Ajker Patrika

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি: মা-দাদির লাশও পাননি পা হারানো রেবেকা, খোঁজ মেলেনি শাবানার

মেহেদী হাসান, দিনাজপুর
আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০২৩, ২০: ৫০
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি: মা-দাদির লাশও পাননি পা হারানো রেবেকা, খোঁজ মেলেনি শাবানার

‘এই তো গতকালই ছিল ঈদের দিন, সবাই তাদের স্বামী সন্তান নিয়ে ঘুরছে। এক হতভাগা আমিই পারিনি আমার সন্তানদের নিয়ে কোথাও বের হতে। ঘুরেফিরে বাড়িতেই আছি। আর সন্তানেরাও আমাকে নিয়ে যেতে পারছে না কোথাও। স্বামী, সন্তানদের প্রয়োজনে তাদের কাছেও যেতে পারি না। হয়তো কিছু টাকা পেয়েছি, কেউ একটা বাড়ি করে দিয়েছে, কিন্তু কেউ কী আমার পা দুটো ফিরিয়ে দিতে পারবে? যা দিয়ে আমি আগের মতো স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারব!’ 

কান্না জড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ঢাকার সাভারে রানা প্লাজা ধসে দুই পা হারানো পোশাকশ্রমিক রেবেকা খাতুন। তিনি দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার আলাদীপুর ইউনিয়নের বারাই চেয়ারম্যানপাড়া গ্রামের রাজমিস্ত্রি মোস্তাফিজার রহমানের স্ত্রী। 

২৪ এপ্রিল ভয়াবহ রানা ট্র্যাজেডির ১০ বছরপূর্ণ হবে। সেদিনের ভয়াবহ দুর্ঘটনায় দুই পা হারিয়ে পঙ্গুত্ব বরণকারী পোশাকশ্রমিক রেবেকা সেই ভয়াল দুঃসহ স্মৃতি বহন করছেন এখনো। আজও কান্না থামেনি তাঁর। রানা প্লাজার ঘটনায় হারানো দুই পায়ে জরুরি অপারেশন করার প্রয়োজন ছিল, কিন্তু করতে পারেননি। এখন বেশি চলাফেরা করলেই পা ব্যথা করে তাঁর। 

আজ রোববার দুপুরে কথা হয় রানা প্লাজায় দুর্ঘটনায় দুই পা হারিয়ে পঙ্গুত্ব বরণকারী পোশাকশ্রমিক রেবেকা খাতুন এবং একই ঘটনায় নিখোঁজ হওয়া উপজেলার কাজিহাল ডাঙ্গা গ্রামের গুলশান আক্তার শাবানার পরিবারের সঙ্গে। 

ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে রেবেকা জানান, ঘটনার আগের দিন অর্থাৎ ২৩ এপ্রিল রানা প্লাজায় ফাটল দেখে শ্রমিকেরা কর্তৃপক্ষকে জানালে বিকেল চারটায় ছুটি দিয়ে দেয়। পরদিন সকাল আটটায় যথারীতি কাজে এসে বিল্ডিংয়ের ফাটলের কারণে কাজে যোগ দিতে চাননি তাঁরা। কিন্তু রানা প্লাজা কর্তৃপক্ষ হুমকি দিয়ে বলে, ‘বেতন, ভাতাসহ ওভারটাইমের টাকা দেওয়া হবে না। সেই সঙ্গে চাকরিচ্যুত করা হবে।’ বকেয়া টাকা এবং চাকরি হারানোর ভয়ে সব শ্রমিকের সঙ্গে তিনিও সেদিন কাজে যোগ দেন বলে জানান রেবেকা। 

এ ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন রেবেকা মা চান বানু ও দাদি কোহিনুর বেওয়া। আজও পাননি তাঁদের খোঁজ। জানতে চাইলে রেবেকা জানান, ঘটনার দিন সকাল নয়টায় তাঁর মা চান বানু নাশতা খাওয়ার কথা বললে তিনি বলেন, ‘একটু কাজ আছে তা শেষ করে পরেই খাব মা।’ কিন্তু এরপর তিন দিন মুখে আর খাবার জোটেনি রেবেকার। দুর্ঘটনায় অচেতন হয়ে তিন দিন আটক পড়ে ছিলেন ওই বিল্ডিংয়ের ধ্বংসস্তূপের নিচে। জ্ঞান ফিরলে তৃষ্ণায় বুক ফেটে গেলেও পাননি পানি। তখন গায়ের ঘাম শুষে নেওয়াসহ নিজের মূত্র পান করতে হয়েছে তাঁকে। পরে উদ্ধার কর্মীরা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। এরপর নিজেকে হাসপাতালে আবিষ্কার করে তিনি। পরে তিনি জানতে পারেন তাঁর শরীরে অপরিহার্য দুটি পা আর নেই। ঘটনার পর তাঁর দুই পায়ে আটবার অপারেশন করা হয়েছে। দীর্ঘ এক বছর ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে কর্মহীন হয়ে গ্রামে ফিরে আসেন তিনি। 

সঞ্চয়পত্রের লভ্যাংশ থেকে প্রতি মাসে পাওয়া ৯ হাজার ১০০ টাকা দিয়ে স্বামী-সন্তানদের নিয়ে দিন কাটছে রেবেকা খাতুনের। ছবি: আজকের পত্রিকা

কান্না জড়িত কণ্ঠে রেবেকা বলেন, ‘সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হলো ওই দিন আমি আমার গর্ভধারিণী মা চান বানু ও দাদি কোহিনুর বেওয়াকেও হারিয়েছি। তাঁদের মরদেহ আজও খুঁজে পাইনি। আমার জীবন থেকে যা কিছু হারিয়ে গেছে তা আর ফিরে পাব না।’ 

এদিকে এরই মধ্যে তাঁর পঙ্গুত্ব; জীবনজুড়ে আসে প্রথম সন্তান ছিদরাতুন মুনতাহা। বর্তমানে তাঁর বয়স নয় বছর চলছে। স্থানীয় বারাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে সে। পরে আরেকটি ছেলেসন্তানের জন্ম দেন। তার নাম মাদানী আন-নুর। তার বয়স তিন বছর। আক্ষেপ করে রেবেকা বলেন, ‘পঙ্গুত্বের কারণে সন্তানদের পুরো সময় দিতে পারি না। ইচ্ছে করলেও অন্য মায়েদের মতো নিজের সন্তানদের করতে পারি না আদর-যত্ন। কিংবা স্বামীর প্রয়োজনে কাজে আসতে পারি না।’ 

রেবেকা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, ‘সরকারি নিয়ম অনুযায়ী দুই পা হারানোরা ক্ষতিপূরণ বাবদ ১৫ লাখ টাকা পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই সময় চিকিৎসাজনিত ভুল তথ্যের কারণে ক্ষতি পূরণের পাঁচ লাখ টাকা কম পেয়েছি। ১৫ লাখ টাকার স্থলে পেয়েছি ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র।’

সেই সঞ্চয়পত্রের লভ্যাংশ প্রতি মাসে ৯ হাজার ১০০ টাকা করে পান। তা দিয়েই বর্তমানে চলছে রেবেকার সংসার জীবন।

সারাক্ষণ রেবেকাকে সহযোগিতা করতে পাশে থাকতে হয় তাঁর স্বামীকে. তাই তিনিও সে রকম কাজে যেতে পারেন না। একটি বেসরকারি সংস্থা তাঁর দুটি কৃত্রিম পায়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। কোথাও গেলে ওই পা লাগিয়ে শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করে কষ্টকর হলেও চলতে হয় তাঁকে। স্বামী ছাড়া তেমন চলাফেরা বা কোনো কাজ করতে পারেন না তিনি। 

 ২০২১ সালে ৫ শতাংশ জমিতে বারাই হাট এলাকায় বেসরকারি সংস্থা একটি পাকা টিনশেডের বাড়ি করে দিয়েছে। কিন্তু সেখানেও বসবাস করতে পারেন না তিনি। কারণ, ফাঁকা জায়গা আশপাশে তেমন বাড়িঘর নেই এবং স্বামীর অবর্তমানে দেখাশোনা করার মতো কেউ না থাকায় আগের মাটির বাড়িতেই থাকেন বলে জানান রেবেকা। 

আক্ষেপ করে রেবেকা খাতুন আরও বলেন, ‘একজন কর্মক্ষম মানুষ এভাবে চলতে পারে না। পা হারিয়ে আজ কর্মহীন হয়ে সারা দিন বাড়িতে বসে কাটাতে হয়। স্বামী-সন্তানের প্রয়োজনেও তেমন কাজে আসতে পারি না। হয়তো কিছু টাকা পেয়েছি, কেউ একটা বাড়ি করে দিয়েছে, কিন্তু কেউ কী আমার পা দুটো ফিরিয়ে দিতে পারবে? যা দিয়ে আমি আগের মতো স্বাভাবিক ভাবে হেঁটে-চলা করতে পারব!’ 

রেবেকা খাতুনের স্বামী মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ‘ওই দুর্ঘটনার পর থেকে আমার স্ত্রী রেবেকা একা চলাফেরা করতে পারে না। আমাকেই স্ত্রীসহ সন্তানদের দেখাশোনা করতে হয়। সে কারণে আর কাজ করতে পারি না। সঞ্চয়পত্রের থেকে প্রতি মাসে পাওয়া টাকা দিয়েই বর্তমানে আমাদের সংসার চলছে।’ 

মোস্তাফিজার বলেন, ‘আগে আমি কাজ করতাম। সেও কাজ করত। আমাদের সংসারে সচ্ছলতা ছিল। একটি দুর্ঘটনায় আজ আমাদের সংসার তছনছ হয়ে গেল। আমরা ওই গার্মেন্টস মালিকের শাস্তি চাই।’

একই ঘটনায় মা-দাদিকে হারিয়ে আজও কান্না থামেনি রেবেকার। ছবি: আজকের পত্রিকাএদিকে একই ঘটনায় নিখোঁজ হন উপজেলার কাজিহাল ইউনয়নের ডাঙ্গা গ্রামের আতাউর রহমানের স্ত্রী পোশাকশ্রমিক গুলশান আক্তার শাবানা। জানতে চাইলে স্বামী আতাউর রহমান বলেন, ‘প্রতিদিনের মতোই শাবানা ওই দিন রানা প্লাজায় কাজ করতে যায়। ঘটনার পর আর তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। তবে নিখোঁজ তালিকায় শাবানার নাম ছিল। নিখোঁজ তালিকার সূত্র ধরে সেই সময় ১৩ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পেলেও পাইনি স্ত্রীকে কিংবা তার মরদেহ।’ 

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধস বিশ্বের সবচেয়ে বড় শিল্প দুর্ঘটনার একটি। এতে ১ হাজার ১৩৮ জন পোশাকশ্রমিকের করুণ মৃত্যু হয়। আহত হন আরও দুই সহস্রাধিক শ্রমিক। মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনায় পুরো বিশ্ব স্তম্ভিত হয়ে পড়েছিল। ভয়াবহ সেই বিপর্যয়ের রেশ রয়ে গেছে আজও। আহতদের অনেকে এখনো আতঙ্কগ্রস্ত। এরই মাঝে বেঁচে থাকার তাগিদে নতুন পথ খুঁজছেন তারা, এখনো অনেকেই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন ঘুরে দাঁড়ানোর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চন্দনাইশে অলিপুত্রের সমর্থনে সরে দাঁড়ালেন জামায়াতের প্রার্থী

চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি  
মো. শাহাদাৎ হোসেন ও ওমর ফারুক। ছবি: সংগৃহীত
মো. শাহাদাৎ হোসেন ও ওমর ফারুক। ছবি: সংগৃহীত

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ-সাতকানিয়া আংশিক) আসনে নির্বাচনী লড়াই থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী ডা. মো. শাহাদাৎ হোসেন। জোটগত সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানিয়ে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান ড. কর্নেল অলি আহমদের (বীর বিক্রম) ছেলে ওমর ফারুকের পক্ষে তিনি নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের এই ঘোষণা দেন।

গতকাল সোমবার রাতে মো. শাহাদাৎ হোসেন তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলে একটি পোস্টের মাধ্যমে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের কথা জানান। দীর্ঘ ১০ মাস ১২ দিন প্রচার-প্রচারণা চালানোর পর সংগঠনের সিদ্ধান্তের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য প্রকাশ করে তিনি লেখেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ! দীর্ঘ ১০ মাস ১২ দিন পর আজ এক বড় জবাবদিহিতার জিম্মাদারি থেকে মুক্তি পেলাম। জোটের বৃহৎ স্বার্থে জনগণের ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও আমরা সকলেই সংগঠনের সিদ্ধান্তের প্রতি পরিপূর্ণ আনুগত্য প্রদর্শন করলাম। ইনসাফের বাংলাদেশ গড়তে আমরা সর্বদা একযোগে কাজ করব ইনশা আল্লাহ।’

শাহাদাৎ হোসেন জামায়াতে ইসলামীর কোনো পদ-পদবিতে না থাকলেও দলের একজন একনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছিলেন এবং মাঠপর্যায়ে ব্যাপক জনমত তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। নিজের আসনটি তিনি অলি আহমদের ছেলের জন্য সহজে ছেড়ে দিতে রাজি হবেন কি না, তা নিয়ে স্থানীয় রাজনীতিতে ব্যাপক কৌতূহল ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত তাঁর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে জোটের ঐক্য সুসংহত করার একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঠাকুরগাঁওয়ে অবৈধ ভাটা গুঁড়িয়ে দিল প্রশাসন

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ভপলা এলাকায় অবস্থিত মেসার্স ফাইজুল ব্রিকস নামের অবৈধ ইটভাটা চিমনিসহ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ভপলা এলাকায় অবস্থিত মেসার্স ফাইজুল ব্রিকস নামের অবৈধ ইটভাটা চিমনিসহ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

পরিবেশ রক্ষায় জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চলছে। তারই ধারাবাহিকতায় আজ মঙ্গলবার সদর উপজেলার ভপলা এলাকায় অবস্থিত মেসার্স ফাইজুল ব্রিকস নামের অবৈধ ইটভাটা চিমনিসহ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন অনুযায়ী ভাটামালিককে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

অভিযানটি পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আক্তারুজ্জামান। প্রসিকিউটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন পরিবেশ অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁও জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. তামিম হাসান। অভিযানে পুলিশ, আনসার, সেনাবাহিনী এবং ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা সার্বিক সহযোগিতা করেন।

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়া এবং নিষিদ্ধ এলাকায় গড়ে ওঠা এই ইটভাটা দীর্ঘদিন ধরে কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। এতে ফসলি জমির ফসল ও মাটির উর্বরতা নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি বায়ুদূষণ বাড়ছিল। অভিযানে ভাটার চুল্লি ভেঙে ফেলা হয় এবং কাঁচা ইট নষ্ট করে দেওয়া হয়।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আক্তারুজ্জামান জানান, পরিবেশ ও জনস্বার্থ রক্ষায় অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে। আইন অমান্যকারী কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দিনাজপুরের মেয়ে পুতুলের স্মৃতিবিজড়িত তৈয়বা ভিলায় শোকের ছায়া

দিনাজপুর প্রতিনিধি
বেগম খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি
বেগম খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি

দেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে দিনাজপুরে। খালেদা জিয়ার পৈতৃক নিবাস দিনাজপুর শহরের বালুবাড়ি এলাকায়। এই বালুবাড়ি এলাকায় তৈয়বা ভিলা বাড়িতেই কেটেছে খালেদা জিয়ার শৈশব ও কৈশোরের দিনগুলো। আজ সকাল থেকে তৈয়বা ভিলার সামনে জড়ো হয়েছেন শোকার্ত স্থানীয় মানুষ, দলীয় নেতা-কর্মী ও গণমাধ্যমকর্মীরা।  

খালেদা জিয়ার পারিবারিক নাম খালেদা খানম পুতুল। উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট দিনাজপুরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ইস্কান্দার মজুমদার ও মা তৈয়বা মজুমদার। বর্তমানে খালেদা জিয়ার স্মৃতিবিজড়িত তৈয়বা ভিলায় বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার করা হয়েছে।

আজ সকালে খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর শুনে শহরের জেলমোড় এলাকায় দলীয় কার্যালয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ছুটে যান ।

দলীয় কার্যালয় ও বালুবাড়ির পৈতৃক নিবাসে কোরআন তেলাওয়াতের আয়োজন করা হয়েছে।  

বেগম খালেদা জিয়ার আপন খালাতো ভাই আবু তাহের আবু বলেন, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) ছিলেন আমাদের অভিভাবক। নিজের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে তিনি ছিলেন খুবই আন্তরিক। ১৯৯১ সালের তিনি যখন প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দিনাজপুরে এলেন, এসে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কিরে পটল কেমন আছিস? তিনি আদর করে আমাকে পটল বলে ডাকতেন। তিনি বাসায় এলে সবার কথা শুনতেন। সবশেষ  ২০১২  সালের  সেপ্টেম্বরে একবার দিনাজপুর গোরে শহীদ ময়দানে এক জনসভায় এসেছিলেন তিনি। তারও আগে  ২০০৮ সালে মায়ের মৃত্যুর সময় একবার দিনাজপুরে এসেছিলেন।’

পাঁচ বছর বয়সে দিনাজপুর মিশন স্কুলে শিক্ষাজীবন শুরু হয় খালেদা জিয়ার। এরপর  ১৯৬০ সালে ভর্তি হন দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে।  

সেখান থেকেই ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। পরবর্তীকালে ভর্তি হন দিনাজপুর সরকারি কলেজে (পূর্বের নাম সুরেন্দ্রনাথ কলেজ)।

খালেদা জিয়ার স্মৃতিবিজড়িত তৈয়বা ভিলায় বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার করা হয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
খালেদা জিয়ার স্মৃতিবিজড়িত তৈয়বা ভিলায় বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার করা হয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমা ইয়াসমিনবলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া দিনাজপুরের গর্ব, দেশের গর্ব। আমরা গর্ব করে বলি,  তিনি এই বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছেন। প্রথম নারী হিসেবে দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তাঁর মৃত্যুতে দেশ আজকে একজন অভিভাবক হারাল।’

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো নিজের জন্মস্থানে প্রার্থী হয়েছিলেন খালেদা জিয়া। ২৮ ডিসেম্বর জেলা বিএনপির সভাপতি,  সাধারণ সম্পাদকসহ দলীয় নেতা-কর্মীরা তাঁর পক্ষে মনোনয়নপত্র জমাও দিয়েছিলেন। দিনাজপুর-৩ আসনে দলের 

চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অংশগ্রহণের কথা শুনে সব বিভেদ ভুলে একাট্টা হয়েছিলেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। প্রত্যেকে নিজ নিজ জায়গা থেকে প্রিয় নেত্রীর পক্ষে প্রচারণাও চালিয়েছেন।  

তাঁর মৃত্যুতে জেলা বিএনপির সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন দুলাল বলেন, ‘বাংলাদেশের অবিসংবাদিত আপসহীন নেত্রীকে হারিয়ে দেশ আজ একজন 

অভিভাবককে হারাল। এই শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। সবশেষ তিনি অসুস্থ হওয়ার কয়েক দিন আগে দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে প্রিয় নেত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। দিনাজপুরের মানুষ তাঁকে প্রার্থী হিসেবে পেয়ে ভীষণ উচ্ছ্বসিত ছিলেন। দিনাজপুরের উন্নয়নে 

স্বাক্ষর রেখে গেলেন। জাতির বড় প্রয়োজনের সময় আমরা তাঁকে হারালাম। এই দেশ জাতির ইতিহাসে তিনি কিংবদন্তী।’

জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি মো. মোকাররম হোসেন বলেন, ‘আমরা আমাদের অভিভাবককে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছি। দলের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মী সবাই শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছে। জেলার সকল এলাকা থেকে নেতা-কর্মীরা তাঁর জানাজায় শরিক হওয়ার জন্য রাজধানীর পথে রওনা দিতে শুরু করেছে। তাঁর মৃত্যু আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গাজীপুরে ২ বিদেশি পিস্তল ও ২৪টি গুলিসহ ‘মিয়া কসাই’ গ্রেপ্তার

গাজীপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ৫২
অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার যুবক। ছবি: আজকের পত্রিকা
অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার যুবক। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২টি বিদেশি পিস্তল, ৪টি ম্যাগাজিন, ২৪টি গুলিসহ মোসলেম উদ্দিন মিয়া ওরফে মিয়া কসাই (৪০) নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ১০টার দিকে মহানগরীর গাছা থানাধীন দক্ষিণ খাইলকুর পূর্বপাড়া এলাকার বগারটেক চায়না ফ্যাক্টরি গলির একটি ভাড়া বাসায় অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

জিএমপি গাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে দক্ষিণ খাইলকুর এলাকার তাহেরের বাড়িতে অভিযান চালায়। ওই বাড়ির ভাড়াটিয়া মোসলেম উদ্দিনের কক্ষে তল্লাশি চালিয়ে অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে একটি ৭.৬৫ এমএম ও একটি ৯ এমএম বিদেশি পিস্তল, ৪টি ম্যাগাজিন ও ২৪টি তাজা গুলি।

গ্রেপ্তার মোসলেম উদ্দিন মিয়া ঢাকা মহানগরের হাতিরঝিল থানার মগবাজার নয়াটোলা এলাকার মৃত জালাল মিয়ার ছেলে। পুলিশ জানায়, তিনি এলাকায় ‘মিয়া কসাই’ নামে পরিচিত। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। নতুন করে গাছা থানায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে। আসামিকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত