Ajker Patrika

নিক্কেই এশিয়ার প্রতিবেদন /ঘাটতি কমিয়ে বাজেট ছোট করতে চায় সরকার, সুবিধা দেখছেন অর্থনীতিবিদেরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১৪: ৪৪
ঘাটতি কমিয়ে বাজেট ছোট করতে চায় সরকার, সুবিধা দেখছেন অর্থনীতিবিদেরা

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) একটি দল তাদের ঋণের শর্ত হিসেবে ঢাকায় সরকারি অর্থের হিসাব খতিয়ে দেখছে। একই সময়ে, বাংলাদেশ আগামী জুলাই মাস থেকে শুরু হওয়া অর্থবছরের জন্য প্রথমবারের মতো ছোট আকারের বাজেট তৈরি করছে। ছোট বাজেট তৈরির কারণ, দেশ নিয়মিতই বাজেট ব্যবহার ও বাস্তবায়নে পিছিয়ে থাকছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখার স্বার্থেই এমন বাজেট নেওয়া ভালো।

গত মার্চে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার চলতি বছরের চেয়ে ছোট হবে। চলতি বছরে বাজেটের পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা বা ৬৫ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। এই বাজেটের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) জন্য বরাদ্দ ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা।

অর্থসচিব মো. খায়রুজ্জামান মজুমদার জাপানি সংবাদমাধ্যম নিক্কেই এশিয়াকে বলেন, ‘আমরা আগামী অর্থবছরের বাজেট ছোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ তবে তিনি সম্ভাব্য বাজেটের আকার বা অন্যান্য বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি।

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট আনুষ্ঠানিকভাবে জুনের প্রথম সপ্তাহে ঘোষণা করা হবে। গত আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সময় বাংলাদেশ সব সময় ৫ থেকে ১২ শতাংশ পর্যন্ত বাজেট বাড়িয়েছে। অথচ ২০২১ অর্থবছরে অব্যবহৃত বাজেটের পরিমাণ ছিল ১৯ শতাংশ এবং ২০২২ ও ২০২৩ অর্থবছরে তা যথাক্রমে ১৪ ও ১৫ শতাংশ ছিল।

চলতি অর্থবছরেও বাজেট ব্যবহারের একই রকম চিত্র দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি)। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত বেশ কিছু প্রকল্প এডিপির অন্তর্ভুক্ত। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রথম আট মাসে এডিপি ব্যয় ছিল মাত্র ২৪.২৭ শতাংশ, যা গত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

এডিপি বাস্তবায়নের হার কম হওয়ার প্রধান কারণ—গত বছর হাসিনার ক্ষমতা থেকে বিদায়। এর ফলে বড় ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়, প্রশাসনে ব্যাপক রদবদল হয়, কর্মকর্তারা সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধাগ্রস্ত হন, বিদেশি তহবিল ছাড়ের গতি কমে যায় এবং সরকারের মনোযোগ উন্নয়ন থেকে সরে গিয়ে সংস্কারের দিকে বেশি যায়। এই প্রেক্ষাপটে বাজেট প্রণয়ন প্রসঙ্গে খায়রুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘বাস্তবায়নের হার যখন খুব কম, তখন বিপুল পরিমাণ অর্থ আটকে রাখা যৌক্তিক নয়।’

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বেশ কয়েকবার আগামী বাজেটকে ‘আরও বাস্তবসম্মত’ ও কম ‘উচ্চাভিলাষী’ বলে উল্লেখ করেছেন। দাতা সংস্থা আইএমএফের চাপের কারণেও বাংলাদেশকে ছোট আকারের বাজেট করতে হচ্ছে। সংস্থাটির একটি দল ঢাকায় ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির আওতায় চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের আগে শর্ত পূরণের অগ্রগতি পর্যালোচনা করছে। ২০২৩ সালে এই ঋণ কর্মসূচি শুরু হয়েছিল। আইএমএফ চায় সরকার আগামী বাজেটে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা বাড়াক এবং জিডিপিতে করের অনুপাত শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ বৃদ্ধি করুক।

বাংলাদেশের রাজস্ব কর্মকর্তারা আইএমএফের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আত্মবিশ্বাসী নন। কারণ, নতুন সরকারের অধীনে ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে এবং বেসরকারি বিনিয়োগ কমেছে। এ কারণে অর্থ মন্ত্রণালয় ব্যয় সীমিত করার এবং নতুন বাজেটে বাজেট ঘাটতি ৪ শতাংশের নিচে রাখার কথা বিবেচনা করছে।

অর্থনীতিবিদেরা ছোট আকারের বাজেটের ধারণাকে স্বাগত জানিয়েছেন। সাধারণত এর অর্থ কম ব্যয়, কম উন্নয়ন প্রকল্প, কম কর্মসংস্থান এবং সামগ্রিকভাবে একটি অর্থনৈতিক ধাক্কা। তবে এবার তারা ভিন্নভাবে দেখছেন। উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ জায়েদ বখত নিক্কেইকে বলেছেন, দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি উচ্চ মূল্যস্ফীতি, কম কর রাজস্ব এবং দুর্বল বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভসহ অনেক চাপের সম্মুখীন।

জায়েদ বখত বলেন, ‘আমরা একটি সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অনুসরণ করছি এবং যদি আমরা একটি সম্প্রসারণমূলক আর্থিক নীতি গ্রহণ করি, তবে তা সাংঘর্ষিক হবে।’ তিনি যুক্তি দেন যে, একটি রক্ষণশীল বাজেট সামষ্টিক অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করবে। বখত আরও বলেন, ‘গত সরকারের আমলে অনেক অনুৎপাদনশীল ও প্রান্তিক প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল এবং দুর্নীতির অভিযোগও ছিল—তাই বাজেট বড় ছিল।’

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট জাহিদ হোসেনও ছোট বাজেটকে ‘প্রবৃদ্ধিকেন্দ্রিক’ বলে মনে করেন। তিনি বলেন, ‘যদি আপনি মূল্যস্ফীতির দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করেন, আমাদের একটি ছোট বাজেট দরকার। যদি আপনি বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির কথা বিবেচনা করেন, আপনার একটি ছোট ঘাটতি (বাজেটে) দরকার, যার জন্য আপনার একটি ছোট বাজেট দরকার। আপনি যদি বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা এবং তা নিয়ন্ত্রণে রাখার কথা ভাবেন, তবে একটি ছোট বাজেট সাহায্য করবে, বিশেষ করে ছোট এডিপি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বেনাপোলে দুই মাস ধরে আটকা সুপারিবাহী ১৫০ ট্রাক, দৈনিক লোকসান ৩ লাখ টাকা

বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি  
বেনাপোল বন্দরে প্রায় ১০০ কোটি টাকা মূল্যের সুপারির রপ্তানি আটকা। ছবি: আজকের পত্রিকা
বেনাপোল বন্দরে প্রায় ১০০ কোটি টাকা মূল্যের সুপারির রপ্তানি আটকা। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশের অন্যতম প্রধান স্থলবন্দর বেনাপোলে প্রায় দুই মাস ধরে আটকে আছে ১০০ কোটি টাকা মূল্যের দেড় শতাধিক রপ্তানিমুখী সুপারির ট্রাক। দীর্ঘ এই অচলাবস্থার কারণে রপ্তানিকারকদের প্রতিদিন ট্রাক প্রতি ২ হাজার টাকা হিসেবে প্রায় ৩ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা ভাড়া গুনতে হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে পণ্যের মান নির্ণয় ও কৃত্রিম জটিলতা সৃষ্টির ফলেই এই রপ্তানি বাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়া হলে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন তারা।

বিশ্বে সুপারি উৎপাদনে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে এবং গুণগত মানের কারণে ভারতে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বছরে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার সুপারি ভারতে রপ্তানি হয়। তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারতের সুপারি আমদানিতে বাংলাদেশের অংশীদারত্ব বেড়ে হয়েছে ৩৭ শতাংশ, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় চার গুণ। এমন রমরমা বাণিজ্যের মধ্যেই দেড় শতাধিক সুপারির ট্রাক প্রায় দুই মাস ধরে বেনাপোল বন্দরে দাঁড়িয়ে আছে।

দীর্ঘদিন বন্দরে আটকে থাকায় পণ্যজট সৃষ্টি হয়েছে এবং ট্রাক চালকদেরও নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

আটকে থাকা সুপারি বহনকারী ট্রাক চালক মমিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘১ মাস ২৭ দিন ধরে এখানে আটকে থেকে নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। ওপারের ব্যবসায়ীরা সুপারির বাজার নিয়ন্ত্রণে সিন্ডিকেট করে ইচ্ছাকৃতভাবে এসব ট্রাক দেরিতে নিচ্ছেন বলে আমাদের সন্দেহ।’

রপ্তানিকারক পণ্য ছাড়কারী প্রতিষ্ঠান আউলিয়া এন্টারপ্রাইজের প্রতিনিধি আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘ওপারে পেট্রাপোল বন্দরে পরীক্ষাসহ নানা কারণ দেখিয়ে তারা পণ্য নিতে দেরি করছে। আমরা দ্রুত এই পণ্য খালাসের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভারত সরকার রপ্তানি বাণিজ্যে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা ও নানা শর্ত আরোপের ফলে বর্তমানে রপ্তানির পরিমাণ ৩০ শতাংশে নেমে এসেছে।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের দপ্তর সম্পাদক মোস্তাফিজ্জোহা সেলিম বলেন, বাণিজ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে তা দুই দেশের জন্যই ক্ষতিকর। এ অবস্থা কাটাতে দ্রুত দুই দেশের সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞার কারণে বর্তমানে বেনাপোল বন্দর দিয়ে পাট ও পাটজাত পণ্য, গার্মেন্টস, তৈরি পোশাক, কাঠের আসবাবপত্র, ফলের জুসসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পণ্য সড়ক পথে রপ্তানি বন্ধ রয়েছে।

তবে বন্দর সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা এই সংকটের ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন। বেনাপোল বন্দর উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের উপপরিচালক আবু তালহা জানান, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে ১০ হাজার ৬৫০ টন সুপারি রপ্তানি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘যে সমস্যার কারণে বন্দরে সে সব ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে শুনেছি, সেটা ব্যবসায়ীদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। যে সব ট্রাকের কাগজপত্র আমাদের কাছে আসছে, সেগুলো ভারতে ঢুকছে।’

তিনি আরও জানান, যেসব সুপারির ট্রাকের কাগজ হাতে পেলে দ্রুত ছাড়করণে সহযোগিতা করা হবে। তবে রপ্তানিকারকেরা বলছেন, এই বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে দ্রুত সরকারি হস্তক্ষেপ ছাড়া এই সংকট কাটানো সম্ভব নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তেল-পেঁয়াজে দাম বাড়তি, সবজিতে ফিরছে স্বস্তি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৪০
টাটকা সবজি কিনছেন একজন। গতকাল রাজধানীর হাতিরপুল কাঁচাবাজারে।
টাটকা সবজি কিনছেন একজন। গতকাল রাজধানীর হাতিরপুল কাঁচাবাজারে।

বাজারে একলাফে লিটারে ৯ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে সয়াবিন তেলের দাম। আর দেশি পুরোনো পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা। তবে এসব পণ্যের সরবরাহে তেমন কোনো সমস্যা নেই বাজারে। পুরোনো পেঁয়াজের সঙ্গে নতুন পেঁয়াজও পাওয়া যাচ্ছে।

ভোজ্যতেল ও পেঁয়াজ ছাড়া বাজারে সবজি, ডিম, মুরগি, আটা, চিনিসহ প্রায় অধিকাংশ পণ্যের দাম কমেছে। বিশেষ করে সবজির বাজারে গত সপ্তাহের তুলনায় অনেকটাই স্বস্তি ফিরেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর শান্তিনগর, মালিবাগ, রামপুরাসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকা, এক সপ্তাহ আগে মানভেদে দাম ছিল ১১০-১২০ টাকা কেজি। নতুন পেঁয়াজের দাম অবশ্য তুলনামূলক কম। খুচরায় পাতাসহ নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা কেজি।

জানতে চাইলে রামপুরা বাজারের সবজি বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এবার পেঁয়াজ আমদানি না করেই বাজারের চাহিদা মিটে গেছে। এখন আগের মৌসুমের পেঁয়াজের মজুত একেবারেই শেষের দিকে। এই সময় পুরোনো পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেশিই থাকে। তবে এটা বেশি দিন থাকবে না। বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি নেই। চাহিদা অনুসার পেঁয়াজ রয়েছে।’

বেড়েছে ভোজ্যতেলের দামও। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৯৮ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৮৯ টাকা। খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭৫-১৭৯ টাকা লিটার, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৭১-১৭৪ টাকা লিটার।

বিক্রেতারা বলছেন, কোম্পানিগুলো গত এক সপ্তাহে ধীরে ধীরে বাজারে বাড়তি দামে তেল সরবরাহ করেছে। এখনো অনেক দোকানে আগের দামের তেল পাওয়া যায়। তবে বাজারের অধিকাংশ দোকানেই বাড়তি দামের তেল রয়েছে।

গত সপ্তাহ পর্যন্ত খুচরায় কাঁচা মরিচ বিক্রি হতো ১২০-১৫০ টাকা কেজি, তবে চলতি সপ্তাহে দাম কমে ৭০-১০০ টাকা কেজিতে নেমেছে। এ ছাড়া শীতের সবজি হলেও শিমের দাম হঠাৎ বেড়ে ১৫০ টাকার ওপরে উঠেছিল।

সেই শিম এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা কেজি। ফুলকপি, বাঁধাকপির দাম কমেছে প্রতিটিতে ১০ টাকা। দুই ধরনের কপিই পাওয়া যাচ্ছে ৩০ টাকায়। তবে ভালো মানের ফুলকপি ৫০ টাকা। গত সপ্তাহে একটি কপি কিনতে ৪০-৬০ টাকা লেগেছিল।

দাম কমেছে টমেটোরও। মান ও বাজারভেদে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১২০-১৪০ টাকা।

দেশি গাজরের সরবরাহ ব্যাপক বেড়েছে বাজারে, এতে দামও কমেছে। প্রতি কেজি গাজর বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৮০-১০০ টাকা। তবে আমদানির গাজর আগের মতোই ১২০-১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে বেগুন বিক্রি হয়েছিল ৮০-১০০ টাকা কেজি, যা চলতি সপ্তাহে কমে ৭০-৮০ টাকায় নেমেছে। বাজারে আলুর দাম আগের মতোই প্রতি কেজি ২৫ টাকা রয়েছে।

আমিষের সবচেয়ে বড় উৎস ডিমের দাম আরও কমেছে। ফার্মের মুরগির সাদা ও বাদামি ডিমের দাম কমে ১১০ থেকে ১২৫ টাকা ডজনে নেমেছে। গত সপ্তাহে ছিল ১২০-১৩০ টাকা।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত বছর এই সময় ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছিল ১৪০-১৫০ টাকা ডজন। টিসিবি বলছে, গত বছরের তুলনায় ডিমের দাম ৩৫ শতাংশ কমেছে।

ডিমের সঙ্গে কমেছে ফার্মের মুরগির দামও। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম কমে ১৫০-১৭০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৬০-১৮০ টাকা কেজি।

সেগুনবাগিচা বাজারের ডিম বিক্রেতা নূর ই আলম বলেন, ‘ডিম ও মুরগির বাজার স্বাভাবিক আচরণ করছে না। হঠাৎ দামের এত পতন হচ্ছে কেন, তা বোঝা যাচ্ছে না। বর্তমানে ডিমের যে দাম, তা গত কয়েক বছরের তুলনায় সবচেয়ে কম।’

ডিম-মুরগির সঙ্গে কিছুটা কমেছে রুই-কাতলা মাছের দামও। বাজারে চাষের এই মাছগুলো বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৪০০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩২০-৪৫০ টাকা কেজি।

মুদিপণ্যের মধ্যে চিনির দাম আগে থেকেই কমেছে। খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৯০-১০০ টাকা কেজি। চলতি সপ্তাহে নতুন করে কমেছে আটা, মসুর ডাল, ছোলার দাম। খোলা আটার দাম ২-৩ টাকা কমে ৪৫-৪৮ টাকা বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ছিল ৪৮-৫০ টাকা কেজি। কেজিপ্রতি বড় দানার মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৯৫-১০৫ টাকা। ছোলার দামও কেজিপ্রতি ৫ টাকা কমে ৯৫-১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের মামা-ভাগনে মুদিদোকানের বিক্রেতা হারুনুর রশিদ বলেন, রমজান উপলক্ষে পণ্যের আমদানি ব্যাপক বেড়েছে। তাই প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম কমছে। তবে ভোজ্যতেল ও পেঁয়াজের বিষয়টি কিছুটা ভিন্ন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

উত্তরা ব্যাংকের ২৫০তম শাখার উদ্বোধন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

উত্তরা ব্যাংক পিএলসির একটি নতুন শাখার উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার কুমিল্লা জেলার লাকসাম থানার ব্যাংক রোড, দৌলতগঞ্জ বাজারে ব্যাংকের ২৫০তম লাকসাম শাখার উদ্বোধন করেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মো. আবুল হাশেম।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুল হাসান।

এ ছাড়া অনুষ্ঠানে মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. রবিউল হাসান এবং উপমহাব্যবস্থাপক ও আঞ্চলিক প্রধান (কুমিল্লা অঞ্চল) মো. জাহাঙ্গীর আলমসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

টানা চার মাস কমল রপ্তানি আয়

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রেমিট্যান্সে প্রবাহ বাড়লেও পণ্য রপ্তানিতে ধাক্কার ধারা থামছে না। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের নভেম্বরে দেশের রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৮৯ কোটি ১৫ লাখ ডলার। গত বছরের একই মাসে এই আয় ছিল ৪১১ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। অর্থাৎ মাসওয়ারি হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে রপ্তানি আয় কমেছে ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ, টাকার অঙ্কে এই হ্রাসকৃত রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়ায় ২২ কোটি ৮১ লাখ ডলার।

এবারই প্রথম নয়, আগস্ট থেকে শুরু হওয়া নিম্নমুখী ধারা নভেম্বরে এসে চতুর্থ মাসে পা দিল। জুলাইয়ের শক্তিশালী সূচনার পর রপ্তানি খাত যে ধারাবাহিক গতি অর্জন করেছিল, সেই গতি আগস্টেই থমকে যায়। ওই মাসে আগের বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কমে ২ দশমিক ৯৩ শতাংশে নেমে আসে। সেপ্টেম্বরেও পতন গভীর হয়—৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। অক্টোবরে সেই হার আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশে।

জুলাইয়ের ব্যতিক্রমী সাফল্যের পর পরবর্তী চার মাস যেন একটানা ঢালু পথ। সেই জুলাইয়ে রপ্তানি আয় ছিল ৪৭৭ কোটি ৫ লাখ ডলার, প্রবৃদ্ধি প্রায় ২৪ দশমিক ৯০ শতাংশ। কিন্তু এরপর প্রতি মাসেই কমতে কমতে নভেম্বরে এসে রপ্তানি আয়ের ব্যবধান স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

সার্বিক চিত্রটি বলছে, অর্থবছরের শুরুতে পাওয়া জোয়ারটি এখন চার মাসের টানা ভাটার মুখে দাঁড়িয়ে।

আজ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ইপিবির তথ্য পর্যালোচনায় আরও দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর মিলিয়ে পাঁচ মাসে মোট রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ২০০২ কোটি ৮৫ লাখ ডলার; যা আগের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি ঘটেছে মাত্র দশমিক ৬২ শতাংশ। অর্থাৎ পাঁচ মাসের সার্বিক রপ্তানি আয়ের চিত্রও নামমাত্র।

নভেম্বরের সবচেয়ে বড় আঘাত লেগেছে পোশাক খাতে, যেটি দেশের রপ্তানির প্রধান ভরসা। ওই মাসে পোশাক রপ্তানি থেকে এসেছে ৩১৪ কোটি ৯ লাখ ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ কম। এ সময় নিটওয়্যার খাতে আয় নেমেছে ১৬১ কোটি ৮৪ লাখ ডলারে, আর ওভেনে এসেছে ১৫২ কোটি ২৪ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে নিটওয়্যার আয় ছিল ১৭৩ কোটি ৮২ লাখ ডলার এবং ওভেন ১৫৬ কোটি ৯২ লাখ ডলার।

পোশাকের বাইরে কৃষিপণ্যে রপ্তানি কমেছে ২৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ, প্লাস্টিক পণ্যে কমেছে ১৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এ ছাড়া রপ্তানি পতনের তালিকায় রয়েছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত সামগ্রী, হোম টেক্সটাইলস, ফার্মাসিউটিক্যালস, জাহাজ, চিংড়ি ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং। এর মানে হচ্ছে, প্রচলিত এসব খাতেও মন্থরতা স্পষ্ট।

তবে সব বাজারে একই চিত্র নয়। কিছু গন্তব্যে বিপরীত প্রবণতা দেখা গেছে, যা সামগ্রিক মন্দার মধ্যেও আশার সঞ্চার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি বেড়েছে ৪ দশমিক ২০ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। উদীয়মান বাজারগুলোর মধ্যেও ইতিবাচক প্রবণতা স্পষ্ট—চীনে রপ্তানি বেড়েছে ২৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ, পোল্যান্ডে ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ, সৌদি আরবে ১১ দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং স্পেনে ১০ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এ প্রবণতা সাম্প্রতিক বছরগুলোয় যেন অনেকটাই ব্যতিক্রমী সাফল্য।

সব মিলিয়ে চিত্রটি দ্বিমুখী। একদিকে ঐতিহ্যগত প্রধান খাতগুলোতে পতন; অন্যদিকে কিছু নতুন বাজারে ইতিবাচক ইঙ্গিত। তবে বড় প্রশ্ন রয়ে যায়, এই বাজার বৃদ্ধি কি পোশাকসহ প্রধান খাতের ধারাবাহিক মন্দাকে সামাল দিতে পারবে?

বর্তমান বাস্তবতা বলছে, বৈচিত্র্য বাড়ানোর পথে অনেক দূর যেতে হবে। উৎপাদন প্রতিযোগিতা, মূল্যের চাপ, বৈদেশিক অর্ডার সংকোচন এবং বিশ্ববাজারের অনিশ্চয়তা, সব মিলিয়ে রপ্তানি খাতে সামনের পথ সহজ নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত