Ajker Patrika

চাহিদার দ্বিগুণ সক্ষমতা, তারপরও লোডশেডিং

মুহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ঢাকা
আপডেট : ০৫ জুলাই ২০২২, ১৩: ৪৯
চাহিদার দ্বিগুণ সক্ষমতা, তারপরও লোডশেডিং

‘সরকার তো খালি টিভিত কয় বিদ্যুৎ শতভাগ বাড়াইছে। কিন্তু বিদ্যুৎ থাকে কতক্ষণ? খালি টিভিতে খবর দেখি, বাস্তবে আর বিদ্যুৎ সার্ভিস পাই না। অফিসোত ফোন দিলে ফোনও ধরে না। সামান্য বৃষ্টি হলে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। খালি বছরে বছরে বিদ্যুতের দাম বাড়ায়, সার্ভিসের খবর নাই।’ বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করলেন রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার দক্ষিণ কোলকোন্দ গ্রামের শফিকুল ইসলাম। গঙ্গাচড়ার মতোই অবস্থা রাজধানীসহ সারা দেশে। দিনে কমবেশি কয়েকবার লোডশেডিংয়ের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করছেন গ্রাহকেরা।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) বলছে, দেশে কোনো লোডশেডিং নেই। চাহিদা অনুযায়ীই উৎপাদন হচ্ছে। বিতরণ ও সঞ্চালন লাইনে সমস্যার কারণে মাঝেমধ্যে বিদ্যুৎ-সংযোগ বন্ধ করে রাখতে হয়।

সারা দেশে বিদ্যুতের চাহিদার তিন ভাগের প্রায় দুই ভাগ বিতরণ করে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। তারা বলছে, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। এই ঘাটতি সমন্বয় করতে গিয়েই লোডশেডিং হচ্ছে। বিতরণ লাইনের সমস্যা ও ঝড়-বৃষ্টির কারণে সংকট আরও বেড়ে যায়।

চলতি মাসের ১২ তারিখে পিডিবির সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য অনুসারে, দেশে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ২৫ হাজার ৫৫৬ মেগাওয়াট। প্রতিদিন বিদ্যুতের গড় চাহিদা ১২ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। উৎপাদনও হচ্ছে ১২ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। এ হিসাব ঠিক থাকলে বিদ্যুতের ঘাটতি থাকার কথা নয়।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পিডিবি দেশে লোডশেডিং আছে—এটা অস্বীকার করলেও মাঠপর্যায়ের তথ্য হচ্ছে দেশে লোডশেডিং আছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত জ্বালানির দাম বেড়ে গেছে। পিডিবি এখন চাহিদার তুলনায় কম বিদ্যুৎ উৎপাদন করে খরচ কমাতে চাইছে। এ জন্যই লোডশেডিং হচ্ছে।’

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সাম্প্রতিক সময়ে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের অভিযোগ পাওয়া যায়। রাজধানী এবং ঢাকার বাইরের কয়েকটি স্থানে খোঁজ নিয়েছেন আজকের পত্রিকার প্রতিনিধিরা। তাঁরা জানান, গত কয়েক দিন দিনে তিন থেকে চারবার লোডশেডিং হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গ্রাহকেরা।

বনশ্রীর জি ব্লকের বাসিন্দা ব্যাংক কর্মকর্তা শোয়েব আহম্মেদ। তিনি আজকের পত্রিকা’কে বলেন, ‘তিন দিন ধরে স্বল্প সময়ের জন্য হলেও দিনে দুই-তিনবার বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে। বাসায় জেনারেটর ও আইপিএস না থাকার কারণে বিদ্যুৎ চলে গেলে ছোট বাচ্চারা গরমে হাঁসফাঁস করে। সব সময় শুনি দেশে নাকি বিদ্যুতের চাহিদার তুলনায় উৎপাদন সক্ষমতা বেশি। তাহলে লোডশেডিং কেন করা হয়?’

শোয়েবের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায়। সেখানকার পরিস্থিতির কথা বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘গ্রামে বসবাস করা পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনরা প্রায় সময় জানান, একটু বাতাস বা আকাশ মেঘলা হলে বিদ্যুৎ চলে যায়। কখন আসে তার ঠিক-ঠিকানা থাকে না।’

চাঁদপুরের মতলব উত্তরে খোঁজ নেওয়া হয়েছিল সেখানকার পরিস্থিতি জানতে। বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা জানান, প্রতিদিন গড়ে ২-৩ বার লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েন তাঁরা। পৌর এলাকার সফিকুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বৃষ্টি দেখা দিলেই বিদ্যুতের ভেলকিবাজি আরম্ভ হয়। বৃষ্টি হলে বিদ্যুৎ থাকবে না—এটা কোন নিয়ম? আর পল্লী বিদ্যুতে ফোন দিলে শুধু ব্যস্ত কয়।’

জানতে চাইলে পল্লী বিদ্যুতের মতলব উত্তর জোনাল অফিসের পক্ষ থেকে বলা হয়, বৃষ্টিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু থাকলে লাইন নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই বৃষ্টির শুরুতেই সংযোগ বন্ধ করা হয়।

ময়মনসিংহের গৌরীপুরের লোকজনও শিকার হচ্ছেন লোডশেডিংয়ের। সেখানকার কর্তৃপক্ষও দায় চাপাচ্ছে প্রকৃতির ওপর। ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ শাহগঞ্জ শাখা কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঝড়বৃষ্টি ও বাতাসে বিদ্যুতের তারের ওপর গাছের ডালপালা পড়লে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে ঝড়বৃষ্টি হলে বিদ্যুৎ চলে যায়।’

লক্ষ্মীপুর পৌর এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ একবার গেলে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা লেগে যায় আবার ফিরে আসতে। ঝোড়ো হাওয়া হলে তো কথাই নেই। কখনো কখনো বিদ্যুৎ আসতে এক থেকে দুই দিনও লেগে যায়। পৌরসভার কাঞ্চনপুর গ্রামের গ্রাহক আকলিমা বেগম বলেন, ‘আগে বাতাস বাড়লে ঘর-দরজা ভেঙে পড়া নিয়ে আতঙ্কে থাকতাম। এখন সাথে যোগ হয়েছে বিদ্যুৎ চলে যাওয়া।’

রংপুরের গঙ্গাচড়ার আলমবিদিতর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোকাররম হোসেন সুজন। গত বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘আমার এলাকায় চার দিন ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ। আজকে আমি রংপুর শহরে এসে আমার ব্যবহার করা মুঠোফোনটি চার্জ করলাম। বিদ্যুতের কারণে আমার ইউনিয়নের লোকজন এবার বোরো খেতে সেচ দিতে খুব সমস্যায় পড়েছিল।’

নীলফামারীর ডিমলা দোকান মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ব্যবসায়ী সরোয়ার জাহান সোহাগ জানান, বিদ্যুতের বিড়ম্বনায় মানুষ অতিষ্ঠ। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে ঘরের ইলেকট্রনিক পণ্য নষ্ট হচ্ছে।

দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এমন অভিযোগ করলেও পিডিবির দাবি, দেশে কোনো লোডশেডিং নেই। পিডিবির জনসংযোগ পরিদপ্তরের পরিচালক সাইফুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘বিদ্যুতের সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন মেরামত করতে গিয়ে অনেক সময় বিদ্যুৎ-সরবরাহ বিচ্ছিন্ন করতে হয়। বিদ্যুতের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে কোনো ঘাটতি নেই।’

 বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপিডিবি স্বীকার না করলেও পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড বলছে, চাহিদার তুলনায় পিডিবির কাছ থেকে বিদ্যুৎ পাচ্ছে না তারা। তাদের বর্তমান গ্রাহক ৩ কোটি ২৭ লাখ। এই গ্রাহককে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে হলে প্রয়োজন প্রতিদিন ৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। কিন্তু পিডিবি দিতে পারছে ৭ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। ঘাটতি ৫০০ মেগাওয়াট।

এই ঘাটতি সমন্বয় করতে গিয়েই দেশের বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে বলে জানান আরইবির বিতরণ ও পরিচালন বিভাগের সদস্য দেবাশীষ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘চাহিদার তুলনায় আমাদের প্রায় ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের সংকট রয়েছে। এই সংকট আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। তখন পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ আনা গেলে এই সমস্যা আর থাকবে না।’

ঘাটতির পাশাপাশি বিতরণব্যবস্থা ও প্রকৃতিকেও দায়ী করলেন দেবাশীষ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘গ্রামাঞ্চলে আমাদের বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন অনেক জায়গায় গাছপালার আশপাশ দিয়ে টানা হয়। ঝোড়ো হাওয়া কিংবা কালবৈশাখীর সময়ে আমরা সতর্কতা হিসেবে অনেক সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখি।’

ম তামিম বলেন, ‘উৎপাদন ব্যবস্থার দিকে বেশি মনোযোগ দিতে গিয়ে সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার ওপর থেকে নজর সরে গেছে। এটা সত্য যে আমাদের সঞ্চালন লাইনগুলো দুর্বল ও বেশ পুরোনো। সরকারের উচিত এখন বিতরণ ও সঞ্চালন লাইনে বেশি বিনিযোগ করা।’

[প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন গৌরীপুর (ময়মনসিংহ), মতলব উত্তর (চাঁদপুর), লক্ষ্মীপুর, গঙ্গাচড়া (রংপুর) ও ডিমলা (নীলফামারী) প্রতিনিধি]

বিদ্যুৎ বিভ্রাট সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত