Ajker Patrika

নৌকার বিরুদ্ধে লড়বেন রাজশাহীর ৩ এমপি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ২১: ০১
নৌকার বিরুদ্ধে লড়বেন রাজশাহীর ৩ এমপি

রাজশাহীর তিনজন এমপি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে লড়বেন। এ জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত এই এমপিরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। 

রাজশাহীর ছয়টি সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের বিপক্ষে নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন দলের ১৫ জন নেতা-কর্মী। এঁদের মধ্যে রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের এমপি আয়েন উদ্দিন, রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের এমপি এনামুল হক এবং রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের এমপি ডা. মনসুর রহমানও আছেন। 

রাজশাহী-৩ আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান এমপি আয়েন উদ্দিন। তিনি ২০১৪ সাল থেকে এ আসনের এমপি। 

স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, পবা-মোহনপুরের বাইরের লোক এসে এলাকাকে অশান্ত করতে চান। তাই তিনি প্রার্থী হয়েছেন। 

রাজশাহী-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন তাহেরপুর পৌরসভার সদ্য সাবেক মেয়র আবুল কালাম আজাদ। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বর্তমান এমপি এনামুল হক। এনামুল ২০০৮ সাল থেকেই এ আসনের এমপি। এনামুল ছাড়াও বাবুল হোসেন নামের দলের আরেকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। 

রাজশাহী-৫ আসনে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারা। তাঁর বিপক্ষে নির্বাচন করতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বর্তমান এমপি ডা. মনসুর রহমান। দারা ২০০৮ ও ২০১৪ সালে এ আসনের এমপি হয়েছিলেন। ২০১৮ সালে তিনি ছিটকে পড়লে মনোনয়ন পান মনসুর রহমান। এবার মনসুর বাদ পড়েছেন। মনোনয়ন পেয়েছেন দারা। 

তবে দারাকে ভোটের মাঠে ছাড় দিতে নারাজ বর্তমান এমপি। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে সবার অংশগ্রহণের সুযোগ আছে। তাই প্রার্থী হয়েছি।’

রাজশাহী-৫ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আহসানুল হক মাসুদ ও জেলা যুবলীগের সাবেক সহসভাপতি ওবাইদুর রহমান স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। রাজশাহীর অন্য আসনগুলোতেও আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর ছড়াছড়ি। 

রাজশাহী-১ আসনে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের মো. আখতারুজ্জামান, গোলাম রাব্বানী, শাহনেওয়াজ আয়েশা আখতার জাহান ও শারমিন আক্তার মাহিয়া নিপা। নিপা হলেন ঢাকাই সিনেমার চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি। আর আয়েশা আখতার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী। 

রাজশাহী-২ আসনে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শফিকুর রহমান বাদশা, দলের কর্মী আবু রায়হান মাসুদ ও রেজাউন নবী আল মামুন। 

রাজশাহী-৬ আসনে এবারও মনোনয়ন পেয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তাঁর বিপক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা রাহেনুল হক ও দলের কর্মী ইস্রাফিল বিশ্বাস। 

এই আসনে চারঘাট উপজেলার শলুয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি খাইরুল ইসলামও প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তিনি জেলা বিএনপির সভাপতি আবু সাঈদ চাঁদের ক্যাডার হিসেবে পরিচিত। আবু সাঈদ চাঁদের বাড়িও শলুয়া ইউনিয়নে। 

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) হয়ে রাজশাহী-৩ আসনের প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টু। বিএনএমে যোগ দেওয়ার পর মন্টুকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। রাজশাহী-২ ও রাজশাহী-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জাতীয় পার্টি থেকে ২০১৮ সালে পদত্যাগ করা নেতা মো. শাহাবুদ্দীন।

রাজশাহীর আসনগুলোতে বিভিন্ন দলের আরও যাঁরা প্রার্থী হতে চান তাঁরা হলেন—রাজশাহী-১ আসনে মো. শামসুজ্জোহা (বিএনএম), মো. আল-সাআদ (বিএনএফ), জামাল খান দুদু (তৃণমূল বিএনপি), নুরুন্নেসা (এনপিপি) ও বশির আহমেদ (মুক্তিজোট) ও মো. শামসুদ্দীন (জাতীয় পার্টি)। 

রাজশাহী-২ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ফজলে হোসেন বাদশা (বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি), আব্দুল্লাহ আল মাসুদ শিবলী (জাসদ), সাইফুল ইসলাম স্বপন (জাতীয় পার্টি), কামরুল হাসান (বিএনএম), মো. শামীম (তৃণমূল বিএনপি), ইয়াসির আলিফ বিন হাবিব (মুক্তিজোট), মো. মনিরুজ্জামান (গণফ্রন্ট) ও মারুফ শাহরিয়ার (বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টি)। 

রাজশাহী-৩ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সইবুর রহমান (এনপিপি), সোলাইমান হোসেন (জাতীয় পার্টি), বজলুর রহমান (বিএনএফ), আবদুস সালাম খান (জাতীয় পার্টি), এনামুল হক (মুক্তিজোট), মো. মনিরুজ্জামান (গণফ্রন্ট) ও নিপু হোসেন (স্বতন্ত্র)। রাজশাহী-৪ আসনে আরও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সাইফুল ইসলাম রায়হান (বিএনএম), জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না (এনপিপি), মতিউর রহমান (বিএনএফ) ও আবু তালেব প্রামাণিক (জাতীয় পার্টি)। 

রাজশাহী-৫ আসনে প্রার্থী হতে আরও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন মখলেসুর রহমান (গণফ্রন্ট), আলতাফ হোসেন মোল্লা (বিএসপি), শফিকুল ইসলাম (জাকের পার্টি), শরিফুল ইসলাম (বিএনএম) ও আবুল হোসেন (জাতীয় পার্টি)। রাজশাহী-৬ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জুলফিকার মান্নান জামী (জাসদ), মহসিন আলী (এনপিপি), রিপন আলী (জাকের পার্টি), শামসুদ্দিন রিন্টু (জাতীয় পার্টি) ও আবদুস সামাদ (বিএনএম)।

আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, রাজশাহীর ছয়টি সংসদীয় আসনে দলীয় ও স্বতন্ত্র মিলে মোট ৬০ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। আগামী ১–৪ ডিসেম্বর প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে। বৈধ প্রার্থীরা ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে তাঁদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে পারবেন। প্রতীক বরাদ্দ হবে ১৮ ডিসেম্বর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ধলেশ্বরী নদীতে ফেরি থেকে ট্রাকসহ ৫ যান নদীতে, নিহত ৩

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
ফতুল্লায় ধলেশ্বরী নদীতে ফেরিতে থাকা একটি ট্রাক হঠাৎ চালু হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারালে ট্রাকসহ পাঁচটি যান নদীতে পড়ে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ফতুল্লায় ধলেশ্বরী নদীতে ফেরিতে থাকা একটি ট্রাক হঠাৎ চালু হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারালে ট্রাকসহ পাঁচটি যান নদীতে পড়ে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লায় ধলেশ্বরী নদীতে ফেরিতে থাকা একটি ট্রাক হঠাৎ চালু হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারালে ট্রাকসহ পাঁচটি যান নদীতে পড়ে যায়। এই ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে সদর উপজেলার বক্তাবলী ও নরসিংপুর ঘাটের মাঝামাঝি এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

পুলিশ জানায়, নরসিংপুর ঘাট থেকে ছেড়ে আসা একটি ফেরি বক্তাবলী ঘাটের দিকে যাচ্ছিল। ফেরিটি মাঝনদীতে পৌঁছালে এতে থাকা একটি ট্রাক হঠাৎ স্টার্ট হয়ে যায়। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকটি সামনে থাকা দুটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, একটি মোটরসাইকেল ও একটি রিকশাভ্যানকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে ফেরির রেলিং ভেঙে ট্রাকসহ পাঁচটি যান নদীতে পড়ে যায়।

দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী রফিক গুরুতর আহত হন। পরে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

এদিকে রিকশাভ্যানচালক স্বাধীন (২৫) ও মাসুদ নামের দুজন দুর্ঘটনার পর নিখোঁজ হন। খবর পেয়ে রাতেই নৌ পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার অভিযান শুরু করে। পরে ঘটনাস্থল থেকে স্বাধীন ও মাসুদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

দুর্ঘটনার পর ফেরির কয়েকজন যাত্রী ও চালক সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হন।

বক্তাবলী নৌ পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক রকিবুজ্জামান বলেন, ‘ফেরিতে থাকা ট্রাকটি হঠাৎ নিজে থেকেই স্টার্ট হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারায়। এতে ফেরির রেলিং ভেঙে যানবাহনগুলো নদীতে পড়ে যায়। এই ঘটনায় একজন হাসপাতালে মারা গেছেন এবং পরে আরও দুজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘অপারেশন জিরো টলারেন্স ফর ফ্যাসিজম’ কর্মসূচি ঘোষণা রাকসুর জিএস আম্মারের

রাবি প্রতিনিধি  
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাহউদ্দিন আম্মার। ছবি: সংগৃহীত
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাহউদ্দিন আম্মার। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) আওয়ামীপন্থী ডিনদের পদত্যাগ ও ফ্যাসিজমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের অপসারণের দাবিতে ‘অপারেশন জিরো টলারেন্স ফর ফ্যাসিজম’ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাহউদ্দিন আম্মার। গতকাল শনিবার (২০ ডিসেম্বর) রাতে সালাহউদ্দিন আম্মার তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টের মাধ্যমে এই ঘোষণা দেন।

পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আগামীকাল সকাল ১০টায় রাকসু ভবনের সামনে থেকে কর্মসূচি শুরু হবে। আওয়ামীপন্থী ছয়জন ডিনের পদত্যাগ নিশ্চিত করা হবে। রাবি প্রশাসন দেড় বছর সময় পেয়েছে, এখন সময় বিপ্লবীদের।’ তিনি লেখেন, ‘শহীদ হাদির রক্ত আরো একবার শেখালো লীগের প্রতি নমনীয়তা আমাদের জন্য কতটা বিভৎস হতে পারে।’ আগামীকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সকাল ১০টায় রাকসু ভবনের সামনে উপস্থিত থাকার জন্যও অনুরোধ করেন তিনি

এ ছাড়া ফ্যাসিবাদের সঙ্গে জড়িত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চিহ্নিত করতে সাধারণ মানুষের সহযোগিতা কামনা করেন রাকসু জিএস। অভিযুক্তদের নাম, কর্মস্থল, বর্তমান পদবি, ঠিকানা এবং ফ্যাসিজমের সঙ্গে যুক্ত থাকার প্রমাণাদি সরাসরি তার ফেসবুক ইনবক্স অথবা নির্দিষ্ট একটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে পাঠানোর অনুরোধ জানান তিনি।

আম্মারের দেওয়া ফেসবুক পোস্ট। ছবি: সংগৃহীত
আম্মারের দেওয়া ফেসবুক পোস্ট। ছবি: সংগৃহীত

এর আগে বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) এক পোস্টে তিনি আওয়ামীপন্থী ডিনদের পদত্যাগে এক কর্মদিবসের আলটিমেটাম দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাসন রাজার ১৭১তম জন্মদিন আজ

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩২
হাসন রাজা। ফাইল ছবি
হাসন রাজা। ফাইল ছবি

মরমি কবি হাসন রাজার ১৭১তম জন্মদিন আজ। আধ্যাত্মিক এই সাধকের জন্ম ১৮৫৪ সালের ২১ ডিসেম্বর। তিনি সুনামগঞ্জ শহরের সন্নিকটে সুরমা নদীর তীরবর্তী লক্ষণছিরি (লক্ষণশ্রী) পরগনার তেঘরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

প্রতাপশালী জমিদার দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরী ও হুরমত জাহানের দ্বিতীয় ছেলে তিনি। জন্মের পর তাঁর নাম দেওয়া হয়েছিল অহিদুর রাজা। এক ফারসি ভাষাভিজ্ঞ ব্যক্তির পরামর্শে তাঁর নাম হয় হাসন রাজা। দেখতে সুদর্শন হাসন জমিদার পরিবারের সন্তান হওয়ায় অল্প বয়সেই জমিদারির দায়িত্ব নেন। সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, রামপাশা, লক্ষণশ্রীসহ সিলেটের একাংশজুড়ে তাঁর জমিদারি ছিল।

হাসন কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ না করলেও ছিলেন স্বশিক্ষিত। সরল ভাষায় সহস্রাধিক মরমি গান রচনা করেছেন হাসন। তিনি গানের মাধ্যমে অগণিত মানুষের হৃদয় জয় করে নিয়েছেন।

তাঁর উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে আছে- ‘লোকে বলে বলেরে, ঘর বাড়ি ভালা নাই আমার’; ‘নেশা লাগিলরে, বাঁকা দুই নয়নে নেশা লাগিলরে’; ‘গুড্ডি উড়াইলো মোরে, মৌলার হাতের ডুরি’; ‘আঁখি মুঞ্জিয়া দেখ রূপ রে, আঁখি মুঞ্জিয়া দেখ রূপ রে’; ‘আমি যাইমুরে যাইমু, আল্লার সঙ্গে।’

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও হাসন রাজা রচিত গানের প্রশংসা করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাধিকবার তাঁর বক্তব্যে হাসন রাজার গানের অংশবিশেষ উদ্ধৃত করে হাসনের দর্শনচিন্তার কথা তুলে ধরেন। হাসন রাজার সৃষ্টিকর্ম আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও সমাদৃত।

বহু গানের রচয়িতা আধ্যাত্মিক সাধক হাসন রাজা ১৯২২ সালের ৬ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। হাসনের জন্মভিটায় প্রতিষ্ঠিত ‘হাসন রাজা মিউজিয়াম’ একটি পূর্ণাঙ্গ জাদুঘরে রূপান্তরের দাবি জানিয়েছেন তাঁর ভক্ত ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাগেরহাটের চিতলমারী: অবৈধ বালু উত্তোলনে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট

  • মধুমতী নদী থেকে বালু উত্তোলন
  • ঝুঁকিতে চিতলমারীর একাধিক গ্রাম
  • অভিযোগ স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে
বাগেরহাট ও চিতলমারী প্রতিনিধি
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ০২
ড্রেজার মেশিন দিয়ে মধুমতী নদী থেকে প্রতিদিন উত্তোলন করা হচ্ছে হাজার হাজার ফুট বালু। প্রতিকার চেয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট একাধিক সরকারি দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় পরিবেশবাদীরা। সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ড্রেজার মেশিন দিয়ে মধুমতী নদী থেকে প্রতিদিন উত্তোলন করা হচ্ছে হাজার হাজার ফুট বালু। প্রতিকার চেয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট একাধিক সরকারি দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় পরিবেশবাদীরা। সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাগেরহাটের চিতলমারীতে মধুমতী নদী থেকে অবৈধভাবে বিপুল বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ড্রেজার মেশিন দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার ফুট বালু উত্তোলন করায় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট।

অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে ভূমি মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় পরিবেশবাদীরা। সংশ্লিষ্ট হওয়ায় বাগেরহাট, পিরোজপুর ও গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসকের দপ্তরেও অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

বালুমহাল ইজারায় একটি নির্দিষ্ট সীমানা বা এলাকা নির্ধারণ করা থাকে। নাজিরপুর উপজেলার বালুমহালের বা বালু উত্তোলনের সীমানা ২৪ দশমিক ২১ একর। কিন্তু চিতলমারীর অতুলনগর, কুনিয়া ও শৈলদাহ গ্রামসংলগ্ন মধুমতী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হচ্ছে। এই কাজে যুক্ত পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার মাটিভাঙ্গা ও বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার শৈলদাহ এলাকার প্রভাবশালী কয়েক ব্যক্তি।

অভিযুক্ত ব্যক্তিদের একজন কলাতলা ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি মো. কামাল শেখ ওরফে কামাল মেম্বার। মূল ইজারাদারের কাছ থেকে কয়েকজনকে নিয়ে এই কাজ নিয়েছেন তিনি। তবে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের সীমানা থেকে বালু উত্তোলন করছি।’ যাঁর নামে সরকারি ইজারা আনা হয়েছে, তাঁর নাম অবশ্য জানাতে পারেননি কামাল মেম্বার। তিনি দাবি করেন, ওই ব্যক্তির নাম তাঁর মনে নেই।

চিতলমারীর শৈলদাহ এলাকার মো. ফরিদ শেখ, বিপুল বৈদ্য, আল-আমিন খান ও তুহিন শেখ জানান, কলাতলা ইউনিয়নের মধুমতী নদীর অতুলনগর, কুনিয়া ও শৈলদাহ এলাকায় ৩-৪টি বলগেট ও ড্রেজার মেশিন দিয়ে প্রতিদিন শতাধিক ট্রলার বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে ফসলি জমি, গাছপালা ও রাস্তাঘাট নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সংকীর্ণ হয়ে পড়ছে উপজেলার মানচিত্র। হুমকির মুখে পড়েছে কয়েক শ একর জমি ও বসতবাড়ি। এ ছাড়া প্রায় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মাটিভাঙ্গা সেতুও এখন ঝুঁকির মুখে।

পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন চিতলমারী উপজেলার প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট ফজলুল হক বলেন, এভাবে বালু উত্তোলনে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। উপজেলার মানচিত্র ছোট হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট একাধিক সরকারি দপ্তরে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

চিতলমারীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘পিরোজপুর থেকে ওরা বালুমহাল ইজারা নিয়েছে। রাতের আঁধারে এসে চিতলমারীর সীমানা থেকে বালু উত্তোলন করে। আমরা বেশ কয়েকবার অভিযানে গিয়েছি। কিন্তু অভিযানের খবর শুনে ওরা আগে থেকেই চলে যায়। পিরোজপুরের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে, ওরা যাতে সীমানায় না আসে সে জন্য কাজ করছি। অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন “জিরো টলারেন্স” নীতিতে কাজ করছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত