Ajker Patrika

বিলীনপ্রায় নদীতে শতকোটির সেচ প্রকল্প

মাসুদ পারভেজ রুবেল  ডিমলা (নীলফামারী) 
উৎসমুখে ভারতের বাঁধের কারণে তিস্তার শাখা বুড়িতিস্তা শুকিয়ে গেছে। তবে এই নদীকে জলাধার দেখিয়ে পাউবো হাতে নিয়েছে সেচ প্রকল্প। শুকিয়ে যাওয়া নদীতে চলছে চাষাবাদ। সম্প্রতি নীলফামারীর ডিমলায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
উৎসমুখে ভারতের বাঁধের কারণে তিস্তার শাখা বুড়িতিস্তা শুকিয়ে গেছে। তবে এই নদীকে জলাধার দেখিয়ে পাউবো হাতে নিয়েছে সেচ প্রকল্প। শুকিয়ে যাওয়া নদীতে চলছে চাষাবাদ। সম্প্রতি নীলফামারীর ডিমলায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

উত্তরের তিস্তার শাখা বুড়িতিস্তা। তবে ভারতের বাঁধের কারণে এই শাখা নদীতে পানি নেই অন্তত ৩০ বছর। এরপরও সেখানে সেচ প্রকল্পের নামে খননের কাজ হাতে নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। নীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার পাঁচটি গ্রামে নেওয়া এ প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণও হয়নি ঠিকঠাক। ফলে কাজে বাধা দেওয়ায় ৭০০ গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে করা হয়েছে হয়রানির মামলা।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, সেচ প্রকল্পের নামে পাউবোর কর্মকর্তারা ও সাবেক সংসদ সদস্য আফতাব উদ্দিন সরকার সেখান থেকে বালুর ব্যবসা করছেন। শতকোটি টাকার এই প্রকল্পে কোনো কাজেই আসবে না। উৎসে বাঁধ থাকায় খাল খনন করলেও বুড়িতিস্তায় পানি আসার সুযোগই নেই। পাউবো সূত্র, কৃষিকাজে সেচ সুবিধার্থে তিস্তা সেচ প্রকল্পের সঙ্গে সমন্বয় করে এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এ জন্য ১ হাজার ৪৫২ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার। এর আওতায় ১ হাজার ২১৭ একর জমিতে জলাধার খনন করার কথা। প্রথম পর্যায়ে পাঁচটি প্যাকেজে ৬৬৭ একর খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এতে ব্যয় ধরা হয় ৯৯ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের অধীনে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাউবো ডিমলার রামডাঙ্গা এলাকায় জলাধার খননের কাজ শুরু করেছিল। তখন জমির মালিকেরা খাল খননের সঠিক কার্য নীতিমালা ও অনুমোদিত নকশার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলেন। পরে খননকাজ স্থগিত করা হয়। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে খনন শেষ হওয়ার কথা। তবে কাজ না হওয়ায় দুই বছর সময় বাড়ানো হয়েছে।

খাল খননের প্রকল্পটি বেশ পুরোনো। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৬৮ সালের প্রকল্পের আওতায় পাঁচটি গ্রামের প্রায় ১ হাজার ৩০০ একর জমিতে জলাধার নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। এলাকাবাসীর দাবি, সরকার শুধু ১০৪ একর জমি অধিগ্রহণ করেছিল। পরবর্তী সময়ে সেটি বাস্তবায়ন না হওয়ায় সরকার আর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ওই জমির প্রকৃত মালিকেরা চাষাবাদ করে আসছেন। এসব জমি বেচাকেনাও হয়েছে। নতুন খননের নামে চার ফসলি জমি নষ্ট হবে। এতে বছরে প্রায় ৫০ কোটি টাকার ফসল উৎপাদন বন্ধ হবে।

তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য সোহেল হাসান বলেন, জলাধার প্রকল্পটি জনগণের কোনো কল্যাণে আসবে না। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের বাস্তবতা না থাকায় ২০১০ সালে পাউবো সেখানে একটি বেসরকারি কোম্পানিকে লিজ দিয়েছিল অ্যাগ্রো প্রজেক্ট বা পর্যটনকেন্দ্র করার জন্য। পরে গ্রামবাসী মামলা করলে আদালত তাও বাতিল করে। তাহলে এখন কার স্বার্থে আবাদি জমিতে এই জলাধার খনন করা হচ্ছে?

সরেজমিনে দেখা যায়, নদীর রামডাঙ্গা এলাকায় প্রায় ৪০ একর কৃষিজমি খনন হয়েছে। তবে সেখানে নেই খননের বালু। পাউবোর খাতায় বালুর কোনো হিসাবও নেই। স্থানীয়রা জানান, খননের নামে দিনরাত শতাধিক ট্রাক্টরে ভরে বালু বিক্রি করেছেন ঠিকাদার ও সাবেক এমপি আফতাব উদ্দিনের লোকজন। প্রতি ট্রাক্টর বালু ১ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

কুটিরডাঙ্গা-গোলনা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, একসময় গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বুড়িতিস্তা নদী এখন পানিশূন্য। এতে চাষাবাদ চলছে। জলাধার খননের নির্ধারিত এলাকা পুরোটাই কৃষিজমি ও জনবসতি। সেখানে পাঁচ শতাধিক কাঁচাপাকা বাড়ি, দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাঁচটি মসজিদ ও মাদ্রাসা রয়েছে। সেখানে কথা হয় কুটিরডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা আবদুল আলিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, তিস্তা নদীর শাখা ছিল বুড়িতিস্তা। তিস্তার গতিপথ পরিবর্তন হলে এটি মরা নদীতে পরিণত হয়। এর উৎসমুখেও বাঁধ দিয়েছে ভারত সরকার। পানির প্রবাহ বন্ধ। ফলে সেচের স্বার্থে জলাধার খনন হচ্ছে, এটা একটা অবাস্তব কথা।

গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে মামলা

এই জলাধার খননের প্রতিবাদে মানববন্ধনসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এলাকাবাসী। তাঁদের দাবি, সরকার যদি একান্তই নদী খনন করতে চায়, তাহলে করতে পারে। তবে সেটা করতে হবে খাসজমিতে। এই সংকট সমাধানে সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে।

এদিকে বালু ব্যবসার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় এবং খননে বাধা দেওয়া পাউবো ৭০০ গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে ১০ থেকে ১২টি মামলা করেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বলেন, ‘কতবার অভিযোগ দিয়েছি, কেউ শোনে না আমাদের কথা। এলাকার জয়নাল আবেদীনসহ চারজন আদালতে মামলাও করেছেন। তাঁদের দাবি, এখন যেখানে জলাধার খনন শুরু হয়েছে, সেখানে বেশির ভাগই ব্যক্তিমালিকানার জমি।’

আর জয়নাল আবেদীন বলেন, তাঁদের ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির ভেতরে খাল টেনে আনা হচ্ছে। এর প্রতিবাদে তাঁরা মামলা করেছেন। কিন্তু পাউবো মামলা-হামলা করে বাসিন্দাদের গ্রামছাড়া করতে চাইছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নীলফামারী পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকুর রহমান বলেন, পাউবোর অধিগ্রহণ করা জমিতে জলাধার খনন করা হচ্ছে। কিন্তু স্থানীয়দের বাধায় কাজ বন্ধ। যারা বাঁধা দিয়েছে, তাদের নামে ১০টির মতো মামলা করা হয়েছে।

জমি অধিগ্রহণের কাগজপত্র আছে কি না, এ বিষয়ে আতিকুর রহমান বলেন, ‘আদালতে মামলা চলমান, তাই নরমালি কাগজপত্র ওপেন করতে চাচ্ছি না।’ তবে বালু ব্যবসার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি। পানির উৎস কী, কার স্বার্থে ফসলি জমিতে জলাধার খনন—এমন প্রশ্নের সদুত্তর দেননি তিনি। তাঁর দাবি, খনন হলে জলাধারে পানি থাকবে, সেখান থেকে কৃষকেরা উপকৃত হবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সাংবাদিক আনিস আলমগীর ডিবি হেফাজতে, জিজ্ঞাসাবাদ হবে

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: ফয়সালের স্ত্রীসহ আরও তিনজন গ্রেপ্তার

বন্ডাই বিচে হামলাকারীর অস্ত্র কেড়ে নিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন, কে এই পথচারী

বাড্ডায় যাত্রীবাহী বাসে আগুন

বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে জামায়াতের দুই ছাত্রনেতা আশরাফ ও মুঈনুদ্দীনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পঞ্চগড়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, রাতে তীব্র শীত—দিনে ঝলমলে রোদ

পঞ্চগড় প্রতিনিধি 
পঞ্চগড় সদর উপজেলা তালমা এলাকা থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
পঞ্চগড় সদর উপজেলা তালমা এলাকা থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

উত্তরের জনপদ পঞ্চগড়ে টানা পাঁচ দিন ধরে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রাতের কনকনে ঠান্ডা হাওয়ায় শীতের তীব্রতা বাড়লেও দিনে ঝলমলে রোদে স্বস্তি পাচ্ছেন মানুষ। তবে ভোর ও রাতে শীতের দাপটে জনজীবন কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে।

সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৮৯ শতাংশ। বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯ থেকে ১০ কিলোমিটার, যা শীতের অনুভূতিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

সকালে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কুয়াশাহীন ভোরে সূর্যের ঝলমলে আলোয় প্রকৃতি স্নিগ্ধ হয়ে উঠেছে। রোদের উপস্থিতিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে স্বাভাবিক কর্মচাঞ্চল্যও লক্ষ্য করা গেছে।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের তথ্যে জানা যায়, গত এক সপ্তাহে তাপমাত্রায় ওঠানামা দেখা গেছে। আজ সোমবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে রোববার ও শনিবার ৯ দশমিক ৩, শুক্রবার ৯ দশমিক ৫, বৃহস্পতিবার ৮ দশমিক ৯, বুধবার ও মঙ্গলবার ১০ দশমিক ৭ এবং আগের সোমবার ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। গতকাল রোববার দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সংজ্ঞা অনুযায়ী, তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি হলে মাঝারি এবং ৬ ডিগ্রির নিচে নামলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে গণ্য করা হয়। সে হিসেবে বর্তমানে তেঁতুলিয়ায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বিরাজ করছে।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় বলেন, কয়েক দিনে জেলার তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমছে। বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় শীতের অনুভূতি আরও তীব্র হচ্ছে। পরিস্থিতি আরও কয়েক দিন স্থায়ী হতে পারে। রাত ও ভোরে তাপমাত্রা আরও কমে শীতের দাপট বাড়তে পারে বলেও জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সাংবাদিক আনিস আলমগীর ডিবি হেফাজতে, জিজ্ঞাসাবাদ হবে

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: ফয়সালের স্ত্রীসহ আরও তিনজন গ্রেপ্তার

বন্ডাই বিচে হামলাকারীর অস্ত্র কেড়ে নিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন, কে এই পথচারী

বাড্ডায় যাত্রীবাহী বাসে আগুন

বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে জামায়াতের দুই ছাত্রনেতা আশরাফ ও মুঈনুদ্দীনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সুদানে শান্তিরক্ষী মিশনে হামলায় আহত লে. কর্নেল খালেকুজ্জামান, উদ্বেগে পরিবার

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
আহত লে. কর্নেল খালেকুজ্জামানের বাড়ি। ছবি: আজকের পত্রিকা
আহত লে. কর্নেল খালেকুজ্জামানের বাড়ি। ছবি: আজকের পত্রিকা

সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সন্ত্রাসী হামলায় আহত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লে. কর্নেল খালেকুজ্জামানের পরিবার দিন কাটাচ্ছে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায়। তাঁর বাড়ি কুষ্টিয়া শহরের ঈদগাহ পাড়ায়।

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তিনি সুদানে শান্তিরক্ষা মিশনে যোগ দেন। এর আগে তিনি বগুড়া ক্যান্টনমেন্টে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার (সিও) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) ছবি প্রকাশের পর বিষয়টি জানতে পারে পরিবার। এর পর থেকেই স্বজনদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে।

আহত সেনা কর্মকর্তার বড় বোন শামীমা আক্তার মোবাইল ফোনে জানান, সন্ত্রাসী হামলায় স্প্লিন্টারের আঘাতে খালেকুজ্জামানের বাঁ হাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে তাঁর অবস্থা গুরুতর নয়। ঘটনার পরপরই হেলিকপ্টারে করে তাঁকে আবি শহরের একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁর চিকিৎসা চলছে। পরিবারের সঙ্গে তাঁর নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে বলেও জানান তিনি।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, লে. কর্নেল খালেকুজ্জামান একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। তাঁর বাবা খন্দকার আক্তারুজ্জামান (মৃত)। পরিবারের সদস্যরা বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় বসবাস করেন।

রোববার বিকেল ৪টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের ঈদগাহ পাড়ায় খালেকুজ্জামানের বাড়িতে গিয়ে মূল ফটকে তালা ঝুলতে দেখা যায়। এ সময় পাশের বাড়িতে বসবাসরত তাঁর চাচা ও খালাতো বোনের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা জানান, খালেকুজ্জামানের মা বর্তমানে শহরের গোশালা রোড এলাকায় থাকেন। তবে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি। মোবাইল ফোনে শুধু জানান, ছেলের আহত হওয়ার খবর তিনি পেয়েছেন।

খালেকুজ্জামানের খালাতো বোন গুলশান আরা হাসান বলেন, ‘খালেকুজ্জামান আমাদের সামনে মানুষ হয়েছে। খুব ভালো ছেলে। শুনেছি শান্তিরক্ষা মিশনে গিয়ে হাতে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। দোয়া করি, সে যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে।’

চাচা খন্দকার আসাদুজ্জামান খোকন অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলেন, ‘খালেকুজ্জামান আমার মেজো ভাইয়ের ছেলে। শান্তিরক্ষা মিশনে গিয়ে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছে। সেখানে তার কয়েকজন সহকর্মী নিহত হয়েছেন বলে শুনেছি। সে নিজেও গুলিবিদ্ধ হয়েছে।’ তিনি আরও জানান, খালেকুজ্জামান বিবাহিত এবং তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সাংবাদিক আনিস আলমগীর ডিবি হেফাজতে, জিজ্ঞাসাবাদ হবে

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: ফয়সালের স্ত্রীসহ আরও তিনজন গ্রেপ্তার

বন্ডাই বিচে হামলাকারীর অস্ত্র কেড়ে নিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন, কে এই পথচারী

বাড্ডায় যাত্রীবাহী বাসে আগুন

বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে জামায়াতের দুই ছাত্রনেতা আশরাফ ও মুঈনুদ্দীনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যমুনার ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে আশ্রয়ের খোঁজে আব্দুল রাজ্জাক দম্পতি

আব্দুল্লাহ আল মারুফ, সিরাজগঞ্জ
যমুনার ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে অন্যের দেওয়া এই ডেরাঘরে আশ্রয় নিয়েছেন আব্দুল রাজ্জাক দম্পতি। ছবি: আজকের পত্রিকা
যমুনার ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে অন্যের দেওয়া এই ডেরাঘরে আশ্রয় নিয়েছেন আব্দুল রাজ্জাক দম্পতি। ছবি: আজকের পত্রিকা

সাদা দাড়িতে অর্ধেক মেহেদি, কপালে গভীর চিন্তার ভাঁজ। ডান পায়ে ফোঁড়ার// কারণে বাঁধা ব্যান্ডেজ। কাঠের টুলে বসে থাকা মানুষটির দিকে তাকালে বোঝার উপায় নেই—মাত্র এক বছর আগেও তিনি ছিলেন সাড়ে চার বিঘা আবাদি জমির মালিক।

৬৬ বছর বয়সী এই বৃদ্ধের নাম আব্দুল রাজ্জাক। স্ত্রী মর্জিনা বেগমের বয়স ৫৫। চার ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে একসময় ভালোই চলছিল তাঁদের সংসার। জমিতে বছরে বিভিন্ন সময়ে গম, ভুট্টা, খেসারি, কালাই ও বাদামের চাষ হতো। পরিশ্রম করেই চলত জীবন। তবে হঠাৎ করেই সবকিছু বদলে দেয় যমুনা নদীর ভাঙন।

ভিটেবাড়ি ও ফসলি জমি একে একে নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় এখন আব্দুল রাজ্জাক দম্পতি কার্যত আশ্রয়হীন। একসময় যাঁর নিজের জমি ছিল, আজ তিনি অন্যের দেওয়া সামান্য জমিতে মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজছেন। বন, বস্তার চাটাই আর পলিথিনে মোড়ানো ছোট একটি ঘরই তাঁদের বর্তমান ঠিকানা। আব্দুল রাজ্জাক সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কাওয়াখোলা ইউনিয়নের দোরতা এলাকার বাসিন্দা। তিনি ওই এলাকার মৃত রহিজ তালুকদারের ছেলে।

শনিবার দুপুর গড়িয়ে বিকেলে সিরাজগঞ্জ ক্রসবার এলাকায় প্লাস্টিকের টুলে বসে কথা বলছিলেন আব্দুল রাজ্জাক। তিনি জানান, তাঁর দাদার প্রায় ২৪ বিঘা জমি ছিল। উত্তরাধিকার সূত্রে তিনি পান সাড়ে চার বিঘা। গত বছরেও সেই জমিতে গম, ভুট্টা, কালাইসহ নানা ফসল আবাদ করেছিলেন। ‘বুড়া-বুড়ির ভালোই চলছিল,’ বলেন তিনি।

সন্তানদের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কিছুক্ষণ নীরব থাকেন আব্দুল রাজ্জাক। এরপর ধীর কণ্ঠে বলেন, ‘ওদের নিজেদেরই খুব কষ্ট। আমাদের দেখবে কীভাবে?’

বর্তমানে ফুফাতো ভাইয়ের জমির ওপর কোনোমতে আশ্রয় নিয়েছেন তাঁরা। শীত এলে দুর্ভোগ আরও বাড়ে। আয়ের একমাত্র সম্বল পাঁচটি গরু। তবে বয়স ও শারীরিক অসুস্থতার কারণে এখন বাইরে গিয়ে কাজ করতে পারেন না তিনি।

আব্দুল রাজ্জাক বলেন, ‘তোমার চাচি যমুনার চরে গিয়ে গরুর জন্য ঘাস কেটে আনে। আর অন্যদের সামান্য সহযোগিতা আর মেয়েরা মাঝে মাঝে যা দেয়, তা দিয়েই কোনোমতে সংসার চলে।’

কথার একপর্যায়ে তাঁর কণ্ঠ ভারী হয়ে আসে। শেষবারের মতো বলেন, ‘আমাকে যদি কেউ একটা ঘর আর মাসে মাসে একটু খাবার বা কিছু টাকার ব্যবস্থা করে দিত, তাহলে সারা জীবন দোয়া করতাম।’

যমুনার ভাঙনে হারিয়ে যাওয়া অসংখ্য জীবনের ভিড়ে আব্দুল রাজ্জাক ও মর্জিনা বেগমের গল্পটি শুধু একটি উদাহরণ—নদীভাঙনে সর্বস্ব হারানো মানুষের নীরব দীর্ঘশ্বাসের গল্প।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সাংবাদিক আনিস আলমগীর ডিবি হেফাজতে, জিজ্ঞাসাবাদ হবে

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: ফয়সালের স্ত্রীসহ আরও তিনজন গ্রেপ্তার

বন্ডাই বিচে হামলাকারীর অস্ত্র কেড়ে নিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন, কে এই পথচারী

বাড্ডায় যাত্রীবাহী বাসে আগুন

বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে জামায়াতের দুই ছাত্রনেতা আশরাফ ও মুঈনুদ্দীনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খুলনার পূর্ব রূপসায় যুবককে গুলি করে হত্যা

খুলনা প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

খুলনার পূর্ব রূপসায় দুর্বৃত্তের গুলিতে সাগর শেখ (৩৮) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রাত ১১টার দিকে রূপসা সেতুর পূর্বপাশে জাপুসা চৌরাস্তা সিএনজি স্টেশনের পাশে এ ঘটনা ঘটে। নিহত যুবক গ্রিন বাংলা আবাসিকের পেছনের বাসিন্দা ফয়েক শেখের ছেলে। তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রূপসা থানার এসআই সৌরভ দাশ।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, রাত সাড়ে ১০ টার দিকে সাগর বাড়ির দিকে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে রাত ১১টায় কয়েকজন যুবক তার গতি রোধ করে এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে। একটি গুলি তার মাথায় এবং অপরটি তার হাঁটুতে লাগে। গুলির শব্দে আশপাশের লোকজন ছুটে এলে দুর্বৃত্তরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরবর্তী সময়ে তাঁকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে সেখানকার চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

রূপসা থানার এএসআই গৌতম বলেন, গোলাগুলির শব্দ শুনতে পেয়ে ওই এলাকার বাসিন্দা আ. রহমান রাতে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে ঘটনার বিস্তারিত জানায়। পরে ৯৯৯ থেকে আমাদের ফোন দিয়ে বিষয়টি জানানো হয়।

রূপসা থানার এসআই সৌরভ দাশ বলেন, ‘রাতে জাপুসা এলাকায় ডিউটি করছিলাম। থানা থেকে ফোন আসলে ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিষয়টি জানার চেষ্টা করি। পরে জানতে পারলাম তারা এখানে জায়গা কিনে নতুন বাড়ি করেছে।’ তবে কারা এবং কী কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে তার প্রকৃত কারণ তিনি বলতে পারেনি।

রূপসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আ. রাজ্জাক মীর বলেন, ‘ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। খুনিদের গ্রেপ্তারে আশপাশের এলাকায় অভিযান শুরু হয়েছে। বিষয়টি তদন্তাধীন আছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সাংবাদিক আনিস আলমগীর ডিবি হেফাজতে, জিজ্ঞাসাবাদ হবে

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: ফয়সালের স্ত্রীসহ আরও তিনজন গ্রেপ্তার

বন্ডাই বিচে হামলাকারীর অস্ত্র কেড়ে নিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন, কে এই পথচারী

বাড্ডায় যাত্রীবাহী বাসে আগুন

বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে জামায়াতের দুই ছাত্রনেতা আশরাফ ও মুঈনুদ্দীনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত