Ajker Patrika

এমপির চিঠিতে করা ৫০০ মিটারে বারবার ভাঙন

  • পদ্মা সেতু রক্ষা বাঁধের পর থেকে পদ্মা সেতু কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড-২ রক্ষায় দেড় কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের কথা ছিল বিবিএর।
  • শরীয়তপুর-১ আসনের তৎকালীন এমপির ডিও লেটারে আরও ৫০০ মিটার বাড়িয়ে দুই কিলোমিটার বাঁধ নির্মিত হয়।
বেলাল হোসাইন, শরীয়তপুর
আপডেট : ১০ জুলাই ২০২৫, ০৮: ১২
ভয়াবহ ভাঙনের কবলে শরীয়তপুরের জাজিরার পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধ। গতকাল ভাঙন রোধে আপৎকালীন কাজের অংশ হিসেবে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ছবিটি মাঝিরঘাটের জিরো পয়েন্ট এলাকার। আজকের পত্রিকা
ভয়াবহ ভাঙনের কবলে শরীয়তপুরের জাজিরার পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধ। গতকাল ভাঙন রোধে আপৎকালীন কাজের অংশ হিসেবে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ছবিটি মাঝিরঘাটের জিরো পয়েন্ট এলাকার। আজকের পত্রিকা

শরীয়তপুরের জাজিরায় পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধে ভয়াবহ ভাঙন এখন দেশব্যাপী আলোচিত ঘটনা। কিন্তু বারবার কেন ভাঙছে এই গুরুত্বপূর্ণ বাঁধ? তবে কি বাঁধটি টেকসই করা হয়নি? নাকি বাঁধ নির্মাণে কোনো অনিয়ম হয়েছে? এ রকম নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সাধারণ মানুষের মনে।

এ নিয়ে কথা হয় বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) পদ্মা সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সায়াদের সঙ্গে। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ২০১২ সালে পদ্মা সেতু রক্ষা করার জন্য উজানে ১১ কিলোমিটার, ভাটিতে ১ কিলোমিটারসহ মোট ১২ কিলোমিটার স্থায়ী টেকসই বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ)। এই বাঁধের পর থেকে ভাটিতে পদ্মা সেতু কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড-২ রক্ষার জন্য ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে দুই কিলোমিটার অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করে বিবিএ। পদ্মা সেতু রক্ষা বাঁধের সঙ্গে এই দুই কিলোমিটার কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড-২ রক্ষা বাঁধের কোনো সম্পর্ক নেই। এই দুই কিলোমিটার বাঁধ সম্পূর্ণ আলাদা।

নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, পদ্মা সেতু রক্ষা বাঁধের পর থেকে পদ্মা সেতু কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড-২ রক্ষায় দেড় কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের কথা ছিল বিবিএর। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনুরোধ এবং শরীয়তপুর-১ (সদর-জাজিরা) আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হকের ডিও লেটারের (আধা সরকারি চিঠি) কারণে আরও ৫০০ মিটার বাড়িয়ে দুই কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ওই বাড়তি ৫০০ মিটার বাঁধ বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের অধিগ্রহণ করা এলাকায় নয়। শুধু স্থানীয় সংসদ সদস্যের ডিও লেটারের কারণে ৫০০ মিটার বাড়িয়ে বাঁধ নির্মাণ করে বিবিএ।

এখন ওই ৫০০ মিটারের মধ্যেই বারবার ভাঙন দেখা দিচ্ছে।

গত বছরের নভেম্বরে পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধে প্রথমবার প্রায় ১০০ মিটার ধসে পড়ে। এরপর বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ বাঁধের ওই ৫০০ মিটার অংশ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে হস্তান্তর করে। পানি উন্নয়ন বোর্ড তাদের মতো করে বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। দুই মাস ধরে পানি উন্নয়ন বোর্ড সেখানে জিও ব্যাগ ও সিসি ব্লক ফেলছে। এরই মধ্যে দুই দফায় ভাঙনের শিকার হয় বাঁধটি।

বাঁধটি বারবার কেন ভাঙনের শিকার হচ্ছে জানতে চাইলে বিবিএর নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সায়াদ বলেন, বাঁধটি ১৩-১৪ বছর আগে অস্থায়ীভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল। যখন বাঁধটি নির্মাণ করা হয়, তখন সেখানে নদী দু-তিন মিটার গভীর ছিল, সে সময় নদীর গতিপথ ছিল মাওয়া প্রান্তে। এখন নদীর গতিপথ ডান তীরে চলে আসায় এবং ১৭-১৮ মিটার গভীর হওয়ায় টানা বর্ষণ আর তীব্র স্রোতের কারণে বাঁধটি বারবার ভাঙনের শিকার হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।

জানতে চাইলে শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তারেক হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, যখন বাঁধ নির্মাণ করা হয়, তখন নদীর গতিপথ ছিল না। এখন নদীর চ্যানেল পরিবর্তন হয়ে স্রোত ডান তীরে আঘাত হানছে। বর্তমানে পদ্মা নদীতে প্রবল স্রোত, টানা বর্ষণ ও নদীর মরফোলজিক্যাল (রূপগত) পরিবর্তনের কারণে এই ভাঙন হয় বলে মনে করেন শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তারেক হাসান।

শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ২০১২ সালে ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে জাজিরায় পদ্মা সেতু রক্ষা বাঁধের পর থেকে ভাটিতে মাঝির ঘাট জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ২ কিলোমিটার পদ্মা সেতু প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড-২ রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। গত বছরের ৩ নভেম্বরে মাঝির ঘাট জিরো পয়েন্ট এলাকায় বাঁধটির প্রায় ১০০ মিটার ধসে পড়ে। এ বছর বাঁধটির সংস্কারে দায়িত্ব দেওয়া হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে। ২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই স্থানে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ও সিসি ব্লক ফেলার কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এরই মধ্যে গত ঈদুল আজহার দিন (৭ জুন) ভোররাতে আগের ভাঙনের পাশের বাঁধে ভাঙন দেখা দেয়। ওই সময় বাঁধের দেড় শ মিটার অংশ নদীতে বিলীন হয়।

এক মাসের মাথায় সোমবার (৭ জুলাই) বেলা সাড়ে ৩টার দিকে মাঝির ঘাট জিরো পয়েন্ট এলাকায় বাঁধে আবারও আকস্মিক ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়। মুহূর্তের মধ্যে বাঁধের দেড় শ মিটার নদীতে চলে যায়। ফলে তিন দফার ভাঙনে ওই ৫০০ মিটারের ৪০০ মিটার পদ্মায় বিলীন হয়ে যায়।

ভাঙন রোধে জরুরি আপৎকালীন কাজের অংশ হিসেবে দ্রুত সেখানে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ঘটনার দিন রাতেই জাজিরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ৩০টি পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত ২৬টি পরিবারের তালিকা প্রস্তুত করে ১০টি পরিবারকে টিন ও আর্থিক সাহায্য এবং ১৬টি পরিবারকে শুধু আর্থিক সাহায্য দেয় উপজেলা প্রশাসন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মাঠে পড়ে ছিল মাছ ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত লাশ

ফরিদপুর প্রতিনিধি
ঘটনাস্থলে স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হন। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘটনাস্থলে স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফরিদপুরের সালথায় উৎপল সরকার (৩৫) নামের এক মাছ ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের গৌরদিয়া এলাকার কালীতলা ব্রিজ-সংলগ্ন মাঠ থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় মাঠ-সংলগ্ন সেতু থেকে চোখ বাঁধা অবস্থায় থাকা ফিরোজ মোল্যা নামের এক ভ্যানচালককে জীবিত উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজন।

নিহত উৎপল ফরিদপুর জেলা সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের রনকাইল গ্রামের অজয় সরকারের ছেলে। তাঁর স্ত্রী ও আড়াই বছর বয়সী এক শিশুসন্তান রয়েছে।

থানা-পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ ভোরে সড়কের পাশে ফাঁকা মাঠে রক্তাক্ত অবস্থায় একটি লাশ দেখতে পায় স্থানীয় লোকজন। পাশেই একটি সেতুর সঙ্গে একই গ্রামের ভ্যানচালক ফিরোজ মোল্যাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় বেঁধে রাখা হয়েছিল। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি খুলে বলেন তিনি।

ভ্যানচালকের বরাত দিয়ে রনকাইল গ্রামের বাসিন্দা ও প্রতিবেশী কাজী শাহীন বলেন, উৎপল সরকার ব্যাটারিচালিত ভ্যানে করে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে মাছ কিনতে যাচ্ছিলেন। পথে অজ্ঞাতপরিচয় তিন-চার ব্যক্তি দেশীয় অস্ত্রের মুখে ভ্যানচালক ফিরোজ মোল্যাকে গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে ব্রিজের রেলিংয়ে বেঁধে ফেলে। তারা উৎপলের সঙ্গে থাকা টাকাপয়সা লুট করে তাঁকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সালথা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কে এম মারুফ হাসান রাসেল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুই থেকে তিনজন দুর্বৃত্ত ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তবে এটাকে ডাকাতি বলা যায় না। ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত চলমান। তদন্ত শেষে মূল কারণ বলা যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাসার দরজা ভেঙে চবি শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

চবি প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ওমর ফারুক সুমন নামের এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী এলাকার একটি বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

ওমর ফারুক বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

স্থানীয় ও পরিবারের সদস্যরা জানান, সুমন খুলশীতে তাঁর মামার বাসায় থাকতেন। তাঁর বড় ভাইও সেখানে থাকেন। দুই দিন আগে সুমনের মামা পুরো পরিবার নিয়ে তুরস্কে বেড়াতে যান। বাসায় সুমন ও তাঁর বড় ভাই ছিলেন। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন সুমন। ফোনে তাঁর বড় ভাই কখন বাসায় ফিরবেন জানতে চান সুমন। বড় ভাই জানান যে তাঁর আসতে একটু দেরি হবে। এর কিছুক্ষণ পর বড় ভাই সুমনকে ফোন করলে তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি। পরে বাড়ি থেকে সুমনের মা ফোন দিয়ে যোগাযোগ করতে না পেরে বিষয়টি বড় ভাইকে জানান। এতে উদ্বেগ দেখা দিলে বড় ভাই বিল্ডিংয়ের দারোয়ানকে দিয়ে বাসা চেক করান।

দারোয়ান কলিংবেল বাজিয়েও কোনো সাড়া না পেয়ে বড় ভাইকে জানালে তিনি দ্রুত বাসায় এসে সুমনকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। ঘটনাস্থলে চিরকুট মিলেছে। এতে লেখা রয়েছে, ‘আমি সুমন, ওমর ফারুক সুমন। আমার কোনো আশা-আকাঙ্ক্ষা নেই। আর আমার কারও প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। সবাই ভালো থাকবেন।’ এর আগে ১ ডিসেম্বর লেখা আরেকটি চিরকুট পাওয়া যায়। সেখানে লেখা ছিল—‘আশাই জীবন, আশাই মরণ, ব্যর্থতা হতাশা-অন্ধকারে নিয়ে যায়।’

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুর জামান বলেন, ‘সুমন ও তাঁর বড় ভাই একসঙ্গে মামার বাসায় থাকতেন। মামা ও মামি বর্তমানে বিদেশে আছেন। বড় ভাই সন্ধ্যায় বাইরে যান। সে সময় সুমন বাসায় একা ছিলেন। বড় ভাই বাসায় ফিরে এসে বারবার ডাকলেও ফ্ল্যাটের ভেতর থেকে কোনো সাড়া পাননি। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকলে সুমনের মরদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রাথমিক তদন্তে এটি আত্মহত্যা মনে হলেও আমরা সব সম্ভাব্য কারণ খতিয়ে দেখছি। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বদলি নিয়ে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ শিক্ষক নেতার

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ

সহকর্মী এবং নিজের বদলি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। তিনি বলেন, ‘আমাকে সাড়ে ৪০০ মাইল দূরে বদলি করা হয়েছে। এতে আমি বিচলিত নই।’

আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ফেসবুক লাইভে এসে আবুল কাশেম বলেন, ‘আমার মতো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবি আদায়ের নেতৃত্ব দেওয়া শতাধিক শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে পার্শ্ববর্তী জেলা এবং বিভাগে। আরও অনেককে বদলি করা হতে পারে। এ নিয়ে কেউ বিচলিত হবেন না। প্রয়োজনে আইনি লড়াইয়ে যাব। তবে আন্দোলন থেকে সরে আসব না। আপনাদের পাশে রয়েছি। অবিলম্বে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা আসবে। সে জন্য যদি জেলেও যেতে হয়, প্রস্তুত রয়েছি।’

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেমের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

৪ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) মাহফুজা খাতুন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার চানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমকে বরিশাল সদরের চরবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আমনের বাম্পার ফলনেও মুখে হাসি নেই কৃষকের, বাজারে ধানের দাম কমায় হতাশা

মাহিদুল ইসলাম, মৌলভীবাজার
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মৌলভীবাজারের চলতি মৌসুমে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফসল ঘরে তুলতে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকেরা। তবে বাজারে ধানের দাম কম হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন তাঁরা। কৃষকদের অভিযোগ, বাজারে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ধানের দাম কমিয়ে দিয়েছেন। তাই ফলন ভালো হওয়ার পরও বাজারে ধানের যথার্থ মূল্য না পাওয়ায় লোকসানে পড়ছেন তাঁরা।

কৃষকেরা জানান, চলতি আমন মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ধানের দাম অনেক কম। গত বছর বাজারে যেখানে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় প্রতি মণ ধান বিক্রি হয়েছে, এই বছর মাঝারি শুকনা ধান ৯০০ ও শুকনা ধান ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বীজতলা থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তোলার আগপর্যন্ত অনেক শ্রম ও টাকা খরচ করতে হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৯৮ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা হয়েছে। এর থেকে ৪ লাখ ৪১ হাজার ৯০ টন ধান উৎপাদন হবে। আর এই ধান থেকে ২ লাখ ৯৫ হাজার ৫৩০ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। ইতিমধ্যে ৬৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। আমন ধানের শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকেরা।

বাজারে আমন ধানের দাম কম হলেও সরকারিভাবে ভালো দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে প্রতি কেজি আমন ধান ৩৪ টাকা মূল্যে ৭৯০ টন, সেদ্ধ চাল ৫০ টাকা কেজি মূল্যে ২ হাজার ৬৭৭ টন ও আতপ চাল ৪৯ টাকা কেজি মূল্যে ৫ হাজার ৬৪৬ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

জেলার কমলগঞ্জ, রাজনগর, কুলাউড়া ও সদর উপজেলার আমনখেত ঘুরে দেখা যায়, কৃষকেরা পাকা আমন ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত। অনেক এলাকায় দ্রুত সময়ে কম্বাইন হারভেস্টারের মাধ্যমে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ একসঙ্গে সেরে নিচ্ছেন কৃষকেরা। এতে সময়, খরচ ও কষ্ট কম করতে হচ্ছে। আবার কেউ কাজের লোক এনে ধান কেটে ফসলের মাঠেই মাড়াই করে সেদ্ধ দিচ্ছেন। অনেক কৃষক মাঠের মধ্যে রাত জেগে ধান সেদ্ধ করছেন। তবে সবকিছু ঠিক থাকলেও ধানের দাম কম থাকায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন কৃষকেরা।

কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়ন কৃষক আনোয়ার খান বলেন, ‘গত বছর আমাদের ধান একেবারেই হয়নি। এ বছর অনেক ভালো ধান হয়েছে। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ফলন হয়েছে। তবে বাজারে ধানের দাম অনেক কম। প্রতি মণ ধান মাত্র ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষিতে আগের চেয়ে অনেক বেশি খরচ বেড়েছে। সে তুলনায় ধানের দাম বাড়েনি।’

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মিলন কান্তি চাকমা বলেন, ‘আমাদের ধান-চাল সংগ্রহের কার্যক্রম ২০ নভেম্বর শুরু হয়েছে; চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সরকারিভাবে ধানের দাম গত বছরের তুলনায় কেজিপ্রতি ১ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। একটা সময় আমরা ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারতাম না; তবে এখন ধান-চালের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়। আশা করি, চলতি মৌসুমে আমাদের লক্ষ্য পূরণ হবে।’

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দীন বলেন, ‘জেলায় এ বছর খুব ভালো আমন ধান হয়েছে। কৃষকেরা অত্যন্ত উৎসাহ নিয়ে ধান ঘরে তুলছেন। আশা করি, আগামী সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান কাটা হয়ে যাবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও দিনের বেলা কুয়াশা না থাকায় সহজে কৃষকেরা ধান কাটা, মাড়াই ও সেদ্ধ করতে পারছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত