Ajker Patrika

বৈষম্য এড়ানোর উপায় কী

আবু তাহের খান
বৈষম্য এড়ানোর উপায় কী

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক বিরূপাক্ষ পাল তাঁর ‘মধ্যম আয়ের ফাঁদভীতি ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক সাম্প্রতিক এক নিবন্ধে নিম্নমধ্যম আয় থেকে উচ্চমধ্যম আয় হয়ে উচ্চ আয়ের দেশে রূপান্তরিত হওয়ার পথের সম্ভাব্য বাধা ও বাধা অতিক্রমের উপায় এবং এ নিয়ে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর দিক থেকে যুক্তিহীন কল্পকথা (myth) তৈরির চেষ্টার বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। আর তা করতে গিয়ে মধ্যম আয়ের কথিত ফাঁদ অতিক্রমণের চেষ্টায় অন্যান্য কতিপয় দেশের সাফল্য ও ব্যর্থতার উদাহরণ টেনে সেই সব দেশের অভিজ্ঞতার কথাও তিনি চমৎকারভাবে উল্লেখ করেছেন এবং তিনি এ-ও দেখিয়েছেন যে উত্তরণের এ পথযাত্রায় আসলে ‘ফাঁদ’ বলে কিছু নেই—প্রকৃতপক্ষে যা আছে তা হচ্ছে, জনগণের কাছে দায়বোধসম্পন্ন দক্ষ নেতৃত্বের আওতায় সুষ্ঠু অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা এবং সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বর্ধিত গতি সৃষ্টি ও সৃষ্ট গতি ধরে রাখার সামর্থ্য অর্জন।

এখন কথা হচ্ছে, বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের কল্পকথা মেনে হোক কিংবা যুক্তিশীল স্বাধীন চিন্তাতাড়িত অর্থনৈতিক কৌশল অনুসরণ করে হোক, অর্থনৈতিক উত্তরণের পথ তো আমাদের খুঁজতেই হবে। তবে সে পথের অনুসন্ধান করতে গিয়ে প্রথমেই বলা দরকার যে উল্লিখিত দুই প্রতিষ্ঠানের পরামর্শ মেনে মাথাপিছু আয়কে উন্নয়নের স্তর নির্ধারণের ভিত্তি হিসেবে গ্রহণের ধারণাটিই চরম ভ্রান্তিপূর্ণ। ফলে উল্লিখিত ধারণার ভিত্তিতে বাংলাদেশকে যে বর্তমানে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে নিম্নমধ্যম সারির দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে, সেটি বাস্তবে এর সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের নিম্নমধ্যম মানের জীবনযাপনের নিশ্চয়তা বিধান করতে পারছে কি? যদি না পেরে থাকে, তাহলে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের পরিচিতি এর সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের জন্য একটি ‘তকমা’ মাত্র এবং এই তকমা দেশের শাসকশ্রেণি বা আন্তর্জাতিক দাতাদের নিজ নিজ অবস্থানে টিকে থাকার প্রচারকৌশল হিসেবে সুবিধাজনক হলেও সাধারণ মানুষের কাছে এই স্তরোত্তরণের গুরুত্ব খুবই সামান্য।অবশ্য এরপরও এককেন্দ্রিক পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থার আওতায় এটাই চলমান বাস্তবতা যে বিশ্বব্যাংক নির্দেশিত স্তরকাঠামো অনুসরণ করেই বাংলাদেশসহ এর সদস্যদেশগুলো তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করবে। কিন্তু তাই বলে সব দেশেই এর ফলাফল একই রূপ হবে না। কোন দেশে তা কিরূপ হবে, সেটি নির্ভর করবে ওই দেশের সাধারণ জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও প্রয়োজনের প্রতি ওই রাষ্ট্র কতটুকু মনোযোগী ও মমতাবান, তার ওপর। রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকেরা যদি বিত্তবান ব্যবসায়ী শ্রেণির স্বার্থরক্ষায় অধিক মনোযোগী হন, তাহলে উচ্চতর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার হয়তো ঠিকই রক্ষা পাবে, কিন্তু তাতে সাধারণ মানুষের স্বার্থ রক্ষা পাবে খুবই সামান্য। অন্যদিকে রাষ্ট্র যদি সাধারণ মানুষের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে চায়, তাহলে প্রবৃদ্ধির অঙ্কে যৎসামান্য ঘাটতি থাকলেও বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে তা যে বর্ধিত স্বাচ্ছন্দ্য ও পরিতৃপ্তি এনে দেবে, তার উপযোগ মূল্য প্রবৃদ্ধির খানিক ঘাটতির তুলনায় অনেক অনেক বেশি।

উপরিউক্ত পরিস্থিতিতে যেকোনো জবাবদিহিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেরই কর্তব্য হবে শেষোক্ত কৌশলটি অবলম্বন করা, অর্থাৎ সাধারণ জনগণের স্বার্থের পক্ষে দাঁড়ানো। কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকা শাসকের, যাঁদের সিংহভাগই সৎ-অসৎ ব্যবসায়ী ও অন্যান্য বিত্তবান শ্রেণি থেকে উঠে আসা, নিজস্ব শ্রেণিচরিত্রের কারণে তা করবেন না বলেই মনে হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও ব্যবসায়ী ও বিত্তবান শ্রেণির একচ্ছত্র বিনিয়োগ ও একচেটিয়া মুনাফার সুবাদে নিম্নমধ্যম থেকে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার জন্য বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যে ধরনের গতি সঞ্চারিত হওয়া দরকার, তা ঠিকই হয়ে যাবে বলে ধারণা করা চলে। কিন্তু অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফল সাধারণ মানুষের পাতে যৌক্তিক হারে ভাগ না হওয়ার বিষয়টি যে গণমুখী পরিকল্পনা ও নীতিকাঠামোর অভাবে দীর্ঘদিন ধরেই চিলকার বন্দের কানাওয়ালার ফাঁদে পড়ে ঘুরপাক খাচ্ছে, তা থেকে শিগগিরই উদ্ধার না পাওয়ার বিষয়টি এখন প্রায় নিশ্চিত।

তাহলে শেষ পর্যন্ত বিষয়টি দাঁড়াচ্ছে এই, বিত্তবান সুবিধাবাদী বণিকশ্রেণি দ্বারা পরিবেষ্টিত রাষ্ট্র এখনো আগের মতোই তথাকথিত প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয়কেই ‘উন্নয়ন’ বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখবে এবং এর ফলে মাথাপিছু আয়ের হিসাবে নিম্নমধ্যম থেকে উচ্চমধ্যম আয়ের স্তরে উন্নীত হওয়ার বিষয়টি হয়তো ঠিকই ঘটে যাবে। কিন্তু গৃহীত উন্নয়নকৌশলের আওতায় ক্রমবর্ধমান বৈষম্য শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে ঠেকবে, তা নিশ্চিত করে বলা খুবই মুশকিল। তবে যেটি বলা সম্ভব তা হচ্ছে, নিছক মাথাপিছু আয়কেই উন্নয়নের মাপকাঠি ধরে নিয়ে রাষ্ট্র যে অর্থনৈতিক কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে, তাতে বৈষম্য শুধু টিকেই থাকবে না—ক্রমান্বয়ে তা আরও বৃদ্ধি পাবে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষের জন্য তা অধিকতর কষ্ট ও দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

এ অবস্থায় বাংলাদেশ যদি তার সম্পদের বণ্টনব্যবস্থাকে অধিকতর যৌক্তিক ও সমতাপূর্ণ করে তোলার লক্ষ্যে তার অর্থনৈতিক কৌশলকে 
ঢেলে সাজাতে উদ্যোগী না হয়, তাহলে তা শুধু বড় ভুলই করা হবে না—সেই ভুলের খেসারত হিসেবে এখানে এমন নানা মাত্রিক সামাজিক সংকট তৈরি হতে পারে, যা উন্নয়নের সব নজির ও অহমিকাকেই ম্লান করে দিতে পারে।

এ অবস্থায় বাংলাদেশকে যদি তার নিজস্ব জনগণের চাহিদা ও আকাঙ্ক্ষাকে বিবেচনায় রেখে টেকসই উন্নয়নের পথে এগোতে হয়, তাহলে শুধু বিত্তবান শ্রেণির আয় ও মুনাফানির্ভর উচ্চতর প্রবৃদ্ধির ওপর নির্ভর করলে হবে না; বরং বর্তমান উন্নয়নের ধারায় সৃষ্ট ক্রমবর্ধমান বৈষম্যকে ন্যূনতম সহনশীল পর্যায়ে নামিয়ে আনারও চেষ্টা করতে হবে।

আবু তাহের খান, সাবেক পরিচালক, বিসিক, শিল্প মন্ত্রণালয় 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

খালেদা জিয়ার জানাজা কাল, দাফন জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার মৃত্যু

বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আগামীকাল বুধবার দেশের সব পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে পোশাকমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। আজ মঙ্গলবার পোশাকমালিকদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই অনুরোধ জানানো হয়। একই সঙ্গে জানাজার আগপর্যন্ত দেশের বিপণিবিতানগুলো বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি।

চিঠিতে বিজিএমইএ বলে, ‘দেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সরকার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ও এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প কারখানায় আগামীকাল বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।’

পৃথক বিবৃতিতে বিজিএমইএ বলেছে, বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠানে আগামীকাল এক দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দীনের স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে সারা দেশের বিপণিবিতান ও দোকানপাট বন্ধ রাখার অনুরোধ জানানো হয়।

ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিজিএমইএ ছাড়াও শোক জানিয়েছে দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), টেক্সটাইল মিলের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।

এ ছাড়া শোক জানিয়েছে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ), ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ), রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব), কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসসহ (বেসিস) আরও অনেক সংগঠন।

সংগঠনগুলো পৃথক বার্তায় বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে। তারা খালেদা জিয়ার রুহের মাগফিরাত চেয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারকে ধৈর্য ধারণ করতে বলেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

খালেদা জিয়ার জানাজা কাল, দাফন জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল: আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪২
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জ্বালানি তেল প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের (এসএওসিএল) প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সোমবার দুদকের উপপরিচালক (মানি লন্ডারিং) মো. জাহাঙ্গীর আলম মামলাটি করেন।

মামলার আসামিরা হলেন এসএওসিএলের কর্মকর্তা (এইচআর) আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৭), উপব্যবস্থাপক (হিসাব) ও ডিপো ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহমুদুল হক (৪৫), গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন গিয়াস (৪৬), আজহার টেলিকমের স্বত্বাধিকারী মো. সোহেল রানা (৪৪) এবং মেসার্স মদিনা কোয়ালিটির স্বত্বাধিকারী মো. মাসুদ মিয়া (৫১)।

দুদক চট্টগ্রামের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের হিসাব থেকে প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বিভিন্নভাবে স্থানান্তর ও আত্মসাৎ করেন।

এজাহার থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসএওসিএলের এলসি-সংক্রান্ত লেনদেনের নামে প্রকৃত সরবরাহকারীর পরিবর্তে ভুয়া ও সম্পর্কহীন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে চেক ইস্যু করার বিষয় দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে। পরে এসব চেকের অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর কিংবা নগদে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো এলসি খোলা হয়নি এবং লেনদেনগুলো কোম্পানির জেভি-০৮ ও জেনারেল লেজারে অন্তর্ভুক্তও করা হয়নি।

অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাঁচটি চেকের মধ্যে তিনটির অর্থ গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজ, আজহার টেলিকম ও মদিনা কোয়ালিটির অ্যাকাউন্টে জমা হয় এবং বাকি দুটি চেকের অর্থ নগদে উত্তোলন করা হয়। চেক জমাদানকারী হিসেবে বারবার আব্দুল্লাহ আল মামুনের নাম পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট পেমেন্ট ভাউচারে নিরীক্ষা বিভাগের স্বাক্ষর না থাকাও অনিয়মের প্রমাণ হিসেবে উঠে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

খালেদা জিয়ার জানাজা কাল, দাফন জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মুফতি ছাঈদ আহমাদ।

সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খাঁন এবং শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ। এ ছাড়া কাউন্সিলের অন্য সদস্যবৃন্দ সভায় অংশগ্রহণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

খালেদা জিয়ার জানাজা কাল, দাফন জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যশোরের খেজুর রস: লক্ষ্য ১২০ কোটি টাকার গুড় উৎপাদন

জাহিদ হাসান, যশোর
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

শীতের রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই যশোরের গ্রামাঞ্চলে শুরু হয় ব্যস্ততা। খেজুরগাছের নিচে হাজির হন গাছিরা। আগের বিকেলে কাটা গাছের ‘চোখ’ বেয়ে সারা রাত মাটির হাঁড়িতে জমেছে সুমিষ্ট খেজুর রস। ভোরে সেই রস নামিয়ে শুরু হয় আরেক কর্মযজ্ঞ; চুলায় জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরির কাজ। বাড়ির নারীরাই মূলত এই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন। কয়েক ঘণ্টা জ্বালানোর পর তৈরি হয় সুস্বাদু খেজুর গুড় ও পাটালি।

শীত মৌসুম এলেই এমন দৃশ্য দেখা যায় খেজুর গুড়ের জেলা খ্যাত যশোরের প্রায় প্রতিটি গ্রামে। সম্প্রতি যশোরের খেজুর গুড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় এর ঐতিহ্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও নতুন করে সামনে এসেছে।

উৎপাদন ও বাজারের চিত্র

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে যশোরে প্রায় ১২০ কোটি টাকার খেজুর রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল করবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

বর্তমানে খেজুরের কাঁচা রস প্রতি মাটির হাঁড়ি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, দানা গুড় প্রতি কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা এবং পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারদর বাড়লেও গাছিরা বলছেন, শ্রম ও ঝুঁকির তুলনায় লাভ সীমিত।

গাছির সংকট বড় চ্যালেঞ্জ

যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের গাছি আজিবর প্রায় ৩৫ বছর ধরে খেজুর গাছ কাটছেন। তিনি বলেন, ‘আগে দেড় শ গাছ কাটতাম, এখন বয়সের কারণে ৩৫-৪০টার বেশি পারি না। রস ও গুড়ের দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু কাটার মতো গাছ কমে গেছে। আবার গাছ থাকলেও দক্ষ গাছির অভাব। এবার বেশি শীত পড়ায় রসও ভালো নামছে, গুড়ের উৎপাদনও বেশি।’

গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মনিরামপুর উপজেলার সরসকাটি গ্রামের গাছি অতিয়ারও প্রায় ৪০ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত। তিনি বলেন, এবার ৫০টা গাছ কাটছি। প্রতিদিন ৮-১০ কেজি গুড় তৈরি হয়। কাজটা খুব কষ্টের। তবে শীত মৌসুমে এই আয়েই পুরো বছরের সংসার চলে।

ই-কমার্সে বাড়ছে চাহিদা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যশোর জেলায় মোট খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫। এগুলোর মধ্যে চলতি মৌসুমে রস আহরণের উপযোগী গাছ রয়েছে ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি।

উৎপাদিত গুড় প্রথমে স্থানীয় হাটে বিক্রি হয়, পরে পাইকারদের মাধ্যমে তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। যশোরের খেজুর গুড় এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পাশাপাশি ই-কমার্স ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক উদ্যোক্তাদের হাত ধরে গুড় ও পাটালি সরাসরি ভোক্তার ঘরে পৌঁছানো হচ্ছে। এতে বাজার যেমন সম্প্রসারিত হচ্ছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান।

কৃষি বিভাগের উদ্যোগ

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, যশোরের খেজুর গুড়ের স্বাদ ও মানের কারণে চাহিদা সব সময় বেশি। এবার শীত বেশি হওয়ায় রসের পরিমাণ ও মান—দুটোই ভালো। চলতি মৌসুমে প্রায় ১২০ কোটি টাকার রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিরাপদ খেজুর রস এবং গুড় উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গাছিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

খালেদা জিয়ার জানাজা কাল, দাফন জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত