Ajker Patrika

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি: মা-দাদির লাশও পাননি পা হারানো রেবেকা, খোঁজ মেলেনি শাবানার

মেহেদী হাসান, দিনাজপুর
আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০২৩, ২০: ৫০
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি: মা-দাদির লাশও পাননি পা হারানো রেবেকা, খোঁজ মেলেনি শাবানার

‘এই তো গতকালই ছিল ঈদের দিন, সবাই তাদের স্বামী সন্তান নিয়ে ঘুরছে। এক হতভাগা আমিই পারিনি আমার সন্তানদের নিয়ে কোথাও বের হতে। ঘুরেফিরে বাড়িতেই আছি। আর সন্তানেরাও আমাকে নিয়ে যেতে পারছে না কোথাও। স্বামী, সন্তানদের প্রয়োজনে তাদের কাছেও যেতে পারি না। হয়তো কিছু টাকা পেয়েছি, কেউ একটা বাড়ি করে দিয়েছে, কিন্তু কেউ কী আমার পা দুটো ফিরিয়ে দিতে পারবে? যা দিয়ে আমি আগের মতো স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারব!’ 

কান্না জড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ঢাকার সাভারে রানা প্লাজা ধসে দুই পা হারানো পোশাকশ্রমিক রেবেকা খাতুন। তিনি দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার আলাদীপুর ইউনিয়নের বারাই চেয়ারম্যানপাড়া গ্রামের রাজমিস্ত্রি মোস্তাফিজার রহমানের স্ত্রী। 

২৪ এপ্রিল ভয়াবহ রানা ট্র্যাজেডির ১০ বছরপূর্ণ হবে। সেদিনের ভয়াবহ দুর্ঘটনায় দুই পা হারিয়ে পঙ্গুত্ব বরণকারী পোশাকশ্রমিক রেবেকা সেই ভয়াল দুঃসহ স্মৃতি বহন করছেন এখনো। আজও কান্না থামেনি তাঁর। রানা প্লাজার ঘটনায় হারানো দুই পায়ে জরুরি অপারেশন করার প্রয়োজন ছিল, কিন্তু করতে পারেননি। এখন বেশি চলাফেরা করলেই পা ব্যথা করে তাঁর। 

আজ রোববার দুপুরে কথা হয় রানা প্লাজায় দুর্ঘটনায় দুই পা হারিয়ে পঙ্গুত্ব বরণকারী পোশাকশ্রমিক রেবেকা খাতুন এবং একই ঘটনায় নিখোঁজ হওয়া উপজেলার কাজিহাল ডাঙ্গা গ্রামের গুলশান আক্তার শাবানার পরিবারের সঙ্গে। 

ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে রেবেকা জানান, ঘটনার আগের দিন অর্থাৎ ২৩ এপ্রিল রানা প্লাজায় ফাটল দেখে শ্রমিকেরা কর্তৃপক্ষকে জানালে বিকেল চারটায় ছুটি দিয়ে দেয়। পরদিন সকাল আটটায় যথারীতি কাজে এসে বিল্ডিংয়ের ফাটলের কারণে কাজে যোগ দিতে চাননি তাঁরা। কিন্তু রানা প্লাজা কর্তৃপক্ষ হুমকি দিয়ে বলে, ‘বেতন, ভাতাসহ ওভারটাইমের টাকা দেওয়া হবে না। সেই সঙ্গে চাকরিচ্যুত করা হবে।’ বকেয়া টাকা এবং চাকরি হারানোর ভয়ে সব শ্রমিকের সঙ্গে তিনিও সেদিন কাজে যোগ দেন বলে জানান রেবেকা। 

এ ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন রেবেকা মা চান বানু ও দাদি কোহিনুর বেওয়া। আজও পাননি তাঁদের খোঁজ। জানতে চাইলে রেবেকা জানান, ঘটনার দিন সকাল নয়টায় তাঁর মা চান বানু নাশতা খাওয়ার কথা বললে তিনি বলেন, ‘একটু কাজ আছে তা শেষ করে পরেই খাব মা।’ কিন্তু এরপর তিন দিন মুখে আর খাবার জোটেনি রেবেকার। দুর্ঘটনায় অচেতন হয়ে তিন দিন আটক পড়ে ছিলেন ওই বিল্ডিংয়ের ধ্বংসস্তূপের নিচে। জ্ঞান ফিরলে তৃষ্ণায় বুক ফেটে গেলেও পাননি পানি। তখন গায়ের ঘাম শুষে নেওয়াসহ নিজের মূত্র পান করতে হয়েছে তাঁকে। পরে উদ্ধার কর্মীরা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। এরপর নিজেকে হাসপাতালে আবিষ্কার করে তিনি। পরে তিনি জানতে পারেন তাঁর শরীরে অপরিহার্য দুটি পা আর নেই। ঘটনার পর তাঁর দুই পায়ে আটবার অপারেশন করা হয়েছে। দীর্ঘ এক বছর ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে কর্মহীন হয়ে গ্রামে ফিরে আসেন তিনি। 

সঞ্চয়পত্রের লভ্যাংশ থেকে প্রতি মাসে পাওয়া ৯ হাজার ১০০ টাকা দিয়ে স্বামী-সন্তানদের নিয়ে দিন কাটছে রেবেকা খাতুনের। ছবি: আজকের পত্রিকা

কান্না জড়িত কণ্ঠে রেবেকা বলেন, ‘সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হলো ওই দিন আমি আমার গর্ভধারিণী মা চান বানু ও দাদি কোহিনুর বেওয়াকেও হারিয়েছি। তাঁদের মরদেহ আজও খুঁজে পাইনি। আমার জীবন থেকে যা কিছু হারিয়ে গেছে তা আর ফিরে পাব না।’ 

এদিকে এরই মধ্যে তাঁর পঙ্গুত্ব; জীবনজুড়ে আসে প্রথম সন্তান ছিদরাতুন মুনতাহা। বর্তমানে তাঁর বয়স নয় বছর চলছে। স্থানীয় বারাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে সে। পরে আরেকটি ছেলেসন্তানের জন্ম দেন। তার নাম মাদানী আন-নুর। তার বয়স তিন বছর। আক্ষেপ করে রেবেকা বলেন, ‘পঙ্গুত্বের কারণে সন্তানদের পুরো সময় দিতে পারি না। ইচ্ছে করলেও অন্য মায়েদের মতো নিজের সন্তানদের করতে পারি না আদর-যত্ন। কিংবা স্বামীর প্রয়োজনে কাজে আসতে পারি না।’ 

রেবেকা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, ‘সরকারি নিয়ম অনুযায়ী দুই পা হারানোরা ক্ষতিপূরণ বাবদ ১৫ লাখ টাকা পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই সময় চিকিৎসাজনিত ভুল তথ্যের কারণে ক্ষতি পূরণের পাঁচ লাখ টাকা কম পেয়েছি। ১৫ লাখ টাকার স্থলে পেয়েছি ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র।’

সেই সঞ্চয়পত্রের লভ্যাংশ প্রতি মাসে ৯ হাজার ১০০ টাকা করে পান। তা দিয়েই বর্তমানে চলছে রেবেকার সংসার জীবন।

সারাক্ষণ রেবেকাকে সহযোগিতা করতে পাশে থাকতে হয় তাঁর স্বামীকে. তাই তিনিও সে রকম কাজে যেতে পারেন না। একটি বেসরকারি সংস্থা তাঁর দুটি কৃত্রিম পায়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। কোথাও গেলে ওই পা লাগিয়ে শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করে কষ্টকর হলেও চলতে হয় তাঁকে। স্বামী ছাড়া তেমন চলাফেরা বা কোনো কাজ করতে পারেন না তিনি। 

 ২০২১ সালে ৫ শতাংশ জমিতে বারাই হাট এলাকায় বেসরকারি সংস্থা একটি পাকা টিনশেডের বাড়ি করে দিয়েছে। কিন্তু সেখানেও বসবাস করতে পারেন না তিনি। কারণ, ফাঁকা জায়গা আশপাশে তেমন বাড়িঘর নেই এবং স্বামীর অবর্তমানে দেখাশোনা করার মতো কেউ না থাকায় আগের মাটির বাড়িতেই থাকেন বলে জানান রেবেকা। 

আক্ষেপ করে রেবেকা খাতুন আরও বলেন, ‘একজন কর্মক্ষম মানুষ এভাবে চলতে পারে না। পা হারিয়ে আজ কর্মহীন হয়ে সারা দিন বাড়িতে বসে কাটাতে হয়। স্বামী-সন্তানের প্রয়োজনেও তেমন কাজে আসতে পারি না। হয়তো কিছু টাকা পেয়েছি, কেউ একটা বাড়ি করে দিয়েছে, কিন্তু কেউ কী আমার পা দুটো ফিরিয়ে দিতে পারবে? যা দিয়ে আমি আগের মতো স্বাভাবিক ভাবে হেঁটে-চলা করতে পারব!’ 

রেবেকা খাতুনের স্বামী মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ‘ওই দুর্ঘটনার পর থেকে আমার স্ত্রী রেবেকা একা চলাফেরা করতে পারে না। আমাকেই স্ত্রীসহ সন্তানদের দেখাশোনা করতে হয়। সে কারণে আর কাজ করতে পারি না। সঞ্চয়পত্রের থেকে প্রতি মাসে পাওয়া টাকা দিয়েই বর্তমানে আমাদের সংসার চলছে।’ 

মোস্তাফিজার বলেন, ‘আগে আমি কাজ করতাম। সেও কাজ করত। আমাদের সংসারে সচ্ছলতা ছিল। একটি দুর্ঘটনায় আজ আমাদের সংসার তছনছ হয়ে গেল। আমরা ওই গার্মেন্টস মালিকের শাস্তি চাই।’

একই ঘটনায় মা-দাদিকে হারিয়ে আজও কান্না থামেনি রেবেকার। ছবি: আজকের পত্রিকাএদিকে একই ঘটনায় নিখোঁজ হন উপজেলার কাজিহাল ইউনয়নের ডাঙ্গা গ্রামের আতাউর রহমানের স্ত্রী পোশাকশ্রমিক গুলশান আক্তার শাবানা। জানতে চাইলে স্বামী আতাউর রহমান বলেন, ‘প্রতিদিনের মতোই শাবানা ওই দিন রানা প্লাজায় কাজ করতে যায়। ঘটনার পর আর তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। তবে নিখোঁজ তালিকায় শাবানার নাম ছিল। নিখোঁজ তালিকার সূত্র ধরে সেই সময় ১৩ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পেলেও পাইনি স্ত্রীকে কিংবা তার মরদেহ।’ 

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধস বিশ্বের সবচেয়ে বড় শিল্প দুর্ঘটনার একটি। এতে ১ হাজার ১৩৮ জন পোশাকশ্রমিকের করুণ মৃত্যু হয়। আহত হন আরও দুই সহস্রাধিক শ্রমিক। মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনায় পুরো বিশ্ব স্তম্ভিত হয়ে পড়েছিল। ভয়াবহ সেই বিপর্যয়ের রেশ রয়ে গেছে আজও। আহতদের অনেকে এখনো আতঙ্কগ্রস্ত। এরই মাঝে বেঁচে থাকার তাগিদে নতুন পথ খুঁজছেন তারা, এখনো অনেকেই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন ঘুরে দাঁড়ানোর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

নাহিদকে শুভকামনা জানিয়ে সরে গেলেন জামায়াতের আতিক

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা এনসিপি নেত্রী মনজিলা ঝুমার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদি হত্যা মামলার প্রধান আসামি ফয়সালের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা

বাসস, ঢাকা  
হাদি হত্যা মামলায় প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ। ছবি: সংগৃহীত
হাদি হত্যা মামলায় প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ। ছবি: সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে রাহুল ওরফে দাউদের (৩৭) বিরুদ্ধে এবার অস্ত্র আইনে মামলা হয়েছে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় এ মামলা করা হয়েছে।

আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ২৩ ডিসেম্বর ফয়সাল করিম মাসুদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা করা হয়েছে। মামলার তদন্ত চলমান।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ১২ ডিসেম্বর মামলার এজাহারনামীয় আসামি ফয়সাল করিম জুলাই যোদ্ধা ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে (৩৩) আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে মাথায় গুলি করে মোটরসাইকেলযোগে পালিয়ে যান।

হাদি হত্যা মামলার আসামি ফয়সালের মা হাসি বেগম আদালতে স্বেচ্ছায় দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন, ১২ ডিসেম্বর আসামি ফয়সাল একটি কালো রঙের কাঁধের ব্যাগসহ তাঁর বোন জেসমিনের ভাড়া বাসায় আসেন। এ সময় বাড়ির দারোয়ান মাসুদ মোল্লা তিন-চারজন লোক নিয়ে জেসমিনের বাসার কলিং বেল চাপ দিলে আসামি ফয়সাল দরজার ছিদ্র দিয়ে লোকজন দেখে পুলিশ মনে করেন এবং তাঁর কাঁধের ব্যাগটি রান্নাঘরের জানালা দিয়ে নিচে ফেলে দেন।

ব্যাগটি বাসার মাঝখানে লোহার গ্রিলের ওপর গিয়ে পড়ে। পরে লোকজন চলে গেলে আসামি ফয়সালের আদেশে তাঁর মা ব্যাগটি তুলে নিয়ে আসেন।

আসামি ফয়সাল কিছু না বলে বাসা থেকে বের হয়ে অজ্ঞাত স্থানে চলে যান। পরে র‍্যাব-২ ১৫ ডিসেম্বর অভিযান চালিয়ে উক্ত বাসার মাঝখানে লোহার গ্রিলের ওপর থেকে একটি কালো রঙের ম্যাগাজিন, যার ভেতরে ছয়টি তাজা বুলেট ও একটি সিলভার কালারের ম্যাগাজিন, যার ভেতরে পাঁচটি তাজা বুলেট উদ্ধার করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

নাহিদকে শুভকামনা জানিয়ে সরে গেলেন জামায়াতের আতিক

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা এনসিপি নেত্রী মনজিলা ঝুমার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত উঠানে পড়ে রইল লাশ, সম্পত্তি নিয়ে ছেলেমেয়েদের ঝগড়া

কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি 
বাড়ির উঠানে লাশবাহী খাটিয়া। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাড়ির উঠানে লাশবাহী খাটিয়া। ছবি: আজকের পত্রিকা

‎লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধের জেরে রুহুল আমিন নামের এক বৃদ্ধের লাশ দাফনে বাধা দিয়েছেন তাঁর ছেলেমেয়েরা। আজ সোমবার উপজেলার চরলরেন্স ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। আজ ভোরের দিকে সত্তরোর্ধ্ব রুহুল আমিন মারা যান। শেষপর্যন্ত পুলিশি হস্তক্ষেপে বিকেলে বৃদ্ধের লাশ দাফন করা হয়।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, রুহুল আমিন দুই বিয়ে করেছেন। দ্বিতীয় স্ত্রীর ছেলে সোহেল রুহুল আমিনের জমিজমা ভোগদখল করছেন। অন্যদিকে বাবার বিষয়সম্পত্তি থেকে প্রথম পক্ষের সন্তানেরা বঞ্চিত হয়েছেন। রুহুল আমিনের মৃত্যুর খবর শুনে প্রথম পক্ষের সন্তান মোফাশ্বেরা বেগম, নাসিমা আক্তার, শরীফসহ সবাই বাবার সম্পত্তির হিসাব চাইতে আসেন। সোহেল তাঁদের হুমকি-ধমকি দিয়ে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এলাকাবাসীর ভিড় জমে গেলে একপর্যায়ে লাশ ফেলে চলে যান সোহেল। অন্যদিকে সম্পত্তির হিসাব না পেলে লাশ দাফনে বাধা দিতে অনঢ় থাকেন প্রথম পক্ষের সন্তানেরা।

এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন, সিদ্দিক উল্যা ও শরিফ জানান, রুহুল আমিনের অনেক বিষয়সম্পত্তি ছিল। আগের সৎভাই-বোনদের কোনো সম্পত্তি না দিয়ে সবকিছু সোহেল দখল করে রেখেছেন। এ ছাড়া এলাকার কিছু মানুষের কাছে জমি বিক্রির টাকা নিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে দেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আজকের পত্রিকাকে সোহেল বলেন, ‘আমার বাবার কোনো সম্পত্তি আমার কাছে নাই। তারা যদি লাশ দাফন করতে না দেয়, আমার কোনো আপত্তি নাই।’

চরলরেন্স ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুল খালেক বলেন, ‘লাশ দাফনে বাধার খবর শুনে এসে দেখি, মৃত রুহুল আমিনের দুই পরিবারের মধ্যে সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধ চলছে। সোহেলের কাছে রুহুলের প্রথম ঘরের ছেলেমেয়েরা সম্পত্তির হিসাব চাইলে সে বসে বিষয়টি সমাধান করতে রাজি হয়নি।’

‎এ বিষয়ে কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদুল ইসলাম জানান, পুলিশি হস্তক্ষেপে বিকেল ৫টার দিকে লাশ দাফন করা হয়েছে। ‎

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

নাহিদকে শুভকামনা জানিয়ে সরে গেলেন জামায়াতের আতিক

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা এনসিপি নেত্রী মনজিলা ঝুমার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিরো আলম মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি

বগুড়া প্রতিনিধি
বগুড়া-৪ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি হিরো আলম। ছবি: আজকের পত্রিকা
বগুড়া-৪ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি হিরো আলম। ছবি: আজকের পত্রিকা

বগুড়া-৪ আসনে আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি। আজ সোমবার বগুড়া জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা তৌফিকুর রহমানের কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় কাগজপত্রে ত্রুটি থাকায় তাঁকে ফেরত পাঠানো হয়।

পরে কাগজপত্র সংশোধন করে রিটার্নিং কার্যালয়ে আসতে আসতে মনোনয়নপত্র দাখিলের নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হয়ে যায়। ফলে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি।

জানা যায়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য গতকাল রোববার আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম সদ্য নিবন্ধিত আমজনতা দলের মনোনয়ন পান। আজ জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেন। পরে জমা দেওয়ার সময় প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে ত্রুটি থাকায় সংশোধনের জন্য তাঁকে ফেরত পাঠানো হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে হিরো আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঢাকায় আপিল করার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। দেখি এ ব্যাপারে কী করা যায়।’

বগুড়া জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা তৌফিকুর রহমান বলেন, আশরাফুল আলম মনোনয়নপত্র উত্তোলন করলেও সঠিক সময়ের মধ্যে জমা দিতে পারেননি। তাঁকে আপিল করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

নাহিদকে শুভকামনা জানিয়ে সরে গেলেন জামায়াতের আতিক

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা এনসিপি নেত্রী মনজিলা ঝুমার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মৌলভীবাজার-৪ আসনে বাবা ধানের শীষের প্রার্থী, ছেলে স্বতন্ত্র

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
মুজিবুর রহমান চৌধুরী ও তাঁর ছেলে মুঈদ আশিদ চিশতী। ছবি: সংগৃহীত
মুজিবুর রহমান চৌধুরী ও তাঁর ছেলে মুঈদ আশিদ চিশতী। ছবি: সংগৃহীত

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-৪ (কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল) আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ও দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। একই আসনে তাঁর ছেলে মুঈদ আশিদ চিশতী আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) শেষ দিনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন।

বিকেলে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আসাদুজ্জামানের কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন মুঈদ আশিদ চিশতী। ইউএনও আসাদুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) বিকেলে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কমলগঞ্জের ইউএনও কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন মুজিবুর রহমান চৌধুরী।

জানা গেছে, কোনো কারণে মুজিবুর রহমান চৌধুরীর মনোনয়নপত্র বাতিল হলে বিকল্প হিসেবে তাঁর ছেলে মুঈদ আশিদ চিশতী প্রার্থী হবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

নাহিদকে শুভকামনা জানিয়ে সরে গেলেন জামায়াতের আতিক

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা এনসিপি নেত্রী মনজিলা ঝুমার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত