Ajker Patrika

‘এখনো অনেক কিছু করা বাকি’

রজত কান্তি রায়
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২১, ২০: ২২
‘এখনো অনেক কিছু করা বাকি’

২০১০ সালে একটি মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিনোদন জগতে যাত্রা করেছিলেন বীথি সরকার। টেলিভিশন মাধ্যমে বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের নাটকে অভিনয় করেছেন। অভিনয় করেছেন কয়েকটি চলচ্চিত্রেও। সম্প্রতি শুটিং ও ডাবিং শেষ করেছেন গিয়াস উদ্দিন সেলিমের চলচ্চিত্র ‘গুনিন’-এর। বীথি সরকারের সঙ্গে চলচ্চিত্র, অভিনয়, বিয়ে—এসব নিয়ে কথা বলেছেন রজত কান্তি রায়

শুরুটা করেছেন কবে?
বীথি: শুরুটা ছিল ২০১০-এ। আমার প্রথম পরিচালক ছিলেন অমিতাভ রেজা। আমার ফার্স্ট কাজ গ্রামীণফোনের টিভিসি। শুরু যখন করি, তখন ইন্টারমিডিয়েট পাসও করিনি। পরীক্ষার পরপরই শুরু করি। আমার বাবা আর্মিতে ছিলেন। সেই সুবাদে ঝিনাইদহে থাকতাম। বাবা যখন রংপুরে বদলি হয়ে আসেন, তখন আমি ঢাকায় চলে আসি। 

মিডিয়াতে কীভাবে এলেন?
বীথি: এটা মজার গল্প। কেউ বিশ্বাস করবে না। তবে এটাই গল্প। আমি ছবি তুলিয়েছিলাম চঞ্চল মাহমুদের কাছে। আমার কাছ থেকে ছবি তোলার পেমেন্ট ছাড়াও আরেকটা পেমেন্ট নেওয়া হয়। ওখানে লেখা ছিল, ওরা বারোটা এজেন্সিকে আমার ছবি পাঠাবেন। এক্সট্রা পেমেন্ট করে আমি চলে আসি। দু-আড়াই মাস পরও কোনো ফিডব্যাক আসেনি। একদিন ভাবলাম, ঢাকায় চলে যাই। বাসা থেকে বেরিয়ে এক কাপড়ে চলে আসি ঢাকায়। তারপর বাবাকে ফোন দিয়ে বলি, আমি ঢাকায় চলে আসছি। উদ্দেশ্য ছিল—এখানকার কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া। তখন আমার ইন্টারমিডিয়েটের রেজাল্ট হয়নি। আড়াই মাস হয়ে গেছে। তিন মাসের দিকে রেজাল্ট দেবে। রেজাল্ট পেলে শান্তা মরিয়মে বা বিজিএমইতে ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে ভর্তি হব—এটা আমার টার্গেট।

অনেক দিন ধরে ছবিগুলোর কোনো ডাক না আসায় যন্ত্রণা পাচ্ছিলাম। নিশ্চয় কোনো সমস্যা হয়েছে। ওই ছবিগুলোতে ঠিকানা লেখা ছিল। সব ঠিকানা নোট করলাম; গুলশান, বনানী, উত্তরা, ধানমন্ডি। প্রথম দিন বনানী গেলাম। সেখানে গিয়ে বুঝলাম, যে ১২টি জায়গায় ছবি পাঠানোর কথা, সেখানে তা পাঠানো হয়নি। কারণ, ছবি তিন মাস আগে তোলা। যখন হেঁটে হেঁটে মোটামুটি হতাশ, তখন আমি ‘হাফ স্টেপ ডাউন’-এর সামনে। ‘হাফ স্টেপ ডাউন’ অমিতাভ ভাইয়ের। এটা এখন নিকেতনে। আগে ছিল বনানীতে। অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়াই আমি ঢুকতে চাচ্ছিলাম।

দারোয়ান আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে কিনা। আমি জানালাম নেই। তারপর তাঁকে বললাম, ‘একটু ঢুকতে দেন। কথা বলে চলে যাব।’ আমার সঙ্গে আমার বন্ধু ছিল। আমি এখানে তাঁর বাসায় উঠেছি। বাবা মানতে পারেননি আমার ঢাকায় আসা। তিনি আমাকে কারমাইকেলেই পড়াতে চেয়েছেন। আমার দুইটা জেদ ছিল—এক, মিডিয়াতে কাজ করা; আর দুই, ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে পড়া।

বীথি সরকারতো দারোয়ানের সঙ্গে তুমুল ঝগড়া করছিলাম। বলেছি, ‘ভেতরে ঢুকতে না দিলে আমি যাব না এখান থেকে। আপনি ভেতরে গিয়ে বলেন, রংপুর থেকে এক মেয়ে দেখা করতে এসেছে।’ তখন জানি না অমিতাভ রেজা কত বড় মাপের ডিরেক্টর। জানি যে, তিনি ভালো কাজ করেন। আমার তাঁকে ভালো লাগে। সেইম টাইমে ভাইয়া বের হচ্ছিলেন। তিনি এলেন। রাশেদ জামান এলেন। ভাইয়া জানতে চাইলেন, ‘এখানে কী হয়েছে, কীসের গ্যাঞ্জাম। ওদের ভেতরে আসতে দাও।’ আমাকে বলেছেন, ‘কী হয়েছে বাবা?’ বললাম, ‘ভাইয়া আপনার সঙ্গে দেখা করতে চাই। কিন্তু দারোয়ান দিচ্ছে না।’ তিনি জানতে চাইলেন, ‘আচ্ছা, তুমি কী করতে চাও?’ আমি জানালাম, তাঁর সঙ্গে টিভিসিতে কাজ করতে চাই। বলেছি, ‘আপনার কাজ অনেক ভালো লাগে।’ তিনি বলেন, ‘তুমি করতে পারবা?’ বললাম, ‘হ্যাঁ, আপনি দিলে করতে পারব।’ তিনি বললেন, ‘আচ্ছা, ঠিক আছে। একটু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ছবি ওঠাও তো।’

রাশেদ ভাইয়ের কাছে ক্যামেরা ছিল। তিনি র‍্যান্ডমলি কিছু ক্লিক করলেন। অমিতাভ ভাইও কিছু ডিরেকশন দিলেন। ঠিক সেটাই করলাম। বৃষ্টি পড়ছিল। তখন বৃষ্টিধরার কিছু ছবি নিলেন। তখন তিনি ভিডিও ক্লিপ নিলেন। বললেন, ‘ভিডিওতে তোমার নাম বল, কী পড়ালেখা করো, কোথা থেকে আসছ?’ আমি সেভাবেই বললাম। তার পর তিনি বললেন, ‘আচ্ছা ঠিক আছে যাও। তোমাকে লাগলে জানাব।’ ফোন নম্বর নিলেন তিনি। চলে আসলাম। বাইরে খাওয়া-দাওয়া করে বিকেলে বাসায় যাচ্ছিলাম। ৫টার দিকে ফোন দিয়ে বললেন, ‘আবার কালকে অফিসে এসো।’

পরদিন গেলাম। যাওয়ার পর বিপুল নামের এক ভাই আমার হাতে স্ক্রিপ্ট ধরিয়ে দিলেন। বলেন, ‘এটা হলো তোমার জন্য গ্রামীণফোনের টিভিসি আর আমাদের ফিল্ম। এই নাও স্ক্রিপ্ট। পড়। আমি পড়লাম। একটা গ্রামের মেয়ে বসে আছে মন খারাপ করে। তার স্বামী বিদেশে থাকে। আমি বললাম, ‘আচ্ছা। পারব।’ তিনি বললেন, ‘পারবা?’ আমি বলে ফেলি, ‘এখানে তো কিছুই নাই। আমাকে তো কিছুই করতে হবে না। পারব না কেন?’ তিনি বললেন, ‘কিছুই নাই! এত কনফিডেন্স? তোমার সঙ্গে অমিতাভ ভাইয়ের কী সম্পর্ক?’ বললাম, ‘অমিতাভ রেজাকে আমি চিনিও না।’ তিনি বললেন, ‘তাহলে তোমাকে কেন কাস্ট করল?’ বললাম, ‘আমি তো জানি না। কালকেই প্রথম দেখা হলো।’

বীথি সরকার

যেদিন অমিতাভ ভাইয়ের সঙ্গে আমার দেখা হলো, সেদিন ছিল ২ তারিখ। আমাকে অফিসে পুনরায় ডাকল ৩ তারিখ। সেদিন আমাকে স্ক্রিপ্ট দিল। ওদের টিভিসির শুট ছিল ৭ তারিখ। তারা দিনাজপুরে যাবে ৬ তারিখে। এর আর্টিস্ট ঠিক করা ছিল। খুব সুপরিচিত একজন। কিন্তু আমাকে দেখার পর ভাইয়ার মনে হলো—তিনি যে গল্পের মানুষটাকে খুঁজছিলেন, সে হয়তো আমি। তিনি সিদ্ধান্ত বদলে ফেলেন। তো তিনি আমাকে কেন কাস্ট করলেন সেই কৈফিয়ত আজ পর্যন্ত কাউকেই দিতে পারিনি।

তারপর আমরা ৬ তারিখে শুটিংয়ে গেলাম। এগারো দিন আমরা গ্রামীণফোনের শুট করলাম। 

তখন অনেক ভালো কাজ হতো। দারুণ দারুণ টিভিসি হয়েছে সে সময়।
বীথি: হ্যাঁ। ১১ দিন পর আমাকে আর কিছুই করতে হয় নাই। সব বড় বড় বিলবোর্ডে আমি, আর আমি। কেউ কাউকে ফোন করলে ‘আমারে ছাড়িয়া বন্ধু কই রইলা রে’ গান। কিন্তু আমাকে সামনে এক, স্ক্রিনে অন্যরকম লাগত দেখতে। সে জন্য কেউ বুঝতে পারত না। 

এমনও হয়েছে, নিজের কাছে গুছিয়ে রাখার জন্য নিজেই পত্রিকা কিনতে গেছি। পত্রিকার দোকানে গিয়ে পত্রিকার পাতা খুলে নিজেই নিজেকে দেখছিলাম। এত বড় বড় করে ফিচার হয়েছে। অনেকগুলো ম্যাগাজিনে কাভার হয়েছে। এমনও হয়েছে যে, পত্রিকা কিনছে, সে আমার ছবির জন্যই পত্রিকা কিনছে। 

প্রথম টাকা পেয়ে কী করেছেন?
বীথি: আমি টিভিসির সম্মানীর টাকা দিয়ে ভার্সিটিতে ভর্তি হই। ভর্তি হয়েছিলাম শান্ত মারিয়মে। বাবা চেয়েছিলেন বিবিএ পড়াতে।

 

সম্মানী কত ছিল?
বীথি: ৩০ হাজার টাকা। আমার ভর্তি ফি ছিল ২৯ হাজার ৫০০ টাকা। বিজ্ঞাপনের পর গ্রামীণফোনের ব্যাপক প্রচার হলো। ওরা আমাকে ২ বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ করে। তখন আমি নতুন। আমাকে যা বলবে তাই করব। আই ডোন্ট হ্যাভ এনি গডফাদার। মিডিয়া সম্পর্কে কোনো আইডিয়াই নাই। তো আমিও করে ফেললাম। এর মাঝখানে জুঁইসহ নানা তেল-শ্যাম্পু-সাবান আমাকে খুঁজল। আমি সরি বলে দিলাম। গ্রামীণফোন চুক্তি ভিত্তিতে আমাকে তিন মাস পরপর টাকা দিয়ে দিত। তখন বুঝতে পারিনি, আমার ক্যারিয়ারটা আমি খেয়ে ফেলছি। যাদের আমি র‍্যান্ডমলি না করে গেছি, দুই বছর পর তারা আমাকে আর খোঁজেনি।

এর পর আপনি টেলিভিশন নাটকের দিকে এলেন?
বীথি: বিজ্ঞাপন যাওয়ার দ্বিতীয় দিন থেকে আমি নাটক করি। ফার্স্ট সিঙ্গেল নাটক ছিল হিল্লোল ভাইয়ের সঙ্গে। সজল আহমেদ ছিলেন ডিরেক্টর। ওই নাটকের তিন দিন পর শিমুল সরকারের ‘ডাইরেক্টর’ ধারাবাহিক করি। এটা আরটিভিতে প্রচারিত হয়েছিল। তখন ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে ভর্তি হয়ে গেলাম। সিরিয়ালও শুরু করেছি। শুধু টিভিসি বাদে আমি সব কাজ করতাম। এরপর আমি প্রচুর নাটক করেছি। আমি অনেকগুলো সিনেমাও করেছি। সবগুলো কম বাজেটের। 

বীথি সরকার

প্রথম সিনেমা তো ছিল হেডমাস্টার?
বীথি: ২০১৩ সালে দেলোয়ার জাহান ঝন্টু পরিচালিত সিনেমা ‘হেডমাস্টার’ করেছিলাম। সেখানে আলমগীর স্যার ছিলেন, সুবর্ণা মোস্তফা ছিলেন। 

আলমগীর, সুবর্ণা মোস্তফা থাকার পরও এটা লো বাজেটের মুভি হয় কী করে?
বীথি: অনুদানের ছবি ছিল। আমি যাদের ছবি করেছি তাদের একটাই প্রবলেম, তারা পাবলিসিটি করে না। ইনফ্যাক্ট আমি শাকিব খানের সঙ্গেও ছবি করেছি। নাম সত্তা। সেখানে পাউলি দাম লিড ক্যারেক্টার। 

সেই অর্থে আপনি পাবলিসিটি পেলেন না কেন? 
বীথি: সত্তায় তো পাউলি দাম লিড ক্যারেক্টার। সেখানে আমি জার্নালিস্টের ক্যারেক্টার করেছি। (সিনেমায়) পাউলি দাম মারা যাওয়ার পর আমার ক্যারেক্টার আসে। তা ছাড়া অনেকগুলো ইন্টারনাল প্রবলেম ছিল। 

 

টেলিভিশন নাটক থেকে সিনেমাতে শিফট করার কারণ কী? 
বীথি: তিন বছর আগে আমি নিজস্ব ফ্যাশন হাউস দিই গুলশান ১-এর পুলিশ প্লাজায়। নাম কুইন্স ক্লোজেট। যেহেতু অনেক টাকা ইনভেস্ট করে ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে পড়েছি, তাই এটা নিয়ে আমার শখ ও স্বপ্ন আছে। জব তো করতে পারতাম না। নিজে কিছু করতে চেয়েছি। পুলিশ প্লাজায় শোরুম দিয়ে, নিজে ডিজাইন করে কাজ শুরু করলাম। বাইরে থেকে ড্রেস আনা, শো রুম চালানো, শুটিং সবকিছু ছিল। বুঝতে পারলাম শুটিংয়ের পেছনে দৌড়ালে এটা দাঁড়াবে না। ডিজাইনিং ও কালেকশনে ফোকাস করলাম। একাই সব করতাম। প্রফিটও অনেক ভালো। পার ডে যা প্রফিট হয়, সেটা বিশাল। তখন মিডিয়ার মানুষ, কাজগুলো—আমার কাছে ঝাপসা হতে লাগল। মনে হলো, মিডিয়াতে সব গতানুগতিক কাজ হচ্ছে। খুব বেশি ভেরিয়েশনের কাজ পাই নাই। তখন মনে হয়েছে, একই জিনিস প্রতিদিন করার চেয়ে আমি আমার প্রতিষ্ঠানে ফোকাস করি। এটা একদিন বড় হবে। আমি যেহেতু ডিজাইনার, আমি মালিক; আমাকে তো ফোকাস দিতে হবে।

যখন দেখলাম, আমার প্রতিষ্ঠান থেকে অনেক টাকা আসছে, তখন ভাবলাম এত কম টাকার বিনিময়ে অখাদ্য প্রোডাকশনের কাজ করছি! কাজ করা বাদ দিলাম। এর পর যখন ফোন আসত, তখন না করে দিলাম। এখনো পর্যন্ত ‘না’ রয়ে গেছে তাদের মধ্যে।

বীথি সরকার

এখন তো সিনেমা করছেন...
বীথি: এখন আমি আবার অনেক কাজ করছি। মার্চে আমি বিয়ে করেছি। আট মাস চলছে। সব মিলিয়ে সংসার গোছানোর চেষ্টা করছি। সবাই বলত, সেটল হও। আমি সেটল হয়ে গেছি। এখন সব মিলিয়ে কাজ নিয়ে থাকতে চাই।

এই কাজ বলতে কোনটাকে বোঝাচ্ছেন? আপনার প্রতিষ্ঠান নাকি মিডিয়া? 
বীথি: প্রতিষ্ঠান বা মিডিয়া না। আমি যেটা করতে চাই। এখন আমার প্রতিষ্ঠান অফ আছে। কারণ, এক বছর ভালো চলার পর দ্বিতীয় বছর থেকে করোনা শুরু হলো। তাই দোকানটা অফ করেছি। আবার আমি ফ্রি হয়ে যাই। 

‘গুনিন’ নিয়ে আপনার অনুভূতি কী?
বীথি: আমার শেষ সিনেমার নাম ‘গুনিন’। পরিচালনা করেছেন গিয়াস উদ্দিন সেলিম। এ ছবিতে পরীমণি খুব ভালো কাজ করেছেন। শরীফুল রাজ, মুস্তফা মনোয়ার, ইরেশ যাকের কাজ করেছেন। গুনিন ক্যারেক্টারটা পাভেল ভাই করেছেন। গুনিন খুব সিম্পল একটা ছবি। এটা দেখতে বসলে আপনাকে মেথড অ্যাক্টিং জানতে হবে না। এটা হলে কিংবা ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকিতে দেখতে পারবেন। এটা চরকির প্রোডাকশন। সহজে সুন্দর সময় কাটবে আপনার। মজা আছে, ভালোবাসা আছে, গ্রাম্য পলিটিকস আছে। 

গিয়াস উদ্দিন সেলিমের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন? 
বীথি: তাঁর সঙ্গে প্রথম কাজ করেছি। তাঁকে চিনি ১০ বছর ধরে। আগেও কাজের কথা হয়েছিল। টাইম মেলেনি। এই প্রথম কাজ করা হলো। আমার কাছে মনে হয়েছে, আমি একটা শুদ্ধ প্রোডাকশনের বা শুদ্ধ ডিরেকশনের কাজ করেছি। গিয়াস উদ্দিন সেলিম ভাই খুব কমফোর্টেবল ডিরেক্টর। তিনি কাজ আদায় করে নিতে পারেন। আমার ছোট্ট ক্যারেক্টার ছিল। তিনি আমাকে বলেছেন, ‘তুই কর, নিশ্চয় ভালো লাগবে।’

শুট করেছেন কত দিন? 
বীথি: আমি এটার শুট করেছি ৭-৮ দিন। ছবির টোটাল শুটিং হয়েছে ২৫ দিনের মতো। অর্ধেক শুটিং করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়, বাকিটা হয়েছে মানিকগঞ্জে। মানিকগঞ্জের শুটে আমি ছিলাম। 

সম্প্রতি বিয়ে করেছেন...
বীথি: করোনা না এলে হয়তো বিয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতাম না। করোনা আমাকে এমন একটা প্যারা দিয়েছে যে, বলার মতো না। আমার জীবনটা ইনসিকিউর, বাবা-মা অনেক দূরে থাকেন। করোনার শুরুর দিকে তো হাসপাতালেই যেতে পারতাম না। তখন বুঝতে পারি আমার কাছের একজন মানুষ দরকার, যে বিপদে-আপদে সব সময় পাশে থাকবে। তখন সিদ্ধান্ত নিই—বিয়েটা করে ফেলা ভালো। বিয়ে করা নিয়ে এত ভয়ে থাকার কিছু নেই। বর ও বউ দুজনেই যদি সাপোর্টিভ হয়, তাহলে দুজনই ভালো থাকতে পারে। আমার হাসব্যান্ড জার্নালিস্ট। আমার চেয়ে বেশি আমাকে পুশ করে কাজের জন্য। ওর পুশ না থাকলে হয়তো কাজ করলে করলাম, না করলে নাই। ও আমাকে সাজেশন দেয়।

আপনার এই ৭/ ৮ মাসের বিবাহিত জীবনের অভিজ্ঞতা কী?
বীথি: ভালো। একজন সাধারণ মানুষ বিয়ে করলে যা হয়, একদম তাই-ই। স্পেশাল কিছু নেই। আমি সংসারের বড় মেয়ে। আমরা পাঁচ ভাইবোন। ওরা সবাই আমার কথা শুনত। আমাকে কথা শোনানোর মতো কেউ ছিল না। এখন আমাকে কথা শোনানোর মতো কেউ আছে। সে ফ্যামিলির বড়। ফ্যামিলির গার্ডিয়ান। তার কথা আমাকে শুনতে হয়। 

বীথি সরকার

তিনি...
বীথি: দেবাশীষ রঞ্জন সরকার। তিনি মূলত একজন এনজিওকর্মী। একটি আন্তর্জাতিক এনজিওতে মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগে কাজ করেন। আর সন্ধ্যায় যমুনা টেলিভিশনের নিউজ প্রেজেন্টার হিসেবে কাজ করেন। জার্নালিজমের সঙ্গে ১৭-১৮ বছর ধরে যুক্ত।

২০১০-এর ‘আমারে ছাড়িয়া বন্ধু কই গেলা রে’...
বীথি: আমি বুঝতেই পারিনি কখন কী হয়ে গেছে। এখন ২০২১ সালের শেষের দিক। এখনো ২০১০ সালের যে কেউ আমাকে রিকল করতে পারেন। বলেন, ওই যে গ্রামীণফোনের বীথি। এর পর আমার কোনো কাজ এটাকে ছুঁতে পারেনি। প্রথম কাজটাতেই এক্সপেক্টেশনের থেকে অনেক বেশি কিছু পেয়ে গেছি। মানুষের অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। 

পরবর্তী পরিকল্পনা কী?
বীথি: ওটিটি। অনেকগুলো প্ল্যাটফর্ম আছে। আমি সবগুলোতেই কাজ করতে চাই। দেশে ও দেশের বাইরে কাজ করতে চাই। কাজের পরিধি বাড়াতে চাই। আমি ব্যবসা বন্ধ রেখে অভিনয়ে মনোনিবেশ করেছি। আমি চাই ধীরে ধীরে হলেও ভালো একটা জায়গায় পৌঁছাতে। 

ওটিটি প্ল্যাটফর্মের কনটেন্টগুলো ডার্ক হয়, ভায়োলেন্স থাকে...
বীথি: আমি জানি না আসলে। হয়তো মানুষ এগুলো দেখতে পছন্দ করে। আমিও যে দেখি না, তা নয়। তবে কাজ হচ্ছে তো। সেটাই বড় কথা। 

আমাদের এখানে তো অনেক ট্যাবু আছে এসব বিষয় নিয়ে। 
বীথি: আর্টিস্ট হিসেবে আমাকে আমার কাজের জায়গাটা পছন্দ করতে হবে। জনগণ আমাকে কোথায় দেখতে বেশি ভালোবাসে। আমি সে কাজটা করব না, যেখানে আমাকে ভালো লাগবে না। আর্টিস্টরা নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন হলেই হয়। আমিও শুনেছি ওটিটির সমালোচনা। দুইটা কাজ সমালোচিত হলেও, ২০টা কাজ তো ভালো-ও। এর মাধ্যমে আর্টিস্টদের কাজ বাড়বে। এমনিতে তো আর্টিস্টদের কাজ কমে গেছে। 

সম্প্রতি ‘বলি’ মুক্তি পেয়েছে। ‘বলি’ কিন্তু ভালো হয়েছে। 
বীথি: আমাদের ডিরেক্টরদের সমস্যা হচ্ছে, তাঁরা নিজের গণ্ডির বাইরের কাউকে কাস্ট করেন না। অন্যদের কাজের সুযোগ দেওয়া হয় না। কিংবা ভয় পায়। এখন কিন্তু বাঁধন আপু খুব ভালো করছেন। তিনি আগেও ভালো করতে পারতেন। এটা তো আর্টিস্টের হাতে না। ডিরেক্টরের হাতে।

আপনার কামব্যাক, ফিল্ম, ওটিটি, বিবাহিত জীবন—সবকিছুর জন্য শুভকামনা। 
বীথি: থ্যাংক ইউ। আমার মা তো গৃহিণী। স্কুলে থাকতে আমি সকালে স্কুলে যেতাম, বিকেলে স্কুল থেকে ফিরতাম। সকালে যখন যেতাম, তখন দেখতাম তিনি রান্না করছেন। ফিরেও দেখতাম, তিনি রান্না করছেন। তখন ভাবতাম, রান্না ছাড়া জীবনে কি আর কিছু নেই? মনে হতো, একজন মানুষ সারা জীবন রান্না করে কীভাবে কাটায়! তখন নিজেই নিজেকে বলতাম, আমি জীবনে অনেক কিছু করব। শুধু রান্নার মধ্যেই জীবন সীমাবদ্ধ নয়। আমি করেছি অনেক কিছুই। বাংলাদেশের বড় বড় পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছি। এখন আমি বাইরের দেশের দিকে তাকাতে পারি। সৃজিত দা, শিবু দা, অঞ্জন দত্তের সঙ্গে কাজ করতে চাই। কাজটা কেউ দেখুক না দেখুক, আমি চাই কাজটা যেন করে যেতে পারি। কাজটা শিখতে চাই। এমন টিচারের হাতে পড়তে চাই, যারা আমাকে শিখিয়ে আমার কাছ থেকে কিছু বের করে নেবে। আমার অনেক কিছু হয়েছে, কিন্তু অনেক কিছু করার বাকি। 

অনেক ধন্যবাদ বীথি। 
বীথি: ধন্যবাদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত