Ajker Patrika

৬ লেন জাতীয় সড়ক

ভূমি অধিগ্রহণে দুর্নীতির মহোৎসব

  • অনিয়মের ক্ষেত্রে শুধু ঊর্ধ্বতনেরাই নন, বরং সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীই জড়িত।
  • ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করে দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
  • চাহিদামতো ঘুষ না দিলে ক্ষতিপূরণের টাকার চেক হস্তান্তরে করা হচ্ছে গড়িমসি।
আনোয়ার হোসেন শামীম, গাইবান্ধা
সম্প্রসারিত ছয় লেন জাতীয় মহাসড়ক নির্মাণে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে অধিগ্রহণ করা জমিতে থাকা স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। ছবিটি গত বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার পান্থাপাড়া এলাকা থেকে তোলা। আজকের পত্রিকা
সম্প্রসারিত ছয় লেন জাতীয় মহাসড়ক নির্মাণে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে অধিগ্রহণ করা জমিতে থাকা স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। ছবিটি গত বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার পান্থাপাড়া এলাকা থেকে তোলা। আজকের পত্রিকা

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সম্প্রসারিত ছয় লেন জাতীয় মহাসড়কের ভূমি অধিগ্রহণে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। জমির শ্রেণি পরিবর্তন, স্থাপনার জন্য ক্ষতিপূরণসহ নানা কাজে ঘুষ-বাণিজ্যের মহোৎসব চলছে। এতে ব্যক্তি লাভবান হলেও সরকারের কোটি কোটি টাকা গচ্চা যাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, গাইবান্ধা জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কতিপয় কর্মকর্তা, কানুনগো, সার্ভেয়ার এবং অফিস সহকারীদের যোগসাজশে চলছে এই দুর্নীতি।

আজকের পত্রিকার অনুসন্ধানে কমিশন-বাণিজ্য, ভুয়া পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিয়ে একজনের ক্ষতিপূরণ অন্য ব্যক্তিকে দিয়ে দেওয়া, প্রকৃত মালিকদের মামলা-মোকদ্দমার ফাঁদে আটকে ক্ষতিপূরণের টাকা আত্মসাৎ করাসহ নানা দুর্নীতি-অনিয়মের চিত্র উঠে এসেছে।

অনিয়মের ক্ষেত্রে শুধু ঊর্ধ্বতনেরাই নন, বরং সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীই জড়িত। তাঁদের মধ্যে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের পিয়ন হাবিব ও নজরুল ইসলাম, সার্ভেয়ার আল আমিন, কামরুজ্জামান, কানুনগো তাইজুল ইসলাম, ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলাউদ্দিন ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জহির ইমামের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ সবচেয়ে বেশি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেবনাথ সাহা নামের একজনের মালিকানাধীন গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বোয়ালিয়া মৌজার এসএ ৭৩৮ ও ৮২২ দাগের ০.০০৯০ একর জমি বাণিজ্যিক ছিল না। কিন্তু জমিটির ওপর সামান্য স্থাপনা নির্মাণ করে বাণিজ্যিক হিসেবে দেখানোর কারণে প্রায় ১১ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। আতাউর রহমান সরকারের ৭৯০,৭৯১ ও ৭৯২ দাগে কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ছিলই না। কিন্তু ২৪ শতাংশ ঘুষ দিয়ে ডাঙার ভূমি বাণিজ্যিক দেখিয়ে প্রায় ১২ কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। একই মৌজায় বাবু লাল চৌধুরী ও সোহেল নওরোজ ২০১৭ ও ২০১৮ দাগে প্রায় ছয় কোটি টাকা নিয়েছেন। ওই মৌজার ৮২৯ নম্বর দাগে ছোট বাউন্ডারির ভেতর কলার চাষ করতেন এ টি এম আমিনুল ইসলাম। সেখানে ০.০৪১৮ একর জমিতে টিনশেড অবকাঠামো করে বাণিজ্যিক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া হয়। নুর মোহাম্মদ খায়রুল বাশার নয়ন ৭৮০ দাগের ফাঁকা জায়গায় ২৮ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৩ ফুট প্রস্থের একটি ঘর নির্মাণ করে। পরে তা বাণিজ্যিক দেখানো হয়েছে।

একইভাবে মোস্তফা মাহদি আল ফেরদৌসের ৮২১ দাগে ০.০১২৫ একর জমি বাড়ি শ্রেণি থেকে বাণিজ্যিক করা হয়েছে। এ ছাড়া অসদুপায়ে পান্থাপাড়া মৌজায় ৪৫৫ দাগে খোদেজা বেগম নামের এক নারী ২ কোটি ১০ লাখ টাকা নিয়েছেন। এভাবে অনেক জমির মালিক অসদুপায় অবলম্বন করে ক্ষতিপূরণ হিসেবে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল থেকে রংপুর পর্যন্ত ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ টাকা দেওয়া হয়েছে গোবিন্দগঞ্জের বোয়ালিয়া, বুজরুক বোয়ালিয়া ও পান্থাপাড়া মৌজায়। এখানে প্রতি শতক জমির মূল্য ধরা হয়েছে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা।

জানা গেছে, বোয়ালিয়া, বুজরুক বোয়ালিয়া ও পান্থাপাড়া মৌজার শহর এলাকার রাস্তার দুপাশের প্রায় ১০ দশমিক ৮২ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়। এ ভূমি অধিগ্রহণ করতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করে দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ ছাড়া অবকাঠামোর ক্ষেত্রে সঠিকভাবে পরিমাপ না করে ঘুষ নিয়ে অবকাঠামোর ক্ষতিপূরণ ৩-৪ গুণ বাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র মুকিতুর রহমান রাফি বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন, কিন্তু প্রতিকার মেলেনি।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, পান্থাপাড়া, বোয়ালিয়া ও বুজরুক বোয়ালিয়া মৌজায় ১৩০টি প্লটের ৩৬০ জন ভূমিমালিকের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এতে জমি ও অবকাঠামো বাবদ সরকারের খরচ হবে ৭৩০ কোটি টাকা।

জানা গেছে, এ পর্যন্ত দেড় শতাধিক ব্যক্তিকে অবকাঠামো ক্ষতিপূরণের চেক দেওয়া হয়েছে। মামলা রয়েছে শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। চেক প্রদানের ক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট পরিমাণ ঘুষ নেওয়া হচ্ছে। ঘুষ না দিলে চেক প্রদানে গড়িমসি করা হচ্ছে। যাঁরা চাহিদা মোতাবেক ঘুষ দিচ্ছেন, তাঁরা কোনোরকম হয়রানি ছাড়াই চেক পাচ্ছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভূমিমালিক বলেন, তাঁদের কাছ থেকে লাখে পাঁচ হাজার করে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে। না দিলে বিভিন্ন অজুহাতে চেক আটকে দেওয়া হচ্ছে।

এ নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের পিয়ন হাবিবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি আগের কয়েকজনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছি। পরে অন্য কে টাকা নিচ্ছে, তা আমি জানি না।’ পিয়ন নজরুল ইসলাম বলেন, ‘লোকবল কম থাকায় প্রায় সব কাজই আমাদের করতে হয়। সে ক্ষেত্রে কিছু খরচ নেওয়া হয়।’

সার্ভেয়ার আল আমিন ও কামরুজ্জামান দাবি করেন, এসব ঘটনা তাঁরা যোগদানের আগে ঘটতে পারেন। তাঁদের সময়ে এসব হয়নি। তবে তাঁরা ২০২২ সালে যোগদানের পর থেকে ভূমিমালিকের টাকা ও অবকাঠামোর টাকা দেওয়া হচ্ছে। ভূমি অধিগ্রহণ তদন্তে এই দুই সার্ভেয়ারের স্বাক্ষরিত ডকুমেন্ট এই প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।

এ বিষয়ে জমিমালিক দেবনাথ সাহা বলেন, তিনি জমি ব্যাংকে বন্ধক রেখেছিলেন। যে টাকা তিনি পেয়েছেন, তা ব্যাংক কেটে নিয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘কাগজপত্র যাচাই না করে কি তাঁরা (অফিস) আমাদের টাকা দিয়েছেন। কিছু বলার থাকলে ডিসি অফিসে যান।’ অপর দিকে এ টি এম আমিনুল ইসলাম নামের আরেক জমিমালিক বলেন, ‘কেউ কোনোভাবে টাকা পেলে আপনাদের সমস্যা কোথায়? বৈধ কাগজপত্র ছাড়া কি অফিস টাকা দেবে?’

ভূমিমালিক সোহেল নওরোজ ও বাবু লাল চৌধুরী দাবি করেন, তাঁদের ব্যবসা থাকায় বাণিজ্যিক হিসেবে ভূমির টাকা পেয়েছেন। কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে সংশ্লিষ্ট অফিসে কথা বলার পরামর্শ দেন তাঁরা।

আতাউর রহমান সরকার নামের একজন বলেন, তাঁর ভূমি বাণিজ্যিক না হলেও ওই জমির ওপর দিয়ে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে যেতে হয়। সে জন্য তিনি বাণিজ্যিক সুবিধা নিতেই পারেন।

ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলাউদ্দিন জানান, তিনি যোগদানের আগে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়েছে। আগের কর্মকর্তারা যেভাবে রিপোর্ট দিয়ে গেছেন, সেভাবেই ভূমিমালিকদের অর্থ দেওয়া হচ্ছে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জহির ইমাম বলেন, ‘আগে কী হয়েছে জানি না; এখন সব যাচাই-বাছাই করার পর টাকা দেওয়া হচ্ছে। তবে কেউ কোনোভাবে অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত কিংবা অর্থ হাতিয়ে নিলে অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ জানালে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ধলেশ্বরী নদীতে ফেরি থেকে ট্রাকসহ ৫ যান নদীতে, নিহত ৩

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
ফতুল্লায় ধলেশ্বরী নদীতে ফেরিতে থাকা একটি ট্রাক হঠাৎ চালু হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারালে ট্রাকসহ পাঁচটি যান নদীতে পড়ে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ফতুল্লায় ধলেশ্বরী নদীতে ফেরিতে থাকা একটি ট্রাক হঠাৎ চালু হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারালে ট্রাকসহ পাঁচটি যান নদীতে পড়ে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লায় ধলেশ্বরী নদীতে ফেরিতে থাকা একটি ট্রাক হঠাৎ চালু হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারালে ট্রাকসহ পাঁচটি যান নদীতে পড়ে যায়। এই ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে সদর উপজেলার বক্তাবলী ও নরসিংপুর ঘাটের মাঝামাঝি এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

পুলিশ জানায়, নরসিংপুর ঘাট থেকে ছেড়ে আসা একটি ফেরি বক্তাবলী ঘাটের দিকে যাচ্ছিল। ফেরিটি মাঝনদীতে পৌঁছালে এতে থাকা একটি ট্রাক হঠাৎ স্টার্ট হয়ে যায়। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকটি সামনে থাকা দুটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, একটি মোটরসাইকেল ও একটি রিকশাভ্যানকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে ফেরির রেলিং ভেঙে ট্রাকসহ পাঁচটি যান নদীতে পড়ে যায়।

দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী রফিক গুরুতর আহত হন। পরে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

এদিকে রিকশাভ্যানচালক স্বাধীন (২৫) ও মাসুদ নামের দুজন দুর্ঘটনার পর নিখোঁজ হন। খবর পেয়ে রাতেই নৌ পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার অভিযান শুরু করে। পরে ঘটনাস্থল থেকে স্বাধীন ও মাসুদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

দুর্ঘটনার পর ফেরির কয়েকজন যাত্রী ও চালক সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হন।

বক্তাবলী নৌ পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক রকিবুজ্জামান বলেন, ‘ফেরিতে থাকা ট্রাকটি হঠাৎ নিজে থেকেই স্টার্ট হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারায়। এতে ফেরির রেলিং ভেঙে যানবাহনগুলো নদীতে পড়ে যায়। এই ঘটনায় একজন হাসপাতালে মারা গেছেন এবং পরে আরও দুজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘অপারেশন জিরো টলারেন্স ফর ফ্যাসিজম’ কর্মসূচি ঘোষণা রাকসুর জিএস আম্মারের

রাবি প্রতিনিধি  
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাহউদ্দিন আম্মার। ছবি: সংগৃহীত
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাহউদ্দিন আম্মার। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) আওয়ামীপন্থী ডিনদের পদত্যাগ ও ফ্যাসিজমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের অপসারণের দাবিতে ‘অপারেশন জিরো টলারেন্স ফর ফ্যাসিজম’ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাহউদ্দিন আম্মার। গতকাল শনিবার (২০ ডিসেম্বর) রাতে সালাহউদ্দিন আম্মার তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টের মাধ্যমে এই ঘোষণা দেন।

পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আগামীকাল সকাল ১০টায় রাকসু ভবনের সামনে থেকে কর্মসূচি শুরু হবে। আওয়ামীপন্থী ছয়জন ডিনের পদত্যাগ নিশ্চিত করা হবে। রাবি প্রশাসন দেড় বছর সময় পেয়েছে, এখন সময় বিপ্লবীদের।’ তিনি লেখেন, ‘শহীদ হাদির রক্ত আরো একবার শেখালো লীগের প্রতি নমনীয়তা আমাদের জন্য কতটা বিভৎস হতে পারে।’ আগামীকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সকাল ১০টায় রাকসু ভবনের সামনে উপস্থিত থাকার জন্যও অনুরোধ করেন তিনি

এ ছাড়া ফ্যাসিবাদের সঙ্গে জড়িত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চিহ্নিত করতে সাধারণ মানুষের সহযোগিতা কামনা করেন রাকসু জিএস। অভিযুক্তদের নাম, কর্মস্থল, বর্তমান পদবি, ঠিকানা এবং ফ্যাসিজমের সঙ্গে যুক্ত থাকার প্রমাণাদি সরাসরি তার ফেসবুক ইনবক্স অথবা নির্দিষ্ট একটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে পাঠানোর অনুরোধ জানান তিনি।

আম্মারের দেওয়া ফেসবুক পোস্ট। ছবি: সংগৃহীত
আম্মারের দেওয়া ফেসবুক পোস্ট। ছবি: সংগৃহীত

এর আগে বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) এক পোস্টে তিনি আওয়ামীপন্থী ডিনদের পদত্যাগে এক কর্মদিবসের আলটিমেটাম দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাসন রাজার ১৭১তম জন্মদিন আজ

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩২
হাসন রাজা। ফাইল ছবি
হাসন রাজা। ফাইল ছবি

মরমি কবি হাসন রাজার ১৭১তম জন্মদিন আজ। আধ্যাত্মিক এই সাধকের জন্ম ১৮৫৪ সালের ২১ ডিসেম্বর। তিনি সুনামগঞ্জ শহরের সন্নিকটে সুরমা নদীর তীরবর্তী লক্ষণছিরি (লক্ষণশ্রী) পরগনার তেঘরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

প্রতাপশালী জমিদার দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরী ও হুরমত জাহানের দ্বিতীয় ছেলে তিনি। জন্মের পর তাঁর নাম দেওয়া হয়েছিল অহিদুর রাজা। এক ফারসি ভাষাভিজ্ঞ ব্যক্তির পরামর্শে তাঁর নাম হয় হাসন রাজা। দেখতে সুদর্শন হাসন জমিদার পরিবারের সন্তান হওয়ায় অল্প বয়সেই জমিদারির দায়িত্ব নেন। সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, রামপাশা, লক্ষণশ্রীসহ সিলেটের একাংশজুড়ে তাঁর জমিদারি ছিল।

হাসন কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ না করলেও ছিলেন স্বশিক্ষিত। সরল ভাষায় সহস্রাধিক মরমি গান রচনা করেছেন হাসন। তিনি গানের মাধ্যমে অগণিত মানুষের হৃদয় জয় করে নিয়েছেন।

তাঁর উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে আছে- ‘লোকে বলে বলেরে, ঘর বাড়ি ভালা নাই আমার’; ‘নেশা লাগিলরে, বাঁকা দুই নয়নে নেশা লাগিলরে’; ‘গুড্ডি উড়াইলো মোরে, মৌলার হাতের ডুরি’; ‘আঁখি মুঞ্জিয়া দেখ রূপ রে, আঁখি মুঞ্জিয়া দেখ রূপ রে’; ‘আমি যাইমুরে যাইমু, আল্লার সঙ্গে।’

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও হাসন রাজা রচিত গানের প্রশংসা করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাধিকবার তাঁর বক্তব্যে হাসন রাজার গানের অংশবিশেষ উদ্ধৃত করে হাসনের দর্শনচিন্তার কথা তুলে ধরেন। হাসন রাজার সৃষ্টিকর্ম আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও সমাদৃত।

বহু গানের রচয়িতা আধ্যাত্মিক সাধক হাসন রাজা ১৯২২ সালের ৬ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। হাসনের জন্মভিটায় প্রতিষ্ঠিত ‘হাসন রাজা মিউজিয়াম’ একটি পূর্ণাঙ্গ জাদুঘরে রূপান্তরের দাবি জানিয়েছেন তাঁর ভক্ত ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাগেরহাটের চিতলমারী: অবৈধ বালু উত্তোলনে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট

  • মধুমতী নদী থেকে বালু উত্তোলন
  • ঝুঁকিতে চিতলমারীর একাধিক গ্রাম
  • অভিযোগ স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে
বাগেরহাট ও চিতলমারী প্রতিনিধি
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ০২
ড্রেজার মেশিন দিয়ে মধুমতী নদী থেকে প্রতিদিন উত্তোলন করা হচ্ছে হাজার হাজার ফুট বালু। প্রতিকার চেয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট একাধিক সরকারি দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় পরিবেশবাদীরা। সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ড্রেজার মেশিন দিয়ে মধুমতী নদী থেকে প্রতিদিন উত্তোলন করা হচ্ছে হাজার হাজার ফুট বালু। প্রতিকার চেয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট একাধিক সরকারি দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় পরিবেশবাদীরা। সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাগেরহাটের চিতলমারীতে মধুমতী নদী থেকে অবৈধভাবে বিপুল বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ড্রেজার মেশিন দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার ফুট বালু উত্তোলন করায় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট।

অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে ভূমি মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় পরিবেশবাদীরা। সংশ্লিষ্ট হওয়ায় বাগেরহাট, পিরোজপুর ও গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসকের দপ্তরেও অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

বালুমহাল ইজারায় একটি নির্দিষ্ট সীমানা বা এলাকা নির্ধারণ করা থাকে। নাজিরপুর উপজেলার বালুমহালের বা বালু উত্তোলনের সীমানা ২৪ দশমিক ২১ একর। কিন্তু চিতলমারীর অতুলনগর, কুনিয়া ও শৈলদাহ গ্রামসংলগ্ন মধুমতী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হচ্ছে। এই কাজে যুক্ত পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার মাটিভাঙ্গা ও বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার শৈলদাহ এলাকার প্রভাবশালী কয়েক ব্যক্তি।

অভিযুক্ত ব্যক্তিদের একজন কলাতলা ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি মো. কামাল শেখ ওরফে কামাল মেম্বার। মূল ইজারাদারের কাছ থেকে কয়েকজনকে নিয়ে এই কাজ নিয়েছেন তিনি। তবে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের সীমানা থেকে বালু উত্তোলন করছি।’ যাঁর নামে সরকারি ইজারা আনা হয়েছে, তাঁর নাম অবশ্য জানাতে পারেননি কামাল মেম্বার। তিনি দাবি করেন, ওই ব্যক্তির নাম তাঁর মনে নেই।

চিতলমারীর শৈলদাহ এলাকার মো. ফরিদ শেখ, বিপুল বৈদ্য, আল-আমিন খান ও তুহিন শেখ জানান, কলাতলা ইউনিয়নের মধুমতী নদীর অতুলনগর, কুনিয়া ও শৈলদাহ এলাকায় ৩-৪টি বলগেট ও ড্রেজার মেশিন দিয়ে প্রতিদিন শতাধিক ট্রলার বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে ফসলি জমি, গাছপালা ও রাস্তাঘাট নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সংকীর্ণ হয়ে পড়ছে উপজেলার মানচিত্র। হুমকির মুখে পড়েছে কয়েক শ একর জমি ও বসতবাড়ি। এ ছাড়া প্রায় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মাটিভাঙ্গা সেতুও এখন ঝুঁকির মুখে।

পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন চিতলমারী উপজেলার প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট ফজলুল হক বলেন, এভাবে বালু উত্তোলনে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। উপজেলার মানচিত্র ছোট হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট একাধিক সরকারি দপ্তরে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

চিতলমারীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘পিরোজপুর থেকে ওরা বালুমহাল ইজারা নিয়েছে। রাতের আঁধারে এসে চিতলমারীর সীমানা থেকে বালু উত্তোলন করে। আমরা বেশ কয়েকবার অভিযানে গিয়েছি। কিন্তু অভিযানের খবর শুনে ওরা আগে থেকেই চলে যায়। পিরোজপুরের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে, ওরা যাতে সীমানায় না আসে সে জন্য কাজ করছি। অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন “জিরো টলারেন্স” নীতিতে কাজ করছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত