Ajker Patrika

দাম বাড়তে পারে যেসব পণ্যের

আপডেট : ০৭ জুন ২০২৪, ১১: ০৫
দাম বাড়তে পারে যেসব পণ্যের

আসছে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৪ দশমিক ৬২ শতাংশ ব্যয় বাড়িয়ে ৭ লাখ ৯৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। বাজেটে আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে গিয়ে বেশ কিছু খাতে শুল্ক ও কর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। 

বাজেটে যেসব শুল্ককর প্রস্তাব করা হয়, তা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হয়। এর ফলে এসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে। এসব পণ্যে মধ্যের আছে—এয়ারকন্ডিশনার, ফ্রিজ, ওয়াটার পিউরিফায়ার (পানি বিশুদ্ধকরণ যন্ত্র), মোটরসাইকেল, এটিএম, সিসি ক্যামেরা, জেনারেটর, এলইডি লাইট, সিগারেট, কোমল পানীয়, আইসক্রিম ও জুস।

বাজেটে যেসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে—

মোটরসাইকেল
২৫০ সিসির (ইঞ্জিনক্ষমতা) বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন মোটরসাইকেলের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ ধার্য করার সুপারিশ করেছেন অর্থমন্ত্রী। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু পণ্যের বিপরীতে বিদ্যমান আমদানি শুল্ক ৫ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এতে দাম বেশি পড়তে পারে উচ্চ সিসির মোটরসাইকেলের।

এয়ারকন্ডিশনার-ফ্রিজ
দেশের বাজারে যত ফ্রিজ বা রেফ্রিজারেটর বিক্রি হয়, তার ৯০ শতাংশই দেশে উৎপাদিত। দেশি তৈরি ফ্রিজে ভ্যাট আড়াই শতাংশ বেড়ে সাড়ে ৭ শতাংশ হয়েছে। দেশে ফ্রিজ ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র (এসি) উৎপাদনে ব্যবহৃত বিদেশি কম্প্রেসর ও অন্যান্য উপকরণের মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) ও শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে। দেশে তৈরি এসির ওপর সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। ফলে ফ্রিজ ও এসির মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

মোবাইল সিম ও কথা বলার খরচ বাড়ল
মোবাইল ফোনের সেবায় সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে। এতে এই সেবায় মোট করভার দাঁড়াবে ৩৯ শতাংশের বেশি, যা কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ বাড়াবে। পাশাপাশি ই-সিম তুলতে সম্পূরক শুল্ক ১০০ টাকা বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বাজেটে। ফলে ই-সিম নেওয়ার খরচ বাড়বে।

বৈদ্যুতিক বাতি
বৈদ্যুতিক বাতির মধ্যে এলইডি ও এনার্জি সেভিং বাতির উৎপাদনের উপকরণ আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে। পাশাপাশি বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুৎসাশ্রয়ী বাতির ভ্যাট। ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৫ শতাংশ। একই হারে বেড়েছে টিউবলাইটের ভ্যাট। এতে বাতির দাম বাড়তে পারে।

বিদেশি পানির ফিল্টার
দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষার জন্য পানি পরিশোধন যন্ত্র বা বিদেশি পানির ফিল্টারের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব এসেছে বাজেটে। ফলে দাম বাড়বে।

সিগারেট
প্রতিবছর বাজেটে সিগারেট, বিড়ি ও তামাকজাতীয় পণ্যের ওপর শুল্ককর বাড়ানো হয়। এবারের বাজেটে সিগারেটের উৎপাদন পর্যায়ে সম্পূরক শুল্ক ও মূল্যস্তর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। সম্পূরক শুল্ক ১ শতাংশ বাড়িয়ে ৬৬ শতাংশ করা হয়েছে। 

অর্থমন্ত্রী বলেছেন, সিগারেটের নিম্নস্তরের ১০ শলাকার মূল্যস্তর ৫০ টাকা বা তার বেশি এবং সম্পূর্ক শুল্ক ৬০ শতাংশ ধার্যের প্রস্তাব করছি। এ ছাড়া মধ্যম স্তরের ১০ শলাকার মূল্যস্তর ৭০ টাকা বা তার বেশি, উচ্চস্তরের ১০ শলাকার মূল্যস্তর ১২০ টাকা বা তার বেশি এবং অতি উচ্চস্তরের ১০ শলাকার মূল্যস্তর ১৬০ টাকা বা তার বেশি এবং এই তিনটি স্তরের সম্পূরক শুল্ক ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করার প্রস্তাব করছি।

অন্যদিকে সিগারেট বা বিড়ি পেপারের স্থানীয় পর্যায়ে মূসকের হার ৫ শতাংশের পরিবর্তে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।

পানীয়
মিষ্টি পানীয়ের দাম বাড়তে পারে। বাজেটে কার্বোনেটেড বেভারেজ বা কোমল পানীয়ের মতো মিষ্টি পানীয় কোম্পানির ওপর লেনদেন কর শূন্য দশমিক ৬ থেকে বাড়িয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। পাশাপাশি কোমল পানীয়ের ওপর সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। অন্যান্য পানীয়ের ওপর বাড়ানো হয়েছে শুল্ক।

আমসত্ত্ব, ফলের রস, আইসক্রিম
আমসত্ত্ব ও ফলের রস স্থানীয়ভাবে উৎপাদনে ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। আইসক্রিমে সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে।

বিদেশি মাছ
বিদেশ থেকে ম্যাকারেল নামের একটি সামুদ্রিক মাছ আমদানি হয়। এই মাছ আমদানিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে। ফলে মাছটির দাম বাড়তে পারে। এই করভার সার্ডিন মাছের সমান করা হয়েছে।

চিকিৎসা ব্যয়
বিশেষায়িত হাসপাতাল বা রেফারেল হাসপাতালগুলো বিশেষ শুল্কছাড়ে চিকিৎসাযন্ত্র ও সরঞ্জাম আমদানির সুযোগ পেত। হার ছিল ১ শতাংশ। বাজেটে ২০০টিরও বেশি চিকিৎসাযন্ত্র ও সরঞ্জাম আমদানির ক্ষেত্রে তা বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হতে পারে। ফলে চিকিৎসাসেবা মূল্য বাড়িয়ে দিতে পারে হাসপাতালগুলো।

বিনোদন সেবা
বিনোদনকেন্দ্র, তথা অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ও থিম পার্কে ভ্যাট দ্বিগুণ (১৫ শতাংশ) করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে বাড়তে পারে ঘোরাঘুরি ও বিনোদনের খরচ।

ইঞ্জিন অয়েল
বর্তমানে দেশে হাইব্রিড গাড়ি এবং আধুনিক প্রযুক্তির মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি পাচ্ছে। এতে সিনথেটিক লুব্রিকেটিং অয়েলের ব্যবহার বাড়ছে। এর আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য অনেক বেশি। তবে আমদানির ক্ষেত্রে শুল্কায়ন পর্যায়ে ন্যূনতম মূল্য নির্ধারিত নেই। ন্যূনতম মূল্য টনপ্রতি ৫ হাজার ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে এর দাম বাড়তে পারে।

শিল্পের কাঁচামাল
শিল্পের কাঁচামালসহ বিভিন্ন পণ্যে শুল্ককর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে। কোনো শিল্পের কাঁচামালই আর শূন্য শুল্কে আমদানি করা যাবে না। এতে এসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে। এর মধ্যে রয়েছে বিদেশি সুইচ, সকেট, হোল্ডার ইত্যাদি। সুইচ, সকেট ও হোল্ডার ইত্যাদি উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক কমানো হয়েছে। ৫ শতাংশ থেকে করা হয়েছে ১ শতাংশ। তবে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বর্তমানে দেশে মানসম্মত সুইচ ও সকেট উৎপাদিত হচ্ছে। কিন্তু সম্পূর্ণ তৈরি সুইচ সকেটের ন্যূনতম আমদানিমূল্য প্রকৃত আন্তর্জাতিক মূল্যের চেয়ে কম। এতে স্থানীয় শিল্প অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে। তাই সুইচ সকেটের যন্ত্রাংশ, সম্পূর্ণ সুইচ ও সম্পূর্ণ সকেটের ন্যূনতম মূল্য বৃদ্ধি করার প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে।

বাজেট ২০২৪–২৫ সম্পর্কিত আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

জেপির মঞ্জুর পর নির্বাচন বর্জন করলেন রুহুল আমিন হাওলাদার ও ফিরোজ রশীদ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মুফতি ছাঈদ আহমাদ।

সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খাঁন এবং শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ। এ ছাড়া কাউন্সিলের অন্য সদস্যবৃন্দ সভায় অংশগ্রহণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

জেপির মঞ্জুর পর নির্বাচন বর্জন করলেন রুহুল আমিন হাওলাদার ও ফিরোজ রশীদ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যশোরের খেজুর রস: লক্ষ্য ১২০ কোটি টাকার গুড় উৎপাদন

জাহিদ হাসান, যশোর
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

শীতের রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই যশোরের গ্রামাঞ্চলে শুরু হয় ব্যস্ততা। খেজুরগাছের নিচে হাজির হন গাছিরা। আগের বিকেলে কাটা গাছের ‘চোখ’ বেয়ে সারা রাত মাটির হাঁড়িতে জমেছে সুমিষ্ট খেজুর রস। ভোরে সেই রস নামিয়ে শুরু হয় আরেক কর্মযজ্ঞ; চুলায় জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরির কাজ। বাড়ির নারীরাই মূলত এই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন। কয়েক ঘণ্টা জ্বালানোর পর তৈরি হয় সুস্বাদু খেজুর গুড় ও পাটালি।

শীত মৌসুম এলেই এমন দৃশ্য দেখা যায় খেজুর গুড়ের জেলা খ্যাত যশোরের প্রায় প্রতিটি গ্রামে। সম্প্রতি যশোরের খেজুর গুড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় এর ঐতিহ্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও নতুন করে সামনে এসেছে।

উৎপাদন ও বাজারের চিত্র

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে যশোরে প্রায় ১২০ কোটি টাকার খেজুর রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল করবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

বর্তমানে খেজুরের কাঁচা রস প্রতি মাটির হাঁড়ি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, দানা গুড় প্রতি কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা এবং পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারদর বাড়লেও গাছিরা বলছেন, শ্রম ও ঝুঁকির তুলনায় লাভ সীমিত।

গাছির সংকট বড় চ্যালেঞ্জ

যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের গাছি আজিবর প্রায় ৩৫ বছর ধরে খেজুর গাছ কাটছেন। তিনি বলেন, ‘আগে দেড় শ গাছ কাটতাম, এখন বয়সের কারণে ৩৫-৪০টার বেশি পারি না। রস ও গুড়ের দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু কাটার মতো গাছ কমে গেছে। আবার গাছ থাকলেও দক্ষ গাছির অভাব। এবার বেশি শীত পড়ায় রসও ভালো নামছে, গুড়ের উৎপাদনও বেশি।’

গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মনিরামপুর উপজেলার সরসকাটি গ্রামের গাছি অতিয়ারও প্রায় ৪০ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত। তিনি বলেন, এবার ৫০টা গাছ কাটছি। প্রতিদিন ৮-১০ কেজি গুড় তৈরি হয়। কাজটা খুব কষ্টের। তবে শীত মৌসুমে এই আয়েই পুরো বছরের সংসার চলে।

ই-কমার্সে বাড়ছে চাহিদা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যশোর জেলায় মোট খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫। এগুলোর মধ্যে চলতি মৌসুমে রস আহরণের উপযোগী গাছ রয়েছে ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি।

উৎপাদিত গুড় প্রথমে স্থানীয় হাটে বিক্রি হয়, পরে পাইকারদের মাধ্যমে তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। যশোরের খেজুর গুড় এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পাশাপাশি ই-কমার্স ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক উদ্যোক্তাদের হাত ধরে গুড় ও পাটালি সরাসরি ভোক্তার ঘরে পৌঁছানো হচ্ছে। এতে বাজার যেমন সম্প্রসারিত হচ্ছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান।

কৃষি বিভাগের উদ্যোগ

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, যশোরের খেজুর গুড়ের স্বাদ ও মানের কারণে চাহিদা সব সময় বেশি। এবার শীত বেশি হওয়ায় রসের পরিমাণ ও মান—দুটোই ভালো। চলতি মৌসুমে প্রায় ১২০ কোটি টাকার রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিরাপদ খেজুর রস এবং গুড় উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গাছিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

জেপির মঞ্জুর পর নির্বাচন বর্জন করলেন রুহুল আমিন হাওলাদার ও ফিরোজ রশীদ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামি ১০ ও সরকারি ৬ ব্যাংক: ঋণের অর্ধেকের বেশি অনাদায়ি

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ২৭
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা

দেশের ব্যাংকিং খাতের ভেতরে জমে থাকা অনিয়ম, রাজনৈতিক আশ্রয় ও কৃত্রিম হিসাবের পর্দা চলতি বছর যেন একে একে সরে যেতে শুরু করেছে। আর তাতেই সামনে এসেছে এক ভয়াবহ বাস্তবতা। সরকারি ও শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণের ভারে এখন কার্যত দিশেহারা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে ৪৯ দশমিক ৬৫ শতাংশে, আর ইসলামি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে তা আরও বেশি—৫৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশে পৌঁছেছে। অর্থাৎ, এই দুটি খাতেই বিতরণ করা ঋণের অর্ধেকের বেশি অনাদায়ি হয়ে পড়েছে। যেখানে বিশেষায়িত ব্যাংকের খেলাপির হার ৪১ দশমিক ৯৫ ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপির হার মাত্র ৪ দশমিক ৯২ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, শরিয়াহভিত্তিক ১০টি ইসলামি ব্যাংক মোট ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা ঋণ বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে ২ লাখ ৮৩ হাজার ৫৫ কোটি টাকা। হিসাব বলছে, প্রতি ১০ টাকার প্রায় ৬ টাকাই এখন আদায় অনিশ্চিত। সেই তুলনায় শরিয়াহসহ দেশীয় বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ লাখ ৬৩ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এই তুলনাতেই স্পষ্ট, খেলাপির বোঝা এককভাবে সবচেয়ে বেশি ইসলামি ব্যাংকগুলোর ঘাড়েই।

সরকারি ছয় ব্যাংকের অবস্থাও খুব একটা ভিন্ন নয়। এসব ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা। মোট বিতরণ করা ঋণের প্রায় অর্ধেকই সেখানে অনাদায়ি। ব্যাংকার ও বিশ্লেষকদের মতে, এই সংকট রাতারাতি তৈরি হয়নি। বছরের পর বছর ধরে দুর্বল তদারকি, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং ইচ্ছাকৃত খেলাপিকে আড়াল করার প্রবণতা ধীরে ধীরে ব্যাংকগুলোকে এই জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন, খেলাপি ঋণের এত উচ্চ হার শুধু ব্যাংকিং খাতের ভেতরের সমস্যা নয়, এটি সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য বড় ঝুঁকি। ব্যাংকগুলো নতুন ঋণ দিতে পারছে না, বিনিয়োগ কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ছে, শিল্প-কারখানার সম্প্রসারণ থেমে যাচ্ছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে কর্মসংস্থানে। তাঁর মতে, খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং ঋণ আদায়ে বাস্তবসম্মত উদ্যোগ ছাড়া পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব নয়।

ইসলামি ব্যাংকিং খাতে এস আলম, নাসা ও বেক্সিমকো গ্রুপের নাম বারবার আলোচনায় এসেছে। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, দীর্ঘদিন সরকারি মদদে এসব গ্রুপ বিপুল ঋণ নিয়ে খেলাপি হলেও তা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পায়নি। এখন সেই বাস্তবতা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট।

সামগ্রিকভাবে দেশের ব্যাংকিং খাতের চিত্র আরও উদ্বেগজনক। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১৮ লাখ ৩ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে প্রায় ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, বিগত সরকারের টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে খেলাপি ঋণ কম দেখানোর যে অপচেষ্টা ছিল, তা এখন ভেঙে পড়েছে। সঠিক হিসাব সামনে আসায় হার ৩৬ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছেছে, যা বাস্তবতারই প্রতিফলন। তিনি আবারও শীর্ষ ১০ খেলাপির জন্য আলাদা ট্রাইব্যুনালের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, আগের সরকারের আমলে লুকিয়ে রাখা খেলাপি ঋণ প্রকাশ পাওয়ায় এই হার বেড়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন ঋণ আদায়ে কঠোর নির্দেশনার কারণে আগের তুলনায় আদায় বেড়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

জেপির মঞ্জুর পর নির্বাচন বর্জন করলেন রুহুল আমিন হাওলাদার ও ফিরোজ রশীদ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ছয় মাসে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইল ছবি
বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইল ছবি

ডলার এখন রেমিট্যান্স, রপ্তানি, হুন্ডি নিয়ন্ত্রণ—সবকিছুর সঙ্গে জড়িয়ে আছে। তাই বাজারে ডলার হাতছাড়া হওয়ার ভয়ে সবাই চুপ। এই ডলারের সরবরাহ ও দাম স্থিতিশীল রাখার পাশাপাশি পুরো বৈদেশিক মুদ্রার ভারসাম্য ঠিক রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়মিত বিরতিতে ডলার কিনছে। সেই ধারাবাহিকতায় শুধু চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ প্রসঙ্গে আজকের পত্রিকাকে জানান, ডিসেম্বর মাসে কেনা ডলারের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, ৯২ কোটি ডলার এবং চলতি অর্থবছর ধরে মোট কেনা হয়েছে ৩ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। জুলাইয়ে প্রথম ডলার কেনা হয়েছিল ৪৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার, আগস্টে ৪৫ কোটি ৪০ লাখ, সেপ্টেম্বরেই তা বেড়ে ৯২ কোটি ৯০ লাখে পৌঁছায়। এরপর অক্টোবর ও নভেম্বরে অবশ্য অনেকটাই কমে ১৪ কোটি ২০ লাখ এবং ৫ কোটি ৪০ লাখে নেমে আসে। ডিসেম্বরেই তার বড় উল্লম্ফন ঘটে, কেনার পরিমাণ দাঁড়ায় ৯২ কোটি ১০ লাখ ডলারে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি, হুন্ডি নিয়ন্ত্রণ, ব্যাংকিং চ্যানেলের শক্তিশালীকরণ এবং অনলাইনে আন্তর্জাতিক পণ্যের বাজার মনিটরিংয়ের ফলে বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে। এ ছাড়া ওভার ও আন্ডার ইনভয়েসিং বন্ধ হওয়ায় ব্যবসার আড়ালে ডলার পাচার কমেছে। এসব কারণে ব্যাংকগুলোতে জমে থাকা অতিরিক্ত ডলার ক্রয় করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

আগের অর্থবছরগুলোর সঙ্গে তুলনায় এবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ক্রেতার ভূমিকায়, যেখানে অতীতের বছরগুলোতে বড় অঙ্কে বিক্রি হতো। ২০২১-২২ অর্থবছরে বিক্রি হয়েছিল ৭ দশমিক ৬ বিলিয়ন, ২০২২-২৩ এ ছিল ১৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন, ২০২৩-২৪ এ ১২ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন এবং ২০২৪-২৫ এ ১ দশমিক ১২৪ বিলিয়ন ডলার। এই পরিবর্তন বাজারে স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

বর্তমান খোলাবাজারে ডলারের দর ১২৪-১২৫ টাকার মধ্যে, যেখানে গত বছরের এই সময়ে তা ছিল ১৩১ টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে পণ্য আমদানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬১ বিলিয়ন ডলার, আগের বছরের তুলনায় ৭ শতাংশ কম। অনলাইনে বাজার নজরদারি এবং ওভার/আন্ডার ইনভয়েসিং নিয়ন্ত্রণে আসায় পণ্যের আড়াল থেকে ডলার পাচারও অনেক কমেছে।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার ক্রয় বাজারে স্থিতিশীলতা আনার জন্য সময়োপযোগী পদক্ষেপ। এর ফলে আমদানি, বিনিয়োগ ও বাজার ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক হয়েছে।’

সব মিলিয়ে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধি, হুন্ডি নিয়ন্ত্রণ, পাচার কমে আসা—সব মিলিয়ে ডলার বাজারে স্বস্তি ফিরিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন ডলার বিক্রেতা নয়; বরং ক্রেতার ভূমিকায়, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

জেপির মঞ্জুর পর নির্বাচন বর্জন করলেন রুহুল আমিন হাওলাদার ও ফিরোজ রশীদ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত