Ajker Patrika

প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল উপকূলে আঘাত হেনে স্থলভাগে থাকতে পারে দুই দিন

সৌগত বসু, ঢাকা
আপডেট : ২৫ মে ২০২৪, ২৩: ২০
প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল উপকূলে আঘাত হেনে স্থলভাগে থাকতে পারে দুই দিন

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি এখন গভীর নিম্নচাপ পর্যায়ে আছে। শিগগির এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এরপর দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল হয়ে ওপরের দিকে উঠে যাবে। আঘাত হানার পর অন্তত দুই দিন এর প্রভাব বজায় থাকবে বলে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞের অভিমত। সমুদ্রপৃষ্ঠের চেয়ে স্থলভাগে তাপমাত্রা বেশি থাকায় ঘূর্ণিঝড় উপকূল অতিক্রম করে আরও শক্তি সঞ্চয় করতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা। 

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ শনিবার দুপুরের পর গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় রিমালে পরিণত হবে। আর তা বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করবে আগামীকাল রোববার দুপরের পর। এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আজ রাত থেকেই উপকূলে বৃষ্টি শুরু হবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

জাপানের আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ স্যাটেলাইট হিমাওয়ারি থেকে পাওয়া তথ্যচিত্রের ভিত্তিতে সম্ভাব্য এই ঘূর্ণিঝড় পর্যবেক্ষণ করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ নাথ। আরও কিছু মডেল ব্যবহার করে আকাশে মেঘের পরিমাণ, তাপমাত্রা, সাগরের তাপমাত্রা, বাতাসের গতিবেগ পর্যবেক্ষণ করছেন এই গবেষক।

ড. বিশ্বজিৎ নাথ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের একটা অংশ এখন স্থলভাগের কাছাকাছি আছে। তবে এটির কেন্দ্রভাগ (চোখ) একটু ঘুরে পশ্চিমবঙ্গ, সুন্দরবন (ভারতীয় অংশ) স্পর্শ করে সাগরের দিকে সরে গিয়ে বাংলাদেশের উপকূলে আসবে। এটি পটুয়াখালীর খেপুপাড়া হয়ে সামনে এগোতে থাকবে। এরপর গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে যশোর, রাজশাহীর ওপর দিয়ে যাবে। ঘূর্ণিঝড় রিমাল স্থলভাগে উঠে নিষ্ক্রিয় হতে দুই দিন সময় নিতে পারে। সে ক্ষেত্রে আগামী ২৮ মে রাতের মাঝামাঝি এটি মিশে যেতে পারে।’

স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ঘূর্ণিঝড় রিমালের গতিপথতিনি জানান, স্থলভাগের তাপমাত্রা সমুদ্রপৃষ্ঠের চেয়ে বেশি থাকায় ঘূর্ণিঝড় রিমাল দুর্বল হতে বেশি সময় লাগবে। সমুদ্রপৃষ্ঠে এই ঝড়ের গতি কিছুটা কমলেও স্থলভাগে এসে আবারও শক্তি সঞ্চয় করবে। ফলে স্থলভাগে আঘাত হানার পর গড়ে ৭০–৮০ কিলোমিটার গতি নিয়েই এটি এগিয়ে যেতে থাকবে।

তিনি বলেন, ‘এই সময়টাতে পশ্চিমাঞ্চল ও ঢাকা পর্যন্ত মধ্যাঞ্চলজুড়ে ভারী বৃষ্টিপাত, বজ্রপাত, বজ্রবৃষ্টি থাকবে। সুন্দরবনে ৩০০ মিলিমিটার, যশোরে ১৮৫ মিলিমিটার ও ময়মনসিংহে ৩৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হতে পারে।’

ঘূর্ণিঝড় রিমাল যে কারণে ‘অতি প্রবল’ হচ্ছে না 
রিমাল কেন সুপার সাইক্লোন বা অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে না তা ব্যাখ্যা করে ড. বিশ্বনাথ বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের (চোখ বা আই) সঙ্গে যে মেঘ থাকে, তা তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে এর বড় অংশ পূর্ব দিকে অর্থাৎ মিয়ানমারের দিকে যাচ্ছে। দক্ষিণ-পশ্চিম অংশটি ভারতীয় উপকূলের দিকে আছে। মূলত কেন্দ্র ও মধ্যভাগ নিয়ে বাংলাদেশের দিকে আগাচ্ছে এটি। এটা অনেক বড়। বঙ্গোপসাগরের পরোটা জুড়েই এর অবস্থান করছে। কোথাও ফাঁকা নেই।’ 

মেঘমালার যে অংশটি দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে ছিল, তা গতকাল শুক্রবারই শ্রীলঙ্কা ও ভারতের পূর্ব উপকূলে প্রভাব ফেলেছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়টির প্রধান যে অংশ, সেটা যেহেতু ভাগ হয়েছে, তাই এটি আর সুপার সাইক্লোন বা অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হচ্ছে না। এটি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবেই স্থলে ঢুকবে। এ সময় এর গতি থাকতে পারে ১২০ থেকে ১২২ কিলোমিটারের মধ্যে। 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষক বলেন, ‘সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা এখন কোথাও ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আবার কোথাও ৩২। তবে বাংলাদেশের পূর্বাংশে অর্থাৎ চট্টগ্রাম অংশে তাপমাত্রা আছে গড়ে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সুন্দরবন থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত তাপমাত্রা আছে ৩০ থেকে ৩১ ডিগ্রি পর্যন্ত আছে। কুয়াকাটার ডান দিক থেকে মধ্য বঙ্গোপসাগর, অর্থাৎ ভোলা-নোয়াখালী পর্যন্ত আছে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ঘূর্ণিঝড় যেদিকে দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, সেখানে আছে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।’ 

বিশ্বজিৎ নাথ আরও বলেন, ‘সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রার পার্থক্য গত কয়েক বছরেই বাড়ছে। এখন গড় তাপমাত্রা থাকছে ৩১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা অনেক বেশি। এতে করে এই অংশে মাঝে মাঝেই সাইক্লোন তৈরি হচ্ছে। সাইক্লোন না হলেও নিম্নচাপ দেখা যাচ্ছে।’ 

আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে পাওয়া ঘূর্ণিঝড় রিমালের গতিপথঘূর্ণিঝড়ের সময় জলোচ্ছ্বাস নিয়ে বিশ্বজিৎ নাথ বলেন, ‘বুদ্ধপূর্ণিমার সময় এই সাইক্লোনের গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়। ২২ তারিখের দিকে লঘুচাপ তৈরি হয়। তাই জলোচ্ছ্বাস থাকবে ৮ থেকে ১০ ফুটের মধ্যে। এটি এবার ওই অঞ্চলের জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ভর করবে। জোয়ার থাকলে জলোচ্ছ্বাস বেশি থাকতে পারে। 

ঘূর্ণিঝড় রিমাল নিয়ে যা বলছে আবহাওয়া অধিদপ্তর
নিম্নচাপের গতিপথ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এটি এখন গভীর নিম্নচাপ পর্যায়ে আছে। আজ সন্ধ্যার পর এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। ২৬ তারিখ সকালে এটি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেবে। আর এই অবস্থাতেই এটি উপকূল অতিক্রম করবে। স্থলে এটি সাধারণ ঘূর্ণিঝড় হিসেবে প্রভাব বিস্তার করবে। পরে এটি গভীর নিম্নচাপ রূপে মিশে যাবে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, আজ দুপুরের পর এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। সন্ধ্যার পর থেকেই উপকূলে বৃষ্টি শুরু হবে। আগামীকাল দুপুরের পর রিমাল উপকূল অতিক্রম করবে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আজ শনিবার সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৯০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে 

গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে। 

চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরসমূহকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হলো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জেঁকে বসেছে শীত, বছরের শেষ দিন পর্যন্ত কমতে পারে তাপমাত্রা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ৩৭
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

মধ্য পৌষে এসে সারা দেশে শীত যেন জেঁকে বসেছে। গতকালের তুলনায় আজ রোববার তাপমাত্রা সামান্য বেড়েছে। তবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাপমাত্রা কমতে পারে। এর সঙ্গে পড়বে ঘন কুয়াশা।

আজ বেলা ১১টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ পূর্বাভাসে এসব কথা জানানো হয়েছে।

পূর্বাভাসের তথ্য অনুযায়ী, আজ সকাল ৬টায় সারা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলের নিকলীতে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় রাজধানী ঢাকায় ছিল ১৪ দশমিক ৩।

বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে সকালে তাপমাত্রা ছিল রাজশাহী, রংপুর, বরিশালে ১৩; ময়মনসিংহে ১৩ দশমিক ৩, সিলেটে ১৪ দশমিক ৮, চট্টগ্রামে ১৬, খুলনায় ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আজ রোববার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ১২০ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। কোথাও কোথাও আবার দুপুর পর্যন্ত কুয়াশা থাকতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে।

সারা দেশে আজ রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ার কারণে দেশের অনেক জায়গায় শীতের অনুভূতি অব্যাহত থাকতে পারে।

এ ছাড়া আজ ঢাকায় পশ্চিম অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার গতিতে বাতাস বয়ে যেতে পারে।

২৯ ডিসেম্বরও পরিস্থিতির পরিবর্তন তেমন হবে না উল্লেখ করে আবহাওয়া অধিদপ্তর আরও জানায়, ৩০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। তবে নদী অববাহিকার কোথাও কোথাও ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। এদিন রাতে তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। পরদিন ৩১ ডিসেম্বর সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। তবে দিনের বেলা তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফের বায়ুদূষণে বিপর্যস্ত দিল্লি, ঢাকার বাতাস খুব অস্বাস্থ্যকর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

শীতের মৌসুমে বাতাস থাকে শুষ্ক। বেড়ে যায় ধূলিকণার পরিমাণ। আর এ কারণে বায়ুদূষণও বাড়তে থাকে। আজ রোববার ঢাকার বায়ুমানের অবনতি হয়ে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ অবস্থায় আছে।

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউএয়ারের তালিকায় দেখা যায়, বিশ্বের দূষিত শহর তালিকার ১২৭টি দেশের মধ্যে আজ ঢাকা তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। আর শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে ভারতের দিল্লি।

আইকিউএয়ারের সকাল ৮টা ৩০ মিনিটের রেকর্ড অনুযায়ী, ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স স্কোর ২১৬, খুব অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক। আর শীর্ষে থাকা দিল্লির এয়ার কোয়ালিটি ইনডেস্ক স্কোর ৪২৪, যা দুর্যোগপূর্ণ বাতাসের নির্দেশক।

শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো আফগানিস্তানের কাবুল (২৪৩), ভারতের কলকাতা (২১৪) ও পাকিস্তানের লাহোর (২০২)।

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১ থেকে ১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১ থেকে ১৫০-এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১ থেকে ২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।

বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতিবছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।

ঢাকার নিম্নমানের বাতাসের প্রধান কারণ হলো পিএম ২.৫ বা সূক্ষ্ম কণা। এই অতিক্ষুদ্র কণাগুলো, যাদের ব্যাস ২.৫ মাইক্রোমিটারের চেয়েও কম, ফুসফুসের গভীরে প্রবেশ করে রক্তপ্রবাহে মিশে যেতে পারে। এর ফলে হাঁপানি (অ্যাজমা) বৃদ্ধি, ব্রঙ্কাইটিস এবং হৃদ্‌রোগের মতো শ্বাসযন্ত্র ও হৃদ্‌যন্ত্রের গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।

শীতকালীন আবহাওয়ার ধরন, যানবাহন ও শিল্প থেকে অনিয়ন্ত্রিত নির্গমন, চলমান নির্মাণকাজ থেকে সৃষ্ট ধুলো এবং আশপাশের ইটভাটাগুলো এই দূষণ সংকটের জন্য দায়ী।

দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।

পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

বাতাসের এই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে করণীয়

অত্যন্ত সংবেদনশীল গোষ্ঠী: শিশু, বয়স্ক, হৃদ্‌রোগ বা শ্বাসকষ্টের রোগীরা সব ধরনের ঘরের বাইরে না যাওয়াই ভালো।

সাধারণ সুস্থ ব্যক্তি: তাদের উচিত বাইরে কাটানো সময় সীমিত করা এবং শারীরিক পরিশ্রমের কাজ এড়িয়ে চলা।

যদি বাইরে বের হতে হয়, তবে অবশ্যই দূষণ রোধে কার্যকর মাস্ক ব্যবহার করুন।

ঘরের ভেতরের বাতাস পরিষ্কার রাখতে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন এবং দূষিত বাতাস প্রবেশ ঠেকাতে জানালা ও দরজা বন্ধ রাখুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তাপমাত্রা কমবে কি না জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৫০
তাপমাত্রা খুব বেশি কমলেও আজ রোববার সকাল থেকে রাজধানী ঢাকার আকাশ কুয়াশাচ্ছন্ন। দেখা মেলেনি সূর্যের আলো। ছবি: আজকের পত্রিকা
তাপমাত্রা খুব বেশি কমলেও আজ রোববার সকাল থেকে রাজধানী ঢাকার আকাশ কুয়াশাচ্ছন্ন। দেখা মেলেনি সূর্যের আলো। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজধানী ঢাকায় আজ রোববার সকাল ৬টায় তাপমাত্রা ছিল ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে, যা গতকাল একই সময়ে ছিল ১৩ দশমিক ৫।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ ঢাকায় তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। সেই সঙ্গে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।

আজ সকাল ৭টায় ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ সকাল ৬টায় রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৩ শতাংশ।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়, ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় দুপুর পর্যন্ত আবহাওয়া থাকতে পারে শুষ্ক। আকাশ আংশিক মেঘলা থাকতে পারে। এ সময় উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। আজ সূর্যাস্ত ৫টা ২০ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় ৬টা ৪০ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তীব্র শীতে বিপর্যস্ত দেশ কষ্টে খেটে খাওয়া মানুষ

  • গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে
  • শীতের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ
  • গরম কাপড় ব্যবহার ও কুসুম গরম পানি পানের পরামর্শ চিকিৎসকদের
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৪০
কাজের অপেক্ষায় বসে আছেন কয়েকজন শ্রমজীবী। ছবি: আজকের পত্রিকা
কাজের অপেক্ষায় বসে আছেন কয়েকজন শ্রমজীবী। ছবি: আজকের পত্রিকা

পৌষের প্রথম সপ্তাহে শীতের কামড় তেমন না থাকলেও মাঝামাঝি সময়ে এসে সারা দেশে ঘন কুয়াশার সঙ্গে অনুভূত হচ্ছে তীব্র শীত। তীব্র শীতে সারা দেশের জনজীবন অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে। উত্তরাঞ্চল থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম, মধ্যাঞ্চল থেকে রাজধানীসহ সবখানেই শীতের দাপট। বিশেষ করে দুর্ভোগে পড়েছেন শ্রমজীবীসহ নিম্ন আয়ের মানুষেরা।

গতকাল শনিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে। এ জেলার তাপমাত্রা নেমে আসে ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

চলতি সপ্তাহের শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় বাড়তি সতর্কতা জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা। তিনি বলেন, ‘চলতি বছরের মধ্যে গত দুই দিন তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। আগামী কয়েক দিন আবহাওয়ার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম। ফলে শীত ও কুয়াশার এই পরিস্থিতি আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকতে পারে।’

এর আগে গত শুক্রবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, গোপালগঞ্জ ও নীলফামারীর ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, যা কোথাও কোথাও অব্যাহত থাকতে পারে।

তীব্র শীতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর, রিকশাচালক, নির্মাণশ্রমিক ও খেটে খাওয়া মানুষ, যাদের বেশির ভাগকেই খোলা আকাশের নিচে কাজ করতে হয়। যশোর শহরের বিভিন্ন শ্রমবাজারে প্রতিদিন যেখানে

৩০০-৪০০ মানুষ কাজের আশায় জড়ো হন, কাজকর্ম কম থাকায় সেখানে এখন সেই সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। অনেকেই সকাল থেকে অপেক্ষা করে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন।

রিকশাচালক, নির্মাণশ্রমিক ও দিনমজুররা জানান, বেশি শীতের কারণে লোকজন ঘর থেকে কম বের হচ্ছে। নির্মাণসহ বিভিন্ন কাজ তেমন হাতে নেওয়া হচ্ছে না। এতে তাঁদের কাজ কমে গেছে। কিন্তু আয় কমলেও সংসারের ব্যয় তো কমছে না। এ চিত্র বগুড়া, গাইবান্ধা, লালমনিরহাটসহ দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায়।

বগুড়ায় গতকাল শনিবার মৌসুমের সর্বনিম্ন ১১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় সকাল থেকেই ঘন কুয়াশা আর হিমশীতল বাতাসে লোকজনের স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হয়।

বগুড়া আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘বগুড়ায় কয়েক দিন ধরেই শীতের প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। শনিবার সকাল থেকেই জেলাজুড়ে ব্যাপক কুয়াশা এবং হিমেল বাতাস বয়ে গেছে। জেলায় সর্বনিম্ন ১১ দশমিক ৬ ডিগ্রি তাপমাত্রার রেকর্ড করা হয়। এটিই এখন পর্যন্ত এই মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। আগামী কয়েক দিন শীতের এমন তীব্রতা অব্যাহত থাকতে পারে।’

উত্তরের শেষ প্রান্ত, হিমালয়ের ঘেঁষা জেলা লালমনিরহাটে শীতের তীব্রতা আরও বেশি। চরাঞ্চলে ঘন কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ায় রুটিরুজি কমে গরিব মানুষ কষ্টে আছেন। সন্ধ্যার আগেই কুয়াশার চাদরে ঢেকে যাচ্ছে পুরো এলাকা।

লালমনিরহাটের সীমান্তে কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা সুবল চন্দ্র বলেন, রাজারহাট ও আশপাশের এলাকায় তাপমাত্রা ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী চার বা পাঁচ দিন আবহাওয়ার উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই।

লালমনিরহাটের প্রধান সড়কে ভারী কুয়াশায় যানবাহন চলাচল খুব কমে গেছে। ট্রাকচালক জামাল উদ্দিন বলেন, দিনে হেড লাইট জ্বালিয়ে গাড়ি চালালেও সন্ধ্যার পরে কিছুই দেখা যায় না। ঘণ্টায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বৃদ্ধি পাওয়া ছাড়াও জ্বালানি খরচ আর সময় অনেক বেশি লাগছে।

তিস্তার চরাঞ্চলের গোবর্ধন গ্রামের আবদুর রশিদ বলেন, ‘চরাঞ্চলে কুয়াশা আর হিমেল হাওয়া অনেক বেশি। রাতে বিছানাও বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে যায়। এক-দুইটা পাতলা কম্বলে শরীর গরম হচ্ছে না। ফলে রাতেও ঘুমাতে পারছি না।’

মধ্য উত্তরের জেলা গাইবান্ধার আশপাশের এলাকাগুলোতে শীত ও কুয়াশার কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। শীত থেকে বাঁচতে আগুন পোহাতে দেখা যাচ্ছে অনেককে। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরোনো কাপড়ের দোকানগুলোতে নিম্ন আয়ের মানুষের ভিড় বেড়েছে।

কুয়াশার প্রভাব আকাশ, নৌ ও সড়কপথে

ঘন কুয়াশার প্রভাব পড়েছে নৌ এবং আকাশপথেও। রাজধানী ঢাকায়ও কুয়াশার তীব্রতা বেড়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কুয়াশার কারণে গতকাল সকালে আটটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট অবতরণ করতে না পারায় তাদের বিকল্প বিমানবন্দরে পাঠানো হয়েছে। দৃশ্যমানতা কমে যাওয়ায় নিরাপত্তার স্বার্থে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানিয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।

রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌ রুটে ঘন কুয়াশার কারণে গত শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে বাড়তি সতর্কতার জন্য সাড়ে ১৪ ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন ঘরমুখী হাজারো মানুষ। পরে গতকাল শনিবার সকালে ফের চালু করা হয় ফেরি। ঘন কুয়াশায় জামালপুরে যমুনা নদীতে প্রায় ১৫ ঘণ্টা আটকে থাকার পর বর-কনেসহ ৪৭ যাত্রীকে ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার করে।

বেড়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

শীতের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ। জ্বর, সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা। চিকিৎসকেরা যথাযথ গরম কাপড় ব্যবহার ও কুসুম গরম পানি পান করা এবং প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।

বিভিন্ন জেলার প্রশাসন শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে বলে জানালেও জানা গেছে, অনেক এলাকায় তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। বিশেষ করে শিশুদের গরম কাপড় ও কম্বলের অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত