Ajker Patrika

৯ হাই-টেক পার্কে ভাড়া ও বিল বকেয়া ২৭ কোটি টাকার বেশি

  • বকেয়ার শীর্ষে সিলেটের পার্ক, দ্বিতীয় কালিয়াকৈর হাই-টেক পার্ক
  • কালিয়াকৈরে এক প্রতিষ্ঠানেই বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ৫ কোটি ২০ লাখ
  • বকেয়া পরিশোধ না করলে মামলা করবে হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ
অর্চি হক, ঢাকা 
হাইটেক পার্কের মডেল
হাইটেক পার্কের মডেল

দেশের নয়টি হাই-টেক পার্কে জায়গা বরাদ্দ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ভাড়া ও ইউটিলিটি বিল বকেয়া ২৭ কোটি টাকার বেশি। টানা চার বছর ভাড়া দেয়নি এমন প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাব খাটিয়ে অনেক প্রতিষ্ঠান ভাড়া ও ইউটিলিটি বিল দেয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ও সব বকেয়া আদায় হচ্ছে না।

জায়গা বরাদ্দ পাওয়া বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের দাবি, হাই-টেক পার্কে যেসব সুযোগ-সুবিধা থাকার কথা, সেগুলো পাচ্ছে না।

বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ বলেছে, ভাড়া ও ইউটিলিটি বিল বকেয়া রাখা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কয়েকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। এরপরও যারা বকেয়া পরিশোধ করছে না, তাদের বিরুদ্ধে আইন মেনে মামলা করা হবে।

বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের অধীনে দেশের বিভিন্ন স্থানে হাই-টেক পার্ক রয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) খাতকে রপ্তানি আয়ের অন্যতম উৎস হিসেবে গড়ে তুলতে বিভিন্ন জেলায় হাই-টেক পার্ক নির্মাণ করেছিল সাবেক আওয়ামী লীগ সরকার। এরই মধ্যে ১১টি পার্কে বিনিয়োগকারীদের জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হলেও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক কার্যক্রম একেবারে কম। ভাড়া, বিল বকেয়াসহ পার্কগুলোর ক্ষেত্রে রয়েছে নানা অনিয়মের অভিযোগ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, গত ডিসেম্বরের তথ্য অনুযায়ী, নয়টি হাই-টেক পার্কে জায়গা বরাদ্দ পাওয়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বকেয়া ভাড়া ও ইউটিলিটি বিলের পরিমাণ ২৭ কোটি টাকার বেশি। গাজীপুরের কালিয়াকৈর হাই-টেক পার্কে জায়গা বরাদ্দ পাওয়া ৪৩ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭টির কাছে ভাড়া ও সার্ভিস চার্জ বাবদ বকেয়া ১ কোটি ৮৩ লাখ ৮১ হাজার টাকা। বাকি ৪০ প্রতিষ্ঠানের কাছে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ৬ কোটি ৭৭ লাখ ৩ হাজার টাকা। এর মধ্যে টেকনোসিটি লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ৫ কোটি ২০ লাখ ৩৯ হাজার টাকা। সামিট টেকনোপলিশ লিমিটেডের বকেয়া ৪৫ লাখ ৬৩ হাজার টাকা।

যশোর সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের অধীনে হলেও এর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টেকসিটি বাংলাদেশ লিমিটেডকে। এই পার্কে জায়গা বরাদ্দ পাওয়া ৫৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৪টির বকেয়া ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ ৪ কোটি ৯৫ লাখ ১২ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভাড়া বকেয়া ২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ২ কোটি ১০ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। সর্বোচ্চ ৩৫ লাখ ৪৪ হাজার টাকা বকেয়া উৎসব টেকনোলজি লিমিটেডের। প্রতিষ্ঠানটি ৪৭ মাস ধরে ভাড়া এবং ৪৯ মাস ধরে বিদ্যুৎ বিল দিচ্ছে না। জেএসআর আইটি ও আনিকা আইটি কর্নার নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের ৪৩ মাসের ভাড়া বকেয়া। জেসিআর আইটির মোট বকেয়া ৭ লাখ ২৮ হাজার টাকা এবং আনিকা আইটির বকেয়া ১৫ লাখ ১৩ হাজার টাকা।

যশোর সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা ফিরোজ আহমেদ বলেন, ভাড়া তোলা এবং পার্ক পরিচালনার দায়িত্ব টেক সিটির। কারা বকেয়া পরিশোধ করছে না, কেন করছে না, এটা ওরা বলতে পারবে।

টেকসিটি বাংলাদেশ লিমিটেডের এজিএম মো. কামরুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা ভাড়া আদায়ে প্রতিনিয়ত নোটিশ দিই। চার বছরের মতো যাদের বকেয়া আছে, তাদের সঙ্গে কিস্তিতে বকেয়া পরিশোধের সমঝোতা হয়েছে।

সিলেটের হাই-টেক পার্কে ১৩ প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওনা ৮ কোটি ৯৫ লাখ ২৯ হাজার টাকা। এর মধ্যে র‍্যাংগ্‌স ইলেকট্রনিকসের কাছেই বকেয়া ৬ কোটি ২২ লাখ ৯১ হাজার টাকা।

সিলেট হাই-টেক পার্কের উপসহকারী প্রকৌশলী ফারুক হোসেন জানান, স্পেস রেট নিয়ে জটিলতার কারণে র‍্যাংগ্‌স ইলেকট্রনিকসের সম্পূর্ণ বকেয়া পরিশোধ হচ্ছে না। অনেক প্রতিষ্ঠান জায়গা বরাদ্দ পেলেও এখনো পার্কে কার্যক্রম শুরু করেনি। তাই তাদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করা যাচ্ছে না।

চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে ১৫ প্রতিষ্ঠানের কাছে মোট বকেয়া ১ কোটি ৯৭ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভাড়া বকেয়া ১ কোটি ৭৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকা এবং বকেয়া বিদ্যুৎ বিল ২৩ লাখ ৯১ হাজার টাকা।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে জায়গা বরাদ্দ পাওয়া ২২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৪টির কাছে মোট বকেয়া ২ কোটি ৫২ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। তবে পার্কের সহকারী পরিচালক শাহরিয়ার আল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ভাড়া পরিশোধ শুরু করেছে। তবে সংস্কারকাজের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে জায়গা ছাড়তে বলা হয়েছে। ১০টির মতো প্রতিষ্ঠান চলে গেছে। কিছু বকেয়া পরিশোধ হয়েছে। বর্তমানে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকার মতো পাওনা আছে। সর্বোচ্চ বকেয়া ভারগো কন্ট্রাক্ট সেন্টার সার্ভিসেসের কাছে, ৩৯ লাখ টাকা। মার্স সল্যুশনের কাছে পাওনা ৩৫ লাখ টাকা। তারা দু-এক দিনে কিছু টাকা পরিশোধের কথা জানিয়েছে।

রাজশাহী হাই-টেক পার্কে ৬ প্রতিষ্ঠানের বকেয়া ৬৬ লাখ ৫২ হাজার টাকা। রাজশাহীর আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টারে ৫ প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওনা ১১ লাখ ৫৩ হাজার টাকা।

নাটোরের আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টারে ১০ প্রতিষ্ঠানের ভাড়া বকেয়া ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা। বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ৬৮ হাজার টাকা।

খুলনার আইটি অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার, কুয়েটে ৭ প্রতিষ্ঠানের বকেয়া ৬ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভাড়া বকেয়া ৪ লাখ ১ হাজার, সার্ভিস চার্জ ২ লাখ ১৫ হাজার, বিদ্যুৎ বিল ৩৫ হাজার ও পানির বিল বকেয়া ২ হাজার টাকা।

গত বছরের জুলাইয়ে জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, ভাড়া আদায়ে অসংগতিসহ নানা অনিয়মে হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ক্ষতি হয়েছে অর্ধশত কোটি টাকার বেশি।

আশানুরূপ বিনিয়োগ না এলেও বিগত সরকার আরও ১২ জেলায় হাই-টেক পার্ক নির্মাণ প্রকল্পের জন্য প্রায় ১ হাজার ৮৪৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল। তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ওই সরকারের পতনের পর দায়িত্বে আসা অন্তর্বর্তী সরকার আইসিটি খাতে দুর্নীতি ও অনিয়ম তদন্তে করা কমিটির পর্যালোচনার ভিত্তিতে এই ১২টি পার্কের মধ্যে চারটির নির্মাণ বন্ধ করেছে।

সার্বিক বিষয়ে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম আমিরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিভিন্ন হাই-টেক পার্কে যাঁরা ভাড়া ও ইউটিলিটি বিল বকেয়া রেখেছেন, তাঁদের আমরা কয়েকবার চিঠি দিয়েছি। এরপরও যাঁরা বকেয়া শোধ করছেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে আইন মেনে মামলা করা হবে।’ তিনি বলেন, কারও বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে এবং তা প্রমাণিত হলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যশোরের খেজুর রস: লক্ষ্য ১২০ কোটি টাকার গুড় উৎপাদন

জাহিদ হাসান, যশোর
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

শীতের রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই যশোরের গ্রামাঞ্চলে শুরু হয় ব্যস্ততা। খেজুরগাছের নিচে হাজির হন গাছিরা। আগের বিকেলে কাটা গাছের ‘চোখ’ বেয়ে সারা রাত মাটির হাঁড়িতে জমেছে সুমিষ্ট খেজুর রস। ভোরে সেই রস নামিয়ে শুরু হয় আরেক কর্মযজ্ঞ; চুলায় জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরির কাজ। বাড়ির নারীরাই মূলত এই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন। কয়েক ঘণ্টা জ্বালানোর পর তৈরি হয় সুস্বাদু খেজুর গুড় ও পাটালি।

শীত মৌসুম এলেই এমন দৃশ্য দেখা যায় খেজুর গুড়ের জেলা খ্যাত যশোরের প্রায় প্রতিটি গ্রামে। সম্প্রতি যশোরের খেজুর গুড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় এর ঐতিহ্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও নতুন করে সামনে এসেছে।

উৎপাদন ও বাজারের চিত্র

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে যশোরে প্রায় ১২০ কোটি টাকার খেজুর রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল করবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

বর্তমানে খেজুরের কাঁচা রস প্রতি মাটির হাঁড়ি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, দানা গুড় প্রতি কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা এবং পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারদর বাড়লেও গাছিরা বলছেন, শ্রম ও ঝুঁকির তুলনায় লাভ সীমিত।

গাছির সংকট বড় চ্যালেঞ্জ

যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের গাছি আজিবর প্রায় ৩৫ বছর ধরে খেজুর গাছ কাটছেন। তিনি বলেন, ‘আগে দেড় শ গাছ কাটতাম, এখন বয়সের কারণে ৩৫-৪০টার বেশি পারি না। রস ও গুড়ের দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু কাটার মতো গাছ কমে গেছে। আবার গাছ থাকলেও দক্ষ গাছির অভাব। এবার বেশি শীত পড়ায় রসও ভালো নামছে, গুড়ের উৎপাদনও বেশি।’

গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মনিরামপুর উপজেলার সরসকাটি গ্রামের গাছি অতিয়ারও প্রায় ৪০ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত। তিনি বলেন, এবার ৫০টা গাছ কাটছি। প্রতিদিন ৮-১০ কেজি গুড় তৈরি হয়। কাজটা খুব কষ্টের। তবে শীত মৌসুমে এই আয়েই পুরো বছরের সংসার চলে।

ই-কমার্সে বাড়ছে চাহিদা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যশোর জেলায় মোট খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫। এগুলোর মধ্যে চলতি মৌসুমে রস আহরণের উপযোগী গাছ রয়েছে ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি।

উৎপাদিত গুড় প্রথমে স্থানীয় হাটে বিক্রি হয়, পরে পাইকারদের মাধ্যমে তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। যশোরের খেজুর গুড় এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পাশাপাশি ই-কমার্স ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক উদ্যোক্তাদের হাত ধরে গুড় ও পাটালি সরাসরি ভোক্তার ঘরে পৌঁছানো হচ্ছে। এতে বাজার যেমন সম্প্রসারিত হচ্ছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান।

কৃষি বিভাগের উদ্যোগ

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, যশোরের খেজুর গুড়ের স্বাদ ও মানের কারণে চাহিদা সব সময় বেশি। এবার শীত বেশি হওয়ায় রসের পরিমাণ ও মান—দুটোই ভালো। চলতি মৌসুমে প্রায় ১২০ কোটি টাকার রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিরাপদ খেজুর রস এবং গুড় উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গাছিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামি ১০ ও সরকারি ৬ ব্যাংক: ঋণের অর্ধেকের বেশি অনাদায়ি

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ২৭
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা

দেশের ব্যাংকিং খাতের ভেতরে জমে থাকা অনিয়ম, রাজনৈতিক আশ্রয় ও কৃত্রিম হিসাবের পর্দা চলতি বছর যেন একে একে সরে যেতে শুরু করেছে। আর তাতেই সামনে এসেছে এক ভয়াবহ বাস্তবতা। সরকারি ও শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণের ভারে এখন কার্যত দিশেহারা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে ৪৯ দশমিক ৬৫ শতাংশে, আর ইসলামি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে তা আরও বেশি—৫৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশে পৌঁছেছে। অর্থাৎ, এই দুটি খাতেই বিতরণ করা ঋণের অর্ধেকের বেশি অনাদায়ি হয়ে পড়েছে। যেখানে বিশেষায়িত ব্যাংকের খেলাপির হার ৪১ দশমিক ৯৫ ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপির হার মাত্র ৪ দশমিক ৯২ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, শরিয়াহভিত্তিক ১০টি ইসলামি ব্যাংক মোট ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা ঋণ বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে ২ লাখ ৮৩ হাজার ৫৫ কোটি টাকা। হিসাব বলছে, প্রতি ১০ টাকার প্রায় ৬ টাকাই এখন আদায় অনিশ্চিত। সেই তুলনায় শরিয়াহসহ দেশীয় বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ লাখ ৬৩ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এই তুলনাতেই স্পষ্ট, খেলাপির বোঝা এককভাবে সবচেয়ে বেশি ইসলামি ব্যাংকগুলোর ঘাড়েই।

সরকারি ছয় ব্যাংকের অবস্থাও খুব একটা ভিন্ন নয়। এসব ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা। মোট বিতরণ করা ঋণের প্রায় অর্ধেকই সেখানে অনাদায়ি। ব্যাংকার ও বিশ্লেষকদের মতে, এই সংকট রাতারাতি তৈরি হয়নি। বছরের পর বছর ধরে দুর্বল তদারকি, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং ইচ্ছাকৃত খেলাপিকে আড়াল করার প্রবণতা ধীরে ধীরে ব্যাংকগুলোকে এই জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন, খেলাপি ঋণের এত উচ্চ হার শুধু ব্যাংকিং খাতের ভেতরের সমস্যা নয়, এটি সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য বড় ঝুঁকি। ব্যাংকগুলো নতুন ঋণ দিতে পারছে না, বিনিয়োগ কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ছে, শিল্প-কারখানার সম্প্রসারণ থেমে যাচ্ছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে কর্মসংস্থানে। তাঁর মতে, খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং ঋণ আদায়ে বাস্তবসম্মত উদ্যোগ ছাড়া পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব নয়।

ইসলামি ব্যাংকিং খাতে এস আলম, নাসা ও বেক্সিমকো গ্রুপের নাম বারবার আলোচনায় এসেছে। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, দীর্ঘদিন সরকারি মদদে এসব গ্রুপ বিপুল ঋণ নিয়ে খেলাপি হলেও তা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পায়নি। এখন সেই বাস্তবতা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট।

সামগ্রিকভাবে দেশের ব্যাংকিং খাতের চিত্র আরও উদ্বেগজনক। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১৮ লাখ ৩ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে প্রায় ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, বিগত সরকারের টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে খেলাপি ঋণ কম দেখানোর যে অপচেষ্টা ছিল, তা এখন ভেঙে পড়েছে। সঠিক হিসাব সামনে আসায় হার ৩৬ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছেছে, যা বাস্তবতারই প্রতিফলন। তিনি আবারও শীর্ষ ১০ খেলাপির জন্য আলাদা ট্রাইব্যুনালের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, আগের সরকারের আমলে লুকিয়ে রাখা খেলাপি ঋণ প্রকাশ পাওয়ায় এই হার বেড়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন ঋণ আদায়ে কঠোর নির্দেশনার কারণে আগের তুলনায় আদায় বেড়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ছয় মাসে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইল ছবি
বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইল ছবি

ডলার এখন রেমিট্যান্স, রপ্তানি, হুন্ডি নিয়ন্ত্রণ—সবকিছুর সঙ্গে জড়িয়ে আছে। তাই বাজারে ডলার হাতছাড়া হওয়ার ভয়ে সবাই চুপ। এই ডলারের সরবরাহ ও দাম স্থিতিশীল রাখার পাশাপাশি পুরো বৈদেশিক মুদ্রার ভারসাম্য ঠিক রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়মিত বিরতিতে ডলার কিনছে। সেই ধারাবাহিকতায় শুধু চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ প্রসঙ্গে আজকের পত্রিকাকে জানান, ডিসেম্বর মাসে কেনা ডলারের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, ৯২ কোটি ডলার এবং চলতি অর্থবছর ধরে মোট কেনা হয়েছে ৩ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। জুলাইয়ে প্রথম ডলার কেনা হয়েছিল ৪৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার, আগস্টে ৪৫ কোটি ৪০ লাখ, সেপ্টেম্বরেই তা বেড়ে ৯২ কোটি ৯০ লাখে পৌঁছায়। এরপর অক্টোবর ও নভেম্বরে অবশ্য অনেকটাই কমে ১৪ কোটি ২০ লাখ এবং ৫ কোটি ৪০ লাখে নেমে আসে। ডিসেম্বরেই তার বড় উল্লম্ফন ঘটে, কেনার পরিমাণ দাঁড়ায় ৯২ কোটি ১০ লাখ ডলারে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি, হুন্ডি নিয়ন্ত্রণ, ব্যাংকিং চ্যানেলের শক্তিশালীকরণ এবং অনলাইনে আন্তর্জাতিক পণ্যের বাজার মনিটরিংয়ের ফলে বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে। এ ছাড়া ওভার ও আন্ডার ইনভয়েসিং বন্ধ হওয়ায় ব্যবসার আড়ালে ডলার পাচার কমেছে। এসব কারণে ব্যাংকগুলোতে জমে থাকা অতিরিক্ত ডলার ক্রয় করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

আগের অর্থবছরগুলোর সঙ্গে তুলনায় এবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ক্রেতার ভূমিকায়, যেখানে অতীতের বছরগুলোতে বড় অঙ্কে বিক্রি হতো। ২০২১-২২ অর্থবছরে বিক্রি হয়েছিল ৭ দশমিক ৬ বিলিয়ন, ২০২২-২৩ এ ছিল ১৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন, ২০২৩-২৪ এ ১২ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন এবং ২০২৪-২৫ এ ১ দশমিক ১২৪ বিলিয়ন ডলার। এই পরিবর্তন বাজারে স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

বর্তমান খোলাবাজারে ডলারের দর ১২৪-১২৫ টাকার মধ্যে, যেখানে গত বছরের এই সময়ে তা ছিল ১৩১ টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে পণ্য আমদানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬১ বিলিয়ন ডলার, আগের বছরের তুলনায় ৭ শতাংশ কম। অনলাইনে বাজার নজরদারি এবং ওভার/আন্ডার ইনভয়েসিং নিয়ন্ত্রণে আসায় পণ্যের আড়াল থেকে ডলার পাচারও অনেক কমেছে।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার ক্রয় বাজারে স্থিতিশীলতা আনার জন্য সময়োপযোগী পদক্ষেপ। এর ফলে আমদানি, বিনিয়োগ ও বাজার ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক হয়েছে।’

সব মিলিয়ে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধি, হুন্ডি নিয়ন্ত্রণ, পাচার কমে আসা—সব মিলিয়ে ডলার বাজারে স্বস্তি ফিরিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন ডলার বিক্রেতা নয়; বরং ক্রেতার ভূমিকায়, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এনবিআর কর্মকর্তার নাম ভাঙিয়ে টাকা দাবি, সতর্কবার্তা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন পথচারীরা। ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন পথচারীরা। ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের দপ্তরের ব্যক্তিগত সহকারী মো. কাউসারের নাম ভাঙিয়ে একটি প্রতারক চক্র বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা দাবি করছে। এ ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে এবং আনুষ্ঠানিক সতর্কবার্তা দিয়েছে এনবিআর।

এনবিআর জানায়, প্রতারকেরা মিথ্যা পরিচয় ব্যবহার করে ফোন, মেসেজসহ বিভিন্ন মাধ্যমে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করছে। তবে মো. কাউসারের সঙ্গে এ কর্মকাণ্ডের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সর্বসাধারণকে এই প্রতারক চক্র সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। কেউ এ ধরনের ফোনকল বা বার্তার সম্মুখীন হলে নিকটস্থ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

জিডিতে মো. কাউসার উল্লেখ করেন, ২৩ ডিসেম্বর এনবিআরের উপ-কর কমিশনার রইসুন নেসা (বর্তমানে যুগ্ম কর কমিশনার) তাঁকে জানান, কাউসারের নাম ব্যবহার করে ০১৭০১৮৯০৩৮৭ নম্বর থেকে কল করে তাঁর বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ আছে’ উল্লেখ করে টাকা দাবি করা হয়। বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর নির্দেশও দেওয়া হয় ০১৩২৮০৮৩২১৬ নম্বরে। পরে দেখা যায়, একই চক্র আরও অনেক কর্মকর্তার কাছ থেকে একই কৌশলে অর্থ আদায় করার চেষ্টা করেছে। পরে কাউসার জানতে পারেন আরও অনেক কর্মকর্তার কাছ থেকে একই নম্বর থেকে টাকা দাবি করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা কে বা কারা তাঁর পরিচয় দিয়ে অজ্ঞাতসারে বিভিন্ন কর্মকর্তার কাছে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা দাবি করছে, তা জানা নেই বলে উল্লেখ করেন কাউসার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কর অঞ্চল-কুষ্টিয়ার পরিদর্শী রেঞ্জ-৪-এর যুগ্ম কর কমিশনার রইসুন নেসা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাকে কাউসারের নামেই ফোন করে। আমি বিষয়টি কাউসারকে জানাই। পরে আর ফোন করেনি। কোনো কথাও হয়নি।’

জানতে চাইলে মো. কাউসার বলেন, কোনো একটা চক্র এটা করছে। এর আগে চেয়ারম্যান স্যারের হোয়াটসঅ্যাপ হ্যাক করে টাকা চেয়েছিল বিভিন্নজনের কাছ থেকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত