Ajker Patrika

৯ হাই-টেক পার্কে ভাড়া ও বিল বকেয়া ২৭ কোটি টাকার বেশি

  • বকেয়ার শীর্ষে সিলেটের পার্ক, দ্বিতীয় কালিয়াকৈর হাই-টেক পার্ক
  • কালিয়াকৈরে এক প্রতিষ্ঠানেই বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ৫ কোটি ২০ লাখ
  • বকেয়া পরিশোধ না করলে মামলা করবে হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ
অর্চি হক, ঢাকা 
হাইটেক পার্কের মডেল
হাইটেক পার্কের মডেল

দেশের নয়টি হাই-টেক পার্কে জায়গা বরাদ্দ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ভাড়া ও ইউটিলিটি বিল বকেয়া ২৭ কোটি টাকার বেশি। টানা চার বছর ভাড়া দেয়নি এমন প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাব খাটিয়ে অনেক প্রতিষ্ঠান ভাড়া ও ইউটিলিটি বিল দেয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ও সব বকেয়া আদায় হচ্ছে না।

জায়গা বরাদ্দ পাওয়া বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের দাবি, হাই-টেক পার্কে যেসব সুযোগ-সুবিধা থাকার কথা, সেগুলো পাচ্ছে না।

বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ বলেছে, ভাড়া ও ইউটিলিটি বিল বকেয়া রাখা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কয়েকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। এরপরও যারা বকেয়া পরিশোধ করছে না, তাদের বিরুদ্ধে আইন মেনে মামলা করা হবে।

বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের অধীনে দেশের বিভিন্ন স্থানে হাই-টেক পার্ক রয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) খাতকে রপ্তানি আয়ের অন্যতম উৎস হিসেবে গড়ে তুলতে বিভিন্ন জেলায় হাই-টেক পার্ক নির্মাণ করেছিল সাবেক আওয়ামী লীগ সরকার। এরই মধ্যে ১১টি পার্কে বিনিয়োগকারীদের জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হলেও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক কার্যক্রম একেবারে কম। ভাড়া, বিল বকেয়াসহ পার্কগুলোর ক্ষেত্রে রয়েছে নানা অনিয়মের অভিযোগ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, গত ডিসেম্বরের তথ্য অনুযায়ী, নয়টি হাই-টেক পার্কে জায়গা বরাদ্দ পাওয়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বকেয়া ভাড়া ও ইউটিলিটি বিলের পরিমাণ ২৭ কোটি টাকার বেশি। গাজীপুরের কালিয়াকৈর হাই-টেক পার্কে জায়গা বরাদ্দ পাওয়া ৪৩ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭টির কাছে ভাড়া ও সার্ভিস চার্জ বাবদ বকেয়া ১ কোটি ৮৩ লাখ ৮১ হাজার টাকা। বাকি ৪০ প্রতিষ্ঠানের কাছে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ৬ কোটি ৭৭ লাখ ৩ হাজার টাকা। এর মধ্যে টেকনোসিটি লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ৫ কোটি ২০ লাখ ৩৯ হাজার টাকা। সামিট টেকনোপলিশ লিমিটেডের বকেয়া ৪৫ লাখ ৬৩ হাজার টাকা।

যশোর সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের অধীনে হলেও এর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টেকসিটি বাংলাদেশ লিমিটেডকে। এই পার্কে জায়গা বরাদ্দ পাওয়া ৫৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৪টির বকেয়া ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ ৪ কোটি ৯৫ লাখ ১২ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভাড়া বকেয়া ২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ২ কোটি ১০ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। সর্বোচ্চ ৩৫ লাখ ৪৪ হাজার টাকা বকেয়া উৎসব টেকনোলজি লিমিটেডের। প্রতিষ্ঠানটি ৪৭ মাস ধরে ভাড়া এবং ৪৯ মাস ধরে বিদ্যুৎ বিল দিচ্ছে না। জেএসআর আইটি ও আনিকা আইটি কর্নার নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের ৪৩ মাসের ভাড়া বকেয়া। জেসিআর আইটির মোট বকেয়া ৭ লাখ ২৮ হাজার টাকা এবং আনিকা আইটির বকেয়া ১৫ লাখ ১৩ হাজার টাকা।

যশোর সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা ফিরোজ আহমেদ বলেন, ভাড়া তোলা এবং পার্ক পরিচালনার দায়িত্ব টেক সিটির। কারা বকেয়া পরিশোধ করছে না, কেন করছে না, এটা ওরা বলতে পারবে।

টেকসিটি বাংলাদেশ লিমিটেডের এজিএম মো. কামরুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা ভাড়া আদায়ে প্রতিনিয়ত নোটিশ দিই। চার বছরের মতো যাদের বকেয়া আছে, তাদের সঙ্গে কিস্তিতে বকেয়া পরিশোধের সমঝোতা হয়েছে।

সিলেটের হাই-টেক পার্কে ১৩ প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওনা ৮ কোটি ৯৫ লাখ ২৯ হাজার টাকা। এর মধ্যে র‍্যাংগ্‌স ইলেকট্রনিকসের কাছেই বকেয়া ৬ কোটি ২২ লাখ ৯১ হাজার টাকা।

সিলেট হাই-টেক পার্কের উপসহকারী প্রকৌশলী ফারুক হোসেন জানান, স্পেস রেট নিয়ে জটিলতার কারণে র‍্যাংগ্‌স ইলেকট্রনিকসের সম্পূর্ণ বকেয়া পরিশোধ হচ্ছে না। অনেক প্রতিষ্ঠান জায়গা বরাদ্দ পেলেও এখনো পার্কে কার্যক্রম শুরু করেনি। তাই তাদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করা যাচ্ছে না।

চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে ১৫ প্রতিষ্ঠানের কাছে মোট বকেয়া ১ কোটি ৯৭ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভাড়া বকেয়া ১ কোটি ৭৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকা এবং বকেয়া বিদ্যুৎ বিল ২৩ লাখ ৯১ হাজার টাকা।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে জায়গা বরাদ্দ পাওয়া ২২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৪টির কাছে মোট বকেয়া ২ কোটি ৫২ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। তবে পার্কের সহকারী পরিচালক শাহরিয়ার আল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ভাড়া পরিশোধ শুরু করেছে। তবে সংস্কারকাজের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে জায়গা ছাড়তে বলা হয়েছে। ১০টির মতো প্রতিষ্ঠান চলে গেছে। কিছু বকেয়া পরিশোধ হয়েছে। বর্তমানে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকার মতো পাওনা আছে। সর্বোচ্চ বকেয়া ভারগো কন্ট্রাক্ট সেন্টার সার্ভিসেসের কাছে, ৩৯ লাখ টাকা। মার্স সল্যুশনের কাছে পাওনা ৩৫ লাখ টাকা। তারা দু-এক দিনে কিছু টাকা পরিশোধের কথা জানিয়েছে।

রাজশাহী হাই-টেক পার্কে ৬ প্রতিষ্ঠানের বকেয়া ৬৬ লাখ ৫২ হাজার টাকা। রাজশাহীর আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টারে ৫ প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওনা ১১ লাখ ৫৩ হাজার টাকা।

নাটোরের আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টারে ১০ প্রতিষ্ঠানের ভাড়া বকেয়া ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা। বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ৬৮ হাজার টাকা।

খুলনার আইটি অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার, কুয়েটে ৭ প্রতিষ্ঠানের বকেয়া ৬ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভাড়া বকেয়া ৪ লাখ ১ হাজার, সার্ভিস চার্জ ২ লাখ ১৫ হাজার, বিদ্যুৎ বিল ৩৫ হাজার ও পানির বিল বকেয়া ২ হাজার টাকা।

গত বছরের জুলাইয়ে জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, ভাড়া আদায়ে অসংগতিসহ নানা অনিয়মে হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ক্ষতি হয়েছে অর্ধশত কোটি টাকার বেশি।

আশানুরূপ বিনিয়োগ না এলেও বিগত সরকার আরও ১২ জেলায় হাই-টেক পার্ক নির্মাণ প্রকল্পের জন্য প্রায় ১ হাজার ৮৪৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল। তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ওই সরকারের পতনের পর দায়িত্বে আসা অন্তর্বর্তী সরকার আইসিটি খাতে দুর্নীতি ও অনিয়ম তদন্তে করা কমিটির পর্যালোচনার ভিত্তিতে এই ১২টি পার্কের মধ্যে চারটির নির্মাণ বন্ধ করেছে।

সার্বিক বিষয়ে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম আমিরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিভিন্ন হাই-টেক পার্কে যাঁরা ভাড়া ও ইউটিলিটি বিল বকেয়া রেখেছেন, তাঁদের আমরা কয়েকবার চিঠি দিয়েছি। এরপরও যাঁরা বকেয়া শোধ করছেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে আইন মেনে মামলা করা হবে।’ তিনি বলেন, কারও বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে এবং তা প্রমাণিত হলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার মৃত্যু

বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আগামীকাল বুধবার দেশের সব পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে পোশাকমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। আজ মঙ্গলবার পোশাকমালিকদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই অনুরোধ জানানো হয়। একই সঙ্গে জানাজার আগপর্যন্ত দেশের বিপণিবিতানগুলো বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি।

চিঠিতে বিজিএমইএ বলে, ‘দেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সরকার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ও এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প কারখানায় আগামীকাল বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।’

পৃথক বিবৃতিতে বিজিএমইএ বলেছে, বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠানে আগামীকাল এক দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দীনের স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে সারা দেশের বিপণিবিতান ও দোকানপাট বন্ধ রাখার অনুরোধ জানানো হয়।

ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিজিএমইএ ছাড়াও শোক জানিয়েছে দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), টেক্সটাইল মিলের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।

এ ছাড়া শোক জানিয়েছে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ), ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ), রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব), কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসসহ (বেসিস) আরও অনেক সংগঠন।

সংগঠনগুলো পৃথক বার্তায় বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে। তারা খালেদা জিয়ার রুহের মাগফিরাত চেয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারকে ধৈর্য ধারণ করতে বলেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল: আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪২
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জ্বালানি তেল প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের (এসএওসিএল) প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সোমবার দুদকের উপপরিচালক (মানি লন্ডারিং) মো. জাহাঙ্গীর আলম মামলাটি করেন।

মামলার আসামিরা হলেন এসএওসিএলের কর্মকর্তা (এইচআর) আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৭), উপব্যবস্থাপক (হিসাব) ও ডিপো ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহমুদুল হক (৪৫), গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন গিয়াস (৪৬), আজহার টেলিকমের স্বত্বাধিকারী মো. সোহেল রানা (৪৪) এবং মেসার্স মদিনা কোয়ালিটির স্বত্বাধিকারী মো. মাসুদ মিয়া (৫১)।

দুদক চট্টগ্রামের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের হিসাব থেকে প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বিভিন্নভাবে স্থানান্তর ও আত্মসাৎ করেন।

এজাহার থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসএওসিএলের এলসি-সংক্রান্ত লেনদেনের নামে প্রকৃত সরবরাহকারীর পরিবর্তে ভুয়া ও সম্পর্কহীন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে চেক ইস্যু করার বিষয় দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে। পরে এসব চেকের অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর কিংবা নগদে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো এলসি খোলা হয়নি এবং লেনদেনগুলো কোম্পানির জেভি-০৮ ও জেনারেল লেজারে অন্তর্ভুক্তও করা হয়নি।

অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাঁচটি চেকের মধ্যে তিনটির অর্থ গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজ, আজহার টেলিকম ও মদিনা কোয়ালিটির অ্যাকাউন্টে জমা হয় এবং বাকি দুটি চেকের অর্থ নগদে উত্তোলন করা হয়। চেক জমাদানকারী হিসেবে বারবার আব্দুল্লাহ আল মামুনের নাম পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট পেমেন্ট ভাউচারে নিরীক্ষা বিভাগের স্বাক্ষর না থাকাও অনিয়মের প্রমাণ হিসেবে উঠে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মুফতি ছাঈদ আহমাদ।

সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খাঁন এবং শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ। এ ছাড়া কাউন্সিলের অন্য সদস্যবৃন্দ সভায় অংশগ্রহণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যশোরের খেজুর রস: লক্ষ্য ১২০ কোটি টাকার গুড় উৎপাদন

জাহিদ হাসান, যশোর
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

শীতের রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই যশোরের গ্রামাঞ্চলে শুরু হয় ব্যস্ততা। খেজুরগাছের নিচে হাজির হন গাছিরা। আগের বিকেলে কাটা গাছের ‘চোখ’ বেয়ে সারা রাত মাটির হাঁড়িতে জমেছে সুমিষ্ট খেজুর রস। ভোরে সেই রস নামিয়ে শুরু হয় আরেক কর্মযজ্ঞ; চুলায় জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরির কাজ। বাড়ির নারীরাই মূলত এই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন। কয়েক ঘণ্টা জ্বালানোর পর তৈরি হয় সুস্বাদু খেজুর গুড় ও পাটালি।

শীত মৌসুম এলেই এমন দৃশ্য দেখা যায় খেজুর গুড়ের জেলা খ্যাত যশোরের প্রায় প্রতিটি গ্রামে। সম্প্রতি যশোরের খেজুর গুড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় এর ঐতিহ্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও নতুন করে সামনে এসেছে।

উৎপাদন ও বাজারের চিত্র

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে যশোরে প্রায় ১২০ কোটি টাকার খেজুর রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল করবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

বর্তমানে খেজুরের কাঁচা রস প্রতি মাটির হাঁড়ি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, দানা গুড় প্রতি কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা এবং পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারদর বাড়লেও গাছিরা বলছেন, শ্রম ও ঝুঁকির তুলনায় লাভ সীমিত।

গাছির সংকট বড় চ্যালেঞ্জ

যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের গাছি আজিবর প্রায় ৩৫ বছর ধরে খেজুর গাছ কাটছেন। তিনি বলেন, ‘আগে দেড় শ গাছ কাটতাম, এখন বয়সের কারণে ৩৫-৪০টার বেশি পারি না। রস ও গুড়ের দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু কাটার মতো গাছ কমে গেছে। আবার গাছ থাকলেও দক্ষ গাছির অভাব। এবার বেশি শীত পড়ায় রসও ভালো নামছে, গুড়ের উৎপাদনও বেশি।’

গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মনিরামপুর উপজেলার সরসকাটি গ্রামের গাছি অতিয়ারও প্রায় ৪০ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত। তিনি বলেন, এবার ৫০টা গাছ কাটছি। প্রতিদিন ৮-১০ কেজি গুড় তৈরি হয়। কাজটা খুব কষ্টের। তবে শীত মৌসুমে এই আয়েই পুরো বছরের সংসার চলে।

ই-কমার্সে বাড়ছে চাহিদা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যশোর জেলায় মোট খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫। এগুলোর মধ্যে চলতি মৌসুমে রস আহরণের উপযোগী গাছ রয়েছে ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি।

উৎপাদিত গুড় প্রথমে স্থানীয় হাটে বিক্রি হয়, পরে পাইকারদের মাধ্যমে তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। যশোরের খেজুর গুড় এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পাশাপাশি ই-কমার্স ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক উদ্যোক্তাদের হাত ধরে গুড় ও পাটালি সরাসরি ভোক্তার ঘরে পৌঁছানো হচ্ছে। এতে বাজার যেমন সম্প্রসারিত হচ্ছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান।

কৃষি বিভাগের উদ্যোগ

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, যশোরের খেজুর গুড়ের স্বাদ ও মানের কারণে চাহিদা সব সময় বেশি। এবার শীত বেশি হওয়ায় রসের পরিমাণ ও মান—দুটোই ভালো। চলতি মৌসুমে প্রায় ১২০ কোটি টাকার রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিরাপদ খেজুর রস এবং গুড় উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গাছিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত