Ajker Patrika

ফলোআপ /ভয় দেখিয়ে দেওয়া হয় টাকা, ‘খাসির খানা’ হচ্ছে না

 রিমন রহমান, রাজশাহী
আপডেট : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১: ১২
ঘটনাস্থলে পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘটনাস্থলে পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহীর মোল্লাপাড়ায় পাহাড়িয়াদের ভয় দেখিয়ে টাকা দেন সাজ্জাদ আলী। তিনি বলেছিলেন, পাহাড়িয়ারা যদি থানা-পুলিশে দৌড়াদৌড়ি করে, তাহলে যে টাকা দেওয়া হচ্ছে, সেটাও দেওয়া হবে না। আজ বৃহস্পতিবার সকালে নগরের কাশিয়াডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল বারী ওই মহল্লায় গেলে সবার সামনে পাহাড়িয়ারা এমন কথাই বলেছে।

এর আগে গতকাল বুধবার আজকের পত্রিকা'র অনলাইনে ‘শুক্রবার খাওয়ানো হবে খাসি জবাই করে, রোববার ছাড়তে হবে ঘর’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরদিন আজ বৃহস্পতিবার আজকের পত্রিকার প্রিন্ট সংস্করণেও এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে উঠে আসে, ৫৩ বছর পাহাড়িয়ারা ১৬ কাঠা জমির ওপর বাস করে আসছে। এলাকার বাসিন্দা সাজ্জাদ আলী এত দিন পর এ জমির মালিকানা দাবি করছেন। তাঁর চাপে তিনটি পরিবার জায়গা ছেড়ে চলে গেছে।

আজকের পত্রিকায় সংবাদটি প্রকাশের পর শুরু হয় তোলপাড়। তৎপর হয় পুলিশ-প্রশাসন। আজ সকালে পাহাড়িয়াদের মহল্লায় যান পুলিশসহ অন্যান্য সংস্থার লোকজন। সরেজমিনে দেখা যায়, পুলিশের একটি দল নিয়ে আসেন কাশিয়াডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল বারী। তিনি সাজ্জাদ আলীকেও ফোন করে ডেকে আনেন।

ওসি আজিজুল বারী পাহাড়িয়াদের প্রশ্ন করেন, ‘আপনারা কেন থানায় যাননি?’ জবাবে ভুক্তভোগী এক নারী বলেন, ‘সাজ্জাদ আলী বলেছেন যে তোমরা যদি বাড়াবাড়ি কর, যেটুকু টাকা দিচ্ছি, সেটাও দেব না। এটার জন্য আমরা কোনো জায়গাতে যেতে পারলাম না। আমরা টাকা নিতে বাধ্য হলাম।’

আরও একজন বলেন, ‘এখানে জন্মজায়গা। আমরা যদি এখানে থাকতে পারি, থাকতে চাই। জন্মজায়গা ছেড়ে কেউ চলে যেতে চায়? কেউ তো চাই না। কিন্তু আমরা কুনু জাগাতেই যাইনি। আমাদের বুলেছে, তোমরা যুদি হাঁটাহাঁটি করো, তাহিলে কুনু টাকাই পাবা না।’

এলাকার বাসিন্দা আসাদ আলীও এসেছিলেন। পুলিশের সামনেই বললেন, ‘এখানে এরা ৬২ বছর ধরে বাস করছে। এই জমির মালিক ইন্দ্র ধুপি। সাজ্জাদের কথা আমরা শুনিনি।’

সেখানে ছিলেন সাজ্জাদ আলীর কেয়ারটেকার মো. শাহীন। ওসি আজিজুল বারী সাজ্জাদকে কয়েকবার ফোন করান তাঁকে দিয়ে। একপর্যায়ে একটি দলিল হাতে আসেন সাজ্জাদ। তিনি দাবি করেন, এ জায়গা তিনি ১৯৯৪ সালে কিনেছেন। পুনর্বাসন করে জায়গা দখলে নিচ্ছেন।

খাসি জবাই করে খাওয়ানোর আয়োজনের বিষয়ে সাজ্জাদ বলেন, ‘তারা এখানে এত দিন ছিল। চলে যাচ্ছে। আমি তাদের মুরগি খাওয়াতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তারাই বলেছে যে খাসি খাওয়াতে হবে।’

তবে পুলিশের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, আগামীকাল শুক্রবার কোনো ‘খাওয়া’ হবে না সেখানে।

এ সময় বিভিন্ন মানবাধিকার ও অন্যান্য সংগঠনের নেতারাও সেখানে আসেন।

ওসি আজিজুল বারী জানান, বিষয়টি তাঁর কাছে ঢাকা থেকে জানতে চাওয়া হয়েছে। তিনি প্রতিটি বাড়ির তালিকা করে নেন। তিনি ১৩টি পরিবার থেকে ১৩ জন এবং সাজ্জাদ আলীকে বিকেল ৫টায় কাশিয়াডাঙ্গা জোনের উপপুলিশ কমিশনারের (ডিসি) কার্যালয়ে ডাকেন। ওই সময় তিনি ঘটনাস্থল থেকে মোবাইল ফোনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সবকিছু জানান।

ওসি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি সংবাদমাধ্যমে জেনে এখানে এসেছি। এ বিষয়গুলো নিয়ে তারা কখনো আগে থানায় যায়নি। নিউজ হওয়ার পরে আপনারা এসেছেন, আমরাও এসেছি। আমরা সকলে মিলে যেটা সুষ্ঠু সমাধান হয়, সেটা করব। যেটাতে মানবাধিকার লঙ্ঘন হবে না, সেটা করব। আপাতত এখানকার বাসিন্দারা এভাবেই থাকবেন। জমির কাগজপত্র চুলচেরা বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জমির মালিক কে?

পাহাড়িয়াদের দাবি, এ জমির মালিক ছিলেন ইন্দ্র ধুপি নামের একজন ধোপা। মুক্তিযুদ্ধের পর ভারত থেকে ফিরে আসা ছয়টি পাহাড়িয়া পরিবারকে তিনি এখানে বাড়ি করতে দেন। জায়গাটি তখন ইন্দ্র ধুপির বাথান নামে পরিচিত ছিল। ইন্দ্র ধুপি নিঃসন্তান ছিলেন।

ভূমি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, হড়গ্রাম মৌজায় ৫১ নম্বর জে এল ও ১২৯০ নম্বর দাগে জমিটির পরিমাণ ৩৭ দশমিক ৯৪ শতক। ৪০৫ নম্বর আরএস খতিয়ানে জমিটির মালিক হিসেবে লেখা রয়েছে রাজশাহীর কাজীহাটা এলাকার গাজিয়া রজকিনি ও ময়মনসিংহের কোতোয়ালির মনিতারা রজকিনি।

তবে ১৯৯৪-৯৫ সালে এ জমি খারিজ হয়েছে সাজ্জাদ আলী, সৈয়দ আলী, ইমতিয়াজ ও ফাহামিদার নামে। সাজ্জাদ আলী পুলিশের সামনে যে দলিল হাজির করেন, সেখানে দেখা যায়, মধুসূদন দাস, দিলীপ দাস, আমমোক্তার সূর্য কমল দাস, প্রকাশ দাস ও তৃপাল রজকের কাছ থেকে তাঁরা কিনেছেন।

ভূমি অফিসের একজন কর্মকর্তা বলেন, আরএস রেকর্ডে গাজিয়া রজকিনি ও মনিতারা রজকিনির কাছ থেকে সাজ্জাদের কাছে সরাসরি দলিল হলে কোনো প্রশ্ন ছিল না। কিন্তু মধুসূদন দাস, দিলীপ দাস, আমমোক্তার সূর্য কমল দাস, প্রকাশ দাস ও তৃপাল রজকের নামে জমি কীভাবে হয়েছিল, আগে সে দলিল দরকার। ওই দলিল না পাওয়া গেলে সাজ্জাদের কাছে থাকা দলিল থাকা প্রশ্নবিদ্ধ। এ দলিল সঠিক কি না, সেটা তদন্ত করে দেখতে হবে।

তদন্তে জেলা প্রশাসন

পাহাড়িয়াদের ওই মহল্লা পরিদর্শন করেছেন জুলাই-৩৬ পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদ জামাল কাদেরী, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি গণেশ মার্ডি, সাধারণ সম্পাদক বিমল চন্দ্র রাজেয়াড়, মানবাধিকারকর্মী আরিফ ইথার, বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরামের সহসাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমানসহ অনেকে। তাঁরা সবার সঙ্গে কথা বলেন।

এ সময় আদিবাসী নেতা গণেশ মার্ডি বলেন, ‘এত কিছু হয়ে যাচ্ছে, আমরাও এ বিষয়ে কিছু জানতাম না। তারা আমাদেরও কিছু জানায়নি। এভাবেই তারা বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ হয়ে যাচ্ছে। আমরা চাই, প্রশাসন এ ব্যাপারে যথাযথ তদন্ত করে যেন ব্যবস্থা নেবে।’

জুলাই-৩৬ পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদ জামাল কাদেরী বলেন, এই পরিবারগুলো ৫৩ বছর ধরে এখানে বাস করছে। এর মধ্যে আরএস রেকর্ড হয়েছে। তখন মালিক না হোক, দখলীয় হিসেবেও তো আদিবাসীদের কথা লেখা উচিত ছিল। কিন্তু সেটাও হয়নি।

জানতে চাইলে নগরের বড়কুঠি ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফুল ইসলাম জানান, বিষয়টি জেলা প্রশাসন তাঁকে তদন্ত করতে বলেছে। তিনি দুপুরে একজন সার্ভেয়ারকে পাঠিয়েছেন। কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি নিজেও যাবেন। সবকিছু তদন্ত করে একটা প্রতিবেদন দেবেন।

উল্লেখ্য, মোল্লাপাড়ার এ জায়গা রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডে। রাজশাহীর আমচত্বর-কাশিয়াডাঙ্গা সড়কসংলগ্ন এ জায়গার দাম এখন কয়েক কোটি টাকা। ৫৩ বছর আগে এখানে প্রথমে ছয়টি পরিবার বাড়ি করার সুযোগ পায়। তিন প্রজন্মে বাড়ি হয় ১৬টি।

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের তিন দিন পর একটি রাজনৈতিক দলের অনুসারী সাজ্জাদ আলী সেখানে যান এবং জানান যে জমির মালিক তিনি। এখন তাঁদের উঠে যেতে হবে। এরও বছর দুয়েক আগে তিনি এ দাবি তুললে তৎকালীন ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম দুপক্ষকে নিয়ে বসেছিলেন। পাহাড়িয়াদের দাবি, তখন সাজ্জাদের দলিলকে ‘জাল’ বলেছিলেন কাউন্সিলর। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নজরুল ইসলাম আত্মগোপনে রয়েছেন। তাই তাঁর সঙ্গে কথা বলে বিষয়টির সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

সাজ্জাদ আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, ভয়ভীতি দেখিয়ে অল্প কিছু টাকার বিনিময়ে তিনি আরও জমি দখল করেছেন। এটিই তাঁর কৌশল। পাহাড়িয়াদেরও তিনি টাকা দিয়েছেন। প্রথম বাড়ি করা ছয়টি পরিবার ধরে প্রতিটি বাড়িতে দিয়েছেন ৬ লাখ করে টাকা। ছয় পরিবার এখন বেড়ে হয়েছে ১৬টি। মোট ৩০ লাখ টাকা ১৬ পরিবারে ভাগ হয়েছে। কেউ পেয়েছেন ৫০ হাজার, কেউ ১ লাখ, কেউবা ২ লাখ। তা নিয়েই তাঁরা চলে যাচ্ছিলেন।

ইতিমধ্যে তিনটি পরিবার অন্যত্র চলে গেছে। অন্য ১৩ পরিবারকে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছিল রোববার। তার আগে শুক্রবার সাজ্জাদ আলী খাসি জবাই করে সবাইকে খাওয়ানোর আয়োজন করেছিলেন। সেখানে আশপাশের লোকজনকেও দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হবিগঞ্জে রত্না বেইলি সেতু ভেঙে ট্রাক আটকা, দুর্ভোগে যাত্রীরা

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
আজ সকাল ৯টার দিকে রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সকাল ৯টার দিকে রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

হবিগঞ্জ-বানিয়াচং আঞ্চলিক সড়কের রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে ওই পথে সব ধরনের যান চলাচল। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে শতাধিক যাত্রী ও ওই পথে চলাচলকারীরা। শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, জাফলং থেকে ছেড়ে আসা বানিয়াচংগামী পাথরবোঝাই একটি ট্রাক ব্রিজের ওপর ওঠামাত্রই ব্রিজের দুটি পাটাতন ভেঙে যায়। মুহূর্তেই ট্রাকের পেছনের দুটি চাকা ধসে পড়ে এবং পুরো ট্রাকটি ব্রিজে আটকে যায়।

এতে দীর্ঘ লাইনে আটকা পড়ে যাত্রীবাহী বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, টমটম, প্রাইভেট কারসহ অসংখ্য যানবাহন। বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী, রোগী এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ব্যবসায়ীরা।

দুর্ঘটনার পর ব্রিজের একপাশ থেকে অন্যপাশে যাওয়ার জন্য যাত্রীরা ঝুঁকি নিয়ে হেঁটে ভাঙা অংশ অতিক্রম করছে। এতে যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে স্থানীয় এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘ট্রাকটি ব্রিজে উঠতেই জোরে শব্দ হয়। একটু পরই দেখি পাটাতন নিচে ধসে গেছে। ভাগ্য ভালো যে ট্রাকটি পুরোপুরি নিচে পড়ে যায়নি। তবে এখন তো ও পথে চলাচলকারীরা আটকা পড়ে আছে।’

যাত্রীরা জানান, রত্না বেইলি ব্রিজটি বহুদিন ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ভারী যানবাহনের অতিরিক্ত চাপের কারণে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে—এমন আশঙ্কা দীর্ঘদিন ধরেই ছিল। এদিকে যাত্রীদের দাবি, এখানে যেন বেইলি ব্রিজের পরিবর্তে দ্রুত স্থায়ী সেতু নির্মাণ করা হয়, যাতে প্রতিদিনের এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে হবিগঞ্জ সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, ‘ব্রিজটি দ্রুত মেরামত করার কাজ চলছে। পাথরবোঝাই ট্রাকটিতে বেশি লোড থাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আড়িয়াল খাঁ নদের তীর থেকে অটোরিকশাচালকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার

নরসিংদী প্রতিনিধি
ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা

নরসিংদীর বেলাব উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদের তীর থেকে আব্দুর রশিদ (৪০) নামের এক অটোরিকশাচালকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের ভাওয়ালেরচর এলাকায় নদীর তীর থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

আব্দুর রশিদ কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের দক্ষিণ লোহাজুরী গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় তিনি ছিলেন অটোরিকশাচালক; তবে নিয়মিত আড়িয়াল খাঁ নদে বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করা ছিল তাঁর নেশা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকাল ৬টার দিকে ভাওয়ালেরচর এলাকায় নদীর পাড়ে রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশে খবর দেন। লাশের পাশেই মোবাইল ফোন ও অটোরিকশাটি ছিল। পরে স্বজনেরা এসে লাশ শনাক্ত করেন। আব্দুর রশিদের মাথা ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ মনে করছে, তিনি দুষ্কৃতকারীর হামলার শিকার হয়েছেন।

নিহত ব্যক্তির ভাই কাজল মিয়া বলেন, ‘প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ১১-১২টা পর্যন্ত অটোরিকশা চালিয়ে তারপর নদীর পাড়ে বসে মাছ শিকার করে বাড়ি ফিরত ভাই। কিন্তু গতকাল রাতে আর বাড়ি ফেরেনি। সকালে খবর পেয়ে নদীর পাড়ে এসে ভাইয়ের মরদেহ দেখতে পাই।’

নিহত ব্যক্তির ছেলে হৃদয় বলেন, ‘রাতে বাড়ি না ফেরায় কল দিলে ফোন বন্ধ পাই। সকালে খবর শুনে নদীর পাড়ে এসে বাবার মরদেহ, মোবাইল ও অটোরিকশা পড়ে থাকতে দেখি।’

বেলাব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নাসির উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। বিষয়টি পিবিআইকে জানানো হয়েছে। ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। আইনগত প্রক্রিয়া চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৬৭ বছর পর রামেক হাসপাতালে মানসিক রোগীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

অবশেষে ৬৮ বছরে পা দিতে চলা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে মানসিক রোগীদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ মনোরোগ ওয়ার্ড চালু হলো। হাসপাতালটির বহির্বিভাগে প্রতিদিনই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানসিক রোগী চিকিৎসা নিতে এলেও ভর্তির সুযোগ ছিল না। গুরুতর রোগীদের কিছু ক্ষেত্রে মেডিসিন বিভাগে রাখা হলেও, পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ডের অভাবে এতদিন অনেককেই ফিরিয়ে দিতে হতো।

হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ৬৭ বছর পর এই প্রথম ২৫ শয্যার একটি সুসজ্জিত মনোরোগ ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। হাসপাতালটির পুরাতন আইসিইউ ভবনে এই নতুন ওয়ার্ডটি গড়ে তোলা হয়েছে।

এই ওয়ার্ডে রোগী ভর্তির জন্য নির্দিষ্ট বিন্যাস রাখা হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষদের জন্য ১০টি, নারীদের জন্য ৭ টি, শিশু-কিশোরদের জন্য ৫টি এবং উচ্চ পর্যবেক্ষণের জন্য ৩টি শয্যা সংরক্ষিত রয়েছে। এ ছাড়া রোগীদের চিকিৎসার সুবিধার জন্য থেরাপি ও কাউন্সেলিং রুমসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওয়ার্ডের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মোস্তফা আলী।

এই ওয়ার্ডটি চালুর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ ছিল কলেজের স্বীকৃতি বজায় রাখা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী মার্চ মাসেই ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশন (ডব্লিউএফএমই) থেকে একটি প্রতিনিধি দল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ পরিদর্শনে আসবে। পরিদর্শনকালে মনোরোগ বিভাগের ওয়ার্ড না পেলে কলেজের পয়েন্ট কমে যাওয়ার এবং অ্যাক্রিডিটেশনে বড় ধরনের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা ছিল। এতে করে এই কলেজের শিক্ষার্থীদের দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা বা পড়াশোনা করার সুযোগ কমে যেত। এ ছাড়া এফসিপিএস এবং ডিপ্লোমা কোর্সের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের জন্যও এমন একটি ওয়ার্ড জরুরি ছিল।

কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুরোধ শুনে সদ্যবিদায়ী পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ দ্রুত এই ওয়ার্ড চালুর উদ্যোগ নেন এবং গত বুধবার এটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের সময় তাঁর সঙ্গে নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পি কে এম মাসুদ-উল-ইসলামসহ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা উপস্থিত ছিলেন।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় এই হাসপাতালে যে ৬৭ বছরেও মানসিক রোগীদের জন্য ওয়ার্ড চালু হয়নি, এটি সত্যিই অবাক হওয়ার মতো বিষয়। আমরা প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি চালু করেছি। এখন থেকে এ অঞ্চলের মানসিক রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি থেকেও উন্নত চিকিৎসা নিতে পারবেন।’

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি রামেক হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর উদ্যোগেগত ২৩ অক্টোবর শুধু সাপে কাটা রোগীদের জন্য বিশেষায়িত ওয়ার্ড চালু করা হয়।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই বিশেষায়িত ওয়ার্ড চালুর পর থেকে এখন পর্যন্ত রামেক হাসপাতালে একজনও সাপে কাটা রোগীর মৃত্যু হয়নি, যেখানে আগে প্রায় প্রতিদিনই এই রোগে মৃত্যুর ঘটনা ঘটতো। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পি কে এম মাসুদ-উল-ইসলামের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজমিস্ত্রির বাড়ি থেকে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
অভিযানে পাওয়া অস্ত্রসামগ্রী। ছবি: আজকের পত্রিকা
অভিযানে পাওয়া অস্ত্রসামগ্রী। ছবি: আজকের পত্রিকা

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় সোহাগ হোসেন নামের এক রাজমিস্ত্রির বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দুটি পিস্তল ও একটি ওয়ান শুটারগান উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ওসমানপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ওসমানপুর কলপাড়া গ্রামে এই অভিযান চালান সেনাসদস্যরা। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় খোকসা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোশাররফ হোসেন আজকের পত্রিকাকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ক্যাপ্টেন মেহেদীর নেতৃত্বে কুষ্টিয়া সেনাক্যাম্পের রওশন আরা রেজিমেন্ট আর্টিলারি ইউনিটের একটি দল ওসমানপুর গ্রামের সোহাগ হোসেন নামের এক যুবকের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় বাড়ি তল্লাশি করে দুটি পিস্তল, একটি ওয়ান শুটারগান, গুলি, দেশীয় চাকু ও হাঁসুয়া পাওয়া যায়। তবে অভিযানে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। সোহাগ হোসেন পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। তাঁর বাবার নাম আশরাফ হোসেন।

পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন বলেন, সেনাবাহিনীর অভিযানে উদ্ধার করা অস্ত্র থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত