Ajker Patrika

নতুন শিক্ষাক্রম: সংশয় ও সম্ভাবনা

সিদ্দিক বেলাল
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০: ৪২
নতুন শিক্ষাক্রম: সংশয় ও সম্ভাবনা

নতুন শিক্ষাক্রম দেশের প্রচলিত শিক্ষাপদ্ধতির কোনো পরিমার্জন বা সংযোজন নয়, রূপান্তরও নয়—এক প্যারাডাইম শিফট। এমন ধরনের পরিবর্তন নিয়ে বিরূপ সমালোচনা বা গুজব খুবই স্বাভাবিক; বিশেষ করে মা-বাবা নিজ সন্তান নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবেন, তাঁরা প্রচলিত পদ্ধতির শিক্ষাক্রম পরিবর্তনের অনিবার্যতা বোঝার চেষ্টা করে নতুনকে স্বাগত জানাবেন বলে আশা করা যায় না। বিভিন্ন মহলের গঠনমূলক কিছু সমালোচনার উত্তর এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করা হলো।

ক. নতুন কারিকুলাম চালুর আগে প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি
এই সমালোচনা গ্রহণ করে, বিশেষ করে গণসচেতনতার অপর্যাপ্ত উদ্যোগ মেনে নিয়েই শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রসঙ্গে আলোকপাত করা যাক। প্রথমত, ৬২টি স্কুলে পাইলটিং করা হয়েছে ২০২২ সালে, এর জন্য বৈচিত্র্যময় অঞ্চল থেকে স্কুল ঠিক করা হয়েছিল। সে সময় একধাপ প্রশিক্ষণ হয়েছে, তবে সেই সংবাদ গণমাধ্যমে কম এসেছে। এ বছর সাড়ে চার লাখ শিক্ষকের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং প্রায় পঁচিশ হাজার মাস্টার ট্রেইনার তৈরি হয়েছেন, যাঁরা মাঠপর্যায়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। প্রশিক্ষণার্থীদের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার নানা ধরনের সীমাবদ্ধতা রয়েছে, যেমন বয়স্ক প্রশিক্ষণ দীর্ঘকালের জন্য করা হলে ফলপ্রসূ হয় না এবং এই বয়সে পূর্বধারণা পরিহারে মানসিক প্রস্তুতি থাকে না। এ ধরনের নানা মনস্তাত্ত্বিক দিক ও প্রশাসনিক জটিলতা বিবেচনায় এনে মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ এড়িয়ে স্বল্পকালীন (সাত-আট দিনের), কিন্তু বছরব্যাপী প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হচ্ছে বলে শোনা গেছে। এর জন্য বিশেষজ্ঞজনেরা অত্যন্ত ফলপ্রসূ একটি প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল তৈরি করে প্রশিক্ষণ পরিচালনা করছেন।

আরেক প্রেক্ষাপট আলোচনার বাইরে থেকে গেছে। এই কারিকুলামে শিক্ষক সহায়িকা বা টিজি (টিচারস গাইড) এমনভাবে লেখা হয়েছে যে একজন শিক্ষক মাইন্ডসেট বদলে কেবল টিজি অনুসরণ করেই শ্রেণি পরিচালনার কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন। শিক্ষক ও সমাজের মাইন্ডসেট পরিবর্তন বা সামাজিক সচেতনতার কাজে উদ্যোগ আরও জোর উদ্যমে চালিয়ে যেতে হবে। এসব কাজে রাতারাতি ফল পাওয়া না গেলেও এর কোনো শর্টকাট রাস্তা হয় না।

খ. গ্রেডিং ও সৃজনশীল পদ্ধতি ব্যর্থ হয়েছে, এই পদ্ধতিও ব্যর্থ হতে বাধ্য 
ওপরের দুটোই কোনো কারিকুলাম নয়। কারিকুলাম একটি শিক্ষাব্যবস্থার প্রায় সবটুকু। গ্রেডিং পদ্ধতি হলো পরীক্ষার ফল প্রকাশের ভাষা বা উপায়, আর সৃজনশীল পদ্ধতি পরীক্ষার পদ্ধতির জন্য বিশেষ এক কাঠামোবদ্ধ প্রশ্ন। উভয় ক্ষেত্রেই শিক্ষণ-শিখন কৌশল ও মূল্যায়ন-প্রক্রিয়ার কোনো পরিবর্তন না করে কেবল সনদের চেহারা এবং প্রশ্নের কাঠামো পরিবর্তন করা হয়েছিল। সার্বিক শিক্ষাব্যবস্থা ও সার্বিক কাঠামো বা অ্যাপ্রোচ পরিবর্তন না করে শিক্ষাক্রমের যেকোনো দু-একটি উপাদানের পরিবর্তন কার্যকর হওয়ার কথা নয়। অন্যদিকে এই পরিবর্তন শিক্ষার মৌলিক কোনো পরিবর্তন আনতে ব্যর্থ হয়েছে, ক্ষতি হয়েছে বলা যাবে না। অবস্থার উন্নতি হয়নি মানে অবনতি হয়েছিল ধরে নিয়ে শিক্ষার্থীর ক্ষতি হয়েছে বা দেশের ক্ষতি হয়েছে বলা ঠিক নয়।

গ. ফিনল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরের অনুকরণে নতুন শিক্ষাক্রম তৈরি করা হয়েছে
এই শিক্ষাক্রমের নাম যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম (কম্পিটেন্সি বেইজড কারিকুলাম)। উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে তাজিকিস্তান, এস্তোনিয়া, শ্রীলঙ্কা ইত্যাদি এবং ফিলিপাইনের মতো দু-একটি দেশ আংশিকভাবে এই শিক্ষাক্রম অনুসরণ করে। ভুটানও বাংলাদেশের মতো এ বছর এই শিক্ষাক্রম অনুসরণ করেছে। অন্যদিকে এই শিক্ষাক্রমের শিক্ষণ-শিখনকৌশল অভিজ্ঞতাভিত্তিক (এক্সপেরিয়েনসিয়াল লার্নিং)। আমেরিকান মনোবিজ্ঞানী ও তাত্ত্বিক শিক্ষাবিদ ডেভিড কোব  বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের এই অ্যাপ্রোচের কথা বলেন এবং আশির দশক থেকে অনেক দেশ এই পদ্ধতির শিখনকৌশল প্রয়োগ করা শুরু করে; অর্থাৎ কারিকুলাম যোগ্যতাভিত্তিক, যেখানে যোগ্যতা নির্ধারিত হয়েছে আমাদের দেশের সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে।

কারিকুলামের আরেক দিক শিক্ষণ-শিখনকৌশল হলো অভিজ্ঞতাভিত্তিক। একটি কারিকুলামের অন্যতম প্রধান আরেক দিক হলো মূল্যায়ন পদ্ধতি, যা সম্পূর্ণই নিজস্ব উদ্ভাবন। সেখানে মূল লক্ষ্য রাখা হয়েছে শিক্ষার্থীদের মধ্যকার অসুস্থ প্রতিযোগিতা কমানো এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া কমিয়ে তকমাওয়ালা ‘খারাপ ছাত্র’র সংখ্যা কমানো। দেশের শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞরা উল্লিখিত লক্ষ্য ঠিক রেখে মূল্যায়ন পদ্ধতি নির্ধারণ করছেন।

উল্লেখ্য, সিঙ্গাপুর স্টেম (STEM: সায়েন্স, টেকনোলজি, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যাথমেটিক) ঘরানার অনুসারী এবং ফিনল্যান্ডের পদ্ধতি সম্পূর্ণ নিজস্ব, যা প্রায় কোনো দেশের জন্যই অনুকরণীয় নয়। ওপরের সমালোচনা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, আমাদের দেশের মানুষ সহজেই বিশ্বাস করবে—এমন গুজব রটানো হচ্ছে। কারণ, আমাদের বিশ্বাস, আমাদের দেশ যা কিছু করে, তা কোনো না কোনো দেশের নকল করেই করে! ঔপনিবেশিক মনোভাব এ দেশে আরও কিছুকাল থাকবে, তা ছাড়া এখন আবার ‘কপি-পেস্ট’-এর যুগ! 

ঘ. ব্যয়বহুল উপকরণ ও ইন্টারনেটের ব্যবহার
পাঠ্যবই ও শিক্ষক সহায়িকায় পুরোনো ক্যালেন্ডার বা কাগজের বাক্সজাতীয় ফেলে দেওয়া জিনিসপত্র দিয়ে পোস্টার বা সমধর্মী উপস্থাপনা তৈরির কথা বারবার উল্লেখ করা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে মা-বাবা, পরিবারের সদস্য বা প্রতিবেশীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে, সুযোগ থাকলে প্রাসঙ্গিক বই ঘাঁটতে। কোনো বিষয়ের কোথাও ফোন-ইন্টারনেট বা দামি উপকরণের ব্যবহার বাধ্য করা হয়নি। কিছু ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, সুযোগ থাকলে ইন্টারনেটের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। সচেতন অভিভাবক সহজেই পাঠ্যবইয়ের নির্দেশনা দেখে নিয়ে শিক্ষককে কেবল একটি ফোনের মাধ্যমেই যাচাই করতে পারেন, শিক্ষক কেন ফোন ব্যবহার করতে বলছেন বা এই সব উপকরণ কিনতে বলছেন। তাহলে শিক্ষকও দায়িত্বসচেতন হয়ে উঠবেন। কিশোর শিক্ষার্থী নিজে ভেবে সম্ভাব্য উত্তর খুঁজতে কিংবা ফেলে দেওয়া জিনিসপত্র ব্যবহারে অলসতা করতেই পারে। এখানে অভিভাবকের যুক্তিনির্ভর মনিটরিংয়ের অভাব সুস্পষ্ট। অবশ্য অভিভাবক এমন উদ্যোগ নিলে তাঁর টিভি ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর সুযোগ কমে আসবে, বিরোধিতা না করলে সাংবাদিক সাক্ষাৎকার নেবেন না!

ঙ. শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত 
এই অবস্থার সমাধানের কোনো বিকল্প নেই। কথা হলো, এ কথা এত দিন কেন বলা হলো না। কোনো শিক্ষাব্যবস্থাই চল্লিশজন শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন শিক্ষকের অনুপাতের বেশি কিছু সমর্থন করে না। নতুন শিক্ষাক্রমের জন্য এই অনুপাত গ্রহণযোগ্য মাত্রায় নামিয়ে আনা এই শিক্ষাক্রমের সাফল্যের পূর্বশর্ত হিসেবেই বিবেচিত হতে হবে। সরকার আইন করে ছাত্র ভর্তি নিয়ন্ত্রণ না করলে এই অনুপাত সম্ভব নয়। উল্লেখ্য, সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে দেশের সব স্কুলের আসনসংখ্যা সমভাবে বণ্টিত হলে নতুন স্কুল নির্মাণ না করেও শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত গ্রহণযোগ্য মাত্রায় কমিয়ে আনা সম্ভব। তবে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও কঠোর নজরদারির কোনো বিকল্প নেই। 

সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতাও এ ক্ষেত্রে জরুরি। আমরা এ দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী ‘ভালো স্কুল’-এর পেছনে ছুটছি সন্তানের প্রকৃত কল্যাণের কথা ভেবে। কিন্তু শিক্ষার সব দায়দায়িত্ব স্কুল ও কোচিং সেন্টারের ওপর চাপিয়ে নিজে নিশ্চিন্ত হতে চাই। কেননা শিশুর শৈশব ও মর্যাদার চেয়ে পরীক্ষায় ভালো ফল আমাদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এর সুযোগে স্কুল-কুলের মধ্যে ব্রাহ্মণজাত তৈরি হয়েছে, নামীদামি স্কুলের একটা ক্যাটাগরি তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে শিক্ষক ও স্কুল প্রশাসনে অন্যায়, দুর্নীতি বেড়েছে। 

চ. বিজ্ঞান ও গণিতের গুরুত্ব কমেছে
কোন বিষয়ের গুরুত্ব কতটুকু তার পরিমাপ করতে হবে মোট কর্মঘণ্টার শতকরা কতটুকু বরাদ্দ রাখা হয়েছে, তার ভিত্তিতে। নম্বরভিত্তিক মূল্যায়ন না থাকায় কোনো বিষয়ের গুরুত্ব পরিমাপে বরাদ্দ করা নম্বর বা বইয়ের সংখ্যা থেকে হিসাব করা যাবে না। শ্রেণিসংখ্যার শতকরা থেকে হিসাব করা হলে বিজ্ঞান ও গণিতের অবস্থান আগের চেয়ে ভালো। বিষয় দুটির শিক্ষণ-শিখন অ্যাপ্রোচে মৌলিক পরিবর্তন হয়েছে। সচেতন পাঠক সহজেই বইগুলো ভালো করে নিরীক্ষা করলে পরিবর্তনকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখবেন বলে নিশ্চয়তা দেওয়া যায়।

ছ. উচ্চশিক্ষার মান কমে যাবে 
আমাদের দেশের উচ্চশিক্ষার মান কমার আর কোনো জায়গা আছে বলে মনে হয় না। সমগ্র বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়ের রেটিংয়ে আমাদের অবস্থান জানার পরে আমাদের উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মান নিয়ে গর্ব করার কিছু নেই। নতুন কারিকুলামের লেখকদের অনেকে জানেন, গণিত-বিজ্ঞান-সামাজিক বিজ্ঞানের অনেক কিছুই নতুন এই কারিকুলামে অষ্টম-নবম শ্রেণির পাঠ্যে যুক্ত হয়েছে। এই কারিকুলামের শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলে বিশ্ববিদ্যালয়কেই উন্নত হতে হবে, কোর্সের বিষয়বস্তুকে উচ্চতর ধাপে উন্নীত করতে হবে। সমালোচনা বিষয় তো ভর্তি-প্রক্রিয়া, যার পরিবর্তনের কথা শোনা যাচ্ছে। চলমান পদ্ধতির তথ্যমূলক এমসিকিউ প্রশ্নের উত্তর থেকে মেধাবী ছাত্র নির্বাচন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। নতুন এই শিক্ষা কার্যক্রমের শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি-প্রক্রিয়া পরিবর্তন করতেই হবে। আইইএলটিএস, স্যাটের মতো বিভিন্ন ধরনের অ্যাপটিচুড টেস্টের জন্য নিজস্ব পদ্ধতি উদ্ভাবন করে নিতে হবে।

হাঁসের ডাকের প্রশিক্ষণ বা রান্না শেখানোর কারিকুলাম-জাতীয় গুজবের প্রসঙ্গে কথা বলার কিছু নেই। সামাজিক মাধ্যম বা গণমাধ্যম নেতিবাচক গুজব প্রচার করবেই, তা সে যে মানেরই হোক। এ সবের প্রভাবও ক্ষণস্থায়ী। 

শেষ কথা
অবকাঠামোর মতো দৃশ্যমান উন্নয়ন সহজেই আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করে। এর বাইরের সরকারি ভালো উদ্যোগকে আমরা সন্দেহের চোখে দেখি; বিশেষ করে যেকোনো কারিকুলামের পরিবর্তনের ফল পেতে কমপক্ষে এক দশকের প্রয়োজন। সাধারণ মানুষের নতুন কারিকুলাম নিয়ে বিরূপ মত খুবই স্বাভাবিক। অন্যদিকে দেশের কতিপয় বিশেষজ্ঞ বড় ধরনের কোনো পরিকল্পনায় তাঁদের ডাকা না হলেই বিরোধিতা করেন। শিক্ষার ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এ দেশে বঙ্গবন্ধু ছাড়া কেউ দেখাতে সাহস করেননি। তিনি ড. কুদরাত-এ-খুদাকে সদ্য স্বাধীন দেশের জন্য শিক্ষাপদ্ধতির সার্বিক পরিকল্পনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। আমরা জানি, সেই প্রস্তাব বঙ্গবন্ধু বাস্তবায়নের সুযোগ পাননি। আজ পর্যন্ত কোনো সরকার সেই কমিশনের প্রস্তাব বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। আমাদের দেশের সব রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের সাধারণ সমস্যা হলো, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হয়, কিন্তু বাস্তবায়ন করে মন্ত্রণালয়। সেখানে রাজনীতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত সরকারি কর্মকর্তা আমলা-সংস্কৃতির মধ্য থেকে নিজ নিজ মনস্তাত্ত্বিক সংকট কাটিয়ে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ বাস্তবায়নের কাজ করতে পারেন না। সম্ভবত এই প্রথম একজন শিক্ষামন্ত্রী দিনরাত এক করে বিশেষজ্ঞ দলের সঙ্গে এক টেবিলে বসে কাজ করছেন—রূপরেখা তৈরি, বই লেখা, বইয়ের রিভিউ করা এবং বাস্তবায়ন কার্যক্রমের খুঁটিনাটি ইত্যাদি বিষয়ের সঙ্গে সরাসরি ব্যক্তিগতভাবে জড়িত হয়ে কাজ করছেন।

সিদ্দিক বেলাল, সদস্য, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের লেখক দল

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত