Ajker Patrika

টেনে বাড়ানো হলো করোনার টিকার মেয়াদ

সাইফুল মাসুম হাতিয়া (নোয়াখালী) থেকে
আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২২, ১১: ৫৮
টেনে বাড়ানো হলো করোনার টিকার মেয়াদ

‘টিকার শিশিতে মেয়াদোত্তীর্ণ লেখা রয়েছে। আবার কোন জটিলতা দেখা দেয়, এই আশঙ্কায় আমি টিকা নিইনি। আমার পরিচিত আরও ১৫ জন মানুষ টিকা নেওয়া থেকে বিরত রয়েছে। একটা চিঠির ওপর ভিত্তি করে আমি কীভাবে মেয়াদোত্তীর্ণ টিকা নেব?’ এমন প্রশ্ন হাতিয়া আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাজ্জাদ হোসেনের। নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গতকাল বৃহস্পতিবার তাঁর সঙ্গে কথা হয়। সাজ্জাদ হোসেন জানান, কোভিডের টিকার তৃতীয় ডোজ তিনি আগেই নিয়েছেন। চতুর্থ ডোজ নেওয়ার জন্য হাসপাতালে গেলে মেয়াদোত্তীর্ণ জানতে পেরে তিনি টিকা নেওয়া থেকে বিরত থেকেছেন।

নভেল করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ প্রতিরোধে দেশে অন্যান্য টিকার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজারের তৈরি টিকাও দেওয়া হচ্ছে। ২০ ডিসেম্বর থেকে ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি, সম্মুখসারির কর্মীসহ বিশেষ জনগোষ্ঠীকে দেওয়া হচ্ছে টিকার চতুর্থ ডোজ। এর আগে ২০ নভেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এক চিঠিতে বলেছে, ফাইজারের যে টিকার মেয়াদ ৩০-১১-২০২২ লেখা আছে, তা আরও তিন মাস অর্থাৎ ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে। অধিদপ্তরের তখনকার পরিচালক ডা. শামসুল হকের সই করা চিঠিতে বলা হয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও উৎপাদনকারী সংস্থা ফাইজারের অনুমোদনক্রমে ফাইজার কোভিড-১৯ টিকার মেয়াদ ৩০-১১-২০২২ থেকে ২৮-০২-২০২৩ খ্রি. পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে।

এভাবে টিকার মেয়াদ বাড়ানোর ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ। কোডিভ-১৯-সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চিঠি দিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ টিকার মেয়াদ বাড়ানোর নজির নেই। এমনটা হয়ে থাকলে এটা অগ্রহণযোগ্য। ফাইজারের মতো স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের টিকায় এমন হওয়ার কথা নয়। মেয়াদোত্তীর্ণ টিকায় যদি মানুষের কোনো অসুবিধা হয়, তাহলে কী হবে? মেয়াদোত্তীর্ণ টিকা নিয়ে মানুষের উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমনটা করা ঠিক হয়নি।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সদ্য বিদায়ী পরিচালক ডা. শামসুল হক বলেন, ‘উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদনক্রমে এই আদেশ দেওয়া হয়েছে। সব জেলা-উপজেলায় এটা পাঠানো হয়েছে। কী পরিমাণ টিকার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে, এই মুহূর্তে আমি বলতে পারব না। কয়েক দিন হলো আমি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছি।’

ইপিআইয়ের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. এস এম আব্দুল্লাহ আল মুরাদ বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সরকার অ্যাস্ট্রাজেনেকা, মডার্না, সিনোফার্ম, সিনোভ্যাক, জনসন অ্যান্ড জনসন ও ফাইজারের টিকা ব্যবহার করেছে। এর মধ্যে ফাইজারের কিছু টিকা ছাড়া সবগুলোই মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার আগেই প্রয়োগ হয়েছে। ফাইজারের যেসব টিকার মেয়াদ ফুরিয়েছে, সেগুলোর মেয়াদ তিন মাস বাড়িয়ে দেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।’ 

ওয়েবসাইটেও বর্ধিত মেয়াদ
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিঠিতেও ডব্লিউএইচওর অনুমোদনের কথা উল্লেখ করার পাশাপাশি একটি ওয়েবসাইট ঠিকানা দিয়ে বলা হয়েছে, তাতে ফাইজার টিকার ভায়াল বা শিশির গায়ে উল্লিখিত লট নম্বর ব্যবহার করে বর্ধিত মেয়াদের তারিখ জানা যাবে। উল্লিখিত ওয়েবসাইটটি ফাইজার-বায়োএনটেকের। দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলায় সরবরাহ করা ফাইজারের একটি টিকার শিশির গায়ে মেয়াদ লেখা ১১/২০২২, যার লট নম্বর এফওয়াই ১৩২৩। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী সাইটটিতে লট নম্বর দিলে বর্ধিত মেয়াদ দেখায় ৩১ আগস্ট ২০২৩।

ডব্লিউএইচওর এক সাবেক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোনো ভ্যাকসিনের মেয়াদ বাড়ানোর নজির নেই। করোনার মতো ভয়ংকর ভাইরাসের ক্ষেত্রে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে সংস্থার তিনটি কমিটি থাকে, তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যালোচনা করে, তারপর এটি কতটা গ্রহণযোগ্য, সে বিষয়ে প্রতিবেদন দেয়। এসব প্রক্রিয়া শেষ করতে দীর্ঘ সময় লাগে। কিন্তু এত অল্প সময়ে কীভাবে অনুমোদন পেয়েছে, আমাদের জানা নেই।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডব্লিউএইচওর সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মো. মুজাহেরুল হক বলেন, ‘সাধারণত মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়া টিকার মেয়াদ বাড়ানোর ক্ষেত্রে সংস্থা অনুমোদন দেয় না। তবে সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) যেসব টিকার মেয়াদ ফুরিয়েছে, তার বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে। এতে তারা দেখেছে, মেয়াদ শেষ হওয়ায় টিকাগুলো ৩ থেকে ৯ মাস পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে, তাতে কোনো ধরনের ক্ষতি হবে না। তবে শর্ত থাকে যে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রেখে সঠিক সময়ে ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এসব ফল তারা নিজ দেশের সরকারের পাশাপাশি ডব্লিউএইচওর কাছেও দেয়। কিন্তু ডব্লিউএইচওর ওয়েবসাইট ঘেঁটে এমন কিছু আমি পাইনি।’ 

কারোরই গ্রহণ করা উচিত নয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ফিরোজ আহমেদ বলেন, ‘উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান টিকা বা ওষুধের যে মেয়াদ লিখে দিয়েছে, তা পেরিয়ে যাওয়ার পর প্রয়োগ করা কোনোভাবেই উচিত নয়। মেয়াদোত্তীর্ণ টিকা ব্যবহারের ফলে কী ধরনের ক্ষতি হবে, সেটা পূর্বানুমান করে বলা মুশকিল। এটা নিলে কেউ মরে যাবে বা এটা কাজে লাগবে, এমনটা বলা যাবে না। তবে এটা কারোরই গ্রহণ করা উচিত নয়।’

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘কোনো টিকা বা ওষুধের গায়ে মেয়াদ লেখা থাকে; কারণ, মেয়াদ শেষে এটা মানুষের শরীরে ব্যবহার উপযোগী না। যদি ব্যবহার করা যেত, তাহলে টিকার শিশিতে লেখা থাকত, মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার তিন মাস পরেও ব্যবহার করা যাবে। মেয়াদোত্তীর্ণ টিকা কোনো যুক্তিতে, কারও আলোচনার মাধ্যমে ব্যবহার উপযোগী বলে মানুষের শরীরে প্রবেশ করানো যাবে না। কারণ, ওই টিকা তৈরি করা হয়েছে মেয়াদ থাকাকালীন ব্যবহার করার জন্য। মেয়াদ শেষে এটা ব্যবহারের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। মেয়াদোত্তীর্ণ টিকা ব্যবহারে অবশ্যই আশঙ্কার জায়গা রয়েছে।’

রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) অন্যতম পরামর্শক ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রে কিছুদিন হাতে রেখে মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ দেওয়া হয়। মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে বলে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উচিত জনসাধারণের কাছে বিষয়টি স্পষ্ট করা। গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে সবাইকে জানানো।’

জনমনে ভয়
হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গতকাল মেয়াদোত্তীর্ণ এই টিকা দিতে দেখা গেছে অনেককে। টিকার শিশিতে মেয়াদোত্তীর্ণ লেখা দেখার পর অনেকে এই টিকা নেওয়া থেকে বিরত থেকেছেন। আবার কেউ কেউ টিকা নেওয়ার পর জানতে পারেন মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার বিষয়। এতে তাঁদের মধ্যে ভয় কাজ করছে। সম্প্রতি হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে টিকা নিয়েছেন হাতিয়া পৌরসভার শূন্যচর গ্রামের গৃহবধূ আমেনা আক্তার। আমেনার স্বামী সায়েদ আহমেদ বলেন, ‘টিকা নেওয়ার পর জানতে পারলাম, টিকার মেয়াদ নেই। এখন ভয় হচ্ছে শারীরিক কোনো অসুবিধা হয় কি না।’

হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. শেখ মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘এই টিকায় ক্ষতি হবে কি না, জানি না; তবে সরকার যেভাবে দিতে বলছে সার্কুলারে, আমরা সেভাবে দিচ্ছি।’

টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিতে গিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ দেখেন দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার শতগ্রাম ইউনিয়নের অর্জুনাহার গ্রামের হামিদুল ইসলাম। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি টিকার দ্বিতীয় ডোজ ফাইজার নেওয়ার জন্য যাই। যখন কার্টন থেকে টিকা বের করল, দেখলাম টিকার মেয়াদ নেই। তখন নার্সরা আমাকে বলে, টিকা নিলে নিজ দায়িত্বে নিতে হবে। আমি যদি মারা যাই, দায়িত্ব কে নেবে, প্রশ্ন করলে তারা বলে আপনার ইচ্ছা। পরে তারা আমাকে টিকা দিল।’

বীরগঞ্জ উপজেলার ৫ নম্বর সুজালপুর ইউনিয়নের স্বাস্থ্য সহকারী লিপা রায় বলেন, ‘জনগণ ভ্যাকসিনের মেয়াদের ব্যাপারে জানতে চাইলে আমি হাসপাতালের স্টোরকিপার সাবুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি জানান, এগুলোতে কোনো সমস্যা নাই, দেওয়া যাবে। তখন আমরা ফাইজারের টিকাটি দিই।’

মেয়াদোত্তীর্ণ টিকায় স্বাস্থ্যঝুঁকি
বিএসএমএমইউর সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মেয়াদোত্তীর্ণ টিকা ব্যবহারের ফলে বহু ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে। আমি এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে জানি না যে আসলেই এ রকম কোনো চিঠি দেওয়া হয়েছে কি না। কিন্তু যদি এ রকম চিঠি দেওয়া হয়ে থাকে, সেটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। মেয়াদোত্তীর্ণ ভ্যাকসিন নিলে যেকোনো কিছুই ঘটতে পারে। কোনো অথরিটিই (কর্তৃপক্ষ) এটা এক্সটেন্ড করতে পারে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত