Ajker Patrika

ভাবমূর্তি ফেরাতে কী করতে পারে নির্বাচন কমিশন

আপডেট : ১০ এপ্রিল ২০২২, ১২: ২২
ভাবমূর্তি ফেরাতে কী করতে পারে নির্বাচন কমিশন

জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ধারাবাহিক সংলাপের অংশ হিসেবে প্রিন্ট মিডিয়ার সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে ৬ এপ্রিল নির্বাচন কমিশনের একটি সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে নতুন নির্বাচন কমিশন ২৬ ফেব্রুয়ারি শপথ গ্রহণ করে পরদিনই অফিসে গিয়ে দায়িত্ব পালন শুরু করেছে। এরপর কমিশন ধারাবাহিকভাবে সংলাপ বা মতবিনিময় শুরু করেছে। ১৩ মার্চ প্রথম দফায় শিক্ষাবিদদের সঙ্গে, ২২ মার্চ দ্বিতীয় দফায় বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে এবং তৃতীয় দফায় ৬ এপ্রিল জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের মতবিনিময় হয়। তৃতীয় দফার মতবিনিময় সভায় আমন্ত্রিত সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকদের কয়েকজন উপস্থিত হয়ে অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নানা পরামর্শ দিয়েছেন। এসব মতামত বা পরামর্শ শুনে নির্বাচন কমিশন কতটুকু উপকৃত হবে বা এর থেকে কতটুকু তারা গ্রহণ করবে, তা আমি জানি না। তবে সবার কথা শুনে ব্যক্তিগতভাবে আমি উপকৃত হয়েছি।

অতিথিদের কাছে কমিশনের পক্ষ থেকে দেওয়া আমন্ত্রণপত্রে বলা হয়েছে: ‘জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের সব নির্বাচনে ভোটাররা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রত্যাশা করেন। তাঁরা স্বচ্ছন্দে ও নিরাপদে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে চান। নির্বাচন কমিশন সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করে অবাধ অনুষ্ঠানের জন্য যাবতীয় কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকে। এর পরই চিঠিতে বলা হয়েছে: ‘সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় আইন ও বিধিমালা রয়েছে, যা সময়ের সঙ্গে সংশোধন করে যুগোপযোগী করা হয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনসহ (ইভিএম) বিভিন্ন আধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে। নির্বাচন পরিচালনায় রয়েছে প্রশিক্ষিত জনবল।’

চিঠির এই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে নির্বাচন কমিশনের কাছে ভোটারদের প্রত্যাশা কী এবং কমিশনেরইবা করণীয় কী। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যুগোপযোগী আইন, বিধিমালা, প্রশিক্ষিত জনবল—সবই আছে কমিশনের কাছে। তাহলে কেন ধারাবাহিক সংলাপ? এই প্রশ্নের উত্তরও চিঠিতে আছে। বলা হয়েছে: ‘নির্বাচন কমিশন বিশ্বাস করে, সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী, নাগরিক সমাজ, সাংবাদিক, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, পর্যবেক্ষক, রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্ট সবার সুচিন্তিত মতামত ও পরামর্শ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’

‘সংশ্লিষ্ট সবার সুচিন্তিত মতামত ও পরামর্শ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে’ বলে নির্বাচন কমিশন ‘বিশ্বাস’ করলেও সম্পাদক-সিনিয়র সাংবাদিকেরা ‘সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন’ করার জন্য যেসব পরামর্শ দিয়েছেন, তার সবগুলোই আমার কাছে অন্তত ‘গুরুত্বপূর্ণ’ মনে হয়নি এবং কিছু মতামত ‘সুচিন্তিত’ বলেও মনে হয়নি। হতে পারে এটা আমার জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার জন্য। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব ও এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না—এমন কিছু করার পরামর্শও কমিশনকে দেওয়া হয়েছে। যেমন বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে আনার কথা কেউ কেউ বলেছেন। এটা ঠিক যে রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না, তেমনি এটাও তো ঠিক যে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা কম। বিএনপির দলীয় সিদ্ধান্ত হচ্ছে বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়া। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের করণীয় কী? সরকারকে পদত্যাগ করে ‘নির্বাচনকালীন’ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিতে বাধ্য করবে নির্বাচন কমিশন? নির্বাচন কমিশনকে রাজনৈতিক সমঝোতার পরিবেশ তৈরির পরামর্শ দিয়ে বাহ্বা পাওয়া যেতে পারে, কিন্তু সেটা তারা করতে পারবে না। ওটা তাদের কাজ নয়।

দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সমঝোতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা পালনের প্রত্যাশা করা একেবারেই যুক্তিহীন। সব দলের অংশগ্রহণ যেমন ভালো নির্বাচনের একটি অন্যতম উপাদান, তেমনি এটাও ঠিক যে সব দলের নির্বাচনে আসা ও না আসার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের ওপর নির্ভর করে না। এটা রাজনৈতিক দলের সিদ্ধান্ত ও কৌশলের বিষয়।

নির্বাচনব্যবস্থা ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ওপর মানুষের আস্থার যে চরম সংকট রয়েছে, তা নিয়ে বিতর্কের সুযোগ নেই। আবার এটাও ঠিক যে নতুন নির্বাচন কমিশনের হাতে এমন কোনো অলৌকিক সুইচ নেই, যেটা টিপে দিলেই কমিশনের প্রতি মানুষের আস্থার বাল্ব মুহূর্তেই জ্বলে উঠবে। দু-একজন বলছেন, মানুষের আস্থা ফেরাতে বর্তমান কমিশনকে সাহসী পদক্ষেপ নিতে হবে। কী হবে সেই ‘সাহসী’ পদক্ষেপ? প্রথমত, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী সব প্রার্থীর জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণা যেন বাধাগ্রস্ত কিংবা ব্যাহত না হয়। সবল পক্ষ যেন তুলনামূলক দুর্বল প্রার্থীর ওপর চড়াও হতে না পারে। কোনো প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীর সভা-সমাবেশে হামলা করলে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে যেন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে দ্বিধা কিংবা নিষ্ক্রিয়তা দেখানো না হয়। দ্বিতীয়ত, ভোটাররা যাতে নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে নির্বিঘ্নে তাঁদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নিরাপদে নিজের বাসাবাড়িতে ফিরতে পারেন, সেই পরিবেশ তৈরি করবে নির্বাচন কমিশন। তবে এ ক্ষেত্রেও নির্বাচন কমিশন, সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছার সম্মিলন ঘটতে হবে।

আইন ও বিধিতেই এটা আছে যে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনকালীন প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তখন প্রশাসনের কোনো ছোটবড় কর্মকর্তা—হোন তিনি ডিসি, এসপি কিংবা ইউএনও বা থানার ওসি—কেউ নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অমান্য করতে পারবেন না। করলে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে এই কাজ সাহস ও দৃঢ়তা সঙ্গে করতে হবে। কোনো পক্ষই যাতে অন্যায়ভাবে প্রভাব বিস্তার করতে না পারে, সেদিকে কমিশনকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। রাজনৈতিক, পেশি ও অর্থশক্তি ছাড়াও আজকাল ধর্মীয় অপপ্রচার নির্বাচনকে তথা ভোটারদের প্রভাবিত করে থাকে। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্র এই অপশক্তিগুলোর ভূমিকা সব সময় নেতিবাচক। এই অপশক্তিগুলোর অপতৎপরতার প্রতি নির্বাচন কমিশনের নজরদারি থাকতে হবে। অতীতে কোনো নির্বাচন কমিশনই এই দুষ্টচক্রের বিরুদ্ধে মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়ানোর সৎসাহস দেখাতে পারেনি। কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে গঠিত নতুন কমিশন সেখানে পরিবর্তন দেখাতে পারলেই মানুষের আস্থা ফিরবে।

জেলা প্রশাসকদের পরিবর্তে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসির নিজস্ব জনবল থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়ার পরামর্শ কেউ কেউ দিয়েছেন। তাঁরা মনে করছেন, ইসির জনবল দিয়ে নির্বাচনী কাজ করা হলে নির্বাচনে সরকার ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ অনেক কমে যাবে। এই প্রস্তাবের সঙ্গেও ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগ আছে। সরকারি প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব লোকবল নিয়োগের প্রক্রিয়া কি ভিন্ন? জেলা প্রশাসক যদি সরকারের হুকুমবরদার হয়ে থাকেন, তাহলে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা কার অনুগত?

একটি ঘটনার কথা মনে পড়ছে। ২০০৫ সালে উপজেলাসহ বিভিন্ন পর্যায়ে ৩৬২ জন নির্বাচন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল হাওয়া ভবনের তালিকা অনুযায়ী। তারেক রহমানের অনুগত ক্যাডারদেরই নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এ নিয়ে পরে অনেক বাদ-প্রতিবাদ হয়েছে। কিন্তু সরকারি চাকরিতে একবার নিয়োগ পেলে সেটা বাতিল করার প্রক্রিয়া জটিল ও দীর্ঘ। তবে কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ৮২ জনের নিয়োগ বাতিল করার পর তাঁরা আদালতে গিয়েছেন। এখনো সেটা সম্ভবত আপিল বিভাগের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে। ওই সময় নিয়োগপ্রাপ্তরা পদোন্নতি পেয়ে এখন নিশ্চয়ই নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় দায়িত্বে আছেন। তারেক রহমানের ওই সব ক্যাডারকে দায়িত্ব দিলে তাঁরা জেলা প্রশাসকদের চেয়ে পক্ষপাতমুক্ত ভূমিকা পালন করবেন বলে আমি অন্তত বিশ্বাস করি না। যাঁরা নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব লোকবল দিয়ে নির্বাচন পরিচালনার পরামর্শ দিয়েছেন, তাঁরা জেনেবুঝে এই পরামর্শ দিয়েছেন, নাকি কারও দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন, সে প্রশ্ন উঠতেই পারে। শ ম জাকারিয়া ও জকরিয়া নামে নির্বাচন কমিশনের দুজন কর্মকর্তার কথা মনে পড়ে, যাঁরা বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে ভুয়া ভোটার তালিকা তৈরি থেকে এমন অনেক কিছু করেছিলেন, যা নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংসের পথ প্রশস্ত করেছিল। এটাও মনে রাখা দরকার, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় মানেই প্রশাসনে যাঁরা দায়িত্ব পালন করছেন, তাঁরা সবাই আওয়ামী রাজনীতির দর্শনে বিশ্বাসী নন। ভোল পাল্টানো ব্যক্তিদের চিহ্নিত না করে ঢালাও দোষারোপ করা ভালো নয়।

স্বাধীনতার ৫০ বছর পার করে এসে আমরা যদি একটি বিতর্কমুক্ত ভালো নির্বাচন করতে না পারি, তাহলে তা আমাদের, নির্বাচন কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর জন্যই লজ্জার। এই লজ্জাবোধ যদি সবার মধ্যে না আসে, তাহলে নির্বাচন কমিশন একা কী করবে? তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য চার কমিশনার প্রত্যেকে নিজেদের চাকরিজীবন শেষ করে এসেছেন। নির্বাচন কমিশনার পদগুলো হচ্ছে তাঁদের জন্য বোনাস। কাজেই তাঁদের হারানোর কিছু নেই। মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা পাওয়ার সুযোগ আছে। সংবিধান, আইন, বিধিমালা অনুযায়ী একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে হেঁটে সেই শ্রদ্ধা-ভালোবাসা অর্জনের সম্ভাবনা তাঁদের সামনে আছে।

নির্বাচন কমিশন বা ইসি নিয়ে যে ‘ছি ছি’ ভাব, তা কাটিয়ে উঠে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশনকে মানুষের মনে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে হবে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন। কুমিল্লা দিয়েই কমিশন শুরু করতে পারে আস্থা ফেরানোর প্রক্রিয়া। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় বা কোনো উপনির্বাচন যদি হয়, তাহলে সেগুলোতেই হবে তাদের যোগ্যতার পরীক্ষা। অনেক কিছু করার পরিকল্পনা না করে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি কাজ করলেই মানুষ কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনের সঙ্গে থাকতে রাজি হবে।

বিভুরঞ্জন সরকার, সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত