Ajker Patrika

বর্জন ও স্বজনের নির্বাচন এবং দেশের গণতন্ত্র

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী
বর্জন ও স্বজনের নির্বাচন এবং দেশের গণতন্ত্র

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নির্বাচন নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা কয়েক যুগ ধরে চলে আসছে। রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক আদর্শের বিকাশ, সংগঠন, নেতা-কর্মীর চেয়েও ভুঁইফোড়, সুবিধাবাদী ও সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান, বিকাশ, ক্ষমতায় ক্রমবর্ধমানভাবে প্রতিষ্ঠালাভের ফলেই এই সমস্যা জটিলতর হয়ে উঠেছে। একসময় বলাই হয়েছিল—রাজনীতিকে রাজনীতিবিদদের জন্য জটিল করে দেওয়া হবে। যাঁরা এমন দম্ভোক্তি করেছিলেন, তাঁরা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে যা করেছেন, তাতে গণতান্ত্রিক আদর্শবাদী রাজনীতিবিদদের রাজনীতি করাই শুধু কঠিন হয়ে ওঠেনি, নির্বাচনেও তাঁদের অবস্থান দুর্বলতম স্থানে। গোটা সমাজ, রাষ্ট্র ও জনমানসে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির পুনরাবির্ভাব ঘটানো হয়েছিল। সেই জিগির তুলেই নির্বাচনে প্রকৃত গণতান্ত্রিক শক্তিকে পরাজিত করার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছিল। এমনকি ১৯৯১-এর নির্বাচনেও ধর্ম ও ভারতবিরোধিতার জিগির কীভাবে কাজে লাগানো হয়েছিল, তা ভুলে যাওয়া উচিত নয়। এর পরও রাষ্ট্রক্ষমতাকে ব্যবহার করে স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনকে অগণতান্ত্রিক শক্তির হাতে ধরে রাখার কূটকৌশল চালিয়ে নেওয়া হয়েছিল। এর বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছিল। নির্বাচনব্যবস্থায় একটি অ্যাডহক পদ্ধতি চালু করা হলেও সেটির ভেতরেও লুকিয়ে থাকা নানা অপশক্তি নির্বাচনকে প্রভাবিত করার গোপন ব্যবস্থা কার্যকর করেছিল।

ফলে ২০০৬ সালে দেশ নির্বাচন নিয়ে একটি গভীর সংকটে পড়ে। ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনটি ক্ষমতাসীন সরকার ও তৎকালীন নির্বাচন কমিশনের প্রচেষ্টায় ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছিল। কিন্তু সেই নির্বাচনে খুশি হতে পারেনি পরাজিতরা। দেশের সর্বোচ্চ আদালত অনির্বাচিত ব্যক্তিদের হাতে দেশ চলে যাওয়ার ব্যবস্থাকে সংবিধান পরিপন্থী বলে রায় দেন। ফলে সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সাংবিধানিক ধারা দেশে অক্ষুণ্ণ রাখার ব্যবস্থায় দেশকে ফিরিয়ে আনা হয়। ২০১৩ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো প্রভাবমুক্তভাবেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল, কিন্তু বিরোধী জোট নির্বাচনসহ নানা ইস্যুতে সরকারবিরোধী আন্দোলনকে সরকার উৎখাতের লক্ষ্যে পরিচালিত করে। সরকারপ্রধান নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা প্রবর্তনের উদ্যোগ নিলেও বিরোধী দল তা প্রত্যাখ্যান করে। ফলে ২০১৪-এর ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বিরোধী দলের বর্জন, প্রত্যাখ্যান ও প্রতিহতের মুখে পড়ে। বলা চলে, বাংলাদেশের নির্বাচনব্যবস্থা এই সময়ে এসে বর্জন, প্রত্যাখ্যান ও প্রতিহত করার মুখোমুখি এক ভয়াবহ সাংঘর্ষিক রূপ নেয়।

২০১৮-এর নির্বাচনবিরোধীদের অসংগঠিত, প্রস্তুতিহীনতা ও পরনির্ভরশীলতার কারণে তাদের পরাজয় বরণ করতে হয়। সেই পরাজয়কে তারা মোটেও মেনে নিতে পারেনি। ২০২২ সাল থেকে বিরোধীরা সরকারবিরোধী আন্দোলন যেভাবে গড়ে তুলেছিল, তা যদি গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কৌশল হিসেবে কার্যকর হতো, তাহলে নির্বাচনে একটি শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা ফিরে আসত। গণতান্ত্রিক নির্বাচনী ধারায়ও দেশ এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেত। কিন্তু বিএনপিসহ যুগপৎ আন্দোলনকারীরা সেই পথে হাঁটেনি; তারা সরকারের পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় অনড় থেকে দেশে ‘গণ-অভ্যুত্থান’ ঘটানোর যে আশা করেছিল, তা কতটা দুর্বল ছিল দেশে ও বিদেশে সবাই প্রত্যক্ষ করেছি। তাদের ধারণা ছিল বিদেশিরা পাশে থাকবে এবং সরকারের একতরফা নির্বাচন মেনে নেবে না। কিন্তু ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে সরকারি দল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ রাখেনি। বিরোধীরা সেই নির্বাচন বর্জন ও প্রতিহত করার ডাক দিয়েছিল, কিন্তু এর কিছুই তারা করতে পারেনি। বিদেশিরা নির্বাচন ও সরকারকে মেনে নিয়েছে। বিরোধীরা সেই থেকে সব ধরনের নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে চলেছে।

ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচন শুরু হয়েছে। এই নির্বাচনে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের তফসিল অনুযায়ী বিএনপির বেশ কিছু নেতা অংশগ্রহণ করেছেন। বিএনপি তাঁদের দল থেকে বহিষ্কার করেছে। এর ফলে দলের স্থানীয় পর্যায়ের জনপ্রিয় নেতা-কর্মীরা নির্বাচন থেকে দূরে থাকতে হয় বাধ্য হচ্ছেন, নতুবা দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হচ্ছে। বিএনপিসহ বিরোধীদের উদ্দেশ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলা ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোও ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন’, ‘একপক্ষীয়ভাবে’ অনুষ্ঠিত করার দোষে সরকারকে ‘দুষ্ট’ করা। এ ধরনের লক্ষ্য ও কৌশল গণতন্ত্রের জন্য মোটেও সুখকর নয়। বিএনপি ও বিরোধীরা এই ধারা কত দিন অব্যাহত রাখতে পারবে, রাখতে গেলে দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা কত দিন সেটি মেনে নেবেন, তা একটি মৌলিক প্রশ্ন, দেখারও বিষয়। ধরা যাক, তাদের এই কৌশল কোনো একদিন সফল হলো। কিন্তু তখন যে বেসামাল অবস্থা সমাজ, রাষ্ট্র, রাজনীতি ও জনমানসে তৈরি হবে, তা কি দেশে গণতন্ত্রের পথকে সুগম করবে, নাকি আরও জটিলতর করবে? বিএনপি এবং এর সঙ্গে থাকা বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলই সাম্প্রদায়িক, উগ্র এবং হঠকারীও। ফলে গণতন্ত্র এমন বহু মিশালি রাজনৈতিক দল ও শক্তির দ্বারা বাংলাদেশে সুখের স্বপ্ন দেখাবে—এমনটি মোটেও আশা করা যায় না। অন্তত রাজনীতির বিশ্বজনীন অভিজ্ঞতা তেমন কোনো আশার আলো দেখায় না। তেমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ বর্তমান বিরোধীদের দেখানো পথেই যদি নির্বাচন বর্জন ও প্রতিহত করতেই মাঠে নামে, তাহলে দৃশ্যটা কেমন হবে, তা একবার কল্পনা করা দরকার।

বিএনপি ও যুগপৎ আন্দোলনকারীরা জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিহত করতে চেয়েছিল। ২০১৪ সালের নির্বাচনের চেয়েও জনগণের কাছে বাঁচা-মরার বিষয়টি বড় হয়ে উঠেছিল। দুই মাস মানুষ অনেকটাই ঘরবন্দী ছিল। অগ্নিসংযোগ, রাজধানীর সঙ্গে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা, মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করার এক ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছিল। মানুষের রুটিরুজি বন্ধ হয়েছিল। নির্বাচন কমিশন প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীনভাবে ১৫৩ জনকে বিজয়ী ঘোষণা এবং বাকি আসনগুলোতে সাধারণ প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করায় সরকার গঠনে বাধা রইল না। দেশের মানুষও নির্বাচনের চেয়েও জ্বালাও-পোড়াও এবং মানুষ হত্যার বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ ছিল। বিরোধীরা পরিস্থিতি বুঝতে পেরে ঘরে বসে যায়। গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে সরকারবিরোধীদের জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন এবং নির্বাচন রুখে দেওয়ার সব প্রস্তুতি সফলভাবে কাজে লাগিয়েছিল। বিরোধীরা অনেক বেশি চাতক পাখির মতো পিটার ডে হাস ও মার্কিন সরকারের দিকে তাকিয়ে ছিল। সরকারি দল নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলকভাবে অনুষ্ঠিত করার জন্য নিজ দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণে অবাধ সুযোগ করে দেয়। জাতীয় পার্টিসহ অন্য বেশ কিছু দল নির্বাচনে অংশ নেয়। বাস্তবতা হচ্ছে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এসব দলের বিজয়ী হওয়ার তেমন সম্ভাবনা নেই। তাই সরকারকে কয়েকটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছাড় দিতে হয়েছিল। আওয়ামী লীগকে এমন কৌশল নির্বাচনে অবলম্বন করতে গিয়ে অভ্যন্তরীণ বেশ সমস্যায়ও পড়তে হয়েছে। সেটির জের এখনো কাটেনি। কিন্তু বিরোধীদের নির্বাচন বর্জনের ফলে যে জটিল শাসনতান্ত্রিক সংকট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা ছিল, তা থেকে দেশকে রক্ষা করার বিষয়টি অনেকেই টের পাননি।

এখন বিরোধীদের বর্জনের মুখেও আওয়ামী লীগকে উপজেলা নির্বাচনে কিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত দিতে হয়েছে, যা অনেক উপজেলাতেই নেতা-কর্মীরা মানছেন না, স্বজনদের উপজেলায় প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন। উপজেলা নির্বাচনের প্রথম পর্ব ১৩৯ আসনে ৮ মে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই ধাপে মোট ১ হাজার ৬৩৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৫৭০, ভাইস চেয়ারম্যান ৬২৫ এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪৪০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। প্রথম ধাপে মোট ২৮ জন প্রার্থী এরই মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন। এই নির্বাচনে সবচেয়ে দলীয় শত্রুতার মুখে পড়েছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। তা উপেক্ষা করে যাঁরা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে আটজন সব প্রতিকূলতা অতিক্রম করে বিজয়ী হয়েছেন। বাকি আসনগুলোতে আওয়ামী লীগের নেতারাই উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন। নির্বাচনে বেশ কিছু অনিয়ম করার অভিযোগে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, পোলিং এজেন্ট, জাল ভোটদাতা গ্রেপ্তার হয়েছেন। নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী কয়েকজনকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতিও দেওয়া হয়েছে।

নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি নিয়ে নানা ব্যাখ্যা ও তথ্য রয়েছে, তবে সঠিক তথ্য এখনো জানা যায়নি। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা, সমর্থক ও ভোটারদের মধ্যে সব জায়গায় সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যায়নি। এর কারণ হচ্ছে, দলীয় এমপি, মন্ত্রী ও প্রভাবশালী স্বজন নিজেদের বলয়ের প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান করায় অন্যরা দৃশ্যত নিষ্ক্রিয় ছিলেন। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা নির্বাচনটি অবাধ, প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ও দলীয় যোগ্যদের নির্বাচিত হয়ে আসার যে সুযোগ করে দিতে চেয়েছিলেন, তা প্রভাবশালীদের প্রভাব ও হীন স্বার্থের কারণে সফল হতে পারেনি। বিরোধীরা কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে নির্বাচনটিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হতে দিতে চায়নি। আবার আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নির্বাচনে নানা অপকৌশল অবলম্বন করায় অনেক জায়গায় প্রার্থী কম থাকায় ভোটার টানার সুযোগ ছিল না। আওয়ামী লীগের মধ্যে যেকোনো মূল্যে নিজের জয় বা প্রভাব ধরে রাখার প্রবণতা দলীয় সভাপতির সদিচ্ছাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। নির্বাচন এভাবে বিরোধী ও সরকারি দলের নানা মহলের সংকীর্ণ স্বার্থের লীলাখেলায় আড়ষ্ট হয়ে পড়ছে। আগামী ২১ ও ২৯ মে এবং ৫ জুন পরবর্তী তিন ধাপের নির্বাচন শেষে ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচন ২০২৪ নিয়ে শেষ মূল্যায়নটি করা যাবে। কিন্তু এর আগেই আওয়ামী লীগ বাকি তিন পর্বের নির্বাচন নিয়ে নিজেদের করণীয় কীভাবে ঠিক করবে, সেটি তাদের দলীয় বিষয়।

লেখক: অধ্যাপক, ইতিহাসবিদ ও কলামিস্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত