Ajker Patrika

নতুন সিটি করপোরেশন হতে যাচ্ছে বগুড়া, জনমত যাচাই শুরু

বাসস, ঢাকা  
আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ২২: ১৫
ছবি : বাসস
ছবি : বাসস

বগুড়া পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনে রূপান্তরের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। জনমত যাচাই ও আপত্তি নিষ্পত্তির লক্ষ্যে রোববার দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখা থেকে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। 

ফলে বাংলাদেশে নতুন সিটি কর্পোরেশন হিসেবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে বগুড়া। জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা স্বাক্ষরিত এ বিজ্ঞপ্তিতে নাগরিকদের মতামত ও আপত্তি জানানোর জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।

বগুড়া পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মাসুম আলী বেগ জানান, গণবিজ্ঞপ্তি জারির পর এখন ৩০ দিনের মধ্যে কেউ চাইলে মতামত ও আপত্তি দিতে পারবে। আপত্তি নিষ্পত্তির জন্য অতিরিক্ত ১৫ দিন সময় লাগবে। সব মিলিয়ে ৪৫ দিনের মধ্যে বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরি করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বগুড়া সিটি করপোরেশন গঠনের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগে একটি প্রাথমিক প্রস্তাবনা পাঠানো হয়। এরপর ১০ এপ্রিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিটি করপোরেশন-২ শাখা থেকে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের অনুমতি দেওয়া হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘গত ১০ এপ্রিল মন্ত্রণালয়ের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বগুড়া পৌরসভা এলাকার ২১ টি ওয়ার্ডের মৌজাসমূহকে নিয়ে বগুড়া সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হলো। এ বিষয়ে কারও আপত্তি থাকলে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে জেলা প্রশাসনের কাছে জানানোর অনুরোধ করা হলো।’

স্থানীয়দের অভিযোগ, সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান হওয়ায় আওয়ামী লীগ সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বগুড়াকে সিটি কর্পোরেশনের মর্যাদা দেয়নি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সদিচ্ছায় এই উদ্যোগ নতুন করে গতি পেয়েছে। বগুড়া সিটি করপোরেশনের স্বীকৃতি পেলে এটি হবে দেশের ১৩তম সিটি করপোরেশন।

আওয়ামী লীগের শাসন আমলে বৈষম্যের শিকার হয়ে উন্নয়ন বঞ্চিত ছিল বগুড়াবাসী। ছাত্র জনতার প্রতিরোধের মুখে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর নতুন প্রশাসনের কাছে বগুড়ার উন্নয়নের দাবি জানায় স্থানীয় জনগণ। দাবির প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বরাবর প্রস্তাবনা পেশ করেন। 

বগুড়া পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, পৌরসভাটি ১৮৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮১ সালে পৌরসভাটি ‘ক’ শ্রেণীর মর্যাদা পায়। কালক্রমে এর আয়তন বেড়ে দাঁড়ায় ১৪ দশমিক ৭৬ বর্গকিলোমিটার। এরপর ২০০৪ সালে বর্ধিত করে ৬৯ দশমিক ৫৬ বর্গকিলোমিটার করা হয়। 

২১টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত বগুড়া পৌরসভা প্রায় ৭০ বর্গ কিলোমিটার। সিটি কর্পোরেশনের জন্য ন্যূনতম আয়তন হতে হয় কমপক্ষে ২৫ বর্গকিলোমিটার। বর্তমানে এর জনসংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। দেশের অনেক সিটি কর্পোরেশনের তুলনায় এর আয়তনে অনেক বড়।

‘ক’ শ্রেণীর এই পৌরসভাটি আয়তন বড় হলেও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় অন্যান্য পৌরসভার মতই বরাদ্দ পেয়ে থাকে। বগুড়া পৌরসভার সর্বমোট সড়কের দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৩৪০ কিলোমিটার। এরমধ্যে পাকা রাস্তা আছে প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার। কাঁচা রাস্তা ২৮৬.৬৮ কিলোমিটার। কাঁচা রাস্তাগুলোর অধিকাংশ পৌরসভার বর্ধিত এলাকায় রয়েছে। 

২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই পৌরসভার বার্ষিক আয় ছিল ৬০ কোটি টাকারও বেশি। বগুড়া পৌর এলাকায় রয়েছে সিরামিক, হিমাগার, ২৭২টি ফাউন্ডিশিল্প, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, ওষুধশিল্প (অ্যালোপ্যাথিক, হোমিওপ্যাথিক, ইউনানি ও হারবাল), অটো রাইস মিল, ফ্লাওয়ার মিল, রাইস বার্ন ওয়েল মিল, প্রাণিসম্পদ শিল্প, অক্সিজেন রিফাইনারি প্লান্ট, রিয়েলে এস্টেট শিল্প, বিশ্ববিদ্যালয় কলেজসহ চারটি সরকারি কলেজ, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেলসহ দুটি সরকারি হাসপাতাল, ব্যাংক, বীমা ও শপিং মল। 

গণবিজ্ঞপ্তি জারির ৪৫ দিন পর স্থানীয় জনগণের মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করে তা পাঠানো হবে মন্ত্রণালয়ে। ওই প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই শেষে অনুমোদনের জন্য এ প্রস্তাবনা প্রেরণ করা হবে প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে।

তাদের সম্মতি সাপেক্ষে সীমানা নির্ধারণ করে বগুড়া সিটি করপোরেশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করবে স্থানীয় সরকার বিভাগ।

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রকৌশলী সাহাবুদ্দীন সৈকত বলেন, সিটি করপোরেশন বাস্তবায়িত হলে বগুড়ার শিক্ষাক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন আসবে।

বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. সাইরুল ইসলাম বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হলে ব্যবসায়িক পরিবেশ আরও গতিশীল হবে। 

বগুড়া জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কে এম খায়রুল বাশার বলেন, ‘দীর্ঘদিন পিছিয়ে থাকা বগুড়ায় এখন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগতে শুরু করেছে। মূলত সিটি করপোরেশন ঘোষণা বিএনপির পরিকল্পনা ছিল। সেটাই এখন বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে।  বিগত ১৭ বছর ফ্যাসিস্ট সরকার ইচ্ছা করেই এই জেলার কোন উন্নয়ন করেনি। সিটি করপোরেশন হলে বগুড়া প্রাণ ফিরে পাবে।’ 

গণবিজ্ঞপ্তি জারির বিষয়টি উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা জানান, সিটি করপোরেশনের সীমানা চূড়ান্ত করতে মৌজাভিত্তিক কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বগুড়ার সিটি কর্পোরেশন এখন সময়ের সময়ের ব্যাপার। এখন সিটি কর্পোরেশন গঠনের মাধ্যমে বঞ্চিত বগুড়ার উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে । 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শীতলক্ষ্যা তৃতীয় সেতুর নতুন নাম ‘শহীদ ওসমান হাদি’

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
শীতলক্ষ্যা তৃতীয় সেতুর টোল প্লাজার নামফলকের পাশে ‘শহীদ ওসমান হাদি’ নাম স্থাপন করেন ছাত্র-জনতা। ছবি: আজকের পত্রিকা
শীতলক্ষ্যা তৃতীয় সেতুর টোল প্লাজার নামফলকের পাশে ‘শহীদ ওসমান হাদি’ নাম স্থাপন করেন ছাত্র-জনতা। ছবি: আজকের পত্রিকা

নারায়ণগঞ্জ সদর ও বন্দর উপজেলার ওপর নির্মিত শীতলক্ষ্যা তৃতীয় সেতু উদ্বোধন করা হয় ২০২২ সালে। সে সময় জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত নাসিম ওসমানের নামে সেতুটির নামকরণ করা হয়। তবে ৫ আগস্টের পর ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে সেতু থেকে নাসিম ওসমানের নাম মুছে ফেলা হয়। এবার জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম যোদ্ধা ওসমান হাদির নামে সেতুটির নামকরণ করেছেন বন্দর এলাকার ছাত্র-জনতা।

শুক্রবার বিকেলে ওসমান হাদি হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন ছাত্র-জনতা। মিছিলটি বন্দর রেললাইন এলাকা থেকে শুরু হয়ে মদনগঞ্জ এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। পরে শীতলক্ষ্যা তৃতীয় সেতুর টোল প্লাজার নামফলকের পাশে ‘শহীদ ওসমান হাদি’ নাম স্থাপন করেন আন্দোলনকারীরা।

নতুন নামকরণের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। অনেকেই ছাত্র-জনতার এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন। আয়োজকদের দাবি, ওসমান হাদিকে স্মরণীয় করে রাখা এবং তাঁর হত্যার বিচার নিশ্চিত করতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

আয়োজকদের একজন রেদোয়ান ইসলাম বলেন, ‘হাদি হত্যার বিচারের দাবিতে আমরা বিক্ষোভ মিছিল করেছি। এরপর সিদ্ধান্ত নিই, তাঁর নাম স্মরণীয় করে রাখতে সেতুর নামকরণ করব। এর আগে ফ্যাসিবাদী সরকারের সহযোগী নাসিম ওসমানের নাম মুছে দেওয়া হয়েছে। এবার সেখানে দেশের একজন মহানায়ক হাদি ভাইয়ের নাম স্থাপন করা হলো। শিগগিরই সড়ক ও জনপথ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই নাম স্থায়ী করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হঠাৎ ঘন কুয়াশায় মাদারীপুর অন্ধকারে

মাদারীপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩৫
রাত নামতেই চারদিকে ঘন কুয়াশা ছড়িয়ে পড়লে রাস্তাঘাট প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাত নামতেই চারদিকে ঘন কুয়াশা ছড়িয়ে পড়লে রাস্তাঘাট প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা

হঠাৎ ঘন কুয়াশায় অন্ধকারে ঢেকে গেছে মাদারীপুর জেলা। শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে মাদারীপুর শহরসহ আশপাশের গ্রামাঞ্চলে ঘন কুয়াশা দেখা যায়।

এর আগে দিনভর আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন, সূর্যের দেখা মেলেনি। রাত নামতেই চারদিকে ঘন কুয়াশা ছড়িয়ে পড়লে রাস্তাঘাট প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ে। প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হয়নি। কুয়াশার কারণে যানবাহন চলাচল করেছে ধীরগতিতে ও সতর্কতার সঙ্গে।

রিকশাচালক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সাধারণত রাত ১২টা পর্যন্ত রিকশা চালাই। কিন্তু আজ হঠাৎ অনেক কুয়াশা পড়েছে, রাস্তাও ফাঁকা। তাই আগেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।’

ডিসি ব্রিজ এলাকার মুদিদোকানি রানা বলেন, ‘প্রতিদিন অনেক রাত পর্যন্ত দোকান খোলা রাখি। আজ কুয়াশা আর শীত বেশি থাকায় রাত সাড়ে ৮টার দিকেই দোকান বন্ধ করেছি।’

মাদারীপুর আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, আগামী দুই সপ্তাহ জেলায় শৈত্যপ্রবাহের প্রভাব থাকতে পারে। এ সময় সাধারণ মানুষকে সতর্কভাবে চলাচলের পরামর্শ দেন তিনি। দুর্ঘটনা এড়াতে দিনের বেলায়ও যানবাহনের হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচলের অনুরোধ জানান এবং মহাসড়কে চলাচলকারী চালকদের বিশেষভাবে সতর্ক থাকার কথা বলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তীব্র শীতে কাঁপছে মানুষ গুদামে তালাবদ্ধ কম্বল

আব্দুর রহিম পায়েল, গঙ্গাচড়া (রংপুর) 
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় চার-পাঁচ দিন ধরে তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে তিস্তাতীরবর্তী এলাকার মানুষেরা। তবে শীত নিবারণের জন্য সরকারি সহায়তা নিয়ে দেখা দিয়েছে ধোঁয়াশা। শীতার্ত মানুষের অভিযোগ, প্রয়োজনের সময় তারা কম্বল পাচ্ছে না। তবে উপজেলা প্রশাসনের দাবি, কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।

গত বুধবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে কোলকোন্দ ইউনিয়নের বেদপাড়া এলাকায় খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে দেখা যায় সন্ধ্যা রানী (৫০) নামের এক নারীকে। শীতের কষ্টের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এই ঠান্ডায় হাত-পা কোঁকড়া হয়ে যাচ্ছে। আগুন পোহাইলেও ঠিকমতো কাজ হয় না। আগের বছর শীত আসার আগেই কম্বল পাইছিলাম। এবার শীত আইসা চলি যাচ্ছে, কেউ খোঁজও নিল না।’ ক্ষোভ প্রকাশ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বলেন, ‘এবার শীতে কি সরকার থাকি কোনো কম্বলের ব্যবস্থাই নাই, নাকি সবগুলা লোকজনে ভাগ করে খাইছে?’

এই অভিযোগ শুধু সন্ধ্যা রানীর নয়; কয়েক দিনে সরেজমিনে উপজেলার কোলকোন্দ, লক্ষ্মীটারী ও আলমবিদিতর ইউনিয়নের তিস্তাতীরবর্তী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দিনমজুর, বয়স্ক নারী-পুরুষ ও শিশুরা শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। অথচ শীত নিবারণে সরকারি সহায়তার কোনো দৃশ্যমান উপস্থিতি চোখে পড়েনি।

আলমবিদিতর ইউনিয়নের ডাঙ্গী পাইকান এলাকায় আলুখেতে কাজ করার সময় কথা হয় দিনমজুর নুর আমিনের (৫৪) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ঠান্ডা বাড়ার কারণে কোমর আর ঘাড়ের ব্যথা এমন হইছে যে ঠিকমতো হাঁটতেও পারি না, ঘাড়ও সোজা করতে পারি না। তবুও কাজ করা লাগে। বসে থাকলে কি আর পেট চলবে?’

ভুক্তভোগীদের অভিযোগের পর গত বুধবার গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে জানা গেছে, চলতি শীতে শীতার্ত মানুষের জন্য উপজেলায় প্রায় ১ হাজার ৮০০ কম্বল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। তবে নির্বাচনী কিছু জটিলতার কারণে ঊর্ধ্বতন মহলের নির্দেশনায় কম্বলগুলো উপজেলা পরিষদের একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। পরে সাংবাদিকদের অনুসন্ধানের বিষয়টি জানতে পেরে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তড়িঘড়ি করে প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে ১০০টি করে কম্বল সরবরাহ করা হয়।

জানতে চাইলে মর্ণেয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে তাঁদের ইউনিয়নের জন্য ১০০টি কম্বল দেওয়া হয়েছে। শনিবার (আজ) সেগুলো বিতরণ করা হবে।

কোলকোন্দ ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম বলেন, সম্ভবত বৃহস্পতিবার ইউনিয়ন সচিব পিআইও অফিস থেকে ১০০টি কম্বল এনেছেন। তবে সঠিক তথ্য খোঁজ নিয়ে বলতে হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সজীবুল করিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মাসিক সমন্বয় সভায় ওপর থেকে নির্দেশনা এসেছে, জরুরি অবস্থা ছাড়া কোনো কম্বল বিতরণ করা যাবে না। নির্বাচনী কিছু জটিলতাও রয়েছে। অন্যদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন আক্তার বলেন, ‘কম্বলের বরাদ্দ ছিল। আমরা সেগুলো বিতরণ করে ফেলেছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সুরেশ চন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি

একসময়ের জ্ঞানের বাতিঘর আজ নিকষ কালো অন্ধকার

মেহেদী হাসান, (দিনাজপুর) ফুলবাড়ী
লতা-পাতা ও আগাছায় ভরা শতবর্ষী সুরেশ চন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি। ছবি: আজকের পত্রিকা
লতা-পাতা ও আগাছায় ভরা শতবর্ষী সুরেশ চন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি। ছবি: আজকের পত্রিকা

দূর থেকে তাকালেই মনে হয়, কোনো পরিত্যক্ত ভুতুড়ে বাড়ি। লতা-পাতায় ঢাকা দেয়াল, আগাছায় ভরা চত্বর আর তালাবদ্ধ দরজার ভেতরে মাকড়সার জাল। অথচ একসময় এ জায়গাটিই ছিল পাঠকের ভিড়ে মুখর, জ্ঞানের আলোয় উজ্জ্বল এক প্রজন্মের আশ্রয়। দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌর এলাকার সুজাপুর গ্রামে শতবর্ষী ‘সুরেশ চন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি’ আজ নীরব অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছে—ইতিহাস, শিক্ষা ও সংস্কৃতির এক জীবন্ত সাক্ষী হয়ে।

জানা গেছে, ১৯১৬ সালে তৎকালীন জমিদার সুরেশ চন্দ্র রায় ও তাঁর ছেলে ক্ষীতিশ চন্দ্র রায়ের উদ্যোগে ফুলবাড়ী দিয়ে প্রবাহিত ছোট যমুনা নদীর পশ্চিম পাড়ে সুজাপুর গ্রামে যাত্রা শুরু করে এ পাবলিক লাইব্রেরিটি। সুজাপুর হাইস্কুল প্রতিষ্ঠার পর দরিদ্র ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের বইয়ের সংকট দূর করতে বিদ্যালয়সংলগ্ন এলাকায় পাঠাগারটি নির্মাণ করা হয়। বাবার স্মৃতি অমর করে রাখতে এর নামকরণ করা হয় ‘সুরেশ চন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি’।

একসময় এ লাইব্রেরিতে ছিল বিপুল বই। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা গ্রন্থে ভরপুর ছিল তাকগুলো। পাঠকদের পদচারণে মুখর ছিল পুরো প্রাঙ্গণ। এ লাইব্রেরি থেকেই বহু মানুষ জ্ঞানের আলোয় পথচলা শুরু করেছিলেন। কালের বিবর্তনে যেমন ছোট যমুনা নদী আজ মরা নদীতে পরিণত হয়েছে, তেমনি এ লাইব্রেরিও ধীরে ধীরে হারিয়েছে তার প্রাণ। সবচেয়ে বড় আঘাত আসে ১৯৭১ সালে। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনী আগুনে পুড়িয়ে দেয় লাইব্রেরির অমূল্য বই ও আসবাবপত্র।

দীর্ঘ নীরবতার পর ২০১১ সালের ১৪ অক্টোবর লাইব্রেরি পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পুরোনো ভবনের পাশে ১২ শতাংশ জমিতে নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ২০১২ সালে পুরোনো ভবন সংস্কার ও নতুন ভবন নির্মাণের পাশাপাশি কেনা হয় ১ হাজার ১২০টি বই। ২০১৫ সালে আরও ২ লাখ টাকা অনুদানে নির্মিত হয় অতিরিক্ত একটি ঘর। ২০১৭ সালে সেখানে চালু হয় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এলাকার শিক্ষিত যুবকেরা সেখানে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন। পাঠকদের পদচারণে আবারও মুখর হয়ে ওঠে লাইব্রেরিটি। গঠিত হয় পরিচালনা কমিটি। মনে হয়েছিল, আবার বুঝি ফিরবে সেই দিন।

কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। অর্থাভাব, লাইব্রেরিয়ানের বেতন ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ের চাপে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। কে নেবে এর দায়িত্ব—এ প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। এর মধ্যেই আঘাত হানে করোনা মহামারি। বন্ধ হয়ে যায় সব কার্যক্রম। ২০২৩ সালের ১৯ জানুয়ারি রাতের আঁধারে চুরি যায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ছয়টি কম্পিউটার। এভাবেই নতুন আশার শেষ আলোটুকুও যেন নিভে যায়।

এ বিষয়ে ইউএনও আহমেদ হাছান জানান, তিনি লাইব্রেরিটি পরিদর্শন করে পরিচালনা কমিটিকে আপাতত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে লাইব্রেরি খুলে বসার ব্যবস্থা করতে বলেছেন। পরবর্তী সময়ে জনবলসংকটসহ অন্যান্য সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ নেবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত