কামরুল হাসান

মোগল দরবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদের নাম ছিল মুনশি। ধর্মীয় জ্ঞান, ভাষা, বিজ্ঞান ও দর্শনশাস্ত্রের পণ্ডিতকে এই ফারসি শব্দে অভিহিত করা হতো। তবে মুনশি শব্দ নিয়ে এত মুনশিয়ানা দেখানোর বিস্তর জ্ঞান আমার কস্মিনকালেও ছিল না। এটা জেনেছি সৈয়দ মুজতবা আলীর পঞ্চতন্ত্র পড়ার সুবাদে।
জনকণ্ঠে রিপোর্টিং বিভাগে কাজ করার সময় আমাদের দলে সে রকম একজন মুনশি ছিলেন–আহমেদ নূরে আলম। তাঁর পুরো নাম কখনো মুখে আসত না। আমরা ঈষৎ সংক্ষিপ্ত আর সম্পাদনা করে ডাকতাম নূরে আলম ভাই। বিজ্ঞান-অবিজ্ঞানের যেকোনো জটিল বিষয়কে সরল করে লেখায় তাঁর জুড়ি মেলা ভার। আমার মতো গড়পড়তা মানুষের কাছে নূরে আলম ভাই ছিলেন ‘অনেক জানাশোনা মানুষ’।
তো সেই নূরে আলম ভাইয়ের একদিন ভীষণ মন খারাপ। কী একটা কাজে আমি জনকণ্ঠ ভবনের অন্য তলায়, রিপোর্টিং থেকে অগ্রজ ফজলুল বারী ডেকে পাঠালেন। নিউজরুমে এসে দেখি, তিনজন সহকর্মী নূরে আলম ভাইয়ের তিন দিক ঘিরে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন। তিনি খুবই উদ্বিগ্ন, তাঁর দুই চোখ টলটল।
এ রকম একজন মানুষকে এই অবস্থায় দেখে কিছুটা হতবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ব্যাপার কী নূরে আলম ভাই? তিনি বললেন, ‘অপি খুব বিপদে পড়েছে।’ আমি বললাম, ‘কোন অপি?’ তিনি বললেন, ‘অপি করিম’। অভিনয় জগতে অপি করিমের তখন বেশ নামডাক। কিন্তু তাঁর কারণে নূরে আলম ভাই কেন উদ্বিগ্ন, বুঝতে না পেরে আবার জানতে চাইলাম, ‘অপি করিমের কী হয়েছে, তাতে আপনার কী?’ তিনি বললেন, ‘সে তো আমার বোন বাবলির মেয়ে।’
শুনে একটু অবাকই হলাম। এত দিন পাশে বসে কাজ করছি, অথচ তিনি কখনো এসবের কিছুই বলেননি। তিনি বরাবরই নিজের সম্পর্কে ঢাকঢোল পেটানোর উল্টো পথে চলা মানুষ। নূরে আলম ভাইকে সান্ত্বনা দিয়ে বললাম, চিন্তার কিছু নেই, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।
সে সময় ঢাকা মহানগরের পুলিশ কমিশনার ছিলেন আবদুল কাইয়ুম। ক্রাইম রিপোর্টারদের সঙ্গে তাঁর ‘ভাই-ব্রাদার’ সম্পর্ক। প্রথমে তাঁকে ফোন দিলাম। বললেন, এখনই ডিসিকে বলে দিচ্ছেন। একটু পরে ডিবির ইন্সপেক্টর রেজাউল করিমের ফোন। বললেন, তাঁদের একটি দল এখনই বের হবে, চাইলে আমি সঙ্গে যেতে পারি। ডিবির মাইক্রোবাসের পিছে পিছে মোটরসাইকেল নিয়ে গেলাম বুয়েটে। কিন্তু সেখানে সবকিছু স্বাভাবিকই মনে হলো। অপি আশ্রয় নিয়েছিলেন বুয়েটের শিক্ষক অধ্যাপক নিজাম উদ্দিন আহমেদের বাসায়। সেখানে তাঁর মা সঙ্গে ছিলেন। পুলিশের গাড়িতে ওঠার আগে মা-মেয়েকে দেখে মনে হচ্ছিল, তাঁরা যেন গভীর জলে ডুবতে ডুবতে কোনোমতে বেঁচে ফিরেছেন। এরপর পুলিশি পাহারায় সেদিন তাঁরা বাসায় চলে যান।
এ রকম পরিস্থিতির শিকার কারও কাছে ঘটনা বিষয়ে জানতে চাওয়া খুবই অমানবিক। কিন্তু সংবাদকর্মীকে সেই কঠিন কাজটাই হেসে হেসে করতে হয়। অপির মা-বাবা সেদিন যা বললেন, তা শুনে চুপ হয়ে গেলাম। এটা ছিল ২০০২ সালের ১৮ আগস্ট রোববার।
এ ঘটনার প্রায় আড়াই মাস আগে (২০০২ সালের ৮ জুন) দরপত্র নিয়ে বিরোধে বুয়েট ছাত্রদল সভাপতি মোকাম্মেল হায়াত খান মুকি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এস এম হলের টগর গ্রুপের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে মারা যান কেমিকৌশলের শিক্ষার্থী সাবেকুন নাহার সনি। সে সময় ছাত্র বিক্ষোভের মুখে বুয়েট অনেক দিন বন্ধ ছিল। খোলার পরে শুরু হয় বিভিন্ন বিভাগের পরীক্ষা। তবে উত্তপ্ত পরিস্থিতির কারণে তখনো ক্যাম্পাসে পুলিশ ছিল।
সেদিন ১৮ আগস্ট (২০০২) সকালে অপি আসেন পরীক্ষা দিতে। ক্যাম্পাসে আসার পর থেকে তাঁকে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন তখনকার বুয়েট ছাত্র সংসদের ভিপি ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতা গোলাম মোর্শেদ লায়ন। সেদিন পরীক্ষা দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে শহীদ মিনারের কাছে এলে লায়ন তাঁর সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে অপির পথরোধ করে দাঁড়ান। যেন ক্ষুধার্ত বাঘ, শিকারের অপেক্ষায় আছেন! তিনি অপিকে জোর করে তুলে নিয়ে যেতে চান। অপির সঙ্গে তাঁর মা ছিলেন। এ ঘটনায় মা-মেয়ে খুবই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। বুয়েটের গেটের সামনে তখন পুলিশের একটি দল ছিল। অপি তাদের কাছে সাহায্য চাইলে পুলিশের একজন সদস্য বলেন, এটা ক্যাম্পাসের বাইরের ঘটনা, তাঁদের কিছুই করার নেই। এ রকম পরিস্থিতিতে মা-মেয়ে কী করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না। পরে অপি এক বান্ধবীর সাহায্য নিয়ে অধ্যাপক নিজাম উদ্দিন আহমেদের বাসায় গিয়ে আশ্রয় নেন। লায়ন তখন দলবল নিয়ে বের হওয়ার পথে পাহারা বসান। অবশ্য ডিবির গাড়ি আসার পর তাঁরা কেটে পড়েন।
এ ঘটনার কয়েক মাস আগে অপি একদিন বুয়েট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে বাড়ি ফিরছিলেন। বাসটি মোহাম্মদপুরে আসার পর তিনি দেখেন, সেই বাসের পেছনের দিকে বুয়েট ছাত্র সংসদের ভিপি বসে। তিনি খুবই আপত্তিকরভাবে তাকাচ্ছেন। এই অবস্থায় অপি বাস থেকে দ্রুত নেমে বাড়ির দিকে চলে যান। কিছুক্ষণ পর তাঁর বাসার দরজায় কড়া নাড়েন ভিপি লায়ন। তিনি খুবই অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকেন। সেদিন অনেক কষ্টে তাঁকে বিদায় করা হয়। এরপরই বিভিন্ন সময় তিনি অপিকে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন। ক্লাসে, ক্যানটিনে, পথে, যেখানে-সেখানে আজেবাজে মন্তব্য করতে থাকেন আর তুলে নেওয়ার হুমকি দেন। একদিকে স্থাপত্যবিদ্যার মতো জটিল বিষয়, অন্যদিকে মানসিক যন্ত্রণা—দুয়ে মিলে পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারছিলেন না অপি। পরিস্থিতি একসময় এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে অপি বুয়েট ছেড়ে দেওয়ার কথাও ভাবতে শুরু করেন। এই অবস্থায় মেয়ের বিপদে ঢাল হয়ে দাঁড়ান মা শাহানারা করিম বাবলি। সংসারের কাজ ফেলে তিনি মেয়ের সঙ্গে ক্যাম্পাসে আসা-যাওয়া করতে থাকেন।
এভাবে দুই বছর শেষ হয়। পঞ্চম বর্ষে এসে আবার সেই একই যন্ত্রণা। এবার ভিপি লায়ন আরও বেপরোয়া। অপি তখন নিজের নিরাপত্তা নিয়ে এতটা শঙ্কিত হন যে নিজের বাসাতেও একটানা থাকতেন না। পালা করে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে রাত কাটানো শুরু করেন।
অপহরণের চেষ্টা নিয়ে অপির বাবা সৈয়দ আবদুল করিম লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন থানায়। কিন্তু পুলিশ সেই অভিযোগ মামলা হিসেবে গ্রহণ করেনি। সে সময় মামুনুর রশীদসহ অনেক নাট্যজন এ ঘটনার প্রতিবাদ করে বিবৃতি দেন। তারপরও দেশের নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বুয়েট তাদের শিক্ষার্থীর নিরাপত্তার জন্য কিছুই করেনি। উল্টো বুয়েটসহ সবাই ভিপি লায়নের পক্ষ নেয়। একপর্যায়ে লায়নকে বাঁচাতে তাঁকে মানসিক রোগীর সনদ দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
বুয়েটের তখন ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা ছিলেন অধ্যাপক জয়নুল আবেদিন। তিনি আমাকে বলেছিলেন, লায়নকে বুয়েটের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শাজাহান আলী মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে ভর্তি করে দিয়েছেন। লায়ন একজন প্রকৃত মানসিক রোগী। তিনি বলেন, এর আগেও জামানস ও মনন নামের দুটি ক্লিনিকে মানসিক রোগের চিকিৎসা নিয়েছিলেন লায়ন।
যত দূর মনে পড়ে, প্রথম ঘটনার পর লায়নের বাবা দিনাজপুরের পার্বতীপুরের একটি কলেজের শিক্ষক মকবুল হোসেন বুয়েটে লিখিত অঙ্গীকার দিয়ে বলেছিলেন, তাঁর ছেলে আর কাউকে উত্ত্যক্ত করবেন না। মকবুল হোসেন একবার বিষয়টি মিটিয়ে ফেলতে বুয়েটের গাড়িতে চড়ে অপিদের মোহাম্মদপুরের বাসাতেও গিয়েছিলেন। কিন্তু পরে সে কথা আর রক্ষা হয়নি।
ওই সময় পুলিশের একজন কর্মকর্তা আমাকে বলেছিলেন, লায়নকে নিয়ে তাঁদের পক্ষে আসলে কিছুই করা সম্ভব নয়। কারণ, লায়নের জন্মদিনের কেক কেটেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
লায়নের খোঁজ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার আজকের পত্রিকার দিনাজপুর প্রতিনিধি আনিসুল হক জুয়েল আর নীলফামারী প্রতিনিধি জসিম উদ্দিন বললেন, লায়নের বাবা জাতীয় পার্টির বড় নেতা ছিলেন। লায়ন এখনো পার্বতীপুরে একা থাকেন। তিনি কিছুই করেন না, শুধু এলাকায় ঘুরে বেড়ান।
আমাদের সেই নূরে আলম ভাই এখন অবসর যাপনে আমেরিকায় থাকেন। কদিন আগে তাঁকে ফোন করেছিলাম। শুধু বললেন, কী বাজে সময়ই-না গেছে।
অপির সঙ্গে কথাও হলো বুধবার। পুরোনো কথা তুলতেই মনে হলো, তাঁর মনের গভীরে ক্ষত এখনো দগদগে। সেই ঘটনা, পরিস্থিতি—সবই তাঁর মনে আছে, ভোলেননি কিছুই। শুধু বললেন, জীবনের সেই ঝড়টা এভাবে পাড়ি দিতে না হলে (পরীক্ষায়) আরও ভালো ফল করা যেত।
অপির ফোন রাখতে রাখতে মনে হচ্ছিল, অপি যেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ঝড়ের পরে’ গল্পের সেই কিশোর ছেলেটি। ঝড় যাঁকে শিখিয়ে দিয়ে গেছে, কী করে বাঁচতে হয়, কী করে শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়াতে হয়।
হয়তো সেই শিক্ষাই জীবনে কাজে লাগিয়েছেন অপি। এখন তাঁর গণ্ডি দেশ থেকে দেশান্তরে ছড়িয়ে গেছে। হালে ঢাকা-কলকাতায় মুক্তি পাওয়া ‘মায়ার জঞ্জাল’ ছবিটি তো তারই বার্তা দিয়ে গেল।
আষাঢ়ে নয় সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

মোগল দরবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদের নাম ছিল মুনশি। ধর্মীয় জ্ঞান, ভাষা, বিজ্ঞান ও দর্শনশাস্ত্রের পণ্ডিতকে এই ফারসি শব্দে অভিহিত করা হতো। তবে মুনশি শব্দ নিয়ে এত মুনশিয়ানা দেখানোর বিস্তর জ্ঞান আমার কস্মিনকালেও ছিল না। এটা জেনেছি সৈয়দ মুজতবা আলীর পঞ্চতন্ত্র পড়ার সুবাদে।
জনকণ্ঠে রিপোর্টিং বিভাগে কাজ করার সময় আমাদের দলে সে রকম একজন মুনশি ছিলেন–আহমেদ নূরে আলম। তাঁর পুরো নাম কখনো মুখে আসত না। আমরা ঈষৎ সংক্ষিপ্ত আর সম্পাদনা করে ডাকতাম নূরে আলম ভাই। বিজ্ঞান-অবিজ্ঞানের যেকোনো জটিল বিষয়কে সরল করে লেখায় তাঁর জুড়ি মেলা ভার। আমার মতো গড়পড়তা মানুষের কাছে নূরে আলম ভাই ছিলেন ‘অনেক জানাশোনা মানুষ’।
তো সেই নূরে আলম ভাইয়ের একদিন ভীষণ মন খারাপ। কী একটা কাজে আমি জনকণ্ঠ ভবনের অন্য তলায়, রিপোর্টিং থেকে অগ্রজ ফজলুল বারী ডেকে পাঠালেন। নিউজরুমে এসে দেখি, তিনজন সহকর্মী নূরে আলম ভাইয়ের তিন দিক ঘিরে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন। তিনি খুবই উদ্বিগ্ন, তাঁর দুই চোখ টলটল।
এ রকম একজন মানুষকে এই অবস্থায় দেখে কিছুটা হতবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ব্যাপার কী নূরে আলম ভাই? তিনি বললেন, ‘অপি খুব বিপদে পড়েছে।’ আমি বললাম, ‘কোন অপি?’ তিনি বললেন, ‘অপি করিম’। অভিনয় জগতে অপি করিমের তখন বেশ নামডাক। কিন্তু তাঁর কারণে নূরে আলম ভাই কেন উদ্বিগ্ন, বুঝতে না পেরে আবার জানতে চাইলাম, ‘অপি করিমের কী হয়েছে, তাতে আপনার কী?’ তিনি বললেন, ‘সে তো আমার বোন বাবলির মেয়ে।’
শুনে একটু অবাকই হলাম। এত দিন পাশে বসে কাজ করছি, অথচ তিনি কখনো এসবের কিছুই বলেননি। তিনি বরাবরই নিজের সম্পর্কে ঢাকঢোল পেটানোর উল্টো পথে চলা মানুষ। নূরে আলম ভাইকে সান্ত্বনা দিয়ে বললাম, চিন্তার কিছু নেই, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।
সে সময় ঢাকা মহানগরের পুলিশ কমিশনার ছিলেন আবদুল কাইয়ুম। ক্রাইম রিপোর্টারদের সঙ্গে তাঁর ‘ভাই-ব্রাদার’ সম্পর্ক। প্রথমে তাঁকে ফোন দিলাম। বললেন, এখনই ডিসিকে বলে দিচ্ছেন। একটু পরে ডিবির ইন্সপেক্টর রেজাউল করিমের ফোন। বললেন, তাঁদের একটি দল এখনই বের হবে, চাইলে আমি সঙ্গে যেতে পারি। ডিবির মাইক্রোবাসের পিছে পিছে মোটরসাইকেল নিয়ে গেলাম বুয়েটে। কিন্তু সেখানে সবকিছু স্বাভাবিকই মনে হলো। অপি আশ্রয় নিয়েছিলেন বুয়েটের শিক্ষক অধ্যাপক নিজাম উদ্দিন আহমেদের বাসায়। সেখানে তাঁর মা সঙ্গে ছিলেন। পুলিশের গাড়িতে ওঠার আগে মা-মেয়েকে দেখে মনে হচ্ছিল, তাঁরা যেন গভীর জলে ডুবতে ডুবতে কোনোমতে বেঁচে ফিরেছেন। এরপর পুলিশি পাহারায় সেদিন তাঁরা বাসায় চলে যান।
এ রকম পরিস্থিতির শিকার কারও কাছে ঘটনা বিষয়ে জানতে চাওয়া খুবই অমানবিক। কিন্তু সংবাদকর্মীকে সেই কঠিন কাজটাই হেসে হেসে করতে হয়। অপির মা-বাবা সেদিন যা বললেন, তা শুনে চুপ হয়ে গেলাম। এটা ছিল ২০০২ সালের ১৮ আগস্ট রোববার।
এ ঘটনার প্রায় আড়াই মাস আগে (২০০২ সালের ৮ জুন) দরপত্র নিয়ে বিরোধে বুয়েট ছাত্রদল সভাপতি মোকাম্মেল হায়াত খান মুকি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এস এম হলের টগর গ্রুপের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে মারা যান কেমিকৌশলের শিক্ষার্থী সাবেকুন নাহার সনি। সে সময় ছাত্র বিক্ষোভের মুখে বুয়েট অনেক দিন বন্ধ ছিল। খোলার পরে শুরু হয় বিভিন্ন বিভাগের পরীক্ষা। তবে উত্তপ্ত পরিস্থিতির কারণে তখনো ক্যাম্পাসে পুলিশ ছিল।
সেদিন ১৮ আগস্ট (২০০২) সকালে অপি আসেন পরীক্ষা দিতে। ক্যাম্পাসে আসার পর থেকে তাঁকে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন তখনকার বুয়েট ছাত্র সংসদের ভিপি ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতা গোলাম মোর্শেদ লায়ন। সেদিন পরীক্ষা দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে শহীদ মিনারের কাছে এলে লায়ন তাঁর সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে অপির পথরোধ করে দাঁড়ান। যেন ক্ষুধার্ত বাঘ, শিকারের অপেক্ষায় আছেন! তিনি অপিকে জোর করে তুলে নিয়ে যেতে চান। অপির সঙ্গে তাঁর মা ছিলেন। এ ঘটনায় মা-মেয়ে খুবই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। বুয়েটের গেটের সামনে তখন পুলিশের একটি দল ছিল। অপি তাদের কাছে সাহায্য চাইলে পুলিশের একজন সদস্য বলেন, এটা ক্যাম্পাসের বাইরের ঘটনা, তাঁদের কিছুই করার নেই। এ রকম পরিস্থিতিতে মা-মেয়ে কী করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না। পরে অপি এক বান্ধবীর সাহায্য নিয়ে অধ্যাপক নিজাম উদ্দিন আহমেদের বাসায় গিয়ে আশ্রয় নেন। লায়ন তখন দলবল নিয়ে বের হওয়ার পথে পাহারা বসান। অবশ্য ডিবির গাড়ি আসার পর তাঁরা কেটে পড়েন।
এ ঘটনার কয়েক মাস আগে অপি একদিন বুয়েট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে বাড়ি ফিরছিলেন। বাসটি মোহাম্মদপুরে আসার পর তিনি দেখেন, সেই বাসের পেছনের দিকে বুয়েট ছাত্র সংসদের ভিপি বসে। তিনি খুবই আপত্তিকরভাবে তাকাচ্ছেন। এই অবস্থায় অপি বাস থেকে দ্রুত নেমে বাড়ির দিকে চলে যান। কিছুক্ষণ পর তাঁর বাসার দরজায় কড়া নাড়েন ভিপি লায়ন। তিনি খুবই অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকেন। সেদিন অনেক কষ্টে তাঁকে বিদায় করা হয়। এরপরই বিভিন্ন সময় তিনি অপিকে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন। ক্লাসে, ক্যানটিনে, পথে, যেখানে-সেখানে আজেবাজে মন্তব্য করতে থাকেন আর তুলে নেওয়ার হুমকি দেন। একদিকে স্থাপত্যবিদ্যার মতো জটিল বিষয়, অন্যদিকে মানসিক যন্ত্রণা—দুয়ে মিলে পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারছিলেন না অপি। পরিস্থিতি একসময় এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে অপি বুয়েট ছেড়ে দেওয়ার কথাও ভাবতে শুরু করেন। এই অবস্থায় মেয়ের বিপদে ঢাল হয়ে দাঁড়ান মা শাহানারা করিম বাবলি। সংসারের কাজ ফেলে তিনি মেয়ের সঙ্গে ক্যাম্পাসে আসা-যাওয়া করতে থাকেন।
এভাবে দুই বছর শেষ হয়। পঞ্চম বর্ষে এসে আবার সেই একই যন্ত্রণা। এবার ভিপি লায়ন আরও বেপরোয়া। অপি তখন নিজের নিরাপত্তা নিয়ে এতটা শঙ্কিত হন যে নিজের বাসাতেও একটানা থাকতেন না। পালা করে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে রাত কাটানো শুরু করেন।
অপহরণের চেষ্টা নিয়ে অপির বাবা সৈয়দ আবদুল করিম লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন থানায়। কিন্তু পুলিশ সেই অভিযোগ মামলা হিসেবে গ্রহণ করেনি। সে সময় মামুনুর রশীদসহ অনেক নাট্যজন এ ঘটনার প্রতিবাদ করে বিবৃতি দেন। তারপরও দেশের নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বুয়েট তাদের শিক্ষার্থীর নিরাপত্তার জন্য কিছুই করেনি। উল্টো বুয়েটসহ সবাই ভিপি লায়নের পক্ষ নেয়। একপর্যায়ে লায়নকে বাঁচাতে তাঁকে মানসিক রোগীর সনদ দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
বুয়েটের তখন ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা ছিলেন অধ্যাপক জয়নুল আবেদিন। তিনি আমাকে বলেছিলেন, লায়নকে বুয়েটের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শাজাহান আলী মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে ভর্তি করে দিয়েছেন। লায়ন একজন প্রকৃত মানসিক রোগী। তিনি বলেন, এর আগেও জামানস ও মনন নামের দুটি ক্লিনিকে মানসিক রোগের চিকিৎসা নিয়েছিলেন লায়ন।
যত দূর মনে পড়ে, প্রথম ঘটনার পর লায়নের বাবা দিনাজপুরের পার্বতীপুরের একটি কলেজের শিক্ষক মকবুল হোসেন বুয়েটে লিখিত অঙ্গীকার দিয়ে বলেছিলেন, তাঁর ছেলে আর কাউকে উত্ত্যক্ত করবেন না। মকবুল হোসেন একবার বিষয়টি মিটিয়ে ফেলতে বুয়েটের গাড়িতে চড়ে অপিদের মোহাম্মদপুরের বাসাতেও গিয়েছিলেন। কিন্তু পরে সে কথা আর রক্ষা হয়নি।
ওই সময় পুলিশের একজন কর্মকর্তা আমাকে বলেছিলেন, লায়নকে নিয়ে তাঁদের পক্ষে আসলে কিছুই করা সম্ভব নয়। কারণ, লায়নের জন্মদিনের কেক কেটেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
লায়নের খোঁজ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার আজকের পত্রিকার দিনাজপুর প্রতিনিধি আনিসুল হক জুয়েল আর নীলফামারী প্রতিনিধি জসিম উদ্দিন বললেন, লায়নের বাবা জাতীয় পার্টির বড় নেতা ছিলেন। লায়ন এখনো পার্বতীপুরে একা থাকেন। তিনি কিছুই করেন না, শুধু এলাকায় ঘুরে বেড়ান।
আমাদের সেই নূরে আলম ভাই এখন অবসর যাপনে আমেরিকায় থাকেন। কদিন আগে তাঁকে ফোন করেছিলাম। শুধু বললেন, কী বাজে সময়ই-না গেছে।
অপির সঙ্গে কথাও হলো বুধবার। পুরোনো কথা তুলতেই মনে হলো, তাঁর মনের গভীরে ক্ষত এখনো দগদগে। সেই ঘটনা, পরিস্থিতি—সবই তাঁর মনে আছে, ভোলেননি কিছুই। শুধু বললেন, জীবনের সেই ঝড়টা এভাবে পাড়ি দিতে না হলে (পরীক্ষায়) আরও ভালো ফল করা যেত।
অপির ফোন রাখতে রাখতে মনে হচ্ছিল, অপি যেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ঝড়ের পরে’ গল্পের সেই কিশোর ছেলেটি। ঝড় যাঁকে শিখিয়ে দিয়ে গেছে, কী করে বাঁচতে হয়, কী করে শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়াতে হয়।
হয়তো সেই শিক্ষাই জীবনে কাজে লাগিয়েছেন অপি। এখন তাঁর গণ্ডি দেশ থেকে দেশান্তরে ছড়িয়ে গেছে। হালে ঢাকা-কলকাতায় মুক্তি পাওয়া ‘মায়ার জঞ্জাল’ ছবিটি তো তারই বার্তা দিয়ে গেল।
আষাঢ়ে নয় সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় গত শুক্রবার সকালে একটি মাদ্রাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে নারী, শিশুসহ চারজন আহত হয়েছে। মাদ্রাসাটি শেখ আল আমিন নামের এক ব্যক্তি পরিচালনা করতেন। যিনি এর আগে নিষিদ্ধ উগ্রবাদী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। দেশের বিভিন্ন থানায়
৩ দিন আগে
অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৮ হাজার ৫৯৭ জনকে। গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই বিশেষ অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
৬ দিন আগে
অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে গত রোববার বিকেল থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
৮ দিন আগে
জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
১৭ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় গত শুক্রবার সকালে একটি মাদ্রাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে নারী, শিশুসহ চারজন আহত হয়েছে। মাদ্রাসাটি শেখ আল আমিন নামের এক ব্যক্তি পরিচালনা করতেন। যিনি এর আগে নিষিদ্ধ উগ্রবাদী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। দেশের বিভিন্ন থানায় তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে সাতটি মামলা রয়েছে। পুলিশ বলছে, ভবনটি বিস্ফোরক তৈরিতে ব্যবহৃত হতো।
আজ শনিবার দুপুরে সরেজমিন দেখা গেছে, হাসনাবাদ বাজারের ফলপট্টি গলিতে উম্মাল কুরা ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসা। মাদ্রাসায় শিশুদের পাঠদান করা হয়। বিস্ফোরণে চার কক্ষের একতলা ভবনটির পশ্চিম পাশের দুটি কক্ষ সম্পূর্ণ ধসে পড়েছে, সিঁড়ির পাশের ছাদের একাংশ উড়ে গেছে এবং সব কটি কক্ষের পিলার ও দেয়ালে ফাটল ধরেছে। ঘটনাস্থলে ককটেল, রাসায়নিক দ্রব্য ও বোমা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক বিভাগের ক্রাইম সিন ইউনিটের কর্মীরা আলামত সংগ্রহ করছেন। তাঁরা পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছেন। ভবনের পাশের একটি ভবনের দোতলার দেয়ালে বিস্ফোরণে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া বিস্ফোরণে পাশের একটি অটোরিকশার গ্যারেজের টিনের ছাউনি উড়ে গেছে। টিনের নিচে চাপা পড়েছিলেন গ্যারেজের ম্যানেজার আবুল কালাম।
আবুল কালাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এত বিকট শব্দ হয়েছে যে আমার কানে তব্দা লেগে যায়। আমি টিনের নিচে চাপা পড়ি। পরে হামাগুড়ি দিয়ে বের হই। এরপর দেখি মাদ্রাসার মধ্যে আগুন জ্বলছে। যারা ভেতরে ছিল, তারা দ্রুত বাচ্চাদের নিয়ে বের হয়ে চলে যায়।’
গ্যারেজের মালিক মোশাররফ হোসেন ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘বিস্ফোরণের পর পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। আমিও বাসা থেকে দৌড়ে আসি। আমার গ্যারেজের দুজন অটোচালক দুই শিশুকে ওই ভবন থেকে বের করেন। এক নারী আর এক শিশুকে নিয়ে চলে যায়। এ সময় আল আমিনও দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। আধা ঘণ্টার মধ্যে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের লোকজন এসে পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়।’
মাদ্রাসার পাশের ৫ তলা বাড়ির বাসিন্দা মনোয়ার বলেন, ‘হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পাই। মনে হয়েছিল ভূমিকম্প। কারণ, বিস্ফোরণে সব ভবনে কাঁপুনি লাগে। সবাই চিৎকার করেছিল।’
ওই বাসিন্দা আরও বলেন, ‘মাদ্রাসাটিতে ৩০-৩৫ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করত। তবে শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় মাদ্রাসা বন্ধ ছিল। এ কারণে বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।’
ভবনটির পশ্চিম পাশের এক পাশে তিনটি কক্ষে মাদ্রাসার কার্যক্রম পরিচালিত হতো। অপর পাশের একটি কক্ষে পরিচালক শেখ আল আমিন (৩২), তাঁর স্ত্রী আছিয়া বেগম (২৮) এবং তাঁদের তিন সন্তান নিয়ে সেখানেই থাকতেন। বিস্ফোরণে দুই ছেলে উমায়েত (১০) ও আবদুল্লাহ (৭) আহত হয়। এর মধ্যে আছিয়া ও তাঁর দুই সন্তানকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।
পাশের ভবনের বাসিন্দা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বিস্ফোরণে আমাদের ভবনের কিছু অংশ ফেটে গেছে। ঘরের ভেতরের আসবাবও ভেঙে পড়েছে।’
ঘটনাস্থলেই পুলিশ হেফাজতে বসে ছিলেন ভবনমালিক পারভীন বেগম। ভবনের জমি তাঁর পৈতৃক সম্পত্তি। সেখানে লিবিয়ায় থাকা তাঁর দুই ছেলে এই ভবন ২০২২ সালে তৈরি করেন। এরপর হারুন অর রশীদ নামের এক ব্যক্তি এটি মাদ্রাসা করবেন বলে ১০ হাজার টাকায় ভাড়া নেন। পারভীন বেগম বলেন, ‘তিন বছর ধরে আমার বাড়ি ভাড়া নিয়ে মুফতি হারুন অর রশীদ মাদ্রাসা পরিচালনা করতেন। হারুন তাঁর শ্যালক আল আমিন ও শ্যালকের স্ত্রী আছিয়াকে মাদ্রাসা পরিচালনার দায়িত্ব দেন। তিনি মাঝেমধ্যে মাদ্রাসায় আসতেন। আমি নিয়মিত খোঁজখবর নিতাম। কিন্তু মাদ্রাসার আড়ালে কী কার্যক্রম চলছিল, তা বুঝতে পারিনি। আজ এসে দেখি, ভবনের চারপাশ উড়ে গেছে।’
পারভীন বেগমের পাশেই ছিলেন তাঁর ছোট মেয়ে সোহানা। তিনি বলেন, ‘ভাড়া নেওয়ার সময় শুধু হারুন অর রশীদ একাই এসেছিলেন। এরপর তাঁরা মাদ্রাসা পরিচালনা শুরু করেন। তবে তাঁরা আশপাশের কারও সঙ্গে তেমন মিশতেন না।’
পুলিশ ভবনের ভেতর থেকে কেমিক্যাল, ককটেল, ভেস্ট ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস, কম্পিউটার ও মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের ধারণা, কোনো বিস্ফোরক তৈরি করতে গিয়ে বিস্ফোরিত হয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে গতকাল বিকেলে জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিস্ফোরণের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট শেখ আল আমিন পলাতক রয়েছেন। তবে কেরানীগঞ্জ থেকে তাঁর স্ত্রী আছিয়া বেগম, আছিয়ার ভাই হারুনের স্ত্রী ইয়াছমিন আক্তার এবং ঢাকার বাসাবো থেকে আসমানী খাতুন নামের এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, আল আমিনের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটে। তাঁর বিরুদ্ধে এর আগে ২০১৭ ও ২০২০ সালে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন জেএমবির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে ঢাকা এবং আশপাশের বিভিন্ন থানায় অন্তত সাতটি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার আসমানী খাতুনের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় গত শুক্রবার সকালে একটি মাদ্রাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে নারী, শিশুসহ চারজন আহত হয়েছে। মাদ্রাসাটি শেখ আল আমিন নামের এক ব্যক্তি পরিচালনা করতেন। যিনি এর আগে নিষিদ্ধ উগ্রবাদী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। দেশের বিভিন্ন থানায় তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে সাতটি মামলা রয়েছে। পুলিশ বলছে, ভবনটি বিস্ফোরক তৈরিতে ব্যবহৃত হতো।
আজ শনিবার দুপুরে সরেজমিন দেখা গেছে, হাসনাবাদ বাজারের ফলপট্টি গলিতে উম্মাল কুরা ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসা। মাদ্রাসায় শিশুদের পাঠদান করা হয়। বিস্ফোরণে চার কক্ষের একতলা ভবনটির পশ্চিম পাশের দুটি কক্ষ সম্পূর্ণ ধসে পড়েছে, সিঁড়ির পাশের ছাদের একাংশ উড়ে গেছে এবং সব কটি কক্ষের পিলার ও দেয়ালে ফাটল ধরেছে। ঘটনাস্থলে ককটেল, রাসায়নিক দ্রব্য ও বোমা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক বিভাগের ক্রাইম সিন ইউনিটের কর্মীরা আলামত সংগ্রহ করছেন। তাঁরা পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছেন। ভবনের পাশের একটি ভবনের দোতলার দেয়ালে বিস্ফোরণে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া বিস্ফোরণে পাশের একটি অটোরিকশার গ্যারেজের টিনের ছাউনি উড়ে গেছে। টিনের নিচে চাপা পড়েছিলেন গ্যারেজের ম্যানেজার আবুল কালাম।
আবুল কালাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এত বিকট শব্দ হয়েছে যে আমার কানে তব্দা লেগে যায়। আমি টিনের নিচে চাপা পড়ি। পরে হামাগুড়ি দিয়ে বের হই। এরপর দেখি মাদ্রাসার মধ্যে আগুন জ্বলছে। যারা ভেতরে ছিল, তারা দ্রুত বাচ্চাদের নিয়ে বের হয়ে চলে যায়।’
গ্যারেজের মালিক মোশাররফ হোসেন ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘বিস্ফোরণের পর পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। আমিও বাসা থেকে দৌড়ে আসি। আমার গ্যারেজের দুজন অটোচালক দুই শিশুকে ওই ভবন থেকে বের করেন। এক নারী আর এক শিশুকে নিয়ে চলে যায়। এ সময় আল আমিনও দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। আধা ঘণ্টার মধ্যে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের লোকজন এসে পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়।’
মাদ্রাসার পাশের ৫ তলা বাড়ির বাসিন্দা মনোয়ার বলেন, ‘হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পাই। মনে হয়েছিল ভূমিকম্প। কারণ, বিস্ফোরণে সব ভবনে কাঁপুনি লাগে। সবাই চিৎকার করেছিল।’
ওই বাসিন্দা আরও বলেন, ‘মাদ্রাসাটিতে ৩০-৩৫ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করত। তবে শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় মাদ্রাসা বন্ধ ছিল। এ কারণে বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।’
ভবনটির পশ্চিম পাশের এক পাশে তিনটি কক্ষে মাদ্রাসার কার্যক্রম পরিচালিত হতো। অপর পাশের একটি কক্ষে পরিচালক শেখ আল আমিন (৩২), তাঁর স্ত্রী আছিয়া বেগম (২৮) এবং তাঁদের তিন সন্তান নিয়ে সেখানেই থাকতেন। বিস্ফোরণে দুই ছেলে উমায়েত (১০) ও আবদুল্লাহ (৭) আহত হয়। এর মধ্যে আছিয়া ও তাঁর দুই সন্তানকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।
পাশের ভবনের বাসিন্দা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বিস্ফোরণে আমাদের ভবনের কিছু অংশ ফেটে গেছে। ঘরের ভেতরের আসবাবও ভেঙে পড়েছে।’
ঘটনাস্থলেই পুলিশ হেফাজতে বসে ছিলেন ভবনমালিক পারভীন বেগম। ভবনের জমি তাঁর পৈতৃক সম্পত্তি। সেখানে লিবিয়ায় থাকা তাঁর দুই ছেলে এই ভবন ২০২২ সালে তৈরি করেন। এরপর হারুন অর রশীদ নামের এক ব্যক্তি এটি মাদ্রাসা করবেন বলে ১০ হাজার টাকায় ভাড়া নেন। পারভীন বেগম বলেন, ‘তিন বছর ধরে আমার বাড়ি ভাড়া নিয়ে মুফতি হারুন অর রশীদ মাদ্রাসা পরিচালনা করতেন। হারুন তাঁর শ্যালক আল আমিন ও শ্যালকের স্ত্রী আছিয়াকে মাদ্রাসা পরিচালনার দায়িত্ব দেন। তিনি মাঝেমধ্যে মাদ্রাসায় আসতেন। আমি নিয়মিত খোঁজখবর নিতাম। কিন্তু মাদ্রাসার আড়ালে কী কার্যক্রম চলছিল, তা বুঝতে পারিনি। আজ এসে দেখি, ভবনের চারপাশ উড়ে গেছে।’
পারভীন বেগমের পাশেই ছিলেন তাঁর ছোট মেয়ে সোহানা। তিনি বলেন, ‘ভাড়া নেওয়ার সময় শুধু হারুন অর রশীদ একাই এসেছিলেন। এরপর তাঁরা মাদ্রাসা পরিচালনা শুরু করেন। তবে তাঁরা আশপাশের কারও সঙ্গে তেমন মিশতেন না।’
পুলিশ ভবনের ভেতর থেকে কেমিক্যাল, ককটেল, ভেস্ট ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস, কম্পিউটার ও মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের ধারণা, কোনো বিস্ফোরক তৈরি করতে গিয়ে বিস্ফোরিত হয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে গতকাল বিকেলে জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিস্ফোরণের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট শেখ আল আমিন পলাতক রয়েছেন। তবে কেরানীগঞ্জ থেকে তাঁর স্ত্রী আছিয়া বেগম, আছিয়ার ভাই হারুনের স্ত্রী ইয়াছমিন আক্তার এবং ঢাকার বাসাবো থেকে আসমানী খাতুন নামের এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, আল আমিনের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটে। তাঁর বিরুদ্ধে এর আগে ২০১৭ ও ২০২০ সালে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন জেএমবির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে ঢাকা এবং আশপাশের বিভিন্ন থানায় অন্তত সাতটি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার আসমানী খাতুনের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

মোগল দরবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদের নাম ছিল মুনশি। ধর্মীয় জ্ঞান, ভাষা, বিজ্ঞান ও দর্শনশাস্ত্রের পণ্ডিতকে এই ফারসি শব্দে অভিহিত করা হতো। তবে মুনশি শব্দ নিয়ে এত মুনশিয়ানা দেখানোর বিস্তর জ্ঞান আমার কস্মিনকালেও ছিল না। এটা জেনেছি সৈয়দ মুজতবা আলীর পঞ্চতন্ত্র পড়ার সুবাদে।
১৮ মার্চ ২০২৩
অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৮ হাজার ৫৯৭ জনকে। গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই বিশেষ অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
৬ দিন আগে
অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে গত রোববার বিকেল থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
৮ দিন আগে
জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
১৭ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৮ হাজার ৫৯৭ জনকে। গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই বিশেষ অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
আজ বুধবার সন্ধ্যায় পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এ সারা দেশে ৮ হাজার ৫৯৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২ লাখ ৫৮ হাজার ১৬৮টি মোটরসাইকেল ও ২ লাখ ৬৪ হাজার ৪১১টি গাড়ি তল্লাশি করা হয়। তল্লাশিকালে ৩ হাজার ৩৯৪টি অবৈধ মোটরসাইকেল আটক করা হয়।
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও ‘ফ্যাসিস্টদের’ দমনে ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে দেশজুড়ে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২’ নামে বিশেষ অভিযান শুরু করে যৌথ বাহিনী।

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৮ হাজার ৫৯৭ জনকে। গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই বিশেষ অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
আজ বুধবার সন্ধ্যায় পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এ সারা দেশে ৮ হাজার ৫৯৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২ লাখ ৫৮ হাজার ১৬৮টি মোটরসাইকেল ও ২ লাখ ৬৪ হাজার ৪১১টি গাড়ি তল্লাশি করা হয়। তল্লাশিকালে ৩ হাজার ৩৯৪টি অবৈধ মোটরসাইকেল আটক করা হয়।
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও ‘ফ্যাসিস্টদের’ দমনে ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে দেশজুড়ে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২’ নামে বিশেষ অভিযান শুরু করে যৌথ বাহিনী।

মোগল দরবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদের নাম ছিল মুনশি। ধর্মীয় জ্ঞান, ভাষা, বিজ্ঞান ও দর্শনশাস্ত্রের পণ্ডিতকে এই ফারসি শব্দে অভিহিত করা হতো। তবে মুনশি শব্দ নিয়ে এত মুনশিয়ানা দেখানোর বিস্তর জ্ঞান আমার কস্মিনকালেও ছিল না। এটা জেনেছি সৈয়দ মুজতবা আলীর পঞ্চতন্ত্র পড়ার সুবাদে।
১৮ মার্চ ২০২৩
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় গত শুক্রবার সকালে একটি মাদ্রাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে নারী, শিশুসহ চারজন আহত হয়েছে। মাদ্রাসাটি শেখ আল আমিন নামের এক ব্যক্তি পরিচালনা করতেন। যিনি এর আগে নিষিদ্ধ উগ্রবাদী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। দেশের বিভিন্ন থানায়
৩ দিন আগে
অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে গত রোববার বিকেল থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
৮ দিন আগে
জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
১৭ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে গত রোববার বিকেল থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২৮ হাজার ৭৬৬টি মোটরসাইকেল ও ৪৩ হাজার ৩৫২টি গাড়ি তল্লাশি করা হয়। তল্লাশিকালে ২৯১টি অবৈধ মোটরসাইকেল আটক করা হয়।
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও ‘ফ্যাসিস্টদের’ দমনে ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে দেশজুড়ে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২’ নামে বিশেষ অভিযান শুরু করে যৌথ বাহিনী।

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে গত রোববার বিকেল থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২৮ হাজার ৭৬৬টি মোটরসাইকেল ও ৪৩ হাজার ৩৫২টি গাড়ি তল্লাশি করা হয়। তল্লাশিকালে ২৯১টি অবৈধ মোটরসাইকেল আটক করা হয়।
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও ‘ফ্যাসিস্টদের’ দমনে ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে দেশজুড়ে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২’ নামে বিশেষ অভিযান শুরু করে যৌথ বাহিনী।

মোগল দরবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদের নাম ছিল মুনশি। ধর্মীয় জ্ঞান, ভাষা, বিজ্ঞান ও দর্শনশাস্ত্রের পণ্ডিতকে এই ফারসি শব্দে অভিহিত করা হতো। তবে মুনশি শব্দ নিয়ে এত মুনশিয়ানা দেখানোর বিস্তর জ্ঞান আমার কস্মিনকালেও ছিল না। এটা জেনেছি সৈয়দ মুজতবা আলীর পঞ্চতন্ত্র পড়ার সুবাদে।
১৮ মার্চ ২০২৩
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় গত শুক্রবার সকালে একটি মাদ্রাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে নারী, শিশুসহ চারজন আহত হয়েছে। মাদ্রাসাটি শেখ আল আমিন নামের এক ব্যক্তি পরিচালনা করতেন। যিনি এর আগে নিষিদ্ধ উগ্রবাদী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। দেশের বিভিন্ন থানায়
৩ দিন আগে
অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৮ হাজার ৫৯৭ জনকে। গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই বিশেষ অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
৬ দিন আগে
জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
১৭ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
হাদিকে গুলির ঘটনায় মাস্ক পরা দুই তরুণ জড়িত বলে তাঁর সহযোদ্ধাদের সন্দেহ। তাঁদের দাবি, কয়েকদিন ধরে দুই তরুণ মাস্ক পরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হাদির সঙ্গে গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। বার বার তাঁদের মাস্ক খুলতে বলা হলেও তাঁরা রাজি হননি। হাদিঘনিষ্ঠদের সন্দেহ, এই তরুণরা হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর গতিবিধি বোঝার জন্য তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন।
দুজনের মধ্যে মাস্ক পরা একজন হাদির পাশে বসে আছে— এমন একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই তাকে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ হিসেবে দেখিয়েছেন। তবে মাস্ক করা এই তরুণই যে হাদিকে গুলি করেছেন, কিংবা এই তরুণই যে ফয়সাল, তা নিশ্চিত করে বলছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে শনাক্ত একজনের ছবি প্রকাশ করে ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ডিএমপির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তদের হামলায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি গুরুতর আহত হন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতারে রাজধানীতে জোর অভিযান পরিচালনা করছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ছবির ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তাকে হন্য হয়ে খুঁজছে। উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে কোন তথ্য থাকলে বা তার সন্ধান পেলে দ্রুত নিম্নলিখিত মোবাইল নম্বর অথবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশকে জানানোর জন্য বিনীত অনুরোধ করা হলো।’
পুলিশের বিবৃতিতে এই তরুণের নাম উল্লেখ করা না হলেও ছবি দেখে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ বলে আন্দাজ করা যায়। এই তরুণকেও আগে হাদীর সঙ্গে দেখা গেছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে হাদির সঙ্গে গণসংযোগে থাকা মাস্ক পরা তরুণটিই ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ এমন কোনো তথ্য পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম। সেই আলোচনার ছবিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
ফয়সাল করিম নামের তরুণ কার্যক্রমনিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধঘোষিত সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য হন। তাঁর পুরো নাম ফয়সাল করিম দাউদ খান।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদি। হাদিকে বহনকারী রিকশাকে অনুসরণ করে পেছন দিকে থেকে মোটরসাইকেলে এসে তাঁকে গুলি করে চলে যায় আততায়ীরা। হাদি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার নামে ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁর সঙ্গে ফয়সাল করিমের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেই ছবিগুলোতে থাকা ফয়সাল করিমের সঙ্গে মাস্ক পরা ব্যক্তির চেহারার কিছুটা সাদৃশ্য আছে। সেকারণে গুলি ছোড়ার ঘটনায় তাঁকে সন্দেহ করা হচ্ছে।
এর মধ্যেই দুপুরে ডিএমপি সন্দেহভাজনকে শনাক্তের কথা জানায় এবং ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

পেশাদারদের যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে ফয়সাল করিমের নামে প্রোফাইল আছে। সেখানে তিনি নিজেকে অ্যাপল সফট আইটি, ওয়াইসিইউ টেকনোলজি ও এনলিস্ট ওয়ার্ক নামে তিন প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
লিংকডইন প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী, ফয়সাল করিম ২০১৩ সালে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। পরে আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এমবিএ করেছেন বলে সেখানে উল্লেখ রয়েছে।
২০২৪ সালে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের দমনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা–কর্মীদের সঙ্গে মাঠে ছিলেন বলে ছাত্রলীগের সূত্র জানিয়েছে।
ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় নাম আসার পর ফয়সাল করিমের সঙ্গে আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশের দুইবারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতার ছবি ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে হাদির সঙ্গে ঢাকা–৮ আসনে গণসংযোগ এবং বাংলামোটরে হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের আড্ডায় ফয়সালের অংশ নেওয়ার ছবিও ভাইরাল হয়েছে। অনেকে ধারণা করছেন, ফয়সাল করিম ওসমান হাদিকে বেশ কিছুদিন ধরে অনুসরণ করছিলেন।
২০১৬ সালে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সহযোগিতা ও সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘ব্যাটল অব ৭১’ নামে একটি কম্পিউটার গেম তৈরি করেছিল ফয়সাল করিমের মালিকানাধীন ওয়াইসিইউ টেকনোলজি লিমিটেড। সে বছরের নভেম্বরে ওই গেমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেসিসের তৎকালীন সভাপতি এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও উপস্থিত ছিলেন।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘আসনভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয়ক কমিটি’ করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ঢাকা–১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এই আসনের সমন্বয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন ফয়সাল করিম।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকার আদাবরের বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকায় ব্রিটিশ কলাম্বিয়া স্কুলের চতুর্থ তলায় অফিসে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আদাবর থানার মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ফয়সাল করিম।
মামলা হওয়ার কিছুদিন পর ৭ নভেম্বর আদাবর এলাকা থেকে ফয়সাল করিমকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তাঁর কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও পাঁচটি গুলিও উদ্ধার করা হয়। ওই মামলায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান ফয়সাল করিম। জামিনের সময়সীমা বাড়াতে গত ১২ আগস্ট আবারও আবেদন করলে হাইকোর্ট নতুন করে তাঁর এক বছরের জামিন মঞ্জুর করেন।
জামিনে থাকা অবস্থায় এবার তাঁর বিরুদ্ধে ওসমান হাদিকে গুলি করার অভিযোগ এল। এত অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কীভাবে জামিন পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কারণ, কোনো অপরাধমূলক কাজের প্রমাণ না থাকলেও অভ্যুত্থানের পর শুধু মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা সভা করায় গ্রেপ্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিকের জামিন বারবার নাকচ করা হয়েছিল। আর এ রকম লুটের ঘটনায় দুটি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে এতো দ্রুত জামিন দেওয়া হলো কীভাবে, সেই প্রশ্ন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন আলোচনা–সমালোচনায় সরব।

জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
হাদিকে গুলির ঘটনায় মাস্ক পরা দুই তরুণ জড়িত বলে তাঁর সহযোদ্ধাদের সন্দেহ। তাঁদের দাবি, কয়েকদিন ধরে দুই তরুণ মাস্ক পরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হাদির সঙ্গে গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। বার বার তাঁদের মাস্ক খুলতে বলা হলেও তাঁরা রাজি হননি। হাদিঘনিষ্ঠদের সন্দেহ, এই তরুণরা হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর গতিবিধি বোঝার জন্য তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন।
দুজনের মধ্যে মাস্ক পরা একজন হাদির পাশে বসে আছে— এমন একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই তাকে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ হিসেবে দেখিয়েছেন। তবে মাস্ক করা এই তরুণই যে হাদিকে গুলি করেছেন, কিংবা এই তরুণই যে ফয়সাল, তা নিশ্চিত করে বলছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে শনাক্ত একজনের ছবি প্রকাশ করে ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ডিএমপির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তদের হামলায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি গুরুতর আহত হন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতারে রাজধানীতে জোর অভিযান পরিচালনা করছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ছবির ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তাকে হন্য হয়ে খুঁজছে। উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে কোন তথ্য থাকলে বা তার সন্ধান পেলে দ্রুত নিম্নলিখিত মোবাইল নম্বর অথবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশকে জানানোর জন্য বিনীত অনুরোধ করা হলো।’
পুলিশের বিবৃতিতে এই তরুণের নাম উল্লেখ করা না হলেও ছবি দেখে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ বলে আন্দাজ করা যায়। এই তরুণকেও আগে হাদীর সঙ্গে দেখা গেছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে হাদির সঙ্গে গণসংযোগে থাকা মাস্ক পরা তরুণটিই ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ এমন কোনো তথ্য পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম। সেই আলোচনার ছবিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
ফয়সাল করিম নামের তরুণ কার্যক্রমনিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধঘোষিত সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য হন। তাঁর পুরো নাম ফয়সাল করিম দাউদ খান।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদি। হাদিকে বহনকারী রিকশাকে অনুসরণ করে পেছন দিকে থেকে মোটরসাইকেলে এসে তাঁকে গুলি করে চলে যায় আততায়ীরা। হাদি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার নামে ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁর সঙ্গে ফয়সাল করিমের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেই ছবিগুলোতে থাকা ফয়সাল করিমের সঙ্গে মাস্ক পরা ব্যক্তির চেহারার কিছুটা সাদৃশ্য আছে। সেকারণে গুলি ছোড়ার ঘটনায় তাঁকে সন্দেহ করা হচ্ছে।
এর মধ্যেই দুপুরে ডিএমপি সন্দেহভাজনকে শনাক্তের কথা জানায় এবং ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

পেশাদারদের যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে ফয়সাল করিমের নামে প্রোফাইল আছে। সেখানে তিনি নিজেকে অ্যাপল সফট আইটি, ওয়াইসিইউ টেকনোলজি ও এনলিস্ট ওয়ার্ক নামে তিন প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
লিংকডইন প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী, ফয়সাল করিম ২০১৩ সালে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। পরে আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এমবিএ করেছেন বলে সেখানে উল্লেখ রয়েছে।
২০২৪ সালে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের দমনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা–কর্মীদের সঙ্গে মাঠে ছিলেন বলে ছাত্রলীগের সূত্র জানিয়েছে।
ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় নাম আসার পর ফয়সাল করিমের সঙ্গে আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশের দুইবারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতার ছবি ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে হাদির সঙ্গে ঢাকা–৮ আসনে গণসংযোগ এবং বাংলামোটরে হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের আড্ডায় ফয়সালের অংশ নেওয়ার ছবিও ভাইরাল হয়েছে। অনেকে ধারণা করছেন, ফয়সাল করিম ওসমান হাদিকে বেশ কিছুদিন ধরে অনুসরণ করছিলেন।
২০১৬ সালে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সহযোগিতা ও সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘ব্যাটল অব ৭১’ নামে একটি কম্পিউটার গেম তৈরি করেছিল ফয়সাল করিমের মালিকানাধীন ওয়াইসিইউ টেকনোলজি লিমিটেড। সে বছরের নভেম্বরে ওই গেমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেসিসের তৎকালীন সভাপতি এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও উপস্থিত ছিলেন।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘আসনভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয়ক কমিটি’ করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ঢাকা–১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এই আসনের সমন্বয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন ফয়সাল করিম।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকার আদাবরের বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকায় ব্রিটিশ কলাম্বিয়া স্কুলের চতুর্থ তলায় অফিসে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আদাবর থানার মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ফয়সাল করিম।
মামলা হওয়ার কিছুদিন পর ৭ নভেম্বর আদাবর এলাকা থেকে ফয়সাল করিমকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তাঁর কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও পাঁচটি গুলিও উদ্ধার করা হয়। ওই মামলায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান ফয়সাল করিম। জামিনের সময়সীমা বাড়াতে গত ১২ আগস্ট আবারও আবেদন করলে হাইকোর্ট নতুন করে তাঁর এক বছরের জামিন মঞ্জুর করেন।
জামিনে থাকা অবস্থায় এবার তাঁর বিরুদ্ধে ওসমান হাদিকে গুলি করার অভিযোগ এল। এত অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কীভাবে জামিন পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কারণ, কোনো অপরাধমূলক কাজের প্রমাণ না থাকলেও অভ্যুত্থানের পর শুধু মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা সভা করায় গ্রেপ্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিকের জামিন বারবার নাকচ করা হয়েছিল। আর এ রকম লুটের ঘটনায় দুটি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে এতো দ্রুত জামিন দেওয়া হলো কীভাবে, সেই প্রশ্ন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন আলোচনা–সমালোচনায় সরব।

মোগল দরবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদের নাম ছিল মুনশি। ধর্মীয় জ্ঞান, ভাষা, বিজ্ঞান ও দর্শনশাস্ত্রের পণ্ডিতকে এই ফারসি শব্দে অভিহিত করা হতো। তবে মুনশি শব্দ নিয়ে এত মুনশিয়ানা দেখানোর বিস্তর জ্ঞান আমার কস্মিনকালেও ছিল না। এটা জেনেছি সৈয়দ মুজতবা আলীর পঞ্চতন্ত্র পড়ার সুবাদে।
১৮ মার্চ ২০২৩
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় গত শুক্রবার সকালে একটি মাদ্রাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে নারী, শিশুসহ চারজন আহত হয়েছে। মাদ্রাসাটি শেখ আল আমিন নামের এক ব্যক্তি পরিচালনা করতেন। যিনি এর আগে নিষিদ্ধ উগ্রবাদী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। দেশের বিভিন্ন থানায়
৩ দিন আগে
অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৮ হাজার ৫৯৭ জনকে। গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই বিশেষ অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
৬ দিন আগে
অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে গত রোববার বিকেল থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
৮ দিন আগে