Ajker Patrika

রাজশাহীতে ঘুষের ১০ লাখ টাকাসহ কর কর্মকর্তা হাতেনাতে আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ০৪ এপ্রিল ২০২৩, ১৭: ৫০
রাজশাহীতে ঘুষের ১০ লাখ টাকাসহ কর কর্মকর্তা হাতেনাতে আটক

ঘুষের ১০ লাখ টাকা গ্রহণের সময় মহিবুল ইসলাম ভুঁইয়া নামে রাজশাহী আয়কর বিভাগের এক কর্মকর্তাকে হাতেনাতে আটক করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় দুদক কর্মকর্তারা রাজশাহী কর কমিশনারের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে তাঁকে আটক করেন। এ সময় দুদক ও আয়কর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। আটক কর্মকর্তা হলেন রাজশাহী কর কমিশনারের কার্যালয়ের সার্কেল-১৩ (বৈতনিক)-এর উপ-কর কমিশনার।

এ বিষয়ে রাজশাহী কর কমিশনার মো. শাহ আলী সাংবাদিকদের বলেন, অভিযানের বিষয়টি দুদকের রাজশাহী বিভাগের পরিচালক তাঁকে জানিয়েছিলেন এবং সহযোগিতা চেয়েছিলেন। তিনি সব ধরনের সহযোগিতার কথা জানিয়ে দুদক কর্মকর্তাদের তাঁদের দায়িত্ব পালন করতে বলেন। এরপর অফিসে আর কী হয়েছে তা তিনি জানেন না বলে দাবি করেন। 

কর কর্মকর্তা মহিবুল ইসলামকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি শুনেছেন জানিয়ে কর কমিশনার বলেন, দুদক একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। তারা তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। এটা নিয়ে কোনো আপত্তি নেই। এ বিষয়টি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে জানানো হয়েছে। বোর্ড থেকে এখন যে ধরনের নির্দেশনা আসবে সে অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। 

এর আগে আজ বেলা ১১টার দিকে দুদক কর্মকর্তারা উপ-কর কমিশনার মহিবুল ইসলামের কক্ষে অভিযান চালান। এ সময় আয়কর অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ওই কর্মকর্তার কক্ষের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকেন। সেখানে দুদক কর্মকর্তা ও আয়করের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। 

রাজশাহী কর অঞ্চলের উপ-কর কমিশনার কার্যালয়ে দুদকের অভিযানবেলা আড়াইটার পর পুলিশের সহায়তায় দুদক কর্মকর্তারা মহিবুল ইসলামকে আটক করে নিয়ে যান। ওই কর্মকর্তাকে যখন বের করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন তাঁর গলায় আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। দুদকের রাজশাহী বিভাগীয় এবং সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের নয়জন কর্মকর্তা এ অভিযান পরিচালনা করেন বলে জানা গেছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আয়কর অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, অভিযানের সময় দরজা বন্ধ করে তাঁকে মারধর করা হচ্ছিল। চিৎকার শুনে তাঁরা গিয়ে জানালা দিয়ে এ দৃশ্য দেখেন। এ সময় অফিসের সবাই মনে করেন, বাইরে থেকে সেবা নিতে আসা কোনো লোকজন তাঁকে মারধর করছেন। 

তিনি আরও বলেন, কারণ, দুদক কর্মকর্তারা সবাই সাধারণ পোশাকেই ছিলেন। তাই দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকেন। তারপর কর্মকর্তারা ‘দুদক’ লেখা জ্যাকেট পরলে তাঁদের পরিচয় নিশ্চিত হন সবাই। এর মধ্যেই রাজপাড়া-থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে চলে আসে।

অভিযান শেষে সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. মনিরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাজশাহীর মাদারল্যান্ড ইনফার্টিলিটি সেন্টার ও হাসপাতালের মালিক ডা. ফাতেমা সিদ্দিকা দুদকের প্রধান কার্যালয়ে অভিযোগ করেন, কর কর্মকর্তা মহিবুল ইসলাম তাঁর কাছে ঘুষ দাবি করছেন। চাহিদামতো ঘুষ না দিলে তিনি মোটা অঙ্কের করারোপ করার ভয় দেখাচ্ছেন।’ 

তিনি বলেন, ডা. ফাতেমা দুদককে জানান, তাঁর কাছে ৬০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ৫০ লাখ টাকা দেওয়ার কথা হয়েছে। প্রথম কিস্তিতে মঙ্গলবার ১০ লাখ টাকা দেওয়া হবে। সে অনুযায়ী এদিন সকালে ফাতেমা সিদ্দিকা তাঁর স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে মহিবুল ইসলামের দপ্তরে যান এবং ঘুষের ১০ লাখ টাকা দেন। টাকা নিয়ে মহিবুল ইসলাম তা ড্রয়ারে রাখেন। তখন দুদক কর্মকর্তারা সেখানে গিয়ে টাকা উদ্ধার করেন।’ এ ব্যাপারে মহিবুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুদক আইনে মামলা করা হবে বলেও জানান তিনি। 

ঘুষের ১০ লাখ টাকাসহ রাজশাহী কর অঞ্চলের উপ-কর কমিশনার আটকআয়কর কর্মকর্তা মহিবুল ইসলামকে মারধরের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমরা মারধর করিনি। আয়কর অফিসের কর্মীরাই রুমে ঢুকে আমাদের ওপর আক্রমণ করেন। তখন আমরা দরজা বন্ধ করে দিই। তারপর তাঁরা দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে আক্রমণ করেন। মারামারি নয়, ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেছে। এতে মহিবুল ইসলামের গলায় একটা আঁচড় লেগেছে। ধস্তাধস্তির কারণে আমাদেরও তিনজন কর্মকর্তা আহত হয়েছেন।’ 

আটক কর কর্মকর্তা মহিবুল ইসলামকে পুলিশের সহায়তায় দুদকের গাড়িতে তোলার সময় তিনি সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, ডা. ফাতেমা সিদ্দিকার ব্যাংকে যে পরিমাণ টাকা আছে তিনি তার চেয়েও বেশি টাকার জমি কিনেছেন। তাঁর ২৬ কোটি টাকার আয়করের গড় মিল আছে। এ জন্য তাঁর কাছ থেকে আয়কর আদায়ের চেষ্টা করা হচ্ছিল। এ জন্য তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। 

তিনি আরও দাবি করেন, অভিযানের সময় ডা. ফাতেমা সিদ্দিকাও ছিলেন। তিনি টাকা এনে রেখেছেন। আর ডা. ফাতেমা যখন আসেন, তখন তিনি অফিসের ভেতরে ছিলেন না। পরে তাঁকে অফিসের বাইরে থেকে জোরপূর্বক কক্ষের ভেতরে ঢোকানো হয়েছে।

এ বিষয়ে আয়কর অফিসেই সাংবাদিকেরা ডা. ফাতেমা সিদ্দিকার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। তবে তিনি কোনো কথা বলেননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জাবিতে শেখ পরিবারের নামে থাকা ৪ হলের নাম পরিবর্তন

জাবি প্রতিনিধি 
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) শেখ হাসিনা ও তাঁর স্বজনদের নামে থাকা চারটি আবাসিক হলের নাম পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আজ শুক্রবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এ বি এম আজিজুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

আজিজুর রহমান বলেন, ‘গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় শেখ পরিবারের নামে থাকা চারটি হলের নাম পরিবর্তন করে নতুন নামকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

এসব হলের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পরিবর্তন করে রাখ হয়েছে ‘শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক হল’, শেখ রাসেল হলের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে ‘নবাব সলিমুল্লাহ হল’। এ ছাড়া শেখ হাসিনা হলের নাম পরিবর্তন করে ‘জুলাই চব্বিশ জাগরণী হল’ এবং বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের নাম পরিবর্তন করে ‘শহীদ ফেলানী খাতুন হল’ নাম রাখা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হবিগঞ্জে রত্না বেইলি সেতু ভেঙে ট্রাক আটকা, দুর্ভোগে যাত্রীরা

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
আজ সকাল ৯টার দিকে রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সকাল ৯টার দিকে রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

হবিগঞ্জ-বানিয়াচং আঞ্চলিক সড়কের রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে ওই পথে সব ধরনের যান চলাচল। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে শতাধিক যাত্রী ও ওই পথে চলাচলকারীরা। শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, জাফলং থেকে ছেড়ে আসা বানিয়াচংগামী পাথরবোঝাই একটি ট্রাক ব্রিজের ওপর ওঠামাত্রই ব্রিজের দুটি পাটাতন ভেঙে যায়। মুহূর্তেই ট্রাকের পেছনের দুটি চাকা ধসে পড়ে এবং পুরো ট্রাকটি ব্রিজে আটকে যায়।

এতে দীর্ঘ লাইনে আটকা পড়ে যাত্রীবাহী বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, টমটম, প্রাইভেট কারসহ অসংখ্য যানবাহন। বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী, রোগী এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ব্যবসায়ীরা।

দুর্ঘটনার পর ব্রিজের একপাশ থেকে অন্যপাশে যাওয়ার জন্য যাত্রীরা ঝুঁকি নিয়ে হেঁটে ভাঙা অংশ অতিক্রম করছে। এতে যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে স্থানীয় এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘ট্রাকটি ব্রিজে উঠতেই জোরে শব্দ হয়। একটু পরই দেখি পাটাতন নিচে ধসে গেছে। ভাগ্য ভালো যে ট্রাকটি পুরোপুরি নিচে পড়ে যায়নি। তবে এখন তো ও পথে চলাচলকারীরা আটকা পড়ে আছে।’

যাত্রীরা জানান, রত্না বেইলি ব্রিজটি বহুদিন ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ভারী যানবাহনের অতিরিক্ত চাপের কারণে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে—এমন আশঙ্কা দীর্ঘদিন ধরেই ছিল। এদিকে যাত্রীদের দাবি, এখানে যেন বেইলি ব্রিজের পরিবর্তে দ্রুত স্থায়ী সেতু নির্মাণ করা হয়, যাতে প্রতিদিনের এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে হবিগঞ্জ সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, ‘ব্রিজটি দ্রুত মেরামত করার কাজ চলছে। পাথরবোঝাই ট্রাকটিতে বেশি লোড থাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আড়িয়াল খাঁ নদের তীর থেকে অটোরিকশাচালকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার

নরসিংদী প্রতিনিধি
ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা

নরসিংদীর বেলাব উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদের তীর থেকে আব্দুর রশিদ (৪০) নামের এক অটোরিকশাচালকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের ভাওয়ালেরচর এলাকায় নদীর তীর থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

আব্দুর রশিদ কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের দক্ষিণ লোহাজুরী গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় তিনি ছিলেন অটোরিকশাচালক; তবে নিয়মিত আড়িয়াল খাঁ নদে বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করা ছিল তাঁর নেশা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকাল ৬টার দিকে ভাওয়ালেরচর এলাকায় নদীর পাড়ে রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশে খবর দেন। লাশের পাশেই মোবাইল ফোন ও অটোরিকশাটি ছিল। পরে স্বজনেরা এসে লাশ শনাক্ত করেন। আব্দুর রশিদের মাথা ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ মনে করছে, তিনি দুষ্কৃতকারীর হামলার শিকার হয়েছেন।

নিহত ব্যক্তির ভাই কাজল মিয়া বলেন, ‘প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ১১-১২টা পর্যন্ত অটোরিকশা চালিয়ে তারপর নদীর পাড়ে বসে মাছ শিকার করে বাড়ি ফিরত ভাই। কিন্তু গতকাল রাতে আর বাড়ি ফেরেনি। সকালে খবর পেয়ে নদীর পাড়ে এসে ভাইয়ের মরদেহ দেখতে পাই।’

নিহত ব্যক্তির ছেলে হৃদয় বলেন, ‘রাতে বাড়ি না ফেরায় কল দিলে ফোন বন্ধ পাই। সকালে খবর শুনে নদীর পাড়ে এসে বাবার মরদেহ, মোবাইল ও অটোরিকশা পড়ে থাকতে দেখি।’

বেলাব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নাসির উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। বিষয়টি পিবিআইকে জানানো হয়েছে। ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। আইনগত প্রক্রিয়া চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৬৭ বছর পর রামেক হাসপাতালে মানসিক রোগীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

অবশেষে ৬৮ বছরে পা দিতে চলা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে মানসিক রোগীদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ মনোরোগ ওয়ার্ড চালু হলো। হাসপাতালটির বহির্বিভাগে প্রতিদিনই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানসিক রোগী চিকিৎসা নিতে এলেও ভর্তির সুযোগ ছিল না। গুরুতর রোগীদের কিছু ক্ষেত্রে মেডিসিন বিভাগে রাখা হলেও, পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ডের অভাবে এতদিন অনেককেই ফিরিয়ে দিতে হতো।

হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ৬৭ বছর পর এই প্রথম ২৫ শয্যার একটি সুসজ্জিত মনোরোগ ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। হাসপাতালটির পুরাতন আইসিইউ ভবনে এই নতুন ওয়ার্ডটি গড়ে তোলা হয়েছে।

এই ওয়ার্ডে রোগী ভর্তির জন্য নির্দিষ্ট বিন্যাস রাখা হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষদের জন্য ১০টি, নারীদের জন্য ৭ টি, শিশু-কিশোরদের জন্য ৫টি এবং উচ্চ পর্যবেক্ষণের জন্য ৩টি শয্যা সংরক্ষিত রয়েছে। এ ছাড়া রোগীদের চিকিৎসার সুবিধার জন্য থেরাপি ও কাউন্সেলিং রুমসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওয়ার্ডের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মোস্তফা আলী।

এই ওয়ার্ডটি চালুর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ ছিল কলেজের স্বীকৃতি বজায় রাখা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী মার্চ মাসেই ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশন (ডব্লিউএফএমই) থেকে একটি প্রতিনিধি দল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ পরিদর্শনে আসবে। পরিদর্শনকালে মনোরোগ বিভাগের ওয়ার্ড না পেলে কলেজের পয়েন্ট কমে যাওয়ার এবং অ্যাক্রিডিটেশনে বড় ধরনের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা ছিল। এতে করে এই কলেজের শিক্ষার্থীদের দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা বা পড়াশোনা করার সুযোগ কমে যেত। এ ছাড়া এফসিপিএস এবং ডিপ্লোমা কোর্সের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের জন্যও এমন একটি ওয়ার্ড জরুরি ছিল।

কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুরোধ শুনে সদ্যবিদায়ী পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ দ্রুত এই ওয়ার্ড চালুর উদ্যোগ নেন এবং গত বুধবার এটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের সময় তাঁর সঙ্গে নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পি কে এম মাসুদ-উল-ইসলামসহ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা উপস্থিত ছিলেন।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় এই হাসপাতালে যে ৬৭ বছরেও মানসিক রোগীদের জন্য ওয়ার্ড চালু হয়নি, এটি সত্যিই অবাক হওয়ার মতো বিষয়। আমরা প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি চালু করেছি। এখন থেকে এ অঞ্চলের মানসিক রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি থেকেও উন্নত চিকিৎসা নিতে পারবেন।’

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি রামেক হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর উদ্যোগেগত ২৩ অক্টোবর শুধু সাপে কাটা রোগীদের জন্য বিশেষায়িত ওয়ার্ড চালু করা হয়।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই বিশেষায়িত ওয়ার্ড চালুর পর থেকে এখন পর্যন্ত রামেক হাসপাতালে একজনও সাপে কাটা রোগীর মৃত্যু হয়নি, যেখানে আগে প্রায় প্রতিদিনই এই রোগে মৃত্যুর ঘটনা ঘটতো। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পি কে এম মাসুদ-উল-ইসলামের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত