর্বশেষ পদক্ষেপ, পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সম্প্রসারণ রোধে ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখার জের ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান। এই অভিযানের পর আবার আলোচনাও শুরু হয়েছে। কিন্তু তার আগেই পুতিন তাঁর সেনাবাহিনীকে ‘পারমাণবিক অস্ত্র’ প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেন। তারপরই ইউক্রেন ও তাঁর পশ্চিমা মিত্র দেশগুলো পুতিনের এমন হুমকিতে খানিকটা হলেও ভীত হয়। যুক্তরাষ্ট্র এই সিদ্ধান্তকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ আখ্যা দেয়।
কিন্তু ঘটনা সেখানে নয়। যে বিষয়টি মুখ্য তা হলো, এই হামলার জের ধরে রাশিয়ায় বিশ্বের উন্নত দেশগুলো একাধিক অবরোধ আরোপ করেছে। বৈশ্বিক ব্যাংকিং লেনদেন ব্যবস্থা সুইফট থেকে রাশিয়ার ব্যাংকগুলোকে বাদ দেওয়া হয়েছে। ফলে কার্যত থেমে গেছে দেশটির বৈশ্বিক আর্থিক লেনদেন। অবরোধ আরোপ করা হয়েছে দেশটির ব্যাংকিং খাত, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ওপর। নরওয়েভিত্তিক জ্বালানি প্রতিষ্ঠান ইকুইনর রাশিয়া থেকে তাদের ব্যবসা গুটাচ্ছে। আকাশসীমা ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে আরও কয়েকটি দেশ। সব মিলিয়ে রাশিয়ার সাধারণ জনগণ বেশ বড় ধরনের বিপদেই পড়তে যাচ্ছে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের। কিন্তু সে বিষয় আমলেই আনেননি পুতিন। নিজ মর্জিমাফিক দেশে ‘হারানো সম্মান পুনরুদ্ধারে’ নিয়েছেন যুদ্ধের মতো সিদ্ধান্তও।
একই অবস্থা বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও। ১৯৬২ সালে কিউবান মিসাইল সংকটের সময় রাশিয়া যেমন যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়ে কিউবা থেকে সরে এসেছিল, তেমনটা হয়নি ইউক্রেন সংকটের বেলায়। রাশিয়ার তরফ থেকে ইউরোপ ও রাশিয়ার নিরাপত্তার বিষয়ে আশঙ্কা জানিয়ে ন্যাটোর পূর্ব ইউরোপমুখী সম্প্রসারণ বন্ধের কথা বলা হলেও যুক্তরাষ্ট্র তাতে কর্ণপাত করেনি। বরং, বিষয়টি ক্রমশ কঠিন করে তুলেছে ওয়াশিংটন। দেশটি বারবার রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপের হুমকি দিয়েছে। হুমকি-পাল্টা হুমকিতে আলোচনা হারিয়েছে অতল গহ্বরে। যার ফলাফল আমরা দেখছি। যুদ্ধ আরম্ভ হয়ে গেছে। কত মানুষের প্রাণহানি হবে কিংবা কবে থামবে, তা আসলে নির্ণয় করা কঠিন।
শেষের আগে, রাষ্ট্রকে অনেক সমাজবিজ্ঞানী জৈবিক সত্তা বললেও রাষ্ট্র আসলে কাজ করে একাধিক প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে। এবং এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে মানুষই। ফলে রাষ্ট্রের যে আদর্শ বা চরিত্র, তা নির্ধারণ করে দেয় রাষ্ট্রের ক্ষমতায় থাকা মানুষই। যেমনটা নির্ধারণ করেছে ১৯৪৫ সালের আগের জার্মানি, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং অন্য অনেক দেশের ক্ষেত্রে। আজ চিহ্নিত করছে রাশিয়া, ইউক্রেনের মতো দেশগুলোকেও। ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর আদর্শেই চিহ্নিত হয় রাষ্ট্রের আদর্শ। সুতরাং, এ কথা বলা যেতেই পারে—আবহমানকাল ধরে সৃষ্ট বৈশ্বিক সংকটের জন্য রাষ্ট্র নয়, রাষ্ট্রের পরিচালনায় থাকা ব্যক্তিরাই দায়ী। রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী হলে এই ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে একটা সীমা পর্যন্ত জবাবদিহির আওতায় রাখা যেতে পারে শুধু।

বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
১ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
২ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৫ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

বিশ্বে কোনো রাষ্ট্রের ভূমিকা কি ও কেমন হবে তা অনেকটাই নির্ধারণ করে দেয় রাষ্ট্রের—অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক—অবস্থা। কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো এসব বিষয় নির্ধারণ করে কে বা কি? উত্তর দেওয়াটা খুব একটা সহজ নয়। তবে এটা সত্য যে, জনগণই রাষ্ট্রের যাবতীয় কার্যক্রমের কেন্দ্র। এই কার্যক্রম পরিচালিত হয় জনগণের নির্
০১ মার্চ ২০২২
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
২ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৫ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

বিশ্বে কোনো রাষ্ট্রের ভূমিকা কি ও কেমন হবে তা অনেকটাই নির্ধারণ করে দেয় রাষ্ট্রের—অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক—অবস্থা। কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো এসব বিষয় নির্ধারণ করে কে বা কি? উত্তর দেওয়াটা খুব একটা সহজ নয়। তবে এটা সত্য যে, জনগণই রাষ্ট্রের যাবতীয় কার্যক্রমের কেন্দ্র। এই কার্যক্রম পরিচালিত হয় জনগণের নির্
০১ মার্চ ২০২২
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
১ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৫ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

বিশ্বে কোনো রাষ্ট্রের ভূমিকা কি ও কেমন হবে তা অনেকটাই নির্ধারণ করে দেয় রাষ্ট্রের—অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক—অবস্থা। কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো এসব বিষয় নির্ধারণ করে কে বা কি? উত্তর দেওয়াটা খুব একটা সহজ নয়। তবে এটা সত্য যে, জনগণই রাষ্ট্রের যাবতীয় কার্যক্রমের কেন্দ্র। এই কার্যক্রম পরিচালিত হয় জনগণের নির্
০১ মার্চ ২০২২
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
১ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
২ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করেছেন।
হিব্রু ভাষার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মারিভের খবরে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে এক সামরিক প্রতিনিধি সংসদ সদস্যদের জানান, তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং হামলার সক্ষমতা পুরোপুরি পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। আইডিএফের আশঙ্কা, আগের মতোই ইরান একযোগে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে।
গত এক মাসে পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা নিয়ে সতর্কবার্তা জোরালো হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ও কিছু বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় পক্ষ দ্রুত সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, পরোক্ষ বা প্রক্সি ফ্রন্ট বিস্তৃত করছে এবং কূটনৈতিক পথ থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের ঝুঁকি প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বর্তমান উত্তেজনার একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির (জেসিপিওএ) মেয়াদ শেষ হওয়া। চলতি বছরের অক্টোবরে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। ফলে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তেহরানের দাবি অনুযায়ী তারা উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সব মজুত ধ্বংস করেছে। কিন্তু ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করেন, এর একটি অংশ গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে—তাদের মতে, ইরানে ইসরায়েলের আরেকটি হামলা ‘হবে কি না’ এটা প্রশ্ন নয়, হামলা ‘কবে হবে’—সেটাই বড় প্রশ্ন। ইসরায়েলের দৃষ্টিতে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তেল আবিবের এই মনোভাব সামরিক হামলার সম্ভাবনাকে প্রায় অনিবার্য করে তুলছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সংকট বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্পের পরিচালক আলি ভায়েজ জানান, তাঁর ইরানি সূত্র অনুযায়ী দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাগুলো দিনে ২৪ ঘণ্টাই চালু আছে। তাঁর ভাষায়, নতুন কোনো সংঘাত হলে ইরান আগের মতো ১২ দিনে ৫০০টি নয়, বরং একযোগে ২ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দিতে চায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের মূল কারণগুলো এখনো অমীমাংসিত থাকায় সংঘাতের একটি চক্রাকার ধারা তৈরি হয়েছে, যেখানে উত্তেজনা প্রায় কাঠামোগতভাবেই অনিবার্য। ইরানের দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ (যার মধ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক মিত্র ও গোষ্ঠী রয়েছে) গত জুনে ১২ দিনের যুদ্ধে এবং বিশেষ করে গত বছর সিরিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পর বড় ধাক্কা খেয়েছে। তবু ইরানের হাতে এখনো গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক রসদ রয়েছে। যেমন—ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ (হুতি), লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইরাকের বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া। এসব শক্তির মাধ্যমে তেহরান এখনো এক ধরনের অপ্রতিসম প্রতিরোধ সক্ষমতা ধরে রেখেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কার্সরইনফোর বরাতে জানা যায়, দেশটির নিরাপত্তা সংস্থার এক শীর্ষ সূত্রের দাবি—ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, অর্থাৎ ২০২৯ সালের জানুয়ারির আগে ইরানে শাসক পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখেছে ইসরায়েল। সূত্রটি জানায়, ইরান একদিকে যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারিতে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরেকটি সামরিক সংঘাত এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ইরান নাতানজের দক্ষিণে ‘পিকঅ্যাক্স মাউন্টেন’ নামে একটি নতুন ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মূল উপাদান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ করছে। সেখানে এখনো আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তেহরান শান্তি ও সংলাপ চায়, তবে চাপের কাছে মাথা নত করবে না, পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিও পরিত্যাগ করবে না। তাঁর মতে, এসব কর্মসূচি জাতীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তিনি বহুপক্ষীয় আলোচনায় ফেরার আগ্রহ দেখালেও শর্ত দিয়েছেন—‘ইরানের বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে’।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধলে যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও তাতে জড়াবে?
গেল নভেম্বরের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেন, জুনে ইরানে ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত ছিল। বিষয়টি এত দিন হোয়াইট হাউস অস্বীকার করে আসছিল। ওই সময় ট্রাম্প আরও বলেন, ওয়াশিংটন চাইলে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতেও প্রস্তুত।
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওয়াশিংটনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সেখানে ট্রাম্প আবার বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি চায় এবং ওয়াশিংটন আলোচনায় প্রস্তুত। একই দিনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা কামাল খারাজি জানান, পারস্পরিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ইরান, তবে প্রথম পদক্ষেপ ওয়াশিংটনকেই নিতে হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আলোচনার বাইরে, কারণ এটি জাতীয় প্রতিরোধের মূল স্তম্ভ। কেবল পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েই সীমিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে, তাও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন না হলে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চান না। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপে আরেকটি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ব্যয়বহুল হবে। কিন্তু ইসরায়েল এই পরিস্থিতিকে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইসরায়েল চাচ্ছে, তারা এই সুযোগে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা স্থায়ীভাবে ধ্বংস করে দেবে।
সব মিলিয়ে, তেহরান আশাবাদী কথাবার্তায় ভরসা করছে না। ইরানি কূটনীতিকদের ধারণা, ইসরায়েল আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করেই সামরিক পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। তাদের মতে, ইসরায়েল হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রকে যেকোনোভাবে সংঘাতে টেনে আনার চেষ্টা করবে—যদিও ট্রাম্প নতুন যুদ্ধ এড়াতে চান।
যুক্তরাষ্ট্র চাক বা না চাক, পরিস্থিতির চাপে তাকে শেষ পর্যন্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে। আর যদি ইরান ইসরায়েলি হামলার জবাবে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে ওয়াশিংটনের সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত এসে দাঁড়াবে—হস্তক্ষেপ করবে, নাকি নিয়ন্ত্রণ হারাবে। ইরান অবশ্য স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—তারা ধ্বংসের ভয় পায় না এবং সর্বাত্মক যুদ্ধে নামলে ‘ইসরায়েলকেও সঙ্গে নিয়ে ডুববে’।
আরটি থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করেছেন।
হিব্রু ভাষার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মারিভের খবরে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে এক সামরিক প্রতিনিধি সংসদ সদস্যদের জানান, তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং হামলার সক্ষমতা পুরোপুরি পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। আইডিএফের আশঙ্কা, আগের মতোই ইরান একযোগে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে।
গত এক মাসে পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা নিয়ে সতর্কবার্তা জোরালো হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ও কিছু বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় পক্ষ দ্রুত সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, পরোক্ষ বা প্রক্সি ফ্রন্ট বিস্তৃত করছে এবং কূটনৈতিক পথ থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের ঝুঁকি প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বর্তমান উত্তেজনার একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির (জেসিপিওএ) মেয়াদ শেষ হওয়া। চলতি বছরের অক্টোবরে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। ফলে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তেহরানের দাবি অনুযায়ী তারা উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সব মজুত ধ্বংস করেছে। কিন্তু ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করেন, এর একটি অংশ গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে—তাদের মতে, ইরানে ইসরায়েলের আরেকটি হামলা ‘হবে কি না’ এটা প্রশ্ন নয়, হামলা ‘কবে হবে’—সেটাই বড় প্রশ্ন। ইসরায়েলের দৃষ্টিতে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তেল আবিবের এই মনোভাব সামরিক হামলার সম্ভাবনাকে প্রায় অনিবার্য করে তুলছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সংকট বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্পের পরিচালক আলি ভায়েজ জানান, তাঁর ইরানি সূত্র অনুযায়ী দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাগুলো দিনে ২৪ ঘণ্টাই চালু আছে। তাঁর ভাষায়, নতুন কোনো সংঘাত হলে ইরান আগের মতো ১২ দিনে ৫০০টি নয়, বরং একযোগে ২ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দিতে চায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের মূল কারণগুলো এখনো অমীমাংসিত থাকায় সংঘাতের একটি চক্রাকার ধারা তৈরি হয়েছে, যেখানে উত্তেজনা প্রায় কাঠামোগতভাবেই অনিবার্য। ইরানের দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ (যার মধ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক মিত্র ও গোষ্ঠী রয়েছে) গত জুনে ১২ দিনের যুদ্ধে এবং বিশেষ করে গত বছর সিরিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পর বড় ধাক্কা খেয়েছে। তবু ইরানের হাতে এখনো গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক রসদ রয়েছে। যেমন—ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ (হুতি), লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইরাকের বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া। এসব শক্তির মাধ্যমে তেহরান এখনো এক ধরনের অপ্রতিসম প্রতিরোধ সক্ষমতা ধরে রেখেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কার্সরইনফোর বরাতে জানা যায়, দেশটির নিরাপত্তা সংস্থার এক শীর্ষ সূত্রের দাবি—ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, অর্থাৎ ২০২৯ সালের জানুয়ারির আগে ইরানে শাসক পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখেছে ইসরায়েল। সূত্রটি জানায়, ইরান একদিকে যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারিতে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরেকটি সামরিক সংঘাত এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ইরান নাতানজের দক্ষিণে ‘পিকঅ্যাক্স মাউন্টেন’ নামে একটি নতুন ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মূল উপাদান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ করছে। সেখানে এখনো আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তেহরান শান্তি ও সংলাপ চায়, তবে চাপের কাছে মাথা নত করবে না, পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিও পরিত্যাগ করবে না। তাঁর মতে, এসব কর্মসূচি জাতীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তিনি বহুপক্ষীয় আলোচনায় ফেরার আগ্রহ দেখালেও শর্ত দিয়েছেন—‘ইরানের বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে’।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধলে যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও তাতে জড়াবে?
গেল নভেম্বরের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেন, জুনে ইরানে ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত ছিল। বিষয়টি এত দিন হোয়াইট হাউস অস্বীকার করে আসছিল। ওই সময় ট্রাম্প আরও বলেন, ওয়াশিংটন চাইলে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতেও প্রস্তুত।
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওয়াশিংটনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সেখানে ট্রাম্প আবার বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি চায় এবং ওয়াশিংটন আলোচনায় প্রস্তুত। একই দিনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা কামাল খারাজি জানান, পারস্পরিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ইরান, তবে প্রথম পদক্ষেপ ওয়াশিংটনকেই নিতে হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আলোচনার বাইরে, কারণ এটি জাতীয় প্রতিরোধের মূল স্তম্ভ। কেবল পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েই সীমিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে, তাও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন না হলে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চান না। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপে আরেকটি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ব্যয়বহুল হবে। কিন্তু ইসরায়েল এই পরিস্থিতিকে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইসরায়েল চাচ্ছে, তারা এই সুযোগে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা স্থায়ীভাবে ধ্বংস করে দেবে।
সব মিলিয়ে, তেহরান আশাবাদী কথাবার্তায় ভরসা করছে না। ইরানি কূটনীতিকদের ধারণা, ইসরায়েল আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করেই সামরিক পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। তাদের মতে, ইসরায়েল হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রকে যেকোনোভাবে সংঘাতে টেনে আনার চেষ্টা করবে—যদিও ট্রাম্প নতুন যুদ্ধ এড়াতে চান।
যুক্তরাষ্ট্র চাক বা না চাক, পরিস্থিতির চাপে তাকে শেষ পর্যন্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে। আর যদি ইরান ইসরায়েলি হামলার জবাবে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে ওয়াশিংটনের সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত এসে দাঁড়াবে—হস্তক্ষেপ করবে, নাকি নিয়ন্ত্রণ হারাবে। ইরান অবশ্য স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—তারা ধ্বংসের ভয় পায় না এবং সর্বাত্মক যুদ্ধে নামলে ‘ইসরায়েলকেও সঙ্গে নিয়ে ডুববে’।
আরটি থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

বিশ্বে কোনো রাষ্ট্রের ভূমিকা কি ও কেমন হবে তা অনেকটাই নির্ধারণ করে দেয় রাষ্ট্রের—অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক—অবস্থা। কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো এসব বিষয় নির্ধারণ করে কে বা কি? উত্তর দেওয়াটা খুব একটা সহজ নয়। তবে এটা সত্য যে, জনগণই রাষ্ট্রের যাবতীয় কার্যক্রমের কেন্দ্র। এই কার্যক্রম পরিচালিত হয় জনগণের নির্
০১ মার্চ ২০২২
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
১ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
২ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৫ দিন আগে