Ajker Patrika

লেনদেন আড়াই লাখ কোটি

রোকন উদ্দীন, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ঈদ বাণিজ্য বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের জন্য যেমন একটি অপরিহার্য অংশ, তেমনি দেশের অর্থনীতির জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক। ঈদের আগের বাজারে বাণিজ্য যেমন তুঙ্গে পৌঁছায়, তেমনি এটি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার চিত্রও তুলে ধরে। যদিও দেশের অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র এবং স্বল্প আয়ের মধ্যে তারা জীবন যাপন করে, তবে ঈদকেন্দ্রিক কেনাকাটায় সবার অংশগ্রহণের ফলে প্রতিবছর অর্থনীতির প্রকৃত অবস্থার তুলনায় লেনদেনের পরিমাণ অনেক বেশি বেড়ে যায়। এই প্রবণতা প্রতিবছর তার সীমা ছাড়িয়ে যায়। এবারের ঈদও এর ব্যতিক্রম নয়। চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা, ব্যাপক সামাজিক বৈষম্য এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে মানুষ তবু বাজারে উন্মুখ হয়ে উঠেছে। মাসব্যাপী রোজা ও ঈদ উৎসবকে আরও বর্ণিল ও আনন্দমুখর করতে সবাই সাধ্যের সবটুকু উজাড় করে কেনাকাটায় যুক্ত হয়েছে। গ্রামে গ্রামে ঈদ উদ্‌যাপন করতে লাখ লাখ মানুষ ফিরেছে, যা বাজারের পরিবেশকে আরও প্রাণবন্ত করেছে।

বাজার বিশ্লেষকেরা জানিয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতি, বাজারের উজ্জীবিত অবস্থা, মূল্যস্ফীতির পতন এবং রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স প্রবাহ—সব মিলিয়ে এবারের ঈদ বাণিজ্য গত বছরের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারে; যা দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য আশাব্যঞ্জক সিগন্যাল হয়ে উঠতে পারে।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেছেন, ঈদ উপলক্ষে বাজারে চাঙাভাব দেখা গেছে, যা শপিং মল, বিপণিবিতান, ফুটপাত এবং অনলাইন মার্কেটপ্লেসে ক্রেতাদের সরব উপস্থিতিতে প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি আরও জানান, এলসি খোলার পরিস্থিতির উন্নতি এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ার ফলে পণ্যের সরবরাহ বেড়েছে, যার কারণে বাজারে অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধির চাপ কমে গেছে এবং এবারের কেনাকাটায় স্বাচ্ছন্দ্য ফিরে এসেছে।

ঈদ বাণিজ্য: বৃহত্তম অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের অংশ

ঈদ বাণিজ্য শুধু বাণিজ্যিক নয়, এটি একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইভেন্টের অংশও। এবারের ঈদ বাণিজ্য দেশের জন্য নয়, বরং একটি আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পরিবেশে পরিণত হয়েছে। রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স, মূল্যস্ফীতি হ্রাস এবং সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের ফলে বাজারে নতুন গতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে; বিশেষ করে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ায় ঈদ বাজারে চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, এবারের ঈদ বাণিজ্যে মোট ব্যবসা ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি হবে; যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। গত বছর এই লেনদেন ছিল ১ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকার। সমিতির হিসাব অনুযায়ী, এবারের ঈদ বাণিজ্যের মধ্যে শুধু পোশাকের বাজারে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ হাজার কোটি টাকা যোগ হতে পারে। নিত্যপণ্যের বাজারে এই অতিরিক্ত জোগান ৩০-৩৫ হাজার কোটি টাকা। ধনী মানুষদের দেওয়া জাকাত ও ফিতরা বাবদ ৩৮-৪০ হাজার কোটি টাকা আসছে। পরিবহন খাতে অতিরিক্ত বাণিজ্য প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা বাড়ছে। এ ছাড়া ঈদকে কেন্দ্র করে ভ্রমণ এবং বিনোদন খাতে ব্যয় হয় ৪-৫ হাজার কোটি টাকা।

এ ছাড়া প্রায় সাড়ে ১২ লাখ সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী, ৬০ লাখ দোকান কর্মচারী এবং তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের ৭০ লাখ শ্রমিক ঈদ বোনাস পাবেন, যা ঈদ অর্থনীতিতে যুক্ত হবে। পাশাপাশি প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা করে এসেছে। ঈদ সামনে রেখে প্রবাসীরা তাঁদের আত্মীয়স্বজনের জন্য বাড়তি ব্যয় মেটাতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা পাঠিয়েছেন, যা ঈদ অর্থনীতি চাঙা করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘রোজার শুরুতে মার্কেটগুলোতে বিক্রি কিছুটা কম ছিল, তবে মধ্য রোজার পর থেকে বিক্রি বাড়তে থাকে। আর ঈদের শেষ দিকে এসে মার্কেটে ক্রেতাদের এত ভিড় হয়েছে যে পা ফেলার জায়গা ছিল না। সরকারি ও বেসরকারি চাকরিজীবীরা বোনাস হাতে পাওয়ার পর বাজারে কেনাকাটা আরও বেড়ে গেছে।’ তিনি আশা প্রকাশ করেন, এবারের ঈদকেন্দ্রিক বাণিজ্য প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকা হবে। যদিও অনেক ব্যবসায়ী মনে করেন, আড়াই লাখ কোটি টাকা না হলেও এর কাছাকাছি বাণিজ্য হবে। তথ্যমতে, মধ্যবিত্ত শ্রেণির একটি পরিবার ঈদকে কেন্দ্র করে ন্যূনতম ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা ব্যয় করে, এবং তাদের সামর্থ্যের ওপর নির্ভর করে এই অঙ্ক আরও বাড়ে।

ঈদকেন্দ্রিক-বানিজ্য

মূল্যস্ফীতি এবং রেমিট্যান্স: অর্থনীতির মেরুদণ্ড

এবারের ঈদ বাণিজ্যকে গতিশীল করেছে দুটি বড় পরিবর্তন—মূল্যস্ফীতি হ্রাস এবং রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স প্রবাহ। গত বছরের ৯ শতাংশের ওপরে থাকা মূল্যস্ফীতি এ বছরের মার্চে ৯.৩২ শতাংশে নেমে এসেছে; যা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রধান কারণ। এর ফলে মানুষ ঈদ উপলক্ষে বড় আকারে কেনাকাটা করতে সক্ষম হয়েছে। এ ছাড়া ২০২৫ সালের প্রথম তিন মাসে প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্স রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে, ২৬ মার্চ পর্যন্ত এটি ২৯৪ কোটি ডলারে পৌঁছেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি। এই রেমিট্যান্স প্রবাহ দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করেছে এবং সাধারণ মানুষের হাতে অতিরিক্ত অর্থ আসায় তারা ঈদের বাজারে বেশি খরচ করতে পারছে।

সরবরাহ ব্যবস্থা: পণ্যের সহজলভ্যতা

এবারের ঈদ বাণিজ্যে পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। গত বছর ডলারের সংকটে কিছু পণ্যের সরবরাহে সমস্যা ছিল, তবে ২০২৫ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের উদ্যোগে আমদানির সমস্যা সমাধান হয়েছে এবং পণ্যের সরবরাহ বেড়েছে; বিশেষ করে খাদ্যপণ্য, পোশাক এবং উপহারসামগ্রী বেশি সরবরাহ করা হয়েছে। সরকারের পণ্য মজুত এবং মূল্য নিয়ন্ত্রণের কারণে বাজারে অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধির চাপ সৃষ্টি হয়নি এবং ব্যবসায়ীরা সংকট অনুভব করেননি, যা বাজারের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করেছে।

খাদ্যসামগ্রী, পোশাক এবং অন্যান্য পণ্যের চাহিদা

ঈদে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় পোশাকসামগ্রী। ঈদকেন্দ্রিক শীর্ষ ১০ পণ্যের কেনাকাটায় দেড় লাখ কোটি টাকার বাণিজ্য হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে পোশাক, জুতা-স্যান্ডেল, লুঙ্গি, গেঞ্জি, গামছা ও খাদ্যপণ্যের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। খাদ্যসামগ্রীর বিক্রি ৪০ হাজার কোটি টাকা হতে পারে এবং পোশাক খাতে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হবে। মূলত তরুণ প্রজন্মের ফ্যাশন ও ডিজাইনের প্রতি আগ্রহ এবং অনলাইন মার্কেটপ্লেসে বিক্রি বৃদ্ধির কারণে পোশাকশিল্পের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাজারে বিক্রি বেড়েছে।

সুপারশপ স্বপ্নের এমডি সাব্বির হাসান নাসির জানান, মাসখানেক আগে বিক্রি কমে যাওয়ার যে আশঙ্কা ছিল, তা মধ্য রমজানের আগে কেটে গেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় গত বছরের তুলনায় বিক্রি ১৮-২০ শতাংশ বেশি হয়েছে।

দেশীয় ফ্যাশন হাউস রঙ বাংলাদেশের স্বত্বাধিকারী সৌমিক দাস বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বাড়তি ভ্যাটের কারণে এবারের বিক্রির লক্ষ্য কিছুটা কম করা হয়েছে। তবে তাঁদের প্রত্যাশা, গত বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে এবং মধ্য রমজান থেকে বিক্রি বাড়তে শুরু করেছে।

ঈদ বাণিজ্য এবং কর্মসংস্থান

এবারের ঈদ বাণিজ্য শুধু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আনেনি, বরং এর মাধ্যমে বিভিন্ন খাতে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে। বড় বড় শপিং মল, দোকান এবং বিভিন্ন সেবামূলক খাতে শ্রমিক নিয়োগ করা হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন পণ্যের মজুত, প্যাকেজিং, পরিবহন ও বিক্রয় বিভাগে বিপুলসংখ্যক মানুষ কাজ করেছেন। দোকান মালিক সমিতি জানিয়েছে, এবারের ঈদে ১০ লাখের বেশি মানুষ প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থানে নিয়োজিত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ইইউ-যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে সম্ভাবনা জাপানে

রোকন উদ্দীন, ঢাকা
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা

ইউরোপ-আমেরিকার ওপর দীর্ঘদিনের নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসার তাগিদ এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। বৈশ্বিক বাণিজ্যে অস্থিরতা বাড়ায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত নতুন বাজার খুঁজছে, আর সেই অপ্রচলিত গন্তব্যগুলোর মধ্যে জাপান সবচেয়ে সম্ভাবনাময় হয়ে উঠছে। অথচ দেশটির ২২ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলারের বিশাল পোশাক আমদানি বাজারে বাংলাদেশের অংশ এখনো মাত্র ১ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ সাড়ে ৫ শতাংশ।

এই অবস্থান আরও স্পষ্ট হয় ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায়। ইউরোপের তৈরি পোশাক আমদানির প্রায় অর্ধেকই আসে বাংলাদেশ থেকে, আর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেও শীর্ষ সরবরাহকারীর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। তবু জাপানের মতো স্থিতিশীল ও উচ্চমূল্যের বাজারে বাংলাদেশ এখনো ব্যবহৃত সুযোগের তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে। পরিসংখ্যান তা-ই বলে—এখানে এখনো বড় জায়গা খালি রয়েছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যও সেই সম্ভাবনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখায়। ২০২৪ অর্থবছরে দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৩ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলার; যার মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি ১ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ জাপান এখন বাংলাদেশের ১২তম রপ্তানি গন্তব্য।

তবে চলতি অর্থবছরের গত কয়েক মাসের প্রবণতা বাজারের পরিবর্তন আরও স্পষ্ট করে। ইপিবির সর্বশেষ তথ্য বলছে, চলতি বছরের জুলাই-আগস্টে জাপানে রপ্তানি হয়েছে ২২ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার ডলার, যেখানে গত বছর একই সময়ে ছিল ১৯ কোটি ৩৯ লাখ ২০ হাজার ডলার। প্রবৃদ্ধি ১৫ দশমিক ৬০ শতাংশ। অস্ট্রেলিয়া এ সময়ে দ্বিতীয় বৃহৎ অপ্রচলিত বাজার হলেও সেখানে রপ্তানি কমেছে ৬ শতাংশ। ফলে জাপান এখন অপ্রচলিত রপ্তানি বাজারে সবচেয়ে দ্রুত বাড়তে থাকা গন্তব্য হিসেবে সামনে আসছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান হাসান আরিফ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অপ্রচলিত বাজারগুলোর মধ্যে এখন সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ও স্থিতিশীল একটি বাজার হলো জাপান। সরকারের পর্যালোচনায়ও বিষয়টি রয়েছে। এ সম্ভাবনাকে দ্রুত কাজে লাগাতে আগামী জানুয়ারির মধ্যে আমরা দেশটির সঙ্গে অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (ইপিএ) স্বাক্ষর করতে যাচ্ছি, যা সম্পন্ন হলে রপ্তানি আশানুরূপ বাড়ানো সম্ভব হবে।’

জাপানের এই উত্থান কাকতাল নয়। রপ্তানিকারকেরা বলছেন, ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি, সরবরাহ-ঝুঁকি ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বাড়ায় আমদানিকারকেরা নতুন বাজারের দিকে ঝুঁকছেন। আর জাপান এমন একটি বাজার, যেখানে মূল্য-সুবিধার পাশাপাশি গুণগত মান, কঠোর কমপ্লায়েন্স এবং দ্রুত বদলে যাওয়া ফ্যাশন-চাহিদার প্রতি গুরুত্ব বেশি। এসব মানদণ্ড পূরণ করতে পারলে বাজারটি দীর্ঘমেয়াদি ও নিশ্চিত প্রবৃদ্ধির সুযোগ দেয়।

কিন্তু এখানেই চ্যালেঞ্জ স্পষ্ট। জাপানি ক্রেতারা ছোট পরিমাণের অর্ডার দেন, মূল্য নিয়ে আগাম ছাড় পাওয়া সহজ নয়, আর প্রতিটি পণ্যের ক্ষেত্রে শতভাগ কমপ্লায়েন্স অপরিহার্য। এ বিষয়ে দেশের অন্যতম প্রস্তুতকারক টিম গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল্লাহিল নকিব জানান, ‘অর্ডারের কঠোর ইন্সপেকশন বাংলাদেশে জাপানের অর্ডার ধরার সবচেয়ে বড় বাধা। মান নিশ্চিত না হলে তারা একটিও পণ্য নেয় না।’

এই কঠোরতা একদিকে বাধা, আবার অন্যদিকে সুবিধা। কারণ যে প্রতিষ্ঠান একবার জাপানের মান ধরে রাখতে পারে, তাদের জন্য বাজারটি স্থিতিশীল থাকে। জাপানি ব্র্যান্ডগুলো সরবরাহকারী খুব সহজে বদলায় না, ফলে দীর্ঘ মেয়াদে স্থায়ী সম্পর্ক তৈরি হয়।

বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল মনে করেন, বৈশ্বিক উত্তেজনার এই সময়ে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ও উৎপাদনসক্ষমতা বাড়াতে পারলে অপ্রচলিত বাজারগুলোই ভবিষ্যতের বড় নিরাপত্তা হয়ে উঠবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

এসএমই মেলায় ১৬ কোটি টাকার অর্ডার পেলেন উদ্যোক্তারা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আট দিনব্যাপী ১২তম জাতীয় এসএমই পণ্য মেলায় ১৫ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করেছেন উদ্যোক্তারা। পণ্য বিক্রির পাশাপাশি ১৬ কোটি টাকার পণ্যের অর্ডার পেয়েছেন।

এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলনকেন্দ্রে অনুষ্ঠিত মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। আজ রোববার আয়োজিত সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ওবায়দুর রহমান।

এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মো. মুসফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান সায়েমা শাহীন সুলতানা, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নুজহাত ইয়াসমিন ও ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রুমী এ আলী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এর আগে ১১টি জাতীয় এসএমই পণ্য মেলায় প্রায় ৩ হাজার উদ্যোক্তা তাঁদের পণ্য বিক্রি করেছেন। ১১টি পণ্য মেলায় অংশগ্রহণকারী উদ্যোক্তাদের ৫৭ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি এবং প্রায় ৯৩ কোটি টাকার অর্ডার পেয়েছেন।

এবারের মেলায় অংশগ্রহণকারী ১০টি প্রতিষ্ঠানকে শ্রেষ্ঠ স্টলের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এ ছাড়া ছয় উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠানকে ‘জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার–২০২৫’ বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। বিজয়ীদের প্রত্যেকের হাতে ক্রেস্ট, সনদ ও চেক তুলে দেওয়া হয়।

শতভাগ দেশি পণ্যের সবচেয়ে বড় এই আয়োজন রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলনকেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়। ৭ ডিসেম্বর মেলার উদ্বোধন করেন শিল্প, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।

এবারের মেলায় অংশগ্রহণ করেছে প্রায় সাড়ে তিন শ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান, যাদের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা। এর মধ্যে তৈরি পোশাক খাতের সবচেয়ে বেশি ৭৪টি প্রতিষ্ঠান।

এ ছাড়া হস্ত ও কারুশিল্পের ৫৪টি, পাদুকা ও চামড়াজাত পণ্য খাতের ৪০টি; পাটজাত পণ্যের ৩৫টি; কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ পণ্যের ২৮টি; শতরঞ্জি, বাঁশ, বেত, হোগলা, সুপারিখোল ও কাঠের ১৫টি; খাদ্যপণ্যের ১৪টি; লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের ১৩টি; জুয়েলারি শিল্পের ৯টি; প্রসাধন খাতের সাতটি; তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক সেবা খাতের পাঁচটি; হারবাল–ভেষজশিল্পের পাঁচটি; প্লাস্টিক পণ্যের পাঁচটি; ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস খাতের তিনটি, ফার্নিচার খাতের তিনটি এবং অন্যান্য খাতের ১১টি স্টল।

মেলায় উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি সেবা প্রদানকারী শিল্প মন্ত্রণালয়ের আটটি দপ্তর-সংস্থাসহ সরকারের প্রায় ১৫টি সংস্থা, প্রায় ৩০টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়।

মেলায় এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ অর্থায়ন, পণ্য রপ্তানি বহুমুখীকরণ ও পণ্যের হালাল সনদ প্রাপ্তি, পেটেন্ট, শিল্প নকশা, ট্রেড মার্ক ও জি আই স্বীকৃতি, স্কিলস ইকোসিস্টেম বিষয়ে ছয়টি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আপেল, মাল্টা, কমলাসহ তাজা ফলের শুল্ক কমানোর সুপারিশ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আসন্ন রমজান মাস সামনে রেখে তাজা ফলের ওপর শুল্ক কমানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। খেজুরের মতোই এবার আপেল, কমলা, আঙুর, মেস্তারিন, নাশপাতি ইত্যাদি তাজা ফলকে ‘অত্যাবশ্যকীয় পণ্য’ হিসেবে চিহ্নিত করে অতিরিক্ত সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন।

সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) দেওয়া এক চিঠিতে এই সুপারিশ করা হয়। রমজান মাস সামনে রেখে নিত্যপণ্য বিবেচনায় এমন সুপারিশ করা হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, দেশের চাহিদার বড় অংশ আমদানি করা তাজা ফলের মাধ্যমে পূরণ হয়। গত কয়েক বছরে ডলারের মূল্য, শুল্ক বৃদ্ধিসহ নানা কারণে আমদানি করা ফলের দাম বেড়ে যায়। বর্তমানে আপেল, কমলা, মেস্তারিন, আঙুর ও নাশপাতি আমদানিতে মোট শুল্ক রয়েছে ১২১ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আনার আমদানিতে মোট শুল্ক-কর রয়েছে ১২৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

চিঠিতে আরও বলা হয়, আপেল, মাল্টা, আনার ইত্যাদি ফলের স্থানীয় উৎপাদন নেই; তাই এই উচ্চহারে শুল্ক-কর রাখার প্রয়োজনীয়তা সীমিত।

অন্যদিকে উচ্চহারে শুল্ক-কর আরোপের ফলে বৈধ পথে আমদানি কমে তা অবৈধ পথে আমদানিকে উৎসাহিত করতে পারে। এ ছাড়া ব্যবসায়ীদের মধ্যে অতিমাত্রায় বিভিন্ন রাসায়নিক ব্যবহারের প্রবণতাও বাড়তে পারে। উচ্চ শুল্ক-করের ফলে তাজা ফলের আমদানি কমার ধারা অব্যাহত থাকলে শুধু ভোক্তাসাধারণের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে না; ভবিষ্যতে রাজস্ব আহরণও কমে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

তাজা ফলকে ‘বিলাস পণ্য’ হিসেবে বিবেচনা করে এর ওপর ৩০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। তবে নিত্যপণ্য আইন, ১৯৫৬ অনুযায়ী খাদ্যপণ্য হিসেবে তাজা ফল ‘অত্যাবশ্যকীয় পণ্য’ বিধায় এর ওপর আরোপিত অতিরিক্ত সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার বা যৌক্তিক করা যেতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নির্বাচনে ভোটার ও রাজনীতিবিদের নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে: দেবপ্রিয়

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ২৯
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। ফাইল ছবি
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। ফাইল ছবি

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতিবিদেরা আরও সহিংসতা বা হামলার শিকার হবেন কি না এবং নির্বাচন কমিশন ও বর্তমান সরকার তাঁদের জন্য একটি সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারবে কি না এ নিয়ে বড় প্রশ্ন তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

তিনি বলেন, ‘দেশে শুধু ভোটাররাই নন, রাজনীতিবিদেরাও এখন বিপন্নতার মধ্যে রয়েছেন।’

বাংলাদেশ–চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ রিফর্ম ট্র্যাকার’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা। ছবি: আজকের পত্রিকা।
বাংলাদেশ–চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ রিফর্ম ট্র্যাকার’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা। ছবি: আজকের পত্রিকা।

আজ রোববার রাজধানীর বাংলাদেশ–চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ রিফর্ম ট্র্যাকার’-এর উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্যে এসব কথা বলেন সিপিডির ফেলো।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, ‘বিপন্ন জনগোষ্ঠীর প্রসঙ্গে সাধারণত ধর্মীয় সংখ্যালঘু, আদিবাসী সম্প্রদায় বা ভিন্ন মতাবলম্বীদের কথা উঠে আসে। তবে এর সঙ্গে বড় একটি বিষয় হিসেবে যুক্ত হয়েছে রাজনীতিবিদদের নিরাপত্তা। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতিবিদেরা আরও সহিংসতা বা হামলার শিকার হবেন কি না এবং নির্বাচন কমিশন ও বর্তমান সরকার তাঁদের জন্য একটি সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারবে কি না, এ নিয়ে বড় প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।’

ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর সাম্প্রতিক হামলার প্রসঙ্গে সিপিডির এই ফেলো বলেন, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে সহিংসতার পর এখন নিরাপদ নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিতের বিষয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য জানান, গত দেড় মাসে ‘বাংলাদেশ রিফর্ম ট্র্যাকার’ প্ল্যাটফর্ম দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাক্-নির্বাচনী সংলাপ আয়োজন করেছে। এসব সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আসন্ন নির্বাচন নিয়ে জনগণের প্রত্যাশা জানার চেষ্টা করা হয়েছে। এসব আলোচনার ভিত্তিতে একটি নাগরিক ইশতেহার প্রস্তুত করা হচ্ছে, যা শিগগিরই প্রকাশ করা হবে বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যেসব জায়গায় গিয়েছি, প্রায় সর্বত্রই নিরাপত্তার বিষয়টি খুব জোরালোভাবে উঠে এসেছে। একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করা যাবে কি না, এ বিষয়ে অনেকেই নিশ্চিত নন।’

সংস্কার এজেন্ডা প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অবক্ষয়ের অভিজ্ঞতা থেকেই বর্তমানে সংস্কার-সংক্রান্ত বিতর্কের ভিত তৈরি হয়েছে। তাঁর মতে, রাজনীতিবিদ, আমলা ও বড় ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গড়ে ওঠা একটি এলিট গোষ্ঠী প্রতিযোগিতামূলক রাজনীতিকে দুর্বল করেছে, যার ফলে সৃষ্টি হয়েছে প্রতিযোগিতাহীন অর্থনীতি।

তিনি বলেন, ‘এর মাধ্যমে গড়ে উঠেছে ক্রনি ক্যাপিটালিজম ও একটি অলিগার্কিক ব্যবস্থা, যেখানে নীতিনির্ধারণে স্বাধীনতা হারিয়ে গেছে।’

সংস্কার প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় বলেন, বাংলাদেশে সংস্কার নতুন কোনো বিষয় নয়। তবে বর্তমান উদ্যোগটি আলাদা, কারণ এটি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কমিশন ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার মাধ্যমে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এ সুযোগ তৈরিতে অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকার প্রশংসা করলেও তিনি বলেন, সংস্কার প্রক্রিয়ায় প্রথম দিকে যে গতি তৈরি হয়েছিল, তা ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়েছে।

সিপিডি ফেলো বলেন, ‘আমরা দেখেছি স্বচ্ছতা, সমন্বয় ও যোগাযোগ সব সময় পর্যাপ্ত ছিল না। আর শুধু পরিকল্পনার মাধ্যমে সংস্কার সফল করা সম্ভব নয়; এর জন্য প্রয়োজন নাগরিকদের ধারাবাহিক অংশগ্রহণ।’

তাঁর মতে, সংস্কার শুধু পরিকল্পনা বা উদ্দীপনার বিষয় নয়। সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হলে নাগরিকদের সচেতনভাবে সম্পৃক্ত থাকতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত