Ajker Patrika

৮ গ্রুপের পাচার করা অর্থ ফেরাতে উদ্যোগ

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
আপডেট : ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৫: ৩৯
৮ গ্রুপের পাচার করা অর্থ ফেরাতে উদ্যোগ

গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংকঋণের নামে অর্থ লোপাট, ঘুষ গ্রহণ ও রাজস্ব ফাঁকির মাধ্যমে অর্জিত বিপুল অঙ্কের অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে। এর মধ্যে পতিত সরকারের সুবিধাভোগী হিসেবে পরিচিত সামিট গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, নাসা গ্রুপ, সিকদার গ্রুপ, জেমকন গ্রুপ, ওরিয়ন গ্রুপ ও আরামিট গ্রুপের নামে-বেনামে পাচার করা বিপুল অর্থের তথ্য পেয়েছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটসহ (বিএফআইইউ) যৌথ তদন্ত সংস্থাগুলো।

তদন্তের সঙ্গে যুক্ত সূত্র জানায়, মূলত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, হংকং, স্লোভাকিয়া, মালয়েশিয়া, সুইজারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে অর্থসম্পদ পাচার ও বিনিয়োগের প্রমাণ মিলেছে। এসব সম্পদ দেশে ফেরাতে ইতিমধ্যে ৮টি দেশের সঙ্গে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) করা হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।

পতিত সরকারের টানা তিন মেয়াদে প্রায় ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলার অর্থ পাচারের অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।

সূত্র জানায়, পাচারকৃত অর্থের সঙ্গে সামিট, এস আলম, সিকদার, আরামিট, নাসা ও বেক্সিমকো গ্রুপের জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউ, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও পুলিশের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি), টাস্কফোর্সসহ তদন্তসংশ্লিষ্ট ৯টি সংস্থা। এসব শিল্প-বাণিজ্য গ্রুপের কয়েকজন কর্ণধার গোপনে বিদেশি নাগরিকত্বও নিয়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকার পাচারকৃত অর্থের বিষয়ে তথ্য পাওয়া এবং তা ফেরত আনার লক্ষ্যে সুইজারল্যান্ডসহ ৯টি দেশের সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে পর্যায়ক্রমে চিঠি দিচ্ছে।

তদন্তসংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, টেলিকম, বিদ্যুৎ ও বন্দর খাতে সামিট গ্রুপ ব্যাপক অনিয়ম করেছে। গ্রুপটির প্রকৃত মালিক শেখ হাসিনা সরকারের সাবেক মন্ত্রী ফারুক খানের ভাই আজিজ খান। গ্রুপটি প্রভাব খাটিয়ে বিদ্যুৎ, টেলিকম ও বন্দর খাতে ব্যাপক লুটপাটের মাধ্যমে অর্থ পাচার করেছে। অনুসন্ধানে সিঙ্গাপুর, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড ও সুইজারল্যান্ডে সামিটের নামে-বেনামে সম্পত্তি থাকার প্রমাণ মিলেছে। গ্রুপটি সিঙ্গাপুরে ১ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করলেও অনুমতি রয়েছে মাত্র ৭০ মিলিয়ন ডলারের। চট্টগ্রামের বিতর্কিত এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ করেছেন খোদ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর। সরকারের একাধিক সংস্থার পক্ষ থেকে তদন্তে সিঙ্গাপুর, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, সাইপ্রাস, কানাডা ও মালয়েশিয়ায় তাঁদের বিপুল পরিমাণ সম্পদের সন্ধান মিলেছে। এসব সম্পদের উৎসসহ কোনো তথ্য নেই।

তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাতবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের বেক্সিমকো গ্রুপের বিরুদ্ধে আমদানি-রপ্তানির আড়ালে যুক্তরাজ্যে ৮ কোটি ৩০ লাখ পাউন্ড (১ হাজার ১৩ কোটি টাকা) পাচারের তথ্য রয়েছে। লন্ডনে সালমানের ছেলে আহমেদ সায়ান ফজলুর রহমানের নামে সাড়ে ৭৭ লাখ পাউন্ডের (১২৬ কোটি টাকা) দুটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট রয়েছে। নাসা গ্রুপের মালিক নজরুল ইসলাম মজুমদারের বিরুদ্ধে ব্যাংকঋণের ৬৭০ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের তথ্য রয়েছে। নাসা গ্রুপ যুক্তরাজ্য এবং দেশটির অধীনস্থ আইল অব ম্যান ও জার্সি এবং চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হংকংয়ে ৩ কোটি ৭৯ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ড বা ৬৪৪ কোটি টাকার সম্পদ পাচার করেছে।

সূত্র আরও জানায়, হাসিনা সরকারের ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদের মালিকানাধীন কোম্পানি আরামিট গ্রুপের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সিঙ্গাপুরে কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ পাচারের তথ্য মিলেছে। এসব সম্পদ উদ্ধারে তিনটি দেশের সঙ্গে এমএলএআর পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। জেমকন গ্রুপের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে সম্পত্তির খোঁজ মিলেছে। সিকদার গ্রুপের কয়েকজন পরিচালকের বিরুদ্ধে ন্যাশনাল ব্যাংকের আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে অর্থ পাচারের তথ্য পাওয়া গেছে। গ্রুপটির বিভিন্ন পরিচালকের নামে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় সম্পত্তির তথ্য মিলেছে। এ ছাড়া ওরিয়ন গ্রুপের পরিচালকদের বিরুদ্ধে ক্ষুদ্র ক্যারিবীয় দ্বীপরাষ্ট্র ডমিনিকা এবং দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের আলবেনিয়ায় বিনিয়োগের তথ্য রয়েছে। পরিচালকেরা গোপনে দেশ দুটোর নাগরিকত্বও নিয়েছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এ বিষয়ে বলেন, অবৈধভাবে বিদেশে পাঠানো অর্থ উদ্ধারের প্রচেষ্টা জোরদার করা হয়েছে। যাঁরা বাংলাদেশ থেকে অর্থ নিয়ে বিদেশে পালিয়েছেন, তাঁদের সম্পদ ফিরিয়ে আনতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমন্বিত প্রচেষ্টা চলছে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিগত ১৫ বছরে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএফআইইউর নাকের ডগায় বিপুল অর্থ পাচার হয়েছে, যা ফেরত আনা সম্ভব। তবে অত্যন্ত কঠিন কাজ। পাচারের টাকা ফেরত আনতে বিএফআইইউ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, সিআইডি, দুদক ও আটর্নি জেনারেলের কার্যালয়কে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার মৃত্যু

বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আগামীকাল বুধবার দেশের সব পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে পোশাকমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। আজ মঙ্গলবার পোশাকমালিকদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই অনুরোধ জানানো হয়। একই সঙ্গে জানাজার আগপর্যন্ত দেশের বিপণিবিতানগুলো বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি।

চিঠিতে বিজিএমইএ বলে, ‘দেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সরকার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ও এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প কারখানায় আগামীকাল বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।’

পৃথক বিবৃতিতে বিজিএমইএ বলেছে, বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠানে আগামীকাল এক দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দীনের স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে সারা দেশের বিপণিবিতান ও দোকানপাট বন্ধ রাখার অনুরোধ জানানো হয়।

ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিজিএমইএ ছাড়াও শোক জানিয়েছে দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), টেক্সটাইল মিলের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।

এ ছাড়া শোক জানিয়েছে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ), ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ), রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব), কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসসহ (বেসিস) আরও অনেক সংগঠন।

সংগঠনগুলো পৃথক বার্তায় বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে। তারা খালেদা জিয়ার রুহের মাগফিরাত চেয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারকে ধৈর্য ধারণ করতে বলেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল: আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪২
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জ্বালানি তেল প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের (এসএওসিএল) প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সোমবার দুদকের উপপরিচালক (মানি লন্ডারিং) মো. জাহাঙ্গীর আলম মামলাটি করেন।

মামলার আসামিরা হলেন এসএওসিএলের কর্মকর্তা (এইচআর) আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৭), উপব্যবস্থাপক (হিসাব) ও ডিপো ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহমুদুল হক (৪৫), গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন গিয়াস (৪৬), আজহার টেলিকমের স্বত্বাধিকারী মো. সোহেল রানা (৪৪) এবং মেসার্স মদিনা কোয়ালিটির স্বত্বাধিকারী মো. মাসুদ মিয়া (৫১)।

দুদক চট্টগ্রামের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের হিসাব থেকে প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বিভিন্নভাবে স্থানান্তর ও আত্মসাৎ করেন।

এজাহার থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসএওসিএলের এলসি-সংক্রান্ত লেনদেনের নামে প্রকৃত সরবরাহকারীর পরিবর্তে ভুয়া ও সম্পর্কহীন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে চেক ইস্যু করার বিষয় দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে। পরে এসব চেকের অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর কিংবা নগদে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো এলসি খোলা হয়নি এবং লেনদেনগুলো কোম্পানির জেভি-০৮ ও জেনারেল লেজারে অন্তর্ভুক্তও করা হয়নি।

অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাঁচটি চেকের মধ্যে তিনটির অর্থ গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজ, আজহার টেলিকম ও মদিনা কোয়ালিটির অ্যাকাউন্টে জমা হয় এবং বাকি দুটি চেকের অর্থ নগদে উত্তোলন করা হয়। চেক জমাদানকারী হিসেবে বারবার আব্দুল্লাহ আল মামুনের নাম পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট পেমেন্ট ভাউচারে নিরীক্ষা বিভাগের স্বাক্ষর না থাকাও অনিয়মের প্রমাণ হিসেবে উঠে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মুফতি ছাঈদ আহমাদ।

সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খাঁন এবং শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ। এ ছাড়া কাউন্সিলের অন্য সদস্যবৃন্দ সভায় অংশগ্রহণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যশোরের খেজুর রস: লক্ষ্য ১২০ কোটি টাকার গুড় উৎপাদন

জাহিদ হাসান, যশোর
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

শীতের রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই যশোরের গ্রামাঞ্চলে শুরু হয় ব্যস্ততা। খেজুরগাছের নিচে হাজির হন গাছিরা। আগের বিকেলে কাটা গাছের ‘চোখ’ বেয়ে সারা রাত মাটির হাঁড়িতে জমেছে সুমিষ্ট খেজুর রস। ভোরে সেই রস নামিয়ে শুরু হয় আরেক কর্মযজ্ঞ; চুলায় জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরির কাজ। বাড়ির নারীরাই মূলত এই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন। কয়েক ঘণ্টা জ্বালানোর পর তৈরি হয় সুস্বাদু খেজুর গুড় ও পাটালি।

শীত মৌসুম এলেই এমন দৃশ্য দেখা যায় খেজুর গুড়ের জেলা খ্যাত যশোরের প্রায় প্রতিটি গ্রামে। সম্প্রতি যশোরের খেজুর গুড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় এর ঐতিহ্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও নতুন করে সামনে এসেছে।

উৎপাদন ও বাজারের চিত্র

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে যশোরে প্রায় ১২০ কোটি টাকার খেজুর রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল করবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

বর্তমানে খেজুরের কাঁচা রস প্রতি মাটির হাঁড়ি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, দানা গুড় প্রতি কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা এবং পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারদর বাড়লেও গাছিরা বলছেন, শ্রম ও ঝুঁকির তুলনায় লাভ সীমিত।

গাছির সংকট বড় চ্যালেঞ্জ

যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের গাছি আজিবর প্রায় ৩৫ বছর ধরে খেজুর গাছ কাটছেন। তিনি বলেন, ‘আগে দেড় শ গাছ কাটতাম, এখন বয়সের কারণে ৩৫-৪০টার বেশি পারি না। রস ও গুড়ের দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু কাটার মতো গাছ কমে গেছে। আবার গাছ থাকলেও দক্ষ গাছির অভাব। এবার বেশি শীত পড়ায় রসও ভালো নামছে, গুড়ের উৎপাদনও বেশি।’

গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মনিরামপুর উপজেলার সরসকাটি গ্রামের গাছি অতিয়ারও প্রায় ৪০ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত। তিনি বলেন, এবার ৫০টা গাছ কাটছি। প্রতিদিন ৮-১০ কেজি গুড় তৈরি হয়। কাজটা খুব কষ্টের। তবে শীত মৌসুমে এই আয়েই পুরো বছরের সংসার চলে।

ই-কমার্সে বাড়ছে চাহিদা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যশোর জেলায় মোট খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫। এগুলোর মধ্যে চলতি মৌসুমে রস আহরণের উপযোগী গাছ রয়েছে ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি।

উৎপাদিত গুড় প্রথমে স্থানীয় হাটে বিক্রি হয়, পরে পাইকারদের মাধ্যমে তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। যশোরের খেজুর গুড় এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পাশাপাশি ই-কমার্স ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক উদ্যোক্তাদের হাত ধরে গুড় ও পাটালি সরাসরি ভোক্তার ঘরে পৌঁছানো হচ্ছে। এতে বাজার যেমন সম্প্রসারিত হচ্ছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান।

কৃষি বিভাগের উদ্যোগ

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, যশোরের খেজুর গুড়ের স্বাদ ও মানের কারণে চাহিদা সব সময় বেশি। এবার শীত বেশি হওয়ায় রসের পরিমাণ ও মান—দুটোই ভালো। চলতি মৌসুমে প্রায় ১২০ কোটি টাকার রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিরাপদ খেজুর রস এবং গুড় উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গাছিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত